Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নাটক সমগ্র – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প166 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বিদ্যাপতি (রেকর্ড – নাটিকা)

    প্রথমখণ্ড

    [মিথিলার কমলা নদীর তীরে গ্রাম। তাহারই উদ্যানবাটিকা দেবীদুর্গা মন্দির। কবি বিদ্যাপতি দুর্গাস্তব গাহিতেছেন।]

    (স্তব)
    নমস্তে শরণ্যে শিবে সানুকম্পে
    নমস্তে জগদ্‌ব্যাপিকা বিশ্বরূপে
    নমস্তে জগদ্‌বন্দ্য পদারবিন্দে
    নমস্তে জগত্তারিণি ত্রাহি দুর্গে॥

    অনুরাধা।
    ঠাকুর! ঠাকুর!
    বিদ্যাপতি।
    (মন্দির-অভ্যন্তর হইতে) কে?
    অনুরাধা।
    আমি অনুরাধা, একটু বাইরে বেরিয়ে আসবে?
    বিদ্যাপতি।
    (মন্দির দ্বার খুলিয়া বাহিরে আসিল। বিরক্তির সুরে) একটু অপেক্ষা করলেই পারতে, অনুরাধা। এত বড়ো ভক্তিমতী হয়ে তুমি মায়ের নামগানে বাধা দিলে?
    অনুরাধা।
    আমায় ক্ষমা করো, ঠাকুর। অত্যন্ত প্রয়োজনে আমি তোমার ধ্যান ভঙ্গ করেছি। আমার কৃষ্ণগোপালের জন্য আজ কোথাও ফুল পেলুম না। তোমার বাগানে অনেক ফুল, আমার গিরিধারীলালের জন্য কিছু ফুল নেব? আমার গোপালের এখনও পুজো হয়নি।
    বিদ্যাপতি।
    তুমি তো জান অনুরাধা, এ বাগানে ফুল ফোটে শুধু আমার মায়ের পায়ে অঞ্জলি হওয়ার জন্য। এ ফুল তো অন্য দেব-দেবীকে দিতে পারিনে।
    (মন্দির দ্বার বন্ধ করিয়া দিলেন, মন্দির অভ্যন্তরে স্তব পাঠের মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল)
    বিদ্যাপতি।
    (গুনগুন স্বরে)
    মা আমার মনে আমার বনে
    ফোটে যত কুসুমদল
    সে ফুল মাগে তোরই তরে
    পুজতে তোরই চরণতল॥
    নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ –
    অনুরাধা।
    (অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে) ঠাকুর! ঠাকুর! চলে গেলে। তুমি কি সত্যিই এত নিষ্ঠুর? তবে কি আমার ঠাকুরের পুজো হবে না আজ? আমার কৃষ্ণগোপাল, আমার প্রিয়তম! তুমি যদি সত্য হও, আর আমার প্রেম যদি সত্য হয়, তা হলে আজ এই বাগানের একটি ফুলও অন্য কারুর পূজায় লাগবে না। এই বাগানের সকল ফুল তোমার চরণে নিবেদন করে গেলাম।
    (প্রস্থান)
    দেবীদুর্গা।
    ক্ষান্ত হও বিদ্যাপতি! ও ফুল শ্রীকৃষ্ণ চরণে নিবেদিত। বিষ্ণু আরাধিকা যে ফুল শ্রীহরির চরণে নিবেদন করে গেছে, সে ফুল নেবার অধিকার আমার নেই।
    বিদ্যাপতি।
    মা! মা!
    দেবীদুর্গা।
    শোনো পুত্র, তুমি হয়তো জান না যে আমি পরমা বৈষ্ণবী, জগৎকে বিষ্ণুভক্তি দান করি আমিই।
    বিদ্যাপতি।
    তোর ইঙ্গিত বুঝেছি, মহামায়া। তবে তোরই ইচ্ছা পূর্ণ হোক ইচ্ছাময়ী; আমি আজ থেকে বিষ্ণুরই আরাধনা করব।
    [ বিদ্যাপতির গীত ]
    আমার শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে জপব আমি শ্যামের নাম॥
    মা হল মোর মন্ত্রগুরু, ঠাকুর হলেন রাধাশ্যাম॥
    বিজয়া।
    দাদা! দাদা! শিগগির এসো। মা আমাদের ছেড়ে স্বর্গে চলে গেলেন।
    বিদ্যাপতি।
    অ্যা! বিজয়া! বিজয়া! মা নেই! মা চলে গেলেন?

    দ্বিতীয় খণ্ড
    [মিথিলার রাজা শিবসিংহের উদ্যানবাটিকা]

    বিদ্যাপতি।
    মিথিলার রাজা শিবসিংহের জয় হোক।
    শিবসিংহ।
    স্বাগত বিদ্যাপতি। বন্ধু! তোমার মাতৃশোক ভুলবার যথেষ্ট অবসর না দিয়ে স্বার্থপরের মতো রাজধানীতে ডেকে এনেছি। আমার অপরাধ নিয়ো না সখা।
    বিদ্যাপতি।
    মহারাজ! আমি আপনার দাসানুদাস। শুধু আমি কেন, আমরা পুরুষানুক্রমে মিথিলার রাজ-অনুগ্রহ ও আশ্রয়ের স্নিগ্ধ শীতল ছায়ায় লালিত পালিত। আপনার আদেশ আমার সকল দুঃখের ঊর্ধ্বে, মহারাজ!
    রাজা।
    তুমি জান সখা, রাজসভার বাইরে তুমি ওভাবে কথা বললে আমি কত বেদনা পাই! আমরা সহপাঠী বন্ধু, তোমরা তো রাজ অনুগৃহীত নও, বন্ধু, মিথিলার রাজারাই তোমাদের কাছে ঋণী, অনুগৃহীত। তোমরা পুরুষানুক্রমে প্রধানমন্ত্রী হয়ে মিথিলার রাজা ও রাজ্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছ।

    রানি লছমী।
    তুমি তো শুধু রাজমন্ত্রীই নও, বিদ্যাপতি। তুমি রাজকবি। মিথিলা তথা ভারতের শ্রেষ্ঠ কবি।
    বিদ্যাপতি।
    মহারানি এখানে আছেন তা তো বল নাই, সখা?
    রাজা।
    রানি লছমী দেবীর অনুরোধেই তোমায় এত তাড়া দিয়ে এনেছি, বন্ধু! তোমার কণ্ঠের গান না শুনলে ওঁর সে দিনটাই নাকি হয় বৃথা। এত শ্রদ্ধা তোমার ওপর, তবু মাঝের ওই পর্দাটুকু আর উঠল না। এ নিরর্থক লজ্জার আবরণ আমাকেই লজ্জা দেয় বেশি। আর কথা নয় কবি, এবার আলাপন হোক শুধু গানে গানে।
    বিদ্যাপতি।
    মহারানির আদেশ শিরোধার্য। কোন গান গাইব দেবী?
    রানী।
    আমার সেই প্রিয় গান ‘জনম জনম হাম রূপ নেহারলুঁ’ ও গানটা আমার কাছে কখনও পুরানো হল না!

    [বিদ্যাপতির গীত]
    জনম অবধি হাম রূপ নেহারলুঁ নয়ন ন তিরপিত ভেল।
    লাখ লাখ যুগ হিয় হিয় রাখলুঁ, তবু হিয় জুড়ন ন গেল!
    দেখি সাধ না ফুরায় গো,
    রূপ যত দেখি তত কাঁদি সাধ না ফুরায় গো
    হিয়া কেন না জুড়ায় গো, হিয়ার উপরে গিয়া
    হিয়া তবু না জুড়ায় গো।

    তৃতীয় খণ্ড
    [অনুরাধার গীত]

    সখী লো!
    অব মথুরাপুর মাধব গেল।
    গোকুল মানিক কো হরি লেল,
    হরি হরিয়া নিল কে?

    লছমী।
    রাজা! কে যায় পথে অমন করুণ সুরে গান গেয়ে? ওকে এখানে ডাক না!
    বিদ্যাপতি।
    মহারানি। আমি ওকে জানি। আমি যেখানে যাই, ও আপনি এসে হয় আমার প্রতিবেশিনী। ওর নাম অনুরাধা, গিরিধারীলাল শ্রীকৃষ্ণ ওর জপমালা।
    লছমী।
    তাহলে তুমি ওকে ডেকে আনো না, কবি।
    বিদ্যাপতি।
    আমি যাচ্ছি দেবী কিন্তু জানি না ও আসে কি না?

    [অনুরাধার গীত]
    নয়নক নিন্দ গেও বয়ানক হাস,
    সুখ গেও পিয়া সঙ্গ দুখ হম পাশ,
    পাপ পরান মম আন নাহি জানত
    কানু কানু করি ঝুরে।

    লছমী।
    অনুরাধা! কী মিষ্টি নাম তোমার! তুমি আমার কাছে থাকবে? বিদ্যাপতি! তুমি যদি অনুমতি দাও তা হলে অনুরাধাকে আমার কাছে রেখে শ্যাম-নাম শুনি!
    বিদ্যাপতি।
    আমি তো ওর অভিভাবক নই, দেবী। ও আমার ছোটো বোন বিজয়ার বন্ধু।
    লছমী।
    ওর বাপ মা কোথায় থাকেন?
    বিদ্যাপতি।
    গতবার দেশে যখন মড়ক লাগে তখন ওর বাপ মা দু-জনেই মারা যান।
    লছমী।
    ওর বিয়ে হয়নি?
    বিদ্যাপতি।
    না!(হাসিয়া) ও বলে ও বিয়ে করবে না।
    অনুরাধা।
    বা রে, আমি বুঝি তোমার গলা ধরে বলতে গেছিলুম যে আমি বিয়ে করব না। না মহারানি, ঠাকুর জানেন না। আমার বিয়ে হয়েছে।
    বিদ্যাপতি।
    তোমার বিয়ে হয়েছে? কার সাথে?
    অনুরাধা।
    সে তুমি জান না, বিজয়া জানে।
    লছমী।
    আমিও হয়তো জানি! তুমি থাকবে ভাই আমার কাছে, আমার সখী হয়ে আমার বোন হয়ে? আর বদলে আমি তোমার বরকে ধরে এনে দেব।
    অনুরাধা।
    তা কি প্রাণ ধরে দিতে পারবে রানি? যে ঠাকুর আমার সে যে তোমারও।
    বিদ্যাপতি।
    মহারাজ! ওঁদের নিভৃত আলাপনের কমল বনে আমাদের উপস্থিতি মত্ত মাতঙ্গের মতোই ভীতিজনক। আমরা একটু অন্তরালে গেলেই বোধ হয় সুশোভন হত।
    রাজা।
    চলো বিদ্যাপতি, তোমার ইঙ্গিতই সমীচীন।
    লছমী।
    আর একটি গান গাও না ভাই।

    [অনুরাধার গীত]
    সজল নয়ন করি পিয়া পথ হেরি হেরি
    তিল এক হয় যুগ চারি
    (যেন শত যুগ মনে হয়
    তারে এক তিলে না হেরিলে শত যুগ মনে হয়)
    বিধি বড়ো দারুণ তাহে পুন ঐছন
    দরহি করলুঁ মুরারি।

    রাজা।
    কবি! এইখানে – এই খানে এসো। এই ঝোপের অন্তরাল থেকে ওঁদের দুই দেবীকে দিব্যচক্ষে দর্শন করা যাবে।
    বিদ্যাপতি।
    মহারাজ! যে নিজে থাকতে চায় গোপন তাকে জোর করে প্রকাশ করার বর্বরতা আমার নেই।
    রাজা।
    আঃ! কবি হয়ে তুমি কি করে এমন বেরসিক হলে বলো তো? ওই দেবীর দল যখন চিকের আড়াল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের দেখতে থাকেন, তাতে কোনো অপরাধ হয় না, আর আমরা একটু আড়াল আবডাল থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

    চতুর্থ খণ্ড
    লছমী।
    অনুরাধা! তোমার কবিকে দিয়ো আমার এই কণ্ঠহার।
    অনুরাধা।
    বেশ! তা হলে আজ আমি আসি, রানি!
    লছমী।
    রানি নয়, রানি নয়, অনুরাধা, লছমী। তুমি আমায় লছমী বলে ডেকো। রানির কারাগারে আমার ডাক-নামের হয়েছিল মৃত্যু, তোমার বরে সে নাম আবার বেঁচে উঠুক।
    অনুরাধা।
    লছমী! লছমী! তুমি সত্যই লছমী। রূপে লছমী, গুণে লছমী, গোলোকের অধীশ্বরী লক্ষ্মী।
    লছমী।
    আর তুমি? তুমি বুঝি ব্রজের দূতী?
    অনুরাধা।
    হ্যাঁগো তোমার দূতিয়ালিই করব, এই চাকরিই আমি নিলাম, সখী! তোমার কণ্ঠহার যথাস্থানে দেব তুমি নিশ্চিন্ত থেকো।

    [ অনুরাধার গীত ]
    ধন্য ধন্য ধন্য রমণী জনম তোর।
    সব জন কানু কানু করে ঝুরে
    সে কানু তোর ভাবে বিভোর।

    [উদ্যান-অন্তরালে বিদ্যাপতি ও শিবসিংহ]
    রাজা।
    বিদ্যাপতি! বিদ্যাপতি! দেখেছ? ওদের দু-জনের মুখে গোধূলির আলো পড়ে ঠিক বিয়ের কনের মতো সুন্দর দেখাচ্ছে! বিদ্যাপতি! বিদ্যাপতি! আরে? তুমি যে নির্বাক নিস্পন্দ হয়ে গেলে! বিদ্যাপতি!

    [বিদ্যাপতির গীত]
    অপরূপ পেখলুঁ বামা।
    কনকলতা অবলম্বনে উঠল
    হরিণীহীন হিমধামা॥
    (একী অপরূপ রূপ-ফাঁদ!)
    (স্বর্ণলতিকা ধরি উঠিয়াছে যেন ওই কলঙ্কহীন এক চাঁদ)
    নলিন নয়ান দুটি অঞ্জনে রঞ্জিত
    এ কী ভুরু ভঙ্গি-বিলাস
    চকিত চকোর জোড় বিধি যেন বাঁধিল
    দিয়া কালো কাজরপাশ!
    গুরু গিরিবর পয়োধর পরশিছে
    গ্রীবার গজমোতি হারা,
    কাম-কম্বু ভরি কনক-কুম্ভ পরি
    ঢালে যেন সুরধুনী-ধারা।

    পঞ্চম খণ্ড
    [বিদ্যাপতির ভবন]

    বিদ্যাপতি।
    বিজয়া!
    বিজয়া।
    দাদা! ডাকচ?
    বিদ্যাপতি।
    হ্যাঁ, অনুরাধা কোথায় রে?
    বিজয়া।
    কী জানি। সে কি বাড়ি থাকে? সকাল হতে না হতে রানির যানবাহন এসে ওকে নিয়ে যায়। ও মাঝে মাঝে পালিয়ে আসে আমার কাছে, আর অমনি সাথে সাথে আসে রানির চেড়িদল। রানির অনুগ্রহ ওকে গ্রহের মতো গ্রাস করেছে। আবার রানির নাকি হুকুম হয়েছে এখন থেকে রাত্রেও তাঁর কাছে থাকতে হবে। এ কিন্তু রানির অত্যাচার দাদা। হয় তুমি এর প্রতিকার করো, নইলে আমিই রাজার কাছে আবেদন করব।
    বিদ্যাপতি।
    হুঁ! হ্যাঁরে বিজয়া, সেদিন অনুরাধা বলছিল, ওর বিয়ে হয়ে গেছে। সত্যই কি ওর বিয়ে হয়েছিল?
    বিজয়া।
    (সক্রোধে) আমি জানি না। আচ্ছা দাদা, তুমি কবি, সাধক। তুমি তো মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্ত দেখতে পাও। অনুরাধার দিকে কখনও চোখ ফিরিয়ে দেখেছ কি?
    বিদ্যাপতি।
    তা দেখিনি। কিন্তু ভুল তো তুইও করে থাকতে পারিস, বিজয়া। ওর স্বামীই যদি কেউ থাকেনই, সে এ পৃথিবীর মানুষ নয়, ওর স্বামী গিরিধারীলাল শ্রীকৃষ্ণ।
    বিজয়া।
    হ্যাঁগো হ্যাঁ, ওই নামের ছল করে ও যাকে পূজা করে আমি তাকে জানি। তুমি ইচ্ছা-অন্ধ, তাই দেখতে পাও না।

    [অনুরাধার গীত]
    সখী লো মন্দ প্রেম পরিণামা।

    বিজয়া।
    ওই যে হতভাগিনি আসছে।
    বিদ্যাপতি।
    তুই ওকে একবার আমার কাছে পাঠিয়ে দে তো!
    বিজয়া।
    দিচ্ছি দাদা!
    বিদ্যাপতি।
    আমায় এ কী পরীক্ষায় ফেললে, ঠাকুর!
    অনুরাধা।
    আমায় ডাকছিলে, ঠাকুর!
    বিদ্যাপতি।
    হাঁ রাধা! রানি কি তোমার রাত্রেও তাঁর কাছে থাকতে আদেশ করেছেন?
    অনুরাধা।
    হ্যাঁ, রানি বলেন দূতীর দূতিয়ালির প্রয়োজন রাত্রেই হয় বেশি। তবে এ তাঁর আদেশ নয়, আবদার।
    বিদ্যাপতি।
    দূতী! কীসের দূতিয়ালি রাধা?
    অনুরাধা।
    ঠাকুর! তুমি আমায় কী মনে কর? পাগল, নির্বোধ বা ওরকম একটা কিছু, না? তুমি যে এত যত্ন করে রোজ তোমার নব-রচিত গানগুলি শেখাও, তুমি কি মনে কর আমি তার মানে বুঝিনে? আর আমি কি শুধু রানিরই দূতিয়ালি করি? আমি কি লেখার গানেরও দূতিয়ালি করিনে?
    বিদ্যাপতি।
    আমি তোমার কাছে আর আত্মগোপন করব না, রাধা। সত্যই তোমার সুরের সেতু বেয়ে হয় আমাদের মিলন! তবে তুমি তো জান আমার এ প্রেম নিষ্কলুষ, নিষ্কাম। তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
    অনুরাধা।
    বলো।
    বিদ্যাপতি।
    তুমি কি সত্যিই আামায় ভালোবাস?
    অনুরাধা।
    না।
    বিদ্যাপতি।
    তুমি আমায় বাঁচালে, অনুরাধা!
    অনুরাধা।
    তোমায় আমি ভালোবাসিনে। কিন্তু আমি ভালোবাসি তাকে যাকে তুমি ভালোবাস। ঠাকুর! ঠাকুর! আমাকে এই বর দাও যেন জন্মে জন্মে তোমার ভালোবাসার জনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পারি; তুমি যাকে ভালোবেসে সুখ পাও, তারই দাসী হতে পারি। আর দিনান্তে একবার শুধু ওই চরণ বন্দনা করতে পারি।

    ষষ্ঠ খণ্ড
    [রাজগৃহ]

    রাজা।
    আমার মুখের দিকে অমন হাঁ করে চেয়ে কী দেখছ, ধনঞ্জয়?
    ধনঞ্জয়।
    ভয় নেই মহারাজ! ভয় নেই! আপনিও মেঘ নন, আর আমিও চাতক পক্ষী নই। মহারাজ যদি অভয় দেন, তা হলেই একটা কথা জিজ্ঞাসা করি।
    রাজা।
    বলো কী বলতে চাও।
    ধনঞ্জয়।
    আমি বলছিলাম, মহারাজ, বৃন্দাবনের আয়ান ঘোষের সঙ্গে কি আপনার কোনো কুটুম্বিতা ছিল?
    রাজা।
    তার মানে?
    ধনঞ্জয়।
    তার মানে আর কিছু নয় মহারাজ, চেহারা তো দেখিনি, তবে তার বুদ্ধির সঙ্গে আপনার বুদ্ধির অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে।
    রাজা।
    ধনঞ্জয়!
    ধনঞ্জয়।
    দোহাই মহারাজ! আমার মাথা কাটা যাক তাতে দুঃখ নেই, কিন্তু আপনার অ-রসিক বলে বদমান রটলে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে।
    রাজা।
    বটে! আচ্ছা বলো কী বলছিলে!
    ধনঞ্জয়।
    আমি বলছিলাম মহারাজ, আপনার ওই প্রধানমন্ত্রী বিদ্যাপতির কথা। তিনি ছিলেন দুর্গা-উপাসক, ঘোর শাক্ত, হলেন পরম বৈষ্ণব। কৃষ্ণভক্ত। ছিলেন রাজমন্ত্রী, কঠোর রাজনীতিক, হলেন কবি কান্ত-কোমল প্রেমিক।
    রাজা।
    তাতে তোমার কী ক্ষতি বৃদ্ধি হল ধনঞ্জয়?
    ধনঞ্জয়।
    কিছু না মহারাজ! ক্ষতি বৃদ্ধি যা হবার তা হচ্ছে রাজার আর তার রাজ্যের। এ ক্ষতিও হচ্ছিল এতদিন গোপনে, তাকেও আবার দিনের আলোয় টেনে আনলে বিন্দে দূতী।
    রাজা।
    বিন্দে দূতী? সে আবার কে?
    ধনঞ্জয়।
    আজ্ঞে ওই হল! আপনারা যাকে বলেন অনুরাধা, আমাদের মতো দুর্জন, তাকেই বলে বিন্দে দূতী!
    রাজা।
    অর্থাৎ সহজ ভাষায় তোমার কথার অর্থ এই যে, কবি বিদ্যাপতি হচ্ছেন নন্দলাল, আমি হচ্ছি আয়ান ঘোষ আর শ্রীমতী হচ্ছেন – !
    ধনঞ্জয়।
    দোহাই মহারাজ! মাথা আর ঘাড়ের সন্ধিস্থলে বিচ্ছেদের ভয় যতক্ষণ আছে ততক্ষণ ও পাপ কথা কোন সাহসে উচ্চারণ করি মহারাজ!
    রাজা।
    ধনঞ্জয়! আয়ান ঘোষের গোপবুদ্ধি আর তোমাদের রাজার ক্ষাত্রবুদ্ধিতে যথেষ্ট প্রভেদ আছে! তোমরা কী বোঝ জানি না, আমি কিন্তু সব শুনি, সব দেখি, সবই বুঝি।
    ধনঞ্জয়।
    মহারাজ পরম উদার। আপনার ধনবল জনবলও অপরিমাণ; তবু মহারাজ, জটিলা কুটিলার মুখ বন্ধ করতে তা কী যথেষ্ট?
    রাজা।
    দেখো ধনঞ্জয়, চোর যতক্ষণ ঘরের আশে পাশে ঘোরে ততক্ষণ জাগ্রত বলবান গৃহস্থ তাকে ভয় করে না। হ্যাঁ তবে তাকে লক্ষ রাখতে হয় যে ঘরে সিঁধ না কাটে! যাক তুমি কি আর কিছু লক্ষ করেছ?
    ধনঞ্জয়।
    আজ্ঞে তা মিথ্যে বলতে পারব না। মহারানি প্রত্যহ রাজসভায় এসে চিকের আড়াল টেনে বসেন হয়তো রাজকার্য দেখতেই এবং সে চিক গলিয়ে একটা চামচিকেরও যাবার উপায় নেই। তবু বিদ্যাপতির ওই পর্দামুখী আসনটা অনেকেরই চক্ষুশূল স্বরূপ হয়ে উঠেছে।
    রাজা।
    ধনঞ্জয়, আমি লক্ষ রেখেছি বলেই ওদের মাঝের পর্দাটুকু আজও অপসারিত হয় নি। তোমরা নিশ্চিন্ত থেকো আর তোমাদের সকলকে জানিয়ে দিয়ো যে, ওদের চেয়ে আমার দৃষ্টির পরিসর অনেক বেশি। ওরা দেখে শুধু রাজসভা আর রাজ-অন্তঃপুর, আর আমাকে দেখতে হয় সমগ্র রাজ্য।
    ধনঞ্জয়।
    আচ্ছা মহারাজ! তারই পরীক্ষা হোক।
    রাজা।
    কী পরীক্ষা করতে বলো তুমি?
    ধনঞ্জয়।
    আমি বলি কি কোনোরকমে দিন কতকের জন্য রানিকে আটকে রাখুন। তিনি যেন রাজসভায় না আসেন। তারপর রানির অবর্তমানে বিদ্যাপতিকে কিছু নতুন পদ রচনা করে গাইতে বলুন। মহারাজ আপনার অনুগ্রহে প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠেছেন প্রধান গায়ক আর রাজসভা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবাজির আখড়া। মহারাজ, দাসের অপরাধ নেবেন না।
    রাজা।
    তোমার ইঙ্গিত বুঝেছি। আচ্ছা ধনঞ্জয়, তাই হবে।
    ধনঞ্জয়।
    যাবার বেলায় একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যাই, মহারাজ! একদা শ্যাম বনে গিয়ে শ্যামা রূপ ধারণ করে আয়ান ঘোষের চোখে ধুলো দিয়েছিলেন।
    রাজা।
    আমার চোখের পর্দা আছে ধনঞ্জয়, এ চোখে কেউ ধুলো দিতে পারবে না।

    সপ্তম খণ্ড
    [বিদ্যাপতির গৃহের পুষ্পোদ্যান]

    অনুরাধা।
    ঠাকুর আজ দু-দিন থেকে তোমার মুখে হাসি নাই, চোখে দীপ্তি নাই, কণ্ঠে গান নাই। কী হয়েছে তোমার?
    বিদ্যাপতি।
    কেন তুমি ছলনা করছ, অনুরাধা? তুমি তো সবই জান। আজ দু-দিন ধরে রাজসভায় আমার লঞ্ছনার আর সীমা নেই। এই দু-দিন রাজাকে একটি নূতন পদও শুনাতে পারিনি। আর তাই নিয়ে শত্রুপক্ষ আমায় বিদ্রুপবাণে জর্জরিত করেছে।
    অনুরাধা।
    হা হরি! এই দু-দিনে একটা গানও লিখতে পারলে না তোমার সুরের ঝরনা হঠাৎ এমন শুকিয়ে গেল কেন?
    বিদ্যাপতি।
    তুমি তো জান রাধা, আমার কাব্যের প্রেরণা সুরের প্রাণ সবই লছমী দেবী। যেদিন তার উপস্থিতি অনুভব না করি সেদিন আমার দুর্দিন। সেদিন আমার কাব্যলোকে সুরলোকে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ।
    অনুরাধা।
    আচ্ছা ঠাকুর, তুমি তো রানিকে একটুও দেখতে পাও না, তবু কী করে বুঝতে পার যে রানি রাজসভায় এসেছেন? রানি কি কোনো ইঙ্গিত করেন?
    বিদ্যাপতি।
    না না অনুরাধা! লছমী তো ইঙ্গিতময়ী রূপে কোনোদিন দেখা দেননি আমায়, তিনি আমার অন্তরে আবির্ভূতা হন সঙ্গীতময়ী রূপে। তাঁর আবির্ভাব অনুভব করি আমি আমার অন্তর দিয়ে। যেদিন রানি রাজসভায় আসেন, সেদিন অকারণ পুলকে আমার সকল দেহ-মন বীণার মতো বেজে ওঠে। শত গানের শতদল ফুটে ওঠে আমার প্রাণে। আমি তখন আবিষ্টের মতো গান করি। সে আমার আত্মার গান – ও গান পরমাত্মারূপী শ্রীকৃষ্ণের গান।
    অনুরাধা।
    ঠাকুর আমার প্রণাম নাও। তোমার পা ছুঁয়ে আমি ধন্য হলাম। আমি কাল ভোরেই তোমাকে দেখাব তোমার কবিতা-লক্ষ্মীকে।
    বিদ্যাপতি।
    পারবে? পারবে তুমি, অনুরাধা?
    অনুরাধা।
    উতলা হোয়ো না ঠাকুর। তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। আমি দূতী আমার অসাধ্য কিছু নেই।
    বিদ্যাপতি।
    অনুরাধা! তুমি হয়তো মনে করছ, আমি কী ঘোর স্বার্থপর পাষণ্ড না?
    অনুরাধা।
    নিশ্চয়ই। পাষাণ না হলে ঠাকুর হবে কী করে? শুধু নেবে দিতে জানবে না, মাথা খুঁড়ে মরলেও থাকবে অটল, তবে তো হবে দেবতা! তবেই না পাবে পূজা!
    বিদ্যাপতি।
    অনুরাধা! আমি যদি তোমার প্রেমের এক বিন্দুও পেতাম তা হলে আজ আমি জগতের শ্রেষ্ঠ কবি হতে পারতাম।
    অনুরাধা।
    না ঠাকুর, তা হলে তুমি হতে আমারই মতো উন্মাদ। সকলের আকাঙ্ক্ষা সমান নয় ঠাকুর, কেউ বা পেয়ে হয় খুশি আর কেউ বা খুশি হয় না-পেয়ে।
    বিদ্যাপতি।
    তোমার প্রেমই প্রেম অনুরাধা, যা পায়ে শৃঙ্খলের মতো জড়িয়ে থাকে না, যে প্রেম দেয় অনন্তলোকে অনন্ত মুক্তি।
    অনুরাধা।
    অত শত ঘোর প্যাঁচের কথা বুঝিনে ঠাকুর। আমি ভালোবেসে কাঁদতে চাই, তাই কাঁদি। বুকে পেলে কান্না যাবে ফুরিয়ে, প্রেম যাবে শুকিয়ে, তাই পেতে চাইনে। বুকের ধনকে বিলিয়ে দিই অন্যকে। আমি চললাম ঠাকুর। আমি চললাম। আমি কাল সকালে তোমার কবিতা-লক্ষ্মীকে দেখাব।

    অষ্টম খণ্ড
    (রাজ-অন্তঃপুর)

    [অনুরাধার গীত]
    এ ধনি কর অবধান,
    তোমা বিনা উনমত কান।
    (কানু পাগল হল গো। তোমারে না হেরি কানু পাগল হল গো)
    লছমী।
    কানু পাগল হল না তুই পাগল হলি রাধা?

    [অনুরাধার গীত]
    শুন শুন গুণবতী রাধে,
    মাধবে বাঁধিয়া তুই কী সাধিবি সাধে?
    (তুই কোন সাধ সাধিবি? মাধবে বাঁধিয়া তুই কোন্ সাধ সাধিবি?)
    লছমী।
    সতিনকে কাঁদব! বুঝলি?

    [অনুরাধার গীত]
    এতহুঁ নিবেদন করি তোরে সুন্দরী
    জানি ইহা করহ বিধান।
    হৃদয়-পুতলি তুহুঁ সে শূন্য কলেবর,
    তুহুঁ বিদ্যাপতি-প্রাণ॥

    লছমী।
    আ-মল! বিদ্যাপতি, বিদ্যাপতি বলে ছুঁড়ি যে নিজেই পাগল হলি! বিদ্যাপতির বিদ্যাটুকু বাদ দিয়ে তার ঘর জুড়ে বসলেই তো পারিস।
    অনুরাধা।
    তা হলে তোমার কী দশা হবে সখী?
    লছমী।
    এক কৃষ্ণকে নিয়ে ষোলো হাজার গোপিনী যদি সুখী হতে পারে, আমরা দু-জন আর সুখী হতে পারব না কেন?
    অনুরাধা।
    সেই প্রেমময়ী গোপিনীদের চরণে কোটি কোটি প্রণাম করি ভাই, আমরা তাঁদের পায়ের ধূলি হবারও যোগ্য নই।
    লছমী।
    সে কথা থাক। অনুরাধা, আর একটা কথা জানতে বড়ো সাধ হয়। তিনি কি একবারও তোকে আমার কথা জিজ্ঞাসা করেন না?
    অনুরাধা।
    আধবারও না।
    লছমী।
    না ভাই লক্ষ্মীটি, লুকোসনে। মহারাজার আদেশে আমি আজ দু-দিন রাজসভায় যেতে পাইনি। তাঁকে একবারও দেখতে পাইনি, তাঁর গান শুনিনি। মনে হচ্ছে, যেন কত জন্ম তাঁকে দেখিনি।
    অনুরাধা।
    আচ্ছা ভাই, তুই যদি আজ ভোরে ঠিক এইখানে এই মাধবীকুঞ্জে তাঁকে দেখতে পাস, তা হলে কী করিস?
    লছমী।
    আমি গিয়ে তাঁর বামে দাঁড়াই, আর তুই মিলনের পালা গান গাস।
    রাজা।
    রানি!
    অনুরাধা।
    আসি আসি, সখী, মহারাজ আসছেন।
    রাজা।
    যেয়ো না যেয়ো না, অনুরাধা।
    লছমী।
    রাজা, তোমায় এত ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন? তোমার চোখে মুখে যেন রক্ত নেই।
    রাজা।
    ঠিক মৃতের মতো না, রানি? না, ওটা তোমার চোখের ভুল। রানি আমার একটা কথা রাখবে?
    লছমী।
    বলো?
    রাজা।
    আমাকে কাল ভোরেই চলে যেতে হবে, চলে যেতে হবে দূরে বহু দূরে আমার রাজ্যের সীমান্ত পেরিয়ে। রানি আমি যখন থাকব না, তখন যেন আমার প্রিয় সখা বিদ্যাপতির কোনো অযত্ন না হয়।
    লছমী।
    আমি বুঝতে পারছি রাজা, তুমি অসুস্থ। তুমি একটু চুপ করে শোও, তোমার সেবা করার কর্তব্য থেকে আমায় বঞ্চিত কোরো না।
    রাজা।
    কর্তব্য! সেবা! বেশ তাই করো রানি! তাই করো! লোকে যা চায়, ভগবান তাকে তার সব কিছু দেন না। এই বঞ্চিত করেই তিনি টেনে নেন সেই হতভাগ্যকে তাঁর শান্তিময় কোলে। রানি যাকে ভালোবাসার কেউ নেই সে যদি ভগবানেরও চরণে আশ্রয় না পায়, তার মতো দুর্ভাগা বুঝি আর কেউ নেই।

    [বিদ্যাপতির গীত]
    আজু রজনী হাম ভাগে পোহায়লুঁ

    মহারাজ! আজ আমি গান শোনাতে এসেছি। আজ আমার গানের বাঁধ, প্রাণের বাঁধ, সুরের বাঁধ ভেঙে গেছে।
    রাজা।
    এসো এসো বন্ধু, এসো বিদ্যাপতি!

    নবম খণ্ড
    [রাজ-উদ্যান]

    রাজা।
    এত আনন্দ তোমার কোনোদিন দেখিনি বিদ্যাপতি। আজ তিন দিন ধরে তুমি ছিলে বাণীহীন মূক। হঠাৎ আজ ভোরে হয়ে উঠলে আনন্দিত-কন্ঠ, সংগীত-মুখর। তোমার এত কবি-প্রেরণা এল কোথা থেকে, বন্ধু!
    বিদ্যাপতি।
    তা জানি না মহারাজ। আমার প্রাণ শুনাতে চায় গান। নিখিল জগৎকে আজ সে গানে গানে পাগল করে দিতে চায়, ডুবিয়ে দিতে চায়। ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আজ আর তোমার আদেশের অপেক্ষা রাখব না রাজা, আজ গান গাইব স্বেচ্ছায়।

    [বিদ্যাপতির গীত]
    আজু রজনী হাম ভাগে পোহায়লুঁ
    পেখলুঁ পিয়া-মুখ-চন্দা।
    জীবন যৌবন সফল করি মানলুঁ
    দশ দিশি ভেল নিরদ্বন্দ্বা
    আজু মঝু গেহ গেহ করি মানলুঁ
    আজু মঝু দেহ ভেল দেহা।
    আজু বিধি মোহে অনুকূল হোয়ল
    টুটল সবহুঁ সন্দেহা॥

    রাজা।
    অপূর্ব! সাধু, কবি, সাধু! তুমি শুধু রানির কণ্ঠহার পেয়েছিলে, আজ তোমায় রাজার কণ্ঠহার দিয়ে ধন্য হলাম। লজ্জিত হোয়ো না কবি, লজ্জিত হোয়ো না বন্ধু, তোমার বুকের তলে লুকানো থাকে রানির দেওয়া কণ্ঠহার, সে কথা আর কেউ না জানলেও আমি জানি। এই রাজ-উদ্যানে এত ভোরে তুমি আমি ছাড়া আর কেউ নেই বন্ধু। আর অন্তরালে যদি কেউ থাকে তিনি তোমার অনাত্মীয়া নন। বিদ্যাপতি, অন্তরিক্ষের দেবী চোখের সম্মুখে এসে আবির্ভূতা না হলে মানুষের কণ্ঠে এমন গান আসে না। দেবীর দয়া, বন্ধু, এ দেবীর দয়া!
    বিদ্যাপতি।
    মহারাজ! কি আমায় বিদ্রুপ করছেন? তা করুন তবু আমার আজকের আনন্দকে মলিন করতে পারবেন না। এ আনন্দ এই শুভ প্রভাতের মতোই অমলিন।
    রাজা।
    তা জানি বলেই তোমায় শ্রদ্ধা করে আজও বন্ধু বলেই সম্ভাষণ করি, বিদ্যাপতি! শোনো বন্ধু আজ থেকে আমার রাজ্যে তুমি পরিচিত হবে ‘কবি-কণ্ঠহার’ নামে।
    ধনঞ্জয়।
    মহারাজ, আজকের এই আনন্দটা কি সত্যিকার?

    দশম খণ্ড
    বিদ্যাপতি।
    তুমি তা বুঝবে না ধনঞ্জয়। যে প্রদীপ তিলে তিলে পুড়ে বুকের সমস্ত স্নেহরসকে জ্বালিয়ে অপরকে দান করে আলো, সেই প্রদীপ ধনঞ্জয়, মাত্র সেই প্রদীপই জানে এই আত্মদানের, আপনাকে নিঃশেষে বিলিয়ে দেওয়ার, কী অপার আনন্দ!
    রাজা।
    ঠিক বলেছ কবি। আরতির প্রদীপ নিববার আগে যেমন করে শেষবার তার উজ্জ্বলতম শিখা মেলে দেবতার মুখ দেখে নিতে চায়, তেমনি করে আমার অন্তর-দেবতা শ্রীকৃষ্ণের মুখ দেখে নিতে চাইছে আমার শ্রান্ত প্রাণশিখা। তুমি এমন গান শুনাতে পার কবি, যা আমার অন্তিম সময়ে শুনতে ইচ্ছা করবে?
    ধনঞ্জয়।
    মহারাজ এইবার কিন্তু অরসিকের মতো কথা আরম্ভ হল এবং কাজেই আমাকে সরে পড়তে হল। (প্রস্থান)
    রাজা।
    ধনঞ্জয়! ধনঞ্জয়! চলে গেছে? আঃ বাঁচলাম! বিদ্যাপতি, আমায় একটু ধরো, এখানে উঠে এলাম কী করে জানি না; আর বোধ হয় এখানে থেকে উঠে যেতেও পারব না।
    বিদ্যাপতি।
    তুমি অমন করছ কেন সখা? তোমার কি কোনো অসুখ করেছে?
    রাজা।
    সখা। প্রেমের বৃন্দাবনে আমরা– আমি তুমি লছমী অনুরাধা, জন্ম জন্ম ধরে লীলা-সহচর-সহচরী। সেই প্রেমলোকের গান যেদিন তুমি শুনালে সেদিন আমার মনে পড়ে গেল আমার বিস্তৃত জন্মের কথা, মনে পড়ে গেল প্রেমলোকনাথ শ্রীকৃষ্ণকে। তোমার গানের মন্ত্রে আমি উপাসনা করতে লাগলাম রাধা-শ্যামের যুগল মূর্তি। আমি আমার উপাস্য দেবতাকে পেয়েছি, তাই তাঁর বিরহ আর সহ্য করতে পাচ্ছি না, বন্ধু। আমি যে আমার কানুর বাঁশরি শুনতে পেয়েছি।
    বিদ্যাপতি।
    রাজা?
    রাজা।
    তুমি ঠকে গেলে, বন্ধু। তুমি গড়লে তরণি আর আমি তাই চুরি করে গেলাম বৈতরণি পেরিয়ে। বিদ্যাপতি, তুমি কাঁদছ? কেঁদো না সখা! তুমিও আসবে দু-দিন পরে আমাদের চিরলীলা-নিকেতনে, বৈকুণ্ঠধামে। জানো বিদ্যাপতি, কাল সারারাত আমি ঘুমোইনি আমার প্রিয়তম শ্রীকৃষ্ণকে ডেকেছি আর কেঁদেছি। আজ ভোরে সেই অশান্তের আহ্বান ভেসে এল কানে। সে আমায় ডাকছে, ওরে আয় আয়; আমার প্রিয়, আমার বুকে চলে আয়। রানি বলছিলেন রাজবৈদ্যকে খবর দিতে, এমন সময় এলে তুমি ভবরোগের বৈদ্য।

    একাদশ খণ্ড
    রাজা।
    তুমি এখন গাও সখা আমার মাধবের নাম গান।

    [বিদ্যাপতির গীত]
    মাধব! বহুত মিনতি করি তোয়।
    দেই তুলসী তিল দেহ সমর্পলুঁ
    দয়া জনু ছোড়বি মোয়।
    গনইতে দোষ গুণ- লেশ না পাওবি
    যব তুঁহুঁ করবি বিচার,
    তুঁহু জগন্নাথ জগতে কহায়সি
    জগ-বাহির নহি মুই ছার!
    ভণয়ে বিদ্যাপতি অতিশয় কাতর
    তরইতে ইহ ভবসিন্ধু
    তুয়া পদ-পল্লব করি অবলম্বন
    তিল এক দেহ দীনবন্ধু॥

    রাজা।
    আহা! আবার বলো, সখা, আবার বলো!

    মাধব! তরইতে ইহ ভবসিন্ধু
    তুয়া পদ-পল্লব করি অবলম্বন
    তিল এক দেহ দীনবন্ধু! দীনবন্ধু –

    আঃ আমার মাথা কার কোলে?
    রানি।
    রাজা! আমি দাসী, লছমী।
    রাজা।
    লছমী! ওঃ! কে কাঁদে আমার পায়ে পড়ে?
    অনুরাধা।
    রাজা! আমি – আমি অনুরাধা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বিষ্ণু উপাসক পরম প্রেমিক তুমি, আমায় পায়ের ধুলো দিয়ে যাও। আমি এ চরণ-ধূলির প্রসাদ মুক্ত হয়ে যাই!
    রাজা।
    অনুরাধা! অনুরাধা – অনুরাধা কী মধুর নাম। এই তো আমার বৃন্দাবন। বিদ্যাপতি নারায়ণ, লছমী, অনুরাধা, শ্রীকৃষ্ণ নাম গান এরই মাঝে যেন জন্মে জন্মে আমি শ্রীকৃষ্ণ-মাধব – (মৃত্যু)
    বিদ্যাপতি।
    অনুরাধা!
    লছমী।
    রাজা! রাজা!

    দ্বাদশ খণ্ড
    (বিসকি গ্রাম – বিদ্যাপতির ভবন – দেবীদুর্গা মন্দির)

    [বিদ্যাপতির গীত]

    হে নিঠুর তোমাতে নাই আশার আলো।
    তাই কি তোমার রূপ কৃষ্ণ কালো?
    তুমি ত্রিভঙ্গ তাই তোমার সকলই বাঁকা,
    চোখে তব কাজলের ছলনা মাখা।
    নিষাদের হাতে বাঁশি সেজেছে ভালো॥

    বিজয়া।
    দাদা! তোমার দুটি পায়ে পড়ি, উঠে একটু কিছু মুখে দাও। আজ সাত দিন ধরে নিরম্বু উপবাস করে মায়ের মন্দিরে হত্যা দিয়ে পড়ে আছ, তুমি যোগী ভক্ত – তুমি সব পার কিন্তু আমি যে আর পারিনে, দাদা!
    বিদ্যাপতি।
    এই সাত দিন কি তুইও কিছু খাসনি, বিজয়া?
    বিজয়া।
    না।
    বিজয়া।
    দাদা। মায়ের প্রসাদ এনেছি, তাই একটু খাও।
    বিদ্যাপতি।
    বিজয়া! আজ আমার উপবাসের সপ্তমী, কাল অষ্টমী – সেই মহাষ্টমীতে মায়ের পায়ে আত্মবলিদান দিয়ে মায়ের হাতে প্রসাদ গ্রহণ করব। তুই এখন যা।
    (বিজয়ার প্রস্থান)
    বিদ্যাপতি।
    মা যোগমায়া! পাষাণী! আর আমায় কত পরীক্ষা করবি মা! আমার যারা প্রাণের প্রিয়তম তাদের হরণ করে তাদের আর আমার মাঝে চিরবিচ্ছেদের যবনিকা টেনে দিলি। আমায় নিয়ে এ কী খেলা খেলছিস মা?
    যোগমায়া।
    পুত্র বিদ্যাপতি! ওঠো প্রসাদ গ্রহণ করো। এই সাত দিন ধরে তোমার সাথে আমিও উপবাসী!
    বিদ্যাপতি।
    না আমি আহার গ্রহণ করব না – যতদিন না জানতে পারি কোন অভিশাপে আমার এই শাস্তি?
    যোগমায়া।
    শোনো পুত্র। তোমরা সকলেই ছিলে গোলোকধামের অধিবাসী, মহাবিষ্ণুর লীলা সহচর-সহচরী। তোমরা ধরণিতে নিষ্কাম প্রেম প্রচারের করভিক্ষা করেছিলে শ্রীকৃষ্ণের কাছে, তাই পবিত্র প্রেমের ও শ্রীকৃষ্ণের কীর্তনের জন্য ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছ। তোমাদের যাবার সময় হল, বৎস। তোমাদের দেহে মনে ধরণির যে ধূলি লেগেছে তা ধুয়ে দেবেন স্বয়ং দেবী ভাগীরথী। তুমি এখনই যাও গঙ্গার পথে, সেই পথে শ্রীকৃষ্ণ-বিরহ কৃষ্ণ-ফণী রূপে তোমায় দংশন করবে। তার পর হবে তোমাদের চির-মিলন, মৃত্যুকে পুরোহিত করে গঙ্গার পবিত্র বক্ষে।

    ত্রয়োদশ খণ্ড
    [গঙ্গাবক্ষে ঝড়বৃষ্টি]

    বিদ্যাপতি।
    কে? কে তুমি চলেছ আমার আগে আগে দীপ জ্বালিয়ে পথ দেখিয়ে?
    অনুরাধা।
    ঠাকুর, আমি অনুরাধা!
    বিদ্যাপতি।
    অনুরাধা! অনুরাধা! নিয়ে চলো, নিয়ে চলো আমায়! এই ঝড়বৃষ্টি? কৃষ্ণরাতের মধ্য দিয়ে সেইখানে, যেখানে আছে অনন্ত প্রেম, অনন্ত ক্রন্দন, অনন্ত অতৃপ্তি।
    অনুরাধা।
    এসো কবি! এসো সাধক! এই অশান্ত কৃষ্ণ-নিশীথিনীর পরপারেই পাবে অশান্ত কিশোর চির-বিরহী শ্রীকৃষ্ণকে।
    বিদ্যাপতি।
    অনুরাধা! দাঁড়াও দাঁড়াও! কে যেন আমার পা জড়িয়ে ধরেছে! উঃ! রাধা! রাধা! আমায় কৃষ্ণসর্পে দংশন করেছে, জ্বলে গেল, বিষে আমার সকল দেহ জ্বলে গেল, জ্বলে গেল।
    অনুরাধা।
    ঠাকুর! ঠাকুর! দেখেছ ওই কৃষ্ণসর্পের মাথায় কী অপূর্ব মণি জ্বলছে। ও কৃষ্ণসর্প নয় ঠাকুর, তোমায় দংশন করেছে কৃষ্ণ-বিরহ! ওই বিরহ-ফণী যাকে দংশন করে তার মুক্তির আর বিলম্ব থাকে না।
    বিদ্যাপতি।
    অনুরাধা! অনুরাধা! কোথায় গেল অনুরাধা! চলে গেছে। আমি যাব! আবার গঙ্গার পথেই যাব। যতক্ষণ শেষ নিশ্বাস থাকে আমার ততক্ষণ ছুটব পতিতপাবনীকে স্মরণ করে! মাগো! পতিতপাবনী ভাগীরথী! আমি তোর কোলের আশায় এত পথ ছুটে এলাম, তবু তোর কোলে আমার এই পাপ-তাপিত বিষ-জর্জরিত দেহ রাখতে পারলাম না, মা। অঙ্গ আমার অবশ হয়ে এল, আর চলতে পারি না, মা! মাকে ডেকে মৃত্যু উপেক্ষা করে সন্তান এল এতদূর পথ, আর তুই এইটুকু পথ আসতে পারবি না মা ভক্ত ছেলের ডাকে? মা! মাগো!
    গঙ্গা।
    বিদ্যাপতি!
    বিদ্যাপতি।
    এ কী – মকরবাহিনী কলুষনাশিনী মাগো – তবে কি সন্তানের অন্তিম প্রার্থনা শুনেছিস মা! আঃ! আমার প্রাণ-মন-দেহ জুড়িয়ে গেল মা, তোর মাতৃকরস্পর্শে।
    গঙ্গা।
    বিদ্যাপতি, আমি এসেছি তোমাদের নিয়ে যেতে, তোমাদের আপন গেহে, নন্দনলোকে। ওই তোমার লছমী অনুরাধার সাথে আসছে – বৎস, তোমাদের লীলা শেষ, কার্য শেষ। শ্রীকৃষ্ণের লীলা-সাথী – তোমরা যুগে যুগে আস, ফিরে চলো বৎস তাঁর প্রেমময় কোলে।

    [অনুরাধার গীত]
    সজনী আজু শমন দিন হয়।

    চতুর্দশ খণ্ড
    [অনুরাধার গীত]

    সজনী আজু শমন দিন হয়।
    নব নব জলধর চৌদিকে ঝাঁজিল
    প্রাণ দেহে নাহি রয়॥
    বরষিছে পুনঃপুনঃ অগ্নিদাহন যেন
    জানিনু জীবন লয়।

    [বিদ্যাপতির গীত]
    বিদ্যাপতি কহে শুন শুন লছমী
    মরণে মিলন মধুময়॥

    লছমী।
    কে? বিদ্যাপতি?
    বিদ্যাপতি।
    লছমী? তুমি?
    অনুরাধা।
    হ্যাঁ, ঠাকুর! আমি নিয়ে এসেছি তোমার জীবন-মরণের সাথি লছমীকে। পবিত্র সুরধনী-ধারায় স্নাত হয়ে তোমরা উভয়ে হলে নির্মল, তাই তো মা পতিতপাবনীর কোলে হল তোমাদের চিরমিলন।

    [গীত]

    শেষ হল মোর কাজ, হে কিশোর! আমারে লহো এবার।
    লছমী।
    অনুরাধা! সখী! কোথায় চলছিস তুই? তুই কি আমাদের ছেড়ে এমনি দূরে দূরেই ভেসে যাবি।
    অনুরাধা।
    লছমী! সখী! আমি যেন জন্মে জন্মে কালস্রোতে ভেসে এমনই যুগল মিলন দেখে মরতে পারি।

    [গীত]
    তোমার যাহাতে সুখ তাহে আমার সুখ
    সুন্দর মাধব হমার!
    কোটি জনম যেন তুহার সুখের লাগি
    ডারি দেই এ জীবন ছার॥

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদিয়ো ফুলদল বিছায়ে
    Next Article ছোটো গল্প – কাজী নজরুল ইসলাম

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    ব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    গানের মালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    যুগবাণী – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মহুয়ার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }