Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    মোঃ বুলবুল আহমেদ এক পাতা গল্প630 Mins Read0
    ⤷

    ০১. জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

    দ্য লাস্ট ডন / মারিও পুজো / অনুবাদ : মোঃ বুলবুল আহমেদ

    উৎসর্গ

    ভার্জিনিয়া অ্যাল্টম্যান
    ডোমেনিক ক্লেরি

    .

    প্রস্তাবনা

    কুওগ ১৯৬৫

    ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে স্থির করলেন। সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধের ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। ইস্টার উৎসবের অব্যবহিত পূর্বের এক পাম সানডেতে ডন ক্লেরিকুজিও আমন্ত্রণ জানালেন যুক্তরাষ্ট্রে তার বৃহৎ গোষ্ঠীর পারিবারিক প্রধানদের। ডন জীবনের পরিশুদ্ধির জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ক্লেরিকুজিও নিতে যাচ্ছেন, তাতে বাদ পড়ল না তারই প্রবাহিত রক্তের দুটি শিশুও।

    ক্লেরিকুজিও আমন্ত্রণ জানালেন ভেগাসে জানাদু হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টকে এবং যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারী ডেভিড রেডফেলোকেও। মূলত ডন তার এই ব্যাপক প্রসারিত গোষ্ঠীর পারিবারিক প্রধানদের নতুন পথে উপাধিভুক্ত করতে চান।

    বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে শক্তিশালী মাফিয়া দলের প্রধান ক্লেরিকুজিও তার ক্ষমতা পরিত্যাগ করতে চান। তিনি ভাবছেন ক্ষমতা হস্তান্তরের এটাই সময় এবং নিশ্চিতভাবেই এটা অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল। তবে যে কোনো হাতে এই ক্ষমতায়নও হবে ভয়াবহ, বিষয়টি সম্পর্কে ক্লেরিকুজিও অনেকটা নিশ্চিত। তবে তাকে এটা করতে হবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সহৃদয়তাপূর্ণ মানসিকতায় এবং সর্বোপরি নিজের এতদিনকার অর্জিত ব্যক্তিগত সুনামের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, ডন তার ক্ষমতা হস্তান্তর বা পরিত্যাগের বিষয়টি করতে চান তার আপন আস্তানায়।

    ডন ক্লেরিকুজিও’র আস্তানাটি কুওগ-এ কুড়ি একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এই আস্তানার চারদিক ১০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন, লাল ইটের দুর্ভেদ্য দেয়াল তার ওপর কাঁটা তারের টানাবেড়া, বৈদ্যুতিক সংযোগও দেয়া হয়েছে তাতে। এই দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মাঝে ডনের আবাসন। অদূরে তার তিন পুত্রের তিনটি বাড়ি এবং বিশ্বস্ত জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর জন্য সব মিলিয়ে আরো কুড়িটি ঘর নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন মাফিয়া ডন ক্লেরিকুজিও নিবাস।

    পাম সানডের এই বিশেষ দিনে আমন্ত্রিত অতিথিদের আসার আগেই উন ও তার পুত্ররা এই কুওগ আস্তানার প্রধান ম্যানসনের ঠিক পেছনে বাগান বাড়িতে বসে আলোচনা করছিলেন। তাদের মাঝে ছিল মাটির ওপর স্থায়ীভাবে বসানো লৌহশক্ত সাদা টেবিল, আরো মাথার ওপর লোহার জালের ছাদ।

    ডনের জ্যেষ্ঠপুত্র জর্জিও’র বয়স ২৭ বছর। ইংলিশ জেন্টেলম্যানের মতো ছিপছিপে গড়ন। চেহারায় নিষ্ঠুরতার একটা ছাপ। বিশেষ করে তার নাকের নিচে মোছটুকু চেহারায় এই ক্রভাব এনে দিয়েছে। পরিচ্ছন্ন ও সদ্য তৈরি করা পরিধেয় পড়ে মুখে এক বিষণ ভাব নিয়ে জর্জিও বসে ছিল উন ক্লেরিকুজিও’র সবচেয়ে কাছে।

    ডন জর্জিওকে নির্দেশ দিলেন যে জর্জিও যেন হোয়ার্টন স্কুলে ব্যবসা সংক্রান্ত পড়াশোনার জন্য আবেদন করে। সেখানে আইনানুসারে বিভিন্ন জটিলতার ফাঁক-ফোকরে অর্থ চুরির বিভিন্ন কলাকৌশল যাতে সে শিখতে পারে এটাই চান ডন।

    বাবার এই পরিষ্কার নির্দেশের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কোনো প্রশ্নই করল না জর্জিও। অবশ্য গুরুজনের কোনো নির্দেশের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক মন্তব্য করা ডন পরিবারের রয়্যাল নিয়মের পরিপন্থী। জর্জিও বাধ্য ছেলের মতো মাথা হেট করে একরকম সায় দিয়ে গেল।

    এরপর ডন তার ভগ্নি-পুত্র জোসেফ পিপি ডি লিমার দিকে তাকালেন। পিপিকে তিনি তার ছেলেদের মতোই ভালোবাসেন। যদিও পিপি তার রক্তের সম্পর্কের নয়। তাকে ভালোবাসার কারণ হচ্ছে, ডনের প্রয়াত বোনের পুত্র পিপি। এছাড়া সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়লাভের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে পিপি। এক কথায় সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে গ্রেট জেনারেল পিপির কারণেই জয়লাভ সম্ভব হয়।

    তুমি ভেগাসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। সেখানেই তুমি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবে। ডন গম্ভীর নির্দেশ ছুঁড়ে দিলেন পিপির দিকে। তারপর শুরু করলেন এই নির্দেশের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে। তিনি বললেন, তুমি সেখানে আমাদের জানা হোটেলের আয়-ব্যয় দেখাশুনা করবে। এখন আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছি। সে কারণে কুওগে তোমার তেমন কাজ নেই। তবে তুমি অবশ্যই আগের মতোই আমাদের পরিবারের পক্ষে মুগুর হয়ে থাকবে।

    ডনের কথায় পিপি হয়তো খুশি হতে পারেনি পিপির দিকে তাকিয়ে ডন বুঝতে পারলেন। এবার ডন তার উদ্দেশ্য খোলাসা করে বললেন, এই পরিবারের বাতাবরণ তোমার স্ত্রী ন্যালিনির জন্য উপযুক্ত নয়। সে এই ব্রঙ্কস এনক্লেভ-এ বাস করতে পারবে না। ডন বলে চললেন, আমার ধারণা, ন্যালিনি সবার চেয়ে অতিমাত্রায় আলাদা। এখানে সে কোনোমতেই খাপ খাওয়াতে পারবে না। সবার কাছে তিও হতে পারে। তার চেয়ে বরং এ পরিবেশ থেকে দূরে গিয়ে তোমরা নতুন জীবন শুরু কর।

    ডন পিপির উদ্দেশ্যে যে কথাগুলো বললেন, তার হয়তো সবটাই সত্য। তবে শুধুমাত্র এ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্য উনের নয়। ডন আরো ব্যক্তিক্রমী তিনি অন্য কোনো বৃহ উদ্দেশ্যে এমন পরিকল্পনা আটছেন। অন্তত পিপির মতো একজন বীরযোদ্ধাকে ক্লেরিকুজিও পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ডনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ডন জানেন ব্রঙ্কস এনক্লেভে পিপি যদি মেয়রের জন্য চেষ্টা করে তবে সে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী মেয়র হবে। ডন যখন জীবিত থাকবেন না তখন তার অনুপস্থিতিতে ডন-পুত্রদের জন্যও পিপি হবে অন্যতম রক্ষক।

    পিপির উদ্দেশ্যে ডন এবার স্পষ্ট বললেন, পশ্চিমে তুমিই হবে আমার অন্যতম প্রতিনিধি। ডন বললেন অচিরেই তুমি ধনী হয়ে উঠবে, তবে এর জন্য স্পষ্ট তোমার কিছু কাজের সাথে জড়িত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

    লাস ভেগাসের একটি বাড়ির দলিল পিপির হাতে তুলে দিলেন ডন। এরপর ডন তার কনিষ্ঠ পুত্রের দিকে দৃষ্টি দিলেন।

    ২৫ বছরের যুবক ভিনসেন্ট ক্লেরিকুজিও ত্রি-রত্নের সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছে এই ভিনসেন্ট। ভিনসেন্ট শুধু অবস্থানগত বা বয়েসের পার্থক্যেই কনিষ্ঠ নয় উচ্চতাতেও বড় দু ভাইয়ের চেয়ে খাটো, তবে গড়নে-গঠনে বেশ শক্ত। ভিনসেন্টের আরেকটি প্রশংসিত বিষয় হচ্ছে তার পরিমিত ব্যবহার ও সহানুভূতিশীল হৃদয়।

    ভিনসেন্টের রয়েছে আরেকটি মজার গুণ। খুব ছোটবেলায়, যখন সে তার মায়ের হাঁটু সমান তখন থেকেই মায়ের কাছে রপ্ত করেছিল বিভিন্ন ক্ল্যাসিক ইটালীয় খাবার তৈরির কৌশল। সেই মমতাময়ী মা যখন মারা গেলেন তখন ভিনসেন্ট কিশোর মায়ের মৃত্যুতে খুব কেঁদেছিল সে। মায়ের অভাববোধ কাটিয়ে উঠতে তার অনেক দিন সময় লেগেছিল।

    ডন ভিনসেন্টের দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকালেন। হাসিমুখে বললেন, তোমার ভবিষ্য সম্পর্কেও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বললেন, এবং ভাবছি, তুমি তোমা, লব্ধ পথেই এগিয়ে যাবে। নিউইয়র্কে তুমি সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট খুলবে। এর জন্য খরচের কোনো ত্রুটি করবে না। আমি চাই, তুমি দেখিয়ে দাও যে, ফ্রেঞ্চ খাবার সবখানেই পাওয়া যায়।

    ডনের এমন নির্দেশ শুনে পিপিসহ উপস্থিত ডনপুত্ররা হেসে উঠল। ভিনসেন্টও হেসে ফেলল সবার সাথে। ডনের চেহারাও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি হাসি হাসি মুখেই ভিনসেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন, রান্না শিক্ষার জন্য তুমি ইউরোপীয় কোনো স্কুলে এক বছর মেয়াদী কোর্সে ভর্তি হবে।

    ভিনসেন্ট বাবার সিদ্ধান্তে মনে মনে খুশি হলেও ইউরোপীয় স্কুলে প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি ঠিক তার মনোপুত হলো না। ডনের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে বিড়বিড় করে সে বলল, তারা আমাকে কি শেখাবে? ভাবখানা এমন যে, ভিনসেন্ট তাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে।

    ডন তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন, তোমার অহমিকার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে, তবে … একটু থেমে ডন আবার বললেন, তবে তোমার প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি আসছে এজন্য যে, তুমি যথাযথ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে সক্ষম হবে। এর জন্য তোমার শিক্ষার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ভিনসেন্টের ভবিষ্য সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বললেন, কে জানে একদিন হয়তো তুমি হবে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টের মালিক। এ ব্যাপারে জর্জিও তোমাকে অর্থের যোগান দেবে।

    সবশেষে ডন তাকালেন তার দ্বিতীয় পুত্র পেটি-এর দিকে। পেটি হচ্ছে ডনের সবচেয়ে হাসিখুশি ও সদা-উৎফুল্ল পুত্র। পেটি তার ছাব্বিশ বছর বয়সেও একজন বালকের মতোই উচ্ছল সদালাপী ও অমায়িক। তবে উন জানেন, এই উচ্ছল পুত্রটিকেও তার পূর্বপুরুষ সিসিলীয় ক্লেরিকুজিও’র ধারায় ফিরে আসতে হবে।

    পেটি ডন বললেন, এখন যেহেতু পিপি পশ্চিমের দায়িত্ব নিচ্ছে, তুমি ব্রঙ্কস এনক্লেভের মেয়র হবে। তোমার কাজ হবে পরিবারের জন্য তুমি সব সৈন্য সরবরাহ করবে। এছাড়াও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি কিনে দেব। তুমি নিউইয়র্কে নির্মাণ করবে আকাশচুম্বী উঁচু উঁচু দালান। রাষ্ট্রের পুলিস ব্যারাকগুলোও হতে হবে তোমার প্রতিষ্ঠানের তৈরি। শহরের রাস্তাগুলোও ইটপাথর দিয়ে মসৃণ করে সাজাতে হবে তোমাকেই।

    ডন বলে চললেন, এই ব্যবসা প্রায় নিশ্চিত। তবে আমি আশা করব এমন প্রতিষ্ঠান তুমি নিজ যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠা করবে। তোমার সৈন্য-সামন্তরা হবে তোমার বৈধতাপ্রাপ্ত বা আইনসম্মত চাকুরে। আরো এর জন্য তোমাকে হতে হবে প্রচুর টাকার মালিক।

    এই লক্ষ্যে প্রথমেই তুমি হবে এমন একটি কোম্পানি নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরে। তবে মনে রেখো, তোমার প্রাথমিক কর্তব্য হচ্ছে পরিবারের সৈন্য সরবরাহ ও তাদের ওপর তোমার কমান্ড পরিচালনা করা।

    একটু থেমে জর্জিও’র পূর্ণ মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য তার নাম ধরে ডাকলেন ডন, জর্জিও।

    ডন বললেন, তোমাকেই আমার উত্তরসূরি নির্বাচিত করছি। তবে মনে রেখো শুধুমাত্র পরিবারের ওপর আসন্ন বিপদের সময় তুমি ও ভিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য তোমাদের সক্রিয় থাকার প্রয়োজন নেই।

    ডন বললেন, পরবর্তী প্রজন্মের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। তোমার সন্তান-সন্ততি, আমার সন্তান-সন্ততি, এমনকি ছোট্ট ডেন্টি ও ক্রকসিফিজিও যেন এই মাফিয়া পরিবেশে বেড়ে না ওঠে।

    আমরা ধনী নিঃসন্দেহে। দীর্ঘদিন আমাদের জীবন হুমকির মাঝে রাখতে চাই না। আরো এই রিস্কের মধ্যে আমরা আমাদের প্রতিদিনের রুটিটুকুও রোজগার করতে চাই নাই। আমাদের পরিবার এখন কেবল সকল পরিবারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেই কাজ করে যাবে। আমরা চাহিদানুসারে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন ও সহযোগিতা যোগাব, ঝগড়া-ফ্যাসাদে মধ্যস্থতা করে যাব। তবে এর জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত কার্ড থাকতে হবে। আমাদের থাকবে আমি এবং আমরা অবশ্যই সকলের অর্থ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করব। এর জন্য অবশ্য তারাও আমাদের গলা ভিজিয়ে যাবে।

    অকস্মা ডন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। কি যেন ভাবতে লাগলেন। উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া চোখ দুটো। কণ্ঠে প্রত্যয়ের সুরে বলতে শুরু করলেন– এখন থেকে কুড়ি-ত্রিশ বছর আমরা আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তর্হিত হয়ে একটি আইনসম্মত বৈধ পৃথিবীতে প্রবেশ করব এবং আমরা আমাদের সম্পদগুলো তখন নির্দ্বিধায়, ভীতিহীন চিত্তে উপভোগ করতে সক্ষম হবো। আমাদের পরিবারের ঐ দুটি শিশুও যাদের ধর্মীয় দীক্ষায়-দীক্ষিত করতে যাচ্ছি, তাদেরকে যেন আমাদের বর্তমান অপরাধী জীবনের দায়ভার বহন করতে না হয়। আমাদের জন্য তারা যেন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে না ওঠে।

    তবে কেন এই ব্রঙ্কস এনক্লেভ ধরে রাখা? প্রশ্ন করল জর্জিও।

    ডন বললেন, আমরা কোনো এক সময় ধার্মিক হয়ে যাব বলে বিশ্বাস করি। তার আগে শহীদ হয়ে যেতে চাই না।

    এক ঘন্টা পর ডন ক্লেরিকুজিও তার বাড়ির বেলকনিতে উঠে এলেন। তারপর সেখান থেকে তাকিয়ে থাকলেন নিচে উৎসবমুখর আয়োজনের দিকে।

    বেলকনি থেকে নিচের বিশাল লনটি যেন মনে হচ্ছিল পিকনিক-টেবিল দিয়ে কার্পেটের মতো বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। টেবিলগুলো ঘিরে প্রায় দুশর মতো আমন্ত্রিত অতিথি। টেবিল ঘিরে আমন্ত্রিত অতিথিদের দৃশ্যটি বেলকনি থেকে ডনের মনে হচ্ছিল যেন এক-একটি মুকুট। অতিথিদের অনেকেই ব্রঙ্কস এনক্লেভের সেনা। এই উৎসব মুখর আয়োজনে চাঞ্চল্য থাকলেও ডন-এর মাঝে কোনো প্রাণ খুঁজে পেলেন মা–মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন মেকি, সাজানো।

    সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে জয় পেলেও ডন ক্লেরিকুজিওকে মূল্য দিতে হয়েছিল অনেক। সে লড়াইয়ে ডন হারিয়েছিলেন তার সবচেয়ে স্নেহের পুত্র সিলভিয়োকে। তার কন্যা রোজ ম্যারি হারিয়েছে স্বামীকে।

    উদাস দৃষ্টিতে ডন তাকিয়েই রইলেন নিচের উৎসবমুখর লনটির দিকে। লনে ফেলা দীর্ঘ টেবিল ঘিরে বসে আছেন অতিথিরা। টেবিলের ওপর সাজানো গাঢ় লাল রঙের সুরাভর্তি ক্রিস্টাল গ্লাস। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল সাদা বাটিতে পূর্ণ সুপের লাইন। বিভিন্ন ধরনের পাস্তা, বারকোশে সাজানো বিভিন্ন রকমের স্লাইস করা মাংস-পনির এবং সতেজ ও মচমচে বিভিন্ন আকারের ব্রেড। এমন উৎসবে ভন ক্লেরিকুজিও অবশ্য নেপথ্যে ছোট-খাটো একটি ব্যান্ড দলের সফট মিউজিক পরিবেশেনেরও অনুমতি দিয়েছিলেন।

    লনে সাজানো পিকনিক টেবিলগুলোর মাঝামাঝি একটি স্থানে গিয়ে ডনের দৃষ্টি স্থির হলো। শিশুবহনকারী ছোট দোলনা-গাড়িতে মোটা নীল পশমী কাপড়ে মোড়া দুটি শিশু। তিনি দেখলেন, ধর্মীয় পথের জন্য তাদের যখন পবিত্র পানির ছটা দেয়া হচ্ছিল, তখন, শিশু দুটি মোটেও ভয় পায়নি। তাদের পেছনেই ছিল তাদের দুই মা- রোজম্যারি এবং পিপির স্ত্রী ন্যালিনি ডি লিনা। তাদের সন্তান দুটির নাম ডেন্টি ক্লেরিকুজিও ও ক্রকসিফিজিও ডি লিনা। বেলকনি থেকে শিশু দুটির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মনে মনে ভাবতে লাগলেন তাদের যেন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে না হয়, এই নিশ্চয়তার জন্য তিনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন। ধর্মের পথে ধর্মের জন্যই আজকে তাদের নিয়ে এই আয়োজন। ডনের এই পদক্ষেপ যদি সফল হয় তবে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য একটি সুন্দর সমাজে তারা প্রবেশ করতে পারবে। তিনি অত্যন্ত কৌতূহলের সাথে লক্ষ্য করলেন যে, এই জনসমাবেশের একটি লোকও শিশু দুটির প্রতি অনুগত্য স্বীকার করছে না।

    তিনি বেলকনিতে দাঁড়িয়েই দেখতে পেলেন ভিনসেন্টকে। গ্রানাইটের মতো কঠোর মুখে সে ছোট ছোট বাচ্চাদের হটডগ খাওয়াচ্ছে। শিশুদের জন্য এই আইটেমটি ভিনসেন্ট নিজের হাতেই তৈরি করেছে। হটডগ রাখার ঘোড়া গাড়িটির সাথে নিউ ইয়র্কের পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ঘোড়া গাড়িটির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে ভিনসেন্টের গাড়িটি আকারে আয়তনে একটু বড় এই যা। গাড়ির উপরিভাগে বসানো রয়েছে উজ্জ্বল রঙের একটি ছাতা। ভিনসেন্ট তার গাড়ি থেকে ভালো ভালো খাবারগুলো তুলে আনছে। তার পরণে রয়েছে সাদা এপ্রোন। হটডগের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই সে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে হটডগ তৈরি করে যাচ্ছে। লোভনীয় এই খাবারটি পেতে প্রত্যেক শিশু ভিনসেন্টের গালে একটি করে চুমু দিচ্ছে।

    বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভিনসেন্ট দেখতে কঠোর বা ককৰ্শ হলেও প্রকৃত পক্ষে সে বেশ সহানুভূতিসম্পন্ন যুবক। ডনের পুত্রদের মধ্যে ভিনসেন্টই সবচেয়ে দয়ালু প্রকৃতির বিষয়টি ডন ক্লেরিকুজিও ভালোভাবেই জানেন।

    সেন্সর ক্যামরার মতো ডনের চোখ দুটো প্রত্যক্ষ করছিল লনের উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের ওপর। তার চোখ পড়ল বকসি কোর্টের ওপর। সেখানে দেখা গেল, পেটি, পিপি ডি লিনা, ভারজিনো ব্যালাজো ও আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  সাথে বকসি বল খেলায় মত্ত। পেটি স্বভাবগত জোকার। পেটির এই স্বভাব ডনের পছন্দ নয়। জুনের মনে হয় পেটির এই স্বভাব যে কোনো সময় তার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এমন কথা ভাবতে ভাবতেই ডন দেখতে পেলেন বকসি গেমটি পেটির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সে তাৎক্ষণিক তা ভণ্ডুল করতে বলটি প্রথম হিটেই পিসে পাঠিয়ে দিল।

    ভারজিনো ব্যালাজো ক্লেরিকুজিও পরিবারের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ডনের আন্ডার বস। বকসি-বলের গেমটিতে অত্যন্ত তেজস্বী এই ব্যালাজো পেটিকে মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। ডন জানেন, তার পুত্র পেটি জন্মগত একজন কৌশলী গুপ্তঘাতক এবং আমোদপ্রিয় ব্যালাজো তার আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিশ্চিত সুনাম রয়েছে।

    তবে এদের কারো সাথেই পিপির কোনো তুলনা চলে না।

    ডন দেখতে পেলেন অদূরে একদল মহিলা ক্ষণে ক্ষণে পিপির ওপর চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। তবে এদের দলে নেই সেই দুই মা রোজম্যারি ও ন্যালিনি।

    সত্যিকার অর্থেই পিপি একজন সুদর্শন মানুষ। ডনের মতোই উঁচু-লম্বা সুপুরুষ। পেশিবহুল শক্ত শরীর–সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় হ্যান্ডসাম পুরুষ। শুধু মহিলারাই নয় উপস্থিত অনেক পুরুষও তাকে লক্ষ্য করছিল। এদের মধ্যে অনেকে ব্রঙ্কস এলক্লেভ থেকে আসা তারই সৈন্য। তারা দেখছিল পিপির নির্দেশনা, শারীরিক অভিব্যক্তির নমনীয় অ্যাকশন। অনেকেই তাকে লিজেন্ড হিসেবেই জানে যে কোনো পুরুষের চেয়ে তাকে সবচেয়ে কোয়ালিফাইড মানব এবং শক্ত-সামর্থ্য, পেটানো শরীরের জন্য তাকে দি হ্যাঁমার নামেও ডাকা হয়।

    ডেভিড রেডফেলো, একজন যুবক। গোলাপের পাপড়ির মতো চিবুক। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মাদক ব্যবসায়ী। দোলনা-গাড়িতে রাখা শিশু দুটির গাল টিপে আদর করছিল রেডফেলো।

    বকসি-বলের অদ্ভুত এ খেলায় অবশেষে আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট হাঁপিয়ে উঠল। তার পরিষ্কার পরিধেয় জ্যাকেট ও টাই ময়লায় মাখামাখি হয়ে গেল। গ্রোনিভেল্টের  বয়স ডনের বয়সের কাছাকাছি, প্রায় ষাটের মতো।

    আজকের এই দিনটির মাধ্যমেই ডন ক্লেরিকুজিও তার পরিবারের সবার জীবন পরিবর্তন করে ফেলতে চান–তিনি আশা করছেন ভবিষ্যতের পথ মঙ্গলময় হয়ে উঠবে।

    জর্জিও বেলকনিতে তার বাবার কাছে উঠে এলো। মনে করিয়ে দিল আজকের দিনের প্রথম মিটিংয়ের কথা।

    ডন ম্যানশনের ছোট একটি কক্ষে উপস্থিত হয়েছে শীর্ষস্থানীয় দশ জন মাফিয়া প্রধান। জর্জিও ইতিমধ্যেই ক্লেরিকুজিও’র প্রস্তাবনা সম্পর্কে তাদের জানিয়ে দিয়েছে। ডনের মাথা থেকে উদ্ভূত এই পরিশুদ্ধির বিষয়টি সভার জন্য নতুন ও বিশেষ বিষয় হলেও তারা ঠিক সমর্থন করতে পারছে না। এর কারণ ক্লেরিকুজিও’র সাথে তাদের প্রকৃত সামাজিক সম্পর্ক নেই। আর তাই তারা তাদের পথেই অগ্রসর হতে চায়।

    ডনের এই সভাকক্ষটি জানালাবিহীন। ছোট্ট এই ডেন আকারের কক্ষে উন্নত মানের আসবাব। তাছাড়া কক্ষের কোণে রয়েছে একটি স্যাঁতসেতে পানশালা। কক্ষের মাঝামাঝি প্রায় কালো মার্বেল পাথরের কনফারেন্স টেবিল ঘিরে আসন গ্রহণকারী দশ জনের চেহারায় একটি বিষণ্ণ ভাব ফুটে উঠেছিল। ইতিমধ্যেই ডন প্রবেশ করলেন এবং সবাইকে অভিবাদন জানান। উপস্থিত মাফিয়া প্রধানরা ডন ক্লেরিকুজিও’র মুখ থেকে কিছু শোনার আশায় উদগ্রীব হয়ে উঠল।

    ডন ক্লেরিকুজিও’র অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আর সামান্য কিছু সময় অপেক্ষা করার অনুরোধ জানালেন। আর তার পুত্রের প্রতি নির্দেশ দিলেন এ সভায় ভিনসেন্ট, ডনের এক্সিকিউটিভ অফিসার ব্যালাজো ও পিপি ডি লিনাও যেন উপস্থিত হয়। কাঙ্ক্ষিত জনেরা যখন সবাই উপস্থিত হলো, তখন জর্জিও শীতল ও খসখসে কণ্ঠে এই সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করল।

    আর এরই ফাঁকে ফাঁকে ডন তার সামনে উপস্থিত সকল মাফিয়া সদস্যদের অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি ভাবছিলেন, তার সামনে বসা অবৈধ সমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই মানুষগুলো জনগণের সত্যিকার প্রয়োজনে যথাযথ অবদান রাখতে পারে।

    ডন এবার শুরু করলেন তার বক্তব্য—আমার পুত্র, জর্জিও আপনাদের কাছে সবই বর্ণনা করেছে। আপনারা কিভাবে কাজ করবেন, সে সম্পর্কে তার বক্তব্য নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়েছে আপনাদের কাছে।

    ডন বললেন, আমার প্রস্তাবটি মূলত এটাই। অপরাধ জগতের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে আমি অবসর নিতে যাচ্ছি। আর আমার নিউইয়র্কের সমস্ত কর্মকাণ্ড আমি তুলে দেব আমার পুরনো বন্ধু ভারজিনো ব্যালাজোর হাতে। তিনি তার নিজের মতো করে ফ্যামিলি গঠন করবেন। ক্লেরিকুজিও’র সমস্ত স্বাধীনতা ভোগ করবেন তিনি। আর দেশের অবশিষ্টাংশে আমার ইউনিয়ন, পরিবহন, এলকোহল, টোবাকো ও ড্রাগের যেসব ব্যবসা ও কর্মকাণ্ড রয়েছে সেসবও পরিত্যাগ করে আমি আপনাদের ফ্যামিলির মাঝে বিলিয়ে দেব। তবে সবকিছুর প্রতি আমার আইনানুগ অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে। যদি আমি কখনো ফিরে আসি তখন সেসব আয়-উপার্জনের অধিকারও আমাকে আপনারা দেবেন। ব্যালাজোর কর্তৃত্বে আপনারা নিরাপদ পন্থা অবলম্বন করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাবেন। আরেকটি বিষয়, সরকারকে আয়ত্বে রাখতে আপনাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না হয়তো। এর জন্য সরকারের সাথে পাঁচ শতাংশ কমিশন আমাদের বরাদ্দ রাখতে হবে। বিষয়টি আমি ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি।

    ডনের এই চুক্তি ছিল উপস্থিত দশ মাফিয়া প্রধানের জন্য স্বপ্নের। তারা মনে মনে বেশ খুশি হলো। ক্লেরিকুজিও’র জন্য তাদের খুশি বা কৃতজ্ঞাবোধের কারণ–ক্লেরিকুজিও’র চক্রটি যখন গোটা অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণে অগ্রসর কিংবা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছিল–এমন সময়েই ক্লেরিকুজিও অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন।

    ভিনসেন্ট আমন্ত্রিত অতিথিদের ওয়াইন পরিবেশন করতে শুরু করল। অতিথিরা তাদের মদপূর্ণ গ্লাসগুলো উঁচিয়ে ডনের অবসর গ্রহণে তার সুস্বাস্থ্য কামনা করল।

    .

    মাফিয়া ডনের বিদায় অনুষ্ঠানের পর সেই সভাকক্ষটিতে ডেভিড রেডফেলোর সাথে দেহরক্ষীর মতো প্রবেশ করল পেটি। ডনের বিপরীত পাশে চামড়ার নির্মিত একটি শূন্য আর্মচেয়ারে বসল। ভিনসেন্ট তাৎক্ষণিক তার হাতে তুলে দিল একটি সুরার গ্লাস।

    রেডফেলো দাঁড়াল মাফিয়া প্রধানদের আসন থেকে একটু পৃথক দূরত্বে। এর কারণ সে সবসময়ই ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রমী সে তার দীর্ঘ চুলের জন্য। শুধু তাই নয়, এ সময় তার পোশাকও ছিল ব্যতিক্রম। তার কানে শোভা পাচ্ছিল হীরার ইয়ার রিং, পরনে ছিল ডেনিম জ্যাকেট এবং পরিষ্কার প্রেসড জিনস। ব্যতিক্রমী এই রেডফেলোর ব্যতিক্রম হওয়ার আরো একটি কারণ তার শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ান রক্ত। রেডফেলোর প্রতি আকর্ষণের অন্য কারণগুলোর মধ্যে তার স্বর্ণালী চুল ও স্বচ্ছ নীল দুটি চোখ, সেই সাথে সদা প্রাণোচ্ছল অভিব্যক্তি।

    এই ব্যতিক্রমী রেডফেলোর প্রতি ডন যারপরনাই কৃতজ্ঞ ও ঋণী। এর কারণ রেডফেলো হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে প্রমাণ করে দেখিয়েছে টাকা দিয়ে ড্রাগের মতো ব্যবসারও বৈধ অনুমোদন সক্ষম।

    ডেভিড, ডেভিডের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন ডন ক্লেরিকুজিও। তাকে বললেন, তুমি তোমার ড্রাগ ব্যবসা থেকে অবসর গ্রহণ করছে। তোমার জন্য আমার কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আছে …।

    রেডফেলো কোনো আপত্তি জানাল না। তবে প্রশ্ন করল, সেটা এখনই কেন?

    নাম্বার ওয়ান…, ডন প্রতি উত্তরে বললেন, সরকার আমাদের এই ব্যবসায় ছাড় দিতে অনেক সময় উৎসর্গ করেছে। যে কোনো সময় এ ব্যবসায় সঙ্কট দেখা দিতে পারে। হতে পারে, তোমার বাকি জীবনটা অত্যন্ত দুঃসহ ও দুশ্চিন্তাযুক্ত হয়ে উঠবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমার পুত্র পেটি এবং তার সৈন্য-সামন্তরা তোমার দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এটা আমি বেশি দিন অনুমোদন দিতে পারি না। কলম্বিয়ানরা খুব সহিংস, বোকার মতো এক হয়ে ও বন্য হয়ে থাকে। তাদের হাতেই এ ব্যবসা ছেড়ে দাও। তুমি এখান থেকে অবসর নিয়ে ইউরোপ চলে যাও। আমি সেখানে তোমার সুরক্ষার ব্যবস্থা করব। তুমি ইতালির একটি ব্যাংক কেনার কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং অবস্থান করবে রোমে। ইউরোপে তুমি আরো অনেক ব্যবসা ফেঁদে বসতে পারো।

    চমৎকার, রেডফেলো বিস্মিত হলো, আমি ইতালির ভাষাও জানি না, আর ব্যাংকের ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতাও আমার নেই।

    তুমি সবই শিখবে। ডন প্রতিউত্তরে বললেন, এবং রোমে তুমি সুখী জীবনযাপন করবে। অথবা তুমি যদি চাও, এখানেও থাকতে পারো। তবে এক্ষেত্রে হয়তো তুমি খুব বেশি দিন আমার সমর্থন গ্রহণ করতে পারবে না। এখন তোমার পথ তুমিই বেছে নাও।

    ডনের এমন শর্তে রেডফেলো প্রশ্ন করল। আমার এই ড্রাগ ব্যবসার ভার কে নিচ্ছে? আমি কি তবে এটা কিনতেও সক্ষম হব না?

    কলম্বিয়ানরা তোমার ব্যবসার দায়িত্ব নেবে। ডন বললেন, ব্যবসাটি সুরক্ষিত নয়, সেটা হচ্ছে ইতিহাসের স্রোত। তবে সরকার তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। এখন বলল, হ্যাঁ অথবা না?

    রেডফেলো কিছুক্ষণ চিন্তা করল। তারপর আকস্মিক হেসে ডনের উদ্দেশে বলল, তাহলে আমাকে কিভাবে শুরু করতে হবে?

    জর্জিও তোমাকে রোমে নিয়ে আমার লোকদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবে। ডন রেডফেলোর উদ্দেশ্যে আরো বললেন, এবং পুরো একটা বছর সে তোমাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাবে।

    রেডফেলোর দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে ডন তাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, আমার উপদেশে সম্মতি দেয়ায় তোমাকে ধন্যবাদ। আমরা অংশীদার হিসেবেই থাকব। বিশ্বাস করো, এটা হবে তোমার জন্য একটা উন্নত জীবন।

    .

    ডেভিড রেডফেলো সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। ডন তার পুত্র জর্জিওকে পাঠালেন আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টকে ডেকে আনতে।

    ভেগাসে জানাদু হোটেলের মালিক হিসেবে গ্রোনিভেল্ট ছিলেন বর্তমানে ক্লেরিকুজিও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সান্তাডিও ফ্যামিলির নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষায়।

    কক্ষে প্রবেশ করল গ্রোনিভেল্ট। মি. গ্রোনিভেল্ট। তাকে উদ্দেশ্য করে ডন বললেন, আপনি আমার প্রোটেকশনে জানাদু হোটেল পরিচালনা করে যাবেন। আপনার সম্পত্তি ও নিজের সুরক্ষার জন্য চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

    হোটেলের আয় থেকে একান্ন শতাংশ আপনি রাখবেন যথাযথ নিয়মে। সান্তাডিও ও একই পরিবারে পরিচয়ে অবশিষ্ট ঊনপঞ্চাশ শতাংশের মালিকানা আমারই থাকবে। এ ব্যাপারে আপনি সম্মত আছেন তো?

    গ্রোনিভেল্ট তার বয়স অনুপাতে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও শারীরিক দিক দিয়ে বলিষ্ঠ ব্যক্তি। বেশ কৌশল ও সতর্কতা অবলম্বন করে তিনি ডনের  প্রস্তাবের প্রতিউত্তরে বললেন, যদি আমি থাকি, তবে আমি অবশ্যই একই কর্তৃপক্ষের সাথে হোটেলটি পরিচালনা করব। অন্যথায় আমি আমার অংশীদারিত্ব আপনার কাছেই বেচে দেব।

    সোনার খনি বেচবেন! চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন ডন গ্রোনিভেল্টের  দিকে। অবিশ্বাস্য সুর ফুটে উঠল ডনের কণ্ঠে। তিনি বললেন, না না, আমাকে ভয় পাবেন না। আমি মোটের ওপর একজন ব্যবসায়ী। সান্তাডিও যদি পরিমিত বা সংযত হয়ে ওঠে তবে তো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাই কখনো ঘটবে না।

    অস্তিত্ব আর বেশি দিন নেই। তবে আপনি এবং আমি দায়িত্ববান। আমার প্রতিনিধি ইতিমধ্যেই সান্তাডিও’র কাছে কিছু দাবির প্রস্তাব দিয়েছে। জোসেফ ডি লিনা, পিপি তার সম্মানে ছাড় দিতেও প্রস্তুত। পিপি হবে পশ্চিমে আমার প্রতিনিধি ব্ৰুগলিওন। এর জন্য বছরে সে সেই হোটেলের আয় থেকে ভোগ করবে দশ লক্ষ। যদি আপনি কখনো কোনো বিপদের আঁচ করেন তবে সোজা চলে যাবেন তার কাছে। অবশ্য আমার ধারণা আপনার যে ব্যবসা, তাতে পদে পদেই আপনাকে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।

    গ্রোনিভেল্ট, একজন দীর্ঘমানব, সেই তুলনায় বেশ ধীর। ডনের উদ্দেশ্যে তিনি এবার প্রশ্ন করলেন, আপনি আমাকেই কেন এত সমর্থন দিচ্ছেন? আপনার তো অন্যান্য আরো অনেক লাভজনক ক্ষেত্র আছে।

    ডন ডোমেনিকে গ্রোনিভেল্টের  প্রশ্নে গম্ভীর হলেন। ধীর-স্থীর ও আরো ব্যক্তিত্বের আভা কণ্ঠে এনে বললেন, এর কারণ আপনি একজন জিনিয়াস। বিশেষত আপনার এই ক্ষেত্রটিতে। আমি জানি লাস ভেগাসে অনেকেই আপনাকে জিনিয়াস ভাবে এবং এটা প্রমাণ করতে আমিই আমার কিছু বিষয় আপনাকে ফিরিয়ে দেব।

    গ্রোনিভেল্ট এ কথা শুনে হাসলেন।

    আপনি আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন—আমার হোটেল। এছাড়া আর কি এমন গুরুত্বপূর্ণ থাকতে পারে? গ্রোনিভেল্ট বললেন।

    ডন তার বদান্যতায় স্মিত হেসে পলকেই ভাবতে লাগলেন গ্রোনিভেল্ট যতই বিপজ্জনক মানুষ হোক না কেন তার বিশেষ ক্ষমতা এমন যে কোনো মানুষ আকস্মিক তার সাথে সাক্ষাতে পরিতপ্ত হবে।

    ডন বললেন, নাভাদা গেমিং কমিশনের পরবর্তী নিয়োগে আপনি আপনার নাম দাখিল করতে পারেন। সেখানে একটি ভ্যাকেনিস আছে।

    গ্রোনিভেল্ট তার জীবনে খুব কম সময় চমৎকৃত হয়েছে। এমন আকস্মিক প্রাপ্তির ঘটনা তার জীবনে খুব কম। তবে আজকে ডনের কাছ থেকে এই প্রাপ্তি অবশ্যই অনাকাক্ষিত। গ্রোনিভেল্ট মুগ্ধ হলেন। তিনি এতই আনন্দিত হলেন যে, ভবিষ্যতে যদি তার কাছ থেকে হোটেল কেড়েও নেয়া হয় তবে তিনি কোনো দাবি করবেন না– এমনই ভাবলেন গ্লোনিতে মনে মনে।

    ডনের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, যদি আপনি তা করেন, তবে আসন্ন কয়েক বছরেই আমরা সবাই ধনী হয়ে উঠব।

    ডন বললেন, তাই হবে। এখন আপনি উৎসবে ফিরে যান এবং ইনজয় করুন।

    গ্রোনিভেল্ট বললেন, আমি এখনই ভেগাসে ফিরে যেতে চাই। আমি যে এখানে একজন অতিথি হয়ে এসেছি। বিষয়টি জানাজানি হওয়াটা আমার মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

    ডন এ কথায় মাথা নত করলেন। পেটির উদ্দেশ্যে বললেন, মি. গ্রোনিভেল্টকে নিউইয়র্কে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা।

    .

    গ্রোনিভেল্ট সভাকক্ষ ত্যাগ করার পরপরই বেরিয়ে গেল পিপি ডি লিনা ও ভারজিনো ব্যালাজো। ডনের প্রস্তাবে আমন্ত্রিত অতিথিদের অধিকাংশই হয়তো তেমন একটা আস্থা রাখতে পারেনি। মুখাবয়বে একটা চিন্তার ছাপ নিয়েই বেরিয়ে গেল তারা।

    শূন্য কক্ষ নয়-কক্ষজুড়ে অতিথিদের ক্ষণিক আগের উপস্থিতির রেশ। ডন ক্লেরিকুজিও আগের অবস্থানেই বলিষ্ঠ। পাশে তার বড় ছেলে জর্জিও। অন্য সবার মতো জর্জিও আস্থাহীন নয়। তার চোখে-মুখে বাবার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার দৃঢ় বিশ্বাসের আভা। অবশ্য জর্জিও’র মতো অন্য সদস্যরা ডনের পরিকল্পনার পূর্ণ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।

    ব্ৰুগলিওন হিসেবে ব্যালাজোকে অপরিপক্কই মনে করছেন ডন। সে পিপির চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড়। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইউনিয়ন, গার্মেন্টস সেন্টার ও পরিবহনসহ কিছু ড্রাগ ব্যবসা। ডন ডোমেনিকো তাকে জানিয়েছেন, ব্যালাজো তার ব্যবসা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডগুলো এখন থেকে স্বাধীনভাবেই পরিচালনা করবে। তবে এসব থেকে মোটের ওপর সে ডনকে দশ শতাংশ সম্মানী প্রদান করবে। আরো তা না হলে সে তার নিজ দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণে তার ব্যবসা পরিচালনা করবে। ডনের দিক থেকে কোনো রকমের সহযোগিতা প্রদান করা হবে না।

    ডনের এই প্রস্তাব একরকম জয় করেই নিল ভারজিনো ব্যালাজো। স্বভাবে সে বেশ উজ্জ্বল প্রকৃতির। যে কোনো বিষয়ে কৃতজ্ঞতা বা নালিশ প্রকাশে রীতিমতো হৈচৈ বাধিয়ে বসে। তবে ডনের প্রস্তাবে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিনয়ী হলেও উজ্জ্বল প্রকাশভঙ্গি তার ভেতর থেকে ঠিকরে বেরুল, যখন সে ডনকে জড়িয়ে ধরল।

    ডন দশ শতাংশের যে শর্ত আরোপ করেছেন ব্যালাজোর প্রতি তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছিলেন তিনি।

    দশ শতাংশের মধ্যে অর্ধেকাংশ অর্থাৎ পাঁচ শতাংশ তোমার বার্ধক্য অথবা অনাকাক্ষিত কোনো সময়ের বা দুঃসময়ের জন্য জমা থাকবে।

    ডন বললেন, ক্ষমা করবে– মানুষের পরিবর্তন ঘটছে। তাদের স্মৃতিশক্তিরও বিভ্রম ঘটছে। পূর্ব পুরুষের উদারতার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধও ম্লান হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। এবার এসো, তোমাকে আমি মনে করিয়ে দেই তোমার সঠিক হিসাব-নিকাশ সম্বন্ধে।

    অল্প সময়ের জন্য থামলেন ডন। তারপর বললেন, আসলে আমি কোনো ট্যাক্স সংক্রান্ত দফতরের লোক নই। আর এ কারণে আমি সে রকম কোনো পেনাল্টি বা উৎকোচ গ্রহণও তোমার কাছে করব না।

    ব্যালাজো ডনের কথার আচ বুঝতে পারল। ব্যালাজো জানে ডনের যে কোনো পানিশমেন্ট কার্যকর হয় অত্যন্ত দ্রুত ও নিশ্চিতভাবেই। এমনকি এসব পানিশমেন্টের কোনো পূর্ব সতর্কতামূলক বাণীও শোনানো হয় না। আর ডনের পানিশমেন্ট বা শাস্তি মানে সর্বদাই অবধারিত মৃত্যু। এর কারণ ডনের কাছে শাস্তিযোগ্য অপরাধীরা ছাড় পেলে যে কোনো শত্রুপক্ষের সাথে যোগ দিয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

    ব্যালাজোর উদ্দেশ্যে ডন আর তেমন কিছু বললেন না। ব্যালাজোকে বিদায় দিতে ডন যখন পিপিকে দেহরক্ষী হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, আকস্মিক থমকে দাঁড়ালেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর পিপিকে কাছে টেনে কানে কানে বললেন, তোমার ও আমার মাঝে এ বিষয়গুলো গোপন থাকবে। মনে রেখো, তুমি অবশ্যই এসব আজীবন গোপন রাখবে। আমি তোমাকে কখনোই এমন কোনো নির্দেশ দেব না।

    ম্যানশনের বাইরে লনের এক কোণে রোজ ম্যারি ক্লেরিকুজিও পিপি ডি লিনার জন্য অপেক্ষা করছিল। পিপির সাথে তার জরুরি কথা আছে।

    রোজ ম্যারি বিধবা হলেও নবীনা ও আকর্ষণীয়া। অপেক্ষমাণ রোজ ম্যারির পরনে কালো ড্রেস– একেবারেই বেমানান লাগছে। তার এই শোকাবহ পরিধেয়র কারণ সান্তাডিওর। আজকে রোজ ম্যারির গায়ে এই শোকাবহ পোশাক তার ভেতরের প্রকৃত সৌন্দর্য ও অল্প বয়সের প্রাণময়তা ঢেকে দিয়েছে।

    রোজ ম্যারির ডাগর বাদামি চোখ দুটোতে শোকের গহিন ছাপ নেমে এসেছে। ত্বকের জলপাই রঙ এই শোকাবহ কালো পোশাকের জন্য মনে হচ্ছে আরো পিঙ্গল। শুধুমাত্র তার নবজীবনের সূচনায় উদ্দীপ্ত কোলের সন্তান ডেন্টি যেন রোজ ম্যারির শোক ঢেকে কিছুটা আভা ছড়াচ্ছে। ডেন্টির মাথায় নতুন জীবনের আভাপূর্ণ নীল ফিতা বাঁধা।

    সারাটা দিন রোজ ম্যারি আজ তার বাবার কাছ থেকে সতর্কতার সাথে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এ দূরত্ব শুধু তার সাথেই নয় তার অপর তিন ভাই জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটির কাছ থেকেও। তাহলেও, এখন রোজ ম্যারি অপেক্ষা করছে পিপি ডি লিনার মুখোমুখি হওয়ার জন্য।

    পিপি ও রোজ ম্যারির মূল সম্পর্কটি কিন্তু রক্তের, উভয় উভয়ের কাজিন।

    তবে রোজ ম্যারির সাথে পিপির বয়সের পার্থক্য প্রায় দশ বছরের। টিনএজার বয়সেই বোজ ম্যারি তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু অপরদিকে পিপি ছিল সর্বদা পৈতৃক ধারার রোজ ম্যারির আহ্বানে সে কখনোই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। পিপি ছিল সব সময়ই বিপরীতমুখী। এর কারণ হচ্ছে রোজ ম্যারি তার ডনের কন্যা। বলিষ্ঠদেহী পিপি তার প্রতি দুর্বল হলেও শুধুমাত্র একটি কারণে এই দুর্বলতা ঝেড়ে-মুছে দূর করেছে।

    পিপিকে আসতে দেখে বোজ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, হ্যালো পিপি, তারপর শুভেচ্ছা জানাল, কংগ্র্যাচুলেশন।

    স্মিত হেসে পিপি তাকাল রোজ ম্যারির দিকে। তার এই মিষ্টি হাসি খুব ভালো লাগল রোজ ম্যারির।

    পিপি এগিয়ে এলো বরাজের কাছে। মাথা নিচু করে তার কোলের শিশুটির কপালে আলতো চুমু দিল। শিশুটির শরীর থেকে তখনো চার্চের ধূপ-ধুনার হালকা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শিশুটির দিকে তাকিয়ে পিপির মনে হলো– তার চুলগুলো একটি প্রায় নবজাতক শিশু হিসেবে বেশ ঘন।

    পিপি শিশুটিকে উদ্দেশ্য করে রোজ ম্যারিকে বলল, ডেন্টি ক্লেরিকুজিও। চমৎকার নাম।

    রোজ ম্যারির কাছে পিপির এ প্রশংসা ঠিক মনঃপূত হলো না। চুপিসারে রোজ অবশ্য তার পিতৃহীন সন্তানের নাম ঠিক করে রেখেছে। তার নিজের ক্ষেত্রেও কুমারী নামটিই প্রচার করতে ইচ্ছুক। বিষয়টি তার বাবা ডন ক্লেরিকুজিও’র কানে গেছে। ডন আপত্তি করেননি– মেনেই নিয়েছেন যুক্তির খাতিরে। তবে রোজ ম্যারি কিন্তু এখনো বিষয়টির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি– নিজকে অপরাধী ঠাওরাচ্ছে বারবার।

    এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো বোজ। সে বলল, তুমি কিভাবে তোমার প্রটেস্ট্যান্ট স্ত্রীকে এই ক্যাথলিক উৎসবের জন্য সম্মত করালে, আর তোমাদের শিশুর ক্ষেত্রেও এমন ধর্মীয় নামেইবা তার সম্মতি এলো কেন?

    পিপি তার কথায় আবারো হেসে ফেলল। আমার স্ত্রী আমাকে ভালোবাসে, আর তাই সব সময় আমাকে খুশি রাখতে চায়।

    কথাটি সত্য। রোজ ম্যারি ভাবল। তার ধারণা পিপির স্ত্রী তাকে ভালোবাসে কারণ পিপি সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। রোজ ম্যারি যে এক সময় পিপির প্রেমে পড়েছিল–এটিও সে জানে না।

    রোজ ম্যারি বলল, তুমি তোমার ছেলের নাম রেখেছ কসিফিজিও। তুমিও তো তাকে খুশি করতে পারতে তোমার শিশুর একটি আমেরিকান নাম রেখে।

    -আমি তোমার বাবাকে সন্তুষ্ট করতে তোমার দাদার নামে নাম রেখেছি।

    হাসিমুখে রোজ ম্যারি বলল, ঠিক তাই, আমরাও অবশ্য তাই-ই করে যাব।

    রোজ ম্যারির মুখে হাসি থাকলেও ভিতরে ভিতরে সে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল। রোজ ম্যারির মুখে এই মুখোশপূর্ণ কষ্টের হাসি যেন বাতাসে মিষ্টি আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার মুখের সব কথা, অভিব্যক্তি মধুর লাগছিল পিপির কাছে।

    রোজ ম্যারির মুখে কোনো কথা নেই।–দ্বিধাগ্রস্ত সে। আকস্মিক বলল, আমার জীবন রক্ষার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

    পিপি রোজ ম্যারির ভাবলেশহীন মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। আকস্মিক উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল।

    কোমল স্বরে বলল, তোমাকে কখনোই কোনো বিপদের মুখে পড়তে হবে না।

    কথাটি বলেই পিপি তার বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরল রোজ ম্যারির কাঁধ। তারপর বলল, বিশ্বাস করো। … আর, একটু থেমে পিপি বলতে লাগল, এখন থেকে আর কখনোই এমন কিছু ভাববে না। ভুলে যাও সব কিছু। আমাদের সামনে একটি সুখী জীবন অপেক্ষা করছে। অতীতের সবকিছু ভুলে যাও, একটু একটু করে।

    রোজ ম্যারি তার কোলের সন্তানটিকে চুমু খেতে মাথা নিচু করল, কিন্তু পিপির কারণে পারল না।

    পিপির কথার প্রতিউত্তরে ইতিবাচক মনোভাব এনে বলল, আমি সবই বুঝি।

    রোজ ম্যারি জানে, এই কথোপকথনে পিপির মুখে তার বাবা ও ভাইদের কথা আবারো হয়তো আসবে। তাই বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল সে।

    বলল, আমি বর্তমান অবস্থাতেই বেশ মানিয়ে গেছি।

    রোজ ম্যারি চায় পরিবারের সকলে জানুক সে তাদের খুব ভালোবাসে এখনো। পরিবারের সবাই জানুক রোজ ম্যারি তার সন্তান নিয়ে সন্তুষ্ট এবং প্রকৃত অর্থেই রোজ ম্যারি তার সন্তানের জন্য এই ধর্মীয় উৎসব ব্যাপ্টাইজিং-এ সন্তুষ্ট। পবিত্র পানির পরশে তার সন্তান নরকের পথ থেকে এসেছে এবং ভবিষ্যৎ জীবনও হবে তার ধর্মীয়– এমন বোধ থেকে সে মনে মনে কৃতজ্ঞও।

    এমন সময় ভারজিনো ব্যালাজো হৈচৈ করতে করতে লনে এসে প্রবেশ করল। রোজ ম্যারি ও পিপিকে একরকম জোর করেই ঠেলে পাঠালে লনের মাঝামাঝি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও তার ম্যানশন থেকে বের হলেন– পেছনে তাকে অনুসরণ করছিল তিন পুত্র।

    দেখতে দেখতে লনে সমাবেশ ঘটল আমন্ত্রিত-অনামন্ত্রিত সব লোকের। পুরুষদের পরনে ছিল ফরমাল ড্রেস, মহিলাদের গাউন আর বাচ্চারা পরে ছিল সার্টিন।

    ক্লেরিকুজিও পরিবারের সদস্যরা অর্ধবৃত্তাকারে দাঁড়াল ফটোগ্রাফারের সামনে। উপস্থিত সমাবেশ থেকে ভেসে আসতে লাগল করতালি। অনেকে শুভেচ্ছাবাণীর স্লোগানও দিতে থাকল। স্লোগানগুলো ছিল এ রকম : মুহূর্তটি শান্তির, বিজয়ের এবং ভালোবাসার।

    পরবর্তীতে এই ছবিটি বড় করে ফ্রেমে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আর তা টাঙানো হয়েছিল ডনের স্টাডিরুমে, সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে ডনের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র সিলভিও নিহত হয়, সেই সিলভিওর ছবির পাশে।

    উৎসবের অবশিষ্টাংশ ডন তার বেডরুমের বেলকনি থেকে প্রত্যক্ষ করছিলেন।

    রোজ ম্যারি তার পুত্রকে দোলনা গাড়িতে করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক বোলিং পিঠের পাশ দিয়ে। অপর দিক থেকে পিপির স্ত্রী ন্যালিনি তার শিশুকে নিয়ে লনের দিকে আসছিল। ক্রকসিফিজিওর মা ন্যালিনি। স্লিম, লম্বা, মার্জিত। রোজ ম্যারির পুত্র ডেন্টির মতোই একটি ট্রলিতে করে ন্যালিনি তার ক্রকসিফিজিওকে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। এক সময় উভয়ে পরস্পরের কাছাকাছি এসে গল্পে মেতে ওঠে।

    ডন প্রত্যক্ষ করছিলেন সবই। এই দুই শিশুকে দেখে তিনি বেশ নিশ্চিন্ত হলেন। শিশু দুটি যে আশ্রয়েই বড় হচ্ছে এবং নিরাপদে–এ ভেবেই তার এই নিশ্চিন্ত। তিনি এটাও ভাবলেন যে, এদের সুখী ভবিষ্যতের জন্য যে এত মূল্য দিতে হয়েছে বা হচ্ছে- তা তারা কখনোই জানবে না।

    ডনের দৃষ্টি গেল আকস্মিক হাসাহাসির শব্দের দিকে। সেখানে দেখতে পেলেন পেটিকে। সে তার স্বভাবসুলভ কৌতুক প্রদর্শনের জন্য একটি দুধের বোতল ডেন্টি ও ক্রকসিফিজিওর ট্রলির মাঝে ফেলে দিল। এ অবস্থায় বোতলটির জন্য শিশু দুটি আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল। এ দৃশ্যই সকলের হাসির কারণ।

    এক সময় বোজ ম্যারি ট্রলি থেকে ডেন্টিকে কোলে তুলে নিল। ডনেরও মনে পড়ে গেল সেদিনকার সেই ছোট্ট ডন। ডন ভাবতে লাগলেন– ভালোবাসায় নারীর চেয়ে সুন্দর কিছু নেই, এমনকি কষ্টেও। স্বামী নিহিত হওয়ায় রোজ ম্যারি যখন বিধবা হয়ে পড়ল, তখন উন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন মেয়ের জন্য।

    রোজ ম্যারি যখন খুব ছোট- খুব আদুরে চেহারা ছিল তার। যেমন ছিল তার গায়ের রঙ তেমনি ছিল উৎফুল্ল। কিন্তু সেই শিশু আর আজকের রোজ ম্যারির মধ্যে বিশাল ফারাক।

    সান্তাডিও’র লড়াইয়ে ভাই ও স্বামী নিহত হওয়ার পর থেকে বদলে গেছে রোজ ম্যারি আমূল।

    ডনের অভিজ্ঞতা বলে, প্রকৃত প্রেমিকরা আবারো ভালোবাসার জন্য হাত বাড়ায় আর বিধবারা কেবলই কালো পোশাকে হাঁপিয়ে উঠতে থাকে। মেয়ের জন্য কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল ডনের। তবে সান্ত্বনা দিতে আপন মনেই এলো– রোজ ম্যারির এখন একটি সন্তান আছে। সে তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখবে– লালন-পালন করবে।

    ডন তার ফেলে আসা জীবনে চলে গেলেন। অতীত জীবনের পর্যায়ক্রমিক সফলতায় তিনি নিজেই আশ্চর্য হয়ে উঠলেন।

    তার মনে হলো– ক্ষমতা এবং সম্পদের জন্য তার সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবে সঠিক ছিল। তবে এর জন্য তাকে কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে। তাছাড়া সবই ছিল প্রয়োজনীয় ও প্রমাণিত।

    যদি কোনো মানুষ তার অপরাধে বা পাপের জন্য অনুশোচনায় ভোগে, তবে ডন তাকে অন্তত এতটুকু নিশ্চয়তা দেবেন যে, ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাও। ডন জানেন, ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করবেন।

    ডনের দৃষ্টি পড়ল পিপির দিকে। তার ব্রঙ্কস এনক্লেভের তিন সৈন্যের সাথে বকসি খেলায় ব্যস্ত সে। এরা পিপির চেয়ে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে। তবে, তারপরও তারা পিপির অনুগত।

    পিপি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দক্ষতার জন্য সর্বদাই মধ্যমনি হিসেবে সহজেই স্থান করে নিতে সক্ষম। সে প্রকৃতই একজন লিজেন্ড। সে সান্তাডিও’র বিরুদ্ধেও বকসি খেলেছিল।

    ডনের চোখে পিপি প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল যুবক। যখন তার বল বিপক্ষীয়দের বলে আঘাত হানে তখন সে আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে। কত প্রাণের ছোঁয়াই না তার মাঝে–ডনের খুব ভালো লাগে। তিনি ভাবেন– একজন বিশ্বস্ত সৈন্য একটি উষ্ণ সঙ্গিনীর মতো শক্তিশালী এবং দ্রুত, চালাক এবং সংযত হচ্ছে পিপি।

    ডনের প্রিয় বন্ধু, ভারজিনো ব্যালাজোও উপস্থিত ছিলেন বকসি কোটে। এই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পিপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন দক্ষতার সাথে। ব্যালাজো যখন পিপির বলে জোরে আঘাত করতে সমর্থ হন তখন প্রায় সাথে সাথেই উল্লাসে চেঁচিয়ে ওঠেন তার সফল হিটের জন্য। তারপর বেলকনির দিকে হাত উঁচিয়ে ডনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। ডনও করতালি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করেন।

    ডনের এই ভেবে খুব ভালো লাগে যে, এই মাত্র একটা দিন পাম সানডে, এ দিনটিতে তার নিয়ন্ত্রণাধীন সব লোক একে-অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। কুওগে মিলিত হয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে। ডন মনে মনে গর্ববোধও করেন।

    তিনি ভাবেন– হয়তো তার আজকের এই দুরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা আসন্ন কঠিন সময়গুলোয় রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দিবে।

    তার আপন মানুষের মনে শয়তানের বীজ ইতিমধ্যেই সংগঠিত হয়েছে কি-না তা হয়তো ডন আগে থেকেই বুঝতে পারেননি।

    .

    পর্ব– এক

    হলিউড
    লাস ভেগাস ১৯৯০

    ০১.

    ক্যালিফোর্নিয়ার বসন্ত।

    সূর্যের আলোয় হলুদ আভা। বজ স্কানেট তার চুলগুলো স্প্রে করে হলুদ করে নিয়েছে। সূর্যের হলুদ, আরে স্প্রে করা হলুদে মিলে স্কানেটের চুল হয়েছে আরো উজ্জ্বল।

    তার টান টান ও পেশিবহুল শরীরের পেশিগুলো একটি আসন্ন লড়াইয়ের উত্তেজনায় আন্দোলিত হচ্ছিল।

    উত্তেজনার একরাশ আবেগ মনে। সারা বিশ্বের কয়েক কোটি দর্শক তাকে দেখবে টিভির পর্দায় দেখবে তার কাজ। উত্তেজনা হওয়া তো স্বাভাবিক।

    স্কানেটের কোমরে এলাস্টিকের কোমরবন্ধ আর তাতে রয়েছে ছোট একটি পিস্তল। গায়ের জিপারযুক্ত পাতলা জ্যাকেট স্কানেটের কোমর ছাড়িয়ে নেমে গেছে আরেকটু নিচে। তাতে বেশ স্বাভাবিকভাবে গোপন রয়েছে তার কোমরে বাঁধা পিস্তলটি।

    জ্যাকেটটি সাদা রঙের, তার ওপর অগ্নিশিখার লাল তীর নিচ থেকে উপরে উঠছে। এমন প্রিন্ট করা জ্যাকেটের সাথে ম্যাচ করে নীল ডটেড ব্যান্ড বেঁধেছে চুলে।

    স্কানেটের ডান হাতে ধরা আছে বড় ধরনের রুপালি-রঙা অভিযান বোতল। পারতপক্ষে শো-বিজ দুনিয়ার একজন হিসেবে বজ স্কানেট নিজকে যতটা সম্ভব সাজিয়েছে। এর কারণ শো-বিস দুনিয়ার তারকা খচিত কলা কুশলীদের সম্মিলন অ্যাওয়ার্ড গিভিং সেরেমনি।

    লস অ্যাঞ্জেলেসে ডরোথি চ্যান্ডলারে নির্মিত হয়েছে প্যাভিলিয়ন। এই প্যাভিলিয়ন ঘিরে কৌতূহলী জনতার ভিড়। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনিতে যোগ দিতে আসা মুভি স্টারদের জন্যই ভক্তরা ভিড় করে আছে। এ ভিড়ের ঘনত্ব বাড়ছে ক্রমেই। রাস্তার দুধারে দর্শক-শ্রোতাদের ব্যাপক সমাবেশকে আটকে রাখা হয়েছে।

    সড়কগুলো পরিপর্ণ হয়ে আছে বিভিন টিভি সংস্থার ক্যামেরা ও রিপোর্টারে। এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ঘিরে খুঁটিনাটি সকল সংবাদ ক্যামেরার মাধ্যমে রিপোর্টাররা পাঠিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর কোণায় কোণায়।

    আজ রাতে মানুষ দেখবে তাদের গ্রেট মুভি-স্টারদের সশরীরে। তাদের থাকবে না কোনো কৃত্রিমতা। পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জয়-পরাজয়ের ফয়সালাও হবে আজ রাতে– এত মানুষের সমাগম এ কারণেই।

    পোশকি নিরাপত্তা কর্মীরা দর্শকের ঢল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে পথ দিয়ে মুভি-স্টাররা ঢুকবে তা মানবশূন্য রাখতে কত কৌশলের অবতারণা। নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে হাতে চকচকে বাদামি ব্যাটন। মাঝে-মধ্যে দর্শকদের উত্তেজনা দমন করতে ব্যাটন উঠিয়ে ভীতি প্রদর্শন করছে।

    বজ স্কানেট অবশ্য নিরাপত্তা কর্মীদের দেখে মোটেও বিব্রত নয়। সে আকারে-আয়তনে বিশাল। শুধু তাই নয়, অনেকের চেয়েই সে অনেক বেশি গতিশীল ও ক্ষিপ্রতাসম্পন্ন। তাছাড়া আকস্মিক চমকে দেয়ার মতো স্কানেট কৌশলীও বটে।

    নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যাপারে সে উদাসীন হলেও টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানদের নিয়ে দ্বিধান্বিত। কলা-কৌশলীরা তাদের পথে আসলেই তো শুরু হবে রিপোর্টারদের বিভিন্ন তৎপরতা। তখন তারা সেলিব্রেটিদের সুরক্ষার চেয়ে নিজেদের সংবাদ, সাক্ষাৎকার এসব রেকর্ড নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

    এসব চিন্তা করতে করতেই একটি সাদা লিমুজিন দেখতে পেল স্কানেট। প্যাভিলিয়নের প্রবেশ দ্বারের কাছে এসে থেমেছে লিমুজিনটি। আর তা থেকে নেমে এলো বিশ্বের সেরা সুন্দরীর খেতাবপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনের জরিপে অ্যাথেনা অব্যাহত বিশ্বসেরা সুন্দরী রমণী।

    স্কানেট দেখল– অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন গাড়ি থেকে নেমে আসার সাথে সাথেই দর্শকদের ভিড় ক্রমেই অভিনেত্রীর কাছাকাছি চলে আসছিল। নিরাপত্তা কর্মীরাও গলদঘর্ম হয়ে, ব্যাটন পিটিয়ে যুদ্ধ করে তাদের নির্ধারিত সীমানায় আটকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অ্যাথেনার নাম ধরে ভক্তকুল স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছিল প্রাঙ্গণ।

    অপরদিকে অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার, ছবি তোলা ও ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতে ফেউ লাগল রিপোর্টাররা। এক রকম ঘিরেই ধরল তারা অ্যাথেনাকে। ভক্ত ও টিভি ক্যামেরার সামনে অ্যাথেনা হাত উঁচিয়ে অভিবাদনের সাড়াও দিয়ে যাচ্ছিল থেমে থেমে ক্রমাগত।

    স্কানেট নিরাপত্তা ঘের কৌশলে টপকে বেরিয়ে এলো। তারপর শুরু করল ট্র্যাফিক গার্ড এড়িয়ে আঁকাবাঁকা দৌড়। আকস্মিক এ দৌড় দেখে কয়েকজন নিরাপত্তা গার্ডও তার পিছু নিল। কিন্তু স্কানেট ছিল তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

    কয়েক বছর আগে, কোনো এক ফুটবল ম্যাচে স্কানেট যেমন বিপক্ষীয় দলের কঠিন ডিফেন্স ভেঙে গোল করেছিল, ঠিক তেমনি এই নিরাপত্তা কমীদের জিগজ্যাগ সঙ্কুল পথ অনায়াসেই অতিক্রম করছিল। এভাবেই অবশেষে সে একেবারে যথাযথ মুহূর্তে এসে পৌঁছল প্যাভিলিয়নে।

    অ্যাথেনা তখন সবেমাত্র মাইক্রোফোনটি হাতে তুলে নিতে যাচ্ছে। ফটোগ্রাফাররাও তার সৌন্দর্যপূর্ণ অ্যাঙ্গেলের অভিব্যক্তি ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত। অ্যাথেনার পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিনজন দেহরক্ষী টাইপের মানুষ।

    স্কানেট নিশ্চিত হলো যে কিছু ক্যামেরার লেন্স তার ওপরও পড়েছে। এমন সময় কাটে তার বোতল থেকে কিছু লিকুইড আকস্মিক অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের মুখে ছুঁড়ে মারল।

    শুধু তাই নয়, চেঁচিয়ে উঠল এখানে কিছু অ্যাসিড আছে। যেন অন্য কোনো দুর্বত্ত এই অ্যাসিড ছোঁড়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে এমন মনোভাব প্রদর্শন করে স্কানেট অজানা দুৰ্বত্তের উদ্দেশে গালাগাল দিতে লাগল–ইউবিন বলে। তারপরই সে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকাল–তার চেহারায় ছিল চিন্তাশীল, ভাবগম্ভীর ও মর্যাদাশীল এক ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি।

    এক সময় স্কানেট গাম্ভীর্যপূর্ণ কণ্ঠে বলল, এটা তার পাওনা ছিল। এর পরপরই ব্যাটন হাতে কয়েক জন খাকি পোশাকের নিরাপত্তা কর্মী তাকে ঘিরে ধরল। স্কানেট বসে ছিল হাঁটু গেড়ে।

    এই নাটকীয় ঘটনার শেষে অ্যাথেনা অবশেষে স্কানেটের দিকে তাকাল। সে স্কানেটের চেঁচানোর আওয়াজ শুনেছিল কিন্তু লিকুইড তার কানে ও মাথায় পড়ায় সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বলে ঠিক ঠাহর করতে পারেনি।

    কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনাটি কোটি কোটি টিভি দর্শক ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে।

    দারুণ লাভলি চেহারা অ্যাথেনার। তার গালে এখনো রুপালি রঙের দাগ। এই অ্যাসিড ছোঁড়া ব্যক্তিটির দিকে যখন অ্যাথেনার চোখ পড়ল, তখন সে বিস্মিত, মর্মাহত এবং কিছুটা ভয়ও পেল। আর এই বিস্ময় ও ভীতির ভাব অ্যাথেনার সৌন্দর্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল দ্বিতীয় বারের মতো।

    টিভি ক্যামেরাগুলো তখনও সবল। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দেখছে পুরো বিষয়টি। স্কানেটকে এক রকম টেনে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।

    বিষয়টি অনাকাঙিক্ষত হলেও দর্শক অনেকটা ফিলি ঘটনার মতোই উপভোগ করছিল। আপাতদৃষ্টিতে স্কানেট অপরাধী হলেও তাকে ঠিক মুভি স্টারের মতোই দেখাচ্ছিল। দু-হাতে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে একটি জয়সূচক স্যালুট দিল।

    এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা স্কানেটের কোমর হাতড়ে পেল লুকিয়ে রাখা ছোট পিস্তলটি। এরপরই পুলিশ কর্মকর্তাটি তার কিডনিসদৃশ স্থান লক্ষ্য করে আঘাত করল। সাথে সাথেই ঝাঁকিয়ে উঠে স্কানেট বেঁকে গেল কিছুটা।

    এদিকে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন তখনও অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিমর্ষ। তবে তার চিবুকে লেগে থাকা রুপালি রঙ ইতিমধ্যে শুকিয়ে যাওয়ায় ঝরে পড়ল। আসলে সেগুলো অ্যাসিড ছিল না– অ্যাসিডে ত্বক ঝলসে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটল না আর তার হাতে ছিটে-ফোঁটা লিকুইডগুলোও সরে গেল। কিন্তু এতক্ষণে বেশ কিছু মানুষ তাকে ঘিরে ফিলেছে তার নিরাপত্তার খাতিরে। তাকে হয়তো সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেও।

    অ্যাথেনা স্বাভাবিক হলো। শান্ত কণ্ঠে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে বলল, এটা ছিল শুধু পানি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য হাতে পড়া কয়েক ফোঁটা রঙ মিশ্রিত পানি পরখ করে দেখল সে।

    এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিরাজমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে স্মিত হেসে অ্যাথেনা বলল, কি আশ্চর্য মানুষ আমার স্বামীটি।

    অ্যাথেনা আর দেরি করল না। ঘটনাটির মোড় ঘুরিয়ে নিতে সে তাৎক্ষণিক প্যাভিলিয়নের দিকে এগিয়ে গেল। এমন একটা ঘটনার পরও অ্যাথেনার এই স্বাভাবিক মূর্তি দর্শকদের আন্দোলিত করেছিল। ভক্তকুলের কাছে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছিল, হয়তো এ কারণেই।

    এরপর অ্যাথেনা যখন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষের মনোনয়নে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার পেল, তখন উপবিষ্ট দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দিতে লাগল।

    লাস ভেগাসে জানাদু ক্যাসিনো হোটেলের পঁচাশি বছর বয়স্ক মালিক মড়ার মতো শুয়ে আছেন। তিনি শুয়ে আছেন মোল তলার চিলেকোঠার মতো একটি শীতল কক্ষে। শুয়ে শুয়ে তিনি ভাবছেন; এই ষোল তলা থেকেও ক্যাসিনো কক্ষের সব ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী মানুষগুলোর হর্ষধ্বনি যেন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

    আজকের এই বসন্ত দিনে, এই ক্ষণটিতে তিনি যেন স্পষ্ট শুনতে পারছেন রুলথ হুইলে ঘূর্ণায়মান লাল-কালো গজদন্তী বলের ঘর্ষণের শব্দ। তার কানে ভেসে আসছে ক্র্যাপ শুটারদের পাইয়ে দিতে কিংবা হারানোর জন্য গুটির খটাখট আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন চকচকে রুপালি কয়েন গেলা মেশিনের ঝনাঝনাৎ শব্দ, সবই যেন স্পষ্ট ভেসে আসছে তার কানে এই মোল তলার পেন্থ হাউসেও।

    আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট, যে কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের মতোই সুখী! ইতিমধ্যেই তিনি অতিবাহিত করেছেন জীবনের প্রায় আশিটি বছর। নব্বই ছুঁই উঁই গ্রোনিভেল্টের  সময় অতিবাহিত হয়েছে কেবল ব্যস্ততা আর ব্যস্ততায়। অনুরাগী ব্যভিচারী দূত, বহু হত্যাকাণ্ডের সক্রিয় মদদদাতা, রাজনৈতিক ফিক্সার এবং সর্বপরি জানা হোটেলের কঠোর অথচ দয়ালু লর্ড হিসেবে কেটে গেছে তার বর্ণাঢ্য জীবন।

    বিশ্বাসঘাতকের ভয়ে আলফ্রেড় কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারেননি। তবে অনেকের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন নীরবে। মানুষের ভালোবাসার ধার ধারেন না তিনি কোনো আক্ষেপও নেই তার এজন্য। সম্প্রতি তিনি মাঝে মাঝেই তার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোয় উঁকি মারেন তবে এও যেন বিকেলবেলায় তার ক্যাসিনো আড্ডায় সফরের মতো।

    গত পাঁচ বছর ধরে ক্রকসিফিজিও ডি লিনা, অর্থাৎ ক্রস গ্রোনিভেল্টের দক্ষিণ হস্ত। শয্যাকক্ষে প্রবেশ করল ক্রস আলফ্রেড, তুমি রেডি? ক্রসের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন, প্রতিউত্তরে কেবল মাথা ঝাঁকিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলেন আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট।

    ক্রস গ্রোনিভেল্টকে বিছানা থেকে টেনে তুলল, তারপর সতর্কতার সাথে নিয়ে বসাল হুইল চেয়ারে। একজন নার্স বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টকে নরম ব্লাঙ্কেট ভাঁজ করে ঢেকে দিল। একটি বালিশ ক্রসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পেন্থ হাউসের দরজা খোলার জন্য রওনা হলো সে।

    গ্রোনিভেল্টের  হুইল চেয়ারের পেছনেই থাকার কথা নার্সটির। তবে আজকের এই সুন্দর বিকেলে ভ্রমণের জন্য গ্রোনিভেল্ট আর নার্সের জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না।

    পেন্থ হাউসের বাগানে গ্রোনিভেল্টের  হুইল চেয়ারটি অনায়াসেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। বাগানে কার্পেট করা কৃত্রিম সবুজ ঘাসে চোখ পড়ল গ্রোনিভেল্টের । আবারো তার মন ছুটে গেল মোল তলার নিচের ক্যাসিনো কক্ষে। সেখানেও এমন একটা মোলায়েম মেঝে আছে মনে পড়ল তার।

    সটান বসে আছেন গ্রোনিভেল্ট তার হুইল চেয়ারটিতে, আর বামে-ডানে অনবরত তাকাচ্ছেন পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে-~~ এটাই তার আপাতত আনন্দ। তার আনন্দিত ও গর্বিত হওয়ার আরেকটি কারণ–তার জন্য এতগুলো মানুষ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত ক্যাসিনোয়।

    গ্রোনিভেল্টের  বহনকারী হুইলচেয়ার অত্যন্ত ধীর লয়ে এসে পৌঁছল ব্ল্যাকজ্যাক ও রুলথ এরিয়ায়। এরপর পরিদর্শন করল একে একে ব্যাকার্যাট পিট ও জাঙ্গল অব ক্র্যাপ টেবিল। এই পরিদর্শনের সময় জুয়াড়িরা তীর্যক উক্তিও করছিল বুড়ো গ্রোনিভেল্টের  উদ্দেশে। বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়নি গ্রোনিভেল্টের  সদা প্রস্তুত চোখ ও কান। তবে মুচকি হেসে তার যথাযথ উপলব্ধির কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেকে তাকে নতুন পঙ্গু-জুয়াড়ি হিসেবেও মনে করেছে। কেননা ভেগাসে এমন অনেকেই আছে যারা হুইলচেয়ারে করেই আসে জুয়ার আড্ডায়। অবশ্য এমন পঙ্গু জুয়াড়িরা অনেকের করুণাও পেয়ে থাকে। করুণার দৃষ্টি দিয়ে যেমন কিছুক্ষণ আগে কেউ মন্তব্য করেছিল- আহা, বেচারা, ভাগ্য তার সাথে শত্রুতা করে কি হাল করেছে।

    অবশেষে গ্রোনিভেল্টের  হুইল চেয়ারটি এসে পৌঁছল কফি হাউসে। এটি ডাইনিং রুম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কক্ষের প্রহরী তাদের রিজার্ভ করা বুথে পৌঁছে সেখানে অন্য গ্রাহকের দখল করা টেবিল খালি না হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে লাগল।

    গ্রোনিভেল্ট স্বচ্ছ গ্লাসের দেয়ালের অপর প্রান্তে দেখতে পেলেন একটি বিশাল আকারের সুইমিংপুল। নীল রঙের কাঁচের কারণেই সেই সুইমিংপুলের পানিগুলো হয়তো নীল দেখাচ্ছিল। গ্রোনিভেল্টের  মনে হলো– পানিগুলো যেন তপ্ত, সেখান থেকে ধোঁয়া উড়ছে। তবে কিছু যুবতী ও শিশুও দেখতে পেলেন। তারা দাঁড়িয়েছিল ধোয়া ওড়া সারফেসের কাছেই। একটা ব্যতিক্রম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছিল গ্রোনিভেল্টের  দৃষ্টিতে। যুবতী ও শিশুদের রঙিন খেলনার মতো লাগছিল তার। হঠাৎ তার মনে হলো- এ ছোট্ট পরিসরে আনন্দ ও বিনোদনের জায়গা– এর সব কিছুই তার সৃষ্টি।

    আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  চিন্তায় ছেদ ধরাল ক্রস ডি লিনা। বলল, আলফ্রেড একটা কিছু খাও।

    গ্রোনিভেল্ট ফিরে এলেন বাস্তবে। ক্রসের দিকে হাসি মুখে তাকালেন। ক্রসের সব কিছুই তার ভালো লাগে। তিনি তাকে ভালোবাসেন। আসলে ক্রস এমনই এক ব্যক্তি যার প্রতি পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আকর্ষণ বোধ করে। গ্রোনিভেল্ট তাকে পছন্দ করার পেছনে কারণ সে অত্যন্ত আস্থাবান ও বিশ্বস্ত। গ্রোনিভেল্টের  জীবনে তার মতো বিশ্বস্ত আর একজনকেও পাননি।

    ক্রসের উদ্দেশে গ্রোনিভেল্ট বললেন–আমি আমার এই ব্যবসাকে খুব ভালোবাসি।

    একটু হেসে আবার বললেন, ক্রস, তুমিই হবে এই হোটেলে আমার উত্তরসূরি। আমি জানি তোমাকে নিউইয়র্কে আমাদের পার্টনারের সাথেও কাজ করে যেতে হবে। তবে কখনো জানাদু ছেড়ে যেও না।

    ক্রস বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টের  হাত চেপে ধরল। তার হাতের নরম অস্থিতে আলতো চাপ দিল, উল্টো পৃষ্ঠের নরম চামড়ায় হাত বুলিয়ে আশ্বাসের সুরে বলল, আমি যেতে চাইও না।

    গ্রোনিভেল্ট অনুভব করলেন সূর্যের রশ্মি রঙিন কাঁচ ভেদ করে যেন তার শরীর ঝলসে দিচ্ছে। তিনি ক্রসের উদ্দেশ্যে বললেন, ক্রস, আমি তোমাকে সবকিছু শেখাব। আমি কিছু কঠিন কাজ করেছি– সত্যিই সেসব ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তবে কখনো পিছন ফিরে তাকাবে না। তুমি হয়তো জানো পার্সেন্টেজের কাজগুলো হয় একটু ভিন্ন পথে। তুমি তোমার সাধ্যমতো ভালো কাজ করে যাবে। অবশ্যই সেখান থেকেও তুমি পাবে বিস্তর। আমি কিন্তু ভালোবাসায় ব্যর্থতা কিংবা এক্ষেত্রে ঘৃণাকেই প্রশ্রয় দেবে এমন কোনো উপদেশ দিচ্ছি না। এগুলো থেকে অবশ্য খুব একটা ভালো পার্সেন্টেজ আসে না জীবনে।

    টেবিলে রাখা কফির কাপে চুমুক দিল দুজনে। গ্রোনিভেল্ট কফির সাথে আসা একটি প্যাস্ট্রি তুলে নিলেন। আর ক্রস তার কফির সাথে অরেঞ্জ জুস।

    মধ্যবর্তী স্বল্প সময়ের নীরবতা ভাঙলেন গ্রোনিভেল্ট, একটি বিষয় ….

    একটু থেমে তিনি আবার বললেন, যতক্ষণ অব্দি তোমার হাতে মিলিয়ন ড্রপটুকু না আসে ততক্ষণ তুমি একটি ভিলাও ছাড়বে না। কখনো ভুলে যেও না যেন ভিলা অর্থাৎ পূর্বপুরুষের বাগানবাড়িগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে সুদূর অতীতের স্মৃতি, সেগুলো পৌরাণিকই অন্তত আমার কাছে সে সবের গুরুত্ব অনেক।

    ক্রস গ্রোনিভেল্টের  হাতের ওপর হাত রেখে আশ্বস্ত করল। গ্রোনিভেল্টের  প্রতি ক্রসের অনুভূতি দুর্বার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রস তাকে তার বাবার চেয়েও বেশি ভালোবাসে।

    চিন্তা করো না–ক্রস বলল, ভিলাগুলো নিরাপদই থাকবে, এর জন্য যা কিছুই ঘটুক না কেন?

    গ্রোনিভেল্টের  চোখটি অস্পষ্ট হয়ে উঠল। তীব্র জ্বালা অনুভব করল সে তার চোখ দুটিতে। পুরুষ না হয়ে কোনো নারী হলে হয়তো অঝোর ধারায় নেমে আসত অশ্রু। সামলে নিল গ্রোনিভেল্ট নিজেকে। বলল, সাবধানী হও। সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করবে।

    অবশ্যই–ক্রস আশ্বস্ত করল তাকে। তারপর বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টকে এই বৈষয়িক প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে আনতে নতুন বিষয়ের উত্থাপন করল।

    ক্রস বলল, সেই স্ট্যান্টাডিও যুদ্ধের কাহিনী তুমি আমাকে কখন শোনাবে? আমাকে সে বিষয়ে কখনো কেউ কিছু বলেনি। শুনেছি সে সময় নাকি তুমি তাদের সাথে সান্তাডিও’র কাজ করতে।

    বৃদ্ধ গ্লোনিভেন্টের দীর্ঘশ্বাস কেঁপে উঠল। সেই সাথে বিড়বিড় করে তিনি যেন কিছু আওড়ে যাচ্ছিলেন উদাস দৃষ্টিতে। ক্রসের উদ্দেশে বললেন, আমি জানি আমার সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে আমি সেসব ঘটনা তোমাকে শোনাতে পারব না।

    একটু দম নিয়ে গ্রোনিভেল্ট আবার বলল, তুমি বরং তোমার বাবার কাছেই শুনে নিও।

    ক্রস নাছোড়বান্দার মতো বলল, আমি পিপির কাছে শুনতে চেয়েছি। কিন্তু সেও কেন যেন এড়িয়ে গেছে।

    অতীতকে অতীত হিসেবেই রেখে দাও না গ্রোনিভেল্ট প্রতিউত্তরে বলল, কখনো পেছন ফিরে তাকিও না। ক্ষমার জন্যও নয়, নয় বিচারের জন্য কিংবা সুখ খুঁজে পেতে। তুমি এখন যা আছ তা নিয়ে ভাব ভাব এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে।

    পেন্থ হাউস কক্ষে ফিরে এলেন গ্রোনিভেল্ট, নার্স তার বিকেলের গোসল পরবর্তী আনুষঙ্গিক কাজ সমাধা করল।

    রাতে একটা পরিপূর্ণ ঘুম দিলেন গ্রোনিভেল্ট। খুব ভোরে তার ঘুম ভেঙে গেল। নার্সকে অনুরোধ করলেন তাকে বেলকনি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য।

    নার্স তাকে একটি বড় চেয়ারে বসিয়ে ব্লাঙ্কেট দিয়ে ঢেকে দিল। পাশে বসে নার্স গ্রোনিভেল্টের  পালসও পরখ করে নিল এই ফাঁকে।

    নার্সের কোলেই ছিল গ্রোনিভেল্টের  হাত। পালস চেক করার পর নার্স যখন তার কোলে ফিরিয়ে দিতে গেল, গ্রোনিভেল্ট অসম্মত হলেন। এক পর্যায়ে নার্স আর বাধা দিল না।

    পাশাপাশি দুজন বসেই আকাশে সূর্য উদয়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল।

    সূর্যের রক্তিম বলয়ের আভা যখন আকাশে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছিল তখন মেঘগুলোর রঙও পাল্টে যাচ্ছিল বিস্ময়করভাবে– কালো-নীলাভ মেঘগুলোতে সূর্যোদয়ের আভা লেগে হয়েছিল গাঢ় কমলা রঙ। ভোরের আকাশে এই রঙের খেলায় মেতে ছিল উভয়ে।

    বেলকনি থেকে গ্রোনিভেল্টের  দৃষ্টি গেল নিচের ভূ-পৃষ্ঠে। একেবারে আকাশ থেকে নেমে এলেন মাটিতে। দেখতে পেলেন–টেনিস কোর্ট, অদূরে গলফ-এর মাঠ, পাশে সুইমিং পুল, দূরে আবছা ভিলাগুলো যেন থেকে থেকে জ্বলে উঠছিল দূর আকাশের মিটিমিটি তারার মতো।

    গ্রোনিভেল্টের  দৃষ্টি গেল জানাদু হোটেলে টাঙানো পতাকাগুলোর দিকে। জানাদুর নিজস্ব প্রতীক গাঢ় সবুজের মাঝে সাদা পায়রা সংবলিত ফ্ল্যাগের দিকে তিনি তাকিয়ে থাকলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর তার দৃষ্টি গেল সবশেষে অসীম বালিপূর্ণ সমুদ্র– মরুভূমির দিকে। যেখানে দিগন্তরেখা ভেদ করে একটু আগে উঠেছে আজকের দিনের সূর্য।

    বেলকনি থেকে গ্রোনিভেল্টের  এই প্রত্যক্ষ অবলোকনে তার মনেও উদিত হয়েছে গর্বের আভা। তিনি ভাবতে লাগলেন– এসবই তার সৃষ্টি। গর্বভরে মনে মনে বলতে লাগলেন, একটি পতিত জমিতে আমিই এনেছি একটি আনন্দের বিনোদনের ভুবন এবং আমি নিজেই আমার সুখী জীবনের স্রষ্টা, বাইরের কেউ নয়।

    এই বিশ্বে আমি সর্বদা যথাসাধ্য একজন ভালো মানুষ হিসেবে থাকার চেষ্টা করেছি।

    গ্রোনিভেল্ট ফিরে গেলেন তার কিশোর জীবনে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার চৌদ্দ বছর বয়স্ক দার্শনিক বন্ধুর কথা। সে বয়সেই তারা আলোচনায় মেতে উঠতেন ঈশ্বর ও তার অস্তিত্বের নৈতিক মূল্যায়নের মতো কঠিন সব বিষয় নিয়ে।

    গ্রোনিভেল্টের  সেই অন্তরঙ্গ দার্শনিক বন্ধুটি একবার তাকে প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা কেউ যদি তোমাকে এক মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি বাটন পুশ করতে বলে যা করলে দশ লাখ চীনা মারা যাবে, তুমি কি তা করবে? অসম্ভব ও অযাচিত এমন প্রশ্নের অবতারণা করে নিজ থেকেই সে শুরু করত তার নাতিদীর্ঘ বিশ্লেষণ। অবশেষে সে সম্মতিও আদায় করে নিত যে— এমন গর্হিত কাজ অসম্ভব। তবে গ্রোনিভেল্ট তার যুক্তিতে খুব একটা সায় দিতেন না। তিনি হয়তো হত্যাকাণ্ডের পক্ষেই থাকতেন দার্শনিক বন্ধুর সাথে বিতর্কে।

    আজ প্রায় পঁচাশি বছর পর জানাদু হোটেলে তার নিজ পেন্থ হাউসের বেলকনিতে বসে ভাবছেন–সে বিতর্কে গ্রোনিভেল্টই ছিলেন সঠিক। এ চিন্তা তার এই সফল জীবনের জন্য নয়–এর কারণ, এমন বিশাল ধরনের একটি হেঁয়ালিপূর্ণ বিতর্ক কোনো কিছুকেই থামিয়ে দিতে যথেষ্ট নয়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে উভয় সঙ্কটে ফেলার মতো বিষয়ও নয়।

    এখন গ্রোনিভেল্ট বেশ ভালোই বুঝতে পারেন কিশোর কালেও তার সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক। দার্শনিক বন্ধুর বিতর্ক থামিয়ে দিয়ে, প্রশ্নটিতে কেন চায় নাম্যানদের হত্যার কথা বলা হলো? আরো এর জন্য দশ লক্ষ ডলারইবা কেন? এই প্রশ্নগুলোই তখন সেই দার্শনিক বন্ধুকে থামিয়ে দিতে প্রতিপ্রশ্ন। এমন চিন্তা গ্রোনিভেল্ট সে বয়সেও করেছেন।

    গ্রোনিভেল্ট বাস্তবে ফিরে এলেন। পৃথিবীতে আলোর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে লাগল। পাশে বসা নার্সকে অনুরোধ করলেন, তিনি তাকালেন সূর্যের প্রখরতার দিকে। চোখে ছানি পড়েছে তার, আর সেটাই তার চোখের বর্ম। নয়তো তিনি যেভাবে সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সুস্থ চোখ হলে এতক্ষণে ধাধিয়ে যেত।

    ঠায় বসে গ্রোনিভেল্ট তার পূর্বজীবনের কথা ভাবতে লাগলেন। তার মনে এলো নিশ্চিত সেই নারীর কথা, যাকে নিয়ে নিশ্চিতভাবেই কিছু পূর্ণাঙ্গ চিন্তাও করেছিলেন।

    তার মনে ভেসে উঠল একে একে সেসব মানুষের ছবি, যাদের তিনি নির্দয়তার সাথে পরাস্ত করেছিলেন। তবে তার প্রতিও যে অনেকে করুণা করেছে, সহানুভূতি দেখিয়েছে সেসব কথাও ভাবনায় এলো গ্রোনিভেল্টের । পুত্রসম ক্রসের কথা মনে এলো। সে এখনও তার প্রতি সহানুভূতিশীল। সহানুভূতি পেয়েছেন গ্রোনিভেল্ট সান্তাডিও ও ক্লেরিকুজিও পরিবারের সবার কাছ থেকেও। এমন বর্ণাঢ্য জীবন পিছনে রেখে এ বয়সে তিনি বেশ সুখী। এমন জীবন-চিন্তা নিয়ে আজ তাই গ্রোনিভেল্টের  মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে আসলে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কোনটা কাম্য, সুখী জীবন না কি নৈতিকতাপূর্ণ জীবন?– এই দ্বিধা তার মনকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করল।

    ধীরে ধীরে শীতল হয়ে পড়ল গ্রোনিভেল্টের শরীর। নার্সের কোলেই রাখা তার একটি হাত। নার্সের মনে হলো বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টের  হাতটি ক্রমেই শীতল হয়ে উঠছে। পেশিগুলোও কেমন নিথর। নার্স তাৎক্ষণিক গ্রোনিভেল্টের  অপরিহার্য চিহ্নগুলোর পরীক্ষা শুরু করল। নিশ্চিত হলো নার্স— তিনি আর নেই।

    গ্রোনিভেল্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যবস্থা করল তার উত্তরসূরি ক্রস ডি লিনা। এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য হাজির হলেন লাস ভেগাসের সব জ্যোতিষ্ক স্থানীয় মহাজনরা। হাজির হতে লাগল শীর্ষস্থানীয় জুয়াড়ি, গ্রোনিভেল্টের  বহু নারীবন্ধু এবং হোটেল জানাদুর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তারা উপস্থিত হলেন তার মতো একজন মহান ব্যক্তির শ্রদ্ধায়, যিনি গ্যাম্বলিংকে একটি শৈল্পিক ও বৈধ রূপ দিয়ে গেছেন।

    পাশাপাশি গ্রোনিভেল্ট তার জীবনে সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের চার্চের জন্য ব্যয় করে গেছেন বিপুল পরিমাণে অর্থ। এই দান প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, যারা ধর্ম এবং জুয়ায় বিশ্বাসী এই চার্চ তাদের জন্য উপহারস্বরূপ। গ্রোনিভেল্ট ধর্মীয় বিশ্বাস ও জুয়ায় বিশ্বাসকে এক করে দেখাতে চেয়েছেন।

    গ্রোনিভেল্ট ভেগাসে বস্তি এলাকা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছিলেন। তিনি নির্মাণ করেছেন প্রথম শ্রেণীর হাসপাতাল এবং উন্নতমানের স্কুল। এসব কাজে সর্বদা তিনি ছিলেন আত্মতুষ্টির দাবিদার। পার্শ্ববর্তী আটলান্টিক শহরের প্রতি গ্রোনিভেল্টের  ছিল অবজ্ঞা। তিনি মনে করতেন, শহরের কর্তৃপক্ষ কেবল নিজের পকেটে টাকা পুরতেই ব্যস্ত। সামাজিক উন্নয়নের জন্য তারা কিছুই করেনি।

    মানুষকে গ্রোনিভেল্ট বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে গ্যাম্বলিং কোনো নোংরা পন্থা বা দোষের কিছু নয়। এটি গলফ, বেসবলের মতোই মধ্যমান বিনোদনের উৎস। অমেরিকায় তিনি গ্যাম্বলিংকে একটি বৈধ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব কারণে লাস ভেগাসের সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয় তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে।

    ক্রস সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরালায় এক কোণে চোখের জল ফেলছিল। গ্রোনিভেল্টের  মৃত্যু যেন তাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। গ্রোনিভেল্টের সাথে তার খাঁটি অন্তরঙ্গতা ছিল, তেমনটি আর হয়নি আগে। তবে ক্রস এখন হোটেল জানাদুর একান্ন শতাংশের মালিক, যার অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচশ মিলিয়ন ডলারের মতো।

    ক্রস জানে, এই উত্তরাধিকার তার জীবনের অবশ্যই আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ধীরে ধীরে সে যতই ধনী ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠবে, সাথে সাথে সে ততই হবে বিপজ্জনক। ডন ক্লেরিকুজিও ও তার পরিবারের সাথে ক্রসের সম্পর্কও কেবল প্রতিনিধিত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, বাড়বে দূরত্ব।

    ক্রসের এখন প্রথম কাজ কুওগের সাথে যোগাযোগ করা। সেখানে তাকে আলোচনা করতে হবে জর্জিও’র সাথে। জর্জিও তাকে দেবে কিছু নির্দেশনা।

    জর্জিও’র সাথে দেখা হলো ক্রসের। জর্জিও তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল একমাত্র পিপি ছাড়া গ্রোনিভেল্টের  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ক্লেরিকুজিও পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত হতে পারবে না। ডেন্টিও নয়। কারণ ডেন্টি তার নির্ধারিত মিশন কমপ্লিট করার জন্য বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু জর্জিও’র তো অতিরিক্ত কোনো কাজ নেই। সে-ও যে গ্রোনিভেল্টের  শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছে না তা পরিষ্কার জানিয়ে দিল ক্রসকে। আসলে এর কারণ হলো– ক্রস যে হোটেলের অর্ধেক মালিকানা হাতিয়ে নিচ্ছে তা সে জানায়নি।

    এদিকে ক্রস তার বোন ক্লডিয়ার কাছ থেকে একটি ম্যাসেজ পেল। এর প্রতিউত্তরে ক্রস যখন যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল, তখন ক্লডিয়া আর কোনো সাড়া দেয়নি। আরেকটি ম্যাসেজ পেল সে আর্নেস্ট ভেইলের কাছ থেকে। ভেইলকে ক্রস খুব পছন্দ করে, কিন্তু ভেইলও কেন যেন বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দেখাল।

    গ্রোনিভেল্টের  সারা জীবনের বন্ধু ছিল পিপি। ক্রসের বাবা পিপি। পিপির কাছ থেকেও ক্রস পেল একটি ম্যাসেজ। সে ম্যাসেজেটি ছিল– ক্রস তার ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে কেমন উপদেশ আশা করছে। আর, তাছাড়া ক্রসের নতুন স্ট্যাটাস কিংবা সম্পদ সম্পর্কে তার বাবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

    ক্রস তার বাবার ম্যাসেজে আরো জানতে পারল– ডন ক্লোরিকুজিওর সাথে কাজ করতে গেলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ক্লেরিকুজিও চান পশ্চিমে তার প্রতিনিধি ব্ৰগলিওন হবে তার নিজস্ব লব্ধ অধিকারে ক্ষমতাবান ও সম্পদশালী।

    এসব নিয়ে ডন খুব পরিষ্কার সিদ্ধান্ত আশা করেন। ক্রসেরও এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রস অবশ্য আশা করছে যে, তার বাবা তাকে যথাসাধ্য সমর্থন ও সহযোগিতা যুগিয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডনের তিন পুত্রকে নিয়ে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি এবং ডনের অপর নাতি ডেন্টি। এদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, এটাই এখন ক্রসের চিন্তার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    ডনের স্ব-নির্মিত পারিবারিক চ্যাপেলে যেদিন ক্রস ও ডেন্টির ব্যাপটাইজ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হচ্ছিল, সেদিন থেকেই তারা পরস্পরের শত্রু- এমন একটি জোক এখনও ডন পরিবারে চালু আছে।

    সেই ডেন্টি বর্তমানে ভেগাসে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভেগাসে সে বিগ টিম নামে একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে চাকরি করবে। বিষয়টি ক্রসের জন্য বিরক্তির কারণ, কেননা ডেন্টি বিগ টিমের জন্য আগ্রহী নয়– ব্যাপারটি ভালোভাবেই জানে ক্রস। কিন্তু বেচারা ডেন্টি! তার করার কিছুই নেই। ডন নিজেই ডেন্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এই ক্ষেত্রটিতে। এ বিষয়ে ক্রসের চিন্তা এখন একটাই— কিভাবে ডেন্টি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরিটি করবে।

    আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান ঘিরে যে সমাগম, তা এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড়। গ্রোনিভেল্টের  মতো একজন জিনিয়াসকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছেন অনেক লোক!

    গ্রোনিভেল্টের  মৃতদেহ সটান শুইয়ে রাখা হয়েছে তারই অর্থে নির্মিত প্রটেস্ট্যান্ট চার্চে। এই চার্চটিতে তিনি পুরোহিত নিয়োগ করেছিলেন ইউরোপ থেকে আর এর নির্মাণশৈলী ছিল খোদ আমেরিকার নিজস্ব শিল্প থেকে নেয়া। ভেগাসের এই চার্চের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো চার্চটির বাইরে পার্কিংয়ের জন্য বিশাল লন। তাছাড়া এখানে ইউরোপীয়দের চেয়ে ন্যাটিভ আমেরিকান বোধকেই প্রাধান্য দেয়া হয় এ বিষয়টিও বিখ্যাত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।

    চার্চের গায়ক দলের কণ্ঠে সুরের মূর্ঘনায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। ঈশ্বরের স্তুতি সঙ্গীতে যেন পবিত্রতার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল। গায়ক দল গ্রোনিভেল্টের  স্বর্গ যাত্রার জন্য প্রার্থনা করছিল– সুরে সুরে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ উজাড় করে।

    অদূরে শোকাহত শত শত গ্রাজুয়েট ছাত্র সমবেত হয় চার্চে। এসব ছাত্রের জন্য গ্রোনিভেল্ট প্রচুর অর্থ সহযোগিতা করেছিলেন। তাদের এই দাতার মৃত্যুতে অনেকেই ভেঙে পড়ে কান্নায়। কেউ কেউ হোটেলের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ব্যাকুল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। মধ্যবয়সি কিছু মহিলা গ্রোনিভেল্টের  চিরবিদায়ে নীরব অশ্রুপাত করে যাচ্ছিল। এই মহিলাদের অনেকে ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগের কর্মী, অনেকে আবার ক্যাথলিক অনুসারী। গ্রোনিভেল্ট সকল ধর্মাবলম্বীদের সহযোগিতা করেছিলেন, উপাসনালয় নির্মাণে দিয়েছিলেন অর্থ।

    নাভাদা রাজ্যের গভর্নর ওয়াল্টার ওয়াভেনও গ্রোনিভেল্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত হলেন। তিনি এলেন মেয়র প্রদত্ত এসকর্টে। আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  শবযাত্রার জন্য ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি দেখে ওয়াভেন তার দেহরক্ষী গুটিয়ে নিলেন। সিমেট্রি বা কবরস্থানের উদ্দেশ্যে শবযাত্রার দীর্ঘ লাইনে তিনিও শামিল হলেন। গ্রোনিভেল্টের  মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি এগিয়ে চলল সিমেট্রির উদ্দেশ্যে। পলকে তিনি ছেড়ে যাচ্ছিলেন তার তৈরি পৃথিবী–এ যাত্রাই তার শেষ যাত্রা।

    সে রাতে ভেগাসের শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের অন্তরে অন্তস্তল থেকে জানাল শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসা প্রকাশের অভিনব উন্মত্ততা রেকর্ড সৃষ্টি করল, যা কেবল বর্ষবরণ নিউ ইয়ার ইউ এ-ই হয়ে থাকে। গ্রোনিভেল্টের  কফিন যখন কবরে রাখা হলো তখন অনেকে তাদের অর্থও শ্রদ্ধার সাথে রাখল কফিনের ওপর। তারপর ঢেকে দেয়া হলো মাটি দিয়ে গ্রোনিভেল্টকে।

    দিনের সমাপ্তি ঘটল, আরো ক্রস ডি লিনা তার নতুন জীবন শুরু করার জন্য শুরু করল প্রস্তুতি। সেই রাতে, ম্যালিবু কলোনিতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন তার বিচ হাউসে ছিল একাকী। মনে হাজারো প্রশ্নের দোলা– কি করবে সে, কি করার আছে তার?

    সম্মুখ সমুদ্র থেকে হিমেল হাওয়া প্রবেশ করছিল সামনের খোলা দরজা দিয়ে। কোচে বসা অ্যাথেনা সাগরের শীতল হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল– কেঁপে উঠছিল একই সাথে তার অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে কষ্টে।

    শিশুকাল থেকেই অ্যাথেনা স্বপ্ন দেখত বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হবার এবং তা সে খুব অল্প সময়েই অর্জন করতে সমর্থ হয় যার ফল আজকের বিশ্ব কাঁপানো অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। অ্যাথেনা নিজের কথা ভেবে অবাক হয়।

    অবাক হয় সে একজন পরিপূর্ণ নারী হিসেবে নিজকে ফুটিয়ে তুলতে কত কি-ই না তাকে করতে হয়েছে। একজন মুভিস্টারের ক্যারিশমা হয় অত্যন্ত শক্তিশালী। বিশেষ করে কোনো নায়কের সাথে বিশেষ এডাল্ট দৃশ্যে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নায়িকাকে অবশ্যই পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে– শারীরিক ও মানসিকভাবেও থাকতে হবে তাদের সৌন্দর্যের সব কলা। তাদের কখনোই থাকবে না বিছানা-সঙ্গী হওয়ার ইতিহাস। মুখে কখনো থাকবে না কোনো দাগ; কুৎসিত চেহারা তো কাম্য নয়ই, তাছাড়া চেহারার ত্বকে থাকবে না কোনো ভাজ। তারা কখনোই মৈথুনে অভ্যস্ত হবে না কিংবা হতে পারবে না ভালোবাসার ভিখেরী। অত্যন্ত কঠিন জীবন পার করতে হবে তাদের শুধুমাত্র বিখ্যাত হওয়ার জন্যই।

    অ্যাথেনা জন্মেছে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান দুটি মানুষের ঘরে। সেখানে সবকিছুই ছিল তার জন্য স্বাভাবিক। অ্যাথেনা ভাবতে লাগল– তার আছে অত্যন্ত ভালো মনের একজন বাবা ও মা যারা তার জন্য উপহারস্বরূপ। পূজনীয়। অ্যাথেনা তার বাবা-মার কথা ভেবে গভীর শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে ফেলল। তার মনে একের পর এক স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগল সিনেমার পর্দার মতো– বাবা-মা অ্যাথেনার শারীরিক-মানসিক সৌন্দর্য এবং শিক্ষিত করে তুলতে সাধ্যের সবটুকু করেছেন। বাবা ছিলেন তার ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষক। মা শেখাতেন সাহিত্য এবং কলা। অ্যাথেনা তার শিশুকাল হাতড়ে মনে করতে পারে না যে সে ক্ষণিক সময়ের জন্যও তার বাবা-মার কাছে অসুখী ছিল, এমনকি সে তার কিশোর উত্তীর্ণ সতের বছর পর্যন্তও নয়।

    এরপর আকস্মিক বজ স্কানেটের প্রেমে পড়ল অ্যাথেনা। তার চেয়ে মাত্র চার বছরের বড় স্কানেট। আঞ্চলিক ফুটবলের তারকা খেলোয়াড় সে।

    হাস্টনের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি তাদের। অ্যাথেনা যেমন রূপসী তেমনি অপরদিকে স্কানেট সুন্দর ও যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। সেই সাথে সদা উচ্ছল ও মজার মানুষ সে। স্কানেট ও অ্যাথেনা যখন পরস্পর মুখোমুখি হতো, মনে হতো, যেন উভয় উভয়কে ম্যাগনেটের মতো আকর্ষণ করছে। উভয়ের নার্ভগুলো উত্তেজিত হতো উচ্চমাত্রার ভোল্টেজে-মিশে যেত একে-অপরের মাঝে, হারিয়ে যেত শিহরণে শিহরণে, সুখের অমিয় ধারার মাঝে। এভাবেই খুঁজে পেয়েছিল তারা একে-অপরকে। এই স্বর্গীয় সুখের ধারায় চিরকাল অবগাহন করতে অবশেষে তারা বিয়ে করল।

    বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই অ্যাথেনা গর্ভবতী হলো। কিন্তু তারপরও তার শারীরিক সৌষ্ঠব বজায় ছিল। তবে কিছুটা যে পরিবর্তন হয়নি তা নয়– শরীরের ওজন একটু বেড়েছিল বৈকি। এতে তার খুব একটা সমস্যা হয়নি, কখনো অসুস্থ বোধও হয়নি তার সন্তান লাভের বিষয়টি বরং সে ইনজয়ই করেছে। কলেজেও গিয়েছে নিয়মমাফিক, ড্রামার ক্লাস করেছে– গলফ ও টেনিস খেলেছে নিয়মিত।

    টেনিসে বরাবরই ছিল বজ অ্যাথেনার চেয়ে ভালো। তবে গলফে খুব সহজেই অ্যাথেনা হারিয়ে দিত বজ স্কানেটকে।

    বজ তার বাবার ব্যাংকে কাজ করত। আর এদিকে তাদের ঘরে এলো একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রাখা হলো ব্যাথেনি। ব্যাথেনির জন্মের পরও অ্যাথেনা স্কুল যাওয়া অব্যাহত রেখেছিল। এ অবস্থায় নবজাতকের পরিচর্যার জন্য বিত্তশালী স্কানেট নিযুক্ত করল একজন ধাত্রী ও একজন মেইড সার্ভেন্ট।

    বিবাহোত্তর অ্যাথেনা যেন জ্ঞান আহরণে আরো বেশি মরিয়া হয়ে উঠল। অধ্যয়ন করত যেন ক্ষুধার্তের মতে, বিশেষ করে খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ছিল তার দারুণ অনুরাগ। তারকাখচিত খেলোয়াড় পিরানডেলোর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হতে, উইলিয়ামসের জন্য অ্যাথেনা ছিল রীতিমতো পাগল।

    অ্যাথেনা ক্রমেই পরিপক্ব হয়ে উঠছিল। তার বুদ্ধিমত্তা, তার সৌন্দর্যকে একই ফ্রেমে বেঁধেছিল, যা তাকে করেছিল আরো মহৎ। অ্যাথেনার এই বুদ্ধিমত্তার কাছে কখনো কখনো তার সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে যেত।

    অবশ্য অনেকেই যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেকেই অ্যাথেনার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকে একদণ্ড কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে থাকত। ভালোবাসত তাকে। প্রেম নিবেদনও করেছে অনেকে। বিষয়টি অ্যাথেনার কাছে বিস্ময়ের ছিল না কিছু।

    অ্যাথেনার মতো এমন বুদ্ধিমতী, শিক্ষিত, রুচিশীল এবং সর্বোপরি সুন্দরী একজন স্ত্রীর কারণে স্কানেট তার বন্ধুমহলে ছিল ঈর্ষার পাত্র। অ্যাথেনাও নিজের নিপুণতায় ছিল গর্বিত। পরবর্তী প্রায় বছর খানেক সে দেখেছে তার এই নিপুণতা অনেক মানুষের উত্তেজনার কারণ হয়েছে। এ থেকে বাদ যায়নি তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিকরাও।

    বজ প্রায়ই জোক করে বলত, কি আর করা! অ্যাথেনার হাজারো গুণগ্রাহীর জন্য এখন আমাকে পথে পথেই কাটাতে হবে প্রতিটি রাত। বজ স্কানেটও যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সে জানত তার এই গুণবতী স্ত্রী জীবনের একটা বড় কিছু প্রাপ্তির দিকে ছুটছে। সে জানত অ্যাথেনা একজন অতিনারী এবং বজের এই বোধ থেকেই সে স্বয়ং বুঝতে পারত তার স্ত্রীকে আজীবন ধরে রাখা কঠিন হবে। স্কানেট অনুভব করত অ্যাথেনাকে নিয়ে তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নও হয়তো একসময় ধূলিসাৎ হবে। তার এই কৌতূহলকে প্রমাণ করার জন্য কোনো বিশেষ যুদ্ধের দরকার নেই। অন্তত স্কানেটের নিজের তরফ থেকে কোনো ক্রটি নেই বলে সে নিশ্চিন্ত। তারপরও অ্যাথেনাকে নিয়ে তার সন্দেহ। তবে মাঝে মাঝে অ্যাথেনার চেয়ে নিজেকে বেশ দুর্বল ভাবত বজ। নিজের মাঝে উঁকি দিয়ে সে খুঁজত— এমন কি আছে তার মাঝে? কিছুই পেত না, কেবল উচ্ছলতা ও তার শারীরিক ফিটনেস ছাড়া। বিশেষ কোনো মেধাও সে খুঁজে পেত না তার নিজের মাঝে। আর স্কানেট তার ভবিষ্যতে ব্যাপক প্রাচুর্য কিংবা প্রাপ্তির প্রতিও খুব একটা আগ্রহী ছিল না।

    ধীরে ধীরে স্কানেটের মনে অ্যাথেনার বিরুদ্ধে হিংসার জন্ম নিতে শুরু করল। অ্যাথেনার জনপ্রিয়তা, বিশ্বে তার যে একটা নিশ্চিত অবস্থান হতে যাচ্ছে। এসব নিয়ে তার মনে তোলপাড় শুরু হলো।

    স্কানেট তার অনিশ্চিত ভাগ্যের সাক্ষাৎ লাভে এগিয়ে গেল আরেক ধাপ। শুরু হলো তার অতিরিক্ত মাত্রায় মদপান। কলিগদের স্ত্রীদের সাথে শুরু হলো তার মেলামেশা। এই ফাঁকে বাবার ব্যাংকে তার কাজে অবহেলায় হিসাব নিকাশে দেখা গেল গরমিল। নিজেকে সে বুদ্ধিমান হিসেবে আখ্যা দিয়ে। গর্ববোধ করত। যেমন কোনো মানুষ কোনো কিছুতে দক্ষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে করে থাকে। আর এসবের পাশাপাশি স্ত্রী অ্যাথেনার বিরুদ্ধেও স্কানেটের বিদ্বেষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করল।

    শরীরের প্রতি তুমুল অনিয়ম সত্ত্বেও স্কানেটের স্বাস্থ্যহানী ঘটেনি বিন্দুমাত্র। তার শরীর ছিল এক্সট্রা অর্ডিনারি।

    স্কানেট আকস্মিক নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠল– দুর্বার নিয়মিত শরীর চর্চা। মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিল। মেতে উঠল সে সরাসরি রিংয়ে নেমে প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে আঘাত করতে–ধূর্ততার সাথে শিখল বক্সিং-এর ষোল কলা। নিজেকে কষ্ট দিতে ক্রমেই আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। শিকারের প্রতি বাড়ল তার আগ্রহ হত্যার খেলায় মেতে উঠল স্কানেট।

    এক পর্যায়ে অ্যাথেনাকে শায়েস্তা করতে ব্যাকুল হয়ে উঠল। অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করল স্কানেট। মাথায় এলে তাদের আরো সন্তান জন্ম দিতে হবে। পাঁচ-ছটি সন্তান তাদের ঘরে এলেই হয়তো তারা আবার আগের মতো কাছাকাছি আসতে পারবে। আর অ্যাথেনার ঊর্ধ্বগামী উচ্চাকাঙ্ক্ষারও পতন ঘটবে, ফিরে আসবে বজ স্কানেটের বুকে। কিন্তু স্কানেটের এই দূরভিসন্ধি বুঝতে পেরে অ্যাথেনা তার সন্তান বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিল। সে বলল, তুমি যদি আরো সন্তান চাও তবে অন্য কোনো নারীর কাছে যেতে পারো। তুমি ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছ স্কানেট …

    অ্যাথেনার এটাই ছিল স্কানেটের প্রতি বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করার প্রথম ঘটনা। স্কানেট এতে মোটেও বিস্মিত হয়নি যে, অ্যাথেনা স্কানেটের অনাস্থার বিষয়টি জেনে গেছে। অবশ্য স্কানেট এটা লুকানোরও চেষ্টা করেনি। আসলে সে চালাকিই করেছিল। এতে স্কানেট তার স্ত্রীকে নিজের পথে চালিত করতে পারত।

    অ্যাথেনার কাছে বজ ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছিল। বজকে বোঝা তার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠছিল। কিন্তু অ্যাথেনার বয়স ছিল এতই কম যে বজের প্রতি তার প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেয়ার মতো বুদ্ধি বা চিন্তা তার আর করা হলো না। এমন কলহ তাদের জীবনে নেমে এলো, যখন অ্যাথেনার বয়স মাত্র কুড়ি। তখন কেবল তার চরিত্রের গঠন পর্ব শুরু হয়েছে।

    বজ শুরু করল নতুন খেল। সে এমন কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটাল, যা সত্যিকার অর্থেই নারীরা ঘৃণা করে থাকে। স্কানেট নিজেকে অ্যাথেনার কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করল, যেন সে একেবারেই বিচার-বুদ্ধিই পড়েছিল।

    বজ স্কানেট নিয়মিত তাদের কাপড়-চোপড়গুলো ড্রাই ক্লিনিংয়ের জন্য নিয়ে যেতে শুরু করল। নিজের কাজ শেষে পরিবারের আনুষঙ্গিক কাজে অ্যাথেনাকে সহযোগিতা করতে লাগল। অ্যাথেনা অভিনয় করে যেতে লাগল। অ্যাথেনার উদ্দেশ্যে বলত, হানি, আমার চেয়ে তোমার সময়ের মূল্য অনেক বেশি। তোমাকে তোমার ডিগ্রির পাশাপাশি মিউজিক ও ড্রামার ক্লাসও চালিয়ে যেতে হচ্ছে …

    স্কানেটের এমন উক্তিতে অ্যাথেনার কোনো ভাবান্তর হতো না। এর কারণ বজ স্কানেটের কণ্ঠে থাকত না কোনো প্রাণ। তার সবকথাই অ্যাথেনার কাছে। মেকি মনে হতো।

    একদিন অ্যাথেনা যখন গোসল করছিল বজ বগলদাবা করে তার কাপড় নিয়ে হাজির হলো সেখানে। চোখে পড়ল অ্যাথেনার নগ্ন সৌন্দর্য। সোনালি চুল, নিখুঁত ফরসা ত্বক, সুডৌল স্তন আরো সুগঠিত পশ্চাৎদেশ। অ্যাথেনার সারা সৌন্দর্য ঢেকে রয়েছে ফিনফিনে ফেনিল সাবানে। কয়েক পলক তাকিয়ে ছিল বজ অ্যাথেনার সৌন্দর্যের দিকে। তারপর স্বাভাবিক হলো সে। সূক্ষ্ম কণ্ঠে বলে উঠল, তোমার এই ড্রেসগুলো যদি তোমার মতোই বাথটাবে ভিজিয়ে দেই কেমন হয় বলে তো! কিন্তু, বজ তা করল না। অ্যাথেনার কাপড়গুলো ঝুলিয়ে দিল ক্লোসেটে। বাথটাব থেকে তাকে উঠে আসতে সাহায্য করল। গোলাপি টাওয়েল জড়িয়ে দিল নগ্ন শরীরে। তারপর ভালোবাসার আস্বাদ গ্রহণ করল সে অ্যাথেনার কাছ থেকে। কয়েক সপ্তাহ পর এমনই এক ঘটনার পুনরাবৃদ্ধি হলো। কিন্তু এবার বজ অ্যাথেনার কাপড়গুলো আর ক্লোসেটে ঝুলাল না বাথটাবের পানিতেই ভিজিয়ে দিল। হতভম্ব হলো অ্যাথেনা। কাপড় আর শরীরে মতো ভিজে গেল তার চোখও।

    বজ আর অ্যাথেনার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলতে লাগল এভাবেই। এক রাতে বজ আকস্মিক ডিনার সেটের সমস্ত বাসন-কোসন ভেঙে ফেলতে উদ্যত হলো— কিন্তু শেষ অবধি তা সে করেনি। সপ্তাহ খানেক পর সে কিচেনের সব জিনিসপত্র আছড়ে ভেঙে ফেলতে লাগল। অবশ্যই এমন ঘটনা ঘটাবার কিছুক্ষণ পরই বজ অনুশোচনায় ভুগত এবং অবশেষে অ্যাথেনার কাছে ক্ষমা চাইত। সর্বদাই এমন ঘটনার পর ভালোবাসার চেষ্টা করত বজ। কিন্তু অ্যাথেনার কাছ থেকে সাড়া পেত না– এড়িয়ে চলতে লাগল অ্যাথেনা। পৃথক কক্ষে ঘুমাতে শুরু করল।

    এর রাতের ঘটনা– ডিনারের সময় বজ তার হত মুষ্টিবদ্ধ করে অ্যাথেনার মুখের কাছাকাছি নিয়ে বলল, তোমার মুখটি হবে পারফেক্ট। যদি আমি ঘুষি মেরে তোমার নাকটি ভেঙে দিই, তবে সেটি হবে নতুন চরিত্রের সৃষ্টি দেখতে হবে অনেকটা মারলন ব্র্যান্ডের মতো।

    বজের এমন উক্তির পর অ্যাথেনা তাৎক্ষণিক ছুটে গেল কিচেনে– পেছনে পেছনে ছুটল বজও। অ্যাথেনা ভীষণ ভয় পেয়েছিল। পেছনে বজকে দেখে একটি ছুরি তুলে ধরল বজের দিকে। বজ অ্যাথেনার এমন আচরণে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। বলল, পৃথিবীতে এটা হচ্ছে এমন একটা কর্ম যা তোমার দ্বারা হবে না কখনো। সত্যিই অ্যাথেনা তা পারবে না কখনো। বজ খুব সহজভাবে অ্যাথেনার হাত থেকে ছুরিটি সরিয়ে নিয়ে বলল, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি, কিন্তু তুমি করলে ভুল– আসলে তোমার সেনস অব হিউমার বলতে নেই।

    এভাবে অ্যাথেনা দিন দিন বজের বিকৃত আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল। তখন তার বয়স মাত্র কুড়ি। ইচ্ছে করলে অ্যাথেনা তার বাবা-মার সাহায্য কামনা করতে পারত। কিন্তু তা সে করল না। এমনকি সে তার বন্ধুদের সাথেও এ নিয়ে আলোচনা করেনি কখনো। তার চেয়ে বরং সে নিজেই এর যথাযথ সমাধান বের করতে চিন্তায় ডুবে গেল– অবশ্য নিজের বুদ্ধিমত্তার ওপর অ্যাথেনার ছিল চরম আস্থা। তারপর অ্যাথেনা কখনোই তার কলেজের পাট শেষ করতে পারবে না। ক্রমেই পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

    অ্যাথেনা বুঝতে পেরেছিল, তার কলেজ কর্তৃপক্ষও তাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তাই সে মনে মনে বজের প্রতি ব্যাপক ছাড় দেয়ার কথা ভাবল। বজকে সত্যিকার ভালোবাসতে পুনরায় পুরনো বজকে ফিরে পেতে অ্যাথেনা চেষ্টা করতে লাগল। প্রথমে সে তৈরি করার চেষ্টা করল নিজেকে। কিন্তু পারল না। বজের প্রতি অ্যাথেনার বিরূপ ভাব এমনই প্রকট রূপ নিয়েছিল যে, সে তার মুখোমুখি দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বজ তাকে স্পর্শ করবে এমন কথা চিন্তাও করতে পারল না। অ্যাথেনার মধ্যে অতি সন্তর্পণে যে ঘৃণার বীজ ধীরে ধীরে রোপিত হচ্ছিল, এতদিন পর তা সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো। উপলব্ধি করল ভালোবাসা পেতে সে আর কখনো কাউকে প্রমাণ প্রয়োগে বিশ্বাস জন্মাতে পারবে না।

    তার চেয়ে বরং বজের সংসার থেকে সরে এলে কেমন হয়– অ্যাথেনা ভাবল। চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত যদি অ্যাথেনা নিতে চায় তবে বজ কি এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে? হয়তোবা। একমাত্র কন্যা সন্তান ব্যাথেনিকে নিয়েই সমস্যায় পড়বে অ্যাথেনা। এত সহজে ব্যাথেনিকে ছেড়ে দেবে না বজ। একের পর এক সমস্যার চিন্তা মাথায় এসে জড়ো হতে লাগল। অ্যাথেনা বিভ্রান্ত হতে থাকল।

    বজ প্রায়ই তাদের এক বছরের সন্তানকে নিয়ে ভয়াবহ খেলায় মেয়ে উঠত। ব্যাথেনিকে শূন্যে ছুঁড়ে আবার তাকে শূন্য থেকে লুফে নিত। মাঝে মাঝে অ্যাথেনাকে দেখিয়ে এমন ভাব করত যেন ব্যাথেনিকে শূন্যে ছুঁড়ে তাকে আর ধরবে না। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ব্যাথেনিকে লুফে নিত। এভাবেই একদিন শূন্যে ব্যাথেনি ছুঁড়ে বজ আর ধরতে পারল না। শিশুটি পড়ে গেল মেঝেতে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ছুটে এলো অ্যাথেনা, মেঝে থেকে বুকে তুলে নিল শিশুটিকে। বিভিন্নভাবে পরখ করে দেখল সে। কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো মা অ্যাথেনা। তবে মেয়ের শয্যাপাশে ঠাই জেগে কাটিয়ে দিল সারাটি রাত— তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। ব্যাথেনি সুস্থ ছিল, নিশ্চিন্ত হলো অ্যাথেনা। তবে মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছিল তাদের শিশু কন্যাটি। একটু ফুলেও উঠেছিল। কন্যার এ অবস্থা দেখে মারাত্মক বিপর্যস্ত হলো বজ। অনুশোচনার কেঁদেই ফেলেছিল। অ্যাথেনার কাছে অশ্রুসজল নয়নে চেয়েছিল ক্ষমা এই প্রতিশ্রুতিতে যে, সে আর কখনো এমন ভয়াবহ কাণ্ড করবে না। অ্যাথেনাকেও আর কষ্ট দেবে না। কিন্তু অ্যাথেনা আর বজের কথায় কর্ণপাত করল না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ভাবল।

    পরের দিন অ্যাথেনা তার ব্যাংকের সমস্ত হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করল, অর্থাৎ ব্যাংক থেকে তার টাকা-পয়সা তুলে নিল। তারপর চিন্তা করল সে এমন এক অজ্ঞাত স্থানে চলে যাবে যেখানে কোনোমতেই পিছু নিতে পারবে না বজ। ঠিকানার বিন্দুবিসর্গও রেখে যাবে না অ্যাথেনা বজের জন্য। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অ্যাথেনা আর দেরি করেনি।

    দুদিন পর বজ যখন তার কাজ শেষে ফিরে এলো তখন স্ত্রী অ্যাথেনা বা কন্যা ব্যাথেনি কাউকেই পেল না বজ।

    দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর অ্যাথেনা লস অ্যাঞ্জেলেসে আত্মপ্রকাশ করল। ব্যাথেনি ছিল না সঙ্গে।

    অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন শুরু করল তার কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের জন্য সংগ্রাম। খুব সহজেই একটি মধ্যমানের এজেন্টও পেয়ে গেল অ্যাথেনা এবং প্রাথমিক অবস্থায় ছোটখাটো থিয়েটার গ্রুপগুলোতে কাজ শুরু করল। মার্ক ট্যাপার ফোরামে একটি নাটকে অভিনয়ের সুবাদে অ্যাথেনা একটি ছোট ব্যানারের মুভিতে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেল।

    ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটতে লাগল যে অ্যাথেনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই ছোট চরিত্রের পর সুযোগ এলো একটি এ গ্রেড ছবির সহযোগী চরিত্রে অভিনয়ের। এ ছবিতেও অ্যাথেনা জনপ্রিয় হলো। আর পরবর্তী ছবিতে নায়িকা চরিত্রে প্রশংসিত হবার পর থেকেই একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে থাকল। সেই সাথে বজ স্কানেটও তার জীবনে ধীরে ধীরে পুনরায় প্রবেশ করতে লাগল।

    বজ চলচ্চিত্র একাডেমিতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটাল। এতে অবশ্য অ্যাথেনা খুব একটা বিস্মিত হয়নি। তবে সেদিনকার সেই অ্যাসিড বলে রুপালি রঙ ছুঁড়ে মারার বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে শুধুমাত্র জোক বা কৌতুক বলে মনে হলেও অ্যাথেনা সন্দিহান। বজকে অ্যাথেনার চেয়ে বেশি আর কে চেনে। সে জানে, এবারের বোতলে পানি থাকলেও পরবর্তী কোনো দিন বজের হাতে থাকবে সত্যিকারের অ্যাসিডপূর্ণ বোতল।

    স্টুডিওতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্লডিয়া ডি লিনার উদ্দেশ্যে বলল মলি ফ্লান্ডারস।

    সকালের আলোপচারিতা শুরু হয়েছিল স্টুডিওকে ঘিরেই। মলি ফ্লাডারসের কণ্ঠে ঝরে পড়ল এক অনিশ্চয়তার সুর অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এর কারণ সেই একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ঘোষণার দিন অ্যাথেনাকে লক্ষ্য করে কথিত অ্যাসিড ছোঁড়ার ঘটনাটি। অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছে, অ্যাথেনা হয়তো তার ছবির কাজে আর ফিরে যেতে পারবে না। অথচ বানজ হোমাকে স্টুডিওতে চায়। তারা চায় তুমি যেন অ্যাথেনার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করো।

    ক্লডিয়া আর্নেস্ট ভেইলকে সাথে করে প্রতিউত্তরে বলল, যত শিগগির সম্ভব এখানকার কাজ শেষ করার জন্য আমি তাকে বলব। তবে আমার মনে হয় সে ঘাবড়ে যায়নি।

    মলি ফ্লান্ডার একজন বিনোদন বিষয়ক আইনজীবী এবং শহরের অনেকেই তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। চলচ্চিত্র জগতের আইনজীবী হিসেবে তার নামডাক রয়েছে বেশ। আদালত কক্ষে মোকদ্দমার লড়াই মলি বেশ উপভোগ করে। অধিকাংশ মোকদ্দমায় তার জয়লাভের সুখ্যাতি রয়েছে। তার এই যশের কারণ মলি নিজেও একজন অভিনেত্রী ছিলেন এবং চলচ্চিত্র জগতের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল, যা তার আইন প্রয়োগে সহায়ক।

    এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে মলি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিরক্ষা বিষয়ক দফতরের প্রধান অ্যাটর্নি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেই সময় সে খুনের মামলার প্রায় কুড়িজন আসামিকে গ্যাস চেম্বারে প্রেরণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এ ধরনের মামলায় সত্যিকারের খুনির বিরুদ্ধেও এমন শাস্তি প্রদানে তার স্নায়ু কেঁপে উঠেছিল। সে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে অবশেষে এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশকেই অধিকতর পছন্দের মনে করল। মলি প্রায়ই বলে থাকে এক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতার বালাই নেই এবং এখানকার অপরাধীরা বেশ রসিক ও বুদ্ধিমান।

    এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার ছাড়াও মলি এখন পরিচালক, কলাকৌশলী, চিত্রনাট্য লেখক সরবরাহ করে থাকে। আজকের এই সকালেও সে এমনসব কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত ছিল। তবে চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে প্রিয় ক্লায়েন্ট ক্লডিয়া ডি লিনাকে সশরীরের তার অফিসে উপস্থিত হতে দেখে আনন্দিত হলো মলি ফ্লান্ডারস। ক্লডিয়ার সাথে সে ব্যক্তিটি উপস্থিত হয়েছ, সে বর্তমানে ক্লডিয়ার চিত্রনাট্য রচনার পার্টনার, একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট ভেইল।

    ক্লডিয়া ডি লিনা ফ্ল্যাভারের শুধু প্রিয় ক্লায়েন্টই নয়, অনেক পুরনো একজন বন্ধুও। তাদের মধ্যে রয়েছে বেশ আন্তরিকতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। তাই ক্লডিয়া ভেইলের বিষয়টি মলি ফ্লাভারসকে দেখতে অনুরোধ করায় সে তাৎক্ষণিক তাতে সম্মতি প্রকাশ করল।

    তবে ভেইলের যে সমস্যা তা শুনে মলি নিরাশ হলো। ভেইলের এ সমস্যার সমাধান তার দ্বারা সম্ভব নয় বলে আক্ষেপ করল মলি। তবে আর্নেস্টকে তার খুব একটা পছন্দ হলো না। একজন পুরুষ হিসেবে তার প্রতি কোনো আকর্ষণবোধও করল না সে।

    আর্নেস্টের মামলাটি ছিল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত। মলির কাছে দেয়া সমস্ত কাগজপত্র ঘেঁটে আর্নেস্টকে দুঃসংবাদ ছাড়া কিছুই দিতে পারল না আইনজীবী মলি ফ্লান্ডারস।

    সে আর্নেস্টের উদ্দেশে বলল, আমি তোমার কন্ট্রাক্ট ও বৈধতার সব কাগজপত্র ঘেঁটে দেখলাম। সেখানে লডস্টোন স্টুডিওর বিরুদ্ধে নালিশ করার জন্য কোনো পয়েন্ট পাওয়া গেল না। তবে একটি উপায়ে তুমি তোমার অধিকার ফিরে পেতে পারো। এর জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কপিরাইটটি তোমাকে বের করতে হবে। সময়টি পরবর্তী পাঁচ বছর পরের হলে ভালো হয়।

    এক দশক আগেও আর্নেস্ট ভেইল ছিল আমেরিকার একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক। সমালোচিতও হয়েছিল সে। ব্যাপক পঠিত হয়েছিল তার লেখা। একটি নোভেলের চরিত্র নিয়েই পরে সমস্যা বাধে। লডস্টোন বইটির স্বত্ব কিনে নেয় এবং এর ওপর একটি ছবিও নির্মিত হয়। ছবিটি ব্যাপক সফলতা লাভ করে। পরপর দুটি ধারাবাহিক নির্মিত হয়, ব্যবসায় লাভ হয় ব্যাপক। পরবর্তীতে আরো চারটি সিকুয়েলের ছবি বোর্ডে আগমন ঝুলিয়ে রাখা হয়।

    দুর্ভাগ্যক্রমে ভেইল তার সব উপন্যাসের স্বত্ব প্রথম দফাতেই দিয়ে দিয়েছিল স্টুডিওর কাছে। কিন্তু সে চুক্তির পর চলচ্চিত্র থেকে একটি কণাও এ পর্যন্ত পায়নি সে।

    আর্নেস্ট ভেইল সর্বদা একজন কদাকার মানুষ। সবসময়ই তার চেহারায় ফুটে থাকে এক তিক্ততার অভিব্যক্তি। এটি অবশ্য ভিন্ন একটি কারণে ভালো বলতে হবে। সমালোচকদের সাথে খুব একটা মিশতে হয়নি তার। তবে তারা ভেইলের সমালোচনায় অব্যাহতভাবে মুখর। তাদের মন্তব্য পাঠক তার বই পড়ে বেশি দিন মনে রাখবে না। ভেইলের মেধা সত্ত্বেও তার জীবন একটু ছন্নছাড়া। বিগত বিশ বছরের মধ্যে দাম্পত্য জীবন হয়েছে বিচ্ছেদের তার তিন সন্তানও চলে গেছে স্ত্রীর সাথে।

    আর্নেস্ট ভেইলের একটি বই চলচ্চিত্রে বেশ সফলতা পায়। সেটি থেকেই ভেইলের কেবল এক দফা প্রাপ্তি আসে। অপরদিকে স্টুডিও ভেইলের ছবি করে বছরের পর বছর কামিয়ে নিচ্ছে দেদারসে বঞ্চিত হচ্ছে কেবল ভেইল।

    আমাকে খুলে বলো, ভেইল বলল।

    তোমার চুক্তিগুলো বোকা প্রমাণিত হবে–ভিত্তিহীন, মলি বলল। স্টুডিও তোমার লেখাগুলোর স্বত্ত্ব নিয়ে নিয়েছে। সেগুলো তাদের এখন ইচ্ছেমাফিক ব্যবহারের অধিকার আছে। কপিরাইটের আইন অনুযায়ী, তোমার মৃত্যুর পর তোমার সমস্ত কাজের অধিকার পাবে তোমার উত্তরাধিকারী।

    এতক্ষণ সময়ে প্রথমবারের মতো হাসল ভেইল। একটি ছোট্ট শব্দ উচ্চারণ করল তারপর মুক্তি।

    ক্লডিয়া কৌতূহলী হলো। প্রশ্ন করল, কেমন পরিমাণ অর্থ আমরা দাবি করতে পারি?

    অন আ ফেয়ার ডিল, মলি বলল, মোটের ওপর পাঁচ শতাংশ। যেহেতু তারা চুক্তিবহির্ভূত পাঁচটির বেশি ছবি নির্মাণ করেছে এবং এর জন্য তারা বিপদগ্রস্তও নয়। তাছাড়া নিয়মিত বিশ্বব্যাপী সফল ব্যবসা তো তাদের রয়েছেই। আমরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিলিয়নের কথা ওঠাব।

    কিছুক্ষণের জন্য মলি ফ্লাডার থামল। কি যেন ভেবে মিষ্টি একটা হাসি ঠোঁটে এনে বলল, যদি তুমি মৃত হয়ে থাকো, তবে তোমার উত্তরাধিকারী তৈরি করে এর চেয়েও বেশি এনে দিতে পারি হয়তোবা। আমাদের সত্যিকার অর্থেই তাদের মাথায় ধরার মতো বন্দুক আছে।

    তাহলে লডস্টোনে তাদের ডাকো। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করব। যদি তাতেও তারা সম্মত না হয়, তবে নিজেকে মেরে ফেলা ছাড়া তো আরো উপায় নেই। বলল ভেইল।

    প্রতিউত্তরে মলি বলল, তারা তোমাকে বিশ্বাস করবে না।

    তাহলেও আমি এটা করব। ভেইলের সাফ জবাব।

    যুক্তির সাথে কথা বলো ভেইল, দৃঢ় প্রত্যয়ী মলির উত্তর, তুমি মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের একজন লোক। অর্থের জন্য এ মৃত্যুর এ বয়স খুব বেশি নয়। ভালোর জন্য, দেশের জন্য, ভালোবাসার জন্য, বয়সে মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো, কিন্তু অর্থের জন্য নয়।

    আমাকে অন্তত আমার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য যোগান দিতে হবে। ভেইল বলল।

    মলির উত্তর, তোমার প্রাক্তন স্ত্রী এবং ঈশ্বরের কসম তুমি তো দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছ।

    আমি আমার প্রকৃত স্ত্রীর কথা বলছি। আমি আমার সেই স্ত্রীর কথা বলছি যার দুটি বাচ্চা আছে।

    মলি এবার বুঝতে পারল আর্নেস্ট ভেইলকে– কেন তাকে হলিউডের সবাই এত অপছন্দ করে। সে বলল, তুমি যা চাও তা স্টুডিও তোমাকে দেবে না। তারা ভালো করেই জানে যে তুমি মোটেও আত্মহত্যা করার মতো মানুষ নও। শুধুমাত্র একজন লেখকের এই ঘটনা গুরুত্ব পাবে না। হ্যাঁ, তুমি যদি অভিনয় শিল্পী হতে, তবে মানা যেত। একজন এ গ্রেডের পরিচালক হলেও হয়তো হতো, তবে একজন লেখক হিসেবে নয়।

    মলি আকস্মিক ক্লডিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, স্যরি ক্লডিয়া, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

    ক্লডিয়া বলল, আমি জানি আর জানে আর্নেস্ট। এক টুকরো শূন্য কাগজে মৃত্যুর সংবাদ এই শহরের সবাইকে যদি আতঙ্কিত না করে, তবে তারা। সম্পূর্ণরূপে আমাদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে। তাও কি তুমি কিছুই করতে পারবে না মলি?

    মলি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। লডস্টোনের প্রেসিডেন্ট ববি বানজের বিরুদ্ধে। আঘাত হানার যথেষ্ট ক্ষুদ্র উপকরণ হয়তো তার আছে কিন্তু … আপাতত সে এলি ম্যারিয়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল— এক নতুন মামলা।

    পোলো লাউঞ্জে তারপর ভেইল এবং ক্লডিয়া বসল ড্রিংকসের জন্য। ভেইল আচ্ছন্ন ছিল তখনও মলি ফ্লাডারসের দেয়া তথ্যগুলোর মধ্যে। ক্লডিয়ার দিকে উদাসী দৃষ্টি হেনে বলল, মলি একজন বিশাল আকৃতির মানুষ। আরো এমন মানুষের সাথে পরকীয়া বেশ সহজ। ছোটখাটো নারীদের চেয়ে এরা বিছানাতেও চমৎকার যে কোনো ধরনের পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই।

    ক্লডিয়া বিস্মিত হলেও, ভেইলের কথায় এমন চুলচেরা বিশ্লেষণের স্বাদ সে আগেই পেয়েছে। ভেইলের এই অতি-মেধাকে ভালোবাসে ক্লডিয়া–এসব  কারণেই তার প্রতি ক্লডিয়ার এত আগ্রহ। এমন জিনিয়াস ক্লডিয়ার জীবনে খুব একটা নেই।

    ক্লডিয়া এখনও ভালোবাসে ভেইলের উপন্যাস। সে বলল, তুমি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছ, ভেইল।

    আমি ঠিক বোঝাতে চাইছি যে, এমন বড়সড় মহিলারা বেশ মিষ্টি স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা তোমাকে ব্রেকফাস্ট বিছানা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এছাড়াও ছোটখাটো অনেক কিছুই তারা করে দেবে দ্বিধাহীন- জাস্ট নারীসুলভ আর কি।

    ক্লডিয়া একটু নড়েচড়ে বসল।

    ভেইল বলল, বড় মহিলারা ভালো মনেরও হয়ে থাকে। একদিন এমনই একজন আমাকে পার্টি শেষে তার বাসায় নিয়ে গেল। সেই রাতে আমাকে নিয়ে যে সে কি করবে, বুঝতেই পারিনি প্রথমে। পরে দেখলাম এমনভাবে সে তার বেডরুমটি পরখ করছে– মনে পড়ে গেল আমার মায়ের কথা। মা ঠিক সেই মহিলাটির মতোই তার রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াত কিছু একটা খাবার তৈরির জন্য। এরপর তা সবার সামনে পরিবেশন করত। মহিলাটিও ছিল আশ্চর্য রকমের– আমাকে অভিভূত করেছিল। আমরা কিভাবে সে রাতটি সুন্দরভাবে কাটাব ব্যস্ত ছিল এই আয়োজনে।

    ক্লডিয়া ও ভেইল তাদের ড্রিংকসে চুমুক দিতে শুরু করল। প্রত্যেক বারের মতো ক্লডিয়া আজও ভেইলের বন্ধুভাবাপন্ন আচরণে মুগ্ধ হলো। সে বলল, আমি ও মলি কিভাবে পরস্পরের বন্ধু হলাম, তুমি কি জানো?

    ক্লডিয়া এবার শুরু করল তার কথা, একবার সে এমন এক লোকের পক্ষে কাজ করেছিল যে তার গার্লফ্রেন্ডকে না কি হত্যা করে। আর এই কাজে আদালতে অপরাধীদের পক্ষে মলির প্রয়োজন ছিল কিছু ভালো সংলাপের। উদ্বিগ্ন মলিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম আমি। ঠিক সিনেমার যেমন সংলাপ লেখা হয় আমি সেভাবেই লিখেছিলাম। মলির উপস্থাপনায় লোকটি অনিচ্ছাকৃত হত্যার রায় পেয়ে বেঁচে যায়। তারপর থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু।

    ভেইল বলল, আই হেইট হলিউড।

    হলিউডের প্রতি তোমার বিদ্বেষের কারণ লডস্টোন তোমাকে একটা বেকায়দা অবস্থায় ফেলেছে প্রতারণা করেছে, বলল ক্লডিয়া।

    ভেইল বলল, না, ঠিক সে কারণেই নয়। দেখো ক্লডিয়া আমি হচ্ছি সেই পুরনো সভ্যতার অনুসারী একজন মানুষ— চীনা সম্রাট কিংবা নেটিভ আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের আমলের মানুষদের প্রতি দরদি একজন, যাদের ওপর উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।

    আমি একজন প্রকৃত লেখক, আমি আমার লেখার মধ্য দিয়ে মানুষের মনোস্তত্ত্বে আবেদন করি। আমার এসব লেখা খুব সেকেলে। মুভির জন্য এগুলো ঠিক দাঁড়ায় না। মুভির জন্য আছে ক্যামেরা, আছে দৃশ্যপট সাজানোর সেট, আছে সঙ্গীত– এসব দিয়ে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু একজন লেখক সামান্য কটা শব্দ সাজিয়ে কিভাবে তা সম্ভব করবে? বিশেষ করে যুদ্ধের দৃশ্যে হয়তো নিখুঁত সব দৃশ্যও তৈরি করা সম্ভব মুভির মাধ্যমে। তবে একটি ব্যাপার, মুভি মস্তিষ্ক জয় করলেও হৃদয় জয় করতে পারবে না।

    ফাঁক ইউ, আমি লেখক নই। ক্লডিয়ার আক্ষেপ। সে বলল, একজন চিত্রনাট্যকার কখনোই লেখক নয়। তুমি এমন আক্ষেপ দেখাচ্ছ কারণ তোমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় তুমি কখনোই এর পক্ষে বলতে পারবে না।

    ভেইল ক্লডিয়ার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, আমি তোমাকে ঠিক নিচে নামিয়ে ফেলছি না। আমি কেবল একটি সংজ্ঞা তৈরির চেষ্টা করছিলাম।

    ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমি তোমার লেখা খুব পছন্দ করি, ক্লডিয়া বলল, কিন্তু এখানে কি কেউই তোমাকে পছন্দ করে না?

    ভেইল হাসল, বলল, না, না তারা আমাকে অপছন্দ করে না। আমার প্রতি তাদের ঘৃণাবোধ আছে। তবে দেখো, যখন আমি আমার মৃত্যুতে লেখার স্বত্ব ফিরে পাব, তখন তারাই আমাকে শ্রদ্ধা জানাবে।

    ক্লডিয়া বলল, তুমি একটুও সিরিয়াস নও।

    আমি ভাবি, আমি যথেষ্ট সিরিয়াস। ভেইল বলল, আত্মহত্যা একটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এখন রাজনৈতিকভাবেও এটা সঠিক নয় বলে ভাবা হচ্ছে। তাই নয় কি?

    ওহ শিট ক্লডিয়া তার একটি বাহু দিয়ে ভেইলের গলা জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, লড়াই কেবল শুরু হচ্ছে। আমি যখন তোমার পয়েন্টগুলো তাদের সামনে উত্থাপন করব, আমি নিশ্চিত তারা শুনবে। এবার হলো তো!

    ভেইল ক্লডিয়ার কথায় মুচকি হাসল। তাড়াহুড়োর কিছু নেই ভেইল বলল। এই করতে করতে ছয় মাসের মতো সময় লেগে যাবে। আর তখন আমিও আমার করণীয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাব। আসলে সহিংসতা আমার একেবারেই অপছন্দ।

    ক্লডিয়া এবার নিশ্চিত হলো যে, ভেইল সত্যি সত্যিই সিরিয়াস। আকস্মিক আতঙ্কিত হয়ে পড়ল ভেইলের মৃত্যুর কথা ভেবে। এমন ভাবনা, ক্লডিয়ার শুধু ভেইলকে ভালোবাসার জন্যই নয়, যদিও তাদের সম্পর্কের বিষয়টি সে পর্যায়েই চলে গেছে। ভেইলের প্রতি অতিমাত্রায় অনুরক্তের কারণেও ক্লডিয়ার এই আতঙ্ক নয়। তার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, তার লেখা এত সুন্দর সুন্দর বই সামান্য কটা টাকার জন্য গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। ভেইলের এই শিল্প হয়তো অর্থকে জয় করে নেবে এক সময়। ক্লডিয়া তার এমন চিন্তা ঝেড়ে বেরিয়ে এলো। ভেইলের উদ্দেশে বলল, যদি খারাপ পরিস্থিতি একেবারে নগণ্য মাত্রায় নেমে আসে তবে আমরা ভেগাসে আমার ভাই ক্রসের সাথে যোগাযোগ করব। সে তোমাকে পছন্দ করে। সে নিশ্চয়ই কিছু একটা করতে পারবে।

    ভেইল হেসে উঠে বলল, সেও আমাকে ততটা পছন্দ করে না। ক্লডিয়া বলল, সে খুব ভালো মনের মানুষ। আমি আমার ভাইকে জানি। ভেইল এবার বলল, না ক্লডিয়া, তুমি তাকে চেনো না।

    অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন সে রাতে ডরোথি চ্যান্ডলার প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি থেকে সরাসরি ফিরে এসেছিল। অবসাদগ্রস্ত অ্যাথেনা ঘরে ফিরেই সোজা চলে গিয়েছিল তার বিছানায়। কয়েক ঘণ্টা সময় সে বিছানায় শুধু এপাশ-ওপাশ করেই কাটাল- বিন্দুমাত্র ঘুম এলো না চোখে। শরীরের পেশিগুলোও যেন টেনে টেনে ধরছিল।

    কেবল একটাই চিন্তা তার মাথায় চিন্তা নয় দুশ্চিন্তা। বজ স্কানেটের। আতঙ্কের রেশ তার তখনও কাটেনি। আপন মনে বিড়বিড় করে বলে উঠল এ কাজের পুনরাবৃত্তি আর করতে দেয়া যাবে না। সে ভাবল, এমন ত্রাসের মধ্যে সে তার জীবন অতিবাহিত করতে চায় না।

    আকস্মিক অ্যাথেনা উঠে বসল। সামান্য কয়েকটা মুহূর্তমাত্র। তারপর বিছানা থেকে নেমে সে তার পোশাক পরিবর্তন করল। গায়ে চড়াল খেলার পোশাক, পায়ে টেনিস জুতা। খুব ভোরে সূর্য উদয়েরও আগে এবং সৈকতে মানুষজনের পদচারণার অনেক পূর্বে অ্যাথেনা দৌড়াতে শুরু করল। তার দৌড়ের গতি হলো দ্রুত থেকে দ্রুততর।

    সমুদ্র সৈকতের শক্ত ভেজা বেলেতে অ্যাথেনার দৌড় যেন অশরীরী মনে হতে লাগল। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দৌড়ানোর সময় অ্যাথেনার পায়ের ওপর আছড়ে পড়েছিল ঢেউ। নরম বেলেতে পা কদাচিৎ আটকেও যাচ্ছিল– তবুও থামেনি সে। সেই সাথে থামেনি তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতে স্নায়ুতে বজকে নিয়ে চিন্তার দৌড়।

    অ্যাথেনা চায় না বজ তাকে কখনো আঘাত করতে সমর্থ হোক। মাথায় যেমনই আসছে বজের চিন্তা, অ্যাথেনার পরিশ্রমও বেড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে। চিন্তার রেশ থামেনি মোটেও। অ্যাথেনা ভাবতে লাগল–বজ যে তাকে একসময় হত্যা করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার আগে সে অ্যাথেনাকে খেলিয়ে নেবে, তারপর অবশেষে তাকে বিকৃত করে ফেলবে– অ্যাথেনাকে কুৎসিৎ কদর্য করাই বজের অন্যতম অভিপ্রায়। এর কারণ, যদি অ্যাথেনাকে সে আবারো ফিরে পায়– অ্যাথেনা এভাবেই কথাগুলো বিড়বিড় করে আওড়ে যাচ্ছিল। এক সময় সমুদ্রের শীতল ছটা তার মুখে এসে পড়ল। আপন মনেই বলে উঠল– এ হয় না, এটা হতে দেয়া যায় না।

    অ্যাথেনা আবার ভাবতে লাগল স্টুডিওর কথা তারা উন্মত্ত হয়ে উঠবে। তারা তাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। আরো এসব করা হবে কেবল অর্থের জন্য, নিশ্চয় অ্যাথেনার জন্য নয়, স্টুডিওর লোকরা অর্থের লাভ লোকসানে বেশ সতর্ক।

    অ্যাথেনার ধারাবাহিক ভাবনায় এলো তার বন্ধু ক্লডিয়া। তার মনে এলো স্টুডিওর আরো কিছু মানুষের কথা। সে জানে, সে নিজের জন্য সবার কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করতে পারবে না। বজ খুব বেশি উচ্ছল, খুব বেশি সাহসী। সে এত বেশি স্মার্ট যে, অনায়াসেই যে কোনো লোককে আপন করে নিতে সক্ষম। মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাথেনা নিজের জন্য কোনো সুযোগই সৃষ্টি করতে পারবে না।

    এভাবেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে, দৌড়াতে দৌড়াতে অ্যাথেনা এক সময় এসে পৌঁছল একটি টিলাসম পাথরখণ্ডের কাছে, যার অর্থ উত্তর সৈকতের সীমানা এখানেই শেষ।

    এতক্ষণ অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘপথ অতিক্রম করায় মনের জোরও প্রায় ফুরিয়ে গেল অ্যাথেনার ফিরে যাবার মানসিক ইচ্ছেও শেষ হয়ে গেল। দম ফুরিয়ে অ্যাথেনা বসে পড়ল বেলেতেই। হৃদয়ের স্পন্দনকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করল সে।

    আকস্মিক সি-গালের শব্দে তার সম্বিত ফিরে এলো। দেখল কয়েকটি সি গাল শূন্য থেকে উড়ে এসে পানি ছুঁয়ে আবারো উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। খুব ভালো লাগল তার অনেকটা সময় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল পাখিগুলোর খেলা। কিন্তু তাকে ফিরে যেতে হবে। মুখ শুকিয়ে এসেছিল, জিহ্বা বের করে ঠোঁট ভিজানোর চেষ্টা করল সে।

    অকস্মাৎ দীর্ঘদিন পর তার প্রথমবারের মতো মনে হলো— সে ইচ্ছে করলেই তো তার বাবা-মার আশ্রয় নিতে পারে। বিষয়টি এমন কিছু কঠিন নয়। তার মনে হলো তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি কোনো শিশুর পথ ভুলে যাবার মতো ঘটনা। ইচ্ছে করলেই আবারো ফিরে যাওয়া যায় নিরাপদে, নিরাপদ আশ্রয়ে। যেখানে গেলে কেউ দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরবে তাকে, তার ভালোর জন্য করবে যা কিছু দরকার।

    খুব ভালো লাগল অ্যাথেনার। মনে জোর পেল– হেসে উঠল শিশুর মতো। তার মধ্যে বিশ্বাস জন্মাল– এটা অসম্ভবের কিছুই নয়।

    বর্তমানের অ্যাথেনা অনেকের ভালোবাসার, পছন্দের এমনকি শ্রদ্ধারও। তবে সে মনে করে, সে একেবারেই শূন্য। বিশেষ করে কোনো মানুষের ভালোবাসার যথাযথ অনুভূতি তাকে আরো দোলা দেবে না কখনো। অ্যাথেনা প্রায়ই নিজেকে বড় একাকী মনে করে যেন এ পৃথিবীতে তার কেউ নয় আপন।

    কখনো অ্যাথেনার পাশ কাটিয়ে একজন সাধারণ মহিলা তার স্বামী সন্তানের সাথে হেঁটে যায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে সে এমন একটি সহজ জীবনের জন্য। ঈর্ষা হয় তার সেই সাধারণ নারীটির ওপর। থামো– চিন্তার রেশ থামাতে চিৎকার করে ওঠে অ্যাথেনা। মনে মনেই বলে– ভাবো, এমন একটা জীবন ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায়। এর জন্য অ্যাথেনা, তোমার প্রয়োজন পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।

    সকালের মধ্যভাগে অ্যাথেনা ফিরে এলো তার বাড়িতে। গর্বের সাথে, বুক ফুলিয়ে, সোজা হনে সে ফিরে এলো। তার মধ্যে উপলব্ধি হলো তার আত্মবিশ্বাস ফুরিয়ে যায়নি। অ্যাথেনা জানে তাকে এখন কি করতে হবে।

    বজ স্কানেটকে সারা রাত পুলিশ কাস্টোডিতে রাখা হলো। স্কানেট কাস্টোডি থেকে ছাড়া পাবার পর তার আইনজীবী প্রেস কনফারেন্সের ব্যবস্থা করল। স্কানেট সাংবাদিকদের জানাল, অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে সে বিয়ে করেছিল। দীর্ঘ দশ বছরেও সে অ্যাথেনার দেখা পায়নি। সেদিন দেখা হওয়ায় বজের এই কাণ্ডটি ছিল কেবল একটি বাস্তব কৌতুক। লিকুইডটি ছিল পানি।

    সংবাদ সম্মেলনে বজ জানাল যে, নিশ্চিতভাবেই অ্যাথেনা তার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করবে না। বাস্তবে ঘটলও তাই। অ্যাথেনা এ বিষয়ে কোনো মামলা বা সংবাদ সম্মেলন করেনি।

    .

    তবে সেদিন অ্যাথেনা লডস্টোন স্টুডিওকে বিষয়টি জানিয়েছিল। লডস্টোন স্টুডিওর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে ছবি নির্মাণের রেকর্ড আছে। এ কারণে স্টুডিওটির নাম-ডাকও ব্যাপক। অ্যাথেনা স্টুডিও কর্তৃপক্ষকে জানাল, লডস্টোনে চুক্তিবদ্ধ কাজ সে আর করবে না। এর কারণ হিসেবে অ্যাথেনা লিখল, তার ওপর যে কৌতুককর হামলা চালানো হয়েছে, তাতে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে– আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

    অ্যাথেনা ছাড়া লডস্টোনের ব্যানারে নির্মিতব্য ঐতিহাসিক ছবি ম্যাসেলিনা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ অবধি ছবিটির জন্য যে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে তার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং অ্যাথেনা এই স্টুডিওতে কাজ না করার অর্থ, পরবর্তীতে কোনো বড় স্টুডিওতেই কাজ করার সুযোগ হারাবে সে।

    অ্যাথেনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে লডস্টোন স্টুডিও থেকেও একটি স্টেটমেন্ট ছাড়া হলো। তাতে লেখা হলো তাদের তারকা অভিনেত্রী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অথচ চুক্তিবদ্ধ ছবির শুটিং-এর কাজ এখনও সিংহ ভাগ বাকি। তাকে এক মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজটুকু করতে হবে।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু
    Next Article কায়াহীনের কাহিনী – মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }