Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নয় এ মধুর খেলা – জাহানারা ইমাম

    জাহানারা ইমাম এক পাতা গল্প89 Mins Read0

    নয় এ মধুর খেলা – ২

    ২

    সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। মগরেবের নামাজের পরও অনেকক্ষণ ধরে অজিফা পাঠ করেন সালেহা খাতুন। তাকে সচকিত না-করার বাসনায় সাব্রিনা কলিংবেল না টিপে চাবি দিয়ে সদর দরজা খুলল। রাশেদের এ-বাড়ির সব দরজায় এমনিধারা ইয়েল-লক লাগানো। আধুনিকতম কায়দায় বাড়ি বানিয়েছে সে। বিশাল চওড়া ভারী সদর-দরজা খুলেই মাঝারি সাইজের একটা বারান্দা, গ্রিল দিয়ে এমনভাবে ঘেরা যে, বারান্দা না বলে হলওয়ে বলাই সমীচীন, অন্তত বলার সময় রাশেদ তাই বলে থাকে। ডাইনে ফ্যামিলি রুমের দরজা, সোজা হেঁটে গেলে বারান্দার শেষে দোতলার সিঁড়ি। সিঁড়ির পাশ দিয়ে কিচেনে যাবার করিডর। সাব্রিনা ভেবেছিল শাশুড়ি নিশ্চয় এখনো নিজের ঘরে অজিফা পড়ছেন। তাই টিনাকে নিয়ে পা টিপেটিপে দোতলার সিঁড়ির দিকে যেতে গিয়েই ফ্যামিলি-রুমে বসা শাশুড়ির নজরে পড়ে গেল। সালেহা খাতুন কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন, ডেকে বললেন, ‘রিনা নাকি। সঙ্গে ওটা কে?’ টিনা চটপট ঘরে ঢুকে সালাম দিয়ে বলল, ‘আমি চাচিআম্মা।’

    ‘ওমা টিনা যে! আস আস, রস। কতদিন পরে এলে। ইটি আমার মামাতো বোনের বড় ছেলে, এবারে হিজবুল বাহারে বেড়াতে গিয়েছিল, বড় নাকাল হয়ে ফিরেছে। সালেহা খাতুন মোটামুটি শুদ্ধ অর্থাৎ টিনা সাব্রিনা রাশেদরা ঢাকার ড্রয়িংরুমে বসে যেভাবে বাংলা বলে, সেইভাবেই বলেন; কেবল সামগ্রিক শুদ্ধ উচ্চারণে তাঁর নিজের বাপের বাড়ি খুলনার টানটা পুরোপুরিই বোঝা যায়। টিনা, সাব্রিনা দুজনেই সালেহা খাতুনের মামাতো বোনের দেওরের দিকে তাকিয়ে আদাব দিল। একে এরা বিশেষ দেখেনি, মোটামুটি নামজানা থাকলেও সালেহা খাতুন বলে না দিলে চিনতে পারত না। টিনা-সাব্রিনা এগিয়ে এসে ছেলেটির মুখোমুখি সোফায় বসতেই সে হঠাৎ সংকুচিত ও আড়ষ্ট হয়ে নড়েচড়ে সামনে একটু মাথা ঝুঁকিয়ে কেমন যেন জবুথবু হয়ে বসল। সালেহা খাতুন বললেন, ‘অ মতিউর, ইটা আমার বউমা রিনা। তুই এরে দেখিনি আগে? আর ইটি আমার সেজ দ্যাওরের মেয়ে টিনা।’

    মতিউর একবার চোখ তুলে তাকিয়েই আবার মাথা নামিয়ে ফেলল। টিনার খুব হাসি পাচ্ছিল। এই ছেলে-যে হিজবুল বাহারে গিয়ে নাকাল হয়ে আসবে, তাতে আর সন্দেহ কী!

    সালেহা খাতুন বোধ করি তাঁর পূর্ব কথারই জের ধরে বললেন, ‘তোরা তো মুরব্বিদের কথা মানবি নে, আল্লার কালামের জোর তো নিজের চোখে দেখলি। এবার বিশ্বাস হবে তো? তোরে সেধে দোয়াদরুদগুলো দিলাম, তুই সেগুলো হেনস্থা করে বাসায় ফেলে গেলি।’

    মতিউর দুর্বল-কণ্ঠে প্রতিবাদ করে উঠল, ‘না, খালা আম্মাজান, হেনস্থা করি নাই। শেষমুহূর্তের তাড়াহুড়োয় কোথায় যে গেল কাগজগুলান, আর খুঁজে পেলাম না।’

    সালেহা খাতুন চুকচুক করে মুখে শব্দ করে বললেন, ‘আসলে কপালে লেখা ছিল, কী আর করবি। রাশেদের বেলায় দেখলি তো, আল্লার কালামের বরকতে স-ব জিনিসপত্র নিয়ে কেমন ড্যাংড্যাং করে চলে আসল।’

    মতিউর করুণ চোখে চেয়ে বলল, ‘খালাআম্মাজান, আপনি নিজে রাশেদ ভায়ের জিনিসপত্র গুছায়ে দিয়েছেন, শেষমুহূর্ত পর্যন্ত নিজে দাঁড়ায়ে থেকেছেন, রাশেদ ভায়ের বেলা তো ভুল হবার কথা নয়।’

    সালেহা খাতুন পরিতৃপ্ত গলায় বললেন, ‘রাশেদ আমার ইদিকে যতই আধুনিক হোক না কেন, দোয়া-কালামে তার খুব বিশ্বাস। যা-যা কাগজে লিখে দিয়েছি, সব সাথে করে নিয়ে গেছে। যেটা সবসময় পড়বার কথা, সেটা যদি ঠিকমতো মুখস্থ না থাকে, সেই ভয়ে ডাইরিতে লিখে নিয়েছে। আর ও যদ্দিন ফেরেনি, আমি রোজ জায়নামাজে বসে কত-যে দোয়াদরুদ পড়িছি, তার কুল নাই।’

    মতিউর আফসোসের সুরে বলল, ‘আপনি যদি আমার জন্য একটুখানি দোয়াদরুদ পড়তেন খালাআম্মাজান, তাহলে হয়তো এতটা নাকাল হতাম না।’

    সালেহা খাতুন হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে মুহূর্তখানেক কথা বলতে পারলেন না, আর এই মুহূর্তটিকেই কাজে লাগাল সাবিনা। চট করে মাথাটা শাশুড়ির দিকে হেলিয়ে একটু আস্তে জিজ্ঞাসা করল, ‘চা দেওয়া হয়েছে চাচিআম্মা?’

    সালেহা খাতুন বেশ জোরেই জবাব দিলেন, ‘কখন আর দিলাম। তোমরা কেউ ছিলে না। যাও, বেশ ভালো করে নাশতা চা বানিয়ে পাঠিয়ে দাও।’

    সাব্রিনা উঠে দাঁড়াল, বলল, ‘আমি সব রেডি করে রসুলকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। টিনা তুমি আমার সঙ্গে এস।’

    সাব্রিনার পেছন-পেছন টিনা বেরিয়ে গেল। যাক, বাঁচা গেল। সালেহা খাতুনের কাছে আত্মীয়স্বজন কেউ এলে তখন অন্য কারো কথা বলার বিশেষ মওকা থাকে না, বউমানুষের বেশি আলাপচারী তিনি পছন্দ করেন না, অথচ ঘরের মধ্যে বসে থাকা চাই। কিচেনে বাবুর্চিকে সব ভালোমতো বুঝিয়ে, রসুলকে কোন্ প্লেট-কাপ-গ্লাস নিতে হবে, সেগুলো দেখিয়ে, সাব্রিনা টিনাকে নিয়ে দোতলায় নিজের বেডরুমে চলে গেল। যাবার আগে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মুখ বাড়িয়ে বলে গেল, ‘চাচিআম্মা, পাঁচমিনিটের মধ্যে নাস্তা আসছে, আপনি নিশ্চিন্তে গল্প করুন।’

    সালেহা খাতুন চান, তাঁর আত্মীয়স্বজনরা দেখুক ছেলের বউ কীরকম মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শোনে, ঘরসংসারের কাজ দেখে, অতিথি আপ্যায়ন করে। বউর পেটকাটা হাতাকাটা ব্লাউজ, খাটো চুল, রেগানা বিদেশি পুরুষদের সঙ্গে কথা বলা কিছুই তিনি পছন্দ করেন না, কিন্তু ছেলে ওসব চায় বলে তিনি মুখে কিছু বলতে পারেন না। তবে রফা করেছেন অন্য দিক দিয়ে। বউ এরকম মেমসাহেবের মতো পোশাক-আশাক পরলেও সে আগের মতোই সেবাপরায়ণা, বাধ্য এবং নম্র আছে—এটা তিনি তার আত্মীয়স্বজনের কাছে দেখাতে চান বেশ ধ্বজা উড়িয়েই। তাতে অবশ্য সাব্রিনার অসুবিধে নেই। এমনিতেই সে কথা কম বলে, খুব আস্তে বলে এবং শাশুড়ি আগে থেকেই চাচিআম্মা হবার ফলে তার সঙ্গে তার মোটামুটি একটা সমঝোতা আছে। তাই তাকে খুশি করতে সাব্রিনার বিশেষ বেগ পেতে হয় না। তার স্বভাবজ ধীর মৃদু চালচলন এবং দৈনন্দিন কর্তব্যকর্ম সম্পাদন থেকেই সালেহা খাতুনের আকাঙ্ক্ষা মিটে যায় নির্বেঘ্নেই।

    বেডরুমে ঢুকে এয়ারকন্ডিশনার চালু করে দেয় সাব্রিনা। টিনা অবাক হয়ে বলে, ‘বন্ধ করে রেখেছিলে কেন? এই গরমে! রাশেদের অসুবিধে হয় না?’

    ‘রাশেদ তো নেই, গতকাল থেকেই। বললাম না চাটগাঁ গেছে।’

    ‘কেন, চাঁটগা কেন?’

    ‘ও তো গত দুইবছর থেকে প্রায় উইক-এন্ডেই ঢাকায় থাকে না’।

    ‘বলিস কী? যায় কই? শুনিনি তো এতদিন।’

    ‘ঐ যে চট্টগ্রামে কী একটা ইনডাস্ট্রি করছে—তার কনস্ট্রাকশন হচ্ছে গত দুইবছর ধরে। ও তো প্রতি সপ্তাহেই শুক্রবার বিকেলের ফ্লাইটে চাটগাঁ চলে যায়। রোববার বিকেলে ফেরে। কোনো উইক-এন্ডে পার্টি-টার্টি থাকলে তখন যায় না।

    টিনা খুব মনোযোগ সহকারে সাব্রিনার মুখের পানে চেয়ে রইল। সাব্রিনাও উদ্ধত গ্রীবাভঙ্গি করে টিনার দৃষ্টি প্রতিহত করে তাকিয়ে রইল। মিনিটখানেক। তারপরই উচ্ছ্বসিত কান্নায় ভেঙে পড়ল। ফোমের নরম তোশকের বিছানায় ডুবে গেল তার মুখ—খাটো চুলগুলি ঝাঁপিয়ে এসে তার মাথার চারধারে কালো ফ্রেম তৈরি করল একটা। টিনা স্থির হয়ে বসে রইল, এরকম সময়ে সে অন্য অনেকের মতো সান্ত্বনার বা বুঝ দেওয়ার কথা বলতে পারে না। কথা বলার দরকারও নেই। ছোটবেলা থেকে তার অনেকগুলো চাচাত-ফুপাত ভাইবোন—একসঙ্গে ঠিক বেড়ে না উঠলেও—বেশ যোগাযোগের মধ্যেই থেকেছে। বড় চাচার মেয়ে রিনার বিয়ে হয়েছে তার মেজো চাচার ছেলে রাশেদের সঙ্গে, টিনার স্বামীও তার ফুফাত ভাই। অতএব বড় হয়েও নিজের-নিজের সংসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েও, সকলের সঙ্গে সকলের বেশ ভালোই যোগাযোগ আছে—ঈদে-বকরিদে, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, নানাবিধ পার্টি- আড্ডায় প্রায়-প্রায়ই দেখাসাক্ষাৎ হয়। এরমধ্যে যে সাব্রিনার বুকের ভেতর আগ্নেয়গিরি ফুটন্ত হয়ে উঠেছে, সেটা বাইরে থেকে বোঝাই যায়নি। তার একটা কারণ, সাব্রিনা চিরকালই চুপচাপ, আস্তে বলে আস্তে চলে এবং মুখে একটা স্মিত হাসির ভাব প্রায় সবসময়ই জেগে থাকে, ফলে বোঝা যায় না ভেতরে কী হচ্ছে। ছোটবেলায় টিনা দেখেছে, জ্বরজারি হলে সাব্রিনা চুপচাপ বিছানায় পড়ে থাকত। আর, টিনার কিংবা রকসির কিংবা রাশেদের, অন্য কারো অসুখ করলে কাতরানিতে বাড়ি মাথায় উঠত। ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা সাব্রিনা যতটা মন দিয়ে করত, তার সমবয়সী অন্য চাচাত-ফুফাত বোনরা তার অর্ধেকও পারত না। সাব্রিনা কথা বেশি বলে না, গলা বেশি চড়ায় না, কিন্তু কাজে আবার ঢিলে নয়। ক্ষিপ্র পায়ে চটপটে হাতে সর্বত্র সবার কাজে লাগছে সে। এজন্যই পরবর্তী পর্যায়ে শাশুড়ির সাথে খিটিমিটি বাধবার কোনো কারণ ঘটেনি। রাশেদের সঙ্গে বিয়েটাও তার প্রেম করেই হয়েছে। যেমন হয়েছে টিনা আর হাসানের। প্রগতিশীল সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এটা স্বাভাবিক। বাপ-চাচারাও ব্যাপারটাকে পরোক্ষ প্রশ্রয়ের চোখেই দেখেছেন। পনের বছরের বিবাহিত জীবনে তিনটি ফুলের মতো ছেলেমেয়ে ওদের, রাশেদের ব্যবসাও দিনে দিনে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। নতুন বাড়ি করেছে বছর চারেক হল, স্বপ্নপুরীর মতো বাড়ি। বিভিন্ন পার্টিতে রাশেদ আর সাব্রিনাকে সবচেয়ে মানানসই দম্পতি বলে মনে হয়। রাশেদ প্রচুর কথা বলে, প্রচুর হাসে, আড্ডা জমাতে পারে, তার পাশে মিষ্টি-হাসি ছড়ানো মুখে শান্তশ্রী সাব্রিনা—কথা কম বলছে কিন্তু যেখানেই যাচ্ছে, সেখানকার টুকিটাকি কাজে লেগে যাচ্ছে। সবসময় দুজনকে দুজনের চমৎকার পরিপূরক বলে মনে হয়েছে। তাহলে? কোথায় কোন্ যোগবিয়োগে ভুল হয়ে গেল? শুভংকরের অঙ্কে ফাঁকি এল কোথায়?

    কিন্তু এ প্রশ্ন টিনা মোটেও করবে না সাবিনাকে। সে চুপ করে অপেক্ষা করবে, যতক্ষণ না সাব্রিনা নিজে থেকে মুখ খুলবে।

    সাব্রিনা বলল, ‘তোমার মনে আছে টিনা, রাশেদ আমাদের সঙ্গে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিল?’

    টিনা অবাক হয়ে মনে করার চেষ্টা করে বলল, ‘কই নাতো!’

    ‘তুমি হয়তো খেয়াল করনি, হাসান ভাইকে জিজ্ঞেস কোরো, তার নিশ্চয় মনে আছে। কারণ রাশেদকে ভর্তি করাবার জন্য তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছিল’।

    ‘কেন?’

    ‘আইএসসিতে রাশেদের এগ্রিগেট কিছু কম ছিল। তাছাড়া এডমিশন টেস্টেও ও তেমন ভালো করেনি। আমার এগ্রিগেটে ওর চেয়ে চল্লিশ নম্বর বেশি ছিল, তাছাড়া আমি এডমিশন টেস্টে ছেলেমেয়েদের মধ্যে সেকেন্ড হয়েছিলাম, রাশেদের নাম লিস্টে ওঠেনি, এমনকি ওয়েটিং লিস্টেও না। হাসান ভাই তখন মেডিক্যাল থার্ড ইয়ারে, নিজে রাজনীতি না করলেও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কিছুটা জানাশোনা ছিল। রাশেদ গিয়ে তাকে ধরল। হাসান ভাই কাউকে ধরাধরি পছন্দ করত না, বিশেষ করে ছাত্রনেতাদের; কিন্তু রাশেদ এমন হত্যে দিয়ে পড়ল যে তাকে বাধ্য হয়ে তদবির করতে হল। রাশেদ মেডিক্যালে ভর্তি হল বটে, কিন্তু কন্টিন্যু করতে পারল না। প্রথম মরা-কাটার দিনেই পালিয়ে চলে এল। তারপর তো গিয়ে ভর্তি হল করাচী ইউনিভার্সিটিতে।’

    টিনা অবাক গলায় বলল, ‘ভারি মজার ব্যাপার তো! আমরা তো করাচী থেকে তার বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করার কথাটাই এতকাল জেনে এসেছি। তাই তো আমরা ভাবতাম, কেন যে ও ইন্টারমিডিয়েটে কমার্স না নিয়ে সায়ান্স নিয়েছিল!’

    সাব্রিনা মুচকি হাসল, ‘সেটাও আমার সঙ্গে জেদ করে। আমি ম্যাট্রিকে চারটে লেটার পেলাম, ও পেল দুটো। ওর এগ্রিগেট আমার চেয়ে অনেক কম। আমি সায়ান্সে ভর্তি হয়ে গেলাম একচান্সে। অতএব ওরও সায়ান্সেই ভর্তি হওয়া চাই-ই চাই।’

    ‘বল কী! এ-যে রহস্য-উপন্যাসের মতো লাগছে। আগে কোনোদিন তো বুঝতে পারিনি তোমাতে ওতে এরকম একট অদৃশ্য টরে টক্কা চলছিল। তা তোমাদের প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা ঘটল কখন?’

    সাব্রিনা ফিক করে হেসে ফেলল, ‘সে তো ও করাচী থেকে ফিরে আসার পর। আমি তখন কেবলে পাস করে ইনটার্নিশিপ করছি। কিন্তু ও ক্লেইম করত ও নাকি হাঁটতে শেখার পর থেকেই আমার প্রেমে পড়ে ছিল। আর সেইজন্যই নাকি কাছাকাছি থাকার জন্য সে সায়ান্স, মেডিক্যাল এইসব ভুল জায়গায় ঢুঁ মেরে মাথা ফুলিয়েছে।’

    টিনার আব্বা এবোটাবাদে বদলি হয়েছিলেন টিনা যখন কেবলে ম্যাট্রিক পাস করেছে। আবার ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন ছয় বছর পরে। রাশেদ তার আগেই করাচীতে চলে গেছে।

    পেশাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এম. এ. পাশ-করা টিনা এসেই নবীন ডাক্তার হাসানের মুখোমুখি পড়ে গেল। ছয় বছরের অদর্শনে আপন ফুফাত ভাই তখন অচেনা যুবকের মতোই। প্রথম দর্শনেই প্রেম এবং বিবাহ।

    ‘তোমাদের বিয়ের ঠিক আগে আগেই রাশেদ করাচী থেকে ফিরে এসেছিল, মনে আছে? আর সেইবারই তো’—আবার ফিক্ করে হাসল সাব্রিনা।

    টিনার মুখেও স্মৃতিচারণের হাসি, ‘হ্যাঁ, আমাদেরও চোখে পড়েছিল।’

    ‘তোমরা খেপিয়ে খেপিয়েই তো ব্যাপারটা আরো জমকিয়ে তুললে। বাপ-মাদের ও সায় ছিল।’

    ‘আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস নাকি? তোর সায় ছিল না?’

    ‘দোষ চাপাতে যাব কেন? প্রেমে তো পড়েছিলাম ঠিকই। আজো তো প্রেমে পড়ে আছি। আর সেইজন্যই তো যত দুঃখ আর ক্রোধ। দুঃখের চেয়ে ক্রোধই বেশি।’

    টিনা আবার সহানুভূতিশীল অপেক্ষায় নীরব হয়ে গেল। তার মনে পড়ল রেনের কথা—তোমাদের এই ক্লোড সোসাইটির একটা মেয়ে, মনের কী অবস্থা হলে এরকম ক্ষণিকের বান্ধবী হবার কথা বলতে পারে।

    সাব্রিনা বলতে লাগল, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে পনের বছর। তার আগের জীবন ধরো আরো ২২/২৩ বছর। আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠেছি, বাপমা’র শাসন-মেশানো আদর-স্নেহ, ভাইবোনের রেষারেষি-মেশানো ভালোবাসা, স্কুল-কলেজের কম্পিটিশান-মেশানো বন্ধুত্ব এই নিয়েই বিভোর ছিলাম। আমাদের শিক্ষিত সচ্ছল পরিবার, আত্মীয়স্বজনও একই লেভেলের, কোথাও কোনোরকম কষ্ট বা সমস্যা ছিল না। পড়াশোনায় ভালো ছিলাম, তরতর করে এগিয়ে গিয়েছি। যার সঙ্গে প্রেম হয়েছে সেও যোগ্য পাত্র ছিল। সবকিছু যেন ছকেছকে মিলে গেছে। কিন্তু তবু উই কুড়ন্‌ট্ লিভ্ হ্যাপিলি এভার আফটার। মে বী ইজ্ ট্যু গুড টু লিভ লাইক দ্যাট। আজ আমার জীবনে এইরকম একটা ঘটনা ঘটেছে বলেই আমি জীবনটার দিকে পেছন ফিরে বিশ্লেষণ করতে পারি। রাশেদের ইন্টারমিডিয়েট সায়ান্স বা মেডিক্যালে ভর্তি হবার ব্যাপারগুলোকে আগে গুরুত্ব দিইনি, এখন এতসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ওগুলোর আসল তাৎপর্য আমার কাছে ফুটে উঠছে। আগে মনে করতাম আমরা প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছি। এখন বুঝতে পারি, ও আমাকে ওর প্রেমে পড়িয়েছিল। আমাকে বিয়ে করতে পারাটা ওর জীবনের একটা অ্যাকমপ্লিশমেন্ট ওর ইগোর কাছে, এটা ওর কেরিয়ারে ওয়েল এস্টাবলিশ্ট হবার মতোই সমান ইমপরটেন্ট।

    টিনা বুঝছে ঠিকই তবু সাব্রিনার মনের দাহে একটু প্রলেপ দেবার উদ্দেশ্যে বলল, ‘রাশেদের প্রতি একটু বেশি অবিচার করে ফেলছ নাকি?’

    ‘সচেতন মনে হয়তো তাই লাগছে কিন্তু একজন মনোবিজ্ঞানী বিশ্লেষণ করলে এই দাঁড়াবে না কি? সত্যিকার অর্থে ভালোই যদি বাসত, তাহলে আমাকে ডাক্তারি করা থেকে এমনভাবে বাধা দিয়ে সরিয়ে রাখত না। তুমি তো জানো টিনা, ইন্‌টার্নিশিপ করতে করতে আমার বিয়ে হল। প্রথমে ঠিক হয়েছিল আমরা তিন-চারবছর বাচ্চা নেব না। কারণ ও তখন কেবলে বিজনেসে ঢুকছে। আমিও ডাক্তারিতে দু-চারবছর হাত পাকিয়ে নিই। কী সুন্দর একটা চাকরি পেয়েছিলাম উইথ প্রাইভেট প্রাকটিস অ্যালাউড। কিন্তু ও খুঁতখুঁত করতে লাগল, চাচিআম্মাও খুঁতখুঁত করতে রাগলেন-——ঘরের বউ চাকরি করলে সংসারে শ্রী থাকে না। তার ওপর ডাক্তারি! একবার প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আঠা গায়ে লাগলে আর ছাড়ানো মুশকিল হবে। কিন্তু আমিও শুনি না তাদের কথা। শেষমেষ আমার সঙ্গে যুক্তিতর্কে না-পেরে রাশেদ হঠাৎ আমাকে বিট্রে করল। আমার পেটে বাচ্চা এসে গেল। আমারও কপাল মন্দ, প্রথম থেকেই নানা কমপ্লিকেশন শুরু হল। ব্যস, ওর পত্নীপ্রেম দুনিয়ার সব দৃষ্টান্ত ছাড়িয়ে গেল।’

    টিনা আবার মৃদু প্রতিবাদ করল, ‘এতটা কঠিন বিচার রাশেদের কি প্রাপ্য? আমরা তো সে-সময় দেখেছি ওর উদভ্রান্ত অবস্থা, নাওয়া-খাওয়া ব্যবসা সব মাথায় উঠেছিল। হাসানকেও তো প্রায় চব্বিশঘণ্টাই বগলদাবা করে নিয়ে রাখত তোমার কেবিনে।’

    সাব্রিনা মৃদু হাসল, তখন তো ধন্য হয়েই গিয়েছিলাম টিনা। আমার মতো স্বামী-সোহাগিনী তখন আর ক’টা ছিল! তার ওপর ছেলে হয়েছে। বংশের উত্তরাধিকার। মেজ চাচার একমাত্র ছেলের ঘরে সবেধন নীলমণি। তাও আবার রিসাস বেবি। সে ছেলে-যে রক্ত-বদলের সময় মরে যায়নি, এই তো পরম ভাগ্য। তাকে পরবর্তী পর্যায়ে বাঁচিয়ে রেখে বড় করে তোলা কি কম দুঃসাধ্য ব্যাপার? অতএব তার মায়ের আর ডাক্তারি করা হল না। সময় কোথায়? মা, দাদি অষ্টপ্রহর ছেলে নিয়েই ব্যস্ত। বাপ বিজনেসের ফাঁকে ফাঁকে ছেলে আর ছেলের মাকে নিয়েই বিভোর। সত্যি বলছি টিনা, তখন এতটুকু খেদ ছিল না মনে। এর চেয়ে আর কি আশা করতে পারে একটা বাঙালি মেয়ে? আর তাছাড়া এটাও তো সত্যি কথা, বাঙালি মেয়েরা এখনো ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ভালো বিয়ে হবার জন্য।’

    ‘না সাব্রিনা, অন্তত এই ‘৭৯ সালে এ কথাটা আর সত্যি নেই। তোমার বেলায় যেটা হয়েছে, সেটা এক্সেপশনাল কেস্। কিন্তু বিশ্বাস কর এখন ছেলেরা ডাক্তার, আর্কিটেক্ট বা টিচার মেয়ে বিয়ে করতে চায় মেয়েটিও চাকরি করে দুটো পয়সা ঘরে আনতে পারবে বলে।

    ‘ঐ হল আর কী। কয়েনের রিভার্স সাইড। আমার স্বামী আমাকে বিয়ে করেছে তার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, আজকালকার স্বামীরা বিয়ে করছে সংসারের আয় বৃদ্ধির জন্য। কথা ঐ একই দাঁড়াচ্ছে। একটি মেয়েকে শুধু তার জন্যই বিয়ে করা কোনোক্ষেত্রেই হয়ে উঠছে না।’

    ‘তুমি একটু বেশি বিটার হয়ে পড়েছ সাব্রিনা। ‘

    সাব্রিনা কেমন যেন উন্মাদের মতো নিঃশব্দ এক হাসি হাসল, ‘বিটার? ওনলি বিটার? না আমি শুধু তিক্ত নই, আমি উল্কাপিণ্ডের মতো জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে একটা ঢিবির মতো মাটিতে পড়ার পর্যায়ে এসে পড়েছি। আমি সপ্তাহ-দুয়েক থেকে খুব টেটেড ফিল করছিলাম রাশেদকে সব বলে দেবার জন্য। তোমার সঙ্গে আজ দেখা না হলে কী যে হত, হয়তো আগামীকাল রাতেই রাশেদ ফিরলে একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যেত।’

    টিনা শঙ্কিত হয়ে বলল, ‘রিসেন্টলি খুব ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে নাকি রাশেদের সঙ্গে?’ সাব্রিনা হঠাৎ হি হি করে হেসে দিল, ‘আমি কি ঝগড়া করার মতো মেয়ে? দেখেছ আজ পর্যন্ত কারো সাথে আমার কথা কাটাকাটি হতে?’

    ‘সেইখানেই তো আরো ভয়। ঝগড়াঝাঁটি চেঁচামেচি করলে ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যেত, তোমার মনের মধ্যে এত বাষ্প জমত না। ছোটবেলা থেকেই তুমি সবচেয়ে চুপচাপ, সবচেয়ে ডিউটিফুল, সবচেয়ে করিতকর্মা মেয়ে। যখনি যে কাজ করেছ, খুব সুন্দরভাবে, নিপুণভাবে করেছ। কোথাও কখনো বিফল হওনি। কেবল এই একটা ব্যাপারে হেরে গেলে।

    সাব্রিনা চকিত চাহনিতে বিদ্ধ করল টিনাকে, ‘কোন্ ব্যাপারে? রাশেদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ফাটলে? রেনের সঙ্গে আমার অ্যাফেয়ারে? মোটেই না। হারিনি আমি। রাশেদ নিজে যা করছে, আমিও ঠিক তাই করছি। রাশেদ সংসারে ইনটেরিটি বজায় রাখার জন্য আমাকে ডাক্তারি করতে দেয়নি, সংসারের মধ্যে জড়িয়ে রেখে নিজে টাকা উপার্জনের নেশায় মেতেছে, তারপর অনেক টাকার স্তূপ বানিয়ে অন্য নারীর নেশাতে মেতেছে। আমিও সংসারের ইনটেরিটি বজায় রেখে তিন-তিনটি ছেলে-মেয়ে মানুষ করছি, স্বামী-শাশুড়ি সংসারের সর্বাঙ্গীণ তদারকি করছি, তারপর নিজের সেনিটি বজায় রাখার জন্য রেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি।’

    টিনা খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। তারপর মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘রেনের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছিল কীভাবে?’

    সাব্রিনা একটা বালিশ টেনে কাত হয়ে বলল, ‘গত বছর মে মাসে রাশেদ একটা পার্টি দিয়েছিল; মনে আছে, তোমরাও এসেছিলে? তাতে অনেকগুলো বিদেশিকে দাওয়াত করা হয়েছিল। বেশির ভাগই বিভিন্ন এমব্যাসির ট্রেড কমিশনার বা ট্রেড-সম্পৰ্কীয় কর্তাব্যক্তি। রেনে ফ্রেঞ্চ ট্রেড কমিশনারের বন্ধু, ইউনিসেফের চাকরি নিয়ে মাত্র দু-সপ্তাহ হল তখন ঢাকায় এসেছে। একে নতুন জায়গায় অচেনা পরিবেশ, তায় মে মাসের গরম। রেনে দু-সপ্তাহেই অস্থির হয়ে উঠেছিল। ফ্রেঞ্চ ট্রেড কমিশনার তার বোর্ড্ বন্ধুকে পার্টিতে নিয়ে এসেছিল রাশেদের কাছে অনুমতি নিয়ে।’

    ‘ব্যস্ বোরড্যম ঘুচে গেল চিরকালের মতো। তা কত বিদেশিই তো সর্বদা দেখছিস নানা পার্টিতে, হঠাৎ রেনেতে পা দেবে গেল কী করে?’

    সাব্রিনা মুচকি হাসল, ‘কী জানি কী দিয়ে কী হয়েছিল! বোধ হয় কৃষ্ণচূড়া।’

    ‘কৃষ্ণচূড়া? রেনের কৃষ্ণচূড়ার প্রীতি অবশ্য একটু বেশি। আজকে দেখলি না, খাবার টেবিলে কৃষচূড়ার কী সমারোহ সমাদর।’

    ‘তুমি তো জানো টিনা, বড় বিজনেসম্যানদের এসব পার্টিতে যেসব বিদেশি আসে, তারা কীরকম ঝানু হয়। মরা মাছের চোখের মতো চোখ দিয়ে তাকিয়ে কথা বলে আর ড্রিংকের গ্লাসে চুমুক দেয়। মাপা কথা, ছেঁদো হাসি, ঘুরেফিরে খালি পলিটিকসের আলোচনায় চলে আসে, ড্রিংক করতে করতে শেষের দিকে কথা জড়িয়ে আসে, একই কথা বারবার বলে — আটালি আটালি বোর সবগুলো। কিন্তু এরই মধ্যে চমক লাগল রেনেকে দেখে। চনমনে ঘোড়ার মতো যেন লেজ তুলে পা ঠুকছে। আমার সঙ্গে ওর আলাপ হয়েছে ও আসার বেশ খানিকক্ষণ পরে। কারণ ওরা দেরি করে এসেছিল। তার আগেই লোকে ঘর গিগিস্। আমি দরজার উলটো দিকের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। কেউ বোধ হয় ওকে চিনিয়ে দিয়েছিল আমিই হোস্টেস। ভিড় এবং লোকজনের কুশল বিনিময় ঠেলতে ঠেলতে অবশেষে ও আমার সামনে এসে দাঁড়াল। মাঝারি উচ্চতা, দোহারা গড়ন—প্রায় মোটাই বলা যায়, সোনালি মুখে আর নীল চোখে ঝিকমিক করছে কৌতুক ও দুষ্টুমির ছিটে-মেশানো এক হৃদয়-হরণ হাসি। ওর সেই বিখ্যাত বাও-এর ভঙ্গিতে আমার সামনে নত হয়ে বলল, ‘বাংলাদেশের অসহ গরমে মৃতপ্রায় এই হতভাগ্যটি মহারানিকে দেখে কিছুটা প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে।’

    আমি একটু অপ্রস্তুত হলেও সামলে নিয়ে বললাম, ‘তাই নাকি? শুনে প্রীত হলাম। তা গরম তাড়াবার মতো কী দেখলে আমার মধ্যে!’

    রেনে মুখে অত্যন্ত সিরিয়াস ভঙ্গি ফুটিয়ে বলল, ‘ইয়োর হাইনেস, ইউলুক সো কু-ল।

    আমি হেসে বললাম, ‘আমার চেয়েও কুল জিনিস আেেছ, দেখতে পাওনি। তা দেখলে বাংলাদেশের গরমকে আর কখনো দুষবে না। কারণ এমনি গরম না পড়লে তার দেখা মেলে না।

    ‘কে সে? কোথায় থাকে?’ রেনের এই প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম, ‘তার নাম কৃষ্ণচূড়া। সে থাকে পথের ধারে ধারে, মাঠের কিনারে কিনারে। আগুনের মতো উজ্জ্বল তার রঙ, কিন্তু সবুজ ঘেরের মধ্যে বন্দি হয়ে স্নিগ্ধ—তাই তাকে দেখলে শরীর-মনে শান্তির স্নিগ্ধ প্রলেপ পড়ে।’

    ‘এমনি নাটকীয় কথাবার্তার ভেতর দিয়ে রেনের সাথে আমার আলাপের সূত্রপাত। আমি নাটক করি না, কথার জাল বুনে আলাপচারিতা করতে পারি না, কিন্তু রেনের সঙ্গে দেখা হবার একবছর আগে থেকে রাশেদ তার ইনডাস্ট্রি নিয়ে মেতেছে, প্রতি উইক-এন্ডে চাটগাঁ চলে যায়। উড়ো কথা কানে আসে, বিশ্বাস করতে মন চায় না অথচ রাশেদের ব্যবহারে বিশ্বাস করবার সন্দেহ জাগে। এমনি মনের অবস্থায় একবছর ধরে খালি নাটক নভেল ম্যাগাজিন খুব বেশি করে পড়েছি আর ভেবেছি। মনে মনে খালি কাল্পনিক কথাবার্তা চালাতাম রাশেদের সঙ্গে, কী করে তাকে কথায় কথায় কথার ছলে ভুলিয়ে আসল কথা বের করে নেব। মনে মনে কথা বলাই সার হত, রাশেদের সামনাসামনি হলে কোনো কথাই বলতে পারতাম না। তবে মনে মনে কথা বলার ফলেই হয়তো রেনের সাথে ঐভাবে কয়েকটা নাটকীয় ডায়লগ দিতে পেরেছিলাম। তা ছাড়া রেনের চোখমুখের অভিব্যক্তি, কথা বলার ধরন, হাসি—সব মিলিয়ে একটা কথা বলার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তাই হঠাৎ যেন মনের একটা বন্ধ জানালা ফট করে খুলে গিয়েছিল, হঠাৎ তাজা দখিনা বাতাস এসে দম-আটকানো বুকের ভেতরটা ফুরফুর করে তুলেছিল।

    রেনে তখন মাত্র দু-সপ্তাহ হল ঢাকায় এসেছে, পথঘাট চেনেনা, তার ওপর তার গাড়ি তখনো এসে পৌঁছোয়নি। তাই তাকে কৃষ্ণচূড়ার আরাম দেখাবার জন্য পরদিনই আমার গাড়িতে করে নিয়ে বেরোলাম। ঠাণ্ডার দেশের ছেলে ঢাকার দুঃসহ গরমে শুধু কষ্টই পাচ্ছিল। তাকে দেখালাম কৃষ্ণচূড়ার সমারোহ। তাকে আরো দেখালাম জুঁইফুলের সতেজ সবুজ লতার মধ্যে তারার মতো ছোট্ট সাদা ফুলের ঝিকিমিকি। সন্ধ্যার মুখে একরাশ আধফোটা বেলিফুল তুলে তার নাকের সামনে ধরলাম—দেখ, নাকের ভেতর দিয়ে গন্ধ বুকের মধ্যে ঢুকে কেমন শরীরে আরাম ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাথাধরা থাকলে তাও সুগন্ধে আস্তে আস্তে ছেড়ে যাচ্ছে। সে অবাক বিস্ময়ে বেলিফুলের বন্ধ-কলির দিকে চেয়ে-চেয়ে দেখল, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কী অলৌকিক প্রক্রিয়ায় কলিগুলি আস্তে আস্তে পাপড়ি মেলে ফুটে উঠছে। যেন টাইম ল্যাপ্‌স মুভি দেখছে। দুপুরের চড়ারোদের সময় তাকে নিয়ে বসলাম মাঠের মাঝে, পুকুরের পাড়ে, বিরাট অশ্বত্থ গাছের নিচে। চারদিকে গনগন করছে রোদ, অথচ গাছের নিচে কী আরামদায়ক ছায়া, পুকুরের সবুজ পানির ওপর দিয়ে ঝিরঝিরে বাতাস বয়ে আসছে—কোথায় লাগে এর কাছে এয়ারকন্ডিশনের আরাম। রেনে মুগ্ধ হল, তার মুগ্ধতা দেখে আমিও মুগ্ধ হলাম। রাশেদের কাজের ছুটোছুটির বাহানায় অবহেলাতে আমি একবছর ধরে হতাশা, দুঃখ ও নিঃসঙ্গতার পাথারে যেন ডুবে যাচ্ছিলাম। রেনেকে দেখে হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম হাত বাড়িয়ে তাকে আঁকড়ে ধরলাম বাঁচবার তাগিদে।’

    টিনা একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। রেনে ইউনিসেফ অফিসে তার সহকর্মী, বোহেমিয়ান ড্রামা সার্কলে একসঙ্গে একটা নাটকও তারা করেছে গত ডিসেম্বরে—কাজে এবং উৎসবে-অনুষ্ঠানে কত ঘনঘন দেখা হয় তাদের,—অথচ রেনে কোনোদিন তাকে আভাসেও জানতে দেয়নি যে একটি বাঙালি মেয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা চলছে। অবশ্য গতমাসেই প্রথম রেনে তাকে বলে যে, তার বান্ধবীর ব্যাপারে সে একটা সমস্যায় পড়েছে যার সমাধানে টিনার সাহায্য তার দরকার; তাও নাম উহ্য রেখে বলেছে। সেটা, যখন টিনা একমাসের একটা ট্রেইনিং সেরে নিউইয়র্ক থেকে ফিরছিল, রেনে ও তার তিনসপ্তাহের ছুটি শেষে ঐ একই প্লেনে ঢাকা ফিরছিল—তখন কথাটা পাড়ে। কিন্তু অসহ্য মাথাধরায় টিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে কথাও বেশিদূর এগোতে পারে না।

    টিনা জিজ্ঞেস করল, ‘রেনে কবে যাচ্ছে?’

    সাব্রিনা বলল, ‘সেটা তো আমার চেয়ে তুমিই ভালো জানো। তোমরা এক অফিসে চাকরি কর।’

    ‘না, আমি ঠিক জানি না। মাস তিনেকের মধ্যে—এই পর্যন্ত শুনেছি।’

    সাব্রিনা ছাদের দিকে চেয়ে বলল, ‘আমিও ওইটাই জানি।’

    ‘তুমি নাহয় চাপা মেয়ে, তাই তোমার কাছ থেকে কিছুই জানতে পারিনি। কিন্তু রেনের মতো হৈচৈ-প্ৰিয় প্রচুর কথা-বলা ছেলে কী করে বেমালুম চেপে রইল পুরো বছর ধরে—তাই ভাবছি।’

    আমার কড়া নিষেধ ছিল। আমি রেনেকে বলেছিলাম এটা স্রেফ ক্ষণিকের বন্ধুত্ব হবে। কোনোপক্ষেই কোনো ইমোশনাল ইনভল্‌ভূমেন্ট হবে না, কাউকে ঘুণাক্ষরেও আভাস দেওয়া চলবে না, কখনো ফোন করা চলবে না। প্রতি শনিবারে আমি দুটো-তিনটের সময় তার বাসাতে যাব, ঘণ্টা দুই-তিন থেকে চলে আসব। যদি কোনো শনিবারে তার কোনো প্রোগ্রাম পড়ে যায়, সে যেন স্বচ্ছন্দে চলে যায়। ইন দ্যাট কেস, আমি তার বাসা থেকে ফিরে আসব। তবু ফোন করা চলবে না। অন্য কোনো পার্টিতে দেখা হলেও এ-সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ করা চলবে না।’

    ‘এবং রেনে একান্ত অনুগতের মতো অক্ষরে অক্ষরে মেনে এসেছে?

    ‘তাইতো দেখা যাচ্ছে।’

    ‘ক্ষণ বন্ধুত্বের শর্তের বেলায়ও কি তাই দেখা যাচ্ছে?’

    দরজার পাটি আবার খুলে গেল। আয়া মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘ভাবীজান, আম্মায় আপনেরে ডাকতাছেন। বুবুজানেরে লয়া খাইতে যাইতে কইছেন।’

    টিনা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘এগারটা বাজে। আজ যাই রিনা। খেতে পারব না, চাচিআম্মাকে বলে যাই। কাল আসব সন্ধ্যায়। রাশেদের কাছে ক্লিনিকের কথাটা পাড়তে হবে।

    .

    সজনের ডাঁটা চিবোতে চিবোতে রাশেদ বলল, ‘বেশতো ছিলে আরামের স্বর্গপুরীতে, হঠাৎ বেয়ারামে ধরল কেন?’

    টিনা বলল, ‘না না রাশেদ, ব্যাপারটাকে এভাবে নিয়ো না। রিনা তো করতেই চাচ্ছে না। আমিই ঠ্যাকায় পড়ে ওকে টানাটানি করছি। আমাদের হোমে যে-ধরনের ডাক্তার দরকার তাতে রিনাই হবে বেস্ট।’

    ‘রোগী-মারা ডাক্তার! অ্যাঁ? তা ওইসব বেজন্মা ছোঁড়াগুলো যত মরে, ততই সমাজের জন্য মঙ্গল। রাশেদ হাসল, তার সুন্দর মুখের হাসিটা বড্ড কুৎসিত ঠেকল টিনার। চালিয়ে যাও সাব্রিনা ডিয়ার। দেখো আবার বেশি পরিশ্রম করে শরীর খারাপ করে ফেলো না, তুমি তো আবার ফরেন মহিলাদের কী যেন এক স্যাটারডে ক্লাবে কী একটা সোসাল ওয়ার্কটোয়ার্ক কর। ওইটাই তো যথেষ্ট ছিল। এত খাটনি সইবে তো?’

    টিনা ঝাঁঝিয়ে উঠল, ‘তোমার কথা শুনলে গা চিড়বিড় করে ওঠে রাশেদ। নিজেকে তো এক সম্রাট বানিয়ে বসেছ। প্রতি সপ্তাহে চাটগাঁ, প্রতি দু-মাসে হংকং, সিঙ্গাপুর। ঢাকায় তোমাকে পাওয়াই যায় না। রিনার সময় কী করে কাটে, ভেবে দেখেছ কখনো?’

    ‘কেন, কেন? রিনার আবার কী প্রবলেম হল। তাকে সুখে রাখার জন্যই তো আমি এমন উদয়াস্ত খেটে যাচ্ছি মুখে রক্ত তুলে।

    ‘তাকে সুখে রাখার জন্য? না, নিজের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমপায়ার পাকাপোক্ত রাখার জন্য?’

    রাশেদ হেসে দুই হাত উলটে বলল, — এই দেখ টিনা, তুমি কিন্তু এঁড়েতর্ক করছ। ইন্ডস্ট্রিয়াল এমপায়ার পাকাপোক্ত রাখার চেষ্টা কার জন্য? সাব্রিনার জন্যই তো!’ টিনা কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইলে রাশেদ হাত নাড়িয়ে তাকে থামিয়ে বলেই চলল—’আহাহা, আমি বলছি না-যে শুধু সাব্রিনার জন্যই। ওসব কথা আজকের দিনে ন্যাকামোর মতো শোনায়, থার্টিজ-এর সিনেমার রোমান্টিক ডায়ালগের মতো মনে হয়—হাসি পায়। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি সাব্রিনাকে ঘিরে আমার যে সংসার—খুশ, জাম, জেরী, মা সবাইকে নিয়ে সাব্রিনার যেটা এমপায়ার –সেইটাকে ঠিকমতো রাখার জন্যই তো আমার এই উদয়াস্ত পরিশ্রম। ঠিক কিনা?’

    টিনা গম্ভীর মুখে বলল, ‘ঠিক বটেও আর ঠিক নয়ও। তোমার উদয়াস্ত অনুপস্থিতি সাব্রিনার সাম্রাজ্যের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে।’

    রাশেদ চমকে গেল, ‘এ আবার কী ধরনের কথা। উদয়াস্ত অনুপস্থিতি কোথায় আবার দেখলে? ব্যবসার কাজে এদিক-ওদিক দৌড়োদৌড়ি করতেই হবে। তবু তার ফাঁকে-ফাঁকেই তো আমি যথাসাধ্য সাব্রিনাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করি। গতবছর জুলাই মাসে একমাস ইয়োরোপ ঘুরলাম একসঙ্গে। তারপর আবার এই তো কিছুদিন আগেই ওকে নিয়ে হিজবুল বাহারে করে বেড়িয়ে এলাম সিঙ্গাপুর থেকে।’

    টিনা হাসি চেপে বলল, ‘খুব ভালো কাজ করেছ। এই ধরনের ভালো কাজ এখন থেকে আরেকটু বেশি-বেশি করতে থাকবে। আর যে-সময়টা সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য তোমাকে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে হবে, সেই সময়টা সাব্রিনাকে একা-একা বোর হবার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমার হোমে কাজ করতে দিতে হবে। আর শোনো—ঐ যে ফরেন মহিলাদের পরিচালিত স্যাটারডে ক্লাবের সোসাল ওয়ার্ক, ওগুলো কোনো কাজের কাজ নয়। ওতে সময়টা কোনোমতে কাটে, কিন্তু মন ভরে না। জব—তা সে পেইড হোক, চাই ভলান্টারিই হোক; মীনিংফুল না হলে—

    রাশেদ দুই হাত তুলে উচ্চকণ্ঠে বলে উঠল, ‘অনেক আগেই তো সারেন্ডার করেছি, এখনো কোপাচ্ছ কেন? তোমার এই কাঁচকি মাছের চচ্চড়িটা আর নেই? থাকলে আনো না আরেকটু। আহ-হ, কতদিন পরে আবার তোমার বাসায় এসব খেতে বসেছি। আগে কীরকম রেগুলার এসবের সেসন হত, তাই না?’

    টিনা চচ্চড়ি আনার জন্য উঠে যাচ্ছিল, রাশেদ আবার বলল, ‘ঐসঙ্গে আরেকটা ভে-রী কো-ল্ড বিয়ার।

    টিনা হেসে ফেলল। এতক্ষণ সাব্রিনা ও হাসান একটাও কথা বলেনি, চুপচাপ সজনের ডাঁটা কিংবা অন্য কিছু চিবোচ্ছিল, তারাও হাসল। হাসান বলল, ‘আমার জন্যও একটা ভে-রী কোল্ড! রিনা, তুমি নেবে?’

    সাব্রিনা বলল, ‘না, আমার এইটাই এখনো শেষ হয়নি।’

    রাশেদ সাব্রিনার বিয়ার-মগের ভেতরে উঁকি মেরে বলল, ‘শেষ না হতে পারে কিন্তু গরম হয়ে গেছে ঠিকই। এটা ফেলে দাও, আরেকটা ঠাণ্ডা ক্যান থেকে ঢেলে নাও যতটুকু ইচ্ছে।

    টিনা তিনটে ঠাণ্ডা বিয়ার ক্যান নিয়ে এল, পেছনে বেয়ারার হাতে ট্রেতে কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি ও আরো দুতিনটে বাটি।

    ‘নাও, শুধু কাঁচকির চচ্চড়িই নয়, নারকেলের ভর্তা, কুঁচো চিংড়ির ভর্তাও এনেছি। খাও প্রাণ ভরে।’

    এই এক বিচিত্র শখ রাশেদের। সরষে-বাঁটা দিয়ে সজনের চচ্চড়ি, কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি, সাত-রকমের ভর্তা-ভাজি, ময়মনসিংহের বেজায় চিকন এবং বেজায় লাল বিরুই চালের ভাত—এসবের সঙ্গে বেজায় রকমে ঠাণ্ডা-করা বিয়ার—ছুটির দিনের দুপুরে মাঝেমধ্যে খাওয়া চাই। আর এসবের একমাত্র জায়গা হল টিনাদের বাড়ি। হাসানের মা এসব রান্না খুব ভালো রাঁধতেন। ছোটবেলায় বাবা মারা যাবার পর রাশেদ বছর দুয়েক তার এই ফুপুর বাসায় থেকেছিল। তখন থেকেই এসব রান্নার স্বাদ গ্রহণ করেছে সে এবং এর প্রতি একধরনের আসক্তিও লালন করেছে। বড় হয়েও সুযোগ পেলেই সে দৌড়েছে ফুপুর বাড়িতে। টিনার বিয়ের পর সে প্রায়ই টিনাকে খোঁচাত, ‘শিখে নে এইসব দুর্লভ রান্না ফুপুআম্মার কাছ থেকে। উনি মরে গেলে আর তো খেতে পাব না।’

    নিজের আগ্রহে যতটা নয়, তার চেয়ে রাশেদের কথায়, টিনা শাশুড়ির কাছ থেকে শিখেছে এসব রান্না। কারণ, রাশেদের কথা ফেলার মতো কেউ নেই ভাইবোনদের মধ্যে। সুন্দর, প্রাণোচ্ছল, বন্ধুবৎসল রাশেদ সকলের প্রিয়

    টিনাকে এসব শেখানোর ব্যাপারে রাশেদের একটা উদ্দেশ্য ছিল। হাসানের মা কখনই ময়মনসিংহে নিজেদের সংসার ছেড়ে ছেলের কাছে বরাবর এসে থাকেননি। অন্যদিকে রাশেদের মা রাশেদের সংসারেই থাকেন, ফলে যখন-তখন লাঞ্চ বা ডিনারের সঙ্গে বিয়ার বা অন্য কোনো ড্রিংক বাড়িতে খাবার কথা রাশেদ চিন্তাই করতে পারে না। বাড়িতে বড়বড় পার্টি যখন দেয়, তখন বাইরে থেকে ক্যাটারার আসে। বিদেশিদের ড্রিংক দিতেই হবে, সেটা রাশেদের ব্যবসার অন্তর্গত জিনিস। বিভিন্ন ধরনের বোতল ও ক্যান-ভর্তি বড়বড় ক্রেট আসে, উর্দিপরা বেয়ারারা সারা নিচতলাময় ঘুরে বেড়ায়, সেদিন সালেহা খাতুন নিচেই নামেন না। তবে পার্টিশেষে যে সুন্দর-সুন্দর আকারের বোতলগুলি খালি হয়, সেগুলির প্রতি তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণ। ওগুলি তাঁর জন্যই রেখে দেয়া হয়। পরদিন থেকে সাতদিন ধরে সালেহা খাতুন আয়াকে দিয়ে বোতলগুলি সাত-ধোয়ান দিয়ে, গায়ের লেবেল উঠিয়ে পাকসাফ করে আলমারিতে তোলেন।

    রাশেদ বাড়িটাতে নিজেদের সর্বদা ব্যবহারের জন্য একটা মাঝারি সাইজের বাড়তি ড্রয়িংরুম করিয়েছে। এটাকে সে ফ্যামিলিরুম বলে, আর্কিটেক্টের আভিধানিক ব্যাখ্যানুসারে। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই ডানহাতে এই রুম। এরও পরে রয়েছে আসল বিরাটাকার ড্রয়িং-ডাইনিংরুম, যেটাকে ইনটিরিয়ার ডেকরেটার দিয়ে বিশেষ সাজে সজ্জিত করিয়েছে। এই ড্রয়িং-ডাইনিংরুমের দক্ষিণদিকের পুরো দেয়াল জুড়ে দরজা এবং দরজার আকারের বড়বড় জানালা। দরজাতেও জানালার মতো মোটা-মোটা কাচের পাল্লা, যেন পুরো দেয়ালটাই কাচের তৈরী। তার ভেতর দিয়ে দেখা যায় ওপাশে চওড়া বারান্দা, বারান্দার পরেই তিনদিকে ফুলের বেড-ঘেরা সবুজ মখমলের মতো দুর্বাঘাসে ছাওয়া অপরূপ সুন্দর লন।

    ডাইনিংরুমের সুশোভন আলমারির কাচের পাল্লার ভেতরে ঝলক বিচ্ছুরিত করে নানা ধরনের নানা আকারের অগুনতি গ্লাস ও মগ। সালেহা খাতুন বুঝেছেন ওগুলোও ছেলের ব্যবসাপাতিরই অন্তর্গত। আরো বুঝেছেন—ছেলে এবং ছেলের বউ পার্টির দিনে দেশী-বিদেশি হোমরা-চোমরাদের খুশি করার জন্য ঐসব আজব চেহারার গ্লাসে করেই ফান্টা সেভেনআপ খায়। যে-ব্যবসার দরুন ছেলের এমন ঐশ্বর্যের সমারোহ, তার বাড়ন্তের জন্য মাঝেমঝে এমন হুলুস্থুল কাণ্ড সহ্য করা যায়; বলতে কী দোতলার বারান্দায় চিকের আড়ালে বসে নিচের লনে অগুতি মেয়ে-পুরুষের মেলা দেখতে তাঁর বরং একধরনের নেশাই লেগে যায়। সকলেরই হাতে নানা রঙের পানীয়-ভর্তি গ্লাস, এবং সকলেই একসঙ্গে কথা বলছে, উর্দি-পরা বেয়ারাগুলো ট্রেতে কীসব অদ্ভুত চেহারার নাশতা নিয়ে ওদের মধ্যে ধীরেধীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যত রাত বাড়তে থাকে মেয়ে-পুরুষগুলোর গলাও চড়তে থাকে। হাসতে হাসতে ডাইনে-বাঁয়ে হেলে পড়া, এখানে-ওখানে ঘাসের উপর বসে পড়া বাড়তে থাকে, —এ সবই সালেহা খাতুনের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার বাইরে, পছন্দের বাইরে বলে মনে করেন; তবুও যেন কী এক নেশার আকর্ষণে দুপুররাত পর্যন্ত ঢুলতে ঢুলতে নিচের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় বসে থাকেন। রাশেদকে দেখা যায় বিভিন্ন অতিথির সামনে ঘুরে ঘুরে কথা বলতে, গ্লাস বদলে দিতে, খাবার নিতে অনুরোধ করেত। সাব্রিনাকে খুব কম দেখতে পান সালেহা খাতুন, বেশ স্বস্তি পান তিনি। ছেলের পছন্দ এবং ইচ্ছামাফিক সাব্রিনাকেও স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে হয়, তাদের সাথে বসে দাঁড়িয়ে খানাও খেতে হয়, তবু লনের বেলেল্লাপনায় তাঁর পুত্রবধূ যে বিশেষ অংশ নেয় না, এটা ভেবে সালেহা খাতুন আনন্দ পান। সাব্রিনা জানে যে, শাশুড়ি ওপরের বারান্দায় সম্মোহিতের মতো বসে আছেন, তাই পারতপক্ষে সে ঘর আর বারান্দার সীমানা পেরিয়ে লনে নামতে চায় না।

    এইরকম পার্টিফার্টি রাশেদের বাড়িতে মাসে-দুমাসে একটা-দুটো হয়। বাদবাকি সময়টা জবরদস্ত মায়ের অনুক্ত শাসনে খাবার-টেবিলে সেসব জিনিস বের করার উপায় নেই। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, ঈদ-বকরিদে বিরিয়ানি, কোর্মা, ফিরনি, জর্দার পাহাড় স্তূপাকার করো, কোক-ফান্টার ঝরনা বইয়ে দাও; কিন্তু ও ছাড়া আর কিছু আনার সাহস আজ পর্যন্ত রাশেদের হয়নি। তাই তার ভরসা টিনা-হাসানের বাড়ি। নিঃসন্তান দম্পতির মুরুব্বিকন্টক-শূন্য সংসার; দুজনেই আধুনিক, সহনশীল এবং বন্ধুবৎসল। মাঝে-মাঝে দুপুরের গরমে বিয়ার খেতে বা রাতে জিন-হুইস্কি খেতে ইচ্ছে হলে রাশেদ সোজা চলে আসে টিনাদের বাসায়। ছুটির দিনে মাঝেমাঝে এইসব ডাঁটা -চচ্চড়ি-ভাজি-ভর্তা খেতে আসে, এরজন্য অবশ্য টিনাকে দুদিন আগে থেকে নোটিশ দিতে হয়। এইসব খাবারের সঙ্গে ভীষণ ঠাণ্ডা-করা বিয়ার যে অদ্ভুত ভালো চলে—এটা রাশেদেরই আবিষ্কার। এরজন্য বিয়ারও চব্বিশঘণ্টা আগে ফ্রিজে ঢোকাতে হবে—খাওয়ার দুইঘণ্টা আগে ফ্রিজারে। তবেই সেই বিয়ার প্রপারলি চীলড হবে এই ভাজি-চচ্চড়ি-ভর্তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য।

    তা আজকের খাওয়ার জন্য রাশেদকে নোটিশ দিতে হয়নি। বলতে গেলে গত দুবছর থেকে এইধরনের খাওয়াটা বন্ধই ছিল। প্রথমত দুবছর আগে টিনা হাসানের সঙ্গে ইয়োরোপ বেড়াতে গেল দুমাসের জন্য। ফিরে এসে আগের প্রাইভেট কলেজের চাকরিটা ছেড়ে ইউনিসেফের এই বেশি মাইনের চাকরিটা নিয়ে হঠাৎ করেই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সেইসময় বোহেমিয়ান ড্রামা সার্কলটাও গঠিত হয়। টিনা চাকরি, দুঃস্থ জননীনিবাস, ড্রামা ক্লাব এবং নিজের সংসার নিয়ে এতই ব্যস্ত যে, সে লক্ষ্যই করেনি রাশেদ এরমধ্যে একবারও তাকে এই স্পেশাল ইনডিজিনাস লাঞ্চের জন্য নোটিশ দেয়নি। ফলে সেও জানতে পারেনি যে, রাশেদ গত দুবছর ধরে চাটগাঁতে ইনডাস্ট্রি করার কাজে আত্মনিবেদিত হয়ে পড়েছে। সাব্রিনার সাথে কথা বলার দু-তিনদিন পর টিনা রাশেদকে ফোন করে সারাসরি আক্রমণ করে বসল, ‘কী ব্যাপার, আমি নাহয় নানা কাজে জড়িয়ে পড়ে সময় পাচ্ছি না, তাই বলে তুমিও একবার খোঁজ নেবে না?’

    রাশেদ একই সঙ্গে পুলকিত এবং বিস্মিত হয়ে জবাব দিল, ‘বারে! আমার কী দোষ! তুমি কি খোঁজ নিয়েছ, গত দুবছর থেকে কী হাঁড়ির হাল যাচ্ছে আমার? তবু তো এরই মধ্যে তোমার ড্রামা দেখার সময় ঠিকই করে নিয়েছিলাম।’

    ‘সে তো পাঁচমাস আগে, ডিসেম্বরে, গতবছরে। তার পরে তো নিউইয়ার্স ইভেও দেখা হয়েছে মশাই! আমি সেরকম খোঁজের কথা বলছি না। বলি, আমি ভাজি-চচ্চড়ি-ভর্তা রান্না সব ভুলে গেলাম কিনা, তার খোঁজ একবারও নিয়েছ কি?’

    রাশেদের আঁতকে ওঠাটা ফোনেও বেশ টের পাওয়া যায়, ‘ওরে বাব্বা! তাহলে তো সমূহ সর্বনাশ! না, না, ওটি ভুললে চলবে না। কালকেই ট্রায়াল হয়ে যাক।’

    ‘কালকে কী করে হবে? উইক-ড়ে যে। আমি তো এখন নতুন অফিসে চাকরি করি, শনিবারের আগে ছুটি নেই। তোমার মতো স্বাধীন ব্যবসা নাকি যে তিনঘণ্টা লাঞ্চ- আওয়ার করা যাবে? শনিবারে এসো।’

    রাশেদের গলায় অস্বস্তি টের পাওয়া গেল, ‘শনিবারে আমার যে একটু অসুবিধে আছে। ঢাকার বাইরে যেতে হবে।’

    তখন টিনা রাশেদের মুখ থেকে আরেকবার শোনে রাশেদকে কী অমানুষিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে নতুন একটা ইনডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য। প্রতি উইক-এন্ডে কী ভীষণ ধকল যাচ্ছে ঢাকা-চাটগাঁ করতে।

    টিনা কণ্ঠস্বরে বিস্ময় ঢেলে বলল, ‘বল কী, গত একশো দুই সপ্তাহ ধরে তুমি এই গোল্লার ছুট খেলছ? কী সাংঘাতিক কথা! এখনো তোমার বউ টিকে আছে তো??

    রাশেদের গলায় বিরক্তি প্রকাশ পেল, ‘আরে ঠাট্টা রাখ। ব্যবসার সঙ্গে বউ টেকার কী সম্পর্ক?’

    ‘তাহলে নিশ্চয় তাকে সঙ্গে নিয়ে যাও। নইলে দুবছর ধরে উইক-এন্ডে বউ ফেলে রাখলে সে বউ তো টেকার কথা নয়। যাকগে, বাদ দাও ওসব ( টিনাই রেহাই দিল রাশেদকে। কারণ সে তো জানে এরপর রাশেদ সত্যিই বিপদে পড়বে জবাব দিতে গিয়ে। সেও তা চায় না)। তাহলে কালকেই এসো। জীবনে একবার নাহয় লাঞ্চের পর অফিস কামাই করব। কাল আমরা কথা বলে ঠিক করে নেব কোন্ উইক-এন্ডে তোমার সঙ্গে চাটগাঁ যাব।’ (এটা টিনার প্রথম ঘা রাশেদকে। আগামীকালের কথাবার্তায় রাশেদ যেন সাব্রিনার ক্লিনিকে কাজ-করা নিয়ে বেশি ট্যাফোঁ করতে না পারে।) সাব্রিনাকেও কাল এনো সঙ্গে।’

    ‘তুমি কিন্তু আজই কয়েকটা বিয়ার ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখো।’

    ‘আগামীকাল ১১টার দিকে ওগুলো আবার ফ্রিজারে ঢোকাব। সব মনে আছে হে কাজিন।’ হেসে টিনা ফোন রেখে দিল।

    তা খেতে-খেতে আজ টিনার কাজ হাসিল হয়েছে। রাশেদ শেষপর্যন্ত সাব্রিনার ক্লিনিকে কাজ করার ব্যাপারে সায় দিয়েছে, যদিও হজ্জত কম করেনি। খুব খুশি হয়নি, বোঝাই যাচ্ছে তার মুখ দেখে। কিন্তু তাতে টিনার বিশেষ কিছু এসে যায় না। সেও বুঝেছে মত না-দিয়ে রাশেদের উপায় নেই। কেঁচো খোঁচালে সাপ বেরিয়ে পড়বে। অতএব নিজের ফ্রন্ট সামাল দেবার জন্য রাশেদকে টিনার কথায় রাজি হতেই হবে। আপাতত সাব্রিনার সম্ভাব্য নার্ভাস ব্রেকডাউন ঠেকানোই তার কাছে বেশি জরুরি। পরে চিন্তা করা যাবে কী করে রাশেদের অন্য নারীতে আসক্তি ছোটানো যায়।

    প্রায় পৌনে চারটে বাজে। ওরা এখন কফি নিয়ে এয়ারকন্ডিশন্ড বেডরুমে বসে। টিনা শুধোল, ‘তুমি আবার অফিসে যাবে নাকি রাশেদ?’

    রাশেদ হাই তুলে বলল, ‘না যেতে পারলেই খুশি হতাম। কিন্তু যেতেই হবে একবার। ( সাব্রিনার দিকে তাকিয়ে) চল, তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আমি অফিসে চলে যাই।’

    টিনা বলল, ‘ও খানিকক্ষণ থাকুক আমার কাছে। ক্লিনিক সম্বন্ধে কিছু ব্রিফিং সেরে ফেলি। ঐ সঙ্গে একটু গড়িয়েও নেব।’

    রাশেদ অপ্রসন্নমুখে তিক্ত হাসি ফুটিয়ে পরিহাসের সুরে বলল, ‘এইখানেই ওয়ার্কিং মেল আর ফিমেলের মধ্যে তফাৎ। আমরা একেবারেই হার্ডকোর ওয়ার্কার; যতকিছু হোক-না কেন, কাজ থেকে মুক্তি নেই। আর তোমরা হলে ফুরফুরে ওয়ার্কার, ইচ্ছে হলেই কাজ ফেলে বিছানায় গড়িয়ে নিতে পার।’

    টিনা মুখ টিপে হেসে বলল, ‘বেশ তো, ব্যবস্থাটা পালটে নাও না। আমরা হার্ডকোর ওয়ার্কার হয়ে যাই, তোমাদের খাইয়ে-পরিয়ে সুখে রাখার দায়িত্বের শেকলে নিজেদের বেঁধে নিই। আর তোমরা শুয়ে-গড়িয়ে সময় কাটাও!’

    রাশেদ চেয়ার ঠেলে উঠতে উঠতে সাব্রিনার দিকে চেয়ে বিরস গলায় বলল, ‘আমার শরীরটা তেমন ভালো লাগছে না, তবু অফিস যেতেই হবে। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের বেশি থাকবে না। তুমি তার মধ্যে বাড়ি ফিরো।’

    সাব্রিনা বলল, ‘ফিরব, যদি টিনার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে না পড়ি।

    রাশেদ দরজার দিকে যেতে-যেতে তিক্ত গলায় বলল, ‘এইতো আরম্ভ হয়ে গেছে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিকাশ সাধন।’ দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেল। হাতের ধাক্কায় দরজার পাল্লা খটাস্ করে এসে আবার বন্ধ হয়ে গেল।

    .

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইহুদি প্রশ্নে – কার্ল মার্কস
    Next Article বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    Related Articles

    জাহানারা ইমাম

    একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    August 13, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    সাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }