Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিঃসঙ্গতার একশ বছর – গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস

    গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এক পাতা গল্প607 Mins Read0

    নিঃসঙ্গতার একশ বছর – ১৬

    ১৬

    বৃষ্টি চলে চার বছর এগারো মাস দুদিন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কিছু সময় এসেছিল, যখন সবাই ঢোলা যাজকীয় পোশাক পরে, বৃষ্টি ধরে আসাটাকে উদযাপন করার জন্য অসুখ থেকে আরোগ্য লাভের মতো চেহারা করলেও, শিগগিরই তারা বুঝতে পারে যে এই বিরতিগুলো হচ্ছে আবার কয়েক গুণ বেগে বৃষ্টি নামার পূর্বঘোষণা। প্রচণ্ড ঝড়ে আকাশ ভেঙে পড়ত। উত্তর থেকে পাঠানো ঘূর্ণিঝড় ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে দেয়ালগুলো করে ধ্বংস, আর শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলে আবাদের শেষ কলাগাছটিকেও। মনে পড়ে যায় উরসুলার সেই কথা, যেমনটি ঘটেছিল অনিদ্রা মহামারির সময়, খোদ বিপর্যয়ই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল একঘেয়েমির বিরুদ্ধে। অলসতায় যাতে ভেঙে না পড়ে, তার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল আউরেলিয়ানো সেগুন্দো। যেদিন সেনঞর ব্রাউন ঝড়ের ঘোষণা দেয়, সেদিন সাধারণ কোনো ব্যাপারে বাড়িতে যায় সে, আর ফের্নান্দা দেয়ালকুঠরিতে পাওয়া অর্ধেকটা শিক থেকে বেরিয়ে যাওয়া এক ছাতা দিয়ে তাকে সাহায্য করতে গিয়েছিল, যাতে সে বেরোতে পারে। ‘দরকার নেই’, বলে সে, ‘ঝড় থামা পর্যন্ত এখানেই থাকব আমি।’ অবশ্যই এটা কোনো ধনুর্ভঙ্গ পণ ছিল না কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই সেটাকে পালন করে চলে সে। তার কাপড়চোপড় পেত্রা কতেসের বাড়িতে থাকায় প্রতি তিন দিন অন্তর পরনের কাপড় খুলে শুধু জাঙ্গিয়া পরে অপেক্ষা করত ওগুলো ধোয়ার জন্য। একঘেয়েমি কাটাতে বাড়ির বিভিন্ন খুঁত মেরামতের কাজে লেগে পড়ে সে। কবজাগুলোকে পুনর্বিন্যস্ত করে, তালাগুলোতে তেল দেয়, দরজার কড়ায় স্ক্রু আঁটে ও চৌকাঠ লেভেল করে। অনেক মাস যাবৎ, সম্ভবত হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়ার সময় জিপসিদের ভুলে ফেলে যাওয়া যন্ত্রপাতির এক বাক্স হাতে, ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় তাকে, আর কেউই বুঝতে পারে না যে তার অনিচ্ছাকৃত ব্যায়ামের কারণে, শীতকালীন ক্লান্তিতে, নাকি বাধ্যকৃত উপোসের ফলে, তার পেটটা চুপসে গিয়ে শুধু চামড়ায় পরিণত হয়, ভোজনতৃপ্ত কচ্ছপের মাথাটার রক্তাভা কমে আসে, গলার নিচের ঝোলা মাংস আর তেমন চোখে পড়ে না, সর্বশেষে শরীরের সব জায়গার স্থূলত্ব কমে আসে আর পুনরায় সে নিজের জুতোর ফিতে বাঁধতে পারে। তাকে দরজার হুড়কো ঠিক করতে দেখেও ঘড়িগুলো খুলে ফেলতে দেখে ফের্নান্দার মনে প্রশ্ন জাগে, কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার মতো সে-ও সোনার মাছ গলিয়ে পুনরায় তৈরির বা আমারান্তার শবাচ্ছাদনের কাপড়ে বোতাম খোলা ও লাগানোর, হোসে আর্কাদিও সেগুন্দোর পার্চমেন্ট বারবার পড়ার অথবা উরসুলার স্মৃতি নিয়ে খেলার মতো তাকেও একইভাবে একই জিনিস ভেঙে আবার গড়ার বদভ্যাসে পেয়েছে কি না। সমস্যা হলো বৃষ্টি সবকিছুই নষ্ট করে ফেলত, সবচেয়ে শুকনো মেশিনেও প্রতি তিন দিন অন্তর তেল দেওয়া না হলে গিয়ারের মধ্যে ফুল গজাত, মরিচা ধরত রেশমি পোশাকের সুতোয় আর ভেজা পোশাকে গজাত জাফরান রঙের ছত্রাক। আবহাওয়ায় এতই আর্দ্রতা ছিল যে মাছেরা দরজা দিয়ে ঢুকে ঘরের বাতাসে ভাসতে ভাসতে জানালা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারত। আনন্দঘন এক মূর্ছার মধ্য দিয়ে মৃত্যুবরণ করছে, এমন এক অনুভূতি নিতে এত সকালে জেগে ওঠে উরসুলা, আর সে সবাইকে বলে যে খাটিয়ায় শুইয়ে হলেও তাকে যেন ফাদার আন্তোনিয়ো ইসাবেলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন সান্তা সোফিয়া দে লা পিয়েদাদ তাকে দেখতে পায়, তখন তার পিঠ পিচ ঢালা রাস্তার মতো জোঁক দিয়ে ভরে গিয়েছে। একটা একটা করে ছাড়িয়ে নিয়ে আগুনে ফেলে ওগুলোকে মারা হয় সমস্ত রক্ত শুষে শেষ করে ফেলার আগেই, বাড়ির ভেতরে খাল কাটার প্রয়োজন পড়ে পানি সরানোর জন্য, যাতে করে ব্যাঙ ও শামুকগুলোকে মেঝে থেকে সরানো যায়, আর খাটের পায়া থেকে ইট সরিয়ে আবার জুতো পায়ে হাঁটা যায়। বিভিন্ন ছোটখাটো মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, এমন ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আউরেলিয়ানো সেগুন্দো বুঝতে পারে না যে সে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, যে বিকেলে দোলচেয়ারে বসে দ্রুত ঘনিয়ে আসা সন্ধেটাকে তাকিয়ে দেখছিল আর পেত্রা কতেসের কথা ভাবছিল কোনো রকম উত্তেজনা বোধ না করেই। ফের্নান্দার নীরস শরীরের পাশে ফিরে যেতে কোনো অসুবিধেই ছিল না তার, বয়স বাড়লেও রূপ যাকে ছেড়ে না গিয়ে পরিপূর্ণতা দিয়েছে, কিন্তু বৃষ্টি তাকে মুক্তি দিয়েছে সব কামতাড়না থেকে, আর ওর ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে এক প্রশান্তি, যেটা নাকি শুষে নেয় সব ধরনের ক্ষুধা। সে চিন্তা করতে থাকে, এই এক বছর ধরে ঝরতে থাকা বৃষ্টি অন্য সময়ে হলে সে কী করতে পারত। সেই সময়ে মাকন্দে যারা প্রথম দিকে দস্তার পাত নিয়ে আসে, সে ছিল তাদেরই একজন। পেত্রা কতেসের শোবার ঘরের ওপরে ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির আওয়াজ যে গভীর প্রণয়ের অনুভূতি তৈরি করত, তা উপভোগের জন্য কলা কোম্পানি জিনিসটাকে ফ্যাশানে তৈরি করার অনেক আগেই সে আনে সেটা। এমনকি যুবা বয়সের এই সব বুনো স্মৃতিও তাকে কেন্দ্রভ্রষ্ট করে নিরাসক্ত করে, যেন গত পানোৎসবের সময় বরাদ্দকৃত কামোত্তেজনাটুকু খরচ হয়ে শুধু অবশিষ্ট রয়েছে, কোনো রকমের তিক্ততা বা অনুতাপ ছাড়াই সেটাকে মনে রাখার মতো চমৎকার স্মৃতির উপহার। তার সম্বন্ধে ভাবা যেত হয়তোবা এ মহাপ্লাবন ওকে সুযোগ করে দিয়েছে বসে স্থির হয়ে চিন্তাভাবনা করার অথবা এই প্লায়ারস ও তেলের ক্যান নিয়ে দৌড়াদৌড়ির, দেরিতে হলেও তার ভেতর জাগিয়ে তুলেছে অনেক প্রয়োজনীয় কাজের ইচ্ছা, যেগুলো সে অনেক আগেই করতে পারত কিন্তু জীবনে কখনোই করে নি, কিন্তু দুটোর একটিও আসলে সত্য নয়, কারণ অলসভাবে বসে কাটানোর লোভ বা ঘরমুখী হওয়ার ব্যাপারটা নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা বা ধাক্কা খেয়ে যে শিক্ষা পেয়েছে, তার ফল নয়। ইচ্ছাটা এসেছিল আসলে অনেক দূর থেকে। বৃষ্টির আঁকশি দিয়ে টেনে আনা হয়েছিল ওগুলোকে, মেলকিয়াদেসের ঘরে বসে যখন উড়ন্ত গালিচা, জাহাজসহ নাবিকদের দিয়ে তিমি মাছের আহার সারার মতো আশ্চর্য সব গল্প পড়ত, তখন থেকে। ওই দিনগুলোতেই ফের্নান্দার অসাবধানতার ফলে বারান্দায় উদয় হয় ছোট্ট আউরেলিয়ানো আর দাদা জানতে পারে ওর পরিচয়ের গোপনীয়তা। ওর চুল কাটানো হলো, ওকে ভালো কাপড় পরানো হলো, শেখানো হলো লোকজনকে ভয় না পেতে, আর খুব শিগগির ওর হনু, বিস্ময়াভিভূত দৃষ্টি ও ওর থেকে আসা নিঃসঙ্গতার হাওয়া থেকে বোঝা গেল সে এক খাঁটি বুয়েন্দিয়া, আর ব্যাপারটা ফের্নান্দার জন্য নিয়ে আসে এক স্বস্তি। অনেক আগেই নিজের গর্বকে খর্ব না করার জন্য কৃতকর্মের পরিমাপ করলেও তার কোনো প্রতিষেধক খুঁজে পায় নি সে, আর যতই চিন্তা করত তার সমাধান নিয়ে ততই অযৌক্তিক মনে হতো সমাধানের পথগুলোকে। যদি সে জানতে পেত, যেভাবে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো ব্যাপারটাকে গ্রহণ করেছে, সেভাবে নেবে, এক ভালো পিতামহের মতো, তাহলে ব্যাপারটা নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করত না বা এত সময়ও পার না করে আগের বছরই নিজেকে এই প্রায়শ্চিত্তের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিত। আমারান্তা উরসুলা যার দুধদাঁত এরই মধ্যে পড়ে গিয়ে আবার গজাচ্ছে, তার জন্য ভাইপো ছিল একঘেয়েমিময় বৃষ্টির মধ্যে সান্ত্বনা নিয়ে আসা ছোটাছুটি করা এক খেলনা। আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর মনে পড়ে যায় মেমের পুরোনো শোবার ঘরে রাখা ইংরেজি বিশ্বকোষটার কথা, যেটাকে আর কেউ ছুঁয়েও দেখে নি। বাচ্চাদের সে দেখাতে শুরু করে বইটা থেকে ছবিগুলো, বিশেষ করে জীবজন্তুর ছবি, পরের দিকে মানচিত্র, দূরদূরান্তের নানা দেশের ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি, যেহেতু সে ইংরেজি জানত না আর যেহেতু কোনো রকমে কেবল বিখ্যাত শহরগুলো ও সবচেয়ে প্রচলিত খ্যাতনামা ব্যক্তিদের চিনত, সেহেতু সে বাচ্চাদের অসীম কৌতূহল মেটাতে বিভিন্ন নামের আবিষ্কার ও গল্প বানানোর আশ্রয় নেয়।

    ফের্নান্দা বিশ্বাস করত সত্যি সত্যিই স্বামী উপপত্নীর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য বৃষ্টি ধরে আসার অপেক্ষায় আছে। বৃষ্টির প্রথম মাসগুলোতে সে ভয়ে ভয়ে ছিল যে সে যেন আবার তার শোবার ঘরে ঢুকে না পড়ে, আর তাকে সমস্ত লজ্জা নিয়ে বলতে হয় যে আমারান্তা উরসুলার জন্মের সময় থেকেই সে পূর্বসম্পর্কে ফিরে যেতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এই সময়ে ডাক-ব্যবস্থার ঘন ঘন বিপর্যয়ের কারণে অদৃশ্য চিকিৎসকদের সঙ্গে উৎকণ্ঠাজনিত চিঠি চালাচালি বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রথম মাসগুলোতে যখন সে জানতে পারে যে ঝড়ের ফলে ট্রেনগুলো লাইনচ্যুত হয়, তখন অদৃশ্য চিকিৎসকেরা এক চিঠিতে জানায় যে তারা আর ফের্নান্দার চিঠি পাচ্ছে না। পরে যখন অচেনা পত্রলেখকের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিঘ্নপ্রাপ্ত হয়, তখন সে সত্যি সত্যিই ভাবে রক্তাক্ত কার্নিভালে স্বামীর ব্যবহৃত বাঘের মুখোশ পরে এক ছদ্মনাম নিয়ে কলা কোম্পানির ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এই প্ৰচণ্ড প্লাবনের সময় প্রতিদিনই বাড়ির সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করা হাজারো বাজারে লোকের মাঝে কেউ একজন ওকে বলে যে কলা কোম্পানি ওদের ডিসপেনসারি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি হয় না এমন জায়গায়। ফলে সে হারিয়ে ফেলে আশা-প্রত্যাশা। সে অপেক্ষা করে বৃষ্টি থেমে ডাক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের, আর সেই অপেক্ষার সময়টাতে সে তার গোপন ব্যথা প্রশমন করে চলে অনুপ্রেরণা থেকে, কারণ মাকন্দে বাস করা শেষ ডাক্তারটির কাছে যাওয়ার চাইতে মরে যাওয়া শ্রেয় মনে করে সে, কারণ ডাক্তারটি হচ্ছে এক বর্বর ফরাসি, যে গাধার মতো ঘাস খায়। সে উরসুলার নিকটবর্তী হয় এ বিশ্বাসে যে উরসুলা হয়তোবা ব্যাধি উপশমের কোনো উপায় জানে। কিন্তু যে জিনিসের যে নাম সে নাম না বলে অন্য নাম ধরে ডাকার ও আগের ব্যাপারটাকে শেষে বলার বা বাচ্চা হওয়াকে ‘বের করা’র অথবা যাতে করে কম লজ্জাজনক হয়, তার জন্য মেয়েলি রক্তস্রাবের বদলে সেটাকে জ্বালা-যন্ত্রণার মতো শব্দ ব্যবহারের বদভ্যাসের কারণে উরসুলা সিদ্ধান্তে আসে যে ব্যাপারটা জরায়ুসংক্রান্ত নয়, বরং আন্ত্রিক আর ওকে পরামর্শ দেয় খালি পেটে এক পুরিয়া মারকিউরিক ক্লোরাইড খেতে। এই সমস্যাটা না থাকলে আর একই সঙ্গে লজ্জা রোগের রোগী না হলে আর একই সঙ্গে চিঠিগুলো হারিয়ে না গেলে ফের্নান্দার কাছে বৃষ্টি কোনো গুরুত্বই পেত না, কারণ শত হলেও সারা জীবনই তো প্রায় তার বৃষ্টির মধ্যে কেটেছে। সে তার কাজকর্মের সময়ে কোনো পরিবর্তন করে না, এমনকি আচার-অনুষ্ঠানও বাদ দেয় না। খাওয়ার সময় যাতে পা না ভিজে যায়, তার জন্য ইটের ওপর টেবিল আর তক্তার ওপর চেয়ার বসানো ছিল, তখনো সে লিলেনের টেবিল ক্লথ ও চিনেমাটির বাসনকোসনে খাবার পরিবেশন করত এবং রাতের খাবারের সময় মোমবাতি জ্বালাত, কারণ মনে করত যে দুর্যোগকে আচার-আচরণে শৈথিল্য আনার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কেউই আর রাস্তার দিকে উঁকি দিত না, কারণ যদি ব্যাপারটা ফের্নান্দার ওপর নির্ভর করত, তাহলে শুধু বৃষ্টি আরম্ভের সময় থেকেই নয়, তারও অনেক আগে থেকেই সে ওটাকে বন্ধ করত, যখন সে মনে করত দরজা আবিষ্কৃত হয়েছে বন্ধ করে রাখার জন্য আর রাস্তায় কী হচ্ছে, তা দেখার কৌতূহল হচ্ছে বেশ্যাসুলভ। তার পরও যখন ওকে জানানো হলো যে কর্নেল হেরিনেলদো মার্কেসের শবযাত্রা যাচ্ছে, তখন সেই সবার আগে রাস্তায় উঁকি দেয়। যদিও সামান্য খোলা জানালা দিয়ে যা দেখে, তার জন্য সে নিজের দুর্বলতার জন্য অনুতাপদগ্ধ হয়ে অনেকক্ষণ যন্ত্রণায় ভোগে।

    এমন বিস্বাদময় শবযাত্রার কথা সে ভাবতেও পারত না কখনো। বলদটানা এক গাড়ির ওপর কলাপাতা দিয়ে এক ছাউনি দেওয়া হলেও বৃষ্টির তোড় এমনই ছিল আর প্রতি পদে যেভাবে চাকা কাদায় আটকে যাচ্ছিল, তাতে ছাউনিটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। বিষণ্ণ পানির ধারা ঝরে পড়ছিল কফিনের ওপর রাখা ভিজে সপসপে রক্ত ও বারুদ মাখা পতাকাটার ওপর, যে পতাকাটা ছিল প্রাক্তন সৈনিকদের মধ্যে একটু সম্মানীয়দের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত। কফিনের ওপর আরও রাখা ছিল তামা ও সিল্কের ঝালরওয়ালা তরবারিখানা, যেটাকে সে নিরস্ত্র অবস্থায় আমারান্তার সেই ঘরে ঢোকার সময় বৈঠকখানার হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখত। গাড়িটার পেছনে খালি পায়ে কিছু লোক, তাদের পাতলুন ছিল হাঁটু পর্যন্ত গোটানো, কাদায় হুটোপুটি করছে নিরলান্দিয়ার আত্মসমর্পণকৃতদের মধ্যে জীবিত শেষ কজন, এক হাতে পশু ব্যবসায়ীদের লাঠি ও অন্য হাতে বৃষ্টিতে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া এক কাগুজে ফুলের বিড়ে নিয়ে। ওরা উদয় হয় তখন পর্যন্ত কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার নামে পরিচিত সড়কের ওপর এক অবাস্তব দৃশ্যের মতো, আর সবাই বাড়ি অতিক্রমের সময় একবার তাকায় আর প্লাজার কোনার দিকে মোড় নেয়, যেখানে আটকে যাওয়া গাড়িটাকে নড়ানোর জন্য ওদের সাহায্য চাওয়ার প্রয়োজন হয়। উরসুলা সান্তা সোফিয়া দে লা পিয়েদাদকে বাধ্য করে তাকে দরজা পর্যন্ত নিয়ে যেতে। এমন মনোযোগ দিয়ে সে শবমিছিলটার বাধাবিপত্তি অনুসরণ করে যে কারও মনেই সন্দেহ জাগে না যে সে দেখছে, বিশেষ করে এই কারণে যে বার্তাবাহক দেবদূতদের মতো তার ওঠানো হাত বলদটানা গাড়িটা দুলুনির সঙ্গে তাল মিলিয়েই দুলছিল।

    ‘বিদায় হেরিনেলদো বাছা আমার’, চিৎকার করে, ‘আমার লোকদের শুভেচ্ছা জানাস আর বলিস যে বৃষ্টি ধরে গেলেই দেখা হবে ওদের সঙ্গে।

    আউরেলিয়ানো সেগুন্দো ওকে সাহায্য করে বিছানায় ফিরে যেতে আর বরাবরই যে রকম লৌকিকতাবিহীন ব্যবহার করে তার সঙ্গে, সেভাবেই জিজ্ঞেস করে তার এ ধরনের বিদায় জানানোর অর্থ। ‘সত্যিই’, সে বলে, ‘আমি মরার জন্য বৃষ্টি ধরে আসার অপেক্ষায় আছি।’

    রাস্তাগুলোর এই অবস্থা শঙ্কিত করে আউরেলিয়ানো সেগুন্দোকে। শেষ পর্যন্ত জন্তু- জানোয়ারগুলোর দুর্ভাগ্যের কথা চিন্তা করে মাথায় এক মোম দেওয়া ক্যানভাস দিয়ে পেত্রা কতেসের বাড়ি যায়। কোমর অবধি পানি নিয়ে ঘোড়ার এক মৃতদেহ সরানোর চেষ্টা করার সময় দেখতে পায় তাকে। একটা লম্বা কাঠের বার দিয়ে তাকে সাহায্য করে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো আর সেই বিশাল ফুলে ওঠা শরীর ঘণ্টার মতো এক পাক দিয়ে তরল কাদার স্রোতের টানে ভেসে যায়। বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ার সময় থেকে পেত্রা কতেস উঠানে মরা জন্তুর শব পরিষ্কার করা ছাড়া আর কিছুই করে নি। প্রথম সপ্তাহগুলোতে সে আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল, যাতে করে সে এই জরুরি অবস্থার একটা ব্যবস্থা করে আর সে জবাব দিয়েছিল যে তাড়াহুড়োর কিছু নেই; অবস্থা এত খারাপ নয়, আর যখন বৃষ্টি থেমে যাবে, সে কিছু একটা করবে। পেত্রা কতেস তাকে খবর পাঠায় যে চারণভূমি পানিতে ডুবে যাচ্ছে সেখানে খাবার নেই, গবাদিপশুগুলো পালিয়ে যাচ্ছে উঁচু ভূমিতে, আর ওগুলোর জীবন নির্ভর করছে বাঘ ও রোগবালাইয়ের দয়ার ওপর। ‘কিছুই করার নেই’, উত্তর পাঠায় আউরেলিয়ানো সেগুন্দো। ‘বৃষ্টি থামলে আরও জন্মাবে।’ পেত্রা কতেস ওদের মরতে দেখে দলে দলে, আর যেগুলো কাদায় আটকে গিয়েছিল শুধু সেগুলোকেই জবাই করতে পারে সে। এক বধির অসহায়তার সঙ্গে দেখে যায় দয়া- মায়াহীন মহাপ্লাবন কীভাবে একসময় মাকন্দের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সম্পদকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, শেষ অবধি যেগুলোর অবশিষ্ট বলতে মহামারি ছাড়া কিছুই থাকে না। কী ঘটছে দেখার জন্য যখন আউরেলিয়ানো সেগুন্দো যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আস্তাবলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি ঘোড়া ও নোংরা খচ্চরের মৃতদেহ ছাড়া সে আর কিছুই পায় না। পেত্রা কতেস ওকে আসতে দেখে কোনো বিস্ময়, আনন্দ বা রাগ ছাড়াই শুধু এক ব্যঙ্গাত্মক হাসি হাসে। ‘ভালো সময়েই এসেছ।’ বলে।

    শরীরে হাড়সর্বস্ব বৃদ্ধা হয়ে যাওয়া পেত্রা কতেসের মাংসাশী প্রাণীর মতো সরু চোখ অনবরত বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে বিষণ্ণ ও বশ্যতার চোখে পরিবর্তিত হয়েছে। তিন মাসের বেশি সময় আউরেলিয়ানো সেগুন্দো ওর বাড়িতে থেকে যায় এ জন্য নয় যে নিজের পরিবারের চেয়ে ওখানে থাকতে সে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, বরং এই জন্য যে মোম দেওয়া ক্যানভাসের টুকরোটা আবার মাথার ওপর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে তার তিন মাসের বেশি সময় লাগে। ‘তাড়াহুড়োর দরকার নেই’, বলে, যেমনটি বলেছিল অন্য বাড়িতে থাকতে সময় ও বৃষ্টি উপপত্নীর স্বাস্থ্যের যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তাতে সপ্তাহের মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে, আর ধীরে ধীরে তাকে বোধ করতে থাকে আগের মতোই, মনে পড়ে তার আনন্দময় দিনগুলো আর তাদের সংগম জীবজন্তুদের মধ্যে বর্বর উন্মাদনা তৈরি করেছিল, তার কথা; দ্বিতীয় সপ্তাহের এক রাতে জরুরি আদর করার তাগিদে তার ঘুম ভেঙে যায়। পেত্রা কতেস সাড়া দেয় না। ‘শান্ত হয়ে ঘুমাও’, বিড়বিড় করে, ‘এখন আর এসবের সময় নয়।’ আউরেলিয়ানো সেগুন্দো নিজেকে দেখে সিলিংয়ের আয়নায়, দেখে পেত্রা কতেসের মেরুদণ্ডের হাড় এক ছড়া শুকনো স্নায়ুতন্ত্রের দ্বারা সারি বেঁধে গাঁথা, আর বুঝতে পারে যে যথেষ্ট কারণ আছে তার কথায়, আর কারণটা সময় নয়, বরং তারা নিজেরাই; যারা আর এসব করার জন্য নয়।

    শুধু উরসুলাই নয়, সারা মাকন্দের বাসিন্দারা মৃত্যুর জন্য বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় রয়েছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তোরঙ্গগুলো নিয়ে বাড়ি ফেরে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো। সামনে দিয়ে পার হওয়ার সময় দেখতে পায় লোকগুলোকে, অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে দুবাহু জড়ো করে প্রবহমান অনন্ত সময়কে অনুভব করছে যে সময় ছিল অবিভাজ্য; মাস, বছর, দিন ও ঘণ্টায় ভাগ করা ছিল নিরর্থক। যেখানে ওরা বৃষ্টি থামার অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিল না। শিশুরা উল্লাসের সঙ্গে গ্রহণ করে আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর হাঁপানি স্ত অ্যাকর্ডিয়ানটা আবার বাজানোতে, কিন্তু বিশ্বকোষের আসরগুলোর মতো কনসার্টটা ওদের এত মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না, যাতে করে আবার মেমের শোবার ঘরে জড়ো হয় ওরা, যেখানে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো এক উড়োজাহাজকে বানিয়ে ফেলে মেঘের মাঝে ঘুমানোর জায়গা খুঁজতে থাকা এক উড়ুক্কু হাতি। একসময় তার চোখে পড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়া এক লোক। তার গায়ে অদ্ভুত পোশাক থাকলেও তাকে চেনা চেনা লাগে, পরে খুব ভালো করে পরীক্ষা করার পর সে সিদ্ধান্তে আসে যে ওটা কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার ছবি। ফের্নান্দাকে দেখায় ওটা আর সেই মিল শুধু কর্নেলের সঙ্গেই নয়, সমস্ত পরিবারের সঙ্গে মিল খুঁজে পায় তার, যদিও ছবিটি ছিল এক তাতার যোদ্ধার। এভাবেই সময় কাটতে থাকে কলসাসের রোডস আর সাপুড়েদের সঙ্গে যতক্ষণ পর্যন্ত না ওর স্ত্রী ঘোষণা করে যে ভাঁড়ারে সবেমাত্র অবশিষ্ট আছে ছয় কেজি লবণাক্ত মাংস ও এক বস্তা চাল, ‘তো এখন, আমি কী করব?’ সে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি জানি না’, ফের্নান্দা উত্তর দেয়, ‘এটা তো পুরুষদের কাজ।’ ‘ঠিক আছে’, আউরেলিয়ানো সেগুন্দো বলে, ‘বৃষ্টি থামলে কিছু একটা করা যাবে।’ গৃহস্থালি সমস্যার চেয়ে বিশ্বকোষের ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখা যায় তার, এমনকি যখন দুপুরের খাওয়ার সময় একটুকরো মাংস ও ভাত নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় এখনও। এখন কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়, সে বলত। ‘সারা জীবন তো বৃষ্টি হতে পারে না।’ আর ভাঁড়ার ঘরের অবস্থা যতই খারাপ হতে থাকে, ফের্নান্দার রাগও ততই বাড়তে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না মাঝেমধ্যে করা প্রতিবাদ ও ক্ষোভগুলো উপচে অপ্রতিরোধ্য স্রোতের মতো বেরিয়ে পড়ে, আর সেটা আরম্ভ হয় এক সকালে গিটারের একঘেয়ে সুরের মতো। আর দিন যতই গড়াতে থাকে, সুর চড়তে থাকে ততই ওপরে, প্রতিবারই চড়তে থাকে উঁচু থেকে উচ্চতরে। পরদিন সকালের নাশতা খাওয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই বিলাপ আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর কানে কোনো অনুশোচনার উদ্রেক করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না বৃষ্টির শব্দের চেয়েও উচ্চতর ও আরও দ্রুত গতির শব্দ ওর কানে তালা লাগায়। আসলে ওটা ছিল সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ানো ফের্নান্দার অনুযোগ; বলে চলছে, যাকে গড়ে তোলা হয়েছিল শিক্ষা দিয়ে রানি হওয়ার জন্য, এখন তাকে কাজ করতে হচ্ছে অলস মূর্তিপূজারি ও লম্পট স্বামীর জন্য, যে ওপরের দিকে মুখ করে থাকে, যেন আকাশ থেকে রুটি পড়বে বলে, অন্যদিকে সে নিজের বৃক্ককে ফালি ফালি করে খেটে মরছে, ঈশ্বরের দেওয়া সকাল থেকে শোবার সময় যেখানে এত কিছু করার আছে, এত কষ্ট সহ্য করার ও মেরামত করার, যে বিছানায় সে যেত চোখ ভরা কাচের গুঁড়ো ও ধুলো নিয়ে, তা সত্ত্বেও যেখানে কেউ কখনোই সুপ্রভাত বলে নি, জিজ্ঞেস করে নি রাতটা কেমন কাটিয়েছিস ফের্নান্দা, এমনকি সৌজন্য করেও কখনো শুধায় নি কেউ, কেন তাকে এত ফ্যাকাশে লাগছে, কেন বেগুনি রঙের চোখের নিচের ফোলা নিয়ে জেগেছে সে, যদিও সে কখনোই সে এগুলোর আশা করে নি সেই পরিবার থেকে, যে পরিবারের লোকজন ওকে দেখেছে এক আপদ হিসেবে, উনুন থেকে গরম জিনিস নামানোর ন্যাকড়ার মতো, দেয়ালে আঁকা পুতুল হিসেবে, আনাচে-কানাচে যারা সব সময়ই তার নামে কুৎসা রটিয়েছে ভণ্ড বলে, শব বলে, গিরগিটি বলে, আর এমনকি আমারান্তা পর্যন্ত ‘ঈশ্বর তাকে শান্তিতে রাখুন’ প্রকাশ্যে বলেছে যে, সে হলো সেই মানুষ যারা পায়ুপথকে পায়খানা বলে ভুল করে, হায় খোদা কি বিশ্রী শব্দ ঈশ্বর এসব কথা ক্ষমা করুন, আর সে সবকিছু সহ্য করে গেছে বিন্দুমাত্র ‘রা না করে, শুধু পবিত্র পিতার ইচ্ছায়, কিন্তু সহ্য করতে পারে নি পাজি হোসে আর্কাদিও সেগুন্দো যখন বলল সংসারে সর্বনাশ নেমে এসেছে ওই দিনই, যেদিন সে কাচাকার (উঁচু ভূমি থেকে আসা মহিলা, বিশেষত বোগোতা অঞ্চলের লোকদের কাচাকো বা কাচাকা বলা হয়) জন্য বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিল, ভাবো একবার, এক কাচাকা, যে সব সময় কর্তৃত্ব ফলায়, হায় ঈশ্বর, এক কাচাকা বিচ্ছিরি কথা বলা মায়ের মেয়ে, সরকার যে সমস্ত কাচাকাদের শ্রমিকদের খুন করতে পাঠিয়েছিল, তাদের মতো একই স্বভাবের, আর এগুলো বলে সে এমন একজনকে বুঝিয়েছে যে নাকি আলবার ডিউকের ধর্মকন্যা, বুঝিয়েছিল এমন এক গৌরবময় বংশের মেয়েকে যে নাকি প্রেসিডেন্টের বউদেরও পিলে চমকে দিয়েছিল, তার মতো এমন খাঁটি রক্তের অভিজাত রমণীর অধিকার ছিল এগারোটা উপদ্বীপের পরিবারের উপাধি ব্যবহার করে স্বাক্ষর করার, আর যে নাকি এই জারজ সন্তানভরা শহরে একমাত্র জীবিত, ষোলো পিসের রুপোর ছুরি-কাঁটাচামচের সামনে বসে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না, যাতে নাকি তার লম্পট স্বামী হেসে মরতে মরতে বলে এত চামচ, এত কাঁটাচামচ এত ছুরি ও ছোট চামচ কোনো মানবসন্তানের জন্য নয়, বরং শত পা-বিশিষ্ট বিছের জন্য, আর চোখ বন্ধ অবস্থায় একমাত্র যে বলতে পারে কখন সাদা মদ পরিবেশন করা হয়েছে কোন পাশে ও কোন গ্লাসে আর কখনই বা পরিবেশন করা হয়েছে লাল মদ, কোনো পাশে ও কোনো গ্লাসে নয়, আমারান্তার মতো নয়, ঈশ্বর তাকে শান্তিতে রাখুন, যে বিশ্বাস করত সাদা মদ পরিবেশন করা হয় দিনে ও লাল মদ রাতে, আর সারা উপকূলে একমাত্র যে মানুষ মলত্যাগ করে সোনার মলত্যাগপাত্রে, যাতে করে বদমেজাজি কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, ঈশ্বর তাকে শান্তিতে রাখুন, যে নাকি জিজ্ঞেস করার সাহস পায় কোথা থেকে সে এই অধিকার পেয়েছে, সে মলত্যাগ করে কি না, চিন্তা করে দেখো, এই ধরনের শব্দ দিয়ে, যাতে করে তার নিজের মেয়ে রেনাতা, যে কিনা হঠাৎ করেই একবার শোবার ঘরে আগুয়াস মাইয়রেস (শাব্দিক অর্থ বড় পানি, আসল অর্থ হাগু) করার সময় দেখে ফেলায় সত্যি সত্যি মলত্যাগপাত্র সোনা দিয়ে তৈরি কি না, অনেক গৌরব ধারণ করে কি না, কিন্তু যা নাকি ওর ভেতরে ছিল, তা হচ্ছে খাঁটি গু, বাস্তব গু, তাও আবার কাচাকার গু হওয়ায় তা হচ্ছে অন্য সবার থেকে খারাপ গু, চিন্তা করে দেখো নিজের মেয়ে, ফলে পরিবারের আর কাউকে নিয়েই উচ্চাশা করে নি সে, কিন্তু তাহলেও অন্তত স্বামী থেকে আর একটু ছাড় পাওয়ার প্রতীক্ষা করার অধিকার তার ছিল, শত হলেও সে তার পবিত্র জীবনসঙ্গী, তার কর্তৃত্ব, তার আইনানুগ ক্ষতি করার ক্ষমতাধারী, যে নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় তাকে বাপের বাড়ি থেকে বের করার মতো গুরুদায়িত্ব নিয়েছিল, যে বাড়িতে সে কিছুরই অভাববোধ করে নি বা যেখানে কোনো কষ্ট ভোগই তার করতে হয় নি, যেখানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য তালপাতার মালা গাঁথত সে শুধু অবসর কাটানোর জন্য, যেখানে তার ধর্মপিতা নিজের সই করা ও মোমের ওপর আংটির সিলসহ চিঠিতে জানায় যে তার ধৰ্মকন্যা হাত দুটো ক্লাভিকর্ড বাজানো ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো কাজের জন্য তৈরি হয় নি, অথচ তার পরও গাধা স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করেছিল সমস্ত বাধা ও সতর্কবাণী উপেক্ষা করে, আর এনে এমন এক নরকের কড়াইতে ফেলেছিল, যেখানে গরমের চোটে সে নিশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারে না, আর তার পেন্টাকস্টের উপবাস শেষ হওয়ার আগেই পরিভ্রমণকারী তোরঙ্গ ও অকেজো অ্যাকর্ডিয়ান নিয়ে ব্যভিচারে মত্ত হতে চলে গিয়েছিল এমন একজনের সঙ্গে, যার শুধু পাছা দেখলেই চলে ইয়ে, মানে যেমনটি লোকে বলে, যার ঘোটকীর মতো পাছাটা দোলাতে দেখলেই বোঝা যেত যে সে কী ধরনের, আর সে নিজে ঠিক তার উল্টো, যে নাকি এক সত্যিকারের ভদ্রমহিলা, সে প্রাসাদেই হোক বা শুয়োরের খোঁয়াড়েই হোক, খাবার টেবিলেই হোক অথবা সংগমের বিছানাতেই হোক, সে হলো এক নারী, ঈশ্বরভীরু, আইননিষ্ঠ, তার ইচ্ছার ওপর নতি স্বীকারকারী, আর যার সঙ্গে করতে পারে না, স্বভাবতই করতে পারে না ধড়িবাজগিরি ও ভবঘুরেপানা, যা কিনা করতে পারে আরেকটার সঙ্গে, আর স্বভাবতই অন্যটা তৈরি হয়ে থাকে এসবের জন্য ফরাসি রমণীদের মতো, বরং তার চেয়েও অসভ্য কিছুর জন্য, কারণ তাদের অন্তত দরজায় লালবাতি জ্বালিয়ে রাখার মতো সৎসাহসটুকু আছে, আর চিন্তা করে দেখো, সে কিনা ওই সব আশা করে দোন্যা রেনাতা আরগতে ও দন ফের্নান্দা দেল কার্পিওর একমাত্র প্রিয়তমা মেয়ের কাছ থেকে, বিশেষ করে দন ফের্নান্দা দেল কারপিও, যে ছিল অবশ্যই এক পবিত্র পুরুষ, এক উঁচু স্তরের খ্রিষ্টান, পবিত্র সেপুলনক্রর সম্মানীয় নাইট, যে নাকি সরাসরি ঈশ্বর থেকে অধিকার পেয়েছে একই রকম বিয়ের কনের মতো মসৃণ গায়ের ত্বক, জীবন্ত পান্নার মতো স্ফটিকস্বচ্ছ চোখ নিয়ে কবরে অক্ষয় রাখার।

    ‘কথাটা সত্য নয়’, ওকে বাধা দেয় আউরেলিয়ানো সেগুন্দো, ‘যখন ওকে এনেছিল, তখন রীতিমতো গন্ধ বেরোচ্ছিল।

    সে এক ভুল ধরে অবাক করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত দিনভর এই সব শোনার ধৈর্য ছিল তার। ফের্নান্দা পাত্তা দেয় না ওকে, কিন্তু গলার স্বর নিচু করে। সেই রাতে খাবার সময় আত্মকথনের কান ধাপা লাগানোর গুনগুনানি ছাপিয়ে যায় বৃষ্টির শব্দকেও। মাথা নিচু করে খুব কম খেয়ে আগেভাগেই শোবার ঘরে চলে যায় আউরেলিয়ানো সেগুন্দো। পরের সকালে নাশতার সময় ফের্নান্দার গা কাঁপছিল, যেন রাতে ভালো ঘুম হয় নি। মনে হচ্ছিল সমস্ত বিদ্বেষ বের করে দিয়ে সে এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। তার পরও যখন তার স্বামী তাকে জিজ্ঞেস করে যে খাবার জন্য তাকে একটা কুসুম সেদ্ধ ডিম দেয় যাতে কিনা সে সহজভাবে গত সপ্তাহ থেকেই ডিম ফুরিয়ে গেছে এই উত্তর সহজভাবে না দিয়ে যেসব পুরুষ নিজেদের নাভিতে তেল দিয়ে বসে বসে সময় কাটায় আর পরে খাবার টেবিলে ভরত পাখির যকৃৎ চায়, তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। বরাবরের মতোই আউরেলিয়ানো সেগুন্দো বাচ্চাদের নিয়ে যায় বিশ্বকোষ দেখাতে আর ফের্নান্দা ভান করে মেমের শোবার ঘর গোছানোর। শুধু যাতে করে তার বিড়বিড়ানি শুনতে পায় যে নির্লজ্জ না হলে এই নিষ্পাপ শিশুদের বিশ্বকোষের মধ্যে কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার ছবি দেখতে পারত না। বিকেলে যখন শিশুরা সিয়েস্তা নিচ্ছিল, আউরেলিয়ানো সেগুন্দো বারান্দায় গিয়ে বসলে ফের্নান্দা তাকে উত্তেজিত করে তুলতে অনুসরণ করে, জ্বালিয়ে মারে ভনভনে মাছির মতো ওর চারপাশে ঘুরতে থাকে, বলতে থাকে, যখন পাথর ছাড়া বাড়িতে খাবার জন্য কিছুই নেই, তখন তার কর্তা পারস্যের সুলতানের মতো বসে আছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়, কারণ হচ্ছে সে এক অপদার্থ, এক পরগাছা, নিষ্কর্মার ঢেঁকি, গালে ঘষার পাউডারের পাফের চেয়ে নরম তুলতুলে ননির পুতুল, মেয়েদের ওপর নির্ভর করে জীবন কাটিয়ে দেয়, আর মনে করে সে হোনার্স বউকে বিয়ে করেছে, যে নাকি তিমির গল্প শুনে নিশ্চিন্ত হয়েছিল। আউরেলিয়ানো সেগুন্দো দুঘণ্টা যাবৎ শুনে যায়, ভাবলেশহীন যেন সে বধির শেষ বিকেল পর্যন্ত, যখন ঢাকের আওয়াজের প্রতিধ্বনির মতো মাথা পাগল করা শব্দগুলোকে সহ্য করতে পারে না।

    ‘দয়া করে চুপ করো’, অনুনয় করে।

    ফের্নান্দা উল্টো গলা চড়ায়। আমার চুপ করার কোনো কারণই সেই, বলে, ‘যে শুনতে চায় না, সে দূর হয়ে গেলেই পারে।’ ফলে আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তাড়াহুড়ো না করে উঠে দাঁড়ায় সে যেন আড়মোড়া ভাঙবে আর এই সম্পূর্ণ সংযত নিয়মবদ্ধ ক্রোধের সঙ্গে একের পর এক বেগোনিয়া, ফার্ন আরেগানোর টবগুলো তুলে মেঝের ওপর আছড়ে ফেলে ভাঙতে থাকে। চমকে ওঠে ফের্নান্দা আসলে এ পর্যন্ত বিড়বিড়ানিতে উৎপন্ন নিজের ভেতরের প্রচণ্ড ক্ষমতার কথা সম্বন্ধে এতক্ষণ পর্যন্ত তার সঠিক কোনো ধারণা ছিল না; কিন্তু তখন সম্ভাব্য সংশোধনের চেষ্টা করার জন্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কোনো ভার লাঘবের অরোধ্য স্রোতে মাতাল হয়ে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো ভাঙে শোকেসের ক্রিস্টালের সেট, কোনো তাড়াহুড়ো না করে, বাসনকোসনের সেটটা থেকে একটার পর একটা বের করে মেঝেতে আছড়ে ফেলে ধুলোয় গুঁড়িয়ে দেয় সেগুলো। সুশৃঙ্খলভাবে শান্ত অবস্থায় যে রকম ধীরেসুস্থে সে বাড়িটাকে টাকার নোট দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল, সেই একইভাবে ভাঙে বোহেমীয় ক্রিস্টালের সেট দেয়ালে ছুড়ে ছুড়ে, ভাঙে হাতে অঙ্কিত ফুলদানি, নৌকায় বসা ফুল হাতে কুমারীদের চিত্রকর্ম, সোনার গিল্টি করা ফ্রেমওলা আয়নাগুলো, ভাঙে বৈঠকখানা থেকে শুরু করে ভাঁড়ার ঘর পর্যন্ত যত কিছু ভাঙা সম্ভব, ইতি টানে। রান্নাঘরের পানি রাখার বিশাল মাটির পাত্রটা দিয়ে যেটা উঠানের মাঝখানে আছড়ে ফেলে বোমা ফাটার আওয়াজ করে। এরপর হাত ধোয়, মোম দেওয়া লিলেনের কাপড়টা গায়ে চড়ায়, আর মধ্যরাতের আগে ফিরে আসে হাতে লবণ দেওয়া শক্ত কিছু মাংসের ছড়া, কয়েক বস্তা গুবরে পোকাওয়ালা চাল ও ভুট্টা, আর শুকিয়ে যাওয়া কলার ছড়া নিয়ে। এর পর থেকে ঘরে আর খাবারের অভাব পড়ে না।

    আমারান্তা উরসুলা ও ছোট্ট আউরেলিয়ানোর স্মৃতিতে বৃষ্টির যুগটা সুখস্মৃতি হিসেবেই থাকে। ফের্নান্দার কড়াকড়ি সত্ত্বেও ওরা উঠোনে জমা পানিতে হুটোপুটি করত, টিকটিকি ধরে টুকরো টুকরো করত, আর সান্তা সোফিয়া দে লা পিয়েদাদের অসতর্কতায় প্রজাতির পাখনার ধুলো স্যুপের মধ্যে ফেলে বিষাক্ত করা মিথ্যেমিথ্যি খেলত। ওদের সবচেয়ে মজার খেলনা ছিল উরসুলা। সে ছিল ওদের কাছে ভাঙাচোরা বিশাল এক পুতুল, যেটাকে এক কোনা থেকে আরেক কোনায় নিয়ে বেড়াত রঙিন কাপড়চোপড় পরিয়ে, মুখে ভুষোর কালি ও আসাতো গাছের ফলের লাল বীজের গুঁড়োর মুখোশ এঁকে আর একবার তো প্রায় গাছ ছাঁটার কেঁচি দিয়ে চোখ দুটোই উপড়ে ফেলেছিল একইভাবে, যেভাবে ব্যাঙ ধরে ওগুলোর চোখ উপড়াত। ওঁর আবোলতাবোল বকবকানি ওদের যে আনন্দ দিত, সে রকম আনন্দ ওরা আর কিছুতেই পেত না। সত্যি সত্যিই বৃষ্টির সময়ের তৃতীয় বছরে তার মাথার মধ্যে কিছু একটা ঘটে থাকবে, কারণ ধীরে ধীরে সে হারিয়ে ফেলে বাস্তবতা, গুলিয়ে ফেলে তার জীবনের সুদূর অতীত ও বহমান সময়কে এমনভাবে যে একবার তো তার পরদাদি পেত্রনিলা ইগুয়ারানের মৃত্যু শোকে টানা তিন দিন বাঁধভাঙা কান্নায় কাটায়, যাকে গোর দেওয়া হয়েছে শত বছর আগে। বিভ্রান্তির এমন গভীর অবস্থায় দূরে যায় সে যে সে মনে করত ছোট্ট আউরেলিয়ানো হচ্ছে তার কর্নেল ছেলে, যাকে সেই সময় বরফ চেনাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর হোসে আর্কাদিও, যে তখন সেমিনারিতে লেখাপড়া করছে, সে হচ্ছে জিপসিদের সঙ্গে উধাও হওয়া বড় ছেলে। পরিবার নিয়ে সে এত কথা বলে যে বাচ্চারা এমন সব লোকজনের সঙ্গে কাল্পনিক সাক্ষাতের কথা ভাবতে শিখে, যেসব লোক যে শুধু অনেক আগে মারা গিয়েছে তা-ই নয়, তারা জীবন যাপন করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন সময়ে। ছাইয়ে ভর্তি চুল ও এক লাল রুমালে বাঁধা মুখ নিয়ে কাল্পনিক আত্মীয়জনের মাঝে আনন্দে বসে থাকে উরসুলা, যাদের কথা সে সমস্ত খুঁটিনাটিসমেত বাচ্চাদের মুখে শুনেছে, যেন সত্যি সত্যি ওদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়েছে। উরসুলা পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলে, যা কিনা তার নিজের জন্মের আগে ঘটেছে, যে সমস্ত খবর সে পেত তাদের কাছে, তা উপভোগ করত সে আর যে সমস্ত আত্মীয়ের মৃত্যু হয়েছে হাল আমলে তাদের নিয়ে কান্নাকাটি করে ওই সব আত্মীয়দের সঙ্গে। এই ধরনের ভুতুড়ে সাক্ষাতের সময় উরসুলা যে সব সময়ই জানার জন্য প্রশ্ন করত যে কে যুদ্ধের সময় সেন্ট জোসেফের প্রমাণ আকারের প্লাস্টারের মূর্তিটা নিয়ে গিয়ে বৃষ্টি না ধরা পর্যন্ত জিম্মা রেখেছিল, এটা বুঝতে শিশুদের বেশি সময় লাগে না। এভাবেই আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর মনে পড়ে যায় যে একমাত্র উরসুলাই চেনে সেই মাটি চাপা দেওয়া সম্পদের অবস্থান কিন্তু এ সম্বন্ধে করা সমস্ত প্রশ্ন ও কারসাজিই বিফল হয়, কারণ মনে হতো যে খ্যাপামির মধ্যেও গোপন কথাটা ফাঁস না করার মতো সুস্থতা সে বজায় রাখতে পেরেছে আর সে কথাটা একমাত্র তাকেই বলবে যে প্রমাণ করতে পারবে যে সেই চাপা দেওয়া সোনার প্রকৃত মালিক। সে এতই চালাক ও কঠোর ছিল এ ব্যাপারে যে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো যখন তার আনন্দোৎসবের এক সঙ্গীকে সম্পদের মালিক সাজিয়ে তার কাছে পাঠায়, তখন সে সূক্ষ্ম সব প্রমাণের জালে লোকটাকে জড়িয়ে ফেলে আর পাতা ফাঁদটাকে ধরে ফেলে। উরসুলা গোপনীয়তাটাকে সঙ্গে নিয়ে গোরে যাবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সে উঠান ও উঠানের পেছনে জমা পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা কাটার ছুতোয় এক দল লোক ভাড়া করে। আর নিজে নেমে পড়ে মেটাল ডিটেক্টর ও লোহার শিক দিয়ে মাটির নিচে খোঁড়ার কাজে কিন্তু তিন মাসের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার পরও সোনার কোনো লক্ষণই মেলে না। তাসেরা মাটি খোঁড়ার লোকদের চেয়েও ভালা দেখতে পারে এই আশায় পরে সে তেরনেরার শরণাপন্ন হয় কিন্তু পিলার বলতে শুরু করে যে উরসুলা নিজে তাস কেটে না দিলে যে-কোনো প্রচেষ্টাই বিফল হবে। অন্যদিকে সে গুপ্তধনের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানায় যে সাত হাজার দুই শ চৌদ্দটি স্বর্ণমুদ্রা ক্যানভাসের থলের মধ্যে তামার তার দিয়ে শক্ত করে প্যাচানো আর তা পোঁতা আছে উরসুলার বিছানাকে কেন্দ্র করে একশত বিশ মিটারের ব্যাসার্ধবিশিষ্ট বৃত্তের মধ্যে কিন্তু তাকে সতর্ক করে দেয় যে বৃষ্টি থেমে পরপর তিন-তিনটি জুন সমস্ত কাদাকে ধুলোয় পরিণত না করলে সেগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তথ্যের এই আধিক্যে ও সূক্ষ্ম অনিশ্চয়তা আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর কাছে এমন অধ্যাত্মবাদীদের কথার মতো মনে হয় যে আগস্ট মাস হওয়া সত্ত্বেও আর ভবিষ্যদ্বাণীর শর্তানুযায়ী কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষার কথা থাকলেও সে তার কাজে আরও জোর দেয়। প্রথমেই যা তাকে আশ্চর্য করে, যদিও একই সঙ্গে তার বিভ্রান্তিকে বাড়িয়ে দেয়, যখন সে প্রমাণ করতে পারে যে উরসুলার বিছানা থেকে উঠানের পেছনের দেয়ালের দূরত্ব হচ্ছে সঠিকভাবে একশত বাইশ মিটার। ফের্নান্দা যখন ওকে মাপতে দেখে, তখন ভয় পেয়ে যায় যমজ ভাইয়ের মতো সেও কিনা পাগল হয়ে গেছে এই ভেবে, আর তার আশঙ্কা আরও বাড়ে যখন কাটা নালটাকে আরও এক মিটার গভীর করে খুঁড়তে বলে। এই উন্মাদনাকে শুধুই তুলনা করা চলে তার প্রপিতামহের সঙ্গে যখন সে খুঁজছিল আবিষ্কারের গলিসন্ধি; আর এতে করে আউরেলিয়ানো হারিয়ে ফেলে তার শরীরের অবশিষ্ট চর্বির থলে, যমজ ভাইয়ের সঙ্গে অতীত কালের চেহারার সামঞ্জস্যতাও আবার ফিরে আসতে শুরু করে আর সেটা শুধু চেহারায়ই নয়, বরং উডুক্কু ভাব ও উদাসীনতাটাও, বাচ্চাদের সঙ্গে আর সময় কাটায় না। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাদায় মাখামাখি হয়ে রান্নাঘরের এক কোণে খাবার খায়, আর মাঝেমধ্যে শুধু সান্তা সোফিয়া দে লা পিয়েদাদের প্রশ্নের উত্তর দেয় যেমনটি কখনো স্বপ্নেও ভাবে নি যে সে এমন কাজ করতে পারবে, তাই করতে দেখে ফের্নান্দা তার একগুঁয়েমিকে ভাবে পরিশ্রম, লোভকে স্বার্থত্যাগ, জেদকে অধ্যবসায়, আর তার কুড়েমি নিয়ে রাগারাগির জন্য বিবেকদংশন অনুভব করে। কিন্তু করুণা ভরা এই মিটমাটের অবস্থা তখন আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর ছিল না। উঠান ও উঠানের পেছন ভাগ শেষ করে গলা পর্যন্ত মৃত ডালপালা ও পচা ফুলের জলভূমিজুড়ে বাগানের মাটি ডান থেকে বামে উল্টে-পাল্টে বাড়ির পুবদিকের ভিতে এমন এক গভীর গর্ত খোঁড়ে যে এক রাতে জেগে ওঠে, মাটির নিচ থেকে আসা শব্দে ও সারা বাড়ি কাঁপতে থাকায় ভূমিকম্প হচ্ছে মনে করে আর তিনটি ঘরের পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয় আর গা কাঁপানো এক ফাটলের সৃষ্টি হয় বারান্দা থেকে ফের্নান্দার কামরা পর্যন্ত এর জন্য অবশ্য আউরেলিয়ানো সেগুন্দো অভিযান ক্ষান্ত দেয় না। এমনকি যখন তার শেষ আশার আলোও নিভে যাচ্ছিল। যখন একমাত্র তাসের ভবিষ্যদ্বাণীতেই মনে হচ্ছিল কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একমাত্র কারণ, তখনো নয়। সে বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত ভিতটাকে মজবুত করে, ফাটলটা ভরাট করে চুনসুড়কি দিয়ে আর খুঁড়তে থাকে বাড়ির পশ্চিম দিকটা, ওখানেই ছিল পরের জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের সময় যখন বৃষ্টিটা শান্ত হতে শুরু করে, মেঘগুলো শুরু করে সরে যেতে, আর বোঝা যায় যে-কোনো সময় আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। তা-ই হয়। এক শুক্রবারে বেলা দুইটার সময় দুনিয়া আলোকিত হয় এক ইটের সুড়কির মতো লাল গাঢ় সূর্যের আলোয়, যা ছিল পানির মতো ঠান্ডা আর পরের দশ বছর কোনো বৃষ্টি হয় না।

    তখন মাকন্দ ছিল এক ধ্বংসস্তূপ। কাদাজলভরা রাস্তা ছিল আসবাবপত্রের ভগ্নাবশেষে ভরা, জন্তু-জানোয়ারের কঙ্কাল আচ্ছন্ন ছিল লাল লিলি ফুলে, আর ছিল আগন্তুকদের স্মৃতিচিহ্ন, যারা যেমন হঠাৎ করে এসেছিল, সেই একইভাবে পালিয়েছে হঠাৎ করে। কালাজ্বরের সময়ে তাড়াহুড়ো করে বানানো বাড়িগুলো ছিল পরিত্যক্ত। কলা কোম্পানি তাদের নির্মাণ করা সবকিছু খুলে ফেলেছে। আগেকার সেই তারঘেরা শহরে পড়ে আছে শুধু ভাঙাচোরা ইট-পাথর। কাঠের বাড়িগুলো, শীতল বিকেল, যেগুলোর ঝুলবারান্দায় তাসের আড্ডা বসত, ওগুলো যেন বছর কয়েক পর মাকন্দকে দুনিয়া থেকে মুছে দেওয়ার আগাম বৈবার্তা বহন করছে। সেই সর্বগ্রাসী ঝঞ্ঝা মানুষের একমাত্র যে চিহ্ন রেখে গেছে তা হচ্ছে দমবন্ধ করে ফেলার মতো বুনো পানসি ফুল দিয়ে ঢাকা এক গাড়ির মধ্যে প্যাট্রিসিয়া ব্রাউনের এক দস্তানা। মাকন্দ পত্তনের সময়ে যে মায়াভরা অঞ্চলে হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়া অভিযান চালিয়েছিল, যেখানে পরে কোম্পানি গড়ে উঠেছিল, সেটা এখন পচা শেকড় ভরা জলাশয়, যা দূরদিগন্তে বহু বছর পর দেখা যায় সমুদ্রের নিঃশব্দ ফেনা। প্রথম রোববারে শুকনো জামা পরে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো যখন গ্রামটাকে চিনতে বের হয়, তখন সে একধরনের কষ্টে ভোগে। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া লোকজন, যারা কলা কোম্পানির ঝড় দিয়ে কাঁপানোর আগে থেকেই মাকন্দে বাস করত, তারা সবাই প্রথম দিকের সূর্যালোকে উপভোগ করছিল রাস্তার মাঝে বসে। তখনো ওদের শরীরের চামড়ায় ছিল সবুজ শেওলা আর বৃষ্টির দ্বারা কোনায় আবদ্ধ থাকায় ছাতা ধরা গন্ধ, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে ছিল যে গ্রামে জন্ম নিয়েছে, সেটাকে পুনরুদ্ধারের তৃপ্তি। তুর্কদের রাস্তাটা পুনরায় আগের পর্যায়ে ফিরে যায়। যে সময়ে আরবীয়রা পায়ে স্যান্ডেল পরে কানে মাকড়ি লাগিয়ে সারা দুনিয়া ঘুরে গুয়কামায়ার (টিয়াজাতীয় পাখি-ম্যাকাও) সঙ্গে হাবিজাবি বদল করতে করতে মাকন্দের এক রাস্তার মোড়ে পেয়ে যায় যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়ানোর হাত থেকে মুক্তি। বৃষ্টির ফলে বাজারের মালামালগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, খোলা দোকানের দরজাগুলোতে ঝোলানো পর্দা দখল করে বসেছে শৈবাল, জিনিসপত্র দেখানোর কাউন্টার খেয়ে ফেলেছে উই পোকায় আর দেয়াল খেয়েছে আর্দ্রতা। তারপরও আরবদের তৃতীয় প্রজন্ম বসেছিল একই জায়গায়, বাপ দাদাদের মতোই একই মনোভাব নিয়ে মিতভাষী, ভয়হীন, সময় ও বিপর্যয়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে। একই রকম জীবন্ত বা মৃত যেমনটি ছিল অনিদ্রা রোগ মহামারির পর, যেমনটি ছিল কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার বত্রিশটি যুদ্ধের পর। জুয়োর টেবিলে ভাজাভুজির দোকানে শুটিং করার জায়গায়, যেখানে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিত ও ভবিষ্যদ্বাণী করত সেই জায়গা এসব কিছুর ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে ওদের এই আশ্চর্যজনক মনোবল ও উদ্যম দেখে আউরেলিয়ানো সেগুন্দো তার স্মৃতিবিজড়িত সরাসরি প্রশ্ন করে যে তারা কোন রহস্যময় শক্তির বলে এই প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে টিকে আছে, আর কোন বালের কাজটা তারা করেছে প্রশ্ন শুনে একের পর এক দরজায় দরজায়। এক কৌশলী হাসি ও স্বপ্নিল দৃষ্টিক্ষেপ করে কোনো রকমের পূর্বালোচনা ছাড়াই সবাই একই উত্তর দেয়: ‘সাঁতার কেটে।’

    স্থানীয়দের মধ্যে হয়তোবা পেত্রা কতেসেই ছিল একমাত্র মানুষ, যার নাকি ছিল আরবদের মতো মনোবল। সে দেখেছে ঝড়ের ফলে হওয়া তার খামার ও আস্তাবলের শেষ বিপর্যয়, কিন্তু তার পরও খাড়া রেখেছে সে বাড়িটাকে, শেষের বছরটায় সে অনেক জরুরি বার্তা পাঠিয়েছিল আউরেলিয়ানো সেগুন্দোর কাছে। আউরেলিয়ানো সেগুন্দো উত্তর দিত যে সে জানে না কবে তার বাড়ি ফিরবে, কিন্তু যখন ফিরবে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে, এক বাক্স সোনার মোহর নিয়ে আর শোবার ঘরটাকে পাথর দিয়ে মুড়ে দেওয়ার জন্য। ফলে সে হৃদয়ের গহিনে গর্ত খুঁড়ে এমন এক শক্তির খোঁজে যে শক্তি তাকে এই বিপর্যয়ের মধ্যেও বেঁচে থাকতে দেবে, আর পেয়ে যায় ন্যায়সংগত এক প্রচণ্ড রোষ, যার দ্বারা সে প্রতিজ্ঞা করে প্রেমিকের উড়িয়ে দেওয়া ও মহাপ্লাবনে ধ্বংস হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের। এমনই কঠোর সিদ্ধান্ত ছিল সেটা যে শেষ খবর পাওয়ার আট মাস পর আউরেলিয়ানো সেগুন্দো যখন তার বাড়িতে ফিরে আসে, তাকে পায় সবুজ বর্ণের, চুল উষ্কখুষ্ক, চোখের পাতা বসে গেছে, আর চামড়া ভরে গেছে খোসপাঁচড়ায়, কিন্তু ছোট ছোট কাগুজের টুকরোয় লিখে যাচ্ছে নম্বর, লটারি করার জন্য। আউরেলিয়ানো সেগুন্দো নির্বাক বনে যায়, আর ওদিকে সে ছিল এতই চিকন, এতই গম্ভীর যে পেত্রা কতেস বিশ্বাসই করে না যে, যে তাকে দেখতে এসেছে, সে তার সারা জীবনের ভালোবাসা, বরং এসেছে তার যমজ ভাই।

    ‘পাগল হয়েছ’, বলে সে, ‘হাড়গোড় লটারি করবে?’

    ফলে পেত্রা কতেস তাকে শোবার ঘরের দিকে তাকাতে বলে আর আউরেলিয়ানো সেগুন্দো দেখে খচ্চরটা। সেটার চামড়া লেগে ছিল হাড়ের সঙ্গে সেটার মালকিনের মতোই কিন্তু সেটা ছিল এতই জীবন্ত যে তাও ছিল মালকিনের মতো একই রকম। পেত্রা কতেস ওটাকে খাইয়েছিল তার রোষের সঙ্গে আর যখন আর কোনো ঘাস, ভুট্টা বা শিকড় অবশিষ্ট থাকে না, তখন সেটাকে আশ্রয় দেয় নিজের শোবার ঘরে আর খাওয়ায় সুতির গায়ে দেওয়ার চাদর, পারস্যের গালিচা, ভেলভেটের বিছানার চাদর, মখমলের পর্দা ও সোনার সুতো দিয়ে এমব্রয়ডারি করা রাজকীয় বিছানার রেশমি ঝালর।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রেম ও কলেরা – গেব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ
    Next Article অপঘাত – গোলাম মওলা নঈম

    Related Articles

    গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস

    প্রেম ও কলেরা – গেব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

    August 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.