Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট – অ্যালেক্স মাইকেলিডিস

    লেখক এক পাতা গল্প365 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪.০১ অ্যালিসিয়ার ডায়েরিটা বন্ধ করে

    চতুর্থ পর্ব

    অনেকেই ভাবেন যে থেরাপির মাধ্যমে অতীতের ভুল শোধরানো হয়, এটা বেশ বড়সড় ভুল। বরং বলা যায় যে একজন সাইকোথেরাপিস্ট তার রোগিকে নিজের অতীত সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন, মুখোমুখি হতে শেখান।
    –অ্যালিস মিলার

    ৪.১

    অ্যালিসিয়ার ডায়েরিটা বন্ধ করে ডেস্কের ওপরে নামিয়ে রাখলাম।

    একদম স্থির হয়ে চুপচাপ বসে রইলাম সেখানে, জানালায় বৃষ্টির ছাট এসে লাগছে। আলতো শব্দটা মনকে শান্ত করার জন্যে আদর্শ। এতক্ষণ যা পড়লাম তা বোঝার চেষ্টা করছি। অ্যালিসিয়া বেরেনসনকে চেনার অনেকটাই বাকি ছিল এতদিন। তার মনের বদ্ধ দুয়ারের অপর পাশে কী আছে তা খানিকটা হলেও জানতে পেরেছি অবশেষে। আর তথ্যগুলো যে আমাকে চমকে দিয়েছে, সেটা বলাই বাহুল্য।

    অনেক প্রশ্ন জড়ো হয়েছে মনে। অ্যালিসিয়া সন্দেহ করতো যে কেউ তার ওপর নজর রাখছে। লোকটার পরিচয় কি বের করতে পেরেছিল সে? কাউকে বলেছিল? এটা জানতে হবে আমাকে। যতদূর বুঝেছি গ্যাব্রিয়েল, বার্বি হেলমান আর ডঃ ওয়েস্টের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করেছিল সে। আর কেউ কি জানে? আরেকটা প্রশ্ন খোঁচাচ্ছে আমাকে। ডায়েরিটা এরকম হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল কেন? এর পরের ঘটনাগুলো কি অন্য কোথাও লেখা হয়েছে? অন্য কোন ডায়েরি, যেটা সে দেয়নি আমাকে? তাছাড়া আমাকে অ্যালিসিয়ার নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়তে দেয়ার কারণটাও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। এর অর্থ কি আমাকে বিশ্বাস করে সে? নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে?

    এই ডঃ ওয়েস্টকেও খুঁজে বের করতে হবে যে করেই হোক। গোটা ব্যাপারটার একজন গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী তিনি, হত্যাকাণ্ডের আগের দিনগুলোয় অ্যালিসিয়ার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল সে সম্পর্কেও তথ্য আছে তার কাছে। তা সত্ত্বেও অ্যালিসিয়ার বিচার চলাকালীন সময়ে তিনি এগিয়ে আসেননি। কেন? তার কথা কোথাও কেউ উল্লেখও করেনি। ডায়েরিতে নামটা না দেখলে তার অস্তিত্বের কথা জানতামই না। কতটা জানেন তিনি? কেন কিছু বলেননি?

    ডঃ ওয়েস্ট।

    আমি যার কথা ভাবছি সে হতেই পারে না। তাদের নাম মিলে যাওয়াটা একান্তই কাকতালীয়। তবে নিশ্চিত হতে হবে আমাকে।

    ডেস্কের ড্রয়ারে ডায়েরিটা রেখে উঠে দাঁড়ালাম। পরক্ষণেই মত পাল্টে ওটা বের করে কোটের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম, নিজের কাছে রাখাটাই নিরাপদ।

    আমার অফিস থেকে বেরিয়ে নিচতলায় চলে এলাম। গন্তব্য করিডোরের শেষ মাথার রুমটা।

    দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। একটা ছোট ফলকে নাম খোদাই করা সেখানে।

    ডঃ সি. ওয়েস্ট।

    নক করার তোয়াক্কা না করেই দরজা খুলে ভেতরে পা রাখলাম।

    .

    ৪.২

    ডেস্কে বসে চপস্টিকস দিয়ে আয়েশ করে সুশি খাচ্ছিল ক্রিস্টিয়ান। দ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে।

    “তোমাকে কি কেউ নক করা শেখায়নি?”

    “জরুরি কথা আছে।”

    “খাচ্ছি এখন, পরে বোলো।”

    “খুব বেশিক্ষণ সময় নষ্ট করবো না। একটা প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন আমার। তুমি কি কখনো অ্যালিসিয়া বেরেনসনের চিকিৎসা করেছিলে?”

    মুখের সুশিটা গিলে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো ক্রিস্টিয়ান। “মানে? তুমি তো জানোই যে আমিই এখানে ওর চিকিৎসা দলের প্রধান।”

    “এখানকার কথা বলছি না। গ্রোভে ভর্তি হবার আগে কখনো ওর চিকিৎসা করেছিলে?”

    খুব ভালো করে লক্ষ্য করি ক্রিস্টিয়ানকে। চেহারার অভিব্যক্তির পরিবর্তন দেখেই যা বোঝার বুঝে গেলাম। ডঃ ওয়েস্টকে পেয়ে গেছি। পরো লাল হয়ে গেছে বেচারার চেহারা। চপস্টিকগুলো নামিয়ে রাখলো।

    “কী বলছো এসব?”

    অ্যালিসিয়ার ডায়েরিটা পকেট থেকে বের করে ওকে দেখালাম।

    “গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস হাতে এসেছে আমার। অ্যালিসিয়ার ডায়েরি। হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে এখানে লেখা শুরু করেছিল সে। পুরোটা পড়া শেষ করলাম একটু আগে।”

    শঙ্কা ফুটলো ক্রিস্টিয়ানের চেহারায়। “কোথায় পেলে এটা?”

    “অ্যালিসিয়া নিজেই দিয়েছে।”

    “এর সাথে আমার কি সম্পর্ক?”

    “তোমার কথা এখানে লিখেছে সে।”

    “আমার কথা?”

    “গ্রোভে ভর্তি হবার আগেও ওর সাথে দেখা হয়েছে তোমার। এটা তো জানতাম না।”

    “আমি…আমি বুঝতে পারছি না তোমার কথা। নিশ্চয়ই কোন ভুল হচ্ছে।”

    “মনে হয় না। প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অংশ হিসেবে তুমি বেশ কয়েকবারই ওর চিকিৎসা করেছে। তা সত্ত্বেও বিচার চলাকালীন সময়ে আদালতে কিছু বলোনি। অথচ তোমার কথাগুলো আদালতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে বিবেচ্য হতো। অ্যালিসিয়াকে যে আগে থেকেই চিনতে, সেটা এখানে কাজ শুরু করার সময় স্বীকারও করোনি। কিন্তু তোমাকে চিনতে নিশ্চয়ই কষ্ট হয়নি অ্যালিসিয়ার। সে যে কথা বলে না, এটা তোমার সৌভাগ্য।”

    স্বাভাবিক স্বরে কথাগুলো বললেও ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড রেগে গিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি যে অ্যালিসিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে ক্রিস্টিয়ান কেন এভাবে আমার পেছনে লেগেছে। সে চুপ থাকলেই ওর জন্যে ভালো।

    “এতটা স্বার্থপর হয় কিভাবে মানুষ?”

    আতঙ্কিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো ক্রিস্টিয়ান। “ধুর, বিড়বিড় করে বলল একবার। “ধুর। থিও, শোনো-তুমি যা ভাবছো আসলে ব্যাপারটা ওরকম না।”

    “তাহলে কী রকম?”

    “ডায়েরিতে আর কি লেখা?”

    “আর কি লেখা থাকার কথা?”

    জবাব দিলনা ক্রিস্টিয়ান। “আমি কি একবার পড়তে পারি?” হাত সামনে বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।

    মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিলাম। “সেটা ঠিক হবে না।”

    হাতের চপস্টিকগুলো আনমনে নাড়াচাড়া করছে ক্রিস্টিয়ান। “আসলে কাজটা করা উচিৎ হয়নি আমার। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছিল না।”

    “বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কিছু নেই। তুমি যদি সাধুই হতে তাহলে বিচার চলাকালীন সময়ে কিছু বলোনি কেন?”

    “কারণ, আমি তো অ্যালিসিয়ার চিকিৎসা করেছি গোপনে। গ্যাব্রিয়েলের অনুরোধে। ইউনিভার্সিটির বন্ধু আমরা। ওর বিয়েতেও গিয়েছিলাম। এরপর অবশ্য যোগাযোগ কমে যায়। একদিন হঠাই ফোন দিয়ে বলে ওর স্ত্রীকে দেখাবার জন্যে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট খুঁজছে। বাবার মৃত্যুর পর একদম ভেঙে পড়েছে সে।”

    “আর তুমি নিজেই চিকিৎসা করার জন্যে লাফিয়ে উঠলে।”

    “না, একদমই না। বরং উল্টোটা ঘটেছিল। আমি আমার এক সহকর্মীর কথা বলেছিলাম গ্যাব্রিয়েলকে। কিন্তু ও বারবার বলে, আমাকেই দেখতে হবে অ্যালিসিয়াকে। আসলে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর কোন ইচ্ছে ছিল না অ্যালিসিয়ার, তাই গ্যাব্রিয়েল ভাবে, পরিচিত কেউ হলে সে অতটা আপত্তি করবে না। আমার ইচ্ছে ছিল না আসলেই।”

    “তা তো বুঝতেই পারছি।”

    আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায় ক্রিস্টিয়ান। “এভাবে ব্যঙ্গ করার মতন কিন্তু কিছু হয়নি।”

    “কোথায় তোমার সাথে দেখা করতে অ্যালিসিয়া?”

    “আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়। কিন্তু তোমাকে যেমনটা বললাম,” দ্রুত যোগ করলো সে, “পুরোটাই অনানুষ্ঠানিক, বলা যায় গল্প গুজবের ফাঁকে ওর সমস্যাগুলোর কথা শুনেছিলাম। তাও অল্প কয়েকবার।”

    “আচ্ছা। সেই ‘অনানুষ্ঠানিক’ গল্প গুজবের জন্যে ফি নিয়েছিলে?”

    চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল ক্রিস্টিয়ান। “ইয়ে মানে, গ্যাব্রিয়েলের জোরাজুরির কারণে-”

    “নগদেই নিয়েছিলে নিশ্চয়ই?”

    “থিও–”

    “নগদ নিয়েছিলে কি না সেটা বলো।”

    “হ্যাঁ, কিন্তু

    “কাগজে কলমে এই লেনদেনের তো কোন অস্তিত্ব নেই?”

    কোন জবাব দিল না ক্রিস্টিয়ান। অর্থাৎ আমার ধারণাই ঠিক। সেজন্যেই অ্যালিসিয়ার বিচার চলাকালীন সময়ে কিছু বলেনি সে। এরকম ‘ব্যক্তিগতভাবে আর কতজনকে ‘অনানুষ্ঠানিক চিকিৎসা দেয় সে কে জানে।

    “দেখো, ডায়োমেডেস যদি এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারে, তাহলে…তাহলে আমার চাকরিই চলে যাবে। এটা তো বুঝতে পারছে তুমি, নাকি?” ওর কণ্ঠে করুণা প্রার্থনার ছাপ স্পষ্ট।

    কিন্তু আমার সহানুভূতির বিন্দু পরিমাণও ক্রিস্টিয়ানের জন্যে বরাদ্দ নয়। ওর কাছ থেকে কখনোই ভালো ব্যবহার পাইনি। “প্রফেসরের কথা বাদ দাও। একবার যদি মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে খবরটা যায়, তাহলে কি হবে বলো দেখি? তোমার লাইসেন্স কেড়ে নিবে।”

    “সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তুমি যদি না বলো, তাহলে তো কেউ জানবে না। থিও, আমার ক্যারিয়ারের ব্যাপার এটা, বোঝার চেষ্টা করো। প্লিজ।”

    “সেটা আগে চিন্তা করা উচিৎ ছিল, তাই না?”

    “থিও, প্লিজ-”

    আমার কাছে এরকম অনুনয় করতে নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না ক্রিস্টিয়ানের। সত্যি বলতে আমিও যে কোনপ্রকার আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি, এমনটা নয়। বরং বিরক্তি লাগছে। ডায়োমেডেসকে কিছু জানানোর ইচ্ছে আপাতত আমার নেই। ওকে ঝুলিয়ে রাখাটাই আমার জন্যে সুবিধাজনক। তাহলে হাতের মুঠোয় থাকবে।

    “কাউকে কিছু বলবো না। আপাতত।”

    “ধন্যবাদ, থিও। মন থেকে বলছি কথাটা। তোমার কাছে সদা ঋণী থাকবো।”

    “বাদ দাও এসব। তবে আমাকে অনেক কিছুই নিশ্চয়ই বলার আছে তোমার?”

    “কি জানতে চাও?

    “অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে।”

    “অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে কি?”

    “সবকিছু।”

    .

    ৪.৩

    কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো ক্রিস্টিয়ান, আবারো চপস্টিকগুলো নাড়াচাড়া করছে। কয়েক সেকেন্ড ভাবনা চিন্তার পর কথা বলা শুরু করলো।

    “আসলে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তুমি ঠিক কি জানতে চাচ্ছো, সেটা বুঝতে পারছি না। কোথা থেকে শুরু করবো?”

    “একদম প্রথম থেকেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই তো ওকে দেখে আসছো তুমি?”

    “না, মানে হ্যাঁ। কিন্তু তুমি যতটা ভাবছো, ওরকম দেখা সাক্ষাৎ হতো না আমাদের। ওর বাবা মারা যাবার পর দুই কি তিনবার এসেছিল আমার কাছে।”

    “শেষবার কবে যায়?”

    “হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে।”

    “তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন মনে হয়েছিল তোমার?”

    “ওহ…” চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো ক্রিস্টিয়ান, আপাতত বিপদ কেটে গেছে বুঝতে পারছে। “খুবই খারাপ। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতো, উল্টোপাল্টা জিনিস কল্পনা করতো। এরকমটা আগেও হয়েছিল। এর সমস্যা তার বহুদিনের। এই ভালো তো এই খারাপ। বর্ডারলাইন রোগিরা যেমন হয় আর কি।”

    “এসব টেকনিকাল টার্ম কপচানোর কোন দরকার নেই। যেটুকু জিজ্ঞেস করছি সেটুকু ঠিকঠাক উত্তর দাও, ব্যস।”

    আবারো আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো ক্রিস্টিয়ান। তবে তর্ক করলো না। “কি জানতে চাচ্ছো?” ক্লান্ত কণ্ঠে বলল।

    “অ্যালিসিয়া বলেছিল যে কেউ তার ওপরে লক্ষ্য রাখছিল, তাই তো?”

    শুন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায় ক্রিস্টিয়ান। “লক্ষ্য রাখছিল মানে?”

    “কেউ নজর রাখতে অ্যালিসিয়াদের বাড়িতে। তোমাকে তো এ ব্যাপারে বলেছিল বোধহয়?”

    অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমাকে অবাক করে দিয়ে হেসে উঠলো ক্রিস্টিয়ান।

    “হাসির কি আছে এখানে?”

    “তুমি কি আসলেও কথাটা বিশ্বাস করেছো? কেউ সবসময় নজর রাখতো ওর ওপরে?”

    “কেন, তোমার বিশ্বাস হয়নি?”

    “পুরোটাই ওর উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা। আমি তো ভেবেছিলাম এটা বুঝতে পেরেছো তুমি।”

    মাথা নাড়লাম জবাবে। “ডায়েরিতে এমনভাবে বর্ণনা দেয়া যে বিশ্বাস না করে পারিনি।”

    “ব্যাপারটা যে কল্পনা সেটা তো আর অ্যালিসিয়া জানতো না। সুতরাং বর্ণনা বাস্তবই হবে। ওর সম্পর্কে যদি আগে থেকে না জানতাম তাহলে আমিও বিশ্বাস করতাম। আসলে ও মানসিক সমস্যায় ভুগছিল।”

    “বারবার কথাটা বলছো। ডায়েরি পড়ে কিন্তু আমার সেরকমটা মনে হয়নি। এখানে সে যা লেখেছে এরকমটা কিন্তু অহরহ ঘটে চলেছে।”

    “আরে তোমাকে তো বললামই, ওর বাবা মারা যাবার পরেও এমনটা হয়েছিল। তখন ওয়েস্ট গ্রিনে থাকতো গ্যাব্রিয়েল আর অ্যালিসিয়া। ওখানকার বাসাটা ছেড়ে দেয় শেষ পর্যন্ত। বলতো যে, এক বয়স্ক লোক নাকি নজর রাখতে ওর ওপরে। বেশ হৈচৈও করে এটা নিয়ে। শেষমেষ দেখা যায় বেচারা অন্ধ। আগে থেকেই নানারকম সমস্যায় ভুগছিল ও। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। এরপর আর পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।”

    “অ্যালিসিয়া তার বাবার ব্যাপারে তোমার সাথে কখনো আলাপ করেছিল?”

    কাঁধ ঝাঁকালো ক্রিস্টিয়ান। “নাহ, খুব বেশি কিছু কখনো বলেনি। কথায় কথায় তার প্রসঙ্গ উঠলে বলতো, দুজনের সম্পর্ক স্বাভাবিকই ছিল। মানে ওর মা আত্মহত্যা করার পর যতটা স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব আর কি। আসলে আমার কাছে যে একটু হলেও মুখ খুলেছিল অ্যালিসিয়া, এটাই অনেক। রোগি হিসেবে সুবিধের ছিল না। তুমিও নিশ্চয়ই এখন ব্যাপারটা বুঝতে পারছো।”

    কোন মন্তব্য করলাম না এ ব্যাপারে। “বাবা মারা যাবার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে?”

    আবারো কাঁধ ঝাঁকালো ক্রিস্টিয়ান। “চাইলে সেটাকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলতে পারো তুমি। কিন্তু আমি বলবো না।”

    “তুমি কি বলবে শুনি?”

    “বড়জোর আত্মঘাতী আচরন বলতে পারো, কিন্তু আত্মহত্যা করারটা কখনোই ওর মূল উদ্দেশ্য ছিল না। নিজেকে কষ্ট দেয়াটা ওর মত আত্মকেন্দ্রিক কারো পক্ষে সহজ কাজ নয়। মানে সে কতটা মানসিক কষ্টে আছে এটা বোঝানোর জন্যে ওষুধ খাবার নাটকটা করেছিল। গ্যাব্রিয়েলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছিল আর কি। ছেলেটার কথা ভাবলে খারাপই লাগে আমার। যদি অ্যালিসিয়ার বলা কথাগুলো গোপন রাখতে বাধ্য না হতাম, তাহলে ওকে হয়তো বলেই বসতাম যে সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে।”

    “আহহা…তোমার ন্যায়পরায়ণতার জন্যে বেচারার প্রাণটা খোয়াতে হলো।”

    যেন কষ্ট পেয়েছে এমন ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো ক্রিস্টিয়ান। “থিও, আমি জানি যে তুমি মন থেকে রোগিদের ভালো চাও। সেজন্যেই একজন সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে সফল তুমি। কিন্তু অ্যালিসিয়া বেরেনসনের পেছনে আসলেও সময় নষ্ট করছে। অন্তদৃষ্টি বলতে কখনোই কিছু ছিল না ওর। সবসময় নিজেকে আর ঐসব আঁকাআঁকি নিয়ে ভাবতো। ও তোমার সহমর্মিতার যোগ্য নয়। তোমার বিপদের সময় কিন্তু ওর কাছ থেকে সহমর্মিতা পাবে না। একটা আস্ত গাড়ল সে।”

    ক্রিস্টিয়ানের বলা কথাগুলোয় ঘৃণার ছাপ স্পষ্ট। মানসিকভাবে অসুস্থ কারো জন্যে বিন্দুমাত্র সহানুভূতির কোন বালাই নেই ওর মধ্যে। এক মুহূর্তের জন্যে তো মনে হলো অ্যালিসিয়া না, ক্রিস্টিয়ান নিজেই বর্ডারলাইন।

    উঠে দাঁড়ালাম। “অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা করবো আমি। কিছু প্রশ্নের জবাব দরকার।”

    “অ্যালিসিয়ার কাছ থেকে?” অবাক মনে হলো ক্রিস্টিয়ানকে। “কিভাবে পাবে জবাবগুলো, শুনি?”

    “সরাসরি প্রশ্ন করবো ওকে।”

    বেরিয়ে এলাম রুমটা থেকে।

    .

    ৪.৪

    ডায়োমেডেস তার অফিসরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়া অবধি অপেক্ষা করলাম। স্টেফানি ট্রাস্টের লোকদের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত। নার্স স্টেশনে এসে দেখি ভার মুখ করে বসে আছে ইউরি।

    “অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা করতে হবে আমাকে।”

    “তাই?” অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো হেড নার্স। “কিন্তু আমি তো শুনেছি ওর জন্যে থেরাপি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

    “ঠিকই শুনেছো। আমি ওর সাথে আলাদাভাবে কিছু ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে চাই।”

    “আচ্ছা।” ইউরির কণ্ঠে সন্দেহ। “থেরাপি রুমে তো ইন্দিরা তার রোগিদের সাথে কথা বলবে আজকে।” একমুহূর্ত কী যেন ভাবলো সে। “তবে আর্ট রুমটা খালি আছে, ওখানে দেখা করবে? তবে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে কিন্তু।”

    জানি কেন কথাটা বলল ও। কেউ দেখে ফেলার আগেই যত দ্রুত সম্ভব অ্যালেসিয়ার সাথে কথা শেষ করতে হবে। কেউ যদি স্টেফানিকে বলে দেয় তাহলে সমস্যায় পড়ে যাবো। ইউরি আমার পক্ষে আছে দেখে কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠলো মনটা; আসলেও ভালো মানুষ সে। শুরুতে তাকে ভুল বুঝেছিলাম ভেবে একটু অপরাধবোধই হচ্ছে এখন।

    ***

    কথা রাখলো ইউরি। দশ মিনিট পর নিজেকে অ্যালিসিয়ার মুখোমুখি আবিষ্কার করলাম। আর্ট রুমের টেবিলগুলোর একটায় বসেছি আমরা।

    অ্যালিসিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ছবি আঁকার জন্যে পোজ দিচ্ছে। চোখের দৃষ্টি বরাবরের মতনই নির্মোহ।

    “ডায়েরিটা আমাকে পড়তে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ,” পকেট থেকে ওটা বের করে টেবিলে রাখলাম। “ভরসা থেকেই নিশ্চয়ই দিয়েছেন।”

    হাসলাম তার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু আমার হাসির প্রেক্ষিতে অ্যালিসিয়ার চেহারায় কোন অনুভূতি খেলা করলো না। আমাকে ডায়েরিটা পড়তে দিয়ে পস্তাচ্ছে না তো সে? হয়তো তার সম্পর্কে স্পর্শকাতর অনেক কিছু এখন আমার জানা দেখে লজ্জা পাচ্ছে।

    “ডায়েরিটা হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেছে,” নোটবুকের খালি পাতাগুলো উল্টে কিছুক্ষণ পর বললাম। “আমাদের থেরাপি সেশনগুলোর মতনই…অসমাপ্ত।”

    অ্যালিসিয়া কোন কথা বলল না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেবল। আমি নিজেও জানি না যে তার কাছ থেকে আসলে কি আশা করছিলাম। ডায়েরিটা পেয়ে ভেবেছিলাম এবারে হয়তো সে কোন পরিস্কার ইঙ্গিত দিবে, কিন্তু তেমনটা হচ্ছে না।

    “জানেন, আমি ভেবেছিলাম এই ডায়েরিটার মাধ্যমে আমার সাথে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ করার পর এবারে হয়তো আরেক ধাপ এগিয়ে…কথা বলতে রাজি হবেন আপনি।”

    কোন প্রতিক্রিয়া নেই।

    “আমার ধারণা আমাকে ডায়েরিটা দিয়েছিলেন কথা বলার জন্যেই। এক অর্থে কিন্তু মুখ না খুলেও কথা বলেছেন, এই পাতাগুলোর মাধ্যমে। এখন আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানি আমি। কতটা একাকী ছিলেন, কতটা ভয় পেয়েছিলেন শেষ দিকে, কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন-এগুলো আসলেও দরকারী তথ্য। যেমন ডঃ ওয়েস্টের সাথে আপনার সাক্ষাতের ব্যাপারটাই ধরুন না কেন।”

    ভেবেছিলাম ক্রিস্টিয়ানের নামটা বলার পর হয়তো কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবো, কিন্তু অমন কিছুই হলো না। পাথরের মত মুখ করে রেখেছে। অ্যালিসিয়া। একবারের জন্যে পলকও ফেলছে না।

    “গ্রোভে ভর্তি হবার আগে থেকেই যে ক্রিস্টিয়ান ওয়েস্টকে চিনতেন আপনি, এটা জানতাম না আমি। বেশ কয়েক বছর ধরে তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। গ্রোভে তাকে প্রথমবার দেখেই চিনে ফেলেছিলেন নিশ্চয়ই? বিষয়টা আপনার জন্যে পীড়াদায়ক ছিল, তাই না?”

    প্রশ্নোচ্ছলে কথাটা বললেও তার পক্ষ থেকে কোন জবাব পেলাম না। ক্রিস্টিয়ানের কথা শুনেও কোন ভাবান্তর হলো না তার মধ্যে। অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে-যেন বিরক্ত হচ্ছে আমার বকবকানি শুনে। এখন আর কোন কিছু আশা করছে না আমার কাছ থেকে। ওর কাছে হয়তো ব্যর্থ মনে। হচ্ছে আমাকে।

    কিন্তু আমি তো এখনও হাল ছাড়িনি।

    “এখানে ভিন্ন কোন ব্যাপার আছে। ডায়েরিটা পড়ে শেষ করার পরেও অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব পাইনি, সেগুলোর উত্তর আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে। কিছু বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না, ঠিক মিলছে না তথ্যগুলো। আপনি যখন নিজে থেকে আমাকে ডায়েরি পড়তে দিয়েছেন, তাই এসকল ব্যাপারে আরো খোঁজখবর নেয়াটা আমার দায়িত্ব বলে মনে হচ্ছে। আশা করি কথাগুলো আপনাকে বোঝাতে পেরেছি।”

    অ্যালিসিয়াকে ডায়েরিটা ফিরিয়ে দিলাম। জিনিসটা নিয়ে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে আমার দিকে তাকালো সে।

    “আমি আপনার পক্ষে,” কিছুক্ষণ পর বললাম। “সেটা তো নিশ্চয়ই জানেন, তাই না?”

    উত্তর দিল না অ্যালিসিয়া।

    মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিলাম।

    .

    ৪.৫

    ক্যাথি ইদানীং আর সাবধানতার ধার ধারে না। আসলে এমনটাই হবার ছিল। ভেবেছে এতদিনেও যখন তার পরকীয়া সম্পর্কে আমি কিছু বুঝতে পারিনি, আর পারবোও না।

    বাড়ি ফিরে দেখি বাইরে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে ও।

    “একটু হাঁটতে বের হবো,” জুতো পায়ে গলিয়ে বলল। “বেশি দেরি করবো না।”

    “আমিও ব্যায়ামের কথা ভাবছিলাম। আসবো নাকি তোমার সাথে?”

    “নাহ্, হাঁটতে হাঁটতে সংলাপগুলো প্র্যাকটিস করতে হবে।”

    “তুমি চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি।”

    “থাক, তোমার কষ্ট করতে হবে না। আর আমি একা প্র্যাকটিস করলেই মনে রাখতে সুবিধে হবে। দ্বিতীয় পর্বের সংলাপগুলো একটু জটিল। পুরো পার্কে হাঁটি আর আপনমনে কথা বলি। সবাই এমনভাবে তাকায় যেন পাগল হয়ে গেছি।”

    এমনভাবে কথাগুলো বলল ক্যাথি যে আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে বিশ্বাস করেই ফেলতো। একবারের জন্যেও চোখ অন্যদিকে সরায়নি। একদম পাক্কা অভিনেত্রী যাকে বলে?

    তবে আমিও কম যাই না। মুখে একটা উষ্ণ হাসি ফুটিয়ে বললাম, “সাবধানে হেঁটো।”

    ও ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পর আমিও বের হয়ে আসলাম। নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব বজায় রেখে অনুসরণ করছি। কিন্তু একবারের জন্যেও পেছনে ফিরে তাকালোনা ক্যাথি। বললাম না, এখন আর সাবধানতার ধার ধারে না।

    পাঁচ মিনিট হাঁটার পর পার্কের প্রবেশপথের কাছে পৌঁছুল সে। এ সময় ছায়া থেকে একজন বেরিয়ে এসে এগিয়ে গেল তার দিকে। তবে উল্টোদিকে ঘুরে থাকায় চেহারাটা দেখতে পেলাম না। মাথার চুল কালো, শক্তপোক্ত শরীর, আমার থেকে বেশ খানিকটা লম্বা।

    ক্যাথি লাফিয়ে পড়লো লোকটার ওপরে। শক্ত করে একে অপরকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো দু’জনে। কিছুক্ষণ পরেই এক হয়ে গেল তাদের ঠোঁট। যেমন অনেকদিনের ক্ষুধার্ত, এমনভাবে একজন আরেকজনকে আদর করছে তারা। যা চলছে আমার সামনে, তার বর্ণনা কিভাবে দেব জানি না। ক্যাথির দেহে পরপুরুষের স্পর্শ-ব্যাপারটা অদ্ভুত বলাটা কি ঠিক হবে? আসলে আমার ভেতরের অনুভূতিগুলো ঠিকঠাক কাজ করছিল না সে মুহূর্তে। আড়ালে যাবারও প্রয়োজনবোধ করেনি তারা। এখন কাপড়ের ওপর দিয়েই ক্যাথির স্তনগুলো নিয়ে খেলছে লোকটা।

    বুঝতে পারছি, আমার লুকিয়ে পড়া উচিৎ। ক্যাথি যদি একবার পিছে ফেরে, তাহলেই ধরা পড়ে যাবো। তবুও নড়তে পারছিলাম না। কি এক জাদুবলে আমাকে সেখানেই আটকে ফেলেছিল দৃশ্যটা।

    এক সময় চুমুর পর্ব শেষ হলো তাদের। হাত ধরাধরি করে পার্কে ঢুকে পড়লো। রোবটের মত পিছু নিলাম আমি, এখনও বেশ খানিকটা দূরেই আছি। উচ্চতার কথা বাদ দিলে লোকটার দেহাবয়ব আমার মতনই, একবার তো মনে হলো নিজেকেই দেখছি পার্কে ক্যাথির সাথে হেঁটে বেড়াতে।

    গাছপালায় ঘেরা একটা নির্জন জায়গায় লোকটাকে নিয়ে গেল ক্যাথি। দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল দুজনে।

    পেটের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। বেশ খানিকক্ষণ ধরেই ভারি নিশ্বাস পড়ছে। মাথার ভেতরে ক্রমাগত একটা কণ্ঠ শুনেই যাচ্ছি-চলে যাও এখান থেকে, চলে যাও, চলে যাও। কিন্তু গেলাম না আমি। বরং ওদের অনুসরণ করে ভেতরে ঢুকে গেলাম।

    খুব সাবধানে এগোচ্ছি, যাতে কোন শব্দ না হয়। তবুও পায়ের নিচে বেশ কয়েকটা শুকনো ডাল মটমট করে ভাঙলো। ওদেরকে কোথাও চোখে পড়লো না, আসলে এদিকে গাছপালা এত ঘন হয়ে জনেছে যে দুই হাত দূরের জিনিসও দেখা দায়।

    তাই যেখানে ছিলাম সেখানেই থেমে কান পাতলাম। প্রথমে একটা খচখচ শব্দ কানে এলো। ভাবলাম বাতাসে পাতা নড়ার শব্দও হতে পারে, কিন্তু পরক্ষণেই ভুলটা ভেঙে গেল। আরেকটা খুব পরিচিত শব্দ কানে এসেছে।

    ক্যাথির শিকার। কখন এরকম শব্দ করে ও সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার।

    আরেকটু সামনে এগোনোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শুকনো ডাল আর পাতার কারণে সুবিধে করতে পারলাম না। নিজেকে মাকড়সার জালে আটকা পড়া শিকারের মতন মনে হচ্ছে। আধো আলো আধধা অন্ধকারে, স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। ক্যাথির গোঙানি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। লোকটা নিশ্চয়ই এখন চড়ে বসেছে ওর ওপরে। ঝোঁপের আড়ালে লীলাখেলায় মত্ত দুই মানব-মানবী।

    ঘেন্নায় রীতিমতো কাঁপছি এখন আমি। হঠাৎ করেই উদয় হয়ে আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে লোকটা। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। জীবন এতটা নিষ্ঠুর হয় কী করে? আমি তো কখনো কোন পাপ করিনি। অন্য কারো স্ত্রীর দিকে চোখ তুলেও তাকাইনি। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে এরকম অসুস্থ কাজ করা সম্ভব? আসলে সে মানুষই না, আস্ত জানোয়ার। কেন? কেন এসব হচ্ছে। আমার সাথে। কাউকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসাটাই কি তাহলে ভুল ছিল? নাকি ফাঁক ছিল আমার ভালোবাসায়?

    এই লোকটা কি ক্যাথিকে ভালোবাসে? সন্দেহ আছে সে ব্যাপারে। অন্তত আমার মত করে ভালোবাসে না। শুধু ওর দেহটাকে ভালোবাসে। আসলে আমি যেভাবে ক্যাথিকে ভালোবাসি, সেটা অন্য কারো কাছ থেকে পাবে না সে। ওর জন্যে আমি জান দিতেও রাজি, জান নিতেও রাজি।

    বাবার কথা মনে হলো, আমার জায়গায় সে হলে কি করতো? এখানেই লোকটাকে খুন করতো নিশ্চিত। পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষের মত আচরণ করো, তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। সেরকম কিছুই কি করা উচিৎ আমার? মেরে ফেলবো লোকটাকে? তাহলে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হবে। শুধু স্মৃতি হিসেবে ক্যাথির মনে থেকে যাবে সে-এই যা। একসময় স্মৃতিটা ভুলেও যাবে। ইচ্ছে করলে এখানেই কাজটা করতে পারি আমি। পার্কের পুকুরে চুবিয়ে মারতে পারি তাকে। দেহ অসাড় হয়ে আসা অবধি শক্ত করে পানির নিচে মাথাটা চেপে ধরে রাখলেই হবে। কিংবা তার পিছু নিয়ে মেট্রো রেল স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে সুযোগমতো ধাক্কা দিয়ে লাইনের ওপরে ফেলে দিয়েও কাজ সারা যায়। লোকে ভাববে আত্মহত্যা করেছে। কিংবা নির্জন কোন রাস্তায় পেছন থেকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ঘিলু বের করে ফেলতে পারি।

    হঠাৎ করেই ক্যাথির শিঙ্কারের শব্দ বেড়ে গেল। উত্তেজনার চরম মুহূর্তে আছে নিশ্চয়ই এখন…পরক্ষণেই কানে এলে পরিচিত হাসিটা। ডাল ভাঙার শব্দ হলো এসময়। গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসছে দুজনে।

    লুকিয়ে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর হাত দিয়ে ডালপালা সরিয়ে বেরিয়ে এলাম আড়াল থেকে। চোখা ডাল লেগে বেশ কয়েক জায়গায় ছিলে গেছে।

    দু’চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে এখন। রক্তাক্ত হাত দিয়েই চোখের পানি মুছলাম।

    পার্ক থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম উদ্দেশ্যহীনভাবে। নিজেকে ঘরপালানো কোন অভিমানী কিশোর মনে হচ্ছে।

    .

    ৪.৬

    “জিন-ফিলিক্স?”

    রিসিপশন ডেস্ক ফাঁকা। আমার ডাক শুনেও কেউ বেরুলো না। খানিকক্ষণ ইতস্তত করে গ্যালারিতে ঢুকেই পড়লাম।

    শূন্য করিডোরগুলো পেরিয়ে অ্যালসেস্টিসের সামনে পৌঁছে গেলাম একটু পর। ছবিটার দিকে তাকিয়ে আবারো সেই আগের অনুভূতিই হলো। এখনও অ্যালিসিয়ার এই শিল্পকর্মের রহস্য অধরাই রয়ে গেছে আমার কাছে। ছবিটার মাধ্যমে কোন একটা বার্তা তো আলবত দিতে চাইছে সে, কিন্তু সেটা কি?

    এ সময় হঠাৎই একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করে চমকে উঠলাম, আগে চোখে পড়েনি। ছবিতে অ্যালিসিয়ার পেছনে অন্ধকারে একটা ছায়াবয়ব দেখা যাচ্ছে, তবে খুব ভালো করে খেয়াল না করলে বোঝাই যাবে না যে ওখানে কেউ আছে। নিশ্চয়ই এই লোকটাই অ্যালিসিয়ার ওপর নজর রাখা সেই আততায়ী।

    “কি চাই আপনার?”

    চমকে উঠলাম কণ্ঠস্বরটা শুনে। পেছনে ঘুরে দেখি জিন-ফিলিক্স দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে খুব একটা খুশি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। “এখানে কেন এসেছেন?”

    কেবলই কি আবিষ্কার করেছি সেটা তাকে বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। শেষ মুহূর্তে। কেন যেন মনে হচ্ছে সে বিষয়টাকে সহজভাবে নেবে না।

    বরং হাসলাম তার উদ্দেশ্যে। “আরো কয়েকটা প্রশ্ন ছিল আমার। এখন কি সময় দিতে পারবেন?”

    “আপনাকে যা বলার সব তো বলেছিই। আর আবার কি প্রশ্ন?”

    “আসলে নতুন কিছু তথ্য জানতে পেরেছি।”

    “কী রকম তথ্য?”

    “এই যেমন গতবার যখন আমাদের দেখা হয়েছিল, তখনও জানতাম না অ্যালিসিয়া আপনার গ্যালারি ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিল।”

    এবারে জবাব দেয়ার আগে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল জিন-ফিলিক্স। “কি বলছেন এসব?” দাঁতে দাঁত চেপে বলল অবশেষে।

    “ভুল কিছু তো বলিনি?”

    “এসবের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”

    “আমি অ্যালিসিয়ার সাইকোথেরাপিস্ট। আমার উদ্দেশ্যে আবারো তাকে স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে আনা, সেজন্যে প্রথমে তাকে কথা বলাতে হবে। এখন তো মনে হচ্ছে সে চুপ থাকলেই আপনার জন্যে সুবিধে।”

    “কি বোঝাতে চাচ্ছেন?”

    “অ্যালিসিয়া আপনার গ্যালারি ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিল, এটা যদি কেউ না জানে তাহলে তার ছবিগুলো যতদিন ইচ্ছে নিজের কাছে রাখতে পারবেন আপনি।”

    “আমাকে কিসের জন্যে দোষারোপ করছেন, বুঝতে পারছি না।”

    “আপনাকে মোটেও দোষারোপ করছি না আমি। যা সত্য সেটাই বলছি কেবল।”

    হাসলো জিন-ফিলিক্স। “সেটা দেখা যাবে। আমি আমার আইনজীবীর সাথে কথা বলবো। আপনার নামে গ্রোভে লিখিত অভিযোগও করবো।”

    “আমার মনে হয় না আপনার সেরকম কিছু করা উচিৎ হবে।”

    “কেন?”

    “কারণ এখনও আমি বলিনি যে অ্যালিসিয়ার গ্যালারি ছেড়ে দেয়ার কথাটা কিভাবে জেনেছি আমি।”

    “আপনাকে যে-ই কথাটা বলে থাকুক না কেন, ভুল বলেছে।”

    “অ্যালিসিয়া ভুল বলেছে?”

    “কিহ?” কয়েক মুহূর্তের জন্যে একদম থমকে গেল জিন-ফিলিক্স। “মানে…মানে ও কথা বলেছে?”

    “অনেকটা সেরকমই। আমাকে অ্যালিসিয়া তার ডায়েরিটা পড়তে দিয়েছেন।”

    “ওর… ডায়েরি?” কয়েকবার চোখ পিটপিট করলো সে, যেন তথ্যটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। “অ্যালিসিয়া ডায়েরি লেখে, এটা তো জানতাম না।”

    “ডায়েরি তো ব্যক্তিগত জিনিস, এ ব্যাপারে না জানাটাই স্বাভাবিক। গ্যাব্রিয়েল মারা যাবার আগ দিয়ে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে আপনাদের, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত লেখেছে সে ডায়েরিতে।”

    ইচ্ছে করেই আর কিছু বললাম না। আসলে বলার দরকারও ছিল না। পরিস্থিতি কিছুটা গুমোট হয়ে উঠেছে। জিন-ফিলিক্স একদম চুপ।

    “আপনার সাথে শিঘ্রই যোগাযোগ করব আমি।” একবার হেসে বেরিয়ে এলাম গ্যালারি থেকে।

    সোহো স্ট্রিটে ওঠার পর জিন-ফিলিক্সের সাথে ওভাবে কথা বলার জন্যে কিছুটা খারাপই লাগলো। কিন্তু কাজটা ইচ্ছে করেই করেছি আমি। আসলে দেখতে চাইছিলাম যে কথাগুলো শোনার পর তার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। কিছু একটা তো নিশ্চয়ই করবে সে।

    এখন শুধু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে আমাকে।

    ***

    হাঁটতে হাঁটতেই অ্যালিসিয়ার ফুপাতো ভাই পল রোজের নম্বরে ফোন দিয়ে দিলাম। তাদের বাসাতেই যাচ্ছি আমি। গতবার হঠাৎ উপস্থিত হয়ে যেরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, তার পুণরাবৃত্তি হোক সেটা চাই না। মাথার পেছনে এখনও হাত দিলে ব্যথা করে।

    কাঁধ দিয়ে ফোন চেপে ধরে একটা সিগারেট মুখে দিলাম। সবে একবার টান দিয়েছি এমন সময় ফোন ধরলো কেউ। মনে মনে আশা করছিলাম যাতে লিডিয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে না হয়। প্রার্থনাটা কাজে দিল।

    “হ্যালো?”

    “পল, আমি থিও ফেবার বলছি।”

    “ওহ, কি খবর? মা ঘুমোচ্ছে তো, তাই এভাবে ফিসফিসিয়ে কথা বলছি। আপনার মাথার ব্যথাটা কমেছে?”

    “হ্যাঁ, আগের চেয়ে অনেক কম এখন।”

    “বেশ, বেশ। হঠাৎ ফোন দিলেন যে?”

    “আসলে, অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে নতুন কিছু তথ্য শুনেছি। সেগুলো নিয়েই আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”

    “কী রকম তথ্য?”

    অ্যালিসিয়ার ডায়েরির ব্যাপারে তাকে জানালাম।

    “ও ডায়েরি লিখতো? এটা তো জানতাম না। কি লেখা সেখানে?”

    “সামনাসামনি কথা বললেই ভালো হবে। আজকে কি সময় দিতে পারবেন?”

    “আজকে বাড়িতে আপনি না এলেই ভালো,” কিছুক্ষণ পর দ্বিধামাখা কণ্ঠে বলল পল। “মা’র মেজাজ আসলে…ভালো না। তাছাড়া আপনাকে গতবার দেখে রেগে গিয়েছিল ভীষণ।”

    “হ্যাঁ, আমিও সেটাই ভাবছিলাম।”

    “আমাদের বাড়ির রাস্তার শেষ মাথার একটা পাব আছে। দ্য হোয়াইট বিয়ার

    “মনে আছে আমার। সেখানেই দেখা করি নাহয়। কখন আসবো?”

    “পাঁচটা নাগাদ? তখন কিছুক্ষণের জন্যে বের হতে পারবো মনে হয়।”

    এ সময় লিডিয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। ঘুম ভেঙে গেছে মহিলার।

    “রাখছি এখন। বিকেলে দেখা হবে।” ফোন কেটে দিল পল।

    ***

    কয়েক ঘন্টা পর রওনা দিলাম ক্যামব্রিজের উদ্দেশ্যে। কিছুদূর আসার পর পকেট থেকে ফোনটা বের করি, ম্যাক্স বেরেনসনকে ফোন দেয়াটা ঠিক হবে কি না ভাবছি। ইতোমধ্যে একবার ডায়োমেডেসের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সে। সুতরাং আমার কণ্ঠস্বর শুনে খুশি হবে না, এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আর কোন উপায় নেই।

    তানিয়া ধরলো ফোনটা। কণ্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমাকে চেনামাত্র কথা বলার সুর পাল্টে গেল তার। “আমার মনে হয় না…মানে, ম্যাক্স একটু ব্যস্ত। বেশ কয়েকটা মিটিং আছে আজকে।”

    “তাহলে পরে ফোন দেব।”

    “আসলে সেটা উচিৎ হবে কি না। আমি-”।

    ম্যাক্সের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম এসময়। তানিয়ার উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলছে সে। “আমি ফোনে এসব বলতে পারবো না”-কথাটা ম্যাক্সকে বলল তানিয়া।

    একরকম বাধ্য হয়েই তাই ফোন হাতে নিল ম্যাক্স। “জাহান্নামে যান, তানিয়াকে এটাই বলতে বলেছি।”

    “আপনার সাহস তো কম না। আমি প্রফেসরকে ফোন করে একবার জানিয়েছি, তাও আপনি…”

    “হ্যাঁ, সে বিষয়ে অবগত আমি। কিন্তু নতুন কিছু তথ্য হাতে এসেছে আমার, সেগুলোর সাথে আপনিও জড়িত। তাই ফোন না দিয়ে পারলাম না।”

    “মানে? কি জেনেছেন? কোথা থেকে জেনেছেন?”

    “অ্যালিসিয়ার ডায়েরি পড়েছি আমি। গ্যাব্রিয়েলের হত্যাকাণ্ডের আগের দিনগুলোর বিস্তারিত বিবরণ আছে সেখানে।”

    এবারে আর কিছু বলল না ম্যাক্স।

    “সেখানে আপনাকে নিয়ে কিন্তু বেশ বিস্তারিতই লিখেছে অ্যালিসিয়া। এটাও বলেছে যে তাকে ভালোবাসার কথা স্বীকার করেছিলেন আপনি। ভাবছিলাম-”।

    কেটে গেলো লাইন। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছে। টোপটা গিলেছে ম্যাক্স। এবারে শুধু দেখতে হবে যে তার প্রতিক্রিয়া কি হয়।

    মিথ্যে বলবো না, ম্যাক্সকে আসলে একটু ভয়ই পাই আমি। ঠিক যেমন তানিয়া তাকে ভয় পায়। তবে তানিয়া সেদিন আমাকে পলকে যে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল, সেটা করা হয়নি এখন পর্যন্ত। অ্যালিসিয়ার মায়ের দুর্ঘটনার পরের দিন কিছু একটা ঘটেছিল, এ বিষয়ে আমাকে আরো কিছু বলবে সে এমন সময় ম্যাক্স উপস্থিত হয় সেখানে। তখন হাসিমুখে তার দিকে এগিয়ে যায় তানিয়া। নাহ, ম্যাক্স বেরেনসনকে খাটো করে দেখাটা উচিৎ হবে না।

    খুব বড় একটা ভুল হবে সেটা।

    .

    ৪.৭

    ট্রেন লন্ডন ছেড়ে আসার কিছুক্ষণ পর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে লাগলো। এখন আর বড় বড় দালানকোঠা তেমন একটা চোখে পড়ছে না। সেই তাপমাত্রাও কমে গেছে অনেকখানি। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় কোটের কলার তুলে দিলাম। শীতল বাতাস ছুরির ফলার মত এসে বিঁধছে গালে। এর মধ্যেই পলের সাথে দেখা করার জন্যে পাবটার দিকে পা বাড়ালাম।

    দ্য হোয়াইট বিয়ার বেশ পুরনো, কয়েকবার সংস্করণ করা হয়েছে নিশ্চয়ই। তবুও প্রাচীন ভাবটা যায়নি। দুই তরুণ এই ঠাণ্ডার মধ্যেই পাবের বাইরের টেবিলে বসে আছে বিয়ারের গ্লাস নিয়ে, রক্ত গরম থাকলে যা হয় আর কি। হাতে সিগারেটও আছে। পাবের ভেতরটা বাইরের তুলনায় বেশ গরম। একপাশে গনগন করে আগুন জ্বলছে আদ্দিকালের ফায়ারপ্লেসে, আরামদায়ক এই উষ্ণতার উৎস।

    একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে আশপাশে তাকালাম পলের খোঁজে। বেশ কয়েকটা ছোট ছোট কেবিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে, একদম কোণার দিকে মুল বার কাউন্টার। আলো কম হওয়ায় অন্যদের চেহারা আসলে ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। গোপনে কারো সাথে দেখা করার জন্যে একদম আদর্শ জায়গা।

    অবশেষে একটা কেবিনে খুঁজে পেলাম পলকে। জায়গাটা ফায়ারপ্লেসের কাছাকাছি হওয়ায় বেশ গরম। তবে দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসার কারণে তার চেহারাটা এখনও দেখতে পাচ্ছি না। তাকে চেনার জন্যে অবশ চেহারা দেখার কোন দরকার নেই। বিশাল দেহটাই যথেষ্ট।

    “পল?”

    চমকে উঠে ঘুরে তাকালো সে। ছোট্ট কেবিনটায় বেমানান লাগছে তাকে।

    “ঠিক আছেন?” চেহারা দেখে মনে হচ্ছে খারাপ খবর শোনার জন্যে অপেক্ষা করছে। চেপে আমার জন্যে জায়গা করে দিল। আগুনের কাছাকাছি কেবিনটা বেছে নেয়ার কারণে তাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।

    “লন্ডনের থেকে এখানে ঠাণ্ডা অনেক বেশি।”

    “সরাসরি সাইবেরিয়া থেকে বাতাস আসে এখানে,” পল বলল। “ডায়েরির ব্যাপারে যেন কী বলছিলেন ফোনে?” আর তর সইছে না তার। “অ্যালিসিয়া ডায়েরি লিখতো এটা জানতাম না আমি।”

    “না জানারই কথা।”

    “সেটা আপনাকে পড়তে দিয়েছে?”

    মাথা নেড়ে সায় জানালাম।

    “কী লেখা সেখানে?”

    “আপনাদের শেষ যেবার দেখা হয়েছিল, সেসম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছে অ্যালিসিয়া। হত্যাকাণ্ডের দু’মাস আগের ঘটনা। কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়েছে আমার।”

    “কী রকম অসঙ্গতি?”

    “আপনি আমাকে যা বলেছিলেন তার সাথে অ্যালিসিয়ার ডায়েরির লেখার মিল নেই।”

    “কি বলছেন এসব?” হাতের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে উদ্বিগ্ন চোখে আমার দিকে তাকালো পল।

    “এই যেমন আপনি বলেছিলেন হত্যাকাণ্ডের আগে বেশ কয়েক বছর আপনার সাথে দেখা হয়নি অ্যালিসিয়ার।”

    “তাই বলেছিলাম নাকি?” পলের কণ্ঠে দ্বিধা।

    “আর ডায়েরিতে অ্যালিসিয়া লিখেছে গ্যাব্রিয়েল মারা যাবার কয়েক সপ্তাহ আগে আপনাদের দেখা হয়েছে। আপনি নাকি তার বাসায় গিয়েছিলেন।”

    দৃশ্যতই চুপসে গেল পল। এখন মনে হচ্ছে চুরি করে ধরা পড়ে গেছে এমন কোন বাচ্চা ছেলের সামনে বসে আছি। ভয় পেয়েছে সে, এটা পরিস্কার। বেশ কিছুক্ষণ কিছু বলল না সে। মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।

    “আমি কি একবার ডায়েরিটা দেখতে পারি?”

    মাথা ঝাঁকালাম জবাবে। “না। সেটা উচিৎ হবে না বোধহয়। তাছাড়া সাথে করে নিয়েও আসিনি আমি।”

    “তাহলে আমি কি করে বিশ্বাস করবো, আপনি সত্যিটাই বলছেন?”

    “মিথ্যে বলার কোন কারণ আমার নেই, পল। কিন্তু আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন, কেন?”

    “সেসবের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই, এজন্যে বলিনি।”

    “সম্পর্ক নেই কথাটা ভুল বললেন। অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে সবকিছু জানা দরকার আমার। আমি তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি।”

    “কিন্তু ওর সুস্থ হবার সাথেও তো এসবের কোন লেনদেন নেই। আমি তো ওর কোন ক্ষতি করিনি।”

    “আমি কিন্তু বলিনি যে আপনি তার ক্ষতি করেছেন।”

    “তাহলে?”

    “আপনিই নাহয় পুরোটা খুলে বলুন।”

    কাঁধ ঝাঁকালো পল। “লম্বা কাহিনী।” বলবে কি বলবে না এটা নিয়ে কিছুক্ষণ দোটানায় ভুগে সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেললো শেষমেষ। খুব দ্রুত কথা বলতে শুরু করলো এরপর। এতদিন চেপে রাখা কথাগুলো কাউকে বলতে পেরে যে শান্তি পাচ্ছে সে, তা বুঝতে পারছি। “খুব বাজে একটা সমস্যায় ফেঁসে গিয়েছিলাম। জুয়া খেয়ালার বদভ্যাস আছে আমার। সে কারণেই অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছি বিভিন্ন সময়ে। তাদের একজন এমনভাবে চাপ দিতে শুরু করে যে নগদ কিছু না দিলে হচ্ছিলোই না।”

    “তাই অ্যালিসিয়ার কাছে টাকা চেয়েছিলেন? দিয়েছিল সে কিছু?”

    “ডায়েরিতে কি লেখা?”

    “কিছু লেখা নেই এ ব্যাপারে।”

    এক মুহূর্ত ইতস্তত করে মাথা ঝাঁকালো পল। “না, দেয়নি। বলেছিল ওর কাছে টাকা নেই।”

    আবারো মুখের ওপরে মিথ্যে বলল সে। কেন?

    “তাহলে টাকাটা কিভাবে জোগাড় করেছিলেন?”

    “আমি-আমি আমাদের সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু টাকা তুলি। দয়া করে কথাটা কাউকে বলবেন না, মা জানতে পারলে তুলকালাম বাধিয়ে দিবে।”

    “লিডিয়াকে এসবে জড়ানোর কোন প্রয়োজন দেখছি না।”

    “আসলেই?” মুখে রঙ ফিরলো পলের। আগের চেয়ে স্বস্তিবোধ করছে এখন। “অনেক ধন্যবাদ।”

    “অ্যালিসিয়া কি কখনো আপনাকে এ ধরণের কিছু বলেছিল যে কেউ নজর রাখছে তার ওপরে?”

    গ্লাস নামিয়ে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো পল। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এরকম কিছু শোনেনি।

    অ্যালিসিয়ার সন্দেহের ব্যাপারে বিস্তারিত সবকিছু তাকে খুলে বললাম।

    মাথা ঝাঁকালো পল। “ওর মাথায় একটু সমস্যা ছিল আগে থেকেই।”

    “আপনার ধারণা পুরোটাই ওর কল্পনা?”

    “সেরকমটা হবার সম্ভাবনাই তো বেশি, তাই না?” পল কাধ নাচিয়ে বলল। “আপনার কি মনে হয়? পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না অবশ্য সম্ভাবনাটা, কেউ হয়তো আসলেই-”।

    “-নজর রাখছিল তার ওপরে,” পলের মুখের কথা টেনে নিয়ে বলি। “আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি তাহলে।”

    “নাহ। আসলে অ্যালিসিয়া আর আমার কখনোই খুব বেশি কথা হতো না। চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করতো ও। আমাদের পরিবারটাই অমন ছিল। অ্যালিসিয়া প্রায়ই বলতো, অন্যান্য বাসাবাড়িতে পরিবারের সবাই হাসিঠাট্টা করে, কথা বলে। কিন্তু আমাদের বাসায় কখনো অমনটা হতো না, এটা অদ্ভুত লাগতো তার কাছে। মা শুধু একের পর এক আদেশ দিয়ে যেত, আর আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম।”

    “আর অ্যালিসার বাবা? ভার্নন? তিনি কেমন ছিলেন?”

    “ভার্ননও খুব বেশি কথা বলতো না। ইভা মারা যাবার পর থেকেই একটু অন্যরকম হয়ে যায় সে। অ্যালিসিয়ার ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য।”

    “ওহ, একটা জিনিস আপনাকে জিজ্ঞেস করতে বারবার ভুলে যাই। তানিয়া বলেছিল কথাটা।”

    “তানিয়া বেরেনসন? তার সাথে কথা হয়েছে আপনার?”

    “খুব সামান্য। সে-ই আমাকে বলে আপনার সাথে কথা বলতে।”

    “তাই?” লাল হয়ে গেছে পলের গাল। “আমি…আমি আসলে খুব ভালো করে চিনি না তাকে। কিন্তু যতবার দেখা হয়েছে খুব ভালো ব্যবহার করেছে আমার সাথে। খুব ভালো মানুষ। দু’বার আমাদের বাসাতেও এসেছিল।” হাসি ফুটেছে পলের মুখে।

    তানিয়ার প্রেমে পড়েছে পল, ভাবলাম। ম্যাক্স বিষয়টাকে কিভাবে নেবে কে জানে।

    “তানিয়া কী বলেছে?”

    “বলছিল, আপনাকে অ্যালিসিয়ার মায়ের দুর্ঘটনার পরের দিনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে। বিস্তারিত শোনার সুযোগ পাইনি।”

    “ওহ, আমি জানি কি বলতে চেয়েছিল তানিয়া। আসলে ঘটনাটা বিচার চলাকালীন সময়ে আমিই বলেছিলাম তাকে। সেই সাথে কাউকে বলতে নিষেধ করে দেই।”

    “সেজন্যেই আপনাকে জিজ্ঞেস করতে বলেছে। তবে বলবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত আপনার। না বলতে চাইলে…”

    এক চুমুকে গ্লাস খালি করে ফেললো পল। “আসলে ওরকম কিছু না। কিন্তু অ্যালিসিয়াকে বুঝতে হয়তো সুবিধে হবে আপনার। ও…” চুপ হয়ে গেল সে।

    “বলুন।”

    “অ্যালিসিয়া…দুর্ঘটনার পরদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর ছাদে চলে যায় সে। আমিও যাই ওর পিছু পিছু। সারা রাত সেখানেই ছিলাম। ছোট থাকতেও এমনটা করতাম আমরা।”

    “ছাদে গিয়ে বসে থাকতেন?”

    দ্বিধা ভর করলো পলের চেহারায়। আমার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে কিছুক্ষণ। এরপর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

    “চলুন,” উঠে দাঁড়াল সে। “আপনাকে দেখাই।”

    .

    ৪.৮

    আমরা পৌঁছে দেখি পুরো বাড়ি অন্ধকার।

    “আসুন আমার সাথে,” পল বলে ফিসফিস করে।

    বাড়ির এক পাশে লোহার পুরনো মই লাগানো। জমে যাওয়া কাদার ওপর দিয়ে হেঁটে সেদিকে এগিয়ে গেলাম দুজনে। আমার জন্যে অপেক্ষা না করেই মই বেয়ে উঠতে শুরু করলো পল।

    খুব বেশি ঠাণ্ডা লাগছে এখন। এরকম সময়ে ছাদে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে কি না বুঝতে পারছি না। তবুও মইয়ে পা রাখলাম। তুষারের কারণে পিচ্ছিল হয়ে আছে।

    ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলাম। ছাদে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হাতের আঙুলগুলো রীতিমত অবশ হয়ে গেল, বরফ শীতল বাতাসের ঝাঁপটা তো আছেই। কিশোরসুলভ হাসি নিয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল পল। আকাশে এক টুকরো বাঁকা চাঁদ মেঘের আড়াল থেকে মাঝেমাঝে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। আলো বলতে ওটুকুই।

    হঠাই আমার দিকে পলকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যাই। হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় সে। ভেবেছিলাম ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলেই দিবে বুঝি। ডানদিকে ঘুরে যাই সাথে সাথে, কিন্তু শক্ত করে আমাকে ধরে ফেলে পল।

    “বেশি কিনারায় যাবেন না, মাঝে থাকুন,” বলে সে।

    মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি। আসলে হুট করে এখানে আসাটা একদমই উচিৎ হয়নি আমার। পলের আশপাশে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছি না কিছুতেই। নিচে নামার কথা বলবো এমন সময় পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আমাকে সাধলো সে। এক মুহূর্ত দ্বিধা করে হাত বাড়িয়ে দিলাম। সিগারেট মুখে দিয়ে জ্বালবার সময় আঙুলগুলো কাঁপছিল।

    চুপচাপ কিছুক্ষণ সিগারেট টানলাম দুজনে।

    “এখানেই বসতাম আমরা। আমি আর অ্যালিসিয়া। প্রায় প্রতিদিন।”

    “আপনাদের বয়স কেমন ছিল তখন?”

    “আমার আট, অ্যালিসিয়ার দশ।”

    “তাহলে তো মই বেয়ে ছাদে ওঠাটা বিপজ্জনক ছিল।”

    “হয়তো। কিন্তু তখন আমাদের কাছে সেরকম কিছু মনে হতো না। বয়স একটু বাড়ার পর এখানে বসে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম আর ড্রিঙ্ক করতাম আমরা।”

    কিশোরী অ্যালিসিয়ার চেহারা কল্পনা করার চেষ্টা করলাম। বাবা আর বিরক্তিকর ফুপির কাছ থেকে লুকিয়ে ছোট ভাইয়ের সাথে এখানে বসে থাকতো সে। হয়তো একা একা সময় কাটানোর জন্যে ছাদে আসতো, কিন্তু পলের জন্যে সেটা সম্ভব হতো না।

    “লুকোনোর জন্যে জায়গাটা আদর্শ,” বললাম।

    মাথা নাড়লো পল। “ভার্নন মামা মই বেয়ে ওপরে উঠতে পারতো না, ওজনের কারণে।”

    “আমারই তো কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ওই গাছটার পাতাগুলোর কারণে কিন্তু পা পিছলে যায়। একদম মইয়ের সাথে লেগে থাকে।”

    “জুই গাছ, সবুজ পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল পল। “বসন্তে ফুল ফুটবে। খুব সুন্দর ঘ্রাণ।”এক মুহূর্তের জন্যে স্মৃতির দেশে হারিয়ে গেল সে। “কেমন যেন…”

    “কি কেমন যেন?”

    “কিছু না,” কাঁধ নাচালো পল। “উঁই গাছটা নিয়েই ভাবছিলাম। অ্যালিসিয়ার মা, ইভা যখন মারা যায়, গাছভর্তি ফুল ছিল তখন।”

    তার দিকে তাকালাম। “আপনি আর অ্যালিসিয়া পরদিন এখানে এসেছিলেন, তাই না?”

    মাথা নেড়ে সায় জানালো পল। “মা আর ভার্নন মামা আমাদের খুঁজছিল। তাদের ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু জবাব দেইনি। লুকিয়েই থাকি এখানে। ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটে।”

    সিগারেট ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা হাসি দিল পল। “সেজন্যেই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি। আপনি তাহলে ক্রাইম সিনটা দেখতে পাবেন।”

    “ক্রাইম সিন?”

    জবাব দিল না পল, এখনও হাসছে।

    “কিসের কথা বলছেন, পল?”

    “আমার চোখে ভার্নন মামা সেদিন থেকেই অপরাধী, জানেন? তাকে কোনভাবেই ভালো মানুষ বলা যাবে না।”

    পলের হেঁয়ালি কথাবার্তা মাথায় ঢুকছে না।

    “অপরাধী?”

    “সেদিন রাতেই কাজটা করেছিল মামা।”

    “কোন কাজ?”

    “অ্যালিসিয়াকে খুন করেছিল।”

    মনে হলো যেন ভুল শুনছি। “অ্যালিসিয়াকে খুন করেছিল? মাথা ঠিক আছে তো আপনার?”

    জবাবে উঠোনের দিকে দেখালো পল। “মা’র সাথে সেদিন ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল ভার্নন মামা। গলা পর্যন্ত মদ গিলেছিল। মা বারবার চেষ্টা করছিল তাকে ভেতরে নিয়ে যেতে, কিন্তু পারেনি। অ্যালিসিয়ার উদ্দেশ্যে চেঁচাচ্ছিল মামা। খুব রেগে ছিল ওর ওপরে।”

    “অ্যালিসিয়া লুকিয়ে ছিল সেজন্যে? কিন্তু আগের দিন যে বাচ্চা মেয়েটার মা মারা গেছে, সে তো এমন করতেই পারে।”

    “বললাম না, ভার্নন মামা মানুষ ভাল ছিল না। ইভা মামীই ছিল তার জীবনের সবকিছু, ব্যস। সেজন্যেই কাজটা করেছিল।”

    “কি করেছিল?” ধৈৰ্য্য সামাল দেয়া কষ্টকর হয়ে উঠছে ক্রমশই। “একটু পরিস্কার করে বলুন সবকিছু।”

    “ইভা মামীকে কতটা ভালোবাসে এসব বলছিল বারবার চিৎকার করে। “কেন মারা গেল ইভা? কেন? ওর জায়গায় অ্যালিসিয়া কেন মরলো না?”

    ভাষা হারিয়ে ফেললাম কিছুক্ষণের জন্যে। “ওর জায়গায় অ্যালিসিয়া কেন মরলো না?”

    “হ্যাঁ, এটাই বলেছিল সেদিন।”

    “আর এখান থেকে সব শুনতে পায় অ্যালিসিয়া?

    “হ্যাঁ। এরপর আমার উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে অ্যালিসিয়া যে কথাটা বলে, সেটা আমি কখনো ভুলবো না। এর চেয়ে বাবা আমাকে খুন করতো।”

    এ মুহূর্তে বিস্ফোরিত নয়নে পলের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার। এরকম একটা কথা শোনার পর কি-ই বা বলা যেতে পারে?

    তবে আমি যা খুঁজছিলাম এতদিন, তা পেয়ে গেছি। ধাঁধার শেষ সূত্রটা।

    ***

    লন্ডনে ফেরার পথে গোটা সময় পলের কাছ থেকে শোনা কথাগুলো নিয়ে ভাবলাম। এখন বুঝতে পারছি, কেন অ্যালসেস্টিস নাটকটা দেখে এতটা প্রভাবিত হয়েছিল অ্যালিসিয়া। সেখানে অ্যাডমেতাস যেমন অ্যালসেস্টিসকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, তেমনি দুর্ঘটনায় ইভা মারা যাবার পর ভার্নন রোজও অ্যালিসিয়াকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর পথে। তবে পার্থক্যটা হলো অ্যালিসিয়ার মৃত্যুটা মানসিক। আর অ্যাডমেতাস একটু হলেও ভালোবাসতো অ্যালসেস্টিসকে। কিন্তু ভার্নন রোজের ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য নয়। ঠিকই বলেছে পল, সেদিন রাতে আসলেও খুন করেছিল লোকটা

    ‘এর চেয়ে বাবা আমাকে খুন করতো’-কতটা কষ্ট পেলে একজন মানুষ একথা বলে?

    এতদিনে ধাঁধার টুকরোগুলো ঠিক জায়গামত বসে যাচ্ছে। ছোটবেলায় এরকম মানসিক আঘাত ভবিষ্যতে যে কারো মানসিকতায় বিস্তর প্রভাব ফেলে-এটা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার। চিন্তা করে দেখুন বিষয়টা, আপনার নিজের বাবা বলছে যে আপনি মারা গেলেই তিনি খুশি হতেন। এরকম নিদারুণ মানসিক আঘাত ভাষায় প্রকাশ করা কোনভাবেই সম্ভব নয় মানুষের পক্ষে। এ কথা শুনে নিজের আত্মমর্যাদা চৌচির হয়ে যাবে যে কারো, আর অ্যালিসিয়া তখন নেহায়েতই একজন কিশোরী। কষ্টটা গিলে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না তার। কিন্তু এরকম গ্লানি বা ক্রোধ ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না। পরিণত বয়সে ঠিকই কোন না কোন কাজের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে। অ্যালিসিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। তবে তার প্রতিশোধের আগুনের শিকার হয়েছে গ্যাব্রিয়েল বেরেনসন, যে লোকটাকে ভালোবাসতো সে, যার প্রতি নিজের জীবন সঁপে দিয়েছিল।

    যখন গ্যাব্রিয়েলের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পাঁচবার গুলি চালায় অ্যালিসিয়া, তখন কিন্তু কারণটা জানা ছিল না তার। অজান্তেই কাজটা করে

    আঁধার কেটে লন্ডনের দিকে ছুটে চলেছে ট্রেন। অবশেষে, ভাবলাম, অবশেষে আমি জানতে পেরেছি কিভাবে অ্যালিসিয়ার নাগাল পাবো।

    এবারে আসল কাজ শুরু করা যাবে।

    .

    ৪.৯

    চুপচাপ অ্যালিসিয়ার সামনে বসে আছি।

    ইদানীং আর এই নীরবতাটুকু আগের মত অসহ্য লাগে না। মানুষের স্বভাবই এমন, সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারে। সত্যি বলতে ছোট ঘরটায় অ্যালিসিয়ার মুখোমুখি দীর্ঘ সময় বসে থাকাটা স্বাভাবিকই মনে হয় এখন।

    নির্দিষ্ট ছন্দে হাতের মুঠো একবার খুলছে আবার বন্ধ করছে অ্যালিসিয়া, অনেকটা হৃৎস্পন্দনের মত। আমার দিকে ঘুরে থাকলেও তার দৃষ্টি জানালার বাইরে। বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ আগে। মেঘ সরে গিয়ে বিবর্ণ আকাশ দেখা যাচ্ছে অল্পসময়ের জন্যে, আবার কিছুক্ষণ পর সেটুকুও ঢাকা পড়ছে।

    “আপনার ফুপাতো ভাইয়ের কাছ থেকে একটা ঘটনার কথা জানতে পেরেছি।”

    যতটা সম্ভব নরম সুরে বললাম কথাটা। অ্যালিসিয়া কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না, তাই কথা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

    “পল বলেছে যে আপনার মা মারা যাবার পরদিন খুব খারাপ একটা কথা বলেছিলেন মি, ভার্নন রোজ। উত্তেজিত অবস্থায় এক পর্যায়ে আপনার মৃত্যু কামনা করেছিলেন তিনি।”

    ভেবেছিলাম কথাটা শোনার পর হয়তো কোন না কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে অ্যালিসিয়া, কিন্তু সেরকম কিছু হলো না।

    “আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, পল এই কথাটা আমাকে জানিয়ে ঠিক করেনি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনাকে সাহায্য করার আশাতেই তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।”

    এবারেও মুখ খুলল না অ্যালিসিয়া।

    “আপনার একটা বিষয় জানা উচিৎ, তাহলে বোধহয় বুঝতে সুবিধা হবে। সত্যটা হচ্ছে, আমি আপনার পরিস্থিতি খুব ভালো করেই অনুধাবন করতে পারছি। কারণ ছোটবেলায় আমাকেও একই রকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা দুজনেই অল্প বয়সে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু খুব শিঘ্রই আবিষ্কার করতে হয়েছে যে ওভাবে ছুটে পালানোই সব সমস্যার সমাধান নয়। কিছু কিছু ব্যাপার চাইলেও ভোলা যায় না। আপনার শৈশব কতটা কঠিন কেটেছে তা জানি আমি। ব্যাপারটার গুরুত্ব আপনাকে বুঝতে হবে। আপনার বাবা মানসিকভাবে হত্যা করেছিলেন আপনাকে।”

    এবারে প্রতিক্রিয়া দেখলাম তার মাঝে

    মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো অ্যালিসিয়া। সম্ভব হলে দৃষ্টিবাণে সেখানেই ছারখার করে ফেলত। তবে চোখ সরিয়ে নিলাম না আমি। ওর খুনে দৃষ্টির দিকে নির্মোহ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলাম।

    “অ্যালিসিয়া। এটাই আমাদের শেষ সুযোগ। প্রফেসর ডায়োমেডেস জানেন না, আমি এখানে এসেছি। এভাবে যদি একের পর এক নিয়ম ভাঙতে থাকি তাহলে চাকরি হারাতে হবে। সেজন্যেই আজকের পরে আমাদের আর দেখা হবে না। বুঝতে পারছেন কি বলছি?”

    দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে দেখেই কথাগুলো বললাম। অ্যালিসিয়ার কাছ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাবার আশায় নয়। আসলে কানাগলিতে ঘুরপাক খেতে খেতে অতিষ্ঠ আমি। কিন্তু এসময়…

    প্রথমে ভাবলাম হয়তো কল্পনা করছি বা ভুলভাল শুনছি। অবাক চোখে তাকাই অ্যালিসিয়ার দিকে। বুকের ভেতরে কেউ হাতুড়িপেটা করছে। মুখ শুকিয়ে কাঠ।

    “আপনি-আপনি কি…কিছু বললেন?”

    আবারো নীরবতা নেমে আসলো ঘরটায়। নিঃসন্দেহে ভুল হয়েছে আমার। পুরোটাই কল্পনা করেছি। কিন্তু তখনই…আবারো ঘটলো ব্যাপারটা।

    খুব ধীরে ধীরে নড়ছে অ্যালিসিয়ার ঠোঁট, যেন কথা বলতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে।

    “কি…” ফিসফিসিয়ে বলল সে। এরপর চুপ করে থাকলে কিছুক্ষণ। “কি..কি-”

    কয়েক মুহূর্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম দু’জন। আমার চোখ ভিজে উঠেছে। এই অশ্রু অবিশ্বাসের, কষ্টের আর কৃতজ্ঞতার।

    “কি চাই আমি? আমি চাই আপনি কথা বলুন…আমার সাথে কথা বলুন, অ্যালিসিয়া-”।

    আমার দিকে তাকিয়েই রইলো অ্যালিসিয়া। কিছু একটা ভাবছে। এরপর সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিল।

    “ঠিক আছে,” খুব ধীরে মাথা নেড়ে বলল সে।

    .

    ৪.১০

    “কী বলেছে?”

    বিস্ফোরিত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন প্রফেসর ডায়োমেডেস। ক্লিনিকের বাইরে একসাথে ধূমপান করতে বেরিয়েছিলাম আমরা। তিনি যে যারপরনাই বিস্মিত, সেটা হাত থেকে চুরুট পড়ে যেতে দেখেই বুঝেছি। উত্তেজনায় রীতিমত টগবগ করে ফুটছেন। “কথা বলেছে সে? অ্যালিসিয়া আসলেও কথা বলেছে?”

    “হ্যাঁ।”

    “অসাধারণ! তাহলে তুমি ঠিকই ছিলে। ভুলটা হয়েছে আমার।”

    “আরে নাহ, এভাবে বলবেন না। আপনার অনুমতি ছাড়া অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা করাটা আমার উচিৎ হয়নি, প্রফেসর। মাফ করবেন। কেন যেন মনে হচ্ছিল-”

    হাত নেড়ে আমার কথা উড়িয়ে দেন ডায়োমেডেস। “তোমার মন যেটা বলছিল, সেটাই করেছে। আমি হলেও এরকমটাই করতাম, থিও। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকাটাই সবথেকে জরুরি।”

    এই অগ্রগতিকেই বিজয় ধরে নিতে রাজি নয় আমি। “আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি। এটা ঠিক যে অ্যালিসিয়ার কথা বলাটা আসলেও বিশাল একটা অগ্রগতি। কিন্তু এই নিশ্চয়তা এখনও দেয়া সম্ভব নয় যে সে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না।”

    মাথা নেড়ে আমার কথার সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন ডায়োমেডেস। “ঠিক বলেছো। আমাদের অতিসত্বর একটা ফর্মাল রিভিউয়ের ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে। এছাড়া জুলিয়ানের মত ট্রাস্টের কাউকে প্যানেলে নিয়ে অ্যালিসিয়ার সাথে যদি একটা বৈঠকের আয়োজন করা যায়, যেখানে-”

    “একটু বেশি তাড়াতাড়িই সব ভেবে ফেলছেন, প্রফেসর। আমরা আরেকটু অপেক্ষা করে দেখি। এরপর নাহয় ঘোষণা দেয়ার কথা ভাববো। আপাতত ধৈৰ্য্য ধরা যাক।”

    মাথা নাড়লেন ডায়োমেডেস। আমার কথা বুঝতে পারছেন। “সাব্বাশ থিও, তোমাকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে আমার,” কাঁধে হাত রেখে একদম মন থেকে বললেন কিছুক্ষণ পর।

    একজন বাবা তার ছেলেকে বাহবা দিলে যেরকম গর্ব অনুভব হয়, আমারো সেরকমই লাগছে এখন। আসলে অবচেতন মনে আমি নিজেও চাচ্ছিলাম আমার কাজের মাধ্যমে ডায়োমেডেসকে খুশি করতে, তার আস্থার প্রতিদান দিতে। তাই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। সেটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য অন্যদিকে তাকিয়ে সিগারেট ধরালাম। “এখন কি করবো?”

    “যা করছে সেটা চালিয়ে যাবে। নিয়মিত দেখা করবে অ্যালিসিয়ার সাথে।”

    “আর যদি স্টেফানি জানতে পারে?”

    “স্টেফানিকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না, ওকে আমি সামলাবো। এখন তোমার একমাত্র লক্ষ্য অ্যালিসিয়া। সেদিকেই মনোযোগ দাও।”

    গুরুর আদেশ শিরোধার্য।

    ***

    পরবর্তী সেশনে অ্যালিসিয়ার সাথে অনর্গল কথা বললাম। আসলে, অ্যালিসিয়াই বলেছে যা বলার, আমি কেবল শুনে গেছি। এতদিনের মৌনতার পর অ্যালিসিয়ার মুখ থেকে কথা শুনতে আসলেও অদ্ভুত লাগছিল। প্রথমদিকে একটু ইতস্ততবোধ করলেও ধীরে ধীরে জড়তা একদম কেটে যায় তার। শুনলে মনেই হবে না, এই মানুষটাই এতদিন চুপ করে ছিল। অবশ্য এক অর্থে, মুখ কখনোই বন্ধ করেনি সে।

    সেশন শেষে আমার অফিসে ফিরে এলাম। ডেস্কে বসে অ্যালিসিয়ার কাছ থেকে সদ্য শোনা কথাগুলো দ্রুত লিখে ফেললাম, যাতে পরে ভুলে না যাই। চেষ্টা করলাম যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে সবকিছু লিখতে।

    গল্পটা যে অসাধারণ, সেটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। আপনারা নিজেরাও সেটা বুঝতে পারবেন।

    তবে বিশ্বাস করা না করা আপনাদের মর্জি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাংলাদেশ : এ লিগ্যাসি অব ব্লাড (রক্তের ঋণ) – অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস
    Next Article ট্রেইটরস ইন দ্য শ্যাডোস : এম্পায়ার অব দ্য মোগল -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }