Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দেয়াল – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প214 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. হাফেজ জাহাঙ্গীর

    হাফেজ জাহাঙ্গীর ফজরের নামাজ শেষ করে দিঘির ঘাটে বসে আছেন। তার হাতে নীল রঙের ঘুটির তসবি। তিনি একমনে তসবি টানছেন। তার বসার জন্যে উলের আসন দেওয়া হয়েছে। তিনি যেখানে বসেছেন তার এক ধাপ নিচে আগরদানে আগরবাতি জ্বলছে। হাফেজ জাহাঙ্গীর আগরবাতির গন্ধ কখনো পছন্দ করেন না। তার নাক জ্বালা করে। তারপরেও তাকে বাস করতে হয় আগরবাতি চারপাশে নিয়ে।

    আজ ভালো কুয়াশা হয়েছে। কুয়াশার কারণে সূর্য দেখা যাচ্ছে না। ভাদ্র মাসের ভোরে আবহাওয়া এমনিতেই কিছুটা শীতল থাকে। কুয়াশার কারণে আজ অন্যদিনের চেয়েও আবহাওয়া শীতল। হাফেজ জাহাঙ্গীরের শীত লাগছে। গায়ে একটা সুজনি দিতে পারলে হতো। সমস্যা হচ্ছে সুজনি আনার কথাটা কাউকে বলতে ইচ্ছা করছে না।

    হাফেজ জাহাঙ্গীরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী নুরু তার পাশেই আছে। মাথা নিচু করে খেলাল দিয়ে দাঁত খোচাচ্ছে। তাকে বললেই সে আগরদান নিয়ে যাবে, সুজনি এনে গায়ে জড়িয়ে দেবে। এক বাটি খেজুর গুড়ের চা এনে সামনে রাখবে। হাফেজ জাহাঙ্গীর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন। এই মুহূর্তে তার কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না।

    নুরু বলল, ছছাট হুজুর, খবর পাইছেন আইজ পুসকুনিত জাল ফেলব?

    জাহাঙ্গীর হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। আজ দিঘিতে জাল ফেলা হবে, এই খবর তিনি পেয়েছেন। মাছ ধরা দেখার জন্যেই তিনি ফজরের ওয়াক্ত থেকে দিঘির ঘাটে বসে আছেন।

    নুরু উৎসাহের সঙ্গে বলল, আমার মন বলতাছে আইজ গুতুম ধরা পড়ব।

    জাহাঙ্গীর বললেন, সবই আল্লাহর হুকুম। উনার হুকুম হইলে ধরা পড়ব। উনার হুকুম বিনা কিছু হবে না।

    ‘গুতুম’ হলো এই দিঘির সবচেয়ে বড় মাছের আদরের নাম। এই মাছের সাড়াশব্দ অনেকবার পাওয়া গেছে, এখনো কেউ তাকে দেখে নি। সবার ধারণা, গুতুম গজার মাছ। একমাত্র গজার মাছই দৈত্যাকৃতির হয়।

    নুরু বলল, চা খাবেন? চা এনে দিব?

    জাহাঙ্গীর বললেন, না। বলেই খুব অবাক হলেন। তাঁর চা খেতে ইচ্ছা করছে অথচ তিনি বলেছেন, না। এর মানে কী?

    নুরু বলল, উরস-বিষয়ে আপনার হুকুম কী জানলে সেইমতো ব্যবস্থা নিতাম।

    জাহাঙ্গীর হাতের তসবি নামিয়ে রেখে বললেন, কোনো হুকুম নাই।

    বড় খানা কয়বার হবে?

    একবারই হবে। আসরের নামাজের পরে বড় খানা।

    গরু কয়টা জবেহ হবে?

    উরস উপলক্ষে যে কয়টা এসেছে সবই জবেহ হবে।

    চৌদ্দটা গরু এখন পর্যন্ত আছে, আরও আসবে ইনশাল্লাহ। সব একদিনে জবেহ করলে বিরাট বিপদ হবে।

    কী বিপদ?

    একসঙ্গে এত রান্না করা যাবে না।

    জাহাঙ্গীর বললেন, উরস নিয়া তোমার সঙ্গে আলাপের কিছু নাই। আল্লাহপাক একেকজনকে একেক দায়িত্ব দিয়া পৃথিবীতে পাঠান। তোমাকে ফুটফরমাসের দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়েছেন। বুঝেছ?

    জি।

    ফজরের নামাজে তোমাকে সামিল হতে দেখি নাই। এর কারণ কী?

    ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছিল। কাজা পড়েছি।

    জাহাঙ্গীর বললেন, গত রাতে এশার নামাজেও তুমি শামিল হও নাই। কে কী করে বা করে না তা আমি জানি। এখন আমার সামনে থেকে বিদায় হও। আজ সারা দিন যেন তোমার চেহারা না দেখি।

    নুরু মুখ শুকনা করে উঠে গেল।

     

    জাল ফেলা হলো সকাল ন’টায়। হুলস্থুল ব্যাপার। সবাই এসে দিঘির ঘাটে ভিড় করেছে। জাহাঙ্গীর দেখলেন নিষেধ অমান্য করে নুরুও ঘাটে এসেছে। প্রতি তিন মাসে একবার জাল বাওয়া হয়। জাল বাওয়ার দৃশ্য সে কারণেই আনন্দময়। বাড়তি আকর্ষণ ‘শুতুম’। গত এক বছর ধরে গুতুম ধরা পড়বে এমন অপেক্ষা।

    জাল টানা শেষ হলো বারোটার দিকে। জাল এখনো পানির নিচে। প্রধান জেলে এসে হাফেজ জাহাঙ্গীরকে ফিসফিস করে বলল, গুতুম আটক হয়েছে।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, গুতুম ধরা পড়েছে এ তো ভালো সংবাদ। কানাকানি করছ কেন? মাছ তোলো, দেখি কী সমাচার।

    মাছ ধরার সময় মহিলা মাদ্রাসার কেউ বা জেনানামহলের কেউ থাকে না। আজ সবাই ছুটে এসেছে। কঠিন পর্দার কথা মনে হয় সাময়িকভাবে ভুলে গেছে। কিছু কিছু অনিয়ম উপেক্ষা করতে হয়। হাফেজ জাহাঙ্গীর তা-ই করছেন।

    গুতুমকে ডাঙায় তোলা হয়েছে। বিস্ময়কর এক দৃশ্য! দানবাকৃতির এক কাতল মাছ। কাতল মাছের মাথা শরীরের তুলনায় বড় হয়। এর মাথা ছোট। ঘাড়ের কাছের খানিকটা অংশ সোনালি। হাফেজ জাহাঙ্গীর পর পর তিনবার বললেন, সোবাহানআল্লাহ! আল্লাহপাকের তরফ থেকে এমন চমৎকার নিয়ামত পাঠানোর জন্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পাঠ করা হলো।

    হাফেজ জাহাঙ্গীরের নির্দেশে মাছ ওজন করে হুজরাখানার গেটে দুই ঘণ্টার জন্যে রাখা হলো। অনেকেই এই মাছ দেখতে চাইবে। তারা দেখবে।

     

    মাছের ওজন মাপা হয়েছে। এক মণ তিন সের। এই মাছ বিষয়ে সাপ্তাহিক ময়মনসিংহ বার্তায় ছবিসহ খবর প্রকাশিত হয়।

    খতিবনগর হুজরাখানায়
    অদ্ভুত কাতল
    (বিশেষ সংবাদদাতা প্রেরিত)

    খতিবনগর হুজরাখানায় এক মণ তিন সের ওজনের এক দৈত্যাকৃতি কাতল মাছ ধরা পড়েছে। এমন বৃহৎ কাতল স্মরণাতীতকালে কেউ দেখেছে এমন নজির নাই। খতিবনগরের আশি বয়স বর্ষীয়ান বৃদ্ধ হেকমত আলি বলেন তার কৈশোরে তিনি হাওর থেকে ধৃত এমন কাতল দেখেছেন। হুজরাখানায় ধৃত কাতলের মতো সেই কাতলেরও নাকি গলা ছিল হরিদ্রা বর্ণের এবং মাথা ছিল শরীরের তুলনায় অপুষ্ট।

    হুজরাখানার বর্তমানে গদিনসীন পীর হাফেজ জাহাঙ্গীর খতিবি এই মাছ হুজরাখানার ভক্তদের খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। হুজরাখানা সূত্রে জানা যায়, ভৈরবের বিখ্যাত মনা বাবুর্চির উপর এই মাছ রান্ধনের দায়িত্ব পড়েছে। অদ্য বৃহস্পতিবার নৈশভোজে হুজরাখানার তরফ থেকে ভক্তদের জন্যে মাছ ভাত এবং মাষকলাইয়ের ডালের আয়োজন করা হয়েছে।

     

    এশার নামাজের পর রাতের খানা। হাফেজ জাহাঙ্গীর ফরজ নামাজ শেষ করে সুন্নত নামাজে যাবেন, এইসময় তার কাছে খবর গেল ঢাকা থেকে তাঁর স্ত্রী মায়মুনা এসেছেন। তিনি একা। তার সঙ্গে কেউ নেই। হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, সোবাহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ। তিনি অনেক কষ্টে সুন্নত নামাজ শেষ করলেন। তার ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে। ইচ্ছা করলেই তা সম্ভব না। আল্লাহপাক মায়মুনাকে উপস্থিত করেছেন। তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। শুকরানা নামাজ পড়তে হবে। কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়া করা যাবে না। আল্লাহপাক মানবসমাজের তাড়াহুড়া পছন্দ করেন না বলেই পবিত্র কোরান শরিফে বিরক্ত হয়ে বলেছেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমাদের বড়ই তাড়াহুড়া।’

    অবন্তির কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা অবশ্যই আছে যা কখনো বদলাবে না। খতিবনগর হুজরাখানা তার একটি। সব আগের মতো। এমনকি গন্ধও আগের মতো। মনে হচ্ছে কারও বয়সও বাড়ে নি।

    সালমা তাকে দেখে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে অবন্তির গোসল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হুজরাখানার নিয়ম হলো বাইরে থেকে আসা কোনো মহিলা হুজরাখানার জেনানামহলে ঢোকার আগে সিনান করবে। পাকপবিত্র হয়ে আল্লাহপাকের নিরানব্বই নাম জপ করে জেনানামহলে ঢুকবে। এতে মহিলাদের সঙ্গে আসা দুষ্ট জ্বিন জেনানামহলে ঢুকতে পারবে না।

    অতি অল্পসময়ে সালমা হুজুরাখানার যাবতীয় খবর দিয়ে ফেলল। তার গল্পের বড় অংশ জুড়েই রইল দৈত্যাকৃতির কাতল মাছ।

    সালমা বলল, মাছ মনে হয় না স্বাদ হবে। বেশি বড় মাছ স্বাদ হয় না। তা ছাড়া মানুষের নজর লাগে।

    অবন্তি বলল, মাছ স্বাদ হোক বা না-হোক, আমি মাছ খাব না। আমি মাছ খাই না। গন্ধ লাগে।

    সালমা বলল, ছছাট হুজুর হাফেজ জাহাঙ্গীরও আপনার মতো মাছ খান না। উনি মাছ খান না অন্য কারণে।

    কী কারণে?

    আমাদের নবিজি মাছ খেতেন না। এইজন্যে হাফেজ সাহেবও মাছ খান না। তবে আজ মনে হয় খাবেন।

    বড় মাছ, এইজন্যে খাবেন?

    উনি সবাইরে মাছ খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। দাওয়াত দিলে মেহমানদের সঙ্গে খানা খেতে বসতে হয়।

    জুলেখা বিবি অবন্তিকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনিও আগের মতোই আছেন। একটা টকটকে লাল রঙের শাড়িতে তাঁকে কোনোরকমে ঢেকে রাখা হয়েছে। তাঁর তিনজন দাসীর একজন পায়ের আঙুল টানছে।

    জুলেখা বিবি বললেন, চেহারা দেখাইতে আসছ, না জনের মতো আসছ?

    অবন্তি বলল, চেহারা দেখানোর জন্যে এসেছি।

    চেহারা দেখলাম। এখন বিদায় হও।

    আচ্ছা চলে যাব।

    জুলেখা বিবি হঠাৎ গা থেকে শাড়ি ফেলে নগ্ন হয়ে গেলেন। দাসী দু’জন শাড়ি দিয়ে গা ঢাকার জন্যে ব্যস্ত হয়ে গেল। জুলেখা বিবি বললেন, গরমে শইল পুইড়া যাইতেছে। শাড়ি শইল্যে দিবা না। আর যে মেয়ে নিজের স্বামী ছাইড়া অন্যত্র বাস করে সে পশুর সমান। পশুর সামনে কোনো লজ্জা নাই। এখন বুঝেছ?

    মেহমানরা সবাই দস্তরখান বিছিয়ে বসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই খানা দেওয়া হবে। হাফেজ জাহাঙ্গীরের জন্যে অপেক্ষা। তিনি হুজরাখানায় একা বসে আছেন। বিশেষ কোনো নামাজে বসেছেন। বিশেষ নামাজের সময় বাতি নেভানো থাকে। এবং তিনি থাকেন একা। আজ হুজরাখানার বাতি নেভানো। তিনি ছাড়া আর কেউ হুজরাখানায় উপস্থিত নেই।

    অতিথিরা যখন খাবারের জন্যে অস্থির তখন হাফেজ জাহাঙ্গীর দর্শন দিলেন। অতিথিদের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত গলায় বললেন, আমি বিশেষ শরমিন্দা। যে মাছ খাওয়ার জন্যে আমি আপনাদের দাওয়াত দিয়েছি, সেই মাছ খাওয়াতে পারছি না। কারণ কিছুক্ষণ আগে আমি বাতেনি খবর পেয়েছি যে, মাছ রান্নার সময় মাছে বিষ দেওয়া হয়েছে। ভৈরবের মনা বাবুর্চি এই কাজ করেছে। সে পলাতক আছে। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মাছের সব সালুন গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। আপনারা এতক্ষণ অপেক্ষা করেছেন, আর এক ঘণ্টা যদি অপেক্ষা করেন তাহলে খাসি জবেহ করে খাসির সালুন দিয়ে আপনাদের খানা দিব। এখন আপনাদের বিবেচনা।

    অতিথিরা কেউ কোনো শব্দ করলেন না।

    হাফেজ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে অবন্তির দেখা হলো অনেক রাতে। অতিথিরা খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার পর। অতিথিরা খাসির সালুনের জন্যে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মাছের অভাবে তাদের তেমন কষ্ট হলো না। কারণ খাসির সালুন অসাধারণ স্বাদ হয়েছিল।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, তোমাকে দেখে অবাক হয়েছি। তুমি একা চলে এসেছ।

    অবন্তি বলল, আমি একা তো আসি নাই। আমার সঙ্গে দুইজন চড়নদার ছিল।

    জাহাঙ্গীর অবাক হয়ে বললেন, বলো কী? তারা পুরুষ?

    অবন্তি হাই তুলতে তুলতে বলল, তারা পুরুষও না, রমণীও না। তাঁরা দুজন ফেরেশতা। সব মানুষের কাঁধে বসে থাকে।

    ও আচ্ছা বুঝেছি। কেরামন কাতেবিন। তোমার সাহস দেখে চমকায়েছি। হুজরাখানার দিকে তোমার টান দেখেও ভালো লেগেছে।

    অবন্তি বলল, হুজরাখানার প্রতি বা আপনার প্রতি আমার কোনো টান নাই। আমার এখানে চলে আসার একটাই কারণ—দাদাজানকে শিক্ষা দেওয়া। তিনি সারাক্ষণ আমার ওপর নজরদারি করেন, এটা আমার ভালো লাগে না। আমার জন্যে আমিই যথেষ্ট, এটা উনাকে বুঝাতে চাই। এখন কি আপনার কাছে পরিষ্কার হয়েছে আমি কেন খতিবনগরে এসেছি?

    পরিষ্কার হয়েছে।

    আপনি আবার স্বামীর অধিকার ফলানোর জন্যে নিশিরাতে আমার ঘরে উপস্থিত হবেন না। আমি আপনাকে স্বামী স্বীকার করি না।

    জাহাঙ্গীর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমি উপস্থিত হব না।

    অবন্তি বলল, তবে আমি আপনার সঙ্গে খানা খাব। আপনার সঙ্গে খানা খেতে আমার অসুবিধা নাই। মাছ আমি পছন্দ করি না, তবে আজ কাতল মাছের সালুন দিয়ে ভাত খাব।

    জাহাঙ্গীর বললেন, মাছে বিষ মিশানো হয়েছে, এই খবর পাও নাই?

    অবন্তি বলল, পেয়েছি। এটা ভুয়া খবর। মাছে বিষ মিশানোর কথা আপনি বলেছেন যেন সবাই বুঝে আপনি বাতেনি খবর পান। খুবই অন্যায় কাজ করেছেন। আপনার অন্যায় আপনি দেখবেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি শুধু মাছের সালুন দিয়ে ভাত খেয়ে দেখাব যে, মাছে কেউ বিষ দেয় নাই।

    মাছের সালুন নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

    অবন্তি বলল, তার আগেই আমি দুইটা পেটি আনিয়ে রেখেছি। একটা আপনি খাবেন, আরেকটা আমি। সালমাকে খানা দিতে বলি। আমার ভুখ লেগেছে। সারা দিন কিছু খাওয়া হয় নাই।

    হাফেজ জাহাঙ্গীর নিঃশব্দে রাতের খাওয়া খেলেন। কাতল মাছের বিশাল পেটির অর্ধেকটা শেষ করলেন।

    অবন্তি বলল, এত স্বাদের মাছ আমি কখনো খেয়েছি বলে মনে পড়ে না। দাদাজানকে এই মাছের এক টুকরা খাওয়াতে পারলে ভালো হতো। উনি মাছ খুব পছন্দ করেন।

    জাহাঙ্গীর বললেন, তোমার দাদাজানের রাতের খানা শেষ হয়েছে। তিনি খাসির সালুন দিয়ে তৃপ্তি করে খেয়েছেন।

    দাদাজান আমার খোঁজে চলে এসেছেন?

    হ্যাঁ। তাঁকে থাকার জন্যে হুজরাখানায় একটা ঘর দেওয়া হয়েছে। নিজের বাড়িতে তার থাকার উপায় নাই। বাড়িঘর দখল হয়ে গেছে।

    কে দখল করেছে?

    শহর-বন্দরের চেয়ে মফস্বলে দুষ্ট লোক বেশি। তাদেরই একজন। নাম ছানু ভাই।

    অবন্তি বলল, ছানু ভাই কি আপনার চেয়েও দুষ্ট?

    হাফেজ জাহাঙ্গীর জবাব দিলেন না। আহত চোখে অবন্তির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার বারবার মনে হচ্ছিল–তার সামনে কোনো মানবী বসে নেই, আয়তলোচনা বেহেশতের হুর বসে আছে। যাকে কোনো পুরুষ বা জ্বিন স্পর্শ করে নি।

    ছানু ভাই হাসিখুশি মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ। বেঁটে গোলগাল চেহারা, মাথাভর্তি কাঁচাপাকা বাবরি চুল। অমায়িক কথাবার্তা।

    ছানু ভাই সরফরাজ খানের সঙ্গে কোলাকুলি করে গাঢ় স্বরে বলল, ভাইসাহেব, কেমন আছেন? বাড়িঘরের কথা মনে পড়ে না? আফসোস।

    সরফরাজ খান বললেন, বাড়িঘর তো সব আপনি দখল নিয়ে নিয়েছেন। মনে পড়লেই বা কী, না পড়লেই কী?

    ছানু ভাই ব্যথিত গলায় বললেন, আমি যদি দখল নিয়ে থাকি তাহলে দশজনের মোকাবিলায় আমারে এক শ’ বার জুতাপেটা করেন। বাড়িঘর খালি পড়ে ছিল। গরু-ছাগলের আস্তানা হয়ে ছিল সেখানে। আমি মুজিব সেন্টার করেছি। মুজিব সেন্টারে বঙ্গবন্ধু এবং বাকশাল নিয়ে গবেষণা হবে। এতে আপনার পাপ কাটা যাবে।

    সরফরাজ খান অবাক হয়ে বললেন, আমার পাপ কাটা যাবে মানে? আমার কী পাপ?

    ছানু ভাই শান্ত গলায় বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি শান্তি কমিটির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, সেই পাপ। খতিবনগরের পীর সাহেব ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। আপনি তার মুরিদ হয়েছিলেন। নিজ নাতনিকে এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের সঙ্গে বিবাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। এই ইতিহাস তো কারও অজানা না। তারপরেও আপনাকে ছোটভাই হিসেবে একটা পরামর্শ দেই। আপনি বঙ্গবন্ধুর কাছে আমার নামে নালিশ করেন। কীভাবে আমি আপনার বিষয়সম্পত্তি সব দখল করেছি সেটা বলেন। বঙ্গবন্ধু যে হুকুম দেন তা মাথা পেতে নিব। আমার নাম বললেই উনি আমাকে চিনবেন। উনার জন্যে আজ সকালেই জিয়ল কই মাছ পাঠিয়েছি।

    সরফরাজ খান বললেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে। আমি উনাকে জানাব। ছানু ভাই বলল, ভাই সাহেবকে একটা সত্য কথা বলি? উনাকে জানালে কিছুই হবে না। উনার কানে লাখ লাখ নালিশ। এত নালিশ শুনলে উনার পুষবে না। ভাইসাহেব এখন বলেন, চা খাবেন নাকি কফি খাবেন? মুজিব সেন্টারে চাকফি দু’টারই ব্যবস্থা আছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদি একসরসিস্ট – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article প্রেমের গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }