Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নয় এ মধুর খেলা – জাহানারা ইমাম

    জাহানারা ইমাম এক পাতা গল্প89 Mins Read0

    নয় এ মধুর খেলা – ১

    ১

    সাতদিন পরে ফ্লাইট। ঢাকা থেকে লন্ডন, হিথরো বিমানবন্দরে তিনঘণ্টা পরে কানেক্‌টিং ফ্লাইটে সোজা ওয়াশিংটন ডি.সি.। সব বুকিং কনফার্মড, ওয়াশিংটন ডি.সি-তে টিনাকে ইন্টারন্যশনাল ভিজিটার্স প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে লোক আসবে এয়ারপোর্টে, রিসিভ করতে। এর মধ্যে হঠাৎ সাব্রিনার টেলিফোন, ফ্রাংকফুর্ট থেকে।

    ‘তুমি নাকি অ্যামেরিকা যাচ্ছ একমাসের একটা প্রোগ্রামে?’

    টিনা অবাক হল, ‘হ্যাঁ তোমাকে তো চিঠি দিয়েছি নিউইয়র্কের ঠিকানায়। পাওনি?’

    ‘আমি তো নিউইয়র্কে নেই। দু-সপ্তাহের ছুটিতে ফ্রাংকফুর্ট এসেছি। জেরিনা বোস্টন থেকে নিউইয়র্কে এসেছিল। সে বাসায় তোমার চিঠি দেখে খুলে পড়ে আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। শোনো, তুমি যাবার পথে ফ্রাংকফুর্টে থেমে যাও দুদিনের জন্যে।’

    ‘তা কী করে সম্ভব? সব বুকিং কনফার্মড হয়ে গেছে, ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে এয়ারপোর্টে লোক আসবে নিতে। ওরা তো চিনবে না আমায়, আমিও চিনব না, তাই ওরা একটা ছোট্ট সাতরঙা রামধনু-স্টিকার পাঠিয়েছে, সেইটে আমার হ্যান্ডব্যাগের গায়ে সেঁটে রাখতে বলেছে

    ‘হাসালে টিনা। আমেরিকানদের যত সব ছেলেমানুষি কাণ্ডকারখানা। হ্যান্ডব্যাগে স্টিকার সেঁটে লোক চিনবে! যেন কচি খুকি যাচ্ছে একা!’

    ‘বাংলাদেশ থেকে তো আমি একাই!’

    ‘ওদের ঠিকানায় একটা টেলিগ্রাম করে দাও, তুমি ঐ স্টিকার-সাঁটা ব্যাগ নিয়ে তিনদিন পরে ওয়া-ডি.সি. পৌঁছোবে।’

    টিনা ভেবে পেল না সাব্রিনা তাকে ফ্রাংকফুর্টে থামবার জন্য এত জেদাজেদি করছে কেন? দু-সপ্তাহ ছুটি-শেষে সে তো ফিরে যাবে নিউইয়র্কেই। টিনার প্রোগ্রাম একমাসের। তারপর সে যতদিন খুশি সাব্রিনাদের সঙ্গে কাটাতে পারবে। তাহলে?

    সাব্রিনা বুঝিয়ে দিল, ফ্রাংকফুর্টে না-থামলে রেনের সঙ্গে টিনার দেখা হবে না। রেনে ছুটি-শেষে এখান থেকেই সোজা উগান্ডা চলে যাবে তিনমাসের জন্য, একটা বিশেষ প্রোজেক্ট করতে। টিনা প্রোগ্রাম-শেষে যদি একমাসও থাকে সাব্রিনার বাড়িতে, তাহলেও তো রেনের সঙ্গে তার দেখাটা হচ্ছে না। ‘কত বছর তোমাদের দেখা হয়নি বলো তো? এখন নাহয় তুমি ইউনিসেফ ছেড়ে দিয়েছ, কিন্তু এককালে তো কলিগ্‌ ছিলে? তাছাড়া—’ সাব্রিনার গলায় হাসির আভাস পাওয়া গেল, ‘শুধু কি কলিগ্‌। রেনের জীবনে তোমার ভূমিকা-।’

    টিনার মনটা হঠাৎ কেমন যেন হয়ে গেল। পুরনো স্মৃতিরা সব ভিড় করে এগিয়ে এল। সত্যিই তো! বুঝতে-না-বুঝতে বছরগুলো এমন অনায়াসে গড়িয়ে চলে যায়। রেনের সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছে দশবছর আগে। ঐ নিউইয়র্কেই। অসুস্থ সাব্রিনাকে নিয়ে টিনাই গিয়েছিল নিউইয়র্কে, সাব্রিনার বড় ভাই তখন ওখানকার এক হাসপাতালে ডাক্তার। তারপর সাব্রিনা বার-দুয়েক ঢাকা এসেছে। রেনে আর আসেনি। টিনারও এর মধ্যে আর বিদেশে যাওয়া হয়নি। রেনের বিয়ের সময় ওপক্ষ থেকে অনেক অনুনয়, এপক্ষ থেকে অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও টিনার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি এতদূর পাড়ি দিয়ে বিয়ে খেতে যেতে।

    প্ল্যান-প্রোগ্রাম আবার বদলে গেল। ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট পালটে ঢাকা-ফ্রাংকফুর্ট করা হল। তারিখ এগিয়ে আনা হল তিনদিন। কারণ ওয়াশিংটন ডি.সি. পৌঁছোনোর তারিখ পেছানো যাবে না। পরদিনই টিনাদের প্রোগ্রাম শুরু।

    টিনার মনটা চলে গেল দশবছর আগের সেই মে মাসের গ্রীষ্মতপ্ত দিনটিতে, যেদিন সে সম্পূর্ণ অজান্তে পা রেখেছিল এমন একটি ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে, যা পরবর্তীতে তাদের সবারই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ভয়ানকভাবে।

    .

    বাইরে আজ এমন গনগনে রোদ, মনে হচ্ছে বিশ্বচরাচর ঝলসে যাচ্ছে। গাড়ি চলার সময় কাচ খোলা থাকলে গাড়ির ভেতরে হু-হু বাতাস ঢোকে বটে, কিন্তু ড্রাইভিং-সীটে বসে যে-জন, তার কপালে বাতাস একটু কমই স্পর্শ করে। তার ওপর থাকে সামনে বিরাট উইন্ডস্ক্রিন, সেটা রোদে তেতে যে-তাপ বিকীরণ করে, তার ঝাঁঝ এসে লাগে ড্রাইভারের মুখে। রেনের বাসা পর্যন্ত পৌঁছোতে পৌঁছোতে টিনার মনে হল, তার সারা শরীর বিশেষ করে মুখ আর গলা যেন তন্দুরের মধ্যে সেঁকা হচ্ছে। রেনের বাগানের ভেতর বড় গাছ নেই। মেইন রোডের পাশে যে-বিরাট কৃষ্ণচূড়া গাছটা ঝাঁকড়া ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা আবার রেনের গেট থেকে দশ-পনের ফুট দুরে। তবু তার নিচেই গাড়ি রাখা সাব্যস্ত করল টিনা। গাড়িটা ঠাণ্ডায় থাকলে পরে রেনের শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত বাসা থেকে বেরিয়ে অন্তত মনে হবে না যে, সে আবার জ্বলন্ত তন্দুরের মধ্যে ঢুকছে! গাড়ি থেকে নেমে দরজা লক করে দশ-পনের ফুট ঠা-ঠা রোদের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেইটে গিয়ে আবার থামতে হল তাকে। রেনের কুকুরটাকে তার দারোয়ান ধরে গেট খুলে না-দেওয়া পর্যন্ত টিনা ভয়ে বাইরেই রোদে দাঁড়িয়ে রইল।

    কলিংবেলের শব্দে রেনে দরজা খুলে টিনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ইস্, তুমি যে একেবারে ঝলসানো চিংড়ি মাছের মতো লাল হয়ে উঠেছ। এস,এস, তাড়াতাড়ি ভেতরে এস, ঠাণ্ডা হও।’ টিনাকে ভেতরে নিয়ে বসিয়ে রেনে দ্রুত চলে গেল বাথরুমে। ছোট্ট তোয়ালে-রুমাল ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে তাতে কয়েকফোঁটা ও দ্য কলোঁ ফেলে চিপে এনে ধরল টিনার সামনে। টিনা হেসে ফেলল। তোয়ালে-রুমালটা নিয়ে ভাঁজ খুলে সারামুখে চেপে ধরে আ-হ্ বলে একটা আরামের নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ‘রেনে, ইউ আর প্রাইলেস্। এত রমণীরঞ্জক ব্যাপার-স্যাপার শিখলে কোথায়? কখনো প্লেনের স্টুয়ার্ড ছিলে নাকি?’

    রেনে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘এ জানতে প্লেনের স্টুয়ার্ড হতে হয় নাকি? প্লেনে চেপে স্টুয়ার্ড বা হোস্টেসের কার্যকলাপ চেয়ে দেখলেই তো শেখা যায়। আসলে মন—মন থাকতে হয়। প্রিয়জনের প্রতি নজর থাকতে হয়। সে যাকগে, ঠাণ্ডা হয়েছ তো? এবার বল, কী দেব তোমায়? কিসে তোমার প্রীতি?

    টিনা পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘কী, কী আছে তোমার?’

    ফ্রিজের দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখতে-দেখতে রেনে বলে চলল, ‘জিন আছে, ভদকা চাইলে পাবে, বিয়ারের ক্যানও রেখেছি। তবে এসবের চেয়েও খাসা জিনিস আছে—সাদা ওয়াইন। খাস রাইনপারের জিনিস। চমৎকার চীড় হয়ে আছে, এই গরমে যা আরাম লাগবে না!’

    টিনা আড়মোড়া ভেঙে বলল, ‘আমার আজ একটু কম আরাম দরকার। চারটেয় মিটিং আছে। বেশি আরাম করে ওয়াইন খেতে গেলে আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়ার ইচ্ছেটা চেক্ করতে পরব না। তারচে ঠাণ্ডা-বিয়ারই দাও একটা।’

    রেনে মুখভঙ্গি করে বলল, ‘কী যে তোমরা বাঙালিরা বিয়ার চিনেছ। একেবারে গাঁইয়া। দুনিয়াতে এত রকমের ভালো ভালো ওয়াইন আছে, কী তাদের ঐতিহ্য আর বংশগৌরব, সেসব কিছুই জানলে না, চিনলে শুধু বিয়ার। যা খেলে মানুষ কেবল ভাল্লুকের মতো মোটাই হয়।’

    টিনা হেসে ফেলল, ‘গরমের দুপুরে আইস-চীড্ এক ক্যান বিয়ার, তার কি তুলনা হয়? একেবারে মৃতসঞ্জীবনীর মতো কাজ করে। আজ আমি বিয়ারই খাই, কেমন?’

    রেনে মুখ লম্বা করে বলল, ‘খাও, তোমার যখন মিটিং আছে’। একটা বিয়ারের ক্যান্ টেনে নিয়ে ফটাস্ করে খুলে টিনার হাতে ধরিয়ে দিল। ফ্রিজের ভেতর শোয়ানো ওয়াইনের বোতলটা বের করে কর্ক-স্ক্রু দিয়ে ছিপি খুলতে খুলতে বলল, ‘এই ওয়াইনটা আমি গতবছর জার্মানি থেকে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। কোনো বিশেষ দিনে খাব বলে তুলে রেখেছিলাম। ১৯৭৬ সালের তৈরী। খুব ভালো ফলনের বছর ছিল ওটা।

    রেনের মুখের দিকে তাকিয়ে টিনা কোমলকণ্ঠে বলল, ‘লাঞ্চের সঙ্গে খাব একটুখানি। তুমি এখন খাও ওটা।’

    ‘খাবোই তো—’ ফ্রিজারের ভেতরে রাখা একটা ঠাণ্ডা কুয়াশাটে ওয়াইট-গ্লাসের চিকন কোমর দু-আঙুলে ধরে বের করে আনতে আনতে বলে উঠল রেনে।

    টিনা বলল, ‘কই, তোমার বান্ধবীর দেখা নেই-যে এখনো?’

    রেনে বলল, ‘এসে যাবে মিনিট দশেকের মধ্যে। একটু নার্ভাস হয়েছে, প্রথমে আসতেই চাচ্ছিল না। অনেক বুঝিয়েছি ওকে, তোমাকে ওর কীরকম দরকার হবে।’

    টিনা কাঁধ ঝাঁকাল, ‘জানি না কতটুকু কাজে লাগব ওর, তবে চেষ্টা করতে দোষ কী?’

    রেনে ঝুঁকে টিনার দিকে তাকাল, ‘না, না, আমি জানি তোমার মতো মানুষকেই ওর এখন দরকার। আমি চলে গেলে ও খুব একা হয়ে যাবে। তখন চারধার থেকে সবাই ওকে ছিঁড়ে খাবে। ওর একটা শক্তমনের আশ্রয় একান্ত দরকার।’

    বিয়ার-টিনে চুমুক দিতে দিতে চোখের কোণ দিয়ে টিনা লক্ষ করছিল রেনের মুখ, না-দেখার ভান করে বলল, ‘তোমার তাতে কী? তুমি তো আর ইমোশনালি ইনভলভড্ হওনি ওর সঙ্গে। তুমি চলে গেলে ওর যা হয় হবে, তা নিয়ে তোমার এত ভাবনার কী?’

    রেনের শধু হাসিই সুন্দর নয়, তার চোখের নীল দ্যুতিও অপরূপ, ‘বারে, ইমোশনাল ইনভমেন্ট না থাকল, কিন্তু মমতা তো আছে। তোমাকে তো বলেছি, কী মনের অবস্থায় ও আমার কাছে এসেছিল—’

    ‘না বলনি।’

    ‘বলিনি?’ রেনে অবাক হয়ে বাঁ চোখ বন্ধ করে ফেলল।

    ‘শুধু বলেছিলে ও তোমার ক্ষণিকের বান্ধবী হয়েছে, ও কোনো ইমোশনাল ইনভলমেন্ট চায় না। শুধু ওর ইচ্ছেমতো মাঝে মাঝে আসবে, তোমার সঙ্গে খানিকটে সময় কাটাবে—’

    রেনে বাকি চোখটাও বন্ধ করে বলল, ‘হবে হয়তো। তবে তোমাদের এই ক্লোজড় সোসাইটির একটা মেয়ে মনের কী অবস্থা হলে এরকম ক্ষণিকের বান্ধবী হবার কথা বলতে পারে—’

    টুংটাং শব্দে বেল বাজল। রেনে কথা শেষ না করেই ধড়মড়িয়ে উঠে ‘ওই যে এসেছে’ বলে ছুটল দরজার দিকে। সদর দরজাটা এই বসার ঘর পেরিয়ে ছোট্ট হলের ওধারে। এখান থেকে দেখা যায় না। দরজা খোলার ও বন্ধ করার শব্দ শুনল টিনা, সঙ্গে মিহি মোটা অস্ফুট কণ্ঠস্বরে কুশল বিনিময়। রেনে মেয়েটির কোমরের পেছনে হাত রেখে তাকে এ ঘরে এনে বলল, ‘টিনা, এই আমার বান্ধবী সাব্রিনা।’

    টিনা কি মুহূর্তের জন্য ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল? বোধ হয় না। কারণ টিনার দিকে সাব্রিনার চোখ পড়তে-না-পড়তে টিনা সদ্য পরিচয়ের চোস্ত হাসি ছড়িয়ে বলে উঠেছিল—’হেলো সাব্রিনা, প্লিড্ টু মিট ইউ।’ সঙ্গেসঙ্গে একঝটকায় উঠে হাত বাড়িয়ে সাব্রিনার সঙ্গে করমর্দন করে এবং পরমুহূর্তেই বাঁ হাতে বিয়ারের টিনটা তুলে ধরে বলে, ‘আমি বিয়ার খাচ্ছি, গরমের দুপুরের সবচে তাজা টনিক। তুমি কি খাবে? রেনে, ওকেও কি তুমি ওয়াইন সাধবে?’

    রেনে মুচকি হাসির সঙ্গে একচোখ মটকে বলল, ‘আমাকে সাধতে হবে না। ও নিজেই ওয়াইন ছাড়া আর কিছু ছোঁবে না।’

    টিনা ফ্রিজের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘বুঝেছি, ওয়াইনে পটানোর কাজটা অনেক আগেই সেরেছ।’ ফ্রিজের দরজা খুলে আরেকটা বিয়ারের টিন বের করে খুলতে খুলতে বাংলায় বলে উঠল, ‘মিকে ভাল্লুক কোথাকার!

    রেনে একলাফে ফ্রিজের সামনে এসে একহাতে ওয়াইনের বোতল এবং অন্যহাতে আরেকটা ওয়াইন-গ্লাস বের করতে করতে বলল, ‘হোয়াট ইজ্ দ্যাট? মিচ্‌শ্‌শ্‌’—

    সাব্রিনা খিলখিল করে হেসে দিল। যাক্, গুমোটটা আর বাধল না। ভেতরে ভেতরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে টিনা সাব্রিনার দিকে ফিরে বলল, ‘তুমিই ওকে বোঝাও, মিচকে ভাল্লুক কাকে বলে! বিয়ার না খেয়েও যে ভাল্লুকের মতো মোটা।’

    রেনে সাব্রিনার কাছে গিয়ে তার হাতে ওয়াইন-ভর্তি ঠাণ্ডা গ্লাস ধরিয়ে তাকে পাশে টেনে নিয়ে বড় সোফাটায় বসল। সাব্রিনা শরীরটা একটু সংকুচিত করতেই রেনে হো হো করে হেসে তার পিঠ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘ওহ্ হো, নিজের দেশির সামনে আড়ষ্ট লাগছে!’

    টিনা হেসে বলল, ‘তাতো লাগবেই। নইলে নিউইয়র্ক থেকে প্লেনে আসার সময় অসুস্থ হয়ে সারাটা পথ আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে এলাম, অথচ ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে গালে গুডবাই কিস্ দেবার চান্স দিলামনা তোমায়।

    রেনে তার নিজস্ব স্পেশাল স্টাইলে চোখ মটকে বলল, ‘তোমার চান্স দেবার অপেক্ষায় বড় ছিলাম কিনা! আমি তো জানি, তোমরা বাঙালি মেয়েরা অন্য লোকের সামনে একদম অন্যরকম ব্যবহার কর।

    ‘জেনে গেছ? এর মধ্যেই?’

    ‘জিজ্ঞেস কর সাব্রিনাকে। একবছর হতে চলল ওর সঙ্গে আমার আলাপ। একটি বছর ধরে প্রায় প্রতি শনিবার ও এসেছে আমার এ বাড়িতে। দু-তিনঘণ্টা করে থেকেছে। অথচ একটা দিনও ও আমার সঙ্গে কোথাও বেড়াতে বেরোতে রাজি হয়নি, এমনকি ওকে বাগানের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দেয়নি আমায়।’

    সাব্রিনা আড়ষ্ট হয়ে উঠছিল, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে, টিনা চোখের কোণে দেখে পরিস্থিতি হালকা করে দিতে চাইল, ‘আরে বুদ্ধু, সে তো দরজার এপাশে তোমার উত্তপ্ত চুম্বনের ছোঁয়াটা ঠোঁটে যতক্ষণ পারে ধরে রাখার জন্য দরজার ওপাশে আর তোমাকে দেখতে চায়নি, তাও বোঝোনি? সে যাক, খিদে লেগে গেছে যে! কী সব নাকি রেঁধেছ, দাও তাড়াতাড়ি। দু-টিন বিয়ার হয়ে গেছে। এবার খাবার না দিলেই কিন্তু পেটে লণ্ডভণ্ড কাণ্ড শুরু হয়ে যাবে।’

    রেনে উঠল। টিনা চেয়ারের পেছনে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলল, ‘সাবিনা, তুমি যদি প্লিজ রেনেকে হেল্প্ কর খাবার লাগাতে, তাহলে যতটুকু তাড়াতাড়ি হবে, ততটুকু বেশি কৃতজ্ঞ হব তোমার প্রতি।’

    সাব্রিনা মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি ছড়িয়ে উঠে গেল রেনের পেছন পেছন। টিনা পা দুটো সামনের সেন্টার-টেবলে ছড়িয়ে চোখ বুজে শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিল। একমিনিট দু-মিনিট যতটুকু সময় পায়, একটুখানি রিলাস্ করে নিক। নইলে এই চড়াগ্রামের অভিনয় চালিয়ে যাবার সময় চিড় খেতে পারে। তবে আশার কথা, সাব্রিনা ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ালেও বাইরে ফ্রন্ট সামলে যাচ্ছে বেশ।

    টিনার বুঝি একটু তন্দ্রাই এসে গিয়েছিল, রেনের কণ্ঠস্বরে চমকে তাকিয়ে দেখে- সে তার সামনে, বাও করার ভঙ্গিটি ফ্রিজ করে দাঁড়িয়ে। তাকে চোখ খুলতে দেখে পুনরাবৃত্তি করল, ‘বিশেষ খানা টেবিলে দেওয়া হয়ে গেছে, ম্যাডাম।’ টিনা অপ্রস্তুতের হাসি হেসে ধড়মড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। ‘হাতটা ধুয়ে আসি’ বলে টয়লেটের দিকে হাঁটা দিল। এই এক অভ্যাস টিনার। ব্লাডার যত খালিই থাকুক-না কেন, খাওয়ার আগে টয়লেট-সীটে একবার বসা চাই-ই। নইলে খেতে বসে তার নাকি সুখ হয় না।

    খাবার টেবিলের সামনে এসে টিনা হতবাক হবার ভঙ্গিটি ফুটিয়ে তুলল মুখে। রেনের সঙ্গে একত্রে ড্রামা করে এই একটা অভ্যাস দুজনের গড়ে উঠেছে। সবসময়ই তারা সব ব্যাপারেই কিছু-না-কিছু নাটকীয় অভিব্যক্তি ব্যবহার করে থাকে। রেনে অবশ্য টেবিলটা সাজিয়েছে খুব সুন্দর করে, খানা যদিও বিশ্লেষণ করলে তেমন ধোপে টেকে না। কিমা-করা গোশত আর নুড্‌স্। কিন্তু বিদেশি খানা উপাদানে বা বিশ্লেষণে কখনই ভার বা ধার বজায় রাখতে পারে না। এ খানার ঔজ্জ্বল্য ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন অনুষঙ্গের সংমিশ্রণ ও সুবিন্যস্ত প্রদর্শন। রেনে আজ নতুন একসেট ন্যাপকিন, টেবলম্যাট ও কাটলারি বের করেছে। সবুজে-লালে মেশানো ডিজাইন-করা টেবলম্যাট ও ন্যাপকিন। গোলাই-করা কাঠের হাতল বসানো কাঁটা-ছুরি-চামচ। টোমাটো-সসে লাল-করা কিমা আর কোরা রঙের নুল্স্ জড়াজড়ি করে রয়েছে বাদামি ও ঘি রঙের টানওয়ালা বড় বাটিতে 1 ঐ একই ডিজাইনের প্লেট, বাটি, কাপ। কাঠের সালাদ-ব্যোল,কাঁটা-চামচের কাঠের হাতল আর বাসনপত্রের বাদামি টানের সঙ্গে ম্যাচ করে গেছে। ছ-জনের টেবিলের একপাশে তিনটে প্লেসম্যাট, অন্যপাশের পুরো খালি জায়গাতে বিরাট চওড়া চ্যাপটা ফুলদানিতে অজস্র লাল কৃষ্ণচূড়ার ঝলমলানি সবুজ পাতার ঘেরের মধ্যে। ওটাও চমৎকারভাবে ম্যাচ করেছে এপাশে পাতা লাল-সবুজ রঙের প্লেসম্যাট ও ন্যাপকিনের সঙ্গে।

    রেনে টিনার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিল, আরেকবার বাও করে একটা চেয়ার একটু পেছনে সরিয়ে তাকে বসার ইঙ্গিত করে বলল, ‘এই মে মাসের ফ্যান্টাসটিক কৃষ্ণচূড়াকে স্মরণ করে আজকের টেবিল সাজিয়েছি। কি, পছন্দ হয়েছে?’

    টিনা রেনের টেনে-ধরা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ‘অবশ্যই হয়েছে।

    রেনে সাব্রিনাকে বসাল টিনার উলটো দিকের চেয়ারে। তারপর ফ্রিজ থেকে ওয়াইনের একটা বোতল বের করে এনে নিজে বসল টেবিলের মাথায়। তার ডাইনে-বাঁয়ে দু-ধারে রইল টিনা-সাব্রিনা। ওয়াইন-গ্লাসে লালরঙের বার্গান্ডি ঢালতে ঢালতে বলল, ‘এটাও কৃষ্ণচূড়ার খাতিরেই, নইলে জানোইতো, আমার প্রেয়সী হল সাদা ওয়াইন।’

    টিনা মুখ টিপে হাসল, ‘এখন জানলাম।’

    রেনের সঙ্গে টিনার আগে থেকেই রিহার্সাল দেওয়া ছিল। খেতে খেতে টিনা বলল, ‘সাব্রিনা, আমি একটা ব্যাপারে খুব মুশকিলে পড়ে রেনের কাছে হেল্‌প্ চেয়েছিলাম। সে তোমার কথা বলেছে।

    সাব্রিনা মৃদুকণ্ঠে বলে উঠল, ‘রেনে বলেছে আমায়। কিন্তু আমি তো পারব না।’

    রেনে উৎকণ্ঠিত মুখে টিনার দিকে তাকিয়ে ছিল। টিনা একবারও রেনের দিকে না চেয়ে খাবার চিবোতে চিবোতে আলগোছে বলতে লাগল, ‘রেনে হয়তো ঠিকমতো বলতে পারেনি তোমায়। আগে সমস্তটা শোনো আমার কাছে, তারপর মতামত দেবে। আমাদের একটা প্রতিষ্ঠান আছে তার নাম ডেস্টিচিউট্ মাদার্স্ হোম। রাস্তাঘাটে কচি বাচ্চা কোলে যেসব অনাথা মেয়েরা ভিক্ষে করে বেড়ায়, তাদের কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এই হোম। আমাদের একটা চেষ্টা আছে, এইসব মেয়েদের কিছু হাতের কাজ-টাজ শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া, যাতে তাদের আর ভিক্ষে করতে না হয়। আর বাচ্চাগুলিকে খেতে-পরতে দেয়া। বাহাত্তর সনে অনেক বিদেশি সংস্থা এ ধরনের বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছিল। এই হোমটাও ওরকমই একটা। কিন্তু কয়েকবছর পরে ঐ বিদেশি সংস্থা হোমটিকে সাহায্য দেয়া বন্ধ করলে এটি উঠে যাবার উপক্রম হয়। তখন আমার স্বামী, ও হ্যাঁ আমার স্বামীর নাম তোমায় বলা হয়নি।’ সাব্রিনা চট করে টিনার মুখের উপর থেকে দৃষ্টি সারিয়ে প্লেটে নিবদ্ধ করল। ‘আমার স্বামী ডা. হাসান, উনি একজন প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার, ওঁর নিজের নার্সিং হোম আছে। উনি আমাকে এবং আরো কয়েকজনকে নিয়ে এই হোমটা চালাবার উদ্যোগ নিলেন। প্রথম বছর-দুয়েক ফান্ডের অভাবে বেশ কষ্ট গেছে। গত দু-বছর থেকে ভালোই চলছে। দেশে আমরা টাকা তুলেছি, কিছু সাহায্যকারী বিদেশি সংস্থার কাছ থেকেও গুঁড়ো দুধ, ওষুধ এসব যোগাড় করতে পেরেছি। আমার বাড়ির দুটো বাড়ি পরেই হোমটা, এখন এখানে তিরিশজন মা ও চল্লিশটি শিশু আছে। আমরা বাচ্চাদের এতদিন শুধু খাওয়া-পরা দিতাম। এবার ঠিক করেছি ওদের চিকিৎসার জন্য একটা ক্লিনিক খুলব। এই ক্লিনিক চালাবার জন্যই তোমার মতো একটি মেয়েকে আমার দরকার।’

    সাব্রিনা খুবই মৃদুভাষী, ওই মৃদুকণ্ঠেই একরাশ বিস্ময় হকচকিয়ে উঠল, ‘আমি! আ-মি! আমি কীভাবে তোমাদের ক্লিনিকের কাজে লাগব? ‘

    রেনে বলল, ‘এত চমকাবার কী আছে এতে? তুমি না ডাক্তার? ডাক্তার হিসেবেই তুমি ক্লিনিকে–’

    সাব্রিনা কাঁটা ফেলে দু-হাতে মুখ ঢেকে ফেলল, ‘ওহ রেনে, আমাকে আর ডাক্তার বোলো না। সেই কবে যেন পাসটা করেছিলাম, তারপর তো ভুলেই গেছি কথাটা এই দশবছরে। স্টেথেস্কোপ কী করে ধরতে হয়, তা পর্যন্ত মনে নেই।

    টিনা মুখে আশ্বাসের হাসি ফুটিয়ে স্থিরদৃষ্টিতে সাব্রিনার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, ‘এইজন্যই তুমিই হবে আমাদের উপযুক্ত ক্যান্ডিডেট। হোমে যারা থাকে, দুঃস্থ মা ও শিশুরা, তাদের সবচেয়ে বড় ব্যারামই হচ্ছে ম্যালনিউট্রিশান। কাজেই দুবেলা পেট ভরে খেতে পেয়েই তাদের চৌদ্দআনা অসুখ সেরে যায়। বাকি দুআনা সিরিয়াস তেমন কিছু নয়, সর্দি কাশি কৃমি খুজলি পাঁচড়া এইসব। এদের দিয়ে শুরু করতে করতে তোমার ডাক্তারি আবার সব মনে পড়ে যাবে। তা ছাড়া চাকরিরত, প্র্যাকটিস্রত কোনো ডাক্তারকেই আমরা ছুঁতে পারছি না পয়সার অভাবে। এমনকি সদ্য পাস করা ডাক্তাররাও যা হাঁকে, তা দেবার সামর্থ্যও আমাদের নেই। এদের কারো সময়ও নেই। তুমি বড়লোকের গিন্নি, তোমায় পয়সা দিতে হবে না, তোমার অঢেল সময়, তুমি এসেই তাড়াহুড়ো করবে না।’

    সাব্রিনার চোখ টিনার মুখে আটকে রইল, কিন্তু তার দৃষ্টি টিনাকে পেরিয়ে কোথায় যেন গেছে। সে আপন মনে বলতে লাগল, ‘তার মানে, আবার আস্তে আস্তে সব ঝালাই করতে হবে। স্টেথেস্কেপ একটা কিনতে হবে, কিছু বইপত্রও আবার উলটে দেখে নিতে হবে। লেটেস্ট ওষুধপত্র সম্বন্ধেও খোঁজখবর করতে হবে।’

    রেনে আর টিনা মাথামুখ না-নাড়িয়ে পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল। দুজনের মুখেই তৃপ্তি ও সাফল্যের হাসি। টিনা বলল, ‘প্রথম প্রথম আমার স্বামী ডা. হাসানও ক্লিনিকে আসবেন, তিনিই রুগী দেখবেন, তুমি শুধু তাঁকে অ্যাসিস্ট করবে। এ থেকেই তোমার কনফিডেন্স চলে আসবে। স্টেথেস্কোপ তোমাকে কিনতে হবে না, ওটা ক্লিনিক থেকেই দেয়া হবে। তা ছাড়া হাসানের একটা নিজস্ব লাইব্রেরি আছে, তুমি সেখানে গিয়ে (সাব্রিনা আবার চোখ নামিয়ে ফেলল ) বইপত্র ঘাঁটতে পারবে।

    সাব্রিনা হঠাৎ একটু উদ্বিগ্ন-স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, ক্লিনিকে রুগী দেখার টাইম কখন হবে? সকালে হলে তো—’

    টিনা সাব্রিনার কথায় কান না দিয়ে বলল, ‘দুপুর দুটো থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ক্লিনিকের টাইম হবে। কারণ ডা. হাসানের ও ছাড়া আর সময়ই নেই।’

    সাব্রিনার মুখ থেকে উদ্বেগের ছায়া সরে গেল। সে উৎফুল্ল-স্বরে বলে উঠল, —চম ৎকার টাইম। কারো কোনো রুটিনে ব্যাঘাত হবে না। আমার জন্য পারফেক্ট টাইম।’

    রেনে হাততালি দিয়ে বলে উঠল, ‘চমৎকার! সব সেটড্ তাহলে! বলিনি তোমাকে টিনা, সাব্রিনাই সবচেয়ে উপযোগী ভলান্টিয়ার হবে তোমার এ কাজে? আমি

    তো দেখছি ওকে একবছর ধরে। সবকিছুতেই ওর একটা ডেডিকেটেড ভাব আছে। (সাব্রিনার দিকে ফিরে) তাহলে মাই সুইট হার্ট, সুইটটা তুমিই নিয়ে এসো না!’

    সাব্রিনা সলাজ হাসিমুখে উঠে গেল কিচেনে। সে যেতেই রেনে টিনার দিকে এতটা ঝুঁকে এল যে তার ঠোঁট টিনার কানে এসে ঠেকল। ফিসফিস করে বলল, ‘দেখলে, দেখলে, আইডিয়াটা কেমন গপ্ করে গিলে ফেলল সাব্রিনা? ওহ গড় অ্যাম আই রিলিভড্!’ বলেই চট করে মাথা সরিয়ে সোজা হয়ে বসল রেনে। সামনে-রাখা গ্লাসের মতো চোঙা বাটি থেকে একটা সেলেরি ডাঁটা তুলে চিবোতে লাগল।

    সাব্রিনা কিচেন থেকে রেনেকে ডাকল, ‘ডার্লিং, একবার এসো দেখি, কী যে করে রেখেছ!’

    এতক্ষণে সাব্রিনা পুরোপুরিই সহজ হয়ে উঠেছে, নইলে টিনার সামনে কিছুতেই রেনেকে ডার্লিং বলে ডাকতে পারত না। নাকি বেখেয়ালে হঠাৎ ডেকে ফেলেছে? তারপর জিভ কেটে দাঁড়িয়ে আছে? অথবা বার্গান্ডির প্রভাবও হতে পারে। একটা বিয়ার, দু-তিন গ্লাস ওয়াইন মানুষের মনের আড়ষ্টতাকে নরম করে আনতে কিছুটা সহায়তা করে বই কী! তারপর ক্লিনিকে কাজ করার এই নবদিগন্তের উন্মোচন। কারণ যাই হোক, সাব্রিনা-যে এই মুহূর্তে সুখে-তৃপ্তিতে ভাস্বর হয়ে উঠেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। ডিজার্ট দেখার নাম করে ডেকে নিয়ে হয়তো-বা এতক্ষণে জড়িয়ে ধরেছে রেনেকে।

    চারটে বাজতে আর দশমিনিট বাকি। কফির কাপটা নামিয়ে টিনা বলল, ‘এবার যেতে হয়। হোমে মিটিং আছে। সাব্রিনা, তুমি এক কাজ কর না কেন? আমার সঙ্গে চল। নিজের মনে হোমটা ঘুরেফিরে দেখ। আমরা মিটিং করব। তুমি তোমার মতো সময় কাটাও, তাহলে একটা আইডিয়া গড়ে উঠতে থাকবে তোমার মনে।’

    সাব্রিনা লুফে নিল প্রস্তাবটা, ‘ওহ্ নিশ্চয়, তাহলে এখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারব।’

    টিনা জানত সাব্রিনা আজ তার সঙ্গেই বেরোবার জন্য ছলছুতো খুঁজে অস্থির হচ্ছে। টিনার সাথে কথা না বলে সে টিনাকে-যে বাড়িই যেতে দেবে না আজ—সে বিষয়ে টিনা নিঃসন্দেহ ছিল।

    গাড়িটা রেনের বাসার রাস্তা পেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়তে-না-পড়তেই সাব্রিনা কেমন যেন একরকম বুকফাটা ভাঙাস্বরে বলে উঠল, ‘টি-না!’

    টিনা হাসিমাখা মুখে ধমকে উঠল, ‘চোপ! এখন গাড়ি চালাচ্ছি, অ্যাকসিডেন্ট হবে।’

    সাব্রিনা দম-আটকানো স্বরে আবার বলে উঠল, ‘কোথাও তাহলে গাড়ি থামাও। আই মাস্ট টক টু ইউ।’

    ডানহাতে স্টিয়ারিং সামলে বাঁ হাত বাড়িয়ে টিনা সাব্রিনার চুল এলোমেলো করে দিল, একপলক তার দিকে তাকিয়ে কোমলস্বরে বলল, ‘ঘাবড়াবার কিছু নেই রিনা। আই আন্ডারস্ট্যান্ড পারফেক্টলি।

    সাব্রিনা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে চাপা স্বরে বলল, ‘তবু, তবু আই মাস্ট টক, না বলতে পারলে দম আটকে মরে যাব।’

    ‘নিশ্চয়। টক ইউ মাস্ট। কিন্তু তার জন্য এত অস্থির হওয়ার দরকার নেই। মিটিংটা হয়ে যাক। তারপর আমরা কোথাও নিরিবিলি গিয়ে বসব। তা ছাড়া তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। তোমার ভাই বা স্বামী কোনোদিন কিছু জানতে পারবে না।

    সাব্রিনা বেগে ঘুরে টিনার দিকে ফিরে বসল। খানিকক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইল, তারপর প্রায় অস্ফুট স্বরে বলল, ‘না, ওই ভয় আমার আজ এইমুহূর্তে নেই। তোমার সঙ্গে এভাবে দেখা হওয়াটা বোধহয় আমার জন্য ভালোই হল। না হলে নিজেই কিছুদিনের মধ্যে ইরাপ্ট করতাম। তাতে হয়তো আমার ঘরসংসার সব ভেঙে চুরে গুঁড়িয়ে যেত।’

    টিনা রাস্তার দিকে তাকিয়েই সাব্রিনার কথা শুনছিল, সেইভাবে থেকেই একটু হেসে বলল, ‘কেন, এখন আর ইরাপ্ট করবে না? আমার মধ্যে চ্যানেল পেয়ে গেছ? গুড। কিন্তু ভেতরে এতই যদি আগ্নেয়গিরির উথাল-পাতাল, তাহলে ঘর ভাঙচুরের ভয় কেন আবার?’

    সাব্রিনা মিনিটখানেক চুপ করে রইল। তারপর রাস্তার দিকে মুখ ফিরিয়ে সোজা হয়ে বসে অন্য একরকম ফ্ল্যাট-কণ্ঠস্বরে বলল, ‘সব কথা বুঝিয়ে বলতে অন্তত আধাবেলা লাগবে। মিটিংশেষে চল আমার বাড়ি। ও চাটগাঁ গেছে, বাচ্চারাও নানার বাড়ি, নিরিবিলি কথা বলতে পারব। রাত দশটা-এগারটা পর্যন্ত থাকতে পারবে না?’

    ‘পারব। এই-যে এসে গেছি।’

    ‘দুঃস্থ জননী নিবাস’ সাইনবোর্ড লাগানো একটা একতলা বাড়ির সামনে টিনা গাড়ি থামাল।

    .

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইহুদি প্রশ্নে – কার্ল মার্কস
    Next Article বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    Related Articles

    জাহানারা ইমাম

    একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    August 13, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    সাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }