Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দেবদাস

    Devdas – Sarat Chandra Chatterjee
    উপন্যাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক পাতা গল্প124 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    নবম পরিচ্ছেদ

    আর দেবদাস? সে রাত্রিটা সে কলিকাতা ইডেন গার্ডেনের একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া কাটাইয়া দিল। তাহার খুব যে কে­শ হইতেছিল, যাতনায় মর্মভেদ হইতেছিল, তাহা নয়। কেমন একটা শিথিল ঔদাস্য ধীরে ধীরে বুকের মধ্যে জমা হইয়া উঠিতেছিল। নিদ্রার মধ্যে শরীরের কোন একটা অঙ্গে হঠাৎ পক্ষাঘাত হইলে, ঘুম ভাঙ্গিয়া সেটার উপর যেমন কোন অধিকার খুঁজিয়া পাওয়া যায় না, এবং বিস্মিত স্তম্ভিত মন মুহূর্ত ঠাওরাইতে পারে না, কেন তাহার আজন্ম-সঙ্গী চিরদিনের বিশ্বস্ত অঙ্গটা তাহার আহ্বানে সাড়া দিতেছে না; তাহার পর ধীরে ধীরে বুঝিতে পারা যায়, ধীরে ধীরে জ্ঞান জন্মে যে, এটা আর তাহার নিজের নাই; দেবদাস এমনি ধীরে ধীরে সমস্ত রাত্রি ধরিয়া বুঝিতেছিল যে, সময়ে সংসারটার অকস্মাৎ পক্ষাঘাত হইয়া, তাহার সহিত চিরদিনের জন্য বিচ্ছেদ হইয়া গিয়াছে। এখন তাহার উপর মিথ্যা রাগ-অভিমান আর কিছুই খাটিবে না। সাবেক অধিকারের কথাটা ভাবিতে যাওয়াই ভুল হইবে। তখন সূর্যোদয় হইতেছিল। দেবদাস উঠিয়া দাঁড়াইয়া ভাবিল, কোথায় যাই। হঠাৎ স্মরণ হইল তাহার কলিকাতার বাসাটা। সেখানে চুনিলাল আছে। দেবদাস চলিতে লাগিল। পথে বার-দুই ধাক্কা খাইল, হোঁচট খাইয়া অঙ্গুলি রক্তাক্ত করিল-টাল খাইয়া একজনের গায়ের উপর পড়িতেছিল,-সে মাতাল বলিয়া ঠেলিয়া দিল। এমনি করিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া দিনশেষে মেসের দরজায় আসিয়া দাঁড়াইল। চুনিবাবু তখন বেশবিন্যাস করিয়া বাহির হইতেছিলেন। -এ কি, দেবদাস যে!

    দেবদাস নীরবে চাহিয়া রহিল।

    কখন এলে হে? মুখ শুকনো, স্নানাহার হয়নি-ও কি-কি! দেবদাস পথের উপরেই বসিয়া পড়িতেছিল, চুনিলাল হাত ধরিয়া ভিতরে লইয়া গেল। নিজের শয্যার উপর বসাইয়া, শান্ত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ব্যাপার কি দেবদাস?

    কাল বাড়ি থেকে এসেচি।

    কাল? সমস্তদিন তবে ছিলে কোথায়? রাত্রেই বা কোথায় ছিলে?

    ইডেন গার্ডেনে।

    পাগল নাকি! কি হয়েছে, বল দেখি?

    শুনে কি হবে?

    না বল, এখন খাওয়া-দাওয়া করো। তোমার জিনিসপত্র কোথায় ?

    কিছুই আনিনি।

    তা হোক, এখন খেতে বোস।

    তখন জোর করিয়া চুনিলাল কিছু আহার করাইয়া,শয্যায় শুইতে আদেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিতে করিতে কহিল, একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর, আমি রাত্রে এসে তোমাকে তুলব। বলিয়া সে তখনকার মত চলিয়া গেল। রাত্রি দশটার মধ্যে সে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, দেবদাস তাহার বিছানায় গভীর নিদ্রায় সুপ্ত। না ডাকিয়া, সে নিজে একখানা ক’ল টানিয়া লইয়া, নীচে মাদুর পাতিয়া শুইয়া পড়িল। সারা রাত্রির মধ্যে দেবদাসের ঘুম ভাঙ্গিল না, প্রভাতেও না। বেলা দশটার সময় সে উঠিয়া বসিয়া কহিল, চুনিবাবু, কখন এলে হে?

    এইমাত্র আসচি।

    তবে তোমার কোনরকম অসুবিধা হয়নি!

    কিছু না।

    দেবদাস কিছুক্ষণ তাহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, চুনিবাবু, আমার যে কিছু নেই, তুমি আমাকে প্রতিপালন করবে?

    চুনিলাল হাসিল। সে জানিত, দেবদাসের পিতা মহা ধনবান ব্যক্তি। তাই হাসিয়া কহিল, আমি প্রতিপালন করব! বেশ কথা। তোমার যতদিন ইচ্ছা থাক, কোন ভাবনা নেই।

    চুনিবাবু, তোমার আয় কত?

    ভাই, আমার আয় সামান্য। বাটীতে কিছু বিষয়-সম্পত্তি আছে, তা দাদার কাছে গচ্ছিত রেখে এখানে বাস করি। তিনি প্রতিমাসে সত্তর টাকা হিসাবে পাঠিয়ে দেন। এতে তোমার আমার স্বচ্ছন্দে চলে যাবে।

    তুমি বাড়ি যাও না কেন?

    চুনিলাল ঈষৎ মুখ ফিরাইয়া কহিল, সে অনেক কথা।

    দেবদাস আর কিছু জিজ্ঞাসা করিল না। ক্রমে আহারাদির জন্য ডাক পড়িল। তাহার পর দুইজনে স্নানাহার শেষ করিয়া পুনরায় ঘরে আসিয়া বসিলে চুনিলাল বলিল, দেবদাস, বাপের সঙ্গে ঝগড়া করেচ?

    না।

    আর কারো সঙ্গে?

    দেবদাস তেমনি জবাব দিল, না।

    তাহার পর চুনিলালের হঠাৎ অন্য কথা স্মরণ হইল। কহিল, ওহো, তোমার এখনো বিয়েই হয়নি যে!

    এই সময় দেবদাস অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া শুইয়া পড়িল। অল্পক্ষণেই চুনিলাল দেখিল, দেবদাস ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। এমনি করিয়া ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া আরও দুইদিন অতীত হইল। তৃতীয় দিবসের প্রাতঃকালে দেবদাস সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিল। মুখ হইতে সেই ঘন ছায়া যেন অনেকটা সরিয়া গিয়াছে বোধ হইল। চুনিলাল জিজ্ঞাসা করিল, আজ শরীর কেমন?

    বোধ হয় অনেকটা ভাল। আচ্ছা চুনিবাবু, রাত্রে তুমি কোথায় যাও?

    আজ চুনিলাল লজ্জিত হইল; বলিল, হাঁ, তা যাই বটে, কিন্তু সে কথা কেন?

    আচ্ছা,-আর তুমি কেন কলেজে যাও না?

    না-লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েচি।

    ছিঃ, তা কি হয়? মাস-দুই পরে তোমার পরীক্ষা। পড়াও তোমার মন্দ হয়নি, এবার কেন পরীক্ষা দাও না!

    না-পড়া ছেড়ে দিয়েচি।

    চুনিলাল চুপ করিয়া রহিল। দেবদাস পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় যাও-বলবে না? তোমার সঙ্গে আমিও যাবো।

    চুনিলাল দেবদাসের মুখপানে চাহিয়া বলিল, কি জান দেবদাস,আমি খুব ভাল জায়গায় যাইনে।

    দেবদাস যেন আপনার মনে কহিল, ভাল আর মন্দ! ছাই কথা!-চুনিবাবু, আমাকে সঙ্গে নেবে না?

    তা নিতে পারি। কিন্তু তুমি যেয়ো না।

    না, আমি যাবই। যদি ভাল না লাগে, আর না হয় যাব না। কিন্তু তুমি যে সুখের আশায় প্রত্যহ উন্মুখ হয়ে থাকো-যাই হোক চুনিবাবু, আমি নিশ্চয়ই যাবো।

    চুনিলাল মুখ ফিরাইয়া একটু হাসিল; মনে মনে বলিল, আমার দশা! মুখে বলিল, আচ্ছা তাই যেয়ো।

    অপরাহ¦বেলায় ধর্মদাস জিনিসপত্র লইয়া উপস্থিত হইল। দেবদাসকে দেখিয়া কাঁদিয়া ফেলিল। দেব্তা? আজ তিন-চারদিন ধরে মা কত যে কাঁদচেন-

    কেন রে?

    কিছু না বলে হঠাৎ চলে এলে কেন? একখানা পত্র বাহির করিয়া হাতে দিয়া কহিল, মার চিঠি।

    চুনিলাল ভিতরের খবর বুঝিবার জন্য উৎসুকভাবে চাহিয়া রহিল। দেবদাস পত্র পাঠ করিয়া রাখিয়া দিল। জননী বাটী আসিবার জন্য আদেশ ও অনুরোধ করিয়া লিখিয়াছেন। সমস্ত বাটীর মধ্যে তিনিই শুধু দেবদাসের অকস্মাৎ তিরোধানের কারণ কতকটা অনুমান করিতে পারিয়াছিলেন। ধর্মদাসের হাত দিয়া লুকাইয়া অনেকগুলি টাকাও পাঠাইয়াছিলেন। ধর্মদাস সেগুলি হাতে দিয়া কহিল, দেব্তা, বাড়ি চল।

    আমি যাব না। তুই ফিরে যা।

    রাত্রিতে দুই বন্ধু বেশবিন্যাস করিয়া বাহির হইল। দেবদাসের এ-সকলে তেমন প্রবৃত্তি ছিল না, কিন্তু চুনিলাল কিছুতেই সামান্য পোশাকে বাহির হইতে রাজী হইল না। রাত্রি নয়টার সময় একখানা ভাড়াটিয়া গাড়ি চীৎপুরের একটি দ্বিতল বাটীর সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। চুনিলাল দেবদাসের হাত ধরিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল। গৃহস্বামিনীর নাম চন্দ্রমুখী-সে আসিয়া অভ্যর্থনা করিল। এইবার দেবদাসের সর্বশরীর জ্বালা করিয়া উঠিল। সে যে এই কয়দিন ধরিয়া নিজের অজ্ঞাতসারে নারীদেহের ছায়ার উপরেও বিমুখ হইয়া উঠিতেছিল, ইহা সে নিজেই জানিত না। চন্দ্রমুখীকে দেখিবামাত্রই অন্তরের নিবিড় ঘৃণা দাবদাহের ন্যায় বুকের ভিতর প্রজ্ব¡লিত হইয়া উঠিল। চুনিলালের মুখপানে চাহিয়া ভ্রূকুটি করিয়া কহিল, চুনিবাবু, এ কোন্ হতভাগা জায়গায় আনলে? তার তীব্রকণ্ঠ ও চোখের দৃষ্টি দেখিয়া চন্দ্রমুখী ও চুনিলাল উভয়েই হতবুদ্ধি হইয়া গেল। পরক্ষণেই চুনিলাল আপনাকে সামলাইয়া লইয়া দেবদাসের একটা হাত ধরিয়া কোমলকণ্ঠে কহিল, চল চল, ভিতরে গিয়ে বসি।

    দেবদাস আর কিছু কহিল না-ঘরের ভিতরে আসিয়া নীচের বিছানায় বিষণ্ন নতমুখে উপবেশন করিল। চন্দ্রমুখীও নীরবে অদূরে বসিয়া পড়িল। ঝি রূপা-বাঁধানো হুঁকায় তামাক সাজিয়া আনিয়া দিল-দেবদাস স্পর্শও করিল না। চুনিলাল মুখ ভার করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। ঝি কি করিবে ভাবিয়া না পাইয়া অবশেষে চন্দ্রমুখীর হাতেই হুঁকাটা দিয়া প্রস্থান করিল। সে দুই-একবার টানিবার সময়, তীক্ষèদৃষ্টিতে দেবদাস তাহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া, হঠাৎ নিরতিশয় ঘৃণাভরে বলিয়া উঠিল, কি অসভ্য! আর কি বিশ্রীই দেখতে!

    ইতিপূর্বে চন্দ্রমুখীকে কেহ কখনো ঠকাইতে পারে নাই। তাহাকে অপ্রতিভ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু দেবদাসের এই আন্তরিক ঘৃণার সরল এবং কঠিন উক্তি তাহার ভিতরে গিয়া পৌঁছিল। ক্ষণকালের জন্য সে হতবুদ্ধি হইয়া গেল। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরে আরও বার-দুই গুড়গুড় করিয়া শব্দ হইল, কিন্তু চন্দ্রমুখীর মুখ দিয়া আর ধোঁয়া বাহির হইল না। তখন চুনিলালের হাতে হুঁকা দিয়া সে একবার দেবদাসের মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল, তাহার পর নিঃশব্দে বসিয়া রহিল। নির্বাক তিনজনেই। শুধু গুড়গুড় করিয়া হুঁকার শব্দ হইতেছে, কিন্তু তাহা যেন বড় ভয়ে ভয়ে। বন্ধুমণ্ডলীর মাঝে তর্ক উঠিয়া হঠাৎ নিরর্থক একটা কলহ হইয়া গেলে, প্রত্যেকেই যেমন নীরবে নিজের মনে ফুলিতে থাকে, এবং ক্ষুব্ধ অন্তঃকরণ মিছামিছি কহিতে থাকে, তাইত! এমনি তিনজনেই মনে মনে বলিতে লাগিল, তাইত! এ কেমন হইল!

    যেমনই হোক, কেহই স্বস্তি পাইতেছিল না। চুনিলাল হুঁকা রাখিয়া দিয়া নীচে নামিয়া গেল, বোধ করি আর কোন কাজ খুঁজিয়া পাইল না,-তাই। ঘরে দুইজনে বসিয়া রহিল। দেবদাস মুখ তুলিয়া কহিল, তুমি টাকা নাও?

    চন্দ্রমুখী সহসা উত্তর দিতে পারিল না। আজ তার চব্বিশ বৎসর বয়স হইয়াছে, এই নয়-দশ বৎসরের মধ্যে কত বিভিন্ন প্রকৃতির লোকের সহিত তাহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় হইয়াছে; কিন্তু এমন আশ্চর্য লোক সে একটি দিনও দেখে নাই। একটু ইতস্ততঃ করিয়া কহিল, আপনার যখন পায়ের ধূলো পড়েচে-

    দেবদাস কথাটা শেষ করিতে না দিয়াই বলিয়া উঠিল, পায়ের ধূলোর কথা নয়। টাকা নাও ত?

    তা নিই বৈ কি। না হলে আমাদের চলবে কিসে?

    থাক, অত শুনতে চাইনে। বলিয়া সে পকেটে হাত দিয়া একখানা নোট বাহির করিল এবং চন্দ্রমুখীর হাতে দিয়াই চলিতে উদ্যত হইল-একবার চাহিয়াও দেখিল না কত টাকা দিল।

    চন্দ্রমুখী বিনীতভাবে কহিল, এরি মধ্যে যাবেন?

    দেবদাস কথা কহিল না-বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইল।

    চন্দ্রমুখীর একবার ইচ্ছা হইল, টাকাটা ফিরাইয়া দেয়; কিন্তু কেমন একটা তীব্র সঙ্কোচের বশে পারিল না, বোধ করি বা একটু ভয়ও তাহার হইয়াছিল। তা ছাড়া, অনেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও অপমান সহ্য করা অভ্যাস তাহাদের আছে বলিয়াই নির্বাক নিস্পন্দ হইয়া চৌকাঠ ধরিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। দেবদাস সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া গেল।

    সিঁড়ির পথেই চুনিলালের সহিত দেখা হইল। সে আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, কোথায় যাচ্চ দেবদাস?

    বাসায় যাচ্চি।

    সে কি হে?

    দেবদাস আরও দুই-তিনটি সিঁড়ি নামিয়া পড়িল।

    চুনিলাল কহিল, চল, আমিও যাই।

    দেবদাস কাছে আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া বলিল, চল।

    একটু দাঁড়াও, একবার উপর থেকে আসি।

    না, আমি যাই, তুমি পরে এসো-বলিয়া দেবদাস চলিয়া গেল।

    চুনিলাল উপরে আসিয়া দেখিল, চন্দ্রমুখী তখনও সেইভাবে চৌকাঠ ধরিয়া দাঁড়াইয়া আছে।

    তাহাকে দেখিয়া কহিল, বন্ধু চলে গেল?

    হ্যাঁ।

    চন্দ্রমুখী হাতের নোট দেখাইয়া কহিল, এই দেখ। কিন্তু ভাল বোধ কর ত নিয়ে যাও; তোমার বন্ধুকে ফিরিয়ে দিয়ো।

    চুনিলাল কহিল, সে ইচ্ছে করে দিয়ে গেছে, আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো কেন?

    এতক্ষণ পরে চন্দ্রমুখী একটুখানি হাসিতে পারিল; কিন্তু হাসিতে আনন্দ ছিল না। কহিল, ইচ্ছে করে নয়, আমার টাকা নেই বলে রাগ করে দিয়ে গেছে। হাঁ চুনিবাবু, লোকটা কি পাগল?

    একটুও না। তবে আজ কদিন থেকে বোধ করি ওর মন ভালো নেই।

    কেন মন ভালো নেই-কিছু জানো?

    তা জানিনে। বোধ হয় বাড়িতে কিছু হয়ে থাকবে।

    তবে এখানে আনলে কেন?

    আমি আনতে চাইনি, সে নিজে জোর করে এসেছিল।

    চন্দ্রমুখী এবার যথার্থই বিস্মিত হইল। কহিল, জোর করে নিজে এসেছিল, সমস্ত জেনে?

    চুনিলাল একটুখানি ভাবিয়া কহিল, তা বৈ কি! সমস্তই ত জানত। আমি ত আর ভুলিয়ে আনিনি!

    চন্দ্রমুখী কিছুক্ষণ চুপ করিয়া কি ভাবিয়া কহিল, চুনি, আমার একটি উপকার করবে?

    কি?

    তোমার বন্ধু কোথায় থাকেন?

    আমার কাছে।

    আর-একদিন তাকে আনতে পারবে?

    তা বোধ হয় পারব না। এর আগেও কখনো সে এ-সব জায়গায় আসেনি, পরেও বোধ হয় আর আসবে না। কিন্তু কেন বল দেখি?

    চন্দ্রমুখী একটু ম্লান হাসি হাসিয়া বলিল, চুনি, যেমন করে হোক, ভুলিয়ে আর একবার তাকে এনো।

    চুনি হাসিল; চোখ টিপিয়া কহিল, ধমক খেয়ে ভালবাসা জন্মাল নাকি?

    চন্দ্রমুখীও হাসিল; কহিল, না দেখে নোট দিয়ে যায়-এটা বুঝলে না?

    চুনি চন্দ্রমুখীকে কতকটা চিনিতে পারিয়াছিল। ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না-না, নোট-ফোটের লোক আলাদা-সে তুমি নও। কিন্তু সত্যি কথাটা বল ত?

    চন্দ্রমুখী কহিল, সত্যিই একটু মায়া পড়েচে।

    চুনি বিশ্বাস করিল না; হাসিয়া কহিল, এই পাঁচ-মিনিটের মধ্যে?

    এবার চন্দ্রমুখীও হাসিতে লাগিল। বলিল, তা হোক। মন ভালো হলে আর একদিন এনো-আর একবার দেখব। আনবে ত?

    কি জানি!

    আমার মাথার দিব্যি রইল।

    আচ্ছা-দেখব।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমিত্ৰপ্ৰাপ্তি
    Next Article আদর্শ হিন্দু-হোটেল

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    চলিত ভাষার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    দর্পচূর্ণ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    May 6, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }