Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নরিস সাহেবের বাংলো

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প22 Mins Read0

    নরিস সাহেবের বাংলো

    তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুড়োর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়ত গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুড়োর জীবনেরই ঘটনা, কিন্তু সে ঘটনা গল্পের চেয়েও মজাদার। একজন লোকের এতরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে সেটা আমার ধারণা ছিল না।

    খুড়ো বললেন, ‘আমি যে সব সময় চাকরির ধান্দায় দেশ বিদেশে ঘুরছি তা কিন্তু নয়; মাঝে মাঝে রোজগারের উপর বিতৃষ্ণা এসে যায়, তখন ঘুরি কেবল ভ্রমণের নেশায়। নতুন জায়গা দেখার শখ আমার ছেলেবেলা থেকে। সেই ভাবেই একবার গিয়ে পড়েছিলাম ছোট নাগপুর। ও অঞ্চলটা তখনো দেখা হয়নি। আর ওখানেই ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। সেই গল্পই আজ তোদের বলব।’

    খুড়ো বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে তার গল্প শুরু করলেন।

    আমি তখন হাজারিবাগে। একটা হোটেলে আছি, নাম ডি লাক্স হোটেল, কিন্তু ব্যবস্থা চলনসইয়ের বেশি নয়। তাতে কিছু এসে যায় না, কারণ ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যটাকে আমি কখনো খুব উঁচুতে স্থান দিই না। নানান অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাই আমার অভ্যেস। হাজারিবাগে কাউকে চিনি না, সেটা আরো ভালো লাগছে, কারণ মাঝে মাঝে একটা অবস্থা আসে যখন প্যাঁচাল পাড়তে একদম ভালো লাগে না। চুপচাপ একা একা বিছানায় শুয়ে কল্পনার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। তবে এটাও ঠিক যে ভারতবর্ষে এমন জায়গা নেই যেখানে বাঙালি নেই। বিশেষ করে হাজারিবাগে ত বিস্তর বাঙালি।। তাদের মধ্যে এক-আধজনের সঙ্গে যে আলাপ হয়ে যাবে তাতে আর আশ্চর্য কী?

    যাঁর সঙ্গে প্রথমে আলাপ হল তাঁর নাম অর্ধেন্দু বসু। ইনি ইতিহাসের লোক, পাবনার একটা জমিদার বংশ—হালদার বংশ—নিয়ে পড়াশুনা করছেন, ইচ্ছে আছে বই লেখার। এই বংশে নাকি অনেক বাঘা বাঘা চরিত্রের পরিচয় মেলে। এঁদেরই এক আদিপুরুষ, নাম রামগতি হালদার, রামমোহনের নাকি খুব কাছের লোক ছিলেন। তাছাড়া এঁর পরেও বেশ কিছু সমাজ সংস্কারক নির্ভীক চরিত্রের পরিচয় নাকি এবংশে মেলে। আমি ভদ্রলোককে জিগ্যেস করলাম, ‘এই পরিবার সম্বন্ধে লিখতে আপনার হাজারিবাগ আসতে হল কেন?’ ভদ্রলোক বললেন, ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই পরিবারের একজন নাকি হাজারিবাগে একটা বাড়ি করেন। সে ছুটি কাটানোর জন্য না অন্য কোনো কারণে সেটা এখনও বুঝতে পারিনি। এই বিশেষ ব্যক্তিটির নাম ছিল মহেশ হালদার। এই মহেশ হালদার অবধি আমি হালদার বংশের ইতিহাস পাচ্ছি, যদিও এঁর সম্বন্ধেও অনেক কিছু জানতে বাকি আছে। এঁর পরে সব যেন কেমন ব্ল্যাঙ্ক।’ আমি জিগ্যেস করলাম, ‘এঁর হাজারিবাগের বাড়িটা আপনি দেখেছেন?’ অর্ধেন্দুবাবু বললেন, ‘দেখেছি, কিন্তু সেখানেও এক রহস্য। এই বাড়িটাকে এখানকার সকলেই উল্লেখ করে নরিস সাহেবের বাংলো বলে! অথচ মহেশ হালদার যে বিয়ে করেছিলেন সে খবর আমি পেয়েছি, কিন্তু মহেশ হালদারের পরে বংশটার যে কি হল সে খবর পাইনি। সম্ভবত মহেশবাবু নরিস সাহেবকে বাংলোটা বিক্রি করে দেন কোনো কারণে।’

    ‘কলকাতায় তাঁদের আর কোনো বংশধর নেই?’ আমি জিগ্যেস করলাম।

    অর্ধেন্দুবাবু বললেন, ‘মহেশ হালদার ছিলেন তাঁর বাবা যোগেশ হালদারের একমাত্র সন্তান। তাই তাঁর যদি আর ছেলেপিলে না থাকে তাহলে হয়ত হালদার বংশ মহেশেই শেষ হয়ে গেছে। প্রশাখা আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। আমি শুধু শাখাতেই ইন্টারেস্টেড।’

    ‘এই বংশ সম্বন্ধে খবর দিতে পারে এমন কোনো লোকের সন্ধান পাননি হাজারিবাগে?’

    ‘এখানে এক ভদ্রলোক আছেন, আজন্ম এখানেই বাস, তাঁর বয়স নব্বই, নাম কালিকিঙ্কর বাঁড়ুজ্যে। একবার ভাবছিলাম তাঁর কাছে গিয়ে জিগ্যেস করব।’

    ‘তা চলুন না আজই বিকেলে যাওয়া যাক।’

    কালিকিঙ্করবাবুকে সকলেই চেনে, তাই তাঁর বাড়ি বার করতে অসুবিধা হল না। গিয়ে শুনি ভদ্রলোক বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছেন। বুঝে দেখ কিরকম স্বাস্থ্য! নব্বই বছরেও বিকেলে হাঁটা চাই।

    আমরা একটু অপেক্ষা করতেই ভদ্রলোক এসে পড়লেন। আমরা নিজেদের পরিচয় দিলাম। ভদ্রলোক বললেন, ‘আমার কাছে ত বড় একটা কেউ আসে না। আপনাদের কোনো প্রয়োজন আছে বুঝি?’

    ‘আপনি ঠিকই ধরেছেন,’ বললেন অর্ধেন্দুবাবু। ‘আমি পূর্ববঙ্গের এক জমিদার বংশ নিয়ে রিসার্চ করছি। হালদার বংশ। তাঁদের একজন ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি হাজারিবাগে একটা একতলা বাংলো বাড়ি করেছিলেন। সেই বাড়িকে এখানকার লোকেরা নরিস সাহেবের বাংলো বলে।’

    ‘ও—তাই বলুন। ওসব হালদার-ফালদার জানি না; তাঁরা এখানে এসে থাকতে পারেন। আমার যখন সাত কি আট বছর বয়স তখন আমি নরিস সাহেবকে দেখেছি ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে যেতে। আমায় দেখে মাথা হেঁট করে গুড আফটারনুন বলতেন। তবে তাঁর শেষটা জানেন ত?’

    আমরা দুজনেই মাথা নেড়ে বললাম জানি না।

    ‘ভদ্রলোক আত্মহত্যা করেন,’ বললেন কালিকিঙ্করবাবু। ‘কারণ জানা যায়নি। লোকে বলে বাড়িটা নাকি হানাবাড়ি। সাহেবের ভূত দেখা যায় এখনো। আমি অবশ্য দেখিনি। খুব জবরদস্ত সাহেব ছিলেন নরিস সাহেব।’

    ‘তাঁর বাড়িটা কোথায় গেলে দেখা যায় বলতে পারেন?’

    ‘বাড়ি ত এই কাছেই।’

    কালিকিঙ্করবাবু আমাদের রাস্তা বাতলে দিলেন। আমরা দুজনে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়লাম।

    রাস্তায় বেরিয়ে এসে অর্ধেন্দুবাবুকে বললাম, ‘আপনি এতদিন সে বাড়ি দেখেননি?’

    ভদ্রলোক বললেন, ‘দেখেছি বৈ কি, কিন্তু লোকে ঠিক বলছে কিনা একবার যাচাই করে নিলাম। ইনি যা বলবেন সে ত আর ভুল বলবেন না।’

    ‘আমারও যে বাড়িটা দেখার জন্য কৌতূহল হচ্ছে।’

    ‘আসুন না, দেখিয়ে দিচ্ছি।’

    মাথায় টালি বসানো ঢালু ছাতাওয়ালা বাড়ি, বাংলোই বলা চলে, যেমন হাজারিবাগে আরো দেখা যায়। টালির অধিকাংশই অবশ্য খসে গিয়ে ছাত ফাঁক হয়ে গেছে। চারিদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা চার-পাঁচ বিঘে জমির উপর জীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলোটা। কেউ থাকে না সেখানে, শেষ কবে ছিল তাও কেউ বলতে পারে না।

    আমি অর্ধেন্দুবাবুকে বললাম, ‘আপনার হালদার বংশের কথা জানি না মশাই, কিন্তু এই নরিস সাহেবকে নিয়ে আমার বিলক্ষণ কৌতূহল হচ্ছে। আর সত্যি বলতে কি, এই সাহেবের প্রেতাত্মার সঙ্গে যদি যোগস্থাপন করা যায়, তাহলে ত ইনি মহেশ হালদার সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিতে পারেন। তাই নয় কি?’

    ‘তা অবিশ্যি ঠিক।’

    কথাটা খুব জোরের সঙ্গে বললেন না অর্ধেন্দুবাবু। বুঝলাম তিনি সাহেবের প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগস্থাপনের ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহ বোধ করছেন না। আমি না হয় ভূতকে তোয়াক্কা করি না, কিন্তু সবাই ত সেরকম নয়।

    দুটো দিন পেরিয়ে গেল।

    তিনদিনের দিন আমি অর্ধেন্দুবাবুকে বললাম, ‘এইভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থেকে আপনার কী লাভ আছে? আসুন একটা কিছু করা যাক। না হয় বাংলোটায় একটা রাত কাটিয়ে আসা যাক।’

    অর্ধেন্দুবাবু একটু চুপ থেকে বললেন, ‘এখানে বাঙালিদের একটা আড্ডা আছে শশী ডাক্তারের বাড়ি। আমি কাল সেখানে গিয়েছিলাম। তারা বলল নরিস সাহেবের বাংলোকে হানাবাড়ি বলা হলেও এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো ভূতের সাক্ষাত পায়নি। তবে ওই আড্ডাতেই উৎপলবাবু বলে এক নিরীহ গোছের ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি নাকি খুব ভালো মিডিয়ম। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে দিয়ে ভূতের আবির্ভাব ঘটেছে নাকি অনেকবার। ভদ্রলোক একটা বিশেষ অবস্থায় এলে তাঁর গলা থেকে নাকি ভূতের গলায় কথা বেরোয়, আর তখন নাকি ভূতের সঙ্গে কথাবার্তা বলা চলে। অন্ধকার ঘরে তেপায়া টেবিলের উপর হাত রেখে নাকি ব্যাপারটা করতে হয়। কিঞ্চিৎ সময়সাপেক্ষ।’

    আমি বললাম, ‘দেখুন কিরকম যোগাযোগ! এই মিডিয়ম পাওয়া কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। আপনি এই উৎপলবাবুকে বলুন আমরা কালই রাত্রে বসছি। তেপায়া টেবিল জোগাড় করতে পারবেন?’

    ‘আমার হোটেলের ঘরেই একটা আছে।’

    ‘তাহলে ত কথাই নেই। আসুন লেগে পড়া যাক।’

    অর্ধেন্দুবাবু শশী ডাক্তারের আড্ডায় নিয়ে গিয়ে আমার সঙ্গে উৎপলবাবুর আলাপ করিয়ে দিলেন। সকলের সামনে আর ভূতের প্রসঙ্গটা তুললাম না, কারণ প্ল্যানচেটে আমাদের তিনজনের বেশি কেউ থাকে এটা আমি চাইছিলাম না। আড্ডার পরে বাইরে বেরিয়ে এসে উৎপলবাবুকে প্রস্তাবটা দেওয়া হল। ভদ্রলোক এক কথায় রাজি। বললেন নরিস সাহেবের বাংলোয় প্ল্যানচেট করার ওঁর অনেকদিনের শখ, কিন্তু এতদিন কাউকে সঙ্গী পাননি বলে হয়ে ওঠেনি। ‘তাহলে পরশু বুধবার বসা যাক,’ বললেন উৎপলবাবু। ‘পরশু অমাবস্যা, সেই কারণে কাজটা সহজে হবার সম্ভাবনা।’ কী কী জিনিস লাগবে জিগ্যেস করাতে ভদ্রলোক বললেন তিনটে চেয়ার, একটা তেপায়া টেবিল, আর একটা মোমবাতি। মোমবাতিটা লাগবে কাজ শেষ হয়ে যাবার পর।

    আমি আর অর্ধেন্দুবাবু দিন থাকতে দুটো সাইকেল রিকসায় করে চেয়ার টেবিল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম বাংলোতে। সেই ফাঁকে বাড়িটা একটু ঘুরে দেখে নিলাম। বহুকাল কেউ থাকে না, তাই ঘরগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। আমরা স্থানীয় লোক লাগিয়ে একটা ঘর বেছে নিয়ে সেটাকে ঝাড়পোঁছ করিয়ে একটু ভদ্রস্থ করে নিলাম। এটাই বোধহয় ছিল বৈঠকখানা। বাড়িটা পাহারা দেবার জন্যও একটি লোককে জোগাড় করা হয়েছিল, সে প্রথমে সাহেবের ভূত সাহেবের ভূত করে একটু আপত্তি তুলেছিল, তারপর হাতে একটা দশ টাকার নোট গুঁজে দিতেই চুপ মেরে গেল।

    রাত দশটার একটু আগেই আমরা তিনজন বাড়িটার সামনে জমায়েত হলাম। কথা হল ভূত এলে প্রশ্ন করবেন অর্ধেন্দুবাবু, আর উত্তর ত উৎপলবাবুর মুখ দিয়ে সাহেবের ভাষাতেই বেরোবে— অবিশ্যি সব যদি ঠিকমতো হয়। অর্ধেন্দুবাবু ইংরেজিটা মোটামুটি ভালোই বলেন। সে দিক দিয়ে সুবিধে আছে। উৎপলবাবুকে দেখলাম সঙ্গে করে একটা কৌটো এনেছেন। জিগ্যেস করতে বললেন, ‘ওতে কর্পূর আছে। প্ল্যানচেটের ব্যাপারে খুব সাহায্য করে।’

    মোমবাতির আলোয় সব তোড়জোড় হল। তিন জনে তেপায়া টেবিলের তিন দিকে বসে টেবিলের উপর হাত উপুড় করে রাখলাম। তারপর বাতি নিবিয়ে চোখ বন্ধ করে সাহেবের চিন্তায় মগ্ন হলাম।

    গাছপালায় ঘেরা বাংলো, বাইরে বাতাস দিচ্ছে তার ফলে মাঝে মাঝে পাতার শোঁ শোঁ শব্দ পাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে বোধহয় বাতাস থেমে যাওয়ায় আর কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। অমাবস্যার রাত, তার উপরে আকাশে মেঘ; রাস্তায় আলোও নেই যে জানালা দিয়ে ঢুকবে। তাই ঘরের ভিতর দুর্ভেদ্য অন্ধকার।

    কতক্ষণ এইভাবে ছিলাম জানি না। হঠাৎ অনুভব করলাম টেবিলটা মৃদু মৃদু নড়ছে। সেটা একটু বেড়ে যাওয়ায় খট্‌খট্‌ শব্দ শুরু হল। আমি জানি এ ধরনের প্ল্যানচেটে সেটা ভূত নামার লক্ষণ।

    আমরা টেবিলের উপর থেকে হাত সরাচ্ছি না, কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি হাত আর অনড় নেই, টেবিলের সঙ্গে সঙ্গে উঠছে নামছে।

    ‘আঁ—া-া-া—’

    শব্দটা উৎপলবাবুর গলা থেকে বেরোল। আগে থেকেই অর্ধেন্দুবাবুকে বলা ছিল। উনি কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলেন,—

    ‘ইজ এনিওয়ান হিয়ার?’

    উৎপলবাবুর মুখ থেকে সম্পূর্ণ সাহেবী গলায় উত্তর এল—

    ‘ইয়েস।’

    ‘হু ইজ ইট?’

    ‘মাই নেম ইজ নরিস।’

    বাকি কথাও ইংরেজিতেই হল, এবং নরিস সাহেবের ইংরেজি যাকে বলে বেশ চোস্ত ইংরেজি। আমি কথোপকথনটা মোটামুটি বাংলাতেই বলছি।

    অর্ধেন্দুবাবু বললেন, ‘এই বাংলো কি তোমার বাসস্থান ছিল?’

    ‘ইয়েস।’

    ‘তুমি কি করতে হাজারিবাগে?’

    ‘আমার অভ্রের খনি ছিল।’

    ‘শহরে আরো সাহেব ছিল?’

    ‘ইয়েস। অভ্রের খনির মালিকদের একটা ক্লাব ছিল, ভিক্টোরিয়া ক্লাব! আমি সে ক্লাবের সভ্য ছিলাম।’

    ‘এই বাড়িতে তোমার আগে হালদার বলে একজন ছিলেন?’

    ‘হ্যাঁ, ছিলেন!’

    ‘তিনি কি এই বাড়ি তোমাকে দিয়ে যান?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘তারপর তিনি কোথায় যান?’

    ‘কলকাতায়। সেখানেই মৃত্যু হয়।’

    ‘তুমি কি আত্মহত্যা করেছিলে?’

    উত্তর আসতে একটু সময় লাগল।

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘কী ভাবে?’

    ‘রিভলভার দিয়ে মাথায় গুলি মেরে।’

    ‘কেন?’

    ‘আমার আর বাঁচার ইচ্ছে ছিল না।’

    ‘বুঝেছি! কিন্তু এমন মনের ভাব হল কেন?’

    ‘আজ এই পর্যন্তই থাক। বড় ক্লান্ত লাগছে।’

    বুঝতে পারলাম উৎপলবাবুরই আসলে ক্লান্ত লাগছে। আমি লাইটার দিয়ে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে দিলাম। উৎপলবাবুর মাথা হেঁট হয়ে বুকের উপর নুইয়ে পড়েছে। কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিতে তাঁর জ্ঞান আবার ফিরে এল। মাথাটা ঝাড়া দিয়ে হঠাৎ নিজের গলায় প্রশ্ন করলেন—

    ‘কেমন হল?’

    ‘খুব ভালো,’ বললেন অর্ধেন্দুবাবু। ‘বোঝাই যাচ্ছে মহেশ হালদার এখানকার পাট উঠিয়ে দিয়ে বাংলোটা নরিসকে বিক্রি করে কলকাতা চলে যান। আর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ যতদূর মনে হয় হালদার বংশের ওখানেই শেষ।…অনেক ধন্যবাদ, উৎপলবাবু।’

    আমার কিন্তু মনে একটা খট্‌কা লেগেছে যেটা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। নরিস সাহেবের মৃত্যুর কারণটা ঠিক পরিষ্কার হল না। আমার এখন হালদারের চেয়ে নরিসের উপরই ঝোঁকটা বেশি। অবিশ্যি উৎপলবাবুকে যা যা প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর তিনি ঠিক ভাবেই দিয়েছেন।

    আমি রাত্তিরে অনেকক্ষণ ধরে এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম, তারপর সকালে উঠে অর্ধেন্দুবাবুর হোটেলে গিয়ে সোজাসুজি বললাম যে আমি আরেকবার প্ল্যানচেট করতে চাই, এবং এবার প্রশ্নগুলি আমি করব। অর্ধেন্দুবাবু বললেন, ‘আমার আপত্তি নেই, তবে আপনি হালদার বংশ সম্বন্ধে আর কী নতুন তথ্য জানার আশা করছেন তা জানি না।’

    আমি বললাম, ‘সত্যি বলতে কি, আমি নরিস সম্বন্ধে আরো কিছু জানতে চাই। লোকটিকে বেশ ইন্টারেস্টিং বলে মনে হল।’

    উৎপলবাবু আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন।

    আমরা আবার দশটার সময় সাহেবের বাংলোতে জমায়েত হলাম। আমি উৎপলবাবুকে ঠাট্টা করে বললাম, ‘আজ ত অমাবস্যা নয়। প্ল্যানচেট ঠিকমতো হবে ত?’

    উৎপলবাবু বললেন, ‘মনে ত হয়। এ ভদ্রলোকের আত্মা বেশ সহজেই ধরা দেয়।’

    অর্ধেন্দুবাবু বললেন, ‘আমি সবই বরদাস্ত করতে পারি, কিন্তু আপনার গলা দিয়ে যখন অন্য লোকের স্বর বেরোয় তখন মেরুদণ্ডটা কেমন যেন শির শির করে।’

    আমরা সোয়া দশটার মধ্যে তৈরি হয়ে নিলাম। পনের মিনিটের মধ্যেই টেবিল নড়া আর উৎপলবাবুর গলা থেকে ‘আঁ’ শব্দ শুনে বুঝলাম যে প্রেতাত্মা হাজির।

    এবার আমি প্রশ্ন করলাম—‘ইজ এনিবডি হিয়ার?’

    নরিসের কণ্ঠস্বরে উত্তর এল—

    ‘ইয়েস।’

    ‘আর ইউ মিস্টার নরিস?’

    ‘ইয়েস।’

    ‘মিস্টার নরিস, তোমাকে দুবার বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইছি; কিন্তু কাল একটা প্রশ্নের ঠিক জবাব মেলেনি, তাই আবার তোমাকে ডাকলাম।’

    ‘কী প্রশ্ন?’

    ‘তোমার জীবনের উপর এতটা বিতৃষ্ণা এল কেন যে আত্মহত্যা করলে?’

    একটুক্ষণ কোনো কথা নেই। তারপর ইংরাজিতে উত্তর এল—

    ‘আমাকে প্রচণ্ডভাবে অপমান করা হয়েছিল।’

    ‘কে করেছিল অপমান?’

    ‘মেজর টম্‌সন।’

    ‘ঘটনাটা কোথায় হয়?’

    ‘আমাদের ক্লাবে।’

    ‘কিন্তু অপমানের কারণটা কী?’

    ‘তাহলে অনেক কথা বলতে হয়।’

    ‘বলুন। আমরা শুনতেই এসেছি।’

    ‘আমি এক বেয়ারাকে একদিন হিন্দিতে একটা কথা বলেছিলাম। সেটা মেজর টমসন শুনে ফেলেছিলেন।’

    ‘তাতে কী হল?’

    ‘তাতে তিনি বুঝে ফেলেছিলেন আমি সাহেব নই।’

    ‘আপনি সাহেব নন?’

    ‘না। তবে আমার চেহারায় সাহেবের সঙ্গে কোনো পার্থক্য ছিল না। আমার চুল ছিল কটা, চোখ নীল, আর গায়ের রঙ সাহেবের মতো ফরসা। আমি মিশনারি স্কুলে পাদ্রীদের কাছে ইংরেজি শিখেছিলাম। সেই ইংরেজি শুনে আমার চেহারা দেখে কারুর বোঝার সাধ্যি ছিল না যে আমি সাহেব নই। আমাদের ক্লাবে ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু আমি নরিস নাম নিয়ে ক্লাবে ঢুকতে পেরেছিলাম। এই ক্লাবে আমি সাড়ে তিন বছর মেম্বর ছিলাম। তারপর টম্‌সনের কাছে ধরা পড়ে গেলাম। সে সকলের সামনে আমাকে নেটিভ বলে ক্লাব থেকে লাথি মেরে বার করে দেয়।’

    ‘আসলে তুমি কী ছিলে?’

    ‘আমি ছিলাম বাঙালি। আমার নাম ছিল নরেশ। নরেশ থেকে নরিস।’

    আমি হঠাৎ যেন চোখের সামনে একটা আলো দেখতে পেলাম। বললাম,

    ‘তুমি কি মহেশ হালদারের কোনো আত্মীয় ছিলে?’

    ‘আমি ছিলাম মহেশ হালদারের একমাত্র ছেলে। বাবা তাঁর অভ্রের খনির ভার আমার উপর দিয়ে কলকাতায় চলে যান। সেইখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। আমি বিয়ে করিনি। আমি হালদার বংশের শেষ প্রতিনিধি।’

    বাকি কথাটা নরেশ বাংলাতেই বললেন।

    ‘আজ তাহলে আমি আসি, কারণ এ ধরনের কথোপকথন আমার পক্ষে বড় ক্লান্তিকর।’

    ‘আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।’

    ‘আমারও অনেক হাল্‌কা লাগছে। অ্যাদ্দিন পরে বাংলা বলে আরাম পাচ্ছি, আর সাহেব সেজে কী যে ভুল করেছিলাম সেটা নতুন করে বুঝতে পেরেছি।’

    মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলাম।

    এখন আর আমার মনে কোনো খটকা রইলো না, আর অর্ধেন্দুবাবুর হালদার বংশের ইতিহাসের শেষ পর্ব শেষ হল।

    তবে এটাও বুঝতে পারলাম যে উৎপলবাবুকে না পেলে মিঃ নরিসের রহস্য রহস্যই থেকে যেত।

    নরিস সাহেবের বাংলো

    তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুডোর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়তো গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুডোর জীবনেরই ঘটনা, কিন্তু সে ঘটনা গল্পের চেয়েও মজাদার। একজন লোকের এতরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে সেটা আমার ধারণা ছিল না।

    খুড়ো বললেন, আমি যে সবসময় চাকরির ধান্দায় দেশ-বিদেশে ঘুরছি তা কিন্তু নয়; মাঝে মাঝে রোজগারের উপর বিতৃষ্ণা এসে যায়, তখন ঘুরি কেবল ভ্রমণের নেশায়। নতুন জায়গা দেখার শখ আমার ছেলেবেলা থেকে। সেইভাবেই একবার গিয়ে পড়েছিলাম ছোটনাগপুর। ও অঞ্চলটা তখনও দেখা হয়নি। আর ওখানেই ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। সেই গল্পই আজ তোদের বলব।

    খুড়ো বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে তাঁর গল্প শুরু করলেন।

    .

    আমি তখন হাজারিবাগে। একটা হোটেলে আছি, নাম ডি লাক্স হোটেল, কিন্তু ব্যবস্থা চলনসইয়ের বেশি নয়। তাতে কিছু এসে যায় না, কারণ ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যটাকে আমি কখনও খুব উঁচুতে স্থান দিই না। নানান অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাই আমার অভ্যেস। হাজারিবাগে কাউকে চিনি না, সেটা আরও ভাল লাগছে, কারণ মাঝে মাঝে একটা অবস্থা আসে যখন প্যাঁচাল পাড়তে একদম ভাল লাগে না। চুপচাপ একা একা বিছানায় শুয়ে কল্পনার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। তবে এটাও ঠিক যে, ভারতবর্ষে এমন জায়গা নেই যেখানে বাঙালি নেই। বিশেষ করে হাজারিবাগে তো বিস্তর বাঙালি। তাদের মধ্যে এক-আধজনের সঙ্গে যে আলাপ হয়ে যাবে তাতে আর আশ্চর্য কী?

    যাঁর সঙ্গে প্রথমে আলাপ হল তাঁর নাম অর্ধেন্দু বসু। ইনি ইতিহাসের লোক, পাবনার একটা জমিদার বংশ–হালদার বংশ–নিয়ে পড়াশুনা করছেন, ইচ্ছে আছে বই লেখার। এই বংশে নাকি অনেক বাঘা বাঘা চরিত্রের পরিচয় মেলে। এঁদেরই এক আদিপুরুষ, নাম রামগতি হালদার, রামমোহনের নাকি খুব কাছের লোক ছিলেন। তা ছাড়া এর পরেও বেশ কিছু সমাজ সংস্কারক নির্ভীক চরিত্রের পরিচয় নাকি এ বংশে মেলে। আমি ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, এই পরিবার সম্বন্ধে লিখতে আপনার হাজারিবাগ আসতে হল কেন? ভদ্রলোক বললেন, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই পরিবারের একজন নাকি হাজারিবাগে একটা বাড়ি করেন। সে ছুটি কাটানোর জন্য, না অন্য কোনও কারণে, সেটা এখনও বুঝতে পারিনি। এই বিশেষ ব্যক্তিটির নাম ছিল মহেশ হালদার। এই মহেশ হালদার অবধি আমি হালদার বংশের ইতিহাস পাচ্ছি, যদিও এঁর সম্বন্ধেও অনেক কিছু জানতে বাকি আছে। এর পরে সব যেন কেমন ব্ল্যাঙ্ক। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এর হাজারিবাগের বাড়িটা আপনি দেখেছেন? অর্ধেন্দুবাবু বললেন, দেখেছি, কিন্তু সেখানেও এক রহস্য। এই বাড়িটাকে এখানকার সকলেই উল্লেখ করে নরিস সাহেবের বাংলো বলে! অথচ মহেশ হালদার যে বিয়ে করেছিলেন সে খবর আমি পেয়েছি, কিন্তু মহেশ হালদারের পরে বংশটার যে কী হল সে খবর পাইনি। সম্ভবত মহেশবাবু নরিস সাহেবকে বাংলোটা বিক্রি করে দেন কোনও কারণে।

    কলকাতায় তাঁদের আর কোনও বংশধর নেই? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    অর্ধেন্দুবাবু বললেন, মহেশ হালদার ছিলেন তাঁর বাবা যোগেশ হালদারের একমাত্র সন্তান। তাই তাঁর যদি আর ছেলেপিলে না থাকে তা হলে হয়তো হালদার বংশ মহেশেই শেষ হয়ে গেছে। প্রশাখা আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। আমি শুধু শাখাতেই ইন্টারেস্টেড।

    এই বংশ সম্বন্ধে খবর দিতে পারে এমন কোনও লোকের সন্ধান পাননি হাজারিবাগে?

    এখানে এক ভদ্রলোক আছেন, আজন্ম এখানেই বাস, তাঁর বয়স নব্বই, নাম কালীকিঙ্কর বাঁড়ুজ্যে। একবার ভাবছিলাম, তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করব।

    তা চলুন না আজই বিকেলে যাওয়া যাক।

    কালীকিঙ্করবাবুকে সকলেই চেনে, তাই তাঁর বাড়ি বার করতে অসুবিধা হল না। গিয়ে শুনি ভদ্রলোক বৈকালিক ভ্রমণেই বেরিয়েছেন। বুঝে দেখো কীরকম স্বাস্থ্য! নব্বই বছরেও বিকেলে হাঁটা চাই।

    আমরা একটু অপেক্ষা করতেই ভদ্রলোক এসে পড়লেন। আমরা নিজেদের পরিচয় দিলাম। ভদ্রলোক বললেন, আমার কাছে তো বড় একটা কেউ আসে না। আপনাদের কোনও প্রয়োজন আছে। বুঝি?

    আপনি ঠিকই ধরেছেন, বললেন অর্ধেন্দুবাবু। আমি পূর্ববঙ্গের এক জমিদার বংশ নিয়ে রিসার্চ করছি। হালদার বংশ। তাঁদের একজন ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি হাজারিবাগে একটা একতলা বাংলো বাড়ি করেছিলেন। সেই বাড়িকে এখানকার লোকেরা নরিস সাহেবের বাংলো বলে।

    ও–তাই বলুন। ওসব হালদার-ফালদার জানি না; তাঁরা এখানে এসে থাকতে পারেন। আমার যখন সাত কি আট বছর বয়স তখন আমি নরিস সাহেবকে দেখেছি ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে যেতে। আমায় দেখে মাথা হেঁট করে গুড আফটারনুন বলতেন। তবে তাঁর শেষটা জানেন তো?

    আমরা দুজনেই মাথা নেড়ে বললাম জানি না।

    ভদ্রলোক আত্মহত্যা করেন, বললেন কালীকিঙ্করবাবু। কারণ জানা যায়নি। লোকে বলে বাড়িটা নাকি হানাবাড়ি। সাহেবের ভূত দেখা যায় এখনও। আমি অবশ্য দেখিনি। খুব জবরদস্ত সাহেব ছিলেন নরিস সাহেব।

    তাঁর বাড়িটা কোথায় গেলে দেখা যায় বলতে পারেন?

    বাড়ি তো এই কাছেই।

    কালীকিঙ্করবাবু আমাদের রাস্তা বাতলে দিলেন। আমরা দুজনে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়লাম।

    রাস্তায় বেরিয়ে এসে অর্ধেন্দুবাবুকে বললাম, আপনি এতদিন সে বাড়ি দেখেননি?

    ভদ্রলোক বললেন, দেখেছি বইকী, কিন্তু লোকে ঠিক বলছে কিনা একবার যাচাই করে নিলাম। ইনি যা বলবেন সে তো আর ভুল বলবেন না।

    আমারও যে বাড়িটা দেখার জন্য কৌতূহল হচ্ছে।

    আসুন না, দেখিয়ে দিচ্ছি।

    মাথায় টালি বসানো ঢালু ছাতওয়ালা বাড়ি, বাংলোই বলা চলে, যেমন হাজারিবাগে আরও দেখা যায়। টালির অধিকাংশই অবশ্য খসে গিয়ে ছাত ফাঁক হয়ে গেছে। চারদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা চার পাঁচ বিঘে জমির উপর জীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলোটা। কেউ থাকে না সেখানে, শেষ কবে ছিল তাও কেউ বলতে পারে না।

    আমি অর্ধেন্দুবাবুকে বললাম, আপনার হালদার বংশের কথা জানি না মশাই, কিন্তু এই নরিস। সাহেবকে নিয়ে আমার বিলক্ষণ কৌতূহল হচ্ছে। আর সত্যি বলতে কি, এই সাহেবের প্রেতাত্মার সঙ্গে যদি যোগস্থাপন করা যায়, তা হলে তো ইনি মহেশ হালদার সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিতে পারেন। তাই নয় কি?

    তা অবিশ্যি ঠিক।

    কথাটা খুব জোরের সঙ্গে বললেন না অর্ধেন্দুবাবু। বুঝলাম তিনি সাহেবের প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগস্থাপনের ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহ বোধ করছেন না। আমি না হয় ভূতকে তোয়াক্কা করি না, কিন্তু সবাই তো সেরকম নয়।

    দুটো দিন পেরিয়ে গেল।

    তিনদিনের দিন আমি অর্ধেন্দুবাবুকে বললাম, এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে আপনার কী লাভ আছে? আসুন একটা কিছু করা যাক। না হয় বাংলোটায় একটা রাত কাটিয়ে আসা যাক।

    অর্ধেন্দুবাবু একটু চুপ থেকে বললেন, এখানে বাঙালিদের একটা আচ্ছা আছে শশী ডাক্তারের বাড়ি। আমি কাল সেখানে গিয়েছিলাম। তারা বলল, নরিস সাহেবের বাংলোকে হানাবাড়ি বলা হলেও এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও ভূতের সাক্ষাৎ পায়নি। তবে ওই আড্ডাতেই উৎপলবাবু বলে এক নিরীহ গোছের ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি নাকি খুব ভাল মিডিয়ম। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে দিয়ে ভূতের আবির্ভাব ঘটেছে নাকি অনেকবার। ভদ্রলোক একটা বিশেষ অবস্থায় এলে তাঁর গলা থেকে নাকি ভূতের গলায় কথা বেরোয়, আর তখন নাকি ভূতের সঙ্গে কথাবার্তা বলা চলে। অন্ধকার ঘরে তেপায়া টেবিলের উপর হাত রেখে নাকি ব্যাপারটা করতে হয়। কিঞ্চিৎ সময়সাপেক্ষ।

    আমি বললাম, দেখুন কীরকম যোগাযোগ। এই মিডিয়ম পাওয়া কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। আপনি এই উৎপলবাবুকে বলুন আমরা কালই রাত্রে বসছি। তেপায়া টেবিল জোগাড় করতে পারবেন?

    আমার হোটেলের ঘরেই একটা আছে।

    তা হলে তো কথাই নেই। আসুন লেগে পড়া যাক।

    অর্ধেন্দুবাবু শশী ডাক্তারের আড্ডায় নিয়ে গিয়ে আমার সঙ্গে উৎপলবাবুর আলাপ করিয়ে দিলেন। সকলের সামনে আর ভূতের প্রসঙ্গটা তুললাম না, কারণ প্ল্যানচেটে আমাদের তিনজনের বেশি কেউ থাকে এটা আমি চাইছিলাম না। আড্ডার পরে বাইরে বেরিয়ে এসে উৎপলবাবুকে প্রস্তাবটা দেওয়া হল। ভদ্রলোক এককথায় রাজি। বললেন, নরিস সাহেবের বাংলোয় প্ল্যানচেট করার ওঁর অনেকদিনের শখ, কিন্তু এতদিন কাউকে সঙ্গী পাননি বলে হয়ে ওঠেনি। তা হলে পরশু বুধবার বসা যাক, বললেন উৎপলবাবু। পরশু অমাবস্যা, সেই কারণে কাজটা সহজে হবার সম্ভাবনা। কী কী জিনিস লাগবে জিজ্ঞেস করাতে ভদ্রলোক বললেন, তিনটে চেয়ার, একটা তেপায়া টেবিল আর একটা মোমবাতি। মোমবাতিটা লাগবে কাজ শেষ হয়ে যাবার পর।

    আমি আর অর্ধেন্দুবাবু দিন থাকতে দুটো সাইকেল রিকশায় করে চেয়ার টেবিল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম বাংলোতে। সেই ফাঁকে বাড়িটা একটু ঘুরে দেখে নিলাম। বহুঁকাল কেউ থাকে না, তাই ঘরগুলোর। অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। আমরা স্থানীয় লোক লাগিয়ে একটা ঘর বেছে নিয়ে সেটাকে ঝাড়পোঁছ করিয়ে একটু ভদ্রস্থ করে নিলাম। এটাই বোধহয় ছিল বৈঠকখানা। বাড়িটা পাহারা দেবার জন্যও একটি লোককে জোগাড় করা হয়েছিল, সে প্রথমে সাহেবের ভূত সাহেবের ভূত করে একটু আপত্তি তুলেছিল, তারপর হাতে একটা দশ টাকার নোট গুঁজে দিতেই চুপ মেরে গেল।

    রাত দশটার একটু আগেই আমরা তিনজন বাড়িটার সামনে জমায়েত হলাম। কথা হল ভূত এলে প্রশ্ন করবেন অর্ধেন্দুবাবু, আর উত্তর তো উৎপলবাবুর মুখ দিয়ে সাহেবের ভাষাতেই বেরোবে–অবিশ্যি সব যদি ঠিকমতো হয়। অর্ধেন্দুবাবু ইংরেজিটা মোটামুটি ভালই বলেন। সেদিক দিয়ে সুবিধে আছে। উৎপলবাবুকে দেখলাম সঙ্গে করে একটা কৌটো এনেছেন। জিজ্ঞেস করতে বললেন, ওতে কপূর আছে। প্ল্যানচেটের ব্যাপারে খুব সাহায্য করে।

    মোমবাতির আলোয় সব তোড়জোড় হল। তিনজনে তেপায়া টেবিলের তিনদিকে বসে টেবিলের উপর হাত উপুড় করে রাখলাম। তারপর বাতি নিভিয়ে চোখ বন্ধ করে সাহেবের চিন্তায় মগ্ন হলাম।

    গাছপালায় ঘেরা বাংলো, বাইরে বাতাস দিচ্ছে তার ফলে মাঝে মাঝে পাতার শোঁ শোঁ শব্দ পাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে বোধহয় বাতাস থেমে যাওয়ায় আর কোনও শব্দ পাওয়া গেল না। অমাবস্যার রাত, তার উপরে আকাশে মেঘ; রাস্তায় আলোও নেই যে জানলা দিয়ে ঢুকবে। তাই ঘরের ভিতর দুর্ভেদ্য অন্ধকার।

    কতক্ষণ এইভাবে ছিলাম জানি না। হঠাৎ অনুভব করলাম টেবিলটা মৃদু মৃদু নড়ছে। সেটা একটু বেড়ে যাওয়ায় খটখট শব্দ শুরু হল। আমি জানি এ ধরনের প্ল্যানচেটে সেটা ভূত নামার লক্ষণ।

    আমরা টেবিলের উপর থেকে হাত সরাচ্ছি না, কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি হাত আর অনড় নেই, টেবিলের সঙ্গে সঙ্গে উঠছে নামছে।

    আঁ—-

    শব্দটা উৎপলবাবুর গলা থেকে বেরোলো। আগে থেকেই অর্ধেন্দুবাবুকে বলা ছিল। উনি কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলেন,

    ইজ এনিওয়ান হিয়ার?

    উৎপলবাবুর মুখ থেকে সম্পূর্ণ সাহেবি গলায় উত্তর এল—

    ইয়েস।

    হু ইজ ইট?

    মাই নেম ইজ নরিস।

    বাকি কথাও ইংরেজিতেই হল, এবং নরিস সাহেবের ইংরেজি যাকে বলে বেশ চোস্ত ইংরেজি। আমি কথোপকথনটা মোটামুটি বাংলাতেই বলছি।

    অর্ধেন্দুবাবু বললেন, এই বাংলো কি তোমার বাসস্থান ছিল?

    ইয়েস।

    তুমি কী করতে হাজারিবাগে?

    আমার অভ্রের খনি ছিল।

    শহরে আরও সাহেব ছিল?

    ইয়েস। অভ্রের খনির মালিকদের একটা ক্লাব ছিল, ভিক্টোরিয়া ক্লাব! আমি সে ক্লাবের সভ্য ছিলাম।

    এই বাড়িতে তোমার আগে হালদার বলে একজন ছিলেন?

    হ্যাঁ, ছিলেন!

    তিনি কি এই বাড়ি তোমাকে দিয়ে যান?

    হ্যাঁ।

    তারপর তিনি কোথায় যান?

    কলকাতায়। সেখানেই মৃত্যু হয়।

    তুমি কি আত্মহত্যা করেছিলে?

    উত্তর আসতে একটু সময় লাগল।

    হ্যাঁ।

    কীভাবে?

    রিভলভার দিয়ে মাথায় গুলি মেরে।

    কেন?

    আমার আর বাঁচার ইচ্ছে ছিল না।

    বুঝেছি! কিন্তু এমন মনের ভাব হল কেন?

    আজ এই পর্যন্তই থাক। বড় ক্লান্ত লাগছে।

    বুঝতে পারলাম উৎপলবাবুরই আসলে ক্লান্ত লাগছে। আমি লাইটার দিয়ে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে দিলাম। উৎপলবাবুর মাথা হেঁট হয়ে বুকের উপর নুইয়ে পড়েছে। কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিতে তাঁর স্তন আবার ফিরে এল। মাথাটা ঝাড়া দিয়ে হঠাৎ নিজের গলায় প্রশ্ন করলেন–

    কেমন হল?

    খুব ভাল, বললেন অর্ধেন্দুবাবু। বোঝাই যাচ্ছে মহেশ হালদার এখানকার পাট উঠিয়ে দিয়ে বাংলোটা নরিসকে বিক্রি করে কলকাতা চলে যান। আর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ যতদূর মনে হল হালদার বংশের ওখানেই শেষ।…অনেক ধন্যবাদ, উৎপলবাবু।

    আমার কিন্তু মনে একটা খটকা লেগেছে যেটা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। নরিস সাহেবের মৃত্যুর কারণটা ঠিক পরিষ্কার হল না। আমার এখন হালদারের চেয়ে নরিসের উপরই ঝোঁকটা বেশি। অবিশ্যি উৎপলবাবুকে যা যা প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর তিনি ঠিক ভাবেই দিয়েছেন।

    আমি রাত্তিরে অনেকক্ষণ ধরে এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম, তারপর সকালে উঠে অর্ধেন্দুবাবুর হোটেলে গিয়ে সোজাসুজি বললাম যে আমি আর একবার প্ল্যানচেট করতে চাই, এবং এবার প্রশ্নগুলি আমি করব। অর্ধেন্দুবাবু বললেন, আমার আপত্তি নেই, তবে আপনি হালদার বংশ সম্বন্ধে আর কী নতুন তথ্য জানার আশা করছেন তা জানি না।

    আমি বললাম, সত্যি বলতে কি, আমি নরিস সম্বন্ধে আরও কিছু জানতে চাই। লোকটিকে বেশ ইন্টারেস্টিং বলে মনে হল।

    উৎপলবাবু আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন।

    আমরা আবার দশটার সময় সাহেবের বাংলোতে জমায়েত হলাম। আমি উৎপলবাবুকে ঠাট্টা করে বললাম, আজ তো অমাবস্যা নয়। প্ল্যানচেট ঠিকমতো হবে তো?

    উৎপলবাবু বললেন, মনে তো হয়। এ ভদ্রলোকের আত্মা বেশ সহজেই ধরা দেয়।

    অর্ধেন্দুবাবু বললেন, আমি সবই বরদাস্ত করতে পারি, কিন্তু আপনার গলা দিয়ে যখন অন্য লোকের স্বর বেরোয় তখন মেরুদণ্ডটা কেমন যেন শিরশির করে।

    আমরা সোয়া দশটার মধ্যে তৈরি হয়ে নিলাম। পনেরো মিনিটের মধ্যেই টেবিল নড়া আর উৎপলবাবুর গলা থেকে আঁ শব্দ শুনে বুঝলাম যে প্রেতাত্মা হাজির।

    এবার আমি প্রশ্ন করলাম–ইজ এনিবডি হিয়ার?

    নরিসের কণ্ঠস্বরে উত্তর এল—

    ইয়েস।

    আর ইউ মিস্টার নরিস?

    ইয়েস।

    মিস্টার নরিস, তোমাকে দুবার বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইছি; কিন্তু কাল একটা প্রশ্নের ঠিক জবাব মেলেনি, তাই আবার তোমাকে ডাকলাম।

    কী প্রশ্ন?

    তোমার জীবনের উপর এতটা বিতৃষ্ণা এল কেন যে, আত্মহত্যা করলে?

    একটুক্ষণ কোনও কথা নেই। তারপর ইংরিজিতে উত্তর এল—

    আমাকে প্রচণ্ডভাবে অপমান করা হয়েছিল।

    কে করেছিল অপমান?

    মেজর টমসন।

    ঘটনাটা কোথায় হয়?

    আমাদের ক্লাবে।

    কিন্তু অপমানের কারণটা কী?

    তা হলে অনেক কথা বলতে হয়।

    বলুন। আমরা শুনতেই এসেছি।

    আমি এক বেয়ারাকে একদিন হিন্দিতে একটা কথা বলেছিলাম। সেটা মেজর টমসন শুনে ফেলেছিলেন।

    তাতে কী হল?

    তাতে তিনি বুঝে ফেলেছিলেন আমি সাহেব নই।

    আপনি সাহেব নন?

    না। তবে আমার চেহারায় সাহেবের সঙ্গে কোনও পার্থক্য ছিল না। আমার চুল ছিল কটা, চোখ নীল, আর গায়ের রঙ সাহেবের মতো ফরসা। আমি মিশনারি স্কুলে পাদ্রীদের কাছে ইংরিজি শিখেছিলাম। সেই ইংরিজি শুনে আমার চেহারা দেখে কারুর বোঝার সাধ্যি ছিল না যে আমি সাহেব নই। আমাদের ক্লাবে ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু আমি নরিস নাম নিয়ে ক্লাবে ঢুকতে পেরেছিলাম। এই ক্লাবে আমি সাড়ে তিন বছর মেম্বার ছিলাম। তারপর টমসনের কাছে ধরা পড়ে গেলাম। সে সকলের সামনে আমাকে নেটিভ বলে ক্লাব থেকে লাথি মেরে বার করে দেয়।

    আসলে তুমি কী ছিলে?

    আমি ছিলাম বাঙালি। আমার নাম ছিল নরেশ। নরেশ থেকে নরিস।

    আমি হঠাৎ যেন চোখের সামনে একটা আলো দেখতে পেলাম। বললাম,

    তুমি কি মহেশ হালদারের কোনও আত্মীয় ছিলে?

    আমি ছিলাম মহেশ হালদারের একমাত্র ছেলে। বাবা তাঁর অভ্রের খনির ভার আমার উপর দিয়ে কলকাতায় চলে যান। সেইখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। আমি বিয়ে করিনি। আমি হালদার বংশের শেষ প্রতিনিধি।

    বাকি কথাটা নরেশ বাংলাতেই বললেন।

    আজ তা হলে আমি আসি, কারণ এ ধরনের কথোপকথন আমার পক্ষে বড় ক্লান্তিকর।

    আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

    আমারও অনেক হালকা লাগছে। অ্যাদ্দিন পরে বাংলা বলে আরাম পাচ্ছি, আর সাহেব সেজে কী যে ভুল করেছিলাম সেটা নতুন করে বুঝতে পেরেছি।

    .

    মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলাম।

    এখন আর আমার মনে কোনও খটকা রইল না, আর অর্ধেন্দুবাবুর হালদার বংশের ইতিহাসের শেষপর্ব শেষ হল।

    তবে এটাও বুঝতে পারলাম যে, উৎপলবাবুকে না পেলে মিঃ নরিসের রহস্য রহস্যই থেকে যেত!

    সন্দেশ, বৈশাখ ১৩৯৪

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকাগতাড়ুয়া
    Next Article কুটুম-কাটাম

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }