Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প226 Mins Read0

    রেড ফিঙ্গার – ৩

    অধ্যায় ৩

    আকিও আর ইয়াইকোর বিয়ের আঠারো বছর হতে চললো। ওর অফিসের এক সহকর্মী পরিচয় করিয়ে দেয় দু’জনকে। বিয়ের আগে বছর খানেকের মত ডেট করে দু’জনে। খুব যে প্রেম ছিল, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু ছাড়াছাড়ি বা অন্য কাউকে খোঁজারও কোন কারণ ছিল না। বলতে গেলে অন্য কাউকে পাবে না সেই ভয় থেকেই আকিও’র বিয়ের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলে দেয় ইয়াইকো।

    সেই সময় একাই থাকতো আকিও। বিয়ের পরে কোথায় থাকবে সে- ব্যাপারে ইয়াইকোর সাথে দীর্ঘ আলাপ হয়। ইয়াইকো বলে ওর বাবা-মা’র সাথে থাকতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু সেই সময়ে একটা অ্যাপার্টমেন্টে ওঠে দু’জনে। জানতো, আজ হোক বা কাল এক সময় আকিও’র মা-বাবার বাসায় উঠতেই হবে তাদের বয়স হলে। আর আকিও নিজেও চাচ্ছিল মা আর স্ত্রী’কে যতদিন সম্ভব আলাদা রাখতে।

    তিন বছর পর একটা ছেলে হয় ওদের। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন সময়েই ইয়াইকো তার নাম ঠিক করে রেখেছিল। নাওমি।

    এরপর থেকে একটু একটু করে বদলে যেতে শুরু করে ওদের প্রাত্যাহিক জীবন। কারণ, নাওমিই হয়ে ওঠে ইয়াইকোর জীবনের মধ্যমণি। ছেলেকে ছাড়া আর কিছু বুঝতো না সে। আকিও মুখে কখনো কিছু বলেনি, কিন্তু ছেলের প্রতি ইয়াইকোর অতিরিক্ত মনোযোগের বিষয়টা পছন্দ না ওর। আগে তাও অ্যাপার্টমেন্ট গোছগাছ করে রাখতো ইয়াইকো, কিছুদিন পর সেটাও ছেড়ে দেয়। সুপারমার্কেট থেকে কিনে আনা রেডিমেড খাবার কেবল গরম করে দিতে শুরু করে আকিওকে।

    এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো। বলতো আকিও বোঝে না একটা বাচ্চার লালন পালন করা কতটা কঠিন কাজ। সেই কাজে সাহায্য তো করেই না, ঘরদোর পরিষ্কার করা নিয়ে অযথা বকাবকি করে। এতই যদি অসুবিধা হয়, নিজে পরিষ্কার করে নিক!

    আকিও এটা বুঝতো যে ছেলের পড়াশোনা আর অন্যান্য বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা অনেক কম, তাই পাল্টা কিছু বলেনি কখনো। তাছাড়া চব্বিশ ঘন্টা বাচ্চার খেয়াল রাখা ঝক্কির কাজ বৈকি। ঘরদোর পরিষ্কারের দিকে তাই মনোযোগ না-ই দিতে পারে।

    ওর বাবা-মা বংশের প্রথম নাতির জন্মে পুলকিত হয় ভীষণ। আকিও আর ওর স্ত্রী প্রতি মাসে অন্তত একবার হলেও তাদের বাসায় যেত যেন দাদা-দাদীর সাথে দেখা হয় নাওমির। প্রথম দিকে ইয়াইকোর এই বিষয়ে কোন আপত্তি ছিল না।

    কিন্তু একবার ওরা তিনজন বেড়াতে যাওয়ার পর বাচ্চাকে কিভাবে খাওয়াতে হবে, সেই ব্যাপারে কিছু কথা বলেছিল মাসায়ে। ইয়াইকো যেভাবে কাজটা করে আসছিল ততদিন, তার পুরোপুরি উল্টো ছিল ধরণটা। ব্যস, মাথায় রক্ত চড়ে যায় আকিও’র স্ত্রীর। ছেলেকে সাথে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় সে। ট্যাক্সি ধরে বাসায় চলে আসে।

    অগত্যা আকিও আসে তার পেছন পেছন। স্বামীকে দেখে ইয়াইকো সাফ জানিয়ে দেয় যে সে আর শ্বশুড়বাড়িতে পা রাখবে না। মাসায়ের খোঁচা অনেকদিন মুখ বুজে সহ্য করেছে, আর সম্ভব না। অন্য কেউ থাকলে নিশ্চয়ই পাল্টা কিছু একটা বলতো, সে জন্যে চুপচাপ চলে এসেছে।

    আকিও বলে না যেতে চাইলে জোর করবে না ও। ভেবেছিল সময় গেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু। কিন্তু ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।

    পরবর্তী বছরগুলোতে একবারের জন্যেও ছেলেকে বাবা-মা’র বাসায় নিয়ে যেতে পারেনি আকিও। একাই যেত প্রতিবার। নাতিকে দেখতে না পেরে হাজার রকম প্রশ্ন করতো তারা। নাওমিকে নিয়ে আসার জন্যে জোরাজুরিও করতো।

    এক পর্যায়ে মাসায়ে বলে যে সে জানে ইয়াইকো শ্বশুরবাড়ি আসতে চায় না; এখানে সময় কাটাতে চায় না। সেজন্যে তাকে জোরও করতে চায় না তারা। কিন্তু আকিও চাইলেই তো নাওমিকে নিয়ে আসতে পারে। নাতিকে না দেখলে খারাপ লাগে দু’জনেরই।

    জবাবে লজ্জায় কিছু বলতে পারতো না আকিও। বাবা-মা’র অনুভূতিটা বুঝতে কোন অসুবিধে হতো না ওর, কিন্তু সেই সাথে এটাও জানতো যে ইয়াইকোকে এই বিষয়ে রাজি করাতে পারবে না। সত্যি বলতে কথাটা তোলারই সাহস নেই ওর। কিছু বললেই বাসায় অশান্তি বাড়বে।

    প্রতিবারই বাব-মা’কে স্বান্তনা দিয়ে বলতো যে কিছু একটা করবে। কিন্তু সমস্যাটা সমস্যাই রয়ে যায়।

    এভাবেই কেটে যায় সাত বছর।

    একদিন হঠাৎ মাসায়ে ফোন দিয়ে জানায় আকিও’র বাবা শোইচিরো স্ট্রোক করেছে। জ্ঞান নেই তার। কি হবে বলা যায় না।

    সেদিন ইয়াইকো’কে হাসপাতালে নিয়ে আসার অনুরোধ করে মাসায়ে। বলে যে এটাই হয়তো দাদার সাথে শেষ দেখা নাওমির। এক প্রকার দায়িত্ব থেকেই রাজি হয় ইয়াইকো।

    ইয়াইকো, নাওমি আর আকিও গিয়ে দেখে ফ্যাকাসে মুখে ওয়েটিং রুমে বসে আছে মাসায়ে। ভেতরে শোইচিরোর অস্ত্রোপচার হচ্ছে।

    “গোসল থেকে বের হয়ে কেবলই একটা সিগারেট ধরিয়েছে, এসময় অজ্ঞান হয়ে যায়,” কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে মাসায়ে।

    “আমি আগেই বলেছি সিগারেট ছাড়তে।”

    “তোমার বাবার সিগারেটের নেশা কেমন, তা তো জানোই, “ বিষণ্ন চেহারায় বলে মাসায়ে। এরপর ইয়াইকোর দিকে তাকায় সে। “তোমাদের অনেক দিন দেখি না। আসার জন্যে ধন্যবাদ।”

    “সরি। আমার আরো আগেই আসা উচিৎ ছিল,” নিচের দিকে তাকিয়ে বলে ইয়াইকো।

    “সমস্যা নেই, আমি জানি তুমি ব্যস্ত থাক।” নাওমির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় মাসায়ে। মা’র পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটা। “বাব্বাহ, কত্ত বড় হয়ে গেছ তুমি! জানো আমি কে? তোমার দাদী!”

    “দাদীকে হ্যালো বলো,” ছেলেকে বলে আকিও, কিন্তু নাওমি চুপই থাকে। কিছুক্ষণ পরেই স্বামীকে নিয়ে ওখানে হাজির হয় হারুমি। আকিওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সোজাসুজি মাসায়ের দিকে এগোয় তারা। ইয়াইকোর দিকে একবারের জন্যেও তাকায় না। দাদা-দাদীকে নাতির থেকে দূরে রাখায় স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল দু’জনে।

    এরকম প্রতিকূল অবস্থাতেই বাবার অস্ত্রোপচার শেষ হবার জন্যে অপেক্ষা করে আকিও। প্রার্থনা ছাড়া করার মতো আর কিছু নেই ওদের। আর যদি সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাটাই সত্যে উপনীত হয়, তাহলে কি করতে হবে সেটা নিয়েও ভেবে রাখে ও। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে কাদের সাথে যোগাযোগ করবে, অফিসে কি বলবে- এসব।

    এমনকি, এরপর কি হবে সেসব নিয়েও ভাবে বিস্তর। মা’র সাথে কেমন সম্পর্ক হবে তখন? প্রথমদিকে কয়েক বছর হয়তো একাই থাকতে পারবে, কিন্তু সবসময় তো আর না। ও হচ্ছে পরিবারের বড় ছেলে, মা’র যত্ন নেয়ার দায়িত্বটাও ওর। কিন্তু এখানে আরো অনেক বিষয় আছে।

    ইয়াইকো কিছুটা দূরে নাওমিকে নিয়ে বসে ছিল। ছেলেটার চেহারাতেই স্পষ্ট যে হাসপাতালে এসে ভালো লাগছে না তার। আসলে বয়সের কারণেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছিল না সে।

    মা’কে ওদের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়াটা সম্ভব হতো না কারণ ইয়াইকো শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই কয়েক ঘন্টা টিকতে পারেনি। শাশুড়ির সাথে ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে একই ছাদের নিচে থাকলে ঠোকাঠুকি হবেই।

    তাই মনেপ্রাণে আকিও প্রার্থনা করতে থাকে যেন শোইচিরো ঠিক হয়ে যায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এক না এক সময় মায়ের যত্ন ওকে নিতে হবেই, কিন্তু যখনকার বিষয় তখন ভাবা যাবে।

    ওর প্রার্থনা কাজে দেয়। সফল হয় শোইচিরোর অস্ত্রোপচার। তবে বাম হাতের মোটর স্কিল কমে যায় কিছুটা। কিন্তু তা সত্ত্বেও মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপনই করতে থাকে সে। কয়েক দিন পর ছাড়া পায় হাসপাতাল থেকে। আকিও প্রায়ই ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিত মা-বাবার। বেশিরভাগ সময়ই তারা বলতো কোন অসুবিধা হচ্ছে না।

    একদিন হঠাৎ ইয়াইকো প্রশ্ন করে বসে স্ট্রোকের কারণে শোইচিরো মারা গেল মা’কে নিয়ে কি করতো আকিও। লজ্জায় পড়ে যায় ও। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বলে বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি।

    “ভবিষ্যতে কি হবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করার মত অবস্থা ছিল না আমার। এখন একথা জিজ্ঞেস করছো কেন?”

    “তুমি যদি মা’কে আমাদের এখানে নিয়ে আসার কথা বলতে তাহলে যে কি বলতাম….” কিছুক্ষ চুপ থাকে ইয়াইকো, এরপর বলে, “দেখো, আমি তোমার মা’র সাথে মানিয়ে চলতে পারব কিনা জানিনা। এটা সত্যি যে আমাকে একদিন না একদিন তার দেখভাল করতেই হবে, কিন্তু আপাতত তার সাথে থাকা সম্ভব না। “

    স্ত্রী’কে কোন প্রকার রাখঢাক ছাড়া এসব বলতে শুনে বিমূঢ় হয়ে যায় আকিও।

    “বুঝতে পেরেছি,” কোনমতে বলে ও। মনে মনে ভাবতে থাকে সবার আগে মা মারা গেলেই সবার জন্যে মঙ্গল।

    তবে শ্বশুরের প্রতি অতটা ক্ষোভ ছিল না ইয়াইকোর।

    মানুষের প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মধ্যে তফাতের পরিমাণটাই বেশি- একথা প্রমাণিত হয় আরেকবার। কয়েকমাস পর আবারো বাড়ি থেকে ফোন আসে আকিও’র মোবাইলে। মাসায়ে জানায় যে ওর বাবা গত কয়েকদিন ধরে খুব উদ্ভট আচরণ করছে।

    “উদ্ভট মানে?”

    “একই কথা বারবার বলে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনাও ভুলে যায়,” গলা খাদে নামিয়ে বলে মসায়ে। “আমার মনে হচ্ছ তোমার বাবা মানসিক সমস্যায় ভুগছে।”

    “অসম্ভব!” কিছু না ভেবেই বলে ওঠে আকিও। একথা ও কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি যে শোইচিরোর মতন নিয়ম মেনে চলা কেউ কখনো স্মৃতিভংশ রোগে ভুগবে। প্রতিদিন সকালে উঠে বাইরে থেকে হেঁটে আসার পর খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা অবধি পড়ার অভ্যেস তার। হ্যাঁ, বয়স হলে অনেকেই ভুলোমনা হয়ে যায়, তাই বলে ওর নিজের বাবার এই সমস্যা হবে? বিষয়টা মানতেই পারছিল না আকিও।

    ওকে একবার ঘুরে যাওয়ার কথা বলে ফোন রেখে দেয় মাসায়ে। রাখার আগে এটাও যোগ করে যে নিজের চোখে দেখলে হয়তো বিশ্বাস করবে আকিও।

    মা’র বলা কথাগুলো স্ত্রী’কে এসে বললে নিস্পৃহ ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে ইয়াইকো।

    “তোমার বাবা’র যদি আসলেও মানসিক সমস্যা হয়, তাহলে কি করবে? “বুঝতে পারছি না। এসব নিয়ে তো ভাবিনি আগে।”

    “হুটহাট কোন কথা দিয়ে বোসো না আবার। ভাবনা চিন্তা করে নিও।”

    “মানে?”

    “বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে, এটা বুঝতে পারছি আমি। কিন্তু আমার আর নাওমির’র কথা ভুলে গেলে চলবে না। তোমার ছেলে এখনো ছোট।”

    ইয়াইকো কেন কথাটা বলছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না আকিওর। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন বয়স্ক লোকের দায়িত্ব নেয়ার জন্যে তৈরি নয় সে।

    “চিন্তা কোরো না, তোমাকে বাবার খেয়াল রাখতে বলবো না আমি। একথা ভাবিওনি।”

    “তোমার মুখ থেকে শুনে রাখলাম, “ সন্দিহান কন্ঠে জবাব দেয় ইয়াইকো। পরদিন অফিস শেষে মা-বাবার বাসায় যায় আকিও। দুরুদুরু বুকে চাপ দেয় কলিংবেলে। ওর বাবাই দরজা খুলে দেয় সেদিন।

    “আরে তুমি? হঠাৎ? কি মনে করে?” ছেলেকে দেখে বলে শোইচিরো। কাজ নিয়ে এটাসেটা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে। আলাপের সময় আকিও’র কাছে কিছু অস্বাভাবিক মনে হয় না।

    কিছুক্ষণ পর মাসায়ে বাইরে থেকে ফিরলে তাকে কথাটা বললো ও। সাথে সাথে চেহারা কালো হয়ে যায় তার।

    “আমি তো বানিয়ে তোমাকে বলছি না, বাবা। মাঝে মাঝে ভালো থাকে ও, সমস্যা হয় না তেমন। কিন্তু আমরা যখন একা থাকি, তখন বুঝতে পারি।”

    “আচ্ছা, আবার আসবো আমি। এবারে কিন্তু কোন অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লো না।”

    এরপর দুই দিন এসেও শোইচিরোর আচরণে কোন সমস্যা খুঁজে পেল না আকিও। মাসায়ে তার কথায় অটল।

    “সেদিন তোমার সাথে কোন বিষয়ে কথা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে না। যে কেকগুলো নিয়ে এসেছিলে, সেগুলোর কথাও ভুলে গেছে। তুমি কি একটু বুঝিয়ে বলবে যেন ডাক্তারের কাছে যায়? আমি কিছু বললেই আমাকে চুপ করিয়ে দেয়। বলে যে ঠিকই আছে।

    মা’র অনুরোধে বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় আকিও। তবে স্ট্রোকের চেক-আপ বলে নিতে হয় তাকে।

    পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায় যে সেরেব্রাল অ্যাট্রোফিতে ভুগছে সে। স্ট্রোকের কারণে এই সমস্যাটা হয় অনেকের। মস্তিষ্কের নিউরন থেকে নিউরনে সিগন্যাল যাওয়া-আসা বাধাগ্রস্ত হয়, যোগাযোগ ঠিকমতো হয় না। ফলে স্মৃতিভ্রংশে ভুগতে থাকে রোগী।

    আকিও বাবার সাথে বাসায় ফিরলে ভবিষ্যত নিয়ে নিজের শঙ্কা প্রকাশ করে ওর মা। তখন আকিও বলে এই রোগের নিরাময়ে খুব বেশি কিছু করা যাবে না, কিন্তু সথাসাধ্য সাহায্য করবে ও। বাবার অবস্থা তখনও খুব বেশি একটা গুরুতর মনে হয় না ওর কাছে। তাছাড়া ইয়াইকোর সাথে আলোচনা না করে কোন কথা দেয়াও সম্ভব নয়।

    কয়েক দিন পর ছোট বোন ফোন করে জানায় শোইচিরোর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে।

    “ভাইয়া তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো বাবাকে গিয়ে দেখে আসো। নাহলে বুঝবে না কি অবস্থা। আমি সেদিন গিয়ে চমকে গেছি,” উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে হারুমি।

    কয়েকদিন পর বাবা-মা’র বাড়িতে গিয়ে হারুমির কথার সত্যতা বুঝতে পারে আকিও। ওই অল্প ক’দিনেই অনেক বদলে গেছে শোইচিরো। শরীর শুকিয়ে গেছে, চোখের দৃষ্টিতে বিহ্বলতা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আকিওকে দেখা মাত্র চমকে উঠে পালিয়ে যেতে উদ্যোত হয় সে।

    “কি হয়েছে বাবা? কোথায় যাচ্ছ?” শোইচিরোর একটা হাত কোনমতে ধরে বলে আকিও।

    জবাবে চেঁচিয়ে ওঠে শোইচিরো। নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।

    “তোমাকে চিনতে পারেনি, এজন্যে এরকম করছে,” মাসায়ে জানায়। “তোমাকে চেনে, মা?”

    “মাঝে মাঝে চেনে, মাঝে মাঝে ভুলে যায়। আবার কখনো ভাবে আমি ওর মা…হারুমির সাথেও গুলিয়ে ফেলে আমাকে।”

    বারান্দায় বসে একদৃষ্টিতে বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকে শোইচিরো, যেন কিছুই ঢুকছে না কানে। হাতের আঙুলগুলো লাল। কারণ জিজ্ঞেস করলে মাসায়ে বলে, “মেক-আপ নিয়ে খেলছিল।”

    “মেক-আপ?”

    “আমার কসমেটিক্সের বাক্সটা নামিয়ে খেলার সময় লিপস্টিক ভরিয়ে ফেলেছিল হাতে। বাচ্চাদের মত করে একদম।”

    মাসায়ে আরো বলে যে মাঝেমাঝে ছোটবেলায় ফিরে যায় শোইচিরো। নিজেকে স্কুলের বাচ্চা মনে করে। আবার কখনো কখনো একদম সুস্থ মানুষের মতন আচরণ করে।

    স্মৃতিভ্রংশ রোগটা আরো প্রকট হতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। কয়েক মিনিট আগে করা কোন কাজ বা কথাও ভুলে যায় বেমালুম। এরকম একটা মানুষের সাথে সারাদিন কাটাতে কেমন লাগবে ভাবতেই শিউরে ওঠে আকিও।

    মাসায়ের জীবন যে সহজ নয়, সেটা একটা বাচ্চাও বুঝতে পারবে।

    “বাবাকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। আর মা’র অবস্থা এখন কেমন সেটা নিয়ে আলাপ করলে পরিস্থিতি বদলাবে না,” ওর বোন বলে একদিন কথা বলার সময়। “সেদিন গিয়ে দেখি মা’র সাথে তুমুল রাগারাগি। আলমারি থেকে সব কিছু বের করে একটা একটা করে ভেঙ্গেছে। মা নাকি তার প্রিয় ঘড়িটা চুরি করেছে।”

    “ঘড়ি?

    “হ্যাঁ। অথচ ঘড়িটা নিজেই অনেক আগে ফেলে দিয়েছিল বাবা। নষ্ট হয়ে গেছিল ওটা। এই কথাটা হাজারবার বলেছে মা। কিন্তু বাবার এক কথা। ঘড়ি ছাড়া সে যেতে পারবে না।”

    “কোথায় যেতে পারবে না।”

    “স্কুলে,” বলে হারুমি। “আমি আর মা দু’জন মিলেও সেদিন শান্ত করতে পারিনি। শেষে বলি যে পরদিন ঘড়িটা এনে দেব; ওইদিন স্কুলে যেতে। তখন একটু ঠাণ্ডা হয়।”

    মুখে কোন কথা আসে না আকিওর। ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে বাবা এরকম আচরণ করেছে।

    এরপর সামনে কি হবে সেসব নিয়ে আলোচনা করে দুই ভাইবোন। স্বামীকে নিয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সাথে থাকে হারুমি। সেখান থেকেই মা’কে যথাসম্ভব সাহায্য করতে রাজি সে।

    “তোর পক্ষে তো আর সবকিছু করা সম্ভব না। “

    “কিন্তু তুই তো কিছুই করতে পারবি না।”

    ইয়াইকো যে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সাহায্য করতে রাজি না, এই কথা ভালো করেই জানা ছিল হারুমির। জবাবে বলার মতন কিছু পায় না আকিও।

    একবার কথায় কথায় শোইচিরোর অবস্থা ইয়াইকো’কে জানায় ও। সব শুনে শীতল কণ্ঠে ইয়াইকো বলে এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। ছেলেকে সামলিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ দেয়াটা কঠিন। শেষমেষ আকিও আর মা-বাবাকে দেখভাল করার কথা তোলেইনি।

    কয়েকদিন পর আবারো বাবাকে দেখতে যায় ও। বাসায় ঢোকা মাত্র একটা দুর্গন্ধ এসে ধাক্কা দেয় নাকে। প্রথমে আকিও ভাবে টয়লেটের ড্রেনেজ লাইনে হয়তো কিছু আটকে গেছে। লিভিং রুমে গিয়ে দেখে বাবার হাত মুছে দিচ্ছে মা। শোইচিরোর চেহারায় ছোট বাচ্চাদের মতন ভয়।

    মাসায়ে তখন শান্ত কন্ঠে বলে ডায়পার খুলে ভেতরের জিনিস নিয়ে খেলছিল শোইচিরো। তার কন্ঠস্বর শুনে চমকে যায় আকিও। ঘটনাটা এমনভাবে বর্ণনা করে মাসায়ে যেন সেটা নিত্যদিনের ঘটনা।

    মা’র চেহারায় ক্লান্তি নজর এড়ায় না আকিওর। তার স্বাস্থ্যেরও অবনতি হয়েছে। চেহারায় অজস্র বলিরেখা, চোখের নিচে কালো দাগ।

    আকিও পরামর্শ দেয় বাবাকে কোন হোমে রাখার, দরকার হলে সে খরচ দিবে। হারুমিও সেদিন ছিল ওখানে। ওর কথা শুনে শুকনো একটা হাসি ফোটে তার মুখে।

    “ভাইয়া, তুই কিছুই জানিস না! আমি আর মা অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। একজন সমাজকর্মীর সাথে দেখাও করেছি, কিন্তু লাভ হয়নি। বাবাকে রাখতে রাজি না কেউ। মা একদম নিরুপায়, তাকেই খেয়াল রাখতে হবে বাবার।”

    “কেন রাজি না?”

    “কারণ বাইরে থেকে দেখলে বাবার সমস্যাটা ঠিকঠাক বোঝা যায় না। শারীরিক ভাবে এখনও পুরোপুরি অক্ষম নয় সে। আবার বাচ্চাদের মতন আচরণ করে, জোরে কথা বলে, ঘরের মধ্যেই দৌড়ায় মাঝে মাঝে। যদি বাচ্চাদের মত সারাদিন ঘুমাতো, তাহলে সমস্যা হতো না। কিন্তু প্রায়ই গভীর রাতে উঠে এটা সেটা ভাঙতে শুরু করে বাবা। যদি বাবাকে ওরকম কোন হোমে রাখাও হয়, তার সাথে চব্বিশ ঘন্টা কাউকে না কাউকে থাকতে হবে। হোমের অন্যান্য বয়স্ক অধিবাসীদেরও অনেক অসুবিধা হবে তার জন্যে। তাই কেউ রাখতে চায় না।”

    “তাহলে ওগুলো থেকে কি লাভ?”

    “আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। আমি তো এখনও খুঁজছি। কেউ রাখতে চায় না, এমনকি ডে কেয়ারেও না!”

    “ডে কেয়ার?”

    হারুমির চোখে অবিশ্বাস মাখা বিস্ময়। আকিও যে এই বিষয়ে কিছু জানেনা, সেটা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না।

    “ডে কেয়ারগুলোতে বয়স্করা পুরো দিন থাকতে পারে। একটাতে গিয়েছিল বাবা, কিন্তু স্টাফেরা যখন তাকে গোসল করাতে চায়, তখন রাগ করে ওয়েটিং রুমের সব চেয়ার তছনছ করে। ভাগ্যিস কেউ আহত হয়নি।”

    পরিস্থিতি যে সঙ্গীন, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না আকিও’র।

    “‘একমাত্র হাসপাতালেই এখন রাখা যেতে পারে বাবাকে। তাও সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ডে।”

    “সাইকিয়াট্রি?”

    “তুই জানিস না, কিন্তু সপ্তাহে দুইবার ডাক্তার দেখাতে ওখানে যায়। যে মেডিসিনগুলো দিয়েছে, সেগুলো ভালোই কাজ করছে। অস্থির ভাবটা কমেছে আগের তুলনায়। ওখানে ভর্তি করানো অসম্ভব হবে না।”

    নিজের বাবার বিষয়ে ও কতটা অজ্ঞ, তা আরো একবার বুঝতে পারলো আকিও। তাছাড়া মা বা হারুমি যে এখন আর ওর সাথে এসব বিষয়ে আলোচনাও করে না তেমন, এটাতেও খারাপ লাগলো একটু।

    “তাহলে হাসপাতালেই ভর্তি করি। বিল আমি দিব….”

    মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করে দেয় হারুমি।

    “হাসপাতালে তো খুব বেশিদিন রাখা যাবে না।”

    “কেন?”

    “হাসপাতালে তারাই বেশিদিন থাকতে পারে, যাদের বাড়িতে রাখা একদমই সম্ভব না। কিন্তু বাবার শারীরিক অবস্থা এখনও অতটাও খারাপ না, বুঝতে পারছিস কি বলছি? আর এটাও সত্যি যে কষ্ট হলেও মা বাবার যত্ন ঠিকঠাকই রাখে। আমি অন্য হাসপাতালগুলোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।”

    “লাভ নেই কোন,” মাসায়ে বলে এবারে। “আমি যাদের সাথে কথা বলেছি, সবাই মানা করে দিয়েছে। তাছাড়া তোমাদের বাবা পুরোটা জীবন পরিবারের জন্যে খেটেছে, ওকে বাসায় রাখারই ইচ্ছে আমার।”

    “কিন্তু তোমার নিজের শরীরও তো খারাপ হয়ে যাবে!”

    “তোর যদি এতই চিন্তা থাকে এসব নিয়ে, তাহলে কিছু কর!” এবারে রেগে যায় হারুমি। “জানি তো পারবি না!”

    “দেখি আমি একটু খোঁজ খবর নেই।”

    “আমরা তো এই কয়দিন ঘাস কেটেছি!” হারুমির কন্ঠের ঝাঁঝ কমে না।

    ভেতরে ভেতরে অসহায় বোধ করে আকিও। মা’কে সাহায্য করতে চায় ও। সময় বয়ে যায়। কিন্তু হারুমি বা মাসায়ে কেউই ওর সাথে যোগাযোগ করে না। এতেই বরং একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে। চিন্তাটা নিতে পারছিল না ও। অনুতাপে দগ্ধ হয়ে কাজের প্রতি নিজেকে সঁপে দেয় আকিও। নিজেকে বোঝায়, ও অনেক ব্যস্ত, সে-কারণেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে পারছে না। বাবা- মা’র বাসায় যাওয়াও কমিয়ে দেয়।

    এভাবে চলে যায় কয়েক মাস। হারুমি একদিন ফোন করে বলে বাবা এখন পুরোপুরি শয্যাশয়ী। মানসিক অবস্থার আগের তুলনায় অবনতি ঘটেছে। ঘোরের মধ্যে মাঝে মাঝে খাপছাড়া কথা বলে।

    “বাবা আর খুব বেশিদিন নেই। তুই একবার গিয়ে শেষবারের মতন দেখে আয় নাহয়?” ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলে হারুমি।

    আকিও সেদিন গিয়ে দেখে শোইচিরো নিষ্প্রাণ ভঙ্গিতে পেছনের ঘরটায় শুয়ে আছে। সারাদিন ঘুমিয়েই কাটায় সে। মাসায়ে কাপড় পাল্টে দেয়ার সময় তাকায় কেবল। তবে সেটাকেও পুরোপুরি জাগরণ বলা যাবে না। দৃষ্টিতে থাকে না প্রাণ।

    আকিও মা’কে সাহায্য করে বাবাকে উঠে বসানোর কাজে। একজন অথব মানুষকে দৈনিক এভাবে শোয়ানো-বসানো কতটা কঠিন কাজ, সেটা বুঝতে পারে এবারে।

    “তুমি প্রতিদিন এসব করো, মা?”

    “ও সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকায় এখন সুবিধাই হয়েছে। আগে তো পুরো বাসায় বাচ্চাদের মতন দৌড়াতো।”

    বাবার দিকে তাকিয়ে প্রথমবারের মতন আকিও প্রার্থনা করে যেন তাড়াতাড়ি এই ইহলৌকিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি মেলে তার।

    তার এই প্রার্থনা মঞ্জুর হয় ছয় মাস পর। সবসময়ের মতনই হারুমি ফোন দিয়ে তাকে জানায় খবরটা।

    ইয়াইকো আর নাওমিকে নিয়ে মা’র বাসায় যায় ওরা। ওখানে অবাক চোখে চারদিকে তাকায় নাওমি। ছোটবেলার পর এখানে আর পা পড়েনি তার। দাদার মৃত্যুর সংবাদে কোন প্রকার বিকার ছিল না ছেলেটার। থাকার কথাও না, দাদার সাথে তার ভালোমতন কথাও হয়নি কখনো।

    ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে শোইচিরো। সেই সময় পাশে থাকতে পারেনি বলে আফসোস করে মাসায়ে। অবশ্য থাকলেও শোইচিরো যে টের পেত এমন নয়।

    ইয়াইকো শেষ পর্যন্ত শোইচিরো’র কাছে মাফ না চাওয়ায় হারুমির রাগ কমেনি। ভাইকে আড়ালে নিয়ে সে বলে ইয়াইকো যেন মাসায়ের কাছে অন্তত দুঃখপ্রকাশ করে, বিপদের সময় সাহায্য না করার জন্যে।

    “বাবা মারা গিয়েছে জন্যে ওর তো এখানে আসার দরকার ছিল না। আমাদের পরিবারকে যদি ভালোই না লাগে, তাহলে আসবে না। “

    “থাক। আমি কথা বলবো ওর সাথে।”

    “বলে লাভ কি? আর তুই যে কিছু বলবি না তা আমি ভালো করেই জানি।”

    হারুমি ভুল কিছু বলেনি। ব্যাপারটা নিয়ে কোন কথা হয় না আকিও আর ইয়াইকোর মধ্যে।

    শোইচিরোর মৃত্যুতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিল আকিও। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের পর ওর মনে হয় কাধের উপর থেকে বড় একটা বোঝা যেন উঠে গেল।

    তবে ওর এই স্বস্তি খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তিন বছর পর বাসা পরিষ্কার করতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলে মাসায়ে।

    এরকম বয়সে হাড় ভাঙ্গার বিষয়টা ফেলনা কিছু নয়। অস্ত্রোপচারের পরেও পুরোপুরি ঠিক হয় না সে। এখন একটা লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হয় তাকে। সিঁড়ি বাইতে পারে না।

    এই অবস্থায় একা থাকা সম্ভব নয় তার পক্ষে। তাই আকিও সিদ্ধান্ত নেয় ওরা গিয়ে মাসায়ের সাথে থাকবে।

    কিন্তু ইয়াইকো সহজে রাজি হতে চায় না।

    “তুমি তো বলেছিলে আমাকে কিছু করতে জোর করবে না।”

    “মা আমাদের সাথে থাকবে, কিন্তু তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। *

    ““সেটা কিভাবে সম্ভব?”

    “মা ঠিকমতন চলাফেরা করতে পারেনা ঠিক, কিন্তু নিজের খেয়াল রাখতে পারবে। দরকার হলে আলাদা খাবে, যদি তুমি চাও আর কি। আর এখন যদি আমরা মা’র সাথে না থাকি, তাহলে লোকে কি বলবে?“

    দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে রাজি হয় ইয়াইকো। তবে রাজি হওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল তার এরকম একটা বড় বাড়িতে থাকার স্বপ্ন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে লম্বা একটা সময় ধরে আকিও’র বেতন বাড়েনি। তাই ওরা যে নতুন ফ্ল্যাট কিনবে, সেটাও সম্ভব না।

    ইয়াইকো ওই বাড়িতে গিয়ে থাকতে রাজি হয়, তবে শর্ত জুড়ে দেয় যে তাকে তার মতন জীবন যাপন করতে দিতে হবে।

    আকিও গত তিন বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ওর বাবা-মা’র বাড়িতে থাকছে। এখানে সেখানে কিছুটা সংস্কার করে নিয়েছে। বাসা বদলানোর দিন আকিও’কে অবাক করে দিয়ে ধন্যবাদ জানানোর ভঙ্গিতে মাসায়ের সামনে বাউ করে ইয়াইকো।

    মাসায়েও হাসিমুখে পাল্টা বাউ করে একবার। ঘন্টি বাঁধা লাঠিটায় ভর দিয়ে পুরো বাসা ঘুরে দেখায় ওদের। সেদিন কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আনন্দে মুখরিত হয় চারপাশ।

    দু’জনকে ওভাবে দেখে আকিও ভেবেছিল সামনের দিনগুলোতে হয়তো কোন সমস্যা হবে না। অবশেষে একটু শান্তিতে থাকতে পারবে ও।

    কিন্তু এবারেও ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। নিত্য নতুন সমস্যারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.