Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প226 Mins Read0

    রেড ফিঙ্গার – ৬

    অধ্যায় ৬

    রাত একটার খানিকক্ষণ পর টিভি বন্ধ করে দিল আকিও। খবরে ছোট মেয়েটার নিখোঁজ হবার ঘটনাটা প্রচারিত হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্যে খুলেছিল।

    ইয়াইকো এখনো তাতামি ঘরে। দুই ঘন্টা ধরে সেখানেই আছে। এই অস্থিরতা আর সহ্য হচ্ছে না তার। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চুপ করে আছে। জানে যে মুখ খুললেই আবারো বেঁধে যাবে।

    সিগারেট মুখে নিয়ে উঠে দাঁড়াল আকিও। ডাইনিং রুমের সিলিং লাইটটা নিভিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। পর্দা সরিয়ে উঁকি দিল বাইরে।

    বাইরে পথবাতিগুলো জ্বলছে এখনো, কিন্তু ওদের বাগানের ভেতরে আসছে না আলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার সেখানটায়।

    অন্ধকারে চোখ সয়ে আসা অবধি অপেক্ষা করলো। ময়লা ফেলার ব্যাগটা দেখা যাচ্ছে এখন। গ্লাভস পরে জানালার পাল্লা সরিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। হাতে একটা কার্ডবোর্ডের বক্স, টেপ আর ফ্ল্যাশলাইট। প্রথমে কার্ডবোর্ডটাকে সোজা করলো, এরপর নিচে ভালোমত টেপ মেরে নিল যেন খুলে না যায়। অবশেষে চোখ ফেরাল কালো রঙের ময়লার ব্যাগটার দিকে।

    এর আগে কখনো এতটা আতঙ্কিত বোধ করেনি ও জীবনে। মেয়েটার পা দেখা যাচ্ছে এখন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বাকী শরীরটা না চাইতেও দেখতে হবে।

    মুখ শুকিয়ে গেল আকিওর। ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে। এমনটা নয় যে এর আগে কখনো মৃতদেহ দেখেনি। এইতো বাবা মারা গেল কিছুদিন আগে। কিন্তু কখনো এতটা ভয় বা দ্বিধা কাজ করেনি মনে। ডাক্তার ওর বাবাকে মৃত ঘোষণার পরেও গালে হাত দিয়েছে কয়েকবার।

    কিন্তু দুই পরিস্থিতির মধ্যে তফাতটা আকাশ পাতাল। ঝড়ের মধ্যে কাঁপতে থাকা পাতার মত কাঁপতে কাঁপতে কালো ময়লার ব্যাগটায় হাত ছোঁয়াল ও। নিচে উঁকি দিতে সাহসে কুলাচ্ছে না। এরকম ভয়ের সাথে পরিচয় ছিল না ওর। হাসপাতালে কেউ মারা গেলে মৃত্যুর আগের এবং পরের অবস্থার মধ্যে খুব বেশি একটা তফাত করা যায় না। প্রথম দেখায় বোঝাও যায় না যে মারা গেছে কিনা। কিন্তু এখন ওর সামনে যে মৃতদেহটা আছে, সেটা পুরোপুরি অন্যরকম। একটা সুস্থ-সবল নিরীহ বাচ্চা মেয়েকে হঠাৎ খুন করা হয়েছে। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তাকে।

    ওর এরকম ভয় পাওয়ার আরেকটা কারণ আছে।

    পুলিশকে ফোন করে সব জানালে হয়তো এতটা ভয় পেত না। মেয়েটাকে তুলে বক্সটার ভেতরে রাখতে হবে ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। এমনটা করার যৌক্তিক কোন কারণ তো নেই।

    তাছাড়া এরকম আতঙ্কবোধের আরেকটা কারণ হচ্ছে বিবেকের দহন। ভীষণ অনৈতিক একটা কাজ করতে চলেছে ও। বাচ্চা মেয়েটার মৃতদেহের মুখোমুখি হওয়া আর সেই সত্যের মুখোমুখি হওয়া একই কথা।

    বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ির শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো আকিও। এখন দিবাস্বপ্ন দেখার সময় নয়। ওকে যদি প্রতিবেশীদের কেউ দেখে ফেলে এখানে, সেটা ভালো হবে না মোটেও।

    কালো প্লাস্টিকের ব্যাগটা না সরিয়েই মৃতদেহটা তুলে বক্সে রাখা যাবে কিনা সেটা নিয়ে ভাবল কিছুক্ষণ। পার্কের পাবলিক টয়লেটে যে কোন একটা স্টলে মেয়েটাকে রেখে প্লাস্টিকের ব্যাগটা সরালেও হবে। ততক্ষণ নাহয় চোখ বন্ধ করে রাখবে। এরপর ফিরে আসবে বাড়িতে। কোন ঝামেলা না হলে কেউ কিছু সন্দেহ করবে না।

    সাথে সাথে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল। না চাইলেও মৃতদেহটা দেখতে হবে ওকে, নতুবা বুঝবে না এখন সেটা কেমন অবস্থায় আছে। নাওমির কোন চিহ্ন থাকলে মুছে ফেলতে হবে।

    কোন উপায় নেই, নিজেকে প্রবোধ দেয় আকিও। পরিবারের জন্যে হলেও এই হীন কাজটা করতে হবে ওকে।

    লম্বা শ্বাস নিয়ে সামনে ঝুঁকে ময়লার ব্যাগটা একটু সরিয়ে উঁকি দিল আকিও। অন্ধকারেও ছোট্ট মেয়েটার ফর্সা পা’টা বোঝা যাচ্ছে। স্টেশনের লোকটার মতে মেয়েটার বয়স সাত বছর। এরকম একটা বাচ্চা মেয়ের গলা চেপে ধরা হয়েছে ভাবতেই গুঙিয়ে উঠলো ও।

    অন্ধকারে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। টর্চ বের করে মাটির দিকে তাক করে চালু করলো। এরপর ধীরে ধীরে আলোর রেখাটা নিয়ে এলো মৃতদেহের দিকে।

    মেয়েটার পরনে একটা সুতী স্কার্ট আর বিড়ালের ছবিওয়ালা সোয়েটশার্ট। হয়তো তার মা শখ করে পরিয়ে দিয়েছিল জামাটা। এখন তার মাথায় কি ঘুরছে?

    এবারে বাচ্চা মেয়েটার ফ্যাকাসে হয়ে আসা চেহারার দিকে আলো ধরলো আকিও। পরমুহূর্তেই সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হল।

    নিশ্চল বসে রইলো কিছুক্ষণ। ভারি শ্বাস ফেলছে।

    চিত হয়ে শুয়ে আছে মেয়েটা। চেহারা উপরের দিকে ফেরানো। সরাসরি সেদিকে তাকাতে চায়নি আকিও, কিন্তু যেটুকু দেখেছে সেটাই গেঁথে গেছে মস্তিষ্কে। এই অল্প আলোতেই মেয়েটার চোখের অবস্থা দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আরেকটু হলেই

    আমার দ্বারা সম্ভব না, নিজেই নিজেকে বললো আকিও।

    কাজটা যে নাওমি করেছে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। লাশটা কার্ডবোর্ডের বক্সে তুলে রাখতে হবে এখন। কিন্তু তখন যদি কোনভাবে আকিওর কোন চিহ্ন রয়ে যায়? আসলে এসবই অজুহাত। কাজটা করতে ইচ্ছে করছে না আকিওর।

    মেয়েটার পিঠের নিচে হাত দিল ও। যা ভেবেছিল, সেই তুলনায় অনেক হালকা শরীরটা। যেন একটা পুতুল। প্রস্রাবে ভিজে আছে স্কার্টটা। একটা কটু গন্ধ এসে ধাক্কা দিল আকিওর নাকে।

    মেয়েটার হাত পা বেশ কসরত করে ঢোকাতে হল বাক্সটার ভেতরে। তবে খুব একটা সমস্যা হলো না। আকিও ভেবেছিল রিগর মর্টিসে শক্ত হয়ে যাওয়ায় নাড়ানোই যাবে না হয়তো।

    এসময় মেঝেতে একটা জিনিস চোখে পড়লো ওর। টর্চের আলো ফেলে বুঝলো মেয়েটার একপাটি জুতা নিচে পড়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে এক পায়ে সাদা মোজা দেখেছিল, তখন জুতো কোথায় সেই কথা মাথায় আসেনি। আরেকটু হলেই মারাত্মক ভুল হয়ে যাচ্ছিল।

    বাক্সের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে খালি পা’টা বের করে আনলো। জুতো পরিয়ে দিয়ে ফিতা বেঁধে দিল ঠিকমত।

    এবারে মেয়টাকে পার্কে রেখে আসার পালা। খুব বেশি ওজন নয় মেয়েটার, কিন্তু একটা বাক্স এভাবে বয়ে নিয়ে যাওয়াটা অসুবিধাজনক। তাছাড়া পার্কটা প্রায় দশ মিনিটের দূরত্বে। যাওয়ার পথে থামা যাবে না এক মুহূর্তের জন্যেও।

    কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তার পর আকিও ঠিক করলো সাইকেলটা ব্যবহার করবে সে এই কাজে। চাবি নেয়ার জন্যে ভেতরে ঢুকল। বাজারে যাওয়া আসার জন্যে সাধারণত এই সাইকেলটাই ব্যবহার করে ইয়াইকো। আপাতত বাড়ির সামনে রাখা আছে ওটা।

    গেট খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে একবার দেখে নিল রাস্তায় কেউ আছে কিনা। যখন দেখল কেউ নেই সন্তর্পণে বেরিয়ে এল।

    সাইকেলের তালা খুলে গেটের গায়ে হেলান দিয়ে রাখল। ঘুরে বাগানে ফেরার জন্যে পা বাড়াবে, এসময় থমকে গেল আকিও।

    কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে কার্ডবোর্ডের বাক্সটার কাছে। আরেকটু হলেই চিৎকার করে উঠতো ও।

    “তুমি এখানে কি করছো?” নিজেকে সামলে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো আকিও। আগন্তুককে চিনতে সমস্যা হয়নি কোন

    মাসায়ে নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে বাক্সটার পাশে, ওর মা। তবে তার দৃষ্টি বাক্সটার দিকে নয়। অন্য কোন কিছু মনোযোগ কেড়েছে তার।

    মায়ের বাহুতে হাত রাখলো আকিও।

    “এত রাতে বাইরে কি করছো?”

    কিন্তু মাসায়ের কানে আকিওর কথা ঢুকল বলে মনে হয় না। কোন সাড়াশব্দ নেই তার। খানিক বাদে আকাশের দিকে তাকালো যেন ওখানে কিছু খুঁজছে। অন্ধকারের কারণে মায়ের অভিব্যক্তি বুঝতে পারছে না আকিও।

    “অনেক সুন্দর, তাই না…” অবশেষে বললো মাসায়ে। “এরকম আবহাওয়া থাকলে আমরা শিক্ষা সফরে যেতে পারব। “

    আকিওর ইচ্ছে করছে হতাশায় মাটিতে বসে পড়তে। মায়ের ভাবনাহীন কন্ঠস্বর শুনে কেন যেন আরো ক্লান্ত লাগছে ওর। মাসায়ে কিছু করেনি, তবুও তার প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা অনুভব করছে আকিও।

    শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে দুই হাতে মা’কে ধরে সামনে এগোলো ও। লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মাসায়ে। নিজেকে এখন ছোট একটা বাচ্চা ভাবলেও বাইরে বেরুলে লাঠি নিতে ভোলে না সে। এই বিষয়টা বরাবরই অদ্ভুত লাগে আকিওর। কিন্তু স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের চিন্তাধারা বোঝা কারো কম্ম নয়।

    মাসায়ে সামান্য নড়লেই তার লাঠিতে লাগানো ঘন্টাগুলো বেজে ওঠে। আকিও’রা যখন এই বাড়িতে ফিরে আসে, সেই সময় এই শব্দটা মিষ্টি লাগলেও এখন বিরক্ত লাগছে ভীষণ।

    “ভেতরে চলো মা। ঠাণ্ডা লাগছে না তোমার?

    “কালকে ঝড়-বৃষ্টি হবে না তো?

    “না, চিন্তা কোরো না।”

    নিজেকে এখন স্কুলের ছাত্রী মনে করে মাসায়ে। অন্তত আকিও’র সেটাই ধারণা। এই যেমন এখন আগামীকালের শিক্ষা সফর নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত সে। সেকারণেই বাইরে দেখতে এসেছে আওহাওয়া ঠিকঠাক আছে কিনা।

    বাড়িতে ঢুকে লাঠিটা জুতার র‍্যাকে হেলান দিয়ে রাখল মাসায়ে। খালি পায়েই বাইরে বেরিয়ে গেছিল বিধায় পায়ের পাতায় মাটি লেগে আছে।

    আকিও’র মনে হচ্ছে যে’কোন সময় ওর মাথাও বুঝি খারাপ হয়ে যাবে। তাতামি ঘরের স্লাইডিং দরজাটা হালকা ফাঁকা হলো এসময়। ইয়াইকোর চেহারা দেখা গেল সেখানে। ভ্রু কুঁচকে রেখেছে সে।

    “হচ্ছেটা কি?”

    “কিছু না। মা…“

    “আবার কিছু করেছে?”

    ইয়াইকোর কন্ঠস্বরেই শ্বাশুড়ির প্রতি তার মনোভাব একদম পরিষ্কার।

    “না। যাচ্ছি আমি এখন।”

    মাথা নাড়ল ইয়াইকো। “সাবধানে যেয়ো।’

    “চিন্তা কোরো না।”

    পেছনে ফিরে বাইরে বের হওয়ার দরজাটা খুলল আকিও। বাগানে এসে বাক্সটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল একবার। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বাক্সটার ভেতরে ছোট একটা বাচ্চা মেয়ের মৃতদেহ ঢুকিয়ে রেখেছে ও নিজেই। কিছুক্ষণ পর অন্য এক জায়গায় রেখে আসবে। এর চেয়ে খারাপ রাত আমার জীবনে আর আসেনি, মনে মনে বললো আকিও।

    বাক্সটা বন্ধ করে তুলে নিল হাতে। বড্ড ভারি মনে হচ্ছে ওটাকে এখন। অথচ আকিও জানে ভেতরের মেয়েটার ওজন একদমই কম। সাইকেলের কাছে গিয়ে সামনের ছোট্ট ব‍্যাকটার উপরে নামিয়ে রাখল বাক্সটা। ঠিকভাবে রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সিটে বসে যাওয়া যাবে না। অগত্যা একহাত দিয়ে হ্যান্ডেল এবং আরেক হাতে বাক্সটা ধরে হাঁটতে শুরু করলো। পথবাতির আলোয় ওর ছায়া পড়ছে রাস্তার উপরে।

    সময় এখন রাত দু’টোর আশপাশে। অন্ধকার রাস্তাটার কোথাও কেউ নেই। কিন্তু কয়েকটা বাড়ির জানালায় আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। খুব সাবধানে এগোচ্ছে আকিও, চেষ্টা করছে যাতে কোন শব্দ না হয়।

    রাতের এই সময়ে বাস চলে না। তাই হুট করে ওকে কেউ দেখে ফেলবে সেই সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোথায়। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ির কোন ভরসা নেই। যেকোন সময়, যেকোন দিক থেকে চলে আসতে পারে। তাছাড়া ট্যাক্সিগুলো তো আছেই।

    এসব কথাই ভাবছে, এমন সময় এক জোড়া এগিয়ে আসতে দেখল সামনের দিক থেকে। দ্রুত পাশের ছোট ওয়ানওয়ে রাস্তাটায় ঢুকে পড়লো। গাড়িটা এখানে ঢুকতে পারবে না। একটা কালো ট্যাক্সি হুস শব্দ তুলে ছুটে গেল কিছুক্ষণ পর।

    আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাস্তাটা থেকে বেরিয়ে এলো আকিও। ওর গন্তব্য আর মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে; কিন্তু এটুকু পথই অনন্ত মনে হচ্ছে এখন। পার্কটার অবস্থান একটা আবাসিক এলাকার একদম মাঝখানে। খুব একটা বড় না। কয়েকটা গিঙ্কগো গাছ আর সর্বসাকুল্যে পাঁচটার মত বেঞ্চ। বৃষ্টি হলে মাথা বাঁচানোর মত কোন ছাউনিও নেই। সেই কারণেই চাল-চুলোহীন কেউ রাত কাটায় না ওখানটায়।

    চৌকো পার্কটার টয়লেটগুলোর পেছনে সাইকেলটা ঠেলে নিয়ে রাখল আকিও। সকালে বৃষ্টি হবার কারণে এখানকার মাটি বেশ নরম। ভেতরে কোন আলো জ্বলছে না।

    চারপাশে শেষবারের মতন নজর বুলিয়ে বাক্সটা হাতে নিয়ে প্রবেশপথের দিকে এগোলো আকিও। পুরুষ এবং মহিলা টয়লেটগুলোর সামনে গিয়ে দোটানায় পড়ে গেল কোন দিকে যাবে। শেষ পর্যন্ত পুরুষ টয়লেটই বেছে নিল। এতে কাজটা কোন ভবঘুরে মানুষের বলে চালিয়ে দেয়া সহজ হবে।

    বিশ্রি একটা গন্ধ নাকে এসে লাগল প্রথমেই। তবু বাক্সটা হাতে নিয়ে সামনে এগোলো। চেষ্টা করছে যতটা কম সম্ভব শ্বাস নেয়া যায়। টর্চ জ্বেলে একটা টয়লেটের দরজা খুললো ও। ভেতরটা ভীষণ নোংরা। একটা বাচ্চা মেয়েকে এখানে রেখে যাতে হবে ভাবতেই অপরাধবোধে ছেয়ে উঠছে মন। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।

    টর্চটা দাঁত দিয়ে চেপে ধরে বাক্স খুলে ভেতর থেকে মেয়েটাকে বের করলো। টয়লেট সিট থেকে যতটা দূরে সম্ভব বসার ভঙ্গিতে রেখে দিল বাচ্চাটাকে। দেখে মনে হবে বসে আছে সে। কিন্তু মেয়েটার শরীর থেকে হাত সরাতেই এক পাশে ঢলে পড়ল।

    টর্চের আলোয় আকিও খেয়াল করলো মেয়েটার পিঠে ঘাস লেগে আছে। আরেকটু হলে টর্চটা ফেলেই দিয়েছিল প্রায়। ওদের বাগানের ঘাস! পুলিশ এই আগাছা আর ঘাসগুলোকে আলামত হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

    ফরেনসিক বিদ্যা নিয়ে খুব বেশি কিছু জানে না ও। কিন্তু ঘাসগুলো কোন জাতের সেটা খুঁজে বের করতে পারলে, ওগুলো কোথায় জন্মেছে সেটা বের করাও নিশ্চয়ই কঠিন কিছু হবে না পুলিশের জন্যে। ওদের এলাকার সমস্ত বাড়ির উঠানের ঘাস ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করতে পারে তারা।

    অগত্যা ঘাসগুলো মেয়েটার শরীর থেকে সরাতে উদ্যোত হলো আকিও। স্কার্ট এবং চুলেও লেগে আছে কিছু। আকিও অবশ্য বুঝতে পারছে যে শেষ পর্যন্ত লাভ হবে না। বাক্সে লেগে থাকা ঘাসগুলোও সরিয়ে ফেলতে হবে।

    আবারো আতঙ্ক চেপে বসলো ওর চিত্তে। যতগুলো সম্ভব ঘাস তুলে নিয়ে টয়লেট প্যানে ফেলে দিল। মেয়েটার চুলগুলো ভালো করে পরীক্ষা করে দেখল। টানা কাজ করে যাওয়ায় আতঙ্কের কথা ভুলে গেল একসময়।

    কাজ শেষে ফ্ল্যাশ টানল কিন্তু পানি বেরুলো না। আরো একবার চেষ্টা করেও লাভ হলো না কোন।

    ছোট্ট টয়লেটটা থেকে বেরিয়ে সিঙ্কের দিকে এগোলো আকিও। কলের চাবি ঘোরানোর পর পানির সরু ধারা বেরিয়ে এল ভেতর থেকে। একহাতের গ্লাভস খুলে পানি ভরে নিল সেখানে। এরপর টয়লেট প্যানের কাছে গিয়ে ঢেলে দিল। খুব একটা লাভ হলো না।

    পরপর কয়েকবার করতে হলো কাজটা। বারবার গ্লাভসে পানি ভরতে ইচ্ছে না করায় শেষ পর্যন্ত আজলা ভরে নিয়ে গেল পানি। কস্মিনকালেও ভাবেনি যে এরকম একটা কাজ কখনো করতে হতে পারে ওকে। বাইরে থেকে কেউ দেখলে নিশ্চিত পুলিশে ফোন দেবে। এখন আর ভয় পাওয়ার মত অবস্থায় নেই আকিও। ওর পরিবারের অবস্থা এতটাই নাজুক যে হাল ছেড়ে দিলে জেলের ঘানি টানতে হবে।

    সব ঘাস ধুয়ে ফেলার পর কার্ডবোর্ডের বাক্সটা নিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। সাইকেলের কাছাকাছি পৌঁছে ভাঁজ করে ফেলল জিনিসটা। এখানে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে বাক্সটা, কিন্তু পুলিশের হাতে পড়লে আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার একটা সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। তাই ওটা হাতে নিয়েই সাইকেলে উঠে পড়লো আকিও।

    কেবল প্যাডেলে চাপ দিতে যাবে এসময় মাটির দিকে চোখ গেল ওর। সাইকেলের চাকার দাগ দেখা যাচ্ছে ওখানে।

    আরেকটু হলেই মস্ত একটা ভুল হয়ে যাচ্ছিল। সাইকেল থেকে নেমে পা দিয়ে দাগগুলো মুছে দিল যতটা সম্ভব। নিজের পায়ের ছাপও মুছতে ভুলল না। এরপর সাইকেলটা হাতে নিয়ে যেখান দিয়ে গেলে ছাপ পড়বে না সেরকম জায়গায় উঠে এলো সাবধানে।

    ওর পুরো শরীর ঘামে জবজবে। ভেজা শার্টটা লেপটে আছে পিঠের সাথে। অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা লাগছে এখন। কপাল চুয়ে ঘামের ফোঁটা চোখের উপরে চলে আসায় জ্বালাপোড়া করে উঠলো অকস্মাৎ। আরেকটু হলেই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল রাস্তায়।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.