Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    মোঃ বুলবুল আহমেদ এক পাতা গল্প630 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. ক্লডিয়া ডি লিনা

    পর্ব– তিন

    ক্লডিয়া ডি লিনা
    অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন

    ০৪.

    ক্লডিয়া ডি লিনা প্যাসিফিক প্যালিস্যাডিসে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে রওনা হলো ম্যালিবুতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে। মনে মনে ভাবতে লাগল– ম্যাসেলিনার জন্য কিভাবে অ্যাথেনাকে রাজি করাবে? কিভাবে ক্লডিয়া নিজেকে উপস্থাপন করবে অ্যাথেনার কাছে?

    ম্যাসেলিনায় অভিনয়ের জন্য তাকে ফিরিয়ে আনাটা যেমন ক্লডিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ স্টুডিওর জন্যও। আসলে ম্যাসেলিনা ক্লডিয়ার লেখা প্রথম অরিজিনাল স্ক্রিপ্ট। এর আগেও বিভিন্ন ছবির চিত্রনাট্য সে করেছে, তবে সেগুলোর কোনোটি ছিল কোনো নভেল থেকে নেয়া নকল পাণ্ডুলিপি, কিংবা মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ঘষা-মাজা স্ক্রিপ্ট।

    ক্লডিয়ার কাছে এ ছবির গুরুত্ব আরেক কারণে। সেটি হলো–এই ম্যাসেলিনার মাধ্যমেই সে প্রথমবারের মতো কো-প্রডিউসার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ সুযোগ আগে তার আসেনি। লেখক এবং কো-প্রডিউসার হিসেবে ক্লডিয়ার ভাগ্যে যে উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে তার সাথে যোগ হবে গ্রস প্রফিটের একটা অংশও। এত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়াটা শুধু ক্লডিয়ার কেন, কোনো রক্ত-মাংসের মানুষেরই কাম্য নয়।

    এ ছবি থেকে যে বড় লভ্যাংশের প্রত্যাশা ক্লডিয়া করছে তা তার কর্ম জীবনের পরবর্তী আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় হবে। প্রকৃতপক্ষে সে হচ্ছে, মিসিসিপির পশ্চিমাঞ্চলের এমন একজন যে সরাসরি কখনোই কিছু চায়নি, আশাও করেনি। মানুষের হিংস্রতা, বিবাদ, কলহ থেকে ক্লডিয়া নিজেকে রেখেছে সব সময় পৃথক করে। বিবাদপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হোক, তা চায় না সে।

    অ্যাথেনার সাথে ক্লডিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ, আন্তরিক। শুধুমাত্র চলচ্চিত্র জগতের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক নয় তাদের। অ্যাথেনা জানে তার বাকি জীবনটায় কতগুলো ছবিতে কাজ করতে পারবে। অবশ্যই বুদ্ধিমতী সে। শুধু বজ স্কাটে তার জীবনে একটা অশুভ ছায়া ফেলে রেখেছে, যার কারণে অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে সে প্রতিনিয়ত। তবে এও সত্য, অ্যাথেনা কখনোই কারো ভয়ে কিংবা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত নিয়তির ভয়ে ভীত ছিল না– এখনো নয়।

    আরও দেখুন
    গ্রন্থাগার
    বাংলা ভাষা শিক্ষার অ্যাপ
    বাংলা অডিওবুক
    সাহিত্য পত্রিকা
    বইয়ের
    বাংলা শিশু সাহিত্য
    বাংলা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
    নতুন উপন্যাস
    বাংলা রান্নার রেসিপি বই
    বাংলা ইসলামিক বই

    ক্লডিয়া ঠিক করে নিল অ্যাথেনার কাছে গিয়ে তার আচরণ কি হবে, কি বলবে সে অ্যাথেনাকে। অ্যাথেনার এই আতঙ্কিত হওয়ার প্রকৃত কারণ তাকে উদ্ধার করতেই হবে। হয়তো ক্লডিয়া এ ব্যাপারে তার সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে। না, হয়তো নয়, নিশ্চিতভাবেই। অ্যাথেনার ক্যারিয়ার এভাবে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না তাকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। ক্লডিয়া তাকে নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দেবে। তবে কে জানে এই মুভি ব্যবসায় কত রকমের জটিলতা কিংবা ফাঁদ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

    ক্লডিয়া ডি লিনা নিউইয়র্ক থেকেই লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছে। একুশ বছর বয়সে কুড়িটি প্রকাশকের কাছে তার প্রথম নভেল উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু নিরাশ হয়নি সে। মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে সে পাড়ি জমিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। হলিউডে চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি লেখার কাজে মনোনিবেশ করেছে।

    ক্লডিয়া উচ্ছল, প্রাণবন্ত এবং মেধাবী। লস অ্যাঞ্জেলেসে খুব শিগগিরই সে তার অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে, জুটেছে অনেক গুণী বন্ধু।

    আরও দেখুন
    বাংলা অডিওবুক
    গ্রন্থাগার
    বাংলা উপন্যাস
    বাংলা সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মশালা
    বাংলা গানের লিরিক্স বই
    উপন্যাস সংগ্রহ
    বাংলা ক্যালিগ্রাফি কোর্স
    সাহিত্য পর্যালোচনা
    অনলাইন বুক
    ই-বই ডাউনলোড

    লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউসিএলএ-তে যখন সে স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের কোর্স করছিল তখন সেখানকার এক যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। যুবকটির বাবা ছিল বিখ্যাত প্রাস্টিক সার্জন। খুব অল্প দিনেই তাদের মধ্যে তৈরি হলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ সম্পর্ক রূপ নিল ভালোবাসায়। ক্লডিয়ার শরীর, মেধা এবং বুদ্ধিমত্তায় মোহিত হলো সে। দিনের পর দিন শয্যাসঙ্গী হয়ে উভয়ের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেতে লাগল ক্রমান্বয়ে।

    এক রাতে ডিনারে নিমন্ত্রণ করে যুবকটি নিয়ে গেল তার বাসায়। ক্লডিয়াকে দেখে তার সাথে কথা বলে যুবকের বাবা মুগ্ধ হলো। ডিনার শেষে ক্লডিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে যুবকের বাবা বলল, তোমার মতো একজন যুবতীর যতটুকু সুন্দরী হওয়া উচিত ছিল, ততটা তুমি নও।

    আকস্মিক এ মন্তব্যে ক্লডিয়ার ভ্রূজোড়া কুঞ্চিত হলো। তাকে দেখে যুবকের বাবা বলল, আমার এ কথার বিরূপ ধারণা করো না। এটা একটা নিশ্চিত দুর্ভাগ্য। আর আমার ব্যবসা বা দক্ষতা যা-ই বলল, আমি তোমাকে সুন্দর একটা চেহারা দিতে পারি।

    আরও দেখুন
    বিনামূল্যে বই
    বাংলা উপন্যাস
    অনলাইন বুক
    বাংলা স্বাস্থ্য টিপস বই
    বাংলা সাহিত্য ভ্রমণ
    বাংলা ভাষা শিক্ষার অ্যাপ
    Library
    বাংলা শিশু সাহিত্য
    পিডিএফ
    বাংলা ই-বুক রিডার

    ক্লডিয়া প্রেমিকের বাবার কথায় প্রতিবাদ করল না, তবে একটু রুষ্ট হলো, বলল, কেন আমাকে সুন্দরী হতে হবে? কি হবে এই সুন্দর দিয়ে? হেসে ফেলল ক্লডিয়া। বলল, আমি আপনার পুত্রের জন্য যথেষ্ট সুন্দরী।

    এ পৃথিবীর সবই সুন্দর, সার্জন বলল। তোমার ঐ চেহারায় যখন হাত পড়বে, তখন তুমি আমার ছেলের জন্য হয়ে উঠবে আরো সুন্দর। তুমি সত্যিই একটি মিষ্টি এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে, আর এর সাথে সৌন্দর্য যোগ হলে তোমার ক্ষমতা আরো বাড়বে। তুমি কি সত্যিই তোমার বাকি জীবনটা উপভোগ করতে চাও না যেখানে সব পুরুষ সুন্দরীদের ঘিরে থাকবে অথচ তোমার মতো মেধাবীর দিকে হয়তো কেউ তাকাবেও না? তোমাকে হয়তো একটি ডামির মতো বসে থাকতে হবে, কারণ তোমার নাকটি বোচা এবং মাফিয়াদের মতো তোমার চিবুকটিও যেন থ্যাবড়ানো। এ কথাগুলো সার্জন ক্লডিয়াকে আঘাত করে বলেনি, বরং তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্যই বলল। তোমাকে পরিবর্তন করতে আমার খুব বেগ পেতে হবে না। তোমার খুব সুন্দর দুটি চোখ আছে, আছে সুন্দর একটি মুখ। আর একজন মুভিস্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার মতো তোমার রয়েছে যথেষ্ট সুন্দর শরীর।

    মাফিয়া শব্দটি ক্লডিয়ার শিরায় শিরায় অনুরণিত হলো। মুখ ফিরিয়ে নিল সে সার্জনের কথায়। স্পষ্ট উপলব্ধি হলো তার, সে জানে বাবার মতোই দেখতে সে।

    আরও দেখুন
    বাংলা অনুবাদ সাহিত্য
    বাংলা ভাষা
    বাংলা ফন্ট প্যাকেজ
    বাংলা গানের লিরিক্স বই
    অনলাইন বুক
    অনলাইন গ্রন্থাগার
    বাংলা ই-বই
    সেবা প্রকাশনীর বই
    বাংলা স্বাস্থ্য টিপস বই
    উপন্যাস সংগ্রহ

    সার্জনকে উদ্দেশ্য করে বলল, এটা কোনো ব্যাপার নয়। আর তাছাড়া, আমি আপনার সম্মানী দিতে পারব না।

    সেটা পৃথক বিষয়, সার্জন বিরোধিতা করল। মুভি ব্যবসা সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। চলচ্চিত্র জগতের অনেক নারী-পুরুষ তারকার ক্যারিয়ার আমি দীর্ঘায়িত করেছি। আর এক্ষেত্রে তুমিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। জানি না আমার প্রস্তাবে তুমি কতটুকু অনুপ্রাণিত হচ্ছ, তবে তোমার মেধা সম্পর্কে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

    মনে রেখো, তোমার ক্ষেত্রটি চলচ্চিত্র জগতের। তোমাকে কিছুটা হলেও পেশাদারি মনোভাবের হতে হবে- এটা কোনো নারী বা পুরুষ বলেই শুধু নয়। যদিও এটা এ জগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

    এত কিছু বলার পরও ক্লডিয়ার চোখে-মুখে দ্বিধা লক্ষ্য করল সার্জন। বলল, তোমার কাজটি আমি বিনা পারিশ্রমিকে করতে চাই। এ কাজটি আমি করব তোমার জন্য এবং আমার পুত্রের খাতিরে। যদিও আমি জানি তুমি তোমার বর্তমান রূপ হারাবে, সুন্দরী হয়ে উঠবে। আর আমার ছেলে হারাবে তার গার্লফ্রেন্ড।

    আরও দেখুন
    বাংলা ভাষা শিক্ষার অ্যাপ
    বাংলা গানের লিরিক্স বই
    উপন্যাস সংগ্রহ
    বই পড়ুন
    বাংলা ইসলামিক বই
    বাংলা অনুবাদ সাহিত্য
    বাংলা ভাষা
    বাংলা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
    Library
    অনলাইন বই

    ক্লডিয়ার মনে একটা বোধ ছিল সে সুন্দরী নয়। এ মুহূর্তে তার মনে এলো ক্রসের প্রতি তার বাবার অতিরিক্ত আগ্রহের বিষয়টি। একটু আফসোস হলো তার– যদি সে সুন্দর হতো, হয়তো তার লক্ষ্যও হতো ভিন্ন। এমন ভাবনা থেকেই ক্লডিয়ার প্রথমবারের মতো সার্জনকে ভালো লাগল। হ্যান্ডসাম পুরুষ সে, আকর্ষণীয়ও। চোখ দুটোতে সদা ভদ্রতার চাহনি। সার্জনের প্রস্তাবে সম্মতি জন্মালো তার মনে। হেসে ফেলল ক্লডিয়া।

    বলল, ঠিক আছে! আমাকে সিনড্রেলা বানিয়ে ফেলুন।

    সার্জন সিনড্রেলা করল না ক্লডিয়াকে তবে তার বোঁচা নাক, চিবুক আর মুখের ত্বকে আনল ব্যতিক্রমতা। সার্জারির পর যখন সে ফিরে এলো, তাকে খুব আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন এক গর্বিত নারী—নিখুঁত তার নাক, সাবলীল কর্তপূর্ণ তার উপস্থাপনা ও প্রকৃতপক্ষে খুব সুন্দরী রমণীর পর্যায়ে না গেলেও আগের চেয়ে ক্লডিয়া হলো অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

    খুব অল্প সময়েই ক্লডিয়ার পেশাগত ক্ষেত্রেও ফল এলো ম্যাজিকের মতো। মেলো স্টুয়ার্ট ব্যক্তিগতভাবে তার সাক্ষাৎ প্রার্থী হলো। তার এজেন্ট হিসেবে নিজেকে প্রস্তাব করল স্টুয়ার্ট। খুব অল্প বয়সেই ছোটখাটো রিরাইট করা স্ক্রিপ্ট নিয়ে ক্লডিয়ার যাতায়াত বাড়ল চলচ্চিত্র জগতের নামি-দামি প্রযোজক, পরিচালক ও তারকাদের সম্মিলিত বিভিন্ন পার্টিতে। উচ্ছ্বসিত হলো তারা ক্লডিয়ার সৌন্দর্য ও মেধায়। পরবর্তী পাঁচ বছরে ক্লডিয়া অবস্থান করে নিল প্রথম শ্রেণীর লেখিকা হিসেবে। প্রথম শ্রেণীর ছবিগুলোতে তার চিত্রনাট্য সমানে কদর পেতে লাগল।

    আরও দেখুন
    বাংলা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
    বাংলা অডিওবুক
    গ্রন্থাগার
    পিডিএফ
    বাংলা ফন্ট প্যাকেজ
    নতুন উপন্যাস
    বাংলা সাহিত্য
    বাংলা রান্নার রেসিপি বই
    বাংলা সাহিত্য ভ্রমণ
    অনলাইন গ্রন্থাগার

    ব্যক্তিগত জীবনেও ম্যাজিকের মতো প্রভাব পড়ল ক্লডিয়ার। মর্মে মর্মে সে উপলব্ধি করল সার্জনের কৃতিত্ব বুঝতে পারল, সার্জনের চিন্তাধারাই ছিল সঠিক। কিন্তু যার কারণে সার্জনের কাছ থেকে এত কিছু সে পেয়েছে সেই যুবকও পিছিয়ে গেল প্রতিযোগিতায়। যৌন আবেদনে ক্লডিয়ার জয়জয়কার অবস্থা ধারালো এ অস্ত্রের ব্যবহারে যুক্তিসম্মতভাবে ঘায়েল হলো সবাই। অবশ্য এমন সফলতায় সব স্টারই গর্ববোধ করে থাকে। যৌন আবেদন এবং যৌনতা সত্যিকার অর্থেই চলচ্চিত্র জগতে টিকে থাকার গৌরব।

    চলচ্চিত্র জগৎ ক্লডিয়ার ভালোবাসা। সে ভালোবাসে বিভিন্ন লেখকদের সাথে কাজ করতে, ভালোবাসে প্রডিউসারদের সাথে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক করতে। আরো পরিচালকের তোষামোদ করতে তার আনন্দ। একটি ছবির সাথে জড়িয়ে তার প্রথম কাজ হচ্ছে কিভাবে সার্বিক ব্যয় কমানো যায়, তার পথ বের করা, আর একই সাথে এই ব্যয়ে নির্মিতব্য ছবিকে কিভাবে সর্বোচ্চ শৈল্পিক পর্যায়ে উপস্থাপন করা যায়। তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ক্লডিয়ার রয়েছে বিস্ময়কর চিন্তা-ভাবনা, কিভাবে একটি ছবির কলা-কুশলী তার স্ক্রিপ্টের প্রতিটি শব্দকে সার্থকভাবে উপস্থাপন করবে, কণ্ঠের মাধুর্যতায় ফুটিয়ে তুলবে দৃশ্যের পর দৃশ্য। ক্লডিয়ার ভালোবাসা চলচ্চিত্রের জাদুকরি সেট-সজ্জায়। অথবা অনেকেই এ বিষয়টিকে সবচেয়ে অপছন্দের কাজ বলে মনে করে। কিন্তু ক্লডিয়া এনজয় করে প্রতিটি কর্মকাণ্ড। সম্পূর্ণ কাজ শেষে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে যখন ছবি মুক্তির অপেক্ষায় থাকে তখন ক্লডিয়া রোমাঞ্চিত হয় সবচেয়ে বেশি— তার এই রোমাঞ্চের কারণ ছবির ব্যর্থতা কিংবা সফলতা।

    আরও দেখুন
    বাংলা সাহিত্য
    বাংলা অডিওবুক
    বাংলা কমিকস
    উপন্যাস সংগ্রহ
    বুক শেল্ফ
    অনলাইন গ্রন্থাগার
    বাংলা বই
    বাংলা ফন্ট প্যাকেজ
    বাংলা ক্যালিগ্রাফি কোর্স
    বাংলা ভাষা শিক্ষার অ্যাপ

    ক্লডিয়া বিশ্বাস করে, চলচ্চিত্র হচ্ছে শিল্প মাধ্যমের একটি বিশাল অবকাঠামো। তাই যখন কোনো ছবির পাণ্ডুলিপি পুনর্লিখন কিংবা রিরাইটের জন্য তার ডাক পড়ে, ক্লডিয়া অত্যন্ত উৎসাহের সাথে এগিয়ে যায়। ছবির মূল ভাবার্থ ঠিক রেখে সে চেষ্টা করে নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই ক্লডিয়া পেয়ে যায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। শুধু তাই নয়, তার মেধা, সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক তারকাই তার বন্ধু হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের সাথে।

    পুরুষের সাথে সম্পর্কের প্রধান আকর্ষণ ক্লডিয়ার উচ্ছ্বসিত যৌনতা। খুব সহজে সাবলীল যৌনতা ক্লডিয়া যেমন উপভোগ করে, তেমনি তার পুরুষ সঙ্গীও দ্বিধাহীন, খাঁটি অমিয় ধারার সুখে নিমজ্জিত হয়। মাঝে মাঝে বিস্মিত হয় তার শয্যাসঙ্গীরা। এত ঘনিষ্ঠতা স্ত্রীর কাছেও পাবে কি-না সন্দেহ জাগে। তবে ক্লডিয়া এই যৌন উপভোগের মাধ্যমে কখনোই বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেয়নি– এটি তার নীতিবিরুদ্ধ। মাঝে মাঝে তার শয্যাসঙ্গীর সাথে কৌতুক করে, আজকের এই সেক্স আমার পরবর্তী পাণ্ডুলিপিতে স্থান পাবে শৈল্পিকভাবে।

    ক্লডিয়ার প্রথম রোমাঞ্চকর মানুষ হচ্ছে তার সেই সার্জন। পুত্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও সুপুরুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে সে ক্লডিয়ার কাছে। ধীরে ধীরে ছেলেকে ছাপিয়ে সার্জন নিজেই বন্ধু সেজেছে ক্লডিয়ার। আর নিজের উচ্ছ্বাসের জন্যই সে তাকে প্রস্তাব দিয়েছে একটি অ্যাপার্টমেন্টের, সাথে সাপ্তাহিক ভাতা। সার্জনের প্রস্তাব শুধু তার সাথে যৌন উপভোগের জন্য নয়, তার মেধাবী ও সুন্দর মানসিকতাপূর্ণ সঙ্গলাভের জন্যও।

    আরও দেখুন
    বাংলা অনুবাদ সাহিত্য
    বাংলা সাহিত্য
    বাংলা ক্যালিগ্রাফি কোর্স
    বাংলা কমিকস
    বাংলা ফন্ট প্যাকেজ
    বইয়ের
    বাংলা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
    বাংলা স্বাস্থ্য টিপস বই
    বাংলা সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মশালা
    বাংলা উপন্যাস

    কিন্তু সার্জনের প্রস্তাব সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে ক্লডিয়া। সে বলেছিল, আমি ভাবছি, এ ব্যাপারে অন্তত ফি দিতে হবে না। তাই নয় কি?

    সহাস্যে সার্জন বলেছিল, তুমি তো ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছ অনেক। তবে আমি ভাবছি, আমার এ প্রস্তাব আমাদের দুজনের যে কোনো সময় সাক্ষালাভের সুযোগ করে দেবে।

    ক্লডিয়া স্বীকৃতি দিয়ে বলেছিল, অবশ্যই।

    ক্লডিয়া বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছিল। বন্ধুত্বের সম্পর্ক তো বটেই, সাথে যৌনতার মিশেল। তবে সার্জনের মধ্যে সে পেত ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন অনুভূতি, অন্যরকম সুখ। এক অর্থে সার্জনই তাকে শিখিয়েছে জীবন উপভোগ করার এমন কৌশল। সার্জনের কাছেই পেয়েছে সত্যিকারের উপভোগের জীবন দর্শন। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের, ভিন্ন দর্শনধারীর সাথে শয্যাসঙ্গী হয়ে সে খুঁজে পেত ভিন্ন সুখ। এক অর্থে স্বেচ্ছা-পতিতার মতোই হয়ে উঠেছিল ক্লডিয়া। আনাড়ি অভিনেতা কিংবা চিত্রনাট্যকারের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। প্রকৃতপক্ষে এমন পদক্ষেপ ছিল তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পুষ্ট করার মানসে। সবখানেই ছিল তার শেখার আগ্রহ। তার স্বল্প বিস্তর এই প্রবৃত্তিতে বয়স্কদের সান্নিধ্যে সে পেয়েছে সবচেয়ে বেশি আনন্দ এটা অভিজ্ঞতার ফসল তো বটেই।

    একটি দিনের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্লডিয়ার। বিখ্যাত এলি ম্যারিয়ন স্বয়ং ক্লডিয়াকে আহ্বান জানিয়েছিলেন লর্ডস্টোনের বাংলোয়। উপভোগ করেছিল ক্লডিয়া সে রাত, তবে সত্যিকার অর্থে সফল হয়নি। লডস্টোনের এক পার্টিতে চলচ্চিত্র জগতের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এলি ম্যারিয়েনের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল ক্লডিয়ার। তার মতো প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য ক্লডিয়াকে মোটেও ভীত করেনি। পার্টিতে বরং ম্যারিয়নের সাথে সে ছিল প্রাণবন্ত। বিষয়টি বেশ কৌতূহলী করে তোলে ম্যারিয়নকে। এর কারণ, সে সময় স্টুডিওর এক প্রোডাকশনের আলোচনায় ক্লডিয়ার কিছু উক্তি ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ। আর এরই জের ধরে ববি বানজ তাকে কটাক্ষ করে অশ্লীল মন্তব্য করে। এর পরও ক্লডিয়ার অভিব্যক্তিতে কোনো ছাপ পড়েনি। বরং স্বাভাবিকই ছিল এবং প্রতি উত্তরে ক্লডিয়াও শুনিয়ে দিয়েছিল সমান অশ্লীল উক্তি। এই অশ্লীল উক্তিগুলো ছিল একটু ভিন্ন রকমের। ক্লডিয়ার তেজোদীপ্ত ও উচ্ছল উপস্থাপনাই ম্যারিয়নের অতিরিক্ত উৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

    এলি ম্যারিয়ন তার বার্ধক্যজনিত কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে সেক্স থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। শারীরিক দৌর্বল্যের সাথে সাথে যৌনতার বিষয়টিও উঠে গিয়েছিল মন থেকে। তারপরও আকস্মিক ক্লডিয়াকে ডাকলেন বেভারলি হিলসের বাংলোয়। ম্যারিয়ন ভেবেছিলেন ক্লডিয়া হয়তো তার প্রভাব ও ক্ষমতার ভয়েই যেতে বাধ্য হবে। কিন্তু তার যে সেক্স সম্পর্কে কতটুকু কৌতূহল সে যে বয়সেরই হোক না কেন, তা জানা ছিল না বেচারা বৃদ্ধ ম্যারিয়নের। ম্যারিয়নের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির সাথে বিছানায় যাওয়াটা কেমন দেখাবে, যে একই সাথে বৃদ্ধও?

    ম্যারিয়নের যেখানে ছিল দ্বিধা, ক্লডিয়ার সেখানেই ততখানি কৌতূহল। বৃদ্ধ ম্যারিয়নের মাঝেও সে এক আকর্ষণ অনুভব করেছিল। ম্যারিয়ন তার গরিলাসদৃশ চেহারা নিয়ে যখন হেসেছিলেন, খুব আকর্ষণীয় এবং হ্যান্ডসাম মনে হয়েছিল তাকে।

    ক্লডিয়াকে পরীক্ষামূলক যাচাই করতে, অর্থাৎ তাকে যৌন ঔৎসুক্য থেকে নির্বাচিত করতে ম্যারিয়ন কৌশলে বলেছিলেন, সবাই আমাকে এলি নামেই ডাকে, এমনকি আমার নাতি-নাতনিরাও। ক্লডিয়াকে ম্যারিয়ন নাতির বয়সি হিসেবেই বোঝাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেচারা বৃদ্ধের এই বুদ্ধিদীপ্ত প্রকৃত উচ্ছ্বাসে ক্লডিয়া যেন আরো কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল। ম্যারিয়ন সম্পর্কে সে শুনেছিল সে মারাত্মক নির্দয় লোক, কিন্তু তার সান্নিধ্যে এসে ক্লডিয়ার মোটেও তা মনে হয়নি, ম্যারিয়নের সাথে যৌনতায় বরং আগাম রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগল।

    বেভারলি হিলসে হোটেলের বাংলোয় বসে ছিলেন ম্যারিয়ন। ক্লডিয়ার আগমনের অপেক্ষাতেই ছিলেন। দ্বিধা ছিল মনে, ছিল সংকোচ। টগবগে যুবতী ক্লডিয়ার সাথে কতটুকু তাল মেলাতে পারবেন তিনি? কিংবা আদৌ পারবেন কি?

    ম্যারিয়ন তার অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন বাংলোর নিচতলায়। ক্লডিয়া যখন প্রবেশ করল ম্যারিয়ন তখনও দ্বিধান্বিত, স্পষ্ট চিন্তার ছাপ তার কপালে। আর ক্লডিয়া তার স্বভাবসুলভ স্বতঃস্ফুর্ত, প্রাণবন্ত। বৃদ্ধ ম্যারিয়নের সহযোগিতায় এগিয়ে এলো সে। সমস্ত দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে ম্যারিয়নের পরিধেয় খুলে ফেলল সে নিজ হাতে। তারপর সেগুলো সুন্দর ভাঁজ করে রাখল একটি চেয়ারে।

    এবার বিবস্ত্র হওয়ার পালা তার নিজের। একে এক পরিধেয় সরতে লাগল ক্লডিয়ার, সম্পূর্ণ নগ্ন হলো সে। কিন্তু ততক্ষণে নগ্ন ম্যারিয়ন নিজেকে লুকিয়েছে বিছানার চাদরে। নগ্ন ক্লডিয়া জড়িয়ে ধরল ম্যারিয়নকে। নিজের সংকোচ কাটাতে এবং কিছুটা স্বাভাবিক হতে ম্যারিয়ন কৌতুক করে বলল রাজা সলোমন যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তাকে উষ্ণ রাখতে তার শয্যায় পাঠানো হয়েছে কুমারী…

    বেশ, আপনার যদি এমনই মনোভাব, তবে খুব বেশি সহযোগিতা করা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে। ক্লডিয়া বুড়োকে উজ্জীবিত করতে তাৎক্ষণিক বলল। এ কথায় সাগ্রহে বুড়ো ম্যারিয়নকে জড়িয়ে ধরল এবং স্পর্শ করল তার ঠোঁট। ম্যারিয়নের ঠোঁটের উষ্ণতা পেল ক্লডিয়া। তবে শরীরে পেল শুষ্কতা এবং বার্ধক্যের নরম পেশি। সব মিলিয়ে ক্লডিয়ার একেবারে খারাপ লাগেনি বুড়োর সাথে শরীর মিশিয়ে রাখতে।

    এর মধ্যে কেটে গেছে বেশ কিছু সময়। অবাক হলো ক্লডিয়া। এতটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া নেই ম্যারিয়নের। অবাক হলো এই ভেবে, হাজার ডলারের সুট-বুটের ম্যারিয়ন কতই না সুপুরুষ, কতই না ক্ষমতাবান, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অথচ জীবনের এই শেষ লগ্নে ক্লডিয়ার আহ্বানে কতটাই তার অক্ষমতা। আরো মিনিট দশেক মরিয়া চেষ্টা চালাল ক্লডিয়া চুমুতে চুমুতে ভরে দিল সারা অঙ্গ, আলিঙ্গনের মোল কলার বাদ গেল না কিছুই। কিন্তু ম্যারিয়ন তথৈবচ। অবশেষে উপলব্ধি করল ম্যারিয়নের আর কিছুই হবার নয়।

    ক্লডিয়ার বাহুতে তখনও ম্যারিয়নের মাথা। আফসোস হলো তার। ভাবতে লাগল- এই শেষ। জীবনের সর্বশেষ নারী। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। ক্লডিয়া তাকে বিন্দুমাত্র শ্লেষাত্মক উক্তি করল না। বরং স্নেহের সাথেই শরীরে নিজের উষ্ণতা বিলিয়ে দিতে লাগল আরো কিছুটা সময়।

    এক সময় ক্লডিয়া প্রসঙ্গ এড়াতে বলল, ওকে এলি। আমি আপনার সাথে, একটি বিষয়ে আলোচনা করতে চাই। আসলে, আপনাকে আমি বলতে চাই ব্যবসায়িক এবং শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার ছবিগুলো কেন এত অবহেলিত হচ্ছে? আগের মতোই ম্যারিয়নকে আলিঙ্গনে রেখেছিল, তার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল। ম্যারিয়নের সমস্যাগুলো এবার তুলে ধরল সে। দায়ী করল তার কিছু চিত্রনাট্যকার, কলাকুশলী ও পরিচালককে। ক্লডিয়া বলল, আপনার ছবিগুলো যে শুধু নিম্নমানের তাই নয়, দেখার মতোও নয় আপনার এসব ছবি। ভয়াবহ বিশ্লেষণ ক্লডিয়ার, যা আজ অবধি কেউ ম্যারিয়নের সামনে মুখ ফুটে এভাবে বলার সাহস পায়নি।

    ক্লডিয়া স্বাভাবিকভাবেই বলে চলল, এর কারণ, ছবিগুলোতে গল্পের কোনো সেন্স নেই। তাছাড়া আপনার কিছু ফাঁকি পরিচালক আছে, যারা শুধু তাদের কল্পিত গল্পের স্লাইড শোগুলো উপস্থাপন করে আপনার সম্মতি আদায়ের জন্য। আর অভিনয় শিল্পীরা ছবিগুলোতে অভিনয় করে হয়তো অর্থের লোভে কিংবা অন্য কোনো স্বার্থে। ঠোঁটে প্রসন্ন হাসি ছড়িয়ে ম্যারিয়ন শুনছিল ক্লডিয়ার বিশ্লেষণ। বেশ আয়েসেই শুনছিল সে। কিছুক্ষণ আগের দ্বিধা-সংকোচ সরে গেছে তার মন থেকে। উপলব্ধি হলো— তার জীবনের প্রয়োজনীয় কিছু অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেছে ইতিমধ্যেই– এটা এক রকমের মানসিক মৃত্যুর সমতুল্য। বুঝতে পারল, সে আর কখনোই কোনো নারীর ভালোবাসা পাবে না, শত চেষ্টা করলেও নয়। কিংবা পারবে না তার পৌরুষত্ব দিয়ে কোনো নারীকে অপদস্থ করতে– এ অধ্যায়ে মৃত্যু ঘটেছে ম্যারিয়নের।

    সে জানে, আজকের এই রাতের কথা ক্লডিয়া হয়তো কখনোই কারো কাছে প্রকাশ করবে না। আর যদি করেই, তাতেইবা কি এমন আসে-যায়? ম্যারিয়ন জানে তার এখনো আছে পার্থিব ক্ষমতা। এখনো এ বয়সেও হাজার হাজার লোকের জীবনের পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা তার আছে। যত দিন সে বেঁচে থাকবে ততদিনই থাকবে তার এ ক্ষমতা। তবে ক্লডিয়ার সুখের পরশ, সাথে ফিল্ম নিয়ে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনছে, শুনতে ভালো লাগছে ম্যারিয়নের।

    এতক্ষণে মুখ খুলল সে, তুমি বুঝতে পারছ না, বলল ম্যারিয়ন। আমি কেবল একটি ছবির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সহযোগিতা করতে পারি, ছবির নির্বাহের কাজ আমার নয়– আমার পক্ষে সেটা সম্ভবও নয়। তোমার মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে সঠিক—-আমি আর কখনোই সেসব পরিচালককে নিযুক্ত করব না। ট্যালেন্টদের তো আর অর্থের ক্ষতি হয় না হয় আমার। অবশ্য তাদেরকে এর দায় নিতে হবে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে— শৈল্পিক ছবি কি সত্যই অর্থ আনবে?

    কথা বলতে বলতেই ম্যারিয়ন বিছানা ছেড়ে নেমে এলো। চেয়ারে রাখা কাপড়গুলো চড়াতে শুরু করল একে একে।

    নগ্নতা ঢেকে যাবার পর পোশাকি ভদ্রতা উভয়ের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাল। এতক্ষণের স্বাভাবিকতায় ছেদ পড়ল। তবে ক্লডিয়ার এ মিশন সফল না হলেও, নগ্ন ম্যারিয়নকে কিন্তু তার যথেষ্ট শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। তরুণদের মতো টানা দুটি পা, মেদহীন চিকন শরীর, তুলনামূলক বড় মাথা– এর সব কিছুই ছিল ম্যারিয়নের প্রতি ক্লডিয়ার আকর্ষণের উৎস। শুধু একটি অঙ্গই হতাশ করেছে ক্লডিয়াকে। বুড়ো ম্যারিয়নের যৌনাঙ্গ সতেজ করার জন্য আদৌ কোনো চিকিৎসা আছে কি-না, ক্লডিয়া তার সার্জন প্রেমিকের পরামর্শ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

    এ মুহূর্তে ম্যারিয়নের ক্লান্ত শরীরে শার্টের বোম লাগানো বোম দেখে তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে এলো ক্লডিয়া। তারপর নিজ হাতে গুলো লাগিয়ে দিল একে একে।

    ক্লডিয়ার নগ্নতায় গভীর দৃষ্টি ফেলল ম্যারিয়ন। বিগত যৌবনের অনেক ভাসা ভাসা স্মৃতি উঁকি মেরে গেল তার মনে। এ পর্যন্ত যত স্টারদের সাথে সে বিছানায় গেছে তাদের অনেকের চেয়ে ক্লডিয়ার শরীর আকর্ষণীয়। কিন্তু এ মুহূর্তে ক্লডিয়ার নগ্ন সৌন্দর্য ম্যারিয়নকে মোটেও বিচলিত করতে পারল না– আর, পারবেও না কোনো দিন। তবে এর জন্য তার যেমন নেই আফসোস, তেমনই নেই কোনো উচ্ছ্বাস।

    ক্লডিয়া সুন্দর করে বেঁধেছিল ম্যারিয়নের মেরুন রঙ্গা টাই। চেয়ারে বসে পড়েছিলেন ম্যারিয়ন। ক্লডিয়া কোল ঘেঁষে উষ্কখুষ্ক চুলে আঙুল চালিয়ে যাচ্ছিল। চুলগুলো নির্দিষ্ট সিঁথিতে এনে ম্যারিয়নের ঠোঁটে আবারো উষ্ণ স্পর্শ দিল ক্লডিয়া। বলল, সুন্দর একটি সময় কাটালাম আজ।

    কথাটি ম্যারিয়নের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। ক্লডিয়ার কণ্ঠে বিদ্রুপের কোনো লেশমাত্র পেলেন না বুড়ো ম্যারিয়ন। সত্যিই কি ক্লডিয়া সুন্দর সময় কাটিয়েছে? ম্যারিয়নের বিশ্বাস হয় না—-বিশ্বাস হবার কথাও নয়। এ পর্যন্ত ক্লডিয়ার সাথে যতটুকু হয়েছে, তার আদ্যপান্ত ব্যর্থতায় ভরা হাস্যকর একটা সময় গেছে। তবে ক্লডিয়ার কণ্ঠে যে এক আবেগ ছিল তাতে অবলম্বন যেন পাওয়া গেল কিছুটা। ক্লডিয়াকে মোহিত করা সেই বিখ্যাত হাসি ফুটে উঠল বুড়োর মুখে।

    ম্যারিয়ন বুঝতে পারলেন যুবতী ক্লডিয়া সত্যিই নিষ্পাপ। তার সত্যিই আছে একটি সুন্দর হৃদয়। আর বুড়ো ম্যারিয়নের প্রতি তার এই ভালো লাগাটাও হচ্ছে যুবতী বয়সের উচ্ছল আবেগ। ম্যারিয়নের আফসোস হলো এই ভেবে যে, ক্লডিয়ার মতো এমন স্বচ্ছ, সুন্দর ও মেধাবী একটি মেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম একটি ক্ষেত্রে বিচরণ করছে- এ পৃথিবী তার আমূল পরিবর্তন করে ফেলবে। নিঃশেষ করে ফেলবে তাকে।

    ক্লডিয়ার আচার-আচরণ, ব্যবহারে মুগ্ধ ম্যারিয়ন। তিনি বললেন, বেশ, অন্তত আজ আমি তোমাকে খাওয়াতে চাই। বলেই টেলিফোনের রিসিভার তুলে রুম-সার্ভিস বিভাগে নির্দেশ দিলেন তিনি।

    সত্যিই ক্ষিদে পেয়েছিল ক্লডিয়ার। খাবার আসার পর গোগ্রাসে গিলল অধিকাংশ খাবার। নিমেষে শেষ করল সুপের বাটি ও হাঁসের মাংস দেয়া ভেজিটেবল। তারপর বড় আকারের বাটি ভর্তি স্ট্রবেরি আইসক্রিম তৃপ্তির সাথে খেল সে। অপরদিকে ম্যারিয়ন খেল খুব সামান্যই, তবে মদের বোতলের অনেকটাই সে শেষ করল। খেতে খেতে তাদের মাঝে আলাপ হলো মুভি এবং নভেল নিয়ে। এ আলাপ থেকে ক্লডিয়া আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করল– তার চেয়ে ম্যারিয়ন অনেক ভালো পড়ুয়া। অগাধ জ্ঞান আছে তার নভেলে।

    লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম আমি, ম্যারিয়ন বললেন। এখনো আমার দুর্বলতা রয়েছে এর প্রতি। পড়তেও ভালো লাগে। বই সত্যিই আমাকে দেয় আনন্দ। তবে, তুমি কি জানো এমনই একজন লেখক আছে আমার পছন্দের তালিকায়, যার সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছি। এমনকি তার লেখা বইগুলো আমি রীতিমতো পূজা করি। শুনবে তার নাম? একটু থামলেন ম্যারিয়ন। আবার সচকিত হয়ে উঠলেন তিনি। বললেন, সেই লেখকের নাম আর্নেস্ট ভেইল। অনেক সুন্দর সুন্দর বই লিখেছে সে। তবে তার ব্যক্তিগত জীবনটা বেশ ব্যথাতুর। কিভাবে তার পক্ষে এমন লেখা সম্ভব- অবাক হই।

    এর কারণ, লেখকরা তাদের লেখা বইয়ের মতো পারে না। ক্লডিয়া প্রায় তাৎক্ষণিক জবাব দিল। আবার বলল, জীবনের অনেক রস ঘেঁকে হেঁকে একজন লেখক পূর্ণ করে তোলে অন্যের উপভোগের জন্য। বিশাল বিশাল পাথরের বোঝ তাদের জীবনে, যেন এক একটা খনি। আর সেখান থেকে ছোট মূল্যবান হীরে পেতে, প্রচণ্ড রকমের বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে একের পর এক–এত সহজ নয়।

    আর্নেস্ট ভেইলকে তুমি চেন ম্যারিয়নের প্রশ্নে ক্লডিয়া ইতিবাচক মাথা নাড়ল। ম্যারিয়নের প্রশ্নে এমন কোনো অশ্লীল আভাস ছিল না। ভেইলের সাথে যে ক্লডিয়ার সম্পর্ক আছে তা কোনো মতে ম্যারিয়নের জেনে ফেলা অসম্ভব কিছু নয়। তবে সে ম্যারিয়নকে অবশ্যই জানাতে চায় যে, ভেইলের সাথে তার একটা সম্পর্ক আছে- যে সম্পর্ক ভালোবাসার। ক্লডিয়া বলল, আমি তার লেখা ভালোবাসি, খুব পছন্দ করি কিন্তু আমি তার জন্য একা দাঁড়াতে পারব না। একটু রহস্য রেখেই বলল ক্লডিয়া, তার সাথে স্টুডিও অবিবেচনাপূর্ণ আচরণ করেছে। অনিচ্ছাপূর্বক তার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে।

    ক্লডিয়া আকস্মিক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। হাতের অশ্লীল ভঙ্গি প্রদর্শন করে সে ম্যারিয়নের উদ্দেশে বলল, স্টুডিওর প্রতি অধিকাংশ ট্যালেন্টেরই রয়েছে। ক্ষোভ। এটি কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয় এবং আপনার সামনেই আজ বলছি, ব্যবসায়িক সম্পর্কের দিক দিয়ে আপনিও তাদের সুইট হার্ট নন। তবে, আমি হচ্ছি এ শহরের একমাত্র রাইটার যে প্রকৃতই আপনাকে পছন্দ করি।

    এ কথায় দুজনই হেসে উঠল।

    ক্লডিয়ার আজকের এই সুন্দর মুহূর্তটি থেকে বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে এলো। বেভারলি হিলস হোটেলের বাংলো ত্যাগের আগে ক্লডিয়ার উদ্দেশে ম্যারিয়ন বললেন, তোমার যে কোনো সমস্যায় দয়া করে আমাকে জানিও। এটি ম্যারিয়নের এমনই এক অভাবনীয় ম্যাসেজ যা এ পর্যন্ত তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুব কম মানুষের ভাগ্যেই জুটেছে।

    ক্লডিয়া বুঝতে পারল বিষয়টি। বলল, এমন সময় উপভোগ করে আমি কখনোই আমার সুবিধা আদায় করতে অভ্যস্ত নই। বরং কোনো স্ক্রিপ্ট নিয়ে যদি আপনি কখনো সমস্যায় পড়েন, আমাকে কল করবেন। সে ক্ষেত্রে উপদেশ হবে বিনা পয়সায়, আর যদি আমাকে লিখতে হয় তবে এর জন্য পে করতে হবে।

    অত্যন্ত কাঠখোট্টা প্রফেশনাল জবাব শুনিয়ে দিল হলিউডের প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান বৃদ্ধ ম্যারিয়নকে। এমন একটা ভাব দেখাল সে যেন ক্লডিয়ার প্রয়োজনে নয়, ম্যারিয়নেরই প্রয়োজন পড়তে পারে ক্লডিয়াকে এবং খুব একটা সত্য কথা না হলেও গর্ব ভরে ম্যারিয়নকে সে বলল, আমার নিজের মেধার প্রতি যথেষ্ট আস্থা রয়েছে।

    বন্ধু হয়েই সেদিনের মতো বিদায় নিল ক্লডিয়া। ম্যারিয়নের মনেও ছেয়ে রইল ক্লডিয়ার ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব।

    সমুদ্র উপকূলের হাইওয়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল ক্লডিয়া। এখানে গাড়ির গতিসীমা কম। বাম পাশে সমুদ্র সৈকত। রোদের আলোয় সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝিলিক। আপন মনেই দৃষ্টি চলে গেল সেদিকে। সৈকতে অর্ধনগ্ন মানুষের শান্ত ঘোরাফেরা। তাকিয়ে রইল সেদিকে ক্লডিয়া। মনে পড়ে গেল সেই ছোটবেলার কথা– কতবারই না এসেছে সে বেড়াতে। মাথা উঁচু করে দৃষ্টি গেল সৈকত পেরিয়ে, সাগরের উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে আরো অনেক দূর একেবারে দিগন্তরেখা অবধি। সেখানে যেন সাগরের উত্তালতা নেই। সর্ষে বিন্দুর মতো কিছু মাস্তুল চোখে পড়ল তার। দৃষ্টি ফিরে এলো হাইওয়ের ডান ডিকের এক জটলায়। ক্যামেরা, বোর্ড আর সাউন্ড সিস্টেম ঘিরে উৎসুক জনতা, হয়তো কোনো ছবির শুটিং চলছে। সৈকত তীরের এমন হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাতে ক্লডিয়ার খুব ভালো লাগে। আর ঠিক ততটাই এ বিষয়ে বিতৃষ্ণা আর্নেস্ট ভেইলের। ক্লডিয়ার মনে পড়ে গেল। ভেইল প্রায় বলত, এই হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালানো যেন নরকের জন্য ফেরি ধরা।

    আর্নেস্ট ভেইলের সাথে তার প্রথম সাক্ষাতের কথা স্পষ্ট মনে আছে ক্লডিয়ার। ভেইলের বহুল জনপ্রিয় নভেলের গল্প অবলম্বনে চিত্রনাট্য তৈরির জন্য যেদিন ডাক পড়ল ক্লডিয়ার, সেদিনই প্রথম দেখা। আগে থেকেই ভেইলের ভক্ত ছিল ক্লডিয়া। কিন্তু কখনো এই স্বপ্নের লেখকের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো একেবারে লেখকের গল্পের চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব পেয়ে।

    ভেইলের লেখা প্রতিটি বাক্যে ক্লডিয়া পেত ভিন্ন স্বাদ, যেন মিউজিকের একটা ছান্দিক ভাব ফুটে উঠত লেখায়। পরবর্তীতে এ ছন্দেই দুজন গড়ে নেয় জীবনের কাব্য। ভেইলের লেখাগুলো হতো সর্বদাই বিয়োগান্তক চরিত্রের বিয়োগান্তক পরিণতি ছাড়া যেন কিছুই বোঝে না সে। তবে এর মাঝেও ছিল তার লেখার অভিনবত্ব। নতুন নতুন লেখায় অভিনব কৌশলে মুগ্ধ হয়েছিল ক্লডিয়া।

    .

    ছোটবেলা থেকেই সে পড়ছে ভেইলের লেখা। আর যতই বড় হচ্ছিল সে, ততই যেন স্বপ্নের এই লেখকের সাথে সাক্ষাৎ লাভের বাসনা প্রগাঢ় হয়ে উঠেছিল। তার কথা চিন্তা করে রোমাঞ্চ অনুভূত হতো তার। কিন্তু যখন তাকে সামনে পেল, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ হয়ে দেখা দিল ক্লডিয়ার কাছে।

    ভেইলের তখন পঞ্চাশ বছর বয়স। শারীরিক অবকাঠামোকে তার লেখা গদ্যের মতো মনে হলো না ক্লডিয়ার। বোটে, মোটা এবং টাক মাথা। ক্লডিয়ার মনে হলো, তার এই টাক ঢাকার কোনো চেষ্টাই যেন সে করেনি কখনো। এমনকি তার দৈনন্দিন জীবনে নিজের সামান্যতম সৌন্দর্যের যত্ন নেয়নি কখনো। অথচ গল্পের চরিত্রগুলোর জন্য ছিল তার অপার স্নেহ, অশেষ যত্ন। হয়তো এটাই ছিল তার ব্যক্তি জীবনের সবচেয়ে উচ্ছ্বাসের বিষয়, শিশুর মতো সরলতা। বুদ্ধিমত্তাকে ছাপিয়ে যে সরলতা ক্লডিয়া ভেইলের মাঝে খুঁজে পেয়েছিল, তাতেই সে দুর্বল হয়ে পড়ল।

    পোলো লাউঞ্জের প্রতি আর্নেস্ট ভেইলের রয়েছে সীমাহীন দুর্বলতা। সে মনে করে, পোলো লাউঞ্জে যদি অন্তত এক বেলা সকালের নাস্তা করতে পারত, তবে সে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। এই হচ্ছে তার মানসিক সরলতা। গুটিয়ে রাখাই যেন তার স্বভাব। তবে লেখক হিসেবে মোটেও নয়– নিখুঁত এবং প্রাণখোলা তার সব সৃষ্টি।

    এ পর্যন্ত ভেইলের লেখা নভেলের সমালোচনা হয়েছে ব্যাপক। সমালোচকদের আকুণ্ঠ উদ্ধৃতি তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে, সে তুলনায় অর্থের প্রাপ্তি কিন্তু নগণ্যই বলা যায়। অর্থ প্রাপ্তি যাই হোক, শীর্ষ জনপ্রিয় ভেইলের নভেল অবশেষে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মনোনীত হয়েছে। আর এই উদ্যোগ বিখ্যাত লডস্টোন স্টুডিওর।

    লডস্টোনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ববি বানজ। ভেইলের লেখাগুলো যেন তার হৃদয় স্পর্শ করেছে এভাবেই প্রশংসা করেছিল বানজ। তার সাথে তাল মিলিয়েছিল স্কিপি ডিরিও। তারা প্রায় এক সাথেই বলেছিল– চমৎকার তোমার লেখা। মুখোমুখি এমন প্রশংসায় লজ্জায় মাথা নত করে ফেলেছিল ভেইল। স্বপ্নের লেখক ভেইলের এমন সরলতায় সেদিন ক্লডিয়াও তাজ্জব বনে। গিয়েছিল।

    লেখক ভেইলের সাথে সেটাই প্রথম মিটিং। ক্লডিয়ারও প্রথম সাক্ষাৎ। এরপর আবারও স্টুডিও কার্যালয়ে বসল তারা। কয়েকটা ঘণ্টা মাত্র অতিবাহিত হয়েছে এর মাঝে, অথচ কেমন বেমালুম পাল্টে গেল সুর বানজ-ডিরির মনোভাব, সামগ্রিক বাতাবরণ। যে মুখে ভূয়সী প্রশংসা করেছিল বানজ সেদিন, সে মুখেই দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় ভেইলের উপন্যাসকে আকাশ থেকে একেবারে আছড়ে ফেলল মাটিতে। বলা হলো– সাদা কাগজ ভরে আবল তাবল কিছু আঁকিবুকি ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন কথা অবশ্য ভেইলের অগোচরেই বলা হলো। শুধু জানল ক্লডিয়া, আর অবাক হলো বানজ ও ডিবির ধূর্ততায়।

    ভেইলের সরলতায় তখনও ক্লডিয়া আঁচড় দেয়নি, অর্থাৎ জানায়নি বানজদের প্রকৃত মনোভাবের কথা। বরং ভেইলের সরলতা, বিশ্বাসপ্রবণতা এবং চলচ্চিত্রে তার আগ্রহ নিয়ে ক্লডিয়া মনে মনে বেশ মজাই পাচ্ছিল।

    আলোচনার টেবিলে বানজ বলল আর্নেস্ট, তোমাকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা ক্লডিয়াকে এনেছি। তার ব্যাপক কারিগরি জ্ঞান রয়েছে এ বিষয়ে ছবি কিভাবে ব্যবসা সফল হবে সে বিষয়েও ভালো ধারণা আছে তার। এ ছবি যে সুপার-ডুপার হিট করবে, তার গন্ধ পাচ্ছি। তবে মনে রেখো, এ ছবির লভ্যাংশের টেন পার্সেন্ট পাবে তুমি।

    এমন প্রস্তাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠল ভেইলের মুখ। ক্লডিয়া কিন্তু মোটেও খুশি হতে পারল না। গভীরভাবে লক্ষ্য করল ভেইলকে। মনে মনে ভাবল, এই হাবলাটা বুঝতেও পারছে না যে, মোটের ওপর দশ শতাংশ যে শূন্যও হয়ে যেতে পারে নিমেষে বানজদের চক্রান্তে।

    তবে ভেইল এই প্রস্তাবে দারুণ কৃতজ্ঞ হয়ে উঠল তাদের প্রতি। আর এই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটল যখন সে ক্লডিয়াকে উদ্দেশ করে তাদের বলল, অবশ্যই, আমি তার কাছে শিখব। ছবির জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা অবশ্যই বই লেখার চেয়ে অনেক বেশি মজার হবে, যদিও বিষয়টি আমার কাছে একেবারেই নতুন।

    ভেইলকে আশ্বস্ত করতে স্কিপি ডিরি এবার বলল, আর্নেস্ট, তোমার মাঝে আমরা সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধির আভাস দেখতে পেয়েছি। আমাদের এ প্রতিষ্ঠান থেকে তুমি ব্যাপক কাজ পেতে পারো। এ ছবি থেকেই তোমার সচ্ছলতাও ফিরে আসতে পারে, সত্যিই যদি ছবিটি হিট করে এবং একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

    ক্লডিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হেনে দেখতে লাগল ডিরি ও বানজকে। দুজনই আজব ঠেকল ক্লাডিয়ার কাছে। তার মনে হলো––এ টেবিলে উপস্থিত তিনজনই অর্থাৎ বানজ-ডিরির সাথে গোবেচারা ভেইলও হলিউডে যেন তেমন একটা অপরিহার্য নয়– তারা না থাকলেও হলিউড চলবে আপন গতিতে এবং সগর্বেই। ক্লডিয়ার মনে পড়ে গেল তখনও সেই সার্জনের ছুরির পোচ পড়েনি তার। মাফিয়াদের মতো চিবুক নিয়েই ধুকে ধুকে চলছে তার স্বপ্নের জগতে পদচারণা। সবার চোখে সুন্দরী হয়ে ওঠেনি তখনও ক্লডিয়া। স্পষ্ট মনে আছে তার-~ এই ডিরি কি তাকে কম ঘটিয়েছে?

    ক্লডিয়া জানে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়ার সাথে সাথেই হাজারো সমস্যা এসে জুটেছে। যাই হোক সে রাতে ভেইল তাকে ডিনারের প্রস্তাব দিল। খুব সাদামাটা উদ্দেশ্য। নতুন স্ক্রিপ্ট নিয়ে তারা কিভাবে কাজ করবে, তার একটা পরিকল্পনার জন্যই ভেইলের এ প্রস্তাব। ক্লডিয়া সম্মত হলো। কিন্তু সে নিজেকে মোটেও আকর্ষণীয় করে উপস্থিত হলো না সে সাক্ষাতে। কৌশলে এড়িয়ে গেল রোমান্টিক সব বিষয়। কাজের সময় এসব রোমান্স-টোমান্স ক্লডিয়ার একেবারে পছন্দ নয়। বিশেষ করে লেখালেখির সময় এ ধরনের বিষয় যোগ হলে কাজে মারাত্মক সমস্যা হয় ক্লডিয়ার।

    সেই রাতের ডিনার থেকে শুরু হলো একসাথে স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ। দেখতে দেখতে কেটে গেল দুটি মাস। আর আশ্চর্যের সাথে ক্লডিয়া লক্ষ্য করল তাদের সম্পর্ক অনায়াসে বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।

    কাজ করতে করতে একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল তারা। মনে হলো যেন কিছুটা অবসরের দরকার। দুজনেরই এক দশা। মনোস্থির করল ভেগাসে যবে। ক্লডিয়া ভেইল একসাথেই রওনা হলো ভেগাসের উদ্দেশে গ্যাম্বলিংয়ে বেশ দুর্বলতা রয়েছে ক্লডিয়ার। ভেইলও একই পথের পথিক, এ লাম্পট্যে দুর্বলতা তারও।

    ভেগাসে ক্লডিয়া ভেইলকে পরিচয় করিয়ে দিল তার ভাই ক্রসের সাথে এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করল তাদের সম্পর্কটি যেন তেলে আর জলে– কোনো দিনই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। বেশ বুঝতে পারল ক্লডিয়া।

    আর্নেস্ট প্রকৃতই একজন বুদ্ধিজীবী। গলফের প্রতি তার আগ্রহই নেই। অপরদিকে ক্রস বছরেও একটা বই পড়ে কি-না সন্দেহ। ভাই ক্রসকে ভেইলের কেমন লাগল– এমন প্রশ্নের জবাবে ভেইল বলল, সে হচ্ছে শ্রোতা আর আমি যেন বক্তা।

    এটা কোনো প্রকৃত ব্যাখ্যা হলো না। ক্লডিয়া হতাশ হলো। এরপর ভেইল সম্পর্কে ক্রসের কাছে জানতে চাইল ক্লডিয়া। ক্রসের উত্তর যেন আরো দুর্বোধ্য, আরো রহস্যময় মনে হলো।

    ক্লডিয়ার প্রশ্নে ক্রসের ভেতর যেন তোলপাড় করে উঠল। বেশ কিছুটা সময় নীরব ছিল সে। অবশেষে বলে উঠল, তার প্রতি তোমার একচোখা দৃষ্টি দেয়া ঠিক হবে না। আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তার যেন কিছুই চাওয়ার নেই। এবং সে ক্লডিয়াকে হুঁশিয়ার করে দিল সে খুব শিগগিরই তা বুঝতে পারবে। খুব অবাক ঠেকল ক্রসের এই খোলামেলা মন্তব্য। আর্নেস্ট ভেইল এমনই এক দুর্ভাগা যে তার কোনো কিছুই গোপনীয় নয়, এমনকি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাও।

    আর্নেস্ট ভেইলের সাথে ক্লডিয়ার সম্পর্কটি একটু ভিন্ন ধরনের। সারা বিশ্বের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হলেও, হলিউডে তার কোনো ক্ষমতাই নেই। এছাড়া তার যেমন নেই কোনো সামাজিক প্রাপ্তি তেমনি সে মারাত্মক ধরনের সদাবিরুদ্ধচারী। পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে তার আর্টিকেলগুলো সব সময়ই জাতীয় বিরোধের উস্কানিমূলক এবং দেখা গেছে তার অনুমানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়ে থাকে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশ তাতিয়ে তোলে তার লেখাগুলো। আমেরিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে তার লেখাগুলো। নারীবাদের ঘোর সমালোচক ভেইল। এক লেখায় সে স্পষ্টই উল্লেখ করেছিল শারীরিক কাঠামোগত দিক দিয়ে সমান না হওয়া পর্যন্ত নারীরা পুরুষদের বশীভূত হয়ে থাকবে। নারীবাদীদের প্রতি তার উপদেশমূলক উক্তি হলো–তাদের পার্লামেন্টারি প্রশিক্ষণ দল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

    শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই নয়, আমেরিকা জুড়ে যে বর্ণ বৈষম্য বিরাজ করছে সে প্রসঙ্গেও ভেইল একবার এক দীর্ঘ আর্টিকেল লিখেছিল। তাতে সে জোর দিয়ে উল্লেখ করেছিল— কৃষ্ণাঙ্গরা যেন নিজেদের রঙিন বলে আখ্যায়িত করে। এটাই হবে তাদের জন্য উচিত কাজ। কেননা এই কৃষ্ণবর্ণ অর্থাৎ ব্ল্যাক বিবিধ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন কালো চিন্তা, কালো নরকের মতে, কালো সমর্থন, কালো টাকা– এ সবই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত। ভেইল শুধু আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের উদ্দেশ করেই বলেনি, তার লেখা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইতালীয় স্প্যানিয়ার্ডস, গ্রিকসহ বেশ কিছু জাতির কৃষ্ণাঙ্গদেরও আঘাত করে। এসব অঞ্চলের কৃষ্ণাঙ্গ নিজেদের রঙিন হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে জোর আপত্তি জানায়। বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি হয়েছিল। ভেইলের এসব লেখায়।

    চিত্রনাট্যের পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করতে করতে বেশ অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠল ক্লডিয়া ও ভেইলের মাঝে। ভেইল ছিল ক্লডিয়ার যেন অত্যন্ত মনোযোগী ছাত্র। একেবারেই ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করল সে ক্লডিয়ার কাছে। তবে সামাজিক বোধের ওপর ভেইলের যে মারাত্মক চিন্তা চেতনা রয়েছে, সেসব বিষয়ে ক্লডিয়া উৎসাহিত হলেও, প্রায়ই তিক্ত রসিকতায় মেতে উঠত।

    অর্থ বিষয়ে ভেইলের যে বেপরোয়া অসচেতনতা, বিষয়টি কিন্তু ক্লডিয়া মেনে নিতে পারেনি। তবে মোটের ওপর তাদের মাঝে সম্পর্কটি ছিল বেশ মজার।

    ক্লডিয়া ডি লিনাও যে ইতিমধ্যে নিজেকে ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রকাশ করেছে, তা জানিয়েছিল ভেইলকে। হলিউডের চিত্রনাট্য লেখক হিসেবেই সুনামের কারণেই হয়তো তার লেখা বই শেষ পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে তার লেখা বইয়ের মন্তব্য করতে বলেছিল ক্লডিয়া। যেদিন কুডিয়ার এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট তার লেখা নভেলের ওপর প্রকাশিত সমালোচনাগুলো এনে হাজির করে, সেদিনই আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয় তার। ভেইলকে তাই একটি বই দিয়ে ক্লডিয়া মন্তব্য আশা করেছিল।

    ক্লডিয়ার লেখা নভেলের অনেকে প্রশংসা করলেও, সমালোচিত হয়েছে ব্যাপক। বাজারে খুব একটা কাটতি ছিল না। তবে তাতে সে আশাহত নয়। কেউ তার বই কিনুক কিংবা না কিনুক অথবা তার বই চলচ্চিত্রের জন্য যদি মনোনীত নাও হয়, তবুও তার নিজের লেখার প্রতি আস্থা রয়েছে ক্লডিয়ার। ভালোও বাসে সে তার নিজের সৃষ্টিকে। ক্লডিয়া তার এই উপন্যাসটি অবশ্য ভেইলকেই উৎসর্গ করেছিল। তাতে সে লিখেছিল– আমেরিকার জীবন্ত কিংবদন্তি নভেলিস্টকে।

    যাই হোক, ভেইল কিন্তু ক্লডিয়ার সমালোচনাই করেছে। এক সাক্ষাতে সে বলল, তুমি খুব ভাগ্যবতী নারী। একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে সত্যিই তুমি ভাগ্যবান কিন্তু ঔপন্যাসিক তুমি নও, আর কখনো হবেও না।

    সে দিন প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ভেইল ক্লডিয়ার উপন্যাসের সমালোচনা করে। নভেলের অঙ্গচ্ছেদ করে সে বুঝিয়ে দেয়– এটা কোনো লেখাই নয়-~~~ সমালোচনায় নগ্ন করে ছাড়ে তাকে। ক্লডিয়ার লেখাকে সে একটা ছেলেখেলা পাণ্ডুলিপি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ক্লডিয়াকে বুঝিয়ে দিয়েছে তার লেখায় যেমন আছে কাঠামোগত সমস্যা তেমনি অগভীর। নেই চরিত্র গঠনের শাব্দিক উৎকর্ষ, এমনকি সংলাপেও নেই আকর্ষণ। অথচ এই সংলাপই হচ্ছে তার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। এতে বুদ্ধিদীপ্ত সরলতা আছে কিন্তু প্রাণ নেই। ভেইলের এমন সমালোচনায় ক্লডিয়া আঘাত পেলেও, তার কথায় যে সত্যতা আছে, আছে যুক্তি এটা মেনেই তর্ক করল না।

    এত সমালোচনার পর দয়াপরবশ হয়ে ভেইল শুধু এটুকুই বলল, তোমার লেখা বইটি অষ্টাদশী মেয়েদের জন্য হবে বেশ চমঙ্কার। আর আমি এতটা সময় ধরে তোমার লেখার যে সমালোচনা করলাম তা আমার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে। তোমার লেখায় এমন কিছু সমস্যা আছে যা তুমি কখনোই শোধরাতে পারবে না। পারবে না মেরামত করতেও। তোমার আসলে ভাষা জ্ঞানের দারুণ অভাব।

    ভেইলের এতক্ষণের কঠোর সমালোচনায় আঘাত পেলেও ভেঙে পড়েনি। কিন্তু এবার আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারল না– ভেঙে একেবারে যেন খান খান হয়ে গেল। তারপরও শেষ চেষ্টা চালাল যারা তার বইয়ের প্রশংসা করেছে। তাদের দেয়া কৃতিত্বের কথা বলে। ক্লডিয়া বলল, তবে কি যারা প্রশংসনীয় সমালোচনা করেছে তাদের সমালোচনাও ভুল? আমি তো যথাসাধ্য সাবলীল বাক্যই লেখার চেষ্টা করেছি। আরেকটি বিষয়, আমি মূলত তোমার লেখার ছান্দিক ভাষাকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি।

    এই প্রথম বারের মতো হাসল ভেইল, ধন্যবাদ তোমাকে বলল ভেইল। আমি কিন্তু আমার লেখায় ছান্দিক ভাষারীতি আনার চেষ্টা করিনি। চরিত্রের আবেগেই এমন ভাষা চলে এসেছে। আর তোমার এসেছে জোর করে, যা অবশ্যই ভুল এবং মেকি।

    ক্লডিয়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। অঝোর ধারায় নেমে এলো অশ্রু। তুমি কি ধরনের মানুষ কেঁদে কেঁদেই বলতে লাগল ক্লডিয়া। এত কঠোর ভাবে কিভাবে তুমি আমাকে বলতে পারলে?

    ক্লডিয়াকে স্বাভাবিক করতে ভেইল তৎপর হলো। বলল, একটা প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করার মতো মান তোমার লেখায় আছে। তুমি একজন স্বনামধন্য চিত্রনাট্যকার হয়েও ঔপন্যাসিক হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ কেন? আমার মতো অনাহারে মরবে তুমি। তুমি চিত্রনাট্যকার হিসেবে অবশ্যই জিনিয়াস।

    একটু থামল ভেইল। তারপর আবার বলল, আমার যা মনে হয়েছে, আমার অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য করেছি। আমার মতে আমি যা বলেছি তা সঠিক। হতে পারে আমি ভুলও বলেছি, কিন্তু

    ক্লডিয়া ধাতস্থ হলো। বলল, না, তুমি ভুল বলোনি, কিন্তু তোমার কথাগুলো আঘাত করেছে আমাকে।

    সতর্কতার সাথে ক্লডিয়ার চোখে চোখ রাখল ভেইল। তারপর ধীরে ধীরে তার উদ্দেশে বলল ভেইল, তোমার কাছে প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু বিষয় আছে। মুভির সংলাপ তৈরির ব্যাপকগুণ আছে তোমার, স্টোরি লাইন তৈরিতেও তুমি পারদশী –প্রকৃত অর্থে চলচ্চিত্রে তোমার রয়েছে উৎকৃষ্ট ধারণা। অটোমোবাইলের জন্য উচ্চ প্রযুক্তি থাকতে তুমি কেন যাবে কামারের কাছে? তুমি হচ্ছ চলচ্চিত্রের ব্যক্তিত্ব, ঔপন্যাসিক না।

    বিস্ফারিত নেত্রে ভেইলের দিকে তাকাল ক্লডিয়া। এতক্ষণে সত্যিকারের সুখের হিমেল পরশ বুলিয়ে গেল তার হৃদয়ে। তবে একই গোঁ ধরে ক্লডিয়া বলল, তুমি জানো না কতটা কঠোরভাবে অপমান করেছ তুমি।

    হ্যাঁ অবশ্যই। আমি মানছি, স্বীকার করল ভেইল। তবে যা বলেছি তোমার ভালোর জন্যই।

    তোমার, লেখা বইয়ের সাথে তোমাকে আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমিই সেই লোক! ক্লডিয়ায় কণ্ঠে এখনো বিদ্বেষ। তোমার সাথে কথা বলে কেউই বিশ্বাস করবে না যে তোমার লেখাগুলোর স্রষ্টা তুমি।

    কর্কশ কণ্ঠে হেসে উঠল ভেইল, একেবারেই খাঁটি কথা বলেছ তুমি। এটাই কি মজার বিষয় নয়?

    ভেইলকে দমাতে পারল না ক্লডিয়া। পরবর্তী সপ্তাহের প্রথম কয়েকটা দিন ক্লডিয়া বেশ গম্ভীর থাকল। ক্লডিয়ার এ গাম্ভীর্য উভয়ের বন্ধুত্বে কোনো ছাপ ফেলল না। বরং আরো প্রগাঢ় হতে থাকল। কিন্তু ক্লডিয়ার এই পরিবর্তন ভেইলকে কিছুটা দমিয়ে ফেলল। সে ভাবল– এই বুঝি হতে চলেছে তাদের সম্পর্কের ইতি।

    সব কিছুকে ছাপিয়ে ক্লডিয়া ভেইলকে সতর্ক করে দিল পরবর্তী দিনগুলোর জন্য। বলল, আর্নেস্ট, সেদিনের মতো এতটা রুক্ষ আচরণ করবে না আরো কখনো। আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। যদিও আমি জানি তোমার কথাগুলোই ছিল সঠিক। তাই বলে এতটা নির্দয় হওয়া উচিত হয়নি তোমার।

    আরেকটু রুক্ষ হলো ক্লডিয়া। বলল, অপদস্থ করে তাতে প্রলেপ দিতে আমাকে বিছানায় নিয়ে যাওয়ার মনোবাসনা তোমার? অবশ্য আমি যতদূর জানি, এ ক্ষেত্রে তুমি একেবারেই আনাড়ি। ঈশ্বরের দোহাই, তোমার ঐ তিক্ত ওষুধের সাথে অন্তত একটু মিষ্টি দিও।

    বিড়বিড় করে উঠল ভেইল, এই একটি বিষয়ে আমি নিজের মতো। ক্লডিয়ার উদ্দেশে বলল, এসব বিষয়ে যদি আমার সততা না থাকে তবে আমার তো কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। আর সত্যি কথা বলতে, তোমার প্রতি আমি যে পশুবৎ আচরণ করেছি তা তোমার সাথে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলেই। সত্যিই আমি তোমার অনুরাগী। তুমি হয়তো নিজেও জান না তুমি কতটা ব্যতিক্রমী।

    ক্লডিয়া হেসে ফেলল। প্রশ্ন করল, তোমার এই অনুরাগ কি আমার টেলেন্টে না-কি আমার সরলতা এবং বুদ্ধিমত্তায়? না-কি আমায় সৌন্দর্যে?

    হাত নেড়ে বিরোধিতা করল ভেইল। বলল, এগুলোর কোনোটাই নয়। তুমি আশীর্বাদপুষ্ট, অত্যন্ত সুখী একজন। এমনকি আমার মনে হয় কোনো বিমর্ষতাই তোমাকে যেন ছোঁয়নি এবং ছেবেও না এটাই তোমার ক্ষেত্রে বিরল, আর তোমার প্রতি আমার অনুরাগের কারণ।

    ভেইলের এমন মন্তব্যে ক্লডিয়ার কপাল কুঞ্চিত হলো। কি যেন ভাবল কিছুটা সময়। তারপর বলল, তোমার এ কথাতেও অস্পষ্ট অপমানের আভাস। তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ, আমি নির্বোধ একটা ব্যক্তি? কয়েক পলক থামল ক্লডিয়া। আবার বলল, তোমার এ কথা তো আরো হতাশাজনক।

    ঠিক ধরেছ তুমি, ভেইল বলল, আমি নিজেও বিষাদগ্রস্ত এবং তোমার চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। ভেইলের এ কথায় কি ছিল কে জানে, ক্লডিয়া হেসে ফেলল। ভেইলও হেসে উঠল তার সাথে। আর ক্লডিয়া তাকে জড়িয়ে ধরল।

    ক্লডিয়া বলল, তোমার সতোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

    লডস্টোন স্টুডিওর জন্য পাণ্ডুলিপির কাজ অব্যাহত রয়েছে—- তখনো শেষ হয়নি। কিন্তু ভেইল-ক্লডিয়ার সম্পর্ক এগিয়েছে ইতিমধ্যেই, অনেক দূর। ক্লডিয়ার স্বতঃস্ফুর্ত উৎসাহে বিছানা পর্যন্ত গেছে তাদের সম্পর্ক। নতুনভাবে ভেইলকে আবিষ্কার করেছে ক্লডিয়া। বিনা কাপড়ে ভেইলকে আরো অনুরাগী মনে হয়েছে তার। ক্লডিয়ার এই স্বভাবজাত কৌশল ভেইলের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছেছে। ভেইলও পেয়েছে ক্লডিয়ার হৃদয়-সান্নিধ্য। নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থাও জন্মেছে–বিনিময় করেছে নিজেদের প্রগাঢ় আস্থার ভাব।

    ক্লডিয়ার চোখে, ভেইল যৌন সম্ভোগে আগ্রহান্বিত হলেও বিশেষ দক্ষ নয়। মানুষ হিসেবে সে যতটা না ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, তার চেয়ে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সেক্সের পর ভেইল হৃদয় খুলে কথা বলত ক্লডিয়ার সাথে। তার নগ্নতা এমন আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, এমনকি ক্লডিয়ার প্রতি সমালোচনাতেও নয়। আর অপর দিকে ক্লডিয়াও ভেইলের এমন আলোচনা পছন্দ করেছে। ভেইলের নগ্নতাও ছিল তার পছন্দের পরিধেয় ছাড়া ভেইল যেন বন্য-বানরের মতো ক্ষিপ্র এবং প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ। সর্বোপরি তার লোমশ এবং জট পাকানো পেশিবহুল শরীরে কেমন যেন একটা বানরের আদল। নগ্ন শরীরে গাছে ঝুলিয়ে রাখলে মানুষ তার লোমশ শরীর দেখে বানরই মনে করবে। তবে ভেইলের এই বানর প্রবৃত্তির ক্ষিপ্রতায় ক্লডিয়া মুগ্ধ। ভেইলের সাথে যৌনতায় সে খুঁজে পেয়েছে এক রকমের কৌতুককর আনন্দ।

    ভেইলকে এর আগে বেশ কয়েকবার টিভিতে দেখেছে ক্লডিয়া–হয়তো কোনো সাক্ষাৎকারে কিংবা কোনো আলোচনায়। সেসব অনুষ্ঠানে ভেইলের পোশাক-পরিচ্ছেদ, আভিজাত্যপূর্ণ ঠোঁটে ধরা পাইপ বাচনভঙ্গি– সব মিলিয়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষই মনে হয়েছে ক্লডিয়ার তবে টেলিভিশনের ভেইলের চেয়ে। শয্যাসঙ্গী ভেইল ক্লডিয়ার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

    সত্যিকারের প্রেমময় কথোপকথন বলতে যা বোঝায়, তা কখনোই হয়নি দুজনার মাঝে। ক্লডিয়াও এমন আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি। আর ভেইলের মানসিকতা কেবল সাহিত্যের। ভেইলের আলোচনায় আবেগ এসেছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গে। আর বিশ্বের এত নামকরা ঔপন্যাসিক হয়েও ভেইল কখনোই তা ফলাও করে জাহির করার চেষ্টা করেনি। ক্লডিয়ার সাথে ভেইলের মানসিকতায় এই সাহিত্য বিষয় ছাড়া আর কোনো কিছুতেই মিল নেই তেমন। তারপরও তাদের পারস্পরিক মানিয়ে চলার প্রবণতা থেকে তারা অবশেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে মনস্থির করে উভয়ের সম্মতিক্রমেই।

    ক্লডিয়ার সাথে ভেইলের সাহিত্য বিষয়ে বিতর্ক না হলেও, বিতর্ক হতে মুভি নিয়ে। চলচ্চিত্র কোনো শিল্পই নয় ভেইলের দৃষ্টিতে। আর এতেই ছিল ক্লডিয়ার জোর আপত্তি। চলচ্চিত্রের মতো চিত্রশিল্পও ভেইলের দৃষ্টিতে কোনো শিল্প নয়।

    ভেইলের এমন উস্কানিমূলক উক্তির বিরোধিতা করে ক্লডিয়ার যুক্তি, যদি চিত্রশিল্প তোমার দৃষ্টিতে আর্ট না হয় তবে বাখ বা বিথোভেনের কাজগুলোও শিল্প নয়, মাইক্যাল এঞ্জেলোর কাজও শিল্প নয়। তুমি একটা ষাঁড়ের মতো কথা বলছ। আরো এরপরই ক্লডিয়া বুঝতে পেরেছিল যে, ভেইল তাকে ক্ষেপানোর জন্যই এমন বিষয়ের অবতারণা করেছে। ক্লডিয়ার সাথে ভেইলের এরকম কৌতুককর আলোচনা হতো বেশিরভাগ সেক্সের পর।

    স্ক্রিপ্টের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে এলো। এবার ফিরে যাবার পালা ভেইলের। নিউইয়র্কে ফিরে যাবার আগে ক্লডিয়াকে উপহার দিল ছোট্ট একটি এনটিক রিং। চারটি ভিন্ন রঙের এক দিকে হেলানো জুয়েলের রিংটির মূল্য খুব বেশি নয় কিন্তু যে কোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। ভেইলের কাছ থেকে রিংটি পাওয়ার পর ক্লডিয়া আর কখনোই খুলেনি। সবসময় তার হাতে দেখা গেছে ভেইলের দেয়া এ উপহার। আংটিটি যেন তার মনে সৌভাগ্যের প্রভাব ফেলেছিল।

    ভেইলও চলে গেল, ক্লডিয়ার সাথে তার যৌন সম্পর্কের ইতি ঘটল। কখনো কদাচিৎ ভেইল ফিরে এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। সে দেখতে পেয়েছে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের যেন একটা অবনতি ঘটেছে। তাদের সেক্স সেক্সচুয়াল সম্পর্কে ভাবাবেগের চেয়ে বেশি বন্ধুত্বের আবেগ। প্রকৃতপক্ষে ক্লডিয়া তখন। অন্য কারো সাথে প্রেম-প্রেম খেলার মধ্যগগনে।

    ভেইলের প্রতি ক্লডিয়ার বিদায়ের উপহারটি ছিল যেন হলিউডের পথে একটি নিদারুণ শিক্ষা। ক্লডিয়া তাকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দিল— তাদের লেখা স্ক্রিপটি পুনর্লিখনের জন্য বিখ্যাত বিনিম্নাইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিনিস্লাই হলিউডের একজন লিজেন্ড স্ক্রিপ্ট রাইটার। কয়েক দফা সে এ ক্ষেত্রে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হয়েছে। আর তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে অবাণিজ্যিক গল্পটি একশ মিলিয়ন ডলারের ব্লকবাস্টার ছবিতে ব্যবহার করা হবে। ভেইল নিঃসন্দেহ যে তার বইয়ের গল্পটি এবার সত্যিই মুভিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিষয়টি ভেইলের খুব পছন্দের নয়। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে তার দ্বিধার অবকাশ নেই যে, ছবিটি তৈরি হলে নিশ্চিত অনেকগুলো ডলার তার হস্তগত হবে।

    ক্লডিয়ার কাছে তথ্যগুলো শুনে ভেইলের মাথা নুয়ে পড়েছিল। এবার মাথা তুলল সে। বলল, ঠিক আছে, আমি, দশ শতাংশ তো পেতে যাচ্ছি। এতেই আমার সচ্ছলতা ফিরে আসবে।

    অভিজ্ঞ ক্লডিয়ার কণ্ঠে ঝরে পড়ল বিস্ময়। দশ শতাংশ? কণ্ঠস্বরকে আরো তীক্ষ্ণ করে বলল, তুমি একটি পেনিও চোখে দেখবে না। মুভির ব্যবসা যতই হোক না কেন তুমি আদৌ এর ধারে-কাছে ভিড়তে পারবে কি-না সন্দেহ। লডস্টোনের এই ঠগ প্রবণতার দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা সত্যিই জিনিয়াস।

    একটু থামল ক্লডিয়া। বলল, আমার কথা শোনো, ইতিমধ্যেই আমি লডস্টোনের প্রায় পাঁচটি ছবিতে কাজ করেছি। ছবিগুলো প্রচুর অর্থ আয় করেছে। অথচ আজ অবধি আমি একটি পেনিও চোখে দেখিনি। আর তোমার তো প্রশ্নই আসে না।

    ভেইল আহত হলো। মাথা তুলে তাকাল ক্লডিয়ার দিকে। তবে খুব একটা চিন্তিত হলো না সে। গত কয়েক বছর ধরে তার জীবনটা এক ফেরের মধ্যেই কেটেছে– সব কিছুতেই যেন একটা জট। ক্লডিয়ার কথাগুলো কিছুটা ভাবিয়ে তুলল ভেইলকে।

    আর্নেস্ট ভেইল একবার ক্লডিয়াকে তার মায়ের একটি কথিত উদ্ধৃতি শুনিয়েছিল। উদ্ধৃতিটি হলো– জীবন হচ্ছে এক বাক্স হ্যান্ড গ্রেনেডের মতো। ভেইলের মায়ের এই উদ্ধৃতিটি ক্লডিয়ার ক্ষেত্রে যেন যথাযথভাবে মিলে গেছে।

    ক্লডিয়া-গ্রেনেডের পরবর্তী বিস্ফোরণ অর্থাৎ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলো। ক্লডিয়ার মনের অবিরাম ধারার প্রেম আটকে রাখতে পারল না ভেইল, ভেইলের ভালোবাসা এমনকি ভেইলের এন্টিক রিং। যথেষ্ট মেধাবী ক্লডিয়া এই প্রথমবারের মতো জড়াল এমন এক ব্যক্তির সাথে, যে ক্লডিয়ার তুলনায় মোটেও যথার্থ নয়। তবে সে যুবক এবং জনসাধারণের কাছে স্বীকৃত জিনিয়াস পরিচালক। শুধু এই পরিচালকের সাথে প্রেম করেই ক্ষান্ত দেয়নি ক্লডিয়া, এরপর সে আবারো প্রেমে পড়ল। এবারের সম্পর্কটি ছিল যেন আরো গভীর এবং বেপরোয়া। কিন্তু ক্লডিয়ার মেধার কাছে একেবারেই নগণ্য। এ ব্যক্তি হচ্ছে চলচ্চিত্র জগতের এমনই এক সুদর্শন পুরুষ, যার কাছে যে কোনো নারী নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দেবে সব।

    আলফা, বিটা, গামা পর্যায়ের এই আলফা, অর্থাৎ, বিখ্যাত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের পুরুষদের সাথে ক্লডিয়ার সম্পর্ক তৈরির পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। অন্যতম কারণ হলো, এসব পুরুষ মানসিক, শারীরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লডিয়ার সাথে কেমন আচরণ করে, কতটুকুইবা তাদের দক্ষতা কিংবা মেধা- এসব যাচাই করা এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা।

    ক্লডিয়ার চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড় ছিল সেই পরিচালক। মাত্র তিনটি ছবি বানিয়েই খ্যাতি পেয়েছিল সে। পরিচালকের এই ছবিগুলো সমালোচনাতে সফলতা তো পেয়েছিলই, আর্থিক দিক থেকেও হয়েছিল ব্যবসা সফল। আর এই সফলতার পর হলিউডের বিভিন্ন স্টুডিও তার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে লডস্টোনও বসে থাকেনি। নতুন এই পরিচালকের সাথে তিনটি ছবি তৈরিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর সাথে যুক্ত হয় ক্লডিয়া– লডস্টোন স্টুডিওর আগ্রহেই।

    জিনিয়াস হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার পেছনে পরিচালকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ হলো যে কোনো চাট, যে কোনো দৃশ্য, সংলাপ সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা। প্রথম পরিচয়েই পরিচালক ক্লডিয়ার প্রতি প্রসন্ন হলো। তার এই প্রসন্নতার কারণ প্রথমত ক্লডিয়া একজন নারী এবং লেখক। আর এ দুটো সম্মিলন হলিউডে পদমর্যাদায় নগণ্যতম ধরা হয়ে থাকে। এদিক থেকে একটি বাড়তি সুবিধা আদায়ের মানসিকতা তত তার ছিলই। তবে পরিচালকের আশায় গুড়েবালি। ক্লডিয়া শক্ত বিরোধিতা করল তার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কিছু পরিকল্পনার। আর এতে খুব শিগগির উভয়ের মাঝে দেখা দিল দ্বন্দ্ব।

    যে প্লটের ওপর যে দৃশ্য বর্ণনার নির্দেশ দিল পরিচালক, ক্লডিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে বসল। ক্লডিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, এমন দৃশ্য মোর্টেও শৈল্পিক নয় এবং অযথা অবতারণা।

    আমি এ দৃশ্য লিখতে পারব না। অস্বীকার করল ক্লডিয়া। বলল, এটা গল্পের ক্ষেত্রে কোনো যুক্তিই বহন করে না। অযাচিত কিছু অ্যাকশন এবং ক্যামেরার কাজ হবে। আর কিছু নয়।

    ক্লডিয়ার বিরোধিতায় পরিচালক ধীর কণ্ঠেই বলল, এটাই ছবির নিয়ম। আমি যেভাবে বলছি তুমি তা-ই লিখ।

    আমি চাই না তোমার সময় নষ্ট হোক, সেই সাথে আমারও, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল ক্লডিয়া। বলল, তুমি নিজেই তোমার কাজ ভালো করতে পারবে, আশা করি।

    ক্লডিয়ার আচরণে পরিচালক আর তর্ক বাড়াল, এমনকি ক্ষুব্ধও হলো না। হাততালি দিয়ে ক্যামেরা বন্ধ করার নির্দেশ দিল সে। তারপর ক্লডিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, তুমি অযথাই রেগে গেলে।

    ক্লডিয়ার বিরোধিতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। অবশেষে স্কিপি ডিরি এবং ববি বানজের হস্তক্ষেপে ক্লডিয়া ও পরিচালক আবারও শুরু করল তাদের কাজ। ক্লডিয়ার একগুয়েমিই মেনে নিতে বাধ্য হলো সে। মুখ বুজে পরিচালক মেনে নিল ক্লডিয়ার বেশ কিছু যৌক্তিক নির্দেশ। ছবির কাজ শেষ হলো। অবশেষে দেখা গেল ছবিটি সফলতা পেয়েছে। আর এর কৃতিত্বের অন্যতম অংশীদার ক্লডিয়া। যৌক্তিক, শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুডিয়ার লেখা পাণ্ডুলিপির কারণেই মূলত ছবির এ সফলতা। বিষয়টি পরিচালককেও মুগ্ধ করল। এরপর আর থেমে থাকেনি উভয়েই–সম্পর্ক এগুলো বিছানা অবধি।

    সেখানে গিয়েও দুজনের মধ্যে বাধল সমস্যা। সেক্সের সময় পরিচালক সম্পূর্ণ নগ্ন হতে রাজি নয়। কোমর থেকে নিচের পরিধেয় সরালেও গায়ের শার্ট সে কোনো মতেই খুলবে না। বিষয়টি ক্লডিয়াকে ক্ষুব্ধ করে তুলল। তবে সে এ কারণে খুব একটা উচ্চবাচ্য করল না। এর কারণ এই পরিচালকের সাথে করতে হবে আরো দুটি ছবির কাজ। ক্লডিয়া নিশ্চিতভাবেই উপলব্ধি করল। প্রথমটির মতো পরবর্তী ছবিগুলোও সফলতা পাবে। সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ছবিগুলোতে আর সুষ্ঠুভাবে কাজ করা হবে না। পরিচালকের আবরণেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো ক্লডিয়াকে। অবশেষে একে একে দুটি ছবিই মুক্তি পেল। যথানিয়মেই ক্লডিয়ার গুণে এগুলোও হলো ব্যবসা সফল।

    এরপর ক্লডিয়ার সাথে পরিচালকটির সম্পর্ক টিকে ছিল মাত্র এক মাস। সম্পর্কের যা-ই ঘটুক, হলিউডে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে দুজনেরই খ্যাতি বেড়ে গেল। ম্যাসেলিনা ছবির জন্য স্ক্রিপ্টের কাজ ক্লডিয়া তখনও শেষ। করতে পারেনি। স্ক্রিপ্টটি সেই পরিচালককে দেখাল। আগা-গোড়া পড়ে পরিচালক মন্তব্য করল, নারীবাদী তথ্য সংবলিত একটি বুলশিট ছাড়া আর কিছুই নয় এটি। যেখানে যৌন সুড়সুড়ির বাহুল্য শুধু।

    পরিচালক প্রচণ্ড রকমের বিরোধিতা করে বলল, এখানে যদিও তোমার বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়েছ, তারপরও এটা আমার কাছে ছবির যোগ্য কোনো পাণ্ডুলিপিই নয়। এ ছবির জন্য আমি আমার জীবনের মূল্যবান একটি বছর নষ্ট করতে চাই না।

    ক্লডিয়া বলল, এটা একটা খসড়া পাণ্ডুলিপি।

    ওহ ঈশ্বর আমি তাদেরকে ঘৃণা করি, যারা ব্যক্তিগত সম্পর্কের অজুহাতে কাজ বাগিয়ে নিতে চায়, যেন ক্লডিয়াকে আঘাত করাই ছিল পরিচালকের উদ্দেশ্য। আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্রুর কণ্ঠে কথাগুলো বলল সে।

    আর ক্লডিয়া যেন মিশে গেল মাটিতে। মুহূর্তেই মানুষটির ওপর থেকে ক্লডিয়ার সমস্ত ভালোবাসা উবে গেল। ঝাঝালো কণ্ঠে সে বলল, আই ডোন্ট হ্যাভ টু ফাঁক ইউ টু মেক এ মুভি।

    নিশ্চিতভাবেই তোমার তা দরকার নেই, সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল পরিচালক। বলল, তুমি তো মেধাবী, সেই সাথে ইদানীং আবার জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। সে সবকে তো কাজে লাগাবেই, আর বস্তাপচা এসব গেলাবে মানুষকে।

    পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে গেল ক্লডিয়ার। দুচোখ ঠিকরে যেন আগুন বেরুতে লাগল। যে ক্লডিয়া তার সেক্সয়াল পার্টনার সম্বন্ধে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মন্তব্য করেনি, সেই ক্লডিয়াই পরিচালকের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠল।

    বলল, তোমারও মেধা আছে তবে যে মানুষ সেক্সের সময় তার শার্ট গায়ে চাপিয়ে রাখে তার নিশ্চয়ই খারাপ কিছু দোষ আছে। আজ প্রতিজ্ঞা করছি, এমন মানুষের শয্যাসঙ্গী হওয়ার আগে অবশ্যই তার স্ক্রিন টেস্ট করিয়ে নেব।

    পরিচালকের সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটল এ থেকেই। আর ম্যাসেলিনার জন্য পরিচালক হিসেবে ক্লডিয়ার মনে এলো ডিটা টমির নাম। ক্লডিয়া বুঝতে পারল, একমাত্র নারী পরিচালকই তার স্ক্রিপ্টের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারবে।

    ক্লডিয়া ভাবল, কি অসহ্য বিরক্তিকর নিরানন্দ সময় কাটিয়েছে সে পরিচালকের সাথে। যৌন মিলনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলোতে অস্বস্তি বোধ করত ক্লডিয়া।

    চলচ্চিত্র পরিচালনায় সে যত বড় প্রতিভাধর পরিচালকই হোক না কেন, প্রণয়ঘটিত ব্যাপারে সে একটা পাষণ্ড বৈ কিছু নয়।

    যৌন মিলনের সময় সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হতো না এবং সঙ্গম শেষে কোনো প্রণয়ালাপও করত না। তার যত প্রতিভা শুধু চলচ্চিত্র বিষয়ে, এর বাইরে সে ছিল প্রকৃতপক্ষেই বিরক্তিকর একজন মানুষ।

    ভাবনার দৌড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লডিয়ার গাড়ি প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ের বিশাল বাঁকে পৌঁছল, তার বাম পাশে উন্মুক্ত বিস্তৃত সমুদ্র, ডান পাশে সুউচ্চ পর্বত চূড়া, সমুদ্রটাকে মনে হলো বিশাল এক আয়না, সুনীল জলের বুকে পর্বতশৃঙ্গের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে।

    স্থানটি ক্লডিয়ার অন্যতম প্রিয় স্থান। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে চমকিত করে। এখান থেকে অ্যাথেনার বাসস্থান ম্যালিবু কলোনি মাত্র দশ মিনিটের পথ। অ্যাথেনাকে পুনরায় ম্যাসেলিনার শুটিংয়ে ফিরিয়ে আনার জন্য সে মনে মনে একটা উপায় খুঁজতে লাগল। তার মনে পড়ল, অ্যাথেনার এক সময়কার প্রেমিকের সাথে তারও প্রণয় সম্পর্ক হয়েছিল। এটা ভাবতে ক্লডিয়া কিছুটা গর্ববোধ করে, কারণ অ্যাথেনার মতো সুন্দরী, তারকা অভিনেত্রীর প্রেমিক ক্লডিয়ার প্রেমে পড়েছিল এবং তাকে ভালোবেসেছিল।

    মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য। সূর্যের আলো সমুদ্রের টেউয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। পুরো সমুদ্রটাই যেন বিশাল এক হীরকখণ্ডে পরিণত হয়েছে। একজন গ্লাইভারকে তার গাড়ির সামনে নেমে আসতে দেখে ক্লডিয়া হঠাৎ করেই ব্রেক কষল। সে গ্লাইডারকে দেখতে পেল একজন তরুণী, ক্লডিয়া লক্ষ্য করল, তার ব্লাউজের ফাঁক গলে একপাশের স্তন বেরিয়ে পড়েছে। অবতরণের সময় এক ঝলকের জন্য ওই দৃশ্যটি ক্লডিয়ার চোখে পড়েছিল।

    ক্লডিয়া ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না, এদেরকে কেন গ্লাইডিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়, পুলিশ কেন এগুলো দেখে না? মাথা নেড়ে ক্লডিয়া এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে গ্যাস প্যাডেলে চাপ দেয়, রাস্তার ভিড় কমে আসছে। হঠাৎ করেই হাইওয়ে এমন একটা বাঁক নিয়েছে যার ফলে সে আর সমুদ্র দেখতে পারছে না, তবে সে জানে আধ মাইল পর আবারও সমুদ্র দেখা যাবে। সত্যিকারের ভালোবাসা যেমন বারবার ফিরে আসে ঠিক তেমনি, এই ভাবনায় ক্লডিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার জীবনেও সত্যিকার ভালোবাসা বারবার ধরা দিয়েছে।

    ক্লডিয়া সত্যিকারভাবে স্টিভ স্টেলিংয়ের প্রেমে ডুবেছিল। সারা বিশ্বের মেয়েদের আরাধ্য চলচ্চিত্র তারকা, ব্যবসা সফল তুখোড় অভিনেতা স্টেলিং ছিল অত্যন্ত পৌরুষদীপ্ত সৌন্দর্যের অধিকারী। তার চেহারায় ছিল নিখাদ আকর্ষণ, প্রাণোচ্ছল তেজোদীপ্ত উজ্জ্বলতা ছিল তার মাঝে। অভিনয় প্রতিভায়ও সে ছিল অসামান্য। সতর্কতার সাথে সীমিত মাত্রায় কোকেন সেবন করত স্টেলিং। যা তাকে সবসময় হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখত। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে গুণ ছিল তা হলো নারীবশীকরণ ক্ষমতা। এ দিক দিয়ে সে ছিল স্পেনিশ কিংবদন্তির ডন জুয়ান। যে কোনো রমণীকে সে তার শয্যাসঙ্গী করতে পারত। পৃথিবীর যে কোনো স্থানে আফ্রিকা, আমেরিকার ঘোট কোনো শহর, বোম্বে, সিঙ্গাপুর, টোকিও, লন্ডন, রোম, প্যারিস সবখানেই অনায়াসে, অবলীলায় নারীদেরকে যৌনসঙ্গ দিয়েছে। দান করার অনুপ্রেরণায়ই সে নারীদেরকে যৌনসঙ্গ দিত, একজন ভদ্রলোক যেমন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিয়ে যেমন খ্রিস্টীয় পুণ্যের আত্মপ্রসাদ লাভ করে, সেভাবেই স্টেলিং মেয়েদের সাথে যৌনতা উপভোগ করত। যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তার কোনো বাছ-বিচার ছিল না। স্টেলিংয়ের পৌরুষদীপ্ত সৌন্দর্যে ক্লডিয়া বিমোহিত হয়েছিল, তার প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়েছিল এবং তার প্রেমে ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সত্যিকারের ভালোবাসার সম্পর্ক মাত্র সাতাশ দিন টিকে ছিল।

    ক্লডিয়ার জীবনে ওই সাতাশ দিন অত্যন্ত আনন্দঘন হলেও তা ছিল অপমানজনক। স্টেলিংয়ের ভালোবাসায় যন্ত্রণা সয়েছে ক্লডিয়া কিন্তু সেই সাথে অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে সে।

    স্টেলিংয়ের কাছে প্রচণ্ড ভালোবাসা পেয়েছে ক্লডিয়া। তার সান্নিধ্যে পেয়েছে পরিতৃপ্ত সুখানুভূতি। কোকেনের প্রভাবে স্টেলিং দুর্বারভাবে ভালোবাসতে পারত, নগ্নতার ক্ষেত্রে ক্লডিয়ার চেয়েও অধিক সাবলীল ছিল স্টেলিং। সঙ্গমের সময় সুনিপুণভাবে দৈহিক সামঞ্জস্য বজায় রেখে সে যৌন সম্ভোগ করত যা ক্লডিয়ার আনন্দানুভূতিকে বাড়িয়ে দিত। ক্লডিয়া প্রায়ই লক্ষ্য করছে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্টেলিং নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। একজন মহিলা যেভাবে তার মাথার হ্যাট ঠিক করে ঠিক তেমনি সে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করত।

    ক্লডিয়া জানত স্টেলিংয়ের কাছে সে একজন অবসর যাপনের সঙ্গীমাত্র, একজন রক্ষিতা। রাতের শয্যাসঙ্গী হিসেবেই ক্লডিয়াকে নিয়েছিল স্টেলিং। এছাড়া অন্য কোনো আকর্ষণ ছিল না তার, কিংবা ক্লডিয়ার প্রতি তার কোনো অনুভূতিও কাজ করত না। প্রায় সময়ই দেখা যেত ক্লডিয়াকে ফোন করে সে জানিয়ে দিত তার আসতে এক ঘণ্টা দেরি হবে কিন্তু দেখা গেল ছয় ঘণ্টা পর সে এলো। কখনো কখনো এখনও তাদের রাত্রি যাপনের পরিকল্পনাই বাতিল করে দিয়েছে স্টেলিং।

    এছাড়াও দুজনে মিলিত হওয়ার সময় স্টেলিং তাকে কোকেন সেবন করার জন্য পীড়াপীড়ি করত। তাতে অবশ্য মিলনের আনন্দ বেড়ে যেত কিন্তু কোকেনের প্রভাব ক্লডিয়ার মস্তিষ্কে কয়েক দিন পর্যন্ত তাকে আচ্ছন্ন করে রাখত। সে কোনো কাজ করতে পারত না এবং যা সে লিখত তা তার মনোপূত হতো না। এক সময় ক্লডিয়া উপলব্ধি করল, একজন পুরুষ মানুষের খামখেয়ালির ওপর তার সমস্ত জীবন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং এই বিষয়টাকেই সে সর্বাধিক অপছন্দ করত।

    ক্লডিয়া ছিল স্টেলিংয়ের চতুর্থ অথবা পঞ্চম পছন্দ। এই বিষয়টিই ক্লডিয়াকে অপমানিত করেছিল। কিন্তু এজন্য কখনোই স্টেলিংকে দায়ী করেনি সে, তার এই অপমানকর পরিস্থিতির জন্য সে নিজেকেই দায়ী করেছিল। কারণ স্টিত স্টেলিং তার খ্যাতির সুবাদে আমেরিকার প্রায় যে কোনো মহিলাকেই পেতে পাত এবং সেই স্টেলিং ক্লডিয়াকে পছন্দ করেছে এটা ক্লডিয়ার জন্য গর্বের বিষয় মনে হয়েছিল। স্টেলিংয়ের বয়স বাড়বে, তার সৌন্দর্য, খ্যাতিও কমে আসবে, তার কোকেন সেবনের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে যাবে। তাই স্টেলিং তার খ্যাতির শিখরে থাকতেই সবকিছু অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তারই প্রেমে ক্লডিয়া পড়েছিল। তার জীবনের কিছু দুঃসময়ের মধ্যে এই প্রেমের কয়েকটি দিন অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছিল।

    সাতাশতম দিনে স্টেলিং ফোন করে ক্লডিয়াকে যখন জানাল যে তার আসতে এক ঘণ্টা দেরি হবে। ক্লডিয়া তাকে বলল, কষ্ট করো না। স্টিভ, আমি তোমার রঙমহল ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

    অপর প্রান্তে স্টেলিং কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিল, আশা করি আমাদের বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে, সে আরও বলল, আমি সত্যিই তোমার সাহচর্য উপভোগ করেছি। ক্লডিয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে সে মোটেও আশ্চর্য হয়নি।

    সিওর, বলল ক্লডিয়া এবং চুপ করে থাকল। এই প্রথম কোনো সম্পর্ক শেষ করার পর তার সাথে বন্ধুত্ব ধরে রাখতে চাইল না ক্লডিয়া। আসলে নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণেই ক্লডিয়া পীড়িত হচ্ছিল। এটা নিশ্চিত বুঝল ক্লডিয়া, তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবেই স্টেলিং তার সাথে ওই ধরনের আচরণ করেছিল। কিন্তু তা বুঝতে ক্লডিয়ার অনেক সময় লেগেছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সে কিভাবে এতটা নির্বোধ হয়েছিল? অপমান ও আঘাতে বিপর্যস্ত ক্লডিয়া খুব কেঁদেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই সে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। সে দেখল ভালোবাসার শূন্যতা তাকে মোটেও পীড়িত করছে না। সে উপলব্ধি করতে পারল, তার সমস্ত সময় একান্তই তার নিজের। সেখানে কারো যন্ত্রণাময় স্মৃতির অনুপ্রবেশ নেই এবং সে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছে। কোকেন এবং সত্যিকার ভালোবাসা থেকে মুক্ত মস্তিষ্ক নিয়ে লিখতে পারায় উৎফুল্ল ক্লডিয়া।

    পরিচালক ক্লডিয়ার চিত্রনাট্য বাতিল করে দেওয়ার পর, পূর্ণোদ্যমে ম্যাসেলিনা-এর চিত্রনাট্য নতুন করে লেখায় মনোনিবেশ করে সে। ছয় মাসে একাগ্র প্রচেষ্টায় চিত্রনাট্য সম্পন্ন করে সে। ক্লডিয়া ডি লিনা পাঁচ বছর চলচ্চিত্র বাণিজ্যের সাথে জড়িত, তার এই স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতায় সে জেনেছিল যে কোনো মানবিক মূল্যবোধ এবং জীবনবোধ, যৌনতা, হত্যা প্রভৃতির মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করতে হয়। নতুন লেখা ম্যাসেলিনার চিত্রনাট্যে ক্লডিয়া তার অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ সমন্বয় ঘটিয়েছিল। ফলে ম্যাসেলিনার চূড়ান্ত চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছিল নারীবাদী প্রচারণায় অনবদ্য ও উপভোগ্য। ক্লডিয়া তার চিত্রনাট্যে প্রধান নারী চরিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে নির্বাচিত করেছিল এবং ম্যাসেলিনাকে অ্যাথেনার মধ্যে বিমূর্ত করেছিল। তার পাশাপাশি আরো তিনজন তারকা অভিনেত্রীর জন্য, পার্শ্ব নারী চরিত্রের অবতারণা করেছিল সে। দামি তারকা অভিনেত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র সৃষ্টি করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ এবং প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ক্লডিয়া তা করেছিল। চিত্রনাট্যে একজন শক্তিমান খলনায়ক একান্ত অপরিহার্য। ক্লডিয়া তার বাবার স্মৃতি স্মরণ করে সৃষ্টি করেছিল খলনায়কের চরিত্র, মোহনীয়, নিষ্ঠুর সুদর্শন এবং উপভোগ্য। ক্লডিয়া প্রথমে একজন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী মহিলা প্রযোজকের খোঁজ করেছিল। কিন্তু বেশিরভাগ স্টুডিওর প্রধান যারা চিত্রনাট্যের অনুমোদন দেবে তারা ছিল পুরুষ। চিত্রনাট্য হিসেবে ম্যাসেলিনা পছন্দ করলে ও অত্যন্ত খোলামেলা নারীবাদী প্রচারণামূলক কাহিনী এবং মহিলা প্রযোজক ও মহিলা পরিচালকের বিষয়ে তারা রাজি হয়নি। তারা চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো একটি ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ আশা করেছিল। ক্লডিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডিটা টমিকে দিয়েই ম্যাসেলিনার পরিচালনা করাবে। ডিটা টমিকে নির্বাচনের পেছনে আরেকটি কারণ হলো– মহিলাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেতে পছন্দ করে ডিটা টমি এবং ম্যাসেলিনার কাজে সে চারজন খ্যাতিমান সুন্দরী অভিনেত্রীর সঙ্গ লাভ করতে পারবে। এছাড়া কয়েক বছর আগে একটি ছবির কাজে তারা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছে। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে একটা সুসম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। ডিটা টমি একজন প্রতিভাবান পরিচালক, অত্যন্ত স্পষ্টবাদী এবং মজার ব্যক্তিত্ব। চলচ্চিত্র জগতে ডিটাটমি কখনই চিত্রনাট্যকারের কৃতিত্বে নিজের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অথবা নতুন করে চিত্রনাট্য লেখার দাবী জানাত না। তার সুনির্দিষ্ট অবদান ছাড়া কোনো বিষয়ে নিজের কৃতিত্ব দাবী করত না। চিত্রনাট্যকারকে কখনোই হেয় করত না ডিটা টমি। তার ওপর অন্যান্য পরিচালক ও তারকাদের মতো সে যৌন নিপীড়ক নয়। যদিও চলচ্চিত্র বাণিজ্যে যৌন নিপীড়ন বলে কিছু নেই, কারণ চলচ্চিত্র জগতে যৌনতা এবং যৌনাবেদন কাজেরই একটি অংশ।

    স্কিপি ডিরিকেই তার চিত্রনাট্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ক্লডিয়া এবং এক শুক্রবারে চিত্রনাট্যটি ডিরির কাছে পাঠিয়ে দেয় সে। কারণ সপ্তাহের শেষে ছুটির অবসরে ডিরি যত্নসহকারে ক্রিপ্ট দেখে থাকে। ডিরি তার স্ক্রিপ্ট অনুমোদন নাও করতে পারে, তা সত্ত্বেও ক্লডিয়া তার কাছে স্ক্রিপ্ট পাঠায় কারণ সে সবচেয়ে ভালো একজন প্রযোজক। তাছাড়া ক্লডিয়া কোনো পুরনো পরিচিত প্রযোজকের কাছে যেতে চায়নি। এতে ফল হলো। রোববার সকালে ডিরির ফোন পেল সে, সেই দিন দুপুরে ডিরি তাকে মধ্যাহ্নভোজনের জন্য আমন্ত্রণ জানাল।

    ক্লডিয়া ঝটপট কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করে নিল, ব্লু জিন্স শার্ট, ফেডেড ব্লু জিন্স পরল সে, পায়ে পরে নিল একজোড়া স্পোর্ট সু, চুলগুলোকে বেঁধে নিল লাল স্কার্ফ দিয়ে। ল্যাপটপটা মার্সিডিজের সিটে ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসে স্টার্ট দিল তার মার্সিডিজ। সান্টা মনিকার ওশেন এভিনিউ ধরে ছুটে চলল ক্লডিয়া। প্যালিসেডস পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে দেখল সান্টা মনিকার গৃহহীন নারী-পুরুষরা তাদের সাপ্তাহিক মধ্যাহ্নভোজের জন্য পার্কে সমবেত হচ্ছে। প্রতি রোববার স্বেচ্ছাসেবী সমাজকর্মীরা দরিদ্র গৃহহীন এই সমস্ত মানুষকে পার্কের খোলা পরিবেশে খাদ্য এবং পানীয় পরিবেশন করে থাকে। সারি সারি কাঠের টেবিল-চেয়ারে বসে গৃহহীন মানুষরা তাদের খাদ্য গ্রহণ করে। ক্লডিয়া এই মানুষগুলোকে দেখার জন্য এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। এই মানুষগুলোর মাঝে সে অন্য এক পৃথিবীর সন্ধান পায়, এদের মার্সিডিজ নেই, সুইমিং পুল নেই, রোড ও ড্রাইভে কেনাকাটা করার সামর্থ্য এদের নেই। প্রথম দিকে গৃহহীন মানুষগুলোকে খাবার ও পানীয় পরিবেশনের কাজে সেও অংশ নিত। কিন্তু তার নিজস্ব জগৎ থেকে ওই দরিদ্র মানুষগুলোর পৃথিবীতে যাওয়া তার জন্য কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছিল। তাদের কষ্ট ও অভাব ক্লডিয়াকে বিষণ্ণ করে তুলত। তার মাঝে সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা স্তিমিত হয়ে যেত। তাই সে এখন তাদের খাওয়ানোর দায়িত্বে নিয়োজিত চার্চে কেবল আর্থিক অনুদান দেয়। কিন্তু ছিন্ন বস্ত্রে আচ্ছাদিত ঝরে পড়া ওই মানুষগুলোকে দেখা সে ত্যাগ করতে পারেনি। তাদের মধ্যে আশ্চর্য রকমভাবে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তিও রয়েছে যারা সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। কোনো রকম প্রত্যাশা ছাড়া এ রকমভাবে বেঁচে থাকটা ক্লডিয়ার কাছে আশ্চর্য মনে হয়। কিন্তু তার পরও অর্থ উপার্জনের প্রশ্নটা থেকেই যায়। চলচ্চিত্রের জন্য গল্প লিখে সে সহজেই ভালো উপার্জন করে। সে ছমাসে যে টাকা উপার্জন করে এই মানুষগুলো তাদের সারাজীবনেও তত টাকা দেখেনি।

    বেভারলি হিলসে স্কিপি ডিরির ম্যানশনে ক্লডিয়া পৌঁছলে ম্যানশনের হাউসকিপার তাকে সুইমিং পুলে নিয়ে যায়। উজ্জ্বল নীল আর হলুদ চমৎকার সুইমিং পুল। একটি কুশন ও লাউঞ্জ চেয়ারে ডিরি বসা। তার চোখে লাল ফ্রেমের রিডিং গ্লাস। এই চশমা সে শুধু বাড়িতেই ব্যবহার করে। তার পাশে ঘোট মার্বেলের টেবিলের ওপর টেলিফোন ও একগাদা স্ক্রিপ্ট। ডিবির হাতে একটি দীর্ঘকায় গ্লাসে হিমায়িত ইন্ডিয়ান ওয়াটার ছিল। ক্লডিয়াকে দেখে সে চট করে উঠে দাঁড়াল এবং ক্লডিয়াকে আলিঙ্গন করে বলল, ক্লডিয়া, আমাদের আলাপ দ্রুত সারতে হবে।

    ক্লডিয়া সতর্কতার সাথে তার কণ্ঠস্বর নিরীক্ষণ করছিল। তার স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে কারো প্রতিক্রিয়া কি হবে তা সে কণ্ঠস্বর শুনেই বলে দিতে পারে। কেউ যদি সতর্কতার সাথে স্ক্রিপ্টের কৃত্রিম প্রশংসা করে, তার অর্থ নিশ্চিত না। আবার অনেকে হাসিমুখে আন্তরিকভাবেই স্ক্রিপ্টের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে, সেক্ষেত্রে দেখা গেছে অন্তত তিনটি কারণে তারা স্ক্রিপ্টটা ক্রয় করতে অপারগতা প্রকাশ করে–

    অন্য একটি স্টুডিও একই বিষয়ের ওপর কাজ করছে, স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী উপযুক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী জোগাড় করা সম্ভব না, কিংবা স্টুডিও স্ক্রিপ্টের বিষয়বস্তু যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারে না।

    কিন্তু ডিরির কণ্ঠে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীর সুর– এটা ভালো লক্ষণ। সে অর্থায়ন ও বিভিন্ন শর্ত নিয়ে কথা বলছিল, এটা অনেক বড় বাজেটের ছবি হবে, ডিরি ক্লডিয়াকে বলল, অনেক-অনেক বড় বাজেটের ছবি। প্রকৃতপক্ষে এখানে বাজেট কমানোর কোনো সুযোগ নেই, আমি জানি তুমি কি ভাবছ, তুমি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে। যৌনতানির্ভর চলচ্চিত্র করার জন্য আমি স্টুডিওকে রাজি করাব এবং নারীবাদী চরিত্রের জন্য তারকা অভিনেত্রীরও ব্যবস্থা করব। পুরুষ তারকাও আমরা পেতে পারি যদি তুমি তাকে একটু সময় দিয়ে নমনীয় করতে পারো। আমি মনে করছি তুমি এই কাজে সহযোগী প্রযোজক হতে চাও, কিন্তু আমার পরামর্শ তুমি পরিচালনার দায়িত্ব নাও। তবে তুমি তোমার বক্তব্য খোলামেলাভাবে বলতে পারো। তোমার যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব আমি মেনে নেব।

    ক্লডিয়া বলল, পরিচালকের ব্যাপারে আমার নিজস্ব পছন্দ আছে। ডিরি হাসতে হাসতে বলল, তুমি, স্টুডিও এবং তারকার ব্যবস্থা তাহলে হয়ে গেল।

    ক্লডিয়া বলল, পরিচালকের অনুমোদন ছাড়া এই স্ক্রিপ্ট আমি ছাড়ছি না।

    ডিরি বলল, ঠিক আছে, তাহলে প্রথমে তুমি স্টুডিওকে জানাবে যে পরিচালনা তুমি করছ, পরে তুমি পরিচালনা থেকে সরে এসো, তখন তারা তোমাকে অনুমোদন দেবে। সে ক্ষণিক থেমে জিজ্ঞেস করল, পরিচালক হিসেবে তুমি কাকে ঠিক করেছ? ডিটা টমি, ক্লডিয়া বলল।

    গুড, বুদ্ধিমতী, ডিরি বলল, মেয়ে তারকারা তাকে ভালোবাসে। স্টুডিওগুলোও তাকে পছন্দ করে। পরিচালক হিসেবে সে সবকিছু বাজেটের মধ্যেই সম্পন্ন করে এবং কখনও মাঝপথে কাজ ছেড়ে দেয় না। তবে তার কাছে যাওয়ার আগে আমরা দুজনে মিলে অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনের কাজটা সেরে ফেলতে পারি।

    ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করল, তুমি কাকে আনতে চাও?

    লডস্টোন ডিরি বলল, তারা আমাকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। তাই পাত্র-পাত্রী নির্বাচন ও পরিচালনা নিয়ে আমাদের মধ্যে খুব একটা সমস্যা হবে না। ক্লডিয়া, তুমি একটা নিখুঁত স্ক্রিপ্ট লিখেছ। আগের দিনের নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর তোমার এই স্ক্রিপ্ট অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং উপভোগ্য। বর্তমান সময়ে বিষয়টি খুবই জনপ্রিয়—-যৌনতাকে তুমি ম্যাসেলিনা ও অন্যান্য নারী চরিত্রের মাঝে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলেছ। আমি মেলো এবং মলি ফ্লান্ডার্সের সাথে তোমার বিষয়ে আলাপ করব, তারা যাতে লডস্টোনের সাথে চূড়ান্ত ব্যবসায়িক আলোচনা সেরে ফেলতে পারে।

    ক্লডিয়া বলল, ইউ সান অব এ বিচ, তুমি এর মধ্যেই লডস্টোনের সাথে কথা বলেছ, তাই নয় কি?

    ডিরি তার হাসি বিস্তৃত করে বলল, হ্যাঁ, গত রাতে আলাপ হয়েছে। আমি তাদেরকে স্ক্রিপ্ট দেখিয়েছি। যদি আমি সবকিছু জোগাড় করতে পারি তাহলে তারা ম্যাসেলিনার কাজ হাতে নেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছে। শোনো ক্লডিয়া, আমাকে ভুল বুঝো না, আমি জানি ম্যাসেলিনার-ক্ষণিক থেমে সে আবার বলল, আমি লডস্টোনকে এসব জানিয়েছি। এখন চলো কাজ শুরু করা যাক।

    এভাবেই এই বিশাল প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। এখন ক্লডিয়া কিছুতেই সেটা ভেস্তে যেতে দেবে না।

    ক্লডিয়া ট্রাফিক সিগন্যালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেখান থেকে সে বাঁয়ে ঘুরে একটি সাইডে উঠবে, ওই রাস্তাই তাকে ম্যালিবু কলোনিতে নিয়ে যাবে। এই প্রথম ক্লডিয়ার মনে সংশয় মিশ্রিত ভয়ের উদ্রেক হলো।. সে যদি অ্যাথেনাকে রাজি করাতে না পারে। অ্যাথেনা অত্যন্ত দৃঢ় সিদ্ধান্তের মেয়ে, হয়তো সে কখনোই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। তারকারা এমনই হয়ে থাকে। ক্লডিয়া ভাবল, অ্যাথেনা যদি তাকে বিমুখ করে তাহলে সে ভেগাসে যাবে। সেখানে তার ভাই ক্রসের সাহায্য নেবে। ক্রস সবসময়ই তাকে সাহায্য করেছে এবং কখনও তাকে নিরাশ করেনি। তারা দুই ভাইবোন যখন ছোট ছিল তখন থেকে নিয়ে তাদের মা মারা যাওয়া পর্যন্ত সবসময়ই সে ক্রসের সাহায্য পেয়েছে।

    ক্লডিয়ার মনে তার শৈশবকালের স্মৃতি ভেসে উঠল। লং আইল্যান্ডে ক্লেরিকুজিও ম্যানশনে তার হাস্যোজ্জ্বল, আনন্দঘন শৈশবস্মৃতি। চারদিকে প্রাচীর ঘেরা ম্যানশন তার কাছে এখন গ্রিমসের রূপকথার প্রাসাদের মতো মনে হয়। সেখানে ফিগ বাগানের মধ্যে দুই ভাইবোন একসাথে খেলেছে, ছুটোছুটি করেছে, কত মজাই না তারা করত ছেলেবেলায়। ক্লেরিকুজিও ম্যানশনে আট থেকে বারো বছরের ছেলেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ ছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিত তার ভাই ক্রস এবং প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতৃত্ব ছিল উনের নাতি ডেন্টি ক্লেরিকুজিও। আর বৃদ্ধ ডন ওপর তলার এক জানালার পেছন থেকে ড্রাগনের মতো সবকিছু দেখত।

    ডেন্টি ছিল মারমুখো হিংস্র প্রকৃতির। সে সবসময় মারামারি করতে পছন্দ করত এবং নিজেকে একজন জেনারেল ভাবত। একমাত্র ডেন্টিই তার ভাই ক্রসের সাথে মারামারি করার সাহস রাখত। খেলার মাঠে ক্লডিয়াকে একা পেলে ডেন্টি তাকে মারধর করত এবং ক্লডিয়াকে তার বশ্যতা স্বীকার করাতে চেষ্টা করত। সে সময় ক্রস সেখানে হাজির হলে ডেন্টি ও ক্রসের মধ্যে মারামারি বেধে যেত। তখনই ক্লডিয়া ডেন্টির আক্ৰমণত্মক হিংস্র চেহারার বিরুদ্ধে তার ভাই ক্রসের অসামান্য আত্মবিশ্বাস দেখে আশ্চর্য হতো এবং ক্রস সহজেই জয়ী হতো। ভাইয়ের প্রতি ক্লডিয়ার ছিল প্রচণ্ড টান।

    কিন্তু ক্লডিয়া ভেবে পেত না তার মা কেন ক্রসকে অধিক পছন্দ করতেন না। কিভাবে তার মা ক্রসকে অধিক ভালো না বেসে থাকতে পারতেন! অধিক ভালোবাসা পাওয়ার মতো অনেক গুণই ক্রসের ছিল। তা সে প্রমাণও করেছে। মা-বাবা যখন আলাদা হয়েছিল তখন ক্রস বাবার কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার মহৎ গুণ প্রকাশ করেছিল। কারণ ক্রস তার মা ও বোনের সাথেই থাকতে চেয়েছিল, এই বিষয়ে ক্লডিয়ার কোনো সন্দেহ ছিল না। বাবার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেই ছোটবেলাতেই ক্রস তার নিজের ইচ্ছার বিসর্জন দিয়েছিল।

    তাদের মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কয়েক বছর পরিবারের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক ছিল, যোগাযোগ ছিল। সেই সময় ক্লডিয়া তাদের আশপাশের লোকের সাথে আলোচনায় এবং তাদের হাবভাবে জানতে পেরেছিল ক্রস তার বাবার আদলেই বেড়ে উঠছে। তার মধ্যে বাবার গুণাবলিগুলোই অনেকাংশে ফুটে উঠেছে। যদিও বর্তমানে ক্রস ও ক্লডিয়ার প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, তথাপি তাদের মধ্যে ভাইবোনের সেই স্নেহের টান, ভালোবাসার সম্পর্ক অটুট রয়েছে। ক্লডিয়া এটা ভালো কারেই জানে ক্রস ক্লেরিকুজিও পরিবারের অংশ, কিন্তু সে নয়।

    ক্লডিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসার দুবছর পর তার মা ন্যালিনির ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন ক্লডিয়ার বয়স তেইশ। সে সময় ক্রস ক্লেরিকুজিও পরিবারের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করেছিল এবং জানাদু হোটেলে গ্রোনিভেল্টের  সাথে কাজ করত। মায়ের ক্যান্সারের খবর পেয়ে ক্রস শেষের দুটো সপ্তাহ সেক্রামেন্টোতে তার মা ও বোনের সাথে কাটিয়েছিল। একদিনের মধ্যে সে। তার মায়ের জন্য একজন নার্স, একজন বাবুর্চি ও একজন হাউসকিপারের ব্যবস্থা করে।

    তাদের পরিবার ভেঙে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো মা-ভাই-বোন তিনজনে একসাথে হয়েছিল। ন্যালিনি পিপিকে আসতে বারণ করে দিয়েছিল।

    ক্যান্সারের কারণে ন্যালিনির দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছিল, তাই ক্লডিয়া সবসময় তাকে বই, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ পড়ে শোনাত। ক্রস বাজার-ঘাট করত, মাঝে মাঝে হোটেলের কাজে একবেলার জন্য ভেগাসে যেত, তবে সবসময়ই সন্ধ্যায় ফিরে আসত।

    রাতে ক্রস ও ক্লডিয়া পালা করে মায়ের সেবা করত। মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার হাত ধরে বসে থাকত। যদিও ডাক্তাররা ন্যালিনিকে কড়াডোজের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত তবুও তিনি সবসময় তার সন্তানদের হাত খুঁজতেন ধরে রাখার জন্য। মাঝে মাঝে তিনি হ্যালুজিনেশনে ভুগতেন, তিনি মনে করতেন তার সন্তানরা এখনও ছোটই আছে।

    একদিন রাতে ন্যালিনি কেঁদে উঠলেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি ক্রসের কাছে ক্ষমা চাইছিলেন, ক্রসের প্রতি তিনি যে অবিচার করেছেন তার জন্য তিনি অনুতপ্ততা প্রকাশ করতে থাকেন, ক্রস মাকে বাহুতে জড়িয়ে ধরে আশ্বস্ত করে যে তিনি কোনো ভুল বা অপরাধ করেননি। যা হয়েছে তা ভালোর জন্যই হয়েছে।

    ওষুধের প্রভাবে কোনো কোনো রাতে ন্যালিনি গভীর ঘুমে নিগম্ন থাকলে দুই ভাইবোন দীর্ঘরাত বসে গল্প করেছে। ক্রস ও ক্লডিয়া তাদের জীবনের সব ঘটনা একে-অপরকে জানিয়েছে।

    ক্রস ক্লডিয়াকে বলেছে যে সে কালেকশন এজেন্সি বিক্রি করে দিয়েছে এবং ক্লেরিকুজিও পরিবার ত্যাগ করেছে। তবে জানাদু হোটেলে কাজ পাওয়ার জন্য সে ওই পরিবারের নাম ও প্রভাবের সাহায্য নিয়েছিল। ক্রস তার নিজের ক্ষমতার ঈষৎ আভাসও দেওয়ার জন্য ক্লডিয়াকে বলেছিল, জানাদু হোটেলে তুমি সবসময় আমন্ত্রিত। তোমার জন্য আরএফবি রুম, খাবার এবং পানীয় সব ফ্রি। এই কথা শুনে ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করেছিল সে কিভাবে তা করতে পারে। ক্রস সামান্য গর্বের সুরে উত্তর দিয়েছিল, আমার হাতে সে ব্যবস্থা রয়েছে।

    ক্লডিয়ার কাছে তার ভাই ক্রসের গর্ব কৌতুককর ও বিষণ্ণ মনে হয়েছিল।

    মায়ের মৃত্যুতে স্বাভাবিক কারণেই ক্রসের তুলনায় ক্লডিয়া অনেক বেশি আঘাত পেয়েছিল কিন্তু এর ফলে দুই ভাইবোন আবারো মিলে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে শৈশবকালের সেই ঘনিষ্ঠ সাহচর্য, হৃদ্যতা পুনরায় জেগে ওঠে। পরবর্তী বছরগুলোতে ক্লডিয়া প্রায়ই ভেগাসে তার ভাইয়ের কাছে গিয়েছে, সেখানে সে গ্রোনিভেল্টের  সাথে দেখা করেছে। ক্লডিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে ওই বৃদ্ধ লোকটির সাথে ক্রসের এক ধরনের ক্ষমতা আছে, যার সাথে ক্লেরিকুজিও পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ক্লডিয়া যখন থেকে ওই পরিবারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তখন থেকেই সে পরিবারের কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ড। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, বিবাহ এবং খ্রিস্টেনিংয়ে অংশগ্রহণ করত না। তবে ক্লেরিকুজিও পরিবারের সামাজিক কর্মকাণ্ডে যে তখনও ক্রসের অংশগ্রহণ ছিল তা সে জানত না। আরো ক্রসও এ বিষয়ে ক্লডিয়াকে কিছু জানায়নি। ভেগাসে কদাচিৎ ক্লডিয়া তার বাবাকে দেখেছে। কিন্তু মেয়ের প্রতি বাবার (পিপি) কোনো আগ্রহ ছিল না।

    নববর্ষের উৎসব ভেগাসের সবচেয়ে বড় উৎসব। সারাদেশ থেকে আমুদে মানুষের ঢল নামে ভেগাসে। কিন্তু ক্লডিয়ার জন্য হোটেল জানাদুতে সবসময় একটি সুইট রেখে দিত ক্রস। ক্লডিয়া বড় কোনো জুয়াড়ি নয়। শখের জুয়াড়ি। জানাদুতে বেড়াতে এলে একটু আধটু খেলে। অনেকটা সময় কাটানোর মতো। এক নববর্ষের উৎসবে ক্লডিয়া এক উদীয়মান তারকা অভিনেতাকে নিয়ে আসে জানাতে। সঙ্গী অভিনেতাকে ইমপ্রেস করার জন্য ক্লডিয়া সে বার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। জুয়ার বোর্ডে সে পঞ্চাশ হাজার ডলারের মার্কার চায়। যদিও সে মুহূর্তে তার অত টাকার সামর্থ্য ছিল না। ক্রস তার জন্য নিজে মার্কার নিয়ে আসে। ক্রস কৌতূহলী দৃষ্টিতে ক্লডিয়ার দিকে তাকায়। সে ক্লডিয়াকে বলল, ক্লডিয়া আমি তোমাকে আমার চেয়ে চৌকস ভাবতাম, তুমি এসব কি করছ? সেই মুহূর্তে ক্লডিয়া উপলব্ধি করেছিল– তবে মনে হয়েছিল ক্রস নয়, কথাগুলো তার বাবাই তাকে বলছে।

    ক্রসের কথায় ক্লডিয়া বিব্রতবোধ করে। ক্রস প্রায়ই তাকে সতর্ক করে বলত, সবসময় ছোট স্টেকে দান ধরতে। সে আরও বলত, যখন বুঝবে তুমি হারছ তখনও দানের পরিমাণ বাড়াবে না এবং প্রতিদিন দুই তিন ঘণ্টার বেশি জুয়া খেলবে না। কারণ জুয়াতে সময় হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফাঁদ। ক্লডিয়া ক্রসের সব সতর্কতাই লঙ্ন করেছিল।

    সে বলল, ক্রস, আমাকে দুসপ্তাহ সময় দাও, আমি তোমার এই টাকা পরিশোধ করে দেব। ক্লডিয়ার এই কথায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে ক্রস। সে ক্লডিয়াকে বলে, তুমি টাকা শোধ করতে এলে আমি তোমাকে খুন করব। ক্রসের এমন প্রতিক্রিয়ায় ক্লডিয়া আশ্চর্য হয়ে যায়। ক্রস স্বাভাবিকভাবে মার্কারের স্লিপটি ছিঁড়ে নিজের পকেটে রাখল। সে বলল, দেখো ক্লডিয়া, আমি তোমাকে দেখার জন্য এখানে আসতে বলি, তোমার টাকা নেওয়ার জন্য নয়। এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। তুমি জুয়াতে কখনোই জিতবে না। এখানে ভাগ্য বলে কিছু নেই। এটা দুইয়ে দুইয়ে চারের মতো সহজ ব্যাপার। ক্লডিয়া বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে।

    এতগুলো মার্কার হেরে যাওয়ার জন্য আমি কিছু মনে করিনি, কিন্তু তোমার নির্বুদ্ধিতা দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি। ক্রস বলল।

    অতঃপর এ বিষয়ে তারা আর কোনো কথা বলল না। তবে ক্লডিয়া অবাক হয়েছিল এই ভেবে, অতগুলো টাকা পরিশোধের সামর্থ্য কি সত্যিই ক্রসের আছে? গ্রোনিভেল্ট কি অতগুলো টাকা ক্রসকে অনুমোদন করবে? কিংবা আদৌ কি গ্রোনিভেল্টকে এই টাকার ব্যাপারে কিছু জানানো হবে?

    লরেটা ল্যাঙ নামের একজন মহিলাকে নিয়েও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধানও ক্রস করেছিল অনায়াসে। সেখানেও তার একটা অদৃশ্য ক্ষমতা উপলব্ধি করেছিল ক্লডিয়া এবং ওই বিষয়টিই ক্লডিয়াকে সবচেয়ে বেশি হতবাক করেছিল– সত্যিই কি তার ভাই ক্রস এতটা ক্ষমতাবান?

    লরেটা ল্যাঙ জানাদু হোটেলের স্টেজ পার্ফরমার ছিল। সে হোটেলের স্টেজে গান গাইত এবং নাচত। তার ছিল অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তার পারফরমেন্সে ফুটে উঠত তার সহজাত প্রাণোচ্ছলতা, যা ক্লডিয়াকে আকৃষ্ট করেছিল। শো শেষে একদিন ক্লডিয়ার সাথে লরেটার পরিচয় করিয়ে দেয় ক্রস। পরিচিত হওয়ার পর ক্লডিয়া বুঝল, লরেটা স্টেজে যতটা প্রাণোচ্ছল এবং আকর্ষণীয় বাস্তবেও সে ততটাই উচ্ছল এবং প্রাণময়। ক্লডিয়া একটা বিষয় লক্ষ্য করল, লরেটার প্রতি ক্রস খুব একটা আগ্রহী নয় বরং তার উচ্ছলতায় ক্রস একটু বিরক্তি বোধ করে।

    পরের বার ক্লডিয়া যখন ভেগাসে বেড়াতে এলো লরেটার শো দেখানোর জন্য সে মেলো স্টুয়ার্টকে সঙ্গে নিয়ে আসে। মেলো অবশ্য ক্লডিয়ার পীড়াপীড়িতে তাকে খুশি করানোর জন্যই ভেগাসে আসে। অনেক বড় কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা তার মোটেই ছিল না। সে আর দশজন স্টেজ পারফরমার কিংবা ক্যাবারে ড্যান্সারের চাইতে বেশি কিছু ধারণা করেনি লরেটা সম্পর্কে। মেলো স্টুয়ার্ট মেয়ের সত্যিকারের মেধা আছে। সেই মেধা তার নাচ অথবা গানের মধ্যে নেই বরং তার মধ্যে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার মতো সহজাত প্রতিভা রয়েছে। আর এই প্রতিভার অধিকারী মেয়েরা হলো সোনা।

    মেলো লরেটাকে আশ্বস্ত করল, সব সমস্যাই সমাধান যোগ্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সমস্যা অত্যন্ত জটিল। লরেটার শো বিজ এজেন্সি চুক্তি শেষ হওয়ার আগে কিছুতেই লরেটাকে ছাড়তে রাজি নয়।

    এই সময় থেকে বের হওয়ার কোনো উপায়ই খুঁজে পাচ্ছিল না ক্লডিয়া। এমন সময় লরেটা ক্লডিয়াকে তার ভাই ক্রসের কাছে এই ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন করার কথা বলে। লরেটার কথায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় ক্লডিয়া। সে লরেটাকে বলল, এই ব্যাপারে ক্রস কি করতে পারে?

    লরেটা বলল, এই শহরে তার যথেষ্ট প্রভাব আছে। আমাকে চুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সে নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। প্লিজ, তুমি ক্রসকে সাহায্য করার জন্য বলল।

    ক্লডিয়া হোটেলের পেন্থ হাউস সুইটে ফিরে এসে ক্রসকে লরেটার সমস্যার কথা জানাল। ক্রস বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। সে বলল, কেন আমি এই সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাব? উত্তরে ক্লডিয়া বলল, আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না, আমি তোমাকে এই সমস্যার সমাধান করতে বলেছি তাই মি করবে। দ্যাটস অল।

    ক্রস বলল, তুমি বোকা। আমি লরেটার মতো অনেক অকৃতজ্ঞকে দেখেছি যারা তোমার মতো বন্ধুর ঘাড়ে পা দিয়ে উপরে উঠে যায় এবং পরে সেই বন্ধুকে ইতিহাসের মতো ভুলে যায়।

    তাতে কি হয়েছে? ক্লডিয়া বলল, সে সত্যিকার অর্থেই প্রতিভাবান। এটা তার সম্পূর্ণ জীবনকেই উন্নততর জীবনে পাল্টে দিতে পারে।

    ক্রস আবারো মাথা নেড়ে বলল, আমাকে এটা করার জন্য বলো না।

    ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করল, হোয়াই নট?

    তাকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপর এক প্রতিষ্ঠান নিতে চাচ্ছে, এটা চলচ্চিত্র ব্যবসারই অংশ।

    ক্রস বলল, আমি বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছি না কারণ যদি আমি তা করি তাহলে আমাকে সমস্যা সমাধানে সফল হতে হবে। ক্লডিয়া বলল–

    তোমাকে সফল হতেই হবে আমি তা বলছি না। আমি শুধু তোমাকে তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করতে বলছি। তাহলে অন্তত লরেটাকে আমি বলতে পারব আমরা চেষ্টা করেছিলাম।

    ক্রস হেসে উঠল, বলল, সত্যিই তুমি বোকা। ঠিক আছে, তুমি লরেটা ও তার এজেন্সিকে আগামীকাল আমার সাথে দেখা করতে বলে। ঠিক সকাল দশটায়। এবং তুমিও সেখানে থেকো।

    পরদিন সকালের মিটিংয়ে ক্লডিয়া প্রথমবারের মতো লরেটার শো বিজ এজেন্টের সাথে পরিচিত হলো। তার নাম টলি নাভান্স। লোকটির পরনে ছিল ভেগাস স্টাইলের সাধারণ পোশাক। তবে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের জন্য পোশাকের প্রতি বিশেষ যত্ন নিয়েছিল। কলারবিহীন সাদা শার্টের ওপর ব্লু ব্লেজার এবং ব্লু ডেনিম প্যান্ট।

    টলি নাভান্স বলল, ক্রস, তোমার সাথে পুনরায় দেখা হওয়ায় আনন্দিত বোধ করছি।

    আমাদের কি ইতোপূর্বে দেখা হয়েছে? ক্রস জিজ্ঞেস করল। কারণ স্টেজ শো বিজনেসের বিষয়গুলো সে নিজে দেখাশোনা করে না।

    নাভান্স অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানাল, অনেক দিন আগে। লরেটা যখন প্রথম জানাদু হোটেলে শো  করেছিল তখন।

    ক্লডিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্ট ও টলি নাভান্সের মধ্যে পার্থক্যগুলো যাচাই করছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট দীর্ঘদিন ফিল্ম ট্যালেন্টদের নিয়ে কাজ করেছে আর টলি নাভান্স অল্প কিছুদিন থেকে নাইটক্লাব বিনোদনের জগতে পা দিয়েছে। নাভান্সকে বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছিল। তাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে খুব একটা কর্তৃত্বপূর্ণ, আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল না। মেলো স্টুয়ার্টের মতো তার নিজের ওপর পূর্ণ আস্থা ছিল না।

    লরেটা ক্রসের গালে আলতো চুমু দিল, কিন্তু কোনো কথা বলল না। এমনকি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র উচ্ছলতার প্রকাশ ছিল না। লরেটা ক্লডিয়ার পাশে বসল। ক্লডিয়া তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছিল।

    ক্রস গলফ খেলার পোশাকে ছিল-সাদা ট্রাউজার, সাদা টি শার্ট এবং পায়ে সাদা জুতো। তার মাথায় ছিল নীল বেসবল ক্যাপ। ক্রস ওয়েটবার থেকে সবাইকে পানীয় অফার করল কিন্তু সবাই অসম্মতি জানাল। ক্রস শান্তভাবে বলল, লরেটা তোমার সমস্যার একটা নিষ্পত্তি করা যাক, কি বলো?

    কম্পিত কণ্ঠে লরেটা বলল, আমি যা আয় করব তার একটা পার্সেন্টেজ চায় টলি। এমনকি চলচ্চিত্র থেকে যে আয় আমি করব তার পার্সেন্টেজও টলিকে দিতে হবে। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্টকে চলচ্চিত্রে কাজের উপার্জন থেকে পূর্ণ পার্সেন্টেজ দিতে হবে। আমি দুজায়গায় পার্সেন্টেজ দিতে পারব না। তাছাড়া টলি চায় আমার সবকাজ সে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্ট তা মানতে রাজি নয় এবং আমি তা মানব না।

    নাভান্স শ্রাগ করে বলল, আমাদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। আমরা চাই সে চুক্তি অনুযায়ী চলবে।

    লরেটা বলল, সেক্ষেত্রে আমার ফি এজেন্ট আমার সাথে চুক্তি করবে না। ক্রস বলল, আমার কাছে এটা খুব সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে লরেটা, চুক্তি থেকে বের হওয়ার পথ তুমি কিনে নাও, নাভান্স বলল, লরেটা খুব বড় মাপের পারফরমার, সে আমাদের প্রচুর অর্থ উপার্জন করে দিয়েছে। আমরা সবসময়ই তাকে প্রমোট করেছি। আমরা তার প্রতিভার মূল্যায়ন করেছি। আমরা তার পেছনে প্রচুর অর্থ ইনভেস্ট করেছি। এখন সে টাকা দিলেই আমরা তাকে ছেড়ে দিতে পারি না।

    লরেটা প্রায় আর্তনাদ করে বলল, আমি দুটো পার্সেন্টেজ দিতে পারব না। এটা চরম নিষ্ঠুরতা।

    ক্লডিয়া অনেক কষ্টে তার হাসি চেপে রাখল কিন্তু ক্রস তা পারল না। নাভান্সকে আহত দেখাচ্ছিল।

    শেষে ক্রস বলল, ক্লডিয়া, তোমার গলফ গিয়ারে নিয়ে এসো। আমি তোমার সাথে নাইন হোল খেলতে চাই। আমি এখানকার কাজ সেরে সিঁড়ির নিচে ক্যাশিয়ারের কক্ষে তোমার সাথে দেখা করব।

    মিটিংয়ে খেলার পোশাক পরে দায়সারাভাবে ক্রসের উপস্থিতি দেখে ক্লডিয়া অবাক হয়েছিল। তার আচরণে মনে হয়েছিল সে মিটিংটাকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। এটা ক্লডিয়াকে আঘাত করেছিল এবং সে জানত লরেটাও এতে আহত হয়েছে। কিন্তু এতে টলি আশ্বস্ত হয়েছিল। লোকটি সমঝোতার কোনো প্রস্তাব জানায়নি।

    ক্লডিয়া বলল, আমি এখানেই থাকব। আমি দেখতে চাই সলমন কিভাবে কাজ করে।

    ক্রস কখনোই তার বোনের ওপর রাগ করতে পারে না। ক্লডিয়ার কথা শুনে সে হাসল। ভাইয়ের হাসির প্রতিউত্তরে সেও হাসল। ক্রস নাভান্সের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি দেখছি তুমি কিছুতেই মানছ না। আমার মনে হয় তুমিই সঠিক। লরেটা এক বছরে চলচ্চিত্রে যা উপার্জন করবে তাতে তোমার পার্সেন্টেজ কত আসবে? তবে তার ওপর তোমার কর্তৃত্ব পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথায় তুমি পার্সেন্টেজ পাবে না।

    লরেটা রাগে ফেটে পড়ল। সে বলল, আমি কিছুতেই তাকে পার্সেন্টেজ দেব না।

    নাভান্স উত্তরে বলল, আমি তা চাইও না। পার্সেন্টেজের বিষয়টা না হয় ছেড়েই দিলাম কিন্তু আমরা তোমার শোর জন্য বড় বায়না করি আর তখন যদি তুমি মুভির কাজে ব্যস্ত থাকো, তখন কি হবে? আমাদের টাকা লোকসানে যাবে।

    ক্রস গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুঃখের সাথে বলল, টলি, আমি চাই তুমি লরেটাকে চুক্তি থেকে নিষ্কৃতি দেবে। এটা আমার অনুরোধ। তোমার সাথে আমাদের এই হোটেলের অনেক ব্যবসা আছে। আমার জন্য এই উপকারটুকু তুমি করো।

    প্রথমবারের মতো নাভান্সের চেহারায় সতর্কতা ফুটে উঠল। সে কাতর কণ্ঠে ক্রসকে বলল, তোমার এই উপকার আমি করতে চাই ক্রস, কিন্তু এজেন্সির অন্যান্য পার্টনারের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ক্ষণিক থেমে সে বলল, হয়তো চুক্তি কেনার ব্যবস্থা আমি করতে পারব।

    না, ক্রস বলল, আমি তোমাকে উপকার করতে অনুরোধ করছি, চুক্তি কেনার কথা বলিনি।

    দেখো, আমি এখন খেলতে যেতে চাই, তোমার যা বলার এখনই বলো। তুমি আমার এই উপকারটুকু করবে কি-না। হ্যা অথবা না-এ তোমার জবাব আশা করছি।

    ক্রসের কথায় ক্লডিয়া হতাশ হয়েছিল, আলোচনা পণ্ড হতে যাচ্ছে এই ভেবে ক্লডিয়া আহত হয়েছিল। ক্রসের আচরণে ক্লডিয়ার মনে হচ্ছিল সে পুরো ব্যাপারটাই যেনতেনভাবে শেষ করতে চাচ্ছে। মনে হচ্ছিল সে তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ক্লডিয়া লক্ষ্য করল ক্রসের কথায় নাভান্স কেঁপে উঠল।

    নেভান্সের উত্তর শুনে ক্লডিয়া বিস্মিত হলো। নাভান্স বলল, এটা ঠিক নয়। সে সমর্থনের আশায় পরাজিত দৃষ্টিতে লরেটার দিকে একবার তাকাল। লরেটা তার দৃষ্টি নামিয়ে নিল।

    ক্রস আত্মবিশ্বাসের সাথে কিছুটা গর্বিত ভঙ্গিতে তার মাথার ক্যাপটি একপাশে টেনে এনে বলল, এটা আমার অনুরোধ। তুমি আমাকে ফিরিয়েও দিতে পারবে। সেটা তোমার অভিরুচি।

    নাভান্স ব্যস্তভাবে বলল, না, না, ক্রস, তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি বুঝিনি তুমি আমার কথায় কষ্ট পাবে। কারণ আমরা খুব ভালো বন্ধু।

    ক্লডিয়া লক্ষ্য করল হঠাৎ করেই তার ভাইয়ের মধ্যে চমকপ্রদ পরিবর্তন ঘটে গেল। ক্রস সামনের দিকে ঝুঁকে টলি নাভান্সের কাঁধে একটি হাত রেখে আন্তরিকভাবে তাকে কাছে টেনে নিল। উষ্ণ হাসিতে তার চেহারা ঝলমল করছে।

    ক্লডিয়া ভাবল ক্রস সত্যিই সুদর্শন। ক্রস কৃতজ্ঞভরা কণ্ঠে নাভান্সকে বলল, টলি আমি তোমার এই উপকার কখন ও ভুলব না। শোনো টলি, জানা হোটেলের স্টেজ তোমার জন্য উন্মুক্ত। তোমার যে কোনো নতুন ট্যালেন্টের শো  সর্বনিম্ন চার্জে সেখানে করতে পারবে। আমিও তোমার এজেন্সির সব ট্যালেন্টদের নিয়ে একটি স্পেশাল শো আয়োজন করব এবং সেই রাতে তুমি এবং তোমার পার্টনাররা আমার সাথে হোটেলে ডিনার করবে। তোমার যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করো। আমি তা দেখব, ঠিক আছে?

    ক্লডিয়া দুটি বিষয় উপলব্ধি করলক্রস খুব পরিকল্পিতভাবেই ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল। সেই সাথে সে সতর্কতার সাথে নেভান্সের কিছুটা ক্ষতিও পুষিয়ে দিয়েছিল। তবে তা ক্রসের কর্তৃত্ব মেনে নেওয়ার পরেই করেছিল, তার আগে নয়। টলি নাভান্স তার স্পেশাল নাইট উপভোগ করবে। এক রাতের জন্য সে নিজেকে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ভেবে গর্বিত হবে।

    ক্লডিয়া আরেকটি বিষয় উপলব্ধি করল, তার প্রতি ক্রসের ভালোবাসার গভীরতা বোঝানোর জন্য তার প্রভাব প্রদর্শন করেছে এবং তার ভালোবাসার একটা বাস্তব ক্ষমতা আছে। ক্রসের সুন্দর চেহারায় বিধাতা যেন নিজ হাতে তাকে গড়েছেন, তার ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। সেই শৈশবে তাকে যেমন দেখেছিল––কোমল একজোড়া ঠোঁট, নিখুঁত নাক, পটলচেরা আয়ত দুটি চোখ। বয়সের সাথে তার চেহারায় একটা দৃঢ়তা এসেছে—মনে হয় যেন মার্বেল পাথরের খোদাই করা প্রাচীন কোনো ভাস্কর্য।

    ক্লডিয়া প্যাসিফিক হাইওয়ে থেকে বাঁক নিয়ে সাইড রোড ধরে ম্যালিবু কলোনির গেটে পৌঁছল। সাগর সৈকতে ম্যালিবু কলোনি। কলোনির সামনে বিস্তৃত ঝলমলে সমুদ্র। যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। ক্লডিয়ার খুব পছন্দ এই কলোনি। ক্লডিয়া আবারও পেছনের পর্বতশৃঙ্গের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল সাগরের জলে। সে অ্যাথেনার বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করল।

    ম্যালিবু কলোনির দক্ষিণ দিকের ঘেরার বাইরে পাবলিক বীজ উন্মুক্ত সৈকতে বজ কানে শুয়ে আছে। ম্যালিবু কলোনি তীরের জালে ঘেরা। তারের জাল সৈকত ছাড়িয়ে প্রায় দশ গজ পানি পর্যন্ত বিস্তৃত। তারের জালের এই ঘেরা খুবই সাধারণ একটা বাধা। যে কেউ ইচ্ছে করলেই পানিতে সাঁতরে। ঘেরার ভেতরে যেতে পারবে।

    অ্যাথেনার ওপর আবারও আক্রমণ চালানোর জন্য বজ আগে থেকেই চারপাশ ভালো করে দেখে নিচ্ছে। আকস্মিক আক্রমণ চালানোর জন্য সবকিছু খতিয়ে দেখতে আজ সে পাবলিক বিচে এসেছে সমুদ্রে গোসল করার সাজে। তার পরনে বাথিং সুট, তার ওপর একটি টি শার্ট পরে আছে। পায়ে টেনিস খেলার জুতো। একটা টেনিস ব্যাগ তার সাথে। তার ভেতরে তাওয়াল দিয়ে জড়ানো একটা এসিডপূর্ণ বোতল।

    বজ যেখানে শুয়ে আছে সেখান থেকে তারের জালের ভেতর দিয়ে অ্যাথেনার বাসা দেখা যায়। সে দেখল দুজন ব্যক্তিগত রক্ষী সৈকতে পাহারা দিচ্ছে। রক্ষী দুজনই সশস্ত্র। যেহেতু বাড়ির পেছনে পাহারার ব্যবস্থা আছে সেহেতু বাড়ির সামনেও রক্ষীরা প্রহরারত, এটা নিশ্চিত।

    বজ প্রয়োজনে রক্ষীদেরকেও আঘাত করতে প্রস্তুত। কিন্তু সে একজন উন্মাদের মতো সবাইকে মেরে ফেলতে চায় না। কারণ তাহলে অ্যাথেনার ওপর তার ন্যায্য প্রতিহিংসার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষ ঘটনাটিকে একটি সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখবে।

    বজ স্কানেট জুতো এবং টি-শার্ট খুলে ফেলে ব্লাঙ্কেটের ওপর শুয়ে পড়ল। সূর্যের উষ্ণতা তাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করল। সে অ্যাথেনার ভাবনায় ডুবে গেল।

    কলেজ জীবনে একজন প্রফেসর এমারসনের প্রবন্ধের ওপর লেকচার দেওয়ার সময় একটি উক্তির উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন Beauty is its own excuse. কিন্তু এমারসন বা সৌন্দর্য কোনো কিছুই বজ ভাবতে পারছে না। তার মাথায় এখন কেবলই অ্যাথেনার ভাবনা।

    অ্যাথেনার মতো এত সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। অ্যাথেনার বিরল সৌন্দর্য নিয়ে বজ নিমগ্ন। একজন মানুষের দৈহিক গড়নের সৌন্দর্যের সাথে চারিত্রিক অন্যান্য গুণাবলির সচরাচর সমন্বয় দেখা যায় না। কিন্তু অ্যাথেনা ছিল ব্যতিক্রম। তার দৈহিক সৌন্দর্যের সাথে মিশেছিল মেধা, প্রাণোচ্ছলতা, মানুষকে আকৃষ্ট করার অসাধারণ ক্ষমতা। কৈশোরেই লোকে তাকে থেনা বলে ডাকত।

    বজ তার যৌবনে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসত অ্যাথেনাকে। অ্যাথেনাও তাকে ভালোবাসত এই ভাবনায় সে সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল। জীবন যে এত মধুর হয় তা সে কখনোই জানত না। কিন্তু একটু একটু করে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল।

    সে কেন এত সুন্দর হলো? তাকে কেন এত ভালসেছিলাম? কেন সবাই তাকে এত ভালোবাসত? এটা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কি সে জানত না?

    বজ নিজের কথা ভেবে বিস্মিত হলো, অ্যাথেনার প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা কিভাবে ঘৃণায় পরিণত হলো?

    এটা অত্যন্ত সহজ এবং স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ সে জানত, সে সারা জীবন অ্যাথেনাকে ধরে রাখতে পারবে না এবং একদিন অ্যাথেনা তাকে ছেড়ে চলে যাবে। একদিন বজের সুখের স্বর্গ ভেঙে দিয়ে অ্যাথেনা অন্য পুরুষের শয্যাসঙ্গী হবে এবং আর কোনো দিনও তার জীবনে ফিরে আসবে না অ্যাথেনা।

    সে অনুভব করল তার মুখের ওপর ছায়া পড়েছে। সে চোখ মেলে দেখল, একটা ফোল্ডিং চেয়ার হাতে পরিপাটি পোশাকের একজন লোক তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। বজ লোকটিকে চিনতে পারল। জিম লুজি ডিটেকটিভ থেনার মুখে প্রথমবার পানি ছুঁড়ে মারার পর এই লোকই তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করেছিল।

    রোদের কারণে বজ তার দিকে চোখ কুঁচকে তাকাল। লুজিকে সে বলল, কি আশ্চর্যের বিষয়। আমরা দুজনই একই সৈকতে সাঁতার কাটতে এসেছি। কিন্তু তুমি আমার কাছে কেন এসেছ?

    লুজি চেয়ার পেতে বসল। আমার এক্স-ওয়াইফ এই চেয়ারটা আমাকে দিয়েছিল। আমি নাকি অনেক সাফারকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞেসাবাদ করি। তাই আমার একটু আরামের জন্য সে আমাকে এটা দিয়েছিল। লুজি বজ স্কানেটের দিকে দয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমি শুধু তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। প্রথমত মিস অ্যাথেনা একুইটিনের বাড়ির এত কাছে তুমি কি করছ? তুমি বিচারকের নিষেধাজ্ঞা জ্ঞান করেছ।

    আমি পাবলিক বিচে আছি এবং অ্যাথেনা ও আমার মাঝে তারজালের বেষ্টনী রয়েছে। আমি এখানে সাঁতারের জন্য এসেছি। আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি অ্যাথেনাকে উৎপীড়ন করছি?

    বজ উত্তর দিল।

    লুজি তার মুখে সহানুভূতির হাসি এনে বলল, হেই, শোনো তার সাথে যদি আমার বিয়ে হতো তাহলে আমিও তার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারতাম না। আমি কি তোমার ব্যাগটা দেখতে পারি?

    বজ ব্যাগটা টান দিয়ে তার মাথার নিচে রাখল এবং বলল, না, ওয়ারেন্ট ছাড়া তুমি তা পারো না।

    লুজি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি হেসে বলল, তোমাকে গ্রেফতার করতে আমাকে বাধ্য করো না। তাই বলছি মাথা থেকে দুর্বুদ্ধি ঝেড়ে ব্যাগটা আমাকে দাও। এই কথায় বজ উঠে দাঁড়াল। সে ব্যাগটা লুজির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সাথে সাথে আবার তা দূরে সরিয়ে নিল।

    সে বলল, চেষ্টা করে দেখো নিতে পারো কি-না।

    লুজি বজের কাণ্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। এ পর্যন্ত কেউ-ই তার সাথে এমন আচরণ করার সাহস পায়নি। অন্য কোনো পরিস্থিতি হলে এতক্ষণে সে তার ব্ল্যাকজ্যাক (হান্টার) অথবা বন্দুক বের করে লোকটিকে পিটিয়ে দলা বানিয়ে ফেলত। কিন্তু পায়ের নিচে বালু থাকায় সে অনিশ্চয়তায় ভুগছে কিংবা বজ স্কানেটের ভীতিহীন আচরণ তাকে দ্বিধাগ্রস্ত করে দিয়েছে। বজ তার দিকে তাকিয়ে হাসল, বলল, আমার কাছ থেকে ব্যাগ নিতে হলে তোমাকে গুলি করতে হবে এবং যদি তুমি আমাকে গুলি করো তাহলে গুলি করার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে পারবে না তুমি। কেননা আমি তোমার চেয়ে শক্তিশালী এবং তোমার মতোই লম্বা-চওড়া।

    বজের পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও বিচক্ষণতাকে লুজি মনে মনে প্রশংসা করল। তার সাথে দৈহিক সংঘাতের বিষয়টি নিয়ে যেখানে সংশয় দেখা দিতে পারে সেখানে অস্ত্র বের করার প্রশ্নই ওঠে না।

    লুজি বলল, ঠিক আছে, সে তার চেয়ার ভাজ করে চলে যেতে উদ্ধত হলো। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশংসার সুরে বলল, তুমি সত্যিই একজন কঠিন লোক। তুমিই জিতলে কিন্তু এমন কিছু করো না যাতে আমি উপযুক্ত কারণ পাই। তুমি লক্ষ্য করেছ অ্যাথেনার বাড়ি থেকে তোমার দূরত্ব আমি মেপে দেখিনি, হয়তো তুমি বিচারকের নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে আছ।

    বজ হেসে বলল, চিন্তা করো না, আমি তোমাকে কোনো সুযোগ দেব না।

    সে দেখল লুজি সৈকত দিয়ে হেঁটে গিয়ে তার গাড়িতে উঠল এবং গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেল। বজ তার ব্লাঙ্কেটটি তুলে ব্যাগে ভরল এবং সেও তার গাড়িতে ফিরল। গাড়ির বুটে ব্যাগটি রাখল। গাড়ির চাবিটি রিং থেকে খুলে নিয়ে সামনের সিটের নিচে লুকিয়ে লাখল!

    তারপর সে ফেন্সের (ঘেরার) চারপাশে সাঁতার কাটতে সৈকতে ফিরে গেল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু
    Next Article কায়াহীনের কাহিনী – মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }