Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দেয়াল – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প214 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৬. সাতই নভেম্বরের ভোরবেলা

    সাতই নভেম্বরের ভোরবেলাটা অবন্তির কাছে অন্যরকম মনে হলো। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি, দমকা হাওয়া। ঢাকা শহর ডুবিয়ে দেবে এমন অবস্থা। হঠাৎ আসা বৃষ্টি হঠাৎ থেমে গিয়ে ঝকঝকে রোদ উঠল। সেই রোদ ভেজা গাছের পাতায় কী সুন্দর করেই না মিশে যাচ্ছে। অবন্তি শব্দ করে বলল, বাহ! ঢাকার নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ।

    প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সরফরাজ খান আতংকিত গলায় বললেন, কে কথা বলে? কে?

    অবন্তি বলল, দাদাজান, আমি কথা বলেছি।

    সরফরাজ বললেন, তুই না। তোর গলা আমি চিনি। পুরুষের গলা। হারামজাদাটা এসেছে? আসা-যাওয়া বন্ধ করতে হবে। He has no business here. বদের বাচ্চা বদ! মতলববাজ মতলব নিয়ে ঘুরছে।

    দরজা খুলে সরফরাজ বের হলেন। এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন। চাপা গলায় বললেন, বদটা কই?

    অবন্তি বলল, কোন বদের কথা বলছ? হাফেজ জাহাঙ্গীর?

    হুঁ।

    সে আসে নি দাদাজান। আমি কথা বলছিলাম। তুমি আমার কথা শুনেছ। আমার ধারণা, তোমার জ্বর বেড়েছে। জ্বরের ঘোরে মাথা এলোমলো। যাও শুয়ে থাকো।

    সরফরাজ খান বললেন, আমি পরিষ্কার বদটার গলা শুনলাম। ঢাকার আকাশে যুদ্ধ’–এইসব হাবিজাবি কথা বলছে।

    হাবিজাবি কথা আমি বলছিলাম। আর দাদাজান শোনো, কথায় কথায় একজন মানুষকে বদ, বদের বাচ্চা এইসব বলবে না।

    বদকে বদ বলব না?

    অবন্তি বলল, হাফেজ জাহাঙ্গীর আর যা-ই হোক বদ না।

    তুই বুঝে ফেলেছিস?

    হ্যাঁ, বুঝে ফেলেছি। তুমি বিছানায় গিয়ে শোও, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

    সরফরাজ খান ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, আমার সেবা লাগবে না। তুই বদটার জন্যে তোর সেবা জমা করে রাখ। হাফেজ জাহাঙ্গীর এক বদ আর তুই এক বদনি।

    অবন্তি বলল, ভালো বলেছ তো। বদ-বদনি। মিস্টার অ্যান্ড মিসেস বদবদনি।

    সরফরাজ খান অবন্তির মুখের ওপর শব্দ করে দরজা বন্ধ করলেন। অবন্তি মগভর্তি চা নিয়ে ছাদে চলে গেল। সুন্দর একটা সকাল নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক না।

    ছাদের কামিনীগাছে গত রাতে ফুল ফুটেছে। ছাদভর্তি কামিনী ফুলের সুঘ্রাণ। মগে চুমুক দিয়ে অবন্তি বলল, বাহ্ কী অদ্ভুত গন্ধ! বলতে বলতেই তার চোখে পড়ল হাফেজ জাহাঙ্গীর আসছেন। কাকতালীয় ব্যাপার তো বটেই। দাদাজান হাফেজ জাহাঙ্গীরের কথা বললেন, সঙ্গে সঙ্গেই তার দেখা পাওয়া গেল। কে বলবে কেন এত ঘনঘন কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে। হাফেজ জাহাঙ্গীরের হাতে বিশাল এক টিফিন ক্যারিয়ার। নিশ্চয়ই টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি উরসের খাবার। নভেম্বরের ছয় তারিখ উরস হওয়ার কথা। অবন্তি নিচে নেমে এল।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, কেমন আছ মায়মুনা?

    অবন্তি বলল, মায়মুনা কেমন আছে আমি জানি না, তবে আমি ভালো আছি। টিফিন ক্যারিয়ারে কি উরসের খাবার?

    খাবার না, সিন্নি। উরসের সিন্নি।

    দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, ঘরে ঢুকব না। এখন চলে যাব। কিছুক্ষণ আগে ইশারা পেয়েছি, আমার মা মারা গেছেন। তাঁর নামাজে জানাজা পড়তে হবে।

    অবন্তি বলল, ইশারা কে দিল? আপনার পোষ জ্বিন?

    জাহাঙ্গীর জবাব দিলেন না। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন। ক্লান্ত গলায় বললেন, সিন্নিটা অজু করে খেয়ো। জীবজন্তু পশুপাখিকে খেতে দিয়ো না।

    তাদের কেন সিন্নি খেতে দেওয়া যাবে না?

    পশুপাখি-জীবজন্তুকে খাওয়ানোর দায়িত্ব মানুষের না। এই দায়িত্ব আল্লাহপাক নিজে নিয়েছেন।

    অবন্তি বলল, দরজায় দাঁড়িয়ে কতক্ষণ আর বকবক করবেন? ঘরে এসে বসুন। আমার সঙ্গে সকালের নাশতা করুন।

    মায়মুনা, আমি রোজা রেখেছি।

    রোজা ভাঙুন।

    রোজা ভাঙব?

    হ্যাঁ।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর হতভম্ব গলায় বললেন, আল্লাহপাকের নামে যে রোজা রেখেছি তা তোমার কথায় ভাঙব?

    হ্যাঁ। সব মানুষের ভেতরই আল্লাহ অবস্থান করেন। কাজেই আমার কথা এক অর্থে আল্লাহপাকেরই কথা।

    জাহাঙ্গীর হতাশ গলায় বললেন, আমি রোজা ভাঙব, তবে তোমার কথা আল্লাহপাকের কথা এই ধরনের আলাপ আর করবে না।

    আচ্ছা করব না।

     

    সরফরাজ খান ঘুম ভেঙে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন হাফেজ জাহাঙ্গীর নাশতা খাচ্ছেন। তার প্লেটে লুচি তুলে দিচ্ছে অবন্তি। তিনি বদটার গলা ঠিকই শুনেছেন। অবন্তি কি কোনো মতলব পাকাচ্ছে?

    হাফেজ জাহাঙ্গীর সরফরাজ খানের দিকে তাকিয়ে বললেন, নাশতা খাচ্ছি এইজন্যে সালাম দিলাম না। খাওয়া-খাদ্য গ্রহণ করা হলো ইবাদত। ইবাদতের সময় মানুষকে সালাম দেওয়া যায় না।

    সরফরাজ খান খড়খড়ে গলায় বললেন, কী জন্যে এসেছ?

    উরসের সিন্নি নিয়ে এসেছি।

    উরসের সিন্নি নিয়ে বিদায় হয়ে যাও।

    জি আচ্ছা।

    সরফরাজ খান বললেন, জি আচ্ছা জি আচ্ছা না। নাশতা শেষ করেই বিদায়।

    জি আচ্ছা।

    অবন্তি তার দাদাজানকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হাফেজ জাহাঙ্গীরকে বলল, আপনি নাশতা শেষ করে আমার সঙ্গে ছাদে যাবেন। ছাদে আমরা চা খাব। তারপর যাবেন।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর যখন লুচি খাচ্ছেন তখন আরেকটি কাকতালীয় ব্যাপার ঘটছে। লুচি পাচ্ছে শফিক। তার প্লেটে লুচি তুলে দিচ্ছেন রমনা থানার ওসি শামসুদ্দিন পাটোয়ারি। ওসি সাহেব তাকে জেলহাজত থেকে নিয়ে এসেছেন।

    ওসি সাহেব বললেন, আপনার জন্যে সুসংবাদ আছে। চা খেয়ে বাসায় চলে যান। আপনার বিরুদ্ধে কোনো চার্জ নেই।

    শফিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার মন বলছে, ওসি সাহেব তার সঙ্গে তামাশা করছেন। চা-সিগারেট-মুক্তি সবই পুলিশের তামাশার অংশ। পুলিশমিলিটারি সাধারণ মানুষ না। তাদের তামাশা সাধারণ মানুষের মতো না।

    শফিক নিশ্চিত, চায়ে চুমুক দেওয়ার পরপরই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। গুদামঘরের মতো কোনো ঘরে। সেখানে মার শুরু হবে। মারের প্রস্তুতি শফিক নিয়ে রেখেছে। আলিম ডাকাতের দেওয়া দুটি ট্যাবলেট তার বুকপকেটে। চা খেতে খেতে একফাকে ট্যাবলেট দুটি খেয়ে ফেলতে হবে। মার শুরু হলে দমে দমে বলতে হবে-হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম।

    আল্লাহপাকের এই পবিত্র নাম পড়ার ফলে মারের কারণে কোনো ব্যথা বোধ হবে না।

    শামসুদ্দিন পাটোয়ারি বললেন, আপনি চা খাচ্ছেন না, সিগারেটও খাচ্ছেন। ব্যাপার কী?

    শফিক বলল, ভয় লাগছে স্যার।

    শামসুদ্দিন বললেন, আমাকে বলা হয়েছে আপনি অতিসাহসী একজন মানুষ। আর আপনি ভয় পাচ্ছেন?

    পাচ্ছি স্যার।

    আপনাকে সাহসী মানুষ কে বলেছে জানতে চান?

    জি-না, চাই না।

    আশ্চর্য ব্যাপার! জানতে চাইছেন না কেন? আপনাকে সাহসী মানুষ বলেছেন সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফ। তিনি ভুল কথা বলার মানুষ না। উনার কারণেই তড়িঘড়ি করে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বুঝেছেন?

    জি স্যার।

    আপনি তো ঢাকাতেই থাকবেন?

    শফিক বলল, জি-না স্যার। গ্রামে মায়ের কাছে চলে যাব। আর আসব না। ঢাকা শহর আমার মতো অভাজনের জন্যে না।

    শামসুদ্দিন বললেন, অভাজন মানে কী?

    শফিক বলল, অভাজন হলো আমজনতা।

     

    প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক তাঁর আগামসি লেনের ছাদে পাটি পেতে বসে আছেন। তাকে সকালের নাশতা দেওয়া হয়েছে। এখানেও লুচি। লুচির সঙ্গে নেহারি। তিনি নাশতা খাওয়া শুরু করেন নি। পাশে রাখা ফিলিপস ট্রানজিস্টার রেডিওতে সকালের খবর শুনছেন। তবে তাঁর দৃষ্টি চিলেকোঠার দরজার দিকে। তাঁর মনে হচ্ছে দরজার ওপাশে কে যেন দাঁড়িয়ে পাইপ টানছে। তিনি তামাকের গন্ধও পাচ্ছেন। পরিচিত গন্ধ—এরেন মোর।

    খন্দকার মোশতাক বললেন, কে ওখানে? কে?

    ভারী গলায় কেউ-একজন বলল, আমি। এই গলার স্বর খন্দকার মোশতাকের অতি পরিচিত। তার শরীর হিম হয়ে গেল। বুকে ব্যথা শুরু হলো। ইদানীং তাঁর এই সমস্যা হচ্ছে—তিনি মৃত মানুষদের আশপাশে দেখতে পাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলছেন। মনে হয় তিনি দ্রুত মস্তিষ্কবিকৃতির দিকে যাচ্ছেন।

    গত রাতে ঘুমাবার সময় দেখলেন, হামিদ তার বিছানার এক কোনায় বসে আছে। হামিদ লঞ্চডুবিতে পাঁচ বছর আগে মারা গেছে। হামিদের কাজ ছিল তার গা, হাত-পা টিপে দেওয়া।

    মৃত একজন মানুষকে তার বিছানার পাশে বসে থাকতে দেখে মোশতাক সাহেবের বুকে ধাক্কার মতো লাগল। তার হাঁপানির টান উঠে গেল। হামিদ বলল, স্যারের শইল কেমুন?

    মোশতাক বললেন, ভালো। শইল টিপার লোক কি রাখছেন?

    না।

    হামিদ বলল, আছেন আর অল্প কিছুদিন। শইল টিপার লোক না হইলেও চলবে।

    হামিদের কথা শুনে মোশতাক হতভম্ব। অল্প কিছুদিন আছেন—এর মানে কী? তিনি এখন সবকিছু থেকে অবসর নেওয়া একজন মানুষ। মারামারি কাটাকাটির মধ্যে তার থাকার কিছু নেই। তিনি চেষ্টায় আছেন কানাডায় তার ভাগ্নির কাছে চলে যেতে। দেশ গোল্লায় যাওয়া শুরু করেছে, গোল্লায় যাক। তিনি কানাডার মন্ট্রিলে থাকবেন তার ভাগ্নির কাছে। সেখানে বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে নাকি হরিণ আসে। হাত থেকে খাবার খায়। তিনি সেখানে হরিণকে খাবার খাওয়াবেন। খুব যখন ঠান্ডা পড়বে তখন ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে আগুন তাপাবেন।

    লালপানি খাওয়ার অভ্যাস তার নেই। তবে শীতের দেশে খাওয়া যেতে পারে। কথায় আছে—যস্মিন দেশে যদাচার। খুব ঠান্ডা পড়লে লালপানির বোতল নিয়ে ফায়ারপ্লেসের সামনে বসলে কার কী বলার থাকবে? আর যাই হোক ছোকড়া মেজররা তাকিয়ে থাকবে না।

     

    খালেদ মোশাররফ কফির মগ হাতে বসে আছেন। সিপাহী বিদ্রোহের কথা তাকে জানানো হয়েছে। অবস্থা যে ভয়াবহ এই খবরও দেওয়া হয়েছে। সাধারণ সৈনিকদের হইচই এবং স্লোগান শোনা যাচ্ছে। শুধু স্লোগান দিয়েই তারা চুপ করে থাকছে না, কিছুক্ষণ পরপর আকাশে গুলি বর্ষণ করছে। তাদের স্লোগান হলো

    সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই
    অফিসারদের রক্ত চাই।

    খালেদ মোশাররফ অফিস মেসে বসে আছেন। তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। তবে তার দীর্ঘদিনের সাথী রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছুটে আসা মেজর হুদা ও মেজর হায়দারকে আতংকে অস্থির হতে দেখা গেল। তারা বারবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নানান জায়গায় টেলিফোন করতে লাগলেন। একটা পর্যায়ে খালেদ মোশাররফ বললেন, নতজানু হয়ে জীবন ভিক্ষা করে নিজেদের ছোট না করে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হওয়া ভালো।

    খালেদ মোশাররফ সিগারেট ধরিয়ে তার স্ত্রী সালমাকে টেলিফোন করে এই মুহূর্তে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যেতে বললেন।

    সালমা বললেন, তোমাকে একা ছেড়ে যাব?

    মোশাররফ বললেন, হ্যাঁ। আমার তিন মেয়েকে টেলিফোন দাও, এদের গলার শব্দ শুনি। কে জানে হয়তো আর শুনব না।

    সালমা আর্তধ্বনি বের করলেন, এইসব কী বলছ?

    খালেদ মোশাররফ বললেন, আমার তিন রাজকন্যাকে দাও।

    তিনি তাঁর কন্যাকে বললেন, তোমাদের মধুর হাসি, ভালোবাসি ভালোবাসি।

    মেয়েদের সঙ্গে এটি তার পুরোনো খেলা। বাবার গলা শুনে তিন মেয়েই খিলখিল করে হাসছে। এরপর তিনি টেলিফোন করলেন সরফরাজ খানকে। তাঁদের মধ্যে কী কথা হলো জানা গেল না, তবে সরফরাজ খান তৎক্ষণাৎ গাড়ি নিয়ে বের হলেন। কোথায় গেলেন কেউ জানে না। তিনি আর ফিরে এলেন না। তার বেবি অস্টিন গাড়ি ক্যান্টনমেন্টের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা গেল।

     

    সাতই নভেম্বর খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়। বিপ্লবের নামে অফিসার হত্যার ব্যাপারটা সাধারণ সৈনিকেরা করত। খালেদ মোশাররফের ব্যাপারে এই দায়িত্ব দু’জন অফিসার পালন করেন। তাঁরা হলেন ক্যাপ্টেন আসাদ ও ক্যাপ্টেন জলিল। মজার ব্যাপার হলো, এই দু’জনকেই খালেদ মোশাররফ অত্যন্ত পছন্দ করতেন। কে ফোর্সের অধীনে এই দু’জন খালেদ মোশাররফের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ক্যাপ্টেন আসাদকে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

    অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম খালেদ মোশাররফের মৃতদেহ ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় খেজুরগাছের নিচে অপমানে ও অবহেলায় পড়ে আছে। রাস্তার একটা কুকুর অবাক হয়ে মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে আছে।

     

    কালাপাহাড়ও অবাক হয়ে শফিককে দেখছে। সে আনন্দ সামলাতে পারছে না। শফিক বসে আছে মোল্লার চায়ের দোকানের সামনের বাঁশের বেঞ্চে। কালাপাহাড় কিছুক্ষণ পরপর শফিককে চক্কর দিচ্ছে। প্রতিবারই চক্কর শেষ করে সে শফিককে দেখছে। শফিক বলল, কিরে আমাকে দেখে খুশি হয়েছিস?

    কালাপাহাড় ঘোঁত জাতীয় শব্দ করল।

    শফিক বলল, বিরাট ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। উদ্ধারের আশা ছিল না। খালেদ মোশাররফ সাহেবের দয়ায় উদ্ধার পেয়েছি। শোন কালাপাহাড়, আমি যত দিন বেঁচে থাকব খালেদ সাহেবের গুণগান করব। তুইও করবি।

    কালাপাহাড় আবারও ঘোঁত শব্দ করল।

    শফিক বলল, এই ক’দিন খাওয়াদাওয়ার খুব কষ্ট হয়েছে। আর হবে না। মা’কে যখন দেখতে যাব, তোকেও নিয়ে যাব। ঠিক আছে?

    কালাপাহাড় জবাব দিল না, শুধু মাথা নাড়ল। শফিক বলল, খালেদ মোশাররফ সাহেব আমার যে উপকার করেছেন তা আমি কোনোদিন ভুলব না। যেদিন ভুলব সেদিন থেকে আমি কুকুরের বাচ্চা।

     

    কর্নেল তাহের তাঁর অনুগত সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করে সিপাহী বিপ্লবের সূচনা করেন। সিপাহীরা গগনবিদারী স্লোগান দিতে শুরু করল—‘জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ’। কর্নেল তাহেরকে জড়িয়ে ধরে আবেগমথিত কণ্ঠে জিয়া বললেন, বন্ধু! তোমার এই উপকার আমি কোনোদিনই ভুলব না।

    জেনারেল জিয়া কর্নেল তাহেরের উপকার মনে রেখেছিলেন কি না তা আমরা জানি না, তবে তিনি যে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছিলেন তা আমরা জানি।

    দুঃখিনী বাংলাদেশের প্রদীপসম সন্তানেরা একে একে নিভে যেতে শুরু করল।

     

    রাত একটা। অবন্তি ছাদে বসে আছে। খালেদ মোশাররফের মৃত্যুসংবাদ সে কিছুক্ষণ আগে পেয়েছে। অনেক ঝামেলা করে সে এই খবর পেয়েছে কর্নেল তাহেরের কাছ থেকে।

    কর্নেল তাহেরকে অবন্তি ভালো চেনে। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে তিনি অবন্তিদের বাড়িতে দু’বার এসেছেন। দেশ পরিচালনায় তাঁর চিন্তাভাবনা অবন্তিকে আগ্রহ নিয়ে বলেছেন।

    অবন্তি কাঁদতে কাঁদতে বলল, তাহের চাচা, উনি কি বীরের মতো মারা গেছেন?

    কর্নেল তাহের বললেন, হ্যাঁ। তিনি মেজর হুদাকে বলেছিলেন, সাধারণ সৈনিকেরা কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের হত্যা করবে। তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা করে নিজেকে ছোট করবে না। মৃত্যুর জন্যে তৈরি হও। নাও একটা সিগারেট খাও। তাঁকে যখন গুলি করা হয় তখন তিনি নির্বিকার ভঙ্গিতেই সিগারেট টানছিলেন। অবন্তি মা, কাঁদবে না। Be a brave girl, খালেদ মোশাররফের ধ্যান-ধারণা আমার পছন্দ না রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। তারপরেও সাহসী মানুষ হিসেবে আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি।

    অবন্তি তার দাদাজানের অপেক্ষায় পুরো রাত ছাদে জেগে কাটাল। ভোররাতে সে অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখল। এই দৃশের কথা পরে বিস্তারিত বলা হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদি একসরসিস্ট – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article প্রেমের গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }