Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প143 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ধাওয়া – ১১

    এগারো

    সকাল সাড়ে আটটার সময় ট্রেন আসবে। ভিড় জমে উঠেছে স্টেশনে। ট্রেন থেকে টাকা নামিয়ে শোভাযাত্রা করে ব্যাংকে নিয়ে যাওয়া দেখতে এসেছে ওরা। নতুন ইউনিফর্ম পরে প্রোগ্রেস শহরের ব্যাণ্ড হাজির হয়েছে বাদ্যযন্ত্রসহ। মাঝে মাঝেই বিকট জোরে বাজনা বাজিয়ে হাত মকশো করছে তারা, লোকজনের বিরক্তি মাখা চেহারা দেখেও না দেখার ভান করছে। মেয়রের আদেশ।

    স্টেশনের বাইরে আর জায়গা নেই, অসংখ্য ওয়্যাগন, ক্যারিজ আর গাড়ি দখল করে রেখেছে পুরো এলাকা। আরও লোক আসছে, বাহনগুলো দূরে দাঁড় করিয়ে হেঁটে এগোচ্ছে ট্রেন দেখার জন্য। কয়েকজন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মোটর সাইকেলে চেপেও হাজির হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই গায়ে চামড়ার কালো জ্যাকেট, হাতে গ্লাভস পরেছে। হেলমেটের বালাই নেই।

    প্ল্যাটফর্মের বেড়া দেয়া অংশে টিকেট হাতে পায়চারি করছে বিশ পঁচিশজন যাত্রী। ওদের অন্তত অর্ধেক আসলে যাত্রী নয়, আউট-ল দলের সদস্য। কেউ তারা কারও সঙ্গে কথা বলছে না, নির্বিকার চেহারা দেখে কেউ ধারণাই করতে পারবে না ওরা কারা। কারও সন্দেহ যাতে না হয় সেজন্য প্রত্যেকেই সাধারণ যাত্রীদের মত স্যাডলব্যাগ বা তোবড়ানো সুটকেস বয়ে এনেছে।

    আরও কয়েকজন আউট-ল বেঞ্চে বসে বা আধশোয়া হয়ে অলস ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। চোখের ওপর হ্যাট টেনে দিয়ে বসে আছে বাকশট, ধীরে ধীরে ওঠানামা করছে তার বুক। ভাব দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে, ট্রেন আসার আগে উঠবে না। পাশের একটা বেঞ্চে বসে বই পড়ছে লোকো। বইয়ের নাম: ‘শো ডাউন অ্যাট টেক্সাস ফ্ল্যাট’।

    টিকেট কাউন্টারে বসে আছে বুড়ো স্তেফান। অনেকক্ষণ থেকে আউট-লর কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠল সে। দেখল চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে লোকটা, হাতে ধরা সিক্সগান কোলের ওপর রাখা। ঘুমাচ্ছে আউট-ল, এমন সুযোগ আর না-ও আসতে পারে! নিঃশব্দে টেলিগ্রাফের দিকে হাত বাড়াল স্তেফান। কোনমতে পরবর্তী শহরে খবর পৌঁছাতে পারলে ঘাড় থেকে একটা বোঝা নেমে যাবে তার।

    কী চাপতে গিয়েও থমকে গেল স্তেফান, পেছনে মৃদু ধাতব শব্দে কক্ করা হয়েছে সিক্সগান। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল দাঁত বের করে হাসছে আউট-ল, মাথা নাড়ছে দুষ্টুমি করতে বারণ করার ভঙ্গিতে। স্তেফান আগের জায়গায় সরে যাওয়ার পর চেয়ারে নড়েচড়ে আরও আরাম করে বসল আউট-ল। হ্যামার নামিয়ে সিক্সগানটা কোলের ওপর রেখে চোখ বুজল।

    ঘর্মাক্ত শরীরে চুপ করে বসে রইল বুড়ো এজেন্ট। মনে মনে ভাবছে, মেয়র কথা রাখবে তো? ভণ্ড লোকটা মার্শাল মিলার্ডকে খবর দিতে ভুলে গেলে তার কী হবে? নাতির মুখ কি আর দেখা হবে এই জীবনে! যাওয়ার আগে আউট-ল যদি ওকে মেরে রেখে যায়, তা হলে?

    .

    ট্রেনের এঞ্জিন রূমে দাঁড়িয়ে সামনের উঁচু নিচু ট্র্যাকের দিকে তাকিয়ে আছে এঞ্জিনিয়ার। ঠোঁট প্রসারিত হয়ে আছে তার, বিশাল ভুঁড়ি কাঁপছে হাসির তালে তালে। প্রতিযোগী ঘোড়সওয়ারদের হারিয়ে দেয়ার আনন্দ বহুদিন পর পেয়েছে সে। ইদানীং ব্যাটারা সাধারণত মাতাল না হলে তার ট্রেনের সঙ্গে লাগতে আসে না। তবে এবারের হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষদের ঘোড়া ছোটানোর কায়দা দেখেই সে বুঝেছে ওরা টাল-টক্কর নয়।

    ‘অত হাসছ কেন, রাস্টি?’ বয়লারে কয়লা ঢুকিয়ে হাতের বেলচা নামিয়ে জানতে চাইল ফায়ারম্যান।

    ‘ভাবছি আমরা যদি ট্রেন না থামিয়ে স্টেশন পেরিয়ে চলে যাই তা হলে কেমন হবে। প্রোগ্রেসের ওরা টাকা নিয়ে ট্রেন আসছে সেজন্য অনুষ্ঠান করছে, ব্যাণ্ড পার্টি থাকবে, মেয়র এক মাস খেটে আজকের জন্য বক্তৃতার খসড়া, করেছে। সবাই বোকা বনে যাবে আমরা না থামলে। দারুণ মজার ব্যাপার হবে, তাই না?’

    ‘আমার হাসি আসছে না,’ কয়লার স্তূপ থেকে বেলচা উঠিয়ে মাথা নাড়ল ফায়ারম্যান। ‘সত্যি ওরকম করলে ওদের বোকা বানানো যাবে ঠিকই, তবে শেষ পর্যন্ত আমরাও বোকা বনে যাব। কাল থেকে নতুন চাকরি খুঁজতে হবে।’

    ‘অত কাঁচা কাজ করব নাকি যে রেল কোম্পানী বুঝবে? পরে বলে দিলেই হবে ব্রেক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সারিয়েছি অনেক কষ্টে।’

    ‘কোনও দরকার নেই,’ আরও জোরে মাথা নাড়ল ফায়ারম্যান, ‘চাকরি নিয়ে ছেলেখেলা তোমার মানায়, এখনও বিয়ে করোনি। ওসব আমার পোষাবে না, বাসায় তিনটে ক্ষুধার্ত মুখ সর্বক্ষণ হাঁ করে আছে।’

    ‘আরে, সত্যি সত্যি করব বলেছি নাকি!’ হাসির ঝাঁকিতে ভুঁড়িটা আরেকবার দোল খেল এঞ্জিনিয়ারের।

    .

    অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে বিষণ্ণ চেহারায় ফাঁকা রাস্তা দেখছে মেয়র উইলিয়াম। লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। ভোরে এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল রুক্ষ, কঠোর চেহারার কয়েকজন আগন্তুক। এখন তাদের একজনকেও দেখা যাচ্ছে না। মেয়র বুঝতে পারছে স্টেশনে গেছে লোকগুলো— উদ্দেশ্য ব্যাংকের টাকা ডাকাতি করা।

    সময় দেখে ঘড়িটা আবার বুক পকেটে চালান দিল মেয়র। আর আধ ঘণ্টাও নেই প্রোগ্রেসে পৌঁছে যাবে এক্সপ্রেস ট্রেন। কে জানে মিলার্ড আর ম্যাকেনলি চলন্ত ট্রেনে উঠে খবর জানাতে পেরেছে কি না। রুমাল বের করে মুখের ঘাম মুছল মেয়র। রাস্তা দিয়ে সদম্ভে হেঁটে যাচ্ছে একজন মহিলা। কুৎসিত চেহারা চিনতে কষ্ট হলো না জানালায় দাঁড়ানো মেয়রের। মিসেস বেণ্টহ্যাম। জাঁদরেল মহিলাকে মার্শালের অফিসের দরজায় থামতে দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠল সে।

    মিসেস বেন্টহ্যাম নক করে নব ঘুরিয়ে ভদ্রভাবে দরজা খুলে ঢোকার মানুষ না, রীতিমত দরজার ওপর হামলা চালায় টর্নেডো আছড়ে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে। সশব্দে দরজা খুলে ভেতরে ঝড়ের বেগে ঢোকাতেই তার আনন্দ। মহিলার এই অভ্যেসের কারণে কয়েকবার অফিসে বেইজ্জত হতে গিয়েও বেঁচেছে মেয়র অল্পের জন্য। বন্ধ দরজায় বাড়ি খেয়ে মহিলার শাস্তি হবে এবার, হাসল মেয়র।

    বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না তার হাসি, বিস্মিত চেহারায় দেখল বিস্ফোরণের শব্দ তুলে খুলে গেছে মার্শালের অফিসের দরজা। মিসেস বেণ্টহ্যামকে ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখে সংবিৎ ফিরে পেল সে, জানালার কাছ থেকে সরে চেয়ারে গিয়ে বসে দু’হাতে মাথা চেপে ধরল। চিন্তাগুলো সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে, হচ্ছেটা কী এসব! তাকে ঢুকতে না দেয়া বন্ধ দরজা দজ্জাল মহিলার ভয়ে খুলে যেতে পারে কি?

    .

    দুলছে ট্রেন, টয়লেটের ভেতর মিলার্ডের সাহায্য নিয়ে জানালা দিয়ে শরীর ঢোকাতে শুরু করল ম্যাকেনলি। আগেই বলে নিয়েছে যদি সে আটকে যায় মিলার্ড যাতে ঠেলা দিয়ে সাহায্য করে, ব্যাংকের টাকা রক্ষার জন্য গায়ের দু’এক ইঞ্চি চামড়া খসাতে আপত্তি নেই তার।

    শরীর মুচড়ে জানালা দিয়ে অনেক কষ্টে কাঁধ বের করল ম্যাকেনলি, কোমর গেল আটকে। নানারকম কসরত করেও এগুতে পারল না আর এক ইঞ্চিও। পিছাতেও পারছে না, শেষ পর্যন্ত পা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করল। ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে তার। সামনে একটা সরু ওভারহেড ব্রিজ, দ্রুত গতি তুলে ছুটছে ট্রেন। আর বড়জোর আধ মিনিট হাতে আছে, তারপরই ব্রিজ পার হওয়ার সময় ট্রেনের দু’ইঞ্চি দূর দিয়ে যাবে ইস্পাতের গার্ডারগুলো। সময়মত টয়লেটে আবার ঢুকতে না পারলে দু’টুকরো হয়ে যাবে শরীর।

    উন্মত্তের মত চেঁচাচ্ছে ম্যাকেনলি, কিন্তু রেলগাড়ির শব্দ আর বাতাসের ঝাপটায় তার চিৎকার চাপা পড়ে যাচ্ছে। আউট-ল জানালা জুড়ে থাকায় ব্রিজের ব্যাপারে কিছুই জানে না মিলার্ড। পা ছুঁড়তে দেখে সে মনে করল ম্যাকেনলি তাকে ঠেলা দিয়ে সাহায্য করতে বলছে। আউট-লর পেছনে দু’হাত রেখে গায়ের জোরে ঠেলতে শুরু করল সে। তাতেও নড়াতে না পেরে কাঁধ ঠেকিয়ে ধাক্কা দিল।

    চেঁচাচ্ছে ম্যাকেনলি, পিছিয়ে আসার চেষ্টা করছে। চোখ বড় বড় করে দেখছে ব্রিজের ভেতর নাক গলিয়ে দিয়েছে এঞ্জিন, আর বেশি হলে আট-দশ সেকেণ্ড। তারপরই কাটা পড়বে সে। বাঁচার প্রচণ্ড ইচ্ছে শরীরে জোর এনে দিল, ব্রিজ ফুট পাঁচেক দূরে থাকতেই টয়লেটে ঢুকে পড়তে পারল সে। এত দ্রুত ব্যাপারটা ঘটল যে ভারসাম্য হারাল মিলার্ড। ধাক্কার চোটে পা পিছলে গেল তার। ধড়াস করে মেঝেতে আছাড় খেল সে, ম্যাকেনলি পড়ল তার পেটের ওপর।

    আচমকা আঘাতে মিলার্ডের বুক থেকে সমস্ত বাতাস বেরিয়ে গিয়েছিল, দম ফিরে পেয়ে সে খেঁকিয়ে উঠল, ‘গাধার মত উড়ে এসে জুড়ে বসলে যে? কী, হলোটা কী তোমার, কথার জবা…’ জানালার দিকে চোখ পড়তে থেমে গেল সে বিস্মিত চেহারায়। চোয়াল ঝুলে পড়ল। বিদ্যুৎ বেগে স্টীলের গার্ডারগুলোকে পিছিয়ে যেতে দেখছে চোখ বড় বড় করে। কিছুক্ষণ পর ঢোক গিলে বলল, ‘হায় হায়, দু’টুকরো হয়ে যেতে!’

    ‘আমারও একই কথা মনে হয়েছিল,’ উঠে দাঁড়িয়ে মিলার্ডকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে শুকনো গলায় বলল ম্যাকেনলি। মিলার্ড দু’পায়ে দাঁড়ানোর পর জানালার ফ্রেমে হাত রেখে পরখ করল আউট-ল। বলল, ‘এই ফ্রেমটা খুলে ফেলতে পারলেই ফুটো বড় হয়ে যাবে। তখন আমার মত দেড়জন ঢুকতে পারবে একসঙ্গে ‘

    ‘তোমার মত একজন ঢুকতে পারলেই হবে,’ দু’হাতে ফ্রেম আঁকড়ে ধরে হ্যাঁচকা টান মারল মিলার্ড। হাত লাগাল ম্যাকেনলি। কাঠের ফ্রেম বেশিক্ষণ দু’জনের টান সইতে পারল না, কর্কশ শব্দ তুলে জানালা থেকে খুলে এল হঠাৎ।

    বাইরে দাঁড়ানো হক টয়লেটের ভেতরে কাঠ ভাঙার আওয়াজ পেয়ে সতর্ক হয়ে উঠল। শটগান তাক করে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে টয়লেটের দিকে এক পা এগোল সে। তারপর দাঁড়িয়ে রইল। সন্দেহজনক আর কোনও শব্দ কানে এলেই দরজা খুলে দেখবে। একমিনিট পূর্ণ হতে যেন অনন্তকাল পার হয়ে গেছে বলে মনে হলো তার। ভেতর থেকে আর কোনও আওয়াজ শুনতে না পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আগের অবস্থানে ফিরে গেল সে, পাশে নমিয়ে রাখল শটগান।

    জানালার ফ্রেম খুলে ফেলার পর চৌকো গর্ত দিয়ে শরীর গলিয়ে দিতে কোনও অসুবিধা হলো না ম্যাকেনলির। চৌকাঠে পা রেখে জানালার ওপরের অংশ শক্ত হাতে ধরল সে, ডানহাত বাড়িয়ে দিল সামনের কোচের স্টীল রেলিঙ ধরার জন্য। শরীর পুরোপুরি টানটান করার পরও রেলিঙ আর হাতের ফাঁক রয়ে গেল পাক্কা ছ’ইঞ্চি।

    রেলিঙ ধরার চেষ্টার মাঝে ম্যাকেনলির চোখ পড়ল দ্রুত পিছিয়ে যাওয়া রুক্ষ জমির ওপর। ভয়ে গা গুলিয়ে উঠল ওর, মনে পড়ে গেছে ডাস্টির পরিণতি। চোখ বন্ধ করে আতঙ্ক দূর করল সে। তারপর জোর খাটিয়ে আবার তাকাল ট্র্যাকের দিকে। মুক্ত হাতে কপালে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ঘামের ফোঁটা মুছে বড় করে দম নিল। জানালা থেকে বামহাত সরিয়ে লাফ দিল রেলিঙ লক্ষ্য করে।

    ডানহাতে ধরে ফেলল হ্যাণ্ড-রেইল, কিন্তু অসংখ্য যাত্রীর ব্যবহারে মসৃণ আর পিছলা হয়ে গেছে লোহা। ম্যাকেনলির হাত পিছলে যেতে শুরু করল। দেহের ওজন আর বাতাসের ঝাপটা পড়ে যাওয়াকে আরও তরান্বিত করে তুলেছে। ট্র্যাক থেকে পা জোড়া আর দু’ইঞ্চি ওপরেও নেই, এমন সময় বামহাতে রেলিঙ খামচে ধরে পতন ঠেকাতে পারল সে। উৎকণ্ঠিত মিলার্ডের চোখের সামনে অবশেষে প্ল্যাটফর্মে উঠতে পারল ম্যাকেনলি।

    কয়েক মুহূর্ত চিত হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিল সে। দম ফিরে পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মিলার্ডকে ইশারা করল। ঘুরে তাকিয়ে কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখল কোচের মধ্যে এখনও শটগান হাতে ওদের পাহারা দিচ্ছে বাঁটকু গার্ড। লোকটার পিঠ ওর দিকে, টয়লেটের দরজায় নজর রাখছে। একবিন্দু নড়াচড়া করছে না, যেন পাথরের মূর্তি।

    দু’সারি সীটের মাঝখান দিয়ে একজন যাত্রীকে এগিয়ে আসতে দেখে আড়ালে সরে নজর রাখল ম্যাকেনলি। লোকটা টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে দরজার নবের দিকে হাত বাড়াতেই ঘন ঘন মাথা নেড়ে বারণ করল হক। কী যেন বলে মাথা কাত করে ইশারা করল, বোধহয় অন্য কোচে গিয়ে কাজ সারতে বলছে।

    লোকটা দরজার দিকে হেঁটে আসতে শুরু করতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনের দৃশ্য দেখার ভান করল ম্যাকেনলি। প্ল্যাটফর্মে বেরিয়ে এল যাত্রী, ওকে সুপ্রভাত জানিয়ে এগোল পরবর্তী কোচের দরজার দিকে। পরক্ষণেই থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকাল সে, চেহারায় বিস্ময় ফুটে উঠেছে। দাঁড়াল না, ভীত চেহারায় তাড়াহুড়ো করে ঢুকে গেল সামনের কোচে। আপন মনে গাল বকল আউট-ল, ওকে চিনে ফেলেছে লোকটা। দরজার নবে হাত রেখে তৈরি হয়ে দাঁড়াল সে, পরবর্তী পদক্ষেপ মিলার্ডের সঙ্গে কথা বলে আগেই ঠিক করে নিয়েছে।

    টয়লেটের ভেতরে ভাঙা জানালা থেকে সরে দাঁড়াল মিলার্ড, গায়ের জোরে চেঁচিয়ে উঠে লাথি মারতে শুরু করল দরজায়। কোচের দরজার স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে ম্যাকেনলি দেখল কৌতূহলী হয়ে উঠেছে বাঁটকু গার্ড। একমুহূর্ত দ্বিধা করে শটগান হাতে এগোল সে, নব ঘুরিয়ে টান দিয়ে খুলে ফেলল টয়লেটের দরজা।

    ততক্ষণে জানালার কাছে ফিরে গেছে মিলার্ড, ভাঙা জানালার চৌকাঠে কনুই রেখে তাকিয়ে আছে বাইরে। দরজা খোলার শব্দে ঘুরে দাঁড়াল সে, চেহারায় কৌতূহল ফুটিয়ে তুলে বলল, ‘টয়লেট লেগেছে? আমি তা হলে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করি?’

    জবাব দিল না বেঁটে গার্ড, বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে দেখল টয়লেটে মিলার্ড ছাড়া আর কেউ নেই। দু’এক সেকেণ্ড পর সংবিৎ ফিরে পেল। ‘বিগ…বিগ ম্যাকেনলি কোথায়?’

    ‘এই তো, তোমার ঠিক পেছনে,’ কোচের দরজা খুলে ঢুকে পড়েছে আউট- ল, টয়লেটের দরজায় দাঁড়িয়ে বলল সে।

    সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, বুঝতে পারল হক। সে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই এক পা সামনে বাড়ল ম্যাকেনলি, হ্যাঁচকা টানে হাত থেকে শটগান কেড়ে নিল। টয়লেটের ভেতরে ঢুকে দরজা ভিড়িয়ে দিল সে। মিলার্ড দ্রুত হাতে বেঁটে গার্ডের কোমর থেকে বেল্ট খুলতে শুরু করল। প্যান্ট বড্ড ঢিলা, বেল্ট খুলে নিতেই গোড়ালির কাছে নেমে গেল। বেঁটে গার্ডের আণ্ডারওয়্যার টকটকে লাল, তাতে নীল আর সাদা ডোরা কাটা।

    দৃশ্য দেখে জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করল মিলার্ড। ম্যাকেনলি হাসিমুখে বলল, ‘প্রোগ্রেসের মেয়র আর তুমি দেখি একই জাঙ্গিয়া পরো, একই সমান কাজের লোক নাকি তোমরা?’

    কোনও জবাব দিল না হক, নাক দিয়ে শুয়োরের মত ঘোঁত একটা শব্দ বেরল।

    মিলার্ড বাঁটকুর হাত বেল্ট দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধার আগ পর্যন্ত কমোডের সীটে বসে রইল ম্যাকেনলি, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজের বহু ব্যবহৃত নোঙরা রুমালটা আপত্তি গ্রাহ্য না করে গুঁজে দিল বন্দির মুখে। প্যান্ট খুলে নিয়ে হকের দু’পা শক্ত করে বেঁধে বসিয়ে দেয়া হলো কমোডে। এখন আর সে চেষ্টা করলেও দরজায় লাথি মেরে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে না।

    ভ্রূকুটি করে বসে থাকা গার্ডের মুখের ওপর হাসতে হাসতে টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল ওরা। যাত্রীদের বিস্ময় মেশানো ফিসফাসে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের গানরেন্ট আর অস্ত্র লাগেজ র‍্যাক থেকে নিয়ে পরল। তারপর ম্যাকেনলির পেছন পেছন পরবর্তী কোচে যাওয়ার দরজার দিকে পা বাড়াল মিলার্ড। ওরা দু’জন দরজার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে এমন সময় কী কারণে যেন আচমকা থমকে দাঁড়াল ম্যাকেনলি। তাল সামলাতে না পেরে তার পিঠে হুমড়ি খেল মিলার্ড। বিশালদেহী আউট-লর কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখল কোচের দরজায় বসানো কাঁচের ফাঁক দিয়ে বুড়ো টিকেট চেকারকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। বুড়োর হাতে ভয়ঙ্কর দর্শন সিক্সগান শোভা পাচ্ছে, পাশে পাশে উত্তেজিত চেহারায় হাঁটছে একজন যাত্রী।

    দেরি না করে আউট-লকে পাশ কাটাল মিলার্ড, হাতে টান দিয়ে ম্যাকেনলিকে আসতে বলে দরজা খুলে ফেলল এক ঝটকায়। অপরিসর প্ল্যাটফর্মের একধারে লোহার মই রয়েছে ছাদে ওঠার জন্য, উঠতে শুরু করল কোনদিকে না তাকিয়ে। মই দুলে ওঠায় টের পেল ম্যাকেনলিও অনুসরণ করছে তাকে।

    ওরা দু’জন মাত্র ছাদে উঠেছে এমন সময় প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে শেষ কোচে দৌড়ে গিয়ে ঢুকল বুড়ো গার্ড আর তার সঙ্গী। মুচকি হেসে ম্যাকেনলি বলল, ‘টয়লেটে বেঁটে শয়তানটাকে দেখে বুড়োর চেহারা কীরকম হবে যদি দেখতে পেতাম তা হলে মরতেও আপত্তি ছিল না।’

    ‘তাড়াতাড়ি এঞ্জিন ক্যাবে পৌঁছতে না পারলে বুড়োর চেহারার বদলে বেঁটে খচ্চরের শটগানের নল দেখতে পাবে,’ গম্ভীর স্বরে বলল মিলার্ড। ‘চলো এগোই।’

    দু’পাশে অল্প অল্প দুলতে দুলতে এগুচ্ছে ট্রেন। খুব সাবধানে উঠে দাঁড়াল ওরা। ভারসাম্য বজায় রেখে এগিয়ে চলল, পা ফস্কে গেলে নিচে আছড়ে পড়বে। ট্রেন এত দ্রুত ছুটে চলা অবস্থায় রুক্ষ জমির ওপর পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা নেই।

    দড়াম করে শব্দ হলো নিচে, কোচের দরজা খুলে বেরিয়ে এল বুড়ো টিকেট চেকার আর বেঁটে গার্ড। নিজেকে নিয়ে সাংঘাতিক ব্যস্ত হয়ে আছে বাঁটকু। তার একহাতে শটগান, অন্যহাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফুল প্যান্টের চেন আর বোতাম লাগাতে।

    এসো, জাহান্নামে যাক প্যান্ট,’ ধমকে উঠল বুড়ো ট্র্যাভার্ন, ‘আসার পথে ওদের দেখিনি। তারমানে ছাদে গিয়ে উঠেছে। চলো!’

    মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে এল টিকেট চেকার, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে অনুসরণ করল গার্ড। ‘ওই যে! ওই যে!’ মিলার্ডদের দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠল উত্তেজিত ট্র্যাভার্ন, হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে পর পর তিনবার ট্রিগারে চাপ বসাল। এঞ্জিনের ধাতব শব্দ ক্ষণিকের জন্য চাপা পড়ল অস্ত্রের বিকট গর্জনের নিচে, একরাশ কালো ধোঁয়া সামনের দৃশ্য আড়াল করে দিল কয়েক সেকেণ্ডের জন্য।

    আছাড় খেয়ে পড়ে গেল মিলার্ড, গড়িয়ে সরে যেতে লাগল কিনারের দিকে। হাত বাড়িয়ে তাকে ধরতে পারল না ম্যাকেনলি, পা জোড়া ইতিমধ্যেই বাইরে চলে গেছে মিলার্ডের।

    ‘গেঁথেছি!’ খুশিতে চেঁচিয়ে উঠল ট্র্যাভার্ন, ‘শুকনো লোকটার গায়ে বুলেট বিঁধেছে, হক। নামো তাড়াতাড়ি, আমরা কোচের ভেতর দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ওদের ধরে ফেলতে পারব।’

    কোমরের নিচের অংশ শূন্যে ঝুলছে এমন সময় টয়লেটের ভেন্টিলেশন পাইপ দেখতে পেল মিলার্ড। ছাদ ফুঁড়ে ইঞ্চি পাঁচেক উঠেছে পাইপ। প্রাণপণ শক্তিতে ওটাকে আঁকড়ে ধরল সে। বিপদের তোয়াক্কা না করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এল ম্যাকেনলি, হাত ধরে মিলার্ডকে টেনে তুলল ঢালু ছাদের ওপর। ঝুঁকে পড়ে উৎকণ্ঠিত চেহারায় জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় গুলি লেগেছে, মিলার্ড?’

    ‘লাগেনি!’ বিরক্তিতে চেহারা কুঁচকে গেছে মিলার্ডের। ‘কোন্ শালার মিস্ত্রী যেন ছাদের একটা স্ক্রু ঠিক মত টাইট দেয়নি, বেরিয়ে থাকা অংশে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছি।’ দু’হাত বাড়িয়ে দিল সে। ‘কী হলো, হাঁ করে কী দেখছ। টেনে তোলো, তাড়া আছে!’

    ম্যাকেনলির সাহায্য নিয়ে উঠে দাঁড়াল মিলার্ড, দু’জনে প্রায় দৌড়ে পৌঁছে গেল কোচের শেষ মাথায়। দ্বিধা না করে লাফ দিয়ে পার হয়ে গেল সামনের কোচ আর প্ল্যাটফর্মের ফাঁকা জায়গা। ওরা তিন নম্বর যাত্রীবাহী কোচের মাঝ বরাবর পৌঁছেছে এমন সময় প্ল্যাটফর্মে টিকেট চেকারের গলা শুনতে পেল। বুড়ো তার বেঁটে সঙ্গীকে চড়া গলায় বলছে, ‘তাড়াতাড়ি, হক! ম্যাকেনলির আগেই কোচ পেরিয়ে ফ্ল্যাট কারে রাখা ফায়ার এঞ্জিনটার কাছে পৌঁছতে হবে। আমরা আগে যেতে পারলে ম্যাকেনলি শেষ!’

    ‘শুনেছ, ম্যাকেনলি?’ দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিল মিলার্ড। ‘পা জোড়া তাড়াতাড়ি না চালাতে পারলে প্যানডোরার বাক্স খুলে যাবে।’

    দৌড়ের ফাঁকে ম্যাকেনলি তিক্ত চেহারায় বলল, ‘আমাদের গুলি করার অধিকার আছে ওদের, কিন্তু আমরা পাল্টা গুলি করলে সেটা হবে বেআইনী!’

    ‘আমাদেরও গুলি করার অধিকার আছে, খুন করে না ফেললেই হলো,’ শেষ যাত্রীবাহী কোচের প্রান্তে পৌঁছে জবাব দিল মিলার্ড। দু’জনেই কৌতূহলী চোখে নিচে তাকাল। প্ল্যাটফর্ম এখনও খালি, বোধহয় যাত্রী আর মাঝখানে রাখা মালপত্রের ভেতর দিয়ে পথ করে আসতে হচ্ছে বলে এখনও নিজেদের চাঁদমুখ দেখাতে পারেনি কণ্ডাক্টর আর গার্ড।

    মই বেয়ে তাড়াহুড়ো করে ওরা দু’জন নেমে এল প্ল্যাটফর্মে, দ্রুত পায়ে এগোল ফ্ল্যাট কারের ওপর দিয়ে। ফায়ার এঞ্জিনটা অজস্র দড়িদড়া দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, দড়ি টপকে ওটার ওপারে চলে গেল ওরা। হাসি ফুটে উঠল মিলার্ডের রোদে পোড়া চেহারায়, আউট-লকে কৌতূহলী চোখে তাকাতে দেখে বলল, ‘ভাগ্য বোধহয় এতক্ষণ পর আমাদের সাহায্য করতে শুরু করেছে।’

    ‘তোমার গুলি লাগেনি, ওই যে দু’জনকেই দেখা যাচ্ছে,’ ফায়ার এঞ্জিন ছাড়িয়ে ওদের মাথা বেরিয়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল ট্রেনের গার্ড। যাত্রীদের ডিঙিয়ে এই মাত্র পৌঁছেছে তারা।

    ‘এইবার আর ভুল হবে না,’ পাল্টা চেঁচিয়ে মিলার্ডদের মাথা লক্ষ্য করে গুলি করল কণ্ডাক্টর।

    বাতাসে শিস তুলে বেরিয়ে গেল সীসের বুলেট, আগেই মেঝেতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ম্যাকেনলি আর মিলার্ড। কনুইয়ে লেগেছে, ব্যথা গ্রাহ্য না করে রাগী চেহারায় মিলার্ডের দিকে তাকাল আউট-ল। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সামলে বলল, ‘থামলে কেন! এতক্ষণে এক্সপ্রেস কার পেরিয়ে টেণ্ডারে পৌঁছে যেতে পারতাম আমরা।’

    ‘বললাম না ভাগ্য আমাদের সঙ্গী হয়েছে? এই একই রকম ফায়ার এঞ্জিন প্রোগ্রেসেও আছে, আমি জানি কীভাবে এই মেশিন চালায়। গজ দেখেই বুঝতে পেরেছি ট্যাঙ্ক কেমিকেলে ভরা, প্রেশারও আছে পুরোমাত্রায়।’

    ‘শুনে খুব তৃপ্তি পেলাম, কিন্তু আগুন তো কোথাও লাগেনি যে তোমার বিদ্যা কাজে লাগবে,’ অস্থির হাতে সিক্সগানের হ্যামার উঠিয়ে ব্যঙ্গ করল ম্যাকেনলি।

    ‘ওই কেমিকেল চোখেমুখে পড়লে অবস্থা কাহিল হয়ে যায়,’ টিটকারি শুনতে পায়নি এমন ভঙ্গিতে বলে চলল মিলার্ড। ‘তাছাড়া পুরো প্রেশারে কেমিকেল কারও গায়ে ছুঁড়লে ধাক্কার চোটে উড়ে যাবে সে। তুমি এঞ্জিনের কিনারায় গিয়ে ওদের ব্যস্ত রাখো, আমি হোসপাইপ লাগিয়ে এঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ফেলব এই ফাঁকে।’

    ব্যাপার বুঝতে পেরে হাসল ম্যাকেনলি, হ্যাটে সিক্সগান ছুঁইয়ে কপট শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে গেল ফায়ার এঞ্জিনের পেছন দিকের কোণে। গার্ড আর কণ্ডাক্টরের মাঝখান দিয়ে রেলিঙে গুলি করল। নির্ভুল লক্ষ্যভেদ। ঠঙ শব্দে ফাঁপা রেলিঙে পিছলে বেরিয়ে গেল বুলেট।

    আতঙ্কিত কণ্ডাক্টর পাল্টা গুলি করল। আন্দাজে ট্রিগার টেনেছে আনাড়ির মত, ম্যাকেনলির ধারকাছ দিয়েও গেল না বুলেট। ভয় পেলেও কাণ্ডজ্ঞান হারায়নি বুড়ো, বেঁটে গার্ড কাঁধে শটগান তুলেছে দেখে চেঁচিয়ে উঠল সে, ‘আরে, গাধা, শটগান না! শটগান না! ফায়ার এঞ্জিনে গুলি লাগলে বাকি জীবন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনিতেই ওরা আটকা পড়ে গেছে, আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলেই খেল খতম, আমাদের সঙ্গে আর চালাকি চলবে না।’

    বেঁটে গার্ড কাঁধ থেকে শটগান নামানোর আগেই গর্জে উঠল শক্তিশালী ফায়ার এঞ্জিন। ম্যাকেনলির দিকে হোসপাইপ ছুঁড়ে দিয়ে তাক করতে ইশারা করল মিলার্ড। ম্যাকেনলি হোসপাইপ তুলে ধরে মাথা ঝাঁকানোর পর ভালভ হুইল খুলতে শুরু করল অভ্যস্ত হাতে। গার্ড আর কণ্ডাক্টর বিস্মিত হবারও সময় পেল না, ফেনায়িত সাদাটে কেমিকেলের মোটা ধারা হোসপাইপ থেকে বেরিয়ে জলপ্রপাতের মত আছড়ে পড়ল ওদের গায়ে।

    ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে গেল দু’জনেই, বাড়ি খেল গিয়ে কোচের দেয়ালে। অস্ত্র পড়ে গেছে ওদের হাত থেকে, দু’হাতে চোখ মুখ ঢেকে অসহ্য জ্বলুনিতে কাঁদছে ভেউ ভেউ করে। বুড়ো নাকি স্বরে বিলাপ করলেও বাঁটকুর চিৎকারে এখন আর কোনও ন্যাকামি নেই, ভীষণ শব্দে ফাটা গলায় কাঁদছে সে।

    এতটুকু শরীর থেকে অতবড় আওয়াজ বেরতে দেখে অবাক হয়ে গেল ম্যাকেনলি আর মিলার্ড। হেসে ফেলে ম্যাকেনলি বলল, ‘দারুণ দেখালে, জো বয়, এত মজা জীবনে পাইনি!’

    ‘চলো, চলো, দু’মিনিটেই সামলে উঠবে ওরা,’ উঠে দাঁড়িয়ে এক্সপ্রেস কারে ওঠার মইয়ের দিকে পা বাড়িয়ে বলল মিলার্ড। ‘কেমিকেলের প্রতিক্রিয়া শেষ হলেই ওরা আগের চেয়েও রেগে উঠবে, ভুলেই যাবে একটু আগেই বাচ্চাদের মত কাঁদছিল। তখন আমাদের বিপদ হতে পারে।’

    ওরা দু’জন এক্সপ্রেস কারের ছাদে উঠে অর্ধেক দূরত্বও পেরয়নি, মিলার্ডের কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্যই যেন গর্জে উঠল টিকেট চেকারের সিক্সগান। ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিল ম্যাকেনলি। মইয়ে দাঁড়িয়ে মাথা বের করেছিল বুড়ো, কানের পাশে বুলেটের গুঞ্জন শুনে মই থেকে হাত ছেড়ে দিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ল মেঝেতে। ম্যাকেনলি তাকাতেই মাথা নাড়ল মিলার্ড, তার গায়েও লাগেনি বুড়োর প্রাচীন সিক্সগানের বুলেট। ম্যাকেনলি বলল, ‘ওরা পরেরবার ভেবে নেবে আসার আগে।’

    জবাব দিল না মিলার্ড, মন কেন যেন ওকে সতর্ক হতে বলছে। ম্যাকেনলি হাঁটু গেড়ে বসে অস্ত্র রিলোড করছে, মই বেয়ে ছাদে ওঠার জায়গাটা সিক্সগান হাতে কাভার করল সে। ঘাড় ফিরিয়ে সামনে ট্র্যাকের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তের জন্য জমে গেল, তারপরই দৌড়ে গিয়ে আউট-লকে ধাক্কা মেরে ছাদের ওপর উপুড় করে ফেলে দিল সে। নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে ম্যাকেনলির মাথা ছাদের সঙ্গে চেপে ধরে রাখল।

    নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিল ম্যাকেনলি, চারপাশ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যেতে থমকে গেল। বুঝে ফেলেছে মিলার্ডের উদ্ভট আচরণের কারণ। নিচু পাহাড়ী টানেলে প্রবেশ করেছে ট্রেন। কোথাও কোথাও টানেলের ছাদ এত নেমে এসেছে যে চুলে পাথরের ছোঁয়া টের পেল ওরা। ঘন কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দুঃসহ হয়ে উঠল। দম নেয়া যাচ্ছে না। জ্বলন্ত কয়লার গুঁড়ো ছ্যাঁকা দিচ্ছে শরীরের অনাবৃত অংশে, কাপড়ে আগুন লেগে যেতে পারে যেকোনও সময়।

    আধমিনিটের মাথায় সূর্যালোক ঝাঁপিয়ে পড়ল ওদের ওপর। টানেল থেকে বেরিয়ে এসেছে ট্রেন। উঠে বসে বোকা বোকা চেহারায় পরস্পরকে দেখল ওরা। দু’জনেই কয়লা মেখে ভূত হয়ে গেছে, এই মুহূর্তে ওদের দেখে চিনতে পারবে না জন্মদাত্রীও।

    কাপড় ঝেড়ে কিছুটা পরিষ্কার করে তারপর ম্যাকেনলি বলল, ‘আমার কাছে একটা উপকার পাওনা রইলে, জো বয়। প্রথমে যখন ঘাড়ে লাফিয়ে পড়লে তখন তো মনে করেছিলাম পাগল হয়ে গেছ, এখন মনে পড়ল যে পাগল তো আর নতুন করে পাগল হতে পারে না!’

    হাসিমুখে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল মিলার্ড, কিন্তু সুযোগ পেল না। ম্যাকেনলি ঝাঁপ দিয়েছে তার ওপর। একটা শটগান গর্জে উঠল। পড়ে যাওয়ার সময় এক ঝলকের জন্য বেঁটে গার্ডের মাথা দেখতে পেল মিলার্ড, ছাদের ওপর গড়ান দিয়েই হাঁটু গেড়ে ঘুরে বসল সে। গুলি করল লোকটার কাঁধ লক্ষ্য করে। লাগল না, আগেই আবার লুকিয়ে পড়েছে ভীতু গার্ড। মিলার্ড ফুরসত পেয়ে তাকিয়ে দেখল ছাদের কিনারা দু’হাতে আঁকড়ে ধরে আতঙ্কিত চেহারায় ঝুলছে ম্যাকেনলি। তাড়াতাড়ি অস্ত্র ফেলে আউট-লকে টেনে তুলল সে।

    দম ফিরে পেয়ে খানিকক্ষণ পর ফ্যাকাসে চেহারায় ম্যাকেনলি বলল, ‘ধন্যবাদ দেব না, তোমার ছোট করা হবে তা হলে।’

    ‘সে তো ঠিকই! আমি এমনিতেই তোমার চেয়ে আকারে ছোট, আর ছোট করার চেষ্টা কোরো না,’ হাসল মিলার্ড। কয়েকমুহূর্ত পর বলল, ‘চলো, ম্যাক, এঞ্জিন রুমে যাওয়া দরকার। আর আট-দশ মিনিটের মধ্যেই প্রোগ্রেসে থামার জন্য ব্রেক চাপবে এঞ্জিনিয়ার।’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন
    Next Article মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }