Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ধুলোবালির জীবন – প্রচেত গুপ্ত

    প্রচেত গুপ্ত এক পাতা গল্প170 Mins Read0

    ধুলোবালির জীবন – ৯

    ৯

    বাবা এবং গোলাপ গাছের কথা তোয়ার মনে পড়ল অনেক পরে। বিকেলবেলা মায়ের সঙ্গে শপিংমলে ঘোরার সময়।

    তোয়ার সকালটা কেটেছে তার ‘নিজের ঘর’ নিয়ে। ‘নিজের ঘর’-এর কথা তার‌ স্কুলের বন্ধুরা বিশ্বাস করেনি। তির্ণা, দেবশ্রী, কৌশানী, প্রিয়ম, মাহেক যাকেই সে তার এই অভিনব ‘বার্থ ডে গিফ্‌ট’-এর কথা বলেছে, সে হেসেছে।

    তির্ণা বলেছে, “ইটস আ ফান।”

    তোয়া অবাক হয়ে বলেছে, “ফান!‌ একটা আস্ত ঘর ফান হতে যাবে কেন?”

    তির্ণা বলেছে, “আন্টি ফান করার জন্য তোকে একটা ঘর সাজিয়ে দেখিয়েছে। বাড়ি ফিরে দেখবি, ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে।”

    তোয়া বলেছে, “মোটেই না। আমার মা মোটেই এরকম নয়।”

    প্রিয়ম বলেছে, “আই থিঙ্ক, ইটস ইয়োর ড্রিম দেবাদৃতা। সকালে তুই স্বপ্ন দেখেছিস।”

    দেবাদৃতা তোয়ার ভাল নাম। স্কুলের বন্ধুরা তাকে এই নামে ডাকে। এই নাম শ্রীজিতার দেওয়া। মেয়ের ডাকনামও সে রেখেছে। যদিও মেয়ে হওয়ার পর ভেবেছিল, আর পাঁচজন বাবার মতো বিধানও তার সন্তানের নাম নিয়ে উত্তেজিত হবে। নার্সিং হোমে সে বিধানকে বলেওছিল।

    “মেয়ের জন্য একটা ভাল নাম ভেবে দাও।”

    বিধান‌ লজ্জার হাসি হেসে বলেছিল, “নাম!‌ আমি কী নাম ভাবব!‌ ধুস, আমি কি ওসব জানি? আমার অত লেখাপড়াই নেই।‌”

    শ্রীজিতা বিরক্ত হয়ে বলেছিল, “এতে জানাজানির কী আছে? ছেলেমেয়ের নাম দিতে পণ্ডিত হতে হয় নাকি?”

    বিধান বলেছিল, ‘না-না, আমি ওসব পারব না। তুমি যা ভাল বোঝো করো।”

    “আমার নাম তোমার পছন্দ না-ও হতে পারে।”

    বিধান বলেছিল, “কী যে বলো শ্রী!‌ তোমার দেওয়া নাম পছন্দ হবে না!‌ তা ছাড়া আমার পছন্দ–অপছন্দ দিয়ে কী যায় আসে? সবার ভাল লাগলেই হল।”

    শ্রীজিতা বুঝেছিল, সমস্যা অন্য জায়গায়। “পারবে না”র চেয়েও বড় কথা বিধান বিষয়টায় নিস্পৃহ। সন্তানের নাম দেওয়া নিয়ে বাবাদের স্বাভাবিক আনন্দটুকু অনুভব করার মতো বোধও তার নেই। শ্রীজিতা কথা বাড়ায়নি। নাম সে একটা আগে থেকে ভেবে রেখেছিল। ছেলেমেয়ের জন্য আলাদা আলাদা নাম। যেমন হবে। বাবা–মা নার্সিং হোমে নাতনিকে দেখতে এসেছিলেন। সোনার হার দিয়ে অনিমেষ বসু তোয়ার মুখ দেখলেন। সোনার হার দেখে শ্রীজিতার মুখ থমথমে হয়ে গিয়েছিল।

    জয়া মেয়েকে বলেছিলেন, “আজ কিছু বলিস না।”

    শ্রীজিতা নিজেকে সামলে বলেছিল, “না, আজ বলছি না। তবে, এটাই প্রথম আর শেষ কিন্তু।”

    অনিমেষ বসু পরিবেশ সহজ করার জন্য হেসে বলেছিলেন, “তোর মেয়ের জন্য দারুণ একটা নাম ভেবে এসেছি। কাল সারাদিন বাংলা ডিকশনারি ঘেঁটেছি।”

    শ্রীজিতা একটুও সময় না নিয়ে বলেছিল, “থ্যাঙ্ক ইউ বাবা, কিন্তু নাম তো ঠিক হয়ে গিয়েছে। ওর বাবা নাম দিয়েছে। এমনকী নার্সিং হোমের খাতায় লিখিয়েও দেওয়া হয়েছে। আজকাল তো রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাড়াহুড়ো করে। বেবির নাম না লেখানো হলে বার্থ সার্টিফিকেট পেতে ঝামেলা হয়।”

    অনিমেষ বসু সন্দেহের ভুরু কুঁচকে বলেছিলেন, “এত তাড়াতাড়ি নাম ভেবে ফেলল বিধান!‌ বাবা হয়ে চৌখস হয়ে উঠেছে তো বেশ।”

    শ্রীজিতা মুচকি হেসে বলেছিল, “আমার সঙ্গে থাকতে হলে তো চৌখস হতেই হবে।”

    জয়া স্বামীর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলেছিলেন, “উফ্‌, তুমি থামবে? তোমার এই সব বাঁকা কথার জন্যই তো ..‌.‌তুই ছাড় তো শ্রী, তোর বাবার যতসব হাবিজাবি কথা,” তারপর উৎসাহ নিয়ে বলেছিলেন, “কী নাম দিল বিধান?”

    “ভাল নাম দেবাদৃতা, আর ডাক নাম রেখেছে তোয়া।‌ খারাপ হয়েছে?”

    অনিমেষ বসু ঠোঁটের কোনায় পরাজিতের হাসি রেখে বলেছিলেন, “নাম ভাল হয়েছে। কিন্তু ‌তুমি দেখছি বংশধরের পরিচয়েও আমাদের কোনও চিহ্ন রাখতে চাও না।”

    শ্রীজিতা মুখ ফিরিয়ে বলেছিল, “তা কেন, তোমরা চাইলে তোমাদের নাতনির আলাদা কোনও নাম রেখো। আমি আপত্তি করার কে? তবে তার বাবার রাখা নাম তো ..‌.‌”

    জয়া তাড়াতাড়ি বলেছিল, “মিষ্টি নাম হয়েছে।”

    সেই ‘দেবাদৃতা’ নামেই স্কুলে পরিচিত তোয়া। আস্ত একটা ঘর উপহার পাওয়া নিয়ে সকলের অবিশ্বাসে তোয়া খুবই রেগে যাচ্ছিল। কিন্তু কান্না পেল যখন মাহেক বলল, “তুই মিথ্যে কথা বলছিস দেবাদৃতা।”

    জন্মদিনের রিটার্ন গিফ্‌ট তো ফেরত নেওয়া যায় না। যদিও তোয়ার এত রাগ হচ্ছিল যে, একসময় মনে হচ্ছিল, চকোলেট, রং-পেনসিল সব বন্ধুদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। বাড়ি ফিরে এসে, প্রথমেই সেই ঘরে ছুটেছিল। দিনের আলোয় ঘর আরও ঝলমল করছে। লাফিয়ে উঠেছিল বিছানায়। সাজিয়ে রাখা পুতুল নিয়ে খেলা করেছিল। বিছানা থেকে নেমে নিজের ডেস্কে বসেছিল। তার স্কুলের বইখাতা, স্টোরি বুক, ড্রইং খাতা, রং সব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।

    মিনু বলেছিল, “তোমার মা বলেছে, ঘর আরও সাজানো হবে। একটা ছোট দোলনাও ঢুকবে।”

    “দোলনা!‌ সত্যি মিনুদি?”

    মিনু বলেছিল, “অবশ্যই সত্যি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে মাকে জিজ্ঞেস কোরো।”

    “আমি এখনই জিজ্ঞেস করব।”

    “আগে স্নান করে খেয়ে নাও, তারপর।”

    তোয়া বলেছিল, “না, আগে তুমি মাকে ফোন করো।”

    মিনু গাঁইগুঁই করলে তোয়া জেদ ধরে। মিনু শ্রীজিতাকে ফোন করে।

    “মা, আমার ঘরে কি দোলনা আসবে?”

    শ্রীজিতা বলে, “নিশ্চয়ই আসবে। দোলনা চেয়ার। যেদিকে জানলা, তার পাশে থাকবে। তুমি ইচ্ছে করলেই দোলনায় বসে বই পড়তে পারবে, পুতুল খেলতে পারবে।”

    তোয়া বলে, “জানো মা, আমার বন্ধুরা এই ঘরটার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না।”

    “তাতে কী? সানডে যখন তোমার বার্থ ডে পার্টিতে ওরা আসবে, তখন তো দেখতেই পাবে।”

    তোয়া লাফিয়ে উঠে বলল, “খুব ভাল হবে। সারপ্রাইজ় হবে।”

    “তার চেয়েও একটা বড় সারপ্রাইজ় হবে একটু পরে।”

    “কী সারপ্রাইজ়?”

    “আগে থেকে বলে দিলে সারপ্রাইজ় আর সারপ্রাইজ় থাকবে না যে।”

    সত্যিই তোয়ার জন্য সারপ্রাইজ় হল। বিকেলের আগেই শ্রীজিতা বাড়ি চলে এল। প্রোমোশনের জন্য সকলেই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অনেকে খেতেও চেয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন এসে আবার বায়না ধরেছে, তার নতুন টিমে যেন জায়গা পায়। এসবের মাঝখানেই বসকে বলে ছুটি নিয়ে অফিস থেকে পালিয়ে এল শ্রীজিতা। মাকে এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে পেয়ে তোয়া তো খুব খুশি। সে আবার নতুন করে তার নিজের ঘর নিয়ে পড়ল। বাড়িতে এদিকে ওদিক যা তার ‘সম্পত্তি’ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, সব এনে ঘরে জড়ো করল। তার মধ্যে ভাঙা পুতুল, পুরোনো স্কুল ব্যাগ, ছিঁড়ে যাওয়া ছবি… সব ছিল। মিনু আপত্তি করতে গেলে শ্রীজিতা বারণ করে।

    শ্রীজিতা আসলে দূর পর্যন্ত ভেবে তোয়ার এই ঘরের ব্যবস্থা করেছে। সে আর কয়েক বছরের মধ্যে মেয়েকে কোনও বড় হস্টেলে পাঠিয়ে দিতে চায়। অল্প অল্প খোঁজখবর শুরুও করেছে। এই শহর থেকে অনেক দূরে কোথাও থাকবে তোয়া। সেখানে নিজে বড় হবে। লেখাপড়ার সঙ্গে স্বাধীন চিন্তা করতে শিখবে। নিজের ভালমন্দ বুঝে নিজের ইচ্ছেমতো চলতে শিখবে। সে যা পায়নি, মেয়েকে তাই দেবে। সেই কারণে এখন থেকেই পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া। একা থাকার অভ্যেস করতে হবে তোয়াকে। সেই সঙ্গে বিধানের কাছ থেকেও দূরে নিয়ে যেতে হবে। এই ছোটবেলায় যেটুকু দেখল, সেটুকুই যথেষ্ট। বাবাকে এর বেশি জানার দরকার নেই তার। জানলে সে–ই দুঃখ পাবে। বাবাকে ঘৃণা করা কোনও সন্তানের জন্যই সুখের হয় না। তার নিজের জন্যও হয়নি। শ্রীজিতা এখনও মনে করে, অনিমেষ বসু নামে একজন গোঁয়ার, দাম্ভিক, ডিক্টেটরের জন্যই তার ব্যক্তিগত জীবন আজ এমন বিপর্যস্ত। এই মানুষটা শুধু তার বাল্য, কৈশোরকে নষ্টই করেনি, তার পরের জীবনটাকেও তছনছ করেছে। তীব্র ক্রোধ আর ঘৃণায় সে বিধানকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ তার অনেক ভাল বিয়ে হতে পারত। কে জানে, বাবা যাদের বেছে এনেছিল, তাদের মধ্যেই হয়তো কেউ যোগ্য ছিল। সেই ছেলে তার প্রতি কেয়ারিং হত। শুধু বাবা চাইছে বলেই তাদের কাউকে বিয়ে করেনি সে। ‘ভাল মানুষ’ চিনতে ভুল করেছে। নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করছে শুনে বাড়ি থেকে বের করে দিতেও অনিমেষ বসু একবার থমকাননি। মেয়ের চেয়ে ইগো অনেক বড় ছিল তাঁর কাছে। যদি সেদিন মেয়েকে ভরসা করতেন, অনেকটা জোর পেতেন। তার কোনও সুযোগই রাখেননি মানুষটা। একটা বছর কোনও যোগাযোগই রাখেননি। মা লুকিয়ে ফোন করেছে। শুধুই‌ কি ব্যক্তিগত জীবন? অনিমেষ বসুর জন্য তার কেরিয়ারও নষ্ট হয়েছে। ঠিকসময়ে এবং পছন্দমতো পড়াশোনা যদি চালিয়ে যেতে পারত, তা হলে অনেক আগেই কাজের জীবন শুরু করতে পারত।

    বিকেলে তোয়াকে নতুন জামা পরিয়ে, সাজিয়ে নিয়ে বেরোল শ্রীজিতা।

    “কোথায় যাবে মা?”

    শ্রীজিতা বলল, “তুমিই বলো।”

    তোয়া নাক কুঁচকে একটু ভাবল। তারপর বলল, “চলো একটু পার্কে ঘুরে আসি। তা হলে সবাই আমার এই সুন্দর ড্রেসটা দেখতে পাবে।”

    শ্রীজিতা হেসে বলল, “ঠিক আছে তাই চলো। তুমি কি হাউজ়িং-এর ভিতরের পার্কটাতেই যেতে চাও? নাকি বাইরের বড় কোনও পার্কে যাবে?”

    তোয়া বলল, “বাইরের পার্কেই যাব। সেখানে যারা আমাকে চেনে না, তারাও আমাকে দেখবে। মনে-মনে ভাববে, ‘ইস কী সুন্দর ড্রেস!‌ আমার একটা থাকলে ভাল হত।”

    শ্রীজিতা বলল, “অন্য কেউ সুন্দর ড্রেস পরলে কি তোমারও এরকম মনে হয়?”

    “কেন মনে হবে? আমার তো অনেক সুন্দর ড্রেস আছে।”

    শ্রীজিতা বলল, “গুড গার্ল।”

    লিফ্‌ট দিয়ে নামার পর শ্রীজিতা বলল, “আচ্ছা, আমরা যদি পার্কে না গিয়ে‌ এখন মলে যাই কেমন হবে? সেখানে গিয়ে আমরা খানিকটা ঘুরব, খানিকটা কেনাকাটা করব, একটু খেতেও পারি। তোমার ঘরের জন্য একটা দোলনা পাওয়া যায় কি না সেটাও দেখতে পারি। ‌যাবে?”

    তোয়া গালে আঙুলের টোকা দিয়ে বলল, “সেটাই ভাল হবে।”

    মলে মা আর মেয়ে এলোমেলো ঘুরতে লাগল। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করল। তোয়ার ঘরের জন্য একটা দোলনা পছন্দ হল। কিন্তু দরদামে পোষাল না। ফলে কেনা হল না। আইসক্রিম পার্লারে বসে আইসক্রিম কিনে খেল মা–‌মেয়ে।

    তোয়া বলল, “বাড়ি যাব। পা যন্ত্রণা করছে।”

    মল থেকে বেরোনোর সময় গেটের কাছে থমকে দাঁড়াল তোয়া। ফুলের দোকান। রং আর আলোয় ঝলমল করছে।

    শ্রীজিতা বলল, “কী হল? ফুল নেবে ?”

    তোয়া চুপ করে রইল। শ্রীজিতা বলল, “চলো ফুল কিনি। আগেই কেনা উচিত ছিল। ফুল ছাড়া জন্মদিন হয় নাকি? এসো, ভিতরে এসো।”

    তোয়া নড়ল না। নিচু গলায় বলল, “বাবা তো এল না।”

    শ্রীজিতা ভুরু কুঁচকে ফেলল। বিধানের কথা তারও মনে ছিল না। সত্যিই তো, সে আজ মেয়ের কাছে আসবে বলেছিল। তোয়া মুখ তুলে শুকনোভাবে বলল, “বাবা বলেছিল, ফুল গাছ নিয়ে আসবে। রেড রোজ়।”

    শ্রীজিতা পরিস্থিতি সহজ করার জন্য হাসল, “শুধু ফুল নয়, একেবারে গাছ!”

    “আমি তো বাবাকে বলেছিলাম। বার্থ ডে গিফটে রোজ় ট্রি চাই।”

    শ্রীজিতা হালকা বিরক্ত হল। তোয়া তার বাবার কাছে আবদার করতেও শুরু করেছে তা হলে। আবদারের বিষয়টাও কেমন যেন। একেবারে গাছ!‌ তোয়া যতই ছোট হোক না কেন, একটু বেশি হয়ে গেল না? বিরক্তি গোপন করতে চাইল শ্রীজিতা। পারল না, বলল, “বাবাকে বললে কেন? আমাকে বললেই তো হত। আমি কি তোমাকে একটা গাছ দিতে পারতাম না?”

    তোয়া বলল, “বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, বার্থ ডে-তে কী চাই? আমি বলেছিলাম, গাড়ি চাই। বাবা বলল, গাড়ি দিতে পারবে না। আমি তখন বললাম, ঠিক আছে, তা হলে তুমি আমাকে পিউদের ফ্ল্যাটের মতো একটা গাছ দেবে। রেড রোজ়।”

    শ্রীজিতা চাপা গলায় বলল, “কেন এরকম বিরক্ত করেছ? তোমার বাবা গোলাপ গাছ কোথায় পাবে?”

    তোয়া কাঁদোকাঁদোভাবে বলল, “বাবা বলল তো দেবে।”

    শ্রীজিতা তাড়াতাড়ি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে দেবে। চলো, এখন আমরা খানিকটা ফুল নিয়ে নিই।”

    বেশ খানিকটা গোলাপই নিল শ্রীজিতা। লাল, হলুদ সব রং মিশিয়ে ‌নিল। শ্রীজিতা ভেবেছিল, তোয়ার মন ঘুরে যাবে। তোয়া কিন্তু অন্যমনস্কই রইল। বাড়ি ফেরার পথে শ্রীজিতা মেয়েকে কাছে টেনে বলল, “এই ফুলগুলো একটা ফুলদানিতে সাজিয়ে তোমার ঘরে রাখব। দেখবে কী সুন্দর লাগবে।”

    তোয়া চুপ করে রইল। শ্রীজিতা হেসে বলল, “আমার সোনা কি আমার উপর রাগ করেছে?”

    তোয়া মাথা নাড়ল। শ্রীজিতা বলল, “ওমা!‌ রাগ করেছ কেন?”

    তোয়া অভিমানী গলায় বলল, “তুমি আমাকে বকেছ। বার্থ ডে-তে মেয়েকে কেউ বকে?”

    শ্রীজিতা বু‌ঝল কাজটা ঠিক হয়নি। না বকলেও গলায় ঝাঁঝ ছিল। বিধানের আদিখ্যেতার কথা শুনে মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনি। জন্মদিনে বিধান আসবে, এই পর্যন্ত জানত। সে যে মেয়েকে গাছ-টাছ এনে দেবে বলে কথা দিয়েছে, একথা জানা ছিল না। তোয়া তাকে আগে বলেওনি। বিধানের সঙ্গেও তো কথা হয়েছে। সেও তো বলেনি। ভালই হল, এবার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। বাবা মেয়ের এই বন্ধন যেন বাড়তে না পারে। তবে যা করার মাথা ঠান্ডা রেখে করতে হবে। চাকরি, ডিভোর্স, নতুন ফ্ল্যাট… সবই তো মাথা ঠান্ডা রেখে করেছে। এই কাজটাও পারবে।

    “সরি তোয়া। তবে তোমাকে আমি বকিনি। তোমার বাবা কোথা থেকে গাছ জোগাড় করবে, সেই কথাটা ভেবেছি। ফুলের দোকান রাস্তায় ধারে অনেক থাকে। ফুল গাছের দোকান তো থাকে না।”

    তোয়া তার ছোট্ট মাথা নাড়িয়ে বলল, “তুমি চিন্তা কোরো না মা। বাবা যখন বলেছে, ঠিক নিয়ে আসবে।”

    অন্য সময় মেয়ের পাকা-পাকা কথা শ্রীজিতা এনজয় করে। আজ বুকে ধক্‌ করে লাগল। বাবার উপর এত কনফিডেন্স!‌ কীভাবে তৈরি হল? শ্রীজিতা প্রসঙ্গ বদল করল।

    “আচ্ছা তোয়া তোমার ঘরের একদিকের দেওয়ালে তোমার আঁকা কতগুলো ছবি লাগিয়ে দিলে কেমন হবে?”

    তোয়া হাততালি দিয়ে বলল, “ফাইন হবে। আমি কি নতুন ছবি আঁকব মা?”

    শ্রীজিতা উৎসাহ দেখানোর ভান করে বলল, ‘সে তুমি ঠিক করবে। কিছু নতুন ছবি আঁকতে পারো।”

    তোয়া বলল, “মা, আমি সব ছবি নতুন আঁকতে চাই।”

    সন্ধে নেমেছে বেশ খানিকক্ষণ আগে। দক্ষিণ দিক থেকে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। ক’দিন ধরেই এরকম হচ্ছে। সন্ধের পর থেকে পরিবেশ আরামদায়ক হয়ে যাচ্ছে। শ্রীজিতার ফ্ল্যাট উপরের দিকে বলে, সেখানে হাওয়ার জোর আরও বেশি। বৃষ্টি হলেও মনে হয় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। বিধানের সঙ্গে একতলার ঘুপচি ঘরে থাকতে-থাকতে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি সব ভুলতে বসেছিল শ্রীজিতা। রোদ মানে ছিল ভীষণ গরমের একটা ঘর, তেতে যাওয়া। দুপুরগুলো ছিল অসহ্য। চারপাশের ঘরবাড়ি টপকে ঝড় ছিটেফোঁটাও ঢুকত কি না সন্দেহ। আর বৃষ্টি মানে ছিল ছুটে গিয়ে নেড়া ছাদ থেকে শুকোতে দেওয়া কাপড়-চোপড় তুলে আনা। ঘরের ভাঙা, নড়বড়ে দরজা জানলা আটকানো। অনেক দেখে ফ্ল্যাট কিনেছে শ্রীজিতা। মেয়ে যেন প্রকৃতি দেখতে পারে। সে-ও ঝড়বৃষ্টির রাতে একা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। জলের ছাঁটে ভেজে। একবার তো এক কাণ্ড হল। এরকম এক বৃষ্টির রাতে অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল শ্রীজিতা। রাত তখন অনেক। ঘরে মেয়ে ঘুমিয়ে কাদা। কতটা সময় কেটে গিয়েছে, খেয়াল ছিল না। হঠাৎ মনে হল পাশে কে দাঁড়িয়ে আছে। একটু-একটু নড়ছে। কোমরের কাছে কীসের ছোঁয়া লাগছে যেন। চমকে উঠে ঘাড় ফিরিয়েছিল শ্রীজিতা। তোয়া!‌ ঘুম থেকে উঠে এসেছে। ওইটুকু মেয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে রাতের বৃষ্টি দেখছে।

    শ্রীজিতা হাউজ়িং-এর গেটে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “ঠিক আছে তোয়া। তুমি সব নতুন ছবি এঁ‌কো।”

    গেটে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ল তোয়া। নিচু গলায় বলল, “মা, সিকিয়োরিটিকাকুকে একটু জিজ্ঞেস করো না।”

    শ্রীজিতা অবাক হয়ে বলল, “কী জিজ্ঞেস করব!‌”

    “বাবা এসেছিল কি না।”

    শ্রীজিতা এবার গম্ভীর গলা করে বলল, “ইটস টু মাচ তোয়া। সে যদি আসে, নিশ্চয়ই গেট থেকে চলে যাবে না। ফ্ল্যাটে যাবে। সেখানে মিনু আছে। হি উইল ওয়েট ফর ইউ। এত ছটফট করছ কেন? একটা সামান্য গাছের জন্য? গাছ তো তোমার এই হাউজ়িং-এর ভিতর অনেক আছে। বাগানও আছে। মালিকাকুদের কাউকে বললেই আমাদের একটা গাছ দিয়ে দেবে। কই কখনও তো ইন্টারেস্ট দেখিনি।”

    তোয়া গোঁজ হয়ে কয়েক মুহূর্ত‌ দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের বিল্ডিং-এর দিকে হাঁটতে লাগল। শ্রীজিতার অস্থির লাগছে। মন ভোলানোর এত চেষ্টা করেও কোনও লাভ হল না। মায়ের কেনা এতগুলো গোলাপ ফুলে কোনও উৎসাহ নেই, বাবা গাছ নিয়ে এল কি না, সেদিকে মেয়েটার মন। কোনও ভুল হয়ে যাচ্ছে?

    ফ্ল্যাটে গিয়ে জানা গেল, বিধান আসেনি। তোয়া থম মেরে গেল। কিছু খেতে চাইল না। শ্রীজিতার একবার মনে হল, মেয়েকে খুব জোরে একটা ধমক দেয়। কিন্তু মেয়েটার আজ জন্মদিন। জন্মদিন না হলেই বা কী? যে মানুষটার এবাড়িতে কোনও ভূমিকা নেই, এবাড়িতে থাকেই না, তার জন্য অশান্তি করবে কেন? বাচ্চা মেয়ের কখন কীসে মন লেগে যায়, কে বলতে পারে? হয়তো বাবা নয়, গাছেই তার আসল উৎসাহ। ভুল ভেবে মেয়েটার উপর রেগে যাচ্ছে। এখনই মন থেকে ঝেড়ে ফেলা উচিত। বিধানের কোনও বিষয় নিয়ে স্পর্শকাতর হওয়াটাও বোকামি। এই বোকামি সে কেন করছে?

    নতুন ঘরে গিয়ে মেয়ের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটাল শ্রীজিতা। স্কুলের পড়া করার পর, কাগজ, রং-পেনসিল ছড়িয়ে তোয়া ছবি আঁকতে বসে গিয়েছে। তাকে দেখে কে বলবে, এই মেয়ে খানিক আগেও মুখ গোমড়া করে ছিল! স্বস্তি পেল শ্রীজিতা। মিছিমিছি টেনশন করছিল। মিনুকে তোয়ার কাছে রেখে নিজের ঘরে গেল সে। ল্যাপটপ নিয়ে বসল। আজ অনেক আগে অফিস থেকে বেরিয়েছে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে অনেক মেল এসেছে। ল্যাপটপ পুরো খোলার আগেই মোবাইল বেজে উঠল। মোবাইল একটু দূরে রয়েছে। বুকটা ধক্‌ করে উঠল। বিধান নয়তো?

    যদি আসতে চায় এখন, কী বলবে সে? কী করে বারণ করবে? অথচ এত রাতে বিধানের এখানে আসাটা একেবারেই ঠিক হবে না। তোয়া শিখবে, তার বাবা তার জন্য কথা রাখে। অ্যাটাচমেন্ট বাড়বে। এটা হতে দেওয়া ঠিক নয়। শ্রীজিতার মনে হল, তার একটু ঘাম হচ্ছে। সে কি নার্ভাস বোধ করছে? কেন করবে? আজকাল সে ঘরে শর্টস পরে থাকে। উপরে স্লিভলেস গেঞ্জি। কেউ বেল-টেল বাজালে গাউন পরে নেয়। এই সময়ে কেউ আসে না বললেই চলে। ফোনটা বেজে চলেছে। না ধরলে কেমন হয়?

    তারপরেও ঝুঁকে পড়ে মোবাইল টেনে নিল শ্রীজিতা। অরণি।

    “বাপ রে, এতক্ষণ লাগল ফোন ধরতে! তুমি কি মেয়ের বার্থ ডে সেলিব্রেট করছ জিতা?”

    নিশ্চিন্তের শ্বাস ফেলে শ্রীজিতা বলল, “না-না, সেলিব্রেশন কিছু নয়। যা হওয়ার আসছে রোববার হবে। তোয়ার বন্ধুরা আসবে।”

    অরণি বলল, “তুমি যে বললে, সন্ধেবেলা মেয়ের সঙ্গে থাকবে।”

    “সে পালা শেষ। মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে এসেছি। এখন তো সাড়ে আটটা। তোয়া ডিনার করে শুয়ে পড়বে। ওর কাল স্কুল আছে।”

    অরণি ওপাশ থেকে উৎসাহ নিয়ে বলল, “দেন ইটস ফাইন। আমি তোমার বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছি উইথ আ বটল অব ওয়াইন। উই উইল সেলিব্রেট ইয়োর প্রোমোশন জিতা।”

    ‌শ্রীজিতা হেসে বলল, “পাগল হয়েছ? এত রাতে বাড়িতে!‌ মেয়ে আছে না?”

    অরণি বলল, “সো হোয়াট? এই তো বললে তোয়া ঘুমিয়ে পড়বে।”

    শ্রীজিতা বলল, “মিনু আছে। তুমি তো জানো অরণি আমি বাড়িতে খুব কনজ়ারভেটিভ। হইহুল্লোড় করি না।”

    অরণি একটু চুপ করে থেকে বলল, “দেন ইউ কাম টু মাই প্লেস। আমার হোটেলে চলে এসো।”

    শ্রীজিতা গাঢ় স্বরে বলল, “পাগলামি কোরো না অরণি। রাত হয়ে গিয়েছে। মেয়ে ঘুমোবে‌। আমারও কাল সকালে অফিস। বরং কাল মিট করি।”

    অরণি আহ্লাদি গলায় বলল, “নো জিতা। আজই চাই। আই নিড ইউ ব্যাডলি। আজ তোমাকে আদর করতে না পারলে পাগল হয়ে যাব।”

    পুরুষমানুষের এই আকুতি শ্রীজিতার ভাল লাগে। অরণির বেলায় তো আরও বেশি লাগে। সে সব অর্থেই কাজের পুরুষ। বিছানায় এবং প্রফেশনে। একটা সময় কত রাত জেগে থাকত শ্রীজিতা, বিধান কখন এসে তাকে ডাকবে। বারান্দায় বসে থাকত বিধান। বসেই থাকত। অপেক্ষায়-অপেক্ষায় ক্লান্ত, অপমানিত হয়ে একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ত শ্রীজিতা।

    “ডোন্ট বি সো ক্রেজ়ি অরণি। কাল হবে। অফিস থেকে বেরিয়ে আগে তোমার ওখানে যাব। প্রমিস।”

    অরণি নাছোড়বান্দা। বলল, “হবে না। তুমি না এলে, রাত বারোটায় আমি গিয়ে তোমার কাছে হাজির হব।”

    ফোন রেখে শ্রীজিতা খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। মিনু এসে খবর দিল, তোয়া আঁকতে-আঁকতে ঘুমিয়ে পড়েছে। শ্রীজিতা আধো ঘুমের মেয়েকে দ্রুত হাতে খাইয়ে দিল। চোখ বোজা অবস্থাতেই তোয়া তার মাকে প্রশ্ন করল, “আমি নতুন ঘরে শোব তো?”

    “তাই শোবে। তবে প্রথম ক’টাদিন তোমার ঘরের মেঝেতে বিছানা করে মিনু শোবে।”

    তোয়া জড়ানো গলায় বলল, “কেন? মিনুদি কেন আমার ঘরে শোবে?”

    “রাতে যদি তোমার ভয় করে।”

    নতুন ঘরের বিছানায় শুইয়ে মেয়ের কপালে চুমু খেল শ্রীজিতা।

    তোয়া মায়ের গলা জড়িয়ে বলল, “বাবা কি আসবে? এলে আমাকে ডেকে দেবে কিন্তু।”

    শ্রীজিতা ফিসফিস করে বলল, “অবশ্যই ডেকে দেব। তবে আজ আর আসবে বলে মনে হয় না। রাত হয়ে গিয়েছে যে। কাল–পরশু নিশ্চয় গিফ্‌ট নিয়ে আসবে। তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।”

    পাশ ফিরেই ঘুমিয়ে পড়ল তোয়া। গায়ের চাদর দিয়ে, নরম আলো জ্বালিয়ে‌ ঘর থেকে বেরিয়ে এল শ্রীজিতা। ন’টা বাজে। ডাইনিং টেবিলে মিনু রাতের খাবার সাজাচ্ছে।

    “মিনু, একটা জরুরি কাজে আমি বেরোচ্ছি।”

    মিনু অবাক হয়ে তাকাল। চাপা গলায় বলল, “এত রাতে!‌”

    শ্রীজিতা অসন্তুষ্ট গলায় বলল, “রাত কোথায়? মোটে তো ন’টা বাজে। আমার অফিসের কাজ সবসময়ের। তুই তো জানিস। জানিস না?”

    মিনু ঘাড় কাত করে। শ্রীজিতা বিরক্ত গলায় বলল, “জানিস যদি বলছিস কেন? তুই খেয়ে নিয়ে তোয়ার ঘরে শুয়ে থাকবি। আমি চলে আসব। দরজার চাবি নিয়ে যাচ্ছি।”

    মিনু তার ‘দিদি’র রাত করায় অভ্যস্ত। তারপরেও আজ কেন জানি বিস্ময় প্রকাশ করে ফেলেছিল। আসলে আজকের দিনটা তো আর পাঁচটা দিনের মতো নয়। আজ তোয়ার জন্মদিন, তার উপর সে শুয়েছে আলাদা ঘরে। মেয়েটা তার বাবার জন্য ঘ্যানঘ্যানও করছে। ‘জামাইবাবু’ এরকম কখনও করে না। যেদিন আসার কথা থাকে, আগের দিন ‘দিদি’-কে ফোন করে নেয়।‌ ঝড়বৃষ্টি হলেও আসে। একবার তো সত্যি ভিজে কাক হয়ে এসেছিল। মানুষটা অদ্ভুত। নিজের সুবিধে –অসুবিধে, কিছুই বুঝতে দেয় না। নিজেও বোঝে না মনে হয়। দিদি বলেছে, “তোয়ার বাবা যখনই আসবে, চায়ের সঙ্গে কিছু খেতে দিবি। শুধু চা দিবি না।”

    মিনু এটা সেটা খাবার দেয়। ইচ্ছে করে বলে, “দিদি দিতে বলেছে।”

    মানুষটার তাতে কিছু এসে যায় না। বেশির ভাগ দিনই খাবার পড়ে থাকে। অনেকদিন চা জুড়িয়ে জল হয়ে যায়। মিনুর খুব ইচ্ছে, একদিন ‘জামাইবাবু’র সঙ্গে দিদির দেখা হয়ে যাক। দিদি চা–খাবার নিয়ে যাবে। তখন মানুষটা কী করে, দেখতে হবে। দিদি যা রাগী, এভাবে খাবার নষ্ট করলে নিশ্চয়ই বকুনি দেবে। কিন্তু তা হওয়ার নয়। দিদি বাড়ি থাকলে তোয়ার বাবা কখনও আসে না। বাইরে থাকলে, তবে আসে। আজও নিশ্চয়ই তাই আসার কথা ছিল। কেন যে এল না! বেচারি তোয়া।

    শ্রীজিতা তৈরি হল। ওয়ার্ডরোব খুলে বেছে নিল লং শ্রাগ। উজ্জ্বল হলুদ রঙের শ্রাগে লম্বা স্ট্রাইপ। স্লিটেড স্লিভস। অন্তর্বাস বাছল মন দিয়ে। অরণি এই ব্যাপারে নাকউঁচু। সে বলে, “বাঙালি মেয়েরা লঁজ়ারির মাহাত্ম্য বুঝতে শেখেনি। অন্তর্বাস সৌন্দর্যকে শার্প আর ম্যাচিয়োর করে।”

    পোশাক খোলার পর যা হোক গোছের ব্রা–প্যান্টি দেখলে অরণি ভুরু কোঁচকায়। শ্রীজিতা ফিসফিস করে বলে, “এসব আর কতক্ষণ?”

    অরণি বলে, “এটাই তো ভুল করো। কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও ওগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যেন তোমার মতো সুন্দরীর জন্য উপযুক্ত হয়।”

    শ্রীজিতা ঠোঁট কামড়ে বলে, “রাখো। তোমার মতো বাঙালি পুরুষদেরও আমার জানা আছে‌। সুন্দর কিছু পরলে যেন কত ধৈর্য ধরে দেখবে।”

    তবে তারপর থেকে অন্তর্বাসে মন দিয়েছে শ্রীজিতা। অরণির কাছে যাওয়ার সময় তো বটেই। সাজগোজ করতে-করতে ক্যাব ডেকে নিল শ্রীজিতা। ক্যাবে বসে মোবাইল থেকে দুটো ফোন করল। প্রথমটা অরণিকে।

    “আসছি। অন দ্য ওয়ে।”

    “রাতে থাকবে জিতা?”

    শ্রীজিতা গাঢ় স্বরে বলল, “পাকাপাকি যদি বলো, ভেবে দেখতে পারি।’

    “তুমি সিরিয়াস?”

    শ্রীজিতা হেসে বলল, “বয়ে গিয়েছে। মজা করলাম। তুমি রিসেপশনে বলে দাও।”

    অরণি বলল, “দেখি, কতদিন মজা করো।”

    শ্রীজিতা ফোন কেটে নিজের মনে হাসল। সম্পর্ক তার কাছে এখন মজা ছাড়া আর কিছু নয়। পরের ফোনটা সে করল বিধানকে। এ কেমন আচরণ? আসতে পারবে না, একথাটা তার মেয়েকে জানানো উচিত ছিল। যদিও খুব জরুরি কারণ ছাড়া মিনুর কাছে রাখা মোবাইলে কল করতে তাকে বারণ করা আছে।

    বিধান বাড়িতে রাখা মোবাইলে একদিন বা দু’দিন ফোন করেছে। শ্রীজিতাকেও খুব কম দিন করেছে। শ্রীজিতাই করে। দরকার পড়লে করে। কিছু কাগজপত্র খুঁজে না পেলে ফোন করে জানতে চায়, কোথায় রেখেছিল। তবে এখন সে ঝামেলা কমেছে। কলকাতার পাট চুকিয়ে বিধান তো চলেই গিয়েছে।

    মোবাইলে বিধানের নম্বর টিপতে-টিপতে শ্রীজিতা মনকে কঠিন করল। স্ত্রীর প্রতি একসময়ে যে ঔদাসীন্য সে দেখিয়েছে, তোয়ার সঙ্গে এখনই তা শুরু করল নাকি? করলে তার জেনে রাখা দরকার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সে আর বেশিদিন পাবে না। কড়া কথা বলার জন্য তৈরি হল শ্রীজিতা। কিন্তু ফোন বাজল না। বিধানের নম্বর গম্ভীর গলায় জানাল, ‘সুইচড অফ’।‌ শ্রীজিতার ভুরু কুঁচকে গেল। বিধানকে ফোন না ধরতে সে বহুবার দেখেছে, বন্ধ রাখতে দেখেনি। কী হল!

    অরণি আজ যেন অতিরিক্ত তেতে রয়েছে। হোটেলের দরজা খুলেই শক্তভাবে জড়িয়ে নিয়ে চুমু খেল। তারপর নিয়ে গেল বিছানায়। বাধা দেওয়ার মিথ্যে ভান করল শ্রীজিতা।

    “দাঁড়াও, একটু রেস্ট করি। ড্রেসটা কেমন হয়েছে‌ বললে না?”

    অরণি বলল, “খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু তোমার চেয়ে তো সুন্দর নয়। এসো সব খুলে দিয়ে তোমাকে দেখি।”

    শ্রীজিতা হাত বাড়িয়ে অরণির নাকটা নেড়ে দিয়ে বলল, “ইস্‌, কত বড়-বড় কথা, ভাল লঁজ়ারি পরবে.‌.‌.‌অমুক করবে, তমুক করবে.‌.‌.এখন?”

    “দাঁড়াও। এখন কী, সেটা বলছি। লেটস গো টু বেড।”

    শ্রীজিতা উঠে অরণির পাশে বসল। নিজের ও অরণির পোশাক খুলতে-খুলতে বলল, “না, কোথাও যাব না।”

    অনেকটা সময় ধরে সোফায় বসেই নগ্ন শ্রীজিতা আদর করল নগ্ন অরণিকে। জেগে থাকা শরীরকে খেপিয়ে তুলল। নিজেও খেপে উঠল। একসময়ে শ্রীজিতাকে কোলে তুলে অরণি নিয়ে গেল বিছানায়। শিহরনে, আশ্লেষে কেঁপে-কেঁপে উঠল শ্রীজিতা। মৈথুনের চরম মুহূর্তে অরণির শরীরের সঙ্গে মিশে যেতে-যেতে সে ভাবল, এই রতিক্রীড়ায় একটুও কি ভালবাসা আছে?

    না, নেই। শরীরের ভাললাগা ছাড়া সব ফাঁকা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত
    Next Article পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    Related Articles

    প্রচেত গুপ্ত

    দেরি হয়ে গেছে – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    রুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    মাটির দেওয়াল – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নুড়ি পাথরের দিনগুলি – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নিষাদ – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }