Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ধুলোবালির জীবন – প্রচেত গুপ্ত

    প্রচেত গুপ্ত এক পাতা গল্প170 Mins Read0

    ধুলোবালির জীবন – ১১

    ১১

    এত তাড়াতাড়ি অফিস সব গুছিয়ে দেবে, শ্রীজিতা ভাবতে পারেনি। নতুন দায়িত্বের সঙ্গে স্যালারিও অনেকটা বাড়িয়েছে। এটার দরকার ছিল। ফ্ল্যাটের ইএমআই চলছে। অফিস লোনের গ্যারেন্টার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু টাকা শোধ তো তাকেই করতে হচ্ছে। অন্য সুবিধেও বেড়েছে। এখন আর তাকে পুলকারে যাতায়াত করতে হবে না। আলাদা গাড়ি পাবে। অফিসে আসা যাওয়ার কড়াকড়িও থাকবে না। নিজের মতো সময় ঠিক করে নিতে হবে। যদি মনে করে সকাল সাতটায় ঢুকবে, তা-ও যেমন পারবে, বেলা করে এলেও চলবে। রাত পর্যন্ত থাকতে চাইলে থাকবে। নিজের কাজ নিজেকে বুঝে নিতে হবে। এটাও সুবিধে। ধরাবাঁধা সময়ের মধ্যে কাজ হয় না।

    কর্ণ রায়কে তাঁর ঘরে ধন্যবাদ জানাতে গেল শ্রীজিতা।

    “‌আবার কীসের ধন্যবাদ!‌ এই তো সেদিন দিলে।”‌

    শ্রীজিতা বলল, “‌স্যার, আজ মেল পেয়েছি।”‌

    কর্ণ রায় বললেন,‌ “‌ভেরি গুড। এবার মন দিয়ে কাজ শুরু করে দাও।”‌

    শ্রীজিতা বলল,‌ “‌আজ থেকেই করব।”‌

    কর্ণ রায় বললেন, “‌তুমি চারজনের টিম চেয়েছিলে, আমরা আপাতত তিনজনকে প্রোভাইড করছি। বাকিটা পরে দেখা যাবে। তবে টিমের সবাইকেই তোমার পছন্দ অনুযায়ী দেওয়ার চেষ্টা করলাম। একজন বাদে। দেবোপমাকে এখনই সরিয়ে আনা যাবে না। সে অন্য প্রজেক্ট লিড করছে। তার প্রজেক্ট আগে কমপ্লিট হোক।”‌

    শ্রীজিতা বলল, “‌নো প্রবলেম স্যার। তিনজনকে নিয়েই কাজ শুরু করা যাবে।”

    কর্ণ রায় বললেন,‌ “‌দুটো অ্যাসাইনমেন্ট খুব তাড়াতাড়ি ছাড়তে হবে। একটা কসমেটিক্স, আর একটা ইলেকট্রিক কুকার জাতীয় কিছু। দেখে নিয়ো।”‌

    শ্রীজিতা বলল,‌ “এখনই সবাইকে নিয়ে বসব। আপনাকে আর একবার ধন্যবাদ জানাই স্যার। আপনি আমার উপর কনফিডেন্স রেখেছেন.‌.‌.স্যার, আমার তো মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং, কোনও কাজেই এক্সপিরিয়েন্স ছিল না, ডিগ্রিও ছিল না কোনও.‌.‌.‌”

    কর্ণ রায় হাত তুলে শ্রীজিতাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “‌ওসব ভুলে যাও। আমি কোনও ডিগ্রিকে ছোট না করেই বলছি, প্রফেশনাল জগতে কিছু বিষয় থাকে, যেখানে ডিগ্রির চেয়ে ইনটিউশন বেশি কাজ দেয়। তোমাকে আমরা আমাদের কোম্পানির একজন ভ্যালু্য়েবল পার্ট হিসেবে মনে করি শ্রীজিতা। মুখ দেখে কোম্পানি এত বড় দায়িত্ব তোমাকে দেয়নি। খুব অল্প দিনেই ইউ প্রুভড ইয়োরসেলফ। কোম্পানিতে বিজ়নেসও বাড়ছে। মার্কেটিং-এ তুমি বেশ ভাল কাজ করছ।”‌

    শ্রীজিতা আপ্লুত গলায় আবার বলল, “‌থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”

    কর্ণ রায় হেসে বললেন, “একটা বিষয়ে ভাল লাগছে, মানুষ চিনতে আমার ভুল হয়নি। সামান্য একটা প্রোগ্রামে তোমার কনসেপ্ট দেখে বুঝেছিলাম, এই ইম্যাজিনেশন কাজে লাগানো উচিত। তোমার ইম্যাজিনেশন আমাকে টাচ করেছিল শ্রীজিতা। তারপর তো তোমাকে ডেকে কথা বললাম। মজার কথা কী জানো শ্রীজিতা?‌”

    “‌কী স্যার?‌”‌

    কর্ণ রায় বললেন, “ফিমেল প্রোডাক্টের জন্য আলাদা ডিভিশন করে তার চার্জে তোমাকে বসানোর প্রোপোজ়াল কার জানো?‌ বাসুদেব ভার্গবের। যে গোড়ায় তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। ভাবতে পারছ?‌”

    ঘরে ফিরে টিম নিয়ে কাজ শুরু করে দিল শ্রীজিতা। একেবারে ডেটা কালেকশন থেকে সে ঢেলে সাজাতে চায়। প্রথমেই জানিয়ে দিল, মেয়েদের আইটেমের ভায়াবিলিটি বুঝতে শুধু মেয়েদের মতামত নিলে হবে না। পুরুষদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। আম্রপালি বলল, “সেটা কেমন করে হবে শ্রীজিতাদি?‌ মেয়েদের সেন্ট–‌পাউডার, নেলপলিশ, কাপড়জামা নিয়ে ছেলেরা কী বলবে?‌”‌

    শ্রীজিতা বলল, “‌আমাদের দেশে কেনাকাটা বিষয়টা এখনও মেল ডমিনেটিং। মানতে কষ্ট হলেও, সত্যি। বাড়ির পুরুষমানুষরা যে শুধুমাত্র টাকাপয়সা হ্যান্ডল করে তা নয়, পোশাক থেকে শুরু করে কসমেটিক্স, স্বামী বা প্রেমিকের পছন্দ না হলে চলে না। যে ড্রেসে, মেকআপে, পারফিউমে পুরুষমানুষরা খুশি, তার প্রতি মেয়েদের ক্রেজ় বেশি। তাই পুরুষের মতামতকে ইগনোর করা ভুল হবে।”‌

    ঠিক হল, এবার থেকে সবার কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করা হবে। সেইমতো রিসার্চ ডিভিশনে মেল পাঠাল শ্রীজিতা। তারপরেও মিটিং চলল। নতুন অ্যাসাইমেন্ট, স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশি হবে। প্রথমদিনই অনেকটা মালুম পাওয়া গেল। লাঞ্চের পর একটু দম নিচ্ছিল শ্রীজিতা। ঋদ্ধ কিউবিকলে এল। এখনও আলাদা করে ঘর হয়নি। ক’দিনের মধ্যে সেটাও হয়ে যাবে। বাসুদেব ভার্গব খানিক আগে ইন্টারকমে জানিয়েছে, ডিরেক্টরের ঘরের পাশেই একটা বড় হল আছে। সেটাই সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়া হবে। কাল–‌পরশু ইন্টিরিয়র আসবে। তার সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ফোনটা পেয়ে নিজের মনে হাসল শ্রীজিতা। মেয়ের নতুন ঘর হয়েছে, এবার মায়ের হচ্ছে। সত্যি জীবন খুব আশ্চর্যের। গল্পের মতো। আজকাল কি এরকম গল্প লেখা হয়?‌ কে জানে?‌ কতদিন গল্প টল্প পড়া হয় না। স্কুল কলেজে পড়ার সময় খুব পড়েছে। বাইরের পৃথিবী বলতে তো ওইটুকুই ছিল।

    কাল বাড়ি ফিরতে বেশি রাত হয়নি। অরণির হোটেল থেকে ক্যাব ধরে নিয়েছিল, ‘‌পারব না’‌ বলেও শেষ পর্যন্ত তার কাছে যাওয়ায় অরণি খুশি হয়েছিল। শ্রীজিতার নতুন দায়িত্বের কথা শুনে বলেছে‌, “আমাদের অনেক কাজ এবার তোমাদের কাছে পাঠাব। আলাদা ডিভিশন মানে তোমরা ফিমেল প্রোডাক্টে এক্সপার্টাইজ় করলে। কাজ দিতে সুবিধে হবে।”‌

    অরণির নগ্ন বুকে হাত রেখে শ্রীজিতা বলে, “‌আমার ভাল হবে। কোম্পানিকে বিজ়নেস এনে দিতে পারলে আমার গুরুত্ব বাড়বে।”‌

    শ্রীজিতার গালে চুমু খেয়ে অরণি বলেছিল, “‌চিন্তা কোরো না ডার্লিং। বসের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেব।”

    শ্রীজিতা হাত বাড়িয়ে জামাটা টেনে নিয়ে খাট থেকে নেমে বলেছিল, “‌শুধু তোমার কোম্পানি হলে চলবে না। তোমার চেনা অন্য জায়গাতেও বলতে হবে। নতুন দায়িত্ব আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।”‌

    অরণি টানটান হয়ে দাঁড়ানো শ্রীজিতার দিকে তাকিয়েছিল। নগ্ন শ্রীজিতা হাতের জামাটা দিয়ে শরীরের সামনের একটু অংশ শুধু ঢেকে রেখেছে। সে কি আবার অরণিকে প্রলুব্ধ করছে?‌

    “‌অ্যাই, ড্যাব ড্যাব করে কী দেখছ?‌”‌

    অরণি শুয়েই-শুয়েই হাত বাড়াল। শ্রীজিতা জামা দিয়ে শরীরের আর একটু অংশ ঢাকার অভিনয় করে। তাতে সে আর একটু উন্মুক্ত হয় যেন। চোখ পাকিয়ে বলেছিল, “‌ইস্‌ আর নয়।”

    “প্লিজ়।”‌

    শ্রীজিতা বলেছিল, “‌না, আবার পরে। তুমি আগে ফিরে গিয়ে কাজ পাঠাও।”

    অরণি বলেছিল, “‌ঠিক আছে। তোমার নতুন ডিভিশনের কথা জানিয়ে মেল পাঠাও।”‌

    শুধু অরণির কোম্পানি নয়, সব পার্টির কাছেই মেল পাঠাতে হবে। ড্রাফ্‌ট বানিয়ে কর্ণ রায়কে দেখাতে হবে।

    ঋদ্ধ বলল, “কী গো শ্রীজিতাদি, ট্রিট দিলে না? এতবড় প্রোমোশন পেলে। তুমি তো এখন বস।‌”‌

    শ্রীজিতা বলল, “বস না ছাই। কাজ ঠিকমতো না করতে পারলে ফায়ার করবে।”

    ঋদ্ধ বলল, “‌তার আগেই খাইয়ে দাও।”‌

    শ্রীজিতা বলল, “‌দাঁড়াও ব্যাঙ্কে স্যালারি ঢুকুক।”‌

    ঋদ্ধ বলল, “‌আমি কি রাক্ষস যে, আমাকে খাওয়াতে তোমার গোটা স্যালারি লেগে যাবে?‌”

    ঋদ্ধ বয়সে শ্রীজিতার চেয়ে ছোট হলেও, এই কোম্পানিতে বছরতিনেক আগে জয়েন করেছে। কাজে সিরিয়াস, কিন্তু মানুষ হিসেবে মজার। কথা বলার সময় উইট মিশিয়ে দেয়। ওয়ার্কলোড যতই বাড়ুক, টেনশনে ভোগে না। তবে সম্প্রতি এই ছেলে সমস্যায় পড়েছে। কস্তুরী নামে এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে। সুন্দরী মেয়েটি এই অফিসেই কাজ করে। ডাকাবুকো ধরনের। প্রেমে বিশ্বাস করে না। কস্তুরী ঋদ্ধকে পাত্তা দিচ্ছে না। ‌ঋদ্ধ নানাভাবে চেষ্টা করেও, বিষয়টা পাকাতে পারছে না। কস্তুরী কেমন যেন ফসকে-ফসকে যায়। এই নিয়ে অফিসে চাপা হাসিঠাট্টা রয়েছে। সবাই বলে, “‌ঋদ্ধ, ওর ভালবাসা ঠিকমতো মার্কেটিং করতে পারছে না।”

    শ্রীজিতা বলল,‌ “‌তোমাকে তো শুধু একা খাওয়ালে চলবে না। আরও অনেকে আছে। তারাও তো খেতে চেয়েছে।”‌

    ঋদ্ধ বলল, “‌সে পরে হবে। আপাতত তুমি শুধু আমাকে খাইয়ে দাও শ্রীজিতাদি। খুব বেশি হলে আর দু’–‌একজনকে ডাকতে পারো।”‌

    শ্রীজিতা চোখ নাচিয়ে বলল, “আবার দুই কেন?‌ একজন বলো। তুমি আর কস্তুরী, তাই তো?‌”‌

    ঋদ্ধ স্মার্ট ছেলে। হেসে বলে, “‌সবই তো জানো।”‌

    শ্রীজিতা বলে, “‌আমি কেন, অফিসের সবাই জানে। দু’জনে একান্তে বসতে গেলে বাপু আমাকে মাঝখানে টানছ কেন?‌ নিজেরা গিয়ে বসে যাও না।”

    ঋদ্ধ অভিনয়ের ভঙ্গিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “‌‌ওইটাই তো হচ্ছে না। চেষ্টা কি কম করছি?”‌

    “কেন,‌ কস্তুরী তোমার সঙ্গে বসতে চায় না?‌”‌

    ঋদ্ধ হতাশ গলায় বলল, “সেটা হলেও তো বুঝতাম। চায় না যখন মিটে গেল। এই মেয়েটাকে তো বুঝতেই পারছি না। আসলে কী জানো শ্রীজিতাদি, প্রেম ইজ় ভেরি টাফ। গ্রিপে নেওয়ার জন্য যতই আগে থেকে ডেটা কালেক্ট করি না কেন, সামনে গেলে সবটা ঘেঁটে যাচ্ছে।”

    শ্রীজিতা বলল, “‌প্রেমের কথা নিজের মুখে বলে ফেলাটা সবচেয়ে সেফ। একবার ট্রাই নিয়ে দেখতে পারো তো।”‌

    ঋদ্ধ আঁতকে উঠে বলল, “‌ওরে বাবা, দু’-একবার চেষ্টা করে ধমক খেয়েছি জোর। হোয়াটসঅ্যাপে একবার লিখে বিপদে পড়েছিলাম। সাতদিন ব্লক। সরি টরি বলে ম্যানেজ করেছি কোনওরকমে।”‌

    “‌তোমার প্রেম দেখছি কঠিন পথ ধরে আসছে।”‌

    “তুমি কী করে প্রেম করেছিলে শ্রীজিতাদি?‌ সিনিয়র হিসেব দু’-একটা টিপস তো দিতে পারো। অ্যাপ্লাই করে দেখতাম।”‌

    এবার থমকে গেল শ্রীজিতা। এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে শুকনো হেসে বলল, “আমার টিপস মানলে বিপদ আছে। প্রেমের ব্যাপারে আমার রেকর্ড খুব খারাপ।”‌

    ঋদ্ধ বুঝতে পারল, কথাটা বলা ঠিক হয়নি। শ্রীজিতাদির বিয়ে যে ভেঙে গিয়েছে, সেকথা সকলের মতো সে-ও জানে। তাড়াতাড়ি বলল, “‌সরি শ্রীজিতাদি। আমি এভাবে বলতে চাইনি। একেবারেই কথার পিঠে কথা বলেছি।”‌

    শ্রীজিতা হাত বাড়িয়ে ঋদ্ধর গায়ে রাখল। হেসে বলল, “‌ধুস, এতে মনে করার কী আছে?‌ তুমি তো মাইন্ড করার মতো কিছু বলোনি । আমিই রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছি। যাক, ছাড়ো ওসব। জীবনে প্রেম খুব সুন্দর একটা ঘটনা ঋদ্ধ। সেই ঘটনার পরিণতি কী হল, তাতে এর সৌন্দর্যের বিন্দুমাত্র লাভ ক্ষতি হয় না। তুমি এখন প্রেমের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছ। সেটাই এনজয় করো।”‌

    ঋদ্ধ আবেগঘন হয়ে বলল, “‌থ্যাঙ্ক ইউ শ্রীজিতাদি। এরকমভাবে আমি কখনও ভাবিনি। মনটা অনেক হালকা হয়ে গেল।”

    শ্রীজিতা চোখ কটমট করে বলল, “‌আর থ্যাঙ্ক ইউ নয়। এবার কেটে পড়ো। অনেক কাজ আছে।”

    ঋদ্ধ চলে যাওয়ার পর শ্রীজিতা ঘড়ি দেখল। আজ মাকে নিয়ে আসতে হবে। বাবা মারা যাওয়ার পর মা এসে মাঝে মাঝে কয়েকদিন মেয়ে–‌নাতনির কাছে থেকে যায়। বাবা বেঁচে থাকতেও দু’জনকে এনে রাখতে চেয়েছিল সে। মাকে বলেছিল। অনিমেষ বসু রাজি হননি।

    “মেয়ে এসে এ বাড়িতে থাকে না, আমরা কেন তার বাড়িতে গিয়ে থাকব?‌ তুমিও যাবে না জয়া।”‌

    শ্রীজিতা হেসে বলত, “‌তোমাদের তো আমি কখনও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিইনি। তোমরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।”

    জয়া মেয়েকে বলেছিলেন, “‌তুই এখনও সেসব ভুলবি না?‌”‌

    শ্রীজিতা বলেছিল, “‌খানিকটা পেরেছি, সবটা পারিনি। বাবা গুন্ডা দিয়ে মেরে আমার গানের মাস্টারমশাইকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। বেচারি আর কখনও ঠিকমতো হারমোনিয়াম বাজাতে পেরেছে কি না সন্দেহ। এটা ভুলব কী করে?‌”‌

    জয়ার বয়স বেড়েছে। কিন্তু স্বামীর ‘‌অন্যায়’‌ কাজকে সমর্থন করার অভ্যেস যায়নি।

    “‌এটা তুই কেমন কথা বলছিস শ্রী!‌ একটা লোক মেয়েকে টিজ় করলে কোন বাবা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে?”‌

    শ্রীজিতা চোখ বড় করে বলেছিল, “‌টিজ়!‌ এক কিশোরীকে ভদ্রভাবে ভাল লাগার কথা জানানোকে টিজ় করা বলে নাকি?‌ তাও তো একবারই চিঠি লিখেছিল। আর কিছু নয়। আমিও পাত্তা দিইনি। তার শাস্তি মেরে হাত–‌পা ভেঙে দিয়ে?‌ সেদিন বুঝতে পারিনি মা, পরে আর একটু বড় হয়ে বুঝেছিলাম, বাবা সেদিন স্যার নয়। মেরেছিল আমাকে। মেরে বুঝিয়ে দিয়েছিল, ভবিষ্যতে কোনও ভালবাসাবাসির মধ্যে যাওয়ার সাহস যেন না পাই।”‌

    জয়া বললেন, “‌তুই নিজের বাবাকে শুধু ভুলই বুঝেছিস।”‌

    “‌তাই হবে। বাবা আমার ভালর জন্যই ফোন করে কলেজের প্রিন্সিপালকে ধমক দিয়েছিল। যাতে লেখাপড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে না পারি। এটা কী করে ভুলব মা?‌”

    “‌ঠিক আছে এসব পুরনো কাসুন্দি আর ঘাঁটতে হবে না।”‌

    শ্রীজিতা বলেছিল, “‌ঠিক, তোমরাও ঘেঁটো না। আমি চাই, তোমরা মাঝে-মাঝে আমার ফ্ল্যাটে এসো। তোমাদের একটু যত্নআত্তি করি। বিয়ের পর একথা বলতে পারিনি। যে বাড়িতে ছিলাম, সেখানে আমাদেরই ঠিকমতো ধরত না।”

    জয়া বলেছিল, “‌আমাকে বলে কী হবে। তোর বাবা রাজি নয়।”‌

    শ্রীজিতা বলেছিল, “‌আচ্ছা, আমি গিয়ে বোঝাব।”‌

    জয়া হতাশভাবে বলেছিলেন, “‌বুঝিয়ে লাভ হবে! তোর বাবা কিছু বুঝতে চায় না। তুইও তোর বাবার মতো গোঁয়ার হয়েছিস।”

    “‌তাও তো ভাল। বাবার একটা কিছু পেয়েছি।”

    শ্রীজিতা তার জেদ ধরে রাখেনি। বাড়িতে গিয়ে কয়েকদিন থেকেছে। তবে সেই একবারই। অনিমেষ বসু অসুস্থ হওয়ার পর। তৃতীয় দিন শ্রীজিতা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করার আগেই ভদ্রলোক মারা যান। কারও সামনে কাঁদেনি শ্রীজিতা। একা ঘরে বসে বাবার জন্য কেঁদেছিল। যতটা শোকে, তার চেয়ে অনেক বেশি কেঁদেছিল অভিমানে। মানু্ষটা তাকে বুঝতে চায়নি। হাতের পুতুল বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল।

    পরে মাকে পাকাপাকিভাবে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল শ্রীজিতা। জয়া প্রবল আপত্তি তোলেন। নিজের বাড়ি-সংসার, নিজের স্মৃতি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকবেন না। শ্রীজিতা জোর করেনি। সে নিজের মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছে। মা সেসব মেনে নিতে পারবে না। অফিস থেকে রাত করে বাড়ি ফেরা, পার্টি থেকে অল্পস্বল্প মদ খেয়ে ফেরা, কোনওদিন সকালে বেরিয়ে রাতে ঢোকা। শুধু নিয়মে নয়, এসব মায়ের বিশ্বাসে ধাক্কা দিত। তা ছাড়া সে চায়ও না, দীর্ঘ সময় তোয়া তার দিদিমার কোল ঘেঁষে থাকুক। আর ‘মেয়েদের এটা করতে‌ নেই, মেয়েদের সেটা করতে নেই’ টাইপের ভুল শিক্ষা পাক। মাঝে-মাঝে এসে থেকে যাবে, ব্যস ওইটুকুই। এবার যেমন রোববার পর্যন্ত থাকলে ভাল। তোয়ার জন্মদিনের পার্টি হবে। ওর বন্ধুরা আসবে। দিদিমা যদি ডিনারে একটা কোনও প্রিপারেশন বানিয়ে দেয়, সেটা একটা বাড়তি মজা হবে ছোটদের কাছে। অবশ্য মা রোববার পর্যন্ত থাকবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

    পুলকার সবাইকে নিয়ে বেরোবে। শ্রীজিতার জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা এখনও হয়নি। তাই অফিস থেকে বেরিয়ে ক্যাব ডাকতে চেষ্টা করল শ্রীজিতা। পারল না। মোবাইলে অ্যাপ বলল,‌‌ গাড়ি পেতে দেরি হবে। ভাড়াও অনেক।‌ এখন পিক আওয়ার চলছে। শ্রীজিতা একটু চিন্তায় পড়ল। এমনি ট্যাক্সিরও দেখা নেই। যে ক’টা হুস-হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে, সব ভরতি। আচ্ছা মেট্রো করে গেলে কেমন হয়? এখান থেকে মেট্রো স্টেশন অটোতে মিনিট বারো। বেলগাছিয়া স্টেশনে নেমে আবার না হয় একটা অটোতে উঠে পড়া যাবে। ওখান থেকে কালিন্দি যেতে কতটুকু?‌ ট্যাক্সি পেলে তো কথাই নেই। মাকে তুলে নিয়ে ওই ট্যাক্সিতেই ফেরা যাবে! যেতে-যেতেই না হয় মাকে বলে দেবে, “‌রেডি হও। এক মিনিটও দাঁড়াব না।”‌‌

    রাস্তা পেরোতেই অটো পেয়ে গেল শ্রীজিতা। আজকাল বাস–অটোর মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়া হয় না। বেশ জোরে হাওয়া লাগছে গায়ে। শ্রীজিতার মনে হল, মাঝে-মাঝে গাড়ি ছেড়ে এইভাবে কলকাতায় ঘুরে বেড়ালে বেশ হয়। তোয়া কি কখনও অটোয় চেপেছে?‌ বিধান যখন ওকে স্কুলে নিয়ে যেত, তখন নিশ্চয়ই চড়িয়েছে। একদিন ট্রামে চড়াতে হবে মেয়েটাকে। কলকাতা ছেড়ে বাইরে পড়তে যাওয়ার আগে শহরটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। নিজেরই তো শহর। কিন্তু তার কি আর সময় হবে?‌ কাজের চাপ বাড়বে। ছুটি বলে আর কিছু থাকবে বলে মনে হয় না। শ্রীজিতা রড ধরে বাইরের ছুটন্ত কলকাতার দিকে তাকিয়ে রইল। মেট্রোতে খুব বেশি ভিড় ছিল না। বসার জায়গা না পাওয়া গেলেও, ঠেলাঠেলি করতে হয়নি। বেলগাছিয়া স্টেশন থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিও পাওয়া গেল। কোথায় যেতে হবে শুনে ‌বলল, “চলুন, কিছু একস্ট্রা দেবেন‌। আমার ওদিকের গাড়ি।”‌

    শ্রীজিতা পারলে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। জয়া ব্যাগ নিয়ে তৈরিই ছিলেন। সদর দরজায় তালা লাগিয়ে বেরিয়ে এলেন। গাড়িতে বসলে মা–‌মেয়ের টুকটাক কথা হতে লাগল। সংসারের কথা। রান্নার লোক, বাড়ির মেরামতি, অনিমেষ বসুর জমিয়ে রাখা টাকা।

    শ্রীজিতা বলল, ‌“মা, বাড়িটা এবার বিক্রি করে দাও। একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকবে।”

    জয়া বললেন, “‌কী বলছিস!‌ তোর বাবার এত সাধের তৈরি বাড়ি বেচে দেব?‌”‌

    শ্রীজিতা হেসে বলল, “আচ্ছা বেচো না। বাবার সাধ আঁকড়ে বসে থাকো।”‌

    জয়া বিরক্ত হয়ে বললেন, “‌এখন বড় হয়েছিস। নিজের পয়সায় ফ্ল্যাট করেছিস। এখন তো বাবার বাড়িকে ছোট করবিই। ওই বাড়ি না থাকলে কোথায় বড় হতিস?‌”

    শ্রীজিতা বলল, “‌ছোট করলাম কই! প্র্যাকটিক্যাল কথা বললাম। তোমাদের এটাই সমস্যা। কথা শুনতে চাও না। অত বড় বাড়ি মেনটেন করা কি সহজ কথা? কে করবে?”

    জয়া মুখ ঘুরিয়ে বলল, “যে-ই করুক, তোকে বলব না।”‌

    মায়ের রাগ দেখে শ্রীজিতা হেসে বলল, “‌ঠিক আছে, যা খুশি করো। ঝগড়া কোরো না তো মা। ক’দিন আমার ওখানে শুধু হাসিমুখে থাকবে।”

    ট্যাক্সি ছুটছে। ড্রাইভারটি ভাল চালাচ্ছে। জ্যাম আর সিগন্যাল এড়িয়ে বাড়ির কাছে নিয়ে এসেছে দ্রুত। ভাল হয়েছে। মা তাড়াতাড়ি ডিনার করে। একে একটু বেশি করেই ‘‌এক্সট্রা’‌ দিতে হবে। তবে লোকটা নিজের মনে বকছে। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছেঁড়া-ছেঁড়া কথা কানে আসছিল শ্রীজিতার। “বড়রা নিয়ম ভাঙে। আর যত ধড়পাকড় আমাদের। কই বাস, লরিকে তো কেউ কিছু বলে না। বেটারা রোজ অ্যাক্সিডেন্ট করে পার পেয়ে যাচ্ছে।”‌

    এইসব বলতে-বলতে লোকটা হঠাৎ জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “‌এই যে এখানে, এখানে.‌.‌.‌”

    ডান দিকে মুখ ফেরাল শ্রীজিতা। জয়া বললেন, “‌কী এখানে?‌”

    ড্রাইভার বলল, “‌কাল সকালে এখানে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। বাস থেকে একটা লোক ছিটকে পড়ল। মনে হয়, এতক্ষণে মরেই গিয়েছে। মনে হয় কেন, মরেই গিয়েছে।”

    জয়া চোখ বড় করে বললেন, “ওমা!‌ তাই নাকি?‌ ‌কী করে পড়ল?‌”

    শ্রীজিতা চাপা গলায় বলল, “‌উফ মা, চুপ করো তো। কত লোকই তো বাস থেকে পড়ে।”

    ড্রাইভার বলল, “‌কী করে আবার! বাসগুলো যা করে, তাড়াহুড়ো করে রানিং-এ নামিয়ে দিয়েছে। সিঁড়ি থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল লোকটা। মোবাইল টোবাইল ভেঙেচুরে একসা.‌.‌.‌আমি তখন সবে গলি থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠেছি.‌.‌. লোকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে.‌.‌. রক্তে ভেসে যাচ্ছে।‌”

    জয়া বললেন,‌ “‌আহা রে!‌”

    এই ‘‌আহা রে’ শুনে লোকটি ঘটনা বলায় আরও উৎসাহ পেল, “মজার ব্যাপার কী জানেন মাসিমা?‌ সবার হাতে ব্যাগ–‌ছাতা থাকে, এই লোকের হাতে ছিল একটা টব।”‌

    এবার শ্রীজিতাই বলে বসল, “‌টব!‌”‌

    ড্রাইভার বলল, “‌হ্যাঁ দিদি, গাছ ছিল তাতে। দেখি রক্তের মধ্যে ভেঙেচুরে পড়ে আছে.‌.‌.‌শালা হারামি বাস.‌..‌পালাল জোরে‌.‌..‌”‌

    স্তব্ধ হয়ে গেল শ্রীজিতা। টবে গাছ নিয়ে একটা লোক বাস থেকে পড়ে গেছে!‌ বিধানের কাল মেয়ের জন্য গোলাপ গাছ আনার কথা ছিল না?‌ সে গাছ কি টবে বসিয়ে নিয়ে আসছিল? তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে!‌ ক্ষণিকের জন্য শ্রীজিতার মনে হল, শরীরটা ভারী হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। বিধান কেন টবে গাছ আনবে?‌ অতদূর থেকে কেউ টব আনে?‌‌ নিশ্চয়ই লোকটা অন্য কেউ।

    অন্ধকারেও জয়া মনে হয় মেয়ের শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখতে পেলেন। বললেন, “কী হয়েছে শ্রী?‌”‌‌

    শ্রীজিতা একথার জবাব না দিয়ে ঝুঁকে পড়ে, সামনের সিট ধরে ফিসফিস করে বলল, “‌ভাই, আপনি কি লোকটাকে দেখেছেন?‌”‌

    ড্রাইভার বলল, “‌দেখেছি কী ‌দিদি!‌ আমিই তো হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, একটা অল্পবয়সি মেয়ে ছুটে এসে তুলল। আরও দু’জন ছিল।”‌

    শ্রীজিতা চোয়াল শক্ত করে বলল, “‌ডান দিকে যাবেন। একটু গিয়ে বাঁ হাতে।”

    ট্যাক্সি ডান দিকে ঘুরল।

    “লোকটা মনে হয় মেয়েটার কাঁধে মাথা রেখে ট্যাক্সিতেই মরে গেল।”‌

    মেয়েটা কে?‌ কথাটা ভেবেই লজ্জা পেল শ্রীজিতা। কোন অচেনা–‌অজানা লোককে একটা মেয়ে রাস্তা থেকে রেসকিউ করেছে, আর সে ভাবছে!‌ না, সত্যি মন ছোট হয়ে গিয়েছে।

    “‌এই হাউজ়িং-এর গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দিন।”‌

    গাড়ি থেকে নামল শ্রীজিতা, মাকে নামাল। ইচ্ছে করেই মিনুকে ফোন করে নীচে ডাকেনি। তোয়া দরজা খুলে চমকে যাবে। ভাড়া আর ‌‘‌এক্সট্রা’‌ দিতে দিতে শ্রীজিতা নিচু গলায় বলল, “‌ভাই, আপনি লোকটাকে কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন?”‌

    ড্রাইভার অবাক হয়ে শ্রীজিতার মুখের দিকে একটুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। হাসপাতালের নাম বলল। তারপর নিজের মনে বলল “হাসপাতালের নাম শুনে আর কী হবে?‌ ও লোক তো মরেই গিয়েছে।”‌

    শ্রীজিতা বলল, “কোন‌ ডাক্তার?‌’‌

    ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলল, “‌পাগল? ডাক্তার অবধি কে ওখানে থাকবে?‌‌ ওই মেয়ে যেই ধরাধরি করে লোকটাকে নামিয়েছে, আমি গাড়ি নিয়ে দৌড়। এসব ডেথ কেসে একদম থাকতে নেই। একবার বিরাট ফেঁসে গেছিলাম।”‌

    ফ্ল্যাটে ঢোকার সঙ্গে-সঙ্গে দিদিমাকে নতুন ঘর দেখানোর জন্য টানতে-টানতে নিয়ে গেল তোয়া।

    জয়া বলার চেষ্টা করলেন, “‌আরে বাবা আগে ব্যাগটা রাখতে দে।”‌

    “‌না, আগে চলো।”‌

    কাল রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমন্ত তোয়াকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিল শ্রীজিতা। ধাপে-ধাপে অভ্যেস করাতে হবে। তাকেও অভ্যস্ত হতে হবে। এতদিন মেয়েকে পাশে নিয়ে রাতে ঘুমিয়েছে।

    শ্রীজিতা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়ল, ‌“এক গ্লাস খুব ঠান্ডা জল খাওয়া মিনু।”‌

    মিনু জল এনে বলল, “‌দিদি, তোমার কি শরীর খারাপ?‌”‌

    এই কথার জবাব না দিয়ে লম্বা চুমুকে জল শেষ করল শ্রীজিতা। তারপর চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “‌হ্যাঁরে, জামাইবাবু এসেছিল?‌”‌

    মিনু অবাক হল। এ কেমন প্রশ্ন ! জামাইবাবু এলে দিদিকে সে বলবে না?‌ ফোন করে বলে দেবে। “‌না তো আসেনি। ফোনও করেনি। গাছ গাছ করে তোয়া ঘ্যানঘ্যান করছিল।”

    শ্রীজিতা অন্যমনস্কভাবে বলল, “‌ও, আচ্ছা।”

    রাতে পাঁচবার বিধানের নম্বরে ফোন করল শ্রীজিতা। ফোন বন্ধ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত
    Next Article পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    Related Articles

    প্রচেত গুপ্ত

    দেরি হয়ে গেছে – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    রুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    মাটির দেওয়াল – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নুড়ি পাথরের দিনগুলি – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নিষাদ – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }