Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প143 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ধাওয়া – ১০

    দশ

    পাশাপাশি ঘোড়া ছুটিয়ে টিলাগুলোর মাঝ দিয়ে রেল ট্র্যাকে পৌঁছল ম্যাকেনলি আর মিলার্ড। সমতলভূমিতে সোজা চলে গেছে রেললাইন, দেখে মনে হয় রুলারে টেনে সযত্নে দুটো লাইন এঁকেছে কেউ। জমি দেখে গম্ভীর চেহারায় মাথা নাড়ল ম্যাকেনলি।

    ‘সুবিধা হবে না।’

    ‘আমার তো উল্টো মনে হচ্ছে,’ দ্বিমত পোষণ করল মিলার্ড। ‘উঁচু-নিচু পাথুরে জমির চেয়ে এখানে ঘোড়া ছোটানো কম বিপজ্জনক, সেজন্যই তো এখানে এলাম।’

    ‘হ্যাঁ। কিন্তু সমতল জমিতে পূর্ণ গতিতে ট্রেন ছোটাবে এঞ্জিনিয়ার, উঠতে গেলে সাংঘাতিক ঝুঁকি নিতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় ট্রেন যখন কোনও ঢাল বেয়ে উঠবে তখন চেষ্টা চালালে।’ হাসি ফুটে উঠল আউট-লর কোঁচকানো চেহারায়। ‘জানোই তো, মিলার্ড, না জেনে কথা বলছি না।’

    পাল্টা হাসল মিলার্ড। ‘আমি উত্তেজনায় তোমার কীর্তিকলাপ ভুলে মেরে দিয়েছিলাম! ঠিক আছে, তোমার পছন্দের জায়গাতেই চলো।’

    ‘ওখানে,’ একমাইল মত দূরে ফেলে আসা রাস্তায় একটা ঢাল দেখাল আউট-ল।

    একসঙ্গে নীরবে ঘোড়া ছোটাল ওরা। মিলার্ড টের পাচ্ছে মাঝে মাঝেই ওর দিকে তাকাচ্ছে ম্যাকেনলি উত্তেজিত চেহারায়। ঢালের আধমাইলের মধ্যে পৌঁছে মুখ খুলল আউট-ল, ‘একটা কথা বলা দরকার, জো।’

    ‘বলো।’

    ‘মেয়রকে ডাস্টি রোডসের কথাটা বানিয়ে বলিনি, জো, রোডস সত্যি ওভাবে মারা গেছে। সেদিন ওর পরিণতি দেখার পরই ট্রেন-ডাকাতি ছেড়ে ব্যাংক-ডাকাতি ধরেছিলাম আমি।’ দীর্ঘ সময় নিল আউট-ল নিজেকে সামলে নিতে। অবশেষে পুরানো দুঃসহ স্মৃতি মন থেকে ঝেড়ে ফেলে তাকাল মিলার্ডের দিকে, বলল, ‘সেই শেষবার চলন্ত ট্রেনে উঠেছিলাম। আজ আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি ব্যর্থ হই, আমি চাই তুমি যাতে কারণটা বোঝো।’

    ঘোড়া কাছে সরিয়ে এনে ম্যাকেনলির কাঁধে হাত রাখল মিলার্ড, ধীর কিন্তু নিশ্চিত গলায় বলল, ‘কোনও বিপদ হবে না, ম্যাক। আমি আগে ট্রেনে উঠব, তারপর তোমাকে দরকার হলে টেনে তুলে নেব। বিশ্বাস করো আর না করো, আমি তোমার মত কথা বলি না; কথা দিচ্ছি ঝামেলা হবে না উঠতে।’

    দূর থেকে ট্রেনের হুইসলের অস্পষ্ট শব্দ পাওয়া গেল হঠাৎ। অসম্ভব গম্ভীর দেখাচ্ছে প্রৌঢ় আউট-লকে। বলল, ‘এত তাড়াতাড়ি আসবে ভাবিনি! ঢালের কাছে ট্রেনের আগে পৌছতে না পারলে বিপদ হবে, স্পার দাবাও!’

