নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক – ১
১
।। প্র্যাঙ্ক নাকি সত্যি? ।।
#২৩৯২
পুরুষ, ২৫
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সমস্যায় পড়েছি এবং সেটা মারাত্মক।
আমার বন্ধুর এক্স গার্লফ্রেন্ড, নাম ধরে নিন এক্স। আমার সেই বন্ধু মেয়েটিকে ধোঁকা দিয়ে আরেকটি নতুন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে গেছে। আমি সেটা জানতাম। এবার এক্স আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করত। আমি নরম হয়ে গেছিলাম। কষ্টও হত মেয়েটির জন্য। এবার এক্স আমার বন্ধুটিকে একদিন অফিসিয়ালি জানিয়ে দেয় সে ব্রেক আপ করবে। মেয়েটি খুব কান্নাকাটি করে। আমি ওকে বোঝাতে ওর পিজিতেও যাই। আমাদের মধ্যে সেক্স হয়। যেদিন সেক্স হয়, তার পরের দিন আমার বন্ধুটা জানাল ও এক্সকে মিস করছে, এক্সের কাছে ফিরে যেতে চায়। আমি এদিকে এক্সকে দিয়ে আমার বন্ধুকে ব্লক করিয়েছি। এক্স বলেছে আমাদের সেক্সটা বেস্ট ছিল। এবার আমার প্রশ্ন হল, বন্ধুকে জানাবো কী করে? এক্স বলছে আমার বন্ধুর নাকি মেশিনগান ছোট ছিল। এবার আমার ধারণা আমার বন্ধু তার নতুন গার্লফ্রেন্ডকে ওর যন্ত্রটা দেখিয়েছিল, সে হ্যাঁটা দিয়ে দিয়েছে, তার জন্যই আবার পুরনো জি এফের কাছে ফিরতে চায়। এবার সেটা যাও বা ঠিক চলছিল, আমার এক এক্স, ধরে নিন, তার নাম ওয়াই, সে আমাকে ব্লক তুলে মেসেজ করে বলেছে তার ব্রেক আপ হয়ে গেছে। এবার আমি কি তার সঙ্গে যোগাযোগ করব? মানে ব্রেক আপ হওয়া এক্সকে সহানুভূতি দিলে এক দান লুডো তো খেলতেই দেয়, যদি আমি এক্সের সঙ্গে ইয়ে মানে ওয়াইয়ের সঙ্গে লুডো খেলি, তাহলে কি এক্সকে ঠকানো হবে?
-কনফেশন শেষ-
কমেন্ট ১ – অশনির গ্রোভার এর ছবি দিয়ে লেখা “ভাই ক্যা কর রহা হে টু”?
কমেন্ট ২ – “ভাই একা আছি, তুই তো ভালোই মস্তি মারছিস, একজনের সঙ্গে সেট করে দে প্লিজ।
কমেন্ট ৩ – ডিউরেক্স আছে তো ভাই?
কমেন্ট ৪- এটা কোন মেয়ে পোষ্ট করলে সবাই এতক্ষণে মেয়েটাকে যা তা বলে গালাগাল দিত। ছেলে পোষ্ট করে হিরো হয়ে গেল।
কমেন্ট ৫ – ভাই, এরকম বন্ধু কোথায় পাওয়া যায় জানাস”।
…
কমেন্টগুলো দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল দাশু। সেই করেছিল কনফেশনটা। এখন তার কাজ হয়েছে সারাদিন ধরে এসব পেজে এই ফেক কনফেশনগুলো পাঠানো। নিজেই পাঠায়, কমেন্টগুলো দেখে নিজেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে।
আরেকটা কাজ আছে তার। এই পেজগুলোতে কিছু মেয়ে কমেন্ট করে। ও ধরে ধরে তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। বেশিরভাগই রিজেক্টেড হয়। কেউ কেউ অ্যাড করে নেয়। সময় কাটানো দরকার। এভাবেই কাটায় সে।
ফোন বাজছে। দাশু দেখল ইভান ফোন করছে। সে মুখ বিকৃত করল। ইভান ফোন করা মানেই ওর ঘ্যান ঘ্যান শুনতে হয়। ইভান খুব ফ্রাস্ট্রু খেয়ে থাকে। এখন যদি ফোন নাও ধরে, প্রথমে ফোন করে যাবে। তারপর সরাসরি বাড়ি চলে আসে। তার ঘরে কেউ আসুক, দাশু পছন্দ না। তার ঘর মানে তার পৃথিবী। সেখানে বাইরের লোকের অনুপ্রবেশ ঘটবে কেন?
বিরক্ত মুখে ধরল ফোনটা, “হ্যাঁ, বল”।
“শোন না ভাই, আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি”। খুব চাপ শোনাল ছেলেটার গলা।
দাশু বলল, “কী জিনিস?”
ইভান বলল, “আমার মনে হয় আমি স্ট্রেট না, গে”।
দাশু বলল, “এটা আবার কখন আবিষ্কার করলি”?
ইভান বলল, “আরে সেক্স এডুকেশন দেখছিলাম। আমার মনে হল আমি অ্যাডামের মত”।
দাশু বলল, “সেটা তো ভাল ব্যাপার। হয়ে যা। পার্টনার খোঁজ”।
ইভান বলল, “সেই ব্যাপারেই তো ফোন করছি ভাই”।
দাশু বলল, “মানে?”
ইভান বলল, “আমার মনে হচ্ছে আমি তোর প্রতি একটা অ্যাট্রাকশন ফিল করছি”।
দাশু রেগে গিয়ে বলল, “ফোট বাল। বালস্য বাল হরিদাস পাল। তুই গে হয়েছিস, তোকে সাপোর্ট দেব ঠিক আছে, কিন্তু আমি কেন গে হতে যাব?”
ইভান বলল, “শোন ভাই, রাগ করিস না। ভেবে দেখ। নিজের সঙ্গে কথা বল। তুই কি পেছন মারার ভিডিও পছন্দ করিস না?”
দাশু বলল, “সেটা ছেলেদের না। মেয়েদের। আজব চুতিয়া তো তুই! এ তুই ফোন রাখবি? অন্য কাউকে দেখ”।
ইভান বলল, “একবার আমরা ট্রাই তো করতে পারি”।
দাশু রেগে গিয়ে বলল, “ফোট বাল”।
ইভান দুঃখিত গলায় বলল, “হ্যাপি এপ্রিল ফুল ভাই। বাই”।
দাশুর ক্যালেন্ডারে চোখ গেল। সে খিস্তি দিতে শুরু করল। ইভান খিক খিক করে হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিল।
দাশু খেয়ালই করে নি তারিখটা। সকাল থেকে কোথাও যায় নি। ইভান এসব করবে সে ভাবতেই পারে নি। এটা মোটেও ভাল প্র্যাঙ্ক ছিল না। নাকি সত্যি সত্যিই ইভান ওসবই ভাবে, এপ্রিল ফুলের নামে কথা ঘুরিয়ে দিল?
দাশু মনে মনে বলল, “খেয়েছে”।
২
“কোভিড রেস্ট্রিকশন ওঠা আশীর্বাদ না অভিশাপ?”
“অবশ্যই অভিশাপ। অনলাইন এক্সামগুলো দিব্যি চলছিল”। “ঠিক আছে, কিন্তু আশীর্বাদও বটে। কোভিডের সময় এভাবে ‘করো’ হোটেলে আসা যেত?”
“তাও ঠিক”।
অঞ্জনা এবং শমীক। দুজন ক্লাস টপার। এক একজন অল্টারনেট করে পার সেমিস্টার ইউনিভারসিটি টপ করে। দুজনেই ভীষণ পড়ুয়া। দুজনে মিলে একদিন ঠিক করল, তারা হোটেলে যাবে। চূড়ান্ত সেক্স করবে।
ফলস্বরূপ তারা “করো” হোটেল ফ্র্যাঞ্চাইজির একটা হোটেলে এসেছে। রিসেপশনে তাদের আইডির জেরক্স নিল একজন মহিলা। আড়চোখে তাদের দিকে তাকিয়েছে। দুজনে এই রিসেপশনিস্ট সামলানো নিয়ে একটা ফ্লো চার্ট বানিয়ে এসেছিল গত রাতেই। লেখা ছিল “রিসেপশনিস্ট যদি সন্দিগ্ধ চক্ষু না দেয়- চাপ নেই। ফুটে যাক। যদি দেয়- পাত্তা দেব না”।
তারা পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টা না করেই রুমে এসেছে।
দুজনে জামা কাপড় পরে খাটে বসেছে। কেউ কারোটা খোলার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র উৎসাহ দেখাচ্ছে না। দুজনেই চূড়ান্ত লেভেলের টেনশন খেয়ে কোভিড নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।
অঞ্জনা বলল, “একটা জাভা স্ক্রিপ্ট রান করিয়েছিলাম কাল, স্যার যে অ্যাসাইনমেন্টটা দিয়েছিল। চারটে এরর দেখাচ্ছে বুঝলি?”
শমীক ভাবছিল অঞ্জনাকে একটা চুমু খাবে কিনা। প্রশ্নটা শুনে সিঁটিয়ে গিয়ে বলল, “ঠিক আছে আমি দেখব”।
অঞ্জনা বলল, “তুই কি এই ঘরে আমরা কী করব, তার কোন অ্যালগো বানিয়েছিলি?”
শমীক বলল, “না মানে, ওই দাশু আছে না, ও আমাকে একটা লিংক দিয়েছিল। মানে ফার্স্ট টাইম কী কী করে সেটা দেখার জন্য”।
অঞ্জনা রেগে গেল, “তুই পর্ণ দেখলি?”
শমীক জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “আরে ধুর। ওভাবে ভাবছিস কেন? ব্যাপারটাকে একটা এডুকেশনাল ব্যাপার হিসেবে দেখ। কী কী করতে হয়, কীভাবে করতে হয়”।
অঞ্জনা বলল, “সে ক্ষেত্রে তুই কামসূত্র পড়তে পারতিস। মানে অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্স পাওয়া ছেলে কীভাবে চিপ পর্ণ দেখে, ভাবাই যায় না”।
শমীক বলল, “তুই কোন দিন দেখিস নি?”
অঞ্জনা বলল, “একবার দেখেছিলাম। এই কোভিডের সময় কী করে একটা মেয়ে একটা ছেলের ওই ইউরিনের জায়গায়… শিট”।
শমীক গলা খাকড়ে বলল, “স্টাডি বলছে, সিমেনে প্রচুর প্রোটিন থাকে। ইট ক্যান হেল্প ইউ, মানে…”
অঞ্জনা বলল, “আমার করার দরকার নেই। আচ্ছা, তুই একটা কাজ কর দেখি। আমার হাত ধর”।
শমীক বলল, “তারপর?”
অঞ্জনা বলল, “হাত ধরলে কোন সেন্সেশন হয় নাকি পরীক্ষা করে দেখ”।
শমীক বলল, “ঠিক আছে”।
শমীক অঞ্জনার হাত ধরল। অঞ্জনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শমীক অঞ্জনার গলায় চুমু খেল। অঞ্জনা সঙ্গে সঙ্গে সরে গিয়ে বলল, “শিট, শিট শিট। কী করছিস? হুট করে কিস করতে গেলি কেন?”
অঞ্জনা তার ব্যাগ হাতড়াতে শুরু করল।
শমীক অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “কী করছিস?”
অঞ্জনা বলল, “স্যানিটাইজার দিতে হবে। জারম চলে আসবে তো”।
শমীক বলল, “তুই তো কাল বলছিলি উই ক্যান হ্যাভ সেক্স”।
অঞ্জনা বলল, “উইথ প্রপার প্রোটেকশনও বলেছিলাম গাধা। গলা চাটাচাটি করতে বলেছিলাম কি? তুই কন্ডোম ইউজ করবি, আমরা দুজনের ভারজিনিটি ব্রেক করব দ্যাটস ইট। তার জন্য চাটাচাটি করার কী দরকার?”
শমীক বলল, “এগুলো ইয়েতে মানে…”
অঞ্জনা বলল, “পর্ণে দেখেছিস তাই না? ওসব দেখলে হবে? ওগুলো বখে যাওয়া লোকেরা করে”।
শমীক বলল, “আমি যতদূর জানি, ওসব বখে যাওয়া, ভাল যাওয়া, সব লোকেরাই করে। মানে যে লোকটা নোবেল পেয়েছে, আর যে লোকটা জুয়া খেলে, তারা সবাই এভাবেই সব কিছু করে”।
অঞ্জনা চোখ ছোট ছোট করে বলল, “তুই ভেতরে ভেতরে খুব পারভারটেড তো, তোকে দেখলে এরকম মনে হয় না। চোখে অত বেশি পাওয়ারের চশমা পরে ঘুরে বেড়াস, আর ভেতরে ভেতরে এত? চল, বেরো, আমার কোন ইচ্ছা নেই। চল চেক আউট করে বেরোই”।
শমীক ব্যাজার মুখে বলল, “হয়ে গেল?”
অঞ্জনা উঠে দাঁড়াল, “হ্যাঁ। আমি আরো ভাবি এটা নিয়ে। তোর তো কোন চিন্তা নেই, হোটেলের টাকা দুজনে সমান ভাবে ভাগ করে নেব। ঠিক আছে?”
শমীক মাথা নাড়ল। তাকে দেখে মোটেই মনে হল না কিছু ঠিক আছে।
৩
“ওভাবে ঝাড়ি মারে? এস ডি ঠিক বুঝেছে। আমি শিওর”।
চাউয়ের উপরে কাঁটাচামচ দিয়ে আক্রমণ শানাতে শানাতে শিঞ্জিনী বলল। রায়া লজ্জায় লাল হবার ভান করে বলল, “আমি তো তাই চাই”।
শিঞ্জিনী বলল, “এই যে সারাক্ষণ এস ডির প্রোফাইল স্টক করে যাচ্ছিস, কী লাভ হয়? তোকে তো জীবনেও পাত্তা দেবে না”।
রায়া বলল, “পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই। হালকা দাড়িটা রেখেছে দেখেছিস? ক্লাসের গোটা সময়টা জুড়ে আমার দিল ধকধক করছিল”।
শিঞ্জিনী বলল, “হ্যাঁ, ওইসবই দেখে যা তুই। তোর হয়ে গেছে”।
রায়া বলল, “আর ওই যে জামার হাতাটা কনুই অবধি ভাঁজ করল? উফ, জাস্ট ভাবা যায় না রে”।
শিঞ্জিনী বলল, “হয়েছে। এবার থাম। বেশি হয়ে যাচ্ছে। তুই কি খাবি না? গোটা চাউটা আমি একাই খাবো”?
রায়া বলল, “এস ডি কে পেলে অবশ্যই খাবো। তখন তোকেও ভাগ দেব না। মিলিয়ে নিস”।
শিঞ্জিনী চোখ নাচাল, “পুরোটা খাবি, না সিলেক্টিভ বডি পার্টস?”
রায়া বলল, “সেটা আমি দেখব। হেব্বি লাগে ভাই, যা বলিস, বেশি দেখবি না হ্যাঁ, তোর জামাইবাবু হয়”।
শিঞ্জিনী বলল, “কিসসু হয় না। শোন, এসব ওরা মজা নেয়। তোকে এ জন্মে বিয়ে করবে না। খুব লেগে থাকলে খেতে টেতে দিতে পারে, মানে তুই যা বলতে চাইছিস”।
রায়া ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, “আমার সৌরভ মোটেও ওরকম না। আমি বিয়ে করেই খাব। মিলিয়ে নিস”।
দাশু ওদের টেবিলে এসে বসতেই রায়া তড়িঘড়ি বলল, “ব্রেকের পরে ল্যাব আছে, তাই না?”
দাশু বলল, “এই শোন, কেউ একটা আমাকে অ্যাসাইনমেন্টটা দে না। আমার কিচ্ছু হয় নি। আবার ঝাড় খাব। আমি টুকে দিয়ে দেব, প্রমিস”।
শিঞ্জিনী বলল, “তোর বন্ধুর থেকে নে না। আমার কাছে চাইছিস কেন? কোথায় তেনারা? শমীক কোথায়?”
দাশু বলল, “কে জানে কোথায় গিয়ে মরছে। দুটোতেই আজ কলেজ বাংক মেরেছে। এরা কোথায় গিয়ে কী করছে কে জানে?”
শিঞ্জিনী ব্যাগ থেকে অ্যাসাইনমেন্টটা বের করে বলল, “এটা দিলাম। সহি সালামাত আমার কাছে ফেরত আসা চাই কিন্তু”।
দাশু বলল, “এই তো লিখে নিয়েই তোকে ফেরত দিচ্ছি”।
দাশু অন্য টেবিলে বসে শিঞ্জিনীর অ্যাসাইনমেন্ট কপি করতে শুরু করল। শিঞ্জিনী ফিসফিস করে রায়াকে বলল, “টপার দুটো একসঙ্গে ডুব মেরেছে। নিশ্চয়ই গেটের টিউশন নিতে গেছে বল, নাকি জি আর ই”?
রায়া বলল, “আমার ওসব জেনে লাভ নেই। যে যা ইচ্ছে করুক। তুই আমাকে কয়েকটা উপায় বল না, আমি ওর সঙ্গে একলা হতে চাই”।
শিঞ্জিনী বলল, “তুই না ভীষণ ইয়ে হয়ে যাচ্ছিস। খুব পর্ণ দেখছিস নাকি?”
রায়া বলল, “আমার যা ফ্যান্টাসি আছে, আলাদা করে পর্ণ দেখার কোন দরকার নেই। আমি কী ভেবেছি শোন। আমি ওর কাছে সন্ধ্যেবেলা টিউশন নিতে যাব। রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে, ওর বাড়িতে কেউ নেই। হঠাৎ তুমুল ঝড় উঠল। বিদ্যুৎ চমকাল। লোডশেডিং হয়ে গেল। আমি ‘ও মা গো’ বলে ওকে জাপটে ধরলাম… রোম্যান্টিক না, বল?”
শিঞ্জিনী বলল, “এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে। কাকীমা মালদা থেকে এলে আমি বলে দেবো, কাকীমা তোমার মেয়ে বিগড়ে গেছে। দেখ আমি বলবই”।
রায়া বলল, “তাহলে আমিও বলে দেব, রাত হলেই তুই লুকিয়ে লুকিয়ে জনি সিন্সের ঠিকুজি ঘাঁটিস”।
শিঞ্জিনী বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুই তো কিছুই দেখিস না, সব আমিই দেখি”।
রায়া বলল, “তুই আমাকে অলরেডি একটা কেস খাওয়াবি, আর আমি শুধু কেস খাবো? কিছুই করব না? দেখা যাবে বন্ধু, হাম ভি কিসিসে কম নেহি। আর শোন, তুই এখানে বসে বসে চাউয়ের গুষ্টি উদ্ধার কর, আমি দেখি আমার জানেমনের রুমে কোন ছুতোনাতায় ঢুকে পড়তে পারি নাকি”।
শিঞ্জিনী বলল, “যা পারিস কর, যদি সাকসেসফুল হোস, বলিস প্রোটেকশন ইউজ করতে, ঠিক আছে?”
রায়া বলল, “শুয়ার”।
৪
তার ল্যাবে বসে সৌরভ ক্লাসটেস্টের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করছিল। কাঁচের জানলার দিকে চোখ পড়তে দেখল কেউ ল্যাবের ভেতর উঁকি মারছে। সে প্রথমে পাত্তা দিল না। মিনিট খানেক পর দেখল ছায়ামূর্তিটা যায় নি। সৌরভ দরজা খুলে বেরিয়ে দেখল রায়া দাঁড়িয়ে আছে।
সে অবাক হল, “তুমি এখানে কী করছো?”
রায়া ঠিক করে এসেছিল কী বলবে। বলল, “স্যার, ক্লাসের নোটসটা মিস করে গেছিলাম। আমাকে লাস্ট প্রোগ্রামটা একবার বুঝিয়ে দেবেন?”
সৌরভ বলল, “এখন তোমাদের ল্যাব আছে না? ল্যাব সেরে এসো, বুঝিয়ে দেবো। কাজ করছি একটা”।
রায়া বলল, “স্যার আপনি টিউশন দেন?”
সৌরভ ভ্রু কুঁচকাল, “টিউশন? কেন টিউশন লাগবে কেন? তুমি তো ক্লাস কর। ঠিক ঠাক ক্লাস ফলো করলে তো টিউশনের দরকার পড়ে না”।
রায়া বলল, “না মানে স্যার মাঝে মাঝে আটকে যাই”।
সৌরভ বলল, “সেটা ঠিক আছে, কোন প্রব্লেম হলে এখানেই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে”।
রায়া কয়েক সেকেন্ড সৌরভের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “ঠিক আছে স্যার। আসি”।
সৌরভ বলল, “ঠিক আছে”।
সৌরভ ল্যাবের ভেতর ঢুকতেই রায়া দরজার দিকে তাকিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল, “আমি একটা গাধা। আমার কিছু হবে না”।
আবার ক্যান্টিনে গেল সে। শিঞ্জিনী তাকে দেখে গালে হাত দিয়ে গম্ভীরভাবে তাকে দেখার ভান করল। রায়া চেয়ারে বসে পড়ে বলল, “ধুস”!
শিঞ্জিনী বলল, “বাথরুমে নিয়ে গিয়ে তুমুল সেক্স করল এস ডি?”
রায়া শিঞ্জিনীর হাতে একটা চিমটি কেটে বলল, “আস্তে কথা বল। কেস খাওয়াবি নাকি?”
শিঞ্জিনী গলা নামিয়ে বলল, “হল কিছু?”
রায়া বলল, “কী হবে? বোঝে নাকি ওসব? দেখলেই কেমন মন্টেসরি স্কুলের টিচারদের মত বিহেভ করে। বোঝে না নাকি?”
শিঞ্জিনী বলল, “তাহলে তুই বরং একটা কাজ কর। স্ট্রেট গিয়ে বলে দে, স্যার… সরি স্যার তো বলবি না। স্ট্রেট গিয়ে বলে দে, আমার এই ভরা যৌবন তোমার জন্য বিচের ঝাউবন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌরভ। এসো, আমার ঝাউবনগুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে যাও”।
শিঞ্জিনী খিল খিল করে হেসে উঠল। রায়া বলল, “থাম। দাশু শুনে নিলে পুরো কেচ্ছা রটিয়ে দেবে। মালটা পুরো সিএনএন”।
শিঞ্জিনী দাশুর দিকে দেখে নিয়ে রায়াকে বলল, “শুনবে না। হেডফোন লাগানো আছে। তার মানে গান শুনছে। শোন, তোকে বলি কী, এভাবে হয় না। তুই বরং ছেড়ে দে। আমি শুনেছি নীলাঞ্জনের তোর উপর চাপ আছে। ওই দিকে কনসেন্ট্রেট কর”।
রায়া বলল, “ধুস। নীলাঞ্জন ঠিক করে দাঁত মাজে না। সেদিন দেখি দাঁতের ফাঁকে খাবার লেগে আছে। ওসব আমার পোষায় না। এস ডিকে দেখেছিস? আহা, সব সময় মিস্টার পারফেক্ট হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে”।
শিঞ্জিনী বলল, “সেটা না, তোর একটু এজেড পেনসিল পছন্দ, সেটা বল। ভাই, সব পেন্সিল দিয়ে কিন্তু সাদা রঙের কালিই বেরোবে। আমি বলি শোন, স্যার ট্যারের কেসগুলো একটু ভজঘট হয়। ওসব দিকে বেশি দেখিস না”।
রায়া বলল, “ওভাবে ক্রাশ চেঞ্জ করা যায় নাকি? এটা কি ক্রাশ না প্যান্টালুন্স থেকে কেনা পুজোর জামা যে গেলেই চেঞ্জ করে নেওয়া যায়? তোর কি দিন দিন মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? একটা ভাল উপায় বলতে পারিস না কী করে আমি এস ডির সঙ্গে ছক করব, যত উল্টো পাল্টা কথা বলে আমার ফোকাসটাকেই চেঞ্জ করে দিস”।
শিঞ্জিনী হাসতে হাসতে বলল, “তাহলে এত চাপ না নিয়ে সরাসরি বলে দে। কী আর করবে? কিছুটা জ্ঞান দেবে। বলবে তুমি আমার ছোট বোনের মত। তুই তখন বলবি বাকি সবাই বোন হোক। আমি হব না। সাহস কর মেরি শের”।
রায়া বলল, “আজ সাহস নেই বলে সবাই আমায় হ্যাটা দিয়ে দিচ্ছে। ঠিক আছে ঠিক আছে আমিও একদিন দেখিয়ে দেব এস ডিকে আমার বয়ফ্রেন্ড করে। তখন কোশ্চেন পেলেও তোকে একটাও কিছু বলব না”।
শিঞ্জিনী বলল, “অ্যাঁ? তুই এই জন্য এসডির সঙ্গে প্রেম করতে চাস? কোশ্চেন পেলেই হল?”
রায়া বলল, “না। ও আমাকে গোটা কোশ্চেন পেপার দিয়ে দিলেও আমি দেখব না। আমি শুধু ওকে দেখব”।
শিঞ্জিনী বলল, “হ্যাঁ, তুমি তো শুধু ওর গোটাটা দেখবে। কোশ্চেন পেপার দিয়ে আর কী করবে?”
ইভান ক্যান্টিনে ঢুকল। সেটা দেখা মাত্র দাশু তাড়াতাড়ি তাদের টেবিলে চলে এল। শিঞ্জিনী বলল, “হয়ে গেছে তোর অ্যাসাইনমেন্ট টোকা?”
দাশু বলল, “ধুস, আমি তো আমার পেছন বাঁচাচ্ছি”।
শিঞ্জিনী ভ্রু কুঁচকাল, “মানে?”
দাশু বলল, “তোর সেটা বোঝার দরকার নেই। খুব ভয়। চারদিকে ভয়ের পরিবেশ”।
শিঞ্জিনী অবাক হয়ে বলল, “কী সব আজেবাজে কথা বকে যাচ্ছিস?”
দাশু বলল, “তোর বোঝার দরকার নেই। চুপচাপ বসে থাক”।
শিঞ্জিনী কিছুই বুঝল না।
৫
সুমনা টিভি দেখছিলেন। কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখলেন মেয়ে চলে এসেছে। অবাক হয়ে বললেন, “এত তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল আজ?”
অঞ্জনা মিথ্যে বলতে পারে না। মিথ্যে বললে তার পেট ফেঁপে যায়। গোটা রাস্তা সে ভাবতে ভাবতে এসেছে মাকে ফিরে বলবে ল্যাব ক্যান্সেল হয়ে গেছে। সেটাই বলল, “স্যার আসেন নি, ল্যাব হল না। চলে এলাম”।
সুমনা বললেন, “ঠিক আছে। চেঞ্জ করে নে। খাবি তো?”
অঞ্জনা সোফায় বসে বলল, “দাও”।
সুমনা রান্না ঘরে গিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করতে দিলেন। অঞ্জনার অস্বস্তি হচ্ছিল। শুধু মনে হচ্ছিল তার গলায় এখনও শমীকের চুমুর দাগ আছে। নিজেকেই নিজে বলল, “উঃ, স্যালাইভা! আই হেট ইট মোস্ট। স্নান করে নি”। উঠে বাথরুমে ঢুকে গেল সে। শাওয়ার চালিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পুরো ভিজে গায়ে টাওয়েল জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরোল।
সুমনা অবাক হয়ে বললেন, “তুই স্নান করে গেছিলি না? এখন চুল ভেজালি কেন আবার?”
অঞ্জনা বলল, “আরে রাস্তায় এত পলিউশন, কোথায় আবার কোন ড্রপলেট লেগেছে, কী দরকার, রিস্ক নিলাম না”।
সুমনা বললেন, “ঠিক আছে, তাহলে ভাল করে গা মাথা মুছে নে। ওসব নিয়ে ফ্যানের তলায় বসলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে”।
অঞ্জনা বলল, “মুছব, খেয়ে নি”।
টেবিলে ভাত বাড়লেন সুমনা। অঞ্জনা খেতে বসলে তার সামনে বসে বললেন, “কলেজের কী খবর?”
অঞ্জনা বলল, “কোন খবর নেই। অ্যাজ ইউজুয়াল চলছে”।
সুমনা বললেন, “সিলেবাস শেষ?”
অঞ্জনা বলল, “তোমার আর কি কোন কথা থাকে না মা? সব সময় জিজ্ঞেস কর সিলেবাস শেষ নাকি!”
সুমনা বললেন, “আর কী বলব বল? আমি কি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি যে কোন সাবজেক্টের ব্যাপারে ডিটেলে তোকে কিছু বলতে পারবো?”
অঞ্জনা বলল, “অন্য কথাও তো বলতে পারো। কলেজ ছাড়া জীবনে অন্য অনেক কিছুই তো থাকে”।
সুমনা বলল, “আমার তুই ছাড়া আর কী থাকতে পারে বল? আমি অন্য কিছু ভাবিও না আর”।
অঞ্জনা বলল, “আমারও তো লাইফে পড়াশুনা ছাড়া অন্য কিছু থাকতে পারে মা”।
সুমনা বললেন, “অন্য কিছু? তুই কি প্রেম ট্রেম করছিস নাকি?”
অঞ্জনা বলল, “উফ। ভাল লাগে না। এসব কী কথা?”
সুমনা বললেন, “কী কথা না কথা, সেসব নিয়ে কিছু বলছি না। তবে এখনই প্রেম করতে যাস না। যে কোন জিনিসে মেয়েদের কষ্টটাই বেশি। আর আশা করি তোকে আন এক্সপেক্টেড প্রেগনেন্সী নিয়ে আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না?”
অঞ্জনা বলল, “তুমি আবার অত দূর চলে গেলে? প্রেম থেকে আন এক্সপেক্টেড প্রেগনেন্সী? সত্যি। তুমিই পারো। ফেসবুকের দাদা দিদি ভক্ত পাঠকদের মত বলতে ইচ্ছে হয়, কী করে পারেন দিদি? কী করে পারেন?”
সুমনা বললেন, “বুঝবি না, এখনই বুঝবি না। মেয়ের মা হলে বুঝতে পারবি কেমন টেনশন থাকে। তোদের বয়সী… শুধু তোদের বয়সী বলব কেন, কত ছোট ছোট মেয়েগুলো এসব করতে গিয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপর কী করতে হবে কিছুই জানে না। পার্মানেন্ট ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে কতজনের। শুধু তো পড়াশুনা করলে হবে না, এ সমস্ত কিছুই শিখতে হবে। কেন আমি বার বার বলি এসব ব্যাপারে চোখ কান খোলা রেখে চলতে, যদি বুঝতিস”।
অঞ্জনা তার বাঁ হাত দিয়ে মায়ের হাত ধরে বলল, “আমি চোখ কান মুখ নাক সব খোলা রেখে চলি। তুমি অকারণ টেনশন কোর না তো”।
অঞ্জনার ফোন বাজছিল। শমীক। অঞ্জনা সুমনার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলল, “বল তো ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছি। এখন বকবক করতে ভাল লাগছে না”।
সুমনা বলল, “শমীক তো? কলেজের ব্যাপারেই ফোন করছে হয়ত। কেন ধরবি না? ধর। ”
অঞ্জনা হতাশ চোখে মার দিকে তাকিয়ে ফোনটা ধরল।
৬
নীলিমেশ দুপুরেই মদ টেনেছেন। সোফায় পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিলেন। শমীক ঘরে ঢুকে বলল, “দরজা খুলে রেখে শুয়ে আছো? সব চুরি হয়ে যাবে তো”।
নীলিমেষ উত্তর দিলেন না। শমীকের খিদে পেয়েছিল। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখল মাসীর রান্না করে যাওয়া ডিমের তরকারির সবক’টা ডিম বাবা খেয়ে নিয়েছে।
সে আলু আর ঝোল দিয়ে খানিকটা ভাত খেয়ে তালা খুলে তার ঘরে ঢুকল। সে দরজা বন্ধ করে যায় বাইরে গেলে। নইলে নীলিমেষ তার ঘরের বারোটা বাজিয়ে দেন। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শমীক অঞ্জনাকে ফোন করল। ফোন রিঙ হয়ে গেল। অঞ্জনা ধরল না। আবার ফোন করল। অঞ্জনা এবার ধরে বলল, “আমি খাচ্ছি। খেয়ে ফোন করি?”
শমীক বলল, “ঠিক আছে”।
ফোন রেখে সে খাটে শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইল। অন্যান্য দিন এত তাড়াতাড়ি ফেরা হয় না। হোটেলে যাবার কথাটা ভাবলে কেমন লজ্জা লাগছে। অঞ্জনা কি রেগে গেল? মহা জ্বালা তো! ওই তো বলেছিল এই এক্সপেরিমেন্টটা করে দেখতে হবে।
একটা দিনের কলেজ মিস গেল। কলেজ না গেলে অঞ্জনার থেকেই নোটস নিত সে। অঞ্জনাও যায় নি। তাহলে শিঞ্জিনীর থেকে নিতে হবে। শিঞ্জিনী মাঝে মাঝে কেমন অদ্ভুত আচরণ করে। তার অঞ্জনার সঙ্গে বন্ধুত্বটা নিয়ে খোঁচা দিয়ে দিয়ে কথা বার্তা বলে। আজকাল শিঞ্জিনী অঞ্জনার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছে। হয়তো শিঞ্জিনী অঞ্জনাকে হিংসে করে। করতে পারে। শমীকের তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু শিঞ্জিনী তার সঙ্গে কেন খারাপ ব্যবহার করে সেটা বুঝতে পারে না।
ফোন বাজছিল তার। শমীক দেখল অঞ্জনা ফোন করছে। তাড়াতাড়ি ধরল, “বল। খেলি”?
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ, খেয়েছি। শোন, আজকে একটা বিরাট ভুল কাজ করে ফেললাম। ঐতিহাসিক ভুল যাকে বলে। আমাদের আরো বেশি চিন্তা করে হোটেলে যাওয়া উচিত ছিল”।
শমীক গুটিয়ে গেল, “তা ঠিক। তুইই তো জোর করছিলি”।
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ করছিলাম। পরে ভাল লাগল না। তুই ঠিক করে ব্রাশ করিস তো? গলাটা চেটে দিলি, আমার কেমন ঘেন্না ঘেন্না লাগছে”।
শমীক বলল, “হ্যাঁ। ব্রাশ করি। ব্রাশ করব না কেন? কে ব্রাশ করে না?”
অঞ্জনা বলল, “অনেকেই করে না। আমার ঘেন্না লাগছে। ভাল লাগছে না”।
শমীক বলল, “আই অ্যাম সরি”।
অঞ্জনা বলল, “তোর সরি বলার কিছু নেই তো। আমাদের দুজনেরই দোষ আছে। খামোখা একটা দিন নষ্ট হল। যাক গে, তুই খেয়েছিস?”
শমীক বলল, “হ্যাঁ। খেলাম”।
অঞ্জনা বলল, “কী খেয়েছিস?”
শমীক বলল, “ডিমের ঝোল উইদাউট ডিম উইথ আলু আর ভাত”।
অঞ্জনা বলল, “ডিম কেন খাস নি?”
শমীক বলল, “বাবা খেয়ে নিয়েছে”।
অঞ্জনা বলল, “তোর পেট ভরেছে?”
শমীক বলল, “হ্যাঁ। ভরেছে”।
অঞ্জনা কয়েক সেকেন্ড ফোন ধরে থেকে বলল, “তুই একটা স্টুপিড। আমরা বরং হোটেল থেকে বেরিয়ে কোন রেস্তোরাঁয় কিছু খেয়ে ফিরতে পারতাম। কেন মনে করাস নি?”
শমীক বলল, “তুই এমন তাড়া দিলি, আমার মাথাতেই আসে নি সেসব। ও ঠিক আছে, চিন্তার কিছু নেই, আমার পেট ভরে গেছে। বাবা মনে হয় দুপুরেই মদ খেয়ে ফেলেছিল। মদ খেলে বাবার খিদে বেড়ে যায়। আমার অভ্যাস আছে”।
অঞ্জনা বলল, “আঙ্কেলের ব্যাপারে একটা রিহ্যাবে কথা বলবি বলেছিলি না? কী হল সেটার?”
শমীক বলল, “কথা চলছে। বাবাকে ওখানে পাঠালে আমি এখানে একবারে একা হয়ে যাব, সেটাও সমস্যা। তখন কোন দিন এসে দেখব কাকারা আমাদের এই ঘরগুলিও দখল করে নিয়েছে”।
অঞ্জনা বলল, “তোদের নামে নেই কিছু?”
শমীক বলল, “আমার ঠাকুরদার নামে আছে। কবে কী হবে জানি না। আমার আর ভালও লাগে না”।
অঞ্জনা বলল, “তোর উপরে অনেক চাপ না? এত কিছু সামলে পড়াশুনো করিস কী করে?”
শমীক ম্লান হেসে বলল, “ওটাই একমাত্র এসকেপ রুট বলে। পালাতে হলে কিছু করে তো পালাতে হবে”।
অঞ্জনা বলল, “তুই এই দেশে কিছুতেই থাকবি না, তাই তো?”
শমীক বলল, “থাকব না”।
অঞ্জনা বলল, “আর আঙ্কেলকে কী করবি?”
শমীক বলল, “জানি না”।
অঞ্জনা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে ফোনটা ধরে বলল, “সরি রে”।
শমীক অবাক হল, “কেন?”
অঞ্জনা বলল, “কিছু না। কাল দেখা হচ্ছে। চল বাই”।
শমীক বলল, “বাই”।
৭
শিঞ্জিনী পিজিতে ফিরে রোজ বাড়িতে ফোন করে। সারাদিন পর বাবা মার গলা না শুনলে তার ভাল লাগে না। বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দেখল শমীক ফোন করছে।
বাড়িতে ফোন করা শেষ হলে সে শমীককে কল ব্যাক করল। শমীক ফোন ধরেই বলল, “আজ খুব শরীর খারাপ ছিল বলে কলেজ যেতে পারি নি রে, ক্লাসে কী কী হয়েছে একটু স্ক্যান করে পাঠিয়ে দিবি প্লিজ?”
শিঞ্জিনী বলল, “তোদের দুজনের একসঙ্গেই শরীর খারাপ হল? দারুণ ব্যাপার তো?”
শমীক না বোঝার ভাব করল, “দুজনের মানে?”
শিঞ্জিনী বলল, “তুই খুব ভাল করে জানিস আমি আরেকজন বলতে কার কথা বোঝাচ্ছি? ন্যাকা সাজিস কেন অকারণ?”
শমীক থতমত হয়ে বলল, “অঞ্জনার কথা বলছিস? ওর নাম নিয়ে বলবি তো”।
শিঞ্জিনী বলল, “নাম নিয়ে না বললেও তুই খুব ভাল করে জানিস আমি অঞ্জনার কথাই বলছিস। একবারে বেবোধ তুই, এরকম প্রিটেন্ড না করলেও হবে”।
শমীক বলল, “বেবোধ মানে কী?”
শিঞ্জিনী বলল, “বাহ, তোকে তো বাংলা আরবান ডিকশনারি কিনে দিতে হবে রে! বেবোধ মানে জানিস না? নির্বোধ মানে জানিস তো?”
শমীক বলল, “ও হ্যাঁ, এটা জানি। আমাকে তুই নির্বোধ বললি? ভাল ভাল। ভাল করেছিস। এবার কি আমায় ক্লাসওয়ার্কগুলো পাঠাবি, না আরো কিছু বলবি?”
শিঞ্জিনী বলল, “আমি পাঠাতে পারব না রে। আমি আজ কোন ক্লাসেই কোন কিছু নোট করি নি”।
শমীক একটু থমকে গিয়ে বলল, “ঠিক আছে। পাঠাস না। মাঝে মাঝে ভীষণ স্ট্রেঞ্জ বিহেভ করিস তুই। কেন যে এসব করিস কে জানে”।
শিঞ্জিনী বলল, “তোকে কিছু জানতে হবে না। তুই তোর প্রেমিকাকে নিয়ে পড়তে বস”।
শমীক বলল, “ঠিক আছে। বাই রে। দেখি কার থেকে নোটসগুলো পাওয়া যায়”।
শিঞ্জিনী ফোন রেখে সব নোটস মোবাইলের স্ক্যানার দিয়ে যত্ন করে ছবি তুলে শমীককে পাঠিয়ে দিল। শমীক লাভ ইমোজি দিয়ে লিখল “থ্যাংকস”।
শিঞ্জিনী চুপ করে বসে রইল। শমীক অঞ্জনার সঙ্গে ঘুরে বেরোলে তার কেন এত রাগ হয় নিজেই বুঝতে পারে না সে। ওদের দুজনের থেকে তারা তো অনেক পিছিয়েই আছে। সে যতই চোখ কান বুজে পড়াশুনো করুক, অঞ্জনার সমতুল্য সে কোনদিন হতে পারবে না। শুধু মুখস্ত করলেই তো হয় না, পড়াশুনার ক্ষেত্রেও একটা এক্স ফ্যাক্টর নামক বস্তু আছে যেটা ওই দুজনের আছে। কেন সে শুধু শুধু অঞ্জনাকে হিংসে করবে? ওরা দুজন দুজনের জন্যই ঠিক আছে। সে কি আসলে কিছু আশা করেছিল? নিজেকেই প্রশ্ন করতে ভয় লাগে তার। উচিত না। ওরা ওদের মত করে থাক। শমীক মিথ্যে কথা বলছে জেনে অকারণ রাগ করারও কোন দরকার নেই। সে কেন এত বোকা?
রায়া বাথরুমে অনেকক্ষণ নেয়। এতক্ষণ পর স্নান সেরে বেরিয়ে এসে বলল, “বুঝলি, আমি এতক্ষণ ধরে বাথরুমে ভাবছিলাম, সৌরভের তো গার্ল ফ্রেন্ড থাকতে পারে। আমি কী করে জানব আছে কি নেই?”
শিঞ্জিনী বলল, “সৌরভ? বাহ, ভালোই উন্নতি হয়েছে তো তোর?”
রায়া বলল, “তাছাড়া কী বলে ডাকব আমার বরকে? নাম ধরেই তো ডাকব”?
শিঞ্জিনী হেসে ফেলল। গোটা পৃথিবী একদিকে, আর রায়া একদিকে। এক জিনিস নিয়েই সারাদিন কাটিয়ে দেবে। সে বলল, “তুই পড়তে বস মা। এসব নিয়ে বেশি ভাবিস না। যত বেশি ভাববি, তত কেস খাবি”।
রায়া বলল, “কেস খাওয়ার কিছু নেই। আজ একটা কাজ করব। ফেসবুকে ওকে আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবো”।
শিঞ্জিনী চমকে উঠে বলল, “এসব করতে যাস না। আমি কিন্তু তাহলে তোর ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকব না, আগে থেকেই বলে দিলাম। টিচার স্টুডেন্ট ডিসট্যান্স থাকা উচিত। তুই আমার সঙ্গে ছবি দিবি, উনি তো সে সবই দেখতে পাবে”!
রায়া বলল, “তাহলে রিকোয়েস্ট পাঠাবো না বলছিস?”
শিঞ্জিনী কড়া গলায় বলল, “একবারেই না”।
রায়া হতাশ গলায় বলল, “ঠিক আছে। তাহলে কলেজের কনফেশন গ্রুপে একটা জিনিস অ্যানোনিমাসলি কনফেস করি। সেটা করতে পারবো তো?”
শিঞ্জিনী বলল, “যা পারিস কর। আমাকে টানিস না। তোকে আজকাল ঠিক সুবিধের লাগছে না আমার”।
রায়া ফিকফিক করে হাসতে হাসতে বলল, “এত ভয়ের কিছু নেই বুন্দু। জীবন বড়ই আনন্দময়”।
শিঞ্জিনী হাই তুলে বলল, “জীবন গু-ময়। শমীক আর অঞ্জনা একসঙ্গে ডুব দিয়েছিল। এখন শমীক বলছে ওর শরীর খারাপ হয়েছিল নাকি”।
রায়া বলল, “হ্যাঁ, শমীকের পিরিয়ড হয়েছিল, অঞ্জনা ওর সেবা করেছে”।
শিঞ্জিনী রায়ার দিকে বালিশ ছুঁড়ে মারল, “ভাগ”।
৮
#২৩৪
f/20
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কলেজের এক স্যারের প্রেমে পড়েছি। ভীষণ ভীষণ প্রেমে পড়েছি। সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ভেবে যাচ্ছি। পড়ায় মন বসাতে পারছি না। সব সময় মনে হচ্ছে, উনি যদি আমার সঙ্গে বিয়ে করেন, তাহলে কী কী করব? আমি তো তাকে মাথায় করে রাখব। সব সময় যা বলবেন, তাই মেনে চলব। কোন লেকের ধারে সূর্যাস্তের সময় স্যারের হাত ধরে চুপ করে বসে থাকব। স্যার আমার একটা ফটো তুলবে। আচ্ছা, কলেজের স্যারের সঙ্গে প্রেম করাটা কি ঠিক না? কিন্তু কী করব? ওকে ছাড়া আমার কলেজের কোন ছেলেকেই ভাল লাগে না। ওকে আমি ভীষণ ভীষণ ভালবাসি। প্লিজ বন্ধুরা, সাজেস্ট কর আমার কী করা উচিত।
… কমেন্ট ১ – শালা আমরা মামণির অভাবে প্রেম করতেই পারলাম না, আর স্যারগুলো এখনো খেলে যাচ্ছে। এভাবে চললে কী করে হবে গুরু?
কমেন্ট ২ – আমাদেরও নাকি হবে, কে জানে বাওয়া কবে? তা বলছি কি ম্যাডাম, স্যারকে বলেই দিন। মামণি পেলে কেউ কি ছাড়ে? ছাড়ে না। কেন খামোখা বুকে কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ? আর যদি স্যার না মানে, তাহলে এই গরীব সিঙ্গল ছেলেটির দিকেও দেখো। আমি তো আছি তোমার জন্য।
কমেন্ট ৩- কে রে? কোন স্যার। এই আমার পছন্দের স্যারের দিকে তাকালে তোর চোখ গেলে নেবো মনে রাখিস।
কমেন্ট ৪ – স্যার, স্যার ও স্যার, উই লাবিউ। কী ভাল ব্যাপার। আহা, চলবে চলবে। আমিও বড় হয়ে টিচার হব। শর্মাজীর ব্যাটার মত বেশি টাকা রোজগার হয়ত করব না, কিন্তু ভাল থাকব।
কমেন্ট ৫ – খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক। সব কলেজেই মেয়েরা স্যারেদের প্রেমে পড়ে। উলটোটা কেন না? জাগো নারী জাগো। …কনফেশনটা কলেজের পেজের পোস্টে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। দাশু সেটা দেখে আরেকটা কনফেশন পোস্ট করে দিল।
#২৩৫
রিপ্লাই টু – কনফেশন নাম্বার ২৩৪
পুরুষ/বয়স আর নাম বলে কী হবে?
বলছি প্রেম করলেই হয় না। আমি বুঝেছি তুমি কে! আমাকে দেখে অতো ঘুর ঘুর করলে এরপরে কান মলে দেব। নিজের পড়ায় মন দাও। ক্লাসের ছেলেরা থাকলে বাইরের ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করার দরকার কী?
… কমেন্ট ১ – উফ, স্যার পুরো শক্ত লউন্ডা। স্যার মাই কী জয়। এরকম স্যার থাকলে একদিন ভারত আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
কমেন্ট ২- বাপরে কী মেজাজ স্যারের। এটা স্যার না অনুব্রত?
কমেন্ট ৩- ও স্যার, বাচ্চাদের কনফেশন পেজে কী করছেন? তারমানে আপনারও পুরকি কম নেই। পুরকি কমান, সাবালক হোন। টিং টিং টিটিং।
কমেন্ট ৪ – যদি আপনি সত্যিই সেই স্যার হন, তাহলে মামণিকে উদ্ধার করুন। দেখবেন “করো” হোটেলে নিয়ে কম্মো সেরে ছেড়ে দেবেন না। বিয়েও করবেন।
কমেন্ট ৫- সবাই এসেছেন, বেশি কথা বলব না। কাজের কথায় আসি। আমার একটা ছেঁড়া জাঙ্গিয়া বিক্রি আছে। কেউ কিনতে চাইলে কাল ক্যান্টিনে বেলা বারোটার সময় কিনে নিয়ে যাবেন। জাঙ্গিয়ার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দিয়ে লাল পিঁপড়ে ঢুকছে বলে আর পরতে পারছি না। যারা জাঙ্গিয়া পরাকালীন পিঁপড়ের কামড় খেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য জাঙ্গিয়াটা রাখা রইল। যাদের আণ্ডাতে জল জমে গেছে, তারা দিব্যি হাওয়া খেলার জায়গা পেয়ে যাবেন। মাত্র একশো টাকা দামে পেয়ে যাচ্ছেন এ শতাব্দীর নবম আশ্চর্য, আমার জাঙ্গিয়া, জাঙ্গিয়া, জাঙ্গিয়া। …
রায়া কনফেশনটা দেখা মাত্র চিৎকার করে উঠল, “এই দেখ, এস ডি রিপ্লাই করেছে”। শিঞ্জিনী শুয়ে ছিল। রায়ার ঝাঁকুনি খেয়ে উঠে পড়ে বলল, “কী হল?” রায়া তাড়াতাড়ি তার ফোনটা শিঞ্জিনীর হাতে দিল। শিঞ্জিনী কনফেশনটা দেখা মাত্র বলল, “এটা এস ডি না। আমি শিওর। কেউ তোর খিল্লি নিয়েছে”। রায়া বলল, “তুই কী করে বুঝলি?” রায়া বলল, “তোর মনে হয় এস ডি সারাক্ষণ এই কনফেশন পেজে কনফেশন দেখবে? হতে পারে? উনি যথেষ্ট সিরিয়াস লোক। এসব মাথাতেই ঢোকাস না”। রায়া রেগে মেগে ফোনটা খাটের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে বলল, “ধুস”!
৯
“মার্কেটে দু ধরণের পাবলিক আছে। এক, যারা বি এফ ওয়ালা মেয়েদের পেছনে ছোটে। দুই, যারা বি ওয়ালা মেয়েদের পিছনেই ছোটে। এই দু নাম্বার পাবলিকরা সিঙ্গল মেয়ে দেখেই না। এরা শুধু কমিটেড মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। আর মজার কথা হল, কিছু কিছু কমিটেড মেয়ে আছে, এই ধরণের ছেলেদের ল্যাজে খেলায়”।
জ্ঞান গর্ভঁ ভাষণ দিয়ে থামল শুভ্র। শুভ্র ক্যাম্পাসিঙে এম এন সিতে চাকরি পেয়ে গেছে। পাস আউট করে জয়েন করতে ছুটবে।
পিকু হোস্টেলের টিটি রুমে এসেছিল সন্ধ্যে বেলা। শুভ্রদার বাণী শোনার জন্য তার ব্যাচের আরো তিনটে ছেলে বসে ছিল। “শুভ্রদা, একটা চূড়ান্ত বাণী দাও গুরু”, বলার পর শুভ্র বিড়ি ধরিয়ে এই কথাটা বলল।
পিকু কথাটা শুনে বলল, “আচ্ছা গুরু, তোমার জি এফ যদি এরকম ছেলেদের পাল্লায় পড়ত, বা ছেলেদের ল্যাজে খেলাত, তুমি কী করতে?”
শুভ্র বিড়িতে লম্বা টান দিয়ে বলল, “বারণ করতাম। একজন ছেলে হয়ে আরেকজন ছেলের কষ্ট চোখে দেখা দেখা যায় না”।
আই টি সেকেন্ড ইয়ারের আমন বলল, “আহারে, তোমার কত দয়ার শরীর দাদা”।
ইসিই লাস্ট ইয়ারের অভিমন্যু রুমে ঢুকে বলল, “জি এফ না থাকলে ওরকম জ্ঞান সবাই দিতে পারে ল্যাও। একটা জি এফ জোটাক, তারপর বুঝবি এসব বড় বড় জ্ঞানের কথা কোথা থেকে বেরোবে”।
অভিমন্যুর কথা শুনে শুভ্র রেগে গিয়ে বলল, “জি এফ নেই? তুই জানিস আমার জি এফ আছে কি নেই? সব জেনে বসে আছিস?”
অভিমন্যু বলল, “থাকলে এখানে বসে বসে আঁটি বাঁধতিস না। কাজ না থাকলে লোকে এই করে”।
শুভ্র আমতা আমতা করে বলল, “তোকে বলে জি এফ বানাবো নাকি আমি? আমার জি এফ অনেক ছোট”।
অভিমন্যু বলল, “সবে জন্মেছে নাকি ভাই?”
এবার জুনিয়ররা হেসে উঠল। শুভ্র রেগে গিয়ে বলল, “না। টুয়েলভে পড়ে। কথা বলছি না কারণ এক্সাম আছে”।
অভিমন্যু খিক খিক করে হেসে বলল, “টু এ এ এ লভ? বাওয়া! ভাবা যায় বুন্দু? ক্লাস টুয়েলভ? তার মানে এখনও নাবালিকা! পক্সো আইনে কেস খাবি তো”!
শুভ্র বলল, “আমার বাড়ি থেকে ছোট বেলা থেকে ঠিক করা আছে। ওসব বুঝবি না”।
অভিমন্যু বলল, “হ্যাঁ, সব কিছু তুইই বুঝবি। বাচ্চাগুলোর কাছে লাভগুরু সাজছিস, লজ্জা লাগে না? একটা প্রেম করলি না কোন দিন, একটা ইমাজিনারি জি এফ সাজিয়ে বসে আছিস, আর বাচ্চাদের জ্ঞান দিচ্ছিস? ছ্যা ছ্যা”।
এক জুনিয়র নিপাট সারল্যে অভিমন্যুকে জিজ্ঞেস করল, “ইমাজিনারি জি এফ মানে কী গো দাদা?”
অভিমন্যু বলল, “মানে কেমিক্যাল লোচা। আসলে কেউ নেই, কিন্তু এ ধরে নিয়েছে আছে। আমাদের দেখাতে হবে তো, ও উন্ডু নয়! তাই না?”
শুভ্র বলল, “আমার কাউকে দেখানোর দরকার নেই। আছে, আছে। তোর আমার জ্ঞান শোনার ইচ্ছে নেই, ভাল কথা। খামোখা পিছনে লাগছিস কেন? নাড়াতে গিয়ে কি পিঁপড়ে কামড়েছে জায়গামত? ঝাঁট না জ্বালিয়ে ফুটে যা”।
অভিমন্যু সিগারেট ধরিয়ে বলল, “ফুটতে যাবো কেন? তুই যা পাবলিক, সত্যিকারের জি এফ থাকলে হোস্টেলের সবাইকে ছবি দেখিয়ে ঘুরে বেরোতিস। তোর কেউ নেই। স্বীকার করে নে। আর জি এফ নেই মানে এসব খামোখা জ্ঞান ঝাড়ারও কোন অধিকার নেই। আচ্ছা, দাঁড়া, আমি পর্দার আড়াল থেকে শুনছিলাম। তুই বলছিলিস না কিছু ছেলে আছে মেয়েদের বি এফ থাকলেই লাইন মারে। আমার কাছে একটা এক্সক্লুসিভ খবর আছে। তোর চাপ সম্পূর্ণার বি এফ হয়েছে। এবার লাইন মারতে পারিস”।
শুভ্র এবার নেতিয়ে গেল। বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি বুঝে নেবো সবটা। আমার বউ আছে, গোকুলে বাড়ছে, তোকে সম্পূর্ণার ব্যাপারে অনেক আগে বলেছিলাম, তাও ক্যাজুয়ালি। তুই সব কথা এত সিরিয়াসলি নিয়ে নিবি কে জানত?”
অভিমন্যু পিট পিট করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, “সম্পূর্ণার বি এফকে চিনবি তুই? নাম জানতে চাস না?”
শুভ্র এবার চেগে গেল, “কোন শুয়োরের বাচ্চা? নাম বল। কেলিয়েই দেব”।
অভিমন্যু বলল, “তার মানে তোর টুয়েলভে পাশ করা কেউ নেই?”
শুভ্র বলল, “থাকলেও আগে সম্পূর্ণার বি এফ কে ক্যালাবো। কে সেটা? বল শিগগিরি”।
অভিমন্যু খিক খিক করে হেসে বলল, “আমি। নে এবার মার। এ দেখ ছবি”।
অভিমন্যু তার মোবাইল বের করে তার আর সম্পূর্ণার একটা সেলফি বের করে শুভ্রকে দেখাল। শুভ্র কয়েক সেকেন্ড সেটা দেখে বাক্যরহিত হয়ে গিয়ে কোন মতে বলল, “সব ফটোশপ। সব ঢপ”।
অভিমন্যু আবার হাসতে শুরু করল। শুভ্র রেগে মেগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।