Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প314 Mins Read0

    অধ্যায় ১ – মিল্ক ক্রেটের ভেতরে উত্তর

    সোতাই ‘সহজ খুপরি’-এর প্রস্তাব দিয়েছিল।

    ‘সহজ খুপরি? কী-সব আবোলতাবোল বলছো?’ সোতার হালকা পাতলা ও বালকসুলভ চেহারার দিকে তাকিয়ে লম্বা আতসুয়া বলল, ‘হাতের কাছে পাওয়া যায়। আমাদের লুকিয়ে থাকার উপযুক্ত জায়গা লাগবে, বুঝোই তো। আমি একবার ওখানে গিয়েছিলাম। কখনও ভাবিনি ওটা আমাদের কাজে লাগতে পারে।’

    ‘দুঃখিত বন্ধুরা।’ বিশালদেহী কোহেই তাদের পাশে পার্ক করা পুরোনো টয়োটা ক্রাউনের দিকে ক্লান্ত চোখে তাকালো—’ আমি বুঝতেই পারিনি যে ব্যাটারিটা এত জায়গা থাকতে এখানে এসেই মরে যাবে।

    আতসুয়া একটা নিশ্বাস ফেলল, ‘এসব ভেবে আর লাভ নেই।’

    ‘সিরিয়াসলি, আমি বুঝতেই পারছি না এমন কেন হলো। মানে রাস্তায় যখন চালাচ্ছিলাম তখন তো কোনো ওয়ার্নিং সাইনও দেখলাম না। বাতিগুলোও বন্ধ রেখেছিলাম।’

    ‘ওটার সময় ঘনিয়ে এসেছিল,’ সোতা বলল, ‘মাইলেজ তো দেখেছই। একশ হাজার মাইলেরও বেশি। এই জিনিসটা বৃদ্ধ মহিলার মতো হয়ে গেছে। যখন খুঁজে পেলাম তখনই সে মৃত্যুশয্যায়। এখান পর্যন্ত যে আসতে পেরেছি সেটাই বেশি। চুরি করতে হলে এরপর থেকে নতুন গাড়ি চুরি করব। আগেই বলেছিলাম তোমাকে।’

    কোহেই হাত ক্রস করে আর্তনাদের স্বরে বলল, ‘কিন্তু নতুন গাড়িতে অনেক অ্যালার্ম থাকে।’

    ‘অনেক হয়েছে,’ আতসুয়া তাদের থামালো। ‘সোতা, ওই পরিত্যক্ত বাসাটা কি কাছেই?’

    সোতা মাথা দোলালো, ‘তাড়াতাড়ি করলে হয়তো যেতে বিশ মিনিট লাগবে।’

    ‘ঠিক আছে। চলো, পথ দেখাও।’

    ‘কিন্তু গাড়িটার কী হবে? এখানে ফেলে যাওয়া বী ঠিক হবে?’

    আতসুয়া চারপাশ দেখে নিলো। এটি একটি আবাসিক এলাকার মাসিক পার্কিং লট। একটা খালি স্পট পাওয়া গেছে কিন্তু ঐ স্পটের আসল মালিক যখন দেখবে তার জায়গায় অন্য গাড়ি রাখা তখন নিঃসন্দেহে পুলিশ ডাকবে।

    ‘মোটেও ঠিক হবে না। কিন্তু আমরা তো চাইলেও একে আর সরাতে পারব না। তোমরা কোনোকিছুতে হাত দাওনি তো? আমাদের আঙুলের ছাপ না থাকলে কেউ আমাদেরকে ট্রেস করতে পারবে না।’

    ‘মানে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি?’

    ‘বললামই তো, আর কোনো উপায়ও নেই।

    ‘আচ্ছা। আমার পিছু পিছু এসো।’

    সোতা হাঁটতে শুরু করলে আতসুয়াকেও তার পিছু নিতে হলো। ডান হাতের ব্যাগটা খুব ভারী লাগছে।

    কোহেই তাদের সাথেই হাঁটছে। ‘এই আতসুয়া, একটা ক্যাব নিয়ে নিলে কেমন হয়? সামনে একটা ব্যস্ত সড়ক আছে। আমি নিশ্চিত ওখানে অনেক ক্যাব পাওয়া যাবে।’

    ‘তিনজন সন্দেহজনক ছেলেকে শহরের এই জায়গায় এই সময়ে দেখলে ক্যাব ড্রাইভার আমাদেরকে মনে রাখবে। একবার স্কেচ বের করে ফেললেই কিচ্ছা খতম।’

    ‘তোমার মনে হয় ড্রাইভার আমাদের দিকে তাকিয়েও দেখবে?

    ‘যদি দেখে? যদি তার ফটোগ্রাফিক মেমোরি থেকে থাকে?’

    কোহেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কয়েক কদম হাঁটার পর ধীরে ধীরে বলল, ‘স্যরি।’

    ‘বাদ দাও। চুপ করে হাঁটতে থাকো।’

    তারা বাকি শহরের চেয়ে কিছুটা উঁচু এলাকার মধ্য দিয়ে হাঁটছে। রাত দুটো বাজে এখন। এখানকার বাসাগুলো সব একইরকম, এক ডিজাইনের। প্রায় সব বাসারই বাতি বন্ধ কিন্তু তাও সাবধান থাকতে হবে তাদের। কেউ তাদেরকে দেখতে পেলে পুলিশে ফোন করে দিতে পারে। আতসুয়া চাইছিল যেন পুলিশ ভাবে যে তারা ঘটনাস্থল থেকে গাড়িতে করে পালিয়েছে—ক্রাউন গাড়ি চুরির ব্যাপারটা হয়তো আপাতত নজরে আসবে না।

    রাস্তাটা ঢালু হয়ে আসার সাথে সাথে আস্তে আস্তে বাড়িঘর কমে আসতে লাগল।

    ‘এই, আর কত দূর?’ কোহেই হাঁপিয়ে উঠছে।

    সোতা বলল যে তারা কাছাকাছিই আছে।

    শীঘ্রই তারা শুনসান একটা বাড়ির সামনে চলে এলো। বাড়িটা একটা ঐতিহ্যবাহী জাপানি বাড়ি, নিচতলায় একটা স্টোর আছে। আকারটা বেশ চমৎকার। লিভিং কোয়ার্টারগুলো কাঠের তৈরি।

    নামানো শাটারটা মাত্র দশ ফিট প্রশস্ত। একটা মেইল স্লট ছাড়া এর সামনে আর কিছু নেই। বাড়িটার পাশে একটা ছোটো স্টোরেজ শেড। দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক সময়ে একে গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

    ‘এটাই সেই জায়গা?’ আতসুয়া জিজ্ঞাসা করল।

    ‘উম।’ সোতা বাসাটার দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু করছে, ‘মনে তো হচ্ছে।’

    ‘মনে হচ্ছে মানে? কী বলছো? এটা ঐ বাসা না?’

    ‘হ্যাঁ। আমার মনে হয় ঠিক জায়গাতেই এসেছি। গতবার যখন এসেছিলাম তখন অন্যরকম লাগছিল। মানে, কসম কেটে বলছি মনে হচ্ছে এটা আগেরবারের চেয়ে বেশি নতুন দেখাচ্ছে।’

    ‘দিনের বেলা এসেছিলে, তাই না? একারণেই এমন লাগছে।’

    ‘হ্যাঁ। হয়তো।‘

    আতসুয়া তার ফ্ল্যাশলাইট বের করে শাটারে আলো ফেলল। শাটারের ওপরে একটা পুরোনো রংচটা সাইনে কিছু লেখা। জেনারেল স্টোর লেখাটা পড়তে পারল আতসুয়া, বাকিটুকু বুঝা যাচ্ছে না।

    ‘জেনারেল স্টোর? এখানে এত দূরে কে বাজার করতে আসবে?’

    ‘কেউ না।’ সোতা বলল, ‘একারণেই তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে এটা।’

    ‘হুম। ভেতরে কীভাবে যাবো?’

    ‘পেছনের দিকে একটা দরজা আছে। তালাটা নষ্ট। এদিক দিয়ে এসো।’

    সোতা তাদেরকে বাসা আর গ্যারেজের মাঝের সংকীর্ণ রাস্তাটা দিয়ে পেছনে নিয়ে যেতে লাগল। তিন ফিটের রাস্তাটা দিয়ে যাবার সময় সোতা আকাশের দিকে তাকাল। মাথার ঠিক ওপরেই পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে।

    একটা দরজার সামনে এসে পড়ল তারা। দরজার পাশে একটা কাঠের বাক্স আটকানো।

    ‘এটা কী?’ কোহেই প্রশ্ন করল।

    ‘তুমি জানো না?’ আতসুয়া পাল্টা জিজ্ঞাসা করল তাকে, ‘এটা মিল্ক ক্রেট। ডেলিভারির জন্য।’

    ‘ওহ,’ কোহেই অবাক হয়ে বাক্সটার দিকে তাকিয়ে রইল।

    দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই বাসি একটা গন্ধ এলো। কিন্তু গন্ধটা অতটাও খারাপ না। তারা একটা মাটির ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই একটা ভাঙা ওয়াশিং মেশিন।

    বাসায় ঢোকার মুখে একটা পাথরের ব্লকের ওপর একজোড়া বাসার স্লিপার রাখা। ছেলে তিনজন স্লিপারের সংস্পর্শ এড়িয়ে জুতো না খুলেই বাসার ভেতরে ঢুকে গেল।

    রান্নাঘরে ঢুকেছে তারা। মেঝে কাঠের তৈরি। জানালার পাশে একটা সিংক আর চুলা বসানো। পাশের দেওয়ালে একটা টু-ডোর ফ্রিজ। পাশেই টেবিল আর চেয়ার।

    কোহেই ফ্রিজ খুলল, ‘ধুর, কিছুই নেই।’

    ‘স্পষ্টতই থাকবে না,’ আতসুয়া রেগেমেগে বলল, ‘আর থাকলেই বা কী করতে? গপগপ করে খেয়ে নিতে?’

    ‘আমি কেবল বললাম–এটা খালি।’

    পাশের ঘরটা তাতামি মাদুর দিয়ে সজ্জিত। বাড়ির মালিক সেখানে একটা ড্রেসার ও একটা বুদ্ধ বেদি রেখে গেছে। এক কোনায় কিছু চার কোনা কুশন স্তূপ করে রাখা। একটা ক্লসেট আছে এখানে কিন্তু ছেলেরা কেউ সেটা খুলে দেখল না।

    স্টোরটা এই ঘরের পাশেই। আতসুয়া সেদিকে ফ্ল্যাশলাইট মেরে দেখল কিছু স্টেশনারি, রান্নাঘরের জিনিসপত্র আর সাফাইয়ের অল্প কিছু সরঞ্জাম স্টক করে রাখা। ‘বাহ!’ সোতা বেদিটার ড্রয়ার খুলে দেখছে, ‘মোমবাতি পেয়েছি। আলোর ব্যবস্থা করা যাবে এখন।

    সে অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে বাসাটা উজ্জ্বল করে তুললে আতসুয়া তার ফ্ল্যাশলাইট বন্ধ করে দিলো।

    ‘আহ!’ কোহেই মাটিতে থপ করে বসে পড়ল। ‘এখন কেবল সকালের অপেক্ষা।’

    আতসুয়া পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল কয়টা বাজে। আড়াইটা।

    ‘এই দেখো আমি কী পেয়েছি।’ সোতা বেদির ড্রয়ারে আরও কিছু খুঁজে পেয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো পুরোনো সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন।

    ‘দাও তো আমাকে,’ আতসুয়া খপ করে সোতার হাত থেকে ম্যাগাজিন নিয়ে ধুলা ঝাড়ল। কভারে হাসিমাখা এক তরুণীর ছবি। মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আগে কোথাও দেখেছে আতসুয়া।

    হুট করে মনে হলো কোথায় দেখেছে: টিভিতে। কয়েকটা নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে। এখন হয়তো ষাট কী সত্তর বছর বয়স হবে।

    কভারটার তারিখ দেখে বুঝতে পারল প্রায় চল্লিশ বছর আগের ম্যাগাজিন এটা। তারিখটা জোরে জোরে পড়তেই তার দুই বন্ধুর চোখ ছানাবড়া।

    ‘এত পুরোনো! কে জানে তখন পৃথিবী কেমন ছিল।’ সোতা বলল।

    আতসুয়া পাতা উলটে দেখল এখনকার ম্যাগাজিনের চেয়ে খুব ভিন্ন কিছু না। ‘সুপারমার্কেটগুলোতে টয়লেট পেপার ও ডিটারজেন্টের জন্য তোলপাড় শুরু হয়েছে। —মনে হচ্ছে কোথাও শুনেছি এটা।’

    ‘হ্যাঁ, আমি জানি এটার কথা।’ কোহেই বলল, ‘মনে হয় তেল সংকটের সময়কার খবর এটা।’

    আতসুয়া পুরো ম্যাগাজিন উলটে দেখে বন্ধ করে দিলো। কোনো উলঙ্গ ছবি বা আইডল নেই।

    ‘এখানে কত বছর ধরে কেউ থাকে না?’ ম্যাগাজিনটা ড্রয়ারে রেখে দিলো সে। ‘সরঞ্জামগুলো শেলফে রাখা, আর অনেক কিছুই ফেলে গেছে। মনে হয় মালিক তাড়াহুড়োয় বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিল।’

    ‘হঠাৎ-ই চলে গিয়েছিল।’ সোতা তার ধারণা বলল, ‘ক্রেতা কম আসতো আর বিলগুলো জমে পর্বত সমান হয়ে যাচ্ছিল তাদের। তাই এক রাতে মালপত্র সব গুছিয়ে পালিয়ে গেল তারা। কিচ্ছা শেষ।’

    ‘হ্যাঁ, হতে পারে।’

    ‘আমার ক্ষুধা পেয়েছে,’ কোহেই বলল, ‘আশেপাশে কোনো স্টোর পাওয়া যাবে?’

    ‘পাওয়া গেলেও—’ আতসুয়া চোখ রাঙালো কোহেইকে, ‘তুমি যেতে পারছ না। সকাল পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব। শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’

    কোহেই তার হাঁটু আঁকড়ে ধরল, ‘কিন্তু আমি তো এত ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে পারি না।’

    ‘হ্যাঁ, আর এই ময়লা জায়গায় কে ঘুমাবে?’ সোতা বলল, ‘অন্ততপক্ষে ঘুমানোর একটা ভালো জায়গা তো খুঁজতে পারি আমরা।’

    ‘এক সেকেন্ড,’ আতসুয়া উঠে দাঁড়িয়ে স্টোরের সামনের দিকে চলে এসে ফ্ল্যাশলাইটটা জ্বালালো। সামনের শেলফে আলো ফেলে কিছু খুঁজছে। প্লাস্টিক বা তার মতো কিছু যেন মাথার নিচে রেখে ঘুমানো যায়। একসময় পেয়েও গেল। সোজি দরজায় ব্যবহার করার কিছু পেপার টিউব। এতেই কাজ হবে। সেটা নেবার জন্য হাত বাড়াতেই তার পেছনে কিছু একটা ক্লিংক করে উঠল।

    চট করে ঘুরে আলো ফেলতেই দেখতে পেল শাটারের পাশের কাঠের বাক্সে একটা খাম পড়ে আছে।

    হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে আতসুয়ার। এখন এই সময়ে এমন একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে কেউ চিঠি দিয়ে যাবে, এমনটা হতেই পারে না। তার মানে কেউ জানে যে তারা এখন এখানে আছে—চিঠি দিয়ে কিছু বলতে চাইছে তাদেরকে।

    আতসুয়া লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে মেইল স্লট দিয়ে বাইরে তাকালো। সে নিশ্চিত ছিল সামনে পুলিশের গাড়ি চোখে পড়বে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখল বাইরে অন্ধকার, কোথাও কেউ নেই। আতসুয়া খামটা হাতে নিলো। পেছনে মুন র‍্যাবিট ছাড়া আর কিছু লেখা নেই খামে।

    খামটা নিয়ে সে বাকি দুজনের কাছে ফিরে গেল।

    ‘এটা কী?’ সোতা জিজ্ঞাসা করল, ‘দয়া করে বলো না যে আমরা এখানে আসার পর এটা ফেলে গেছে কেউ।’

    ‘কেউ মেইল স্লট দিয়ে ভেতরে ফেলেছে এটা। আমি দেখেছি। খামটা দেখো। কাগজটা নতুন, তাই না? কেউ আগে থেকেই এখানে এটা ফেলে রেখে থাকলে তো এতে ধুলা জমে যেত।’

    কোহেই ভয় পেয়ে গুটিসুটি হয়ে গেছে, ‘মনে হয় পুলিশ—’

    ‘আমিও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু মনে হয় না তারা এমন অনর্থক খেলা খেলবে আমাদের সাথে।’

    ‘হ্যাঁ’ সোতা বলল। ‘আর তারা মুন র‍্যাবিটই বা লিখবে কেন?’

    ‘তাহলে কে?’ কোহেইর কালো চোখে অস্থিরতা।

    আতসুয়া খামটা পরীক্ষা করে দেখছে। মনে হচ্ছে ভেতরে চিঠি আছে। লম্বা চিঠি। প্রেরকের এমন কী বলার থাকতে পারে?

    ‘এটা আমাদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে, তা হতেই পারে না।’ আতসুয়া সিদ্ধান্তে এলো।

    তার বন্ধুরা অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

    ‘আহা, ভাবো। আমরা এখানে এসেছি মাত্র কিছু সময় ধরে। এত অল্প সময়ে এত বড়ো চিঠি লেখা সম্ভব না।’

    ‘হতে পারে,’ সোতা বলল, ‘কেবল যদি এটা চিঠিই হয়ে থাকে তবে।‘

    ‘হুম,’ আতসুয়া আবার খামটা দেখল। সিল মারা আছে। সে দুহাত দিয়ে সেটা চেপে ধরল।

    ‘এই! কী করছো?’

    ‘খুলে দেখছি।’

    ‘কিন্তু এটা তো আমাদের উদ্দেশ্যে না।’ কোহেই প্রতিবাদ করল, ‘আমরা এটা করতে পারি না।’

    ‘আর কীই-বা করতে পারি। এখানে তো কোনো ঠিকানাও লেখা নেই।’

    আতসুয়া সিলটা খুলে ফেলল। গ্লাভস পরা হাতটা ভেতরে ঢুকিয়ে কাগজ বের করে আনল। নীল কালিতে লেখা হয়েছে চিঠিটা। শুরুতেই লেখা, আমার আকস্মিক

    অনুরোধ ক্ষমা করবেন।

    ‘মানে কী?’

    আতসুয়া পড়তে শুরু করল আর কোহেই ও সোতা তার দুই কাঁধের ওপর ঝুঁকে শুনতে লাগল।

    খুবই অদ্ভুত একটা চিঠি।

    আমার আকস্মিক অনুরোধ ক্ষমা করবেন। চিঠিতে নাহয় আমার নাম মুন র‍্যাবিটই থাকুক। আমি একজন মেয়ে, কিন্তু আপনাকে আমার আসল পরিচয় দিতে পারছি না। আশা করি সেটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

    আমি একজন ক্রীড়াবিদ কিন্তু নির্দিষ্ট বর্ণনা দিতে পারছি না। দাম্ভিকতা দেখাতে চাই না, তবে আমি আমার ফিল্ডের খুব ভালো ব‍্যাংকে আছি এবং পরবর্তী অলিম্পিকে জাপানের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জনের চেষ্টা করছি। ইভেন্টের কথা বললে হয়তো বুঝে যাবেন আমি কে, কারণ এই ফিল্ডে খুব বেশি প্রতিযোগী নেই। কিন্তু অলিম্পিকের কথাটা বলা জরুরি, তা না হলে আমার দুর্দশাটা আপনাকে সম্পূর্ণভাবে খুলে বলতে পারব না। আশা করি আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন।

    আমার জীবনে একজন পুরুষ আছে। যে পুরুষকে আমি ভালোবাসি। যে পুরুষ আমাকে অন্য কারও চেয়ে বেশি বোঝে এবং সমর্থন করে। সে আমার সবচেয়ে বড়ো ভক্ত এবং আমাকে অলিম্পিকে যাবার সর্বাধিক অনুপ্রেরণা সেই জোগায়। সে মন থেকে চায় আমি যেন অলিম্পিকে যাই এবং এর জন্য সে যে-কোনো কিছু করতে প্রস্তুত, যে-কোনো বলিদান দিতে প্রস্তুত। সে যে কতবার আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সাহায্য করেছে তার হিসেব নেই। সত্যি বলতে সে না থাকলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। তার কারণেই সব কঠিন প্রশিক্ষণ পার করতে পেরেছি। অলিম্পিক আমার কাছে নিজের লক্ষ্যের চেয়ে বেশি তার প্রতি কৃতজ্ঞতার একটা উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    কিন্তু এরপর, এক দুঃস্বপ্নের সূচনা হলো। আমার প্রেমিক খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ডাক্তার যখন আমাকে তার ডায়াগনোসিস বলল তখন যেন সব কিছু থমকে দাঁড়ায়। তার ক্যান্সার হয়েছে।

    ডাক্তার আমার কাছে স্বীকার করেছে যে তার সুস্থতার আর কোনো আশা নেই এবং সে কেবল আর ছয় মাস জীবিত থাকবে। কেউ তাকে সব কিছু জানায়নি কিন্তু আমার ধারণা সে জানে।

    আমার প্রেমিক চায় আমি যেন বাকি সব ভুলে কেবল প্রশিক্ষণে মনোযোগ দেই এবং প্রতিযোগিতায় জিতি। সে ঠিক-ই বলছে। এটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমি সব প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করে রেখেছি, দেশে-বিদেশে সবখানেই। অলিম্পিকে যাবার জন্য আমাকে নিজের পুরোটা দিতে হবে, আমি জানি সেটা

    কিন্তু, ক্রীড়াবিদ ছাড়াও আমার আরও একটি পরিচয় আছে, আরও একটি অংশ যা আমার প্রেমিকের সাথে সময় কাটাতে চায়। যে বাকি সব ভুলে কেবল তার পাশে থাকতে চায়, তার সেবা করতে চায়। আসলে আমি এটা তাকে আগেই বলেছি কিন্তু সে এতটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিল যে আমার কান্না পেয়ে যায়। সে কাকুতি-মিনতি করে বলেছে, ‘এমনটা বোলো না। তোমাকে অলিম্পিকে যেতেই হবে। এটা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না। তোমাকে সেই পর্যায়ে না দেখা পর্যন্ত আমি মারা যাবো না। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।’ সে আমার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে যেন আমি প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাই।

    তার রোগের ব্যাপারে বিস্তারিত কাউকে বলিনি। অলিম্পিক শেষে আমরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিবারের কেউ এখনও কিছু জানে না।

    আমি কী করব বুঝতে পারছি না। কোথাও মনোযোগ দিতে পারছি না। প্রশিক্ষণেও না। ফলে ভালো ফলাফল দিতে পারছি না। ছেড়ে দিতে চাইছি কিন্তু এমন করলে সে কষ্ট পাবে ভাবলে বুঝতে পারি আমি তাকে কষ্ট দিতে পারব না।

    নিজের সাথেই সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমি নামিয়া জেনারেল স্টোরের গল্প শুনেছি। আমি জানি আমার চিঠি নিয়ে তেমন কোনো আশা রাখতে পারি না কিন্তু তবুও লিখছি, যদি আপনি আমাকে কোনো পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন।

    আমি আপনার উত্তরের জন্য একটা খাম দিয়ে দিচ্ছি। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।

    -মুন র‍্যাবিট

    ২

    চিঠি পড়া শেষ করে তিন বন্ধু মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।

    ‘হলোটা কী?’ সোতাই সবার আগে মুখ খুলল, ‘সে এই মেইল স্লটে এমন চিঠি কেন দিতে যাবে?’

    ‘সে জানে না তার কী করা উচিত।’ কোহেই বলল, ‘এখানেই তো লেখা আছে।’

    ‘সেটা বুঝতে পারছি। আমি বলছি যে একটা জেনারেল স্টোরের উদ্দেশ্যে এমন চিঠি কেউ কেন লিখবে? তাও একটা পরিত্যক্ত স্টোর।’

    ‘আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ কেন? আমি উত্তর জানি না।’

    ‘আমি তোমাকে উত্তর জিজ্ঞাসাও করছি না। নিজে নিজেই ভাবছিলাম।’ আতসুয়া তাদের কথোপকথনে ঢুকল না। খামের ভেতরে আরও একটা খালি খাম পেল সে। এটাতেও কালো মার্কারে মুন র‍্যাবিট লেখা। কোনো ঠিকানা দেওয়া নেই।

    ‘হচ্ছেটা কী?’ অবশেষে বলল সে, ‘মনে হয় না এটা কোনো কৌতুক। খুব গুরুতর সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।’

    ‘মনে হয় চিঠি ভুল স্টোরে রেখে গেছে।’ সোতা বলল, ‘অন্য কোনো স্টোরের নামের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। এটাই হবে।’

    আতসুয়া ফ্ল্যাশলাইট হাতে উঠে দাঁড়ালো। ‘আমি দেখে আসছি।’

    পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে স্টোরের সামনে এসে সাইনটা আবার দেখল সে। ভালো করে দেখার পর বুঝল ‘জেনারেল স্টোর’-এর সামনের শব্দটা ‘নামিয়া’।

    ভেতরে এসে বাকিদেরকে বলল ঘটনাটা।

    ‘তাহলে মেয়েটা ভুল করেনি,’ সোতা মাথা দোলালো, ‘কিন্তু পরিত্যক্ত স্টোর থেকে এমন কী উত্তর পাবে সে?’

    ‘হতে পারে নামিয়া নামেই গরমিল হয়েছে।’ কোহেই ধারণা করল, ‘আসল নামিয়া স্টোর হয়তো অন্য কোথাও আছে। কিন্তু নাম যেহেতু এক তাই উলটাপালটা হয়ে গেছে।’

    ‘না। এমনটা হতে পারে না। এখানের সাইনটা তো চোখেই পড়ে না। আগে থেকে না জানলে বোঝাই যাবে না। এক সেকেন্ড’ আতসুয়া ম্যাগাজিনটা বের করল, ‘মনে হয় এখানে কিছু দেখেছি।’

    ‘কী দেখেছো?’

    ‘নামিয়া নামটা। এখানে কোথাও দেখেছি।’

    আতসুয়া পাতা উলটাতে উলটাতে পেয়ে গেল। ‘যে জেনারেল স্টোর আপনার আর্তনাদে সাড়া দেয়।‘

    ‘এটা কৌতুক। নামিয়া বা নায়ামি, জাপানি এই শব্দের অর্থ সমস্যা, আর্তনাদ ইত্যাদি।’

    পাতাটা খুলে পড়তে লাগল সে।

    .

    এই স্টোরটা মানুষের জীবনের কিছু কঠিন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য বিখ্যাত।

    আপনি কখনও এক্সএক্স শহরের নামিয়া জেনারেল স্টোরে এলে এর মেইল স্লটে একটি চিঠি দিয়ে দিন। পরদিন সকালে মিল্ক ক্রেটে তার উত্তর পেয়ে যাবেন।

    স্টোরের মালিক বাহাত্তর বছর বয়সি হাসিখুশি ইউজি নামিয়া আমাদেরকে এর পেছনের কাহিনি বলেছেন:

    ‘প্রতিবেশী বাচ্চাদের একটা মজার খেলার ছলে এর শুরু। তারা স্টোরের নামকে ভুল উচ্চারণ করত, ‘নায়ামি নায়ামি’ যার অর্থ ‘সমস্যা সমস্যা’ আমার সাইনে একটা বাক্য ছিল, ‘অর্ডার দেওয়ার জন্য কোনো জায়গা খুঁজছেন? ভেতরে এসে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’ বাচ্চারা তখন ভেতরে এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, ‘এই দাদু, আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারি?’ আমি বলতাম, ‘অবশ্যই’ আর জানেন, তারা আসলেই প্রশ্ন করা শুরু করল।

    প্রথমে দুষ্টামি করছিল। ‘পড়াশোনা না করেই কীভাবে এ-গ্রেড পাবো?’ এরকম প্রশ্ন। কিন্তু তাদের প্রশ্ন নিয়ে যখন আসলেই উত্তর দেওয়া শুরু করলাম তখন আস্তে আস্তে খুব গুরুতর এবং ব্যক্তিগত প্রশ্ন আসতে শুরু করল। ‘বাবা-মায়ের ঝগড়া কীভাবে বন্ধ করব?’ এরকম। তাদের সুবিধার জন্য আমি ঠিক করলাম মেইল স্লটে তারা তাদের প্রশ্ন রেখে যাবে। এরপর আমি সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিবো। তখন বড়োদের প্রশ্নও আসতে লাগল। আমি জানি না, এক বৃদ্ধের কথা কীভাবে তাদেরকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে কিন্তু তাও সাধ্যমতো চেষ্টা করলাম তাদের পরামর্শ দেওয়ার।

    আমরা নামিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন ধরনের প্রশ্ন বেশি আসে, তখন তিনি জানান প্রেমের বিষয়ে।

    ‘কিন্তু আমার পক্ষে সেগুলোর উত্তর দেওয়াই বেশি কঠিন।’

    .

    আর্টিকেলের শেষে স্টোরের একটা ছবি আছে। একজন বৃদ্ধ লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

    ‘এই ম্যাগাজিন এমনি এমনিই এখানে রেখে যাওয়া হয়নি। তারা এটা সংরক্ষণ করে রেখেছিল—কারণ এতে এখানের মালিকের কথা লেখা আছে।’ আতসুয়া ফিসফিস করে বলল, ‘চল্লিশ বছর হয়ে গেছে।’ একবার মুন র‍্যাবিটের চিঠির দিকে তাকালো সে।

    সোতা চিঠিটা হাতে নিলো। ‘মনে হয় মেয়েটা এই স্টোরের গল্প কিছুদিন আগে শুনেছে।’

    ‘হ্যাঁ, হতে পারে।’

    ‘মনে হয় কোনো বুড়ো ভামের কাছে শুনেছে,’ কোহেই বলতে লাগল, ‘যে হয়তো জানেই না স্টোরটার এখন কী অবস্থা কিন্তু মুন র‍্যাবিটকে এখানে আসার পরামর্শ দিয়ে দিয়েছে।’

    ‘নাহ, এমনটা হবে না। হয়েও যদি থাকে তবে মেয়েটা এখানে এলেই বুঝে যেত স্টোরটা অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত।’

    ‘আচ্ছা তাহলে ধরে নেই মুন র‍্যাবিটের মাথা খারাপ। এত সব দুশ্চিন্তায় তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।’

    আতসুয়া মাথা নাড়ালো, ‘এমন গুরুতর চিঠি কোনো মাথা নষ্ট মানুষ লিখতে পারে না।’

    ‘আচ্ছা তাহলে তোমার তত্ত্ব কী?’

    ‘আমি নিজেই সেটা বুঝতে চেষ্টা করছি।’

    ‘অথবা,’ সোতা হঠাৎ বলে উঠল, ‘সেসব এখনও চলছে।’

    আতসুয়া তার দিকে তাকালো, ‘কোন সব?’

    ‘ওই যে, পরামর্শের বিষয়টা।’

    ‘বুঝিয়ে বলো তো।’

    ‘মানে কেউ হয়তো এখনও চিঠির উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। লোকটা হয়তো আশেপাশেই থাকে। মাঝেমধ্যে এখানে আসে, চিঠি নিয়ে যায় আর এরপর উত্তর বাক্সে রেখে যায়। এমনটা হতে পারে।’

    ‘হ্যাঁ পারে। কিন্তু সেই হিসেবে লোকটার বয়স এখন ১১০ বছর হবে, যদি সে বেঁচে থাকে আর কী।‘

    ‘হয়তো তার ব্যাবসা অন্য কেউ দেখছে।’

    ‘কিন্তু কেউ আসার চিহ্ন তো দেখছি না।’

    ‘কারণ কেউ ভেতরে আসে না। বাইরে থেকেই চিঠি নিয়ে চলে যায়।’

    সোতার তত্ত্ব খাপে খাপ খায়। তারা তিনজন সামনে গিয়ে তদন্ত করে দেখল শাটার ভেতর থেকে আটকানো, খোলা প্রায় অসম্ভব। তারা তাতামি রুমে ফিরে এলো। আতসুয়া চিঠিটার দিকে তাকাল।

    ‘এখন কী করা যায়?’ সোতা আতসুয়াকে জিজ্ঞাসা করল।

    ‘আমাদের কিছু করার নেই। কাল সকালেই তো আমরা চলে যাচ্ছি।’ আতসুয়া চিঠিটা খামে ভরে রেখে দিলো।

    কিছু মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধতা নেমে এলো। বাইরের বাতাসের শব্দও শোনা যাচ্ছে।

    ‘তাহলে মেয়েটা কী করবে?’ কোহেই ফিসফিস করে বলল।

    ‘কী?’ আতসুয়া জিজ্ঞাসা করল।

    ‘অলিম্পিকে কি যাবে? নাকি ছেড়ে দিবে?

    ‘কে জানে।’

    ‘ছেড়ে দিতে পারবে না,’ সোতা বলল, ‘তাই না? তার প্রেমিক তো এটাই চায়।’

    ‘কিন্তু মেয়েটা যে ছেলেকে ভালোবাসে সে মারা যাচ্ছে।’ কোহেই তর্ক করল, তার কণ্ঠ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কঠোর। ‘এমন সময়ে সে কীভাবে প্রশিক্ষণ নেবে? তাদের এখন একসাথে থাকা উচিত। আমি নিশ্চিত তার প্রেমিক মনে মনে এটাই চায়।’

    ‘আমি নিশ্চিত নই। সে তো মেয়েটাকে অলিম্পিকে দেখার জন্য বেঁচে থাকার লড়াই করছে। মেয়েটা যদি এখন হাল ছেড়ে দেয় তাহলে ছেলেটা বাঁচার কারণই হারিয়ে ফেলবে।’

    ‘কিন্তু দেখো, মেয়েটা তো চিন্তাভাবনা ঠিক রাখতে পারছে না। এভাবে কীভাবে অলিম্পিকে যাবে? ছেলেটার কাছ থেকে দূরে থেকে সে এমনিতেই হেরে যাচ্ছে। দুদিকেই পরাজয়।’

    ‘একারণেই তো আরও ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। এখন চিন্তা ভাবনার সময় না। তাদের দুজনের জন্য মেয়েটাকে জিততে হবে। যেভাবেই হোক।’

    ‘জানি না বাপু। আমি হলে কখনও পারতাম না।’

    ‘তোমাকে করতে বলছে না কেউ। আমরা মুন র‍্যাবিটের কথা বলছি।’

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু আমি নিজে পারব না এমন কিছু তো অন্য কাউকে করতে বলব না। তুমি পারবে সোতা?’

    কোহেইর প্রশ্নের কাছে সোতা হার মানল। উত্তর না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে রইল। আতসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কী বলো?’

    আতসুয়া তীক্ষ্ণ চোখে বাকি দুজনের দিকে তাকালো, ‘তোমরা কীসব অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারে কথা বলছো? এসব নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নেই।’

    ‘তাহলে চিঠিটার কী করব?’ কোহেই জিজ্ঞাসা করল।

    ‘কিছু করার নেই।’

    ‘কিন্তু আমরা এভাবে ফেলে দিতে পারি না।’

    ‘তো? উত্তর দিতে চাও না কি?’

    কোহেই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ‘দেওয়া উচিত। আমরা বিনা অনুমতিতে চিঠি খুলে ফেলেছি।’

    ‘কীসব উলটাপালটা বকছ। এখানে কত বছর ধরে কেউ থাকে না। এখানে যে চিঠি ফেলেছে দোটা তারই। আমরা কেউ কোনো উত্তর দেবো না। তাই না সোতা?’

    সোতা ইতস্তত করল, ‘এভাবে ভাবলে ঠিকই আছে।’

    ‘এসব ভুলে যাও। এর পেছনে সময় নষ্ট করতে হবে না।’

    আতসুয়া পেপার টিউব এনে বাকি দুজনকে ভাগ করে দিলো, ‘এর ওপর ঘুমাতে পারবে।’

    ‘ধন্যবাদ।’ সোতা আর কোহেই বিড়বিড় করে বলল।

    আতসুয়া শুয়ে পড়ে বুঝতে পারল বাকিরা এখনও নড়ছে না।

    ‘হয়তো সেও সাথে যেতে পারে,’ কোহেই ফিসফিস করে বলল। ‘কে?’ সোতা জিজ্ঞাসা করল।

    ‘প্রেমিকটা। যে অসুস্থ। মেয়েটা যেখানে যাচ্ছে সেখানে যেতে পারে। এভাবে তারা একসাথে সময়ও কাটাতে পারবে আর মেয়েটা প্রশিক্ষণও চালাতে পারবে।’

    ‘তাতে লাভ হবে না। ছেলেটা খুব অসুস্থ। মাত্র ছমাস বাঁচবে আর।’

    ‘হাঁটতে পারবে না এমন তো বলেনি। হুইল চেয়ারে করেও তো যেতে পারে, তাই না?’

    ‘এসব পারলে তো পরামর্শই চাইত না মেয়েটা। আমার তো মনে হয় ছেলেটা শয্যাশায়ী।’

    ‘তোমার তাই মনে হয়?’

    ‘সম্ভবত।’

    ‘এই!’ আতসুয়া গর্জে উঠল। ‘তোমরা আর কতক্ষণ বকবক করবে? বলেছি না এসব নিয়ে মাথা না ঘামাতে।’

    বাকি দুজন চুপ করে রইল।

    এরপর সোতা বলে উঠল, ‘জানি তুমি কী বলতে চাইছ আতসুয়া, কিন্তু আমি এটা মাথা থেকে বের করতে পারছি না। মিস র‍্যাবিট খুব দুশ্চিন্তায় আছে। তাকে সাহায্য করার জন্য কিছু করতে চাই।’

    আতসুয়া উঠে বসল। ‘তুমি? কিছু করতে চাও? যত্তসব হাবিজাবি কথা। আমরা কীই-বা করতে পারি এখানে? না আছে টাকা, না শিক্ষা, না কোনো সাহায্যের হাত। আমরা কেবল ছোটোখাটো চুরি-চামারি করতে পারি, পরিত্যক্ত বাড়িতে রাত কাটাতে পারি। এখন তো সেটুকুও করতে পারছি না। ভালো দামের কিছু একটা চুরি করে পালাতে গিয়েও গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আর এখন এই গোয়ালঘরে ঘুমাতে হচ্ছে। আমাদের মতো নিরুপায় মানুষ অন্য কাউকে সাহায্য করার কথা ভাবেই বা কীভাবে?’

    সোতা আতসুয়ার কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।

    ‘শুয়ে পড়ো তো,’ আতসুয়া বলল, ‘সকালে রাস্তার লোকের ভিড়ে হারিয়ে যাবো আমরা।’ বলে আবারও শুয়ে পড়ল সে।

    সোতা অবশেষে শোবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে কোহেই তাকে ইতস্তত করে বলল, ‘এই, কিছু লিখবে?’

    ‘কী লিখব?’

    ‘ইশ। চিঠির উত্তর লিখবে। এমন একটা জিনিস ঝুলিয়ে রাখতে পারি না আমরা।’

    ‘তুমি একটা গর্দভ,’ আতসুয়া রেগে উঠল, ‘এখনও এসব নিয়ে পড়ে আছো কেন?’

    ‘শূন্য গোয়ালের চেয়ে কানা গরুও ভালো। যে-কোনো একটা উত্তর পেলেই মেয়েটা একটু স্বস্তি পাবে। ভালো পরামর্শ না দিতে পারি, অন্তত সান্ত্বনা তো দিতে পারব। আমরা আপনার চিঠি পেয়েছি, আমাদের সমবেদনা আপনার সাথে আছে— এমন কিছু।’

    ‘ঠিক আছে,’ গজগজ করে বলল আতসুয়া, করো তোমার যা ইচ্ছা।’ কোহেই উঠে দাঁড়াল, ‘লেখার জন্য কিছু আছে এখানে?’

    ‘ওদিকে কিছু স্টেশনারি দেখেছিলাম,’ সোতা বলল।

    তারা দুজন স্টোরের সামনের দিকে চলে গেল। একটু পরেই ফিরল। ‘পেয়েছো কিছু?’ ফিরতেই জিজ্ঞাসা করল আতসুয়া।

    ‘হ্যাঁ। মার্কারগুলো সব শুকিয়ে গেছে, কিন্তু একটা কলম পেয়েছি, কিছু কাগজও।’ কোহেইকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে। রান্নাঘরের টেবিলে কাগজ কলম রেখে বসে পড়ল সে। ‘আচ্ছা। কী লেখা যায়?’

    ‘তুমিই তো বলেছো একটু আগে। আমরা আপনার চিঠি পেয়েছি। আমাদের সমবেদনা আপনার সাথে আছে।’

    ‘এটুকু কীভাবে বলা যায়।’

    ‘এভাবেই বলা যায়।’

    ‘তুমি আগে যেটা বলেছিলে সেটা লিখে দাও নাহয়।’ সোতা বলল, ‘ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে যাবার কথা।’

    ‘তুমি না বললে এটা কাজে দিবে না?’

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু যদি লেগে যায়?’

    কলমটা হাতে নিয়ে কোহেই আতসুয়া আর সোতার দিকে তাকালো, ‘চিঠি কীভাবে শুরু করা যায়?’

    ‘সালাম অথবা শুভেচ্ছা এসব দিয়ে,’ সোতা বলল, ‘লিখতে পারো, প্ৰিয় মিস র‍্যাবিট বা সালাম মিস র‍্যাবিট। আসলে আমার মনে হয় না এমন কিছু লিখতে হবে। সে নিজেও তো লিখেনি, তাই না? টেক্সটের মতো করে লিখে ফেলো।’

    ‘আচ্ছা। আমরা আপনার টেক্সট পেয়েছি—মানে চিঠি আর কী, তাই না? আমরা—আপনার—চিঠি—পেয়েছি—’

    ‘জোরে জোরে বলে লিখতে হবে না,’ সোতা পরামর্শ দিলো।

    আতসুয়া কোহেইকে লিখতে দেখছে আর রাগে ফুঁসছে। কিছুক্ষণ পর কোহেই বলল, ‘শেষ।’

    সোতা চিঠিটা দেখল, ‘তোমার হাতের লেখা কী বাজে!’

    আতসুয়াও দেখল। একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা।

    চিঠি লেখার জন্য ধন্যবাদ। পরিস্থিতি খুব কঠিন বলে মনে হচ্ছে। আপনার বিষণ্ণতার কারণ বুঝতে পারছি। ভাবছিলাম, আপনি কি আপনার প্রেমিককে আপনার সাথে করে নিয়ে যেতে পারবেন? দুঃখিত, এর চেয়ে ভালো কোনো সমাধান আমি দেখছি না।

    ‘ভালো হয়েছে?’ কোহেই জিজ্ঞাসা করল।

    ‘ঠিক আছে।’ সোতা বলল, ‘তাই না?’

    ‘যত্তসব।’ বলল আতসুয়া।

    কোহেই চিঠিটা খামে ভরে নিলো। ‘আমি এটা বিনে রেখে আসছি।’ বলে সেটা নিয়ে বাইরে চলে গেল।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল আতসুয়া, ‘ও ভাবছে-টা কী। চেনে না জানে না এমন কাউকে পরামর্শ দিয়ে দিলো। আর সোতা তুমি, তুমি কী করে এতে সায় দিচ্ছো?’

    ‘মাঝেমধ্যে এমন কিছু করতে হয়।’

    ‘মাঝেমধ্যে মানে?’

    ‘কেউ কখনও আমাদের কাছে পরামর্শ চাইতে আসেনি। কখনও আসবেও না। এটাই আমাদের প্রথম আর শেষ সুযোগ কাউকে সাহায্য করবার।’

    ‘ভুলে যেও-না আমরা কারা।’

    কোহেই ফিরে এলো, ‘বিনের ঢাকনাটা এত শক্ত! মনে হয় অনেক বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে।’

    ‘তা তো হবেই। দুধওয়ালা তো আর–’ আতসুয়া থেমে গেল। ‘কোহেই, তোমার গ্লাভস কোথায়?’

    ‘ওই যে, টেবিলে।’

    ‘কখন খুলেছো?’

    ‘চিঠি লেখার আগে। গ্লাভস পরে লিখতে কষ্ট

    ‘ছাগল কোথাকার’ আতসুয়া উঠে দাঁড়ালো, ‘কাগজটাতে এখন তোমার আঙুলের ছাপ লেগে গেছে।’

    ‘তো? আমি খারাপ কী করেছি?’

    আতসুয়ার ইচ্ছা করছে বোকা কোহেই’র নাক বরাবর ঘুসি কষাতে, ‘একসময় না একসময় পুলিশ বুঝে যাবে যে আমরা এখানে এসেছিলাম। মুন র‍্যাবিট যদি চিঠিটা ততদিনে না নিতে আসে? এর আগেই পুলিশ তোমার আঙুলের ছাপ পেয়ে গেলে সব শেষ আমাদের। স্পিডিং টিকেট থেকে তারা ইতোমধ্যেই তোমার আঙুলের ছাপ পেয়ে গেছে, তাই না?’

    ‘ওহ! তুমি ঠিক বলছো।’

    ‘এজন্যেই বলছিলাম এসব বাদ দিতে।’

    আতসুয়া ফ্ল্যাশলাইটটা ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে ছুটল। মিল্ক বিনের ঢাকনাটা এত শক্ত। কিন্তু আতসুয়া কোনোমতে সেটা খুলে ফেলল। ভেতরে আলো ফেলে দেখল কিছুই নেই। সে চিৎকার করে উঠল, ‘এই কোহেই! কোথায় রেখেছিলে চিঠিটা?’ কোহেই বেরিয়ে এলো। তার হাতে গ্লাভস। ‘কোথায় মানে? এখানেই তো।’

    ‘এখানে নেই।’

    ‘কী বলো! এখানেই তো রেখেছিলাম।’

    ‘হয়তো তুমি খেয়াল করোনি, অন্য পাশে পড়ে গেছে।

    ‘না না। এখানেই রেখেছিলাম।’

    ‘তাহলে গেল কোথায়?’

    ‘আমি জানি না।’

    সোতা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলো। তার মুখ ফ্যাকাসে, ‘স্টোরের সামনের দিক থেকে শব্দ আসছিল। তাই আমি গিয়ে চেক করলাম। স্লটের মধ্যে এটা পেয়েছি।’ সোতা একটা খাম বের করল।

    আতসুয়ার যেন শ্বাস আটকে গেছে। তাড়াতাড়ি চারপাশে আলো ফেলল, কাউকে দেখা যায় কিনা।

    কিন্তু কেউ নেই। যেমনটা কয়েক মিনিট আগেও ছিল না।

    ৩

    দ্রুত উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কাল রাতে আপনার মেইল স্লটে চিঠি দেওয়ার পর থেকে ভাবছিলাম আমি হয়তো একটু বেশিই আশা করে ফেলেছি। সারাদিন চিন্তায় ছিলাম, আপনি বিরক্ত হবেন কিনা ভেবে। উত্তরটা পেয়ে স্বস্তি পেলাম।

    আপনার পরামর্শ যুক্তিযুক্ত। পারলে আমি তাই করতাম। কিন্তু আমার প্রেমিক খুব বেশিই অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

    আপনি হয়তো ভাববেন আমি কেন হাসপাতালের কাছাকাছি কোথাও প্ৰশিক্ষণ নিচ্ছি না? দুর্ভাগ্যবশত, হাসপাতালের আশেপাশে কোনো ভালো ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি নেই। এখন শুধু ছুটির দিনগুলো ওর সঙ্গে কাটাতে পারছি। কিন্তু আমার পরবর্তী ট্রেনিং সেশন চলে আসছে। তখন আমাকে যেতেই হবে। আজ তার সাথে দেখা করেছি। সে আমাকে বলল ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে। আমি বলেছি আমি তাই করব। সত্যিকার অর্থে বলতে চেয়েছিলাম যে আমি যাচ্ছি না, আমি এখানেই থাকতে চাই, তার সাথে। কিন্তু বলতে পারলাম না। জানি, এটা শুনলে সে ভেঙে পড়বে।

    এমন কিছু যদি থাকত, যার মাধ্যমে আমি তাকে প্রতিদিন দেখতে পারতাম। মাঙ্গাতে যেমন দেখায়, টিভি ফোন না যেন কী কী আধুনিক ডিভাইস।

    কিন্তু কল্পনা করে আর কী লাভ।

    মিস্টার নামিয়া, আমার সমস্যাগুলো শোনার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। চিঠি লিখে আমার মন অনেকটাই হালকা হয়েছে। আমার মনে হয় এসবের সমাধান আমাকে নিজেই খুঁজে নিতে হবে। কিন্তু আপনি যদি অন্য কোনো রাস্তা ভেবে পান, দয়া করে আমাকে অবশ্যই জানাবেন। না পেলেও জানাবেন। আমি আপনাকে কোনো বাড়তি ঝামেলায় ফেলতে চাই না।

    আমি কাল ক্রেটটা আবার চেক করব। অশেষ ধন্যবাদ।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    সোতা সবার শেষে চিঠিটা পড়ল। ‘হচ্ছেটা কী?‘

    ‘কে জানে,’ আতসুয়া বলল।

    ‘মুন র‍্যাবিট উত্তর দিয়েছে, তাই না?’ কোহেই জিজ্ঞাসা করল।

    ‘এটা এখানে এলো কীভাবে? তুমি তো কেবল পাঁচ মিনিট আগে চিঠিটা এখানে রেখে গেলে। আমি এসে দেখলাম, সেটা আর নেই। র‍্যাবিট মহিলাটা এর মাঝে এসে চিঠি নিয়ে গিয়ে থাকলেও এত দ্রুত উত্তর লিখে ফেলল কীভাবে? কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই উত্তর এসে পড়ল। খুবই অদ্ভুত।’

    ‘হ্যাঁ কিন্তু এটা মিস র‍্যাবিটেরই চিঠি, তাই না? সে আমার পরামর্শ ভেবে দেখেছে তাহলে।’

    আতসুয়া সোতার হাত থেকে খপ করে চিঠি নিয়ে নিল। কোহেই এর উত্তর না পড়ে এই চিঠি লেখা অসম্ভব।

    ‘ইশ।’ সোতা বলে উঠল, ‘কেউ কি মজা করছে আমাদের সাথে?’

    ‘ঠিক!’ আতসুয়া আঙুল দিয়ে সোতার বুকে খোঁল দিলো, ‘কেউ মজা করছে আমাদের সাথে।’

    চিঠিটা একপাশে রেখে সে ক্লসেটটা খুলল। সেখানে গাদা গাদা কার্ডবোর্ডের বাক্স রাখা।

    ‘আতসুয়া, তুমি কী করছো?’

    ‘দেখছি এখানে কে লুকিয়ে আছে। কেউ নিশ্চয়ই আমাদের কথাবার্তা শুনেছে। কোহেই চিঠিতে কী লিখছে তা বুঝে গেছে আর আগে ভাগেই উত্তর তৈরি করে ফেলেছে। ওদিকে দেখো তো তোমরা দুজন।’

    ‘এক মিনিট। কেউ এমন কেন করবে?’

    ‘আমি কী জানি। কেউ নিশ্চয়ই মানুষের সাথে এমন ফালতু মজা করে।’ আতসুয়া আলো ফেলে খোঁজাখুঁজি শুরু করল।

    ঠায় দাঁড়িয়ে রইল কোহেই আর সোতা।

    ‘আহা, খুঁজে দেখো তো।’

    সোতা ইতস্তত করে মাথা নাড়ছে, ‘আমি বুঝতে পারছি না, কেউ এমন কেন করবে।’

    ‘আমি বুঝতে পারছি। এছাড়া আর কোনো যুক্তি আছে তোমার?’

    ‘কিন্তু চিঠিগুলো ক্রেট থেকে উধাও হয়ে গেল কীভাবে?’

    ‘হবে কোনো ম্যাজিক ট্রিক।’

    ‘ম্যাজিক ট্রিক?’

    কোহেই সবার শেষে দ্বিতীয় চিঠিটা পড়ল। ‘মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত কিছু আছে।’

    ‘কী,’ আতসুয়া জিজ্ঞাসা করল।

    ‘সে বলছে টিভি ফোন—বুঝলাম না। তার কাছে কী সেল ফোন নেই? সে তো চাইলে ভিডিয়ো চ্যাট করতে পারে।’

    ‘হয়তো হাসপাতাল থেকে ছেলেটাকে সেল ফোন ব্যবহার করতে মানা করে দিয়েছে।’ সোতা আন্দাজ করল।

    ‘কিন্তু মেয়েটা বলেছে এসব ও মাঙ্গাতে দেখে। মনে তো হচ্ছে সে সেল ফোন জিনিসটাই চিনে না।’

    ‘অসম্ভব। কোন জগতে থাকে তাহলে সে?’

    ‘না, এমনই হবে। চলো তাকে বলি।’ টেবিলের দিকে চলতে শুরু করল কোহেই।

    ‘এক সেকেন্ড। তুমি আবার উত্তর লিখবে? এদিকে কেউ আমাদের সাথে মজা করছে।’

    ‘সেটা আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে জানি না।’

    ‘কেউ নিশ্চিতভাবেই আমাদের সাথে মজা করছে। আমাদের কথা শুনে আগেভাগে উত্তর ঠিক করছে।’ আতসুয়ার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, ‘ঠিক আছে কোহেই, তুমি চিঠি লেখো। আমি একটা বুদ্ধি পেয়েছি।’

    ‘কী?’

    ‘দেখোই না, কী।’

    কোহেই ঝটপট চিঠি লিখে ফেলল, ‘শেষ’।

    সোতা কোহেইয়ের কাঁধের ওপর থেকে উঁকি দিয়ে চিঠিটা দেখল, বরাবরের মতো যাচ্ছেতাই অবস্থা।

    .

    দ্বিতীয় চিঠির জন্য ধন্যবাদ। কিছু ভালো সংবাদ আছে আপনার জন্য। কিছু ফোন দিয়ে ভিডিয়ো কল করা যায়। সেরকম একটা কিনে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন হাসপাতালের কেউ টের না পায়।

    .

    ‘কেমন হলো?’ কোহেই জিজ্ঞাসা করল।

    ‘ঠিক আছে।’ আতসুয়া বলল। ‘খামে ভরে দাও।’

    মুন র‍্যাবিটের দ্বিতীয় চিঠির সাথেও একটা বাড়তি খাম ছিল। কোহেই তাতে উত্তরটা ভরে দিলো।

    ‘এবার আমিও যাবো সাথে। সোতা তুমি এদিকে থাকো।’ আতসুয়া ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে পেছনের দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল। বাইরে এসে কোহেই আর আতসুয়া একসাথে চিঠিটা কাঠের বাক্সে রেখে দিলো।

    ‘ঠিক আছে কোহেই। কোথাও লুকিয়ে পড়ো, আর এই বাক্সটার ওপর থেকে চোখ সরাবে না।’

    ‘আচ্ছা। তুমি কোথায় যাবে আতসুয়া?’

    ‘সামনে। যে চিঠি দিতে আসবে তাকে ধরব।’

    আতসুয়া বাড়ির সামনের দিকে এসে লুকিয়ে পড়ল। দেখতে লাগল কেউ আসে কিনা। কেউ নেই। কিন্তু একটু পরেই মনে হলো কেউ তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। চট করে ঘুরতেই দেখল সোতা।

    ‘কী করছো? আমি তো তোমাকে ভেতরে থাকতে বলেছিলাম।’

    ‘কাউকে দেখেছো?’

    ‘এখনও না।’

    সোতাকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। মুখ হাঁ হয়ে আছে তার। ‘তোমার কী হলো?’

    সোতা একটা খাম তুলে ধরল। ‘আরও একটা পেয়েছি।’

    ‘বলো কী!’

    ‘আরও একটা চিঠি।’

    ৪

    আরও একটা উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। কেউ আমার ব্যাপারে চিন্তিত তা জেনে খুব ভালো লাগছে।

    আমি খুবই দুঃখিত, আপনার গত চিঠির পরামর্শটা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। আসলে একদমই বুঝতে পারিনি। হয়তো আমি এতটা শিক্ষিত নই বা ততটা উন্নত বোধবুদ্ধি সম্পন্ন নই, তাই আপনার কৌতুকটা আমি ঠিক ধরতে পারলাম না, যেটা হয়তো আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য লিখেছেন।

    আমার মা সবসময় বলে, যদি তুমি কোনো কিছু বুঝতে না পারো, তবে ভেবে নিও না যে সবাই তোমাকে সেটা বুঝিয়ে দিতে বাধ্য—নিজে নিজে বোঝার চেষ্টা করবে। আমি নিজে নিজেই সব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে আমি একা একা বুঝতে পারব না।

    সেল ফোন কী?

    বানান দেখে মনে হয়েছিল বিদেশি কোনো শব্দ। কিন্তু এর কোনো অর্থ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। যদি ইংলিশ হয়ে থাকে তবে অ্যানিমেল সেল বা সেলমেট জাতীয় কিছু হবে, কিন্তু কোনোটাই সঠিক মনে হচ্ছে না। এটা কি অন্য কোনো ভাষা?

    শব্দটার অর্থ না জানতে পারলে পরামর্শটাই বৃথা যাবে। এর অর্থটা আমাকে দয়া করে জানালে উপকৃত হবো।

    আমি জানি আপনি নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত। এভাবে আপনার সময় নিয়ে নিচ্ছি বলে আমি খুব দুঃখিত।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    ছেলে তিনজন রান্নাঘরের টেবিলে বসে আছে। সোতা চিঠিগুলো ক্রমানুসারে সাজালো।

    ‘আচ্ছা,’ সোতা বলল, ‘কোহেই-এর চিঠি বাক্স থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। যদিও সে লুকিয়ে বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সব নজর রাখছিল, কেউ সেখানে এসে চিঠি নিয়ে যায়নি। আতসুয়া সামনের দিকে ছিল, সেও কাউকে দেখেনি। কোনোভাবে তৃতীয় একটা চিঠি মেইল স্লটে এসে পড়েছে। ঠিক বলছি তো?’

    ‘হ্যাঁ,’ আতসুয়া বলল। কোহেই এখনও নিশ্চুপ।

    ‘তার মানে,’ সোতা আঙুল নাচাচ্ছে, ‘বাসায় কেউ আসেনি। তবুও কোহেই এর চিঠি উধাও হয়ে গেছে এবং মিস র‍্যাবিটের নতুন এক চিঠি আমাদের কাছে এসে পড়েছে। মিল্ক বিন, শাটার সব-ই চেক করেছি আমরা। কিন্তু কোথাও কোনো গুপ্ত দরজা নেই। এসবের মানে কী?’

    আতসুয়া চেয়ারে গা হেলিয়ে দিলো। ‘আমরা জানি না।’

    ‘কোহেই?’

    কোহেই তার গোল চেহারাটা দোলালো। ‘জানি না।’

    ‘সোতা,’ আতসুয়া বলল, ‘তুমি কী ভাবছ?’

    সোতা চিঠি তিনটার দিকে তাকালো। ‘এখানে অদ্ভুত কিছু হচ্ছে। এই মেয়েটা সেল ফোন কী, তা জানে না। ভাবছে এটা বিদেশি শব্দ।’

    ‘মনে হয় মজা করছে।’

    ‘হতে পারে।’

    ‘এটাই হবে। সমগ্র জাপানে এমন কেউ নেই যে সেল ফোন চিনে না।’

    ‘এটার মানে কী? আগামী বছরের অলিম্পিক-সবে মাত্রই তো লন্ডনে অলিম্পিক হলো। সামনের গ্রীষ্মে বা শীতে অলিম্পিক হচ্ছে না।’

    ‘আহা, মেয়েটা সব কিছু গুলিয়ে ফেলেছে।’

    ‘তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা সে এভাবে গুলিয়ে ফেলবে এমনটা বিশ্বাস করা শক্ত। এটা আর তার সেল ফোনের ব্যাপারে কিছু না জানাটা— ব্যাপারগুলো খুবই অদ্ভুত।’

    ‘সহমত-আর?’

    ‘আরও একটা বিষয়।’ সোতা গলা নামিয়ে বলল, ‘খুবই অদ্ভুত। যখন বাইরে গেছি তখন খেয়াল করলাম ব্যাপারটা।’

    ‘কোন ব্যাপার?’

    ‘আতসুয়া, তোমার ফোন বের করে দেখো তো কয়টা বাজে?’

    ‘আমার ফোন?’ আতসুয়া ফোন বের করে দেখল, ‘তিনটা চল্লিশ।’

    ‘তার মানে আমরা এখানে আছি প্রায় এক ঘণ্টা হলো।’

    ‘হ্যাঁ, তো?’

    ‘একটু চলো তো আমার সাথে।’ সোতা উঠে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে এলো। ওপরে তাকাতেই দেখতে পেল রাতের আকাশ। ‘আমরা যখন এখানে

    এসেছিলাম, চাঁদ ঠিক মাথার ওপরে ছিল।’

    ‘হ্যাঁ, আমিও দেখেছি। তাতে কী?’

    সোতা আতসুয়ার দিকে তাকালো, ‘অদ্ভুত না? এক ঘণ্টা হয়ে গেছে কিন্তু চাঁদটা এক বিন্দুও নড়েনি।’

    এক মুহূর্তের জন্য আতসুয়া বুঝতে পারল না সোতা কী বলতে চাইছে। বুঝে ওঠার পরপরই তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। ফোনটা আবার বের করে দেখল ৩টা বেজে ৪২ মিনিট। মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শিহরণ বেয়ে নামল তার।

    ‘এসব হচ্ছে-টা কী? চাঁদটা এখনও নড়েনি কেন?

    ‘হয়তো এই মৌসুমে চাঁদ খুব একটা নড়ে না।’ কোহেই ধারণা করল। ‘এমন কোনো মৌসুম নেই।’ জবাব দিলো সোতা।

    আতসুয়ার চোখ ফোনের স্ক্রিন থেকে সরে আকাশের দিকে চলে গেল। এখানে কী হচ্ছে তার কিছুই সে বুঝতে পারছে না।

    ‘এক কাজ করা যায়,’ সোতা নিজের ফোন বের করে কাউকে ফোন করার চেষ্টা করল।

    ‘কী হয়েছে? কাকে ফোন করছ?’

    সোতা নিঃশব্দে তার ফোনটা আতসুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আতসুয়া শুনতে পেল একটা মহিলা বলছে, ‘বর্তমান সময় রাত দুটো বেজে ছত্রিশ মিনিট।’

    তারা ভেতরে চলে এলো।

    ‘ফোনে কোনো সমস্যা নেই,’ সোতা বলে উঠল, ‘সমস্যা এই বাসায়।’

    ‘তুমি বলতে চাচ্ছ এখানে এমন কিছু আছে যা আমাদের ফোনের ঘড়িগুলোকে উলটাপালটা করে দিচ্ছে?’

    ‘আমার মনে হয় না ঘড়িগুলো উলটাপালটা হয়ে গেছে। সেগুলো ঠিকই আছে। তারা কেবল সঠিক সময় দেখাচ্ছে না।’

    আতসুয়ার ভ্রু কুঁচকে গেল, ‘এর কারণ কী?’

    ‘মনে হয় বাসাটার ভেতরে আর বাইরে সময় ভিন্ন গতিতে চলে। ভেতরে মনে হয় অনেক সময় কেটে গেছে, কিন্তু বাইরে সেটা এক সেকেন্ডের সমান।’

    ‘কী বলতে চাচ্ছ তুমি?’

    সোতা একবার চিঠিগুলোর দিকে তাকিয়ে আতসুয়ার দিকে ঘুরল, ‘আমরা নিশ্চিত যে বাসার আশেপাশে কেউ আসেনি। কিন্তু তাও কোহেই-এর চিঠি উধাও হয়ে গেল। আর মিস র‍্যাবিটের চিঠিও কোনো রহস্যজনক উপায়ে এখানে চলে এলো। এটা অসম্ভব। কিন্তু এভাবে ভাবো: যদি কেউ আসলেই কোহেইর চিঠি নিয়ে গিয়ে পড়েছে এবং উত্তর এখানে রেখে গেছে-কিন্তু আমরা তাকে দেখতে পাইনি?’

    ‘দেখতে পাবো না কেন? সে কি অদৃশ্য নাকি?’

    ‘ভূতের মতো?’ কোহেই বলে উঠল, ‘এক মিনিট, এখানে কি ভূত আছে নাকি?’ ভয় পেয়ে গেল সে।

    ‘অদৃশ্য না, ভূতও না। সে যেই হোক না কেন, সে আমাদের জগতের না।’ সোতা চিঠির দিকে তাকালো, ‘সে অতীতের।’

    ‘অতীতের?’ ঘোঁতঘোঁত করে উঠল আতসুয়া, ‘মানে কী?’

    ‘আমার মতে, এই মেইল স্লট আর মিল্ক ক্রেটটা অতীতের সাথে যুক্ত। কেউ যখন অতীত থেকে কোনো চিঠি মেইল স্লটে রাখে, তখন সেটা এই বর্তমানে চলে আসে। একইভাবে আমরা মিল্ক ক্রেটে কোনো চিঠি রাখলে সেটাও অতীতের সেই সময়ে ফিরে যায়। আমাকে এটা জিজ্ঞাসা কোরো না যে এসব কীভাবে হচ্ছে। কিন্তু এই যুক্তিতে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে যায়। মিস র‍্যাবিট সুদূর অতীত থেকে আমাদেরকে চিঠি লিখছে।’

    আতসুয়ার মুখ থেকে কথা ঝরছে না। সে বুঝতে পারছে না কী বলবে। তার মস্তিষ্ক এই যুক্তি মানতে নারাজ।

    ‘নাহ,’ সে অবশেষে বলল, ‘হতেই পারে না।’

    ‘আমিও একমত। কিন্তু এছাড়া আর কোনো যুক্তি আমি দেখছি না। তোমার যদি মনে হয় আমার ধারণা ভুল, তাহলে তুমি অন্য কোনো তত্ত্ব দাঁড় করাবার চেষ্টা করে দেখতে পারো।’

    আতসুয়ার কাছে কোনো যুক্তি নেই।

    ‘তোমাকে চিঠির উত্তরটা লিখতেই হলো।’ অজান্তেই কোহেইকে বলে বসল সে, ‘এসব করেই আমাদের ভেজালে ফেললে।’

    ‘স্যরি–’

    ‘কোহেইকে দোষ দিচ্ছো কেন? দেখো, আমার ধারণা সত্যি হয়ে থাকলে এখানে একটা সাংঘাতিক কিছু ঘটছে। মানে আমরা অতীতের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি!’ সোতার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।

    আতসুয়ার এসব পছন্দ হলো না। ‘চলো,’ উঠে পড়ল সে, ‘এখান থেকে যাই।’ বাকি দুজন অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো।

    ‘এই জায়গাটার সমস্যা আছে। কোনো ঝামেলা হলে আমরা বিপদে পড়ব। চলো। থাকার আরও অনেক জায়গা খুঁজে নেওয়া যাবে। তাছাড়া, সময় এত আস্তে চলতে থাকলে সকাল আর হবেই না।’

    কিন্তু বন্ধুরা তার কথায় সায় দিলো না। চুপ করে রইল।

    ‘এখন আবার কী হলো?’ চেঁচিয়ে উঠল আতসুয়া, ‘কথা বলছো না কেন! সোতা ধীরে ধীরে বলল, ‘আমি কিছুক্ষণ থাকব এখানে।’

    ‘কী? কেন?’

    ‘জানি না। আমরা একটা সাংঘাতিক ব্যাপারে জড়িয়ে গেছি। এমনটা হরহামেশা হয় না। হয়তো আর হবেও না। আমি এই সুযোগ হারাতে চাই না। তুমি চাইলে চলে যেতে পারো আতসুয়া। কিন্তু আমি থাকছি।’

    ‘করবে-টা কী থেকে?’

    সোতা চিঠিগুলোর দিকে তাকালো, ‘আপাতত, আরও কিছু চিঠি লিখবো। অতীতের সাথে কথা বলা, কী মারাত্মক ব্যাপার!’

    ‘হ্যাঁ, সেটাই,’ কোহেই বলে উঠল, ‘আর মিস র‍্যাবিটকেও সাহায্য করতে হবে আমাদের।’

    আতসুয়া মাথা নাড়তে নাড়তে পিছিয়ে গেল। ‘পাগল তোমরা। এক সময় এসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তখন কী করবে? আমি এসবের মধ্যে থাকতে চাই না।

    ‘তুমি চাইলে চলে যেতে পারো।’ সোতা কোমলভাবে বলল তাকে।

    আতসুয়া রেগেমেগে আরও কিছু বলতে চাইল কিন্তু পারল না, ‘যত্তসব, পরে কোনো বিপদে পড়লে আমাকে কিছু বলতে এসো না।’

    তাতামি রুম থেকে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে এলো আতসুয়া। বাইরে বিশাল চাঁদটা আকাশের ঠিক সেই জায়গাতেই আছে। একটুও নড়েনি।

    সে তার ফোন বের করল। ফোনের ওএলইডি ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখল সময় থমকে আছে।

    আতসুয়া একা একা আবছা রাস্তায় হাঁটছে। ঠান্ডা লাগছে কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না সে।

    হতেই পারে না, মনে মনে ভাবল।

    মেইল স্লট আর মিল্ক বিন অতীতের সাথে সংযোগ তৈরি করছে? মুন র‍্যাবিট নামে অতীতের কোনো মহিলার চিঠি নিয়ে আসছে?

    যত্তসব। হ্যাঁ, এভাবে খাপে খাপ খায় কিন্তু তার মানে এই না যে অন্য জগতের এই ফালতু তত্ত্বটা সত্যি। খারাপ কিছু হলে তখন তাদেরকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসবে না। একে অপরের দেখাশোনা করতে হবে তাদের। এভাবেই তো এতদূর এসেছে তারা। নিজেদের ছাড়া অন্য কারও ওপরে ভরসা করা যায় না। অতীতের কোনো অদ্ভুত মহিলার ওপর তো না-ই।

    কয়েক মিনিট পর আরও প্রশস্ত রাস্তায় এসে পড়ল আতসুয়া। এখানে কিছু গাড়ি আছে রাস্তায়। কাছেই একটা স্টোরের বাতি দেখতে পেল সে।

    কোহেই ক্ষুধায় কীভাবে কাতরাচ্ছিল! বাকি রাত জেগে থাকলে ওদের দুজনের আরও ক্ষুধা লাগবে। কিন্তু সময় যদি থেমেই থাকে তবে ক্ষুধা তো লাগার কথা না।

    এত রাতে যদি আতসুয়া স্টোরে যায় তবে ক্লার্ক তার চেহারা মনে রাখবে। তাছাড়া ক্যামেরাও থাকতে পারে।

    ধুর, চুলোয় যাক ওরা। আতসুয়া ভাবল।

    স্টোরের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে একজন লোক ছাড়া আর কেউ নেই। নাইট শিফটে কাজ করছে।

    ব্যাগটা ডাস্টবিনের পাশে লুকিয়ে ভেতরে ঢুকল। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল। কিছু রাইস বল, পেস্ট্রি আর ড্রিংকস কিনে নিয়েছে। ক্লার্ক কমবয়সি, আতসুয়ার দিকে তাকিয়েও দেখেনি। আতসুয়াকে হয়তো ক্যামেরাতে দেখা গেছে কিন্তু গভীর রাতে স্টোরে যাওয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে ধরতে আসবে না। নিজেকে আশ্বস্ত করল আতসুয়া।

    ডাস্টবিনের পাশ থেকে ব্যাগটা নিয়ে ফেরত যেতে শুরু করল। বাকি দুজনকে খাবারগুলো দিয়েই সে চলে যাবে। ওই ভূতুড়ে বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই তার।

    দ্রুতই ফিরে এলো সে। সৌভাগ্যবশত রাস্তায় কারও মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে।

    আতসুয়া বাড়িটার বাইরে দাঁড়িয়ে মেইল স্লট আর শাটারটা চেক করল। সে যদি এখন মেইল স্লটে চিঠি দেয়, তবে সেটা কোন সালে গিয়ে পৌঁছাবে?

    বাসা আর গ্যারেজের মধ্যবর্তী সরু রাস্তা দিয়ে সে পেছনে চলে গেল। দরজাটা খোলা ছিল।

    পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল সে।

    ‘আহ, আসুয়া!’ কোহেই খুশিতে চিৎকার করে উঠল, ‘এসে পড়েছো! এই এক ঘণ্টায় আমরা ভেবেছিলাম তুমি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছ।’

    ‘এক ঘণ্টা?’ আতসুয়া ফোনের ঘড়ি দেখল, ‘মাত্র পনেরো মিনিট হয়েছে। আর আমি ফিরে আসিনি। তোমাদেরকে খাবার দিতে এসেছি।’ প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো টেবিলের ওপরে রাখল সে, ‘জানি না কতক্ষণ এখানে থাকার প্ল্যান করছ তোমরা।’

    ‘ওয়াও!’ কোহেইর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। খপ করে একটা রাইস বল বের করে নিলো সে।

    ‘এখানে থাকলে,’ সোতাকে বলল আতসুয়া, ‘সকালের মুখ আর দেখতে পাবে না।’

    ‘হ্যাঁ, আমরা একটা উপায় পেয়ে গেছি।’

    ‘কী উপায়?’

    ‘পেছনের দরজাটা খোলা ছিল, তাই না?’

    ‘হ্যাঁ–‘

    ‘ওটা খোলা থাকলে ভেতরে বাইরে সময় একই গতিতে প্রবাহিত হয়। কোহেই আর আমি এতক্ষণ এসব নিয়েই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। এজন্যই কেবল এক ঘণ্টা গেছে।’

    ‘এই বাড়ির সমস্যাটা কী?’

    ‘আমি ঠিক জানি না। কিন্তু তোমার এখানে না থাকার কোনো কারণ নেই। আমরা সকাল পর্যন্ত আছি এখানে।’

    ‘হ্যাঁ,’ কোহেই বলে উঠল, ‘একসাথে থাকাই ভালো।’

    ‘তোমরা দুজন নিশ্চয়ই তোমাদের ওই অদ্ভুত বন্ধুকে চিঠি লিখবার পাঁয়তারা করছো।’

    ‘তাতে সমস্যা কোথায়? তোমার বিরক্ত লাগলে তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না। তবে একটা বিষয়ে তোমার পরামর্শ লাগবে।

    আতসুয়া সোতার দিকে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকাল, ‘আমার পরামর্শ?’

    ‘তুমি যাবার পর আমরা আরও একটা চিঠি লিখেছিলাম এবং আরও একটা উত্তর পেয়েছিলাম। পড়ে দেখো।’

    আতসুয়া দেখল কোহেই আর সোতা খুব আশা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ঠিক আছে, পড়ছি। কিন্তু এর বেশি কিছু করতে বলবে না। কী লিখেছিলে তাকে?’

    ‘এই যে দেখো একটা ড্রাফট রেখেছিলাম সেটার।’ সোতা তাকে কয়েকটা কাগজ দেখালো। মুন র‍্যাবিটের কাছে পাঠানো চিঠির খসড়া। হাতের লেখা দেখে আতসুয়া বুঝতে পারল এবার সোতা লিখেছে।

    .

    সেল ফোন নিয়ে এত ভাবতে হবে না। সেটা তেমন কিছু না।

    আপনি ও আপনার প্রেমিকের ব্যাপারে আরও কিছু বলুন তো। আপনি কী করতে পছন্দ করেন? আপনাদের কী করতে ভালো লাগে? সম্প্রতি কোথাও ঘুরতে গেছেন? চলচ্চিত্র দেখেছেন? গান শুনতে ভালো লাগলে সম্প্রতি কোন গান শুনেছেন?

    আমাকে এসব জানাতে পারলে হয়তো আমি কোনো বুদ্ধি বের করতে পারব। ধন্যবাদ।

    (হাতের লেখার পার্থক্যের জন্য ক্ষমা চাইছি। এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। )

    —নামিয়া জেনারেল স্টোর

    .

    ‘এসব কেন জিজ্ঞাসা করলে?’

    ‘দেখো, প্রথমত আমাদেরকে জানতে হবে মুন র‍্যাবিট কত সনের বাসিন্দা। তা না হলে আমরা তার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারব না।’

    ‘সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করলেই তো পারো—এটা কোন সাল?’

    সোতা আতসুয়ার কথা শুনে যেন বিরক্ত হলো।

    ‘মেয়েটার জায়গায় নিজেকে ভেবে দেখো। সে তো নিজেই কিছু জানে না। এই সময়ে উলটাপালটা প্রশ্ন করলে সে আমাদেরকেই পাগল ভাববে।’

    আতসুয়া গাল চুলকালো, ‘ঠিক আছে। সে উত্তর কী দিয়েছে?’

    ‘দেখো,’ সোতা একটা খাম এগিয়ে দিলো।

    .

    পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। সেল ফোনের ব্যাপারে অনেক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে দেখলাম। কিন্তু কেউ কিছু জানে না। আমি খুব আগ্রহ বোধ করছিলাম কিন্তু আপনি যেহেতু বললেন এটা তেমন কিছু না তাহলে সেটা নিয়ে আর ভাবব না। ভবিষ্যতে যদি কখনও আমাকে এর মানে জানান তাহলে খুবই কৃতজ্ঞ হবো।

    অবশ্যই, আমাদের ব্যাপারে আপনাকে জানাতে আমার ভালো লাগবে।

    প্রথম চিঠিতে আমি বলেছিলাম, আমি একজন ক্রীড়াবিদ। আমার প্রেমিক কিছু ক্রীড়ায় অংশ নিত। সেভাবেই আমাদের দেখা হয়। সেও একবার অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু এসব ছাড়া আমরা খুব সাধারণ দুজন মানুষ। চলচ্চিত্র দুজনেই পছন্দ করি। এই বছরে সুপারম্যান এবং রকি ২ দেখেছি। এলিয়েন-ও দেখেছি। ওর সেটা খুব ভালো লেগেছে কিন্তু আমার সহ্য হয়নি।

    আমরা প্রচুর গান শুনি। ইদানিং আমি গোডিয়েগো এবং সাউথার্ন অন স্টারের গান শুনি। ‘এলি, মাই লাভ’ খুব চমৎকার গান, তাই না?

    স্মৃতি রোমন্থন করতে খুব ভালো লাগছে। ও অসুস্থ হয়ে যাবার আগের দিনগুলো চমৎকার ছিল। হয়তো আপনি এটাই চাচ্ছিলেন। যাইহো ক, চিঠির আদান-প্রদান আমাকে মানসিকভাবে খুব সাহায্য করছে, শক্তি দিচ্ছে। পারলে দয়া করে কাল আবারও লিখবেন।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    আতসুয়া বিড়বিড় করে বলল, ‘এলিয়েন? এলি মাই লাভ? সময়টা নিশ্চয়ই আমাদের বাবা-মায়ের যৌবনকালের।’

    সোতা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ‘ফোনে খুঁজে দেখেছি। মানে বাইরে গিয়ে। এখানে তো ফোন কাজ করে না। যাই হোক, এই চলচ্চিত্রগুলো ১৯৭৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল। এলি মাই লাভ গানটাও।’

    ‘তার মানে সময়টা ১৯৭৯।’

    ‘ঠিক। তার মানে মিস র‍্যাবিট ১৯৮০ সালের অলিম্পিকে যেতে চাইছে।’

    ‘হ্যাঁ, তো?’

    সোতা আতসুয়ার দিকে এক অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তাকালো।

    ‘কী? আমার চেহারায় কিছু লেগে আছে নাকি?’

    ‘তুমি কি সত্যি জানো না? কোহেই না জানলেও মানা যায়, কিন্তু তুমিও? ‘কী হয়েছে বলে ফেলো।’

    সোতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘১৯৮০ সালের অলিম্পিক মস্কোতে হয়েছিল। জাপান সেটাকে বয়কট করে।’

    ৫

    আতসুয়া অবশ্যই জানে বয়কটের কথা। তবে সালটা ১৯৮০ কিনা তা জানত না। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না।

    তখন কোল্ড ওয়ার-এর সময়। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের ওপর হামলা চালায় আর যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক থেকে সরে গিয়ে এর বিরোধিতা করে। বাকি পশ্চিমা বিশ্বকেও অলিম্পিক থেকে সরে আসতে উদ্বুদ্ধ করে। জাপানও শেষ মুহূর্তে বাকিদের মতো অলিম্পিক বয়কট করে আন্দোলনে অংশ নেয়।

    সোতাই এসব বলল তাকে। আতসুয়া এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আগে থেকে জানত না।

    ‘এতে তো মুন র‍্যাবিটের সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তাই না? জাপান যদি অলিম্পিকে না যায়, তাহলে তো সেটার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো দরকারই নেই। সে এখন ওসব বাদ দিয়ে প্রেমিকের সাথে সময় কাটাতে পারে। এটা বলছ না কেন?’

    আতসুয়ার প্রস্তাবটা হজম হলো না সোতার।

    ‘বললেও কি সে বিশ্বাস করবে? জাপান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করেছিল যে অলিম্পিকে অংশ নেবে। একদম শেষ মুহূর্তে জনগণকে বয়কটের কথা জানানো হয়।’

    ‘মেয়েটাকে বলো, আমরা ভবিষ্যৎ থেকে বলছি-’ আতসুয়া থেমে গেল। ‘থাক বাদ দাও।’

    ‘সে ভাববে আমরা মজা করছি।’

    আতসুয়া রেগেমেগে টেবিলে একটা ঘুসি কসালো।

    ‘বন্ধুরা,’ অনেকক্ষণ পর কোহেই কথা বলেছে, ‘আসল কারণটা নাহয় নাই বলি?’

    আতসুয়া আর সোতা তার দিকে তাকিয়ে রইল।

    ‘মানে, আসল কারণটা না বলে আমরা নাহয় তাকে এটা বলি যে, এই মুহূর্তে তার প্রশিক্ষণ ছেড়ে দেওয়া উচিত। অসুস্থ প্রেমিকের সেবা করা উচিত। নাকি এটা করলে বোকার মতো দেখায়?’

    আতসুয়া আর সোতা চোখাচোখি করল। কে আগে মাথা নাড়ল তা বলা মুশকিল।

    ‘না, ভালো বুদ্ধি এটা,’ সোতা বলল।

    ‘মোটেও বোকা দেখায় না। এটাই উত্তর হবে। সে এখন নিরুপায়। একটা কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। সোজাসুজি বলে দাও তাকে, সে যদি ছেলেটাকে ভালোবেসেই থাকে তবে শেষ পর্যন্ত ছেলেটার পাশে থাকতে। হয়তো মনে মনে ছেলেটাও সেটাই চায়।’

    সোতা কলম নিয়ে বসে লিখে ফেলল। ‘এটা কেমন?’

    আতসুয়া যা যা বলেছে সোতা আক্ষরিক অর্থে তাই লিখেছে।

    ‘ভালো।’

    সোতা পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। মিল্ক ক্রেট খোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে ভেতর থেকে।

    একটু পরই বাক্সের ভেতরে কিছু একটা পড়ল।

    আতসুয়া শাটারের কাছে গিয়ে দেখল আরও একটা চিঠি।

    লেখার জন্য ধন্যবাদ।

    সত্যি বলতে এতটা সোজাসাপটা উত্তর আশা করিনি। এমন না যে একেবারে অস্পষ্ট কোনো উত্তর চাচ্ছি কিন্তু আমি ভেবেছিলাম শেষ সিদ্ধান্তটা আমাকেই মন থেকে নিতে বলবেন। কিন্তু আপনি হয়তো কোনোকিছু অসমাপ্ত রাখতে চান না। সে কারণেই সবাই আপনার ওপর ভরসা করে।

    ‘তাকে যদি ভালোবেসেই থাকেন তবে শেষ পর্যন্ত তার পাশে থাকুন।’

    বাক্যটা পড়ে আমি ধাক্কা খেয়েছি। আমি তাকে ভালোবাসি, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

    কিন্তু ‘সেও মনে মনে এটাই চায়’ বাক্যটা সঠিক নয়।

    আমি আজ তাকে ফোন করেছিলাম। আপনি যা বলেছেন তাই বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সে আগেই বুঝে ফেলে। আমাকে বলে এখন আমার ফোন করার নয় বরং প্রশিক্ষণ করার সময়। আমার কণ্ঠ শুনতে তার ভালো লাগছে কিন্তু যে সময় আমরা কথা বলতে ব্যয় করছি সে সময়ে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আমার চেয়ে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে, এটা ভাবতে তার কষ্ট হচ্ছে।

    আমি দ্বিধায় আছি। আমি অলিম্পিক ছেড়ে দিলে সে আশা-ই হারিয়ে ফেলবে এবং হয়তো তার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। এটা জেনে আমি এত বড়ো ঝুঁকি নিতে পারি না।

    আমি খুব হতাশ হয়ে পড়ছি।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    আতসুয়া চিঠি পড়া শেষ করল।

    ‘বুঝতে পারছি না, মেয়েটার সমস্যাটা কী? আমাদের পরামর্শ যদি নাই মানে তাহলে পরামর্শ চাইছেই বা কেন?’

    সোতা বলল, ‘এর বেশি তো আমরা কিছু করতে পারছি না। সে তো জানে না যা তার পরামর্শ ভবিষ্যৎ থেকে আসছে।’

    ‘যেহেতু ফোন করতে হচ্ছে তার মানে তারা একে অপরের থেকে যথেষ্ট দূরে, দেখা করতে পারছে না।’ কোহেই বলল, ‘আমার মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে।’

    ‘আমার ছেলেটার ওপর রাগ লাগছে।’ আতসুয়া বলল, ‘মেয়েটার ওপর দিয়ে কী বয়ে যাচ্ছে তা কি সে বুঝতে পারছে না? অলিম্পিক তো কেবল একটা গেম, তাই না? নিজের প্রেমিক যেখানে এত অসুস্থ তখন মেয়েটা কীভাবে তার প্রশিক্ষণে মন দেবে? সে যত অসুস্থই হোক না কেন, মেয়েটার সাথে এমন করে সে স্বার্থপরতার প্রমাণ দিচ্ছে।’

    ‘ছেলেটা নিজের সাথেও রুক্ষতা দেখাচ্ছে। সে জানে অলিম্পিকে যাওয়াটা মেয়েটার স্বপ্ন। তার কারণে মেয়েটা এখন প্রশিক্ষণ ছেড়ে দিলে হয়তো সে নিজেকে অপরাধী ভাববে। হয়তো নিজের অনুভূতিকে চেপে রেখে মেয়েটার সামনে শক্ত সাজছে। অথবা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে একটু আদিখ্যেতা করে ফেলছে।’

    ‘হয়তো সে নিজের দুর্বলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাচ্ছে।’

    ‘তোমার তাই মনে হয়?

    ‘অবশ্যই। নায়িকা করুণ অবস্থায়, তাই নায়কও তার দায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছে।’

    ‘আচ্ছা। এখন তাহলে কীভাবে উত্তর দিবো?’ সোতা টেবিলে বসে পৃষ্ঠাগুলো সরালো।

    ‘বলো ছেলেটার চোখ খোলাতে। এটা সবার আগে করতে হবে। সোজাসুজি বলতে হবে যে অলিম্পিক কেবল একটা গেম। নিজের প্রেমিককে একা ফেলে দেওয়ার কোনো অজুহাত নয়।’

    সোতা এক হাতে কলম নিয়ে আতসুয়ার দিকে তাকালো, ‘এভাবে বলা যায় নাকি!’

    ‘মেয়েটাকে এটাই বলতে হবে।’

    ‘কী বলছো? এত সোজা হলে তো তার চিঠিগুলো এত বিষণ্ণ হতো না।’

    আতসুয়া কাগজ কলম ছিনিয়ে নিলো, ‘যত্তসব।’

    ‘তার হয়ে অন্য কেউ বললে কেমন হয়?’ কোহেই মাঝে দিয়ে বলে উঠল।

    ‘কে বলবে?’ সোতা বলল, ‘আমরা ছাড়া আর কেউ তো জানে না।’

    ‘তাদের বাবা-মাকে জানালে কেমন হয়? তারা নিশ্চয়ই মেয়েটার পক্ষ নেবে।’

    আতসুয়া তুড়ি বাজালো, ‘ঠিক। তাদের বাবা-মাকে জানাতে হবে। সবাই জানলে কেউ তাকে অলিম্পিকে লেগে থাকতে বলবে না। লিখে ফেলো সোতা।’

    সোতা লিখতে বসে গেল।

    .

    আমি বুঝতে পারছি আপনি দ্বিধায় আছেন। কিন্তু আমার কথায় ভরসা করুন। ধরে নিন এতেই মঙ্গল।

    সোজাভাবে বলতে গেলে, আপনার প্রেমিক ভুল করছে।

    এটা মনে রাখুন যে অলিম্পিক কেবল একটা গেম। মাঠের খেলার একটি ব্যয়বহুল সংস্করণ। সত্যি বলতে এতে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয় করা একদম ঠিক হচ্ছে না। তাকে এটা বুঝান।

    আমি পারলে আমি নিজে গিয়েই বুঝাতাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা সম্ভব হচ্ছে না।

    আপনার বা তার পিতামাতাকে সব কিছু জানান। সবাইকে জানালে তারা আপনার পক্ষই নেবে।

    এটাই একমাত্র উপায়। এটাই মানতে হবে। অলিম্পিক ছেড়ে দিন। কেউ আপনাকে দোষ দেবে না। এটা করুন। পস্তাবেন না।

    -নামিয়া জেনারেল স্টোর

    .

    সোতা চিঠিটা মিল্ক বিনে রেখে এলো। ‘এবার সব ঠিকঠাক হয়ে যাবার কথা।’

    ‘কোহেই,’ আতসুয়া বলল, ‘কিছু এসেছে?’

    ‘এখনও না।’ স্টোর রুম থেকে চিৎকার করে উত্তর দিলো কোহেই।

    ‘অদ্ভুত তো,’ সোতা ভ্রু কুঁচকালো, ‘সাথে সাথেই তো এসে পড়ে। মনে হয় পেছনের দরজাটা ঠিকমতো বন্ধ করিনি,’ সোতা উঠতে যাচ্ছিল তখনই কোহেই চিৎকার করল, ‘পেয়ে গেছি।’

    কোহেই চিঠি নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে এলো।

    .

    মুন র‍্যাবিট বলছি। মনে আছে আমাকে? দুঃখিত, উত্তর দিতে এক মাস লেগে গেল। আমি সাথে সাথেই উত্তর দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বুট ক্যাম্পের জন্য পারিনি। সত্যি বলতে সেটা একটা অজুহাত। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না যে কী উত্তর দিবো।

    যখন বললেন আমার প্রেমিকের ধারণা ভুল, তখন আমি বেশ থতমত খেয়ে যাই। আপনি কোনো ভণিতা না করে সোজাসাপটা কথা বলেছেন। আমার মনে হয় আমি আপনার কাছ থেকে কিছু জিনিস শিখতে পারি।

    হয়তো আপনি অলিম্পিকের ব্যাপারে ঠিক বলেছেন–না, আপনি নিশ্চিতভাবেই ঠিক বলেছেন। হতে পারে যে আমরা যে জিনিসের জন্য আটঘাট বেঁধে নামছি সেটা আসলে তেমন কিছুই না।

    কিন্তু এটা আমি কখনও তাকে বলতে পারব না। জানি, অনেকের কাছে এটা কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু এই প্রশিক্ষণের কারণেই আমাদের দেখা হয়েছিল, এর জন্য আমরা জান-প্রাণ দিয়ে খেটেছি।

    বাবা-মাকে জানানোর পরামর্শটা খুব ভালো। এটা করা উচিত। কিন্তু এখনও না। তার ছোটো বোন সবে মাত্রই মা হয়েছে এবং তার বাবা-মা এই মুহূর্তে খুব বেশি খুশি। সে চাচ্ছে তাদের এই আনন্দটা আরও কিছুদিন থাকুক এবং আমি তার চাওয়াটা বুঝতে পারছি।

    বুট ক্যাম্পের সময়ে আমি তার সাথে ফোনে কথা বলেছি। প্রশিক্ষণ ভালো হচ্ছে শুনলেই সে খুব খুশি হয়ে যায়। এই আনন্দটা মিথ্যা হতে পারে না।

    কিন্তু হয়তো আমার এখন অলিম্পিক ছেড়ে দেওয়াই উচিত। প্রশিক্ষণ ছেড়ে দিনরাত তার সেবায় লেগে থাকা উচিত। এটাই হয়তো তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

    আমি যতই ভাবি, ততই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    আতসুয়ার রাগে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে।

    ‘আরে কীসব ভাবছে এই মেয়ে? আমরা বললাম তাকে প্রশিক্ষণ ছেড়ে দিতে আর সে আরও একটা বুট ক্যাম্পে চলে গেল। ছেলেটা এর মাঝে মারা গেলে তখন মেয়েটা করবেটা কী?’

    ‘ক্যাম্পে না গেলে—’ কোহেই বলার চেষ্টা করল, ‘ছেলেটা খুব কষ্ট পাবে।’

    ‘গিয়ে লাভটাই বা কী? যত ভাবি ততই বিভ্রান্ত হয়ে যাই—যত্তসব আক্ষরিকভাবেই বলে দিলাম, মেয়েটা কেন কথা শুনছে না?’

    ‘সে এভাবেই যত্ন নিচ্ছে ছেলেটার,’ সোতা বলল, ‘ছেলেটার স্বপ্ন না ভেঙে।’

    ‘স্বপ্নটা কখনও সত্যি হবে না। অলিম্পিকে তো আর মেয়েটা যেতে পারছে না। ইশ, এটা বুঝাবো কীভাবে এই মেয়েকে?’ আতসুয়া বিরক্ত হয়ে হাঁটু দোলাতে লাগল।

    ‘মেয়েটা আঘাত পেয়ে গেলে কেমন হয়?’ কোহেই প্রস্তাব দিলো। ‘আঘাত পেলে তো প্রশিক্ষণ থেকে বাদ পড়ে যাবে। তখন কিছু করার থাকবে না।’

    ‘হ্যাঁ এটা ভালো বুদ্ধি।’ আতসুয়া সায় দিল।

    ‘না না,’ বিরোধিতা করল সোতা, ‘এর মানে হবে মেয়েটা ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় না। মিস র‍্যাবিট সেটা নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।

    ‘এই স্বপ্নের কথা বলা বন্ধ করবে? জীবনে ছেলেটা এই একটা জিনিসই চায়, এমনটা তো হতে পারে না।’

    সোতার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল, যেন বড়ো কোনো বুদ্ধি পেয়েছে। ‘পেয়ে গেছি! মেয়েটা ছেলেটাকে বলবে জীবনে অলিম্পিক ছাড়াও চাওয়ার মতো অনেক কিছু আছে। ছেলেটাকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে হবে। যেমন ধরো—’ একটু ভেবে বলল, ‘বাচ্চা।’

    ‘কীসের বাচ্চা?’

    ‘আরে তাদের বাচ্চা! মেয়েটা বলবে সে প্রেগন্যান্ট। তাদের সন্তান হবে। এতে করে আর অলিম্পিকে যেতে হবে না তাকে। ছেলেটার স্বপ্নও ভাঙবে না, কেবল অন্য দিকে মোড় নেবে। বাবা হওয়ার স্বপ্নের দিকে। সে নতুন করে বাঁচার আশা পাবে।’

    আতসুয়া একটু ভেবে হাততালি দিলো একবার, ‘সোতা, তুমি একটা জিনিয়াস! এটা লেখা যাক। ছেলেটা আর মাত্র ছমাস বাঁচবে। মিথ্যেটা জানতেও পারবে না।’

    ‘ঠিক আছে।’ সোতা ঝটপট চিঠি লিখতে বসে গেল।

    আতসুয়ার মনে হলো এবার একটা ভালো সমাধান হবে। প্রেমিকটা কবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তা স্পষ্ট করে লেখা নেই তবে চিঠি দেখে বুঝা যায় কেবল কয়েক মাসই হবে। এর আগে পর্যন্ত মনে হয় তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিকই ছিল। অর্থাৎ তারা নিশ্চয়ই শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছে। যদিও কোনো প্রোটেকশন ব্যবহার করে থাকে তাও প্রেগনেন্সির সম্ভাবনা সবসময়েই থেকে যায়।

    কিন্তু ফিরতি চিঠিটা তাদেরকে হতাশ করল।

    .

    আপনার চিঠি পেয়ে আমি খুবই অবাক হয়েছি। এমন বুদ্ধি কখনও আমার মাথায় আসতো না। তাকে নতুন স্বপ্ন দেখানোর কথাটা খুবই ভালো একটা উপায়। সে আমাকে কখনই অ্যাবোরশন করে অলিম্পিকে যেতে বলবে না। সে চাইবে আমাদের সন্তান যেন সুস্থ সবলভাবে পৃথিবীতে আসুক।

    কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই পরিকল্পনায় কিছু সমস্যা আছে। প্রথমটা হচ্ছে প্রেগনেন্সির সময়কাল। আমরা শারীরিকভাবে মিলিত হবার পর প্রায় তিন মাস কেটে গেছে। এখন হুট করে প্রেগনেন্সির কথা বললে সে সন্দেহ করতে পারে। যদি প্রমাণ চায় তখন আমি কী করব?

    যদি সে বিশ্বাসও করে তবে আমি নিশ্চিত সে তার পিতামাতাকে জানাবে। আমার নিজের বাবামাকেও বলতে হবে। আমাদের পরিবারের সবাই জেনে যাবে তখন। বাচ্চার কথাটা মিথ্যা সেটা সবাইকে জানানো সম্ভব হবে না। সবাই জানতে চাইবে আমি মিথ্যা কেন বলছি।

    আমি ভালো অভিনয় করতে পারি না এবং মিথ্যা মোটেও বলতে পারি না। আমার প্রেগনেন্সির কথা শুনে সবাই খুব খুশি হবে আর তখন হয়তো এসব সামলানো

    আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

    আরও একটা গুরুতর সমস্যা আছে। তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে সে আমাদের কাল্পনিক বাচ্চার ডেলিভারির সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। তখন কী হবে? সময়মতো ডেলিভারি না হলে সে বুঝে যাবে আমি মিথ্যা বলেছিলাম। সে প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়বে তখন।

    আপনার বুদ্ধিটা চমৎকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা আমি ব্যবহার করতে পারছি না।

    আপনার পরামর্শগুলোর জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ। মিস্টার নামিয়া, আমি আপনার কাছে যা খুঁজছিলাম তা পেয়ে গেছি। আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এই সমস্যার সমাধান আমাকে নিজেই বের করে নিতে হবে। এই চিঠির উত্তর দেওয়া নিয়ে বিচলিত হতে হবে না আপনাকে। আমি ইতোমধ্যে আপনার অনেকটা সময় নিয়ে নিয়েছি।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    ‘যত্তসব’ আতসুয়া চিঠিটা একপাশে ফেলে দিলো, ‘আমরা এত সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করলাম আর এখন মেয়েটা বলছে ধন্যবাদ, আমি ঠিক আছি। আর চিঠি লাগবে না। এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে তার আসলেই আমাদের পরামর্শের দরকার ছিল কিনা। মানে সে তো সব কিছু উপেক্ষা করে গেল।’

    ‘একটা কথা ঠিক বলেছে,’ কোহেই স্বীকার করল, ‘অভিনয় করা খুব কঠিন।’

    ‘চুপ করো। জীবন মরণ মুহূর্তে যে-কোনো কিছুই করা যায়।’

    ‘তুমি নিজে কিছু লিখতে চাও তাকে?’ সোতা আতসুয়াকে জিজ্ঞাসা করল।

    ‘কিছু তো লিখতেই হবে, না হলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে আমার।’

    ‘ঠিক আছে। বলো। যা বলবে একদম হুবহু তাই লিখবো।’

    .

    প্রিয় মুন র‍্যাবিট,

    আপনি কি বোকা? উত্তর দেওয়ার দরকার নাই—আমি জানি উত্তরটা ‘হ্যাঁ’।

    আপনার এখন যা করা উচিত আমি একদম সেটাই বলেছি। আমার কথা শুনছেন না কেন?

    কতবার বলতে হবে? অলিম্পিক বাদ দিন।

    সেখানে কখনও যেতে পারবেন না। ছেড়ে দিন। এসব করে সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন।

    আর সবচেয়ে বড়ো কথা চিন্তা করে সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন। সময় যদি থেকে থাকে তবে প্রেমিকের কাছে যান, তার সাথে সময় কাটান।

    কী হবে অলিম্পিকে না গেলে? কিছুই না। আমার কথা বিশ্বাস করুন।

    লক্ষ করলে বুঝবেন, এখন যুদ্ধ চলছে। কতগুলো দেশ এখন খেলাধুলা করার অবস্থায় নেই। জাপান সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবে না। অতি শীঘ্রই তা বুঝতে পারবেন।

    আসলে কী জানেন? এসবে কিছুই আসে যায় না। আপনার যা খুশি তা করুন।

    আর আফসোস করবার জন্য প্রস্তুত হন।

    বি. দ্র. আপনি একটা বোকা।

    -নামিয়া জেনারেল স্টোর

    ৬

    সোতা কিছু নতুন মোম জ্বালালো। তাদের চোখ এতক্ষণে অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। এখন অল্প আলোতেও তারা সব ঠিকঠাকভাবে দেখতে পাচ্ছে।

    ‘এখনও কোনো চিঠি এলো না,’ কোহেই বলল, ‘এত দেরি আর কখনও হয়নি। হয়তো সে আর কোনো উত্তর দেবে না।’

    ‘আমারও তাই মনে হয়,’ সোতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ‘খুব কড়া কথা শুনেছে। হয়তো কষ্ট পেয়েছে নাহয় রেগে গেছে। যাই হোক, সে আর উত্তর দিবে না তা আমি নিশ্চিত।’

    ‘তার মানে,’ আতসুয়া চোখ রাঙালো, ‘বলছো যে আমি ভুল করেছি?’

    ‘না সেটা বলিনি। তুমি যা বলেছো তা ঠিক বলেছো। ভালো হয়েছে সেগুলো লিখে। তবে এখন সে আর কোনো উত্তর না দিলেও কিছু করার নেই।’

    আতসুয়া অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিলো।

    ‘কী হয়েছে তা জানতে ইচ্ছা করে, তাই না?’ কোহেই বলল, ‘মেয়েটা কী প্রশিক্ষণ নিয়ে চলেছে কিনা, অলিম্পিকে নির্বাচিত হলো কিনা। এত কষ্ট করল, জাপানের বয়কটের কথা জানতে পারলে নিশ্চয়ই খুব হতাশ হবে।’

    ‘একদম উচিত হবে,’ আতসুয়া গজগজ করে উঠল, ‘আমাদের কথা না মানার এটাই ফল হওয়া উচিত।’

    ‘প্রেমিকটার কী হবে?’ সোতা জিজ্ঞাসা করল, ‘কতদিন বাঁচবে সে? জাপানের বয়কটের কথা জানলে কী করবে?’

    আতসুয়া কিছু বলল না। একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এলো ঘরটায়।

    ‘এই, আমরা কতক্ষণ এভাবে বসে থাকব?’ কোহেই জিজ্ঞাসা করল। ‘পেছনের দরজা বন্ধ, সময় তো চলবে না।’

    ‘হ্যাঁ কিন্তু সেটা খুলে দিলে তো অতীতের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে আমাদের। মিস র‍্যাবিট উত্তর দিলেও আমরা জানতে পারব না।’ সোতা আতসুয়ার দিকে তাকালো, ‘কী করব এখন?’

    আতসুয়া কিছুক্ষণ নিজের ঠোঁট কামড়ালো। এরপর কোহেই এর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দরজাটা খুলে দাও।’

    ‘সত্যিই খুলে দিবো?’

    ‘হ্যাঁ। মিস র‍্যাবিটের কথা ভুলে যাও। সে আমাদের কেউ হয় না। কোহেই, দরজাটা খুলো।’

    কোহেই উঠে দাঁড়াতেই স্টোর থেকে একটা ক্লিংক শব্দ হলো।

    তিন বন্ধু যেন জমে গেছে। একে অপরের দিকে তাকালো। আতসুয়া খুব সাবধানে উঠে স্টোরের দিকে হাঁটতে শুরু করল। তার ঠিক পেছনেই কোহেই এবং সোতা।

    শাটারে ঠক্ ঠক্ শব্দ। যেন কেউ পরীক্ষা করছে সে বাসায় কেউ আছে কিনা। শ্বাস আটকে এলো আতসুয়ার।

    মেইল স্লটে একটা চিঠি পড়ল।

    .

    বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। মিস্টার নামিয়া কি এখনও এখানে থাকেন? যদি না থেকে থাকেন তবে দয়া করে এই চিঠিটা আর পড়বেন না। পুড়িয়ে ফেলুন। তেমন জরুরি কোনো কথা না এবং এই চিঠি পড়ে আপনারও কোনো লাভ নেই।

    বাকি অংশ মিস্টার নামিয়ার জন্য।

    আমি মুন র‍্যাবিট। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কে জানে আমাকে এখন আপনি আর মনে করতে পারবেন কিনা। গত বছরের শেষের দিকে আমরা চিঠি আদান- প্রদান করেছিলাম। ছয় মাস কেটে গেছে, ভাবতেও অবাক লাগে। কেমন আছেন আপনি?

    ধন্যবাদ মিস্টার নামিয়া। আপনার পরামর্শগুলো আমি আজীবন ভুলব না। প্রতিটি চিঠি আন্তরিকতার সাথে দিয়েছিলেন আপনি।

    আপনাকে দুটো হালনাগাদ বিষয় জানাতে চাই।

    প্রথমত, জাপান অলিম্পিককে বয়কট করে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত আপনি এটা জানেন। আমি আগে থেকেই নিজেকে এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত করেছিলাম কিন্তু সত্যি বলতে খবরটা শুনে খুব অবাকই হয়েছি। হ্যাঁ, আমি জানতাম আমি সে অলিম্পিক পর্যন্ত যেতে পারতাম না কিন্তু আমার বন্ধুরা, যারা পারত, তাদের কথা ভেবে খুব কষ্ট পেয়েছি।

    খেলা ও রাজনীতি—আমি ভেবেছিলাম দুটো খুব ভিন্ন জিনিস। কিন্তু একটা বিরোধপূর্ণ দেশে হয়তো এই দুইয়ের মধ্যে বিভাজন করাটা খুব কঠিন।

    দ্বিতীয় বিষয়টি আমার প্রেমিক সম্পর্কিত। সে তার যথাসাধ্য লড়াই করেছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে, ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। সেদিন আমার ছুটি ছিল আর আমি হাসপাতালে তার সাথেই ছিলাম। শেষ মুহূর্তটায় সে আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখে ছিল।

    তার সর্বশেষ কথা ছিল, ‘আমার স্বপ্ন না ভাঙার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’

    সে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার অলিম্পিকে যাবার স্বপ্ন দেখছিল। আমার মনে হয় এই স্বপ্নই তাকে এতদিন বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়েছে।

    এরপর আমি আমার সমস্ত মনোযোগ প্রশিক্ষণে প্রয়োগ করলাম। হ্যাঁ, অলিম্পিকের জন্য নির্বাচন করার সময় তখন প্রায় এসে পড়েছে কিন্তু মনেপ্রাণে চেষ্টা করার মাধ্যমে আমি তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে চেয়েছিলাম।

    আমি নির্বাচিত হইনি। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। কোনো আফসোস নেই।

    নির্বাচিত হলেও তো অলিম্পিকে যাওয়া হতো না। যাই হোক, আমার মনে হয় না আমি কোনো ভুল করেছি।

    আপনার বদৌলতে এটা সম্ভব হয়েছে মিস্টার নামিয়া।

    স্বীকার করছি, আপনাকে যখন প্রথম চিঠিটা লিখি, তখন আমি অলিম্পিক ছাড়ার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলাম। অলিম্পিক ছেড়ে আমার প্রেমিকের সেবা করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এর সাথে অন্য কিছুও ছিল।

    কিছু সময় ধরে আমি খুব হতাশায় ভুগছিলাম। খুব চেষ্টা করেও এগুতে পারছিলাম না। মানের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছিলাম। প্রত্যহ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে লড়াই করাটা অসহ্য হয়ে উঠেছিল। চাপের নিচে পিষ্ট হচ্ছিলাম। ইচ্ছা করছিল পালিয়ে যাই।

    তখনই ক্যান্সারের কথা জানতে পারি।

    অস্বীকার করতে পারব না যে একে আমি এই তীব্র প্রতিযোগিতা থেকে পালাবার উপায় হিসেবে দেখিনি। ভালোবাসার মানুষ যখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে তখন তো তার পাশেই থাকা উচিত। কেউ আমাকে এই সিদ্ধান্তের জন্য দোষ দিতে পারত না। আমি নিজেকেও ক্ষমা করে দিতে পারতাম।

    কিন্তু সে আমার দুর্বলতাগুলো জানত। একারণে আমাকে যাই হোক না কেন, প্রশিক্ষণে লেগে থাকতে বলত। ‘আমার স্বপ্নটা ভেঙে দিও না’ এমন স্বার্থপর কথা সে আগে কখনও বলত না।

    তখন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। আমার অসুস্থ প্রেমিকের সেবা করার ইচ্ছা, অলিম্পিক থেকে পালানোর ইচ্ছা, তার স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা—কেবল এসবই ঘুরপাক খেতো আমার মাথায়। এর মাঝে আমি নিজে কী চাই তাই ভুলে বসেছিলাম।

    যখন আর সহ্য করতে পারলাম না তখন আপনাকে চিঠি লিখলাম। আমি তখন পুরো সত্যিটা বলিনি, একারণে আমি লজ্জিত। অলিম্পিক থেকে পালাতে চাইছি, এই লজ্জাকর সত্যিটা আপনাকে বলতে পারিনি।

    কিন্তু আপনি বুঝে গিয়েছিলেন, তাই না?

    সোজাসাপটাভাবে বলেছিলেন ‘তাকে ভালোবেসে থাকলে শেষ পর্যন্ত তার পাশে থাকুন’ এই লাইনটা আমি বারবার পড়েছি। অসংখ্যবার। আমার উদ্দেশ্য পুরোপুরি সঠিক ছিল না। নিজের কর্তব্য থেকেই পালিয়ে বেড়াতে চাচ্ছিলাম।

    ‘এটা কেবল একটা গেম।’

    ‘মাঠ পর্যায়ের গেমের একটি ব্যয়বহুল সংস্করণ।’

    ‘আর সবচেয়ে বড়ো কথা চিন্তা করে সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন। সময় যদি থেকে থাকে তবে প্রেমিকের কাছে যান, তার সাথে সময় কাটান।’

    এগুলো পড়ে আমি খুব আশ্বস্ত হয়েছি। আপনি এতটা নিশ্চয়তার সাথে কীভাবে উপদেশ দিতে পারেন? তারপর বুঝতে পারলাম: আপনি আমাকে পরীক্ষা করছেন।

    আপনি আমাকে সোজাসুজি অলিম্পিক ছেড়ে দিতে বলেছেন, বারবার বলেছেন। বলেছেন আমি যেহেতু নির্বাচিত হতে পারব না তাহলে এসবের দরকারই বা কী? এর চেয়ে আমার প্রেমিকের সেবা করাও ভালো। কিন্তু এত বলার পরও অলিম্পিক ছাড়তে পারিনি। এতে করে অলিম্পিক আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট হয়ে গেল।

    আমি নিজেকেই খুঁজে পেলাম।

    আমি ছোটোবেলা থেকেই অলিম্পিকের স্বপ্ন দেখতাম। একে এভাবে ফেলে দিতে পারি না।

    আমি আমার প্রেমিককে সব খুলে বলি।

    ‘আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি’ আমি তাকে বলেছি, ‘আমি চাই আমরা যেন একসাথে থাকতে পারি। যদি আমার অলিম্পিক ছেড়ে দেওয়া তোমার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে তাহলে আমি মুহূর্তেই তা ছেড়ে দেবো। কিন্তু যতক্ষণ না সেটা তোমার কোনো উপকার করছে, ততক্ষণ আমি আমার স্বপ্ন ছাড়ব না। আজ আমি যে ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছি তা তোমার কারণেই আর তুমি এই আমিকেই ভালোবেসেছিলে। মাঠে থাকাকালীন সময়ে তোমার কথা আমার মন থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও বের হবে না। আমি আমার স্বপ্ন ছেড়ে দিতে চাই না।’

    সে তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে, ‘তুমি জানো না আমি এটা শুনবার জন্য কত অপেক্ষা করেছি। আমার জন্য তোমাকে ভুগতে হচ্ছে এটা প্রচণ্ড কষ্টের। আমার প্রেমিকার স্বপ্ন ভাঙার চেয়ে মরে যাওয়াও কম কষ্টের। আমরা দূরে থাকলেও আমাদের হৃদয় সবসময় একসাথে থাকবে। আর কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি চাই তুমি তোমার স্বপ্নের পেছনে ছোটো। আর কোনো আফসোস থাকবে না।’ সেদিনের পর থেকে আমি প্রশিক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমি বুঝতে পারলাম, কেবল পাশে থাকাই যত্ন নেওয়ার একমাত্র উপায় না।

    কয়েক সপ্তাহ পর সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল। ‘আমার স্বপ্ন না ভাঙার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ’ কথাটা বলার সময়ে তার চেহারার তৃপ্ত ভাবটাই আমার সবচেয়ে বড়ো বিজয়। আমি হয়তো অলিম্পিকে যেতে পারিনি, কিন্তু গোল্ড মেডেলের চেয়েও বড়ো কিছু পেয়ে গেছি জীবনে।

    মিস্টার নামিয়া, আমি আপনার কাছে খুব কৃতজ্ঞ। আপনার সাথে কথা না হলে হয়তো আজীবন একটা বোঝা বয়ে বেড়াতাম। আপনার দূরদৃষ্টির জন্য আমি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা এবং ধন্যবাদ জানাই।

    আপনি হয়তো এখানে আর থাকেন না। আশা করি কোনো এক সময়ে চিঠিটা আপনার কাছে পৌঁছাবে।

    —মুন র‍্যাবিট

    .

    সোতা আর কোহেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। আতসুয়া বুঝতে পারছে বলার মতো কিছু ভেবে পাচ্ছে না তারা।

    মুন র‍্যাবিটের শেষ চিঠিটা আসলেই অপ্রত্যাশিত। শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েনি সে, অলিম্পিকে নির্বাচিত হবে না জেনেও, জাপান শেষ পর্যন্ত অলিম্পিক বয়কট করবে আভাস পেয়েও। আর তারপরও কোনো আফসোস নেই তার। তার মতে সে গোল্ড মেডেলের চেয়েও বড়ো কিছু পেয়ে গেছে।

    মেয়েটা ভাবছে এসবই নামিয়া জেনারেল স্টোরের কারণে সম্ভব হয়েছে। তার ধারণা আতসুয়ার রাগান্বিত চিঠিটা তাকে সঠিক পথ দেখিয়েছে।

    আতসুয়ার চেহারায় একটা হাসি ফুটে উঠল। কী অদ্ভুত অবস্থা। আস্তে আস্তে শব্দ করে হেসে উঠল সে।

    ‘কী হাস্যকর, তাই না? আমরা তাকে বললাম অলিম্পিক ছেড়ে দাও, আর সে তাই শুনল যা সে শুনতে চায়। আর যখন সব ঠিক হয়ে গেল তখন সে আমাদেরকে ‘দূরদৃষ্টির’ জন্য ধন্যবাদ জানালো। যেন এখানে আমরা কিছু করে ফেলেছি।’

    সোতার চেহারা শিথিল হয়ে এলো, ‘খারাপ কী? সব তো ঠিক হয়েই গেল।’

    ‘হ্যাঁ, মজাই হয়েছে।’ কোহেই বলল। ‘আমি কখনও কাউকে কোনো পরামর্শ দেইনি। এই মেয়েকে দিতে পেরে ভালো লাগছে। তাই না আতসুয়া?’

    আতসুয়া গাল চুলকালো, ‘হ্যাঁ, খারাপ লেগেছে বলা যাবে না।’

    ‘আমি জানতাম।’

    ‘তবে তোমার মতো এত ক্ষ্যাপা খুশিও লাগছে না। যাই হোক, অনেক হয়েছে। পেছনের দরজাটা খুলে দাও। অনেক সময় হয়েছে।’

    আতসুয়া উঠে দরজা বন্ধ করার জন্য নবে হাত দিলো। ঠিক তখনই সোতা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘এক সেকেন্ড।’

    ‘আবার কী?’

    সোতা কিছু না বলেই স্টোরের দিকে চলে গেল।

    ‘কী হয়েছে?’ আতসুয়া কোহেইকে জিজ্ঞাসা করলে সে মাথা নেড়ে জানালো সে বুঝতে পারছে না।

    সোতা একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে ফিরে এলো।

    ‘কী হয়েছে?’ আতসুয়া জিজ্ঞাসা করল।

    ‘আরও একটা চিঠি পেয়েছি,’ সোতা একটা বাদামি খাম তুলে ধরল। ‘মনে হচ্ছে অন্য কারও চিঠি।’

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিউকামার – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.