    অস্বাভাবিক দ্রুতগতি তুলে সমতল ভূমির ওপর দিয়ে ট্রেন ছোটাচ্ছে এঞ্জিনিয়ার। ঢালে সহজে ওঠার জন্যই বাড়তি গতি তুলছে সম্ভবত। ওরা ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে দেখে মজা পেয়েছে লোকটা, বোঝা গেল সে হুইসল বাজানোয়। ট্রেনের ধাতব হুঙ্কার কাছে চলে আসছে, গতি বাড়ানোর জন্য আতঙ্কিত ঘোড়াগুলোকে তাগাদা দিল ওরা। তবুও এগিয়ে আসছে ধাতব দানব।

    ঢালের ওপর উঠতে শুরু করেছে মিলার্ড আর ম্যাকেনলি, কিন্তু সবচেয়ে খাড়া অংশটা এখনও বেশ দূরে। ট্রেনের গতি খানিকটা কমেছে, তবে এখনও যথেষ্ট নয়। লাফ দিয়ে উঠতে গেলে মারাত্মক বিপদের সম্ভাবনা। ধীরে ধীরে ওদের পেরিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করল ট্রেনের এঞ্জিন।

    উদোম গায়ে ঘর্মাক্ত শরীরে কয়লা মেখে ভূত হয়ে আছে ফায়ারম্যান। কোদাল তুলে বিজয়ীর ভঙ্গিতে দোলাল সে মিলার্ডদের দিকে তাকিয়ে। এঞ্জিনিয়ারও পিছিয়ে যেতে দেখেছে ওদের, হুইসল বাজাল মনের আনন্দে। কালো ধোঁয়ার পেছনে হারিয়ে যেতে দেখল অশ্বারোহীদের।

    টেণ্ডারের পিছু পিছু এক্সপ্রেস কারও ওদের ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল। এক্সপ্রেস কারের দরজা বন্ধ, ওগুলোর পেছনে একলক্ষ ডলার পাহারা দিচ্ছে গার্ডের দল। লাল রঙের ফায়ার এঞ্জিন বয়ে ওদের পাশ কাটাল একটা ফ্ল্যাট কার। ট্রেনের পেছনে রয়েছে প্যাসেঞ্জার বগি, ওগুলো এগিয়ে আসছে ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তুলে।

    ঢালের খাড়া অংশে পৌছে গেছে ট্রেন, যত গর্জনই করুক গতি ধরে রাখতে পারছে না এঞ্জিন। ছুটতে চাইছে না ক্লান্ত ঘোড়াগুলোও। মিলার্ড আর ম্যাকেনলি উন্মত্তের মত রাস দুলিয়ে রুক্ষ এবড়োখেবড়ো জমির ওপর দিয়ে বিপজ্জনকভাবে ছোটাচ্ছে ওগুলোকে। চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছে। জানে, হাতে আর সময় নেই, এখনই ট্রেনে উঠতে না পারলে কখনোই আর পারবে না।

    শেষ কোচের পেছনে লোহার প্ল্যাটফর্ম প্রায় ওদের পাশে পৌঁছে গেছে, অবজার্ভেশন প্ল্যাটফর্মটার যতখানি সম্ভব কাছে ঘোড়া সরিয়ে আনল মিলার্ড। স্টিরাপ থেকে পা জোড়া মুক্ত করে লম্বা একটা দম নিল। তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি জড় করে ঝাঁপ দিল। দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলল, ‘না পারলে কিন্তু ডাস্টি রোডসের অবস্থা হবে!’

    ম্যাকেনলি বিস্ফারিত চোখে দেখল মিলার্ডের দেহ শূন্যে উঠে গেছে। ছুটন্ত ঘোড়া থেকে দুরন্ত জোরে ছুটে চলা ট্রেনে লাফিয়ে পড়েছে পাগলা ল-ম্যান! শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। মুহূর্তখানেক পর তাকিয়ে দেখল রেলিঙ জাপটে ধরে এক ঝাঁকিতে নিজেকে অবজার্ভেশন প্ল্যাটফর্মের ওপর তুলে ফেলেছে মিলার্ড।

    ওর চেয়ে ফুট দু’এক দূরে চলে গেছে প্ল্যাটফর্ম, অনুভব করল ম্যাকেনলি, গতি বেড়ে যাওয়ায় আরও দূরে সরে যাবে ট্রেন। ‘লাফ দাও!’ প্রচণ্ড ধাতব গোঙানির মধ্যেও শুনতে পেল মিলার্ডের চিৎকার।

    একমুহূর্ত পর দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে শূন্যে ঝাঁপ দিল আউট-ল প্ল্যাটফর্ম লক্ষ্য করে। দূরত্ব বড় বেশি, রেলিঙের নাগাল পাবে না বুঝে আতঙ্কে সাদা হয়ে গেল তার চেহারা। মনে হচ্ছে অনন্তকাল শূন্যে ঝুলে আছে সে। পতন শুরু হতেই মরিয়া হয়ে দু’হাত সামনে বাড়াল আউট-ল। স্পষ্ট বুঝতে পারছে কী পরিণতি ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ট্র্যাকে পড়ে থাকা লাশটা লোকে চিনতে পারবে? মনে হয় না!

    রেলিঙের ওপর পেট ঠেকিয়ে সামনে ঝুঁকে পড়ল মিলার্ড। দু’হাতে আঁকড়ে ধরে ফেলল আউট-লর ডান হাত। অমানুষিক গায়ের জোরে টান দিয়ে বিশালদেহী ম্যাকেনলিকে নিয়ে এল গায়ের কাছে। পা দুটো ঝুলছে ট্র্যাক থেকে দু’ইঞ্চি ওপরে, দ্রুত পিছিয়ে যাওয়া পাথরগুলোর দিকে চোখ পড়তেই গায়ের জোর ফিরে পেল আউট-ল। বাঁচতেই হবে। বাম হাতে রেলিঙ ধরল সে শক্ত মুঠোয়। মিলার্ডের সাহায্য নিয়ে উঠে এল প্ল্যাটফর্মের ওপর।

    শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য মিনিট পাঁচেক বসে বসে বিশ্রাম নিল ওরা, তারপর ম্যাকেনলি উঠে দাঁড়াল মিলার্ডের কাঁধে ভর করে। হাসি মুখে বলল, ‘অভ্যেস না থাকলে পুরানো কৌশলে জঙ পড়ে যায়!’

    মিলার্ড জবাব দেয়ার আগেই কোচের পেছন দরজা সশব্দে খুলে গেল, ইউনিফর্ম পরা দু’জন ক্রু দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এল প্ল্যাটফর্মে। দু’জনেই সশস্ত্র। বেঁটে লোকটা মিলার্ডের পেটে শটগান ঠেকিয়ে ধমকে উঠল নাকি স্বরে, ‘মাথার ওপর হাত তোলো। কী হলো, তোলো বলছি! হ্যাঁ, দু’জনেই!’

    বেঁটের পাশে দাঁড়ানো লম্বা বুড়োর চেহারা হাসি হাসি, কিন্তু প্রাচীন একটা ভয়ঙ্কর দর্শন সিক্সগান নিষ্কম্প হাতে ধরে আছে সে মিলার্ড আর ম্যাকেনলির মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গায়। চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে একটু বেচাল দেখলেই নির্দ্বিধায় কামানের গোলা ছুঁড়বে। ওদের হাত তুলতে দেরি দেখে মোলায়েম গলায় বলল, ‘কোনও চালাকি নয়, হাত তোলো তো দেখি!’

    ‘শোনো; আমি মার্শাল জো মিলার্ড। এঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে জরুরী কথা আছে আমার,’ হাত না উঠিয়ে বোঝানোর চেষ্টা চালাল মিলার্ড।

    ‘চোপ!’ পেটে শটগানের গুঁতো দিয়ে ধমকে উঠল বেঁটে ক্রু। ‘মার্শাল হলে তোমার ব্যাজ গেল কোথায়? ভেবেছ তোমাদের মতলব আমি বুঝিনি, না? তোমরা বেআইনীভাবে উঠেছ ট্রেন লুঠ করতে।’

    বুড়ো টিকেট চেকার এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছিল ম্যাকেনলির চেহারা, সঙ্গীর কথাগুলো শুনেই হয়তো মনে পড়ল তার। সিক্সগান নামিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘তুমি…তোমাকে আমি চিনেছি, বিগ জিম ম্যাকেনলি! মিসৌরিতে আমার ট্রেনে ডাকাতি করেছিলে, আটাশ হাজার ডলার লুঠ করে নিয়ে ভেগেছিলে। আমি ছিলাম ওই ট্রেনের গার্ড। না, তোমাকে চিনতে পারব আমি একশো বছর পরে দেখলেও, কোনও ভুল হবে না! সে-বার ভয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছিলাম!’

    ‘এবার যাতে না ভেজে সেদিকে লক্ষ রেখো,’ খক খক করে নাকি স্বরে হাসল বেঁটে ক্রু। মিলার্ডদের দিকে তাকিয়ে সঙ্গীর উদ্দেশে বলল, ‘ওদের হাত তুলতে বলো, ট্র্যাভার্ন, আমার কিন্তু ট্রিগারে আঙুল নিশপিশ করছে।’

    মূল্যবান সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। দ্রুতগতিতে ছুটছে ট্রেন, ওর বন্ধুর খুনিরা কাছে চলে আসছে, অস্থির হয়ে উঠল মিলার্ড। মাথার ওপর হাত উঠিয়ে বলল, ‘ট্রেন-ডাকাতি হবে, আমরা ডাকাতি…’

    পেটে শটগানের ব্যারেলের খোঁচা দিয়ে ওকে থামিয়ে দিল বেঁটে ক্রু, রূঢ় কণ্ঠে বলল, ‘আমার ট্রেনে কোনও ডাকাতি হবে না। একটু উল্টোপাল্টা দেখলেই দু’টুকরো করে দেব!’

    ‘চলো, ওদের ভেতরে নিয়ে আটকে রাখি,’ বলল বুড়ো ট্র্যাভার্ন, প্রোগ্রেসে পৌঁছে এদের আসল মার্শালের হাতে তুলে দেয়া যাবে। ডাকাতি ঠেকিয়েছি সেজন্য রেলরোড বোধহয় আমাদের মেডেল দেবে। তাছাড়া ব্যাংকের পুরস্কার আর বিগ জিমের রিওয়ার্ড মানি তো পাবই।’

    ‘কিন্তু রাখবে কোন্ জাহান্নামে, জায়গা কই?’ বেঁটে গার্ডের ভ্রূ কুঁচকে গেল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে হাসিতে ভরে উঠল তার মুখ, নিজেই নিজের প্রশ্নের জবাব দিল। ‘টয়লেট! ট্রেনের টয়লেটের চেয়ে উপযুক্ত জায়গা আর হয় না, ওদের জন্য মানানসই পরিবেশ আছে ওখানে।’

    কোচের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে আছে যাত্রীরা। অসহায় ক্ষিপ্ত মিলার্ডদের ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাওয়া হলো ওদের সামনে দিয়ে। দু’একজন প্রশ্ন তুলতেই হাতের ইশারায় তাদের থামিয়ে বুড়ো ট্র্যাভার্ন বলল, ‘কেউ ভয় পাবেন না, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এরা ট্রেন-ডাকাত, ধরা পড়ে গেছে আমাদের হাতে। বিপদের কোনও সম্ভাবনা নেই। আপনারা দয়া করে পথ ছাড়ুন।’

    ‘পোড়া কপাল নিয়ে জন্মেছ তুমি,’ ঘড়ঘড়ে গলায় ম্যাকেনলির উদ্দেশে বলল মিলার্ড। ‘ভাগ্য আর কাকে বলে, দুনিয়ায় এত জায়গা থাকতে এই ট্রেনেরই একজন তোমার পোড়ামুখ দেখে চিনে ফেলল।’

    ‘সেটা কি আমার দোষ না যে চিনেছে তার?’

    ‘তোমার। ওই ট্রেনের বদলে অন্য ট্রেনে ডাকাতি করলে তো আর এমন বিপদ হত না।’

    ‘তারমানে ডাকাতি করাকে এখন আর তুমি খারাপ চোখে দেখছ না?’

    মিলার্ড রেগে উঠে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু পিঠে বেঁটে গার্ডের শটগানের গুঁতো খেয়ে চুপ হয়ে গেল। ম্যাকেনলির চেহারায় খুশির আভাস দেখে গা জ্বলে গেল মিলার্ডের। লোকে এখনও তাকে মনে রেখেছে দেখে মনে মনে বোধহয় নিজেকে বাহবা দিচ্ছে আউট-ল!

    কোচের শেষ মাথায় পৌঁছে মিলার্ড আর ম্যাকেনলির গানবেল্ট খুলে নেয়া হলো। লাগেজ র‍্যাকে ওগুলো ঝোলাতে দেখে বাচ্চা একটা ছেলে বেঁটে গার্ডকে জিজ্ঞেস করল, ‘ওরা সত্যিকার ট্রেন-ডাকাত, বইয়ে যেমন পড়েছি সেরকম?’

    ‘হ্যাঁ,’ জবাব দিল ট্র্যাভার্ন, ‘তবে ভয় পেয়ো না, ওরা আর কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।’

    ‘টয়লেট’ লেখা একটা দরজা খুলে বন্দিদের ভেতরে ঢুকতে বাধ্য করল গম্ভীর চেহারার বেঁটে গার্ড। দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি আটকে বাইরে থেকে বলল, ‘একটু বিশ্রাম নাও, প্রোগ্রেসে পৌঁছতে আর বেশিক্ষণ লাগবে না। কথা দিচ্ছি, তোমরা ওখানে দারুণ একটা সংবর্ধনা পাবে!’

    দরজার ওপার থেকে ওরা বুড়ো ট্র্যাভার্নের নির্দেশ শুনতে পেল। বুড়ো বলছে, ‘দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দাও, হক। শটগান তৈরি রেখো, ওরা পালাবার চেষ্টা করতে পারে। যদি সন্দেহ হয়, গুলি করবে। চিন্তাভাবনা করে নিজের বিপদ ডেকে এনো না, এরা সাংঘাতিক মানুষ।’

    ‘চিন্তা কোরো না, ট্র্যাভার্ন, আমার হাত থেকে পালাতে পারবে না যত চেষ্টাই করুক,’ জবাব দিল বেঁটে গার্ড।

    ‘তা হলে থাকো, প্রোগ্রেসে যারা নামবে তাদের টিকেট চেক করে আসি।’

    গায়ে প্রায় গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিলার্ড আর ম্যাকেনলি। এমনিতেই টয়লেটে জায়গা অত্যন্ত কম, তার ওপর প্রায় পুরোটা জুড়ে আছে কমোড আর একটা বেসিন। ওগুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী মোটা পাইপটাও অনেকখানি জায়গা মেরে দিয়েছে। দেয়াল থেকে চৌকো একটা ট্যাঙ্ক ঝুলছে কমোডের ওপর। ট্যাঙ্কের গা থেকে বেরিয়ে এসেছে শেকল। শেকলের শেষ মাথায় এক সময় আস্ত একটা কাঠের হ্যাণ্ডেল ঝুলত, এখন অর্ধেকটা ঝুলছে। ট্রেনের দুলুনির সঙ্গে প্রতিবার এসে বাড়ি লাগাচ্ছে ম্যাকেনলির ঘাড়ে। অতিষ্ঠ হয়ে কমোডের ওপর বসে পড়ে আত্মরক্ষা করল আউট-ল, নীচু স্বরে গাল বকছে প্রাণ খুলে।

    ঠাসাঠাসির কারণে বেসিনের ওপর ঝুঁকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে মিলার্ড। রাগে লাল চেহারায় বলল, ‘কিছুই করার নেই। ব্যাংকের এক লক্ষ ডলার লুঠ হয়ে যাচ্ছে আর আমরা কসাইয়ের দোকানে নিয়ে যাওয়া গরুর মত আটকা পড়ে গেছি! পনেরো বছর আগে ওই মিসৌরির ট্রেনটা ডাকাতি না করলে কী হত?

    ‘এক কথা কতবার বলবে,’ ঘোঁত করে উঠল আউট-ল, ‘আমি ওই ট্রেন- ডাকাতি না করলে এক ঘরে থাকার সুযোগ পেতে? আমার মত নামকরা লোকের সঙ্গে ঘর ভাগাভাগি করে থাকতে পারা তো সৌভাগ্য!’

    ‘ঘর না, টয়লেট,’ রাগ দমিয়ে শান্ত স্বরে বলল মিলার্ড।

    ‘ওই একই কথা হলো।’

    বিরক্ত চেহারায় ঘড়ি দেখল মিলার্ড। আর দেড় ঘণ্টার মধ্যেই প্রোগ্রেসে পৌঁছে যাবে ট্রেন। টয়লেট থেকে বেরিয়ে তার আগেই এঞ্জিনিয়ারকে সতর্ক করতে হবে। পারবে তো ওরা? উপায় একটা করতেই হবে, না হলে ব্যাংকের টাকা লুঠ করে হাসতে হাসতে চলে যাবে লিয়োর খুনিরা। কিছুতেই তা হতে দেবে না সে, অজান্তেই চিন্তিত চেহারায় মাথা নাড়ল মিলার্ড।

    ‘আমিও একই কথা ভাবছি, জো,’ নিচু গলায় বলল আউট-ল। ‘বেরবার তিনটে পথ আছে, কোনটাই কোনটার চেয়ে কম বিপজ্জনক না।’

    ‘বলে ফেলো, ভেবে দেখি কীসে সুবিধা হয়।

    ‘এক নম্বর, আমরা দরজা ভেঙে বেরতে পারি। তবে যদি ওই হক না ফ্যালকন, ওকে যদি কাবু করতে না পারি তা হলে খতম হয়ে যাব।’

    ‘আর কোনও উপায় না দেখলে এপথে এগোব আমরা। শুনেছ তো, ওই বুড়ো গাধাটা বেঁটে খচ্চরটাকে শটগান হাতে তৈরি থাকতে বলেছে। শটগানের গুলিতে আমাদের ঝাঁঝরা করে দিতে পারবে ওই ব্যাটা।’

    ‘বেশ, দ্বিতীয়ত আমাদের একজন গোঙাতে শুরু করতে পারি। অন্যজনের ডাকে গার্ড ব্যাটা দরজা খুললেই…’

    মাথা নেড়ে ম্যাকেনলিকে থামিয়ে দিল মিলার্ড। ‘কাজ হবে না। বাঁটকু যেরকম সন্দেহপ্রবণ, উঁহু, আমরা ভেতরে মরে গেলেও কিছুতেই সে দরজা খুলবে না।’

    শ্রাগ করল আউট-ল। ‘শেষ বুদ্ধি হচ্ছে জানালা গলে বেরোনোর চেষ্টা করা।’

    ‘এই তো দারুণ একটা বুদ্ধি বেরিয়েছে তোমার মাথা থেকে।’ টিটকারি মেরে ম্যাকেনলির পিঠ চাপড়ে দিল মিলার্ড। ‘আমাদের মধ্যে একজন জানালা দিয়ে বেরিয়ে আছাড় খেয়ে নিচে পড়বে, তারপর বেঁচে থাকলে আহত অবস্থায় হাঁটতে শুরু করবে যেদিকে দু’চোখ যায়।’

    ‘সাধারণ আউট-লরা নিশ্চয়ই ভীষণ বোকা, নাহলে তুমি এতদিন বাঁচতে না, জো বয়,’ পাল্টা ব্যঙ্গ করল ম্যাকেনলি। ‘তোমার বোধহয় জানা নেই যে টয়লেট কোচের শেষ মাথায় থাকে? আমি যদি জানালা দিয়ে বের হই, কী দেখব?’ বড় করে দম নিয়ে মিলার্ডের দিকে তাকাল সে। কৌতূহল জাগাতে না পেরে অবশেষে বলল, ‘দেখব এই কোচের পরের কোচ। ওটার রেলিঙ হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাকে। যাত্রীদের ওঠার জন্য রেলিঙের ব্যবস্থা থাকে, দেখোনি, জো বয়? আমার মত লম্বা, সুপুরুষ লোক হয়তো ওটার নাগাল পাবে হাত বাড়ালে।’

    ‘চেষ্টা করে দেখো,’ চতুর হেসে বলল মিলার্ড, ‘যদি সফল হও, আমার পেছনদিকে গায়ের জোরে লাথি মারার অনুমতি দেব।’

    ‘কথাটা ভুলে যেয়ো না,’ হাসিমুখে উঠে দাঁড়াল ম্যাকেনলি। জানালার পাল্লা তুলে বলল, ‘কমোডের ওপর বসে অনেক বড় মনে হচ্ছিল, এখন দেখি ছোট্ট জানালা। শরীর ঢোকাতে পারলে হয়!’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন
    Next Article মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }