Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দুজনার ঘর – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প178 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আকাঙ্ক্ষা

    এক অন্তরঙ্গ বন্ধুর সঙ্গে দেখা গৌরকিশোর অধিকারীর। বন্ধ ট্রামের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন আর গৌরকিশোর মস্ত ঝকঝকে গাড়ি হাঁকিয়ে যাচ্ছিলেন। ট্রাফিকের লাল আলো জ্বলতে গাড়িটা একটা বাসের পিছনে দাঁড়িয়ে গেছল। বন্ধুই তাঁকে প্রথম দেখেছেন, তারপর না চেনার মত করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু গৌরকিশোর তাকে দেখামাত্র উৎফুল্ল। ড্রাইভার তাঁর ইঙ্গিতে গাড়ি পিছিয়ে নিয়ে বাঁয়ের ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড় করিয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে তিনি বন্ধুকে ধরেছেন। তাকে জাপটে ধরে টেনে এনে গাড়িতে তুলেছেন। তারপর সানন্দে বলে উঠেছেন, ভাগ্যিস দেখেছিলাম, তুই তো অন্যদিকে মুখ ফিরিয়েছিলি!

    বন্ধু জবাব দিয়েছেন, তোমাকে আর তোমার গাড়ি দেখে মুখ ফিরিয়েছিলাম –

    কেন, কেন? গৌরকিশোরবাবু ঈষৎ- অপ্রস্তুত।

    –সংকোচে আর হিংসেয়।

    গৌরকিশোরবাবু হা-হা শব্দে হেসে উঠেছেন। তকমা আর টুপী পরা ড্রাইভার সচকিত হয়ে সামনের আয়না দিয়ে তাঁর মুখ দেখতে চেষ্টা করেছে। গাড়ি সামনের রাস্তা ধরে চলেছে।

    বন্ধুর জবাব শুনে বেশ মজার খোরাক পেয়েছেন গৌরকিশোরবাবু। জিজ্ঞাসা করলেন, সংকোচ কিসের আর হিংসেই বা কেন?

    ড্রাইভারকে বাঙালী মনে হয়নি বন্ধুর। তাই গলার স্বর স্বাভাবিক রেখেই জবাব। দিলেন, সংকোচ তোমার অবস্থান্তর দেখে আর হিংসে তোমার স্ত্রী-ভাগ্য দেখে।

    গৌরকিশোরবাবুর মুখে হাসি ধরে না।–এই দুটো ব্যাপারই যে অবশ্যম্ভাবী সে তো তুই হাত দেখে আর কুষ্টি দেখে অনেক আগেই বলে দিয়েছিলি!

    -তা বলেছিলাম হয়ত, কিন্তু গণনা করা আর স্বচক্ষে তার সফল রূপ দেখার মধ্যে কিছু তফাৎ আছে। আর অভাজনদের কিছু কিছু উক্তি কানে এসেছে, যার ফলে তোমাকে দেখামাত্র ওই তফাৎটা চোখ ধাঁধিয়েছে।

    হাসিমুখে গৌরকিশোরবাবু বন্ধুর গন্তব্যস্থল জেনে নিলেন। বাড়ি যাচ্ছেন শুনে খুশিমনে তাকে পৌঁছে দিতে চললেন। আপাতত তিন-কোয়ার্টার ফ্রী তিনি, অতএব বন্ধুর বাড়িতে দশ বিশ মিনিট বসে একটু আড্ডা দেবারও সময় হবে। তারপর সকৌতুকে জিজ্ঞাসা করলেন, অভাজনদের আবার কি উক্তি কানে এলো তোমার?

    সুবিনয় দাশগুপ্ত বাড়িতে তোমার সঙ্গে দেখা করতে গেছল, তুমি ব্যস্ত ছিলে বলে তাকে বসতেও বলোনি, এগিয়ে এসে দুই এক কথা বলে সিঁড়ি থেকেই তাকে বিদায় করেছ।

    -ও হ্যাঁ, সেদিন স্ত্রীর কয়েকজন বন্ধু আর বান্ধবী এসেছিলেন, কি একটা প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা চলছিল।

    –আর মাস ছয় আগে এক বৃষ্টির দিনে তোমার গাড়ি ট্রামের পাশ কাটাতে গিয়ে ফুটপাতে অমল ঘোষের জামাকাপড় রাস্তার জলে ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেছল। তুমি তাকে দেখেছিলে, তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলে।

    গৌরকিশোরবাবু একটুও চিন্তা না করেই মাথা নাড়লেন।জলের ধারে ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়ায় কেউ? বেচারার কোমর পর্যন্ত ভিজে সারা!…গাড়িতে সেদিন স্ত্রী শ্বশুর শাশুড়ী শালা সবাই ছিলেন, সেদিনও এক বড় ইন্ডাসট্রিয়াল ম্যাগনেটের বাড়িতে পার্টি ছিল। তারপর, আর কিছু?

    বন্ধু মাথা নাড়লেন, আর কিছু না।

    গৌরকিশোর অধিকারী হৃষ্টমুখে মৃদু মৃদু হাসতে লাগলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, অবশ্যম্ভাবী অবস্থান্তর আর স্ত্রী-ভাগ্যের পরে আমার যে এরকম পরিবর্তন হবে হাত আর কুষ্ঠি দেখে সেটা বুঝি আঁচ করতে পারিসনি?

    বন্ধু মাথা নাড়লেন, পারেননি।

    গৌরকিশোরবাবু ড্রাইভারকে দ্বিতীয় দফা সচকিত করে হা-হা শব্দে হেসে উঠলেন।

    বন্ধুর বাড়িতে এসে চা হল, গল্পগুজব হল খানিক। কথা বেশি গৌরকিশোরই বললেন। সামাজিকতা লৌকিকতার ঝামেলায় সময়ের অভাব কত কম, সরস হাসি মুখে সেই গল্প করলেন। শালার সঙ্গে নতুন স্টাল অ্যাও নেট অ্যায়ারিং-এর ব্যবসা কি রকম চলছে গম্ভীরমুখে সেই ফিরিস্তি দিলেন।

    বন্ধুর শ্রোতার ভূমিকা।

    শেষে হঠাৎ এক সময় হাত বাড়িয়ে দিলেন গৌরকিশোর অধিকারী, বললেন, আমার কুষ্ঠি তো তোর মুখস্থই ছিল–হাতের সঙ্গে মিলিয়ে আর একবার দ্যাখ দেখি-কলেজের মাস্টারি ছেড়ে এই ব্যবসায় নামলে তুই সত্যিই লাল হয়ে যেতিস!

    হাতের ওপর হাত-দেখা কঁচ ফেলে বন্ধু গম্ভীর মুখে খানিক রেখা পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কি জানতে চাও, বলো।

    -আমি বলব কি, তুই বল!

    -তোমার সদ্য বর্তমানের আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ আমার জানা নেই, বলো কি জানতে চাও?

    মুখের দিকে চেয়ে মৃদু মৃদু হাসছিলেন গৌরকিশোর। হাসিটা কমে আসতে লাগল। চোখে চোখ রেখে চেয়েই রইলেন খানিক। তারপর সাদাসিধে স্পষ্ট গলাতেই জিজ্ঞাসা। করলেন, আমার স্ত্রীর চোখে কোনদিন জল দেখতে পাব?

    এবার বন্ধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন তার দিকে।

    গৌরকিশোরের মুখে হাসির ভাজ পড়তে লাগল আবার।–কি বলে তোমার গণনা, পাব?

    বন্ধু মাথা নেড়ে জবাব দিলেন, আমার জ্যোতিষী বিদ্যায় এটা বলা সম্ভব নয়।

    গৌরকিশোর জোরেই হেসে উঠলেন এবারে। পরমুহূর্তে ঘড়ি দেখেই আঁতকে উঠলেন প্রায়, দেখেছ কাণ্ড! চলি ভাই

    হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ির দিকে চললেন তিনি।

    গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে তাড়া দিলেন, তুরন্ত চলো–

    গাড়ি ছুটল। অসহিষ্ণু অস্বস্তি নিয়ে হাত-ঘড়িটা দেখলেন আবার। স্ত্রীকে যেসময় দিয়েছিলেন তার থেকে সাত আট মিনিট দেরি হবেই পৌঁছুতে। গৌরকিশোরবাবুর চাপা অস্বস্তি সাত আট বছর দেরিতে পৌঁছুনোর মত। সময়ের হিসেব না থাকাটা কালচারের একটা বড় খুঁত।

    সাত আট মিনিট নয়, দুমিনিট দেরি হয়েছে ফিরতে। স্ত্রী ঘড়ি ধরে ঠিক পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করেছিলেন শুনলেন। তারপর একাই ডান্স-ড্রামা দেখতে চলে গেছেন। ….ঠিক এক মিনিট আগে।

    .

    তার একত্রিশ, লতার ছাব্বিশ।

    গৌরকিশোর বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর আগে। করেছেন বলা ঠিক হল না, তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বিয়েটা তার জীবনে এক অভাবিত ঘটনা। তিনি বাস্তববাদী মানুষ, জীবনে কোনদিন আকাশকুসুম কল্পনায় বিভোর হননি। কিন্তু বাস্তবের আকাশ থেকে তাঁর জীবনে ভাগ্যের এক দুর্লভ কুসুম খসে পড়েছে। বিয়ের পর নয়, বিয়ের প্রস্তাব শুনেই তিনি বিহ্বল হয়েছিলেন।

    তাঁর বাবা ছিলেন বনেদী লোহার কারবারী চ্যাটার্জী মেটালস-এর পাঁচজন অ্যাকাউনটেন্ট-এর একজন। দুদুটো যুদ্ধের কল্যাণে চ্যাটার্জী মেটালস-এর ভাগ্য আর। খ্যাতির তুঙ্গস্থানে বৃহস্পতির অনড় অবস্থান। কিন্তু গৌরকিশোরের বাবা আনন্দকিশোর সচ্ছলতার মুখ দেখেছিলেন মাত্র মাসকতকের জন্যে। গৌরকিশোর বি. এ. পাশ করার পরে।

    বিধাতার খেয়ালের কুল মেলা ভার। নইলে বলা নেই কওয়া নেই, গৌরকিশোরের অ্যাকাউনটেন্ট বাবা ম্যানেজিং ডাইরেক্টারের খাস বেয়ারার মুখে বড়া সাব সেলাম দিয়া শুনে তো ঘামতে ঘামতেই ছুটেছিলেন তার এয়ার কনডিশল্ড চেম্বারের দিকে। মাঝে এক ঝুড়ি ছোট বড় হোমরাচোমরা অফিসারের ফাঁক দিয়ে হঠাৎ তাকে তলব কেন ভেবে না পেয়ে গলদঘর্ম অবস্থা। নমাসে ছমাসে ডাক যদি কখনো পড়ে তো আর পাঁচজন অফিসারের নির্দেশে তাদের সঙ্গ ধরে ঘরে ঢোকেন, কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা শোনেন, তারপর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে অফিসারদের ইঙ্গিত বুঝেই আবার বেরিয়ে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। শুধু অফিসাররা কেন, ওই ঘর থেকে ডাক এলে ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের বড় দুই ছেলে পর্যন্ত সভয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছোটেন-বাপের পরেই যাঁরা এত বড় কোম্পানীর হর্তাকর্তা।

    সেই ঘর থেকে একা অ্যাকাউনটেন্টের ডাক আসাটা মেঘশূন্য আকাশ থেকে একটা বাজ পড়ার মতই।

    ঘরে ঢুকে দেখেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের সামনে চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট দত্ত সাহেব বসে। কোম্পানীর বাৎসরিক আয়-ব্যয় লাভ-লোকসানের হিসেব-নিকেশ তিনিই করে থাকেন। ওই হিসেবপত্রের সুতো ধরেই তাঁর সঙ্গে আনন্দকিশোরের অনেক দিনের যোগাযোগ। ভদ্রলোক স্নেহ করতেন তাকে। দুজনের কারো মুখই বিপজ্জনক রকমের গম্ভীর নয় দেখে মনে মনে স্বস্তিবোধ করেছিলেন একটু।

    –বোসো। ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের সহজ আপ্যায়নে হকচকিয়ে গেছলেন তিনি। আদেশ পালন করার মত করে দত্ত সাহেবের পাশের চেয়ারে বসেছিলেন। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জীর বয়েস প্রায় পঁয়ষট্টি, আর আনন্দকিশোরের ছেচল্লিশ –কিন্তু এই তুমি বলার মধ্যে খুব প্রচ্ছন্ন একটু অন্তরঙ্গ স্পর্শও পেলেন যেন।

    –তোমার ছেলে স্কুল ফাইনালে সেকেণ্ড হয়েছিল?

    প্রশ্নটা এত অপ্রত্যাশিত যে প্রায় দুর্বোধ্য মনে হয়েছিল।

    –আজ্ঞে হ্যাঁ..

    –আই, এসসি-তে ফার্স্ট হয়েছিল?

    –আজ্ঞে হ্যাঁ।

    –এবারে বি, এ-তে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছে?

    –আজ্ঞে হ্যাঁ।

    –কোন সাবজেক্ট?

    –আজ্ঞে অঙ্ক।

    ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী কৃতী ছেলের বাপের মুখখানা পর্যবেক্ষণ করলেন একটু।–তুমি কত মাইনে পাও এখন?

    –আজ্ঞে তিনশ সত্তর।

    –ছেলেকে বাড়িতে পড়াতো কে, তুমি না মাস্টার?

    –আজ্ঞে ও নিজেই পড়ত।

    –এখন এম, এ পড়বে?

    –আজ্ঞে হ্যাঁ।

    –ছেলেটিকে একবার নিয়ে এসো তো, দেখব। আই অ্যাম সো গ্ল্যাড টু হিয়ার

    বড় সাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে আনন্দে ঘেমে ওঠার দাখিল। প্রতিবারের। সুখবরের মত ছেলের সুখবরটা সেই সকালেই দত্ত সাহেবকে জানিয়েছিলেন তিনি।

    যতটা সম্ভব ভব্যসভ্য করে ছেলেকে পরদিনই বড় সাহেবের ঘরে নিয়ে এসেছিলেন। বাবার সেই চাপা উত্তেজনা আর ব্যস্ততা দেখে গৌরকিশোর হকচকিয়ে গেছলেন। ঘাবড়ে গিয়ে প্রণাম করার তাড়ায় চেয়ারের আড়ালে ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের দ্বিতীয় পা খুঁজে না পেয়ে এক পায়ের জুতোর উপরে দুবার হাত বুলিয়ে মাথায় ঠেকিয়েছেন। কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী ঈষৎ কৌতুকে পর্যবেক্ষণ করেছেন তাকে।

    কিন্তু তার মন্তব্য শুনে বাপের মুখে কাষ্ঠ হাসি আর ছেলের মুখে বিড়ম্বনার ধকল। বড় সাহেব হেসে বলেছেন, লেখাপড়ায় তুমি এত ভালো…বাট ইউ ডোন্ট লুক দ্যাট স্মার্ট।

    বাবা বার বার করে বলে দিয়েছিলেন, হাবাগোবার মত চুপ করে থাকিস না, একটু আধটু কথা বলবি। অতএব চুপ করে না থেকে গৌরকিশোর কথাই বলেছেন। –চেষ্টা করিনি স্যার…

    কৌতুকে নড়েচড়ে বসেছেন কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী।–কি চেষ্টা করোনি, স্মার্ট হতে?

    এবারে আর জবাব জোগালো না, মাথাই নাড়লেন শুধু অর্থাৎ তাই।

    –কি চেষ্টা করেছ?

    গৌরকিশোর ফাঁপরে পড়েছিলেন, জবাব দিয়েছেন, একবার সেকেণ্ড হবার পর। থেকে ফার্স্ট হতে চেষ্টা করেছি।

    আর একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বড় সাহেবের ঠোঁটের ডগার হাসি আরো স্পষ্ট হয়েছিল।–চেষ্টা করলে স্মার্ট হতেও পারো বলছ?

    নিরুপায় গোছের মাথা নেড়েছিলেন গৌরকিশোর– পারেন।

    হাসি মুখে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর উপদেশ দিয়েছেন, আচ্ছা এম, এ-তে ফাস্ট হবার পর সে চেষ্টা কোরো। ভেরি গ্ল্যাড টু মিট ইউ

    ছেলেটাকে একেবারে হাবাই ভাবলেন কিনা বড় সাহেব, বাবা দিনকতক সেই অস্বস্তি ভোগ করেছেন। তারপর একদিন দোকান থেকে মিষ্টি কিনে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ঢুকেছেন। কোম্পানীর চিফ অ্যাকাউনটেন্ট বলে কোনো পোস্ট ছিল না এতদিন–এখন হল। জনাকতক জুনিয়র আর সিনিয়র অ্যাকাউনটেন্ট কোম্পানীর কাজ চালাতেন। চ্যাটার্জী মেটালস-এর তিনিই প্রথম চীফ অ্যাকাউনটেন্ট-মাইনে তিনশ সত্তর থেকে এক লাফে পাঁচশ সত্তর।

    ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জীর সঙ্গে গৌরকিশোরের আবার দেখা হয়েছে মাস নয়েক বাদে। শোকের আর দুশ্চিন্তার তাপ নিয়ে গেছলেন বাবার শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে, আর কিছু না হোক, দুটো সহানুভূতির কথা শুনবেন আশা ছিল। কিন্তু শোকের তাপের সঙ্গে অবজ্ঞার তাপ নিয়ে ফিরেছেন।

    বেয়ারার মুখে খবর পেয়ে কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী তাকে ঘরে ডেকেছিলেন অবশ্য। বসতে বলেননি। তার পরনে কাঁচা-কোঁচা, হাতে আসন, একগাল খোঁচা-খোঁচা দাড়ি। মুখ তুলে একবার শুধু দেখেছিলেন তাঁকে, তারপর আবার ফাইলে মন দিয়েছিলেন। বাবার আকস্মিক মৃত্যু সম্পর্কে একটি কথাও জিজ্ঞাসা করেননি। সন্তর্পণে শ্রাদ্ধ-পত্র তার সামনে টেবিলে রাখতে মুখ না তুলেই মাথা নেড়ে শুধু বলেছেন, ঠিক আছে

    বাইরে এসে গৌরকিশোরের কান্না পাচ্ছিল পাঁচটি ভাই বোন তারা, তিনিই বড়। বাবা চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গে শোকের থেকেও তিনি চোখে অন্ধকার দেখেছেন বেশি। ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের ঘর থেকে বেরুতে সেই অন্ধকার আরো গাঢ় হয়ে উঠেছিল।

    অবাক একটু হয়েছিলেন ঠিক দুদিন বাদে। নতুন চিফ অ্যাকাউনটেন্ট নিজে এসেছিলেন বাবার সমস্ত পাওনাগণ্ডা বুঝিয়ে মিটিয়ে দিতে। তাছাড়া বাড়তি এক হাজার টাকা দিয়েছেন বড় সাহেবের নাম করে–বাবার শ্রাদ্ধের কাজের বাবদ। হাতে টাকা নিয়েও গৌরকিশোর ঠিক যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না।

    আর হতচকিত হয়েছেন বাবার কাজের দিনে। ভাঙা বাড়ির দরজায় মস্ত ঝকঝকে গাড়িটা থামতেও ঠাওর করে উঠতে পারেননি কে এলেন। বিমূঢ় মুখে ছুটে এসে তারপর গাড়ির সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছেন গৌরকিশোর।

    শ্রাদ্ধবাসরে কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী মিনিট পাঁচেক বসেছিলেন। যাবার আগে বলে গেছেন, কাজকর্ম চুকে গেলে অফিসে একবার দেখা কোরো।

    দেখা করেছেন। এই দিন বড় সাহেব তাকে বসতে বলেছেন। আলাপ করেছেন। বাড়িতে কে আছে না আছে খোঁজ নিয়েছেন। চিন্তা করেছেন একটু। তারপর বলেছেন, মন দিয়ে পড়াশুনা করে যাও–তোমার বাবা খুব বিশ্বস্ত কাজের লোক ছিলেন, তুমি এম, এ পাশ না করা পর্যন্ত কোম্পানী তাই তোমার মায়ের নামে মাসে দুশ টাকা করে দেবে ঠিক করেছে।

    গৌরকিশোরের চোখে জল আসার উপক্রম। অল্প হেসে বড় সাহেব বলেছেন, আর একটা কথা, এখন থেকেই একটু স্মার্ট হতে চেষ্টা করো–এত সহজে ভেঙে পড়লে চলবে না। আচ্ছা এসো, উইশ ইউ ভেরি ভেরি গুড লাক!

    গোরকিশোর আবার দেখা করতে এসেছেন এক বছর পাঁচ মাস বাদে। এম,– এ পরীক্ষার ফল বেরুবার পর।

    তাকে দেখামাত্র উৎফুল্ল মুখে বড় সাহেব হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ এবারের সুখবরটা সেদিনের সকালের কাগজে দেখেছেন তিনি। বারকয়েক খুশি জ্ঞাপন করে টেবিলের ব্রোতাম টিপে বেয়ারার তলব করেছেন। দুই ছেলে, অর্থাৎ বড় আর মেজ চ্যাটার্জী সাবকে একসঙ্গে সেলাম দিতে বলেছেন।

    ছেলেরা আসতে হাসিমুখে গৌরকিশোরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি। –আনন্দকিশোরের ছেলে গৌরকিশোর, স্কুল-ফাইনালে শুধু পরীক্ষা খারাপ করে সেকেণ্ড হয়ে বসেছিল–তারপর আই, এসসি-তে ফার্স্ট, বি, এ-তে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, আর এবার এম, এ-তে ফাস্ট ক্লাস ফার্স্ট।

    পরিচয়-পর্বে শুধু বড় সাহেব নয়, গৌরকিশোরের সৌজন্যসূচক স্মার্টনেসের অভাব ছেলেরাও লক্ষ্য করলেন। কোম্পানীতে বিলেত-ফেরত এনজিনিয়ার আছেন চারজন, সেখানে এম, এ-র এই কৃতিত্ব বাবার কাছে এমন বড় ব্যাপার হল কি করে ছেলেরা বুঝলেন না!

    বড় সাহেব বললেন, তোমরা দুজনেই ওকে ভালো করে কাজ-কর্ম শেখাবে। …ওর ডেসিগনেশন কি হবে? বড় ছেলের দিকে ফিরলেন, এখন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দাও, পরে দেখা যাবে।

    সেক্রেটারী বড় ছেলে।

    হাসিমুখে বড় সাহেব গৌরকিশোরের দিকে ফিরলেন, এঁদের সঙ্গে যাও, খুব বুঝে-শুনে ভালো করে কাজ-কর্ম করবে।

    একটানা তিন বছর চ্যাটার্জী মেটাল-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী হয়েই ছিলেন গৌরকিশোর। কাজে সুনাম কিছু হয়েছে, কিন্তু সেটা চটকদার সুনাম নয়। দায়িত্বের কাজ দিলে সেটা তার দ্বারা সুসম্পন্ন হবে কিনা বোঝা ভার, অথচ শেষ পর্যন্ত হয় ঠিকই। ফলে কাজ যাঁরা দেন তারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন না সর্বদা। বড় সাহেব ছেলেদের জিজ্ঞাসা করেন, কেমন?

    তারা বলেন, ভালই, তবে আনস্মার্ট।

    কৃষ্টকমল চ্যাটার্জী মাথা নাড়েন, আনস্মার্ট ঠিক নয়…ডিফরেন্ট টাইপ।

    তাঁর মতলব বোঝা গেছে তিন বছর বাদে-বছর দুয়েকের চেষ্টায় ছোট মেয়ে লোটি অন্যথায় লতা চ্যাটার্জী যখন টেনেটুনে বি, এ পাশ করে উঠলেন।

    কমল চ্যাটার্জীর তিন ছেলে, ছোট ছেলে গৌরকিশোরের থেকে বছর দুয়েকের ছোট, আর লতার থেকে বছর তিনেকের বড়। ছোট ছেলে সক্রিয়ভাবে চ্যাটার্জী মেটাল-এ ঢোকেননি তখনো। ওদিকে বড় দুই ছেলের পরে দুটি মেয়ে ছিল, হর ছোট ছেলের পর লোটি–সর্বকনিষ্ঠা। বাপের বেশি বয়সের মেয়ে, তাই তার আদরও বেশি। বেশি আদরের আরো একটু কারণ আছে।

    কৃকমল চ্যাটার্জীর এখন সর্বসাকুল্যে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে এ হত্যা করেছেন।

    বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে প্রচণ্ড ঘা খেয়েছেন কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী। বড় মেয়ের বিয়ে নিলেন মস্ত বনেদী ঘর দেখে। মানুষ দেখেননি তেমন করে। বড় মেয়ের আত্মহত্যর পর একটানা বছরখানেক কেস চালিয়েছিলেন তিনি মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ী আর জামাইয়ের বিরুদ্ধে। ফল হয়নি।

    মেজ মেয়েরও ঘটা করে বিয়ে দিয়েছিলেন এক মস্ত ব্যবসায়ীর ঘরে। বিশেষ অবস্থাপন্ন তারাও। তাদের আবার চালচলন জাঁকজমক এত বেশি যে তাই থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। তার ওপর মেজ জামাইয়ের নাক তাদের পরিবারের মধ্যে সব থেকে বেশ উঁচু। তুচ্ছ রেষারিষি বড় বিরোধে দাঁড়িয়েছে–মেজ জামাইটি নিজেও দূরে সরেছেন, মেয়েকেও দূরে সরিয়েছেন।

    বড় ঘরে মেয়ে দেবার সাধ মিটেছে ভদ্রলোকের। ছোট মেয়ের বয়স তখন। সোলও নয়, কিন্তু তখনই সঙ্কল্প করেছেন আর বড় ঘর নয়। মেয়েকে কারো হাতে দেবেন না, বরং মেয়ের হাতের মুঠোয় কাউকে এনে দেবেন।

    তাই দিয়েছেন।

    .

    বিয়েটা যখন হয়েই গেল, অর্থাৎ কল্পনার আকাশকুসুম যখন সত্যিই বাস্তব জীবনে খসে পড়ল, গৌরকিশোরের বয়স তখন ছাব্বিশ-লতার একুশ। কিন্তু বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই তাদের বয়সটা বিপরীত খাতে বইতে লাগল। গৌরকিশোর বুঝি সবে না-বালকত্বের গণ্ডী ছাড়িয়েছেন, আর লতার পাকাঁপোক্ত সাবালিকার ভূমিকা।

    ছোট মেয়ে, বাপের আদরের মেয়ে বাবাকে পছন্দ করতেন, আর বাবার মুখে শুনেছিলেন চমৎকার ছেলে গৌরকিশোর–তাই চমৎকার যে তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু বিয়ের আগে তাকে দেখে ততটা চমৎকার লাগল না। বাবার কৃষ্ণকমল নাম ভারী ভালো লাগে তার, গৌরকিশোর নামও সেই গোছের ভালো লেগেছিল। বেশ ধারালো অথচ একখানা মিষ্টি মুখ তিনি কল্পনা করেছিলেন। প্রথম দর্শনেই হোঁচট খেল। তারপর দিনে দিনে হোঁচট খেতে লাগল। ধারের চিহ্নও নেই কোথাও, আর। মিষ্টি অর্থে যদি আনুগত্য হয়, তাহলে মিষ্টিই বটে।

    ভিতরে বাইরে এমন এক বর্ণশূন্য লোকের সঙ্গে বাপ তার বিয়ে দিলেন কি করে তিনি ভেবে পাননি। চেনা-জানা যে কটি লোক বিয়ের আশায় ঝুঁকেছিল বা ঝুঁকতে চেয়েছিল, তাদের যে-কেউ এর থেকে অনেক ভালো ছিল। লতার কেবলই মনে হত, অনুগত জামাই আনার তাড়নায় বাবা সব থেকে বেশি অবিচার করেছেন তারই ওপর।

    বিয়ের মাসতিনেকের মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে বারকয়েক আনুষ্ঠানিক যাতায়াত করেছেন তিনি। জামাইকে ডেকে বাবা নিজেই তারপরে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিধবা মা বা ভাই-বোনদের প্রতি কর্তব্যের ব্যাপারে তাঁর সহানুভূতির অভাব নেই, কিন্তু মেয়ে সেখানে থাকতে পারবে না। তার বড় বাড়ির পাশে ছোট বাড়িটা মেয়ের কথা ভেবেই তিন বছর ধরে খালি রেখেছেন তিনি–মেয়েকে নিয়ে আপাতত সেখানেই থাকতে হবে। মেয়ের নামে অভিজাত এলাকায় বেশ খানিকটা জমি কেনা আছে –ধীরেসুস্থে সেখানে বাড়ি করা হলে তারপর অন্য ব্যবস্থা।

    শ্বশুরের ব্যবস্থা জামাইয়ের মনঃপূত কিনা সে-প্রশ্ন অবান্তর। গৌরকিশোরের পৈতৃক বাড়ির সচ্ছলতায় সত্যিই টান ধরেনি, কিন্তু বিনিময়ে বড় কাছের একজনকে খোয়াতে হয়েছে তাদের। মাঝেসাঝে মাকে দেখতে আসেন গৌরকিশোর। এই আসাটাও কমে আসছে। এ নিয়ে বাড়ির কারো অভিযোগ নেই। থাকলেও মুখে অন্তত কেউ কিছু বলে না। কিন্তু দেখা হলে একজন বলেন।

    সুমিতা।

    গৌরকিশোরের এক মামীর বোনের মেয়ে। সুরসিকা আর ঠোঁট-কাটা। কাছাকাছি বাড়ি, তাই আত্মীয়তার থেকে ঘনিষ্ঠতা বেশি। এম, এ, পড়ার সময়ে মনের তলায়। সুমিতাকে ঘিরে কিছু মিষ্টি সম্ভাবনাও উঁকিঝুঁকি দিত। খুব সংগোপনে। বছর আড়াই মোটা মাইনেয় চ্যাটার্জী মেটাল-এ চাকরি করার পর সেই সম্ভাবনা নিজের মধ্যেই দানা পাকিয়ে উঠেছিল। সুমিতার এম, এ, পরীক্ষার পরই একটা প্রস্তাব উত্থাপনের বাসনা ছিল গৌরকিশোরের। তার আগেই সব ওলট-পালট হয়ে গেল। অবশ্য সে জন্য চক্ষুলজ্জার কারণ নেই। সেই সাময়িক দুর্বলতার খবর সুমিতার জানার কথা নয়। খেদও নেই। বিত্ত বা বৈভব ছেড়ে বড় ঘরের মেয়ের রূপের টানও অন্য রকম।

    দেখা-টেখা হলে এই সুমিতাই ঠাট্টার ছলে ঠাসঠাস কথা শুনিয়ে দেন। স্কুল মাস্টারি করে মুখ আরো ঢিলে হয়েছে। এক মুখ হেসে সেদিন মায়ের সামনেই বলেছিলেন, বাবারে বাবা, গৌরদা তুমি দেখালে বটে, রাধিকার জন্যে স্বয়ং ব্রজকিশোরও এভাবে স্বজন ছেড়েছিল বলে শুনিনি!

    মা বলেছিলেন, তুই থাম তো

    আরো বেশি হেসে সুমিতা প্রতিবাদ করেছিলেন, আমি থামতে যাব কেন? আপনাদের ঘরের ছেলে, আপনারা মুখ বুজে থাকুন।

    বিয়ের পর শ্বশুর স্টিল অ্যাণ্ড নেট অ্যায়ারিং-এর নতুন শাখা খুলেছেন! তার সর্বময় কর্তৃত্ব দিয়েছেন ছোট ছেলে আর জামাইকে। আর পুরনো অফিস থেকে কিছু সুযোগ্য কর্মচারীও দিয়েছেন।

    কিন্তু লতার তবু দুশ্চিন্তা হয়েছিল। ছোড়দা আছেন সঙ্গে তাতে যেটুকু স্বস্তি। নইলে ওই মানুষের আলাদাভাবে ব্যবসা দাঁড় করানোর ক্ষমতা আছে এ বিশ্বাস তার আদৌ নেই।…আগাগোড়া পরীক্ষায় প্রথম হল কি করে, তার ওপর অঙ্কে, সেটাই তার কাছে বিস্ময়। সার্টিফিকেটগুলো না দেখলে বিশ্বাস হত না।

    পাঁচ বছরে শাখা-প্রতিষ্ঠান ভালোই দাঁড়িয়েছে। লতার বদ্ধ ধারণা, বাবা চোখ রেখেছিলেন, ছোড়দা আছেন, দরকারমত বড়দা-মেজদাও পরামর্শ দেন, তার ওপর বিশ্বস্ত কর্মচারীরা আছে–তাই দাঁড়িয়েছে। আর কারো কোনো কৃতিত্বের ছিটেফোঁটাও

    বিয়ের সাত বছরের মধ্যে নতুন কোম্পানীর লাভের টাকা দিয়ে লতার জমিতে মস্ত বাড়ি উঠেছে। গৃহপ্রবেশে ঘটা করে উৎসব করা হয়েছে।

    তারপর কৃষ্ণকমল চ্যাটার্জী চোখ বুজেছেন। স্টিল অ্যাণ্ড নেট অ্যায়ারিং-এর শিকড় তখন। পরিপুষ্ট। উইল-এ দেখা গেল, এই কোম্পানীর মালিকানার সবটাই তিনি ছোট মেয়ে জামাইকে দিয়ে রেখেছেন। অন্যান্য বিষয়-আশয় এবং চ্যাটার্জী মেটালস তিন ভাইয়ের।

    অতএব ছোট ছেলে ভগ্নিপুতির ব্যবসায়ের সংস্রব ছেড়ে চ্যাটার্জী মেটালস-এ চলে এসেছেন। লতা বিমর্ষ এবং চিন্তিত হয়েছিলেন। দাদাদের বলেছিলেন, তোমরা চলে এলে ওর দ্বারা ব্যবসা চলবে?

    দাদারা আশ্বাস দিয়েছেন–তারা চোখ ঠিকই রাখবেন, তাছাড়া বিশ্বস্ত কর্মচারীরা তো থাকলেনই।

    .

    লতার ছাব্বিশ, গৌরকিশোরের একত্রিশ।

    যার বীজ ভালো তার ফসলও ভালই। দুর্ভাবনা সত্ত্বেও কোম্পানী যে রীতিমত জাঁকিয়ে উঠেছে, তার পিছনে এটাই কারণ ভাবেন মিসেস অধিকারী। গৌরকিশোরই এ ব্যবসার হর্তা-কর্তা বিধাতা বটে, কিন্তু ভাগ্য চারদিক থেকে নিরাপদ প্রহরায় একজন অতি সাধারণ মানুষকে ওইখানে এনে তুলেছে, এই ধারণা তার একটুও বদলায়নি।

    ছেলেপুলে এখনো হয়নি। তার কারণ মিসেস অধিকারী এখনো তা চাননি। একতিরিশেও একুশের থেকে বেশি মন দিয়ে সাজ-সজ্জা করেন। সেটা বরং দিন কে-দিন সূক্ষ্মতর হচ্ছে। গায়ের জামা আর শাড়ির মাঝে আড়াই আঙ্গুলের জায়গায়। এখন চার আঙ্গুল কোমর দেখা যায়। কঁধখোলা মিহি ব্লাউসের টেপ ক্রমে গলার দিকে ঘেঁষছে। পোশাক-আশাকের ম্যাচিংএ অভিনবত্ব আসছে। বক্ষদেশের সম্ভারে বিভ্রম ছড়ানোর ললিত প্রয়াস স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। প্রসাধনের পারিপাট্য বেড়েছে। অভিজাত এলাকায় হাই সোসাইটির চটকদার পুরুষ-রমণীর আনাগোনা বেড়েছে।

    গৌরকিশোরের অবকাশ কম। প্রচুর খাটেন। আরো খাটলেও আপত্তি নেই লতা অধিকারীর। তাঁর এ-দিকটা নিজস্ব দিক, সংস্কৃতির দিক, মনের পুষ্টির দিক। অতএব গৌরকিশোর মুখ বুজে কাজ করেন আর লতা বা লোটি অধিকারী ঘণ্টা দেড়েক কেশ বিন্যাস করে ক্লাবে যান, ফাংশানে যান, পার্টিতে যান। কিন্তু হাই সোসাইটির রীতি অনুযায়ী যুগল উপস্থিতিরও প্রয়োজন হয় অনেক সময়। স্ত্রীর কাছে তখনই শুধু তাড়া খেতে হয় গৌরকিশোরের। বলেন, তোমাকে নিয়ে বেরুতে হলেই আমার ভাবনা হয়, ঠিক-ঠাক হয়ে নাও। নিজের ঠিক-ঠাক হওয়ার দিকে এই একজনের অবাধ্য দৃষ্টি বার কয়েক ঘুরতে দেখলেও ধমকে ওঠেন, হ্যাংলার মত চেয়ে থেকো না, আর পার্টিতে গিয়ে আমার পিছনে ঘুরো না–নাও চলো।

    অথচ অনুষ্ঠানের কোনো সুপুরুষ যখন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন,-ইউ লুক এক্সকুইজিট ম্যাডাম–তার হাতে হাত রেখে স্ত্রীটিকে বিগলিত হতে দেখেন গৌরকিশোর। বলতে শোনেন, থ্যাঙ্ক ইউ

    বোকা-বোকা মুখ করে আরো কিছু লক্ষ্য করেন গৌরকিশোর। কারো সঙ্গে শুধু অন্তরঙ্গতা, কারো সঙ্গে বা বেশি। এরই মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলিতে স্ত্রীর সেই বেশি অন্তরঙ্গতার রূপটাও গৌরকিশোরের নির্বাক চোখে বসে গেছে। একা বেরুলে স্ত্রীর অনেকদিনই ফিরতে রাত হয়–এতেও প্রায় অভ্যস্তই হয়ে উঠেছেন তিনি। …

    মিসেস লোটি অধিকারীর স্বাভাবিক দিনযাপনের সামান্য একটু অস্বস্তির ছায়া। পড়ল সেদিন হঠাৎ।

    নিজের চেকবই দুটো যে কোথায় রেখেছেন খুঁজে পাচ্ছেন না। গৌরকিশোর দাড়ি কামাচ্ছিলেন। স্ত্রী কিছু দরকারী জিনিস পাচ্ছেন না মনে হতে জিজ্ঞাসা করলেন, কি খুঁজছ?

    –চেকবই দুটোর একটাও পাচ্ছি না, এক্ষুনি দরকার।

    গৌরকিশোর বললেন, সেদিন তোমার টেবিলের ওপর পড়েছিল দেখে কোথায় রাখলাম…ওই আলমারিতে দেখো তো!

    দেখলেন নেই।

    –তাহলে ও-ঘরে আমার সুটকেসে রেখেছি বোধ হয়…দেখছি।

    অপেক্ষা করার সময় নেই মিসেস অধিকারীর। বিরক্ত।–তোমার সবেতে গোলমেলে কাণ্ড, টেবিলের ওপরে ছিল–ডুয়ারে রেখে দিলেই তো হত!

    ও-ঘরে গিয়ে নিজেই সুটকেস খুললেন। চেকবই পেলেন। কিন্তু সেই সঙ্গে আরো যে দুটো জিনিস চোখে পড়ল, তাতেই অবাক তিনি। একটা ফোটো আর নামকরা দোকান থেকে কেনা একটা শৌখিন শাড়ির প্যাকেট।

    ফটো একটি মেয়ের। হাসিমুখ, চেহারাও মন্দ নয়। বেশ স্মার্ট। আর প্যাকেটে কম করে তিনশ সাড়ে তিনশ টাকা দামের শাড়ি একটা।

    লতা অধিকারী প্রথমে হকচকিয়ে গেলেন একটু। এ দুটো বস্তু এখানে কেন বোধগম্য হল না। চেকবই পাওয়ার তাড়া ভুলেছেন আপাতত। ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সুটকেসে এক মেয়ের ফটো দেখলাম, কার?

    সাবান মাখানো মুখখানায় একটু ব্যস্ততাও লক্ষ্য করলেন যেন।

    গৌরকিশোর জবাব দিলেন, আ…আমার ভাইয়ের জন্য, মানে সত্যর জন্য এক জায়গায় মেয়ে দেখতে গেছলাম…ভদ্রলোক ধরেছিলেন, তারাই দিয়ে দিলেন।

    স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যে-ভাবে বললেন স্ত্রীর সেটাই বিরক্তির কারণ। দশ বছরেও যদি কথাবার্তা সপ্রতিভ হত একটু!–আর, শাড়ির প্যাকেট দেখলাম, সেটা কার?

    -ইয়ে, এক বন্ধুর বিয়ে, দেব বলে কিনেছি।

    এই জবাবটা কেন যেন খুব সরল ঠেকল না কানে। দোকানে গিয়ে নিজে পছন্দ করে এরকম শাড়ি কিনে নিয়ে আসতে পারে ধারণা ছিল না।–দামী শাড়ি মনে হচ্ছে, কে বন্ধু? কবে বিয়ে?

    নাম করে দিলেন একজনের। বললেন, খুব পুরনো বন্ধু। আজই বিয়ে–মানে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ।

    -তোমার একার নেমন্তন্ন?

    –হ্যাঁ, তুমি যেতে পারবে না বলে দিয়েছিলাম।

    –পারি বা না পারি তোমার বলার কি দরকার ছিল? আর শাড়ি কিনেছ, আমাকে দেখাওনি কেন?

    বিপদগ্রস্তের মত শেভিংএ মন দিলেন গৌরকিশোর।

    ব্যাপার কিছুই নয়, তবু ভিতরটা একটু খুঁতখুঁত করতে লাগল লতা অধিকারীর। তাকে না জানিয়ে বন্ধুর ভাবী বউয়ের জন্য আড়াইশ তিনশ টাকা দিয়ে শাড়ি কেনা হয়েছে, হলে হতেও পারে!

    গৌরকিশোর তার অলক্ষ্যে শাড়ি আর ফটো বার করে নিয়ে অফিসে চলে গেলেন।

    বেলা চারটে নাগাদ অফিস থেকে বেরুলেন। আজও মা আর বোন তাকে দেখে খুশি। ভাইয়েরা বাড়ি নেই। কিছুদিন ধরে একটা পরিবর্তন চোখে পড়ছে সকলেরই। বিশেষ করে মায়ের। ছেলে প্রায়ই আসছে, তাদের সকলকে নিয়ে সেদিন গাড়ি করে দক্ষিণেশ্বর থেকে বেড়িয়ে এনেছে–সুমিতা এসেছিল, তাকেও জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। আনন্দে মায়ের চোখে জল এসেছিল। হৈ-চৈ আনন্দের মধ্যে কেটেছে–ছেলে সকলের একসঙ্গে আর আলদা আলাদা সক্কলের ফটো তুলেছে।

    সেদিনও গৌরকিশোর হাসি-খুশি। শাড়ির প্যাকেট বোনের হাতে দিলেন, নে, এটা তুই পরিস।

    শাড়ি দেখে বোনের, আর সেই সঙ্গে মায়েরও চোখ ঠিকরোবার উপক্রম। এ রকম দামী বেনারসী পরা দূরে থাক, বোন হাতে নিয়েও দেখেনি।–এ তুমি আমার জন্যে কিনে আনলে নাকি দাদা!

    নির্লিপ্ত মুখে গৌরকিশোর বললেন, কিনে না তো কি আমি বেনারসী বানাচ্ছি!

    মা বলেছেন, যত্ন করে তুলে রেখে দে, পরে কাজে লাগবে।

    বোন মুখ লাল করে উঠে গেছে। পরে গৌরকিশোর তার মুখেই শুনেছেন, সুমিতাদি আগামী পরশু দিল্লী চলল, সেখানে কি একটা ভালো চাকরি পেয়েছে।

    গৌরকিশোরকে অন্যমনস্ক দেখা গেল একটু। ঠিক এরকম খবর আশা করেননি। খানিক বাদে আবার গাড়িতে উঠলেন। তখনো চিন্তামগ্ন।

    গাড়ি সুমিতাদের বাড়ির দরজায় থামল। সুমিতা তাকে দেখে অবাক প্রথম, পরে খুশি। আদরযত্ন করে বসালেন, পরে ঠাট্টাও করলেন, এই বাড়িতে ওই গাড়িসুদ্ধ তার মালিক হাজির–কি ব্যাপার?

    গৌরকিশোর বললেন, দিল্লীবাসিনী হচ্ছ শুনলাম, তাই এলাম দেখা করতে

    । সুমিতা হাসলেন, আমার দিল্লী যাত্রার ভাগ্য বটে!

    –কবে যাচ্ছ?

    -এই তো পরশু, প্রথমে পাটনায় দিদির কাছে যাব, সেখানে দুদিন থেকে দিল্লী।

    –পাটনার গাড়ি কটায়?

    –বিকেল পাঁচটা পঁয়ত্রিশে শুনলাম, কেন, সী অফ করতে যাবে?

    গৌরকিশোর হাসলেন। কিন্তু তিনি দ্রুততালে চিন্তাও করেছেন কিছু। বললেন, যেতে পারি, বলো তো স্টেশনে পৌঁছেও দিতে পারি।

    কি ভাগ্যি! বিশ্বাস করতে বলছ? দিলে তো বেঁচে যাই, আমার সঙ্গে আবার একগাদা মালপত্র।

    –ঠিক আছে, আমার গাড়িও ছোট নয়। সাড়ে তিনটেয় গাড়ি তোমার দরজায় হাজির হবে, সোয়া চারটের মধ্যে তুমি আমার অফিসে পৌঁছচ্ছ–পনের মিনিটের মধ্যে তুমি আমার অফিস দেখবে আর এক পেয়ালা চা খাবে–ঠিক সাড়ে চারটেয় আমরা বেরিয়ে পড়ব।

    –আবার তোমার অফিসে নামব।

    –নিজের হাতে, গড়লাম, একদিন দেখবেও না?

    অতএব সুমিতা সানন্দে রাজি হয়েছেন।

    এখানেও এক দফা চা খেয়ে গৌরকিশোর ওঠার আগে ব্যাগ খুলে ফটো বার করে তাঁর দিকে এগিয়ে দিলেন।–নাও, তোমার ফটো যখন, এক কপি তোমারও প্রাপ্য।

    ফটো পেয়ে সুমিতা আরো খুশি। জিজ্ঞাসা করলেন, অনেক তো তোলা হয়েছিল সেদিন, আর সকলের কই?

    -ডেভেলপ করা হয়নি এখনো, পরে পাঠাবখন।

    গাড়িতে বসে আবার চিন্তাচ্ছন্ন গৌরকিশোর। বাড়ি ফিরলেন। স্ত্রী বাড়িতে নেই। ভাবনার অনুকূল অবকাশ পেলেন। কিন্তু যা ভাবছেন, তার সুরাহা ঠিক হল না যেন।

    পরদিন অফিসেও চিন্তামগ্ন। আগামী কাল ঠিক পাঁচটায় স্ত্রীর সঙ্গে একটা জরুরী সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন সৃষ্টি করা দরকার। ঠিক সেই সময়ে একসঙ্গে দুজনের কোথাও এক পার্টির নেমন্তন্ন থাকলেও বেঁচে যেতেন।

    নেই। ফাইল সব টেবিলে পড়ে থাকল, গভীর ভাবনায় গৌরকিশোর তন্ময়।

    হঠাৎ সচকিত তিনি। মনে পড়েছে কিছু। ভিতরে চাপা উত্তেজনা। ঠাণ্ডা হয়ে বড় শালাকে টেলিফোন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, সকলে মিলে কেনার জন্য সেদিন একটা জমি দেখার কথা বলছিলেন, সেটা কোথায়?

    ওধার থেকে জবাব এলো, তোমার বাড়ি থেকে গাড়িতে মিনিট পনেরর পথ।

    –ঠিক আছে, কাল চলুন তাহলে–এর মধ্যে কালই তবু বিকেলের দিকে একটু ফ্রী আছি।

    পরদিন বিকেলেই জমি দেখতে যাওয়ার ব্যবস্থা পাকা হল। বিকেল পাঁচটা থেকে পাঁচটা দশ মিনিটের মধ্যে দুই শালা তার বাড়িতে আসবেন। গৌরকিশোরও অফিস থেকে তার মধ্যেই বাড়ি পৌঁছুবেন। তারপর তাকে নিয়ে সকলে মিলে জমি দেখতে যাবেন।

    পরদিন দাদাদের সঙ্গে জমি দেখতে যাওয়ার প্রোগ্রাম লতা রাত্রিতে শুনলেন। দাদারা যাতে আছেন তাতে তারও আগ্রহ স্বতঃস্ফুর্ত। অতএব তিনি সানন্দে রাজি।

    পরদিন অফিস যাবার আগে তিনিই স্মরণ করিয়ে দিলেন, পাঁচটার একটু আগেই চলে এসো, দেরি কোরো না-তোমার তো আবার যা সময়ের জ্ঞান

    অফিসে এসে সেদিন আর ফাইল স্পর্শও করলেন না গৌরকিশোর।

    সময়মত সুমিতার বাড়িতে, গাড়ি গেল, আর সময় ধরেই সুমিতা এলেন।

    সকলে ধরে নিলেন তেমন বিশিষ্ট মহিলাই কেউ এসেছেন, নইলে বড় সাহেব নিজে বেরিয়ে এসে আদর করে তাকে নিয়ে যেতেন না।

    ঘড়ি ধরে ঠিক সাড়ে চারটেতেই সুমিতাকে নিয়ে হাসিমুখে ঘর থেকে বেরুলেন গৌরকিশোর। দুপা এগিয়েই কি বুঝি মনে পড়ল তাঁর। বললেন, এক মিনিট

    আবার ঘরে ঢুকলেন। টেলিফোন তুলে মৃদু গলায় অফিসের অপারেটর গার্লকে নির্দেশ দিলেন কিছু। তারপর রিসিভার রেখে বেরিয়ে এলেন।

    .

    ঠিক পাঁচটা বাজতে লতা অধিকারীর মুখ গম্ভীর। দাদারা মিনিট তিনেক আগে এসে গেছেন, কিন্তু এই লোকের দেখা নেই। পাঁচটা বেজে পাঁচ হতেই ব্ৰিক্তির তাপ বাড়ল। পাঁচ মিনিট পর্যন্তই তিনি সময়ের হেরফের সহ্য করে থাকেন। গনগনে মুখে দাদাদের কাছ থেকে উঠে এসে শোবার ঘরে ঢুকে টেলিফোন তুলে নিলেন। অফিসের নম্বর ডায়েল করতে অপারেটর মেয়ের সাড়া পেলেন।

    –মিঃ অধিকারী প্লীজ!

    নির্দেশমতই অপারেটর সবিনয়ে জানালো, তিনি তো নেই, মিসেস অধিকারী এসেছিলেন–একটা জরুরী কাজে তার সঙ্গে তাকে বেরুতে হয়েছে।

    স্পষ্ট শুনেও লতা অধিকারী ঠিক বুঝলেন না। বিস্মিত এবং দ্বিগুণ বিরক্ত। –কে এসেছিলেন?

    -মিসেস অধিকারী।

    লতা বিমূঢ়।–মিসেস অধিকারী কোথায় এসেছিলেন?

    –আজ্ঞে, অফিসে।

    –মিঃ অধিকারী তার সঙ্গে বেরিয়েছেন?

    –আজ্ঞে হ্যাঁ। আপনি কে কল করছেন বলুন, মিঃ অধিকারী কাল এলে জানাব—

    –মিসেস অধিকারী।

    রিসিভার আছড়ে রাখলেন তিনি। ওদিক থেকে টেলিফোনের মেয়েটা হতভম্ব।

    সমস্ত মুখ রক্তবর্ণ লতা অধিকারীর। মাথার মধ্যে কি যেন ওলট-পালট হতে শুরু করেছে। বুদ্ধিও ঘুলিয়ে যাচ্ছে কেমন। ঘর থেকে বেরুলেন প্রায় দশ মিনিট বাদে। দাদারা জিজ্ঞাসা করলেন, কি রে, কি হল?

    তিনি বললেন, হঠাৎ কি জরুরী কাজে বেরিয়ে যেতে হয়েছে শুনলাম। আজ আর হবে না দাদা, কতক্ষণ অপেক্ষা করবে।

    তারাও বিরক্তি চেপেই উঠে গেলেন।

    একলা বাড়িতে লতা অধিকারী জ্বলতে থাকলেন। ঠাণ্ডা মাথায় যত বেশি ভাবতে চেষ্টা করছেন, ততো বেশি জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কানে মাথায় বারকয়েক জল দিয়েছেন। ভাবতে চেষ্টা করেছেন, হতেও পারে আর কোনো মিসেস অধিকারী।…হয়ই যদি আর কেউ, সে এমন কে যার জন্যে বাড়ির অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথাও মনে থাকল না…মনে। থাকলে টেলিফোনে জানিয়ে দিল না কেন?

    বিকেল গেল, সন্ধ্যা পার হল–এখনো দেখা নেই। হিজিবিজি চিন্তায় ভিতরটা তেতেই উঠছে ক্রমশ।…অত দামের শাড়ি কিনে এনে চুপচাপ বাক্সে রাখা হয়েছিল কার জন্যে?…ওই ফটোই বা কার? যে-বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নেই, সেখানকার ভাইয়ের জন্যে মেয়ে দেখতে গেছল…ঠিক বিশ্বাস করা যাচ্ছে না কেন এখন? মিসেস অধিকারী এসে মিঃ অধিকারীকে ডেকে নিয়ে গেল…সকলে কোন্ মিসেস অধিকারী ভেবেছে?

    .

    লতা অধিকারী কেবল বসছেন উঠছেন ঘরে বারান্দায় ঘুরপাক খাচ্ছেন। ভাবতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু অসহ্য রাগে ভাবতে কিছুই পারছেন না।

    গৌরকিশোর ফিরলেন রাত্রি প্রায় সাড়ে নটায়। সুমিতার গাড়ি ছাড়ার পর স্টেশন থেকে বেরিয়ে কি ভেবে দমদম চলে গেছলেন তিনি। এরোড্রামে একটানা দুঘণ্টার ওপর বসে থেকে তারপর উঠে চলে এসেছেন।…ড্রাইভারকে জেরা করবে না হয়ত, সেখানে কালচারের প্রশ্ন। আর করেই যদি, ধরা পড়তে আপত্তি নেই। ধরা পড়বার আশাতেই তো এত কিছু।

    অন্য দিন লতা চোখ তুলে তাকান না, আজ শুধু তাকিয়েই রইলেন। স্ত্রীর মেজাজ পত্র সুবিধের নয়, জামাকাপড় বদলাবার ফাঁকে গৌরকিশোর শুধু এটুকুই লক্ষ্য করলেন যেন।

    মিনিট পাঁচ সাত দুচোখ দিয়ে ওই মুখ ফালাফালা করে ভিতরে দেখতে চেষ্টা করলেন লতা অধিকারী। লোকটার ওই বিড়ম্বনা অভিব্যক্তি কেন যে মেকী মনে হল জানেন না।–এতক্ষণ কোথায় ছিলে?

    -একটু কাজে আটকে পড়েছিলাম।

    –দাদাদের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে কাজে আটকে পড়লে কেন?

    গৌরকিশোরবাবু যেন প্রচণ্ড একটা ধাক্কাই খেলেন হঠাৎ। কিছু মনে পড়েছে–সমস্ত মুখে সেই চকিতবিমূঢ় অভিব্যক্তি। টোক গিললেন, তারপর আমতা আমতা করে বললেন, হঠাৎ বেরিয়ে পড়তে হল…ইয়ে, ঠিক খেয়াল ছিল না। আবার টেক গিললেন।–তু-তুমি অফিসে আমার খোঁজ করেছিলে নাকি?

    রমণীর দুই চোখ তার মুখের ওপর আরো যেন কেটে কেটে বসছে। তিনি চোর ধরেননি, গোবেচারা-মুখ একটা ডাকাত ধরেছেন যেন। জবাব দিলেন না, শুধু প্রশ্নই করলেন।-তুমি কোন কাজে আটকে গেছলে?

    মিথ্যে বললে ধরা পড়ার সম্ভাবনা, এই ভয়েই যেন সত্যি জবাব দিলেন। এই…একজনকে তুলে দিতে গেছলাম

    কাকে তুলে দিতে গেছলে?

    –একটি মে-মানে–মহিলাকে।

    –কোথায় তুলে দিতে গেছলে?

    দমদম এরোড্রামে।

    –তার নাম কি?

    ঢোক গেলাটা এবারে বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ল লতার চোখে।

    –রমা।

    রমা কি?

    –ব্যানার্জী…

    দুই চোখে নিঃশব্দে ওই মুখ আর এক প্রস্থ দগ্ধে দিলেন লতা অধিকারী। মিসেস অধিকারী তাহলে কে, জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলেন না। যা বোঝবার ঠিকই বুঝেছেন, আরো কিছু বোঝা দরকার।

    –তিনি কোথায় গেলেন?

    –লণ্ডন।

    –একা?

    -হ্যাঁ, আগেও একবার গেছল, অক্সফোর্ডের এম, এ। সেখানকার ইকনমিক রিসার্চ অর্গানিজেশনে বড় চাকরি নিয়ে গেল, এখানেও এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের বড় অফিসার ছিল।

    -তুমি তাকে চিনলে কি করে?

    –বি, এ-তে অঙ্ক ছিল, আমার কাছ থেকে অঙ্ক বুঝে নিত।

    লতা অধিকারী দেখছেন। দেখছেন দেখছেন দেখছেন।-প্লেন কটায় ছেড়েছে?

    রাত সাড়ে আটটায়।

    –তুমি সাড়ে চারটেয় বেরিয়েছিলে কেন?

    –কিছু, মানে–কেনাকাটা ছিল

    আর কিছু জিজ্ঞাসা করার নেই। শেষবারের মত ওই মুখ ঝলসে দিয়ে লতা অধিকারী বেরিয়ে এলেন। তারপর রাতের মধ্যে আর ওই ঘরমুখো হলেন না। পাশের ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রায় সমস্ত রাত ধরে জ্বললেন আর ছটফট করলেন। ওই শাড়ি কার জন্যে কেনা হয়েছিল, আর ওই ফটোই বা কার-খুব ভালো করেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। জীবনে এরকম স্তম্ভিত আর তিনি হননি। গোবেচারার মুখোশপরা এত শয়তানী তিনি কল্পনাও করতে পারেন না। পাছে অফিসের কেউ কিছু মনে করে এজন্যে মিসেস অধিকারী বলে চালানো হয়েছে ওই মেয়েটাকে–এতখানি ধূর্ত! অফিসে প্রায়ই যাতায়াত ছিল নিশ্চয়, একদিন দুদিন হলে লোকের চোখে ধূলো দেওয়ার দরকার হত না। জীবনের মতই শিক্ষা দেবেন তিনি, কিন্তু কি যে করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বলেই একটুও শান্ত হতে পারছেন না।

    …একদিন দুদিন বা একবছর দুবছর নয়–ওই লোক একটানা দশ বছর ধরেই চোখে ধূলো দিয়ে এসেছে তার। নিজের বোকামিটাই থেকে থেকে বড় হয়ে উঠছে! সত্যি সত্যি গোবেচারা হলে আই, এস-সি থেকে এম, এ, পর্যন্ত একটানা ফার্স্ট হয় কি করে, এটা তার ভাবা উচিত ছিল। …সেও আবার অঙ্কে! নির্বোধ হলে তার অত বুদ্ধিমান বাবা তাকে জামাই করতেন না, এ সত্য আজ নতুন করে চিন্তা করতে হল। আর মগজের। সে-রকম জোর না থাকলে দেখতে দেখতে ব্যবসা এত বড় হয়ে উঠত না, তাও এই রাতেই প্রথম উপলব্ধি করলেন। শুধু তাই নয়, অক্সফোর্ডের এম, এ, পাস মেয়ের অত খাতির পেতে হলে মাথায় যে বেশ কিছু থাকা দরকার, তাও হাড়ে হাড়ে অনুভব করছেন তিনি।

    মাথার মধ্যে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে।…এই বাড়ি তার, ওই ব্যবসায়ও তারই। বাবার টাকায়। অনেক কিছুই করতে পারেন তিনি। কিন্তু সেভাবে হেস্তনেস্ত করার। মত আর আক্রোশ মেটার মত কিছুই ভেবে উঠতে পারছেন না।

    দিন কাটতে লাগল। একটা দুটো করে মাসও।

    লতা অধিকারীর ক্লাবে যাওয়া কমে এলো, ফাংশনে যাওয়া কমে এলো, পার্টিতে যাওয়া কমে এলো, কমতে কমতে বন্ধই হয়ে এলো একসময়। উষ্ণ আপ্যায়নের অভাবে চটকদার পুরুষ-রমণীদের আনাগোনায় ভাটা পড়ল। প্রসাধনের একাগ্রতায় ছেদ পড়ল, ম্যাচিংএ অভিনবত্ব রচনার ঝোঁক গেল, টেপ ব্লাউস গলা থেকে সরতে সরতে ক্রমে কাধ। ঢেকে দিতে লাগল, গায়ের জামা আর শাড়ির মাঝের ফারাক সঙ্কীর্ণতর হতে থাকল।

    সমস্ত অবকাশ শুধু একজনের প্রতি সজাগ লক্ষ্য আর প্রহরায় নিবিষ্ট হল।

    .

    লতা অধিকারী প্রথম সন্তানের জননী হলেন বত্রিশ বছর বয়সে–ছেলে। দ্বিতীয় সন্তান এলো সাড়ে তেত্রিশে–ছেলে। তৃতীয় সন্তান এলো ছত্রিশে–ছেলে।

    লতা অধিকারী অসহিষ্ণু বিরতি ঘোষণা করলেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতে আর একজনের অভিলাষ টের পেয়ে তপ্ত হয়ে উঠলেন–একটি মেয়ের বাসনা। সরোষে। একটানা বছর দুই বাসনা নাকচ করে চললেন।

    তারপর চতুর্থবার এবং শেষবার নার্সিংহোমে এলেন উনচল্লিশ বছর বয়সে।

    এবারও ছেলে।

    পরদিন গৌরকিশোর নার্সিংহোমের ঘরে এসে দাঁড়ালেন মাত্র, তার মুখের ওপর এক পলক আগুন ছড়িয়ে লতা অধিকারী ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, হয়েছে? ফের কাছে। ঘেঁষবে তো তোমাকে আমি

    কি করবেন সেটা আর সম্পূর্ণ করে উঠতে পারলেন না। সেই চিরাচরিত গোবেচারা-মূর্তি দেখে গা জুলল তার। সরোষে পাশ ফিরলেন।

    লতা অধিকারীর আটান্ন আর গৌরকিশোরের তেষট্টি।

    এ পর্যন্ত সমান দাপটে স্বামী শাসন করে এসেছেন লতা অধিকারী, ওই মুখের সদা গোবেচারা ভাব আজও তার চক্ষুশূল। শাসন দেখে মনে মনে ছেলেরাও মায়ের থেকে বাপের প্রতি বেশি সদয়।

    বাইরে তারা আদর্শ অভিজাত দম্পতি। কোনো সভা বা অনুষ্ঠানে একজনকে ছেড়ে আর একজনকে দেখেনি কেউ। অল্পবয়সী ছেলেরা বলে কায়াযুক্ত ছায়া যথা

    সেদিনও কি এক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে গেছলেন গৌরকিশোর। লতা অধিকারী যথারীতি তার পাশে প্রধানা মহিলার আসন গ্রহণ করেছেন। সভাপতির চিরাচরিত সংক্ষিপ্ততম ভাষণের ভূমিকা শুনে লতা অধিকারীর গা জ্বলেছে। গৌরকিশোর বলেছেন, বক্তৃতা করার মত অত চালাকচতুর বা চৌকস নন তিনি, অতএব কি আর বলবেন…।

    বাড়ি ফিরেই বিব্রত মুখ করে স্ত্রীকে জানালেন, শরীরটা কেমন যেন করছে, ভালো লাগছে না।

    বক্তৃতায় টিকা-টিপ্পনী কেটে এসে এখন একটু সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের ছল কিনা, মুখের দিকে চেয়ে সেটাই আগে বুঝতে চেষ্টা করলেন লতা অধিকারী। কিন্তু খটকা লাগল কেমন।

    গৌরকিশোর ঠাণ্ডা জল চেয়ে খেলেন এক গেলাস। শুয়ে পড়লেন। শরীরের সমস্ত রক্তকণাগুলো যেন জ্বলছে আর গায়ে আলপিন ফোঁটাচ্ছে। বুকের একদিকে যন্ত্রণাও বোধ করছেন। মাথার উপর পুরোদমে পাখা ঘুরছে কিন্তু তিনি ঘামছেন। চোখে ঝাপসা দেখছেন। স্ত্রীকে তাড়াতাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যেতে দেখলেন। একটু বাদে ফিরে এসে মুখের ওপর ঝুঁকে পড়েছেন তাও টের পেলেন। ছেলেরা ঘরে ঢুকেছে, দুজন আবার ছুটে বেরিয়েও গেল মনে হল। চোখ টান করে স্ত্রীর মুখখানাই দেখতে চেষ্টা করলেন তিনি। মাথার ভিতরে সবকিছু গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে, রক্তের জ্বালা বাড়ছে, আর ফাঁকে ফাঁকে কি যেন মনে করতে চেষ্টা করছেন তিনি। ভবিষ্যৎ গণনায় পটু এক বন্ধুকে কবে যেন কি দেখতে পাবেন কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন…

    গৌরকিশোর চোখ বুঝলেন। আর তাকালেন না।

    লতার চোখে জল দেখতে চেয়েছিলেন গৌরকিশোর।

    লতা অধিকারী অঝোরে কাঁদছেন।

    গৌরকিশোর দেখছেন কি?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফেরারী অতীত – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    Next Article ত্রিবর্ণা – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }