Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প600 Mins Read0

    ০৯. হকারটা ল্যান্ড করার চুড়ান্ত মুহূর্তে

    ৮১.

    হকারটা ল্যান্ড করার চুড়ান্ত মুহূর্তে উপনীত হলো।

    সাইমন এডওয়ার্ড–বিগিন-হিল এয়ারপোর্টের এক্সিকিউটিভ সার্ভিস অফিসার–বৃষ্টি ভেজা রান-ওয়ের দিকে নার্ভাসভাবে তাকিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারে পায়চারী করছে। শনিবারের সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে ওঠানোটা তার মনপুত হচ্ছে না। কিন্তু, এটা খুবই জঘন্য ব্যাপার যে, তাকে বিদেশ থেকে ফোন করে তার সবচাইতে সেরা ক্লায়েন্টকে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। স্যার লেই টিবিং শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত হ্যাঙ্গারের জন্যই ভাড়া দিয়ে থাকেন না, বরং প্রতিটি ল্যাডিংয়ের জন্যও তিনি ফি দিয়ে থাকেন। সাধারণত, তাঁর আগমনের কথাটা আগেভাগেই এয়ারফিল্ডে জানানো হয়ে থাকে। টিবিং এমনটিই পছন্দ করে থাকেন। তার চমৎকার জাগুয়ারটা তাঁর হ্যাঙ্গারেই সবসময় তেল ভরে মওজুদ থাকে। পালিশ করে সেটা ফিটফাট করে রাখা হয়, আর যেদিন তিনি আসবেন, সেদিনের লন্ডন টাইমস্-এর এক কপি পেছনের সিটে রাখা থাকে। একজন কাস্টমস অফিসার প্লেনের কাছে চলে যায় প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র আর লাগেজ চেক করার জন্য। মাঝে মাঝেই টিবিং কাস্টসের লোকদেরকে কিছু নির্দোষ জিনিসের ব্যাপারে অন্ধ থাকার জন্য মোটা অংকের বখশিস দিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে ফরাসি দামি দামি খাবার আর ফলমূল। প্লেনটা আসতে দেখে এডওয়ার্ডের নার্ভটা আরো বেশি টান টান হয়ে গেলো। যদিও এডওয়ার্ডকে এখনও জানানো হয়নি, টিবিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, সেগুলো খুবই গুরুতর কিছু হবে।

    বৃটিশ পুলিশ যদিও সাধারণত অস্ত্র বহন করে না, কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তারা একটা সশস্ত্র দলকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। এখন, আট জন পুলিশ অস্ত্র হাতে টার্মিনালের ভেতরে অপেক্ষা করছে প্লেনটা নামার জন্য। প্লেনটা নামলে, সেটা বৃটিশ পুলিশ ঘিরে থাকবে, যতক্ষণ না ফরাসি কর্তৃপক্ষ এসে হাজির হয়।

    সাইমন এডওয়ার্ড নিচে নেমে এলো টারমার্ক থেকে প্লেনটার অবতরণ দেখবে বলে। প্লেনটার চাকা রানওয়ে স্পর্শ করলে ধীরে ধীরে সেটা থামতে শুরু করলো, কিন্তু কথা মতো টার্মিনালের দিকে না এসে, সেটা টিবিংয়ের হ্যাঙ্গারের দিকেই এগোতে লাগলো।

    পলিশের সবাই অবাক হয়ে এডওয়ার্ডের দিকে তাকালো। আমার মনে হয়, আপনি পাইলটকে বলেছিলেন, টার্মিনালের দিকে ল্যান্ড করতে, আর সেও রাজি হয়েছিলো!

    এডওয়ার্ড অবাক হয়ে বললো, রাজিই তো হয়েছিলো! কয়েক সেকেন্ড বাদে এডওয়ার্ড পুলিশ সমেত একটা পুলিশের গাড়িতে করে হ্যাঙ্গারের দিকে ছুটে গেলো। পুলিশের গাড়ি থেকে হ্যাঙ্গারটা এখনও পাঁচশ গজ দূরে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, টিবিংয়ের প্লেনটা হ্যাঙ্গারের ভেতরে ঢুকে দৃষ্টি সীমার আড়ালে চলে গেছে। হ্যাঙ্গারের বিশাল দরজাটার সামনে পুলিশের গাড়িটা আসতেই একদল সশস্ত্র পুলিশ দ্রুত নেমে পড়তেই এডওয়ার্ডও গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।

    হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেলো।

    হ্যাঙ্গারের ভেতরের প্লেনটার ইজিনের শব্দ এখনও শোনা যাচ্ছে। প্লেনটা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে, হ্যাঙ্গারের সামনের দিকে মুখ করলে এডওয়ার্ড পাইলটকে দেখতে পেলো। বোধগম্য কারণেই, সামনে পুলিশের ব্যারিকেড দেখে তার মুখটা বিস্ময়ে হতবাক।

    পাইলট অবশেষে ইজিনটা বন্ধ করলো। পুলিশের দলটা প্লেনটা ঘিরে ধরলো। এডওয়ার্ড কেন্ট-এর চিফ ইন্সপেক্টরের কাছে গেলো। লোকটা প্লেনের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড পর প্লেনের দরজাটা খুললো।

    প্লেনের ইলেক্ট্রনিক সিঁড়িটা ধীরে ধীরে দরজার নিচে নামতেই দরজার কাছে লেই টিবিং আর্ভিভূত হলেন। নিচে পুলিশের অস্ত্র তাক করা দৃশ্যটা দেখে টিবিং ক্রাচে ভর দিয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, সাইমন, আমি কি বিদেশে থাকার সময় পুলিশের লটারি জিতেছি? তার কণ্ঠটাতে দুশ্চিন্তার চেয়েও বেশি ছিলো রসিকতা। সাইমন এডওয়ার্ড সামনে এগিয়ে একটা ঢোক গিলে বললো, গুড মর্নিং স্যার। এজন্যে ক্ষমা চাইছি। আমাদের এখানে একটা গ্যাস লিক হয়েছে, আর আপনার পাইলট বলেছিলো, সে টার্মিনালের দিকে আসছে।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, তো আমিই তাকে ওখানে না গিয়ে এখানে আসতে বলেছি। আমি একটা এপয়েন্টমেন্টের জন্য খুব বেশি দেরি করে ফেলেছি। আমি এই হ্যাঙ্গারের জন্য পয়সা দেই, আর গ্যাস লিক এড়ানোর কথাটা আমার কাছে খুব বাড়াবাড়ি ধরনের সর্তকতা বলে মনে হয়েছে।

    আপনার এভাবে আগেভাগে না জানিয়ে আসাতে আমাদের একটু বেগ পেতে। হয়েছে, স্যার।

    আমি জানি। আমি শিডিউলের বাইরে এসেছি। চিকিৎসার প্রয়োজনে।

    পুলিশের লোকগুলো একে অন্যের দিকে তাকালো। এডওয়ার্ড হাসলো। খুব ভালো করেছেন, স্যার।

    স্যার, কেন্টের চিফ ইন্সপেক্টর বললো, সামনের দিকে এগিয়ে আসলো সে। আপনাকে আমার বলার দরকার যে, আপনি আরো আধঘণ্টা আপনার প্লেনের ভেতরেই থাকবেন।

    টিবিং সিঁড়ি দিয়ে নামতে যেতেই কথাটা শুনে ভুরু কুচকালো। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা অসম্ভব। আমার ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট আছে। টারমার্কে নেমে গেলেন তিনি। ওটা মিস্ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

    চিফ ইন্সপেক্টর টিবিংয়ের গতি পথ আগলে ধরলো। আমি ফরাসি জুডিশিয়ার পুলিশের নির্দেশ পালন করছি। তারা দাবি করছে, আপনি আপনার প্লেনে করে একজন আসামীকে নিয়ে এসেছেন।

    টিবিং ইন্সপেক্টরের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। এটা কি কোন লুকানো ক্যামেরার টিভি অনুষ্ঠান? দারুণ তো!

    ইন্সপেক্টর ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। এটা খুবই সিরিয়াস ব্যাপার, স্যার। ফরাসি পুলিশ আরো দাবি করছে, আপনি নাকি একজন জিম্মিও সাথে করে নিয়ে এসেছেন।

    টিবিংয়ের গৃহপরিচারক রেমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। স্যার লেইর হয়ে কাজ করাটা আমার কাছে নিজেকে একজন জিম্মিই মনে হয়। কিন্তু, তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, আমি এখন মুক্ত, যেখানে খুশি চলে যেতে পারি। রেমি তার ঘড়িটা দেখলো। মাস্টার, আমাদের সত্যি অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে হ্যাঙ্গারের ভেতরে রাখা জাগুয়ারটার দিকে ইশারা করলো। আমি গাড়িটা নিয়ে আসছি। রেমি এগোতে লাগলো।

    আমরা আপনাদেরকে যেতে দিতে পারছি না, চিফ ইন্সপেক্টর বললো। দয়া করে নিজেদের প্লেনে ফিরে যান। দুজনেই। ফরাসি পুলিশের প্রতিনিধি দলটি খুব জলদিই এসে পৌঁছাবে।

    টিবিং সাইমনের দিকে তাকালেন। সাইমন, ঈশ্বরের দোহাই, খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে! আমাদের সাথে অন্য কেউ নেই। রেমি, আমাদের পাইলট আর আমি। যাও, ভেতরে গিয়ে দ্যাখো, প্লেনটা খালি কি না।

    এডওয়ার্ড জানতো, সে ফাঁদে পড়ে গেছে। জ্বি স্যার। আমি দেখছি।

    খবরদার! কেন্টের ইন্সপেক্টর হাক দিলো। সে আগেই সন্দেহ করেছিলো, টিবিংয়ের ব্যাপারে সাইমন তাদের কাছে মিথ্যে বলে থাকতে পারে। আমি নিজেই দেখছি।

    টিবিং মাথা ঝাঁকালেন। না, আপনি যাবেন না, ইন্সপেক্টর। এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি, আর যতোক্ষ না, আপনার কাছে তল্লাশীর ওয়ারেন্ট থাকছে, ততোক্ষণ আপনি আমার প্লেন থেকে দূরে থাকুন। আমি আপনাকে যৌক্তিক প্রস্তাবই দিচ্ছি। মি. এডওয়াড এই তল্লাশীটা চালাতে পারেন।

    না, সেটা হবে না।

    টিবিং চোয়াল শক্ত করে বললেন, ইন্সপেক্টর, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনার এই ছেলে-খেলায় আমার কোন আগ্রহ নেই। আমার দেরি হয়ে গেছে, আমি চলে যাচ্ছি। যদি আমাকে থামানোটা আপনাদের জন্য এতো বেশিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। তবে আমাকে গুলি করুন। এই কথা বলে টিবিং আর রেমি ইন্সপেক্টরকে পাশ কাটিয়ে পার্ককরা গাড়িটার দিকে চলে গেলো।

     

    কেন্টের পুলিশ ইন্সপেক্টর লেই টিবিংয়ের এভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াতে যারপরনাই বিরক্ত হলো। একটু বেশি অগ্রাধিকার পাওয়া লোকেরা সব সময়ই নিজেদেরকে আইনের উর্বে মনে করেন।

    কিন্তু তারা তা নন। চিফ ইন্সপেক্টর ঘুরে টিবিংয়ের পেছন দিক থেকে পিস্তল তাক্‌ করে বললেন। থামুন! না হলে আমি গুলি করবো।

    তাই করুন, পেছনে না তাকিয়ে এবং বিন্দুমাত্র না থেমেই টিৰিং বললেন। আমার উকিলরা আপনার বিচি সিদ্ধ করে নাস্তা খাবে। আর ভুলেও ওয়ারেন্ট ছাড়া আমার প্লেনে উঠবেন না, বলে দিচ্ছি।

    ইন্সপেক্টর,ভাবলো, টেকনিক্যালি টিবিংই ঠিক। প্লেনে উঠতে হলে তাদের দরকার একটা সার্চ ওয়ারেন্টের। কিন্তু, প্লেনটা ফ্রান্স থেকে এসেছে, আর মহা ক্ষমতাধর বেজু ফশের নির্দেশ আছে সেটা থামাতে। তাই, টিবিংয়ের প্লেনে কি আছে, সেট দেখারও দরকার রয়েছে। তার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তিনি কিছু লুকাচ্ছেন।

    তাদেরকে থামাও, ইন্সপেক্টর আদেশ করলো। আমি প্লেনটা সার্চ করবো।

    তার লোকজন অস্ত্র উঁচিয়ে টিবিং আর তার গৃহপরিচারকের পথ আঁটকে দিলো যাতে তারা গাড়িতে উঠতে না পারে।

    এবার টিবিং ঘুরে দাঁড়ালেন। ইন্সপেক্টর, আমি শেষবারের মতো সর্তক করে দিচ্ছি। এই প্লেনে ওঠার চিন্তাও করবেন না। আপনি পস্তাবেন।

    হুমকিটা অগ্রাহ্য করে চিফ ইন্সপেক্টর প্লেনে উঠতে উদ্যত হলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ক্যাবিনের ভেতরে ঢুকে পড়লো। এটা আবার কি?

    ভীতসন্ত্রস্ত পাইলট ছাড়া পুরো বিমানটাই ফাঁকা। দ্রুত বাথরুম, লাগেজ-রুম চেক করে দেখলো সে। একজন মানুষের চিহ্নও পেলো না ইন্সপেক্টর … অনেক জন তো দূরের কথা।

    বেজু ফশে ভাবছেটা কি? মনে হচ্ছে লেই টিবিং সত্যি কথাই বলেছেন।

    চরম বিরক্ত হয়ে ইন্সপেক্টর ফাঁকা ক্যাবিনটাতে দাঁড়িয়ে রইলো। ধ্যাত্। তার মুখ লাল হয়ে গেছে। প্লেন থেকে নিচে নেমে এসে টিবিংয়ের দিকে তাকালো। তাদেরকে যেতে দাও, আদেশ করলো সে। আমাদের খবরটা ঠিক ছিলো না, মনে হচ্ছে।

    টিবিংয়ের চোখে দুষ্টুমি দেখা গেলো। আপনি আমার উকিলের ফোন প্রত্যাশা করতে পারেন। আর ভবিষ্যতের জন্য বলে রাখছি, ফরাসি পুলিশকে বিশ্বাস করবেন না।

    টিবিংয়ের গৃহপরিচারক গাড়িটার দরজা খুলে তার খোঁড়া মনিবকে পেছনের সিটে বসতে সাহায্য করলো। তারপর, রেমি নিজের আসনে ফিরে গিয়ে গাড়িটা চালু করে চলে গেলে পুলিশের লোকেরা অপসৃয়মান গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

     

    ভালো অভিনয় করেছে, হে, টিবিং সামনে বসা গাড়ি চালক রেমিকে উত্যু হয়ে বললেন। এবার তিনি তাঁর সামনের খাজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।

    সবাই ঠিক আছেন তো?

    ল্যাংডন দুর্বলভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলো। সে আর সোফি শ্বেতকায় লোকটার সাথে সিটের সামনে পাদানীতে শুইয়ে আছে।

    প্লেনটা যখন হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করেছিলো, তখন পুলিশ আসার আগেই রেমি দরজাটা খুলে দিলে ল্যাংডন আর সোফি মিলে পাদ্রীটাকে পাজাকোলা করে নিচে নামিয়ে এনেছিলো। পুলিশের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবা জন্যে তারা টিবিংয়ের গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়েছিলো। তারপর প্লেনটার ইজিন আবারো চালু করা হলো, যাতে পুলিশ মনে করে প্লেনটা সবেমাত্র থেমেছে।

    এবার লিমুজিনটা কেন্টের দিকে ছুটে চললো। সোফি আর ল্যাংডন উঠে বসলো, কেবলমাত্র হাত-পা বাঁধা পাদ্রীকে পায়ের নিচে ফেলে রাখা হলো। টিবিং তাদের দিকে তাকিয়ে চওড়া একটা হাসি দিলেন। লিমুজিনের ভেতরে রাখা ছোট্ট বারটা খুলে ফেললেন তিনি। আমি কি আপনাদেরকে ড্রিংসের প্রস্তাব দিতে পারি? নিলিস? ক্রিসৃপ? বাদাম? সেলঞ্জার?

    সোফি আর ল্যাংডন দুজনেই মাথা ঝাঁকালো।

    টিবিং দাঁত বের করে হেসে বারটা বন্ধ করে দিলেন। তো এবার, নাইটদের সমাধিটা…

     

    ৮২.

    ফ্লিট স্টৃট? ল্যাংডন লিমোর পেছনে বসা টিবিংয়ের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো। ফ্লিট স্টটে একটা ভূ-গর্ভস্থ কক্ষ আছে? এ পর্যন্ত নাইট সমাধিটা কোথায় থাকতে পারে বলে মনে করেন তা নিয়ে খুবই সুচতুরভাবে খেলেছেন টিবিং। ছোট ক্রিপ্টেক্সটাকে যে পাসওয়ার্ড দিয়ে খোলা যাবে, সেটা কবিতাটাতেই রয়েছে।

    টিবিং দাঁত বের করে হেসে সোফির দিকে তাকালেন। মিস্ নেভু, হারভার্ডের ছোক্রাটাকে আরেকবার সেই কবিতাটা পড়ে শোনাবেন কি?

    সোফি তার পকেট থেকে কালো রঙের ক্রিপ্টেক্সটা বের করলো, সেটা ভেড়ার চামড়ায় মোড়ানো ছিলো। সবাই মিলে তারা ঠিক করেছিলো, রোজউড বক্স আর বড় ক্রিপ্টেক্সটা প্লেনের স্ট্রং বক্সেই রেখে আসবে। তাদের সঙ্গে কেবল সেটাই রাখবে, যার দরকার রয়েছে। আর এক্ষেত্রে, কালো ক্রিপ্টেক্সটা যেমন দরকারি, তেমনি বহন করাও সহজ। সোফি চামড়াটা খুলে ল্যাংডনকে সেটা দিয়ে দিলো।

    যদিও ল্যাংডন প্লেনে থাকার সময় কয়েকবার কবিতাটা পড়েছে, তারপরও, সে অবস্থানটা চিহ্নিত করতে পারেনি। এবার যখন ওটা আবার পড়ছে, তখন ধীরে ধীরে চেষ্টা করছে জিনিসটা বোধগম্য করতে। আশা করছে, পেনটা মেট্রিক ছন্দের কবিতাটির অর্থ বোধহয় এবার সে ধরতে পারবে।

    পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট লন্ডনে আছেন শায়িত। যার শ্রমের ফল হয়ে ছিলো ধর্মাবতারের ক্রোধের কারণ। যে গোলক তুমি খোঁজো সেটা সমাধি ফলকেই থাকার কথা। এটা বিবৃত করে গোলাপী শরীর আর বীজপ্রসূ গর্ভের আখ্যান।

    ভাষাটা খুবই সহজ মনে হচ্ছে। লন্ডনে একজন নাইটের কবর আছে। এমন একজন নাইট, যার কার্যকলাপ চার্চকে ক্রুদ্ধ করেছিলো। একজন নাইট যার সমাধি ফলকের গোলক হারিয়ে গিয়েছে। কবিতাটার শেষ লাইন-গোলাপের শরীর আর বীজপ্রসূ গর্ভের আখ্যান—এটাতে ম্যারি মাগদালিনকেই নির্দেশ করছে পরিষ্কারভাবে, যে গোলাপ, যিশুখৃস্টের বীজকে বহন করেছে।

    কবিতাটাতে সরাসরি ইঙ্গিত করা সত্ত্বেও, ল্যাংডনের কোন ধারণাই নেই, কে সেই নাইট, আর কোথায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, একবার তারা সমাধিটা খুঁজে পেলেও, মনে হচ্ছে যেনো তারা এমন কিছু খুঁজবে যা ওখানে নেই। গোলকটা সমাধি ফলকের ওপরেই থাকার কথা?

    কিছু পেলেন না? টিবিং হতাশ হয়ে বললেন। যদিও ল্যাংডন আঁচ করতে পারছে, রয়্যাল হিস্টোরিয়ান কিছু একটা উপভোগ করছেন। মিস নেভু?

    সোফি মাথা ঝাঁকালো।

    আমি না থাকলে, আপনারা দুজন কী করতেন? টিবিং বললেন। খুব ভালো, আমি আপনাদেরকে সেখানে নিয়ে যাবো। এটা আসলে খুবই সহজ। প্রথম লাইনটাই হলো মূল চাবিকাঠি। আপনি কি সেটা একটু পড়বেন?

    ল্যাংডন জোরে জোরে পড়লো, পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট লন্ডনে আছেন শায়িত।

    একদম ঠিক। এমন একজন নাইট, যাকে পোপ সমাহিত করেছিলেন। ল্যাংডনের দিকে তাকালেন তিনি। এটা আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?

    ল্যাংডন কাঁধ ঝাঁকালো। পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট? এমন একজন নাইট, যার শেষ কৃত্যানুষ্ঠানটিতে স্বয়ং পোপ উপস্থিত ছিলেন?

    টিবিং জোরে জোরে হেসে উঠলেন। ওহ্, খুব ভালো বলেছেন। সব সময়ই আপনি খুব আশাবাদী, রবার্ট। দ্বিতীয় লাইনটা দেখুন। এই নাইট এমন কিছু করেছিলেন, যাতে ধর্মাবতার, মানে চার্চ ক্রুব্ধ হয়েছিলো। আরেকবার ভাবুন। চার্চ এবং নাইট টেম্পলারদের সম্পর্কের কথাটা বিবেচনা করুন। পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট?

    পোপ কর্তৃক খুন হওয়া একজন নাইট? সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    টিবিং হেসে সোফির হাটুতে চাপড় মারলেন। ভালোই বলেছেন, মাই ডিয়ার। পোপ কর্তৃক সমাহিত অথবা খুন হওয়া একজন নাইট।

    ল্যাংডন ১৩০৭ সালের নটরিয়াস নাইট টেম্পলারের কথাটা স্মরণ করলোঅপয়া ১৩ তারিখ, শুক্রবার যখন পোপ ক্লেমেন্ট শত শত নাইট টেম্পলারদেরকে হত্যা করে সমাহিত করেছিলেন।

    কিন্তু পোপ কর্তৃক খুন হওয়া নাইটদের কবরের সংখ্যাতত অসংখ্য।

    আহা, অতোটা নয়! টিবিং বললেন। বেশির ভাগকেই আগুনে পুড়িয়ে টাইবার নদীতে কোন শেষকৃত্য ছাড়াই ফেলে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই কবিতাটিতে একটা সমাধির কথা বলা হয়েছে। লন্ডনের একটা সমাধি। আর লন্ডনে হাতে গোনা কয়েকজন নাইটকেই সমাহিত করা হয়েছে। তিনি থামলেন, ল্যাংডনের দিকে তাকালেন, যেনো ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষা করছেন। অবশেষে, তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন, রবার্ট, ঈশ্বরের দোহাই! লন্ডনে নির্মিত চার্চটি প্রায়োরিদের সশস্ত্র-যোদ্ধা দল তৈরি করেছিলোনাইট টেম্পলাররা নিজেরাই ছিলেন?

    টেম্পলার চার্চ? ল্যাংডন গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বললো। ওখানে কি কোন ক্রিপ্ট বা ভূ-গর্ভস্থ কক্ষ আছে?

    দশটি ভীতিকর সমাধি ফলক আছে, যা আপনি কখনও দেখেননি।

    ল্যাংডন আসলে কখনই টেম্পলার চার্চে যায়নি, যদিও সে প্রয়োরিদের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে অসংখ্যবার এটার উল্লেখ করেছে। এক সময়ে সব ধরণের প্রায়োরি কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো যুক্তরাজ্যের টেম্পলার চার্চ। টেম্পলার চার্চের নাম ছিলো সলোমনের মন্দির, পরে টেম্পলারদের নামানুসারে এটার নাম রাখা হয়। সেখানেই তাঁরা স্যাংগৃল দলিলগুলো রেখেছিলেন, যা রোমে তাঁদের ক্ষমতার উৎস ছিলো। গল্প প্রচলিত আছে যে, নাইটরা সেখানে অদ্ভুত আর গোপন কিছু অনুষ্ঠান করতেন। টেম্পলার চার্চটা ফ্লিট স্টটে?

    আসলে, সেটা ফ্লিট স্টুট থেকে একটু দূরে, ইনার টেম্পল লেইনে অবস্থিত। টিবিংকে দেখে মনে হলো একটু মজা করছেন। আমি দেখতে চাই, আমি সেই কথাটা বলার আগে আপনি একটু ঘামুন।

    ধন্যবাদ।

    আপনাদের কেউই সেখানে কখনও যাননি?

    সোফি আর ল্যাংডন মাথা ঝাঁকালো।

    আমি অবাক হইনি, টিবিং বললেন। চাৰ্চটা এখন বড় একটা বিল্ডিংয়ের আড়ালে চলে গেছে। খুব কম লোকেই জানে সেটা ওখানে আছে। খুবই পুরনো একটা জায়গা। মূলগত দিক থেকে স্থাপত্যটি প্যাগান।

    সোফিকে দেখে মনে হলো খুবই অবাক হয়েছে। প্যাগান?

    সমাধিস্থলের দিক থেকে প্যাগান। টিবিং বিস্ময়ে বললেন। চার্টটা বৃত্তাকার। টেম্পলাররা খৃস্টীয় ঐতিহ্য অনুসারে ক্রুশাকৃতিটা এড়িয়ে, বৃত্তাকারে তৈরি করেছেন, সূর্যের সম্মানে। তার ভুরু দুটো নেচে উঠলো।

    সোফি টিবিংয়ের দিকে তাকালো। কবিতার বাকি অংশগুলোর ব্যাপারটা কি?

    ইতিহাসবিদের আমুদে মেজাজটা এবার উবে গেলো। আমি ঠিক নিশ্চিত নই। এটা খুবই হতবুদ্ধিকর। আমাদের দরকার সমাধির সবগুলোই খুব সতর্কভাবে পরীক্ষা করে দেখার। ভাগ্য ভালো থাকলে, এমন একটাকে পেয়ে যাবো, যার গোলকটি নেই।

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো, তারা কত কাছাকাছি এসে পড়েছে। যদি হারানো গোলকটা পাওয়া যায়, তবে সেটা থেকে পাসওয়ার্ডটা পাওয়া যাবে, যা দিয়ে দ্বিতীয় ক্রিপ্টেক্সটা খোলা যাবে। তারা কী খুঁজে পাবে, সে ব্যাপারে সে কিছুই ভাবতে পারছিলো না।

    ল্যাংডন কবিতাটার দিকে আবারো তাকালো। মনে হচ্ছে, এটা একটা প্রাইমোরডায়াল ক্রশ-ওয়ার্ড পাজল। পাঁচ অক্ষরের একটা শব্দ যা গ্রেইলের কথা বলবে? প্লেনে বসে তারা সম্ভাব্য পাসওয়ার্ডটা কী হতে পারে, সেটা ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো–GRAIL, GRAAL, VENUS, MARIA, JESUS, SARAH–কিন্তু সিলিন্ডারটা খোলেনি।

    স্যার লেই? রেমি পেছন ফিরে বললো। সে রিয়ার-ভিউ মিরর দিয়ে তাদের দিকে চেয়েছিলো। আপনি বলছেন ফ্লিট টটা ব্ল্যাকফ্রাইয়ারূসের বৃজের কাছাকাছি?

    হ্যাঁ, ভিক্টোরিয়া নদীর তীর ঘেষে যাও।

    আমি দুঃখিত। আমি নিশ্চিত নই, জায়গাটা কোথায়। আমরা তো সবসময় সাধারণত হাসপাতালেই যাই।

    টিবিং চোখ গোল গোল করে ল্যাংডন আর সোফির দিকে তাকালেন, কসম খেয়ে বলছি, কখনও কখনও মনে হয়, একটা শিশুকে বেবিসিটিং করছি। এক মিনিট, প্লিজ। নিজেরাই ড্রিংকস আর স্ন্যাক্স নিয়ে নিন। তিনি সামনের দিকে চলে গেলেন রেমির কাছে, কথা বলার জন্য।

    সোফি এবার ল্যাংডনের দিকে তাকালো, তার কণ্ঠ খুব শান্ত। রঝর্ট, কেউ জানে, তুমি আর আমি এখন ইংল্যান্ডে আছি।

    ল্যাংডন বুঝতে পারলো, সে ঠিকই বলছে। কেন্ট পুলিশ ফশেকে জানাবে যে, প্লেনটা খালি ছিলো। ফশে ভাববে, তারা এখন ফ্রান্সেই আছে। আমরা অদৃশ্য হয়ে গেছি। লেইর ছোট্ট চালাকিতে তাদেরকে অনেক সময় দিয়ে দিয়েছে।

    ফশে খুব সহজে হাল ছাড়বে না, সোফি বললো। সে এই গ্রেফতারের জন্য আরো বেশি উঠে পড়ে লাগবে।

    ল্যাংডন ফশের কথা না ভাবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। সোফি তাকে কথা দিয়েছে, এই ব্যাপারটা মিটে যাবার পর, হত্যা মামলা থেকে রেহাই দিতে তাকে সমস্ত শক্তি দিয়ে সাহায্য করবে। কিন্তু ল্যাংডনের ভয়, এতে কিছুই যায় আসে না। ফশে খুব সহজেই এই ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। ল্যাংডন অবশ্য ভাবতে পারছে না যে, জুডিশিয়ার পুলিশ হলি গ্রেইল নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু আঁচ করতে পারছে, অন্য কিছু। ফশে একজন ধার্মিক ব্যক্তি, আর এই হত্যাকাণ্ডটি তার ওপরে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছে সে। অবশ্য সোফির মতে, ফশে এই গ্রেফতারটি নিজে করে কৃতিত্ব নিতে চাইছে। আর ল্যাংডনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেগুলো ফশের কাছে কেন, সবার কাছেই খুবই জোড়ালো বলে মনে হবে। সনিয়ে তার নাম লুভরের ফ্লোরে লিখে গেছেন। তাঁর ডেট বুকেও ল্যাংডনের নাম রয়েছে।

    রবার্ট, আমি খুব দুঃখিত, তুমি গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে, হাতটা ল্যাংডনের হাটুর উপর রেখে সোফি বললো। কিন্তু আমি খুব খুশি যে, তুমি এখানে আছে।

    কথাটা রোমান্টিকের চাইতেও বেশি বাস্তবিক বলে মনে হচ্ছে। তারপরেও তাদের দুজনের মধ্যে এক ধরণের আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। সে সোফির দিকে চেয়ে ক্লান্ত হাসি দিলো। যখন ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন খুব আনন্দে ছিলাম।

    সোফি কয়েক সেকেন্ড চুপ রইলো। আমার দাদু আমাকে বলেছেন, তোমাকে বিশ্বাস করতে। আমি খুব খুশি যে, আমি একবারের জন্যে হলেও তার কথা শুনেছি।

    তোমার দাদু কিন্তু আমাকে চিনতেনও না।

    তারপরও বলবো, উনি যা চেয়েছেন, তুমি তার সবটাই করেছে। কি-স্টোনটা খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছে আমাকে। স্যাংগৃল কী, সেটা ব্যাখ্যা করেছে, আমার দেখা সেই অদ্ভুত দৃশ্যটার কথাও বলেছো। সে একটু থামলো। অনেক বছর পর, আমি আজকে আমার দাদুকে খুব কাছাকাছি অনুভব করতে পারছি। আমি জানি, তিনি এতে খুব খুশি হতেন।

    ল্যাংডন উদাসভাবে বাইরে তাকিয়ে রইলো, হঠাৎ করেই তার মনে হলো, তার হাটুতে যেনো কিছু একটা। সম্বিত ফিরে পেতেই দেখলো সোফির হাতটা তার হাটুর ওপর। সোফি তার সাথে কথা বলছিলো। আমরা যদি স্যাংগৃল দলিলগুলো খুঁজে পাই, তবে তোমার মতে সেগুলো নিয়ে আমাদের কি করা উচিত? সে নিচু স্বরে বললো।

    আমি অশরীরি কিছু ভাবছি, ল্যাংডন বললো। তোমার দাদু ক্রিপ্টেক্সটা তোমাকে দিয়েছেন, তাই তোমার যা মনে হয়, তুমি তা-ই করবে। এটা তোমারই এখতিয়ার।

    আমি তোমার মতামতটা জানতে চাচ্ছি। তুমি নিশ্চিতভাবেই তোমার পাণ্ডুলিপিটাতে এমন কিছু লিখেছে, যাতে আমার দাদু তোমাকে বিশ্বাস করেছেন। তোমার বিচার ক্ষমতার ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি তোমার সাথে একটা ব্যক্তিগত সাক্ষাতেও ব্যবস্থা করেছিলেন। এটা খুবই বিরল একটি ব্যাপার।

    হয়তো, তিনি বলতে চেয়েছিলেন, আমি যা লিখেছি তার সবই ভুল।

    তিনি যদি তোমার আইডিয়াটা পছন্দই না করে থাকেন, তবে কেন আমাকে বলবেন, তোমাকে খুঁজে নিতে। তোমার পাণ্ডুলিপিতে কি তুমি স্যাংগৃল দলিলগুলো প্রকাশ কারর পক্ষে বলেছে, নাকি ওগুলো গোপনেই থাকুক সেটা বলেছো?

    কোনটাই না। আমি কোন মতামত দেইনি। পাণ্ডুলিপিটা পবিত্র নারীর প্রতীক নিয়ে ইতিহাসে তাদের আইকনোগ্রাফি অনুসন্ধান বিষয়ক। হলি গ্রেইলটা কোথায় আছে, কিবা সেটা প্রকাশ করা উচিত কিনা, সে ব্যাপারে আমি কোন মতামত দেইনি।

    তারপরেও, তুমি এ ব্যাপারে একটা বই লিখছে, অবশ্যই তুমি মনে করো, তথ্যটা প্রকাশ করা হোক।

    খৃস্টের বিকল্প ইতিহাস এবং অনুমান নি ইতিহাসের মধ্যে অনেক অনেক মতপার্থক্য রয়েছে, এবং… সে থেমে গেলো।

    এবং কি?

    এবং হাজার হাজার প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজ হাজির করে ওল্ড টেস্টামেন্টটা যে ভুয়া সেটা প্রমাণ করা নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে।

    কিন্তু, তুমি আমাকে বলেছিলে, নিউ টেস্টামেন্টটার কোন ভিত্তিই নেই।

    ল্যাংডন হাসলো। সোফি, এই বিশ্বের সবগুলো ধর্মমতই ভিত্তিহীন। এটাই ধর্মবিশ্বাসের সংজ্ঞা—এটা মেনে নেয়া যে, আমরা যা ভাবছি, সেটা সত্যি, কিন্তু আমরা সেটা প্রমাণ করতে পারি না।

    তাহলে তুমি স্যাংগৃল দলিলগুলো চিরতরের জন্য লুকানোই থাক, সেটার পক্ষে?

    আমি একজন ইতিহাসবিদ। দলিল-দস্তাবেজ ধ্বংসের বিপক্ষে আমি। আর আমি দেখতে চাই ধর্মীয় পণ্ডিতেরা যিশু খৃস্টের জীবনের সত্যিকারের কাহিনীটা মেনে নিক।

    তুমি আমার প্রশ্নের দুটো দিক নিয়ে তর্ক করছে।

    তাই? বাইবেল এই পৃথিবীর লক্ষ-কোটি মানুষের মৌলিক দিক-নির্দেশনার উৎস, একই কথা কোরান, তোরাহ এবং বৌদ্ধ ত্রিপিটকের কথাও প্রযোজ্য। তুমি আর আমি যদি এমন দলিল-দস্তাবেজ খুঁজে পাই, যা ইসলামী, ইহুদি, বৌদ্ধ, প্যাগান ধর্ম বিশ্বোসের পবিত্র কাহিনীগুলোকে বাতিল করে দেয়, তবে কি সেটা আমাদের প্রকাশ করা উচিত হবে? আমাদের কি উচিত হবে, একটা পতাকা নেড়ে এটা জানানো যে, বুদ্ধ আসলে পদ্মফুল থেকে জন্ম নেননি, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে? অথবা, যিশু আক্ষরিক অর্থে কোন কুমারীর গর্ভে জন্মাননি? যারা সত্যিকারভাবে তাদের ধর্মে বিশ্বাসী তারা এটা বোঝে যে, কাহিনীগুলো রূপকার্থে বলা হয়েছে।

    সোফিকে দেখে মনে হলো সন্দিগ্ধ। আমার ধার্মিক খৃস্টান বন্ধুরা বিশ্বাস করে, যিশু সত্যি পানির ওপর দিয়ে হাটতেন, পানিকে মদ বানাতে পারতেন, আর তিনি একজন কুমারী মায়ের গর্ভে জন্মেছেন।

    আমার কথাটা হলো, ল্যাংডন বললো। ধর্মীয় কাহিনীর ভিত্তি মিথ্যা হলেও সেটা এখন বাস্তব, আর এই বাস্তবতা লক্ষ-কোটি মানুষকে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে সাহায্য করছে।

    কিন্তু, তাদের বাস্তবতাটা তো মিথ্যে।

    ল্যাংডন বললো, ঠিক সেই রকম মিথ্যে, যেরকমটি গাণিতিক ক্রিপ্টোগ্রাফাররা বিশ্বাস করে i নামের কাল্পনিক একটা সংখ্যায়, যেটা তাদের কোডের মর্মোদ্ধারে সাহায্য করে।

    সোফি ভুরু কুকালো। এটা ঠিক হচ্ছে না।

    এরপর কিছু মুহূর্ত পার হলো।

    তোমার প্রশ্নটা কি? ল্যাংডন জিজ্ঞেস করলো।

    আমি মনে করতে পারিছ না।

    সে হাসলো। এরকমটি সবসময়ই হয়।

     

    ৮৩.

    ল্যাংডন যখন সোফি আর টিবিংয়ের সাথে ইনার টেম্পল লেন-এ এসে গাড়ি থেকে নামলো তখন তার মিকি মাউস হাত ঘড়িটাতে সাড়ে সাতটা বাজে। টেম্পল চার্চের সামনের একটা ভবনের প্রাঙ্গণের দিকে তারা তাকালো। খরুখরে হিউন পাথরের দালানটা বৃষ্টিতে ভিজে জ্বলজ্বল করছে।

    লন্ডনের প্রাচীন চার্টটা সম্পূর্ণভাবে সায়েন পাথরে নির্মিত। একটা চমকপ্রদ বৃত্তাকারের অট্টালিকা, যার সামনে রয়েছে একটি সুবিশাল প্রাঙ্গন। ভবনটার মাঝখানে একটা চূড়া আর একপাশে বিশাল বারান্দা। চার্টটাকে প্রার্থনার জায়গার চেয়েও একটা সামরিক দূর্গ হিসেবেই বেশি মনে হয়। হেরাকুইস কর্তৃক ১১৮৫ সালের দশই ফেব্রুয়ারিতে এটা উৎসর্গ করা হয়। হেরাকুইস ছিলেন জেরুজালেমের অধিপতি। টেম্পল চার্চটা বিগত আট শতাব্দীর রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যেও টিকে আছে। লন্ডনের গ্রেট ফায়ার, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৪০ সালের লুফটওয়াফ-এর বোমা হামলায়ই কেবল এটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। যুদ্ধের পরই, এটাকে আসল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়, একেবারে অবিকল আগের অবস্থায়।

    প্রথমবারের মতো ভবনটা দেখেই ল্যাংডন সমীহ করলো। স্থাপত্য শৈলীটা খুবই সহজ সরল। এটা একটা নিখুঁত মন্দিরের চেয়েও রোমের কাস্তেল সেন্ট এ্যাংলোর সাথেই বেশি মিলে যায়। অবশ্য এটার প্যাগান স্থাপত্য শৈলীর বৈশিষ্টটাকে পরবর্তীকালের কিছু সংস্কারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ঢেকে দেয়া গেছে।

    আজ শনিবারের সকাল, টিবিং বললেন, প্রবশদ্বারের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যেতে যেতে তাই, আমার ধারণা, এখানে খুব একটা লোকজন থাকবে না। কর্মচারীর সংখ্যাও কমই হবে।

    চার্চের সদর দরজাটা বিশাল, কাঠের তৈরি। দরজার বাম পাশে, একটা বুলেটিন বোর্ড ঝোলানো আছে। তাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়সূচী দেয়া।

    বোর্ডের লেখাটা পড়ে টিবিং ভুরু কুচকালেন। তারা দশর্নাথীদের জন্য আর কয়েক ঘণ্টা পরেই চার্চটা খুলে দেবে। দরজার দিকে চলে গিয়ে টিবিং সেটা খেলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু দরজাটা খুললো না। দরজায় কান লাগিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করলেন। কিছুক্ষণ বাদে, কানটা সরিয়ে নিয়ে তিনি বুলেটিন বোর্ডের দিকে চিন্তিত মুখে তাকালেন। রবার্ট, সার্ভিস শিডিউলটা চেক করে দেখবেন কি? এই সপ্তাহে কে সভাপতিত্ব করবেন?

     

    চার্চের ভেতরে, একটা কাজের ছেলে বেদীমূলটা পরিষ্কার করছিলো, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলো সে। ব্যাপারটা আমলেই নিলো না। ফাদার হাতে নোলসের কাছে নিজস্ব একটা চাবি রয়েছে, আর তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরবেন না। কড়াটা সম্ভবত কোন কৌতূহলী পর্যটক, কিংবা কোন অভাবী লোক নাড়ছে। কাজের ছেলেটা নিজের কাজই করে যেতে লাগলো। কিন্তু বার বার কড়া নাড়ার শব্দ হতে লাগলো। দরজার লেখাটা কি পড়তে জানে না? দরজার পাশে পরিষ্কারভাবেই লেখা আছে, শনিবারে চার্চ সাড়ে নটায় খোলা হয়। কাজের ছেলেটা নিজের কাজই করে যেতে লাগলো।

    আচম্‌কা, দরজার টোকাটা প্রচণ্ড আঘাতে রূপান্তরিত হলো। যেনো কেউ লোহার রড দিয়ে দরজাটাতে আঘাত করছে। ছেলেটা তার ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সুইচটা বন্ধ করে রেগেমেগে দরজার দিকে ছুটলো। ভেতর থেকে ওটা ঝট করে খুলে ফেললো সে। সামনে তিন জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটক, সে ধরে নিলো। আমরা সাড়ে নটায় খুলি।

    ভারিক্কি ধরনের লোকটা, নিঃসন্দেহে দলনেতা, ধাতব কাঁচটায় ভর দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। আমি স্যার লেই টিবিং, তার কণ্ঠটা বেশ গুরুগম্ভীর, স্যাক্সোনে বৃটিশদের মতো। যেহেতু তুমি চিনতে পারছে না, তাই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, মি. এবং মিসেস ক্রিস্টোফার রেন চতুর্থ। তিনি একটু পাশ ফিরে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আকর্ষনীয় এক দম্পত্তির দিকে তাকালেন। তিনি তাদের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। মেয়েটা হালকা পাতলা গড়নের, আর লাল চুলের। পুরুষটা লম্বা, কালো চুলের, দেখে মনে হয়, খুব পরিচিত কেউ।

    কাজের ছেলেটা বুঝতে পারলো না, সে কী করবে। স্যার ক্রিস্টোফার রেন হলেন টেম্পল চার্চের সবচাইতে খ্যাতিমান দাতা। গ্রেট ফায়ারের পর চার্চের ধ্বংসপ্রাপ্ত দালানটার পুণনির্মাণ করতে তিনি সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতাই করেছিলেন। তিনি তো অষ্টাদশ শতকের শুরুতেই মারা গিয়েছেন। উম্…আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি?

    ক্রাচে ভর দেয়া লোকটা অবাক হলেন। ভাগ্য ভালো, তুমি সেলসে কাজ করছে না ছোকরা, তোমার আচার-ব্যবহার খুব সুবিধার নয়। ফাদার নোল্‌স কোথায়?

    আজ শনিবার। তিনি একটু পরে আসবেন।

    খোঁড়া লোকটা গভীর নিঃশ্বাস নিলেন। এই হলো কৃতজ্ঞতা। তিনি বলেছিলেন আজ এখানে থাকবেন, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে ছাড়াই আমাদেরকে এটা করতে হবে। খুব বেশি সময় লাগবে না।

    কাজের ছেলেটা তাদের পথ আগলেই দাঁড়িয়ে রইলো। আমি দুঃখিত, কিসের কথা বলছেন?

    দশর্নাথী খুব তীক্ষ্ণ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি একটু সামনের দিকে ঝুঁকে চাপা স্বরে বললেন, যেনো সবাইকে একটা বিব্রতকর অবস্থা থেকে রক্ষা করছেন। ছোক্রা, মনে হচ্ছে, তুমি এখানে খুব নতুন। প্রতি বছর স্যার ক্রিস্টোফারের বংশধররা তাঁর দেহভস্ম নিয়ে এসে এখানে ছিটিয়ে থাকেন। এটা উনার শেষ ইচ্ছা ছিলো। এই ভ্রমণটাতে কেউই খুশি না, কিন্তু কি আর করা?

    কাজের ছেলেটা এখানে কয়েক বছর ধরেই আছে, কিন্তু এরকম কিছুর কথা সে কখনও শোনেনি। আপনারা সাড়ে নটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই ভালো হয়। চার্টটা তো এখনও খুলেনি, আর আমার পরিষ্কার করা কাজটাও শেষ হয়নি।

    ক্রাচে ভর দেয়া লোকটা ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন। ওহে ছো, এইখানে তোমার পরিষ্কার করার মতো একটা জিনিসই বাকি আছে, আর সেটা এই ভদ্রমহিলার পকেটে রয়েছে।

    কী বললেন?

    মিসেস রেন, লোকটা বললেন, আপনি কি দয়া করে ছাইগুলো এই ছোক্রাটাকে একটু দেখাবেন?

    মেয়েটা কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করলো, তারপর সোয়েটারের পকেট থেকে একটা কাপড়ে মোড়ানো ছোট সিলিন্ডার বের করে আনলো।

    এইতো, দেখেছো? ক্রাচে ভর দেয়া লোকটা খিট খিটে গলায় বললো। এবার, তুমি ছাইগুলো ছিটিয়ে দিতে দাও, এতে করে মৃত ব্যক্তির শেষ ইচ্ছাটা অন্তত পূরণ হোক, তা না হলে, আমি ফাদার নোর্সকে বলবো, আমাদের সাথে কী রকম আচরণ করা হয়েছে।

    কাজের ছেলেটা ইতস্তত করলো, ফাদার নোর্সর চার্চের ঐতিহ্যের ব্যাপারে দারুণ শ্রদ্ধা রয়েছে…তার চেয়েও বড় কথা, তাঁর মেজাজ খুব চড়া থাকে যখন এখানে কেউ অসময়ে এসে পড়ে। হয়তো ফাদার নোম এই পরিবারের সদস্যদের এখানে আসার কথাটা বেমালুম ভুলে গেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে তাঁদেরকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফিরিয়ে দিলে ঝুঁকিটা খুব বেশি হয়ে যাবে। হাজার হোক, তারা বলেছেন, কাজটা সারতে মিনিট খানেক সময় লাগবে। এতে কী আর এমন ক্ষতি হবে?

    কাজের ছেলেটা সরে গিয়ে মি. এবং মিসেস রেনকে ভেতরে যেতে দিয়ে সে তার নিজের কাজে ফিরে গেলো। এক কোণে বসে কাজ করতে করতে সে আগত দর্শনার্থীদেরকে চোরা চোখে দেখতে লাগলো।

     

    চার্চের ভেতরে ঢুকেই ল্যাংডন মুখ টিপে হাসলো। লেই, সে নিচু স্বরে বললো, আপনি খুব চমৎকার মিথ্যে বলেন তো।

    টিবিংয়ের চোখ দুটো পিট পিট করলেন। অক্সফোর্ড থিয়েটার ক্লাব। তারা। এখনও আমার জুলিয়াস সিজারের অভিনয়ের কথা বলাবলি করে। আমি নিশ্চিত, কেউই তৃতীয় অংকের প্রথম দৃশ্যটা এতো নিবেদিতভাবে অভিনয় করতে পারেনি।

    ল্যাংডন তাঁর দিকে তাকালো। আমি তো জানি, সেই দৃশ্যে সিজার মারা যান।

    টিবিং কৃত্রিম একটা হাসি দিলেন। হ্যাঁ, কিন্তু, যখন আমি পড়ে গিয়েছিলাম আমার আলখেল্লাটা ছিঁড়ে খুলে গিয়েছিলো, আর সেজন্যে আমাকে মঞ্চে আরো এক ঘন্টা বানিয়ে বানিয়ে সংলাপ দিতে হয়েছিলো। তবুও, আমি একটুও নড়িনি। আমি খুব দারুণ করেছিলাম, বলা যায়।

    ল্যাংডন কৌতুক বোধ করলো। দুঃখিত, আমি সেটা দেখিনি। তারা আয়তক্ষেত্রের এনেক্সের কাছে এগোতেই, ল্যাংডন খুব অবাক হলো, ফাঁকা আর অনাড়ম্বর সাজসজ্জা দেখে। যদিও বেদীর আকারটা লম্বা বৃস্টিয় চ্যাপেলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তারপরেও আসবাবগুলো সাদামাটা আর শীতল, তাতে ঐতিহ্যবাহী কোন অলংকরণও নেই। নিরস, সে নিচু স্বরে বললো।

    টিবিং চাপা হাসি হাসলেন। ইংল্যান্ডের চার্চ। এ্যাংলিকানরা তাদের ধর্মকে একেবারে সোজা সুজি পান করে। তাদের দুঃখ-দুর্দশা এটাকে টলাতে পারে না।

    সেফি বিশাল খোলা জায়গাটার দিকে তাকালো, যা চার্চের বৃত্তাকার জায়গাটার দিকে চলে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে, এখানে দূর্গ ছিলো, সে চাপা কণ্ঠে বললো।

    ল্যাংডনও তার সাথে একমত পোষণ করলো। দেয়ালগুলো তার কাছে অন্য রকম বলে মনে হলো।

    নাইট টেম্পলাররা যোদ্ধা ছিলেন, টিৰিং মনে করিয়ে দিলেন, তাঁর এলুমুনিয়ামের ক্রাচের শব্দ চার্চের ভেতরে প্রতিধ্বনিত হলো। একটি ধর্মীয়-সামরিক গোষ্ঠী। তাদের চার্চগুলো ছিলো তাদের ঘাটি এবং ব্যাংক।

    ব্যাংক? লেইর দিকে তাকিয়ে সোফি জিজ্ঞেস করলো।

    হ্যাঁ। আধুনিক ব্যাংকের গোড়াপত্তন টেম্পলাররাই করেছিলেন। ইউরোপীয়ান ব্যবসীয়ীরা ভ্রমণের সময় স্বর্ণ বহন করতেন, তাই টেম্পাররা অভিজাত ব্যবসায়ীদেরকে তাদের স্বর্ণ নিকট টেম্পলার চার্চে জমা রাখতে দিতেন আর সেটা ইউরোপের যে কোন দেশের টেম্পলার চার্চ থেকে তুলে নিতে পারতো ব্যবসায়ীরা। শুধুমাত্র দরকার ছিলো প্রয়োজনীয় দলিলের। তিনি চোখ দুটো পিট পিট করলেন। এবং ছোট্ট একটা কমিশন। তারাই ছিলেন অরিজিনাল ATM। টিবিং একটা স্টেইড গ্লাসের জানালার দিকে ইঙ্গিত করলেন, যেখান দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে কাঁচে আঁকা সাদা রঙের নাইটের লাল রঙের ঘোড়ায় চড়া ছবিটা ফুটে ওঠে। এলানাস মার্সেল, টিবিং বললেন, দ্বাদশ শতকের প্রথম দিকে টেম্পল-এর মাস্টার ছিলেন। তিনি এবং তাঁর উত্তরসূরীরা আসলে প্রিমাস বারো এনজিয়ের পার্লামেন্টের চেয়ারটা অধিকারে রেখেছিলেন।

    ল্যাংডন খুব অবাক হলো। রিমের প্রথম ব্যারোন?

    টিবিং মাথা নেড়ে সায় দিলেন। টেম্পলের মাস্টার, কারো কারো মতে, রাজার চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখতেন তিনি। বৃত্তাকারের কক্ষটার দিকে আসতেই, টিবিং কাজের ছেলেটার দিকে এক ঝলক তাকালেন, সে দূরের বেদীর কাছে ময়লা পরিষ্কার করছে। আপনি জানেন, টিবিং সোফিকে নিচু স্বরে বললেন, হলি গ্রেইলটা এই চার্চে এক রাতের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিলো বলে কথিত আছে, পরে সেটা রাতের আঁধারেই টেম্পলাররা অন্য কোথাও লুকিয়ে ফেলেছিলেন। আপনি কি ভাবতে পারেন। চারটা সিন্দুকের স্যাংগৃল দলিলগুলো ঠিক এখানে ম্যারি মাগদালিনের দেহাবশেষের পাশে রাখা হয়েছিলো? এটা ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    বৃত্তাকার কক্ষটাতে প্রবেশ করতেই ল্যাংডনেরও গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। চারদিকে গারগোয়েল, পিশাচ, দৈত্য, দানব, আর যন্ত্রণাকাতর মানুষের মুখ, সব পাথরে তৈরি। সবগুলো যেনো তাদের দিকে চেয়ে আছে।

    গোল নাট্যমঞ্চ, ল্যাংডন ফিসফিস করে বললো।

    টিবিং ক্রাচটা তুলে ঘরটার বাম দিকের কোনায় নির্দেশ করলেন, তারপর ডান দিকে। ল্যাংডন ইতিমধ্যেই সেগুলো দেখেছে।

    দশটা পাথরের নাইট।

    বাম দিকে পাঁচটা। ডান দিকে পাঁচটা।

    চিরনিদ্রায় শায়িত হবার ভঙ্গীতে জমিনে খোঁদাই করা একেকটা প্রমাণ সাইজের মূর্তি। নাইটগুলো সব বর্ম পরে আছে, ঢাল আর তলোয়ার হাতে। সবগুলো মূর্তিই শাত-শাতে, কিন্তু পরিষ্কারভাবেই প্রতিটি মূর্তিই বৈশিষ্ট মণ্ডিত–ভিন্ন ভিন্ন বর্ম, হাত এবং পায়ের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান, মুখের আকৃতি, আর তাদের ঢালের চিহ্নগুলোও আলাদা রকমের।

    পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট, লন্ডনে আছেন শায়িত।

    বৃত্তাকার কক্ষটার ভেতরে প্রবেশ করতেই ল্যাংডন একটু আড়ষ্ট অনুভব করলো।

    এটাই সেই জায়গা।

     

    ৮৪.

    টেম্পল চার্চের খুব কাছেই একটা নোংরা-পূতিগন্ধময় গলিতে রেমি লেগালুদে জাগুয়ার লিমোজিন গাড়িটা একটা ডাস্টবিনের সামনে এনে থামালো। ইজিনটা বন্ধ করে সে জায়গাটা ভালো মতো দেখে নিলো। ফাঁকা, জন-মানব শূন্য। গাড়িটা থেকে নেমে, রিয়ারের দিকে গেলো সে। লিমোজিনের পেছনের দিকে, মূল কেবিনে ঢুকলো, যেখানে পাদ্রীটা পড়ে রয়েছে। রেমির উপস্থিতি টের পেয়ে পাদ্রীটা যেনো একটা নিরব প্রার্থনা থেকে জেগে উঠলো। তার লাল চোখ দুটোতে ভয়ের থেকে বেশি ছিলো কৌতূহল। সারাটা রাত রেমি এই লোকটার ধীর-স্থির থাকার ক্ষমতাটা দেখে দারুণ অবাক হয়েছে। রেঞ্জরোভার গাড়িটার ভেতরে, শুরুতে একটু ধস্তাধস্তি করলেও, একটু পরেই পাদ্রীটা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলো, পরিস্থিতিটা মেনে নেয়াই ভালো। তাই, সে তার ভাগ্যকে, উচ্চ ক্ষমতাবানদের হাতেই সপে দিলো।

    রেমি তার বো-টাইটা আলগা করে নিয়ে হাই কলারটা খুলে ফেলে এমনভাবে দম নিলো, যেনো কত বছরের মধে এই প্রথম ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারলো। লিমোজিনের বার থেকে একটা স্মিরনফ ভদকা নিয়ে এক ঢোক পান করলো, তারপর আরো এক ঢোক।

    বারের ভেতর থেকে একটা বোতলের ছিপি খোলার ছুরি বের করলো। রেমি ছুরিটা হাতে নিয়ে সাইলাসের দিকে তাকালো।

    এবার লাল চোখ দুটোতে ভীতির আভা দেখা গেলো।

    রেমি মুচকি হেসে লিমোজিনের পেছনে গেলে পাদ্রীটা তার বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে শুরু করলো।

    যেমন ছিলে তেমনি থাকো, রেমি হাতের ছুরিটা তুলে ধরে চাপা স্বরে বললো।

    সাইলাস বিশ্বাস করতে পারিছলো না, ঈশ্বর তাকে এভাবে পরিত্যাগ করেছে। শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করেও সাইলাস আধ্যাত্মিক চর্চা করেছে।আমি সারাটা রাত প্রার্থনা করেছি মুক্তির জন্য। এখন ছুরিটা তার দিকে এগোতেই সাইলাস চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।

    তার কাঁধে একটা যন্ত্রণার অনুভূতি হলো। সে চিৎকার করলো, এই লিমোজিনের পেছনে সে মারা যাচ্ছে, এটা বিশ্বাস করতেই পারছিলো না। আত্মরক্ষা করতেও অক্ষম সে। আমি ঈশ্বরের কাজ করছি। টিচার বলেছেন, তিনি আমাকে রক্ষা করবেন।

    সাইলাস তার পিঠে আর কাঁধে প্রচণ্ড যন্ত্রণাটা টের পেলো। যেননা, তার মাংস পেশী কেঁটে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। এবার মনে হলো, ঊরুতেও যন্ত্রণা হচ্ছে।

    তার সমস্ত শরীরে যন্ত্রণাটা ছড়িয়ে পড়লে সাইলাস আরো তীব্রভাবে চোখ দুটো বন্ধ করে রাখলো, যাতে তার শেষ সময়টাতে নিজের খুনির ছবিটা দেখতে না হয়। তার বদলে সে তরুণ বিশপ আরিজারোসার ছবিটা কল্পনা করলো, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন স্পেনের একটা চার্চের সামনে, যে চাৰ্চটা তিনি এবং সাইলাস, দুজনে মিলে নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন। আমার নতুন জীবনের শুরু ছিলো সেটা।

    সাইলাসের মনে হলো, তার শরীরটা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।

    একটু মদ খাও, ছুরি হাতে ধরা লোকটা নিচু স্বরে বললো। তার কথার টানটা ফরাসি। এতে তোমার রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য হবে।

    সাইলাস বিস্ময়ে চোখ খুললো। লোকটা তাকে মদ সঁধছে। দোমড়ানো মোচরানো ডাক্ট-টেপ তার পাশেই পড়ে আছে, সেটার পাশে পড়ে রয়েছে রক্তহীন ছুরিটাও।

    এটা পান করো, সে আবারো বললো। তোমার মাংসপেশীতে রক্ত জমে যাবার জন্যই ব্যথা পাচ্ছো।

    সাইলাস ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। যাহোক, ভদকাটা খুবই বিস্বাদ লাগছে। তারপরও, সে ওটা পান করে কৃতজ্ঞ বোধ করলো। আজ রাতে তার ভাগ্য খুব একটা ভালো না হলেও, ঈশ্বর একটা অলৌকিকতার মধ্য দিয়েই সেটা সমাধান করে দিয়েছেন।

    ঈশ্বর আমাকে পরিত্যাগ করেনি।

    সাইলাস জানতো, বিশপ আরিঙ্গাবোসা এটাকে কী নামে ডাকতেন।

    স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ।

    আমি তোমাকে আরো আগেই মুক্ত করতে চেয়েছিলাম, গৃহপরিচারক ক্ষমা চাইলেন, শ্যাতু ভিলেতে পুলিশ এসে পড়াতে আর তারও পরে, বিগিন-হিল এয়ারপোর্টে সেটা সম্ভব ছিলো না। এখনই কেবল সম্ভব হলো, মুক্ত করতে। তুমি বুঝতে পারছো, সাইলাস?

    সাইলাস তার দিকে চেয়ে রইলো। আপনি আমার নাম জানেন?

    গৃহপরিচারক মুচকি হাসলো।

    সাইলাস এবার উঠে বসলো, আবেগ, দ্বিধাদ্বন্দ আর অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আপনি কি…টিচার?

    রেমি মাথা ঝাঁকালো, কথাটা শুনে হেসে ফেললো। হায়, আমার যদি সেই ক্ষমতা থাকতো। না, আমি টিচার নই। তোমার মতোই, আমিও টিচারের সেবা করি। টিচার তোমার ব্যাপারে খুবই উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। আমার নাম রেমি।

    সাইলাস দারুণ অবাক হলো। আমি বুঝতে পারছি না। আপনি যদি টিচারের হয়ে কাজ করে থাকেন, তবে ল্যাংডন কেন কি-স্টোনটা আপনাদের বাড়িতে নিয়ে এলো?

    আমার বাড়িতে নয়, পৃথিবীখ্যাত গ্রেইল ইতিহাসবিদ স্যার লেই টিবিংয়ের বাড়িতে।

    আপনিতো সেই বাড়িতেই থাকেন। অদ্ভুত…

    রেমি মুচকি হাসলে, এটা ছিলো পুরোপুরিই অনুমেয় একটি ব্যাপার। রবার্ট ল্যাংডনের কাছে কি-স্টোনটা হস্তগত হওয়াতে তার সাহায্যের দরকার হয়ে পড়ে। লেই টিবিংয়ের বাড়ি ছাড়া আর কোন্ জায়গা ছিলো, তাদের আশ্রয়ের জন্য? আমি সেখানে থাকি বলেই টিচার আমাকে এই ঘটনায় জড়িয়েছেন। সে একটু থামলো। আপনি কীভাবে জানলেন, টিচার গ্রেইলের ব্যাপারে খুব ভালো জ্ঞান রাখেন?

    এবার সব কিছু পরিষ্কার হলে সাইলাস বিস্ময়ে হতবাক হলো। টিচার একজন। গৃহপরিচারক নিযুক্ত করলেন, যে লেই টিবিংয়ের সবধরনের গবেষণার বিষয়ে প্রবেশ করতে পারে। সেটা ছিলো খুবই অসাধারণ একটি পরিকল্পনা।

    তোমাকে আমার অনেক কিছুই বলার আছে, রেমি বললো, সাইলাসের হাতে লোডেড হেল্লার এ্যান্ড কোচ পিস্তলটা দিয়ে দিলো সে। তারপর, গ্লোভ-বক্স থেকে ছোট্ট একটা পিস্তল বের করে নিলো। কিন্তু প্রথমে, তোমাকে আর আমাকে একটা কাজ করতে হবে।

     

    ক্যাপ্টেন ফশে তার বিমান থেকে বিগিন-হিল এয়ারপোর্টে নেমেই কেন্টের পুলিশ চিফের কাছ থেকে টিবিংয়ের হ্যাঙ্গারে কী ঘটেছে সেটা শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।

    আমি নিজে প্লেনটা তল্লাশী করেছি, ইন্সপেক্টর জোর দিয়ে বললো, ভেতরে কেউ ছিলো না। তার কণ্ঠে রাগের বহিপ্রকাশ দেখা গেলো। আর আমি এটাও বলতে চাই যে, যদি স্যার লেই টিবিং আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তবে আমি

    আপনি কি পাইলটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন?

    অবশ্যই না। সে তো ফরাসি, আর আমাদের আইনে আছে—

    আমাকে প্লেনে নিয়ে যান।

    হ্যাঙ্গারে কাছে পৌঁছাতেই লিমোজিনটা রাখার জায়গায় কয়েক ফোঁটা রক্তের আলামত খুঁজে বের করতে ফশের মাত্র ষাট সেকেন্ড সময় লাগলো। সে প্লেনটার কাছে গিয়ে খুব জোরে জোরে ঘোষণা দিলো।

    আমি ফরাসি জুডিশিয়ার পুলিশের ক্যাপ্টেন ফশে বলছি। দরজাটা খুলুন!

    ভীত পাইলট দরজা খুলে সিঁড়িটা ঝুলিয়ে দিলো। ফশে সেই সিঁড়িটা দিয়ে উঠে গেলো। তিন মিনিট বাদে, তার পিস্তলটার সাহায্যে, সে পুরো স্বীকারোক্তি আদায় করে ফেললো। ধবল পাদ্রীর বর্ণনাও ছিলো তাতে। সে আরো জানালো, ল্যাংডন আর সোফি এক ধরনের কাঠের বাক্স জাতীয় কিছু প্লেনের সিন্দুকে রেখে গেছে। যদিও পাইলট অস্বীকার করলো, বাক্সটাতে কী আছে সেটা সে জানে না, তারপরও সে খেয়াল করেছে প্লেনে থাকার সময় ল্যাংডন সেই জিনিসটার দিকেই সমস্ত মনোযোগ রেখেছিলো।

    সিন্দুকটা খুলুন,ফশে বললো।

    পাইলটকে খুবই ভীত মনে হলো। আমি তো ল নাম্বারগুলো জানি না!

    খুব খারাপ। আমি আপনার পাইলটের লাইসেন্সটা দেখতে চাইবো।

    পাইলট সজোড়ে মাথা দোলালো। এখানকার কিছু রক্ষণাবেক্ষণকারীকে আমি চিনি। হয়তো তারা ভূল করে খুলতে পারবে?

    আপনাকে আধঘণ্টা সময় দিচ্ছি।

    পাইলট তার রেডিওটা তুলে নিলো।

    ফশে প্লেনের পেছনে এসে একটু কড়া মদ খেয়ে নিলো। সে মোটেও ঘুমায়নি। একটা সিটে বসে চোখ দুটো বন্ধ করলো। কী হচ্ছে, তা বোঝার চেষ্টা করলো। কেন্ট পুলিশের বোকামির জন্য আমাকে মাশুল দিতে হবে, খুব চড়া দামে। এবার সবাই একটা কালো জাগুয়ার লিমোজিন গাড়িকে খুঁজতে শুরু করবে।

    ফশের ফোনটা বেজে উঠলো, সে একটু শান্তিতে থাকতে চেয়েছিলো। আলো?

    আমি লন্ডনের পথে আছি। বিশপ আরিঙ্গাবোসা বললেন। আমি একঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবো।

    ফশে বসে পড়লো। আমি তো জানতাম আপনি প্যারিসে যাচ্ছেন।

    আমি খুব চিন্তিত আছি। আমি আমার পরিকল্পনাটা বদলে ফেলেছি।

    আপনার এটা করা উচিত হয়নি।

    আপনি কি সাইলাসকে পেয়েছেন?

    না। তাকে যারা বন্দী করেছে, আমি আসার আগেই তারা পুলিশকে বোকা বানিয়ে সটকে পড়েছে।

    আরিঙ্গারোসার রাগটা চড়ে গেলো। আপনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, প্লেনটাকে থামাবেন!

    ফশে তার কণ্ঠটা নিচু করলো। বিশপ, আপনার অবস্থাটা একটু বিবেচনা করুন। আমি আপনাকে বলবো, আজকে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সাইলাস এবং বাকিদেরকে খুঁজে বের করবো। আপনি কোথায় নামছেন?

    একটু দাঁড়ান। আরিঙ্গারোসা ফোনটা সরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পরই ফিরে আসলেন। পাইলট হিথরোতে ক্লিয়ারেন্স নেবার চেষ্টা করছে। আমিই তার একমাত্র যাত্রী, কিন্তু আমাদের আসাটা শিডিউল বহির্ভূত।

    তাকে কেন্টের বিগিন-হিলে আসতে বলুন। আমি তার ক্লিয়ারেন্স পাইয়ে দিচ্ছি। আপনি আসার সময় যদি আমি এখানে নাও থাকি, তবে আপনার জন্যে একটা গাড়ি ভাড়া করে রাখা থাকবে।

    ধন্যবাদ, আপনাকে।

    বিশপ, যখন আমরা প্রথম কথা বলেছিলাম, আপনার খুব ভালো করেই স্মরণে আছে যে, আপনিই একমাত্র ব্যক্তি নন, যে সব কিছু হারাবার দাঁড়প্রান্তে রয়েছেন।

     

    ৮৫.

    যে গোলক তুমি খোঁজো, সেটা সমাধিতেই থাকার কথা।

    টেম্পল চার্চের খোঁদাই করা প্রতিটি নাইটের মাথার পেছনে একটা করে পাথরের আয়তক্ষেত্রাকারের বালিশ রয়েছে। সোফির হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। কবিতাটিতে একটা গোলকের কথা বলা হয়েছে, যা তার দাদুর বেসমেন্টের নিচে ঐ দৃশ্যটার সাথে মিলে যায়। ওখানেও তাদের কাছে গোলক জাতীয় কিছু ছিলো।

    হায়ারোস গামোস। গোলক।

    সোফি অবাক হয়ে ভাবলো, সেই অনুষ্ঠানটি এই ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কিনা। বৃত্তাকার কক্ষটা দেখে মনে হচ্ছে প্যাগান আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। গোলাকার আকৃতির একটা নাট্যমঞ্চ, রবার্ট যেমন এটাকে বলেছিলো। সে কল্পনা করলো, রাতের বেলায় এই কক্ষটা মুখোশধারী লোকজনে পূর্ণ, সমস্বরে কী যেনো বলছে মশাল জ্বালিয়ে। সবাই প্রত্যক্ষ করছে ঘরের মাঝখানে পবিত্র মিলন।

    মাথা থেকে এই ভাবনাটা জোর করে দূর করে সোফি চলে গেলো ল্যাংডন আর টিবিংয়ের দিকে, তারা নাইটের খোঁদাই করা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। টিবিংয়ের মতে, তাদের তদন্তটি খুব নিখুঁতভাবে হওয়া দরকার বললেও, সোফির মনে হলো, তাদেরকে ঠেলে ঠুলে বাম দিকের পাঁচটি নাইটের দিকে নিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখবে।

    এইসব সমাধি ফলক ভালো মতো লক্ষ্য করে সোফি তাদের মধ্যে মিল আর অমিলগুলো দেখতে পেলো। সবগুলো নাইটই পেছনে দিকে মুখ করে আছে, কিন্তু তিন জন নাইটের পা সামনের দিকে এগোনো আর দুজন নাইটের দুটো পা আড়াআড়ি করে রাখা। এই বৈশাদৃশ্যটার সাথে মনে হচ্ছে, হারানো গোলকের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের কাপড়-চোপরগুলো পরীক্ষা করে সোফি দেখতে পেলো, দুজন নাইট বর্মের ওপর একটা নিমা বা অন্তর্বাস পরে রয়েছে, আর বাকি তিন জনের গোড়ালি পর্যন্ত আলখেল্লা পরা। আবারো, কিছুই পাওয়া গেলো না। সোফি তার সব মনোযোগ বাকি পার্থক্যগুলোর দিকে নিবিষ্ট করলো তাদের হাতের অবস্থান। দুজন নাইট তলোয়ার ধরে আছে, দুজন প্রার্থনায়রত। আর একজনের হাত নিজের পাশে রাখা। হাতের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর, সোফি কাঁধ ঝাঁকালো, একটা গোলকের অনুপস্থিতির কোন চিহ্নই সে দেখতে পেলো না।

    সে ল্যাংডন আর টিবিংয়ের দিকে তাকালো। তারা আস্তে আস্তে হেটে নাইটগুলো দেখছে, এখন পর্যন্ত মাত্র তৃতীয় নাইটের সামনে তারা। দেখে মনে হচ্ছে, তারাও কোন কিছু পাচ্ছে না।

    অপেক্ষা না করেই সোফি তাদেরকে পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় নাইটের দলটাকে দেখতে শুরু করলো। এবার সে স্মৃতি থেকে কবিতাটা আবৃত্তি করতে চেষ্টা করলো। বার কয়েক দেখে দেখে কবিতাটা মুখস্থ হয়ে গেছে তার।

    পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট লন্ডনে আছেন শায়িত।
    তার পরিশ্রমের ফল হয়েছিলো ধর্মাবতার রাগের কারণ।
    যে গোলক তুমি খোঁজো, সেটা সমাধিতেই থাকার কথা।
    এটা বিবৃত করে গোলাপী শরীর আর বীজপ্রসূ গর্ভের আখ্যান।

    সোফি নাইটদের দ্বিতীয় দলটার দিকে যেতেই দেখতে পেলো, প্রথম দলটির মতোই এই দলটির অবস্থা। সাদৃশ্যপূর্ণ। সবগুলোই বিভিন্ন ভঙ্গীতে, বর্ম পরিহিত আর তলোয়ার হাতে।

    শুধুমাত্র দশ নাম্বার সমাধি ফলকটাই ব্যতিক্রম। দ্রুত সেটার দিকে গিয়ে সোফি তাকিয়ে রইলো।

    কোন বালিশ নেই। কোন বর্মও নেই। অন্তর্বাস নেই। তলোয়ারও নেই।

    রবার্ট? লেই? সে ডাক দিলো, তার কণ্ঠটা কক্ষের ভেতরে প্রতিধ্বনিত হলো। এখানে কিছু একটা নেই।

    তারা দুজনেই সঙ্গে সঙ্গে তার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো।

    একটা গোলক? ক্রাচে ভর দিয়ে দ্রুত তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে টিবিং উত্তেজিত হয়ে বললেন। গোলকটা কি নেই?।

    না, ঠিক তা নয়, দশম সমাধিটার দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে সোফি বললো। মনে হচ্ছে পুরো একটি নাইটই নেই এখানে।

    তারা দুজনেই তার সামনে এসে দশম সমাধি ফলকটার দিকে তাকালো। একটা নাইটের জায়গায় সেখানে একটা পাথরের কাসকেট বসানো আছে। কাসকেটটা অসম বাহু বিশিষ্ট, পায়ের দিকে সংকুচিত, উপরের দিকে প্রসারিত।

    এখানের নাইটটা দেখা যাচ্ছে না কেন? ল্যাংডন জিজ্ঞেস করলো।

    অপূর্ব, টিবিং বললেন, গাল চুলকাতে চুলকাতে। এই বিসদৃশ্যটার কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে আমি এখানে শেষবার এসেছিলাম।

    এই কফিনটা, সোফি বললো, দেখে মনে হচ্ছে, বাকি নয়টা সমাধি ফলক খোঁদাই করার সময়ই খোঁদাই করা হয়েছিলো। তো, এই নাইটটা কাসকেটের ভেতরে কেন, উন্মুক্ত নয় কেন?

    টিবিং মাথা ঝাঁকালেন। এটাই এই চার্চের একটা রহস্য। আমি যতোদূর জানি, কেউ কখনও এটার ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি।

    শুনুন? কাজের ছেলেটা বললো, চোখে মুখে তার বিস্ময়যুক্ত সন্দেহ। কথাটা রূঢ় শশানালেও আমায় ক্ষমা করবেন, আপনি বলেছিলেন, আপনারা ছাই ছিটাতে এসেছেন, আর এখন পর্যন্ত আপনারা কেবল দর্শন করেই যাচ্ছেন।

    টিবিং ছেলেটার দিকে একটু তাকিয়ে ল্যাংডনের দিকে ফিরলেন। মি. রেন, মনে হচ্ছে আপনার পরিবারের দান-দক্ষিণার প্রতিদানে এখানে বেশি সময় পাওয়া যাবে না, তো, ছাই ছিটাতে শুরু করুন। টিবিং সোফির দিকে ঘুরলো। মিসেস রেন?

    সোফিও নাটক করে চললো, চামড়ায় পেচানো ক্রিপ্টেক্সটা পকেট থেকে বের করে আনলো।

    এবার, ছেলেটাকে টিবিং বললেন, তুমি কি আমাদেরকে একটু একা থাকতে দেবে?

    কাজের ছেলেটা একটুও নড়লো না। সে খুব ভালো করে ল্যাংডনের তাকিয়ে আছে। আপনাকে দেখে খুবই চেনা চেনা লাগছে।

    টিবিং কথাটা কেড়ে নিলেন। হয়তো এজন্যে যে, মি. রেন এখানে প্রতিবছরই এসে থাকেন!

    অথবা, সোফি একটু ভড়কে গেলো, কারণ, সে ল্যাংডনকে গতবছর টেলিভিশনে ভ্যাটিকানে দেখেছে।

    আমি মি. রেনকে কখনও দেখিনি, কাজের ছেলেটা জানালো।

    তুমি ভুল করছে, ল্যাংডন খুব ভদ্রভাবে বললো। আমার বিশ্বাস, তোমার সাথে আমার গত বছরেই দেখা হয়েছিলো। ফাদার নোর্স অবশ্য তোমার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু, এখানে আজ এসেই আমি ভোমার চেহারা দেখে চিনতে পেরেছি। তো, তুমি কি আমাদেরকে আরো কয়েকটা মিনিট সময় দেবে। আমি খুব দূর থেকে এসেছি, একটু ক্লান্ত বোধ করছি। এইসব সমাধি ফলকে ছাই ছিটাতে হবে। ল্যাংডন টিবিংয়ের মতো করে বললো যেনো কথাটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।

    কাজের ছেলেটার চেহারায় আরো বেশি সন্দেহের প্রকাশ দেখা গেলো। এগুলো তো সমাধি ফলক নয়।

    আমি দুঃখিত, কী বললে? ল্যাংডন বললো।

    অবশ্যই এগুলো সমাধি ফলক, টিবিং বললেন। তুমি কি বলছো?

    কাজের ছেলেটা মাথা ঝাঁকালো। সমাধিতে মৃত দেহ থাকে, এই সব জিনিসের নিচে কোন শব নেই।

    এটা একটা ক্রিপ্ট! টিবিং বললেন।

    শুধুমাত্র অপ্রচলিত ইতিহাসের বইতে এগুলোকে ক্রিপ্ট হিসেবে বিশ্বাস করা হোততা, কিন্তু ১৯৬০ সালের পুনঃনির্মাণের সময় তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি।

    টিবিং ল্যাংডনের দিকে তাকালেন। মি. রেনের সেটা জানতে পারার কথা। তার পরিবারই সত্যটা উদঘাটন করেছিলো।

    একটা অস্বস্তিকর নিরবতা নেমে এলো।

    সেই নিরবতাটা ভাঙলো দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দে।

    ফাদার নোস বোধ হয় এলেন? টিবিং বললেন। সম্ভবত তোমার গিয়ে দেখা উচিত?

    কাজের ছেলেটা সন্দেহগ্রস্ত দৃষ্টিতে তাকালেও ঘুরে চলে গেলো দরজার কাছে। যাবার সময় টিবিং, ল্যাংডন আর সোফির দিকে ভুরু কুচকে তাকালো।

    লেই, ল্যাংডন নিচু স্বরে বললো। কোন শব নেই? সে বলছেটা কি?

    টিবিংকে দেখে হতভম্ব মনে হলো। আমি জানি না। আমি সব সময়ই ভেবেছি…নিশ্চিতভাবেই, এটাই সেই জায়গা। আমি কল্পনাও করতে পারছি না, ও কী বলে গেলো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না?

    কবিতাটি কি আমি দেখতে পারি? ল্যাংডন বললো।

    সোফি পকেট থেকে সেটা বের করে দিলো।

    ল্যাংডন কবিতাটার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখলো। হ্যাঁ, কবিতাটায় নিশ্চিত করেই একটা সমাধির কথা বলা আছে। কোন ভণিতা করে নয়।

    কবিতাটা কি ভুল হতে পারে? টিবিং জিজ্ঞেস করলেন। জ্যাক সনিয়ে কি আমার মতোই ভুল করেছেন কি না?

    ল্যাংডন কথাটা বিবেচনা করে মাথা ঝাঁকালো। লেই, আপনি এটা নিজেই বলেছিলেন। এই চার্টটা প্রায়োরিদের সামরিক শাখা নাইট টেম্পলাররা তৈরি করেছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, প্রায়োরিদের গ্র্যান্ড মাস্টারের খুব ভালো করেই ধারণা রয়েছে, এখানে কোন নাইটকে কবর দেয়া হয়েছে কিনা।

    টিবিং হতবুদ্ধিকরভাবে বললেন, কিন্তু এই জায়গাটা খুব নিখুঁত আর যথার্থ। নাইটগুলোর দিকে তিনি আবারো ঘুরে দাঁড়ালেন। আমরা এখানে কিছু একটা ধরতে পারছি না!

     

    এনেক্স ভবনের দিকে পৌঁছে কাজের ছেলেটা কাউকে দেখতে না পেয়ে খুবই অবাক হলো। ফাদার নোস? আমি তো দরজায় শব্দ শুনেছিলাম। সে ভাবলো। সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।

    হালকা পাতলা গড়নের জ্যাকেট পরিহিত এক লোক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, মাথা চুলকাচ্ছে, যেনো কোন কিছু হারিয়ে ফেলেছে। কাজের ছেলেটা তখনই মনে পড়ে গেলো, ভেতরে যারা আছে তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়ার সময় দরজাটার তালা লাগাতে সে ভুলে গিয়েছিলো। আমি দুঃখিত, সামনের একটা বড় পিলারের দিকে এগোতে এগোতে সে বললো, চাৰ্চটা এখন বন্ধ আছে।

    পেছন থেকে আচমকা একটা কাপড় তার নাকমুখ চেপে ধরলে তার মাথাটা পেছনের দিকে হেলে গেলো। পেছন থেকেই প্রচণ্ড শক্ত একটা হাত তার মুখটা জোরে চেপে ধরলো। যে হাত দুটো তার মুখ ধরেছে, সেটা ধবধবে সাদা। তার নাকে এলকোহলের গন্ধ এসে লাগলো।

    সামনে দাঁড়ানো জ্যাকেট পরা লোকটা কাজের ছেলেটার মাথা বরাবর পিস্তল তা করে ধরলো।

    মনোযোগ দিয়ে শোেননা, হালকা পাতলা গড়নের লোকটা ফিস্ ফিস্ করে বললো। তুমি নিরবে, দৌড়ে, এই চার্চ থেকে বের হয়ে যাবে। একদম থামবে না। কথাটা বুঝেছো? মুখচাপা অবস্থায়ই ছেলেটা যতোদূর সম্ভব মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    তুমি যদি পুলিশকে ফোন করো… জ্যাকেট পরা লোকটা পিস্তলটা তার শরীরে ঠেকিয়ে ধরলো। আমি তোমাকে ঠিকই খুঁজে নেবো।

    ছেলেটা এরপর প্রাণপণে দৌড়ে চার্চ থেকে বেড়িয়ে গেলো। পেছনে না তাকিয়ে দুপায়ে সমস্ত শক্তি নিয়ে সে দৌড়ে চলে গেলো।

     

    ৮৬.

    ভূতের মতো নিঃশব্দে সাইলাস পিছু নিলো তার শিকারের। সোফি নেভু ব্যাপারটা টের পেতে একটু দেরিই করে ফেললো। ঘুরে দেখার আগেই সাইলাস তার কোমরে পিস্তলটা ঠেকিয়ে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো তকে। ভয়ে সে চিৎকার দিলে টিবিং আর ল্যাংডন দুজনেই ঘুরে তাকালো। প্রচণ্ড অবাক হলো তারা, সেই সাথে ভয়ে আতকে উঠলো।

    কি…? টিবিংয়ের মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেলো। তুমি রেমিকে কী করেছো?

    আপনার একমাত্র বিবেচনার বিষয় হলো, সাইলাস শীতল কণ্ঠে বললো, আমি এখান থেকে কি-স্টোনটা নিয়ে চলে যাবে, বুঝলেন। এই পুণরুদ্ধারের মিশনটা, রেমি যেভাবে তাকে বলেছে, হতে হবে খুব সহজ আর ঝামেলা মুক্ত : চার্চে ঢুকে, কি স্টোনটা নিয়ে চলে আসা; কোন খুন খারাবি নয়, ধস্তাধস্তি নয়।

    সোফিকে শক্ত করে ধরে সাইলাস তার বুকের কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো, হাতটা সোফির সোয়েটারের পকেটে ঢুকিয়ে দিলো সে। সোফির চুলের সুবাস নাকে টের পেলো। সেটা কোথায়? ফিসফিস করে বললো। কি-স্টোনটা একটু আগেও তার পকেটে ছিলো। সেটা এখন কোথায়?

    সাইলাস দেখতে পেলো ল্যাংডন তার সামনে কালো রঙের ক্রিপ্টেক্সটা ধরে রেখেছে। সেটা এমনভাবে দোলাতে লাগলো, যেনো কোন নিরীহ প্রাণীকে প্রলুব্ধ করার জন্য একজন ম্যাটাডোর কিছু নাড়াচ্ছে।

    নিচে নামিয়ে রাখুন, সাইলাস ধমক দিয়ে বললো।

    সোফি আর লেইকে চার্চ ছেড়ে যেতে দাও, ল্যাংডন জবাব দিলো। তুমি আর আমি এটা নিয়ে কথা বলবো।

    সাইলাস সোফিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে অস্ত্রটা ল্যাংডনের দিকে তাক করে তার সামনে এগিয়ে আসলো।

    আর এক পা-ও এগোবে না, ল্যাংডন বললো, তারা এই ভবন থেকে চলে না যাবার আগ পর্যন্ত।

    আপনি কোন কিছু দাবি করার মতো অবস্থায় নেই।

    আমি একমত হতে পারছি না। ল্যাংডন ক্রিপ্টেক্সটা তার মাথার ওপরে তুলে ধরলো। আমি এটা ভেঙে ফেলতে কোন কার্পণ্য করবো না।

    যদিও সাইলাস হুমকিটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিলো না, তারপরও, তার মনে একটা ভয় জাগলো। এটা অপ্রত্যাশিত। সে তার অস্ত্রটা ল্যাংডনের মাথায় তা করলো আর কণ্ঠটাও রাখলো তার হাতের মতোই দৃঢ়। আপনি কখনই ক্রিপ্টেক্সটা ভাঙতে পারবেন না। আপনিও আমার মতো গ্রেইলটা খুঁজে ফিরছেন।

    তুমি ভুল করছে। গ্রেইলটা তুমি আমার চেয়েও বেশি চাও। তুমি প্রমাণ করেছো, এটার জন্য খুনও করতে পারো।

     

    চল্লিশ ফিট দূরে দাঁড়িয়ে এনেক্সের একটা থামের পেছন থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে রেমি লেগালুদেচ সবকিছু দেখে একটা তাড়না অনুভব করলো। সব কিছু ঠিক পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে না। এখান থেকেই সে দেখতে পাচ্ছে, সাইলাস পরিস্থিতিটা সামলাতে পারছে না। টিচারের আদেশ অনুযায়ী, রেমি সাইলাসকে গুলি করতে বারণ করে দিয়েছে।

    তাদের যেতে দাও, ল্যাংডন আবারো বললো, মাথার ওপরে ক্রিপ্টেটা তুলে ধরে সাইলাসের অস্ত্রের দিকে তাকিয়ে রইলো।

    পাদ্রীটার লাল চোখে হতাশা আর ক্রোধ দেখা গেলো। রেমির এই আশংকা হতে লাগলো যে, ক্রিপ্টেক্সটা হস্তগত করার পর, সাইলাস আসলে ল্যাংডনকে গুলি করবে। ক্রিপ্টেটা পড়বে না!

    ক্রিপ্টেক্সটা রেমির মুক্তি আর সম্পদশালী হবার একটা টিকেট। এক বছরেরও বেশি আগে, সে ছিলো পঞ্চান্ন বছরের সামান্য একজন গৃহপরিচারক, শ্যাতু ভিলের চার দেয়ালে থাকতো আর খোঁড়া স্যার লেই টিবিংয়ের সেবা করতো। তারপরই, তাকে একটা অসাধারণ প্রস্তাব দেয়া হলো। স্যার লেই টিবিংয়ের সাথে রেমিকে সহযোগিতা করতে হবে, একটা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। এই ঘটনা তার জীবনে এমন একটা কিছু নিয়ে আসলো, যেটার স্বপ্ন সে জীবনেও দেখতো না। তারপর থেকে, শ্যাতু ভিলেতে তার বসবাস করার সময়টা হয়ে গেলো স্বপ্ন পূরণের একটি ধাপ।

    আমি খুব কাছাকাছি এসে গেছি, রবার্ট ল্যাংডনের হাতে ধরা কি-স্টোনটার দিকে তাকিয়ে রেমি নিজেকে বললো। ল্যাংডন যদি সেটা ফেলে দেয়, তবে সব কিছুই ভেস্তে যাবে।

    আমি কি দেখা দেবো? এটা করতে টিচার কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। রেমি হলো একমাত্র ব্যক্তি, যে টিচারের পরিচয়টা জানে।

    আপনি কি নিশ্চিত, সাইলাসকে দিয়ে এই কাজটা করাতে চাচ্ছেন? কি-স্টোনটা চুরি করার ব্যাপারে রেমি আধ ঘণ্টা আগে টিচারকে জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি নিজেই সেটা করতে পারবো।

    টিচার অনড় ছিলেন। সাইলাস চার জন প্রায়োরি সদস্যদের ব্যাপারে খুব ভালো কাজ করেছে। সে কি-স্টোনটা পুণরুদ্ধার করবে আর তুমি আড়ালেই থাকবে। যদি অন্যেরা তোমায় দেখে ফেলে, তবে তাদেরকে শেষ করে দিতে হবে, আর ইতিমধ্যেই অনেক বেশি খুন খারাবি হয়ে গেছে। তুমি তোমার চেহারাটা দেখিও না।

    আমার চেহারাটা বদলে যাবে, রেমি ভাবলো। আপিনি আমাকে যা দেবেন তা দিয়ে আমি হয়ে যাবো সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ। অস্ত্রোপচার করে তার আঙুলের ছাপও বদলানো যাবে, টিচার তাকে বলেছিলেন। খুব জলদিই সে মুক্ত হবে—আরেকটা অচেনা সুন্দর চেহারা নিয়ে সাগর তীরে সূর্যের আলো পোহাবে। বুঝতে পেরেছি, রেমি বলেছিলো। আমি আড়ালে থেকেই সাইলাসকে সাহায্য করবো।

    তোমার নিজের জেনে রাখা দরকার, রেমি, টিচার তাকে বলেছিলেন, টেম্পল চার্চের ভেতরে যে সমাধিটার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে ওখানে নেই। তো, ভয়ের কিছু নেই। তারা ভুল জায়গায় খোঁজ করছে।

    রেমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। আপনি জানেন, সমাধিটা কোথায়?

    অবশ্যই। তোমাকে পরে বলবো। এই মুহূর্তে তুমি খুব দ্রুত কাজ করবে। অন্যেরা যদি সত্যিকারের অবস্থানটা জেনে যায় আর তোমার যাওয়ার আগে চার্টটা ছেড়ে চলে যায়, তবে আমরা গ্রেইলটা চিরতরের জন্য হারাববা।

    রেমির কাছে অবশ্য গ্রেইলটার কোন মূল্য নেই, কেবল সেটা উদ্ধার করার পর তাকে যে টাকা দেয়া হবে, সেটাই তার চিন্তা। রেমি যখনই টাকাটার কথা ভাবে, সে লোভী হয়ে ওঠে, বিশ মিলিয়ন ইউরোর এক তৃতীয়াংশ। চিরতরে উধাও হবার জন্য খুব বেশিই।

    এখন, এই টেম্পল চার্চে, ল্যাংডন কি-স্টোনটা ভেঙে ফেলার হুমকি দেবার সঙ্গে সঙ্গে, রেমির ভবিষ্যষ্টাও ঝুঁকির মুখে পড়ে গেলো। এতো কাছে এসে সব ভেস্তে যাবে, রেমি সেটা ভাবতেও পারলো না। সে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। তার হাতে অস্ত্রটা লুকিয়ে রাখা যায়, ছছাই, জে-ফ্রেম মেডুসা, কিন্তু খুব কাছ থেকে গুলি করলে মারাত্মক হয়ে ওঠে জিনিসটা।

    ছায়া থেকে বেড়িয়ে রেমি বৃত্তাকার কক্ষের দিকে গিয়ে টিবিংয়ের মাথায় অস্ত্রটা তা করলো। বুড়া, আমি অনেক দিন ধরে এই কাজটা করার জন্য অপেক্ষা করেছি।

     

    রেমিকে তার দিকে পিস্তল তাক করতে দেখে স্যার লেই টিবিং-এর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হলো। সে করছেটা কি? টিবিং ছোট্ট মেডুসা রিভলবারটা চিনতে পারলো। এটা তার লিমোজিনে রাখা ছিলো।

    রেমি? টিবিং প্রচণ্ড মর্মাহত হলেন। এসব হচ্ছেটা কি?

    ল্যাংডন আর সোফিও হতভম্ব হয়ে গেলো।

    রেমি পেছন থেকে ঘুরে এসে টিবিংয়ের বুকে অস্ত্রটা ধরলো।

    টিবিং বুঝতে পারলেন, আতংকে তার পেশীগুলো অসাড় হয়ে গেছে। রেমি, আমি–

    আমি খুব সোজা করে দিচ্ছি, রেমি ল্যাংডনের দিকে তাকালো। কি-স্টোনটা নামিয়ে রাখুন, তা না হলে, আমি টৃগার টিপে দেবো।

    কিছুক্ষণের জন্য ল্যাংডনের মনে হলো, সে প্যারালাইজ হয়ে গেছে। কি-স্টোনটা তোমার কাছে মূল্যহীন, সে বললো। তুমি এটা খুলতে পারবে না।

    উন্নাসিক বোকা, রেমি নাক সিটকিয়ে বললো। আপনারা কি খেয়াল করেননি, আমি সারারাত ধরে এইসব কবিতা শুনেছি। আমি সবকিছুই শুনেছি। আর সেগুলো অন্যেকে বলে দিয়েছি, যে আপনাদের চেয়েও অনেক বেশি জানে। আপনারা এমনকি সঠিক জায়গায়ও আসেননি। যে সমাধিটা খুঁজছেন, সেটা একেবারেই অন্য জায়গায় রয়েছে।

    টিবিং ভয় পেয়ে গেলেন। সে বলছে কী!

    তুমি কেন গ্রেইলটা চাচ্ছো? ল্যাংডন জানতে চাইলো। এটা ধ্বংস করতে? শেষ সময়ের আগে?

    রেমি পাদ্রীটাকে ডাক দিলো, মি. ল্যাংডনের কাছ থেকে কি-স্টোনটা নিয়ে নাও।

    পাদ্রীটা এগোতেই ল্যাংডন পিছু হটে গেলো। কি-স্টোনটা ওপরে তুলে ধরলো, দেখে মনে হলো মাটিতে আছাড় মারবে।

    এই জিনিসটা ভুল মানুষের হাতে যাওয়ার আগে, ল্যাংডন বললো, আমি বরং এটা ভেঙেই ফেলবো।

    টিবিংয়ের মনে প্রচণ্ড একটা ভীতির উদ্রেক হলো। তিনি দেখতে পেলেন তাঁর আজীবনের লালায়িত স্বপ্ন, এতো পরিশ্রম চোখের সামনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

    রবার্ট, না! টিবিং চিৎকার করে বললেন। ফেলবেন না! আপনি যেটা ধরে আছেন, সেটাই গ্রেইল! রেমি আমাকে কখনও গুলি করতে পারবে না। আমরা একে অন্যেকে দশ বছর ধরে–

    রেমি ছাদের দিকে তাক্ করে একটা গুলি ছুড়লো। ছোট অস্ত্র হিসেবে আওয়াজটা খুব বেশিই হলো। পাথরের কক্ষটার ভেতরে গুলির শব্দটা বজ্রপাতের মতো প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।

    সবাই পাথরের মতো জমে গেলো।

    আমি কোন ছেলে-খেলা খেলছি না, রেমি বললো। পরেরটা হবে তার পিঠে। সাইলাসের কাছে দিয়ে দিন।

    ল্যাংডন এবার ক্রিপ্টেক্সটা দিয়ে দিলো। সাইলাস সামনে এগিয়ে এসে সেটা নিয়ে নিলো। কি-স্টোনটা তার পকেটে ভরে ফেলে সাইলাস পিছু হটে গেলো, অস্ত্রটা

    এখনও ল্যাংডন আর সোফির দিকে তাক করা আছে।

    টিবিংয়ের কাঁধে খুব জোরে চাপ লাগলো যখন রেমি তাঁর গলাটা পেঁচিয়ে ধরে পিছু হটতে শুরু করলো ওখান থেকে বের হবার জন্য।

    তাঁকে ছেড়ে দাও, ল্যাংডন বললো।

    আমরা মি. টিবিংকে একটু গাড়িতে করে ঘুরিয়ে নিতে যাচ্ছি, পিছু হটতে হটতে রেমি বললো। আপনি যদি পুলিশে খবর দেন, তবে উনি মারা যাবেন। আপনারা কোন কিছু করলেই উনি মারা যাবেন। বুঝতে পেরেছেন!

    আমাকে নিয়ে যাও,ল্যাংডন বললো, তার কণ্ঠে আবেগ উথলে উঠলো। লেইকে ছেড়ে দাও।

    রেমি হাসলো তা হচ্ছে না। উনার সাথে আমার খুবই চমৎকার ইতিহাস রয়েছে। তাছাড়া, তাকে আমাদের এখনও প্রয়োজন রয়েছে।

    সোফি আর ল্যাংডনের দিকে পিস্তলটা তা করে সাইলাসও পিছু হটতে লাগলো।

    সোফির কণ্ঠটা একটুও কাঁপলো না। তুমি কার হয়ে কাজ করছো?

    পিছু হটতে থাকা রেমির কাছে প্রশ্নটা হাসির উদ্রেক করলো। আপনি খুবই অবাক হবেন, মাদামোয়াজেল, নেভূ।

     

    ৮৭.

    শ্যাতু ভিলের ফায়ার-প্লেসটা নেভানো থাকলেও কোলেত ইন্টারপোল থেকে, ফ্যাক্সটা পেয়ে সেটার সামনে পায়চারী করতে লাগলো।

    একেবারেই অপ্রত্যাশিত কিছু।

    অফিশিয়াল রেকর্ড মতে, আদ্রেঁ ভার্নেট খুবই অনুকরণীয় একজন নাগরিক। পুলিশের খাতায় তাঁর কোন নাম নেই—এমনকি একটা পার্কিং টিকেটও না। সরবোর্ন এবং প্রেপ স্কুলে পড়ালেখা করে আন্তজার্তিক ফাইন্যান্স-এ একটা কামলদ ডিগ্রি নিয়েছেন। ইন্টারপোল বলছে, ভার্নেটের নাম সংবাদপত্রে বারবার এসেছে, কিন্তু সবসময়ই ইতিবাচক কাজ-কর্মের জন্য। প্রকারন্তরে, লোকটা জুরিখের ডিপোজিটরি ব্যাংকের নিরাপত্তা বেষ্টনীর নক্সাকার। ইলেকট্রনিক সিকিউরিটির অত্যাধুনিক দুনিয়ায় তিনি একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি। ভার্নেটের ক্রেডিট কার্ড রেকর্ড ঘেটে দেখা গেছে, আর্টের বই-পুস্তক, দামি মদ আর ক্লাসিক গানের সিডির প্রতি তাঁর আসক্তি রয়েছে কয়েক বছর আগে, একটা ব্যয়বহুল স্টেরিও সিস্টেম কিনেছিলেন।

    শূন্য, কোলেত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

    ইন্টারপোল থেকে আজ রাতে একমাত্র যে লাল পতাকা পাওয়া গেছে, সেটা হলো টিবিংয়ের চাকর রেমির আঙুলের ছাপ। পিটিএস চিফ-এক্সামিনার ঘরের এক কোনে আরামদায়ক একটা চেয়ারে বসে রিপোর্টটা পড়ছিলো।

    কোলেত সেদিকে তাকালো। কিছু পেলেন?

    এক্সামিনার কাঁধ ঝাঁকালো। আঙুলের ছাপটা রেমি লেগালুদেচের। ছিচকে অপরাধী, তেমন কিছু না। দেখে মনে হচ্ছে, বিনা পয়সায় ফোন করার জন্য চোরাই পথে টেলিফোনের তার টানার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতারিত হয়েছিলো… পরে, আরো কিছু ছিচকে চুরি করেছিলো। একবার শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতাল থেকে বিল না দিয়ে পালিয়েছিলো। সে চোখ তুলে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসলো। চিনাবাদাম এলার্জি।

    কোলে মাথা নেড়ে সায় দিলো। একটা পুলিশী তদন্তের কথা স্মরণ করলো, যাতে একটা রেস্টুরেন্ট তাদের মেনুতে চিলি রেসিপিতে চিনাবাদাম তেলের কথাটা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। ঐ খাবার খেয়ে একজন মারা গিয়েছিলো।

    লেগালুদেচ সম্ভবত গ্রেফতার এড়াতে এখানে এসে বসবাস করছে। এক্সামিনার আমুদে ভঙ্গীতে বললো। তার সৌভাগ্যের রাত।

    কোলেত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ঠিক আছে, আপনি বরং এই তথ্যটা ক্যাপ্টেন ফশেকে দিয়ে দিন।

    এক্সামিনার চলে যেতেই পিটিএসর আরেকজন এজেন্ট ঘরের ভেতর হুড়মুর করে প্রবেশ করলো। লেফটেনান্ট! আমরা গোলা-ঘরের মধ্যে একটা কিছু পেয়েছি।

    এজেন্টের উদ্বিগ্ন হওয়া মুখটা দেখে কোলেত একটাই অনুমান করলো। মৃতদেহ।

    না, স্যার। খুবই অপ্রত্যাশিত কিছু।

    কোলেত তার এজেন্টের পিছু পিছু গোলা-ঘরের দিকে গেলো। এজেন্ট ঘরের মাঝখানে একটা মইয়ের দিকে ইঙ্গিত করলো। সেটা মাচাঙে ওঠার জন্য লাগানো হয়েছে।

    প্রথম যখন এসেছিলাম তখন এই মইটাতো এখানে ছিলো না। কোলেত বললো।

    না, স্যার। আমি এটা লাগিয়েছি। এখানে রোলস রয়েস গাড়িটাতে আঙুলের ছাপ নেবার সময় আমি মইটা পড়ে থাকতে দেখে উপরে লাগিয়ে মাচাঙটাতে কি আছে দেখি।

    কোলেত মইটার ধাপগুলোতে দাগ দেখে বুঝতে পারলো, এটা দিয়ে কেউ নিয়মিতই মাচাঙে যেতো?

    একজন সিনিয়র পিটিএস এজেন্ট মইটার ওপরে আর্বিভূত হয়ে নিচের দিকে তাকালো। আপনি এটা একটু দেখেন, লেফটেনান্ট? সে বললো।

    ক্লান্ত ভঙ্গীতে কোলে মাথা নেড়ে মইটা বেয়ে ওপরে উঠে গেলো।

    ওখানে দেখুন, পিটিএস এজেন্ট বললো, অসম্ভব পরিষ্কার জায়গাটার দিকে ইঙ্গিত করলো সে। এখানে কেবলমাত্র এক জনের আঙ্গুলের ছাপই পাওয়া গেছে। তার পরিচয়টা আমরা একটু বাদেই পেয়ে যাবো।

    কোলেত ডিম-লাইটের আলোতে ভালো করে দেখার জন্য চোখ দুটো সংকুচিত করলো। এটা কি? ওপাশের দেয়ালে বিশাল একটা কম্পিউটার ওয়ার্ক-স্টেশন বসানো রয়েছে–দুই টাওয়ারের সিপিইউ, একটা ফ্ল্যাট স্ক্রিন মনিটর, স্পিকার, কতগুলো যন্ত্রপাতি এবং মালটি চ্যানেল অডিও কনসোল। মনে হচ্ছে, বৈদ্যুতিক সাপ্লইটা স্বয়ংম্পূর্ণ।

    এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে এখানে কি কাজ করা হতো?

    কোলেত যন্ত্রপাতিগুলোর কাছে গেলো। আপনারা কি এটা পরীক্ষা করে দেখেছেন?

    এটা আঁড়ি পাতার ঘাঁটি।

    কোলেত অবাক হলো। নজরদারি করা হতো?

    এজেন্ট মাথা নেড়ে সায় দিলো। খুবই আধুনিক নজরদারি সিস্টেম। কেউ একজন খুব ভালো করেই জানতে এখানে সে কি করতো। এইসব যন্ত্রপাতি আমাদের যন্ত্রপাতিগুলোর মতোই উন্নতমানের। অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোফোন, ফটো ইলেক্ট্রিক রিচার্জিং সেল, হাই ক্যাপাসিটি RAM চিপস। এমনকি এখানে নতুন ন্যানো ড্রাইভও আছে।

    কোলেত খুব অবাক হলো।

    এখানে পুরো সিস্টেমটাই রয়েছে, এজেন্ট বললো, কোলেতের হাতে একটা পকেট ক্যালকুলেটর আকারের এসেম্বলি দিলো। এটা একটা হাই ক্যাপাসিটি হার্ড ডিস্ক অডিও রেকর্ডিং সিস্টেম। রিচার্জেবল ব্যাটারি আছে।

    কোলেত এসব খুব ভালো করেই চিনতো। এগুলো হলো ফটো-সেল মাইক্রোফোন, কয়েক বছর আগে, এটা ছিলো খুবই চমকপ্রদ একটা আবিষ্কার।

    অতিক্ষুদ্র এই আঁড়ি পাতার যন্ত্র দিয়ে সব কিছু পরিষ্কার শোনা যায়।

    সিগনালটা কি? কোলেত জিজ্ঞেস করলো। রেডিও ওয়েভ। ছাদের ওপর ছছাট্ট একটা এন্টেনা আছে। এজেন্ট বললো।

    কোলেত এইসব রেকর্ডিং সিস্টেম ভালো করেই চিনতো। সাধারণত অফিসে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভয়েস এক্টিভিটেড সিস্টেম, কথা বলা হলেই কেবল রেকর্ডিং হয়, না হলে রেকর্ডিং বন্ধ থাকে। এতে হার্ড ডিস্কের জায়গা বেঁচে যায়। ইচ্ছে মতো হার্ড ডিস্কটা আবার মুছে ফেলাও যায়। রেকর্ড করা কথপোকথনগুলো সম্প্রচার করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হার্ড ডিস্ক সেগুলো মুছে ফেলে। আবার রেকর্ডিং-এর জন্য তৈরি হয়ে যায়।

    কোলেত এবার সেলফে রাখা কতগুলো অডিও ক্যাসেটের দিকে তাকালো। কয়েক শত হবে। সবগুলোতেই তারিখ আর সংখ্যার লেবেল লাগানো। কেউ একজন এগুলো নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলো। সে এজেন্টের দিকে ঘুরে বললো, আপনার কি কোন ধারণা আছে?

    লেফটেনান্ট, এজেন্ট বললো, কম্পিউটারের কাছে গিয়ে একটা সফটওয়্যার লাঞ্চিং করলো সে। এটা খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস…

     

    ৮৮.

    ল্যাংডনের নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হলো। সোফিকে নিয়ে টেম্পল টিউব স্টেশনের টানেল আর প্লটফর্ম দিয়ে দৌড়াতে লাগলো সে। নিজেকে তার খুব অপরাধী বলেও মনে হলো।

    আমি লেইকে জড়িয়েছি, আর এখন সে মহাবিপদে পড়ে গেছে।

    রেমির জড়িয়ে পড়াটা খুব অপ্রত্যাশিত আর দুঃখজনক। তারপরও, ব্যাপারটা বোঝা যাচ্ছে, যে-ই গ্রেইলটা হাতাতে চাচ্ছে, সে একজনকে নিযুক্ত করেছিলো। আমি যে কারণে টিবিংয়ের কাছে গিয়েছিলাম, ঠিক একই কারণে, তারাও তার কাছে গিয়েছিলো। ইতিহাসে দেখা যায়, যার কাছেই গ্রেইলের খবর ছিলো, চোর-বাটপার আর পণ্ডিতেরা চুম্বকের মতো আকর্ষণে তার কাছেই ছুটে গেছে। যে কারণে, টিবিং এসবের টার্গেট হয়েছে, সেই কারণটার কথা ভেবে ল্যাংডনের অপরাধ বোধটার তীব্রতা কম হবার কথা, কিন্তু সেটা হলো না। লেইকে আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে, তাকে সাহায্য করতে হবে। এক্ষুণি।

    ল্যাংডন সোফিকে অনুসরণ করলো, সে ওয়েস্ট-বাউন্ড ডিস্ট্রক্টের প্লাটফর্মটার সামনে একটা পে-ফোনের কাছে গেলো, পুলিশকে ফোন করতে। যদিও রোমি এব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলো। ল্যাংডন পাশের একটা বেঞ্চিতে বসে পড়লো বিষণ্ণ মনে।

    লেইকে সাহায্য করার সবচাইতে ভালো উপায় হলো, সোফি ডায়াল করতে করতে বললো, এক্ষুণি লন্ডনের পুলিশকে খবরটা জানিয়ে দেয়া, আমাকে বিশ্বাস করো।

    শুরুতে ল্যাংডন এই আইডিয়াটার সাথে একমত হতে পারেনি। কিন্তু যতোই তারা পরিকল্পনাটা নিয়ে এগিয়েছে, সোফির যুক্তিগুলো মনে হচ্ছে ঠিকই। এই মুহূর্তে টিবিং নিরাপদেই আছেন। যদি রেমি এবং অন্যেরা সমাধিটা কোথায় আছে সেটা জানেও, তবুও তাদেরকে টিবিংয়ের দরকার রয়েছে গোলকের খবরটা বের করার জন্য। কিন্তু ল্যাংডনের যে বিষয়ে চিন্তা হচ্ছে, সেটা হলো, গ্রেইল মানচিত্রটা খুঁজে পাবার পর লেইর কী হবে। লেই তখন বিশাল একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

    ল্যাংডন যদি টিবিংকে সাহায্য করতে চায়, অথবা গ্রেইলটা দেখতে চায়, তবে সবার আগে সমাধিটা খুঁজে বের করাই হলো সবচাইতে জরুরি। দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, শুরু করার জন্য রেমির কাছে রয়েছে মস্তবড় একটা মস্তিষ্ক।

    রেমি আর সাইলাসকে লন্ডনের পুলিশের কাছে সোফি ফেরারি হিসেবে তুলে ধরতে পারবে, তাদেরকে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য করতে পারবে, অথবা, ওদেরকে গ্রেফতার করাতেও পারবে। সেই তুলনায়, ল্যাংডনের পরিকল্পনাটা আরো বেশি অনিশ্চিত এটিউব স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে কাছের কিংস কলেজে যাওয়া, যা ধর্মবিদ্যা সংক্রান্ত ডাটাবেজের জন্য সুবিখ্যাত। অনিবার্য গবেষণার হাতিয়ার, ল্যাংডন এই কথাটা শুনেছিলো। ধর্ম সংক্রান্ত কোন ইতিহাসের প্রশ্নের তাৎক্ষনিক উত্তর পাওয়া যায়। সে ভাবতে লাগলো ডাটাবেজ-এ পোপ কর্তৃক সমাহিত একজন নাইট-এর ব্যাপারে কি বলা থাকবে।

    সে উঠে দাড়িয়ে পায়চারী করতে লাগলো, কামনা করলো, ট্রেনটা যেনো খুব জলদি এসে পড়ে।

     

    পে-ফোনে সোফির লাইনটা অবশেষে লন্ডন পুলিশের সংযোগ পেলো।

    স্নো হিল ডিভিশন, ডেসপ্যাচার বললো। আপনার কলটাকে আমি কোথায় দেবো?

    আমি একটি অপহরণ মামলা রিপোর্ট করবো। সোফি বললো।

    নামটা, প্লিজ?

    সোফি একটু থামলো। এজেন্ট সোফি নেভু, ফরাসি জুডিশিয়ার পুলিশ।

    আকাঙ্খ অনুযায়ীই টাইটেলটার ফল পাওয়া গেলো। এক্ষুণি দিচ্ছি, ম্যাম্। আমি একজন গোয়েন্দাকে লাইনে দিয়ে দিচ্ছি।

    কলটার সংযোগ পেতেই সোফি ভাবতে শুরু করলো, পুলিশ তার দেয়া টিবিং আর তাঁর অপহরণকারীদের বর্ণনাটা বিশ্বাস করবে কিনা। টুক্সেডো জ্যাকেট পরা একজন লোক। এর চেয়ে আর কত সহজে একজন সন্দেহভাঁজনের পরিচয় দেয়া যায়? রেমি যদি তার পোশাকটা পাল্টিয়েও ফেলে, তাতেও অসুবিধা নেই, তার সঙ্গে ধবল পাদ্রীটা রয়েছে। এটা মিস্ করা অসম্ভব। তারচেয়েও বড় কথা, তাদের কাছে একজন জিম্মি রয়েছে, তাই তারা পাবলিক যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে না। সোফি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, লন্ডনে কতগুলো জাগুয়ার লিমোজিন চলাচল করে।

    ফোনে গোয়েন্দার লাইন পেতে সোফির মনে হলো সারাজীবন লেগে যাবে। জলদি! সে ক্লিক করে একটা শব্দ শুনতে পেলো। পনেরো সেকেন্ড পার হয়ে গেছে।

    অবশেষে লাইনে একটা লোকের কণ্ঠ শোনা গেলো। এজেন্ট নেভু?

    বিস্মিত হয়ে সোফি কণ্ঠটা তক্ষুণি চিনতে পারলো।

    এজেন্ট নেভু, বেজু ফশে আবারো তাড়া দিলো। আপনি আছেন কোথায়?

    সোফি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। ফশে লন্ডন পুলিশকে সোফির ব্যাপারে আগেই বলে রেখেছিলো, তাদেরকে অনুরোধ করেছিলো, সোফির ফোন এলে যেননা তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুনুন, ফশে ফরাসিতে বললো। আজ রাতে আমি বিশাল একটা ভুল করে ফেলেছি। রবার্ট ল্যাংডন নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে সব ধরনের অভিযোগ বাদ দেয়া হয়েছে। তারপরও, আপনারা দুজন খুব বিপদে রয়েছেন। আপনাদের আমার কাছে আসার দরকার।

    সোফির মুখটা হা হয়ে গেলো। কী বলবে ভেবে পেলো না। কোন কিছুর জন্য ক্ষমা চাওয়া মতো লোক বেজু ফশে নয়।

    আপনি আমাকে বলেননি, ফশে বলতে লাগলো, জ্যাক সনিয়ে আপনার দাদু হন। যাহোক, এই মুহূর্তে, আপনি আর ল্যাংডনের দরকার নিকটস্থ লন্ডন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আশ্রয় নেয়া।

    আমি লন্ডনে আছি, সে এটা জানে? ফশে আর কি জানে? সোফি শুনতে পেলো ফশের ফোনে ড্রিলিং অথবা মেশিন চলার শব্দ। সে ফোনের লাইনে অদ্ভুত একটা ক্লিক ক্লিক শব্দও শুনতে পেলো। আপনি কি এই কলটা ট্রে করছেন, ক্যাপ্টেন?

    ফশের কণ্ঠটা এবার খুব দৃঢ় হলো। আপনাকে আমার সাথে সহযোগীতা করার দরকার, এজেন্ট নেভু। আমারা দুজনেই অনেক কিছু হারিয়েছি। এটা হলো ড্যামেজ কন্ট্রোল। আমি কাল রাতে কিছু ভুল করে ফেলেছি। আর এই ভুলের জন্য যদি একজন আমেরিকান অধ্যাপক আর ডিসিপিজের একজন ক্রিপ্টোলজিস্ট মারা যায়, তবে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আমি আপনাকে নিরাপদে নেবার জন্য কয়েক ঘন্টা ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

    সোফিও নিরাপদ আশ্রয় চায়। প্রকারন্তরে ল্যাংডনেরও সেরকমই ইচ্ছে।

    আপনি যে লোকটাকে চাচ্ছেন, সে হলো রেমি লেগালুদেচ, সোফি বললো। সে টিবিংয়ের গৃহপরিচারক। একটু আগে টেম্পল চার্চের ভেতর থেকে সে টিবিংকে অপহরণ করে–

    এজেন্ট নেভু! স্টেশনে ট্রেনটা ঢুকতেই ফশের গলাটা প্রচণ্ড কোলাহলের শব্দে চাপা পড়ে গেলো। এটা নিয়ে এভাবে ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। আপনি আর ল্যাংডন এক্ষুণি আসুন। আপনাদের ভালোর জন্যই! এটা আমার সরাসরি আদেশ!

    সোফি ফোনটা রেখে ল্যাংডনকে নিয়ে ট্রেনের কাছে চলে গেলো।

     

    ৮৯.

    টিবিংয়ের প্লেনের ক্যাবিনে বেজু ফশে সম্পূর্ন একা। সে সবাইকে বের করে দিয়ে মদ আর সামনে উডেন বাক্সটা নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।

    ঢাকনার ওপরে গোলাপটাতে আঙুল বুলিয়ে, সে ঢাকনাটা খুললো। ভেতরে একটা পাথরের চোঙা পেলো, তাতে অক্ষর বিশিষ্ট ডায়াল আছে। পাঁচটি ডায়াল SOFIA বানানটাতে মিলিয়ে রাখা আছে। ফশে শব্দটার দিকে তাকিয়ে চোঙাটার মুখ খুলে ফেললো। ভেতরের প্রতিটা ইঞ্চি সে ভালো করে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। চোঙাটার ভেতরে কিছু নেই, একেবারে ফাঁকা।

    ফশে সেটা রেখে প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে উদাসভাবে তাকালো। সোফির সাথে তার সংক্ষিপ্ত ফোনালাপের কথাটা আর শ্যাতু ভিলে থেকে যে তথ্যটা পেয়েছে সেটা ভাবতে লাগলো। ফোনের রিংয়ের শব্দে দিবা-স্বপ্ন থেকে ফিরে এলো সে।

    ডিসিপিজে থেকে এসেছে। ডেসপ্যাচার ক্ষমা প্রার্থী হলো। জুরিখের ডিপোজিটরি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বার বার ফোন করে যাচ্ছে। যদিও তাকে কয়েকবারই বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেন লন্ডনে একটা কাজে খুব ব্যস্ত আছে। তারপরও লোকটা ফোন করেই যাচ্ছে। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ফশে অপারেটরকে ফোনটা দিতে বললো।

    মঁসিয়ে ভার্নেট, লোকটা কোন কিছু বলার আগেই ফশে বললো, আমি দুঃখিত, আমি আপনাকে ফোন করতে পারিনি বলে। খুব ব্যস্ত ছিলাম। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপনার ব্যাংকের নাম মিডিয়াতে আসবে না। তো, আপনার এখন চিন্তার কারণটা কি?

    ভার্নেটের কণ্ঠটাতে উদ্বেগ দেখা দিলো যখন সে বর্ণনা করলো, কীভাবে সোফি আর ল্যাংডন তার ব্যাংক থেকে উডবাক্সটা নিয়েছে এবং তাকে পটিয়ে-পাটিয়ে তাদেরকে ব্যাংক থেকে পালানোর জন্য তার সাহায্য আদায় করে নিয়েছে। তারপর, আমি যখন রেডিওতে শুনলাম তারা অপরাধী, ভার্নেট বললেন, আমি তাদের কাছে বক্সটা ফেরত চাইলাম, কিন্তু তারা আমাকে আক্রমণ করে ট্রাকটা নিয়ে পালিয়ে যায়।

    আপনি একটা কাঠের বাক্স নিয়ে চিন্তিত আছেন, ফশে বললো, বাক্সটার দিকে তাকিয়ে সেটার ঢাকনাটা খুলে পাথরের চোঙাটা হাতে তুলে নিলো। আপনি কি আমাকে বলতে পারবেন, বাক্সটার ভেতরে কি আছে?

    ভেতরের জিনিসটা কোন ব্যাপার নয়, ভার্নেট পাল্টা বললো। আমি আমার ব্যাংকের সুনাম নিয়ে চিন্তিত। আমাদের কখনও কোন কিছু ডাকাতি হয়নি। কখনই না। আমি যদি আমার ক্লায়েন্টের জন্য এটা পুণরুদ্ধার করতে না পারি, তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

    আপনি বলছেন, এজেন্ট নেভু আর রবার্ট ল্যাংডনের কাছে একটা পাসওয়ার্ড আর চাবি ছিলো। তাহলে আপনি কীভাবে বলছেন বাক্সটা চুরি হয়েছে?

    তারা মানুষ খুন করেছে। সোফি নেভুর দাদাকেও। পাসওয়ার্ড আর চাবিটা অবশ্যই খারাপ পথে নেয়া হয়েছে।

    মি. ভার্নেট, আমার লোকজন আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড আর আগ্রহের বিষয়ে কিছু খোঁজ খবর নিয়েছে। আপনি একজন রুচিবান, সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। আমি অনুমান করতে পারি, আপনি একজন সম্মানিত লোকও, আমার মতোই। আমি বলছি, কথা দিচ্ছি আপনাকে, পুলিশ জুডিশিয়ারের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে, আপনার বাক্সটা এবং ব্যাংকের সুনাম বর্তমানে খুবই নিরাপদ একটা হাতে রয়েছে।

     

    ৯০.

    শ্যাতু ভিলের মাচাঙের ওপরে দাঁড়িয়ে কম্পিউটার মনিটরের দিকে বিস্ময়ে চেয়ে রইলো কোলেত। এই সিস্টেমটা এতোগুলো জায়গাকে নজরদারি করে?

    হ্যাঁ, এজেন্ট বললো। দেখে মনে হচ্ছে, ডাটাগুলো এক বছর আগে সংগ্রহ করা হয়েছিলো।

    বাকরুদ্ধ হয়ে কোলেত তালিকাটি আবারো পড়লো।

    কোলবার্ট সসটাক-চেয়ারম্যান, সাংবিধানিক কাউন্সিল
    জ্যঁ শ্যাফি–কিউরেটর, জো দ্য পমে মিউজিয়াম
    এদোয়ার্দো দেরোশার–সিনিয়র আর্কাইভিস্ট, মিতের লাইব্রেরি
    জ্যাক সনিয়ে—কিউরেটর, লুভর মিউজিয়াম
    মাইকেল ব্রেটন–DAS-এর প্রধান (ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থা)

    এজেন্ট স্ক্রিনের দিকে ইঙ্গিত করলো। চার নাম্বারের ব্যক্তিটিই আমাদের তদন্তের বিষয়।

    কোলেত উদাস হয়ে মাথা নাড়লো। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে। জ্যাক সনিয়েকে আঁড়িপাতা হয়েছিলো। তালিকার বাকি নামগুলোর দিকে আবারো তাকালো সে। কীভাবে একজন এতো বিখ্যাত লোকদেরকে আড়িপাতার মতো কাজটি করতে পারলো? আপনি কি কোন অডিও ফাইল শুনেছেন?

    অল্প কয়েকটা। এখানে অতি সাম্প্রতিক সময়ের একটা আছে। এজেন্ট লোকটা কম্পিউটারের কি বোর্ডে বোতাম চাপলো। এবার স্পিকারে কিছু শোনা গেলো। ক্যাপিতেই, উ এজেন্ত দু দিপাৰ্তমেন্তে দা ক্রিপ্টোগ্রাফি এস এরাইভ। কোলে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না। এ তো আমার কণ্ঠ! তার মনে পড়ে গেলো, সে সনিয়ের ডেস্কে বসে গ্র্যান্ড গ্যালারিতে ফশেকে সোফি নেভুর আগমন সম্পর্কে সতর্ক করেছিলো ফোনে।

    এজেন্ট লোকটা মাথা দোলালো। লুভরে আমাদের তদন্তের অনেক কিছুই রেকর্ড করা হয়ে গেছে।

    আপনি কি কাউকে আড়িপাতার জায়গাটা খুঁজে বের করার জন্য পাঠিয়েছেন?

    তার আর দরকার নেই। আমি জানি, সেটা ঠিক কোথায় আছে। এজেন্ট লোকটা একগাদা কাগজ থেকে একটা পৃষ্ঠা নিয়ে কোলেতের হাতে তুলে দিলো। চিনতে পেরেছেন?

    কোলেত দারুণ অবাক হলো। তার হাতে প্রাচীন স্কেমিটিক ডায়াগ্রামের একটা ফটোকপি, যাতে একটা যন্ত্রের ড্রইং আঁকা আছে। ইতালিয় ভাষায় বলে সে হাতের লেখাটা পড়তে পারলো না। তারপরও, সে জানতো সে কী দেখছে। একটা মধ্যযুগীয় ফরাসি নাইটের একটি পূর্ণাঙ্গ নক্সা। এই নাইটটা তো সনিয়ের ডেস্কের ওপর রাখা!

    কোলেতের চোখ মার্জিনের দিকে গেলো, যেখানে কেউ লাল কালিতে হিজিবিজি করে কিছু লিখে রেখেছে। লেখাগুলো ফরাসিতে। এতে বর্ণনা করা হয়েছে, কীভাবে নাইটটার ভেতরে শব্দ শোনার যন্ত্র ঢুকানো যায়।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.