Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ধুলোবালির জীবন – প্রচেত গুপ্ত

    প্রচেত গুপ্ত এক পাতা গল্প170 Mins Read0

    ধুলোবালির জীবন – ৪

    ৪

    শ্রীজিতা নিজের কিউবিকলে ঢুকে সবে ডেস্কে ব্যাগ রেখেছে, ইন্টারকম বেজে উঠল। রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই বুঝতে পারল ওপাশে কর্ণ রায়।

    “বলুন স্যার।”

    “শ্রীজিতা, একবার ঘরে আসতে হবে। আর্জেন্ট।”

    শ্রীজিতা বলল, “এখনই আসছি স্যার।”

    শ্রীজিতা হালকা ঘাবড়াল। কর্ণ রায় এই অফিসের বস। গোটা ইস্টার্ন জ়োনের দায়িত্বে রয়েছে। বড় একটা জায়গা জুড়ে কাজ করে। তার আন্ডারে পঞ্চাশ–বাহান্ন জন স্টাফ এই অফিসে কাজ করে। কাজ অনেক। ‘প্রোডাক্ট ভায়াবিলিটি’ দেখতে হয়‌। বাজারে নতুন কোনও জিনিস এলে মানুষ তাকে কতটা গ্রহণ করবে, আদৌ করবে কি না, তার রিপোর্ট তৈরি করতে হয়।‌ প্রোজেকশন রিপোর্ট। হাটে–মাঠে, বাজারে, শপিংমলে ঘুরে ডেটা কালেক্টররা তথ্য সংগ্রহ করে। এই সার্ভের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া আছে। তারা সেইসব তথ্য মোটের উপর সাজিয়ে গুছিয়ে একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়। কর্ণ রায়ের টিম সেই রিপোর্টের উপর কাজ করে। চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে পার্টিকে দেখায়। সেখানে যেমন নতুন কোনও জিনিস আদৌ চলবে কি না বলা থাকে, তেমন কীভাবে চালানো যেতে পারে, সেই পরামর্শও দেওয়া হয়। যে কোম্পানি যেমন রিপোর্ট চাইবে।

    কর্ণ রায় তার স্টাফকে বারবার সতর্ক করে দেয়, “মনে রাখবেন, আমাদের ‌কাজ যত ইন্টারেস্টিং, ততটাই ঝামেলার। আমাদের দায়িত্ব ভবিষ্যৎ বলা, কিন্তু জ্যোতিষীর মতো করে নয়, সায়েন্টিফিক মেথডে। আবার শুধু অঙ্ক কষে ছেড়ে দিলেই হবে না। আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী যত মিলবে, কোম্পানির সুনাম তত ভাল হবে। বিজ়নেস তত বাড়বে। কিছু ডেটা কম্পিউটারে ফেললাম আর অপশন দেখলাম, তাতে হবে না। বিভিন্ন জায়গায় ক্রেতাদের রুচি, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, অভ্যেস আলাদা-আলাদা। আমাদের এই ইস্টার্ন জ়োন তো খুব জটিল। এক-একটা পকেটে মানুষ এক-এক রকম। এই কারণেই সবটা জেনে বুঝে কাজ করতে হবে।”

    কাজ ঝামেলার হলেও, শ্রীজিতার খুব পছন্দ। কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রায় সব কাজই করতে হয়েছে। চাকরির একেবারে প্রথমদিকে ডেটা কালেকশন দেখতে ক’দিনের জন্য মুর্শিদাবাদ যেতে হয়েছিল। কর্ণ রায় বলেছিল, গোড়া থেকে না জানলে কাজ শেখা যাবে না। সবাইকে মাঠে নেমে কাজ শিখতে হবে। শ্রীজিতাকেও যেতে হবে। এখনও মনে আছে, প্রোডাক্টটা গুঁড়ো দুধ ধরনের কিছু একটা ছিল। গ্রামের মেয়েরা তো প্রশ্ন শুনে হেসে অস্থির।

    “ওমা গো, আমাদের বাড়িতে গাই গোরু আছে। আমরা কেনে গুঁড়ো খাব গো!‌”

    এই ট্যুরে যাওয়া নিয়ে বিধান আপত্তি করেছিল। রাতে খেতে বসে ট্যুরের কথা জানিয়েছিল শ্রীজিতা। ততদিনে অবশ্য দু’জনের মধ্যে অনেকটা ফাটল হয়ে গিয়েছে। শ্রীজিতা বলেছিল, “ক’দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। অফিসের কাজ।”

    বিধান খাওয়া থামিয়ে মুখ তুলে বলেছিল, “বাইরে যাচ্ছ!‌ মানে?”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “এমনভাবে অবাক হলে, যেন চাকরিতে ট্যুর বলে কিছু হয় না। সবই তোমার অফিসের মতো ঘরে বসে গুলতানি। চা–পান খেয়ে অফিস টাইম কাটিয়ে দেওয়া।”

    বিধান বলেছিল, “ক’দিনের জন্য যাবে? ফিরবে কবে?”

    শ্রীজিতা মুখ তুলে বলেছিল, “কী অ্যাসাইনমেন্টে বাইরে যাচ্ছি, কেমনভাবে কাজ শিখব, শিখলে অফিসে আমার লাভ কী হবে, এসব প্রশ্ন নেই তোমার? একটাই কথা ক’দিন পরে ফিরবে?”

    পুরুষ মানুষ ‌দু’ রকম হয়। এক, ধমক খেয়ে তেড়েফুঁড়ে ওঠা। দুই, ধমক খেলে কুঁকড়ে যাওয়া। বিধান হল দ্বিতীয় ধরনের মানুষ, “আসলে মেয়েটা বাড়িতে থাকবে তো।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “তাতে কী? আমি অফিসকে বলব, মেয়ে বাড়িতে রয়েছে সুতরাং আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে হবে? বাজে কথা বলো কেন? সব অ্যারেঞ্জমেন্ট তো করে যাচ্ছি। মিনু রইল।”

    বিধান নিচু গলায় বলেছিল, “তোমার মাকে ক’দিন.‌.‌.‌”

    “চুপ করে গেলে কেন? পুরোটা‌ বলো। মাকে ক’দিন কী করতে বলব? এখানে এসে থাকতে বলব?”

    বিধান নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি বলেছিল, “না-না, তা নয়।‌”

    “কী বলছ ভেবেচিন্তে বলবে। তুমি জানো বাড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন!‌ জানো না? জানো না তোমাকে বিয়ে করার জন্য সেই সম্পর্ক আজও স্বাভাবিক হয়নি? কোনদিন হবেও না। আমার বিয়ের পর থেকে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ক’টাদিন বাঁচবে ঠিক নেই। তারপরেও আমি মাথা নোয়াইনি, নোয়াবও না। একরাতের জন্য ও বাড়িতে থাকিনি। এক কানাকড়ি সাহায্য নিইনি। সবই তো জানো।‌”

    বিধান মুখ নামিয়ে বলেছিল, “জানি।”

    শ্রীজিতা ঝাঁঝিয়ে বলেছিল, “জানো যখন, বাজে কথা বলছ কেন‌?”

    শ্রীজিতা ঠিকই বলেছে। বিধানকে বিয়ে করার জন্য বাড়ির সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ছাড়তে হয়েছে শ্রীজিতাকে। বিধানকে বিয়ে করাটা ছিল তার বাড়ির প্রতি ‘বিদ্রোহ’। এ ছাড়া তার সামনে কোনও উপায় ছিল না। একমাত্র মেয়ের ‘ভাল বিয়ে’ দেওয়ার জন্য মেয়ের কম বয়স থেকেই উঠেপড়ে লেগেছিলেন অনিমেষ বসু। শ্রীজিতা কলেজে পড়ার সময়েই স্কুলমাস্টার পাত্র এনে হাজির করেছিলেন। পারলে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দেন। দরিদ্র হলে একটা কথা ছিল। কিন্তু শ্রীজিতারা যথেষ্ট সচ্ছল, ধনীই বলা উচিত। আসলে বিয়ের জন্য এই তাড়াহুড়োর কারণ ভদ্রলোক মেয়ের ব্যাপারে ছিলেন অতিরিক্ত পজ়েসিভ। তাঁর ধারণা হয়েছিল, যতই লেখাপড়া শেখানো হোক, তাঁর সুন্দরী মেয়ে হয় ভুল করবে, নয় ফাঁদে পা দেবে। এমন কাউকে নিজে থেকে বিয়ে করে বসবে যা তার জন্য সর্বনাশের হবে। সেই সঙ্গে মেয়েটা হাতছাড়াও হবে। এটা তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া হবে অসম্ভব।

    অনিমেষ বসু একজন রাগী, দাপুটে মানুষ। সেকেলে মনের। পূর্বপুরুষরা কবে জমিদার ছিল, তাই নিয়ে হামবড়াই করতেন। বাড়িতে ডাঁই করে রাখা আদ্যিকালের কাঁসা–‌রুপোর বাসন নিয়মিত ঝাড়পোঁচ হত।

    হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় মেয়ে ভাল রেজ়াল্ট করলেও তাকে পছন্দমতো নামী কলেজে ভরতি হতে দেননি অনিমেষ। কারণ কোএডুকেশন। ছেলেদের সঙ্গে মেয়ে পড়বে, এটা তিনি মানতে পারেননি। শ্রীজিতা কান্নাকাটি পর্যন্ত করেছে। অনিমেষ বসু কড়াভাবে বলেছিলেন, “কলকাতায় এমন অনেক ভাল কলেজ আছে, যেখানে শুধু মেয়েরা পড়ে এবং খুব ভাল রেজ়াল্ট করে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “আমার যে অনেক দিনের স্বপ্ন বাবা।”

    অনিমেষ বসু থমথমে গলায় বলেছিলেন, “কী স্বপ্ন? ছেলেদের পাশে বসে পড়ব? তাদের সঙ্গে ক্যান্টিনে গুলতানি মারব? সিনেমা, থিয়েটার‌ যাব?”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “বাবা, এসব মান্ধাতা আমলের চিন্তা। এখন ছেলে মেয়ে সব সমান। তুমি প্রাচীন যুগে পড়ে আছ।”

    অনিমেষ বসু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলেছিলেন, “আমাকে যুগ চেনাতে এসো না শ্রী। জেন্ডার ইকুয়ালিটির ছেঁদো কথা বলবে না। এসব টিভির পরদায় আর খবরের কাগজের পাতার চলে, বাস্তব জীবনের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। বাস্তবে ছেলে–মেয়ে আলাদা। মন শরীর দুটো কারণেই আলাদা। বুদ্ধি, কর্মক্ষমতা নিয়ে তার বিচার হয় না। যাক, যা বলছি তুমি সেইমতো কলেজে ভরতি হয়ে যাবে। তোমার রেজ়াল্ট ভাল, ফলে ভরতি হতে সমস্যা হবে না।”

    সংসারের ছোট বড় সব সিদ্ধান্তেই এই মানুষটার কথা চূড়ান্ত। মেয়ের কলেজ তো যথেষ্ট বড় বিষয়। মনে রাগ নিয়েও শুধুমাত্র মেয়েদের কলেজে ভরতি হয়ে এসেছিল শ্রীজিতা। কিন্তু বিয়ের সম্বন্ধের খবর পেয়ে মায়ের উপর খুব চেঁচামেচি করেছিল, “বাবা কী ভেবেছে বলো তো মা?”

    জয়া মেয়েকে বলেছিলেন, “এতে ভাবাভাবির কী আছে? মেয়ের জন্য ভাল ছেলের সন্ধান করাটা তো অন্যায় নয়। মেয়ে বড় হলে সব বাবাই চাইবে মেয়ের ভাল বিয়ে হোক।”

    শ্রীজিতা আরও রেগে বলেছিল, “সব ব্যাপারে যেমন তুমি বাবার দাবড়ানি, ছড়ি ঘোরানো মুখ বুজে মেনে নাও, এক্ষেত্রেও নেবে?”

    জয়া বলেছিলেন, “এটা দাবড়ানি নয়। তুই ফালতু মাথা ঘামাচ্ছিস শ্রী।”

    “তুমি কি বাবাকে সাপোর্ট করছ? তুমিও কি চাইছ আমি লেখাপড়া বন্ধ করে মাথায় ঘোমটা টেনে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে পড়ি?”

    “লেখাপড়া বন্ধ করার কী আছে? একটা–দুটো করে ছেলে খোঁজা শুরু হয়েছে মানে কি এখনই বিয়ে হচ্ছে? কথায় আছে বিয়ে হতে লাখ কথা লাগে। তার মধ্যে তোর কলেজে পড়া শেষ হয়ে যাবে।”

    শ্রীজিতা আঙুল উঁচিয়ে বলেছিল, “মা, একটা কথা বাবাকে বলে দিয়ো। আমি এখন কেন, কখনওই বাবার ঠিক করে দেওয়া ছেলেকে বিয়ে করব না। বাবা যদি মনে করে সে এমন একটা জামাই খুঁজে বের করবে যে তোমার মতোই তার দাপটে মিউ-মিউ করবে, তা হলে ভুল করছে। তার চেয়ে বড় কথা আমি এখন পড়ব। কলেজ পাশ করার পর আরও পড়ব। তুমি বাবাকে থামতে বলো। নইলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।”

    সেবারের মতো অনিমেষ বসু চুপ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভরতি হতেই তোড়জোড় শুরু করলেন ফের। স্ত্রীকে ডেকে বললেন, “অনেক হয়েছে। আর লেখাপড়ার দরকার নেই। এবার মেয়েকে বিয়ে করতে বলো। আমার ছেলে দেখা হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার ছেলে। এরকম ভাল পাত্র চট করে পাওয়া যাবে না। মেয়ে যদি হাত থেকে একবার বেরিয়ে যায়, তাকেও কিন্তু ফিরিয়ে আনা যাবে না। মনে রেখো জয়া, এই বয়সটা হল হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বয়স।”

    জয়া খুবই উৎসাহী হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তার জামাই সহজ কথা নয়। মূলত বোকা ধরনের এই মহিলা স্বামীর দাপটের উপর চিরকালই‌ আস্থাশীল। তিনি মনে করেন, দাপুটে মানুষ সংসারের জন্য ভাল। সেই আস্থা আরও বেড়ে গেল।‌ মেয়েকে গদগদ গলায় বললেন, “তোর কপাল খুলে গেল শ্রী। বাবার উপর এত রাগারাগি করিস। দেখ সেই বাবাই তোর জন্য কত ভাল সম্বন্ধ এনেছে। ছেলে ডাক্তার। সব কিছু যদি ঠিকঠাক হয় এ বছরেই বিয়ে।”

    শ্রীজিতা চোখ কপালে তুলে বলেছিল, “সে কী!‌ এ বছর যে আমার ফাইনাল!”

    জয়া এসে মেয়ের পিঠে হাত দিয়ে হেসে বলেছিলেন, “ইউনিভার্সিটির ফাইনালে আর দরকার নেই তোমার। অনেক ফাইনাল হয়েছে। এবার নিজের জীবনের ফাইনালে ভাল করে পাশ করো দেখি।”

    শ্রীজিতা দাঁতে দাঁত ঘষে বলেছিল, “যাত্রামার্কা ডায়লগ আমাকে বলতে এসো না মা। আমি বিয়ে করব না।”

    “আমাকে বকছিস কেন? ছেলের বাড়ি থেকেই বলে দিয়েছে, আর পড়াশোনা লাগবে না। এবার ঘর সংসার। ছেলে নাকি অতি ভদ্র।”

    শ্রীজিতা হিসহিসিয়ে বলেছিল, “কেমন ভদ্র সে তো হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি। ভদ্রলোক ছাড়া কেউ লেখাপড়া বন্ধ করতে বলে? মা, তোমাকে আগেও বলেছি, এখন আবার বলছি, বিয়ে আমি করব না। বাবার বেছে দেওয়া ছেলেকে তো কখনওই নয়।”

    “বাবার উপর তোর এত রাগ কেন?”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “কেন তুমি জানো না? ছোটবেলা থেকে‌ ওই মানুষটার বাধা আর নিষেধে জেরবার হয়ে আছি। আমার বালিকা বয়স, কিশোরী বয়স এমনকী বড় বয়সের কোনও স্বাদ আমাকে বুঝতে দিল না। সবসময় এটা কোরো না, ওটা কোরো না। গানের গলা ভাল, তবু গাইতে দেয়নি। লেখাপড়ায় এত ভাল হয়েও নিজের পছন্দমতো কলেজে পর্যন্ত পড়তে দেয়নি। নেহাত হাতের কাছে মেয়েদের ইউনিভার্সিটি নেই, নইলে ঘাড় ধরে সেখানে ঢোকাত। সারা জীবন শুধু বুঝিয়ে গেল, আমি একটা মেয়ে, আমি একটা মেয়ে। বিশ্বের সব পুরুষ আমাকে রেপ করার জন্য ওত পেতে বসে আছে।”

    জয়া বলেছিলেন, “ছি-ছি, কী বলছিস এসব শ্রী!‌”

    ‌“ঠিকই বলছি মা। বাবা আমার গলায় ফাঁস পরিয়ে টেনে রেখেছে। মানুষটা অসুস্থ। বিয়ের নামে ওর হাতে আর একটা ফাঁস আমি তুলে দেব না। যদি কখনও বিয়ে করি, এমন ছেলেকে বিয়ে করব যে বাবার ধারে কাছেও থাকবে না। বাবার এই ডিক্টেটর চরিত্রকে ঘেন্না করবে।”

    শ্রীজিতা সেদিন মিথ্যে বলেনি। অনিমেষ বসু মেয়েকে নিয়ে বাড়াবাড়ির চরম করেছেন। অত্যাচার বললেও বেশি বলা হবে না। সারাক্ষণ না, না আর না। মেয়ে একা রাস্তায় বেরোবে না, বন্ধুর বাড়িতে গল্পগুজব করতে যাবে না, পিকনিকে যাবে না, স্কুলে ফাংশন থাকলে মাকে নিয়ে যাবে, রাত আটটা বাজলে ফিরে আসবে। কখনও বন্ধুর জন্মদিনে গেলে সেই বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন অনিমেষ। ঘনঘন ঘড়ি দেখতেন। শ্রীজিতার বন্ধুরা হেসে গড়িয়ে পড়ত, “রাজকন্যাকে দস্যুরা যাতে কিডন্যাপ না করে, তার জন্য রাজামশাই ইয়া বড় তরবারি হাতে অপেক্ষা করছেন। যাও রাজকন্যা, পিতার হাত ধরে গৃহে যাও।”

    কেউ হয়তো বলত, “কী করব বল! আমরা তো শ্রীর মতো সুন্দরী নই। তা হলে আমাদের বাবারাও এসে দাঁড়িয়ে থাকত।”

    চোখ ফেটে জল আসত শ্রীজিতার। অথচ সে ভাল মেয়ে ছিল। লেখাপড়ায় ভাল, স্বভাবেও শান্তশিষ্ট। বাবার এই আচরণে সে অপমানিত হত, ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসত।

    একবার কলেজে থেকে কল্যাণীতে এক কলেজে পাঠিয়েছিল সেমিনারে অংশ নিতে। ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্টের দুই বন্ধুও গিয়েছিল। সেমিনারে পেপার পড়তে হবে। শ্রীজিতা খুব খুশি। সবাই এই সুযোগ পায় না। সে ভাল ছাত্রী বলেই চান্স পেয়েছে। বাড়িতে বলেছিল, সন্ধের আগেই ফিরে আসবে। আসতে পারেনি। পথে ট্রেনের গোলমালে আটকে পড়েছিল। লেভেল ক্রসিং-এর দাবিতে কোথায় যেন অবরোধ হয়েছিল। মোবাইলে মাকে খবর দিল, চিন্তার কিছু নেই। বাড়ি ফিরতে বেশি রাত হয়ে গিয়েছিল সেদিন। রাত বারোটা বেজে গেল প্রায়। শ্রীজিতা ঘরে ঢুকে শুনল, বাবা এর ফাঁকে কলেজের প্রিন্সিপালের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁকে ফোন করে বসেছে। তাঁর উপর বিরাট হম্বিতম্বি করেছে, “মেয়েদের এদিক-ওদিক পাঠান। অথচ তাদের বাড়ি ফেরানোর কোনও রেসপনসিবিলিটি নেন না‍ !‌ এ কেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? এত নামী কলেজের কাছ থেকে এ জিনিস আশা করা যায় না।”

    প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তো আকাশ থেকে পড়েছিলেন। এতগুলো ডিপার্টমেন্ট, এত মেয়ে কে কোথায় সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সায়েন্স এক্সজ়িবিশনে যাচ্ছে, তার হিসেব উনি কী করে রাখবেন?‌‌ কোনও রকমে ‘দেখছি, দেখব’ করে ফোন রেখে দেন মহিলা।

    পরদিন কলেজে যেতেই হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট শ্রীজিতাকে ডেকে পাঠান। তাঁর মুখে সব শুনে শ্রীজিতা লজ্জায় মাটিতে মিশে গিয়েছিল, “এরকম হলে তো আমরা কাউকে কোথাও পাঠাতে পারব না শ্রীজিতা। প্রিন্সিপাল আমাকে ডেকে বকাবকি করছেন।”

    শ্রীজিতা কাঁদোকাঁদো গলায় বলেছিল, “আমি ক্ষমা চাইছি ম্যাডাম। ভেরি সরি।”

    “তোমার বাবা কি অতিরিক্ত নার্ভাস?”

    শ্রীজিতা ঢোঁক গিলে বলেছিল, “উনি আমাকে নিয়ে টেনশন করেন।”

    “এ কেমন টেনশনের ছিরি? রাতদুপুরে প্রিন্সিপালকে ফোন করে বসছেন!‌ কত মেয়ে তো দিল্লি, মুম্বইতে সেমিনারে যাচ্ছে। বিদেশে যাচ্ছে। তোমাকেও কয়েকটা জায়গায় পাঠাব বলে ভেবে রেখেছিলাম। তুমি লেখাপড়ায় ভাল। তোমার তো এসব অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম অ্যাটেন্ড করা উচিত। কিন্তু যা ঘটল, তাতে তো আর সাহসই পাব না। সামান্য কল্যাণী নিয়ে তোমার বাবা যা করলেন।”

    শ্রীজিতা বাড়ি ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। সে ভাল করেই জানে এসব অনিমেষ বসুর টেনশন নয়। মেয়ের উপর দখলদারি ফলানো। যেভাবে স্ত্রীর ওপর কর্তৃত্ব ফলান, সেইভাবে মেয়েকেও মুঠোর মধ্যে রাখতে চান। মানুষটা ভেবেচিন্তেই প্রিন্সিপালকে অত রাতে ফোন করেছেন। যাতে ভবিষ্যতে কলেজ থেকে কোথাও পাঠানো না হয়। সফলও হয়ে গেলেন। এরপর কলেজ তাকে বাছার আগে তিনবার ভাববে। শ্রীজিতা বোঝে, অনিমেষ বসু মেয়ের অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার চান না, কোনও কেরিয়ারই চান না। চান, তাঁর পছন্দের কোনও ছেলেকে বিয়ে করে সংসারের গর্তে সেঁধিয়ে যাক। জামাই এসে শ্বশুরের সামনে হাত কচলাক।

    বাবাকে ভয় পায়। তারপরেও মনে জোর এনে, শ্রীজিতা রাতে বাবাকে বলতে গেল, “তুমি এভাবে আমার ক্ষতি করলে কেন?”

    অনিমেষ বসু অবাক হয়ে বলেছিলেন, “ক্ষতি!‌ এর মধ্যে ক্ষতির কী দেখলে? প্রিন্সিপালকে নিজের কলেজের মেয়েদের দায়িত্ব নিতে বলাটা অন্যায় হবে কেন?”

    “উনি আমাকে আর কখনও কোথাও যাওয়ার চান্স দেবেন?”

    অনিমেষ বসু ঠান্ডা গলায় বলেছিলেন, “উনি দেওয়ার কে? আমিই তো দেব না। এইটুকু পথ যে সামলাতে পারে না, সে দূরের পথে কীভাবে ম্যানেজ করবে?”

    শ্রীজিতা এবার উত্তেজিত হয়ে বলেছিল, “ট্রেনে গোলমাল একটা দুর্ঘটনা বাবা। আসলে এসব তোমার বানানো অজুহাত। ঠিক সময়ে ফিরলেও তুমি কোনও না কোনওভাবে আমাকে আটকাতে।”

    অনিমেষ বসু হাই তুলে সহজ গলায় বলেছিলেন, “হয়তো তাই।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “আমি তোমার এসব শাসন মানব না বাবা। যুগ বদলে গিয়েছে। তুমি একশো বছর আগের সময় আঁকড়ে পড়ে আছ। কতবার তোমাকে একথা বলব?”

    ‌অনিমেষ বসু আরও ঠান্ডা গলায় বলেছিলেন, “নিজের মতো চলতে গেলে এ বাড়ির বাইরে গিয়ে তা করতে হবে। ‌আমি ছেলেমেয়ে মানুষ করার ব্যাপারে একশো কেন, দরকার হলে পাঁচশো বছর আগের সময়টাকে আঁকড়ে ধরে চলব। তোমার বিয়ে দিয়ে আমার ডিউটি শেষ।”

    শ্রীজিতা অবাক হয়ে হাত উলটে বলেছিল, “বিয়ে দেওয়াটাই মানুষ করা!‌”

    “কেন!‌ তোমাকে লেখাপড়া শেখাইনি? একটা বয়স পর্যন্ত নাচ গান শিখিয়েছি। ড্রইং স্কুলে পাঠিয়েছি। ছেলে হলে বিয়ের কথা ভাবতাম না। চাকরি পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। সে ব্যাপারে যাতে তার কোনও সমস্যা না হয়, সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতাম। মেয়ে বলে তোমার বিয়ের কথা ভাবতে হচ্ছে।”

    শ্রীজিতা দাঁত কামড়ে বলেছিল, “কেন ? আমি চাকরি করতে পারি না?”

    “অবশ্যই পারো। হয়তো করবেও। আমাকে যদি তখন কোনও প্রয়োজনে লাগে বলবে। তোমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যোগ্য করেছি, আরও কিছু লাগলে বলবে। কিন্তু প্রায়োরটি বলে একটা জিনিস আছে। আমি সেটা মেনে চলা পছন্দ করি। কোন কাজটা আগে করতে হয় জানি।”

    “আমি বিয়ে করব না।”

    অনিমেষ বসু একটু চুপ করে, মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “আমার ইচ্ছে অমান্য করার মতো সাহস তোমার হবে না শ্রী। আগে যেমন কখনও তা করোনি, এখনও করবে না। তুমি একজন ভাল মেয়ে। আই ফিল প্রাউড ফর ইউ। তবে একটা কথা ভাল করে মনে রাখবে, যুগ পালটেছে মানে যা খুশি করবার অধিকার এসে গিয়েছে, এমন নয়। সেটা আধুনিকতার ব্ল্যাক সাইড। সিস্টেমে থাকাটাও শিখতে হয়। তুমি সেটা শিখেছ। ধরে রাখতে চেষ্টা করবে। এখন যাও, অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।”

    বাবার প্রশংসায় রাগে শরীর আরও জ্বলে উঠেছিল, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো। শ্রীজিতা সেদিন মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল, এই মানুষটাকে‌ ভালমতো শিক্ষা দিয়ে সে থামবে।

    ডাক্তার পাত্রকে নাকচ করার কিছুদিন পর এক ‘ব্যবসায়ী পাত্র’ নিয়ে এসে হাজির হয়েছিলেন অনিমেষ বসু। ততক্ষণে শ্রীজিতার ইউনিভার্সিটির পালা শেষ হয়েছে। রেজ়াল্টও বেরিয়ে গিয়েছে। শ্রীজিতা বাড়িতে বসে ভবিষ্যতের প্ল্যান করছে। গবেষণা করবে নাকি চাকরির চেষ্টা করবে, তাই নিয়ে ভাবনা চিন্তা। এই সময়ে নতুন পাত্রের খবর এল। জয়াই মেয়েকে জানালেন, “ছেলেটি ভাল। প্রবাসী বাঙালি। কানপুরে নিজেদের বিরাট বাড়ি। তোর ছবি দেখে ছেলের বাবা–মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে।”

    “মা, আমি তো ছেলের বাবা–মাকে বিয়ে করব না। তাদের পছন্দ অপছন্দ দিয়ে আমার কী এসে যাবে?”

    জয়া রেগে গিয়ে বলেছিলেন, “বাঁকা কথা বলিস না। এখনও বহু ভদ্র ফ্যামিলিতে বাড়ির গুরুজনেরাই আগে পাত্রপাত্রী পছন্দ করেন। তারপর ছেলেমেয়েরা দেখে।”

    “আমি তোমাদের এই ভদ্রবাড়ির কেউ নই। তাই তোমাদের পছন্দ করা ছেলেকে আমি বিয়ে করব না। কানপুরে বা কানাডায় নিজের বাড়ি থাকলেও নয়। একটা কথা ভাল করে জেনে রাখো, আমি আমার পছন্দ করা মানুষকেই বিয়ে করব।”

    জয়া খানিকক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তারপর ধীরে-ধীরে বলেছিলেন, “তুই ছেলে ঠিক করে নিয়েছিস?”

    শ্রীজিতা হেসে বলেছিল, “ঠিক সময়ে জানতে পারবে।”

    জয়া বিড়বিড় করে বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি না। তুই কানপুরের ছেলেটাকে তাড়ানোর জন্য এসব বলছিস।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “তোমাদের বিশ্বাসের উপর আমার কিছু যায় আসে না। সময়মতো ‌ দেখতে পাবে।”

    পরদিন সকালে কাজে বেরোনোর আগে অনিমেষ বসু মেয়েকে ডেকে পাঠালেন, “শ্রী, তোমার মা যা বলল, তা সত্যি?”

    শ্রীজিতা চুপ করে ছিল। অনিমেষ বসু বলেছিলেন, “চুপ করে আছ কেন? সত্যি কি না বলো।”

    শ্রীজিতা তারপরেও চুপ করে রইল। কী করবে? উত্তর তো তার জানা নেই। অনিমেষ বসু ঠোঁটের কোণে ক্রূর হেসে বলেছিলেন, “আমি জানি তুমি মিথ্যে কথা বলছ শ্রী। তোমার সম্পর্কে আমার খবর নেওয়া আছে। তোমার পিছনে আমার লোক লাগানো ছিল। দিনের পর দিন সে কোনও খবর পায়নি দেখে তাকে উইথড্র করেছি। তোমাকে আগেও বলেছি, আজ আবার বলছি, তুমি অতি ভাল একজন মেয়ে। তুমি যতই নির্যাতন মনে করো, কঠিন মনে করো, আমি জানি সন্তানকে মানুষ করার জন্য আমার পথটাই ঠিক ছিল। আমি যে তোমাকে এত ভালভাবে মানুষ করতে পেরেছি তার জন্য বাবা হিসেবে গর্ব বোধ করি। আমি তোমাকে একটা শেলটারের মধ্যে রেখে বড় করেছি। তুমি সেটাকে খাঁচা মনে করলে সেটা আমার দুর্ভাগ্য,” এই পর্যন্ত বলে একটু থেমেছিলেন অনিমেষ। “আমি জানি, তোমার পছন্দের কেউ নেই এবং জীবনে প্রতিটা পা ফেলার জন্য তুমি আমার উপর নির্ভরশীল। অন্তত এখন তো বটেই। পরে কী হবে, জানি না। জানতে চাইও না। যাক, তারপরেও‌ যদি তোমার পছন্দের কেউ থেকে থাকে, তুমি তোমার মাকে বলতে পারো। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বড় হয়েছ, নিজের জীবন নিজে তৈরি করে নেওয়াটা অন্যায় কিছু নয়। আমি জানি, তোমার পছন্দ কখনওই তোমার পরিবার এবং তোমার মান–মর্যাদা, রুচি, শিক্ষাকে খাটো করবে না।”

    শ্রীজিতা সেদিন বুঝতে পেরেছিল, অনিমষে বসু তাকে বিরাট পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। চুপ করে চলে এসেছিল সে। মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল, এর জবাব সে দেবে। নইলে বাকি জীবনটা সত্যি সত্যি এই উন্মাদ মানুষটার মুখের দিকে তাকিেয় থাকতে হবে। উন্মাদ ছাড়া কোনও মানুষ আজকের দিনে এইসব ধারণা আঁকড়ে বেঁচে থাকতে পারে?‌

    কর্ণ রায়ের চেম্বারে ঢুকে আরও দু’জনকে দেখতে পেল শ্রীজিতা। প্রোমোশনের তীর্থঙ্কর সেন, রিসার্চ ইউনিটের হেড বাসুদেব ভার্গব।

    কর্ণ রায় গম্ভীরভাবে বললেন, “বোসো শ্রীজিতা।”

    শ্রীজিতা খানিকটা দ্বিধা নিয়ে চেয়ার টেনে বসল। বলল, “এনি প্রবলেম স্যার?”

    কর্ণ রায় উত্তর না দিয়ে একই রকম গম্ভীর গলায় বললেন, “গত তিন মাস ধরে আমরা একটি নতুন ভায়াবিলিটি প্রোজেক্ট তৈরি করেছিলাম। মেয়েদের গায়ে মাখার পাউডার। বরোদা থেকে কাজটা এসেছিল।”

    শ্রীজিতা বলল, “হ্যাঁ ‘ম্যাজিক রিলিফ’। গরম, ঘামাচি, দুর্গন্ধ দূর করার পাউডার। ফাইনাল কাজটা আমার কাছে দিয়েছিলেন স্যার।”

    ‌বাসুদেব ভার্গব মুখ ঘুরিয়ে বলল, “আপনি কী করলেন‌?”

    শ্রীজিতা চোখ কুঁচকে বলল, “নোট দিয়ে ফাইল ওদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ডেটা অ্যানালিসিস করে আমার মনে হয়েছিল, প্রোডাক্টটা ভায়াবল নয়। ওরা মফস্‌সলের কাস্টমার ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু দামটা বড্ড বেশি। রিসার্চ টিম আমাকে সেই ফিডব্যাকই দিয়েছে। তা ছাড়া আমার নিজেরও তাই মনে হয়েছে। আমাদের গ্রামগুলোতে এই ধরনের পাউডার কেনা খুব কস্টলি একটা অ্যাফেয়ার। তা ছাড়া, সেই মানসিকতাও তৈরি হয়নি।”

    বাসুদেব ভার্গব বলল, “আপনি কি কোনও সাজেশন দিয়েছিলেন মিসেস বসু?”

    এই লোকটাকে সহ্য করতে পারে না শ্রীজিতা। এখানে ঢোকার সময় খুব বাগড়া দিয়েছিল। প্রশ্ন তুলেছিল, সামান্য স্কুল শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা কর্পোরেট হাউজ়ে কীভাবে কাজ করবে!‌ এই মেয়েটির মার্কেটিং নিয়ে কোনও ডিগ্রি রয়েছে? গোড়া থেকেই কর্ণ রায় তাকে সাপোর্ট দিয়ে আসছেন বলে রক্ষে। চাকরিটাও পেয়েছিল কর্ণ রায়ের জন্যই, তবে ধরে করে নয়। আক্ষরিক অর্থেই নাটকীয়ভাবে।

    শ্রীজিতা যে স্কুলে পড়াত, সেখানে বছরে একবার করে ফাংশন হত। এই ধরনের স্কুল-ফাংশন খুব ঘটা করে হয়। হল ভাড়া করে, বড়-বড় গেস্ট এনে… ছাত্রছাত্রীরা গান, বাজনা, নাটক করে। একবার ছোট ছেলেমেয়েদের নাটক করানোর দায়িত্ব পড়ল শ্রীজিতার ঘাড়ে। সে প্রথমটায় রাজি হচ্ছিল না। তোয়া তখন খুব ছোট। শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব এড়াতে পারেনি। অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাথা ঘামাল এবং নিজে থেকেই একটা গল্প ভেবে বসল। বিষয়টা অভিনব। রূপকথা একটা। এক গ্রামে এক জাদুকর চাঁদের আলো বিক্রি করত। কখনও শিশি–বোতলে, কখনও কৌটোয় ভরে। কখনও আবার স্রেফ হাতের মুঠোয় নিয়ে। জাদুকর খুব সুন্দর-সুন্দর কথা বলে মানুষকে ভুল বোঝাত। বলত, “এ আলো চট করে দেখা যায় না। চাঁদের যখন ইচ্ছে হবে, দেখা দেবে। সরল লোকেরা বিশ্বাসও করত, চাঁদের আলো কেনা যায়। যে যার সামর্থ্যমতো জাদুকরকে দাম দিত। একদিন খবর পেয়ে দেশের রাজা সেই জাদুকরকে ডেকে বললেন, সব আলো তাঁর চাই। তিনি ভাল দাম দেবেন। জাদুকর লোভ সামলাতে না পেরে রাজি হয়ে গেল। রাজামশাইয়ের কাছ থেকে থলি ভরতি মোহর নিয়ে কতগুলো বড়-বড় মাটির জালা পাঠিয়ে দিল। কারুকাজ করা জালার মাথায় ঢাকনা। জাদুকর বলল, এই জালায় আলো ভরতি আছে। ঢাকনা সরালেই পাওয়া যাবে। তবে শর্ত আছে। ঢাকনা সরাতে হবে খোলা মাঠে, পূর্ণিমার রাতে। তখন আকাশে যেন থালার মতো চাঁদ থাকে।

    রাজামশাই ভাবলেন, পূর্ণিমায় তো এমনিতেই চাঁদের আলো পাওয়া যায়, সুতরাং জালার ঢাকনা খোলা হবে অমাবস্যায়। যখন আকাশে চাঁদ থাকবে না। অমাবস্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে রাজামশাই তাই করলেন। অন্ধকারে খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে জালার সব ঢাকনা খুলে দেওয়া হল। কোথায় চাঁদের আলো!‌ সবই তো ঘুটেঘুটে অন্ধকার! জাদুকরকে ধরে এনে বললেন, “তোমার কঠিন সাজা হবে। ‌কারণ তুমি লোভী। মিথ্যে কথা বলে আমাকে চাঁদের আলো বিক্রি করেছ।”

    জাদুকর হাতজোড় করে বলল, “তা হলে তো আপনারও সাজা পাওয়া উচিত রাজামশাই।”

    “মানে? তোমার তো ভারী স্পর্ধা।”

    জাদুকর বলল, “রাজামশাই আমি তো শুধু লোভী নই, লোভী তো আপনিও। এত চাঁদের আলো পাওয়ার পরও আপনি লোভ করেছিলেন। সব আলো কিনে নিতে চেয়েছিলেন। আমাকে মার্জনা করবেন, লোভ কি আপনার কম হল?”

    রাজামশাই জাদুকরকে ছেড়ে দিলেন।

    নাটক শেষে খুব হাততালি হয়েছিল। সবাই বুঝতে পারল, দুনিয়ায় সবকিছু কেনাবেচা করা যায় না। শ্রীজিতা খুব যত্ন করে ছোটদের নাটক শিখিয়েছিল। আলো দিয়ে, স্টেজ সাজিয়ে নাটকটা হয়েছিলও ভারী চমৎকার।

    কর্ণ রায়ের এক বোনের ছোট মেয়ে এই স্কুলে পড়ত। মেয়েটি নাটকে পার্টও করে। সেই সুবাদে কর্ণ রায় সপরিবার এসেছিলেন। নাটক দেখে তিনি মুগ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, যে শিক্ষিকা এর পিছনে রয়েছেন, তাঁর নাম শ্রীজিতা বসু। বোনকে দিয়ে খবর পাঠান, শ্রীজিতার সঙ্গে তিনি দেখা করতে চান। যদি কোনও অসুবিধে না থাকে, উনি তাঁর অফিসে একবার এলে ভাল হয়। প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনের জন্য তাঁর কোম্পানি এই ধরনের অভিনব কিছু কনসেপ্ট খুঁজছে। শ্রীজিতা বসু যদি রাজি হন, তাঁদের সঙ্গে ফ্রিলান্স কাজ করতে পারেন।

    দু’দিন পরে, সেই ছাত্রীর মা এসে গদগদভাবে মেয়ের ‘মিস্‌’-কে ঘটনা জানায় এবং কর্ণ রায়ের ভিজ়িটিং কার্ডটি হাতে তুলে দেয়। অতি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে সেই কার্ড নিয়েছিল শ্রীজিতা। কত আজেবাজে লোক কত প্রস্তাব দেয়! সব কিছুতে মাথা ঘামাতে নেই। বাড়ি ফিরে সেই কার্ড ফেলে দেওয়ার আগে খেলাচ্ছলে একবার মোবাইলে কোম্পানির ওয়েবসাইটটি ঘাঁটে শ্রীজিতা। তার চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। এত বিরাট নামকরা কোম্পানি!‌ কর্ণ রায় নামের লোকটাও বড় পোস্টে চাকরি করেন। পরের সোমবারই কর্ণ রায়ের সঙ্গে দেখা করে ফেলে শ্রীজিতা। কাঁচাপাকা চুলের গুরুগম্ভীর মানুষটা প্রথমে তাকে চিনতে পারেননি। শ্রীজিতা নাটকের কথা বলতে বললেন, “ও আপনি তো সেদিন চাঁদ বিক্রির ব্যবস্থা করেছিলেন!”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “চাঁদ না স্যার, চাঁদের আলো।”

    “ইয়েস, মুন লাইট। কনসেপ্ট ওয়জ় ভেরি গুড।‌ এটা কি আপনার নিজস্ব চিন্তা?”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “আমি তো নিজেই ভেবেছি। কোনও ফেয়ারিটেল বা ফোকস্টোরিতে এই ধরনের কিছু আছে কি না বলতে পারব না। থাকলে আমার জানা নেই।”

    কর্ণ রায় বলেছিলেন, “থাকলেও কিছু এসে যায় না। দারুণ হয়েছিল গোটা ব্যাপারটা। আচ্ছা, মিসেস বোস আপনি কি খুব অল্প কথায় আমাকে বোঝাতে পারবেন, চাঁদের আলো কিনতে পারা যায় না এটা ঠিক নয়! ইচ্ছে করলে সেই আলোও কিনতে পারা যায়!”

    ‌শ্রীজিতা থতমত খেয়ে বলেছিল, “আপনাকে বোঝাব!‌”

    “হোয়াই নট? আমি কি চাঁদের আলো কেনার যোগ্য নই?”

    ‌শ্রীজিতা আরও ‌থতমত খেয়ে গিয়েছিল। মুখে নার্ভাস হাসি এনে বলেছিল, “আপনাকে ‌কী করে বোঝাব স্যার? ওটা তো একটা গল্প.‌.‌.‌ আর তা ছাড়া আমার গল্পের লোকগুলো বোকা ছিল। সরল মানুষ সব।”

    কর্ণ রায় বলেন, “ভেবে বলুন। আমরা কি সত্যিই চাইলে চাঁদের আলো কিনতে পারি না?”

    ‌শ্রীজিতা চুপ করেছিল। এ তো ধাঁধা। চাঁদের আলো আবার কেনা যায় নাকি? ভাবতে-ভাবতেই নিমেষে মাথায় বিদুতের ঝলকানি দিল। সোজা হয়ে বসে জোরের সঙ্গে বলেছিল, “পারি স্যার। অবশ্যই পারি। জ্যোৎস্নারাতে ফরেস্ট বাংলো বুক করে রাত কাটালে পারি, পাহাড়ে বেড়াতে গেলে পারি, নদীতে স্টিমার ভাড়া করে ঘুরলে পারি.‌.‌.‌ ‌আর স্যার.‌.‌.‌আর স্যার যদি কোনও ফ্ল্যাটবাড়ির উপরের দিকে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে পারি, তা হলে রোদ, বৃষ্টি, চাঁদের আলো সবই বেশি-বেশি পাওয়া যাবে। এ তো এক রকম কেনাই হল, তাই না?”

    কর্ণ রায় একইরকম গম্ভীর মুখ করে বলেছিলেন, “ভেরি গুড। আমি এই ধরনের একটা উত্তর আসা চাইছিলাম। এর মানে কী বুঝতে পারছেন?”

    শ্রীজিতা মনে জোর পেয়েছিল হঠাৎ, “খানিক‌টা পারছি স্যার। কী বিক্রি করছির চেয়ে বড় কথা হল কীভাবে বিক্রি করছি। যে চাঁদের আলো শিশি বোতলে বিক্রি করা যায় না, সেই চাঁদের আলোই পাহাড়ের মাথায় গেস্টহাউজ় বানিয়ে বিক্রি করা যায়। তাই না?”

    কর্ণ রায় এ প্রশ্নের জবাব দেননি। এরপর বেশ কিছুক্ষণ নানা বিষয়ে কথা বলে লেখাপড়া, পরিবারের কথাও জানতে চেয়েছিলেন। তারপর বলেছিলেন, “আপনি কি টিচিং ছাড়া অন্য কোনও প্রফেশনে যাবেন না ভেবে রেখেছেন?”

    “কখনওই না। চ্যালেঞ্জিং কোনও অফার পেলে অবশ্য যাব।”

    কর্ণ রায় উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আর আপনাকে আটকাব না। লাস্ট কথা, আপনি যদি আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে চান, ইউ আর ওয়েলকাম।”

    এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রীজিতা নতুন কোম্পানিতে যোগ দেয়। সেই সময় এই বাসুদেব ভার্গব বাগড়া দিচ্ছিল। আজও সেরকম কিছু করছে নাকি?

    ‌শ্রীজিতা কর্ণ রায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার অ্যানালিসিসে কি কিছু ভুল হয়েছে? আমি তো সাজেশনে লিখেছিলাম, এই প্রোডাক্টের দাম তিন ‌রকমের করা হোক। একটা দাম যেন গরিব মেয়েদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। একটু মোটা ধরনের জিনিস থাকুক। ফ্যান্সি প্যাকেজিং ছাড়া। আর একটার দাম খানিকটা বেশি রেখে বিক্রি করা যেতে পারে। আর তিন নম্বরের দাম অনেক বাড়িয়ে হায়ার ইনকাম গ্রুপকে ধরা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রোডাক্ট কোয়ালিটিটা ভাল হওয়া উচিত।”

    বাসুদেব ভার্গব এবার হাসিমুখে বলল, “ওরা আপনার প্রোপোজ়াল মেনে নিয়েছে মিসেস বসু। মেল পাঠিয়েছে। কনগ্র্যাচুলেশনস।”

    শ্রীজিতা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। অস্ফুটে বলল, “ধন্যবাদ স্যার।”

    এতক্ষণে প্রোমোশনের তীর্থঙ্কর সেন মুখ খুললেন। বললেন, “শ্রীজিতা, ওরা এই প্রোডাক্টের মার্কেটিং প্রোমোশনের গোটা কাজটা আমাদের দিতে চেয়েছে। তিন ধরনের ব্র্যান্ড কীভাবে মার্কেটে আনা যাবে, তার প্ল্যানিং চেয়েছে। আপনার জন্যই সম্ভব হল।”

    শ্রীজিতা উজ্জ্বল মুখে বলল, “আমার একার জন্য নয়, এটা টিমের জন্য হয়েছে তীর্থঙ্করবাবু।”

    কর্ণ রায় বললেন, “দিস ইজ় আ গুড নিউজ় ফর ইস্টার্ন জ়োন।”

    শ্রীজিতা খুব খুশি হওয়া গলায় বলল, “অবশ্যই স্যার।”

    এবার কর্ণ রায় হাসলেন। বললেন, “শুধু ‘অবশ্যই’ বললেই হবে না। দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।‌ শুধু এই প্রোডাক্ট নয়, আমরা ডিসিশন নিয়েছি, বিভিন্ন ধরনের ফিমেল প্রোডাক্টের জন্য আমরা আমাদের জ়োনে আলাদা একটা সেটআপ তৈরি করব। ইউ উইল বি দ্য লিডার অব দ্যাট টিম। তোমাকে সেই মতো প্রোমোশন দেওয়া হবে। আশা করি, তোমার কোনও অসুবিধে নেই।”

    খুশিতে চোখে জল আসার উপক্রম হল শ্রীজিতার। নিজেকে কোনও রকমে সামলাল। সে অস্ফুটে বলল, “ধন্যবাদ।”

    বাসুদেব ভার্গব হাত বাড়িয়ে বলল, “‌তা হলে আপনি কাজ শুরু করে দিন।”

    তীর্থঙ্কর সেন বললেন, “আপনি নিজের মতো একটা টিম বানাতে শুরু করুন।”

    কর্ণ রায় উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “একটা কাজের জন্য তোমার চাপ অনেক বাড়বে। কোনও সমস্যা নেই তো?”

    শ্রীজিতা বলল, “একেবারেই নয়। আমি চাই কাজের চাপ বাড়ুক।”

    বাকিরা উঠে দাঁড়িয়ে শ্রীজিতাকে অভিনন্দন জানাল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত
    Next Article পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    Related Articles

    প্রচেত গুপ্ত

    দেরি হয়ে গেছে – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    রুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    মাটির দেওয়াল – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নুড়ি পাথরের দিনগুলি – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নিষাদ – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }