Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প600 Mins Read0

    ০৫. কাস্তেল গাভোলফোর

    ৪১.

    কাস্তেল গাভোলফোর বাইরে, বিশপ আরিঙ্গাবোসা তাঁর ফিয়াট গাড়িটা থেকে নামতেই, একটা পাহাড়ি বাতাসের ঝাঁপটা চুড়া থেকে নেমে এসে তাঁর শরীরে শীতল পরশ বুলিয়ে দিলো। এই আলখেল্লাটার চেয়েও বেশি কিছু আমার পরে আসা উচিত ছিলো, তিনি ভাবলেন। ঠাণ্ডা বাতাসটার সাথে লড়াই করতে হলো তাকে। আজ রাতে তার যা দরকার সেটা হলো, হয় তাকে দুর্বল, নয়তো ভীতিকর হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে।

    প্রাসাদটা অন্ধকারে ডুবে আছে, ওপরের তলার একটা জানালা দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে, অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে সেটা। লাইব্রেরি, আরিঙ্গারোসা মনে মনে বললেন। তারা জেগে জেগে অপেক্ষা করছে। মাথাটা উঁচু করে আশেপাশে খুব ভালো মতো না তাকিয়ে তিন সোজা এগিয়ে গেলেন।

    তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা যাজককে দেখে তাঁর ঘুমঘুম মনে হলো। পাঁচ মাস আগেও এই একই যাজক তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলো। অবশ্য আজকে তাকে দেখে একটু কম অতিথিপরায়ন বলেই মনে হচ্ছে। আমরা আপনার জন্য খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম, বিশপ, নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যাজক বললো, তার চেহারায় উদ্বিগ্নতার চেয়েও বেশি বিরক্তি মনে হলো।

    ক্ষমা করবেন আমাকে। আজকাল বিমানগুলো খুবই অবিশ্বস্ত হয়ে গেছে।

    যাজক লোকটা বিড়বিড় করে কী যেনো বললো, বোঝা গেলো না, তারপর বললো, তারা উপরের তলায় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।

    লাইব্রেরিটা বিশাল একটা চৌকোনা ঘর। ছাদ থেকে জমিন পর্যন্ত কালো কাঠে তৈরি। চারদিকে লম্বা লম্বা বুক-সেলফে মোটা-মোটা বইয়ে পূর্ণ। জমিনটা এম্বার মার্বেলের, খুব সহজেই মনে করিয়ে দেয়, ভবনটা এক সময় প্রাসাদ ছিলো।

    স্বাগতম, বিশপ, ঘরের একপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ বললো।

    আরিঙ্গাবোসা দেখার চেষ্টা করলেন কে কথাটা বলছে। কিন্তু ঘরের ভেতরের আলোটা হাস্যকর রকমেরই স্বল্পতার প্রথম আগমনের সময় থেকেও বেশি স্বল্প। তখন সবকিছুই জ্বলজ্বল করছিলো। রাতটা পুরোদস্তর জেগে উঠেছে। আজ রাতে, সেই সব লোকগুলো অন্ধকারে বসে আছে, যেনো তারা কী করতে যাচ্ছে তার জন্যে খুব লজ্জিত।

    আরিঙ্গাবোসা খুব ধীরে ধীরে প্রবেশ করলেন। তিনি কেবল ঘরের ভেতরে, একটু দূরে, টেবিলে বসে থাকা মানুষগুলোর ছায়া দেখতে পেলেন। মাঝখানে বসে থাকা অবয়বটা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি চিনতে পারলেন অবিস্ সেক্রেটারিয়েট ভ্যাটিকানা, ভ্যাটিকান সিটির অভ্যন্তরে সমস্ত আইনী ব্যাপারগুলো দেখেন তিনি। উচ্চ পদস্থ একজন ইতালিয় কার্ডিনাল।

    আরিগারোসা তাদের সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন, এই দেরির জন্য আন্তরিক ক্ষমা নেবেন। আমরা ভিন্ন টাইম-জোনে ছিলাম। আপনি খুব ক্লান্ত হয়ে থাকবেন।

    মোটেই না, সেক্রেটারি বললেন, তার হাত দুটো বিশাল বপুর ওপরে ভাঁজ করে রাখা। আপনি এতোদূর আসাতে, আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা কি আপনাকে এক কাপ কফি দিতে বলবো, ক্লান্তি দূর করার জন্য?

    আমার মনে হয়, আমাদের ভনিতা করা ঠিক হবে না যে, এটা একটা সোশ্যাল ভিজিট। আমাকে আরেকটা প্লেন ধরতে হবে। আমরা কি কাজের কথা শুরু করতে পারি?

    অবশ্যই, সেক্রেটারি বললেন। আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত আপনি সাড়া দিয়েছেন।

    তাই?

    আপনার হাতে এক মাস সময় ছিলো।

    আপনারা আপনাদের ব্যাপারটা আমাকে পাঁচমাস আগে জানিয়েছিলেন, আরিগারোসা বললেন। আমি অপেক্ষা করবো কেন?

    তাতো ঠিকই। আমরা আপনার আনুগত্যে খুব খুশি।

    আরিঙ্গারোসার চোখ লম্বা টেবিলটার উপরে রাখা কালো বৃফকেসটার দিকে গেলো। এটার জন্যেই কি আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে?

    এটার জন্যেই। সেক্রেটারির কণ্ঠে অস্বস্তিকর একটা ভাব দেখা গেলো। অবশ্য, আমি স্বীকার করছি, অনুরোধটা নিয়েই আমাদের চিন্তা হচ্ছিলো। এটা মনে হয়েছিলো …

    বিপজ্জনক, অন্য একজন কার্ডিনাল কথাটা শেষ করলেন।

    আপনি কি নিশ্চিত, আমরা এটা আপনার কাছে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে অন্য কোথাও পাঠাতে পারবো না? অংকটা কিন্তু অনেক বড়।

    মুক্তি অনেক ব্যয়বহুল। আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নই। ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন।

    মানুষগুলোকে একটু সন্দেহগ্রস্ত দেখালো।

    তহবিলটা কি আমার অনুরোধের মতোই ঠিক আছে!

    সেক্রেটারি সায় দিলেন। বিশাল অংকের বন্ড, ভ্যাটিকান ব্যাংক থেকে তোলা। পৃথিবীর যেকোন জায়গাই এটা টাকার মতোই ব্যবহার করা যাবে।

    আরিঙ্গারোসা টেবিলটার শেষ মাথায় হেটে গিয়ে বৃফকেসটা খুললেন। ভেতরে দুটো বান্ডিলের বন্ড, প্রতিটাতে ভ্যাটিকানের সিলাঙ্কিত আর লেখা আছে PORTATORE

    সেক্রেটারিকে খুব উদ্বিগ্ন দেখালো। আমাকে বলতেই হচ্ছে বিশপ, আমাদের সবাই খুব কম আশংকা করতাম, যদি এই তহবিলটা নগদে হোততা।

    সেই পরিমাণ টাকা আমি বহন করতে পারতাম না, আরিঙ্গারোসা ভাবলেন, বৃফকেসটা বন্ধ করে রাখলেন। বন্ডগুলো নগদ টাকার মতোই ব্যবহার করা যায়। আপনি নিজেই বলেছেন সেই কথা।

    কার্ডিনালরা একটা অস্বস্তির দৃষ্টি বিনিময় করলেন, শেষে একজন বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু এই বন্ডগুলো ভ্যাটিকান ব্যাংক খুব সহজেই ট্রে করতে পারবে।

    আরিজারোসা মনে মনে হাসলেন। ঠিক এই কারণেই টিচার আরিঙ্গারোসাকে টাকাগুলো ভ্যাটিকান ব্যাংকের বন্ডের মাধ্যমে নিতে বলেছিলেন। এটা একটা ইনসুরেন্সের মতো কাজ করবে। আমরা সবাই এই ব্যাপারে এক সঙ্গে আছি। এটাতো খুবই বৈধ একটি হস্তান্তর, আরিঙ্গাবোসা আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন। ওপাস দাই হলো ভ্যাটিকান সিটিরই নিজস্ব অঙ্গসংগঠন, আর পোপের কাছে এটা ঠিকই মনে হবে, টাকাটা যেভাবেই থাকুক না কেন। এখানে তো কোন আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে না।

    সত্য, তারপরেও… সেক্রেটারি একটু সামনের দিকে ঝুঁকলেন, তাতে চেয়ারটা থেকে মটমট করে একটা আওয়াজ হলো। আপনি এই তহবিলটা দিয়ে কী করবেন সে সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। আর যদি এটা কোনভাবে অবৈধ কিছু …

    আপনারা আমাকে কী জিজ্ঞেস করছেন সেটা বিবেচনা করুন, আরিঙ্গাবোসা পাল্টা জবাব দিলেন, এই টাকা দিয়ে আমি কি করবো, সেটা আপনাদের ব্যাপার নয়।

    লম্বা একটা নিরবতা নেমে এলো।

    তাঁরা জানে আমি সঠিক, আরিঙ্গাবোসা ভাবলেন। এখন আমি মনে করতে পারি, আপনারা সই করে দেবেন?

    তারা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে কাগজটা তার দিকে ঠেলে দিলো যেনো তারা চাইছে আরিজারোসা এখান থেকে দ্রুত চলে যাক।

    আরিঙ্গারোসা তাঁর সামনে রাখা কাগজটার দিকে তাকালো। এটাতে পাপাল-এর সিল মারা আছে। আপনারা আমার কাছে যে কপিটা পাঠিয়েছেন, এটার সাথে তার মিল আছে?

    পুরোপুরি।

    দলিলটা সই করার সময় সে কতো কম আবেগতাড়িত হলো সেটা ভেবে আরিঙ্গাবোসা খুবই অবাক হলেন। উপস্থিত তিন জন, মনে হলো একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

    ধন্যবাদ, বিশপ, আপনাকে, সেক্রেটারি বললেন। চার্চের জন্য আপনার কাজের কথাটা কখনই বিস্মৃত হবে না।

    আরিজারোসা বৃফকেসটা তুলে নিতেই এর ওজনের মধ্যে কর্তৃত্ব আর প্রতীজ্ঞা অনুভব করলেন। চার জন লোক একে অন্যের দিকে এমনভাবে তাকালেন যেনো আরো কিছু বলার আছে তাদের, কিন্তু দৃশ্যত তারা কিছুই বললেন না। আরিঙ্গাবোসা ঘুরে দরজার দিকে চললেন।

    বিশপ? আরিঙ্গারোসা দরজার কাছে যেতেই কার্ডিনালদের একজন ডাক দিলেন।

    আরিঙ্গাব্রোসা থেমে, ঘুরে দাঁড়ালেন। হ্যাঁ?

    এখান থেকে আপনি কোথায় যাবেন?

    আরিঙ্গাবোসা আঁচ করতে পারলেন, প্রশ্নটা যতটা না ভৌগলিক তারচেয়েও বেশি আধ্যাত্মিক। তারপরও, এই সময়ে তাঁর নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা করার কোন ইচ্ছে হলো না। প্যারিস, কথাটা বলেই দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন তিনি।

     

    ৪২.

    ডিপোজিটরি ব্যাংক অব জুরিখ চব্বিশ ঘন্টার সার্ভিস দিয়ে থাকে। এই গেন্ডশ্রাংক ব্যাংক সুইসব্যাংকের ঐতিহ্য অনুসারে পুরোপুরি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। জুরিখ, কুয়ালালামপুর, নিউইয়ক এবং প্যারিসে তাদের অফিস রয়েছে। সাম্প্রতিককালে তারা তাদের সার্ভিসকে শতভাগ কম্পিউটারাইজ করেছে। বর্তমানে সবধরণের কাজই কোড দিয়ে করা হয় আর একাউন্ট নাম্বারগুলোর অদৃশ্য ডিজিটাইজ ব্যাক-আপ থাকে।

    এই ব্যাংকের প্রধান কাজটা করা হয়ে থাকে বহু পুরনো আর সরল একটা পদ্ধতিতে বড়সড় একটা লেজার—তাতে তথ্য গোপন রাখা হয়, আর সেটা নিরাপদ ডিপোজিট বক্স সার্ভিস হিসেবে পরিচিত। গ্রাহক নিজেদের স্টক সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে চিত্রকর্ম পর্যন্ত ডিপোজিট রাখতে পারে এখানে। অতি উচ্চ-প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে এই ব্যাংকে। গ্রাহক যখন খুশি, ইচ্ছে করলেই সঙ্গোপনে এবং পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ডিপোজিটে রাখা জিনিসটা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিতে পারে।

    ব্যাংকের কাছাকাছি একটা জায়গায় সোফি গাড়িটা থামালো। ল্যাংডন ভবনটার পুরোদস্তুর স্থাপত্যশৈলীর দিকে তাকিয়ে আর্চ করলো ডিপোজিটরি ব্যাংক অব জুরিখের হাস্যরসের ব্যাপারে সম্যক ধারণাই আছে। ভবনটা জানালাবিহীন চৌকোনা, পুরোপুরি স্টিল দিয়ে তৈরি করা। এর গাথুনীটা বড়-বড় লোহার ইটে তৈরি। মাটি থেকে ভবনটার ভিত পনেরো ফুট উঁচুতে। নিয়ন আলো আর সম-বাহুর ঐশ ভবনটার বাইরের দিকে জ্বল জ্বল করছে।

    ব্যাংকিং খাতে সুইজারল্যান্ডের গোপনীয়তার সুনামটিই হলো সেই দেশের সবচাইতে লাভজনক রপ্তানি পণ্য। শিল্প সমাজের কাছ থেকে এই ধরনের সুবিধার ব্যাপারে বিরোধীতার সম্মুখীন হয়ে আসছে ভারা কারণ, তারা শিল্পকর্মের চোরদের চুরি করা জিনিস লুকিয়ে রাখার জন্য একেবারে নিরাপদ জায়গা দিয়ে থাকে। চোরেরা কয়েক বছর পরে, যখন চুরির ঘটনাটা বিস্মৃত হয়ে আসে, তখন সেগুলো তুলে নিয়ে থাকে, কারণ আইনগতভাবেই ডিপোজিটগুলো যে কোন ধরনের পুলিশী তল্লাশী থেকে মুক্ত, আর একাউন্টগুলো নামের উপরে না হয়ে সংখ্যার মাধ্যমে হয়ে থাকে। চোরেরা এটা জেনে স্বস্তিতে থাকে যে, তাদের চুরি করা মালামালগুলো নিরাপদে আছে এবং সেগুলো কোনভাবেই খোঁজ করা যাবে না।

    সোফি ব্যাংকের দরজার সামনেই গাড়িটা থামালো। ল্যাংডনের মনে হলো তাদের উপরে একটা ভিত্তিও ক্যামেরা নজরদারি করছে, এই ক্যামেরাটা লুভরের মতো নয়, একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য।

    সোফি গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে ঠিক পাশেই রাখা ইলেকট্রনিক মঞ্চে রাখা এলসিডি মনিটরের দিকে তাকালো। সেখানে সাতটা ভাষায় দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। সবার উপরে ইংরেজি।

    INSERT KEY

    সোফি পকেট থেকে গোল্ড লেজার চাবিটা বের করে মঞ্চটার ঠিক নিচের ত্রিভূজাকৃতির একটা ছিদ্রটাতে ঢুকালো।

    আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, এটা কাজ করবে, ল্যাংডন বললো।

    চাবিটা পুরোপুরি ঢোকাবার পরই সোফির মনে হলো, এটা ঘোরাবার দরকার নেই। সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা খুলে গেলো। সোফি গাড়িটা চালিয়ে সামনের দ্বিতীয় দরজাটার দিকে এগোলো, তার পেছনের দরজাটা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়ে তাদেরকে ভেড়া-বন্দী করে ফেললো।

    ল্যাংডন এই বন্দী অবস্থাটা অপছন্দ করলো না। আশা করা যাক, দ্বিতীয় দরজাটাও খুলবে।

    দ্বিতীয় দরজাটাও আগের মতো করেই খুলতে হলো।

    INSERT KEY

    চাবিটা ঢোকানো মাত্রই দরজাটা খুলে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই তারা ভকটার পেটের ভেতরে ঢুকে পড়লো। গাড়ি রাখার জায়গাটা ছোট আর সংকীর্ণ। এক ডজন গাড়ি রাখার মতো আয়তন জায়াগাটার। অন্যপ্রান্তে, ল্যাংডন ভবনটার মূল প্রবেশ দ্বারের দিকে তাকালো। সিমেন্টের ফ্লোরটাতে একটা লম্বা লাল গালিচা বিছানো। দর্শনার্থীদেরকে স্বাগতম জাগানোর জন্য সেখানে রয়েছে একটা বিশাল দরজা, তার কাছে মনে হলো পুরোপুরি লোহার তৈরি বলে।

    স্বাগতম এবং দূরে থাকুন, ল্যাংডন ভাবলো।

    প্রবেশদ্বারের সামনে একটা পার্কিং লটের কাছে সোফি গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে গিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলো। তুমি অস্ত্রটা গাড়িতেই রেখে দাও।

    আনন্দের সাথেই, ল্যাংডন মনে মনে বলে পিস্তলটা সিটের নিচে রেখে দিলো।

    সোফি আর ল্যাংডন গাড়ি থেকে নেমে লাল গালিচাটা ধরে এগোলো। দরজাটার কোন হাত নেই। কিন্তু ঠিক তার পাশেই, দেয়ালে আরেকটা ত্রিভূজাকৃতির ছিদ্র দেখা গেলো। এখানে অবশ্য কোন নির্দেশনা নেই।

    ধীরে শেখে যারা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকো, ল্যাংডন বললো।

    সোফি হাসলো, তাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে। এইতো। সে ছিদ্রটার ভেতরে চাবি ঢুকালে সাথে সাথে দরজাটা খুলে গেলো। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে সোফি আর ল্যাংডন ভেতরে প্রবেশ করতেই দরজাটা ভোতা একটা শব্দে বন্ধ হয়ে গেলো।

    ডিপোজিটরি ব্যাংকের ফয়ারটা যে রকমভাবে সাজানো হয়েছে, সে রকমটি ল্যাংডন কখনও দেখেনি। যেখানে বেশিরভাগ ব্যাংক পালিশ করা মার্বেল বা গ্রানাইট দিয়ে সাজায়, সেখানে এই জায়গাটার সারা দেয়াল জুড়ে লোহা আর নাট-বল্ট দিয়ে সাজানো।

    তাদের ডেকোরেটর কে? ল্যাংডন অবাক হয়ে ভাবলো। স্টিলের গলি?

    সোফিও একইরকম ভয়ে লবিটার দিকে তাকালো। চারদিকেই ধূসর লোহা জমিন, দেয়াল, কাউন্টার, দরজা, এমনকি লবির চেয়ারগুলোও লোহার তৈরি। তাসত্ত্বেও, ব্যাপারটা দেখতে খুবই আকর্ষণীয় আর চমক্কার। মেসেজটা খুব পরিষ্কার : তুমি একটা ভন্টের ভেতরে হাটছে।

    তারা ঢুকতেই কাউন্টারে বসা এক বিশাল দেহের লোক তাদের দিকে তাকালো। সে ছোট্ট একটা টেলিভিশন বন্ধ করে তাদের দিকে প্রশান্তির একটা হাসি দিলো। বিশাল মাংসপেশী এবং শক্ত বাহু থাকা সত্ত্বেও, তার কণ্ঠে এবং আচারে মার্জিত সুইস বেলহপ-এর পরিচয় পাওয়া গেলো।

    বঁজুখ, সে বললো, আপনাদেরকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

    দুভাষায় অভিন্দন জানানোটা এই ইউরোপিয়ান অভ্যর্থনাকারীর নতুন একটা চাল।

    সোফি জবাবে কিছুই বললো না। সোজা সোনার চাবিটা লোকটার সামনের কাউন্টারের উপর রেখে দিলো।

    লোকটা সেটার দিকে তাকিয়েই সোজা উঠে দাঁড়ালো। অবশ্যই। আপনার লিফটটা ঘরের শেষ মাথায়। আমি জানিয়ে দিচ্ছি, আপনারা আসছেন।

    সোফি মাথা নেড়ে চাবিটা তুলে নিলো।কোন্ তলায়?

    লোকটা তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো। আপনার চাবিটা-ই তো নির্দেশ করছে কোন তলা।

    সোফি হেসে বললো, আহ্, তাইতো।

     

    গার্ড দুই আগন্তুককে লিফটের কাছে যেতে দেখলো। তারা চাবি ঢুকিয়ে লিফটের ভেতরে চলে গেলো। দরজাটা বন্ধ হতেই ফোনটা তুলে নিলো লোকটা। কাউকে তাদের আসার কথা জানানোর জন্য বললো না; এর কোন দরকারও নেই। বাইরের প্রবেশদ্বারে কোন গ্রাহক চাবি ঢোকানোর সাথে সাথেই পুরো ভল্টটাই সতর্ক হয়ে যায়।

    গার্ড আসলে ব্যাংকের রাত্রিকালীন ম্যানেজারকে ডাকতে ফোন করছে।

    ফোনের রিং হতেই গার্ড টেলিভিশনটা ছেড়ে দিয়ে সেটা দেখতে লাগলো। যে খবরটা সে দেখছিলো সেটা এইমাত্র শেষ হলো। এতে অবশ্য কিছু যায় আসে না। সে ইতিমধ্যেই এই দুজনের ছবি টেলিভিশনে দেখে ফেলেছে।

    ম্যানেজার জবাব দিলো, উই?

    এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে।

    কি হয়েছে? ম্যানেজার জানতে চাইলো।

    ফরাসি পুলিশ দুজন ফেরারিকে খুঁজছে। আজ রাতে।

    তো?

    তাদের দুজন এখন আমাদের ব্যাংকের ভেতরে ঢুকেছে।

    ম্যানেজার শান্ত কণ্ঠেই বললো, ঠিক আছে। আমি মঁসিয়ে ভার্নেটের সাথে যোগাযোগ করছি।

    গার্ড ফোনটা নামিয়ে রেখে আরেকটা ফোন করলো। এটা করা হলো ইন্টারপোলে।

     

    ল্যাংডন খুব অবাক হলো, কারণ তার মনে হলো, লিফটটা উপরের দিকে না উঠে বরং নিচের দিকে নামছে। লিফটের দরজাটা খোলর আগে সে বুঝতেই পারলো না ডিপোজিটরি ব্যাংক অব জুরিখের নিচের কত তলায় গেলো। সে অবশ্য পরোয়া করলো না। লিফট থেকে বের হতে পেরেই সে দারুণ খুশি। ইতিমধ্যেই একজন অভ্যর্থনাকারী মিষ্টি হেসে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা বয়সে প্রবীন আর বেশ হাসিখুশি। সে পরে আছে পরিষ্কার ফ্লানেল সুট, যা এই জায়গার সাথে একদম বেমানান–আধুনিক উচ্চপ্রযুক্তির জগতে একজন পুরনো দিনের ব্যাংকার।

    বঁজুখ, লোকটা বললো। গুড ইভিনিং। আপনারা কি দয়া করে আমাকে অনুসরণ করবেন, সিল ভু প্লেই? কোন জবাবের অপেক্ষা না করেই, সে ঘুরে একটা সংকীর্ণ করিডোর দিয়ে যেতে লাগলো।

    ল্যাংডন সোফির পেছন পেছন কয়েকটা করিডোর পার হলো। তারা কয়েকটা মেইন ফ্রেম কম্পিউটার ভর্তি ঘরও পার হলো। ওগুলোর বাতি জ্বলছিলো, নিভছিলো।

    ভয়সি, লোকটা বললো, একটা লোহার দরজার সামনে এসে সেটা খুলে দিলো তাদের জন্য। এইতো এখানে।

    ল্যাংডন আর সোফি আরেকটা জগতে প্রবেশ করলো। তাদের সামনে ছোট্ট ঘরটা দেখতে চমৎকার কোন হোটেলের বিলাসবহুল বসার ঘরের মতো। সেখানে লোহা আর নাট-বল্ট তিরোহিত হয়েছে। সেই জায়গাটা দখল করেছে প্রাচ্যদেশীয় কার্পেট, ওক কাঠের ফার্নিচার, আর কুশন সংবলিত চেয়ার। ঘরের মাঝখানে রাখা চওড়া ডেস্কটার উপরে, দুটো ক্রিস্টালের গ্লাস, তার পাশে খোলা পেরিয়ারের বোতল, সেটার বুদবুদ এখনও উঠছে। তার পাশেই রয়েছে একটা কফি পট।

    লোকটা একটা ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিলো। আমার মনে হচ্ছে, আপনারা আমাদের এখানে এই প্রথম এসেছেন?

    সোফি একটু ইতস্তত করে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    বুঝেছি। প্রায়শই, চাবিগুলো উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। আর আমাদের এখানে প্রথম যারা আসে, তারা সাধারণত এখানকার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে না। সে টেবিলে রাখা পানীয়ের দিকে ইশারা করলো। এই ঘরটা আপনাদের, যতোক্ষণ ইচ্ছে আপনারা এটা ব্যবহার করবেন।

    আপনি বলছেন, চাবিগুলো প্রায়শই উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে? সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    একদম ঠিক। আপনার চাবিটা অনেকটা সুইস ব্যাংক একাউন্টের মতোই, যা প্রায়শই, পরবর্তী বংশধরদের কাছে উইল করে দেয়া হয়। আমাদের গোল্ড একাউন্টের সর্বনিম্ন লিজ নেয়ার সময়কাল হলো পঞ্চাশ বছর। অগ্রিম পরিশোধ করা হয়। তো, সে জন্যেই, আমরা অনেক পরিবারের বদল হতে দেখি।

    ল্যাংডন তার দিকে তাকালো। আপনি বলছেন পঞ্চাশ বছর?

    সর্বনিম্ন, লোকটা জবাব দিলো। অবশ্য, আপনি এর চেয়ে বেশি সময়ের জন্যও লিজ নিতে পারেন। আর যদি সময় না বাড়িয়ে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম হবার পরও একাউন্টটা সচল না করা হয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই, সেফ ডিপোজিট বাক্সটা ধ্বংস করে ফেলা হয়। আমি কি আপনাদের বাক্সটা খোলার কাজ শুরু করবো?

    সোফি মাথা নেড়ে সায় দিলো। প্লিজ।

    লোকটা একটা বিলাসবহুল কামড়ার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো। এটা আপনাদের ব্যক্তিগত ভিউয়িংরুম। আমি এই ঘর থেকে চলে যাবার পর, আপনারা যতোক্ষণ দরকার ততোক্ষণ থেকে, নিজেদের সেফ-ডিপোজিট বাক্সের জিনিসগুলো দেখতে পারেন, নিতে পারেন। সে হেটে ঘরটার একদিকের দেয়ালের কাছে গিয়ে বললো, আপনার চাবিটা এখানে ঢুকাবেন… লোকটা একটা ইলেক্ট্রনিক পোডিয়ামের দিকে ইঙ্গিত করলো। পোডিয়ামটার অতিপরিচিত ত্রিভূজকৃতির একটা ছিদ্র ছিলো। কম্পিউটার আপনার চাবিটা নিশ্চিত করলে, আপনি আপনার একাউন্ট নাম্বারটা ইনসার্ট করবেন, তারপরেই আপনার সেফ-ডিপোজিটরি বাক্সটা ভল্টের নিচে আপনা আপনিই এসে যাবে। বাক্সটার কাজ শেষ করার পর, একই প্রক্রিয়ায় আপনি সেটা আবার ভেতরে ঢুকিয়ে রাখতে পারবেন। চাবিটা আবার ঢোকাতে হবে কিন্তু। সব কিছুই স্বরংক্রিয় ব্যবস্থায় হবে, তাই প্রাইভেসির গ্যারান্টি রয়েছে। এমন কি ব্যাংকের কর্মচারীদের কাছেও কিছুই জানা সম্ভব নয়। আপনাদের যদি কিছুর দরকার হয়, তাহলে শুধু টেবিলের মাঝখানের বোতামটা টিপলেই হবে।

    সোফি কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। লোকটা খুব বিব্রত আর হতভম্ব হলো। ক্ষমা করবেন, আমাকে, প্লিজ। সে ফোনটার কাছে গেলো, সেটা টেবিলে রাখা কফি পটটার পাশেই ছিলো।

    উই? সে জবাব দিলো। ফোনের অপর পাশ থেকে কথা শুনে তার ভুরু কপালে উঠলো। উই…উই…দার্কোদ। সে ফোনটা রেখে দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তির একটা হাসি দিলো। আমি দুঃখিত, আমাকে একটু যেতে হবে। আপনারা নিজের ঘর মনে করবেন। সে খুব দ্রুত দরজার দিকে চলে গেলো।

    একটু শুনুন, সোফি লোকটাকে ডাকলো। যাবার আগে কি একটা বিষয় পরিষ্কার করে যাবেন? আপনি বলেছেন, আমাদেরকে একটা একাউন্ট নাম্বার ঢোকাতে হবে?

    লোকটা দরজার সামনে গিয়ে থামলো। তার মুখটা ফ্যাঁকাশে দেখালো। তাতো অবশ্যই। সুইস ব্যাংকের একাউন্টের মতো, আমাদের সেফ ডিপোজিটরি বক্সের একাউন্টেরও একটা নাম্বার থাকে, কোন নাম নয়। আপনার কাছে একটা চাবি এবং পারসোনাল নাম্বার আছে, যা শুধু আপনিই জানেন। চাবিটা হলো আইডিন্টিফিকেশনের কেবলমাত্র অর্ধেকটা। আপনার একাউন্ট নাম্বারটা হলো বাকি অর্ধেক। তা-না হলে আপনি আপনার চাবিটা হারিয়ে ফেললে, যে কেউ সেটা ব্যবহার করতে পারবে।

    সোফি ইতস্তত করে বললো, কিন্তু, আমার উইলদাতা যদি আমাকে কোন একাউন্ট নাম্বার না দিয়ে থাকেন তো?

    লোকটার হৃদস্পন্দন লাফাতে লাগলো। তাহলে নিশ্চিতভাবেই এখানে এসে আপনার কোন কাজ হবে না! সে তাদের দিকে তাকিয়ে একটা শান্ত হাসি দিলো। আমি কাউকে ডেকে দিচ্ছি, আপনাদেরকে সাহায্য করার জন্য। সে খুব দ্রুতই এসে যাবে।

    চলে গিয়ে ব্যাংকার লোকটা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে থেকে চাবি মেরে দিলো। তাদেরকে ভেতরে আঁটকে ফেলা হলো।

     

    শহরের উপকণ্ঠে, কোলেত গার দু নর্দ ট্রেন টামিনালে দাঁড়িয়ে আছে। তার ফোনটা বেজে উঠলো।

    ফশের ফোন। ইন্টারপোল একটা জিনিস খুঁজে পেয়েছে। ল্যাংডন আর সোফি এইমাত্র প্যারিসের ডিপোজিটরি ব্যাংক অব জুরিখের একটা শাখায় গেছে। আমি চাই, তুমি তোমার লোকজন নিয়ে সেখানে এক্ষুণি চলে যাও।

    এজেন্ট নেভু আর রবার্ট ল্যাংডনের কাছে সনিয়ে কী বলতে চেষ্টা করেছেন, সে ব্যাপারে কি কিছু জিজ্ঞেস করবো?

    ফশের কণ্ঠটা শীতল হয়ে গেলো। তুমি যদি তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারো লেফটেনান্ট কোলেত, তখন আমি নিজেই সেটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারবো।

    কোলেত ইঙ্গিতটা ধরতে পারলো। চব্বিশ রুই হাক্সো। এক্ষুণি যাচ্ছি ক্যাপ্টেন। সে ফোনটা কেটে দিয়ে তার লোকদের কাছে ওয়্যারলেস করলো।

     

    ৪৩.

    আদ্রেঁ ভার্নেট–জুরিখের ডিপোজিটরি ব্যাংকের প্যারিস শাখার প্রেসিডেন্ট ব্যাংকের ওপরেই বিরাট একটা ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। তাঁর এই চমক্কার থাকার জায়গা সত্ত্বেও তিনি স্বপ্ন দেখেন লিলের সেন্ট লুইর নদীর তীরের একটা এপার্টমেন্টের মালিক হতে, যেখানে তিনি তার কাঁধ সোজা করে সত্যিকারের মর্যাদা নিয়ে থাকবেন, এখানকার মতো নোংরা ধনীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার মতো কিছু থাকবে না সেখানে।

    আমি যখন অবসরে যাবো, ভার্নেট নিজেকে বললেন, আমার ঘরটা বোর্দ মদ দিয়ে ভরে রাখবো, আর সারা দিন কাটাবো পুরনো ফার্নিচার এবং লাতিন কোয়ার্টার থেকে সংগ্রহ করা বই।

    আজ রাতে, ভার্নেট, এইতো, মাত্র সাড়ে ছয় মিনিট আগে জেগেছেন। তারপরও, যখন ব্যাংকের আন্ডারগ্রাউন্ড করিডোর দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন তখন তাকে দেখলে মনে হবে তাঁর ব্যক্তিগত দর্জি এবং হেয়ার ড্রেসার তাকে ঘষা-মাজা করে চকে করে তুলেছে। নিখুঁতভাবেই সিল্কের সুট পরেছেন ভার্নেট, মুখে মাউথন্দ্রে করেছেন। হাটতে হাটতে টাইটা বেঁধে নিলেন ঠিক মতো। আন্তর্জাতিক কোন গ্রাহক, ভিন্ন কোন টাইম জোন থেকে ব্যাংকে এসে পৌঁছালে তাঁকে এভাবে উঠতেই হয়, এটা কোন অদ্ভুত ব্যাপার নয় তার কাছে। ভার্নেট মাসাই যোদ্ধাদের আদলে ঘুম দিয়ে থাকেন—এই আফ্রিকান উপজাতি, গভীর ঘুম থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জেগে ওঠে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে পারার ক্ষমতা রাখে।

    যুদ্ধ প্রস্তুত, ভার্নেট ভাবলেন। আশংকা করলেন আজ রাতের ঘটনাটা খুব অভাবনীয় কিছু হবে। গোল্ড কি গ্রাহকের আগমন সবসময়ই বাড়তি মনোযোগ দাবি করে। কিন্তু একজন গোল্ড কির গ্রাহক যে কি-না জুডিশিয়াল পুলিশ কর্তৃক ফেরারি, সেটা নিঃসন্দেহে নাজুক একটা ব্যাপার। গ্রাহকদের গোপনীয়তার ব্যাপারটা নিয়ে ব্যাংকের সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের যথেষ্ট লড়াই হয়েছে। তারা কোন প্রমাণ ছাড়াই কিছু গ্রাহককে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো।

    পাঁচ মিনিট, ভার্নেট নিজেকে বললেন। পুলিশ আসার আগেই এই লোকগুলো ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া দরকার।

    যদি খুব দ্রুত পৌঁছানো যায়, এই অনাহুত বিপদটা পাশ কাটানো যেতে পারে। ভার্নেট পুলিশকে বলতে পারবে, ফেরারিরা তাঁর ব্যাংকে এসেছিলো ঠিকই, কিন্তু তারা যেহেতু গ্রাহক নয়, আর তাদের কোন একাউন্টও নেই তাই তারা চলে গেছে। তিনি মনে মনে চাইছিলেন বোকা দারোয়ানটা যেনো ইন্টারপোলে ফোন না করে বসে। ১৫ ইউরো প্রতি ঘণ্টার দারোয়ানের কাছ থেকে বিচক্ষণতার প্রত্যাশা করা ঠিক নয়।

    দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, তিনি একটা লম্বা দম নিয়ে নিজের মাংসপেশীগুলোকে শিথিল করে নিলেন। তারপর, একটা কপট হাসি জোর করে মুখে এঁটে দিলেন। দরজাটা লাগিয়ে ঘরের ভেতরে গরম বাতাসের মতো ঢুকে পড়লেন।

    গুড ইভিনিং, তিনি বললেন, তার চোখ ক্লায়েন্টদের খুঁজলো। আমি আজেঁ ভার্নেট। আমি কীভাবে আপনাদের সা শব্দটার বাকি অংশ তঁার এডামস এ্যাপেলের কোথাও আঁটকে গেলো। তাঁর সামনের মেয়েটা এতোটাই অপ্রত্যাশিত যে, ভার্নেট সেটা কল্পনাই করতে পারছিলেন না।

     

    আমি দুঃখিত, আমরা কি একে অন্যেকে চিনি? সোফি জিজ্ঞেস করলো। সে ব্যাংকারকে চিনতে না পারলেও, কয়েক মুহুর্তের জন্য তার মুখটা দেখে মনে হলো, তিনি যেনো ভূত দেখছেন।

    না… ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তোতলাতে শুরু করলেন। আমার…বিশ্বাস। আমাদের সার্ভিসটা বেনামে হয়। তিনি দম নিয়ে একটা হাসি দেবার চেষ্টা করলেন। আমার সহকারী আমাকে বলেছে, আপনাদের কাছে একটা গোল্ড কি আছে, কিন্তু কোন একাউন্ট নাম্বার নেই? আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি, চাবিটা কোথেকে পেয়েছেন?

    আমার দাদু আমাকে এটা দিয়েছেন, লোকটাকে একটু ভালো করে দেখে সোফি জবাব দিলো। তার অস্বস্তিটা এখন আরো বেশি ইঙ্গিতবহ মনে হচ্ছে।

    সত্যি? আপনার দাদ আপনাকে চাবিটা দিলেও একাউন্ট নাম্বার দিতে পারেন নি?

    আমার মনে হয়, তিনি সময় পাননি, সোফি বললো। তিনি আজ রাতে খুন হয়েছেন।

    তার কথায় লোকটা একটু পিছিয়ে গেলো। জ্যাক সনিয়ে মারা গেছেন? তিনি জানতে চাইলেন, তার চোখ জুড়ে আতংক। কিন্তু … কিভাবে?

    এবার সোফি দারুণ অবাক হলো, ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। আপনি আমার দাদুকে চিনতেন?

    ব্যাংকার আদ্রেঁ ভার্নের্টকেও একইরকম বাকরুদ্ধ হতে দেখা গেলো, টেবিলের কোনা ধরে একটু হেলে পড়লেন তিনি। জ্যাক এবং আমি খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। কখন ঘটনাটা ঘটলো?

    আজ রাতের শুরুতে। লুভরের ভেতরেই।

    ভার্নেট একটা চামড়ার চেয়ারে বসে পড়লেন। আপনাদের দুজনকে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে। তিনি ল্যাংডন আর সোফির দিকে তাকালেন। আপনাদের কেউ কি তার মৃত্যুর সাথে কোনভাবে জড়িত?

    না! সোফি জোড় দিয়ে বললো। একেবারেই নয়। ভার্নেটের চেহারাটায় একটা তিক্তভাব দেখা গেলো, তিনি একটু থেমে ভাবতে লাগলেন। ইন্টারপোল আপনাদের ছবি সম্প্রচার করছে। এজন্যেই আমি আপনাদেরকে চিনতে পেরেছিলাম, আপনারা হত্যার খুনের আসামী।

    সোফি আৎকে উঠলো। ফশে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলে সম্প্রচার করে ফেলেছে? এতে মনে হলো, সোফির ধারণার চেয়েও ক্যাপ্টেন অনেক বেশি করিকর্মা। সে খুব দ্রুত ল্যাংডনের পরিচয়টা দিয়ে দিলো আর লুভরের ভেতরে কী ঘটেছে সেটাও জানালো।

    ভার্নেট খুব বিস্মিত হলো। আপনার দাদু মারা যাবার সময় আপনার জন্য একটা মেসেজ লিখে বলে গেছেন যে, মি. ল্যাংডনকে খোঁজ করুন?

    হ্যাঁ। আর এই চাবিটা। সোফি সোনার চাবিটা প্রায়োরির সিলটার দিক মুখ করে ভার্নেটের সামনে কফি টেবিলের ওপরে রাখলো।

    ভার্নেট চাবিটার দিকে তাকালেন, কিন্তু সেটা ধরলেন না। শুধু চাবিটাই আপনাকে দিয়েছে? আর কিছু না? কোন কাগজের টুকরো?

    সোফি জানতো, সে লুভরে খুব তাড়াহুড়ো করেছিলো। কিন্তু সে একেবারে নিশ্চিত, মাড়োনা অব দি রকসর পেছনে অন্য কিছু ছিলো না। না, শুধু চাবিটা।

    ভার্নেট একটা হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রতিটা চাবির সাথেই দশ সংখ্যার একটা একাউন্ট নাম্বারও থাকে। সেই নাম্বারটাই হলো। পাসওয়ার্ড। নাম্বারটা ছাড়া চাবিটা একেবারেই মূল্যহীন।

    দশ সংখ্যার নাম্বার। সোফি মনে মনে ক্রিপ্টোগ্রাফিক কোডটার হিসাব-নিকাশ করতে শুরু করলো। দশ বিলিয়ন সম্ভাব্য সংখ্যা হবে। সে যদি ডিসিপিজের সবচাইতে শক্তিশালী প্যারালাল কম্পিউটার ব্যবহার করে তবে কোডটা ভাঙতে তার কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। অবশ্যই মঁসিয়ে, সব কিছু বিবেচনা করে আপনি আমাদেরকে সাহায্য করতে পারেন।

    আমি দুঃখিত। সত্যি বলতে কী, আমি কোন সাহায্যই করতে পারবো না। গ্রাহকরা তাদের একাউন্ট নাম্বারগুলো একটা নিরাপদ টার্মিনালের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। তার মানে, একাউন্ট নাম্বারটা কেবল গ্রাহক এবং কম্পিউটারই জানতে পারে। এইভাবে আমরা আমাদের সুরক্ষা দিয়ে থাকি। আর এটা আমাদের কর্মচারীদেরকেও নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।

    সোফি বুঝতে পারলো। কনভিনিয়েন্স স্টেটনারও একই জিনিস করে থাকে। কর্মচারীদের কাছে চাবি থাকে না। এই ব্যাংক নিশ্চিতভাবেই চায় না এমন ঝুঁকি নিতে, যাতে করে কেউ একটা চাবি চুরি করে ব্যাংকের কোন কর্মচারীকে জিম্মি করে একাউন্ট নাম্বারটা নিয়ে নিতে পারে।

    সোফি ল্যাংডনের পাশে বসে পড়লো। চাবির দিকে তাকিয়ে তারপর ভানেক্টের দিকে তাকালো। আমার দাদু ব্যাংকে কী রেখেছেন, সে সম্পর্কে কি আপনার কোন ধারণা আছে?

    একেবারেই না। এটাই গেন্ডশ্রাংক ব্যাংকের সংজ্ঞা।

    মঁসিয়ে ভার্নেট, সে আরেকটু চাপাচাপি করলো। আজ রাতে আমাদের হাতে খুব অল্পই সময় আছে। আমি সরাসরিই বলছি। সে সোনার চাবিটা হাতে নিয়ে প্রায়োরি সিলটা তাঁকে দেখালো। এই চাবির প্রতীকটা কি আপনার কাছে কোন অর্থ বহন করে?

    ভার্নেট ফ্লার-দ্য-লিস সিলটার দিকে তাকিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। না, কিন্তু আমাদের অনেক গ্রাহকই নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোগো কিংবা আদ্যক্ষর অংকিত করে থাকে।

    সোফি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো, তখনও তাঁকে সতর্কভাবে দেখে যাচ্ছিলো। এই সিলটা একটা গুপ্তসংগঠন, প্রায়োরি অব সাইন-এর প্রতীক।

    ভার্নেট আবারো কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। আমি এসবের কিছুই জানি না। আপনার দাদু আমার একজন বন্ধু ছিলেন। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজের কথা বলতাম। লোকটা তার টাই ঠিক করে নিলেন, এখন খুব নার্ভাস দেখাচ্ছে তাঁকে।

    সিয়ে ভার্নেট, সোফি জোর দিয়ে বললো, তার কণ্ঠ খুবই দৃঢ়। আমার দাদু আজ রাতে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে, তিনি এবং আমি মারাত্মক বিপদে আছি। তিনি বলেছেন, তার নাকি আমাকে কিছু একটা দেয়ার আছে। তিনি আমাকে আপনার ব্যাংকের এই চাবিটা দিয়েছেন। এখন তিনি মারা গেছেন। আপনি আমাদেরকে কিছু বললে, সেটা আমাদের খুব সাহায্যে আসবে।

    ভার্নেট ঘামে ভিজে গেলেন। আমাদেরকে এই ভবন থেকে বের হয়ে যেতে হবে। আমার ভয় হচ্ছে পুলিশ খুব শীঘ্রই এখানে এসে পৌঁছাবে। আমার দারোয়ান ইন্টারপোলকে ফোন করে দিয়েছে।

    সোফি একটু ভয় পেয়ে গেলো। সে শেষবারের মতো একটা চেষ্টা করে দেখলো। আমার দাদু বলেছিলেন যে, তিনি আমার পরিবার সম্পর্কে একটা সত্য কথা বলতে চান। এটা কি আপনার কাছে কোন অর্থ বহন করে?

    মাদামোয়াজেল, আপনার পরিবার একটা গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলো, তখন আপনি খুবই ছোট ছিলেন। আমি দুঃখিত। আমি জানি আপনার দাদু আপনাকে খুব ভালোবাসতেন। সে আমাকে অনেকবারই বলেছে, আপনার সাথে তার সম্পর্কচ্ছেদের জন্য কী কষ্টটাই না সে পেয়েছে।

    সোফি কী বলবে ভেবে পেলো না।

    ল্যাংডনই জিজ্ঞেস করলো, এই একাউন্টে যা রাখা হয়েছে, তার সাথে কি স্যাংগৃলের কোন সম্পর্ক রয়েছে?

    ভার্নেট আজব ভঙ্গীতে তার দিকে তাকালো। এটা আবার কি, এ সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই নেই। ঠিক এই সময়েই ভার্নেটের সেল ফোনটা বেজে উঠলে বেল্ট থেকে ওটা খুলে নিলেন। উই? তিনি কয়েক মুহূর্ত শুনলেন। তাঁর চেহারায় বিস্ময় আর দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা গেলো। লা পুলিশ? সি র‍্যাপিদেমো? তিনি দ্রুত ফরাসিতে কিছু নির্দেশ দিয়ে দিলেন, আর বললেন কয়েক মিনিটের মধ্যে সে নিজেই। লবিতে আসছে।

    ফোনটা রেখেই তিনি সোফির দিকে ঘুরলেন। পুলিশ খুব দ্রুতই ছুটে এসেছে দেখছি। আমরা কথা বলতে বলতেই তারা এসে পড়বে। শুনুন, ভার্নেট বললেন, জ্যাক আমার বন্ধু ছিলেন, আর আমার ব্যাংক চায় না এটা জানা-জানি হোক। তাই দুটো কারণে, আমি আমার এখানে কোন ধরণের গ্রেফতার হওয়াটা চাইছি না। আমাকে একটু সময় দিন, দেখি আপনাদেরকে এখান থেকে সবার অলক্ষ্যে বের করে দিতে পারি কিনা। এটা ছাড়া আমি আর কোনভাবে জড়িত হতে চাই না। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে চলে গেলেন। এখানেই থাকুন। আমি ব্যবস্থা করে ফিরে আসছি।

    কিন্তু সেফ-ডিপোজিট বাক্সটা, সোফি জানালো। আমরা তো শুধু শুধু চলে যেতে পারি না।

    এ ব্যাপারে আমি কিছু করতে পারবো না। ভার্নেট বললেন, দ্রুত দরজার দিকে এগোলেন। আমি দুঃখিত।

    সোফি তার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো, ভাবলো, হয়তো একাউন্ট নাম্বারটা বছরে পর বছর ধরে তার দাদুর পাঠানো অসংখ্য চিঠির ভীড়ে চাপা পড়ে আছে, যা সে কখনই খুলে দেখেনি।

    ল্যাংডন আচম্‌কা উঠে দাঁড়ালো। সোফি আঁচ করতে পারলো অপ্রত্যাশিত কিছু একটা তার চোখে, আশাব্যঞ্জক কিছু।

    রবার্ট তুমি হাসছো।

    তোমার দাদু একজন জিনিয়াস।

    কি বললে?

    দশ সংখ্যা?

    সোফি কিছুই বুঝতে পারলো না। সে কি বলছে।

    একাউন্ট নাম্বারটা, সে বললো, তার চেহারার একটা বুদ্ধিদীপ্তি ঝলক দেখা যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত, তিনি ওটা আমাদের কাছেই রেখে গেছেন।

    কোথায়?

    ল্যাংডন তার পকেট থেকে কম্পিউটার প্রিন্ট-আউটটা বের করে কফি টেবিলের ওপর রাখলো। সোফি প্রথম লাইনটা পড়েই বুঝতে পারলো ল্যাংডন ঠিকই বলছে।

    13-3-2-21-1-1-8-5

    O, Draconian devil!
    Oh, I ame saint!
    P.S.Find Robert Langdon

     

    ৪৪.

    দশটি সংখ্যা, সোফি বললো, প্রিন্ট-আউটটা দেখে তার ক্রিপ্টোলজিক জ্ঞানে টনক নড়লো।

    ১৩-৩-২-২১-১-১-৮-৫

    দাদু তাঁর একাউন্ট নাম্বারটা লুভরের ফ্লোরে লিখে গেছেন!

    সোফি যখন প্রথম এলোমেলো ফিবোনাচ্চি সংখ্যামটা কাঠের ফ্লোরে দেখেছিলো, তার নিশ্চিত ধারণা ছিলো, এটার মূল উদ্দেশ্য, ডিসিপিজের একজন ক্রিপ্টোগ্রাফার জড়িত করানো, যাতে সোফি এই ঘটনায় জড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে, সে বুঝেছিলো, সংখ্যাগুলোর বাকি লাইনগুলোর মর্মোদ্ধার করার একটা কু-ও বটে—এলোমেলো একটা সংখ্যাক্রম…একটা সংখ্যার এনাগ্রাম। এখন, পুরোপুরি বিস্মিত হয়ে, সে দেখছে, সংখ্যাগুলোর গুরুত্ব আসলে অনেক বেশি। সেগুলো তার দাদুর রহস্যময় সেফ ডিপোজিট বক্স খোলার চাবিকাঠি। তিনি ছিলেন একজন দ্ব্যর্থবোধক বিষয়ের ওস্তাদ, ল্যাংডনের দিকে ফিরে সোফি বললো। একাধিক অর্থ আছে এমন কোনকিছুকে তিনি খুবই পছন্দ করতেন। কোডের ভেতরে কোড।

    ল্যাংডন ইতিমধ্যে ইলেক্ট্রনিক পোডিয়ামের দিকে এগিয়ে গেলে সোফি কম্পিউটার প্রিন্ট-আউটটা হাতে নিয়ে তাকে অনুসরণ করলো।

    এটিএম ব্যাংকের মতোই পোডিয়ামটার একটা কি-প্যাড রয়েছে। পর্দায় ব্যাংকের অফিশিয়াল লোগে আর একটা ক্রুশ ভেসে এলো। কি-প্যাডটার পাশেই একটা ত্রিভূজাকৃতির ছিদ্র আছে। সোফি আর দেরি না করে সেই ছিদ্রের ভেতরে তার চাবিটা ঢুকিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে পর্দাটা বদলে গেলো।

    একাউন্ট নাম্বার :

    কারসরটা চম্‌কাতে লাগলো। অপেক্ষা করছে।

    দশ সংখ্যা। সোফি কাগজটা থেকে সংখ্যাগুলো পড়লো আর ল্যাংডন সেগুলো টাইপ করে নিলো।

    একাউন্ট নাম্বার :
    ১৩-৩-২-২-১-১-৮-৫

    শেষ সংখ্যাটা লেখা হওয়ার সাথে সাথে পর্দাটা আবার বদলে গেলো। কয়েকটা ভাষায় একটা বার্তা ভেসে এলো, সবার ওপরে ইংরেজি।

    সাবধান :
    Enter বাটনে চাপ দেবার আগে দয়া করে
    আপনি আপনার একাউন্ট নাম্বারটা ঠিক আছে কিনা
    সেটা চেক করে দেখুন।
    আপনার নিরাপত্তার জন্যই, যদি কম্পিউটার
    আপনার একাউন্ট নাম্বার চিনতে না পারে,
    তবে এই সিস্টেমটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে।

    ফঙ্কশন তারমিনার, চিন্তিত হয়ে সোফি বললো। মনে হচ্ছে একবারই চেষ্টা করা যাবে। স্টান্ডার্ড এটিএম মেশিন ব্যবহারকারীদেরকে তিন বার পিন নাম্বার টাইপ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এটা অবশ্য সেরকম সাধারণ কোন ক্যাশ মেশিন নয়।

    সংখ্যাগুলো মনে হচ্ছে ঠিকই আছে, ল্যাংডন নিশ্চিত করে বললো। কাগজের লেখার সাথে টাইপ করা লেখাটা মিলিয়ে দেখলো। Enter বোতামটার দিকে এগোলো। দিলাম চেপে।

    সোফি তার তর্জনীটা কি প্যাডের কাছাকাছি এনেও দ্বিধান্বিত হলো। তার মনে অদ্ভুত এক ভাবনা খেলে গেলো।

    দাও, ল্যাংডন বললো। ভার্নেট খুব জলদিই ফিরে আসবে।

    না। সে তার হাতটা সরিয়ে নিলো। এটা সঠিক একাউন্ট নাম্বার না।

    অবশ্যই এটা! দশ সংখ্যার। তাহলে অন্য কোনটা?

    এটা খুব বেশি এলোমেলো।

    খুব বেশি এলোমেলো? ল্যাংডন খুব বেশি দ্বিমত পোষণ করতে পারলো না।

    প্রতিটি ব্যাংকই তার কাস্টমারদেরকে পিন নাম্বার হিসেবে এলোমেলো সংখ্যা বেছে নেবার জন্য উপদেশ দিয়ে থাকে, যাতে অন্য কেউ সেটা অনুমান করতে না পারে। নিশ্চিতভাবেই, এখানেও গ্রাহকদেরকে এলোমেলো সংখ্যাই বেছে নিতে বলা হয়।

    সোফি যা টাইপ করেছিলো, তার সবটাই মুছে ফেললো। সে ল্যাংডনের দিকে তাকালো। তার তাকানোর মধ্যে আত্মবিশ্বাসী একটা ভাব ছিলো। এই সংখ্যাগুলো ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রম অনুযায়ী সাজানো হলেই মনে হয় নাম্বারটা সঠিক হবে।

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো, তার কথায় যুক্তি আছে। প্রথম দিকে সোফি এই একাউন্ট নাম্বারটা চিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রম অনুযায়ীই সাজিয়েছিলো। এটা করা এমন কি আর অদ্ভুত ব্যাপার?

    সোফি আবারো কি-প্যাডে হাত রাখলো। এবার ভিন্ন একটা নাম্বার টাইপ করলো, স্মৃতি থেকেই। আরেকটা কথা, আমার দাদুর প্রতীক এবং কোডের প্রতি দুর্বলতার জন্য মনে হয়, তিনি এমন সংখ্যাক্রমই বেছে নেবেন, যা খুব সহজেই মনে রাখতে পারেন। সে টাইপ করে এন্টার কি-তে চাপ দিয়ে একটা নরম হাসি দিলো। এমন কিছু, যা দেখতে এলোমেলো মনে হলেও, আসলে তা নয়।

    ল্যাংডন পর্দার দিকে তাকালো।

    একাউন্ট নাম্বার :
    ১১২৫৮১৩২১

    কয়েক মুহূর্ত ভেবে ল্যাংডন বুঝতে পারলো সোফি ঠিকই করছে।

    ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রম।

    ১-১-২-৩-৫-৮-১৩-২১

    যখন ফিবোনাচ্চি সংখ্যাগুলো দশটি সংখ্যায় আলাদা আলাদা করে মিলিয়ে ফেলা হয়, তখন সেটা দৃশ্যত চেনাই যায় না। সহজেই স্মরণ করা যায়, তারপরও মনে হয়, এলোমেলো। দশসংখ্যার একটা অসাধারণ কোড, যা কখনও সনিয়ে ভুলতেন না।

    সোফি এন্টার কি-তে চাপ দিয়ে দিলো।

    কিছুই হলো না।

    এমন কিছু হলো না, যাতে তারা কিছু বুঝতে পারে।

     

    ঠিক সেই সময়েই, তাদের নিচে, ব্যাংকের ভূ-গর্ভস্থ ভল্টে, একটা রোবটিক হাত জীবন্ত হয়ে উঠলো। হাতটা নির্দিষ্ট জিনিস খুঁজছে। সিমেন্টের ফ্লোরের নিচে, শত শত পরিচিতিমূলক প্লাস্টিকের বাক্স সারি করে সাজানো আছে…অনেকটা ছোট ছোট কফিন যেনো মাটির নিচে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

    রোবোটিক হাতটা সঠিক বাক্সটা খুঁজে পেয়ে, বাক্সের গায়ে লেখা কোডটা সেই হাতের সাথে লাগোয়া একটা ইলেক্টক চোখ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলো, নাম্বারটা ঠিক আছে কি না। তারপর কম্পিউটারের নির্দেশে হাতটা একটা বাক্সকে ধরে উপরের দিকে সোজা তুলতে শুরু করলো।

    ধীরে ধীরে মাটি থেকে বাক্সটা উপরে উঠে আসতে লাগলো…

    উপরের তলায় সোফি আর ল্যাংডন কনভেয়ার বেল্টটা নড়তে দেখে হাপ ছেড়ে বাঁচলো। বেল্টটার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মনে হলো, অনেক পথ ভ্রমণ করে অবশেষে যে লাগেজের জন্য তারা অপেক্ষা করছে, সেই রহস্যময় লাগেজটাতে কী আছে, সেটা তারা জানে না। কনভেয়ার বেল্টটার স্লাইডিং ডোরটা খুলে যেতেই, একটা প্লাস্টিকের বাক্স আর্বিভূত হলো। সেটা বেল্টের নিচ থেকে উঠে এসেছে। বাক্সটা কালো। খুব ভারি প্লাস্টিকে মোড়ানো, আর সেটা সোফি যে রকম বাক্সের কথা ভেবেছিলো, সেই রকমই। তাতে কোন ছিদ্র নেই।

    বক্সটা সরাসরি তাদের সামনে এসে থামলো।

    ল্যাংডন আর সোফি রহস্যময় কন্টেইনারের দিকে তাকিয়ে, সেখানেই নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো।

    এই ব্যাংকের সবকিছুর মতোই বাক্সটাও লোহার কয়ড়া বিশিষ্ট। এর উপরে একটা বারকোড-এর স্টিকার লাগানো আছে। সেটার একটা হাতলও রয়েছে। সোফি ভাবলো, এটা দেখতে অনেকটা বিশাল যন্ত্রপাতি রাখার বাক্সের মতো।

    কোন সময় নষ্ট না করেই সোফি কয়ড়াটা খুলে ফেললো। তারপর, ল্যাংডনের দিকে তাকালো সে। দুজন এক সাথে ভারি ঢাকনাটা খুলে ফেললো।

    বাক্সটার ভেতরে তাকালো তারা।

    প্রথমে সোফি ভেবেছিলো, বাক্সটা খালি। তারপরই সে কিছু একটা দেখতে পেলো। বাক্সটার ঠিক মাঝখানে, একটা জিনিস রাখা আছে।

    পালিশ করা একটা কাঠের বাক্স, জুতার বাক্সের আকারের। তাতে নক্সা করা রয়েছে। কাঠটা খুবই সুন্দর গভীর বেগুনী রঙের, দানাদার যুক্ত। রোজউড। সোফি বুঝতে পারলো। তার দাদুর প্রিয় জিনিস। ঢাকনাটাতে খুবই সুন্দর করে একটা গোলাপ আঁকা। তারা একে অন্যের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালো। সোফি ঝুঁকে বাক্সটা তুলে নিলো।

    হায় ঈশ্বর, অনেক ভারি!

    সে ওটা তুলে পাশের টেবিলটার উপর রাখলো। ল্যাংডন তার পাশে এসে দাঁড়ালো, তাদের দুজনেই সোফির দাদার সেই সেই ছোট্ট জিনিসটার দিকে তাকিয়ে রইলো। এটা ওদের দখলে নেবার জন্যই দাদু তাকে মেসেজ দিয়েছিলেন।

    ল্যাংডন ঢাকনাটার দিকে বিস্ময়ে চেয়ে রইলো। বিশেষ করে নক্সাটার দিকে পঁচটা পাপড়ির গোলাপ। সে এ ধরনের গোলাপ অনেকবার দেখেছে। পাঁচ পাপড়ির গোলাপ হলো, সে ফিসফিস করে সোফিকে বললো, প্রায়োরিদের হলি গ্রেইলের প্রতীক।

    সোফি তার দিকে ঘুরে তাকালো। ল্যাংডন বুঝতে পারলো সে কী ভাবছে। সেও একই রকম কথা ভাবছিলো। এই বাক্সটার ডাইমেনশন, এটার ওজন, এবং প্রায়োরিদের হলি গ্রেইল-এর প্রতীক, সবটাই একটি জিনিসকেই বোধগম্য করে তুলে। এই কাঠের বাক্সটার ভেতরে যিশুখৃস্টের পেয়ালা আছে। ল্যাংডন আবারো নিজেকে সুধালো, এটা অসম্ভব।

    আকারটা যথার্থই, সোফি ফিস্ ফিস্ করে বললো, একটা পেয়ালাকে…ধারণ করার জন্য।

    এটা পেয়ালা হতেই পারে না।

    সোফি বাক্সটা খুলে ফেললো। ওটা খুলতেই অপ্রত্যাশিতভাবে, অদ্ভুত গরুগরু শব্দ বের হতে লাগলো। ল্যাংডন সঙ্গে সঙ্গে ভাবলো, এর ভেতরে তরল পদার্থ আছে?

    সোফিকেও খুব বিভ্রান্ত দেখালো। তুমি কি শুনতে পেয়েছো…?

    ল্যাংডন মাথা নাড়লো। তরল।

    একটু সামনে এগিয়ে, সোফি ঢাকনাটা পুরোপুরি খুলে ফেললো। ভেতরের জিনিসটা এমন কিছু, যা ল্যাংডন চিন্তাও করতে পারেনি। একটা জিনিস তারা দুজনে খুব দ্রুতই বুঝতে পারলো যে, নিশ্চিতভাবেই এটা যিশু খৃস্টের পেয়ালা নয়।

     

    ৪৫.

    পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে, ওয়েন্টিং রুমের দিকে যেতে যেতে আদ্রেঁ ভার্নেট বললেন। আপনাদেরকে বের করে দেয়াটা খুব কঠিন কাজ হবে। দরজাটা বন্ধ করতেই ভার্নেট দেখতে পেলেন বিশাল পাস্টিকের বাক্সটা কনভেয়ার বেল্টের উপরে রাখা। হায় ঈশ্বর! তারা সনিয়ের একাউন্টটা খুলে ফেলেছে?

    সোফি আর ল্যাংডন টেবিলের কাছেই ছিলো, তাদের হাতে ধরা ছিলো একটা কাঠের বাক্স, দেখতে অনেকটা গহনার বাক্সের মতোই। সোফি সাথে সাথেই ঢাকনাটা বন্ধ করে দিয়ে তার দিকে তাকালো। শেষ পর্যন্ত আমরা একাউন্ট নাম্বারটা পেয়েছি, সে বললো।

    ভার্নেট বাকরুদ্ধ। এখন তো সবকিছুই বদলে গেলো। তিনি সশ্রদ্ধ দৃষ্টিতে বাক্সটার দিকে তাকালেন, চেষ্টা করলেন পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবেন সেটা বের করতে। তাদেরকে আমার ব্যাংক থেকে বের করতেই হবে! কিন্তু পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়াতে এখন একটি মাত্র পথই খোলা আছে। মাদামোয়াজেল নে আমি যদি আপনাদেরকে ব্যাংক থেকে নিরাপদে বের করে দিতে পারি, তাহলে আপনারা কি এই জিনিসটা নিজেদের সাথেই নেবেন নাকি ব্যাংকের ভল্টে রেখে যাবেন?

    সোফি ল্যাংডনের দিকে চেয়ে তারপর ভার্নেটের দিকে তাকালো। আমাদের এটা সঙ্গে নিতে হবে।

    ভার্নেট মাথা নেড়ে সায় দিলেন। খুব ভালো। তাহলে, জিনিসটা যাইহোক, আমি আপনাদেরকে বলবো, এটা আপনার জ্যাকেটে মুড়িয়ে নিন, হলওয়ে দিয়ে যাবার সময় আমি চাইবো কেউ যাতে এটা দেখে না।

    ল্যাংডন সেটা জ্যাকেটের তলায় নিতেই ভার্নেট তড়িঘড়ি করে কনভেয়ার বেল্টের দিকে গেলো। খালি বাক্সটা বন্ধ করে কি-প্যাডে কী যেনো টাইপ করলো। কনভেয়ার বেল্টটা আবার নড়তে শুরু করলো, নিজের জায়গায় চলে গেলো পাস্টিকের বাক্সটা। পোডিয়াম থেকে সোনার চাবিটা খুলে সোফির হাতে দিয়ে দিলেন তিনি।

    এই দিকে প্লিজ। তাড়াতাড়ি।

    তারা এগোতেই টের পেলো নিচে পুলিশ এসে জড়ো হয়েছে। পুলিশের গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখা যাচ্ছে। ভার্নেট চিন্তিত হয়ে পড়লেন। সম্ভবত, তারা পুরো ভবনটা ঘিরে ফেলেছে। আমি কি সত্যি এটা খুলে ফেলবো? ভার্নেট এখন ঘামছেন।

    ভার্নেট ব্যাংকের ছোট্ট একটা পরিবহন ট্রাকের দিকে এগোলেন। ট্রান্সপোর্ট সুর হলো জুরিখের ডিপোজিটরি ব্যাংকের আরো একটি সার্ভিস। কার্গোটাতে উঠে পড়ন, পেছনের বিশাল স্টিলের দরজাটা খুলে দিয়ে বললেন, আমি আসছি।

    সোফি আর ল্যাংডন কার্গোর ভেতরে উঠতেই, ভার্নেট ড্রাইভারের অফিসের দিকে চলে গেলেন। ভেতরে ঢুকেই তিনি চাবিটা নিয়ে ড্রাইভারের একটা পোশাক আর টুপি নিয়ে নিলেন। ড্রাইভারের পোশাকটা পরার পর তার কোট, টাই সব ঢাকা পড়ে গেলো। তিনি একটা শোল্ডার হোলস্টারও পরে নিলেন, জামাটার ভেতরে। বের হবার সময় ড্রাইভারের একটা পিস্তল সাথে করে নিয়ে নিলেন। সেটা হোলস্টারের ভরে পোশাকটার বোম লাগিয়ে নিলেন। গাড়িটার কাছে ফিরে এসেই ভার্নেট টুপিটা আরো নামিয়ে দিলেন। সোফি আর ল্যাংডনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তারা কার্গোর ভেতরে রাখা স্টিলের বাক্সের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।

    আপনারা কি এটা চান, ডানেট বলেই ভেতরে ঢুকে একটা সুইচ টিপলেন, আর সাথে সাথে ভেতরে একটা বা জ্বলে গেলো। আপনারা বসে পড়ন। গেট দিয়ে বের হবার সময় কোন শব্দ করবেন না।

    সোফি আর ল্যাংডন লোহার ফ্লোরে বসে পড়লো। ল্যাংডন তার জ্যাকেটের ভেতর থেকে বাক্সটা বের করে কোলের ওপর রাখলো। বিশাল দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো। ভার্নেট তাদেরকে ভেতরে তালা মেরে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ির ইঞ্জিনটা চালু করে দিলেন।

    ট্রাকটা পার্কিং লাইন থেকে বের হয়ে বাইরের দিকে এগোতেই ভার্নেট ঘেমে উঠলেন। তার এইমাত্র পরা টুপিটার নিচেও ঘাম জমে গেছে। তিনি দেখতে পেলেন বাইরে তাঁর ধারণার চেয়েও বেশি পুলিশের গাড়ি পার্কিং লট থেকে বের হতেই দরজাটা আপনা আপনিই খুলে গেলো। ভার্নেট গেট থেকে বের হয়ে একটু থামলেন, পেছনের দরজাটা বন্ধ হবার জন্য অপেক্ষা করলেন। তারপর, তার সামনের গেটটাও খুলে গেলে গাড়িটা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন।

    ভার্নেট গাড়িটা নিয়ে সামনের দিকে এগোলেন।

    রাস্তার ব্যারিকেডের সামনে থাকা একজন পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে তার গাড়িটা হাত দিয়ে থামাতে নির্দেশ দিলো। সামনে চারটা প্যাট্রল গাড়ি ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছে।

    ভার্নেট গাড়িটা থামালেন। ড্রাইভারের টুপিটা টেনে আরেকটু নিচে নামিয়ে নিলেন। দরজাটা খুলে পুলিশের দিকে তাকালেন। লোকটার চেহারা অনমনীয় আর পাণ্ডুর।

    কুয়েস্ত সি কুই সে পাস? ভার্নেট জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর কণ্ঠ খুব রুক্ষ্ম।

    জো সুই জোরো কোলেত, লোকটা বললো। লেফতেনান্ত পুলিশ জুডিশিয়ার। সে কার্গোর দরজার দিকে এগোলো, কুয়েস্ত-সি কুইল আ লো দেদান?

    আমি কী করে জানবো, ভার্নেট কর্কশ ফরাসিতে জবাব দিলেন। আমি কেবলমাত্র একজন ড্রাইভার।

    কোলেতকে দেখে মনে হলো জবাবটা শুনে সে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আমরা দুজন অপরাধীকে খুঁজছি।

    ভার্নেট হাসলেন। তাহলেতো আপনি সঠিক জায়গায়ই এসেছেন। আমি যেসব লোকের টাকা বহন করি, সেই সব বানচোতদের অনেকেই অপরাধী।

    লোকটা রবার্ট ল্যাংডনের একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি বের করে দেখালো। আজ রাতে এই লোকটা কি আপনাদের ব্যাংকে এসেছিলো?

    ভার্নেট কাঁধ ঝাঁকালো। আমি হলাম আদার ব্যাপারি, জাহাজের খবর রাখি না। তারা আমাকে গ্রাহকদের কাছে ঘেষতে দেয় না। আপনি ভেতরে যান, ফ্রন্ট ডেস্কে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।

    আপনার ব্যাংক ভেতরে ঢোকার আগে আমাদের কাছে সার্চ-ওয়ারেন্ট দাবি করছে।

    ভার্নেট মুখে একটা তিক্তভাব আনলেন। প্রশাসকরা। আমাকে বলে লাভ নেই।

    আপনার ট্রাকের দরজাটা খুলুন, প্লিজ। কোলেত কার্গোর দরজার দিকে ইঙ্গিত করলো।

    ভার্নেট কোলেতের দিকে তাকিয়ে জোর করে একটা বিশ্রী হাসি হাসলেন। দরজা খুলবো? আপনার ধারণা, আমার কাছে চাবি আছে? আপনার কি মনে হয়, তারা আমাদেরকে বিশ্বাস করে? আপনি আমার বেতনের খাতাটা দেখতে পারেন।

    কোলেতের মাথাটা একদিকে হেলে গেলো, সন্দেহের চিহ্ন এটা। আপনি বলছেন আপনার নিজের ট্রাকের চাবি আপনার কাছে নেই?

    ভার্নেট মাথা ঝাঁকালেন। এইসব গাড়ির দরজা লোডিং-ডকের ড্রাইভার কর্তৃক সিল মারা হয়। তারপর, অন্য কেউ চাবিটা নিয়ে যায় গন্তব্যে। গ্রাহকের কাছে চাবিটা পৌঁছানোর পর, তারা আমাদেরকে ফোন করে জানালে, আমরা গাড়িটা চালিয়ে ওখানে নিয়ে যাই। তার এক সেকেন্ড আগেও না। আমি কী বহন করছি সে সম্পর্কে কখনই কিছু জানতে পারি না।

    এই ট্রাকটা কথন বন্ধ করা হয়েছে?

    এক ঘণ্টা আগেতো হবেই। আমি যাচ্ছি সেন্ট থুরিয়ালে। চাবিটা ইতিমধ্যেই ওখানে পৌঁছে গেছে।

    এজেন্ট লোকটা কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না, তার চোখ ভার্নেকে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখছে, তাঁর ভাবনা-চিন্তা ধরার চেষ্টা করছে।

    কপাল বেয়ে ঘামের ফোটা ভার্নেটের নাক দিয়ে পড়তে যাচ্ছিলো। যদি কিছু মনে না করেন? হাতে কাপড় দিয়ে নাকের ঘাম মুছে তিনি বললেন, পুলিশের ব্যারিকেডের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আমি খুবই টাইট শিডিউলে আছি।

    আপনাদের সব ড্রাইভারই কি রোলেক্স ঘড়ি ব্যবহার করে থাকে? এজেন্ট জিজ্ঞেস করলো, ভার্নেটের হাতের দিকে ইঙ্গিত করলো সে।

    ভার্নেট তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন তাঁর অত্যন্ত মূল্যবান ঘড়িটা, জ্যাকেটের হাতা থেকে বের হয়ে গেছে। মার্দে। এই শালার জিনিসটা? সেন্ট জার্মেইন দে প্রেস-এর এক তাইওয়ানি ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের কাছ থেকে বিশ ইউরো দিয়ে কিনেছিলাম। আমি এটা আপনার কাছে চল্লিশ ইউরোতে বেঁচতে পারি।

    এজেন্ট একটু থেমে, শেষে সরে দাঁড়ালো। ধন্যবাদ, লাগবে না। আপনার ভ্রমণ নিরাপদ হোক।

    ট্রাকটা রাস্তায় নেমে পঞ্চাশ মিটার পর্যন্ত যাওয়ার আগে ভার্নেট নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এখন তার আরেকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁর কার্গো। কোথায় আমি তাদেরকে নিয়ে যাবো?

     

    ৪৬.

    সাইলাস তার ঘরে ক্যানভাস ম্যাটের ওপরে উপুড় হয়ে শুয়ে পিঠের ক্ষতটা বাতাসে শুকাতে দিলো। আজ রাতের দ্বিতীয় দফা আচারের ফলে তার শরীর আড়ষ্ট আর দুর্বল হয়ে গেছে। তারপরেও সে সিলিস বেল্টটা খোলেনি। টের পেলো, তার ঊরু চুইয়ে রক্ত ঝড়ছে। তারপরেও সেটা বলে ফেলার কোন কারণ দেখতে পেলো না।

    আমি চার্চকে ব্যর্থ করে দিয়েছি। তার চেয়েও বেশি খারাপ ব্যাপার হলো, আমি বিশপকে ব্যর্থ করে দিয়েছি।

    আজ রাতটা হতে পারতো বিশপ আরিঙ্গারোসার মোক্ষ লাভের রাত। পাঁচ মাস আগে, বিশপ আরিঙ্গাবোসা ভ্যাটিকানের অবজারভেটরি থেকে ফিরে এসেছিলেন, সেখানে তিনি এমন কিছু জেনে এসেছিলেন, যা তাঁকে গভীরভাবে বদলে দিয়েছিলো। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিষণ্ণ থেকে আরিঙ্গাবোসা খবরটা সাইলাসকে বলেছিলেন।

    কিন্তু এটা অসম্ভব। সাইলাস চিৎকার করে বলেছিলো। আমি এটা মেনে নিতে পারছি না!

    এটা সত্যি, আরিঙ্গাবোসা বলেছিলেন। অচিন্তনীয়, কিন্তু সত্য। মাত্র ছয় মাসে।

    বিশপের কথাটা সাইলাসকে আতংকিত করে ফেলেছিলো। তিনি পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করলেন, এমনকি সেইসব ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনেও ঈশ্বর এবং দ্য ওয়ের প্রতি তাঁর আস্থা একটুও টলতে পারেনি। মাত্র একমাস পরেই, অলৌকিকভাবেই, মেঘগুলো কাটতে শুরু করে আলোর সম্ভাবনা উঁকি মারলো।

    স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ, আরিজারোসা এটাকে এ নামেই ডাকলেন।

    মনে হলো এই প্রথম, বিশপ খুব আশাবাদী হলেন। সাইলাস, তিনি নিচু স্বরে বললেন, ঈশ্বর দ্য ওয়েকে রক্ষা করার জন্য আমাদের উপর একটা সুযোগ বর্ষণ করেছে। অন্যান্য যুদ্ধের মতোই, আমাদের যুদ্ধেও আত্মত্যাগের দরকার রয়েছে। তুমি কি ঈশ্বরের সৈনিক হবে?

    সাইলাস, যে লোকটা তাকে নতুন জীবন দিয়েছে, সেই বিশপের সামনে হাটু গেঁড়ে বসে পড়েছিলো। সে বলেছিলো, আমি ঈশ্বরের একটি মেষ শাবক। আপনার হৃদয় যা বলে, তা দিয়ে আমাকে চড়িয়ে বেড়ান।

    যখন আরিঙ্গারোসা তাঁর সামনে যে সুযোগটা উপস্থিত হয়েছে, সেটা খুলে বললেন, সাইলাসের স্থির বিশ্বাস জন্মালো, এটা ঈশ্বরের নিজ হাতেরই কাজ। অলৌকিক ভাগ্য! আরিঙ্গাবোসা সাইলাসকে সেই লোকের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন, যে এই পরিকল্পনাটার প্রস্তাব করেছে লোকটা নিজেকে একজন টিচার হিসেবে পরিচয় দিলো। যদিও টিচার আর সাইলাস কখনও মুখখামুখি হয়নি। সব সময়ই তারা ফোনে কথা বলতো। সাইলাস টিচারের প্রগাঢ় ধর্ম বিশ্বাস এবং ক্ষমতার উপর আস্থাশীল হলো। মনে হলো, টিচার এমন একজন ব্যক্তি যিনি, সব জানেন, সবখানেই তার চোখ আর কান পাতা আছে। কীভাবে টিচার তথ্য যোগাড় করেন, সে সম্পর্কে সাইলাস কিছুই জানতো না। আরিঙ্গারোসা টিচারের উপর প্রচণ্ড আস্থাশীল ছিলেন এবং সাইলাসকে বলেছিলেন, তাঁর মতোই আস্থাশীল হতে। টিচার তোমাকে যা আদেশ করেন তা-ই কোরো। বিশপ সাইলাসকে বলেছিলেন, এতে করেই আমরা জয়ী হবো।

    বিজয়ী! সাইলাস এখন খালি ফ্লোরটার দিকে চেয়ে আতংকিত হলো যে, জয় বোধহব সূদুরপরাহত। টিচারের সাথে চালাকি করা হয়েছে। কি-স্টোন একটা কানা গলি। আর ছল-চাতুরীর ফলে তাদের সব আশা উবে গেছে।

    সাইলাস বিশপকে ফোন করতে চাইছিলো তাকে সর্তক করার জন্য, কিন্তু টিচার আজ রাতে সব রকম যোগাযোগের লাইনই গুটিয়ে ফেলেছেন। আমাদের নিরাপত্তার জন্যই।

    শেষে সাইলাস হামাগুড়ি দিয়ে দড়িটা খুঁজে পেলো। সেটা মাটিতেই পড়েছিলো। সে তার পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে আনলো। লজ্জায় মাথা নত করে সে ডায়াল করলো।

    টিচার, সে ফিস ফিস করে বললো, সব শেষ হয়ে গেছে। সাইলাস তাঁকে সত্য-সত্যই বললো, কীভাবে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।

    তুমি তোমার বিশ্বাস খুব দ্রুতই হারাচ্ছো, টিচার জবাব দিলেন। আমি এইমাত্র সংবাদটা পেয়েছি। খুবই অপ্রত্যাশিত এবং ভালো। সিক্রেটটা এখনও বেঁচে আছে। জ্যাক সনিয়ে মারা যাবার আগে সেটা হস্তান্তর করে গেছেন। আমি তোমাকে শীঘ্রই ফোন করবো। আজ রাতে, আমাদের কাজটা এখনও সমাপ্ত হয়নি।

     

    ৪৭.

    মৃদু আলোর বদ্ধ কার্গোর ভেতরটা যেনো অনেকটা ভ্রাম্যমান জেলখানা। ল্যাংডনের অতি পরিচিত আবদ্ধ জায়গার অস্বস্তিটা ভর করলো এখানে। ভার্নেট বলেছিলেন, তিনি আমাদেরকে শহরের বাইরে নিরাপদ কোথাও নিয়ে যাবেন। কোথায়? কতো দূরে?

    হাটু মুড়ে লোহার ফ্লোরে বসে থাকার দরুণ, ল্যাংডনের পা দুটো আড়ষ্ট হয়ে গেলো। সে একটু নড়ে চড়ে বসলো, টের পেলো তার শীরের নিমাংশ থেকে রক্ত ঝড়ছে। দুহাতে, এখনও সে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া অদ্ভুত গুপ্তধনটা ধরে রেখেছে।

    আমার মনে হচ্ছে, আমরা এখন হাইওয়েতে আছি, সোফি নিচু স্বরে বললো।

    ল্যাংডনেরও তা-ই মনে হচ্ছিলো। ট্রাকটা যখন ব্যাংকের সামনে একটু থেমেছিলো, সেই মুহূর্তটা ছিলো স্নায়ু বিধ্বংসী। তারপর থেকে সেটা ছুটছে তো ছুটছেই। মিনিট দুয়েক পরপর, হয় ডানে কিংবা বায়ে মোড় নিচ্ছে। আর এখন মনে হচ্ছে, সবোর্ড গতিতে আছে। তাদের নিচে বুলেটপ্রুফ টায়ারটা শশা শো করছে। তার হাতে ধরা রোজউড বক্সটার দিকে সব মনোযোগ তাদের। ল্যাংডন জিনিসটা ফ্লোরে নামিয়ে রাখতেই সোফি তার পাশে এসে বসলো। ল্যাংডনের হঠাৎ করেই মনে হলো, তারা দুজন বাচ্চা ছেলে-মেয়ে, ক্রিসমাসের উপহার ভোলার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছে।

    রোজউড বাক্সটার গায়ের রঙের সাথে বৈচিত্র রেখে খোঁদাই করা গোলাপটা ছাই রঙের, যা মৃদু আলোতেও দেখা যাচ্ছে। গোলাপ। সমগ্র সেনাবাহিনী আর ধর্মমতগুলো এই প্রতীকটার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যেমনটি হয়েছে গুপ্ত সোসাইটির ক্ষেত্রে। দ্য রোসিশিয়ান্স। দ্য নাইটস্ অব দি রোজি ক্রুশ।

    থামলে কেন, সোফি বললো। খোলো।

    ল্যাংডন গভীর একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো। ঢাকনাটার ওপর হাত রেখে আরেকবার চোরা চোখে সে কাঠের নক্সা করা কাজটার দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর সেটা খুলে ফেলে ভেতরের জিনিসটা উন্মোচিত করলো।

    এটার ভেতরে কী আছে, এই নিয়ে ল্যাংডন একাধিক ফ্যান্টাসিতে আক্রান্ত হয়েছিলো। কিন্তু পরিষ্কারভাবেই তার সবগুলো ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। ভেতরে সিল্ক কাপড়ে পেঁচানো একটা কিছু আছে, যা সে কল্পনাও করেনি।

    সাদা পালিশ করা মার্বেলের কারুকাজ খচিত। পাথরের চোঙা জাতীয় একটা জিনিস। এর ব্যস হবে, আনুমানিক একটা টেনিস বলের সমান। একাধিক অংশ জোড়া লাগানো একটা চোঙা, অভিন্ন পাথরে তৈরি নয় সেটা। চোঙাটা অনেকগুলো অংশ জোড়া লাগিয়ে বানানো হয়েছে। পাঁচটা পুরু মার্বেলের চাকতি, একটার সাথে আরেকটা লাগিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেকটা একাধিক চাকা বিশিষ্ট একটা কেলিডোস্কোপের মতো। চোঙাটার দুমাথাই ক্যাপ দিয়ে আঁটকানো, সেগুলোও মার্বেলের, তাই ভেতরটা দেখা একেবারেই অসম্ভব। ভেতরে তরল জাতীয় কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে। তাই ল্যাংডন বুঝতে পারলো, ভেতরটা ফাঁপা।

    এই রহস্যময় আকৃতির চোঙাটার গায়ে খোঁদাই করা একটা নক্সার দিকে ল্যাংডনের মনোেযোগ আকর্ষিত হলো। পাঁচটা চাকতির প্রতিটাই খুব যত্ম করে বিভিন্ন অক্ষরের সারি খোঁদাই করা আছে ইংরেজির পুরো বর্ণমালা। চোঙার অক্ষরগুলো ল্যাংডনের ছেলেবেলার একটা খেলনার কথা মনে করিয়ে দিলো।

    অদ্ভুত, তাই না? সোফি নিচু স্বরে বললো।

    ল্যাংডন তার দিকে তাকালো। আমি জানি না, এটা কি জিনিস?

    সোফির চোখে একটা দ্যুতি দেখা গেলো। আমার দাদু এ ধরনের কারুকাজ করতেন, এটা তার শখ ছিলো। এগুলো লিওনার্দো দা ভিঞ্চির উদ্ভাবন।

    এই স্বল্প আলোতেও সোফি ল্যাংডনের অবাক হওয়াটা দেখতে পেলো।

    দা ভিঞ্চি? সে বিড়বিড় করে বললো। জিনিসটার দিকে আবারো তাকালো।

    হ্যাঁ। এটাকে ক্রিপটেক্স বলে। আমার দাদুর মতে, এটার নক্সাটা দা ভিঞ্চির গোপন ডায়রি থেকে নেয়া হয়েছে।

    এটা কিসের জন্য?

    আজকের রাতের ঘটনাগুলো বিবেচনা করলে, সোফি জানতো, উত্তরটা খুবই মজার হবে। এটা একটা ভল্ট, সে বললো। গোপন তথ্য রাখার।

    ল্যাংডনের চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো।

    সোফি ব্যাখ্যা করে বোঝালো যে, দা ভিঞ্চির মডেলগুলো তৈরি করাটা তার দাদুর প্রিয় একটা শখ ছিলো। তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান কর্মকার, যিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠ আর লোহা-লক্কর নিয়ে সময় কাটাতেন। জ্যাক সনিয়ে দক্ষ কর্মকারদেরকে অনুকরণ করতেনফাবার্জ, এসোর্টেড ক্লোইজোন আর্টিজানদের। কিন্তু খুব বেশি অনুকরণ করতেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে। এমন কি দা ভিঞ্চির জার্নালাগুলোতে এক ঝলক দৃষ্টি বুলিয়ে নিলেও, এটা প্রতীয়মান হবে যে, কেন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে তিনি বিখ্যাত ছিলেন, যেমনটা তিনি ছিলেন তাঁর অসাধারণত্বের জন্যও। দা ভিঞ্চি শত শত নক্সা এঁকে ছিলেন এমনসব জিনিসের, যা তিনি কখনওই নির্মাণ করেননি। জ্যাক সনিয়ের সময় কাটানোর মধ্যে অন্যতম ছিলো দা ভিঞ্চির কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিকের স্রোতধারাকে জীবন দেয়া সময় খণ্ডিত করা, পানির পাম্প, ক্রিপটেক্স, এমনকি মধ্য যুগের ফরাসি নাইটদের নিখুঁত মডেল, যা এখন তার অফিসের ডেস্কে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দা ভিঞ্চি ১৪৯৫ সালে নক্সা করেছিলেন, যে সময়টাতে তিনি এনাটমির উপরে কাজগুলো করছিলেন। রোবোট নাইটের ভেতরকার কলকজাগুলো ছিলো নিখুঁত জয়েন্ট। সেটা বসতে আর হাত-পা নাড়তে পারে, সেই সাথে নড়নচড়ন সক্ষম কাধের সাহায্যে মাথাও ঘোরাতে পারে। চোয়ালও ভোলা যায় একদম নিখুঁতভাবে। সোফি সবসময় বিশ্বাস করতো, এই বর্ম-পরিহিত নাইটটা তার দাদুর তৈরি সবচাইতে সুন্দর জিনিস…সেটা অবশ্য রোজউড বাক্সের ক্রিপ্টেক্সটা দেখার আগে।

    তিনি আমাকে এরকম একটা জিনিস তৈরি করে দিয়েছিলেন, যখন আমি ছোট ছিলাম,  সোফি বললো। তবে এরকম নক্সওয়ালা আর বড় কখনও দেখিনি।

    ল্যাংডনের চোখটা বক্সটা থেকে একটুও সরছে না। আমি ক্রিপ্টেক্স সম্পর্কে কখনও কিছু শুনিনি।

    সোফি অবাক হলো না। লিওনার্দোর বেশিরভাগ অ-নির্মীয়মান উদ্ভাবনগুলো কখনই স্টাডি করা হয়নি, অথবা ওগুলোর নামও দেয়া হয়নি। ক্রিপেক্স শব্দটা খুব সম্ভবত, তার দাদুরই দেয়া। তথ্য সুরক্ষার জন্য ক্রিপ্টোলজি আর কোডেক্স শব্দ দুটোর সম্মিলন বলা যায়।

    দা ভিঞ্চি ক্রিপ্টোলজির একজন অগ্রদূত ছিলেন, সোফি সেটা জানতো, যদিও এ ব্যাপারে তাকে খুব কমই কৃতিত্ব দেয়া হয়। সোফির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্ট্রাক্টর যখন তথ্য নিরাপত্তার জন্য কম্পিউটার এনক্রিপশন পদ্ধতি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন আধুনিক ক্রিপ্টোলজিস্ট, যেমন জিমার ম্যান এবং স্নেইয়ারদেরকে প্রশংসা করেছিলেন কিন্তু এটা উল্লেখ করেননি যে, লিওনার্দোই শত শত বছর আগে, সংকেতিক বার্তার মর্মোদ্ধারের প্রথম পাবলিক কির নিয়ম উদ্ভাবন করেছিলেন। সোফির দাদুই সেই লোক যে তাকে এসব বলেছিলেন।

    তাদের ট্রাকটি হাইওয়ে দিয়ে ছুটে যেতেই সোফি ল্যাংডনকে ব্যাখ্যা করলো, দা ভিঞ্চির ক্রিপ্টেক্স-ই বহুদূরে বার্তা পাঠানোর নিরাপত্তা বিষয়ক জটিলতার সমাধান দিয়েছিলো। টেলিফোন অথবা ই-মেইলবিহীন যুগে, কেউ যদি নিজের বার্তাটি সম্পূর্ণ গোপনে এবং নিরাপদে পাঠাতে চাইতো, তখন সেটা কোন কিছুর উপর লেখা ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না। তারপর, একজন বিশ্বস্ত বার্তাবাহকের উপরই তাকে নির্ভর করতে হতো। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, যদি বার্তাবাহক আঁচ করতে পারতো যে, বার্তার মধ্যে কোন মূল্যবান তথ্য আছে, তখন সে উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সেটা চড়া মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতে পারতো।

    ইতিহাসের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি তথ্য-সুরক্ষার নিমিত্তে ক্রিপ্টোলজিক উদ্ভাবন করেছিলেন : জুলিয়াস সিজার এক ধরনের কোড-লেখনীর প্রচলন করেছিলেন, যা সিজার বক্স নামে ডাকা হোততা; স্কটল্যান্ডের রাণী ম্যারি এক ধরনের বিকল্প সংকেত তৈরি করে কারাগার থেকে গুপ্তসংগঠনে সেটা প্রেরণ করেছিলেন; আর প্রতিভাবান আরবীয় বিজ্ঞানী আবু ইউসুফ ইসমাইল আল কিন্দি তার গোপনীয়তা রক্ষা করেছিলেন এক ধরনের ভিন্নধর্মী বর্ণের সাহায্যে সংকেত তৈরির মাধ্যমে।

    দা ভিঞ্চি, প্রকারন্তরে, যান্ত্রিক উপায়ে বার্তার সুরক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেটা হলো ক্রিপ্টেক্স। একটা বহনযোগ্য আধার, যা অক্ষর, মানচিত্র, ডায়াগ্রাম, এবং যা কিছুই হোক না, সেগুলোর সুরক্ষা করে। একবার ক্রিপ্টেক্স-এর ভেতরে কোন তথ্য ঢুকিয়ে সিল করে দিলে, শুধুমাত্র যথার্থ পাসওয়ার্ড জানা লোকের পক্ষেই তা বের করে আনা সম্ভব ছিলো।

    আমাদের একটা পাসওয়াডের দরকার, অক্ষর সংবলিত ডায়ালের দিকে ইঙ্গিত করে সোফি বললো। একটা ক্রিপ্টেক্স কাজ করে অনেকটা বাইসাইকেল কম্বিনেশন লকের মতো। তুমি যদি ডায়ালগুলো ঠিক মতো অবস্থানে আনতে পারো, তবে তালাটা খুলে যাবে। ক্রিপ্টেক্সটার পাঁচটা ডায়াল আছে। ঠিক মতো মেলাতে পারলেই পুরো চোঙাটা খুলে যাবে।

    আর ভেতরে?

    চোঙাটা খুলে গেলে, তুমি একটা ফাঁপা কম্পার্টমেন্ট পাবে, যাতে একটা কাগজ মোড়ানো থাকবে, সেটাতেই তথ্যগুলো লেখা থাকে।

    ল্যাংডনকে দেখে মনে হলো সন্দেহগ্রস্ত। তুমি বলছিলে তোমার দাদু এসব বানিয়েছেন, যখন তুমি ছোট ছিলে?।

    হ্যাঁ, ছোট আকাড়ের একটা। আমার জন্ম দিনে তিনি আমাকে একটা ত্রিপ্টেক্স আর একটা ধাঁধা দিতেন। ধাঁধার উত্তরটাই ছিলো ক্রিপ্টেক্সের পাসওয়ার্ড। আর সেটা করতে পারলে আমি ক্রিপ্টেক্সটা খুলে এর ভেতরে একটা কার্ড পেতাম।

    একটা কার্ডের জন্য খুব বেশি খাটুনি হয়ে গেলো না।

    না, কার্ডে আরো একটা ধাঁধা অথবা কু থাকতো। আমার দাদু সারা বাড়িতে গুপ্তধন রেখে দিতেন। ধাঁধা আর কুর মধ্য দিয়ে আমি আমার সত্যিকারের উপহারটা খুঁজে পেতাম। বলা চলে, পরীক্ষা আর প্রতিযোগীতার ভেতর দিয়ে আমি উপহারগুলো পেতাম। আর পরীক্ষাগুলো মোটেও সহজ ছিলো না।

    ল্যাংডন বস্তুটার দিকে আবারো তাকালো। তাকে এখনও সন্দেহগ্রস্তই মনে হলো। কিন্তু এটা ভেঙে ফেলে কি সম্ভব নয়? অথবা গুড়িয়ে দিয়ে? ধাতুটা মনে হচ্ছে নাজুক, আর মার্বেল হলো নরম পাথর।

    সোফি হাসলো। যেহেতু, দা ভিঞ্চি ছিলেন খুবই স্মার্ট, তাই তিনি এটা এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে ভেঙে ফেললে ভেতরের তথ্যটা ধ্বংস হয়ে যায়। দ্যাখ্যো। সোফি বাক্সটা থেকে চোঙাটা বের করে আনলো। এটার ভেতরে কিছু লিখে ভরতে হলে, প্রথমে সেটা প্যাপিরাসেই লিখতে হবে।

    ভেড়ার চামড়ায় নয়?

    সোফি মাথা ঝাঁকালো। প্যাপিরাস। আমি জানি ভেড়ার চামড়া বেশি দিন টেকে আর সে সময়ে ওগুলো খুব সহজলভ্যও ছিলো, কিন্তু এটা প্যাপিরাসেই হতে হবে। পাতলা হলেই ভালো।

    ঠিক আছে।

    ক্রিপ্টেক্সের ভেতরে প্যাপিরাসটা ঢোকাবার আগে সেটা রোল করে একটা কাঁচের টিউবের ভেতরে ঢোকানো হয়। সে ক্রিপ্টেক্সটা ঝাকিয়ে এর ভেতরের তরল পদার্থটির শব্দ শোনালো। এর ভেতরে তরল পদার্থ আছে।

    জিনিসটা কি?

    সোফি হাসলো। ভিনেগার।

    ল্যাংডন কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করার পর মাথা নেড়ে সায় দিলো। অসাধারণ।

    ভিনেগার আর প্যাপিরাস, সোফি ভাবলো। কেউ যদি জোর করে ক্রিপ্টেক্সটা খুলতে যায়, কাঁচের টিউবটা তবে ভেঙে যাবে, আর ভিনেগার সঙ্গে সঙ্গেই প্যাপিরাসকে ভিজিয়ে দেবে। সুতরাং গোপন বার্তাটা কেউ পড়তে চাইলে, সেটা একটা অর্থহীন মণ্ড ছাড়া আর কিছুই পাবে না।

    দেখতেই পাচ্ছো, সোফি তাকে বললো, এটার মুখটা ঠিকভাবে খুলতে চাইলে পাঁচ অক্ষরবিশিষ্ট একটা পাসওয়ার্ডের দরকার। আর পাঁচটা ডায়ালের প্রতিটাতে রয়েছে ছাব্বিশটি অক্ষর। সে খুব দ্রুত হিসাব করে নিলো। আনুমানিক বারো মিলিয়ন সম্ভাবনা।

    যদি তাই হয়, ল্যাংডন বললো, দেখে মনে হলো তার মাথার ভেতরে বারো মিলিয়ন প্রশ্ন খেলে যাচ্ছে। তবে তোমার কি মনে হয়, এটার ভেতরে কি তথ্য থাকতে পারে?

    সে যা-ই হোক, আমার দাদু নিশ্চিতভাবেই চাইছিলেন সেটা গোপন রাখতে। সে একটু থামলো। ঢাকনাটা বন্ধ করে সেটার উপরে পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট গোলাপটার দিকে তাকালো। কিছু একটা তাকে খুঁচিয়ে যাচ্ছিলো। তুমি কি বলেছিলে যে, গোলাপ হলো গ্রেইলের প্রতীক?

    একদম ঠিক। প্রায়োরিদের কাছে গোলাপ আর গ্রেইল একই জিনিস।

    সোফি তার ভুরু কপালে তুললো। এটা খুব অদ্ভুত, কারণ আমার দাদু সবসময় আমাকে বলতেন যে, গোলাপ মানে গোপনীয়তা। তিনি বাড়িতে থাকার সময় যখন ভেতরে কারো সাথে খুব গোপনীয় কোন ফোন করতেন, এবং চাইতেন না আমি তাকে বিরক্ত করি, তখন তার অফিস ঘরের দরজায় একটা গোলাপের প্রতীক ঝুলিয়ে রাখতেন। তিনি আমাকেও এরকমটি করতে উৎসাহ দিতেন। সুইটি, তার দাদু তাকে বলতেন, আমরা একে অন্যের দরজায় তালা না মেরে বরং গোলাপ প্রতীকটা ঝুলিয়ে রাখতে পারিলা ফ্লার দে সিক্রেট যখন আমাদের গোপনীয়তার দরকার হবে। এভাবে আমরা একে অন্যেকে সম্মান এবং বিশ্বাস করতে শিখতে পারবো। গোলাপ ঝুলানোটা প্রাচীন রোমের একটা রীতি।

    সাব রোসা, ল্যাংডন বললো। রোমানরা কোন সভায় গোলাপ ঝুলিয়ে রাখলে সবাই বুঝতে সভাটা খুব গোপনীয়। উপস্থিত সবাই বুঝতো যে, গোলাপের অধীনে যা বলা হবে সাব রোসার নিচে তা গোপন রাখতে হবে।

    ল্যাংডন খুব দ্রুত ব্যাখ্যা করে বললো, প্রায়োরিরা গ্রেইলের প্রতীক হিসেবে গোলাপকে কেবল গোপনীয়তার জন্যই বেছে নেয়নি। রোসা রুগোসা হলো গোলাপের সবচাইতে প্রাচীন একটা প্রজাতি, যার পাঁচটি পাপড়ি পঞ্চভূজের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঠিক গাইডিং-স্টার ভেনাসের মতো। এজন্যেই, গোলাপ নারীত্বের প্রতিমূর্তি হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। তাছাড়াও, সত্যিকারের দিক নির্দেশনার ধারণার সাথেও গোলাপের সংযোগ রয়েছে। কম্পাস-রোজ ভ্রমণকারীদের পথ দেখানোর কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঠিক যেমনটি মানচিত্রে দ্রাঘিমাংশের কাজ রোজ লাইন করে থাকে। এই কারণেই, গোলাপকে গ্রেইলের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন দিক থেকেই বিবেচনা করা হয়—গোপনীয়তা, নারীত্ব, আর দিক-নির্দেশনা নারী পেয়ালা এবং গাইডিং-স্টার যা গোপন-সত্যের দিকে নিয়ে যায়।

    ল্যাংডন তার ব্যাখ্যা শেষ করতেই, আচমকা তার অভিব্যক্তিটা শক্ত হয়ে গেলো।

    রবার্ট? তুমি কি ঠিক আছে?

    তার চোখ রোজউড বক্সের উপর স্থির। সাব…রোসা, সে বিড়বিড় করে বললো, একটা ভীতিকর অভিব্যক্তি তার চেহারায় ছড়িয়ে পড়লো। এটা হতে পারে না।

    কি?

    ল্যাংডন ধীরে ধীরে তার চোখ তুলে তাকালো। গোলাপের প্রতীকটার নিচে, সে বিড়বিড় করে বললো। এই ক্রিপ্টেক্সটা…আমার মনে হয়, এটা কি, তা আমি জানি।

     

    ৪৮.

    ল্যাংডন সবেমাত্র নিজের ধারণাটায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, তার পরও, বিবেচনা করছে কে তাদেরকে এই চোঙাটা দিয়েছে, কীভাবে সেটা তাদেরকে দিয়েছে। এখন বাক্সটার ওপরে আঁকা গোলাপটা দেখে ল্যাংডন একটা উপসংহারেই পৌঁছাতে পারলো।

    আমি প্রায়োরি কি-স্টোন ধরে রেখেছি।

    কিংবদন্তীটা খুবই যথার্থ।

    কি-স্টোন হলো এক ধরনের কোডবদ্ধ পাথর যা গোলাপ প্রতীকের নিচে রাখা আছে!

    রবার্ট? সোফি তাকে দেখছিলো। কি হচ্ছে বলোতো?

    ল্যাংডন তার ভাবনাগুলো সমন্বিত করার জন্য কিছু সময় নিলো। তোমার দাদু কি কখনও তোমাকে লা ক্লেফ দ্য ভূত সম্পর্কে কিছু বলেছিলো?

    সিন্দুক, মানে ভল্টের চাবি? সোফি অনুবাদ করে নিলো।

    না, এটাতো হলো আক্ষরিক অনুবাদ। ক্লেফ দ্য ভুত হলো একটা সাধারণ স্থাপত্য বিষয়ক পদবাচ্য। ভুত মানে ব্যাংকের ভল্ট নয়। এটার অর্থ হলো খিলানযুক্ত পথের ভেতরে একটা ভল্ট, যেমন গম্বুজওয়ালা ছাদ।

    কিন্তু গম্বুজওয়ালা ছাদের তো চাবি থাকে না।

    সত্যি বলতে কী, থাকে। প্রতিটি পাথরে তৈরি গম্বুজওয়ালা ছাদেরই একটা কেন্দ্র থাকে, যাকে বলে কীলকাকর পাথর, একেবারে উপরে থাকে সেটা, বাকি টুকরোগুলোকে এক সঙ্গে সংযুক্ত করে সমস্ত ভরটা বহন করে থাকে। এই পাথরটাকেই স্থাপত্যকলায় বলা হয় খিলানের চাবি বা ভল্ট-কি। ইংরেজিতে এই জিনিসটাকেই আমরা কি-স্টোন বলি। ল্যাংডন সোফির চোখের দিকে তাকালো কথাটার কোন স্বীকৃতি তাতে ঝলক দিচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য।

    সোফি কাঁধ ঝাঁকিয়ে ক্রিপ্টেক্সের দিকে তাকালো। কিন্তু এটা মোটেও কোন কি স্টোন নয়।

    ল্যাংডন জানে না কোথেকে শুরু করবে। ভবন নির্মাণের ব্যাপারে কি-স্টোন হলো একটি ম্যাসনারি কৌশল, আর এটা ম্যাসোনিক ভ্রাতৃসংঘের প্রথমদিকে সবচাইতে গুপ্তবিদ্যা হিসেবে বজায় ছিলো। রয়্যাল আর্চ ডিগ্রি। স্থাপত্য। কি-স্টোন। সবগুলোই একটার সাথে আরেকটা সংযুক্ত। কি-স্টোন দিয়ে গম্বুজ বানানোর গুপ্তবিদ্যাটা ম্যাসন ভায়েদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদশালী কারিগর বানিয়েছিলো, আর তারাও এটাকে গোপন রেখেছিলো দীর্ঘদিন। তারপরও, রোজউড বক্সের কি-স্টোনটা আসলে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি জিনিস। প্রায়োরি কি-স্টোনটা—তারা এখন যেটা ধরে রেখেছে সেরকম যদি কিছু থেকে থাকে ল্যাংডন যেমনটা কল্পনা করেছিলো, মোটেও সে রকম কিছু নয়।

    প্রায়োরি কি-স্টোনটা আমার জানা কি-স্টোনের মতো কিছু নয়, ল্যাংডন স্বীকার করলো। হলি গ্রেইল সম্পর্কিত আমার আগ্রহ, সাধারণত প্রতীকি, তো সেটা আসলে কীভাবে খুঁজে পাওয়া যায় সেটা আমার কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন একটি বিষয়।

    সোফির ভুরু দুটো কপালে উঠলো। হলি গ্রেইল-এর খোঁজ?

    ল্যাংডন একটা অস্বস্তি নিয়ে মাথা ঝাঁকালো। পরের কথাগুলো সাবধানে বললো। সোফি, প্রায়োরিদের মতে, কি-স্টোন হলো একটা কোডবদ্ধ মানচিত্র…হলি গ্রেইল এর লুকিয়ে রাখা জায়গাটার মানচিত্র।

    সোফির মুখ ফ্যাঁকাশে হয়ে গেলো। আর তুমি মনে করছে, এটা সেই জিনিস?

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো না কী বলবে। তার কাছেও কথাটা অবিশ্বাস্য শোনালো। তারপরও, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, কি-স্টোনই হলো একমাত্র যৌক্তিক সমাপ্তি। একটা খোঁদাই করা শিলালিপি, গোলাপ প্রতীকের নিচে লুকিয়ে রাখা আছে।

    ক্রিপ্টেক্সটার নক্সা করেছেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চিপ্রায়োরি অব সাইন-এর সাবেক গ্র্যান্ড মাস্টার—এই জিনিসটা দেখে মনে হচ্ছে, এটা অবশ্যই প্রায়োরিদের একটা কি-স্টোন। একজন সাবেক এ্যান্ড মাস্টারের নীল-নক্সা…আরেকজন গ্র্যান্ড মাস্টার কর্তৃক বাস্তবায়িত করা হয়েছে শত বছর বাদে, এটা এতোটাই নিশ্চিত যে, বাতিল করা যায় না।

    বিগত দশক ধরে ঐতিহাসিকগণ ফ্রান্সের চার্চগুলোতে কি-স্টোনটা খুঁজে চলছেন। গ্রেইল অম্বেষণকারীরা, প্রায়োরিদের দ্ব্যর্থবোধক সাংকেতিক বার্তার সাথে পরিচিত ছিলো, তারা লা ক্লেফ দ্য ভূতকে আক্ষরিক অর্থেই কি-স্টোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে—একটা স্থাপত্য—খোঁদাই করা একটা পাথর, খিলানযুক্ত কোন চার্চের গোপন কক্ষের ভেতরে রাখা আছে। গোলাপ প্রতীকের নিচে। স্থাপত্য জগতে গোলাপের কোন কমতি নেই। গোলাপ জানালা বা রোজ উইন্ডোজ। রোসেট রিলিফ। এবং অবশ্যই, সিনকোয়ে ফয়েল দিয়ে পূর্ণ-পাঁচ পাপড়ির মনোরম গোলাপ প্রায়শই চার্চের ছাদে পাওয়া যায়, ঠিক কি-স্টেনের উপরে। লুকানো জায়গাটা নারকীয়ভাবে খুবই সহজ সরল। হলি গ্রেইলের মানচিত্রটা কোন বিস্মৃত চার্চের সাথে সম্পর্কিত, চার্চের যাতায়াতকারীরা না বুঝেই হেটে চলে সেটার উপর দিয়ে।

    এই ক্রিপ্টেক্সটা কি-স্টোন হতে পারে না, সোফি দ্বিমত পোষণ করলো। এটা খুব বেশি পুরনো নয়। আমি নিশ্চিত, এটা আমার দাদু তৈরি করেছেন। এটা কোন প্রাচীন গ্রেইল কিংবদন্তীর অংশ হতে পারে না।

    আসলে, ল্যাংডন জবাব দিলো, সে অনুভব করলো তার ভেতরে একটা উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, বিশ্বাস করা হয়, কি-স্টোনটা কয়েক দশক আগে প্রায়োরিরা তৈরি করেছে।

    সোফির চোখে অবিশ্বাসের ছটা। কিন্তু এই ক্রিপ্টেক্সটা যদি হলি গ্রেইলের লুকানো জায়গাটার খোঁজ দিয়ে থাকে, তবে, সেটা আমার দাদু আমাকে কেন দেবেন? এটা কীভাবে খুলতে হবে, সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই নেই, কিংবা, এটা দিয়ে আমি করবোটা কী। এমনকি আমি জানিও না, হলি গ্রেইল আসলে কী?

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো, সোফি ঠিকই বলছে, যদিও সে এখনও তার কাছে হলি গ্রেইলের সত্যিকারের বৈশিষ্টটা কী সেটা ব্যাখ্যা করেনি। সেই গল্পটা আপাতত তোলা থাক। এই মুহূর্তে তারা কি-স্টোনটা নিয়েই ব্যস্ত।

    যদি এটা সেই জিনিসই হয়ে থাকে…

    তাদের নিচে বুলেট প্রুফ চাকাটার গর্জনকে ছাপিয়ে, ল্যাংডন খুব দ্রুত সোফিকে তার জানামতে কি-স্টোনটা কী, সেটা ব্যাখ্যা করতে শুরু করলো। শত শত বছর ধরে, প্রায়োরিদের সবচাইতে বড় সিক্রেটটা হলো—-হলি গ্রেইলের অবস্থান সেটা কখনও লেখা হয়নি। নিরাপত্তার খাতিরেই, সেটা মৌখিকভাবে প্রত্যেক সেন্যের কাছে একটা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হস্তান্তরিত হয়ে আসছে। তবে যেভাবেই হোক, বিগত শতাব্দীর কোন এক সময়, একটা গুঞ্জন শোনা গিয়েছিলো যে, প্রায়োরিরা তাদের নীতি বদলিয়েছে। সম্ভবত, সেটা এ জন্যে যে, নতুন ইলেক্ট্রনিক সক্ষমতার যুগ সমাগত হয়েছে। কিন্তু প্রায়োরিরা গ্রুতে প্রতীজ্ঞা করেছিলো তারা কখনও গোপন পবিত্র স্থানটি সম্পর্কে মুখ খুলবে না।

    তাহলে, সিক্রেটটা তারা কীভাবে হস্তান্তর করতো? সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    এখানেই কি-স্টোনের কথাটা এসে যায়, ল্যাংডন ব্যাখ্যা করলো। যখন শীর্ষ চার জন ব্যক্তির একজন মৃত্যু বরণ করে থাকেন, তখন নিচের সারি থেকে একজনকে সেনেক্য হিসেবে অধিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নেয়া হয়। নতুন সেনেককে হলি গ্রেইলের গোপন স্থানটি না জানিয়ে, বরং তাকে একটা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ দেয়া হয়।

    এ কথা শুনে সোফি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলো। হঠাৎ করেই ল্যাংডনের মনে পড়ে গেলো, সোফির দাদু কীভাবে তার সাথে গুপ্তধন-খোজা খেলাটা খেলতেন প্রিউভু দ্য মেরিট মানে মেধা যাচাই। মানতেই হয়, কি-স্টোনটাও সেইরকমই একটি ধারণা। তারপরও, এরকম পরীক্ষা গোপন সংগঠনের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। ম্যাসনরা এক্ষেত্রে বেশ সুপরিচিত ছিলো, যেখানে, সদস্যরা উচ্চপদ অর্জন করে থাকতেন বিভিন্নরকম আনুষ্ঠানিকতা আর মেধার পরীক্ষা দেবার মধ্য দিয়ে, যাতে করে তারা গোপন রাখার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বহুবছর ধরে সেটা করা হয়ে থাকতো। কাজটা ক্রমাগতভাবেই কঠিন হতে থাকতো।

    তো, কি-স্টোনটা হলো প্রিভিউ দ্য মেরিট, সোফি বললো। যদি একজন উদীয়মান প্রায়োরি সেনেক্য এটা খুলতে পারেন, তবে তিনি এর তথ্যটার মালিক বনে যান।

    ল্যাংডন মাথা নেড়ে সায় দিলো। আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তুমি এ ধরনের জিনিসের সাথে পরিচিত।

    শুধুমাত্র আমার দাদুর সাথেই নয়। ক্রিপ্টোলজিতে এটাকে বলা হয় আত্মস্বীকৃত ভাষা। এর মানে, তুমি যদি এটা পড়তে পারো, তবে তুমি জানতে পারবে ওতে কী বলা হয়েছে।

    ল্যাংডন একটু ইতস্তত করলে। সোফি, তুমি বুঝতে পারছো, যদি এটা সত্যিই একটা কি-স্টোন হয়ে থাকে, তবে ধরে নিতে হবে, তোমার দাদু প্রায়োরিদের ভেতরে খুবই শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। তাঁকে হতে হবে শীর্ষ চার জন সদস্যের একজন।

    সোফি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তিনি সিক্রেট সোসাইটিতে খুবই শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। এ ব্যাপারে আমি একদম নিশ্চিত। আমি অনুমাণ করতে পারি, সেটা প্রায়োরিই ছিলো।

    ল্যাংডন অবাক হয়ে বললো, তুমি জানতে, তিনি সিক্রেট সোসাইটিতে ছিলেন?

    দশ বছর আগে আমি এমন কিছু দেখেছিলাম, যা আমার দেখার কথা ছিলো না। তখন থেকে আমরা আর কথা-বার্তা বলিনি। সে একটু থামলো। আমার দাদু দলটির শীর্ষ পর্যায়েরই শুধু ছিলেন না…আমার বিশ্বাস, তিনি ছিলেন একেবারে উচ্চপদের একজন সদস্য।

    এইমাত্র সে যা বললো, ল্যাংডন তা বিশ্বাস করতে পারলো না। গ্র্যান্ড মাস্টার? কিন্তু…এটা তোমার জানা কথা নয়!

    আমি এ ব্যাপারে কিছু বলবো না। সোফি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো, তার অভিব্যক্তি যতোটা দৃঢ়, ততোটাই যন্ত্রণাকাতর।

    ল্যাংডন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বসে রইলো। জ্যাক সনিয়ে গ্র্যান্ড মাস্টার? যদিও শুনতে খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছে, তার পরও, এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, ল্যাংডনের মনে হলো, তাহলে ব্যাপারটা খুব ভালোই হয়। একেবারে বাপে-ধাপে মিলে যায়। হাজার হোক, আগের গ্র্যান্ডমাস্টাররাও ছিলেন বিখ্যাত সব ব্যক্তি আর শৈল্পিক-সত্ত্বার অধিকারী। এর সত্যতা কয়েক বছর আগে, প্যারিসের বিবলিওথেক ন্যাশনাল তাদের লো ভোসিয়ার সিক্রেট নামে পরিচিত কাগজে খবরটা ফাস করেছিলো।

    প্রায়োরি ঐতিহাসিক এবং গ্রেইল অন্বেষণকারীদের সবাই ডোসিয়ারটা পড়েছে। নাম্বার 4,lm249 এর ক্যাটালগটা, ডোসিয়ার সিক্রেট নামে পরিচিত, অনেক বিশেষজ্ঞ কর্তৃকই সেটা বিশ্বাসযোগ্য বলে স্বীকৃত হয়েছে। ঐতিহাসিকরা এটা দীর্ঘ দিন ধরেই খুঁজছিলেন।

    প্রায়োরি গ্র্যান্ড মাস্টারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, বত্তিচেল্লি, স্যার আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো এবং সাম্প্রতিক কালে, জ্য কতো, প্যারিসের বিখ্যাত শিল্পী ও কবি।

    তবে জ্যাক সনিয়ে নয় কেন?

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো, আজ রাতে সনিয়ের সাথে তার সাক্ষাৎক্টা না হওয়াতে কী অপরিমেয় ক্ষতিই না হয়ে গেছে। প্রায়োরিদের গ্র্যান্ড মাস্টার আমার সাথে দেখা করার জন্য একটা বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন? শিল্পসংক্রান্ত নিছক গল্পগুজব করার জন্য? আচমকাই তার মনে হচ্ছে, তা নয়। হাজার হোক, যদি ল্যাংডনের মন যা বলছে, তা সত্য হয়ে থাকে, তবে প্রায়োরি অব সাইওনের গ্র্যান্ড মাস্টার ভ্রাতৃসংঘের ধারাবাহিকতায় কি-স্টোনটা তার নাতনীর কাছে হস্তান্তর করে গেছেন এবং বার বার। তাকে রবার্ট ল্যাংডনকে খুঁজে বের করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন।

    অসম্ভব!

    তারপরও ল্যাংডনের কাছে ব্যাপারটা খাপ খাচ্ছে না। সনিয়ে কেন এমন আচরণ করলেন। তিনি যদি মারা যাওয়ার আশংকাই করে থাকেন, তবে তো আরো তিন জন সেনেক্য ছিলেন, যারা প্রায়োরিদের সিক্রেটটা রক্ষা করতে পারেন। তবে কেন সনিয়ে তার নাতনীর কাছে কি-স্টোনটা দেবার জন্য এতো ঝুঁকি নিতে গেলেন, যখন দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা মোটেও ভালো ছিলো না? আর কেনইবা, ল্যাংডনকে জড়ানো হলো… একেবারেই অপরিচিত একজন?

    এই পাজলের একটা অংশ এখনও পাওয়া যাচ্ছে না, ল্যাংডন ভাবলো। উত্তরটার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে। গাড়ির ইনজিনের ধীর গতির শব্দ তাদের দুজনকে তাকাতে বাধ্য করলো। টায়ারে খ্যাচ খ্যাচ করে একটা শব্দ হলো। সে কেন গাড়ি থামালো? ল্যাংডন অবাক হয়ে ভাবলো, ভার্নেট তাদেরকে বলেছিলেন তাদেরকে শহরের বেশ বাইরে, নিরাপদে নিয়ে যাবেন। সোফি ল্যাংডনের দিকে অস্বস্তিতে তাকালো। দ্রুত ক্রিপ্টেক্সটার বাক্স বন্ধ করে ল্যাংডন সেটা তার জ্যাকেটের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললো।

    দরজাটা খুলে গেলে ল্যাংডন অবাক হয়ে দেখলো, গাড়িটা রাস্তা থেকে অনেক দূরে, একটা বনের মধ্যে থেমেছে। ভার্নেটের চোখে অদ্ভুত চাহনি। তার হাতে একটা পিস্তল।

    এজন্যে আমি দুঃখিত, তিনি বললেন। এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলো না।

     

    ৪৯.

    আদ্রেঁ ভার্নেটকে পিস্তল হাতে খুবই অদ্ভুত দেখাচ্ছে। কিন্তু তাঁর চোখের দৃঢ়তা দেখে ল্যাংডন আঁচ করতে পারলো, তার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করাটা হবে বোকামী।

    আমি বলতে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাকে জোর করতেই হবে, অস্ত্রটা তাদের দুজনের দিকে তাক করে নিয়ে ভার্নেট বললেন, বাক্সটা নিচে নামিয়ে রাখুন।

    সোফি বাক্সটা তার বুকে চেপে ধরলো। আপনি বলেছিলেন, আপনি এবং আমার দাদু বন্ধু ছিলেন।

    আপনার দাদুর সম্পদ রক্ষা করা আমার কর্তব্য, ভার্নেট জবাব দিলেন। আর আমি ঠিক, সেই কাজটাই করছি। এখন বাক্সটা নিচে নামিয়ে রাখুন।

    আমার দাদু এটা আমাকে দিতে চেয়েছেন! সোফি জানালো।

    নামিয়ে রাখুন বলছি, ভার্নেট তার অস্ত্রটা উঁচিয়ে ধরে বললেন।

    সোফি বাক্সটা তার পায়ের কাছে নামিয়ে রাখলো।

    মি. ল্যাংডন, ভার্নেট বললেন, আপনি বাক্সটা আমার কাছে নিয়ে আসুন। আর সর্তক থাকবেন, আমি আপনাকে বলছি এজন্যে যে, আপনাকে গুলি করতে আমি একটুও দ্বিধা করবো না।

    ল্যাংডন ব্যাংকারের দিকে অবিশ্বাস ভরে তাকালো। আপনি কেন এসব করছেন?

    আপনি কি ভাবছেন? ভার্নেট চট করে জবাব দিলেন, তাঁর ইংরেজি উচ্চারণটা এখন একটু বদলে গেলো। আমার গ্রাহকের সম্পত্তি রক্ষা করতে।

    আমরাই এখন আপনার গ্রাহক, সোফি বললো।

    অদ্ভুত একটা ভাবনায় ভার্নেটের মুখটা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। মাদামোয়াজেল নেভু, আমি জানি না, আপনি কীভাবে এই চাবিটা আর একাউন্ট নাম্বারটা আজ রাতে পেয়েছেন। তবে নিশ্চিতভাবেই মনে হচ্ছে, উল্টা-পাল্টা কিছু হয়েছে। আমি যদি জানতাম, আপনাদের অপরাধটা কী, তবে আমি কখনও আপনাদেরকে ব্যাংক থেকে বের করতে সাহায্য করতাম না।

    আমি আপনাকে বলেছি, সোফি বললো, আমার দাদুর মৃত্যুর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।

    ভার্নেট ল্যাংডনের দিকে তাকালেন, তারপরও রেডিওতে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে যে, আপনি কেবল জ্যাক সনিয়েকেই খুন করেননি, বরং বাকি তিন জনকেও হত্যা করেছেন?

    কী! ল্যাংডন বজ্রাহত হলো। আরো তিনটা খুন হয়েছে? সে নিজে যে প্রধান সন্দেহভাঁজন তার থেকেও এইমাত্র বলা সংখ্যাটা তাকে বেশি ভাবিত করলো। মনে হচ্ছে এটা কাকতালীয় নয়। তিন জন সেনেক্য? ল্যাংডনের চোখ নিচে রাখা রোজউড বক্সের দিকে চলে গেলো। সেনেক্যরা যদি মারা গিয়ে থাকেন, তো, সনিয়ের কাছে অন্যকোন পথ খোলা ছিলো না। তাকে কি-স্টোনটা অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করতেই হোতো।

    আমি আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবার পরই তারা এটা খুঁজে দেখতে পারবে, ভার্নেট বললেন। আমি আমার ব্যাংককে ইতিমধ্যেই খুব বেশি জড়িয়ে ফেলেছি।

    সোফি ভার্নেটের দিকে তাকালো, আপনার নিশ্চয় আমাদেরকে তুলে দেবার কোন অভিপ্রায় নেই। তাহলে তো আপনি আমাদেরকে ব্যাংকেই নিয়ে যেতেন। অথচ তার বদলে আপনি আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেছেন?

    আপনার দাদু আমাকে ভাড়া করেছিলেন একটা কারণেই, তঁার জিনিসটা নিরাপদে আর গোপনে রাখার জন্যে। এই বাক্সের ভেতরে যা-ই থাকুক না কেন, আমি চাই না তা পুলিশের জব্দ তালিকায় ঠাই পাক। মি. ল্যাংডন, বাক্সটা আমার কাছে নিয়ে আসুন।

    সফি মাথা ঝাঁকালো। না, তুমি তা করবে না।

    একটা গুলির আওয়াজ শোনা গেলো, বুলেটটা তাদের পাশেই ভ্যানটার গায়ে গিয়ে বিধলে গুলির আঘাতে গাড়িটা একটু কেঁপে উঠলো।

    উফ! ল্যাংডন বরফের মতো জমে গেলো।

    ভার্নেট এখন আরো বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বললেন। মি. ল্যাংডন, বক্সটা তুলে নিন।

    ল্যাংডন বক্সটা তুলে নিলো।

    এখন, এটা আমার কাছে নিয়ে আসুন। ভার্নেট এবার অস্ত্রটা সোজা তার দিকেই তাক্‌ করলো। রিয়ার বাম্পারের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর অস্ত্রটা এখন

    কার্গোর দরজার হাতলটার কাছাকাছি।

    বাক্স হাতে ল্যাংডন খোলা দরজাটার হাতলের দিকে এগিয়ে এলো।

    আমাকে কিছু একটা করতেই হবে! ল্যাংডন ভাবলো। আমি প্রায়োরিদের কি স্টোনটা তুলে দিচ্ছি! ভার্নেটের অস্ত্রটা তুলে ধরা থাকলেও, সেটা ল্যাংডনের হাটু বরাবর হবে। সজোড়ে জায়গা মতো একটা লাথি, সম্ভবত? দুঃখের বিষয় হলো, ল্যাংডন কাছে পৌঁছতেই, ভার্নেটও যেনো বিপদটা আঁচ করতে পারলেন। তিনি কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে ছয় ফুট দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

    ভার্নেট আদেশ করলেন, দরজার পাশেই বাক্সটা রাখুন।

    আর কোন উপায় না দেখে, ল্যাংডন হাটু গেঁড়ে বসে পড়ে বাক্সটা কার্গোর হোন্ডের নিচে নামিয়ে রাখলো, ঠিক খোলা দরজাটার সামনে।

    এখন দাঁড়িয়ে পড়ুন।

    ল্যাংডন উঠতে শুরু করে থেমে গেলো, ট্রাকের দরজার নিচের দিকে যে ছিটকিরিটা আছে সেটা সবার অগোচরে নামিয়ে দিলো।

    উঠে দাঁড়ান, বাক্সটা থেকে সরে যান এবার।

    ল্যাংডন একটু থামলো, তারপর উঠে দাঁড়ালো।

    পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে থাকুন।

    ল্যাংডন তা-ই করলো।

     

    নিজের হৃদস্পন্দনটা টের পেলেন ভার্নেট। ডান হাতে পিস্তলটা ধরে, বাম হাত দিয়ে বাক্সটা তুলে নিলেন। বুঝতে পারলেন, বাক্সটা খুবই ভারি। দুহাতে ধরতে হবে। তার জিম্মিদের দিকে ফিরে দেখে ঝুঁকিটা হিসাব করলেন। তারা দুজনেই পনেরো ফুট দূরে, কার্গোর হোন্ডের কাছে, তার দিকে মুখ ফেরানো। ভার্নেট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। খুব দ্রুতই, তিনি অস্ত্রটা বাম্পারের ওপর রেখে, দুহাতে বাক্সটা তুলে নিয়ে এসে কাগোর কাছে মাটিতে রেখে দিলেন। তারপর, সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রটা হাতে তুলে নিলেন আবার। তার বন্দীরা একটুও নড়লো না।

    একদম ঠিক আছে। এবার দরজাটা লাগাতে হবে। বাক্সটা মাটিতে রেখেই তিনি লোহার দরজাটা বন্ধ করতে লাগলেন। কিন্তু দরজাটা ঠিক মতো লাগলো না। হলোটা কী? ভার্নেট আবারো দরজাটা টান দিলেন। কিন্তু বোল্টগুলো লাগলো না। দরজাটা পুরোপুরি লাগছে না। একটু ভয় পেয়ে গেলেন। আবারো, সজোড়ে লাগানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু হলো না। কিছু একটায় আঁটকে গেছে! ভার্নেট দরজাটা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি মেরে দেখলেন। কিন্তু এবার, দরজাটা বাইরের দিক থেকে খুলে, ভার্নেটের মুখ সজোড়ে আঘাত হানলে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর নাকটা ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতে লাগলো। অস্ত্রটা তার কাছ থেকে ছিটকে পড়ে গেছে। ভার্নেটের নাক দিয়ে গরম রক্ত ঝড়তে লাগলো।

    রবার্ট ল্যাংডন সজোড়ে ঘুষি চালিয়েছে। ভার্নেট চেষ্টা করেও উঠতে পারলেন না, কারণ চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাঁর দৃষ্টি ফাঁকা হয়ে গেছে, তাই আবারো মাটিতে পড়ে গেলেন। সোফি নেভু চিৎকার করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাদে, ভার্নেট শুনতে পেলেন, ট্রাকের চাকার খ্যা খ্যাচ্‌ শব্দ। গাড়িটা ঘুরতে গিয়ে সামনের একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেলো। গাড়িটার সামনের বাম্পার খুলে একটু ঝুলে গেলেও সেটা চলতে শুরু করলো। গাড়িটা রাস্তায় পৌঁছতেই, দূর থেকে সেটার বাতি দেখা গেলো।

    ভার্নেট মাটির দিকে তাকালেন, যেখানে গাড়িটা থামানো ছিলো। অল্প-স্বল্প চাঁদের আলোতেও তিনি দেখতে পেলেন, সেখানে কিছুই নেই, কাঠের বাক্সটাও।

     

    ৫০.

    ফিয়া সিডান গাড়িটা কাস্তেল গান্ডোলফো ছেড়ে এলবান পাহাড়ের সাপের মতো এঁকে-বেঁকে যাওয়া পথ দিয়ে নিচের উপত্যকায় নেমে গেলো। পেছনের সিটে বসে বিশপ আরিজারোসা হাসছিলেন। তাঁর কোলের ওপর রাখা বৃফকেসটার ভেতরে বন্ডগুলোর ওজন অনুভব করছিলেন। অবাক হয়ে ভাবছিলেন টিচারের কাছে এটা হস্তান্তর করার জন্য কতো সময় লাগতে পারে।

    বিশ মিলিয়ন ইউরো।

    এই অংকের বিনিময়ে আরিঙ্গাবোসা যে ক্ষমতা অর্জন করবেন, সেটা এর চেয়েও বেশি মূল্যবান। আরিঙ্গাবোসা আবারো অবাক হয়ে ভাবলেন, টিচার কেন এখনও তার সাথে যোগাযোগ করছেন না। নিজের আলখেল্লাটার পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে দেখলেন নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল।

    সেল সার্ভিস এই উঁচু জায়গায় বাঁধা পায়, রিয়ার আয়না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার বললো। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমরা পাহাড় থেকে নেমে যাবো, তখন নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে।

    ধন্যবাদ, তোমাকে। আরিঙ্গারোসা হঠাৎ করে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। পাহাড়ের উপরে কোন নেটওয়ার্ক নেই? হয়তো টিচার তার সাথে এতোক্ষণ ধরে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। হয়তো মারাত্মক কিছু একটা ঘটে গেছে।

    সঙ্গে সঙ্গে, আরিঙ্গারোসা ফোনের ভয়েস মেইলটা চেক করে দেখলেন। কিছুই নেই। তারপর আবারো, তিনি বুঝতে পারলেন, টিচার কখনওই কোন রেকর্ড করা মেসেজ রেখে যাবেন না, তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক সর্তকতা অবলম্বন করে থাকেন।

    এই আধুনিক যুগে প্রকাশ্য কথাবার্তার ঝুঁকি সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি কেউ জানে। ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন তার বিস্ময়কর, রহস্যময় জ্ঞান অর্জনের জন্য সাহায্য করেছে।

    এই জন্যেই, তিনি আগাম সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন।

    দুঃখজনক হলো, টিচার তাঁর সতর্কতার অংশ হিসেবে আরিঙ্গারোসাকে কোন ফোন নাম্বার দেননি। আমি একাই যোগাযোগ রাখবো, টিচার তাঁকে জানিয়েছিলেন। সুতরাং আপনার ফোন বন্ধই রাখুন। এখন আরিঙ্গারোসা বুঝতে পারলেন, তাঁর ফোনটা হয়তো ঠিকমতো কাজ নাও করে থাকবে। তিনি আশংকা করলেন, যদি টিচার তাঁকে বারবার ফোন করার পরও না পেয়ে থাকেন, তবে কী ভাববেন।

    তিনি ভাববেন, কিছু একটা হয়েছে। অথবা, আমি বন্ডগুলো নিতে পারিনি।

    বিশপ একটু ঘেমে উঠলেন।

    অথবা, তার চেয়েও খারাপ কিছু…টাকাগুলো নিয়ে সটকে পড়েছি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.