Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প60 Mins Read0
    ⤶

    ৪. ঘরে এসে বসে পড়ে ইলা

    ঘরে এসে বসে পড়ে ইলা।

    তবে কি বাবাকে বলবে?

    বাবা কি বলবেন? আহত পশুর দৃষ্টি নিয়ে শুধু তাকিয়ে থাকবেন তার সরল ছেলেমানুষ মেয়ের দিকে? না কি, গম্ভীর ক্লান্ত গলায় বলবেন, আর কদিন আগে বললে আর একটা ভদ্রলোকের কাছে অপদস্থ হতাম না।

    মুখোমুখি বলা যাবে না।

    চিঠি লিখে বলতে হবে। তবু ইলার হাত দিয়েই আসুক আঘাত। সম্বুদ্ধর কথাবার্তা নরম নয়, কি বলতে কি বলে বসবে।

    কাগজ টেনে নিয়ে বসল।

    আর পরমুহূর্তেই একটা অদ্ভুত চিন্তা পেয়ে বসল ইলাকে।

    ওরা তো খুব ভদ্র। অমলা বলেছেন জীবনে এমন ভদ্র দেখেননি। সেই ভদ্রতার কাছেই সাহায্য চাক না ইলা। চিঠি সেখানেই পাঠাক। লিখুক আপনি ভদ্রলোক, তাই আপনাকে জানালাম। গল্প-উপন্যাসে তো এমন হয়।

    .

    অমলা যেন আহ্লাদের সাগরে ভাসছেন। কত ভয়, কত ভাবনা ছিল, সব কেটে গিয়ে ঝলমলে সূর্যের আলো দেখা দিয়েছে আকাশে, বিচলিত না হয়ে পারছেন না অমলা।

    আর কি চায় মানুষ?

    আর কি চাইবার আছে?

    কৃতী ছেলে, সুন্দর ছেলে, ভদ্র আর মার্জিত ছেলে। তার উপর ব্যবহার-সভ্যতা-কুলশীল মান-অবস্থা সব প্রথম শ্রেণীর। চাওয়ার অতিরিক্তই।

    না, অমলা ভাবতে পারেন না এ-সব পাওয়ার অনেক আগে প্রেম চেয়ে বসে আছে ইলা। তাই ভাবেন, ইলার অনেক ভাগ্য।

    তা ভাগ্য পরম বইকি।

    ইলার সেই চিঠি তো আর কারও হাতেও পড়তে পারত। অথবা অপমানিত বর ঘৃণায় রাগে সে-চিঠি রাষ্ট্র করতে পারত। কদর্য এক কালিতে ভরিয়ে দিতে পারত ইলার মুখ।

    অন্তত একখানা কড়া চিঠির মাধ্যমে বলতে পারত ইলাকে, এ-আক্কেলটুকু বড়ো দেরিতে প্রকাশ করা হল না?

    নাঃ, সে সব কিছুই হল না। শুধু অমলার আদর্শ ভদ্র ভাবী জামাই ভয়ানক একটা অভদ্রতা করে বসল। বলে পাঠাল মেয়ে পছন্দ হয়নি তার।

    মেয়ে পছন্দ হয়নি।

    দুটো সংসারের ওপর অতর্কিতে একখানা থান ইট ফেলল যেন ইন্দ্রনীল।

    নির্বিবাদে পাকা দেখার আয়োজন হতে দিয়ে, এই দু-তিন দিন ধরে হাস্যমুখে দিদি-বউদিদের হাস্য-পরিহাস হজম করে, এখন বলছে কিনা মেয়ে পছন্দ হয়নি।

    ইন্দ্রনীলের বাড়িতে বলল, পাগল হয়ে গেছে। বলল, মাথাটা আমাদের হাতে করে কাটালি? কি করে বলব এ-কথা?

    ইন্দ্রনীল শান্ত গলায় বলল, কি আর বলবে। বল গে তখন বুঝতে পারেনি।

    কিন্তু এখনই বা নতুন কি বুঝলি তুই?

    কি জানি। কেমন যেন ভালো লাগছে না এখন।

    কনের বাপের ওপর কি বাজটা ফেলা হবে, ভেবে দেখেছিস?

    ভাবছি তো। কিন্তু মনকে ঠিক করতে পারছি না।

    অতএব ঠিক করা বিয়েটাই বেঠিক হল।

    বাজ ফেলা হল করেন বাপের মাথায়।

    ফেলতে হল হেমন্তকেই।

    বজ্রাহত দম্পতির সামনে বসে থাকতে হল মাথা হেঁট করে।

    জামাইবাবুর হেটমুণ্ড এই প্রথম দেখল ইলা। তারপর শুনতে পেল জামাইবাবুর বিষণ্ণ গলা।

    ছেলের বাড়ির সবাই তো তাজ্জব হয়ে গেছে।—বলছে, ওকে দেখে মনে হচ্ছে কে যেন ওকে মন্ত্ৰাহত করে ফেলেছে। নইলে ইন্দ্রর পক্ষে সম্ভব এমন অসম্ভব অভদ্রতা করা?

    না, সম্ভব নয়।

    ইন্দ্র বাড়ির সেরা রত্ন। সেই রত্ন নিজের মুখে চুনকালি মেখে ইলাকে রক্ষা করছে চুনকালির হাত থেকে।

    কেন? ইলার কে সে?

    কেউ নয়, ইলা শুধু তার ভদ্রতার দরজায় হাত পেতেছিল। অথচ সম্বুদ্ধ নিজের গায়ে আঁচটি নিচ্ছে না।

    বাড়িতে নিন্দিত হবে বলে, বিয়ের কথা ফাঁস করছে না।

    ইলা দাঁতে দাঁত চেপে মঞ্চ থেকে সরে যায়। অমলা ভীত কণ্ঠে বলেন, দেখ বাবা হেমন্ত, মেয়ে আবার এ-অপমানে কি করে বসে।

    না, করবে আর কি?

    হেমন্ত শুকনো মুখে বিদায় নেয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে এই প্রথম।

    ইলা নিজের ঘর থেকে টের পায় সব।

    ইলার বাবা দালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন আর মাঝে মাঝে অমলাকে বলছেন, দেখ, তুমি মন খারাপ করো না, এ একরকম ভালোই হল, আগেই বোঝা গেল। মানুষ যে কত ছদ্মবেশী হতে পারে, তার নমুনা দেখে অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হল।

    অমলা কথা বলেন না, অমলা স্তব্ধ হয়ে ভাবেন, কিন্তু এ ছদ্মবেশের প্রয়োজন কি ছিল তার? কী দরকার ছিল ইলার দিকে অমন আলো-জ্বালা চোখে চাইবার? অমন প্রসন্ন স্মিত হাসি হাসবার?

    অমলা ভেবেই নিয়েছিলেন, মুগ্ধ হয়ে ফিরে গেছে সে। হঠাৎ এ কী অদ্ভুত কথা!

    মেয়ে পছন্দ হয়নি।

    পাত্র-পক্ষের আর সবাই যে-কথা শুনে মাথায় হাত দিয়েছে, সেই কথা উচ্চারণ করেছে সেই পাত্র? অমলা ভাবতে ভাবতে অবশ হয়ে গেলেন।

    অমলা আজ রান্না করলেন না।

    .

    অনেকটা রাত্রে মেয়ের ঘরে ঢুকলেন অমলা, এক গ্লাস দুধ আর দুটো মিষ্টি নিয়ে।

    আস্তে বললেন, খেয়ে নে। শরীরটা তেমন ভালো লাগছিল না, আজ আর রান্না করতে পারিনি।

    ইলা উঠে বসে।

    আস্তে বলে, রমু কি খেল?

    ও দুধের সঙ্গে পাঁউরুটি খেয়ে শুয়ে পড়েছে।

    বাবা?

    আরও আস্তে, আরও সন্তর্পণে উচ্চারণ করে ইলা।

    উনিও দুধই গেলেন শুধু। খিদে-তেষ্টা আর নেইও তাঁর। মানুষের দুর্ব্যবহার দেখে পাথর হয়ে গেছেন। কতখানি বিশ্বাস করেছিলেন–

    মা!

    হঠাৎ একটা আর্ত চিৎকারে মায়ের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইলা।

    চাপা তীক্ষ্ণ স্বরে বলে, মানুষ যে কতখানি বিশ্বাসঘাতক হতে পারে তার নমুনা দেখতে অন্য কোথাও যেতে হবে না মা তোমাদের, নমুনা তোমাদের ঘরের মধ্যেই আছে। সেই বিশ্বাসঘাতক, জোচ্চোর দিনে দিনে মাসে মাসে ঠকিয়ে আসছে তোমাদের–

    কে? কে? কার কথা বলছিস?

    অমলা প্রায় চিৎকার করে ওঠেন, কিসের বিশ্বাস?

    সব, সব কিছুর মা! তোমাদের ভালোবাসার, তোমাদের সম্ভ্রমের, তোমাদের সুনামের, তোমাদের বংশের পবিত্রতার। সব কিছুর বিশ্বাস নষ্ট করেছি আমি। আর ছদ্মবেশে তোমাদের মায়া মমতা স্নেহ-ভালোবাসা অন্ন-বস্ত্র সব নিয়ে চলেছি।

    অমলা ইলার বিছানার ওপর বসে পড়েন। রুদ্ধকণ্ঠে বলেন, কি বলছিস তুই ইলা?

    যা বলছি সব ঠিক মা। এতদিন তোমাকে জানাতে পারিনি, বার বার বলতে গেছি, পারিনি মা। তোমাদের দেওয়া বিয়ে করবার উপায় নেই আমার।

    উপায় নেই! উপায় নেই!

    অমলা স্তব্ধ হয়ে গিয়ে বলেন, উপায়ের বাইরে চলে গিয়েছিস তুই? বল তবে, খুলে বল কতখানি কালি মাখিয়েছিস আমাদের মুখে।

    .

    রেজিস্ট্রি করেছে শুধু। অন্য কিছু নয়?

    হেমন্ত হাল্কা গলায় বলে ওঠে, এতে তো তোমাদের দুহাত তুলে নাচবার কথা।

    নীলা বিরক্তির ঝঙ্কার তোলে, নাচবার কথা?

    নিশ্চয়! ভেবে দেখ, এটা না হয়ে অপরটা হলে? তাতেও নিরুপায়তা ছিল। তার ওপর ছিল চুনকালি, এতে তো আর মুখে চুনকালি পড়ছে না।

    পড়ছে না?

    নো! নো! এ হেন ঘটনা এখন হরদম চলেছে—

    আর এই যে ঘোষ না কি একটা হতচ্ছাড়া, এতে মা-বাপের প্রাণ ফেটে যাচ্ছে না?

    ফাটবে না, ফাটার কারণ নেই—এটা ভাবলেই সহজ হয়ে আসে। অবশ্য আমি বলছি না খুব একটা সুন্দর কিছু হয়েছে। আগাগোড়া ব্যাপারটাই না ঘটলে ভালো হত। কিন্তু এও ঠিক, আমরাই অবস্থাকে অসুন্দরে পরিণত করি।—অনুমোদন পাবে না, এই ভয়েই এই সব কাণ্ড করে বসে ছেলেমেয়েগুলো।

    পাবেই বা কেন? সব প্রেমে পড়াই অনুমোদনযোগ্য? নীলা রেগে রেগে বলে।

    আহা, দেবতাটা অন্ধ, এ তো চিরকেলে কথা।

    অতএব উচিত হচ্ছে সেই অন্ধের হাতে ভাগ্য সমর্পণ করে না বসে, যারা চোখ-কানওলা তাদের হাতে ভাগ্যটাকে রাখা।

    সে তোমার বলা অন্যায়। এই জগতে চরে বেড়াবে অথচ কোথাও কোনোখানে হোঁচট খাবে, এতটা আশা করা যায় না।

    নীলা গম্ভীরভাবে বলে, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হোঁচট খাব, বাড়ি, সংসার, মা-বাপের মুখ ভাবব না, এমনই যদি অবস্থা হয়, তবে আর শিক্ষার মূল্য কি? শিক্ষার সঙ্গে সংযমের কোনো সম্বন্ধ নেই?

    হেমন্ত হাসে।

    বলে, কিন্তু শিক্ষার সঙ্গে প্রেম বস্তুটার যে মহা আড়ি, এমন কথাও নেই।

    সে কথা বলছি না, নীলা ক্রুদ্ধ গলায় বলে আমি বলছি লুকোচুরি করবে কেন? প্রেমে পড়েছিস পড়েছিস, সাহসের সঙ্গে এসে স্বীকার কর। মানুষ তো ইঁদুর ছুঁচো নয় যে গলি খুঁজে খুঁজে আত্মগোপন করবে?

    হেমন্ত হাসে।

    বলে, তা অবশ্য ঠিক বলেছ। তবে কি জানো, দেশটার যে আকাশে-বাতাসে ভীরুতা। ভয়..ভয়…ভয়ই গ্রাস করে রেখেছে সমস্ত বুদ্ধিবৃত্তিকে। আগে ছিল বাপের ভয়, সমাজের ভয়, লোকলজ্জার ভয়, এখন সেগুলো ঘুচেছে, জায়গায় এসে হাজির হয়েছে অভাবে পড়বার ভয়, অসুবিধেয় পড়বার ভয়, ঝঞ্জাট পোহাবার ভয়।…এতেই কণ্টকিত। অবিশ্যি এক্ষেত্রে আরও একটা ভয় আছে, সেটা হচ্ছে গুরুজনের স্নেহ হারাবার ভয়। সেই ভয়ের থেকেই–

    তা আর নয়–

    নীলা প্রায় ধমকে ওঠে, বকো না। গুরুজন ভেবে তো অস্থির বাছারা। তাদের স্নেহের ধার ভারী ধারছে!

    হেমন্ত গম্ভীর হয়।

    বলে, না নীলা, সত্যি! সেটাই বোধ করি প্রধান কারণ। ঊধ্বর্তনেরা যেদিন অধস্তনদের প্রেমে পড়ায় আঘাত পাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করবে, ঘটনাটাকে সহজ আর স্বাভাবিকতম ব্যাপার বলে গ্রহণ করতে শিখবে, সেদিন থেকেই লুকোচুরি বন্ধ হবে।

    হবে! বলেছে তোমায়।

    নীলা হেমন্তর কথা মানতে রাজী নয়।

    হেমন্ত হেসে ফেলে বলে, একটা কাল ছিল জান অবশ্যই, যখন ছেলে তার বিবাহিতা স্ত্রীকে ভালোবাসলেও গুরুজনেরা আহত হতেন। ছেলে যদি তাঁদের অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীকে একখানা শাড়ি কি সামান্যতম কিছু উপহার দিত, তাহলে অপমানের আঘাতে জর্জরিত হতেন তারা। সে-অবস্থা এখন আর নেই, এটাও থাকবে না। শালী যে রেজিস্ট্রিটা করে ফেলেছে, এর জন্যে আমি ওর বুদ্ধির তারিফ করি। যাক, এবার একটা ফর-শো বিয়ে লাগিয়ে দেওয়া যাক।

    নীলা ভুরু কোচকায়।

    ফর শশা বিয়ে লাগিয়ে দেওয়া যাক?

    নিশ্চয়।

    রুচি হবে?

    হবে না কেন? কত অরুচিকর ব্যাপারকে মাথায় তুলে নিতে হচ্ছে রাতদিন, এ তো বরং আহ্লাদের, মজার।

    নীলা ঠিকরে ওঠে।

    নীলা ক্রুদ্ধ গলায় বলে, বাবা আবার ঘরের কড়ি খরচ করে বিয়ে দেবেন ওর?

    হেমন্ত ওর রাগ দেখে হো হো করে হাসে।

    কেন নয়? ইতর জনের পাওনাটা মাঠে মারা যাবে নাকি?

    কেউ আসবে না এ-বিয়েতে।

    সবাই আসবে।

    এত ইতরজন কেউ নেই আমাদের আত্মীয়দের মধ্যে।

    আরে, ওটা তো কথার কথা। মিত্রজনই না হয় বলা যাক। তবে নেমন্তন্নটা মাঠে মারা যেতে দেখলেই বরং অখুশি হবে তারা।

    .

    না, মাঠে মারা যাওয়ার রেওয়াজ আর নেই। ছেলেমেয়ের নির্বুদ্ধিতা, ছেলেমেয়ের কাণ্ডজ্ঞান শূন্যতা, ছেলেমেয়ের অসাবধানতা, সব কিছুকে ঢেকে নিয়ে, ঘটনাটার একটা সভ্য চেহারা তো দিতে হবে! সভ্য আর সুন্দর। সেটাই সামাজিক মানুষের দায়।

    সম্বুদ্ধ ঠিকই বলত, ওইখানেই গার্জেনরা জব্দ।

    জব্দ বইকি! শুধু মমতার কাছে নয়, এই সভ্যতা শোভনতার কাছেই জব্দ। ঘরের মেয়েটা কোনো কিছু না হঠাৎ একদিন আর একটা ঘরে ঘর করতে শুরু করে দিল, এই কটু দৃশ্যটার হাত এড়াবার জন্যেই বিবাহিত দম্পতিকে নিয়ে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে বসেন তাঁরা। হাস্যকর ছেলেমানুষী, তবু তাই দিয়েই সম্রম বজায় রাখা। তা, নায়ক-নায়িকার অলাভ কিছু নেই এতে। ডবল বিয়ের সুযোগে যথারীতি পাওনাগুলো এসে যায় হাতে।

    মা-বাপ ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন, এদের হৃদয়ে সাধ-আহ্লাদও তো থাকে!

    চিরদিনের সংস্কারে লালিত আজন্মসঞ্চিত সেই সাধগুলি এই হাস্যকর ছেলেমানুষীর মধ্য দিয়েই বিকশিত হবার পথ পায়।

    চির-আদরিণী মেয়েটা, একটু ভুল করে ফেলেছে বলে শূন্য হাতে বিদায় নেবে?

    তার যে ভারি শখ ছিল অনেক শাড়ি-গহনার। কবে যেন কার বিয়েতে সোনালী ফুলদার সবুজ বেনারসী দেখে মোহিত হয়েছিল, উচ্ছ্বসিত হয়েছিল কার গলায় যেন সেকেলে গড়নের পুস্পহার দেখে। তার কিছু হবে না? তাছাড়া ছোটোখাটো আরও কত বাসনাই তো ব্যক্ত করে থাকে মেয়েরা, তাদের বস্তুলুব্ধ বাসনাময় হৃদয়ের।

    বিয়ের সময় হবে, বিয়ের সময় দেব,—বলে ঠেকিয়ে রাখে মধ্যবিত্ত ঘরের গৃহিণী মা।

    সেই ঠেকিয়ে রাখাটা বিধতে থাকে কাটার মতো মায়ের প্রাণে।

    বিয়ের সময় তাই মাকে আর ঠেকানো যায় না। তা, সে-বিয়ে যদি প্রহসনও হয়।

    .

    প্রহসন বইকি—।

    তাই বলেছিলেন ইলার বাবা। আর বলেছিলেন, সত্যিই কি প্রয়োজন এই প্রহসনের? অগ্নি নারায়ণ সাক্ষী করে কন্যা-সম্প্রদানের কার্য করতে বসব আমি হেমন্ত? চির-শান্ত, চির-সংযত মানুষটার কণ্ঠে এই জ্বালার সুর শুনে অপ্রতিভ হয়েছিল হেমন্ত। তবু ঘাড় চুলকে বলেছিল, ফার্স কেন বলছেন? ছেলেবুদ্ধিতে একটা বাঁদরামী করে ফেলেছে–

    এম-এ পাস করেছে ইলা, একুশ বছর বয়েস হয়ে গিয়েছে ওর হেমন্ত। ছেলেমানুষ বলা মানে মনকে চোখ ঠারা।

    তবু দেখুন ছেলেমানুষ ছাড়া আর কি? এমনটা করেছে কেন নইলে?

    ইলার বাবা পায়চারি করতে করতে বললেন, আমার এখন কি মনে হচ্ছে জান হেমন্ত, সেই তোমার বন্ধুর ভাইপো, বোধ করি কোথাও থেকে কানাঘুষো কিছু শুনে থাকবে, তাই

    অসম্ভব নয়।

    সেই ছেলেটিকে যে আমি আপন করতে পেলাম না, এ-দুঃখ আমার চিরকাল থাকবে হেমন্ত।

    হেমন্ত স্বভাবগত কৌতুকে বলতে যাচ্ছিল এমন একটি সোনারচাঁদ জামাই থেকেও আপনার দুঃখমোচন হবে না? বলতে পারল না। ওই আহত বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল।

    তবু চলতে লাগল প্রহসনের আয়োজন।

    পাকা দলিলটা নিতান্তই কাঁচা চেহারা নিয়ে কাচুমাচু হয়ে পড়ে রইল প্রহসনের নায়ক-নায়িকার গোপন ভাণ্ডারে।

    পাঁচজনে জানল শুধু প্রেম।

    চমকাবার কিছু নেই, চমকালও না কেউ। বড়োজোর নিমন্ত্রণপত্রে পাত্রের নাম শ্রীমান সম্বুদ্ধ ঘোষ দেখে ইলার বাবার ব্রাহ্মণ আত্মীয়রা একটু মুখ টিপে হাসল মাত্র।

    নিমন্ত্রণে আসবে না, এ-কথা ভাবতেও পারল না কেউ।

    ভাববে কোন্ সাহসে? কার ঘরের দেয়ালে সিঁধ কাটা হচ্ছে, অথবা হবে, কে বলতে পারে?

    .

    সম্বুদ্ধর কাছে পরদিন গিয়েছিল ইলা, গম্ভীর মুখে বলেছিল, ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছি, যাও, গিয়ে বল গে। ন্যাকামী করবে না, ঔদ্ধত্য করবে না, আর একবার বিয়ে দিতে চাইলে আপত্তি করবে না—বুঝলে?

    আর একবার বিয়ে!

    ইলা আরও গম্ভীর হয়, হ্যাঁ। চিরাচরিত প্রথায় যথারীতি বিয়ে। সেটাই করতে হবে। যেতে হবে আমার জন্যে টোপর পরে জাঁতি হাতে নিয়ে। এতেও যদি বল বাড়িতে জানতে পারবে, তাহলে আমার সঙ্গে এই শেষ।

    সম্বুদ্ধ বিদ্রূপ করে বলে, তারপর? যথারীতি বিয়েটা সেই ভাগ্যবান ইন্দ্রনীল মুখার্জীর সঙ্গে নাকি?

    থামো! তার নাম মুখে এনো না তুমি।

    উঃ, মেজাজ যে সপ্তমে। যথারীতি বিয়েতে আমার আর আপত্তি কি? বরং তো লাভই। শ্বশুরের মেয়েটাই পাচ্ছিলাম শুধু শ্বশুরের দেওয়া যৌতুক, শ্বশুরবাড়ির আদর, এগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলাম। সেগুলো উপরি পাওনা হচ্ছে। বাবাকে বল, ঘড়িটা যেন ভালো কেনেন।

    হাসতে তোমার লজ্জা করছে না?

    কী মুশকিল, লজ্জা করবে কেন? বরং খাট-বিছানা আলমারি-আয়না সব কিছুর আশাই তো করছি সাগ্রহে।

    ইলা তীব্রস্বরে বলে, পাবে। সব কিছুই পাবে সম্বুদ্ধ ঘোষের জন্যে হোক না হোক, মা-র ছোটো জামাইয়ের জন্যে সবই গেছে গড়তে।

    তা গেছে।

    অনুষ্ঠানের ত্রুটি হচ্ছে না সত্যিই।

    খাতার মাঝখানের বিদীর্ণ অধ্যায়ের পৃষ্ঠাটা উলটে ফেলে নতুন অধ্যায়ে চোখ ফেলা হয়েছে।

    নীলা রাগ ভুলে মহোৎসাহে বিয়ের বাজার করে বেড়াচ্ছে, অমলা নতুন নতুন ফর্দ লিখছেন।

    ইলার বাবা সেকরার দোকানে আর ফার্নিচারের দোকানে হাঁটাহাঁটি করছেন, হাঁটাহাঁটি করছেন। বরের বাড়ি।

    সম্বুদ্ধর দাদা-বউদি এখন আর নিরপেক্ষ নেই, বিয়ের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হয়েছেন। আর সম্বুদ্ধকেও এই সেকেলে বাড়ির সেকেলেপনার মধ্যেই বেশ মিশে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

    গায়ে-হলুদ দিতে বসে মামাতো বউদি যখন দুগালে হলুদ লেপে দিল, তখন সম্বুদ্ধ ছিটকে বেরিয়ে গেল না, শুধু একটু কোপ দেখাল। দধিমঙ্গলের চিঁড়ে-দই নিয়ে ওরা যখন হাসাহাসি করল, সম্বুদ্ধ হাসতে হাসতে ওদের মাথায় মাখিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেল।

    এই সব দিদি-বউদিদের যে সম্বুদ্ধ মানুষ বলে গণ্যই করত না, সেটা এখন অন্তত মনে পড়ল না।

    আবার বড়োবউদি তার মস্ত বড়ো আইবুড়ো মেয়েকে বরযাত্রী পাঠাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না, দাদা উপবাস করে নান্দীমুখ করতে আপত্তি করলেন না।

    সকলেরই যেন মনোভাব, হাতছাড়াই তো হয়ে গিয়েছিল, সেই হাতছাড়া বস্তু আবার যদি হাতে ধরা দিয়েছে তো আমোদটা ছাড়ি কেন?

    .

    আর ইলা?

    সে-ও কি সম্বুদ্ধর মতোই লজ্জার বালাই ত্যাগ করে উৎসবে মাতে? দিদির সঙ্গে মার্কেটিং করতে যায়? মায়ের সঙ্গে গহনার প্যাটার্ন নিয়ে আলোচনা করে?

    নাঃ, ইলা একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে।

    ইলার এই স্তিমিত মূর্তি দেখে ইলার মাকে ইচ্ছার অধিক উৎসাহ দেখাতে হয়, ইলার বাবাকে মৌনব্রত ভাঙতে হয়। আর ইলার জামাইবাবুকে নতুন নতুন ঠাট্টা আমদানী করতে হয়।

    জলি মেয়েটা মনমরা হয়ে বেড়াচ্ছে, এও তো দেখা যায় না।

    .

    অবশেষে আসে সেই দিন।

    মহলার শেষে অভিনয়ের।

    বিয়েতে কোনো অনুষ্ঠান হল না, এ-আক্ষেপ আর থাকে না ইলার।

    সেই একটা রোদ্দুরের দুপুরে যত কিছু আক্ষেপ জমে উঠেছিল তার, সব বুঝি ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন করে দেবার পণ করেছে ইলার সংসার, ইলার পরিজন।

    প্রদীপ জ্বেলে নতুন বেনারসী শাড়ি পরে আইবুড়ো-ভাত খায় ইলা, কোরা লালপাড় শাড়ি পরে গায়ে-হলুদ নেয়। কলাতলায় দাঁড়িয়ে সাত এয়োর মঙ্গলকামনা জড়ানো হলুদমাখা সুতো জড়ায় হাতে, অধিবাসের পিড়িতে গিয়ে ঘাম-ঘাম হলুদ-হলুদ মুখ নিয়ে, যে পিঁড়িতে অনেক শিল্পকলার নমুনা দেগে রেখেছে অমলার এক ভাইঝি।

    ইলার বাবা মেয়েকে পাশে বসিয়ে অধিবাস দ্রব্যের কল্যাণস্পর্শে পবিত্র আর মহান করে তোলেন তাকে। পবিত্র আর পরিচিত অনুষ্ঠানগুলি অনুষ্ঠিত হতে থাকে পরপর।

    সন্ধ্যায় কনে-চন্দন পরে ইলা, পরে ফুলের মালা। পরে ওর অনেকদিনের পছন্দর রুপোলী তারাফুল দেওয়া লাল বেনারসী শাড়ি। মোনামুনি ভাসিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় ইলার গলায়, ইলা স্পন্দিত রুপোলী বুক নিয়ে চণ্ডীপুঁথি কোলে নিয়ে বসে থাকে অনেকগুলো সুখী দম্পতির নাম লেখা আর একখানা ভারী পিঁড়িতে। এই পিড়ি নিয়েই সাতপাক ঘোরাবে সবাই ইলাকে নিয়ে বরকে ঘিরে ঘিরে।…

    শাঁখ বাজে একসঙ্গে একজোড়া, নারীকণ্ঠ বাজে উলুধ্বনি হয়ে, সানাই বাজে করুণ সুরে। আলো জ্বলে, বাড়ি সাজানো হয়, ফুলের গন্ধে আর সেন্টের গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।

    নিমন্ত্রিত-নিমন্ত্রিতারা সন্ধ্যার আগে থেকেই দলে দলে আসতে শুরু করেন, তাদের উদ্দাম কলকাকলী আর শাঁখ-উলুর শব্দ একত্রিত হয়ে উৎসব সমারোহের চেহারা আনে। সামিয়ানা-খাটানো ছাদ থেকে ভেসে আসে চপ আর লুচি ভাজার গন্ধ।..

    চিরদিনের দেখা বিয়ে বাড়ি মূর্তি ধরে দেখা দেয় ইলার সামনে।

    তারপর আসে বর।

    চিরদিনের বরবেশে।

    চেলির জোড় আর টোপর পরে, নতুন গরদের পাঞ্জাবীর উপর গোড়ে মালা চাপিয়ে।

    স্ত্রী-আচারের কলহাস্যময় মঙ্গলকর্মের মধ্যে নাপিত এসে জাঁকিয়ে দাঁড়ায়…বর-কনের মাথার উপর নতুন উড়ুনির ছাউনি বিছিয়ে দিয়ে চিৎকার করে ওঠে ভালোমন্দ লোক থাকো তো সরে যাও–

    এই গালাগালির ছড়া আওড়ানোর মধ্যেই নাকি শুভদৃষ্টি করার রেওয়াজ।

    শুভদৃষ্টি?

    তা, সে-প্রহসনও হয় বইকি। হবে না কেন, নাটক যখন মঞ্চস্থ করা হয়েছে, তখন পঞ্চাঙ্কের কোনো ভঙ্ক, নবরসের কোনো রস, বাদ দেওয়া তো চলতে পারে না।

    বাদ দেওয়া চলতে পারে না, তাই ইলার বাবা উপবাস-ক্লিষ্ট দেহে অগ্নি-নারায়ণ সম্মুখে নিয়ে বরের হাতের উপর কনের হাত রেখে উচ্চারণ করেন কন্যা-সম্প্রদানের পূত পবিত্র বৈদিক মন্ত্র।

    .

    তারপর বাসরে এসে বসে বর-কনে।

    হোটেলের ভাড়া-করা বহুজন-ব্যবহৃত অশুচি শয্যা নয়, অমলার অনেক সাধ আর পছন্দ দিয়ে তৈরি নতুন রাজশয্যা।

    এই শয্যা, এই ফুল, এই মাধুর্য, এই সৌন্দর্য, এই পবিত্রতা সব কিছুই তাদের হাত থেকে এসেছে, যাদের এরা সন্দেহ করেছে, ঘৃণা করেছে, বিদ্বেষ করেছে।

    দীর্ঘদিনের কৃচ্ছসাধনের বিনিময়ে সঞ্চয় করে তোলা অর্থের রাশি জলস্রোতের মতো ব্যয় করেছেন তারা এই একটি রাত্রির উৎসবকে কেন্দ্র করে। যে-উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু বাড়ির সেই আটপৌরে মেয়েটা। এত মূল্যবান ছিল সে? তা, এই অকাতর ব্যয়ের মধ্য দিয়েই তো মাতৃহৃদয়ের ব্যাকুলতার প্রকাশ, পিতৃহৃদয়ের অনুচ্চারিত স্নেহবাণীর সোচ্চার ঘোষণা।

    বস্তু দিয়েই তো বস্তুকে বোঝানো। দৃশ্য দিয়ে অদৃশ্যকে অনুভবে আনা। তাই না ঈশ্বরকে উপলব্ধিতে আনতে মাটির প্রতিমা!

    হয়তো এরপর থেকে অমলা বাজার-খরচ কমিয়ে দেবেন, কমিয়ে দেবেন গোয়ালার খরচ। হয়তো ঘরে সাবান কেচে ধোপার খরচ কমাবেন।

    নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত শাড়ি কিনবেন না একখানাও, প্রয়োজনের উপযুক্ত ওষুধপত্র।

    আরও বহুবিধ কৃচ্ছ্বসাধনের কাঠবিড়ালী দিয়ে আবার বেঁধে তুলতে চাইবেন এই একরাত্রির বেহিসেবী অপচয়ের সমুদ্র।

    অথচ এত সব কিছু না করলেই পারতেন অমলারা। অমলা আর অরবিন্দ। অনায়াসেই গা ঝেড়ে দিয়ে বলতে পারতেন, এত পারব না।

    বলতে পারতেন, কেন করব এত?

    ভাবতে পারতেন, ওই দশ-বারো হাজার টাকা থাক তাদের ভবিষ্যতের সংস্থান। মিথ্যে একটা নাটকের পিছনে ঢালব কেন?

    তা বলেননি, তা ভাবেননি।

    বাসর-জাগানীরা বিদায় নিলে সম্বুদ্ধ চুপিচুপি বলে, দেখেশুনে বুঝতে পারছি, এযাবৎ বড়োদের ওপর সন্দেহ করে অন্যায়ই করেছি।

    ইলার কাছ থেকে হয়তো উত্তরের প্রত্যাশা করে। না পেয়ে একটু পরে বলে, কি বল ঠিক বলছি না? সন্দেহ না করলে এত দিনের এত কষ্ট পাওয়ার কিছুই পেতে হত না। ভয় করে, সন্দেহ করে, নিজেরাই ঠকেছি এতদিন বোকার মতো।

    তবু উত্তর আসে না ইলার কাছ থেকে।

    এখনও বোকার মতোই কাজ করে সে।

    পুরানো পরিচিত অভ্যস্ত বরের সামনে কাঠ হয়ে বসে থাকে, অপরিচিত বরের কনের মতো।

    কি হল? নতুন হয়ে গেলে নাকি?

    সম্বুদ্ধ বিরক্তির হাসি হেসে নিরঙ্কুশ দাবির হাতে ঈষৎ আকর্ষণ করে ইলার কমনীয় তনুখানিকে। কিন্তু কমনীয় তনু নমনীয়তা হারাল নাকি? কই, আবেশে বিগলিত হয়ে এলিয়ে পড়ছে না তো সেই প্রিয় পরিচিত বক্ষে? যে-বক্ষ এতদিন অধিকারে এসেও দুর্লভ ছিল।

    কাঠ হয়ে বসে আছে।

    সম্বুদ্ধ বিরক্তিটাকে প্রখর না করে পারে না।

    বলে, মনে হচ্ছে যেন চিনতে পারছ না। খুব খারাপ লাগছে বুঝি?

    ইলা এই বিরক্তির কণ্ঠে সচেতন হয়।

    ইলার মনে পড়ে, নাটকের প্রধান নায়িকার ভূমিকা তার। তাই এবার একটু আবেশের হাসি হেসে বলে, রাগ কেন? এতরকম নতুনের মধ্যে একটু বুঝি নতুন হতে ইচ্ছে করে না? বলে।

    যদিও জানে ইলা, নতুন হতে দেবে না সম্বুদ্ধ। রাখতে দেবে না সামান্যতম সহিষ্ণুতার দূরত্ব। একেবারে নিবিড় করে পেতে চাইবে এখনি, এই মুহূর্তে। ইলা সেই প্রবল দাবি ঠেকাতে পারবে না।

    তবু ইলা অনুভব করছে সেই নিবিড় বন্ধনের সুর যাবে কেটে। একখানা ছবির মুখ অবিরত ছায়া ফেলবে ইলার মনে, ইলার জীবনে।

    হয়তো সারা জীবনে।

    ইলা কি কোনোদিন একেবারে বিস্মৃত হয়ে যেতে পারবে সেই আহত মুখের ছবির ভাবনা? যে-মুখ ছোট্ট একটি চিঠির কয়েকটা লাইনের নির্লজ্জ আঘাতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েও সেই নির্লজ্জতার কলঙ্ককালি নিজের ললাটে মেখেছে শুধু ইলাকে এক অপরিসীম লজ্জা থেকে বাঁচাতে।

    ইলার চলার পথে পথে যত মুখ আসবে যাবে, তাদের মধ্যে কি প্রত্যাশার দৃষ্টি ফেলে ফেলে দেখবে না ইলা?

    আর ইলার জীবনে, কারণে অকারণে, হেলায় খেলায় যত নাম আসবে, ইলা কি তার মধ্যে খুঁজবে না সেই সুন্দর আর বিশেষ নামটা?

    আর অবাক হয়ে ভাববে না, আশ্চর্য! এত লোকের ভিড় পৃথিবীতে, এত নামের ধ্বনি, তবু!

    ⤶
    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভালোবাসা চিরকালীন – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article দুই নায়িকা – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }