Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ধুলোবালির জীবন – প্রচেত গুপ্ত

    প্রচেত গুপ্ত এক পাতা গল্প170 Mins Read0

    ধুলোবালির জীবন – ৬

    ৬

    একসময় বাবার আনা পাত্রকে আটকাতে শ্রীজিতাকে নানা ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। কখনও লেখাপড়ার কথা বলেছে, কখনও ‘একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলব’ বলে ভয় দেখিয়েছে, কখনও কান্নাকাটিও করেছে। শেষ পর্যন্ত বলেছিল, যদি বিয়ে করতেই হয় নিজের পছন্দের মানুষকেই করবে। কথাটা দুম করে বলে ফেললেও, একেবারে ফাঁকা আওয়াজ দেয়নি শ্রীজিতা। তবে যে মানুষটিকে সে মনে-মনে পছন্দ করে ফেলেছিল, তার সঙ্গে বিয়ে পর্যন্ত যাওয়ার কথা কল্পনাতেও আনেনি। বছরখানেকের আলাপের পর থেকে তার সঙ্গে খুব বেশি হলে পাঁচ-ছ’বার দেখা হয়েছে। ফোনেও যে খুব বেশি কথা হয়েছে, এমন নয়।

    বিধান। পছন্দের মানুষের সঙ্গে মেয়েদের কত জায়গাতেই না দেখা হয়। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, বিয়েবাড়ি, অফিস। বাসে, ট্রেনে, প্লেনে যেতে-যেতে বা মিছিলে হাঁটতে-হাঁটতে প্রেমে পড়ার ঘটনাও অজস্র র‌য়েছে। বিধানের সঙ্গে শ্রীজিতার আলাপ হাসপাতালে। পূর্বার মা অসুস্থ শুনে দেখতে গিয়েছিল। পূর্বা ইউনিভার্সিটির বন্ধু। একসময় দু’জনে পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছে, ক্যান্টিনে ভাগাভাগি করে খেয়েছে, সিনেমা দেখেছে। দু’জন, দু’জনের বাড়িতেও গিয়েছে। ইউনিভার্সিটির পালা চুকলে, যোগাযোগ ছিঁড়ে গিয়েছিল। পূর্বার মায়ের অসুস্থতার খবর শ্রীজিতা পেল বেশ কিছু পরে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটল।

    শ্রীজিতা হাসপাতালে গিয়ে দেখে পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ। সেপ্টিসিমিয়া হয়ে গিয়েছে। রক্তের দরকার। সমস্যা হল, পেশেন্টের ব্লাড গ্রুপটি রেয়ার। ব্লাড ব্যাঙ্ক বলছে, রক্ত দেওয়া যাবে। কিন্তু ‘রিপ্লেস’ করতে হবে। একই গ্রুপের ডোনার এনে রক্ত জমা দেওয়া চাই। পূর্বারা পড়েছে বিপদে। হাতে সময় নেই। অনেককে খবর দিয়েছে। ওদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় কোথা থেকে জানতে পেরে হাসপাতালে চলে এসেছে। তার রক্ত ওই গ্রুপেরই। সে রক্ত দিতে চায়। এই লোককে দেখে পূর্বারা অবাকই হয়ে গিয়েছিল। যার সঙ্গে বহুবছর কোনও যোগাযোগ নেই, সে চলে এসেছে!‌ ঠিকমতো চিনতেও পারেনি। কিন্তু তখন এত কিছু ভাবার সময় ছিল না।

    রোগা পাতলা চেহারার বিধান হাসপাতালে ভিজ়িটর্স রুমে বসেছিল চুপ করে। তাকে নিয়ে গিয়ে রক্ত দেওয়ানোর দায়িত্ব পড়ে শ্রীজিতার উপর। শ্রীজিতাকে দেখে বছর চার–পাঁচের বড় বিধান বড় অস্বস্তির মধ্যে পড়েছিল। বারবার বলতে থাকে, “আমি একাই পারব.‌.‌.‌ আমি একাই পারব। আপনি ব্যস্ত হবেন না। রক্ত দেওয়া আমার অভ্যেস আছে। আমি ঠিক পারব।”

    তবে এক ইউনিট রক্ত দেওয়ার পর বিধানের মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তাকে শুইয়ে দিতে হয়। অল্প কিছু খাবার, গরম চা খাইয়ে তাকে খানিকটা চাঙ্গা করে শ্রীজিতা। তখনও তার মুখে একটাই কথা, “আমি একাই পারব.‌.‌.‌ আমি একাই পারব।”

    শ্রীজিতা এবার প্রায় ধমক দিয়ে বলেছিল, “আপনি থামুন তো। অনেকক্ষণ থেকেই তো বলছেন পারবেন। পারলেন তো না। চুপ করে রেস্ট নিন।”

    ট্যাক্সি ডেকে তুলে দেওয়ার সময় বিধানের আবার মাথা ঘুরল। এবার ঘুরল বেশি। শ্রীজিতার হাত ধরে নিজেকে সামলায়। আরও বেশি লজ্জায় পড়ে। এবার চিন্তা হয় শ্রীজিতার, “আমি কি পূর্বাদের কাউকে ডাকব? আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেবে?”

    বিধান হাতটাত নেড়ে বলেছিল, “ছি-ছি, একেবারে নয়। ওঁরা রোগীর কাছে আছেন। আমার সামান্য একটু মাথা ঘুরেছে, ও ঠিক হয়ে যাবে।”

    শ্রীজিতা বুঝেছিল, এই লোক ঠিক কথা বলছে। এখন পূ্র্বাদের কিছু বলার মানে হয় না। উচিতও নয়। তারা পেশেন্ট নিয়ে খুব ব্যস্ত। ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করছে। এই মানুষটার দায়িত্ব তাকে দেওয়া আছে। যা কিছু করার তারই করা উচিত। শ্রীজিতা আগুপিছু না ভেবে ট্যাক্সিতে উঠে বসেছিল। বিধান আঁতকে উঠেছিল, “আরে, ‌করছেনটা কী ? আপনি কেন উঠছেন? আমি একাই যেতে পারব।”

    শ্রীজিতা চোখ গোল করে বলেছিল, “আবার আমি পারব? চুপ করে বসুন। বাড়ি কোথায়? বাড়িতে কে আছে?”

    “কেউ নেই। একা থাকি।‌”

    শ্রীজিতা চিন্তিতভাবে বলেছিল, “তা হলে তো আর-এক সমস্যা হল।”

    বিধান শুকনো হেসে বলেছিল, “বহুবছর আমি একা থেকে অভ্যস্ত। ক’দিন আগে জ্বর হয়েছিল বলে শরীরটা দুর্বল। সেই কারণেই সমস্যা হচ্ছে।”

    “উইক শরীরে ব্লাড দিতে এলেন কেন?”

    “গ্রুপটা একটু রেয়ার তো। একবার যখন খবর পেলাম.‌.‌.‌তা ছাড়া আমার এই দূর সম্পর্কের মাসি একসময় আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন.‌.‌.‌ মায়ের কাছে থেকে শুনেছি.‌.‌.‌ওদের সঙ্গে যোগাযোগ তেমন নেই.‌.‌.কিন্তু ‌তাতে কী.‌..‌‌ খবর পেয়ে চুপ করে বসে থাকব?”

    শ্রীজিতা বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছিল। এখনও এরকম মানুষ রয়েছে! আজ হাসপাতালে না এলে এই বোকা, ভাল মানুষটার সঙ্গে দেখাই হত না। বিধানের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে ওই ট্যাক্সিতেই ফিরেছিল শ্রীজিতা। নামানোর আগে বিধানের ফোন নম্বর নিয়েছিল। সেই নম্বর নিজের মোবাইলে সেভ করে লিখেছিল ‘রেয়ার গ্রুপ’। রাতে ফোনও করেছিল, “আমি শ্রীজিতা বলছি। ‌ কেমন আছেন?”

    ফোনের ওপাশে বিধান থতমত খেয়ে বলেছিল, “শ্রীজিতা!‌ ঠিক বুঝতে পারছি না.‌.‌.‌ ”

    শ্রীজিতা হেসে বলেছিল, “চিনতে পারছেন না? না পারারই কথা। উপকার করলে মানুষ চিনতে পারে না। দুপুরে যদি আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে না দিয়ে আসতাম, ঠিক মনে থাকত। মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ে থাকতেন।”

    “ছি-ছি। তা নয়, আমি আপনার গলা চিনতে পারিনি। খুব দুঃখিত।”

    “ও ঠিক আছে। মজা করছিলাম। আছেন কেমন? ডাক্তার দেখালেন?”

    “আমি একেবারে ঠিক হয়ে গিয়েছি। ডাক্তারের দরকার নেই। মাসির খবর জানেন?”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “একটু আগে পূর্বার সঙ্গে কথা বলেছি। এখন খানিকটা ভাল। তবে কতক্ষণ থাকবে বলা যাচ্ছে না।”

    বিধান বলেছিল, “আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাব!”

    শ্রীজিতা হেসে বলেছিল, “কফি খাইয়ে। কফি খেলে আমি কাকে কী উপকার করেছি ভুলে যাই।”

    “আচ্ছা তাই খাওয়াব।”

    শ্রীজিতা সত্যি-সত্যি ভুলে গিয়েছিল। এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতে মোবাইল বাজল। পরদায় নাম ভেসে উঠল, ‘রেয়ার গ্রুপ’।

    কেন জানা নেই শ্রীজিতা খুশি হয়েছিল, “কী হল? আবার কোন উপকার চাই?”

    বিধান রসিকতা ধরতে পারেনি। আমতা-আমতা করে বলেছিল, “আমি বোধহয় কা‌জের সময় ফোন করে ফেলেছি।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “হ্যাঁ তাই করেছেন। আমি হাত পা ছড়িয়ে রেস্ট করছি। এটা আমার সবচেয়ে বড় কাজ। বলুন কী হয়েছে।”

    বিধান ভয় পাওয়া গলায় বলে, “আপনি কফি খেতে চেয়েছিলেন। একদিন যদি সময় দেন‌।”

    শ্রীজিতা হেসে বলেছিল, “না, সত্যি আপনি রেয়ার গ্রুপের মানুষ। আমি কখন কী বলেছিলাম, মনে রেখে দিয়েছেন? এবার একটা কথা আপনাকে জানাই স্যার, সেদিন বলতে হয় তাই বলেছিলাম, কফি আমি খাই না। রাতে ঘুম হয় না।”

    ‌“তা হলে থাক।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “হ্যাঁ থাক। আপনি বললেন তার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনার ফোনে হোয়াটস্‌অ্যাপের ব্যবস্থা নেই। থাকলে মাঝে-মাঝে গুড মর্নিং পাঠাতাম।”

    “না, আমার মোবাইল খুব ছোটখাটো, সাধারণ…”

    ‌শ্রীজিতা একটু চুপ করে বলেছিল, “ঠিকই আঁচ করেছিলাম। যাক, পরে নিশ্চয়ই ফোনে কথা হবে।”

    কথা হয়নি। তবে দেখা হয়েছিল। তা-ও একমাস পরে। পূর্বার মায়ের শ্রাদ্ধে। অনেক চেষ্টা করেও ভদ্রমহিলাকে বাঁচানো যায়নি। শ্রীজিতা পূর্বার বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়ে দেখেছিল, বিধান রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।

    “আপনি!‌ ভিতরে যাননি?”

    বিধান বলেছিল, “গিয়েছি। এবার চলে যাব। এই সব অনুষ্ঠানে বেশিক্ষণ থাকতে ইচ্ছে করে না।”

    “আমারও। ‌আমিও বেরিয়ে যাচ্ছি।”

    “আপনাকে দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়েছি।”

    শ্রীজিতা বলেছিল, “আমার জন্য অপেক্ষা করছেন!‌ ভেরি গুড। চলুন তা হলে পাওনা কফিটা খাইয়ে দেবেন। দুটো গল্প করে মনটা একটু ঠিক করি।”

    “বেশ তো চলুন। কোথায় যাবেন?”

    শ্রীজিতা একটু ভেবে বলেছিল, “কফি হাউস।”

    দু’জনে ট্রাম ধরে কলেজ স্ট্রিট আসে। কফি আর পকোড়ার দাম দেওয়ার সময় দেখা গেল বিধানের পার্সে কুড়ি আর দশ টাকার দুটো নোট পড়ে আছে। তার মধ্যে কুড়ি টাকার নোটটা ছেঁড়া। বিধান বোকার মতো হেসে বলেছিল, “কী কেলেঙ্কারি বলুন তো! আসলে বেরোনোর সময় খেয়াল করিনি.‌.‌. জানতাম না তো আপনার সঙ্গে ‌আজ আসব.‌.‌.‌”

    শ্রীজিতা মিটিমিটি হেসে বলেছিল, “আপনার ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড আছে?”

    “আমি আসলে ওগুলো ঠিক সামলাতে পারি না। এবার অফিস থেকে বলছে.‌.‌. ‌আমি বলেছি ওইটুকু তো বেতন পাই। তার জন্য অত কার্ড-টার্ড দিয়ে কী হবে?”

    শ্রীজিতা নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে-করতে বলেছিল, “আপনি সত্যি রেয়ার গ্রুপের মানু্ষ।”

    ‌‌আজও মনে আছে, সেদিন সন্ধেবেলা বাড়ি ফেরার সময় শ্রীজিতা অবাক হয়েছিল। সুন্দরী এবং লেখাপড়ায় ভাল হওয়ার কারণে, পুরুষমানুষ তার জীবনে কম আসেনি। কোনও পুরুষের প্রতি আকর্ষণ তো দূরের কথা, কখনও দুর্বলতাটুকুও অনুভব করেনি সে। বিধানের মতো এক অতি সাধারণকে কেন পছন্দ হচ্ছে? এই জন্যই‌ কি জীবনকে ইন্টারেস্টিং বলে?

    শ্রীজিতা একদিন দুম করে বিধানের অফিসেও গিয়ে হাজির হল। একেবারে অকারণেই গেল। হতচকিত বিধান কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। খুবই অস্বস্তির মধ্যে পড়ল বেচারি। ঘনঘন ঘাম মুছছিল। সুন্দরী এক তরুণী তার কাছে আসায় সহকর্মীরাও কৌতূহলী হয়ে পড়ে। তিনতলার যে করিডরে দু’জনে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে বারেবারে ঘুরঘুর করতে লাগল। মজা লাগছিল শ্রীজিতার।

    “সল্টলেকে এসেছিলাম একটা কাজে। হঠাৎ ভাবলাম, আপনার অফিসটা এদিকে। মনে হল, দেখি তো বিধানবাবু কোথায় বসে কাজ করেন!”

    বিধান নার্ভাস গলায় বলেছিল, “আমার আবার অফিস। বড় টেবিলে সবার সঙ্গে বসে কাজ করি।”

    শ্রীজিতা বিধানকে আরও জ্বালাতন করার জন্য বলল, “ওই বড় হলঘরে আপনি বসেন?”

    “ওই আর কী। অফিসে চাকরি করলে একটা কোথাও বসতে তো হবে। বাদ দিন, আসুন নীচে গিয়ে চা খাই।”

    শ্রীজিতা আবদারের ঢঙে বলেছিল, “এতদূর এলাম, আপনার বসার জায়গাটা একবার দেখে যাব না?”

    “না-না, ওসব দেখার কিছু নেই। আমি কে, যে আমার বসার জায়গা দেখতে হবে? কী যে ঠাট্টা করেন!‌‌ নীচে চলুন।”

    বিধান পারলে হাত ধরে টেনে নীচে নামায়।‌ শ্রীজিতা হাসি চেপে ছিল। কোনও রকমে তাকে অফিস থেকে বের করে, ফুটপাথের দোকানে চা খাইয়ে, বাসে তুলে তবে বাঁচে বিধান। সেদিন খুব মজা পেয়েছিল শ্রীজিতা। এরকম লাজুক মানুষ সে শেষ কবে দেখেছে, মনে করতে পারে না।

    দু’দিন পরে শ্রীজিতার মোবাইলে আবার ভেসে ওঠে ‘রেয়ার গ্রুপ’।

    “সেদিনের ব্যবহারে আমি খুব দুঃখিত। বোঝেনই তো অফিসে নানা ধরনের মানুষ আছে। তারা নানা কথা বলবে। ইতিমধ্যে বলছেও।”

    শ্রীজিতা অভিনয় করে বলল, “আমি কিন্তু ইনসাল্টেড ফিল করেছি। নিজের চেয়ার টেবিল না দেখান, ক্যান্টিনে বসিয়ে তো কিছু খাওয়াতে পারতেন। খুব খিদে পেয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কী আমি তো আপনার অফিসের টেবিল দেখতে যাইনি, খেতে গিয়েছিলাম।”

    বিধান বলেছিল, “ছি-ছি, আপনি বললেন না কেন?”

    “বললে কী করতেন? উলটো দিকের ফুটপাথে নিয়ে গিয়ে পাঁউরুটি আর তেলে ভাজা ডিমের অমলেট খাওয়াতেন? আপনার দৌড় তো দেখলাম। আজকের দিনে মেয়ে দেখে যে কেউ এরকম ঘেমে-নেয়ে একসা হতে পারে, জানা ছিল না।’

    বিধান‌‌ বিড়বিড় করে বলল, “আমি যে কীভাবে বোঝাব.‌.‌.‌”

    “কিচ্ছু বোঝাতে হবে না। একদিন বাড়িতে নেমন্তন্ন করে পেট পুরে খাইয়ে দিন। রান্না করতে জানেন? একা যখন থাকেন, জানা উচিত।”

    “নিশ্চয়ই… বলব একদিন।”

    ‌বিধান ঢোঁক গিলে ফোন ছেড়েছিল। পালিয়ে বেঁচেছিল যাকে বলে। আর হেসে নিজের বিছানায় গড়াগড়ি খেয়েছিল শ্রীজিতা। জীবনকে সে তখন কঠিন ভাবে বুঝতে শেখেনি।

    নেমন্তন্ন করতে হয়নি। বিধানের বাড়িতে শ্রীজিতা নিজে থেকেই গিয়েছিল। গিয়েছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ঘটনাটি এতই অবিশ্বাস্য ছিল, যে শ্রীজিতা নিজেও বিশ্বাস করতে পারেনি।

    বিধানের প্রায় বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা। কোনওরকমে বলেছিল, “কী বলছেন আপনি!‌”

    “যা বলছি, ঠিকই বলছি। এবার আপনি বলুন, আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেন?”

    বাড়িতে ‘নিজের পাত্র ঠিক করা আছে’ ঘোষণা করার পর দু’রাত না ঘুমিয়ে ভেবেছিল শ্রীজিতা। একটা সময় মনে হল, একথা একমাত্র বিধান নামের বোকা এবং ভাল ছেলেটাকে বলা যায়। ‘রেয়ার গ্রুপ’-এর এই ছেলেটি কম রোজগার করা একজন ভাল মানুষ। ঠুনকো স্মার্ট ছেলে তার কম দেখা হল না। বাবাকে দেখার পর টাকার জোরকেও সে ভয় পায়। বিধানের সঙ্গে সংসার করতে গেলে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সে কখনও তাকে কবজা করতে চাইবে না। তার স্বাধীন বেঁচে থাকা, লেখাপড়া শিখে ইচ্ছেমতো কেরিয়ার তৈরির বাধা হবে না।

    বিধান বলেছিল, “আমার ধারণা আপনি ঠাট্টা করছেন।”

    শ্রীজিতা একটু চুপ করে ছিল। তারপর চোয়াল শক্ত করে বলেছিল, “আমি দুটো কারণে আপনাকে বিয়ে করতে চাই। এক, আপনি মানুষ ভাল, আপনাকে আমি পছন্দ করে ফেলেছি। সম্ভবত সেটাকে খানিকটা ভালবাসাই বলে। আর দুই, আমার বাড়ি। আমি বাড়ির কাছে প্রমাণ করতে চাই আমি একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানু্ষ। আমারও নিজস্ব ভাব–ভালবাসা আছে, পছন্দ–অপছন্দ আছে।”

    “আপনি মাথা ঠান্ডা করে ভাবুন।”

    শ্রীজিতা থমথমে গলায় বলেছিল, “আমার মাথা ঠান্ডাই আছে, আপনি কথার উত্তর দিন।‌”

    বিধান খানিকক্ষণ মুখ নামিয়ে থেকে বলেছিল, “শ্রীজিতা, তুমি তো জানো আমার বেতন কম। এত টানাটানির মধ্যে তুমি কী করে থাকবে?”

    শ্রীজিতা এগিয়ে গিয়ে বিধানের হাত ধরেছিল, “আমিও তো লেখাপড়া শিখেছি। আমি ঘরে বসে থাকব না। চিন্তা কোরো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

    কিছুই ঠিক হয়নি। সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তারপরেও সেসব দিন চোখের সামনে দেখতে পায় শ্রীজিতা। ধীরে-ধীরে অনেকটা ভুলছে, আরও ভুলতে হবে।

    মোবাইল ঝনঝন করে উঠতে সংবিৎ ফিরল শ্রীজিতার। ঝুঁকে পড়ে টেবিল থেকে ফোনটা নিল। মিনু কল করেছে। মিনুর সঙ্গে একটু কথা সেরে, অরণিকে হোয়াটসঅ্যাপ পাঠাল শ্রীজিতা।

    “একটা প্রোমোশন পেলাম। কী খাওয়াবে?”

    অরণির উত্তর এল না।‌

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত
    Next Article পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    Related Articles

    প্রচেত গুপ্ত

    দেরি হয়ে গেছে – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    রুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    মাটির দেওয়াল – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নুড়ি পাথরের দিনগুলি – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নিষাদ – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }