Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প600 Mins Read0

    ০৮. হকারটার নাক ইংল্যান্ডের অভিমুখে

    ৭১.

    হকারটার নাক ইংল্যান্ডের অভিমুখে যেতেই ল্যাংডন সযত্নে রোজউড বক্সটা কোল থেকে হাতে নিলো। বিমান ছাড়ার সময় সেটার সুরক্ষার জন্য ল্যাংডন দুহাতে ধরে কোলের উপর রেখে দিয়েছিলো। এখন বক্সটা টেবিলের উপর রাখতেই আঁচ করতে পারলো সোফি আর টিবিং সামনের দিকে ঝুঁকে এসেছে। বক্সটার ঢাকনা খুলে ল্যাংডন ক্রিপ্টেক্সের দিকে নজর দিলো। ক্রিপ্টেক্সের ডায়ালের অক্ষরগুলোর দিকে নয় বরং ঢাকনাটার ভেতরে ছোট্ট ছিদ্রটার দিকে। একটা কলম দিয়ে ছিদ্রটার ভেতরে খোচা মেরে ঢাকনার উপরে লাগানো ছোই গোলাপটা খুলে ফেলে এর নিচের লেখাগুলো উন্মোচিত করলো। সাব রোসা, সে ভাবলো, আশা করলো ভালো করে লেখাগুলোর দিকে তাকালে পরিষ্কার বুঝতে পারবে। সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে ল্যাংডন অদ্ভুত লেখাটা নিরীক্ষণ করলো।

    da-vinci-code-1

    কয়েক সেকেন্ড তাকানোর পরও সে কিছুই ধরতে পারলো না। লেই, আমি ধরতে পারছি না।

    ***

    সোফি টেবিলের যেখানটায় বসে ছিলো সেখান থেকে লেখাগুলো দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু ল্যাংডন সেগুলো ধরতে পারছে না দেখ সে খুব অবাক হলো। আমার দাদু এমন একটা ভাষায় কথা বলছেন যা একজন সিম্বোলজিস্টও ধরতে পারছে না। তার আচমকাই মনে হলো, তার কাছে এটা বোধগম্য হবে। এটা তো আর প্রথম সিক্রেট নয়, যা জ্যাক সনিয়ে তার নাতনীর কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

    সোফির বিপরীতে বসা লেই টিবিং উদগ্রীব হয়ে আছেন। লেখাগুলো দেখার জন্য ছটফট করে উত্তেজনায় এপাশ ওপাশ করছেন তিনি। চেষ্টা করছেন ল্যাংডনের কাছ থেকে লেখাটা নিয়ে দেখতে। ল্যাংডন এখনও সেটা পড়ার চেষ্টা করছে।

    আমি জানি না, ল্যাংডন আপন মনে বলে উঠলো। আমার প্রথমে মনে হয়েছিলো, এটা সেমেটিক কিন্তু এখন আমি নিশ্চিত নই। প্রাচীন সেমেটিক ভাষার বেশিরভাগই নেডট-এর অন্তর্গত। এটা সে রকম নয়।

    হয়তো বেশি প্রাচীন, টিবিং জানালেন।

    নেক্কুডট? সোফি জানতে চাইলো।

    টিবিং বাক্সটা থেকে চোখ সরাচ্ছেন না একদম। বেশিরভাগ আধুনিক সেমেটিক ভাষার অক্ষরে স্বরবর্ণ নেই, তার বদলে ব্যবহার করা হয় নেকুডট-ঘোট ঘোট বিন্দু এবং ড্যাশ, হয় ব্যঞ্জনের নিচে না হয় উপরে ব্যবহার করা হয়-স্বরবর্ণের ধ্বনিটা কিভাবে উচ্চারিত হবে সেটা এগুলো নির্দেশ করে। ইতিহাস বলে, নেডট হলো ভাষার আধুনিক সংযোগ।

    ল্যাংডন এখনও লেখাটার ওপরেই চোখ রেখে আছে। একটা সেফারডিক ট্রান্সলিটারেশন, সম্ভবত…?

    টিবিংয়ের আর তর সইছিলো না। আমি যদি দেখি, হয়তো… সামনে এগিয়ে ল্যাংডনের কাছ থেকে বাক্সটা নিজের কাছে নিয়ে নিলেন। সন্দেহ নেই, ল্যাংডন প্যাক লাতিন আর রোমান ভাষায় খুবই দক্ষ কিন্তু টিবিংয়ের কাছে মনে হলো এই ভাষাটা সে রকম কিছু না, সম্ভবত একটা রাশি স্ক্রিপ্ট, অথবা ক্রাউনসহ STA’M।

    একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে টিবিং আবারো খোঁদাই করা লেখাটার দিকে চোখ রাখলেন। অনেকক্ষণ ধরে কিছুই বললেন না। সময় পার হচ্ছে আর টিবিংয়ের মনে হচ্ছে তার আত্মবিশ্বাসে চির ধরছে। আমি খুবই অবাক হচ্ছি, তিনি বললেন। এই ধরনের ভাষা আমি জীবনেও দেখিনি!

    ল্যাংডনও একমত হলো। মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।

    আমি কি এটা দেখতে পারি? সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    টিবিং এমন ভাব করলেন যেনো কথাটা শুনতেই পাননি। রবার্ট, একটু আগে আপনি বলছিলেন, এরকম কিছু একটা আপনি আগে দেখেছিলেন?

    ল্যাংডনকে দেখে হতভম্ব বলে মনে হলো। আমিও তাই ভেবেছিলাম। আমি নিশ্চিত নই। যাই হোক, লেখাগুলো আমার কাছে খুবই পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।

    লেই? সোফি আবারো বললো, এই আলোচনায় তাকে পাশ কাটানোটাকে সে ভালোভাবে নেয়নি। আমার দাদুর তৈরি বাক্সটা আমি কি একটু দেখতে পারি?

    অবশ্যই, ডিয়ার, টিবিং বললেন জিনিসটা তার দিকে ঠেলে দিয়ে। তাঁর মনে হলো, যেখানে একজন বৃটিশ রয়্যাল হিস্টোরিয়ান আর হারভার্ডের সিম্বোলজিস্ট পর্যন্ত ভাষাটা চিনতে পারছেন না, সেখানে

    আহ্, বাক্সটা দেখার পরমুহূর্তেই সোফি বললো। আমার আগেই অনুমান করা উচিত ছিলো।

    ল্যাংডন আর টিবিং একসাথে তার দিকে তাকালো।

    কি অনুমান? টিবিং জানতে চাইলেন।

    সোফি কাঁধ ঝাঁকালো। এই ভাষাটা আমার দাদু ব্যবহার করতেন।

    আপনি বলছেন, এই লেখাগুলো আপনি পড়তে পাচ্ছেন? টিবিং অবাক হলেন।

    খুব সহজেই, সোফি উৎফুল্ল হয়ে বললো। এখন খুব উপভোগ করছে ব্যাপারটা। আমার বয়স যখন ছয় তখন আমার দাদু এই ভাষাটা আমাকে শিখিয়েছিলেন। আমি এটা অনর্গল বলতে পারি। সে টেবিলের অপর প্রান্তে বসে থাকা টিবিংয়ের দিকে মুচকি হেসে তাকালো। আর সত্যি বলতে কী স্যার, আপনি এটা চিনতে পারেননি বলে আমি খুব অবাক হয়েছি।

    মুহূর্তেই ল্যাংডন বুঝতে পারলো।

    লেখাটা যে খুবই পরিচিত সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কয়েক বছর আগে, ল্যাংডন ফগ মিউজিয়ামের একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলো। হারভার্ড ড্রপআউট বিল গেটস তাঁর আলমা-আতাতে ফিরে এসেছিলেন, তার কাছে রক্ষিত আরমান্ড হ্যামার এস্টেট থেকে নিলামে কেনা আঠারো পৃষ্ঠার অমূল্য দলিল জাদুঘরে দেবার জন্য।

    তার উইনিং বিড ছিলো-৩০.৮ মিলিয়ন ডলার।

    লেখাগুলোর লেখক-লিওনার্দো দা ভিঞ্চি।

    আঠারোটা ফলিও-এখন সেগুলো লিওনার্দোর কোডেক্স লিসেস্টার হিসেবে পরিচিত, বিখ্যাত আর্ল অব লিসেস্টারের মালিকের নামানুসারে রাখা হয়েছিলো এর নাম-সেখানেই লিওনার্দোর মহামূল্যবান আর কৌতূহলোদ্দীপক নোটবুকগুলো ছিলো : ড্রইং, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূগোল, আর্কিওলজি এবং পানি বিজ্ঞানের উপর দা ভিঞ্চির অগ্রসরমান চিন্তাভাবনার লেখা।

    ল্যাংডন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর পরে সেগুলো দেখতে পারার যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো সেটা কোনদিনও ভুলতে পারবে না। পুরোপুরি হতাশ। পাতাগুলো একেবারেই বুদ্ধিবৃত্তিকহীন ছিলো। যদিও হাতের লেখা আর ড্রইংগুলো ছিলো চমৎকার–কোডেক্সগুলো ছিলো খুবই দূবোধ। প্রথমে ল্যাংডন ভেবেছিলো লেখাগুলো দা ভিঞ্চি আরসেইক ইতালিতে লিখেছেন বলে সে পড়তে পারছে না। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে ওগুলো খুব ভালো করে দেখার পর সে বুঝতে পারলো, একটা ইতালিয় শব্দও সে চিনতে পারছে না। এমনকি একটা অক্ষর পর্যন্ত।

    এটা চেষ্টা করে দেখুন, স্যার, সোফি একটা মেকআপ বক্সের আয়নার দিকে ইঙ্গিত করলো। সেটা হাতে নিয়ে আয়নাতে অক্ষরগুলো দেখলো ল্যাংডন।

    মুহূর্তেই সব পরিষ্কার হয়ে গেলো।

    ইতিহাসবিদরা এই লেখাটা নিয়ে এখনও বির্তক করেন। তারা মনে করেন, ভিঞ্চি এটা করেছেন লোকজনের কাছে থেকে লেখাগুলো আড়াল করার জন্য যাতে কেউ তার আইডিয়াটা চুরি করতে না পারে, অথবা নিজেকে আনন্দ দেবার জন্যে। কিন্তু সেটা এখন অবান্তর। আসলে দা ভিঞ্চি এটা করেছেন যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন।

    রবার্ট অর্থটা বুঝতে পেরেছে দেখে সোফি একটু হাসলো। আমি প্রথম কয়েকটা শব্দ পড়তে পারি, সোফি বললো। এটা ইংরেজিতে লেখা।

    টিবিং তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কী হচ্ছে?

    উল্টা করে লেখা, ল্যাংডন বললো। আমাদের একটা আয়নার দরকার।

    না, তার দরকার নেই, সোফি বললো। এই কাঠটা খুবই পাতলা বলে মনে হচ্ছে। সে রোজউড বাক্সটা একটু ওপরে তুলে ধরলো দেয়ালের কাছে একটা ক্যানিস্টার লাইটের দিকে। তারপর ঢাকনাটা খুলে ফেললো। তার দাদু আসলে এটা উল্টো করে লেখেননি। তিনি সবসময়ই সোজা করে লিখে কাগজটা উল্টো করে ছাপ নিতেন।

    সোফি ঢাকনাটা আলোর দিকে নিতেই সে দেখতে পেলো তার ধারণাই ঠিক। তীব্র আলো পাতলা কাঠের স্তর ভেদ করেছে, আর তাতে লেখাগুলো উল্টো করে পড়া যাচ্ছে। উল্টো লেখা উল্টো করলে সোজা হয়ে যায়। তাই হলো।

    মুহূর্তেই বোধগম্য হলো সব।

    ইংরেজিতে, টিবিং আফসোস করে বললেন, লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলেন। আমার মাতৃভাষায়।

    প্লেনের রিয়ারে বসে রেমি লেগালুদেচ ইঞ্জিনের আওয়াজ ভেদ করে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করলো। কিন্তু কথাবার্তাগুলো একদমই বোঝা যাচ্ছে না। রাতটা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে রেমির ভালো লাগছে না। একদমই না। সে তার পায়ের নিচে হাত পা বাঁধা পাদ্রীর দিকে তাকিয়ে দেখলো। লোকটা একেবারে নিথর হয়ে পড়ে আছে। যেনো পরিস্থিতিটা মেনেই নিয়েছে সে, অথবা নিরবে প্রার্থনা করছে মুক্তি পাবার জন্য।

     

    ৭২.

    আকাশের পনেরো হাজার ফুট উঁচুতে রবার্ট ল্যাংডনের মনে হলো সনিয়ের মিরর ইমেজের কবিতাটার কথা ভাবতে ভাবতে তার জাগতিক দুনিয়াটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। লেখাগুলো বাক্সটার ঢাকনার উপরে জ্বল জ্বল করছে।

    সোফি একটা কাগজ নিয়ে খুব দ্রুত সেটা কপি করে ফেললো। তার লেখা শেষ হলে তাদের তিনজনই পড়ার জন্য লেখাটার দিকে তাকালো। মনে হলো এটা একধরনের আর্কিওলজিক্যাল ক্রশ-ওয়ার্ড…একটা ধাঁধা, যা বুঝতে পারলে ক্রিপ্টেক্সটা কীভাবে খোলা যায় তা জানা যাবে। ল্যাংডন পংক্তিটা আস্তে আস্তে পড়তে লাগলো।

    এই স্ক্রলটা মুক্ত করবে জ্ঞানের প্রাচীন একটি শব্দ…আর আমাদেরকে তাঁর বিচ্ছিন্ন হওয়া পরিবারকে এক করতে সাহায্য করবে…টেম্পলার কর্তৃক প্রশংসিত একটা সমাধি ফলকই হলো মূল চাবিকাঠি…আর atbash তোদের কাছে সত্যটা উন্মোচিত করবে।

    da-vinci-code-2

    ল্যাংডন প্রাচীনতম শব্দের পাসওয়ার্ডটা কি সেটা ভাবার আগেই তার নিজের ভেতরে একটা জিনিস খেলে গেলো-কবিতাটার মিটার। আইয়াম্বিক পেন্টামিটার। ইউরোপের সিক্রেট সোসাইটিগুলো নিয়ে গবেষণা করার সময় ল্যাংডন এই মিটারের সাথে প্রায়ই পরিচিত হতো। গত বছরের ভ্যাটিকানের সিক্রেট আর্কাইভের সময়ও সেটা হয়েছিলো। শত শত বছর ধরে আইয়াম্বিক পেন্টামিটার সারা বিশ্বব্যাপী, প্রাচীন গৃকের আর্কিলোকাস থেকে শেক্সপিয়ার, মিল্টন, চসার এবং ভলতেয়ার তাদের সাহিত্য কর্মে ব্যবহার করেছেন-এইসব সাহসী মানুষেরা এই মিটারটা নিজেদের ভাষ্যগুলো লেখার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। অনেক দিন ধরেই বিশ্বাস করা হতো এতে আধ্যাত্মিক কিছু আছে। ইয়াম্বিক পেন্টামিটারের শেকড়টা প্যাগানদের মধ্যে গভীরভাবে প্রােথিত।

    ইয়াম্ব। দুটো সিলেবেল, বিপরীত শুরুত্বের। ইন এবং ইয়াং। একটি ভারসাম্যপূর্ণ জোড়। পাঁচ তারের সমম্বয়ে। পেন্টামিটার। পাঁচ দিয়ে ভেনাসের পেনটাকল এবং পবিত্র-নারী বুঝায়।

    এটা তো পেন্টামিটার! টিবিং আতিশয্যে বলে ল্যাংডনের দিকে তাকালেন। পংক্তিটা ইংরেজিতে! লা লিঙ্গুয়া পিউরা!

    ল্যাংডন সায় দিলো। অন্য অনেক ইউরোপীয় সিক্রেট সোসাইটির মতো প্রায়োরিরাও ইংরেজিকে দীর্ঘদিন যাবত ইউরোপের একমাত্র বিশুদ্ধ ভাষা হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। ভ্যাটিকানের ভাষা ফরাসি, স্প্যানিশ এবং ইতালিয় ভাষা নয়, যা লাতিনের থেকে উদ্ভুত। ইংরেজিকে রোমের প্রপাগান্ডা যন্ত্র তিরোহিত করেছিলো আর এজন্যেই সেটা পবিত্র আর গুপ্ত ভাষা হয়ে ওঠে। ভ্রাতৃসংঘ তাদের সদস্যদেরকে শিক্ষা দেয়ার কাজে এটা ব্যবহার করতো।

    এই কবিতাটা, টিবিং বিস্ময়ে বললেন, শুধুমাত্র গ্রেইলকেই উল্লেখ করছে না, বরং নাইট টেম্পলার আর ম্যারি মাগদালিনের বিচ্ছিন্ন হওয়া পরিবারের কথাও বলছে। এর চেয়ে বেশি আমাদের আর কী জানার আছে?

    পাসওয়ার্ডটা, কবিতাটার দিকে আবারো তাকিয়ে সোফি বললো। মনে হচ্ছে আমাদের এখন জ্ঞানের প্রাচীন একটি শব্দ জানার দরকার?

    অ্যাবাকা ড্যাবরা? টিবিং ঠাট্টাচ্ছলে বললেন, তার চোখ দুটো পিট পিট করছে।

    পাঁচটি অক্ষরের একটি শব্দ, ল্যাংডন ভাবলো। জ্ঞানের প্রাচীন শব্দগুলো কী হতে পারে চিন্তা করতে লাগলো সে। তালিকাটা অন্তহীন বলেই মনে হচ্ছে।

    পাসওয়ার্ডটা, সোফি বললো, মনে হচ্ছে, টেম্পলারদের সংশ্লিষ্ট কিছু হবে। সে জোরে জোরে লেখাটা পড়তে লাগলো। টেম্পলারদের কর্তৃক প্রশংসিত একটি সমাধি ফলক হলো মূল চাবিকাঠি।

    লেই, ল্যাংডন বললো, আপনি হলেন টেম্পলার বিশেষজ্ঞ। কোন ধারণা আছে?

    টিবিং কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ততা, সমাধি ফলকটি অবশ্যই একটা কবরের হবে। এটা সম্ভব যে, কবিতাটি এমন একটি সমাধি ফলকের কথা বলছে যাতে মনে হচ্ছে টেম্পলাররা ম্যারি মাগদালিনের সমাধি ফলকের প্রশংসা করছে। কিন্তু এটা আমাদের কোন সাহায্যে আসবে না কারণ তার কবরটা কোথায় সেটা আমরা জানি না।

    শেষ লাইনটা বলছে, সোফি বললো, এটবাশ সত্যটা জানাবে। আমি এই এটবাশ শব্দটা শুনেছি।

    আমি মোটেই অবাক হচ্ছি না, ল্যাংডন জবাব দিলো। তুমি এটা সম্ভবত ক্রিপ্টোলজি ১০১-এ শুনেছো। এটবাশ সিফার বা সংকেত হচ্ছে মানুষের জানা সবচাইতে পুরনো একটি কোড।

    অবশ্যই। সোফি ভাবলো। বিখ্যাত হিব্রু সাংকেতিক এনকোডিং সিস্টেম।

    এটবাশ সিফার সোফির ক্রিপ্টোলজি শিক্ষার প্রথম দিকের অংশ ছিলো। সিফারটা ৫০০ খৃস্ট পূর্বাব্দের। একটি সাধারণ ইহুদী ক্রিপ্টোগ্রাম। এটবাশ সিফার হলো বাইশটি হিব্রু অক্ষরের বিকল্প কোড। এটবাশে প্রথম অক্ষরটাকে ধরা হয় শেষ অক্ষর হিসেবে দ্বিতীয় অক্ষরটা শেষের দিক থেকে দ্বিতীয়, এভাবেই হিসাব করা হয়।

    টিবিং বললেন, এটবাশ সংকেতে লেখা পাওয়া যায় কাব্বালা, ডেড সি লে, এমনকি ওন্ড টেস্টামেন্টেও। ইহুদী পণ্ডিত আর আধ্যাত্মিক নেতারা এখনও এটবাশে ব্যবহৃত লুক্কায়িত অর্থ খুঁজে যাচ্ছে। প্রায়োরিরা তাদের শিক্ষায় নিশ্চিতভাবেই এটবাশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

    একমাত্র সমস্যা হলো, ল্যাংডন বললো, আমাদের কাছে এমন কিছু নেই যা এই সিফারে প্রয়োগ করা যায়।

    টিবিং দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সমাধি ফলকে অবশ্যই একটা কোড আছে। আমাদেরকে টেম্পলার কর্তৃক প্রশংসিত সমাধি ফলকটা খুঁজে বের করতে হবে।

    সোফি ল্যাংডনের ফ্যাঁকাশে চেহারাটা দেখে আঁচ করতে পারলো, টেম্পলার সমাধি ফলক খুঁজে পাওয়াটা খুব সহজ ব্যাপার হবে না।

    এটবাশ হলো চাবি, সোফি ভাবলো। কিন্তু আমাদের কাছে তো কোন দরজা নেই।

    তিন মিনিট পরে, টিবিং একটা হতাশাপূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকালেন। আমার বন্ধুরা, আমি নাচার। রেমি আর আমাদের অতিথিকে একটু চেক করে দেখে আসার পর ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখবো। এই বলে টিবিং প্লেনের পেছনে চলে গেলেন।

    তাঁকে চলে যেতে দেখে সোফির খুব ক্লান্ত বোধ হলো।

    জানালার বাইরে, ভোরের আগমুহূর্তের অন্ধকারটা দেখা যাচ্ছে। সোফির মনে হলো, সে শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথায় নামবে সেটা জানে না।

    এখানে আরো কিছু আছে, নিজেকে বললো সে। লুকিয়ে আছে…দেখা যাচ্ছে না।

    সে আরো ভাবলো, ক্রিপ্টেক্সের ভেতরে তারা যে জিনিসটা পাবে সেটা কোন হলি গ্রেইলের মানচিত্র জাতীয় কিছু হবে না। যদিও টিবিং আর ল্যাংডনের দৃঢ় বিশ্বাস, মার্বেলের সিলিন্ডারটার ভেতরেই রয়েছে সেই সত্য, কিন্তু সোফি জানে তার দাদু জ্যাক সনিয়ে নিজের সিক্রেটটা এতো সহজে ছেড়ে দেবেন না। এটা সে ছোটবেলা থেকে দাদুর দেয়া অনেক ধাঁধার জট খুলতে শিখেছে।

     

    ৭৩.

    বোর্গরেত এয়ারফিল্ডের রাতের শিফটের এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোলার একটা রাডার পর্দার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকাতেই জুডিশিয়াল পুলিশের ক্যাপ্টেন তার দরজা ধপাস করে খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।

    টিবিংয়ের প্লেনটা, বেজু ফশে ছোট টাওয়ারটার ভেতরে এগোতে এগোতে চিৎকার করে বললো, কোথায় গেছে।

    কন্ট্রোলার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তোতলাতে তোতলাতে তাদের বৃটিশ ক্লায়েন্টের প্রাইভেসি রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করলো। এই ক্লায়েন্ট হলেন তাদের সবচাইতে শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তি। তার সমস্ত অজুহাত দুঃখজনকভাবেই ব্যর্থ হলো।

    ঠিক আছে, ফলে বললো, তবে, আমি আপনাকে কোন ধরনের ফ্লাইট-প্ল্যান রেজিস্ট্রি ছাড়া প্লেন উড্ডয়নের জন্য গ্রেফতার করতে পারি। ফলে অন্য এক অফিসারের দিকে ঘুরতেই সে একটা হাতকড়া নিয়ে এগিয়ে আসতে উদ্যত হলো। এটা দেখে কন্ট্রোলার ভয়ে আৎকে উঠলো। তার মনে পড়ে গেলো সংবাদপত্রের সেই আর্টিকেলটার কথা, যেখানে বির্তক করা হয়েছিলো, দেশের পুলিশ ক্যাপ্টেন কি একজন হিরো, নাকি খলনায়ক। সেই প্রশ্নের উত্তরটা সে এইমাত্র পেয়ে গেছে। দাঁড়ান! কন্ট্রোলার হাতকড়াটার দিকে তাকিয়ে আচমকাই বলে উঠলো। আমি বলছি। স্যার সেই টিবিং অনুরোধ করেছিলেন চিকিৎসার জন্য তাকে জরুরি ভিত্তিতে লন্ডনে যেতে হবে। লন্ডনের বাইরে কেন্টের বিগিন-হিল এয়াপোর্টে তার নিজের একটা হ্যাংগার রয়েছে।

    হাতকড়া হাতে দাঁড়ানো লোকটাকে ফশে হাত নেড়ে ইশারা করলো। আজ রাতে কি তার গন্তব্যস্থল বিগিন-হিলে?

    আমি জানি না, কন্ট্রোলার সত্য-সত্যই বললো। রাডারে শেষ পর্যন্ত দেখেছি প্লেনটা যুক্তরাজ্যের দিকেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বিগিন-হিলেই যাবে।

    তাঁর সাথে কি অন্য কেউ ছিলো?

    আমি কসম খেয়ে বলছি, সেটা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আমাদের ক্লায়েন্ট সরাসরি গাড়ি চালিয়ে হ্যাংগারে যেতে পারেন। চাইলে ইচ্ছে মতো মালামালও নিতে পারেন। প্লেনে কারা আছে সেটা অবতরণস্থলের কাস্টসের দেখার দায়িত্ব।

    ফশে তার হাত ঘড়িটা দেখে টাওয়ারের বাইরে পার্ক করা জেটপ্লেনগুলোর দিকে তাকালো। যদি তারা বিগিন-হিলেই গিয়ে থাকে তাহলে কতক্ষণে ওখানে ল্যান্ড করতে পারবে?

    কন্ট্রোলার তার সামনে থাকা রেকর্ডগুলো একটু হাতুরে দেখলো। এটা খুবই ছোট্ট একটা ফ্লাইট। তাঁর প্লেনটা…সাড়ে ছয়টার মধ্যেই ল্যান্ড করতে পারবে। এখন থেকে আরো পনেরো মিনিট পরে।

    ফশে চিন্তিত হয়ে তার একজন লোকের দিকে ঘুরলো। একটা ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করো। আমি লন্ডনে যাচ্ছি আর কেন্টের স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে ফোন দাও। বৃটিশ এমআই ফাইভকে নয়। আমি চাই একটু গোপনীয়তা। কেন্টের স্থানীয় পুলিশ, তাদেরকে বলো আমি চাই, টিবিংয়ের প্লেনটাকে ল্যান্ড করার অনুমতি দেয়া হোক, তারপর, টার্মাকেই সেটাকে ঘেরাও করে রাখুক তারা। আমি আসার আগ পর্যন্ত কেউ যেনো প্লেনের ভেতরে না ঢোকে।

     

    ৭৪.

    হকারের ভেতরে কেবিনে বসে ল্যাংডন সোফির দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি চুপ করে আছে।

    ক্লান্ত লাগছে, সে জবাব দিলো। আর কবিতাটা, আমি জানি না।

    ল্যাংডনও একই রকম ভাবছিলো। ইজিনের শব্দ আর প্লেনটার মৃদু-মন্দ আঁকি সম্মােহনের মতো লাগছে তার কাছে। তার মাথার যে জায়গাটাতে পাদ্রী আঘাত করেছিলো, সেখানে এখন ব্যথা করছে। টিবিং প্লেনের পেছনের দিকে গেছে। ল্যাংডন সিদ্ধান্ত নিলো এই একাকী মুহূর্তের সুযোগে, তার মনে যে কথাটা খেলে যাচ্ছে, সেটা সোফিকে বলবে। আমার মনে হয়, তোমার দাদু কেন, আমাকে আর তোমাকে একসাথে জুড়ে দিয়েছেন, সেটা অংশত আমি জানি। মনে হয়, কিছু একটা আছে, যা তিনি চেয়েছেন আমি তোমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেই।

    হলি গ্রেইলের ইতিহাস আর ম্যারি মাগদালিনই কি যথেষ্ট নয়?

    ল্যাংডন কী বলবে, ভেবে পেলো না। তোমার সাথে তার সমস্যাটা, যে কারণে তুমি দশ বছর ধরে তার সাথে কথা বলেনি। আমার মনে হয়, তিনি হয়তো আশা করেছিলেন, আমি সেই ব্যাপারটা তোমার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবো।

    সোফি তার সিটে নড়ে-চড়ে বসলো। আমি তোমাকে বলিনি, কেন আমাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিলো।

    ল্যাংডন খুব সাবধানে তার চোখের দিকে তাকালো। তুমি একটা যৌনাচারের দৃশ্য দেখেছিলে। তাই না?

    সোফি খুবই অবাক হলো। তুমি সেটা কীভাবে জানলে?

    সোফি, তুমি আমাকে বলেছিলে, তুমি এমন কিছু দেখেছিলে, যাতে তোমার স্থির বিশ্বাস হয়েছিলো, তোমার দাদু সিক্রেট সোসাইটির একজন সদস্য। আর তুমি যা-ই দেখে থাকো, সেটা তোমাকে এতোটাই ব্যথিত করেছিলো যে, তার সাথে তুমি এরপর থেকে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলে। আমি সিক্রেট সোসাইটি সম্পর্কে বেশ ভালোই জানি। তুমি কি দেখেছো, সেটা অনুমান করার জন্য দা ভিঞ্চির মস্তিকের দরকার হয় না।

    সোফি চেয়ে রইলো।

    সেটা কি বসন্ত কালে ছিলো? ল্যাংডন জিজ্ঞেস করলো। দিন-রাত যখন সমান থাকে, সে সময়টার কাছাকাছি? মার্চের মাঝামাঝি?

    সোফি জানালার বাইরে চেয়ে রইলো। আমি বসন্তের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরছিলাম। একটু আগেভাগেই বাড়িতে এসেছিলাম।

    তুমি এ ব্যাপারে আমাকে বলতে চাও?

    আমি বলবো না। সে আচমকা ল্যাংডনের দিকে ঘুরে তাকালো, তার চোখে আবেগের বহিপ্রকাশ। আমি কী দেখেছি, আমি জানি না।

    নারী-পুরুষ উভয়েই ছিলো সেখানে?

    একটু সময় নিয়ে, সে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    সাদা আর কালো পোশাক পরা ছিলো?

    সে চোখ মুছে মাথা নাড়লো। মনে হলো, এবার হয়তো খুলে বলবে। মেয়েরা সাদা গাউন…আর সোনালী জুতা পরা ছিলো। তাদের হাতে ছিলো সোনালী রঙের গোলক। পুরুষেরা কালো পোশাক আর কালো জুতা পরা ছিলো।

    ল্যাংডন তার আবেগটা প্রশমিত করলো, তারপরেও সে বিশ্বাস করতে পারলো না, এসব সে কী শুনছে। সোফি নেভু ঘটনাচক্রে দুহাজার বছরের পুরনো একটি পবিত্র আচার-অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেছে।

    মুখোশ ছিলো? সে জিজ্ঞেস করলো, নিজের কণ্ঠটা শীতল রাখার চেষ্টা করলো।

    হ্যাঁ। সবারই মুখোশ ছিলো। সাদাগুলো মেয়েরা, কালোগুলো পুরুষের।

    ল্যাংডন এই অনুষ্ঠানটির সম্পর্কে বই-পত্রে পড়েছে, এর আধ্যাত্মিক শেকড়টাও সে বোঝে। এটাকে বলে হায়ারোস গামোস, সে আস্তে করে বললো। প্রায় দুহাজার বছরের পুরনো। মিশরীয় যাজক আর যাজিকারা এটা নিয়মিতভাবেই পালন করতো নারীর পুণরুৎপাদন ক্ষমতাকে উদযাপন করার জন্য। সে একটু থেমে তার দিকে ঝুঁকলো। আর, তুমি যদি কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া, এটার আসল অর্থ না বুঝে, হায়ারোস মোস প্রত্যক্ষ করে থাকো, তবে আমি অনুমাণ করতে পারি, সেটা খুব যন্ত্রণাদায়কই ছিলো।

    সোফি কিছুই বললো না।

    হায়ারোস গামোস হলো একটি গৃক শব্দ, সে আবারো বলতে লাগলো। এর অর্থ পবিত্র বিয়ে।

    যে জিনিস আমি দেখিছি, সেটা কোন বিয়ে ছিলো না।

    মিলন অর্থে বিয়ে, সোফি।

    তুমি বলতে চাচ্ছো, যৌনমিলন অর্থে।

    না।

    না? সোফি বললো, তার অলিভ রঙের চোখ ল্যাংডনকে বাজিয়ে দেখছে।

    ল্যাংডনও পাল্টা জবাব দিলো। তো…হ্যাঁ, বললে, সে রকমই মনে হয়, কিন্তু আজকে আমরা যেভাবে ব্যাপারটা বুঝি, সে রকমভাবে নয়। সে ব্যাখ্যা করলো, যদিও সোফি দৃশ্যত একটা যৌনাচারের অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেছে, কিন্তু হায়ারোস গামোসের সাথে যৌনাকাঙ্খার কোন ব্যাপার-স্যাপার নেই। এটা আধ্যাত্মিক কাজ। ঐতিহাসিকভাবে, যৌনমিলনকে দেখা হোতো নারী-পুরুষের ঈশ্বর অভিজ্ঞতা হিসেবে। প্রাচীন কালে বিশ্বাস করা হতো, পুরুষ আত্মিক দিক থেকে অসম্পূর্ণ, যতোক্ষণ না তার নারী অভিজ্ঞতা না হয়। নারী আর পুরুষের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে পুরুষ সম্পূর্ণতা অর্জন করে অবশেষে, অর্জন করে gnosis—স্বর্গীয় জ্ঞান। আইসিসের সময় থেকে, যৌনাচার অনুষ্ঠানগুলোকে মানুষের মত থেকে স্বর্গের একমাত্র সেতু হিসেবে বিবেচনা করা হোতো। নারী সংসর্গে, ল্যাংডন বললো, মানুষ এক ধরনের অতি উত্তেজনাকর মুহূর্ত অর্জন করে, যখন তার মন সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে পড়ে আর সে দেখতে পায় ঈশ্বরকে।

    সোফিকে খুবই সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো। প্রার্থনা হিসেবে সঙ্গম?

    ল্যাংডন কিছুই বললো না, যদিও সোফির কথাটা একদম ঠিক। দৈহিকভাবে বীর্য ঋলনের মুহূর্তে পুরুষের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা কয়েক মুহূর্তের জন্য শূন্য হয়ে যায়। একটি সাময়িক, সংক্ষিপ্ত সময়ের মানসিক শূন্যতা। একটা স্বচ্ছ মুহূর্ত, যখন ঈশ্বর তার কাছে আবির্ভূত হতে পারে। ধ্যান-সাধক গুরুরা এই অবস্থা অর্জন করে কোন রকম যৌন সঙ্গম ছাড়া আর নির্বানকে প্রায়শই অন্তহীন পুলক হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

    সোফি, ধীর কণ্ঠে ল্যাংডন বললো, এটা মনে রাখা খুবই জরুরি যে, প্রাচীন কালের লোকেরা যৌনতা সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতো, তা আমাদের আজকের দিনের ঠিক বিপরীত। যৌনতা নতুন জীবন আনে চুড়ান্ত অলৌকিক আর অলৌকিক কেবলমাত্র ঈশ্বরই করতে পারেন। নারীর এই নতুন জীবন উৎপাদন করার ক্ষমতার জন্যই তাকে পবিত্র জ্ঞান করা হয়, একজন ঈশ্বর হিসেবে। যৌন মিলন হলো মানবিক আত্মার দুই অধের্কের সশ্রদ্ধ মিলন নারী এবং পুরুষ—যার ভেতর দিয়ে পুরুষ তার আধ্যাত্মিকতার পূর্ণতা পায় এবং ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। তুমি যা দেখেছে সেটা যৌনতা সম্পর্কিত নয়, আধ্যাত্মিকতা সর্ম্পকিত। হায়ারো গামোস আচার-অনুষ্ঠানটা কোন বিকৃত যৌনাচার নয়। এটা খুবই পবিত্র একটি অনুষ্ঠান।

    তার কথাগুলো সোফির স্নায়ুতে গিয়ে আঘাত করলো বলে মনে হলো। তার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তে লাগলো আবার। জামার আস্তিন দিয়ে সেগুলো মুছে ফেললো সে। ল্যাংডন সোফিকে কিছুটা সময় দিলো। স্বীকার করবেই হবে, ঈশ্বরের পথ হিসেবে সঙ্গমের ধারণাটি প্রথম শুনলে, ভীমড়ি খাবার যোগাড় হয়। ল্যাংডনের ইহুদি ছাত্রেরা সব সময়ই হতবুদ্ধিকর হয়ে পড়তো, যখন ল্যাংডন তাদেরকে প্রথমে বলতো যে, প্রথম দিকে ইহুদি ঐতিহ্যে যৌনাচার ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিলো। মন্দিরের অভ্যন্তরেই, অন্য কোথাও নয়। তখনকার সময়ে, ইহুদিরা বিশ্বাস করতো, পবিত্রতম সোলেমনের মন্দিরটা শুধুমাত্র ঈশ্বরের ঘরই নয়, বরং সেটা তার শক্তিশালী সমকক্ষ নারী, শেকিনারও ঘর। পুরুষেরা আধ্যাত্মিকতা সম্পূর্ণ করতে মন্দিরের যাজিকাদের কাছে আসতো অথবা হায়ারোস ভূলেদের কাছে তাদের সাথে তারা সঙ্গম করে স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা লাভ করতো শারিরীক মিলনের মধ্য দিয়ে। ইহুদি টেটরাগ্রামাটন YHWH–ঈশ্বরের পবিত্র নাম আসলে এসেছে জিহোভা থেকে। এটি হলো, পুরুষ জাহ্ এবং ইভ্‌ বা হাওয়ার এক হিব্রু নাম হাভাহ্ র সম্মিলিত রূপ।

    প্রথম দিকে, ল্যাংডন কোমল কণ্ঠে ব্যাখ্যা করলো, যৌনতাকে ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে মানুষের ব্যবহার করাটাকে ক্যাথলিক চার্চ তাদের শক্তি কেন্দ্রের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করেছিলো। ঈশ্বরের সাথে সংযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে স্বঘোষিত চার্চের জন্য এটা অস্বস্তিকরই ছিলো। তাই, সংগত কারণেই, তারা যৌনতাকে শয়তানী কাজ বলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। এর ফলে, তারা এই কাজটাকে মহাপাপ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলো। অন্যান্য প্রধান প্রধান সব ধর্মও একই কাজ করেছে।

    সোফি চুপ করে রইলো, কিন্তু ল্যাংডন আঁচ করতে পারলো, সে তার দাদুকে ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেছে। পরিহাসের বিষয় হলো, ল্যাংডন ঠিক এই লেকচারটাই এই সেমিস্টারে শ্রেণী কক্ষে দিয়েছিলো। যৌনতার ব্যাপারে আমরা দ্বন্দ্বে ভূগি, সেটা কি অবাক করা ব্যাপার না? সে তার ছাত্রদের জিজ্ঞেস করেছিলো। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য আর শরীরবৃত্তীয় বিজ্ঞান বলে যে, যৌনতা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার আধ্যাত্মিক পূর্ণতার এক চমকপ্রদ পথ-তারপরও, আধুনিক ধর্মগুলো এটাকে একটা লজ্জাজনক কাজ বলে ঘোষণা দিয়েছে। আমাদেরকে শিক্ষা দেখা হয়, যৌন আকাঙ্খকে ভয় করতে, সেটা নাকি শয়তানের কাজ।

    ল্যাংডন ঠিক করলো, সে আর তার ছাত্রদেরকে এই কথাটা বলে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়াবে না যে, পৃথিবীব্যাপী এক ডজনের বেশি সিক্রেট সোসাইটি—যাদের অনেকেই খুবই প্রভাবশালী—এখনও যৌনাচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে প্রাচীন ঐতিহ্যটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। Eeys wide shut ছবিতে অভিনেতা টম ক্রুজের চরিত্রটি অতি অভিজাত ম্যানহাটনবাসীদের একটি গোপন সম্মেলনে ঢুকে পড়ে হায়ারোস গামোস প্রত্যক্ষ করে ফেলে। দুঃখজনক যে, বেশিরভাগ চলচ্চিত্রকারই ব্যাপারটাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে থাকে।

    প্রফেসর ল্যাংডন? একজন ছাত্র পেছনের বেঞ্চ থেকে হাত তুলে বললো। তার। কণ্ঠ শুনে মনে হলো, সে খুব আশাবাদী। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, চার্চে না গিয়ে আমাদের বেশি বেশি সঙ্গম করা উচিত?

    ল্যাংডন মুখ টিপে হাসলো। হারভার্ডের পার্টি থেকে সে জানতে পেরেছে, এইসব ছেলে পেলেরা যথেষ্ট পরিমাণেই সঙ্গম করে থাকে। মহোদয়গণ, সে বলেছিলো, জানতো, সে খুব নাজুক অবস্থায় আছে। আমি কি আপনাদেরকে একটা উপদেশ দিতে পারি। প্রাক-বিবাহ সঙ্গমকে উৎসাহিত না করে এবং আপনারা সবাই এক

    একজন কুমার বা ফেরেস্তা, এটা না মনে করেই, আমি আপনাদেরকে, আপনাদের যৌন জীবন নিয়ে একটা উপদেশ দেবো।

    সব ছাত্র সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো, শোনার জন্য উদগ্রীব তারা।

    এরপর, আপনারা মেয়েদের সাথে সময় কাটানোর মুহূর্তে, নিজেদের মনকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন, যদি আপনারা যৌনতাকে আধ্যাত্মিক বা মরমী হিসেবে না খুঁজে পান, তবে নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করে খুঁজে পাবেন সেই স্বর্গীয় স্ফুলিঙ্গটি, যা মানুষ কেবলমাত্র পবিত্র নারীদের সাথে মিলিত হবার মধ্য দিয়েই অর্জন করে থাকে।

    মেয়েরা মুচকি হেসে মাথা নাড়লো আর ছেলেরা একে অন্যের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তাকালো।

    ল্যাংডন দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলো। কলেজের ছেলেগুলো এখনও বাচ্চা-ছেলেই রয়ে গেছে।

     

    প্লেনের জানালায় মাথাটা ঠেকাতেই সোফির কপালে ঠাণ্ডা অনুভূত হলো। সে শূন্যে চেয়ে রইলো। এইমাত্র ল্যাংডন তাকে যা বলেছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। সে এক ধরনের অনুশোচনায় আক্রান্ত হলো। দশটি বছর। সে এক গাদা চিঠির কথা ভাবলো, যেগুলো সে কোনদিন খুলে পড়েনি। চিঠিগুলো তার দাদু পাঠিয়েছিলো। আমি রবার্টকে সবই বলবো। জানালা থেকে মাথাটা না সরিয়েই সে কথা বলা শুরু করলো, ধীরে ধীরে আর ভয়ার্ত কণ্ঠে।

    সেই রাতে কী ঘটেছিলো, সেই কথাটা বলা শুরু করতেই তার মনে হলো, সে অতীতে ফিরে গেছে…তার দাদুর নরম্যান্ডির শ্যাতুতে…ফাঁকা বাড়িটাতে খুঁজতে খুঁজতে …নিচ থেকে কিছু কণ্ঠ শুনতে পেয়েছিলো…তারপর, লুকানো দরজাটা খুঁজে পেলো সে। পাথরের সিঁড়িটা দিয়ে নিচে নেমে গেলো। মাটির নিচে গুহার মতো সেই জায়গাটা। সেটা ছিলো মার্চ মাস। সিঁড়ির নিচে, অন্ধকার জায়গাটা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সে দেখতে পেয়েছিলো কমলা রঙের মোমবাতির আলোতে কতগুলো আগন্তুক গুণগুণ করে গান গাইছে।

    আমি স্বপ্ন দেখছি, সোফি নিজেকে বলেছিলো, এটা স্বপ্ন। তাছাড়া আর কী?

    নারী আর পুরুষেরা সামনে পেছনে দুলছে, কালো, সাদা, কালো, সাদা। নারীদের হাতে সোনালী গোলক ধরা আর তারা গুণগুণ করে গাইছে এক সাথে, শুরুতে আমি তোমার সাথেই ছিলাম, সব পবিত্র ভোরেই, আমি তোমাকে জঠরে ধারণ করেছি দিন শুরুর আগেই।

    মেয়েরা তাদের গোলকগুলো নিচে নামালেই পুরুষেরা সবাই পিছু হটে যাচ্ছে আর ওপরে ওঠাতেই আবার সামনে এসে পড়ছে। তারা চারিদিকে গোল হয়ে আছে, আর সামনের দিকে কিছু একটার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

    তারা কিসের দিকে তাকিয়ে আছে?

    কণ্ঠগুলো আরো জোরে জোরে শোনা গেলো এবার। উচ্চ কণ্ঠ। আর দ্রুত।

    নারীকে যে ধারণ করে আছে, সে হলো প্রেম! মেয়েরা বললো, হাতে ধরা গোলকগুলো আবারো তুলে ধরলো। পুরুষেরা জবাব দিলো, তার স্থায়ী নিবাস হলো অমরত্বে

    গুঞ্জনটা আবারো বাড়লো। এবার বজ্রপাতের মতো শোনালো। দ্রুত। অংশগ্রহণকারীরা সামনে এগিয়ে হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো।

    ঠিক সেই মুহূর্তেই, সোফি দৃশ্যটা দেখতে পেয়েছিলো।

    মাঝখানে একটা নিচু বেদীতে একজন লোক শুয়ে আছে। সে সম্পূর্ণ নগ্ন, কালো একটা মুখোশ পরে উপুড় হয়ে আছে। সোফি সঙ্গে সঙ্গেই চিনতে পারলো কাঁধের জন্ম দাগটা দেখে। সে প্রায় চিৎকার করে উঠলো। গ্র্যঁ পেয়া! এই দৃশ্যটা ছিলো সোফির চিন্তার বাইরে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি কিছু তার জন্যে অপেক্ষা করছিলো।

    তার দাদুর দুই পায়ের ফাঁকে সাদা মুখখাশ পরা একজন নগ্ন নারী। তার শরীরটা ছিলো বেশ নাদুস-নুদুস। গুঞ্জনের সাথে, ছন্দের তালে তালে শরীর দোলাচ্ছিলো— সোফির দাদুর সাথে সঙ্গম করছিলো সে।

    সোফি ঘুরে দৌড়ে চলে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু সে পারেনি। বৃত্তাকারে অংশগ্রহণকারীরা, মনে হলো, এবার গান গাইতে শুরু করেছে। গুঞ্জনটা বাড়তে বাড়তে আচম্‌কা একটা গর্জন হলো। পুরো ঘরটা যেনো উত্তেজনার শীর্ষ সুখে ফেঁটে পড়লো। সোফি দম নিতে পারছিলো না। সে নিরবে ওখান থেকে বের হয়ে, গাড়ি চালিয়ে প্যারিসে ফিরে এসেছিলো।

     

    ৭৫.

    চার্টার করা বিমানটা যখন সবেমাত্র মোনাকো অতিক্রম করলো, তখন আরিঙ্গাবোসা দ্বিতীয়বারের মতো ফশের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। তিনি এয়ার-সিকনেস ব্যাগটা হাতে তুলে নিলেন, কিন্তু তার মনে হলো বমি করলে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কোন রকমে বিমানটা থামুক!

    ফশের নতুন সংবাদটা মনে হচ্ছে দূর্বোধ্য। অবশ্য, আজ রাতের সবকিছুই তো দুবোর্ধ হয়ে উঠছে। এসব হচ্ছে কি? সবকিছুই যেনো হাত ফসকে বের হয় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। সাইলাসকে জড়িত করে পেলাম কি? আমিই বা জড়িত হয়ে পেলাম কি।

    টালমাটাল পায়ে আরিজারোসা কপিটের দিকে হেটে গেলেন। আমার গন্ত ব্যস্থল বদলানোর প্রয়োজন।

    পাইলট পেছনে ফিরে তাকিয়ে হাসলো। আপনি ঠাট্টা করছেন, তাই না?

    না। আমাকে এক্ষুণিই লন্ডনে যেতে হবে।

    ফাদার, এটা চার্টার বিমান, কোন ট্যাক্সি-ক্যাব না।

    আমি আপনাকে এজন্যে বাড়তি টাকা দেবো। কত চান? লন্ডন এখান থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ, তো

    ফাদার এটা টাকার প্রশ্ন নয়, অন্য কারণও রয়েছে।

    দশ হাজার ইউরো। এক্ষুণি দেবো।

    পাইলট বিস্ময়ে তার দিকে চেয়ে রইলো। কত? কোন্ ধরনের পাদ্রী এই পরিমাণ টাকা বহন করে?

    আরিঙ্গাবোসা তাঁর কালো বৃফকেসটার কাছে ফিরে গিয়ে সেটা খুলে একটা বন্ড বের করে পাইলটের হাতে বন্ডটা তুলে দিলেন।

    এটা কি? পাইলট জানতে চাইলো।

    দশ হাজার ইউরোর বন্ড, ভ্যাটিকান ব্যাংক থেকে ভোলা।

    পাইলট সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো।

    এটা নগদ টাকার সমপরিমাণ।

    না, নগদই চাই, বন্ডটা ফিরিয়ে দিয়ে পাইলট বললো।

    আরিঙ্গাবোসা নিজেকে খুব দুর্বল বলে মনে হলো। এটা জীবন-মরণ সমস্যা। আপনি অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবেন। আমার লন্ডনে যেতেই হবে।

    পাইলট বিশপের হাতের আঙ্গুলে সোনার আঙটিটার দিকে তাকালো। আসল হীরার?

    আরিঙ্গাবোসা আঙটিটার দিকে তাকালেন। এটা আমি হাতছাড়া করতে পারবো না।

    পাইলট কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিজের কাজে ফিরে গেলো। আরিঙ্গাবোসা গভীর দুঃখবোধে আক্রান্ত হলেন। তিনি আঙটিটার দিকে আবারো তাকালেন। অনেকক্ষণ পর, আঙ্গুল থেকে আঙটিটা খুলে পাইলটের সামনে প্যানেলের ওপর সেটা রাখলেন।

    আরিঙ্গাবোসা ককপিট থেকে দ্রুত বের হয়ে এসে নিজের সিটে গিয়ে বসলেন। পনেরো সেকেন্ড পরে, পাইলট যে গতিপথ বদলাচ্ছে, সেটা তিনি টের পেলেন। তারপরেও, আরিজারোসা খুব লজ্জিত বোধ করলেন। একটা অসাধারণ পরিকল্পনা। এখন, অনেকটা তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ছে…এর শেষটা, দৃষ্টিসীমার মধ্যে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

     

    ৭৬.

    ল্যাংডন দেখতে পেলো হায়ারোস গামোস-এর কথাটা শুনে সোফি এখনও থিতু হতে পারেনি। আর তার নিজের বেলায়, ল্যাংডনও কথাটা জানতে পেরে রোমাঞ্চ অনুভব করছে। এজন্যে নয় যে, সোফি ঐ আচার-অনুষ্ঠানটা প্রত্যক্ষ করেছে, বরং রোমাঞ্চকর ব্যাপার হলো, তার নিজের দাদুই ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অংশগ্রহণকারী… প্রায়োরি অব সাইওনের গ্র্যান্ড মাস্টার। খুবই বিখ্যাত লোকেদের সংগঠন। দা ভিঞ্চি, বত্তিচেলি, আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো, জঁ কতো…জ্যাক সনিয়ে।

    আমি জানি না, তোমাকে আর কী বলতে পারি, ল্যাংডন বললো আস্তে করে।

    সোফির চোখ দুটো এখন গভীর সবুজ দেখাচ্ছে, অশ্রুসিক্ত। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো লালন-পালন করেছেন।

    ল্যাংডন তার আবেগটা বুঝতে পারলো। খুবই করুণ। গভীর আর সুদূরের। সোফি নেভু এখন তার দাদুকে সম্পূর্ণ নতুন আলোয় দেখতে পাচ্ছে।

    বাইরে ভোর হচ্ছে খুব দ্রুত। নিচের পৃথিবী এখনও অন্ধকারে ডুবে আছে।

    কিছু খাবেন, মাই ডিয়ার। টিবিং উৎফুল্ল হয়ে তাদের সাথে যোগ দিলেন, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন কোক আর ওল্ড ক্র্যাকার্স। খাবারগুলো খুব বেশি পরিমাণে নেই বলে তিনি ক্ষমা চাইলেন। আমাদের পাদ্রী বন্ধু এখনও কথা বলছে না, তিনি খুশিতে বললেন, তাকে সময় দিন। একটা ক্র্যাকারে কামড় দিতে দিতে তিনি কবিতাটার দিকে তাকালেন। তো, কোন কিছু পেলেন? সোফির দিকে তাকিয়ে বললেন। আপনার দাদু আমাদেরকে কি বলতে চাচ্ছেন? এই সমাধি ফলকটা আবার কোথায়? যা টেম্পলার কর্তৃক প্রশংসিত।

    সোফি মাথা ঝাঁকালো, নিরব রইলো।

    টিবিং যখন কবিতার মধ্যে ডুব মারলেন, ল্যাংডন তখন একটা কোকের ক্যান খুলে চুমুক দিতে দিতে জানালার দিকে তাকালো। তার চিন্তা-ভাবনাগুলো গুপ্ত আচার অনুষ্ঠান আর কোডের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। টেম্পলারদের কর্তৃক প্রশংসিত একটা সমাধি ফলকই হলো চাবি। সে বড় একটা চুমুক দিলো কোকের ক্যানে। টেম্পলারদের কর্তৃক প্রশংসিত একটা সমাধি ফলক। কোকটা খুব গরম।

    ল্যাংডন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইংলিশ চ্যানেলটা। আর বেশি দেরি নেই এখন।

    টেম্পলারদের কর্তৃক প্রশংসিত একটা সমাধি ফলক।

    প্লেনটা যখন আবার মাটির ওপরে উড়তে লাগলো, তখন তার মনে হুট করেই একটা আলোর ছটা খেলে গেলো। আপনারা এটা বিশ্বাস করতে পারবেন না, সে অন্যদের দিকে ঘুরে কথাটা বললো। টেম্পলারদের সমাধি ফলকটা আমি বের করে ফেলেছি।

    টিবিংয়ের চোখ দুটো গোল হয়ে গেলো। আপনি জানেন, সমাধি ফলকটা কোথায়?

    ল্যাংডন হাসলো। কোথায় না, বলুন কি।

    সোফি শোনার জন্য সামনের দিকে ঝুকলো।

    আমার মনে হয়, সমাধি ফলকটা আসলে আক্ষরিক অর্থে একটা স্টোন-হেডকেই নির্দেশ করেছে, নিজের উত্তেজনাকে প্রশমিত করে ল্যাংডন ব্যাখ্যা করলো। এটা

    কোন সমাধি ফলক নয়।

    একটা পাথরের মাথা? টিবিং জানতে চাইলো।

    সোফিকেও খুব দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হলো।

    লেই, ল্যাংডন বললো, ইনকুইজিশনের সময় চার্চ নাইট টেম্পলারদেরকে সব ধরনের ধর্মবিরুদ্ধ কাজের জন্য অভিযুক্ত করেছিলো, ঠিক?

    ঠিক। সবগুলো বানোয়াট অভিযোগ এনেছিলো। সমকামীতা, ক্রুশের উপর প্রস্রাব করা, শয়তান পূজা, আরো অনেক কিছু।

    আর সেই তালিকায় ভূয়া মূর্তি পূজাও ছিলো, ঠিক? নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, চার্চ টেম্পলারদেরকে গোপনে ধোদাই করা পাথরের উপাসনা করার জন্য অভিযুক্ত করেছিলো …যা ছিলো পাগনদের ঈশ্বর–

    বাফোমেট! টিবিং উচ্চস্বরে বললেন।

    হায় আমার ঈশ্বর, রবার্ট, আপনি ঠিকই বলেছেন। একটা পাথরের মাথা, টেম্পলারদের কর্তৃক প্রশংসিত!

    ল্যাংডন খুব দ্রুত সোফিকে ব্যাখ্যা করে বোঝালো, বাফোমেট হলো প্যাগানদের উর্বরতার দেবতা, পুনঃউৎপাদনের শক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট। ভেড়া অথবা ছাগলের মাথা হলো বাফোমেটের প্রতীক। টেম্পলাররা বাফোমেটকে সম্মান দেখানোর জন্য পাথরের একটা রেপ্লিকাকে বৃত্তাবদ্ধ হয়ে প্রার্থনা করতো।

    বাফোমেট অনুষ্ঠানটা, টিবিং রহস্য করে বললেন। যৌনমিলনের সৃষ্টিশীল জাদুকে সম্মান জানানোর জন্য করা হোততা। কিন্তু পোপ ক্লেমেন্ত সবাইকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, বাফোমেটের মাথাটা আসলে শয়তানের মাথা। পোপ বাফোমেটের মাথাটাকে টেম্পলারদের বিরুদ্ধে একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

    ল্যাংডন একমত পোষণ করলো। চার্চ বাফোমেটকে শয়তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলো। যদিও সেটা সম্পূর্ণ নয়। ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান থ্যাংকস গিভিং টেবিলে এখনও প্যাগান শিং ওয়ালা উর্বরতার প্রতীকটি থাকে। কর্নকোপিয়া হলো বাফোমেটেরই একটি প্রতিরূপ। বাফোমেটের শিংটা ভি-চিহ্ন হিসেবেও বদলে গেছে। যা বিজয়সূচক চিহ্ন হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, টিবিং উত্তেজনায় বললেন, কবিতাটায় যা বলা হয়েছে, সেটা বাফোমেটকেই নির্দেশ করে। টেম্পলারদের কর্তৃক প্রশংসিত একটি পাথরের মাথা।

    ঠিক আছে, সোফি বললো, কিন্তু বাফোমেট যদি টেম্পলার কর্তৃক প্রশংসিত পাথরের মাথা হয়ে থাকে, তবে আমাদের নতুন একটা সমস্য দেখা দেবে। সে ক্রিপ্টেক্সের ডায়ালের দিকে ইঙ্গিত করলো। বাফোমেটের আটটি অক্ষর। আমাদের চাই মাত্র পাঁচটি।

    টিবিং দাঁত বের করে হাসলেন। মাইডিয়ার, এখানেই দরকার হয়ে পড়ে এটবাশ সিফার-এর ভূমিকা।

     

    ৭৭.

    ল্যাংডন খুবই অভিভূত হলো। টিবিং হিব্রু ভাষার বাইশটি অক্ষরের সবগুলোই লিখে ফেললেন—আলেফ-বেই—একবারে স্মৃতি থেকে। তিনি হিব্রু অক্ষরের বদলে সেগুলোর সমকক্ষ রোমান অক্ষরগুলো ব্যবহার করলেন। অক্ষরগুলো তিনি জোরে জোরে উচ্চারণ করে পড়ে শোনালেন।

    A B G D H V Z C h T Y K L M N S O P Tz Q R Sh Th

    আলেফ, বেই, গিমেল, ডালেত, হেই, ভাভ্‌, জাইন, শেত, তেত, য়ুদ, কাফ, লাম্‌দ, মিম্‌, নুন, সামেখ, আইন, পাই, জাদিক, কফ, রিশ, শিন এবং তাভ। টিবিং নাটকীয়ভাবেই ভুরু দুটো নাচালেন। প্রচলিত হিব্রু ভাষায় স্বরবর্ণের উচ্চারণ থাকলে ও তা লেখা হয় না। এজন্যেই, আমরা যখন হিব্রু অক্ষর দিয়ে বাফোমেট শব্দটি লিখবো, তখন, সেটা তার তিনটি স্বরবর্ণ বাদ দিয়ে লিখতে হবে–

    পাঁচটি অক্ষর, সোফি উত্তেজিত হয়ে বললো। টিবিং সায় দিয়ে আবার লিখতে শুরু করলেন। ঠিক আছে, এখানে হিব্রু অক্ষরে যথাযথভাবে বাফোমেট লেখা হয়েছে। আমি বাদ দেয়া স্বরবর্ণগুলোও লিখছি, বোঝার সুবিধার্থে।

    B a P O Me Th

    মনে রাখবেন, টিবিং বললেন, হিব্রু সাধারণত বিপরীত দিক থেকে লেখা হয়। কিন্তু, আমরা এটবাশটা এইভাবেই ব্যবহার করবো। এরপর, আমাদেরকে বিকল্প স্কিম লিখতে হবে, সবগুলো বর্ণমালাকে পুণরায় বিপরীত দিক থেকে।

    আরেকটা সহজ রাস্তা আছে, টিবিংয়ের কাছ থেকে কলমটা নিয়ে সোফি বললো। একটা ছোট্ট কৌশল, যা আমি শিখেছি রয়্যাল হলোওয়েতে। সোফি বর্ণমালার প্রথম অর্ধেকটা লিখলো বাম থেকে ডান দিকে, তারপর, সেগুলোর নিচে বাকি অর্ধেক বর্ণমালা লিখলো ডান থেকে বাম দিকে। ক্রিপ্টো বিশেজ্ঞরা এটাকে বলে ফোন্ড-ওভার। অর্ধেকটা জটিল, পুরোটা পরিষ্কার।

    A B G D H V Z Ch T Y K
    Th Sh R Q Rz P O S N M L

     

    টিবিং সোফির হাতের লেখাটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। একদম ঠিক লিখেছেন। হলোওয়ের ছেলে-পুলেরা কাজকর্ম করতে পারছে দেখে খুব ভালো লাগছে।

    সোফির বিকল্প মেট্রিক্সটার দিকে তাকিয়ে ল্যাংডন ভেতরে ভেতরে খুব রোমাঞ্চ অনুভব করলো। এটবাশ সিফারটা যখন প্রথম দিকে পণ্ডিতরা ব্যবহার করেছিলো, তখন তারাও একই রকম রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলো। এখন সেই সিফারটাকে শেশাখ-এর রহস্য বলে ডাকা হয়। বছরের পর বছর ধরে ধর্মীয় পণ্ডিতরা শেশাখ নামের শহরটার উল্লেখ দেখে খেই হারিয়ে ফেলতেন। এই নামের কোন শহর, কোন মানচিত্র বা দলিল-দস্তাবেজের উল্লেখ নেই, তার পরেও এই নামটা জেরেমিয়ার পুস্তকে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে—শেশাখের রাজা, শেখ নগরী, শেশাখের জনগণ। শেষে, একজন পণ্ডিত এটবাশ সিফার প্রয়োগ করে শব্দটার আসল রূপ বের করেছিলেন। ফলাফলটা ছিলো হতবুদ্ধিকর। সিফারের মাধ্যমে দেখা গেলো যে, শেশা আসলে অন্য আরেকটা বিখ্যাত শহরের সাংকেতিক নাম। সংকেত উদ্ধারটা ছিলো খুবই সহজ।

    Sheshach হিব্রুতে বানান করে লেখা হয় : Sh-Sh-Sh-K।

    এটাকে যখন বিকল্প মেট্রিক্সে ফেলা হলো, তখন সেটা হয়ে গেলো B-B-L B-B-L হিব্রুতে উচ্চারণ করা হয় Babel।

    শেশাখের রহস্যটা উন্মোচিত হলো বাবেল শহর হিসেবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরো কতগুলো এটবাশ কোডের শব্দ ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে উদ্ধার করা হলো, উন্মোচিত করা হলো লুক্কায়িত অর্থগুলো, যা পণ্ডিতরা জানতো না কোথায় ছিলো সেগুলো।

    আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি, ল্যাংডন ফিফিস্ করে বললো, নিজের উত্তেজনা দমন করতে পারছে না সে।

    আর কয়েক ইঞ্চি, রবার্ট, টিবিং বললো। সোফির দিকে তাকিয়ে হাসলেন। আপনি প্রস্তুত?

    সোফি সায় দিলো।

    ঠিক আছে, হিব্রুতে বাফোমেটকে স্বরবর্ণ ছাড়া পড়া হয় : B-P-V-M-Th। এখন আমরা আপনার এটবাশ বিকল্প মেট্রিক্সটা প্রয়োগ করে আমাদের পাসওয়ার্ডের পাঁচটি অক্ষরে অনুবাদ করবো।

    ল্যাংডনের হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেলো। B-P-V-M-Th। সূর্যটার আলো এখন জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে। সে সোফির বিকল্প মেট্রিক্সটার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করলো। B হলো Sh… P হলো V…

    টিবিং ক্রিসমাসের সময় স্কুলের বাচ্চাদের মতো দাঁত বের করে হাসতে লাগলেন। এটবাশ সিফারটাতে হয়ে যায় … তিনি একটু থামলেন। বেশ, বেশ! তার মুখটা ফ্যাঁকাশে হয়ে গেলো।

    ল্যাংডন মাথা নাড়লো।

    হয়েছে কি? সোফি জানতে চাইলো।

    আপনারা বিশ্বাস করবেন না। টিবিং সোফির দিকে তাকালেন। বিশেষ করে আপনি।

    কি বলতে চাচ্ছেন? সে বললো।

    চমৎকার… নিচু স্বরে বললেন। একেবারেই অভূতপূর্ব! টিবিং আবারো কাগজের ওপর লিখলেন। এই তো, আপনার পাসওয়ার্ড। কাগজের লেখাটা তাদেরকে দেখালেন।

    Sh-V-P-Y-A

    সোফি ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। এটা কি?

    ল্যাংডনও সেটা চিনতে পারলো না।

    টিবিংয়ের কণ্ঠটা মনে হলো বিস্ময়ে কাঁপছে। এটা হলো, বন্ধুরা আমার, আসলে জ্ঞানের প্রাচীন একটি শব্দ!

    ল্যাংডন অক্ষরগুলো আবারো পড়লো। এই ফুলটা যুক্ত করবে ওদানের প্রাচীন এক শব্দ। মুহূর্তেই সে ধরতে পারলো! সে একটুও ভাবেনি এটা। জ্ঞানের প্রাচীন একটা শব্দ!

    টিবিং হাসতে লাগলেন। আক্ষরিক অর্থেই!

    সোফি শব্দটা দেখে ডায়ালের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই, বুঝতে পারলো ল্যাংডন আর টিবিং একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। দাঁড়ান! এটা পাসওয়ার্ড হতে পারে না, সে বললো। ক্রিপ্টেক্সের ডায়ালে Sh অক্ষরটা নেই। এটাতে তো ঐতিহ্যবাহী রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছে।

    শব্দটা পড়ো, ল্যাংডন তাগাদা দিলো। দুটো জিনিস মনে রেখো। হিব্রুতে Sh-কে S-এর মতোও উচ্চারণ করা যায়, নির্ভর করে বাচনভঙ্গীর ওপরে। যেমন P অক্ষরটা F-এর মতো উচ্চারিত করা যায়।

    SVFYA? সে ভাবলো, বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।

    জিনিয়াস! টিবিং যোগ করলেন। VAV অক্ষরটা প্রায়শই 0 স্বরবর্ণের মতো উচ্চারিত হয়।

    সোফি আবারো অক্ষরগুলোর দিকে তাকালো, সেগুলোর উচ্চারণ কী রকম হয় সেটা চেষ্টা করে দেখলো।

    S… 0… f… y… a।

    ল্যাংডন সোৎসাহে মাথা নাড়লো। হ্যা! গৃক ভাষায় সোফিয়ার আক্ষরিক অর্থ হলো জ্ঞান। তোমার নামের উৎসটা হলো আক্ষরিক অর্থেই জ্ঞান।

    সোফি হঠাৎ করেই তার দাদুর অভাব অনুভব করলো, প্রচণ্ডভাবে। তিনি আমার নামে প্রায়োরিদের কি-স্টোনটা এনক্রিপ্ট করেছেন। তার গলাটাতে কিছু একটা আঁটকে গেলো যেননা। সব কিছুই মনে হচ্ছে নিখুঁত। কিন্তু পাঁচ অক্ষরের ডায়ালটার দিকে তাকাতেই, সে বুঝতে পারলো আরো একটা সমস্যা রয়ে গেছে। কিন্তু দাঁড়ান… Sophia শব্দের তো অক্ষর ছয়টা।

    টিবিংয়ের হাসিটা মিইয়ে গেলো না। আপনার দাদুর লেখা কবিতাটার দিকে তাকান, জ্ঞানের প্রাচীন একটি শব্দ।

    হ্যাঁ।

    টিবিং ভুরু তুললেন। প্রাচীন গৃকে জ্ঞান শব্দটা S-O-F-I-A বানানে লেখা

     

    ৭৮.

    সোফি ক্রিপ্টেক্সটার ডায়াল ঘোরাতে ঘোরাতে নিজের মধ্যে একটা বন্য উত্তেজনা অনুভব করলো। স্কুলটা মুক্ত করবে জ্ঞানের প্রাচীন একটা শব্দ। ল্যাংডন আর টিবিং সেটার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হলো তাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।

    S…0…F…

    সাবধানে, টিবিং বললেন। খুব সাবধানে।

    …I…A।

    সোফি ডায়ালটা পুরোপুরি মেলালো। ঠিক আছে, নিচু স্বরে সে বলে তাদের দিকে তাকালো। আমি এটা টানছি।

    ভিনেগারের কথাটা মনে রেখো, ল্যাংডন ভীত কণ্ঠে বললো। সাবধানে।

    সোফি জানতো, এই ক্রিপ্টেটা যদি তার ছোট বেলার ক্রিপ্টেক্সগুলোর মতো হয়ে থাকে, তবে সে সিলিন্ডারের দুদিক হাত দিয়ে ধরে আস্তে করে বিপরীত দিক থেকে চাপ দিলেই হবে। পাসওয়ার্ডটা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে এক দিকের মাথাটা খুলে যাবে, তখন সেটার ভেতর থেকে রোল করা প্যাপিরাসটা বের করে নিতে পারবে। কাগজটা ভিনেগারের ভায়ালকে পেঁচিয়ে রোল করা থাকবে। আর যদি পাস ওয়ার্ডটা ভুল হয়ে থাকে, তবে বাইরে থেকে চাপ দেয়ার ফলে ভেতরের লিভারটা কাঁচের ভায়ালটাকে ভেঙে ফেলবে।

    খুব আস্তে করে টানো, নিজেকে বললো সোফি।

    সিলিন্ডার অর্থাৎ চোঙাটার দু মাথা হাত দিয়ে ধরতেই ল্যাংডন আর টিবিং সোফির দিকে ঝুঁকে পড়লো। কোডটার মর্মোদ্ধার করার প্রবল উত্তেজনায় সোফি প্রায় ভুলতেই বসেছিলো ভেতরে তারা কী খুঁজে পাবার প্রত্যাশ করছে। এটা হলো প্রায়োরি কি স্টোন। টিবিংয়ের মতে, এটার মধ্যে হলি গ্রেইলের মানচিত্রটা রয়েছে। যাতে ম্যারি মাগদালিন এবং স্যাংগৃল দলিলগুলোর খোঁজ পাওয়া যাবে…অতি গোপন সত্যটার অনিবার্য এক গুপ্তধন।

    পাথরের টিউবটা ধরে, সোফি পুণরায় দেখে নিলো, ডায়াল করা অক্ষরগুলো ঠিক মতো সারিবদ্ধ করা আছে কিনা। তারপর, আস্তে করে সে টান দিলো। কিছুই হলো না। আরেকটু জোড়ে টান দিলে হঠাৎ করে পাথরের মুখটা খুলে গেলো। মুখটার আঁটকানো অংশটা তার হাতে খুলে এলো। ল্যাংডন, আর টিবিং রীতিমতো লাফিয়ে উঠলো। সিলিন্ডারের ভেতরে তাকাতেই সোফির হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো।

    একটা স্ক্রল!

    রোল করা কাগজটার দিকে তাকিয়ে সোফি দেখতে পেলো, সেটা চোঙার মতো কিছু একটা পেঁচিয়ে আছে ভিনেগারের ভায়ালটা, সে বুঝতে পারলো। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ভিনেগারের ভায়ালটা পেঁচিয়ে থাকা কাগজটা নরম পাতলা প্যাপিরাস নয়, বরং সেটা ভেড়ার চামড়ার। এটা খুবই অদ্ভুত, সে ভাবলো, ভিনেগারতো ভেড়ার চামড়াকে নষ্ট করতে পারে না।

    সে আবারো জিনিসটার দিকে তাকালো, এবার সে দেখতে পেলো মাঝখানের জিনিসটা আসলে ভিনেগারের ভায়াল নয়। জিনিসটা একেবারেই অন্যকিছু।

    কি হয়েছে? টিবিং জিজ্ঞেস করলেন। স্ক্রলটা টেনে বের করুন।

    সোফি রোল করা চামড়াটা টেনে বের করলো।

    এটাতো প্যাপিরাস নয়, টিবিং বললেন। খুব ভারি এটা।

    আমি জানি। এটা একটা প্যাড।

    কিসের জন্য? ভিনেগারের ভায়ালের জন্য?

    না। সোফি স্কুলটা খুলে পেঁচানো চামড়ার ভেতর থেকে জিনিসটা বের করলো। এটার জন্য।

    ল্যাংডন যখন ভেলামের ভেতর থেকে বের করা জিনিসটা দেখতে পেলো, সে খুব আশাহত হলো।

    ঈশ্বর আমাদেরকে সাহায্য করো, ভগ্ন হৃদয়ে টিবিং বললেন। আপনার দাদু একজন নির্মম স্থপতি।

    ল্যাংডন বিস্ময়ে চেয়ে রইলো। সব দেখে মনে হচ্ছে, এটা সহজ করে তোলার কোন অভিপ্রায় সনিয়ের ছিলো না।

    টেবিলের ওপরে দ্বিতীয় আরেকটা ক্রিপ্টেক্স রাখা। ছোট্ট। কালো অনিক্স দিয়ে তৈরি সেটা। প্রথমটার ভেতরেই এটা ছিলো। দ্বৈতবাদের প্রতি সনিয়ের মোহ। দুটো ক্রিপ্টের। প্যারিসের সবখানেই এমনটি দেখা যায়। নারী আর পুরুষ। সাদার ভেতরে কালো। ল্যাংডন অনুভব করলো সিম্বোলজিমের জাল ছড়িয়ে আছে তার সামনে। সাদা জন্ম দিচ্ছে কালো।

    প্রতিটি মানুষই নারীদের থেকে এসেছে।

    সাদা–নারী।

    কালো—পুরুষ।

    ল্যাংডন ছোট ক্রিপ্টেক্সটা তুলে নিলো। এটা দেখতে অনেকটা প্রথমটার মতোই। শুধুমাত্র আকারে অর্ধেক আর কালো রঙের। সে অতিপরিচিত গরুগরু শব্দটা শুনতে পেলো। অবধারিতভাবেই, তারা যে ভিনেগারটার কথা ভেবেছিলো, সেটা এই ঘোট ক্রিপ্টেক্সটার ভেতরেই রয়েছে।

    তো রবার্ট, তাঁর সামনে ভেড়ার চামড়াটা মেলে ধরে টিবিং বললেন। আপনি এটা শুনে খুশি হবেন যে, আমরা অন্ততপক্ষে ঠিক জায়গাতেই যাচ্ছি।

    ল্যাংডন পাতলা চামড়াটার দিকে তাকালো। সুন্দর হাতের লেখায় আরো চারটা পংক্তি আছে সেটাতে। এটাও ইয়াম্বিক পেনটামিটারে লেখা। পংক্তিটা সাংকেতিক, ল্যাংডন সেটা পড়ে দেখলো।

    পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট, লন্ডনে আছেন শায়িত।

    কবিতাটার বাকি লাইনগুলো স্পষ্টতই, এমন একটা পাসওয়ার্ড হবে, যা দ্বিতীয় ক্রিপ্টেটা খুলতে সাহায্য করবে, আর সেই ক্রিপ্টেক্সে থাকবে একজন নাইটের সমাধি ফলকের কথা, লন্ডন শহরেরই কোথাও হবে সেটা।

    ল্যাংডন উত্তেজনায় টিবিংয়ের দিকে তাকালো। আপনার কি কোন ধারণা আছে, এই কবিতায় কোন্ নাইটের কথা বলা হয়েছে?

    টিবিং হাসলেন। এটা খুব কষ্টকর কিছু নয়। আমি জানি কোন্ সমাধিটা আমাদের খুজঁতে হবে, এ ব্যাপারে আমি একেবারেই নিশ্চিত।

     

    ঠিক সেই মুহূর্তে, তাদের থেকে পনেরো মাইল দূরে, কেন্ট পুলিশের ছয়টি গাড়ি বৃষ্টি ভেজা পথ ধরে বিগিন-হিল এক্সিকিউটিভ এয়াপোর্টের দিকে ছুটে যাচ্ছে।

     

    ৭৯.

    লেফটেনান্ট কোলেত টিবিংয়ের ফুজ থেকে একটা পেরিয়ার মদ নিয়ে ড্রইংরুমে ফিরে এলো। ফশের সাথে লন্ডনে না থেকে, যেখানে ঘটনাটা সংঘটিত হয়েছে সেই শ্যাতু ভিলের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পিটিএস দলটির বেবি সিটিংয়ের দায়িত্ব পালন করছে এখন।

    এ পর্যন্ত তারা যেসব প্রমাণ-পত্র খুঁজে পেয়েছে সেগুলো কোন সাহায্যেই আসবে। : ফ্লোরে একটা বুলেট বিদ্ধ হয়ে আছে; একটা কাগজে অসংখ্য প্রতীক ভরা আর তাতে লেখা আছে তলোয়ার এবং পেয়ালা; আর একটা রক্তাক্ত কাঁটাযুক্ত বেল্ট। পিটিএস দলটি তাকে বলেছে, এটা রক্ষণশীল ক্যাথলিক গ্রুপ ওপাস দাইর সাথে সংশ্নিষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে, তাদের উগ্র আর আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলো দলটি।

    কোলেত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বড়সড় হলওয়েটার দিকে চলে গেলো সে। একটা বিশাল স্টাডি রুমে প্রবেশ করলো। এখানে প্রধান পিটিএস পরীক্ষক আঙুলের ছাপের জন্য ব্যস্ত রয়েছে।

    কিছু পেলেন? ঢুকতে ঢুকতে কোলেত বললো।

    পরীক্ষক মাথা ঝাঁকালেন। নতুন কিছু না। বাকি ঘরে যাদের ছাপ পাওয়া গেছে এখানেও সেই একই জিনিস।

    সিলিস বেল্টটার আঙুলের ছাপ?

    ইন্টারপোল এটা নিয়ে কাজ করছে। এখানে যা-ই পাওয়া যাচ্ছে, আমি সেগুলো আপলোডেড করে ফেলছি।

    কোলেত ডেস্কের ওপরে রাখা দুটো এভিডেন্স-ব্যাগের দিকে ঘুরলো। আর . এটা?

    লোকটা কাঁধ ঝাঁকালো। অভ্যাসবশত কাজ। যা কিছুই অদ্ভুত পাচ্ছি, সবই ব্যাগে রাখছি।

    কোলেত সেটার কাছে গেলো। অদ্ভুত?

    এই বৃটিশটা খুবই আজব মানুষ, পরীক্ষক বললো। এটা একটু দেখুন। সে ব্যাগ থেকে একটা জিনিস বের করে কোলেতকে দিলো।

    ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে গোথিক ক্যাথেড্রালের প্রবেশ পথটা ঐতিহ্যবাহী খিলানযুক্ত পথ, সেটা গিয়ে থেমেছে ছছাট একটা দরজার দিকে।

    কোলেত ছবিটা দেখে ঘুরলো। এটা অদ্ভুত?

    ওটা উল্টিয়ে দেখুন।

    ছবিটার পেছনে, ইংরেজিতে কিছু লেখা। ক্যাথেড্রালের সুদীর্ঘ অভ্যন্তরীন পথটাকে বর্ণনা করা হয়েছে নারীদের যোনী হিসেবে, যা প্যাগানদের গোপন শ্রদ্ধা। এটা খুবই অদ্ভুত। একটা ক্যাথেড্রালের প্রবেশ পথকে বর্ণনা করা হয়েছে। দাঁড়ান! সে মনে করে একটা ক্যাথেড্রালের প্রবেশ পথ নারীর যোনীকে প্রতিনিধিত্ব করে…

    পরীক্ষক সায় দিলো। কোলেত দ্বিতীয় ব্যাগটা খুলে দেখলো। একটা বড় ছবি রয়েছে সেখানে, মনে হচ্ছে, কোন পুরনো দলিলের ছবি সেটা। উপরে লেখা আছে :

    লো ডোসিয়ার সিক্রেট নাম্বার 40 I mI 249

    এটা কি? কোলেত জিজ্ঞেস করলো।

    জানি না। সারা বাড়িটাতে এটার কপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাই এর কপি আমি ব্যাগে ভরে রেখেছি।

    কোলেত দলিলটা ভালো করে দেখলো।

    প্রায়োরি দ্য সাইওন—এ্যান্ড মাস্টারস

    জ্য দ্য গিলোর্‌স ১১৮৮-১২২০

    ম্যারি দ্য সেন ক্লেয়ার ১২২০-১২৬৬

    গুইলামে দ্য গিসোরস ১২৬৬-১৩০৭

    এদুয়াদ দ্য বার ১৩০৭-১৩৩৬

    জ্যঁ নে দ্য বার ১৩৩৬-১৩৫১

    জ্যঁ দ্য সেন ক্লেয়ার ১৩৫১-১৩৬৬

    ব্লাঁশে দাভরু ১৩৬৬-১৩৯৮

    নিকোলাস ফ্লামেল ১৩৯৮-১৪১৮

    রেনে দাঁজু ১৪১৮-১৪৮০

    আয়োলন্দে দ্য বার ১৪৮০-১৪৮৩

    সান্দরো বত্তিচেল্লি ১৪৮৩-১৫১০

    লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫১০-১৫১৯

    কন্নেতাব্‌লে দ্য বুরবোয়াঁ ১৫১৯-১৫২৭

    ফার্দিনান্দ দ্য গনজাক ১৫২৭–১৫৭৫

    লুইস দ্য নেভারস ১৫৭৫-১৫৯৫

    রবার্ট ক্লাড ১৫৯৫-১৬৩৭

    জে, ভ্যালেন্টিন আঁদ্রেয়া ১৬৩৭-১৬৫৪

    রবার্ট বয়েল ১৬৫৪-১৬৯১

    আইজ্যাক নিউটন ১৬৯১-১৭২৭

    চালর্স র‍্যাডক্লিফ ১৭২৭-১৭৪৬

    শার্ল দ্য লোরেইন ১৭৪৬-১৭৮০

    ম্যাক্সিমিলান দ্য লোরেইন ১৭৮০-১৮০১

    চার্লস নডিয়ার ১৮০১–১৮৪৪

    ভিক্টর হুগো ১৮৪৪-১৮৮৫

    ক্লদ দেবাশি ১৮৮৫-১৯১৮

    জ্যঁ কতো ১৯১৮-১৯৬৩

    প্রায়োরি দ্য সাইওন? কোলেত বিস্মিত হলো।

    লেফটেনান্ট? আরেকজন এজেন্ট এসে বললো। ক্যাপ্টেন ফশেকে একজন খুব জরুরি প্রয়োজনে খুঁজছে, তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনি কি ফোনটা ধরবেন?

    কোলেত রান্নাঘরে গিয়ে ফোনটা ধরলো। আঁদ্রে ভার্নেট করেছে।

    ব্যাংকারের পরিষ্কার মার্জিত কণ্ঠটা তার দুশ্চিন্তাকে খুব কমই ঢাকতে পেরেছে। আমি ভেবেছিলাম ক্যাপ্টেন ফশে আমাকে ফোন করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি করেননি।

    ক্যাপ্টেন খুবই ব্যস্ত আছেন, কোলেত জবাব দিলো। আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

    আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিলো, আজকের ঘটনার অগ্রগতি সম্পর্কে আমাকে জানানো হবে।

    কয়েক মুহূর্তের জন্য, কোলেতের মনে হলো, সে লোকটার কণ্ঠটা চিনতে পেরেছে, কিন্তু কার কণ্ঠ, নিশ্চিত হতে পারলো না। মঁসিয়ে ভার্নেট, বর্তমানে আমিই প্যারিসের তদন্ত কাজের দায়িত্বে আছি। আমার নাম লেফটেনান্ট কোলেত।

    ফোনে একটা দীর্ঘ বিরতি নেমে এলো। লেফটেনান্ট, আমার আরেকটা ফোন এসেছে। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনাকে পরে ফোন করছি। সে ফোনটা রেখে দিলো।

    কোলেত ফোনটা কিছুক্ষণ ধরে রাখলো। তারপরেই তার মনে পড়লো। আমি জানতাম, কণ্ঠটা চিনতে পেরেছি। প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো তার মধ্যে।

    ব্যাংকের সেই ট্রাক ড্রাইভার।

    নকল রোলেক্স ঘড়ি পরা।

    কোলেত এবার বুঝতে পারলো ব্যাংকার কেন তড়িঘড়ি করে ফোনটা রেখে দিয়েছে। ভার্নেটও জড়িত। সে মনে করেছিলো, সে ফশেকে ফোন করছে। আবেগতাড়িত হয়ে কোলেত বুঝতে পারলো, এটাই তার জীবনের সবচাইতে সাফল্য মণ্ডিত হবার সুযোগ এনে দিয়েছে।

    সে তখনই ইন্টারপোলকে ফোন করে অনুরোধ করলো, জুরিখের ডিপোজিটরি ব্যাংক এবং এর প্রেসিডেন্ট আঁদ্রে ভার্নেট সম্পর্কিত সব তথ্য যেনো খুঁজে দেখা হয়।

     

    ৮০.

    সিটবেল্ট, প্লিজ, হকারটা বৃষ্টিস্নাত সকালে নিচে নেমে আসতেই টিবিংয়ের পাইলট ঘোষণা দিলো। আমরা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ল্যান্ড করবো।

    টিবিং নিজের দেশে ফিরে আসতে পেরে উৎফুল্ল হলেন। বিমান থেকে নিচে তাকিয়ে দেখলেন কুয়াশাচ্ছন্ন কেন্টের পর্বতমালা ছড়িয়ে আছে। প্যারিস থেকে ইংল্যান্ড এক ঘন্টারও কম সময়ের দূরত্বে। তারপরেও, মনে হয় বহু দূরের। এই আদ্র সকালটা, সবুজ বসন্তের সময়ে, মনে হচ্ছে, তাকে তার দেশ স্বাগতম জানাচ্ছে। ফ্রান্সে আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। আমি ইংল্যান্ডে বিজয়ীর বেশে ফিরছি। কি-স্টোনটা পাওয়া গেছে। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, কি-স্টোনটা শেষপর্যন্ত তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যের কোথাও আছে সেটা। ঠিক কোথায়, টিবিংয়ের কোন ধারণাই নেই, তবুও বিজয়ের স্বাদ অনুভব করছেন তিনি।

    ল্যাংডন আর সোফি তাঁর দিকে তাকালে টিবিং উঠে গিয়ে ক্যাবিনের অপর পাশে চলে গেলেন। তারপর, দরজার একটা প্যানেল এক পাশ থেকে টানতেই সেটা সরে গিয়ে ছোট্ট, চমৎকার একটা ওয়াল-সেফ বেড়িয়ে আসলো। সেখান থেকে দুটো পাসপোর্ট বের করলেন টিবিং। রেমি আর আমার জন্য কাগজ-পত্র। এরপর পঞ্চাশ পাউন্ডের একটা বান্ডিল তুলে নিলেন। আর এটা হলো, আপনাদের কাগজ-পত্র।

    সোফি কটাক্ষ করে বললো, ঘুষ?।

    সৃজনশীল কূটনীতি। একজন বৃটিশ কাস্টমস অফিসার আমাদেরকে হ্যাঙ্গারে অভ্যর্থনা জানাতে আসবে। তাকে আসতে না বলে বরং বলবো, আমি একজন ফরাসি সেলিবৃটিকে নিয়ে এসেছি, যে চায় না, কেউ জানুক মে ইংল্যান্ডে এসেছে বিশেষ করে সাংবাদিকরা আর আমি সেই অফিসারকে তার বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেবার জন্য ছোট্ট একটা পারিতোষিক দেবো।

    ল্যাংডনকে দেখে মনে হলো সে খুব মজা পেয়েছে। তারা এটা গ্রহণ করবে?

    যে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে নয়, কিন্তু এরা আমাকে খুব ভালো করেই চেনে, আমি তো কোন অস্ত্র বিক্রেতা নই। আমি নাইট উপাধি পাওয়া। টিবিং হাসলেন। একটু বাড়তি সুবিধাতো এতে আছেই।

    রেমি এসে উপস্থিত হলো, তার হাতে হেলার এ্যান্ড কোচ পিস্তলটা ধরা। স্যার, আমার কাজ কি?

    টিবিং তাঁর গৃহপরিচারকের দিকে তাকালেন। আমি চাই তুমি প্লেনেই থাকো আমাদের অতিথির সাথে, যতোক্ষণ না আমি ফিরে আসি। আমরা তো আর তাকে নিয়ে সারা লন্ডন শহরটা ঘুরতে পারি না।

    সোফিকে দেখে মনে হলো, সে খুব উদ্বিগ্ন। লেই, আমি নিশ্চিত, আমরা ফিরে যাবার আগেই ফরাসি পুলিশ আপনার প্লেনটা খুঁজে পাবে।

    টিবিং হাসলেন। হ্যাঁ, তারা যদি প্লেনে উঠে রেমিকে পায়, তবে তো।

    সোফি তার এই দুঃসাহস দেখে অবাক হলো। লেই, আপনার প্লেনে হাত-পা বাঁধা একজন জিম্মি আছে, যাকে আপনি আন্তর্জাতিক সীমানা পার করেছেন। এটা খুবই মারাত্মক একটি ব্যাপার।

    সেটা আমার উকিলরা দেখবে। পাদ্রীর কাছে গেলেন তিনি। এই জানোয়ারটা আমার বাড়িতে ঢুকে আমাকে প্রায় খুনই করে ফেলেছিলো। এটাতো সত্যি। রেমি সাক্ষ্য দেবে।

    কিন্তু, আপনি তাকে হাত-পা বেঁধে লন্ডনে উড়িয়ে নিয়ে এসেছেন? ল্যাংডন বললো।

    টিবিং তার ডান হাতটা তুলে ধরে আদালতে শপথ নেবার ভঙ্গী করলেন। ইয়োর অনার, একজন বৃদ্ধ নাইটের বৃটিশ আদালতের প্রতি বোকার মতো বেশি পক্ষপাতকে ক্ষমা করবেন। আমি বুঝতে পারছি, আমার উচিত ছিলো ফরাসি কর্তৃপক্ষকে বলা, কিন্তু আমি ঐসব ফরাসি লেইসে ফেয়ারদেরকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি না। এই লোকটা আমাকে মেরেই ফেলেছিলো। হ্যাঁ, আমি তাড়াহুড়ো করে আমার গৃহপরিচারককে বাধ্য। করেছি তাকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসতে। কিন্তু আমি খুবই মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম। মিয়া কুলপা। মিয়া কুলপা।

    স্যার? পাইলট আবারো বললো। টাওয়ার থেকে জানাচ্ছে, আমাদের হ্যাঙ্গারের সামনে প্লেনটা নিয়ে যাবার ব্যাপারে তাদের কিছু সমস্যা রয়েছে, তারা আমাদেরকে সরাসরি টার্মিনালের দিকে ল্যান্ড করতে বলছে।

    টিবিং বিগিন-হিলে প্রায় এক দশকে ধরে প্লেন ব্যবহার করছে, আর এবারই প্রথম এরকম হলো। তারা কি বলেছে সমস্যাটা কী?

    কন্ট্রোলার স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। পাম্পিং স্টেশনে গ্যাস লিক জাতীয় কিছু? তারা আমাকে টার্মিনালের সামনে ল্যান্ড করতে বলেছে আর তারা না বলার আগ পর্যন্ত সবাইকে প্লেনেই থাকতে বলেছে। নিরাপত্তার জন্যই।

    টিবিং সন্দেহগ্রস্ত হলেন। গ্যাস লিক, না অন্য কিছু। হ্যাঙ্গার থেকে পাম্পিং স্টেশনটা আধ মাইল দূরে অবস্থিত।

    রেমিকেও চিন্তিত মনে হলো। স্যার, অন্য কিছু মনে হচ্ছে।

    টিবিং ল্যাংডন আর সোফির দিকে তাকালেন। বন্ধুরা, আমার একটা খারাপ সন্দেহ হচ্ছে যে, আমরা হয়তো কোন অভ্যর্থনা কমিটির মুখখামুখি হতে যাচ্ছি।

    ল্যাংডন একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেললো মনে হয়, ফশে এখনও ভাবছে, আমিই তার শিকার।

    টিবিং এসব নিয়ে ভাবছিলেন না। ফশের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে খুব দ্রুত তাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনিবার্য লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। গ্রেইলটা। আমরা খুব কাছাকাছি এসে পড়েছি।

    লেই, ল্যাংডন বললো, তার কণ্ঠে গভীর উদ্বেগ, আমার উচিত আত্মসমর্পণ করে এই ব্যাপারটা বৈধভাবে সমাধান করা। আপনাদের সবাইকে এতে করে রেহাই দেয়া যাবে।

    ওহ্, রবার্ট! টিবিং হাত নেড়ে অসম্মতি জানালেন। আপনি কি সত্যি মনে করেন, তারা আমাদেরকে রেহাই দেবে? আমি আপনাকে অবৈধভাবে পরিবহণ করেছি। মিস্ নেভু লুভর থেকে আপনাকে পালাতে সাহায্য করেছেন, আর হাত-পা বাঁধা একজন লোক আছে আমাদের সঙ্গে। এখন আমরা সবাই এ ব্যাপারে এক সাথেই আছি।

    হয়তো অন্য কোন বিমান বন্দরে? সোফি বললো।

    টিবিং মাথা ঝাঁকালেন। এখান থেকে আমরা যদি উড়াল দেই, তবে অন্য কোথাও নামার আগেই আমাদের অভ্যর্থনাকারী দল আর্মি ট্যাংক নিয়ে সেখানে হাজির হবে।

    সোফি হতাশ হয়ে ধপ্ করে বসে পড়লো।

    টিবিং আঁচ করলেন, তারা যদি কোনভাবে বৃটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে মুখোমুখি হওয়াটা এড়াতে পারে, তবে গ্রেইল খোজাটার জন্য সাহসী একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আমাকে এক মিনিট সময় দিন, তিনি বললেন, ককপিটের দিকে হুড়মুড় করে যেতে উদ্যত হলেন।

    কি করছেন? ল্যাংডন জিজ্ঞেস করলো।

    বেচা-বিক্রির আলোচনা, টিবিং বললেন, ভাবতে লাগলেন, তাঁর পাইলটকে খুব বড় ধরনের একটা অনিয়ম করতে রাজি করার জন্য কত খরচ হতে পারে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.