Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প598 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. প্রিন্সেস সোফি

    ৬১.

    প্রিন্সেস সোফি।

    টিবিংয়ের ক্রাচের খ্যাখ্যা শব্দটা হলওয়ের দিকে অপসৃয়মান হতেই সোফির খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। অচেতনভাবেই সে ফাঁকা বলরুমে ল্যাংডনের দিকে তাকালো। সে তার দিকে চেয়ে মাথাটা নাড়লো, যেনো সোফির মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে।

    না, সোফি, সে ফিস্ ফিস্ করে বললো। তার চোখে আশ্বস্ত করার ভাব। আমি যখন প্রথম শুনেছিলাম তোমার দাদু প্রায়োরিতে ছিলেন, তখন, আমারও একই ভাবনা হয়েছিলো। তুমি বলছে, তিনি তোমাকে তোমার পরিবার সম্পর্কে একটা সত্য কথা বলতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এটা অসম্ভব। ল্যাংডন একটু থামলো। সনিয়ে নামটা কোন মেরোভিনজিয়ান নাম নয়।

    সোফি বুঝতে পারলো না, সে হতাশ হবে, নাকি স্বস্তিবোধ করবে। একটু আগে, ল্যাংডন সোফিকে একটা আজব প্রশ্ন করেছে, তার মায়ের কুমারি নামের ব্যাপারে, শোভেল। প্রশ্নটার মানে এখন পরিষ্কার।শভেল? সোফি উদ্বিগ্ন হয়ে বললো।

    আবারো ল্যাংডন মাথা ঝাঁকালো। আমি দুঃখিত, বর্তমানে মেরোভিনজিয়ানদের কেবলমাত্র দুটো সরাসরি বংশধারা টিকে আছে। তাদের পারিবারিক নাম হলো প্লান্টার্ড এবং সেনক্লেয়ার। দুটো পরিবারই গোপনে বসবাস করে, সম্ভবত প্রায়োরিদের তত্ত্বাবধানে।

    সোফি নামগুলো মনে মনে উচ্চারিত করে মাথা ঝাঁকালো। তাদের পরিবারের কারোর নামই প্লান্টার্ড অথবা সেনক্লেয়ার ছিলো না। সোফির মনে পড়ে গেলো তার পরিবারের কথা, বেদনায় আক্রান্ত হলো মুহূর্তেই। তারা এখন মৃত, সোফি। তারা আর ফিরে আসবে না। তার মনে পড়ে গেলো, তার মা রাতে তাকে গান গেয়ে ঘুম পারাতেন। বাবা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। সবকিছুই চুরি হয়ে গেছে। তার কেবল দাদুই ছিলো। আর এখন, সেও চলে গেছে। আমি এখন একা।

    সোফি সঙ্গে সঙ্গে দ্য লাস্টসাপার-এর দিকে তাকালো, ভালো করে ম্যারি মাগদালিনকে দেখলো। দীর্ঘ লাল চুল আর শান্ত চোখ দুটো। এই নারীর অভিব্যক্তিতে এমন কিছু আছে, যা, হারানো ভালোবাসার একজনকে খুঁজছে যেনো। সোফি সেটা অনুভব করতে পারলো।

    রবার্ট? সে খুব কোমল কণ্ঠে বললো।

    সে তার খুব কাছে চলে এসেছে।

    আমি জানি, লেই বলেছেন, গ্রেইলের গল্পটা আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে, কিন্তু, আজকের রাতেই আমি এটা প্রথম শুনলাম।

    ল্যাংডন তার হাতটা সোফির কাঁধে রাখতে গিয়েও রাখলো না। তুমি তার গল্পটা আগেও শুনেছে, সোফি। সবাই শুনেছে। কিন্তু আমরা সেটা যখন শুনি, তখন বুঝতে পারি না।

    আমি বুঝতে পারলাম না।

    গ্রেইলের কাহিনীটা সবজায়গাতেই আছে। কিন্তু সেটা লুকানো অবস্থায়। চার্চ যখন ম্যারি মাগদালিনের ব্যাপারে কথা বলার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো, তখন তার গল্পটা আরো বেশি বুদ্ধিদীপ্ত আকারে প্রচলন করা হলো। প্রতীক আর রূপকের আকারে।

    অবশ্যই। চিত্রকলাতেও।

    ল্যাংডন দ্য লাস্ট সাপার-এর দিকে ফিরলো। এটা একটা ভালো উদাহরণ। আজকের দিনেও, কিছু চিত্রকলায়, সাহিত্য এবং সঙ্গীতে গোপনে ম্যারি মাগদালিন এবং যিশুর ইতিহাস বলা হয়।

    ল্যাংডন খুব দ্রুত তাকে দা ভিঞ্চি, বত্তিচেল্লি, পুশিন, বার্নিনি, এবং ভিক্টর হুগোর কাজগুলোর কথা বলে গেলো। তারা সবাই বিস্মৃত পবিত্র নারীর পুণঃঅধিষ্ঠিত করার খোঁজে ছিলেন। স্যার গোয়াইন এবং গৃন নাইট, কিং আর্থার আর স্লিপিং বিউটির কিংবদন্তীগুলো গ্রেইলেরই রূপক বর্ণনা। ভিক্টর হুগোর হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম এবং মোজার্টের ম্যাজিক ফুট ম্যাসোনিক প্রতীক আর গ্রেইল সিক্রেট-এ পরিপূর্ণ।

    একবার হলি গ্রেইলের দিকে তুমি চোখ খুলে তাকালে, ল্যাংডন বললো, তাকে সবজায়গায়ই দেখতে পাবে। চিত্রকর্মে। সঙ্গীতে। সাহিত্যে। এমনকি কাটুন, থিম পার্ক আর জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে।

    ল্যাংডন তার মিকি মাউস হাত ঘড়িটা দেখিয়ে বললো, ওয়াল্ট ডিজনি এটাকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে গ্রেইল কাহিনীটাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যায়। ডিজনিকে একজন আধুনিককালের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি হিসেবে অভিহিত করা হতো। এদুজনই নিজেদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। অনন্যভাবেই সৃষ্টি প্রদত্ত প্রতিভাবান শিল্পী আর গুপ্ত সংগঠনের সদস্য। লিওনার্দোর মতোই, ডিজনিও চিত্রকর্মের মধ্যে লুকায়িত বার্তা আর প্রতীক রাখতে পছন্দ করতেন।

    ডিজনির বেশিরভাগ লুক্কায়িত বার্তাই ধর্ম সংক্রান্ত, প্যাগান মিথ, এবং বিস্মৃত প্রায় দেবীদের গল্পকাহিনী নিয়ে। ডিজনি যে পুণরায় সিনডেরেলা, স্লিপিং বিউটি, এবং স্নো হোয়াইট-এর গল্পগুলো বলেছেন, তা ভুল করে নয়-এগুলো সবটাই পবিত্র নারী সংক্রান্ত। স্নো হোয়াইটের প্রেক্ষাপটে যে একটা প্রতীকি ব্যাপার আছে, সেটা কারোর না বোঝার কথা নয়—এক রাজকুমারী বিষাক্ত আপেল খেয়ে অধঃপতিত হয় তার সঙ্গে স্বর্গের উদ্যান থেকে হাওয়ার আপেল খাওয়ার জন্য বিতারিত হওয়ার অসাধারণ কাহিনীটার মিল রয়েছে। অথবা স্লিপিং বিউটির রাজকুমারী অরোরা ছদ্মনাম যার রোজ, গভীর বনে লুকিয়ে থাকে, ডাইনীর রুদ্ররোষ থেকে বাঁচার জন্যে—তা আসলে শিশুতোষ গ্রেইল কাহিনী।

    কর্পোরেট ভাবমূর্তি থাকা সত্ত্বেও, ডিজনির রয়েছে সেই পুরনো ঐতিহ্য। আর তাদের শিল্পীরা, এখনও ডিজনির সামগ্রীতে লুক্কায়িত প্রতীক ঢুকিয়ে থাকে। ল্যাংডন একটা ঘটনা কখনও ভুলবে না, যখন তার এক ছাত্র লায়ন কিং-এর একটা ডিভিডি এনে একটা দৃশ্যে থামিয়ে দেখিয়েছিলো, সেখানে SEX শব্দটা পরিষ্কারভাবেই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অক্ষরগুলো সিম্বার মাথার উপর উড়তে থাকা ধূলোর আকৃতি ধারণ করে। যদিও ল্যাংডনের সন্দেহ হয়েছিলো, এটা এক ধরনের কাটুনর্জাতীয় হাস্যরস, কোন উচ্চ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রহেলিকা নয়, যা প্যাগান যৌনতাকে ইঙ্গিত করে, তারপরও সে বুঝেছিলো, প্রতীকের ব্যাপারে ডিজনির অনুরাগ নিছক কোন কিছু নয়। দ্য লিটল মারমেইড ও এক ধরনের প্রতীকি রূপকথা, যাতে দেবী সংক্রান্ত ব্যাপারটাই তুলে ধরা হয়েছে। এটা কাকতালীয় হতে পারে না।

    ল্যাংডন যখন প্রথম দ্য লিটল মারমেইড দেখেছিলো, সে বুঝতে পেরেছিলো এরিয়েলের পানির নিচের বাড়িটা আসলে সপ্তদশ শতকের শিল্পী জর্জেস দালা তুরর দ্য পেনিটেন্ট মাগদালিন চিত্র কর্মটিই-ম্যারি মাগদালিনের প্রতি বিখ্যাত একটা শ্রদ্ধাঞ্জলী সাজসজ্জাগুলো ছবিতে আসলে নব্বই মিনিটের আইসিস দেবী, হাওয়া পিসেস দ্য ফিশ গডেস বা মৎস কুমারী এবং ম্যারি মাগদালিনের রেফারেন্স হিসেবেই আর্বিভূত হয়েছে। লিটল মারমেইডের নামটা, আরিয়েল, পবিত্র নারী এবং বুক অব ইসায়ির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত, দ্য হলি সিটি বিসিজ-এর একটা সমার্থক শব্দ। আর নিশ্চিতভাবেই লিটল মারমেইডের লাল চুলটা মোটেও কোন কাকতালীয় ব্যাপার। নয়।

    টিবিংয়ের ক্রাচের আওয়াজটা শোনা গেলে তার পদক্ষেপ খুবই দ্রুত আর চেহারায় বিস্ময়।

    রবার্ট, শান্ত কণ্ঠে বললেন তিনি। আপনি আমার সাথে সততা দেখাননি।

    ৬২.

    আমি ফাঁদে পড়ে গেছি, লেই,,ল্যাংডন বললো। শান্ত থাকার চেষ্টা করলো। আপনি আমাকে চেনেন। আমি কাউকে খুন করত পারি না।

    টিবিংয়ের কণ্ঠটা নরম হলো না। রবার্ট, আপনার ছবি টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। আপনি কি জানতেন, কর্তৃপক্ষ আপনাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে?

    হ্যাঁ।

    তবে তো, আপনি আমার বিশ্বাসের অপব্যবহার করেছেন। আমি অবাক হয়েছি, আপনি আমার এখানে এসে আমাকে বিপদের মধ্যে ফেলেছেন আর গ্রেইলের কাহিনী ফেঁদে আমার বাড়িতে লুকানোর ফন্দি করেছেন।

    আমি কাউকে খুন করিনি।

    জ্যাক সনিয়ে মারা গেছেন, পুলিশ বলছে আপনিই সেটা করেছেন। টিবিংকে খুব বিষণ্ণ দেখালো। শিল্পের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি ছিলেন তিনি…

    স্যার? গৃহপরিচারক এসে বললো। তার হাত দুটো ভাঁজ করা। তাদেরকে কি আমি বাইরে চলে যেতে বলবো?

    সেটা আমাকেই করতে দাও। টিবিং হেঁটে গিয়ে লবির কাঁচের দরজাটা খুলে দিলেন। দয়া করে নিজেদের গাড়িটা নিয়ে চলে যান।

    সোফি নড়লো না। আমাদের কাছে ক্লেফ দ্য ভুত-এর খবর রয়েছে। প্রায়োরি কি-স্টোনটা?

    টিবিং কয়েক সেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে একটু রেগে গেলেন। ভালো ছলনা। রবার্ট জানে, এটা আমি কীভাবে খুঁজছি।

    সে সত্য কথাই বলছে, ল্যাংডন বললো। এজন্যেই আমরা আজ রাতে আপনার এখানে এসেছি, কি-স্টোনটার ব্যাপারে কথা বলতে।

    গৃহপরিচারক এবার নাক গলালো। চলে যান, তা-না হলে আমি কর্তৃপক্ষকে ডাকবো।

    লেই, ল্যাংডন নিচুস্বরে বললো। আমরা জানি, সেটা কোথায়।

    টিবিংয়ের ভারসাম্য মনে হলো একটু টলে গেলো।

    রেমি এগিয়ে এলো। এক্ষুনি চলে যান। তা না হলে জোড় করতে–

    রেমি! রাগে কটমট করে টিবিং তার দিকে তাকালেন। আমাদেরকে একটু একা থাকতে দাও।

    চাকরটার মুখ হা হয়ে গেলো। স্যার? আমি মেনে নিতে পারছি না। এসব লোক–

    সেটা আমি দেখছি। টিবিং তাকে চলে যেতে ইশারা করলেন। গভীর নিরবতার পর, রেমি নেড়ি কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে চলে গেলো।

    টিবিং এবার ল্যাংডন আর সোফির দিকে ঘুরলেন। ভালো। কি-স্টোন সম্পর্কে আপনারা কি জানেন?

     

    টিবিংয়ের স্টাডিরুমের বাইরে, সাইলাস পিস্তল হাতে জানালা দিয়ে উঁকি মারলো। একটু আগে সে বাড়িটা ঘুরে অবশেষে দেখতে পেয়েছে ল্যাংডন আর সোফি স্টাডি রুমে আছে। সে কিছু করার আগেই দেখতে পেলো, ক্রাচে ভর দিয়ে একটা লোক ঘরে ঢুকছে। চিৎকার করে, দরজা খুলে তাদেরকে বের হতে বলছিলো। তারপরই, মেয়েটা কি-স্টোনের কথা বলার পর, সবকিছু বদলে গেলো। চিৎকার পরিণত হলো ফিসফিসানিতে। আর কাঁচের দরজাটও বন্ধ হয়ে গেলো।

    এখন, সাইলাস অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কাঁচের ভেতর দিয়ে তাদেরকে দেখতে লাগলো। কি-স্টোনটা এই বাড়ির কোথাও আছে। সাইলাস যেনো সেটা অনুভব করতে পারলো।

    সে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো। তাদেরকে সে পাঁচ মিনিট সময় দিলো। তারা যদি কি-স্টোনটা কোথায় আছে সেটা না বলে, তবে সাইলাস ভেতরে ঢুকে বলপূর্বক তাদেরকে বাধ্য করবে।

    স্টাডিরুমের ভেতরে, ল্যাংডন টিবিংয়ের আমুদে ভাবটা আঁচ করতে পারলো।

    গ্র্যান্ড মাস্টার? টিবিং সোফির চোখের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে বললেন। জ্যাক সনিয়ে?

    সোফি সায় দিলো, সেও তাঁর চোখে বিস্ময়টা দেখতে পেলো।

    কিন্তু, আপনার তো সেটা জানার কথা নয়!

    জ্যাক সনিয়ে আমার দাদু।

    টিবিং একটু পিছিয়ে গেলেন। এক ঝলক ল্যাংডনের দিকে তাকালেন, সে তাকে আশ্বস্ত করলো। টিবিং এবার সোফির দিকে ঘুরলেন। মিস্ নেভু, আমি বাকরুদ্ধ। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে আমি আপনার দাদুর মৃত্যুর জন্য খুবই দুঃখিত। আমাকে মানতেই হবে, আমার গবেষণার জন্য আমি প্যারিসের কয়েকজন ব্যক্তিকে তালিকায় রেখেছিলাম, যারা প্রায়োরিদের সাথে জড়িত থাকতে পারে। জ্যাক সনিয়ে সেই তালিকায় ছিলেন। কিন্তু গ্র্যান্ড মাস্টার, আপনি বলছেন? এটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। টিবিং একটু থামলেন। নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন। এখনও আমার মাথায় ঢুকছে না। যদি আপনার দাদু গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েও থাকেন, এবং কি-স্টোনটা তৈরি করে থাকেন, তারপরও, তিনি কখনই আপনাকে সেটা খোজার কথা বলবেন না। কি স্টোনটা ভ্রাতৃসংঘের অনিবার্য সম্পদের খোঁজ দিয়ে থাকে। নাতনী হলেও আপনি এ ধরনের তথ্য জানার জন্যে উপযুক্ত নন।

    মি. সনিয়ে মারা যাবার সময় তথ্যটা পাচার করে গেছেন। ল্যাংডন বললো। তার কাছে খুব কম সুযোগই ছিলো।

    তাঁর সুযোগ থাকার কোন দরকারই নেই, টিবিং আপত্তি করলেন। আরো তিন জন সেনেক্য আছেন, যারা তথ্যটা জানে। এটাই তাদের সিস্টেমের সৌন্দর্য। একজন গ্র্যান্ড মাস্টার হিসেবে আবির্ভূত হবেন এবং নতুন একজন সেনেক হিসেবে নির্বাচিত হবেন।

    আমার মনে হয়, আপনি পুরো খবরটা দেখেননি। সোফি বললো। আমার দাদু ছাড়াও প্যারিসের আরো তিনজন বিখ্যাত লোক খুন হয়েছেন আজ রাতে, একইভাবে। মনে হচ্ছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো।

    টিবিংয়ের মুখটা হা হয়ে গেলো। আর আপনি ভাবছেন তারা…

    সবাই সেনেক্য ছিলো। ল্যাংডন বললো।

    কিন্তু কিভাবে? একটা খুনের মাধ্যমে প্রায়োরিদের শীর্ষ চার জনের পরিচয় জানা সম্ভব কীভাবে! আমাকে দেখুন, আমি তাদেরকে নিয়ে যুগযুগ ধরে গবেষণা করছি, তার পরও, আমি একজন প্রায়োরির নামও বলতে পারবো না। মনে হচ্ছে, তিন জন সেনেক্য এবং গ্র্যান্ড মাস্টারকে চিনতে পারা এবং একই দিনে সবাইকে খুন করাটা অসম্ভব একটি ব্যাপার।

    আমার আশংকা তথ্যগুলো একদিনে সংগ্রহ করা হয়নি। সোফি বললো, মনে হচ্ছে, খুব ভালো একটা ডিক্যাপিটার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। এটা এমন একটা টেকনিক, যা সংগঠিত অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করা হয়। ডিসিপিজে তাদের টার্গেট গ্রুপের সদস্যদেরকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করে, তাদের কথাবার্তা আঁড়িপেতে শশানে। তারপর, নেতাটাকে পাকড়াও করে এবং একই দিনে বাকিদেরকে। নেতৃত্বহীন হয়ে দলটি বিক্ষিপ্ত আর দুর্বল হয়ে পড়ে। এটা খুব সম্ভব যে, প্রায়োরিদেরকে কেউ দীর্ঘ দিন চোখে চোখে রেখেছে, তারপর আক্রমণ করেছে। এই আশায় যে, শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা হয়তো কি-স্টোনের অবস্থানটার কথা জানিয়ে দেবে।

    টিবিংকে দেখে মনে হলো কথাটাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না। কিন্তু, ভাতসংঘের ভায়েরা একে অন্যের সাথে কখনও কথা বলে না। তারা তো তথ্যটা গোপন রাখার জন্য ওয়াদাবদ্ধ, এমনকি মৃত্যুর মুখেও।

    একদম ঠিক। ল্যাংডন বললো, তার মানে, সিক্রেটটা যদি কখনও হস্তান্তর না করে তাঁরা মৃত্যু বরণ করেন…

    টিবিং আতিশয্যে বললেন, তাহলে কি-স্টোনের অবস্থানটার কথা চিরতরের জন্য হারিয়ে যাবে।

    আর, সেইসাথে, ল্যাংডন বললো, হলি গ্রেইলের অবস্থানটাও।

    টিবিং ধপাস করে চেয়ারে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

    সোফির কণ্ঠটা নরম শোনালো। আমার দাদুর পারিপার্শ্বিক অবস্থাটা বিবেচনা করলে এটা মনে হওয়া সম্ভব যে, ভ্রাতৃসংঘের বাইরের কারো কাছে সিক্রেটটা হস্তান্তর করার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। এমন কারোর কাছে, যাকে তিনি বিশ্বস্ত মনে করেছেন। তাঁর নিজের পরিবারেরই কেউ।

    টিবিংয়ের চেহারাটা ফ্যাঁকাশে হয়ে গেলো। কিন্তু এরকম আক্রমণ চালাতে সক্ষম কেউ…ভ্রাতৃসংঘকে উদঘাটনে সক্ষম কেউ… তিনি থামলেন। নতুন এক ভীতিতে আক্রান্ত হলেন। এটা কেবল একটি শক্তিই করতে পারে। এই ধরনের অনুপ্রবেশ কেবলমাত্র প্রায়োরিদের পুরনো শত্রুদের তরফ থেকেই হতে পারে।

    ল্যাংডন তার দিকে তাকালো। চার্চ।

    আর কে? শত শত বছর ধরে রোম হলি গ্রেইল খুঁজে বেড়াচ্ছে।

    সোফিকে দেখে মনে হলো, এ ব্যাপারটাতে সে সংশয় প্রকাশ করছে। আপনি মনে করছেন, চার্চ আমার দাদুকে হত্যা করেছে?

    টিবিং জবাব দিলেন, ইতিহাসে এবারই প্রথম নয় যে, চার্চ নিজেকে বাঁচাতে হত্যা করেছে। হলি গ্রেইলের দলিল-দস্তাবেজগুলোতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তথ্য আছে। আর চার্চ সেগুলোকে ধ্বংস করতে চায়।

    ল্যাংডন টিবিংয়ের এই মতটা মেনে নিলো না। সে নতুন পোপ আর কয়েকজন কার্ডিনালের সাথে সাক্ষাত করেছে। ল্যাংডন জানে, তারা সবাই খুবই ধার্মিক আর আধ্যাত্মিক মানুষ। তারা কখনই গুপ্তহত্যাকে অনুমোদন দেবে না। যতো প্রয়োজনই পড়ুক।

    সোফিকে দেখেও মনে হচ্ছিলো, সে একইরকম ভাবছে। এটা কি সম্ভব নয় যে, প্রায়োরি সদস্যরা চার্চের বাইরের কারো দ্বারা খুন হয়েছেন? এমন কেউ যে, জানে না গ্রেইল জিনিসটা আসলে কি? খৃস্টের কাপ, হাজার হলেও খুবই দামি একটা এ্যান্টিক। নিশ্চিতভাবেই, গুপ্তধন অম্বেষণকারীরা এজন্যে খুন করতেও পিছপা হবে না।

    লেই, ল্যাংডন বললো। তকটা স্ববিরোধী। কেন ক্যাথলিক যাজকদের সদস্যরা প্রায়োরি সদস্যদের হত্যা করতে যাবে এমন একটা দলিল ধ্বংস করার জন্য, যেসব দলিলকে তারা নিজেরাই মিথ্যা আর ভূয়া বলে বিবৃতি দিয়েছে?

    টিবিং শ্লেষ ভরে বললেন, হারভার্ডের আইভরি টাওয়ার আপনাকে খুব বেশি নরম করে ফেলেছে, রবার্ট। রোমের যাজকেরা নিজেদের বিশ্বাসের ব্যাপারে খুব দৃঢ়। কিন্তু তাদের বিশ্বাসের সাথে মিল খায় না, এমন দলিল প্রকাশিত হলে কী হবে, ডিয়ার। বাকিদের বেলায় কি হবে? যারা অতো গভীরভাবে বিশ্বাসী নয়? তাদের বেলায় কি হবে যারা এ পৃথিবীর হিংসা-বিদ্বেষ দেখে প্রশ্ন করে, ঈশ্বর কোথায়, আজ? যারা চার্চের কেলেংকারী দেখে জিজ্ঞেস করে, এইসব লোক কারা, যারা পাদ্রী কর্তৃক শিশু যৌন নিপীড়নের কথা লুকাতে চায় আর দাবি করে যিশু সম্পর্কে তারাই সত্য কথা বলছে? টিবিং থামলেন। এইসব লোকের বেলায় কি হবে, রবার্ট, যদি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা যায় যে, চার্চের বলা যিশুর গল্পটা মিথ্যা।

    ল্যাংডন কিছু বললো না।

    এইসব দলিল প্রকাশিত হলে কি হবে, আমি বলছি। টিবিং বললেন। ভ্যাটিকান তার দুহাজার বছরের ইতিহাসে সবচাইতে বড় সংকটে পড়বে।

    দীর্ঘ নিরবতার পরে, সোফি বললো, যদি এই আক্রমণটা চার্চই করে থাকে, তবে তারা, এখন করলো কেন? এতো বছর পরে? প্রায়োরিরা স্যাংগুল দলিলগুলো লুকিয়ে রেখেছে। তারা তো চার্চের জন্য হুমকি ছিলো না?

    টিবিং একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ল্যাংডনের দিকে তাকালেন। রবার্ট, আমার ধারণা, আপনি প্রায়োরিদের চূড়ান্ত পদক্ষেপটা সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন?

    ল্যাংডন কথাটা বুঝতে পারলো। হ্যাঁ আছি।

    মিস নেভু, টিবিং বললেন, চার্চ আর প্রায়োরিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটা অলিখিত চুক্তি বিরাজ করছিলো। তাহলো, চার্চ প্রায়োরিদেরকে আক্রমণ করবে না। আর প্রায়োরিরাও তাদের স্যাংগৃল দলিলগুলো লুকিয়ে রাখবে। তিনি থামলেন। তা সত্ত্বেও, প্রায়োরিদের একটা অংশের পরিকল্পনা ছিলো সিক্রেটটা উনাোচিত করার। একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগমনে, প্রায়োরিরা তাদের সিক্রেটটা ফাস করবে। আর যিশু খৃস্টের সত্যিকারের কাহিনীটা পাহাড়ের শীর্ষ থেকে চিৎকার করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে। দেয়া হবে।

    সোফি টিবিংয়ের দিকে নিরবে চেয়ে রইলো। অবশেষে, সেও বসে পড়লো। আপনি মনে করছেন, সেই দিনটা সমাগত? আর চার্চও সেটা জানে?

    এটা একটা অনুমান, টিবিং বললেন।

    এবার ল্যাংডন বললো, আপনি কি মনে করেন, প্রায়োরিদের দিনটার কথা উদঘাটন করার মতো সক্ষমতা চার্চের রয়েছে?

    কেন নয়–আমরা যদি মনে করতে পারি, চার্চ প্রায়োরিদের পরিচয় উদঘাটন করতে পেরেছে, তবে নিশ্চিতভাবেই তারা তাদের পরিকল্পনার কথাটাও জেনে গেছে। আর তারা যদি তাদের দিনটার কথা একদম ঠিক করে নাও জানে, তবে তাদের কুসংস্কার সেটা জানাতে সাহায্য করবে।

    কুসংস্কার? সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    ভবিষ্যত্বাণী হিসেবে, টিবিং বললেন। বর্তমানে, আমরা একটা পরিবর্তনের মধ্যে আছি। এইতো, কদিন আগে মিলেনিয়াম অতিক্রম করলো। এর সাথে পিসিজের দুহাজার বছরের জ্যোতিষ-কালও সমাপ্ত হয়েছে পিসিজ মানে মাছটা, যিশুরই প্রতীক। যে কোন জ্যোতিষ আপনাকে বলে দেবে যে, এই সময়টা উত্তপ্ত ধর্মের সময়কাল। এখন আমরা প্রবেশ করেছি এ্যাকোয়ারিয়ামের সময়ে পানির অধিকর্তা—যার দর্শন দাবি করে, মানুষ সত্য জানবে এবং নিজে নিজেই চিন্তা করতে সক্ষম হবে। আদর্শগত পরিবর্তনটা বেশ বড়, আর এটা বর্তমানেই সংঘটিত হচ্ছে।

    ল্যাংডন একটা কাঁপুনি অনুভব করলো। জ্যোতিষীদের ভবিষ্যত্বাণীতে তার কখনই কোন আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু, সে জানতো, চার্চে এমন অনেকেই আছেন, যারা এসব মেনে চলেন। চার্চ এই সন্ধিক্ষণকে শেষ দিন হিসেবে অভিহিত করে।

    সোফিকে সন্দিগ্ধ মনে হলো। পৃথিবীর শেষ হিসেবে? এ্যাপোক্যালিপসো?

    না, ল্যাংডন জবাব দিলো। এটা একটা সাধারণ ভুল ধারণা। অনেক ধর্মই শেষ দিনের কথা বলেছে। এতে পৃথিবীর শেষ দিন বোঝায় না, বরং আমাদের সাম্প্রতিক সময়কে বোঝায় পিসিজ, যা যিশুর জন্মের সময় থেকে শুরু হয়ে দুহাজার বছর ধরে চলেছে। আর সেটা শেষ হয়ে যাবার পর, এখন আমরা এ্যাকোয়ারিয়ামের সময়ে প্রবেশ করেছি। শেষ দিন সমাগত হয়েছে।

    গ্রেইল ঐতিহাসিকদের অনেকেই, টিবিং যোগ করলেন, বিশ্বাস করেন যে, প্রায়োরিরা হয়তো এরকম একটি সময়কেই বেছে নেবে সত্যটা প্রকাশ করার জন্য। বেশির ভাগ প্রায়োরি একাডেমিক, আমি সহ, অনুমাণ করি, ভ্রাতৃসংঘের সত্য প্রকাশটা মিলেনিয়ামের সাথে কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে। আসলে তা নয়। আমি জানি না কোন্ চার্চ প্রায়োরিদেরকে আক্রমণ করার জন্য এসময়টা বেছে নিলো। টিবিংকে একটু চিন্তিত দেখালো। আর বিশ্বাস করুন, চার্চ যদি হলি গ্রেইল খুঁজে পায়, তারা সেটা ধ্বংস করে ফেলবে, দলিলটা আর মাগদালিনের দেহাবশেষ সহ। তাঁর চোখ দুটো খুব ভারী মনে হলো। তাহলে, মাইডিয়ার, স্যাংগৃল দলিলগুলো শেষ হয়ে গেলে সবরকম প্রমাণই হারিয়ে যাবে। চার্চ তাহলে তাদের সহস্র বছরের যুদ্ধে জিতে যাবে। আর একটা অতীত, চিরতরের জন্য হারিয়ে যাবে।

    ধীরে ধীরে সোফি তার কুশাকৃতির চাবিটা পকেট থেকে বের করে. টিবিংয়ের সামনে তুলে ধরলো।

    টিবিং চাবিটা দেখে নিলেন। হায়, হায়। এটাতো প্রায়োরির সিল। আপনি এটা কোথেকে পেলেন?

    আজ রাতে, আমার দাদু মারা যাবার আগে এটা আমাকে দিয়ে গেছেন।

    টিবিং চাবিটা হাতে তুলে নিলেন চার্চে ঢোকার একটা চাবি?

    সোফি একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলো। এই চাবিটা দিয়ে কি-স্টোনে ঢোকা যায়।

    টিবিংয়ের মাথাটা নড়ে উঠলো, তার মুখে অবিশ্বাসের চিহ্ন। অসম্ভব! আমি কোন চার্চটা বাদ দিয়েছি? ফ্রান্সের প্রতিটা চার্চই আমি খুঁজে দেখেছি!

    এটা কোন্ চার্চে নেই, সোফি বললো। এটা সুইস ডিপোজিটরি ব্যাংকে আছে।

    টিবিংকে আরো বেশি বিস্মিত মনে হলো। কি-স্টোনটা একটা ব্যাংকে আছে?

    একটা ভল্টে, ল্যাংডন জানালো।

    ব্যাংকের ভল্টে? টিবিং পাগলের মতো মাথা ঝাঁকালেন। অসম্ভব, কি-স্টোনটা গোলাপ চিহ্নের নিচে লুকিয়ে রাখার কথা।

    তা-ই আছে, ল্যাংডন বললো। এটা একটা রোজউড বাক্সের ভেতরে পাঁচ পাঁপড়ির গোলাপ অংকিত বাক্সের ভেতরে আছে।

    টিবিংকে দেখে মনে হলো বজ্রাহত। আপনারা কি-স্টোনটা দেখেছেন?

    সোফি মাথা নেড়ে সায় দিলো। আমরা ব্যাংকে গিয়েছিলাম।

    টিবিং তাদের কাছাকাছি আসলেন, তাঁর চোখে বন্য ভয়। আমার বন্ধুরা, আমাদেরকে কিছু একটা করতেই হবে। কি-স্টোনটা বিপদে আছে! এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যদি আরো কোন চাবি থেকে থাকে? সম্ভবত খুন হওয়া সেনেক্য দের কাছে? আপনাদের মতো যদি চার্চও ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারে

    তাহলে তারা খুব দেরি করে ফেলবে, সোফি বললো। আমরা কি-স্টোনটা সরিয়ে ফেলেছি।

    কী।আপনারা কি-স্টোনটা সরিয়ে ফেলেছেন?

    ঘাবড়াবেন না, ল্যাংডন বললো। কি-স্টোনটা ভালো জায়গাতেই লুকিয়ে রাখা আছে।

    খুবই ভালো মতো লুকানো আছে, আশা করি।

    আসলে, ল্যাংডন তার হাসিটা লুকাতে পারলো না। এটা নির্ভর করে, আপনি আপনার সোফাটা কতদিন পরপর ঝাড়ু দিয়ে থাকেন তার ওপরে।

    * * *

    জানালার ওপাশে, বাতাসের ঝাঁপটায় সাইলাসের আলখেল্লাটা উড়ছিলো। যদিও সে বেশিরভাগ কথাবার্তাই শুনতে পায়নি, তারপরও কি-স্টোন শব্দটা বার কয়েক জানালা ছাপিয়ে তার কানে এসেছে।

    এটা ভেতরেই আছে।

    টিচারের কথাগুলো তার পরিষ্কার মনে আছে। শ্যাতু ভিলেতে প্রবেশ করো। কি স্টোনটা ওখানে আছে। কাউকে আঘাত কোরো না।

    এখন, ল্যাংডন আর বাকিরা অন্য একটা ঘরে চলে গেলো।

    প্যান্থারের নিরবে শিকার ধরার মতো, সাইলাসও কাঁচের দরজাটা দিয়ে নিরবে ঢুকে পড়ে ভেতর থেকে দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে দিলো। পাশের ঘর থেকে গুঞ্জনের শব্দ তার কানে এলো। সাইলাস পকেট থেকে পিস্তলটা বের করলো। সেফটি লটা বন্ধ করে হলওয়ের দিকে এগিয়ে গেলো সে।

    ৬৩.

    লেফটেনান্ট কোলেত লেই টিবিংয়ের বিশালাকৃতির বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরিবিলি আর অন্ধকার। লুকানোর জন্য ভালো জায়গা। কোলেত তার আধ-ডজন এজেন্টের দিকে তাকালো, যারা বাড়িটার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে, নিরবে। এক মিনিটের মধ্যেই তারা বেড়া টপকিয়ে বাড়িটা ঘেরাও করতে পারবে।

    কোলেত ফশেকে ফোন করতে যেতেই, ফোনটা বেজে উঠলো।

    ফশের কথা শুনে মনে হলো না এই ব্যাপারটার অগ্রগতি সম্পর্কে সে খুব একটা খুশি হয়েছে। ল্যাংডনের ব্যাপারের যে খোঁজ পাওয়া গেছে, সেটা আমাকে কেউ ফোনে জানায়নি কেন?

    আমরা ফোনে ব্যস্তছিলাম, আর—

    তোমরা ঠিক কোথায়, লেফটেনান্ট কোলেত?

    কোলেত তাকে ঠিকানাটা দিলো। এস্টেটটা একজন বৃটিশ নাগরিকের, নাম টিবিং, ল্যাংডনের গাড়িটা সিকিউরিটি গেটের ভেতরেই আছে। দেখে মনে হচ্ছে না, জোর করে ঢুকেছে, তাই মনে হচ্ছে ল্যাংডন মালিককে চেনে।

    আমি আসছি, ফশে বললো। তোমরা কোনো কিছু কোরো না। আমি নিজে সেটা দেখবো।

    কোলেতের মুখটা হা হয়ে গেলো। কিন্তু ক্যাপ্টেন, আপনি তো বিশ মিনিটের দূরত্বে আছেন। আমাদেরকে এখনই কিছু একটা করতে হবে। আমার সাথে আট জন লোক আছে। চার জনের সঙ্গে আছে ফিল্ড-রাইফেল, আর বাকিদের সঙ্গে রয়েছে সাইড আর্মস।

    আমার জন্যে অপেক্ষা করো।

    ল্যাংডন যদি ভেতরে কাউকে জিম্মি করে, তবে কি হবে? সে যদি আমাদের দেখে পালাতে চায়, তাহলেই বা কী হবে? আমার লোকজন ভেতরে যাবার জন্য অবস্থান নিয়ে আছে।

    লেফটেনান্ট কোলেত, তুমি আমার আসার জন্য অপেক্ষা করো। কোনো এ্যাকশন নেবে না। এটা আমার আদেশ। ফশে ফোনটা রেখে দিলো।

    হতবাক কোলেত ফোনটার সুইচটা বন্ধ করে দিলো। ফশে কেন আমাকে অপেক্ষা করতে বলছে? কোলেত উত্তরটা জানতো। ফশে, যদিও তার আচরণের জন্য বিখ্যাত, তার পরও অহংকারের জন্য তার দুর্নামও রয়েছে। ফশে গ্রেফতারের কৃতিত্বটা নিতে চায়। আমেরিকানটার চেহারা টিভি পর্দায় দেখাবার পর, ফশে নিজের চেহারাটাও সমান সংখ্যক সময় পর্দায় দেখাতে চাচ্ছে। অপেক্ষা ছাড়া কোলেতের কিছু করার নেই, তার বসের নির্দেশ।

    দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোলেত এই দেরি করানোর ব্যাপারে দ্বিতীয় আরেকটা কারণের কথাও ভাবলো। ড্যামেজ কন্ট্রোল। আইন-প্রয়োগকারী সংস্থায় তখনই একজন ফেরারীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে ইতস্তত করা হয়, যখন তার অপরাধের ব্যাপারে একটু সন্দেহ থাকে। ল্যাংডনই সেই ব্যক্তি, এই ব্যাপারে ফশের কি দ্বিতীয় কোন চিন্তা আছে? চিন্তাটা খুব ভীতিকর। ল্যাংডনকে গ্রেফতারের ব্যাপারে ফশের অবস্থা শাখের করাতের মতো। বেজু ফশের মতো বড় মাপের কেউও টিকে যেতে পারবে না, যদি ভুলক্রমে বিখ্যাত আমেরিকানটাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়। ফশে যদি এখন বুঝতে পারে, সে ভুল করেছে, তাহলে এই দেরির কারণটা বোধগম্য।

    তারচেয়েও বড় কথা, কোলেত বুঝতে পেরেছে, যদি ল্যাংডন নির্দোষ হয়ে থাকে, তবে মামলাটার মধ্যে একটা হেঁয়ালী তৈরি হবে কেন নিহতের নাতনী সোফি নেভু, অভিযুক্ত খুনিকে পালাতে সাহায্য করবে। যদি না সোফি জানে যে, ল্যাংডনকে ভুয়া অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে এই ঘটনায় সোফির অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যাটা মনে মনে ঠিক করে রেখেছে নিশ্চিত। ব্যাখ্যাটা এইরকম, সোফি হলো সনিয়ের একমাত্র উত্তরাধিকারী, সে তার প্রেমিক রবার্ট ল্যাংডনকে প্ররোচিত করে সনিয়েকে খুন করিয়েছে, যাতে উত্তরাধীকারসূত্রে বিশাল অংকের টাকা পাওয়া যায়। সনিয়ে সেটা একটু আগে-ভাগে বুঝতে পেরেই একটা মেসেজ লিখে গেছেন, পি, এস, রবার্ট ল্যাংডনকে খুঁজে বের করো। কোলেতের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিলো, এখানে কিছু একটা ঘটছে। সোফি নেভুকে দেখে মনে হয় না, সে এরকম কোন ঘটনায় জড়াবে।

    লেফটেনান্ট? ফিল্ড এজেন্টদের একজন তার কাছে দৌড়ে এসে বললো। আমরা একটা গাড়ি খুঁজে পেয়েছি।

    কোলেত প্রবেশ পথ থেকে পঞ্চাশ গজ দূরে গিয়ে দেখলো, একটা কালো অদি, রাস্তার ওপর পাশে, অন্ধকারে পার্ক করা রয়েছে। এটার গায়ে ভাড়া করা প্লেট লাগানো। কোলেত হুডটা ধরে দেখলো, এখনও গরম আছে।

    এটা দিয়েই হয়তো ল্যাংডন এখানে এসেছে, কোলেত বললো। রেন্টাল কম্পানিকে ফোন করো। খোঁজ করে দ্যাখো, এটা চুরি করা হয়েছে কিনা।

    আরেকজন এজেন্ট বেড়ার দিক থেকে আসলো। লেফটেনান্ট, এটা একটু দেখুন। সে কোলেতের হাতে একটা নাইট-ভিশন দূরবীন দিলো। গাছের নিচ থেকে পেয়েছি।

    কোলেত দূরবীনটা তুলে নিয়ে পাহাড়ের দিকে তাকালো। সেটা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। ধীরে ধীরে, সবুজ রঙের দৃশ্যটা ফোকাস হলো। সে এবার প্রবেশ পথের দিকে তাকালো, গাছগুলোর দিকে দেখার চেষ্টা করলো। সেখানে, সবুজ গাছের ছায়ায় একটা ট্রাক দেখা যাচ্ছে। কোলেত ডিপোজিটরি ব্যাংক অব জুরিখ থেকে যে ট্রাকটাকে চলে যাবার অনুমতি দিয়েছিলো। তার মনে হলো, এটা এক ধরনের কিম্ভুতকিমাকার কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু সে জানতো, এটা হতেই পারে না।

    মনে হচ্ছে, এজেন্ট বললো, এই ট্রাকটাতে করেই ল্যাংডন আর নেভু ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো।

    কোলেত একদম নির্বাক। সে ট্রাকটার ড্রাইভারের ব্যাপারে একটু ভেবেছিলো, রোলেক্স ঘড়িটা দেখে। চলে যাবার জন্য তার অধৈর্য ছিলো। আমি গাড়ির কার্গোটা চেক করে দেখিনি।

    সঙ্গে সঙ্গেই কোলেত বুঝতে পারলো, ব্যাংকের কেউ, ডিসিপিজের সাথে মিথ্যে কথা বলে ল্যাংডন আর সোফিকে পালাতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সেটা কে? আর কেনইবা এটা করতে যাবে? কোলেত ভাবলো, হয়তো এজন্যেই, ফশে তাকে এই মুহূর্তে কিছু করতে না করেছে। হয়তো, ফশে বুঝতে পেরেছে, এই ঘটনায় ল্যাংডন আর সোফি ছাড়াও আরো কেউ জড়িত। যদি ল্যাংডন আর সোফি এই ট্রাকটাতে করে এসে থাকে, তবে অদি গাড়িটা চালিয়েছে কে?

    শত শত মাইল দূরে, দক্ষিণ দিকে, একটা চার্টাড বিমান তিরেনিয়ান সাগর পেরিয়ে উত্তর দিকে ছুটে চলছে। শান্ত আকাশ থাকা সত্ত্বেও, বিশপ আরিঙ্গারাসা হাতে একটা এয়ার-সিকনেস ব্যাগ রেখেছেন। তিনি নিশ্চিত, যেকোন মুহূর্তেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। প্যারিসের সাথে তার কথাবার্তাটা মোটেই সুখকর কিছু ছিলো না। এটা তার কাছে অকল্পনীয় বলে মনে হয়েছে।

    একটা ছোট্ট কেবিনে, আরিজারোসা তার আঙুলের সোনার আংটিটা মোচরাতে লাগলেন, নিজের দুশ্চিন্তা আর উত্তেজনা কাটানোর জন্য। প্যারিসের সবকিছুই উল্টা পাল্টা হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে আরিঙ্গাবোসা প্রার্থনা করলেন, যেনো বেজু ফশে সবকিছু ঠিক করে ফেলে।

    ৬৪.

    টিবিং সসাফায় বসে উডবাক্সটা কোলের ওপর রেখে ঢাকনার ওপরে আঁচিত গোলাপের দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আজ রাতটা আমার জীবনের সবচাইতে অদ্ভুত আর যাদুময় এক রাত।

    ঢাকনাটা খুলুন, সোফি নিচু স্বরে বললো তাকে। তার পেছনেই ল্যাংডনের সাথে দাঁড়িয়ে আছে সে।

    টিবিং হাসলেন। আমাকে তাড়া দিবেন না। এই কি-স্টোনটা যুগ যুগ ধরে খুঁজে যাচ্ছেন, তাই প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চান। কাঠের ঢাকনাটার উপর আঙুল বুলিয়ে অঙ্কিত ফুলটা অনুভব করলেন।

    রোজ, নিচু স্বরে বললেন তিনি। রোজ বা গোলাপ হলো মাগদালিন, আর মাগদালিন হলেন হলি গ্রেইল। রোজ হলো কম্পাস, যা পথ দেখায়। নিজেকে বোকা বোকা লাগলো বলে টিবিং ভাবলেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি ফ্রান্সের ক্যাথেড্রাল থেকে চার্চে চার্চে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভেতরে ঢোকার জন্য অনুনয়-বিনয় করেছেন, শত শত খিলান খুঁজে দেখেছেন তার নিচে খোঁদাই করা কি-স্টোন আছে কিনা। লা ক্লেফ দ্য ভূত-গোলাপ বা রোজের চিহের নিচে একটা কি-স্টোন।

    টিবিং আস্তে আস্তে ঢাকনাটা খুললেন।

    ভেতরের জিনিসটার দিকে তাকিয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারলেন এটাই সেই কি-স্টোন। পাথরের চোঙাটার দিকে তাকিয়ে রইলেন টিবিং খোঁদাই করা অক্ষরের ডায়ালটা দেখলেন। জিনিসটা তার কাছে খুবই পরিচিত বলে মনে হলো।

    দা ভিঞ্চির ডায়রি থেকে নক্সা করা হয়েছে, সোফি বললো। আমার দাদু শখের বশে এটা বানিয়েছিলেন।

    অবশ্যই। টিবিং বুঝতে পারলেন। তিনি স্কেচ আর নক্সাটা দেখেছেন। এই পাথরের ভেতরেই হলি গ্রেইল খুঁজে পাবার মূল চাবিকাঠিটা রয়েছে। টিবিং ভারি ক্রিপ্টেক্সটা বাক্স থেকে তুলে নিয়ে আলতো করে সেটা ধরলেন। যদিও তিনি জানেন

    চোঙাটা কীভাবে খোলা যায়, তারপরও তার মনে হলো তাঁর নিয়তি এটার ভেতরেই শায়িত রয়েছে। ব্যর্থ মুহূর্তগুলোতে টিবিং নিজেকে প্রশ্ন করতেন, এই জীবনে তিনি ওটার খোঁজ পাবেন কিনা। এখন এসব সন্দেহ চিরতরের জন্য চলে গেছে। তিনি সেই প্রাচীন কথাটা শুনতে পেলেন…গ্রেইল কিংবদন্তীর মূল ভিত্তি সেটা :

    ভূ নো ক্রভেজ পাস লো সেনগ্রাল, সেস্ত লো সেনগ্রল কুয়ে ক্ৰভ।

    তোমাকে গ্রেইল খুঁজতে হবে না, গ্রেইলই তোমাকে খুঁজে নেবে।

    আজ রাতে বিস্ময়করভাবেই হলি গ্রেইলের খোঁজ করার চাবিটা তাঁর দরজায় হেটে এসেছে।

    যখন সোফি আর টিবিং বসে বসে ক্রিপ্টেক্সটার পাসওয়ার্ড কি হতে পারে সে নিয়ে কথা বলে যাচ্ছিলো, ল্যাংডন তখন রোজউড বাক্সটা ঘরের অন্য পাশে আলোর কাছাকাছি একটা টেবিলে নিয়ে গেলো সেটা ভালো করে দেখার জন্য। এইমাত্র টিবিং যা বলেছেন সেটা তার মাথায় ঘুর ঘুর করছে।

    হলি গেইলের চাবিকাঠিটা, গোলাপের চিত্রে নিচে লুকায়িত আছে।

    ল্যাংডন বাক্সটা আলোর সামনে তুলে ধরে গোলাপ চিহ্নটা পরীক্ষা করে দেখলো। চিত্রকলার সাথে তার পরিচয় থাকলেও সেটা কাঠের কাজ কিংবা খোঁদাই করা কোন কিছুর সাথে নয়।

    ল্যাংডন গোলাপটার দিকে আবার তাকালো।

    গোলাপের নিচে।

    সাব রোসা।

    সিক্রেট।

    তার পেছনে একটা কিছু টের পেয়ে সে ঘুরে তাকালো। অন্ধকার, ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না। টিবিংয়ের গৃহপরিচারক খুব সম্ভবত এদিক দিয়ে চলে গেছে। ল্যাংডন আবারো বাক্সটার দিকে তাকালো। সে অঙ্কিত গোলাপটা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে দেখলো।

    বাক্সটা খুলে ঢাকনাটার ভেতরে ভালো করে দেখলো সে। খুব মসৃন সেই জায়গাটা। বাক্সটা উল্টে দেখতে পেলো ভেতরের দিকে ছোট্ট একটা ছিদ্র রয়েছে। ঠিক মাঝখানে। ল্যাংডন ঢাকনাটা বন্ধ করে উপরের দিক থেকে দেখলো। কোন ছিদ্র নেই।

    এটা এপাশ ওপাশ দিয়ে ছিদ্র করা নয়।

    টেবিলের ওপর বাক্সটা রেখে ঘরটার চারপাশ দেখে নিয়ে একটা কাগজের বান্ডিল আর পেপার ক্লিপ নিয়ে আসলো সে। বাক্সটা খুলে ছিদ্রটা আবারো ভালো করে দেখলো। সাবধানে ক্লিপটার বাঁকানো আকৃতি সোজা করে ছিদ্রটার ভেতরে ঢুকিয়ে আলতো করে একটা ধাক্কা দিলো। টেবিলে খট করে কিছু একটার আওয়াজ শুনতে পেলো সে। ল্যাংডন ঢাকনাটা বন্ধ করে দেখলে কী হচ্ছে। কাঠের গোলাপটা ঢাকনা থেকে খুলে টেবিলে পড়ে আছে।

    নির্বাক ল্যাংডন গোলাপটা যেখানে ছিলো সেই খালি জায়গাটার দিকে তাকিয়ে রইলো। সেখানে খোঁদাই করা কাঠে নিখুঁত হাতে লেখা একটা টেক্সট। এমন একটা ভাষায় সেটা লেখা যা এর আগে সে কখনও দেখেনি। অক্ষরগুলো দেখে মনে হচ্ছে সেমিটিক, ল্যাংডন মনে মনে বললো। তারপরও সেটা আমি চিনতে পারছি না!

    তার পেছনে হঠাৎ করে একটা কিছুর আবির্ভাবে সে সজাগ হয়ে উঠলো। আচম্‌কা প্রচণ্ড জোড়ে ঘুষি তার মাথায় আঘাত করলে ল্যাংডন হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো। পড়ে যেতেই সে একটা ফ্যাঁকাশে ভূতকে তার উপর উড়তে দেখলো। ভূতটার হাতে অস্ত্র। তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেলো।

    ৬৫.

    সোফি নেভু আইন-প্রয়োগকারী সংস্থায় কাজ করলেও আজকের আগে বন্দুকের নলের সামনে পড়েনি। অস্ত্রটা এক অতিকায় শেতি লোকের সাদা ফ্যাঁকাশে হাতে ধরা। লোকটা লম্বা আর সাদা চুলের। সে সোফির দিকে লাল চোখে তাকালো যাতে ভীতিকর কিছু আছে। যেনো অশরীরী এক আত্মা। একটা উলের আলখেল্লা পরা, দেখে মনে হচ্ছে মধ্যযুগের একজন পাদ্রী। লোকটা কে সে সম্পর্কে সোফির কোন ধারণা নেই, তবে হঠাৎ করেই তার মনে টিবিং সম্পর্কে একটা শ্রদ্ধাভাব জাগ্রত হলো, কেনো টিবিং সন্দেহ করেছিলেন এসবের পেছনে চার্চ জড়িত রয়েছে।

    তোমরা জানো আমি কেন এসেছি, পাদ্রী বললো, তার কণ্ঠস্বর ফ্যাসফ্যাসে।

    সোফি আর টিবিং সোফায় বসে ছিলো, তারা দুহাত উপরে তুলে ধরলো আক্রমণকারীর নির্দেশে। ল্যাংডন মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছে। পাদ্রীর চোখ সঙ্গে সঙ্গে টিবিংয়ের কোলে রাখা কি-স্টোনটার দিকে গেলো।

    টিবিংয়ের কণ্ঠস্বর তখনও দৃঢ়। তুমি এটা খুলতে পারবে না।

    আমার টিচার খুবই জ্ঞানী ব্যক্তি, পাত্রী জবাব দিলো। আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে অস্ত্রটা সোফি আর টিবিংয়ের মাঝখানে ধরলো।

    সোফি ভাবতে লাগলো টিবিংয়ের গৃহপরিচারক কোথায়। সে কি রবার্টের পড়ে যাওয়াটা শুনতে পায়নি।

    তোমার টিচার কে? টিবিং জিজ্ঞেস করলেন। হয়তো আমরা টাকা-পয়সার ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

    গ্রেইল অমূল্য। সে আরেকটু কাছে এগিয়ে আসলো।

    তোমার রক্ত ঝড়ছে, টিবিং খুব শান্তভাবে পাত্রীর ডান দিকের গোড়ালী বেয়ে রক্ত পড়ার দিকে ইঙ্গিত করলো। তুমি তো খোঁড়াচ্ছো।

    ঠিক তোমার মতো, পাদ্রী জবাব দিলো। টিবিংয়ের ক্রাচের দিকে ইঙ্গিত করলো সে।এবার কি-স্টোনটা আমাকে দিয়ে দাও।

    কি-স্টোন সম্পর্কে তুমিও জানো? টিবিং বললেন। কথা শুনে মনে হলো, খুব অবাক হয়েছেন।

    আমি কি জানি সেটা বাদ দাও। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াও, তারপর এটা আমাকে দিয়ে দাও।

    আমার জন্য দাঁড়ানো খুব কষ্টকর।

    একেবারে ঠিক। কেউ নড়বে না, সেটাই আমি চাই।

    টিবিং তার ডান দিকের ক্রাচটা ধরে বাম হাতে কি-স্টোনটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। উঠে দাঁড়ালেও একটু কাঁপছেন তিনি।

    পাদ্রী কয়েক হাত দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। অস্ত্রটা এবার ঠিক টিবিংয়ের মাথার দিকে তা করলো সে। সোফি চেয়ে চেয়ে দেখছে, পাদ্রী কি-স্টোনটা নেবার সময় নিজেকে তার খুব অসহায় বলে মনে হলো।

    তুমি সফল হবে না, টিবিং বললেন। কেবল যোগ্য লোকই এটা খুলতে পারবে।

    ঈশ্বরই বিচার করে, কে যোগ্য, সাইলাস ভাবলো। খুব ভারি কিন্তু, হাতটা বাড়াতে বাড়াতে টিবিং বললেন। তুমি যদি এটা নিতে দেরি করে তবে আমি কিন্তু এটা ফেলে দেবো।

    সাইলাস কি-স্টোনটা নেবার জন্য এগিয়ে আসলো। এগিয়ে আসতেই ক্রাচে ভর দেয়া লোকটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। ক্রাচটা ফসকে গিয়ে ডান দিকে পড়ে যেতে লাগলেন টিবিং। না! সাইলাস কি-স্টোনটা বাঁচাতে এক হাত বাড়িয়ে দিলো, এতে করে অটা নিচের দিকে কাত হয়ে যাওয়ায় কি-স্টোনটা তার কাছ থেকে সরে গেলো। লোকটা ডানদিকে পড়তেই কি-স্টোনটা সোফায় ফেলে দিলেন। ঠিক একই সময়ে মেটাল কাঁচটার নিচ থেকে একটা মুখ খুলে গেলো, টিবিংই সেটা করেছেন, সেটার ভেতর থেকে ধারালো কিছু একটা বের হয়েছে, আর সেটা সাইলাসের পায়ে বিধে দেয়া হলো।

    প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সাইলাসের শরীরটা বেঁকে গেলো, কারণ ক্ৰাচটা তার সিলিস-এ আঘাত করেছে। সাইলাস হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো। একটা গর্জন দিয়ে পিস্তলটা হাত থেকে ফেলে দিলো সে। বুলেটটা ঘরের মেঝের এক কোনে গিয়ে বিঁধলো। পিস্তলটা আবার তুলে গুলি করার আগেই পা দিয়ে সজোড়ে তার চোয়ালে আঘাত হানলে সোফি।

    বাড়ির বাইরে প্রবেশ পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোলেত গুলির শব্দটা শুনতে পেলো। ফশে ইতিমধ্যেই রওনা দিয়ে দেয়াতে ল্যাংডনকে ধরতে পারার ব্যক্তিগত কৃতিত্বের দাবিটা হাতছাড়া হয়েই গেছে। কোলেত ফশের ইগোকে আর পরোয়া করবে না বলে স্থির করলো।

    একটা আবাসিক বাড়ির ভেতরে অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রবেশ পথে অপেক্ষা করছিলে?

    কোলেত জানতো সুযোগটা এসে গেছে। সে আরো জানতো, যদি আর এক মুহূর্তও দেরি করে তবে তার ক্যারিয়ারটাই সকালের মধ্যে ইতিহাস হয়ে যাবে। প্রবেশ পথের লোহার গেটের দিকে তাকিয়ে সে তার সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললো।

    আসো, গেটটা খুলে ফেলল।

    একটা ঘোরের মধ্যেই গুলির আওয়াজটা শুনতে পেলো ল্যাংডন, যন্ত্রণার সুতীব্র চিৎকারটাও শুনলো। তার নিজের? তার মাথার পেছনে একটা বিশাল হাতুড়ির আঘাত

    লেগেছে যেনো। কাছেই কোথাও লোকজনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে।

    তুমি কোথায়, কোন নরকে আছছ? টিবিংয়ের কণ্ঠটা শোনা গেলো।

    দ্রুত এসে হাজির হয়েছে গৃহপরিচারক। কি হয়েছে? হায় ঈশ্বর! এই লোকটা কে? আমি পুলিশকে ফোন করছি।

    আরে রাখো! পুলিশকে ফোন কোরো না। কাজে লেগে যাও, কিছু একটা নিয়ে আসো যাতে এই দৈত্যটাকে বেঁধে রাখা যায়।

    আর কিছু বরফ! সোফি তাকে বললো।

    ল্যাংডনের কানে আরো কণ্ঠস্বর শোনা গেলো। লোকজনের চলাচল। এখন সে সোফাতে। সোফি তার মাথায় একটা বরফের পঠি ধরে রেখেছে। তার মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে। ল্যাংডনের দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই সে দেখতে পেলো মেঝেতে একটা দেহ পড়ে রয়েছে। আমার কি হেলুসিনেশন হচ্ছে। বিশাল আকৃতির শ্বেতকায় এক পাদ্রীকে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে, তার মুখ টেপ দিয়ে আঁটকানো, আর লোকটার ডান ঊরু থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে।

    ল্যাংডন সোফির দিকে তাকালো। এই লোকটা কে? হয়েছেটা কি?

    টিবিং তার সামনে এসে বললেন, আপনি একজন নাইটের ছুরির কল্যাণে এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন, জিনিসটা একমে অর্থোপোডিক কর্তৃক নির্মিত।

    হাহ ল্যাংডন উঠে বসার চেষ্টা করলো।

    সোফি আততা করে হাত দিয়ে চাপ দিলো। এক মিনিট আরাম করো, রবার্ট।

    আমার মনে হচ্ছে, টিবিং বললেন, আমি আপনার মেয়েবন্ধুকে এইমাত্র দূর্ভাগ্যজনকভাবে পাওয়া আমার সুবিধার প্রদর্শন করতে পেরেছি। মনে হচ্ছে সবাই আপনাকে খুব হাল্কা করে দেখে।

    নিজের আসন থেকেই ল্যাংডন পাদ্রীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো কী ঘটেছে।

    সে একটা সিলিস পরে আছে, টিবিং বোঝাতে লাগলেন।

    কি?

    টিবিং ঊরুতে আঁটকানো লোহার তৈরি কাটাতারের বেল্টটার দিকে ইঙ্গিত করলেন। একটা ডিসিপ্লিন বেস্ট সে তার ঊরুতে পরেছে। আমি খুব সর্তকভাবে লক্ষ্য করে মেরেছিলাম।

    ল্যাংডন মাথা ঝাঁকালো। সে ডিসিপ্লিন বেল্টটার সম্পর্কে জানে। কিন্তু কিভাবে…আপনি জানলেন?

    টিবিং দাঁত বের করে হাসলেন। খৃস্ট ধর্ম হলো আমার গবেষণার বিষয়, রবার্ট। কয়েকটা ধর্মীয় গোষ্ঠীই এরকম জিনিস ব্যবহার করে থাকে।

    ওপাস দাই, ল্যাংডন ফিসফিস্ করে বললো। তার মনে পড়ে গেলো সাম্প্রতিক সময়ে বোস্টনের কয়েকজন বিখ্যাত ব্যবসায়ীর ওপাস দাইর সদস্য পদ নেবার সংবাদটার কথা। এরকম একজন সদস্যই এখন ল্যাংডনের সামনে পড়ে আছে।

    টিবিং রক্তাক্ত বেল্টটার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখলেন। কিন্তু ওপাস দাই কেন হলি গ্রেইল খোঁজার চেষ্টা করবে?

    রবার্ট, উডেন বক্সটার কাছে গিয়ে সোফি বললো। এটা কি? ঢাকনা থেকে খোলা ছোট গোলাপটা হাতে নিয়ে সোফি বললো।

    এটা বক্সটার মধ্যে একটা লেখাকে ঢেকে রেখেছিলো। আমার মনে হয় লেখাগুলো হয়তো কি-স্টোনটা খুলতে সাহায্য করবে।

    সোফি আর টিবিং কিছু বলার আগেই আধমাইল দূর থেকে পুলিশের সার্চলাইটের নীল আলোর বন্যা এসে পড়লো তাদের ঘরের মধ্যে, সেই সাথে সাইরেনের শব্দ। টিবিং চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আমার বন্ধুরা, মনে হচ্ছে আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আর সেটা নিতে হবে খুব দ্রুত।

    ৬৬.

    কোলেত এবং তার এজেন্টরা স্যার লেই টিবিংয়ের এস্টেটের ভেতরে সশস্ত্র অবস্থায় হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো। ঘরের মধ্যে ঢুকেই বাড়ির প্রথম তলার সবগুলো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলে তারা! ড্রইংরুমের মেঝেতে বুলেটের একটা গর্ত খুঁজে পেলো। ধস্তাধস্তির চিহ্নও দেখা গেলো সেখানে। কয়েক ফোঁটা রক্ত, অদ্ভুত একটা কাঁটা তারের বেষ্ট আর ব্যবহৃত টেপের কিছু অংশ। পুরো তলাটা মনে হলো একেবারে ফাঁকা।

    কোলেত তার লোকজনদেরকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে বেসমেন্টে তল্লাশী করার জন্য পাঠাবার ঠিক আগেই উপর থেকে কিছু কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো।

    তারা উপরের তলায় আছে!

    চওড়া সিঁড়িটা দিয়ে উঠে কোলেত আর তার লোকজন বিশাল বাড়ির প্রতিটি ঘরই এক এক করে খুঁজে দেখলো। তারা যতোই এগোতে লাগলো কণ্ঠটা ততোই বেশি শোনা যেতে লাগলো। দীর্ঘ হলওয়ের শেষ মাথা থেকে সম্ভবত শব্দটা আসছে। এজেন্টরা করিডোর আর প্রতিটি বিকল্প পথ সিল করে দিলো।

    শেষ বেডরুমটার কাছে পৌঁছাতেই কোলেত দেখতে পেলো ঘরটার দরজা খোলা। কণ্ঠটা আচমকা থেমে গেলো, এবার একটা ঘঘ শব্দ শোনা যেতে লাগলো, যেনো কোনো হনের শব্দ।

    হাত দিয়ে ইশারা করে কোলেত সিগনাল দিলো। নিঃশব্দে দরজার খুব কাছে এসে পড়লো সে। ভেতরে ঢুকেই বাতির সুইচটা খুঁজে পেলো। সুইচটা চেপে বাতি জ্বালালো কোলেত। ভেতরে ঢুকেই অন্ত্রটা তা করলো…কিন্তু কিছুই নেই।

    একটা ফাঁকা গেস্টরুম।

    গাড়ির ইঞ্জিনের ঘবৃষ শব্দটা বিছানার পাশে রাখা কালো ইলেকট্রনিক প্যানেল থেকে আসছে। কোলেত এসব জিনিস বাড়ির অন্য ঘরেও দেখেছে। এক ধরনের ইন্টারকম সিস্টেম। সে ওটার দিকে ছুটে গেলো। প্যানেলটার প্রায় এক ডজন বাটন আছে :

    স্টাডি…কিচেন,..লড়ি…সেলার

    তো আমি কোথেকে গাড়ির শব্দটা শুনতে পেলাম?

    মাস্টার বেডরুম…সানরুম…বার্ন…লাইব্রেরি…

    বার্ন, মানে গোলাঘর কোলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিচে নেমে পেছনের দরজার দিকে ছুটে গেলো একজন এজেন্টকে সঙ্গে নিয়ে। তারা একটা গোলাঘরের কাছে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে প্রবেশ করার আগেই অপসৃয়মান গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে পেলো সে। অস্ত্রটা তুলে ভেতরে ঢুকেই আলো জ্বালিয়ে দিলো এবার।

    গোলা ঘরের ডানদিকে একটা ওয়ার্কশপ-ঘাস কাটার যন্ত্র, অটোমোটিভ টুলস, বাগানের যন্ত্রপাতি। কাছের দেয়ালেই সেই একই রকমের ইন্টারকম প্যানেল। এর একটা বাটন নিচে নামানো। চালু আছে যন্ত্রটা।

    গেস্টবেডরুম-২

    কোলেত ঘুরে দাঁড়ালো, রেগেমেগে আগুন সে। তারা ইন্টারকমের মাধ্যমে আমাদেরকে উপর তলায় টোপ দিয়ে নিয়ে গেছে! গোলাঘরের অন্য পাশটায় গিয়ে দেখা গেলো একটা ঘোড়া রাখার স্টলের সারি, কিন্তু কোন ঘোড়া নেই। মালিক ভিন্ন ধরনের অশ্বশক্তিই বেশি পছন্দ করে বলে মনে হচ্ছে স্টলগুলো গাড়ি রাখার পার্কিং এলাকা হিসেবে বদলে নেয়া হয়েছে। সংগ্রহটা খুবই চমকপ্রদ-একটা কালো ফেরারি, প্রিস্টিন রোস রয়েস, পুরনো অ্যাস্টন মার্টিন স্পোটর্স কু, একটা ভিনটেজ পোরশে ৩৫৬।

    শেষ স্টলটা খালি।

    কোলেত দৌড়ে গিয়ে দেখলো স্টলের মাটিতে তেল পড়ার দাগ রয়েছে। তারা কম্পাউন্ড থেকে চলে যেতে পারবে না। বের হবার গেটটা দুটো প্যাট্রল গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করা আছে।

    স্যার? এক এজেন্ট স্টলের কাছে ইঙ্গিত করলো।

    গোলাঘরের দরজাটা খোলা, সেখান থেকে অন্ধকারের দিকে একটা পথ চলে গেছে, কাছেই একটা ঘন জঙ্গল। জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে দেখলো কোন হেডলাইট দেখা যাচ্ছে না। এমন বন-জঙ্গল আর ঝোপ-ঝাড় দিয়ে কেউ যেতে পারবে বলে কোলেতের মনে হলো না। কিছু লোককে ওখানে পাঠিয়ে দাও। তারা হয়তো খুব বেশিদূর যেতে পারেনি, কাছেই কোথাও আঁটকে গেছে। এইসব ফ্যান্সি স্পোর্টসকার ঝোপ-ঝাড় দিয়ে যেতে পারে না।

    উম, স্যার? এজেন্ট কাছেই একটা বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করলো, যেখানে অনেকগুলো চাবি ঝোলানো রয়েছে।

    ডেইমলার…রোলস রয়েস.. অ্যাস্টন মার্টিন…
    পোর্‌শে…

    শেষ ঘরটা খালি।

    কোলেত যখন ঘরটার নিচের লেখাটা পড়লো, বুঝতে পারলো সমস্যায় পড়ে গেছে সে।

    ৬৭.

    রেঞ্জ রোভার গাড়িটা জাভা ব্ল্যাক পার্ল মডেলের, ফোর হুইল ড্রাইভ, মানসম্মত ট্রান্সমিশন, উচ্চ-শক্তির পলি প্রপিলিন ল্যাম্প আর রিয়ার লাইট ক্লাস্টার ফিটিংস রয়েছে এতে। স্টিয়ারিংটা ডান দিকে।

    গাড়িটা চালাতে হচ্ছে না বলে ল্যাংডন খুব খুশি। টিবিংয়ের গৃহপরিচারক রেমি তার মনিবের নির্দেশে শ্যাতু ভিলের পেছন দিককার বিশাল ঝোপ-ঝাড় আর মাঠ দিয়ে পূর্ণিমার আলোতে অসম্ভব দক্ষতায় গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির কোন হেড লাইট জ্বালানো নেই, তারপরেও অন্ধকারে সে গাড়িটা দ্রুতবেগে চালিয়ে এস্টেটের বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো। তার সামনে ঘন বনের অন্ধকার অবয়বটা দেখা যাচ্ছে।

    ল্যাংডন কি-স্টোনটা কোলে নিয়ে সামনের সিটে বসে আছে, সোফি আর টিবিং পেছনের সিটে।

    তোমার মাথার কি অবস্থা, রবার্ট? সোফি জিজ্ঞেস করলো, তার কণ্ঠে উৎকণ্ঠা।

    ল্যাংডন জোর করে একটা কাষ্ঠহাসি হাসলো। ভালো, ধন্যবাদ তোমাকে। যন্ত্রণাটা বেশ তীব্র ছিলো। আঘাতটার কারণে সে মারা যেতে বসেছিলো।

    সোফির পাশে টিবিং ঘাড় বেঁকিয়ে পেছনের লাগেজ রাখার জায়গায় হাত-পা-মুখ বাধা পাদ্রীটার দিকে তাকালেন। পাদ্রীর অস্ত্রটা টিবিংয়ের কোলের উপর রাখা। দৃশ্যটা দেখে মনে হচ্ছে যেনো বৃটিশ সাফারি দলের একজন তার শিকারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে।

    আপনাকে আজ রাতে পেয়ে আমি খুব খুশি, রবার্ট, টিবিং বললেন। দাঁত বের করে হাসলেন, যেনো বহু বছর পর তিনি এমন মজা পেয়েছেন।

    আপনাকে এসবে জড়িয়ে ফেলার জন্য দুঃখিত, লেই।

    ওহ্, না, না। আমি সারা জীবন ধরে এরকম জড়িয়ে পড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। টিবিং এবার চালকের আসনে বসা রেমির দিকে তাকালেন, পেছন থেকে তাকে টেপ দিয়ে তার কাঁধটা আটকে রেখেছেন টিবিং। মনে রেখো, কোন ব্রেক লাইট জ্বালানো যাবে না। দরকার হলে এমার্জেন্সি ব্রেকটা ব্যবহার করবে। আমি একটু জঙ্গলের ভেতরে ঢুকতে চাই। বাড়ি থেকে তারা আমাদের দেখে ফেলুক সেটা আমি চাই না।

    গাড়িটা গভীর জঙ্গলে আস্তে আস্তে ঢুকে গেলো। আকাশের জ্যোৎস্না গাছপালার ডালের কারণে ঢেকে আছে।

    আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, ল্যাংডন ভাবলো। সামনে কী আছে তা আন্দাজ করেও উঠতে পারলো না সে। একেবারে নিকষ কালো অন্ধকার। গাড়ির বাম দিকে গাছপালার ডাল লাগলে রেমি ডান দিকে সরে যাচ্ছে। সে গাড়িটা যতোদূর সম্ভব সোজা চালাতে লাগলো।

    তুমি খুব সুন্দর চালাচ্ছো, রেমি, টিবিং বললেন। যথেষ্টই ভালো। রবার্ট, যদি পারেন নিচের দিকে নীল রঙের বাটনটা চাপ দিন। দেখেছেন সেটা?

    ল্যাংডন বাটনটা খুঁজে পেয়ে চাপ দিলো।

    একটা হাল্কা হলুদ আলো তাদের গাড়ির সামনের পথে ছড়িয়ে পড়লো, ফগ লাইট, ল্যাংডন বুঝতে পারলো। তারা এতো ঘন জঙ্গলের ভেতরে এসে গেছে যে, একটু আধটু আলো বাইরে থেকে দেখা যাবে না।

    ভালো, রেমি, টিবিং খুশির চোটে বললেন। বাতি জ্বলে গেছে। আমাদের জীবন তোমার হাতে এখন।

    আমরা কোথায় যাচ্ছি? সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    এভাবে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে তিন কিলোমিটার যেতে হবে, টিবিং বললেন। তারপর উত্তর দিকে মোড় নেবো। কোন জলাশয় অথবা পড়ে থাকা গাছের সাথে ধাক্কা না খেলে আমরা হাইওয়ে ফাইভের দিকে চলে যাবো খুব সহজেই।

    ল্যাংডন তার কোলে রাখা কি-স্টোনটার দিকে তাকালো। ঢাকনায় খচিত গোলাপটা আবার ঢাকনার উপরে লাগানো হয়েছে। যদিও তার মাথাটা ভনভন করছে তারপরও ইচ্ছে হলো গোলাপটা সরিয়ে সেই জায়গার লেখাটা পড়ে দেখতে। সে ঢাকনাটা আস্তে করে খুলতে যেতেই পেছন থেকে টিবিং তার কাঁধের উপরে হাত রাখলেন।

    ধৈর্য ধরুন, রবার্ট। টিবিং বললেন। জায়গাটা উঁচু-নিচু আর ঘন অন্ধকার। কোন কিছু ভেঙে গেলে ঈশ্বর জানে কী হবে। আলোতেই যদি আপনি ভাষাটা চিনতে না পারেন তো অন্ধকারে সেটা কীভাবে চিনবেন? এটা দেখার জন্য সময় পাবেন খুব জলদিই।

    ল্যাংডন জানে টিবিং ঠিকই বলেছেন। মাথা নেড়ে সে ঢাকনাটা বন্ধ করে দিলো।

    পেছনে পড়ে থাকা পাদ্রীটা গোঙাচ্ছে এখন। বন্ধন মুক্ত হবার চেষ্টা করছে সে। আচমকা পাগলের মতো লাথি মারতে শুরু করলো এবার।

    টিবিং পেছনের সিটের দিকে ঘুরে পিস্তলটা তার দিকে তাক করলেন। আমি তোমার অভিযোগের কোন কারণ দেখছি না, স্যার। তুমি আমার বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে আমার অত্যন্ত প্রিয় বন্ধুর মাথায় বেদম আঘাত করেছে, এই মুহূর্তে তোমাকে গুলি করে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার অধিকার আমার আছে। সেখানে পচে মরবে তুমি।

    পাদ্রী নিচুপ হয়ে গেলো।

    আপনি কি নিশ্চিত, তাকে আমাদের সাথে নেয়াটা ঠিক হচ্ছে? ল্যাংডন জিজ্ঞেস করলো।

    একদমই নিশ্চিত! টিবিং আতিশয্যে বললেন। আপনি খুনের মামলার ফেরারী, রবার্ট। এই বদমাশটা আপনার মুক্ত হবার টিকেট। পুলিশ আপনাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে আমার বাড়ি পর্যন্ত এসে পড়েছে।

    এটা আমারই দোষ, সোফি বললো। ব্যাংকের ট্রাকটাতে সম্ভবত ট্রান্সমিটার লাগানো ছিলো।

    সেটা নয়, টিবিং বললেন। পুলিশ আপনাকে খুঁজে পেয়েছে এতে আমি অবাক হইনি। আমি অবাক হয়েছি এই ওপাস দাইর লোকটা আপনাকে খুঁজে পাওয়াতে। আপনি আমাকে যা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে এই লোকটার সাথে জুডিশিয়াল পুলিশ অথবা জুরিখ ডিপোজিটরি ব্যাংকের যোগাযোগ না থেকে পারে না।

    ল্যাংডন কথাটা বিবেচনা করলো। বেজু ফশে নিশ্চিত করেই ল্যাংডনকে বলির পাঠা বানানোর পায়তারা করছে। আর ব্যাংকার ভার্নেটের আচরণও তার কাছে বোধগম্য বলে মনে হচ্ছে এখন।

    এই পাদ্রী একা একা কাজ করছে না, রবার্ট, টিবিং বললেন, আর আপনারা যততক্ষণ না জানতে পারছেন এর পেছনে কে আছে ততোক্ষণ দুজনেই নিরাপদ নন। ভালো খবর এই যে, এখন আপনারা বেশ ভালো অবস্থায় আছেন, বন্ধু। আমার পেছনে ফেলে রাখা এই দৈত্য সেই তথ্যটা জানে, আর যে লোক এই সূতা নাড়াচ্ছে সে এখন ভীষণ ঘাবড়ে আছে।

    রেমি গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো। এবার গাড়িটা বেশ আরামেই চালাতে পারছে সে। গাড়ির চাকায় অল্প-বিস্তর পানির ছিটা লাগছে।

    রবার্ট, আপনি কি ঐ ফোনটা আমার হাতে একটু দেবেন? টিবিং গাড়ির ড্যাশে রাখা ফোনটার দিকে ইঙ্গিত করলেন।

    ল্যাংডন সেটা তাঁকে দিলে টিবিং একটা নাম্বার ডায়াল করতে লাগলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ফোনটাতে টিবিং কণ্ঠ শুনতে পেলেন। রিচার্ড? আমি কি তোমার ঘুম ভাঙালাম? অবশ্যই, ঘুম ভাঙিয়েছি। হাস্যকর প্রশ্ন। আমি দুঃখিত। একটা ছোট্ট সমস্যায় পড়ে গেছি। আমার শরীর একটু খারাপ লাগছে। চিকিৎসার জন্যে রেমি আর আমার একটু আইল্যান্ডে যাবার দরকার, আর সেটা এক্ষুণি। আগে না জানানোর জন্য দুঃখিত। তুমি কি বিশ মিনিটের মধ্যে এলিজাবেথকে প্রস্তুত করতে পারবে? আমি জানি, একটু আপ্রাণ চেষ্টা করো। একটু বাদেই দেখা হচ্ছে। ফোনটা তিনি রেখে দিলেন।

    এলিজাবেথ? ল্যাংডন বললো।

    আমার প্লেন। তার দাম আমার কাছে রাণীর হীরার মতোই।

    ল্যাংডন তার দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো।

    কি? টিবিং জানতে চাইলেন। জুডিশিয়ার পুলিশের পুরো দলটা আপনাদের পেছনে লেগে যাবার পরে আপনারা ফ্রান্সে থাকার প্রত্যাশা করতে পারেন না। লন্ডনই হবে আপনাদের জন্য বেশি নিরাপদ।

    সোফিও টিবিংয়ের দিকে ঘুরে তাকালো। আপনি মনে করেন আমাদের দেশ ত্যাগ করা উচিত?

    বন্ধুরা আমার, আমি এই ফ্রান্সের চেয়ে অন্যত্র সভ্য কোন দেশে অনেক বেশি ক্ষমতাবান। তাছাড়া গ্রেইলের কথঅ যদি বলেন, ধারণা করা হয় ওটা গ্রেট বৃটেনেই আছে। আমরা যদি কি-স্টোনটা খুলতে পারি তবে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস, আমরা একটা মানচিত্র পাবো, যাতে বৃটেনের কথাই থাকবে।

    আপনি খুব বেশি ঝুঁকি নিচ্ছেন, সোফি বললো, আমাদেরকে সাহায্য করে। ফরাসি পুলিশে আপনি কোন বন্ধু পাবেন না।

    টিবিং একটা বেপরোয়া অভিব্যক্তি দিলেন। ফ্রান্সের সাথে আমার সব চুকেবুকে গেছে। আমি এখানে এসেছিলাম কি-স্টোনটার খোঁজে। সেই কাজ হয়ে গেছে। শ্যাতু ভিলেটা আর না দেখতে পারলে আমার কিছুই এসে যাবে না।

    সোফিকে একটু ইতস্তত মনে হলো। আমরা এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি কিভাবে পার হবো?

    টিবিং মুচকি হাসলেন। আমি লো বোর্গো থেকে ফ্লাই করি। ওটা একটা এক্সিকিউটিভ এয়ারফিল্ড, এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ফরাসি ডাক্তাররা আমাকে নার্ভাস করে ফেলে তাই দুসপ্তাহে একবার আমি ইংল্যান্ডে প্লেনে করে চলে যাই। দুই দেশেই আমি একটা বিশেষ ধরনের সুবিধা পাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে থাকি। একবার প্লেনে ওঠার পর আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ইউএস অ্যামবাসির কারো সাথে দেখা করবেন কি না।

    ল্যাংডন এ মুহূর্তে ইউএস অ্যামবাসির সাথে কিছু করতে চাইছে না। সে শুধু কি স্টোনটার কথাই ভাবছে। মনে মনে ভাবলো, টিবিং বৃটেন সম্পর্কে যা বলছে তা যদি সত্য হতো। এটা ঠিক, আধুনিক গ্রেইল কিংবদন্তীর মতে গ্রেইলটা যুক্তরাজ্যেই আছে। এমনকি নাইট আর্থারের মিথ, যা আইল অব আভালন-এর কথা বলেছে, এখন বিশ্বাস করা হয় সেই জায়গাটা আসলে ইংল্যান্ডের গ্লাসটনবেরি। গ্রেইলটা যেখানে থাকুক, ল্যাংডন কখনও ভাবেনি সে সত্যি ওটা খোঁজ করবে। স্যাংগৃল দলিল দস্তাবেজগুলো। যিশুখৃস্টের সত্যিকারের কাহিনীটা। ম্যারি মাগদালিনের সমাধি।

    স্যার? রেমি বললো। আপনি কি সত্যি ভাবছেন চিরতরের জন্য ইংল্যান্ডে চলে যাবেন?

    রেমি, এই নিয়ে তোমার উদ্বিগ্ন হবার দরকার নেই, টিবিং তাকে আশ্বস্ত করলেন। আমি আশা করছি তুমিও আমার সাথে ওখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে। আমি ডেভনশায়ারে একটা চমৎকার ভিলা কেনার কথা ভাবছি। আর আমরা তোমার সবকিছু ওখান থেকে দ্রুত এখানে নিয়ে আসবো। একটা রোমাঞ্চকর অভিযান, রেমি। একটা অভিযান!

    ল্যাংডনকে হাসতেই হলো। উদাসভাবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সে জঙ্গলটা অতিক্রম করতে দেখলো। আজ রাতের সংকট সত্ত্বেও ল্যাংডন তার চমৎকার সঙ্গীর জন্য ধন্যবাদ দিলো নিজেকে।

    কয়েক মিনিট এভাবে চলার পর ল্যাংডন আচমকা অনুভব করলো সোফি তার দিকে ঝুঁকে কাঁধে হাত রেখেছে। তুমি ঠিক আছো?

    ল্যাংডন দেখতে পেলো তার ঠোঁটে একটা মুচকি হাসি, বুঝতে পারলো সে নিজেও এখন হাসছে।

    রেঞ্জরোভারের পেছনে শুয়ে থেকে সাইলাস নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তার হাত-পা শক্ত করে বাঁধা। গাড়ির প্রতিটি ঝাঁকুনিতেই তার দোমড়ানো-মোচড়ানো কাঁধটাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। যাইহোক, তার পাকড়াওকারীরা অন্ততপক্ষে সিলিসটা খুলে ফেলেছে। মুখ বাঁধা থাকার জন্য তাকে নাক দিয়েই নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে এখন। সেটাও ধুলো ময়লার জন্য বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে। সে এবার কাশতে শুরু করলো।

    আমার মনে হয় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, রেমি বললো, তার কণ্ঠে উদ্বিগ্নতা।

    টিবিং কাঁধ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালেন। তোমার ভাগ্য ভালো, তুমি একজন বৃটিশের পাল্লায় পড়েছে, টিবিং মুখের টেপটা খুলে দিলেন।

    সাইলাসের মনে হলো তার মুখ দিয়ে যে বাতাসটা বুক ভরে নিলো সেটা ঈশ্বর তার জন্যে পাঠিয়েছে।

    তুমি কার হয়ে কাজ করছো? বৃটিশ ভদ্রলোক জানতে চাইলেন।

    আমি ঈশ্বরের জন্য কাজ করি।

    তুমি ওপাস দাইর লোক, টিবিং বললেন। অবশ্য এটা কোন প্রশ্ন ছিলো না।

    আপনি কিছুই জানেন না, আমি কে।

    ওপাস দাই কি-স্টোনটা চাচ্ছে কেন?

    সাইলাসের উত্তর দেবার কোন অভিপ্রায়ই নেই। কি-স্টোনটা হলি গ্রেইল খুঁজে পাওয়ার একমাত্র সংযোগ, আর হলি গ্রেইল হলো বিশ্বাস রক্ষার চাবিকাঠি।

    আমি ঈশ্বরের কাজ করি। দ্য ওয়ে প্রায় সমাগত।

    এখন রেঞ্জরোভারের ভেতরে এভাবে বন্দী হয়ে যাওয়াতে সাইলাসের মনে হলো, সে তার টিচার আর বিশপকে চিরতরের জন্য ব্যর্থ করে দিয়েছে। সে তাদেরকে ফোন করে এই অবস্থাটার কথাও জানাতে পারছে না। আমাকে যারা ধরেছে তাদের কাছে কি-স্টোনটা আছে। তারা আমাদের আগেই গ্রেইলটা পেয়ে যাবে! অন্ধকারেই সাইলাস প্রার্থনা করতে শুরু করলো।

    একটা অলৌকিক, প্রভু। আমার দরকার একটা অলৌকিক।

    সাইলাসের পক্ষে এটা কোনভাবেই জানা সম্ভব ছিলো না যে, এখন থেকে ঘণ্টাখানেক পরেই সে এটা পেয়ে যাবে।

    রবার্ট? সোফি এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে। তোমার মুখে একটা কৌতুকের আভা দেখা গেলো এইমাত্র।

    তোমার সেলফোনটা আমার একটু দরকার, সোফি।

    এখন?

    আমার মনে হয় আমি কিছু একটা বের করতে পেরেছি।

    কি?

    কিছুক্ষণ পরই বলছি। তোমার ফোনটা আগে দাও।

    সোফিকে খুব চিন্তিত দেখালো। আমার আশংকা ফশে ট্রে করছে, সোফি তাকে ফোনটা দিয়ে বললো।

    আমি যুক্তরাষ্ট্রে কিভাবে ডায়াল করবো?

    তোমাকে রিভার্স চার্জ করতে হবে কারণ আমার ফোনের আটলান্টিকের ওপারের সার্ভিস নেই।

    ল্যাংডন শূন্য ডায়াল করলো। সে জানতো পরবর্তী ষাট সেকেন্ডে একটা উত্তর পাওয়া যাবে, যা তাকে সারা রাত ধরে হতবিহ্বল করে রেখেছে।

    ৬৮.

    নিউইয়র্ক এডিটর জোনাস ফকম্যান রাতে বিছানায় ঘুমোতে যেতেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন করার জন্য একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে, গজ গজ করতে করতে রিসিভারটা তুলে নিলেন।

    অপারেটরের কণ্ঠ তাকে জিজ্ঞেস করলো : আপনি কি রবার্ট ল্যাংডনের ফোন কলের জন্য বিল দিতে প্রস্তুত আছেন?

    হতভম্ব হয়ে জোনাস বাতি জ্বালালো। উহ্…অবশ্যই, রাজি আছি।

    লাইনে একটা ক্লিক করে শব্দ হলো। জোনাস?

    রবার্ট তুমি আমাকে ঘুম থেকে তুলে ফোনের বিল আমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছো?

    জোনাস, ক্ষমা করো আমায়, ল্যাংডন বললো। আমি খুব অল্প সময়ই নেবো। আমার সত্যি জানতে হবে, যে পাণ্ডুলিপিটা আমি তোমাকে দিয়েছি সেটা কি তুমি–

    রবার্ট, আমি দুঃখিত, আমি জানি আমি বলেছিলাম সম্পাদিত কপিটা এই সপ্তাহে পাঠাবো। কিন্তু আমি কাজে আঁটকে গেছি। কথা দিচ্ছি পরের সোমবারে পেয়ে যাবে।

    আমি সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমার জানা দরকার তুমি কি তার কোন কপি আমাকে না জানিয়ে অন্য কাউকে দিয়েছো?

    ফকম্যান ইতস্তত করলেন। ল্যাংডনের নতুন পাণ্ডুলিপিটা দেবী পূজার ইতিহাসের একটি উন্মোচন-তাতে ম্যারি মাগদালিনের কয়েকটা অধ্যায় আছে, যা নির্ঘাত বির্তকের ঝড় তুলবে। যদিও বিষয়বস্তুটা খুব ভালোভাবেই প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয়েছে, তারপরও কয়েকজন ইতিহাসবিদ এবং শিল্পবোদ্ধাকে খসড়াটা না দেখিয়ে সেটার ছাপার কোন অভিপ্রায় তার নেই। জোনাস শিল্পজগতের দশজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে বেছে নিয়ে তাদের কাছে পাণ্ডুলিপিটার একটা করে কপি পাঠিয়েছেন, সেই সাথে একটা চিঠি লিখে বিনীতভাবে তাদেরকে একটা শর্টনোট লিখে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন যেগুলো বইয়ের মলাটে যাবে। ফম্যানের অভিজ্ঞতা বলে, বেশিরভাগ লোকই নিজেদের নাম ছাপা অক্ষরে দেখার সুযোগ পেলে লাফিয়ে ওঠে।

    জোনাস? ল্যাংডন চাপ দিলো। তুমি আমার পাণ্ডুলিপিটা পাঠিয়েছে, তাই না?

    ফকম্যান চিন্তিত হলেন, আঁচ করতে পারলেন ল্যাংডন এই ব্যাপারটাতে খুশি হতে পারেনি। রবার্ট, আমি তোমাকে কিছু মন্তব্য দিয়ে চমকে দিতে চেয়েছিলাম।

    একটা বিরতি। তুমি কি লুভরের কিউরেটরের কাছেও এক কপি পাঠিয়েছো?

    তোমার কি মনে হয়? তোমার পাণ্ডুলিপিতে তার লুভর সংগ্রহের কথা কয়েকবারই উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর বইগুলো তোমার বিবলিওগ্রাফিতেও আছে। আর দেশের বাইরে বিক্রির জন্য লোকটার নাম থাকা খুবই দরকার।

    অন্যপ্রান্তের নিরবতাটা দীর্ঘক্ষণ ধরে রইলো। তুমি কবে সেটা পাঠিয়েছো?

    একমাস আগে। আমি এও উল্লেখ করেছিলাম, তুমি খুব শীঘ্রই প্যারিসে যাচ্ছে, আর তোমাকে বলে দিয়েছি তার সাথে যেনো আজ্ঞা দাও। সে কি তোমাকে ফোন করেছে দেখা করার জন্য? ফকম্যান একটু থামলেন। দাঁড়াও দাঁড়াও, এই সপ্তাহে তোমার কি প্যারিসে থাকার কথা না?

    আমি এখন প্যারিসেই আছি। ফকম্যান উঠে দাঁড়ালেন। তুমি প্যারিস থেকে আমাকে ফোন করে সেই বিলটা আমার ওপর চাপাচেছা?

    সেটা আমার বইয়েল রয়্যালটি থেকে কেটে নিও, জোনাস। তুমি কি সনিয়ের ফিরতি ফোনটা পেয়েছিলে। তিনি কি পাণ্ডুলিপিটা পছন্দ করেছিলেন?

    আমি জানি না। এখনও তার সাথে কথা বলা হয়নি।

    তো, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমি একটু দৌড়ের ওপরে আছি। এটুকু ব্যাখ্যাই আমার জন্য যথেষ্ট। ধন্যবাদ।

    রবার্ট—

    কিন্তু ল্যাংডন ফোনটা রেখে দিয়েছে।

    ফকম্যান ফোনটা রেখে অবিশ্বাসে মাথা নাড়তে লাগলেন, লেখকেরা, তিনি ভাবলেন। এমনকি সবচাইতে সুস্থজনও পাগল হয়ে থাকে।

    রেঞ্জরোভারের ভেতরে লেই টিবিং একটা বিস্মিত হবার অভিব্যক্তি করলেন। রবার্ট, আপনি বলছিলেন আপনি একটা পাণ্ডুলিপি লিখছেন যা সিক্রেট সোসাইটি নিয়ে, আর আপনার এডিটর সেটা সিক্রেট সোসাইটির এক সদস্যের কাছেই পাঠিয়ে দিয়েছে?

    ল্যাংডন হতাশ হলো। তাই তো মনে হচ্ছে।

    একটা নিমর্ম কাকতালীয় ব্যাপার, বন্ধু।

    এটা কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়, ল্যাংডন জানে। জ্যাক সনিয়েকে দেবী পূজা সংক্রান্ত কোন পাণ্ডুলিপির ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলার মানে হলো, টাইগার উডসকে গলফ খেলার উপরে মন্তব্য করতে বলা। তারচেয়েও বড় কথা, দেবী পূজার উপরে কোন বইতে প্রায়োরি অব সাইনের উল্লেখ করাটা রীতিমতো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    এবার মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, টিবিং বললেন। আপনি কি প্রায়োরিদের পক্ষে লিখেছিলেন, না বিপক্ষে?

    ল্যাংডন টিবিংয়ের কথাটার মর্ম বুঝতে পারলো। অনেক ইতিহাসবিদই প্রশ্ন করেছেন, প্রায়োরিরা কেন এখন পর্যন্ত স্যাংগৃল দলিলগুলো লুকিয়ে রেখেছে। অনেকেই মনে করেন, তথ্যটা পৃথিবীবাসীকে অনেক আগেই জানানো উচিত ছিলো।

    আমি প্রায়োরিদের অবস্থানের ব্যাপারে কোন মতামত দেইনি।

    তার মানে?

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো টিবিং দলিলগুলো প্রকাশের পক্ষেই।

    আমি কেবল ভ্রাতৃসংঘের ইতিহাসটা জানিয়েছি আর তাদেরকে আধুনিককালের দেবী পূজারী সোসাইটি হিসেবে বর্ণনা করেছি। গ্রেইলের রক্ষাকর্তা এবং ধারক, আর প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজের অভিভাবক হিসেবে।

    সোফি তার দিকে তাকালো। তুমি কি কি-স্টোনটার কথা উল্লেখ করেছো?

    ল্যাংডন কাচুমাচু খেলো। সে তা-ই করেছে। অসংখ্যবার। আমি বলেছি, কি স্টোনটা হতে পারে স্যাংগৃল দলিলগুলো খুঁজে পাবার দিক নির্দেশনা।

    সোফিকে খুব অবাক মনে হলো। আমার মনে হয় এজন্যেই পি.এস রবার্ট ল্যাংডনকে খুঁজে বের করো কথাটা লেখা হয়ছিলো। এখন সেটা বোঝা যাচ্ছে।

    ল্যাংডন আঁচ করলো, আসলে এটা অন্য কিছু, যা তার পাণ্ডুলিপিটাতে আছে, আর সেটাই সনিয়ের কৌতূহলের বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টা এমন কিছু যা ল্যাংডন সোফিকে একান্তে বলতে চায়।

    তো, সোফি বললো, তুমি ক্যাপ্টেন ফশের কাছে মিথ্যে বলেছিলে?

    কোনটা? ল্যাংডন জানতে চাইলো।

    তুমি তাকে বলেছিলে, আমার দাদুর সাথে তোমার কখনও যোগাযোগ হয়নি।

    হ্যাঁ, যোগাযোগ হয়নি। আমার এডিটর উনার কাছে পাণ্ডুলিপিটা পাঠিয়েছে।

    এটা ভেবে দ্যাখো, রবার্ট। ক্যাপ্টেন ফশে যদি পাণ্ডুলিপির এনভেলপটা খুঁজে না পায় সে এই সিদ্ধান্তে আসবে যে, এটা তুমিই পাঠিয়েছে। সে একটু থামলো। অথবা, তারচেয়েও খারাপ কিছু, তুমিই সেটা হাতে হাতে তার কাছে দিয়েছে, আর সে ব্যাপারটা অস্বীকার করে মিথ্যা বলছে।

    ***

    রেঞ্জরোভারটা লো বোর্গরেত এয়ারফিল্ডে এসে পৌঁছালে রেমি গাড়িটা হ্যাংগারের দিকে চালিয়ে নিয়ে গেলো। তারা এগোতেই খাকি প্যান্ট শার্ট পরা এক শক্ত-সামর্থ লোক হাত নেড়ে তাদেরকে বিশাল লোহার দরজার দিকে ইশারা করলো। ওটার ভেতরে একটা সাদা জেট প্লেন দেখা যাচ্ছে।

    ল্যাংডন চঞ্চ করা প্লেনটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

    এটাই এলিজাবেথ?

    টিবিং দাঁত বের করে হাসলেন।

    লোকটা তাদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। একেবারে রেডি, স্যার, সে বৃটিশ উচ্চারণে বললো। দেরির জন্য ক্ষমা চাইছি, কিন্তু আপনি আমাকে হুট করেই খবর দিয়েছেন- গাড়ি থেকে তাদেরকে বের হতে দেখে সে একটু থামলো। সোফি আর ল্যাংডনের দিকে তাকালো, তারপর টিবিংয়ের দিকে।

    টিবিং বললেন, আমার সহযোগী আর আমাকে লন্ডনে জরুরি একটা ব্যাপারে যেতে হবে। নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। রওনা হবার জন্য সব প্রস্তুত করো, প্লিজ। কথা বলার সময় পিস্তলটা ল্যাংডনের হাতে তুলে দিলো টিবিং।

    অস্ত্রটার দিকে পাইলটের চোখ গেলো। টিবিংয়ের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো সে, স্যার, ক্ষমা করবেন। আমার ডিপ্লোমেটিক ফ্লাইটের অনুমতি কেবল আপনি আর আপনার চাকরের জন্য। আমি আপনার অতিথিদেরকে নিতে পারবো না।

    রিচার্ড, উষ্ণ একটা হাসি দিয়ে টিবিং বললেন। দুহাজার পাউন্ড আর গুলি রা পিস্তলটা বলছে, তুমি আমার অতিথিদেরকে নিতে পারবে। তিনি রেরোভারটার দিকে ইঙ্গিত করলেন। আর সেই সাথে অভাগা একজন, যে গাড়ির পেছনে পড়ে রয়েছে, তাকেও।

    ৬৯.

    হকার ৭৩১ টুইন গ্যারেট টিএফই-৭৩১-এর ইঞ্জিনটা সশব্দে চালু হলো। আকাশের দিকে মুখ করে রওনা হলো সেটা। জানালার বাইরে লো বোর্গরেত এয়ারফিটা ফেলে দ্রুত বেগে ছুটে চললো।

    আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি, সোফি ভাবলো, তার শরীরটা সিটের পেছনে সেঁটে আছে। এই মুহূর্তের আগ পর্যন্ত সে বিশ্বাস করতো, ফশের সাথে তার ইদুর-বেড়ালের খেলাটাকে ডিফেন্স-মিনিস্ট্রির কাছে যেভাবেই হোক গ্রহণযোগ্য করা যাবে। আমি একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিমাত্র। আমি আমার দাদুর মৃত্যুকালীন শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে চেষ্টা করেছি। সোফি জানে এই সুযোগটার দ্বার এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। কোন কাগজ-পত্র ছাড়া, একজন ফেরীকে সঙ্গে নিয়ে এবং হাত-পা বাঁধা একজন জিম্মিকে অপহরণ করেছে তারা। তোন সীমা যদি থেকে থাকে তবে সে সেটা অতিক্রম করে ফেলেছে। প্রায় শব্দের গতির মতো দ্রুততায়।

    সোফি সামনের কেবিনে টিবিং আর ল্যাংডনের পাশে বসেছে। তাদের সামনে ছোট্ট একটা টেবিল। পাশে ছোট্ট একটা বোর্ডরুম। টিবিংয়ের গৃহপরিচারক পিস্তল হাতে বসে আছে, তার পায়ের কাছে হাত-পা বাধা পাত্রী যেনো কোনো লাগেজের মতো পড়ে আছে সেখানে।

    কি-স্টোনের দিকে মনোযোগ দেবার আগে, টিবিং বললেন, আমি ভাবছি, আমাকে যদি আপনারা কিছু বলার অনুমতি দেন। তার কথাবার্তা শুনে খুব গুরুগম্ভীর মনে হচ্ছে। যেনো এক বাবা তাঁর সন্তানদের কাছে কোন বিষয়ে লেকচার দিচ্ছেন। বন্ধুরা আমার, আমি জানি আমি এই ভ্রমণের একজন অতিথি ছাড়া আর কিছুই না। আর এতেই আমি সম্মানিত বোধ করছি। তারপরও, একজন আজীবন গ্রেইল অশেষণকারী হিসেবে বলছি, আপনাদেরকে সর্তক করে দেয়াটা আমার দায়িত্ব, আপনারা এমন একটা পথে নামছেন যেখান থেকে ফিরে আসার কোন পথ নেই, বলাই বাহুল্য, এতে অনেক বিপদও রয়েছে। সোফির দিকে তাকালেন তিনি। মিস নে, আপনার দাদু আপনাকে ক্রিপ্টেটা দিয়ে গেছেন এই আশায় যাতে হলি গ্রেইলের সিক্রেটটা বেঁচে থাকে।

    হ্যাঁ।

    সঙ্গত কারণেই এ ঘটনার ফলাফল যাই হোক, আপনি সেটা মেনে নেবেন।

    সোফি মাথা নেড়ে সায় দিলো। যদিও তার ভেতরে দ্বিতীয় আরেকটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আমার পরিবার সম্পর্কে সত্য কাহিনীটা! কি-স্টোনের সাথে সোফির অতীতের কোন সম্পর্ক নেই, এই আশ্বাসটা ল্যাংডন দিলেও সোফি আঁচ করলো এই ত্রিপ্টেক্স আর যাবতীয় রহস্যময় ঘটনাগুলোর সাথে তার নিজের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে খুব গভীরভাবেই।

    আপনার দাদু এবং বাকি তিনজন আজ রাতে মারা গেছেন। টিবিং আবারো বলতে শুরু করলেন, আর তারা চেয়েছিলেন কি-স্টোনটা চার্চের হাত থেকে দূরে রাখতে। ওপাস দাই এটা দখলে নিতে একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছিলো। আশা করি আপনি বুঝেছেন, এতে করে আপনার অবস্থান এখন খুবই দায়িত্বপূর্ণ জায়গায়। আপনার কাছে একটা মশাল হস্তান্তর করা হয়েছে। দুহাজার বছরের প্রজ্জ্বলিত শিখাটাকে নিভিয়ে দেয়া যায় না। এই মশালটা ভুল কোন হাতেও দেয়া যায় না। তিনি থামলেন। রোজউড বক্সটার দিকে তাকালেন। আমি বুঝতে পেরেছি, এ ব্যাপারে আপনার কোন পছন্দ-অপছন্দ নেই, মিস নেভু, এখানকার বিপদটার কথাও ভাবুন, হয় আপনি এই দায়িত্বটা নিজেই বহন করবেন…নয়তো আপনাকে দায়িত্বটা অন্য কারোর কাছে দিয়ে দিতে হবে।

    আমার দাদু ক্রিপ্টেক্সটা আমাকেই দিয়েছেন। আমি নিশ্চিত তিনি ভেবেছেন এই দায়িত্বটা আমি পালন করতে পারবো।

    টিবিংকে উৎসাহ দেখালেও খুশি হয়েছেন বলে মনে হলো না। ভালো। এরকম দৃঢ়তার দরকার রয়েছে। তারপরও, আপনি নিশ্চয় জানেন কি-স্টোন সফলভাবে খুলতে পারাটা আরো বড় কিছুর সম্মুখীন করবে আপনাকে।

    কিভাবে?

    মাই ডিয়ার, ভাবুন, আচমকা আপনি এমন একটি মানচিত্র হাতে পেলেন যা হলি গ্রেইলের অবস্থানটা উন্মোচিত করছে। সেক্ষেত্রে আপনি এমন একটি সত্যের মালিক বনে যাবেন যা ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দেবে। আপনি এমন একটি সত্যের ধারক হবেন লোকে যেটা শত শত বছর ধরে খুঁজে চলছে। আপনি তখন সত্যটা পৃথিবীকে জানানোর দায়িত্বের মুখোমুখি হবেন। এই কাজটা যে করবে তাকে অনেকেই শ্রদ্ধা করবে, আবার অনেকেই করবে ঘৃণা। প্রশ্ন হলো, এই কাজটা করার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি আপনার আছে কি না।

    সোফি চুপ রইলো। এটা আমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কিনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।

    টিবিংয়ের ভূরু কপালে উঠলো। না? কি-স্টোনের মালিক সেটা যদি না করে তবে করবেটা কে?

    দীর্ঘদিন ধরে সিক্রেটটা যে ভ্রাতৃসংঘ রক্ষা করে গেছে তারা।

    প্রায়োরিরা? টিবিংকে দেখে সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো, কিন্তু কিভাবে? তারা তো আজ রাতে শেষ হয়ে গেছে। তাদের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, হয় বাইরের কোন চর কিংবা নিজেদেরই ছদ্মবেশি কোন সদস্য। এই মুহূর্তে ভ্রাতৃসংঘের কেউ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারবো না।

    তাহলে আপনার উপদেশটা কি ওনি? ল্যাংডন বললো।

    রবার্ট, আমার মতো আপনি জানেন, প্রায়োরিরা এই সিক্রেটটা এতোদিন ধরে রক্ষা করেছে কেবলমাত্র লুকানোর জন্যই না। তারা সঠিক একটি সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছে, যখন সিক্রেটটা পৃথিবীবাসীকে জানানো হবে। এমন একটা সময়ে যখন পৃথিবী এই সত্যটা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হবে।

    আপনার বিশ্বাস সেই সময়টা এসে গেছে? ল্যাংডন জিজ্ঞেস করলো।

    অবশ্যই, এরচেয়ে নিশ্চিত হতেই পারে না। যদি তা না-ই হবে তবে চার্চ কেন এই মুহুর্তে আক্রমণ করলো?

    সোফি তর্ক করে বললো, পাদ্রী কিন্তু এখনও তার উদ্দেশ্যের কথা আমাদের কাছে বলেনি।

    পাদ্রীর উদ্দেশ্য চার্চেরই উদ্দেশ্য, টিবিং জবাব দিলেন। দলিলগুলো ধ্বংস করে ফেলা, যাতে বিশাল একটা ছলনার উন্মোচন না হয়। আগের যেকোন সময়ের তুলনায় চার্চ এই কাজটা করতে সবচাইতে বেশি কাছাকাছি এসে গিয়েছিলো। প্রায়োরিরা এটা আপনার ওপর অর্পন করেছে, মিস্ নেভু। হলি গ্রেইল রক্ষা করার কাজটার মধ্যে প্রায়োরিদের অন্তিম ইচ্ছাটাও অন্তর্ভুক্ত, আর সেটা হলো সত্যটা বিশ্ববাসীকে জানানো।

    ল্যাংডন মাঝখানে বললো। লেই, সোফিকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলাটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না, সে তো সবেমাত্র জানলো স্যাংগৃল দলিলগুলোর কথা।

    টিবিং দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমি যদি বেশি চাপাচাপি করে থাকি তবে সেজন্যে ক্ষমা চাচ্ছি, মিস্ নেভু। স্পষ্টতই আমি সব সময়ই বিশ্বাস করে এসেছি দলিলগুলো সর্বসাধারণকে জানানো হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা আপনিই নেবেন। আমি কেবল বোঝাতে চেয়েছি, কি-স্টোনটা সফলভাবে খোলর পর কি করা উচিত।

    মহোদয়গণ, সোফি বললো, তার কণ্ঠে দৃঢ়তা। আপনাদের কথাটাই বলছি, তুমি গ্রেইলকে খুঁজবে না, গ্রেইলই তোমাকে খুঁজে নেবে। আমি বিশ্বাস করি, গ্রেইলটা আমাকে দেবার কারণ আছে, আর সময় আসলে আমি জানবো আমাকে কী করতে হবে।

    তাদের দুজনকেই হতভম্ব দেখালো।

    তাহলে, সোফি রোজউড বাক্সটার দিকে তাকিয়ে বললো। এটা খোলা হোক।

    ৭০.

    শ্যাতু ভিলের ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে লেফটেনান্ট কোলে নিভে যাওয়া আগুনের দিকে হতাশ আর ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ে আছে। ক্যাপ্টেন ফশে একটু আগে এসেছে, পাশের ঘরে ফোনে কথা বলছে, রেঞ্জরোভারটা ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে সে।

    এ সময়ের মধ্যে গাড়িটা যেকোন জায়গাতেই যেতে পারে, কোলেত ভাবলো।

    ফশের সরাসরি আদেশ অমান্য করা আর ল্যাংডনকে দ্বিতীয়বারের মতো ধরতে না পারার ব্যর্থতা তারই। কোলেত পিটিএস-এর কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা ফ্লোরে একটা বুলেটের ফুটো খুঁজে বের করেছে। এতে করে কোলেতের পক্ষে একটা যুক্তি দেয়া যাবে। এখনও ফশের মেজাজ তেঁতে আছে। কোলেত আঁচ করতে পারলো, সকাল হতেই কঠিন বকুনি জুটবে কপালে।

    দূর্ভাগ্য, এখানে কী ঘটেছে কিংবা কারা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কিছুও বোঝা যাচ্ছে না। বাইরের কালো রঙের অদিটা ভূয়া নামে ভাড়া করা হয়েছে ভূয়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।

    আর গাড়ির ভেতরে পাওয়া আঙুলের ছাপটা ইন্টারপোলের ডাটাবেজে ম্যাচ করেনি। আরেকজন এজেন্ট লিভিংরুমে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। তার চোখে তাড়া। ক্যাপ্টেন ফলে কোথায়?

    কোলেত তার তাড়াহুড়োকে পাত্তাই দিলো না, চোখ তুলে তাকালো না তার দিকে। তিনি ফোনে কথা বলছেন।

    আমার ফোন করা শেষ, ঘরের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে ফশে বললো। তোমার কাছে কি খবর আছে?

    এজেন্ট লোকটা বললো, স্যার, সেন্ট্রাল অফিস আদ্রেঁ ভার্নেটের একটা ফোন পেয়েছে। সে আপনার সাথে একান্তে কথা বলতে চায়। সে তার গল্পটা বদলে ফেলেছে।

    ওহ্, ফশে বললো।

    এবার কোলেত মুখ তুলে তাকালো।

    ভার্নেট স্বীকার করেছে ল্যাংডন আর সোফি আজ রাতে ব্যাংকে কিছুক্ষণ ছিলো।

    সেটা আমরা আগেই বুঝতে পেরেছি। ফশে বললো, ভার্নেট কেন এ ব্যাপারে মিথ্যা বলেছিলো?

    সে বলছে সে কেবল আপনার সাথেই কথা বলতে চায় কিন্তু সে পূর্ণ সহযোগীতা দেবার জন্য রাজি আছে।

    কিসের বিনিময়ে?

    তার ব্যাংকের নামটা যেনো সংবাদে না ওঠে আর তার কিছু চুরি হওয়া জিনিস উদ্ধার করে দিতে সাহায্য করতে হবে। মনে হচ্ছে ল্যাংডন আর সোফি নিহত সনিয়ের একাউন্ট থেকে কিছু চুরি করেছে।

    কি? কোলেত চম্‌কে বললো। কিভাবে?

    ফশে এজন্টের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

    তারা কি চুরি করেছে।

    ভার্নেট আর বেশি কিছু বলেনি কিন্তু তার কথা শুনে মনে হচ্ছে সেটা ফিরে পাবার জন্য যেকোন কিছু করতেই সে রাজি আছে।

    ব্যাপারটা কীভাবে ঘটেছে সেটা কোলেত কল্পনা করতে চেষ্টা করলো। হয়তো ল্যাংডন আর সোফি কোন ব্যাংক কর্মচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেছিলো? হয়তো বা তারা ভার্নেটকে বাধ্য করেছিলো, সনিয়ের একাউন্টটা খুলে দিতে, তারপর জিনিসটা নিয়ে ট্রাকে করে পালিয়েছে। কোলেতের ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো, এরকম একটি কাজে সোফি নেভু জড়িয়ে পড়েছে।

    রান্নাঘর থেকে আরেকজন এজেন্ট চিৎকার করে ফশেকে ডাকলো। ক্যাপ্টেন? আমি টিবিংয়ের স্পিড ডায়াল নাম্বারে ঢুকে লো বোর্গরেত এয়ারফিন্ডে ফোন করেছি। আমার কাছে কিছু খারাপ সংবাদ আছে।

    ত্রিশ সেকেন্ড বাদে, ফলে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে শ্যাতু ভিলে ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি নিলো। সে এইমাত্র জানতে পেরেছে টিবিং লো বোর্গরেত এয়ারফিন্ডে একটা নিজস্ব প্লেনে করে আধঘণ্টা আগে উড়াল দিয়েছে।

    বোর্গরেত এয়ারফিন্ডের প্রতিনিধি ফোনে জানিয়েছে, কারা প্লেনে উঠেছে এবং কোথায় গেছে সেটা জানা যায়নি। টেক-অফটা শিডিউল বর্হিভূত ছিলো। মারাত্মক বে আইনী কাজ। ফশে নিশ্চিত, খুব বেশি চাপ দিলে সে যা জানতে চায় সেটার উত্তর পেয়ে যাবে।

    লেফটেনান্ট কোলেত, ফশে দরজার দিকে এগোতে এগোতে গর্জন করে বললো, তোমাকে এখানকার পিটিএস তদন্তের দায়িত্ব দেয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। এবার কিছু একটা করার চেষ্টা করো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅরিজিন – ড্যান ব্রাউন
    Next Article Around the World in Eighty Days by Jules Verne

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }