Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম

    জাহানারা ইমাম এক পাতা গল্প110 Mins Read0

    নিঃসঙ্গ পাইন – ১

    ১

    প্লেনটা চলেছে তো চলেছেই। মনে হয়, অনন্তকাল ধরে চলেছে। গতকাল ঢাকায় রাত আটটার সময় সে প্লেনে উঠেছে। আজ লন্ডন-টাইম সকাল নটায় যখন হীথরো বিমানবন্দরে নামল, তখন তার হাতঘড়িতে বাজে ঢাকার সময় দুপুর দুটো। স্থানীয় সময় ধরলে তেরঘণ্টা, কিন্তু পাক্কা আঠার ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। প্লেন ওড়ার সময়ের হিসেবে শুভংকরের ফাঁকি। এই মজাটা বোঝার জন্যই সে তার ঘড়ির কাঁটা ঘোরায়নি। ঢাকায় মেজোভাই বলে দিয়েছিল। হীথরোতে কানেকটিং ফ্লাইটও দেরিতে ছেড়েছে। এগারটার বদলে দুপুর একটায়। মানে ঢাকা-টাইম সন্ধ্যা ছ’টা।

    একটু আগে পাইলটের গমগমে গলায় ঘোষণা শোনা গেছে। এখন আমরা আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে বস্টনের কাছাকাছি এসেছি। এখন এখানকার সময় দুপুর দুটো।

    দুপুর দুটো! লন্ডন-টাইম দুপুর একটায় প্লেন ছেড়ে ৬ ঘণ্টা উড়ে আসার পরও এখন বস্টন টাইম দুপুর দুটো! সাকিনা কব্জি উলটিয়ে ঘড়িটা দেখল— এখন বাজে বারোটা। অর্থাৎ ঢাকার রাত বারোটা। তার মানে, সে আটাশ ঘণ্টা আকাশপথে রয়েছে। হঠাৎ গা গুলিয়ে উঠল তার। মাথাও ঘুরতে লাগল। জোরে দুইচোখ বন্ধ করে সীটটা পেছনে হেলিয়ে দিল বোতাম টিপে। জীবনে এই প্রথম তার দূরপাল্লার প্লেন চড়া। তার ওপর পাঁচমাসের অন্তঃসত্ত্বা। এত দীর্ঘসময় সীটে বসে থেকে পিঠ, কোমর, ঊরু সব টনটন করছে! সীট থেকে উঠে চলাচলের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে তার লজ্জা লাগে। যদিও খেয়াল করেছে, অনেকে তাই করছে। দু-একবার বাথরুমে যাবার সময় যা-একটু হাঁটাচলা হয়েছে।

    অনেকক্ষণ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সাকিনা একটু সুস্থির হল। আর কতক্ষণ? পাশ দিয়ে এক বিমানবালা যাচ্ছিল, তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘ডেট্রয়েট ক-টার সময় পৌঁছোব?

    সে ঘড়ি দেখে মনে মনে একটু কী যেন হিসেব করে বলল, ‘আর তিনঘণ্টা পরে।’

    ‘তখন ডেট্রয়েট-টাইম কটা হবে?’

    ‘বিকেল পাঁচটা।’

    সাকিনাও ঘড়ি দেখে হিসেব করল, তখন বাংলাদেশ-টাইম হবে ভোরে চারটে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সময়ে তফাৎ দশ থেকে এগার ঘণ্টা। গ্রীষ্মকালে দশ, শীতকালে এগার। এগুলো তাকে মেজো ভাই-ই শিখিয়েছে। সে কোনোদিনও এ-সবের হিসেব জানত না। জানবার কথা মনেও হয়নি। কোনোদিন কি ভাবতে পেরেছিল আমেরিকা-প্রবাসী কোনো ছেলের সাথে তার বিয়ে হবে? বাপ-মা, ভাইবোন, সুলতানপুরের পুকুর, ঢাকার ক্যাম্পাস, রোকেয়া হল, শহীদ-মিনার, বাংলা একাডেমী, রমনা-বটমূল—সব ছেড়ে সাত সাগর তেরনদীর পারে অচেনা দেশে ঘর বাঁধতে যাবে?

    সাকিনার বুকের ভেতরটা আবার নতুন করে চিনচিনিয়ে উঠল। অবশ্য বিয়ের প্রস্তাবটা যখন এসেছিল, তখন ভালোই লেগেছিল। বাবা-মা, ভাইবোন সবাই খুশিতে ডগোমগো, সাকিনার এমন ভালো একটা সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ডাক্তার, আমেরিকাতে থাকে। একেবারে অজানাও নয়, ছেলের মা সাকিনার খালার বান্ধবী। খালা ছেলেকে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, ছেলের স্বভাবচরিত্র খুব ভালো, পড়াশোনাতে ভালো, দেখতে শুনতেও ভালো। ছেলের মায়ের চিন্তা হল— কী করে ছেলের জন্য একটি লক্ষ্মীমেয়ে খুঁজে পাবেন। খালা তার জানামতে সবচেয়ে লক্ষ্মীমেয়ে সাকিনাকেই তুলে দিলেন বান্ধবীর ঘরে।

    সাকিনাও খুব খুশি হয়েছিল। বাসররাতে রকিবকে তার মনে হয়েছিল যেন রাজপুত্র। একমাসের ছুটি-শেষে রকিব মিশিগান ফিরে গেলে বিরহব্যথায় বেশ কষ্ট ও পেয়েছিল সাকিনা’। কিন্তু যখন তার যাবার সব বন্দোবস্ত ঠিক হয়ে গেল, তখন হঠাৎ একদিন তার বুক কেঁপে উঠল। এ কোথায় যাচ্ছে সে? বাপ-মা ভাই-বোন আবাল্যের পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে কোথায় যাচ্ছে সে? বাপ-মা ভাই-বোন বন্ধু-স্বজন কেউ থাকবে না, সে কি পারবে ভিন্নদেশের ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে? তখন শুরু হল তার কান্না। বাবা বোঝান, মা বোঝান, মেজোভাই বোঝান। খানিক বুঝে, খানিক অবুঝ হয়ে, কাঁদতে কাঁদতেই প্লেনে উঠেছিল সে। এখনো মনটা ভার হয়ে আছে। তার ওপর শরীরের এই কষ্ট। তবে ঢাকায় প্লেনে ওঠার সময় মেজোভাই একটা কথা বলেছিল সেটা এখন মনে পড়ল। মেজোভাই বলেছিল, ‘এখন তো কানতাছ, খুব কষ্ট পাইতাছ, এটা খুবই সত্য। তবে রকিবরে যখন দেখবা, তখন কিন্তু এই কান্না আর কষ্ট ভুইলা যাবা—কইয়া দিলাম।’ মেজোভাইয়ের কথাটা এখন ফলে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে! এখন যত ড্রেট্রয়েটের কাছে আসছে, মনের মধ্যে কেমন একটা শিহরন অনুভব করছে।

    পাঁচমাস পরে রকিবকে দেখবে সে। কেমন আছে সে? আগের মতোই আছে তো? বিয়ের পরে একমাস সেই-যে পাগলের মতো ভালোবাসা? দুরন্ত আবেগে তার দিনরাতের সর্বক্ষণ মুগ্ধঘোরে আচ্ছন্ন করে রাখা? সাকিনার অজান্তে তার হাত দুটো পেটের ওপর এসে স্থির হল। পাঁচমাসে কোমরের খাঁজ কিছুটা ভরে উঠেছে। রকিব সেই-যে জলপরীকে দেখেছিল সুলতানপুরের পুকুরে; তাকে খুঁজে পাবে তো এই ঈষৎ ভরন্ত শরীরের মধ্যে?

    পরমুহূর্তেই সাকিনার মুখ রাঙা হয়ে উঠল, ‘যাহ কী আবোলতাবোল ভাবছি!’

    এবং ভাবতে ভাবতেই তার মন চলে গেল ছয়মাস আগের সুলতানপুরে।

    কী কতগুলো ছুটি আর ছাত্রদের দাবি-দাওয়ার হরতাল থাকার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছিল না। সেই সুযোগে সে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। যে-কোনোরকম ছুটির ফাঁক পেলেই সে সুলতানপুরে চলে যেত। ওখানে যাবার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ওদের বাড়ির পেছনের পুকুরে সাঁতার কাটা। ছোটবেলা থেকে সাঁতারের পোকা সে। ঢাকার কোথাও সাঁতার কাটার কোনো সুযোগ ছিল না। সাঁতার কাটতে না পারলে তার যেন গা ম্যাজম্যাজ করত।

    সময়টা ছিল ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। অন্যেরা হি-হি করলেও সাকিনা ঠিকই দুপুরবেলা তাদের পুকুরটায় সাঁতার কাটতে নেমেছিল। সাকিনার শীতবোধ নেই বললেই চলে। পুকুরের বাঁধানো ঘাটে তাদের কাজের মেয়ে ছবুরন বসে কাপড় ধুচ্ছিল, আর সাকিনা ছোট পুকুরটার এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত সাঁতার কাটছিল মনের আনন্দে। প্রথম পৌষের মিঠে রোদ ভিজে-গায়ে ভারি আরাম দিচ্ছিল। ছবুরন কাপড় ধোয়া শেষ করে, ভিজে কাপড়ের ডাঁই ডান-হাত আর ডানকাঁধের মধ্যে বেশ কায়দা করে ধরে উঠে দাঁড়াল। চেঁচিয়ে বলল, ‘আমি বাড়ির ভিতর গ্যালাম গো বুবু। তুমি আইবা না?’

    সাকিনা সাঁতার কাটতে কাটতে ঘাটের কাছে এসে বলল, ‘আর-এক পাড়ি দিয়া আসি। তুই যা।’ ছবুরন চলে গেল। সাকিনা ঘুরে আবার পুকুরের অপর পাড়ের দিকে চলল। ওইদিকের পাড়ে ছোট-বড় গাছপালার ওধারে একটা রাস্তা রয়েছে। গাছপালাগুলো পুকুরটাকে মোটামুটি আড়াল করে রাখে। তাছাড়া ও-পাশের রাস্তায় লোক-চলাচল থাকলেও এদিকে বিশেষ কেউ একটা আসে না। সুতরাং সাকিনা বেশ নিশ্চিন্তে সাঁতার কাটে।

    কিন্তু আজ হঠাৎ খেয়াল করল, পুকুরপাড়ে কোটপ্যান্ট-পরা একটা লোক দাঁড়িয়ে তার দিকে হাত তুলে কী যেন বলছে। সাকিনার ভ্রু কুঁচকে গেল। কে রে বেতমিজ লোকটা? নিশ্চয় বাইরের কেউ হবে। গ্রামের কোনো লোক মেয়েদের ব্যবহারের পুকুরপাড়ে এসে দাঁড়ায় না। লোকটা সাকিনার দিকে আঙুল নেড়ে নেড়ে কী যেন বলেই যাচ্ছে। সাকিনা সাঁতার কাটতে কাটতে ওই পাড়ের কাছাকাছি গেল, তখন শুনতে পেল কথাগুলো। লোকটা জিজ্ঞেস করছে, মোসলেম আলী সাহেবের বাড়িটা কোন্ দিকে?

    মোসলেম আলী সাকিনার বাবার নাম। সে চেঁচিয়ে বলল, ‘পশ্চিমদিকের রাস্তা ধইরা চইলা যান। এই দিকে আইছেন ক্যান? এইডা মেয়েদের পুকুর। গেরামের আর কাউরে জিজ্ঞাস করতে পারেন নাই?’ বলেই উলটে গিয়ে ডুব দিল। ডুব-সাঁতারে অনেকদূর চলে গিয়ে তারপর ভুস করে মাথা তুলে ঘাটের দিকে যেতে লাগল। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল লোকটা তখনো দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার মতলব ভালো নয়। বাড়ি চেনার ছুতো করে সে পুকুরে একলা তরুণীর সাঁতার কাটা দেখছে। নাহ্, আর থাকা গেল না। সাকিনা ঘাটে উঠে দুমদুম করে পা ফেলে বাড়ির দিকে চলে গেল। তার ভেজা গায়ে সূর্যের কিরণ পড়ে চমকাতে থাকল।

    পুকুর থেকে বাড়ি ঢুকতে হয় পেছনের দরজা দিয়ে। ঢুকেই মস্তবড় উঠোন, তার তিনদিকে ঘর আর টানা-বারান্দা। বাইরের ঘর একেবারেই উলটোদিকে— ভেতর থেকে কোনোক্রমেই দেখা যায় না। দহলিজ-ঘর থেকে ভেতরে আসার যে-দরজা, সেটি সাকিনার বাবা-মার শোবার ঘরের পাশে এমনভাবে রয়েছে যে, সেটা ভেতর-বাড়ি থেকে দেখা যায় না। সাকিনা বারান্দায় উঠে তার নিজের ঘরে ঢুকে গেল।

    গা-মাথা মুছে শুকনো কাপড়-জামা পরে সে যখন আবার বারান্দায় এল, তখন সারা বাড়িতে কিসের যেন একটা চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে। সাকিনার ছোট ভাই-বোন দুটো—আমিনা আর সালাম উত্তেজিতভাবে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। মেজোভাইকে দেখা গেল রান্নাঘরের দরজায় মাকে যেন কী বলল। আর অমনি মা শশব্যস্তে’ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দ্রুত হেঁটে গেলেন নিজের ঘরের পানে। মার পরনে ছিল তেল-হলুদ মাখা দলামোচড়া একটা শাড়ি। পাঁচমিনিট পরে বেরোলেন ধোপদুরস্ত আরেকটা শাড়ি পরে। এরমধ্যে চুলেও চিরুনি বুলিয়ে নিয়েছেন।

    মেজোভাই মার সঙ্গে কথা বলেই দহলিজ-ঘরের দিকে রওনা দিয়েছিল। এখন আবার ফিরে এল দুইজন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে। একজন তার বড় খালা, অন্যজনকে সাকিনা চেনে না। সাকিনা অবাক হয়ে বলে উঠল, ‘খালা, আপনি? হঠাৎ কোনো খবর না দিয়ে?’ ততক্ষণে ছবুরন আর কাদের দুজনে দুটো চেয়ার বাবার ঘর থেকে টেনে ভেতরের বারান্দায় বসিয়েছে। সাকিনার খালা বললেন, ‘এই যে সাকী, এ দিকে আয়। আমার সই, সালাম কর।’ বলে চোখের ইঙ্গিতে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবার কথা বুঝিয়ে দিলেন। সাকিনা হঠাৎ আড়ষ্ট হয়ে গেল। কী যেন একটা মধুর ষড়যন্ত্রের আভাস পেল। সে মুখ নিচু করে এগিয়ে এসে ভদ্রমহিলার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। ভদ্রমহিলা ‘থাক্ থাক্ মা, বেঁচে থাকো,’ বলে তার থুতনিতে আঙুল দিয়ে মুখটা তুলে ধরলেন। সাকিনা লজ্জা পেয়ে খুব আস্তে থুতনিটা সরিয়ে নিল ওঁর আঙুলের ছোঁয়া থেকে। তারপর মাথা নিচু করে ধীরপায়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

    খানিক পরে আমিনা আর সালাম নাচতে নাচতে এসে ঘরে ঢুকল। আমিনা উত্তেজিত জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘ও বুবু। তর বিয়ার কথা কইতে অরা আইছে।’

    ‘যাহ।’ সাকিনা এক ধাক্কা দিল বোনকে। আমিনা জোর দিয়ে বলল, ‘হ, জিজ্ঞাস কর সালামরে।’

    সালাম চোখ নাচিয়ে বলল, ‘হ বুবু, একদম সইত্য কথা। খালার লগে যেজন আইছেন, তেনার পোলাও দহলিজ ঘরে বইস্যা আছেন। হেই পোলার লগে আবার আরেকজন দাড়িঅলা লোক, সেইডা যে কেডা বোঝবার পারলাম না। সেই দাড়িঅলা, বাড়ানের লগে কথা কইতাছে। তাতেই বোঝলাম।’

    সাকিনার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। কারা বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এল, কেইবা পাত্র, খালার সঙ্গেই বা তাদের কী সম্পর্ক? ঐ ভদ্রমহিলা কি ছেলের মা? মহিলা কিন্তু ভারি সুন্দরী। ছেলেও তাহলে সুন্দর হবে নিশ্চয়। হঠাৎ নিজের মনেই ভীষণ লজ্জা পেল সাকিনা। এসব কী ভারছে সে? সে কি তাহলে বিয়ের জন্য মনে মনে উন্মুখ? আগে বুঝতে পারেনি?

    এমন সময় খালা এসে ঘরে ঢুকলেন। খাটে সাকিনার পাশে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘সাকী, তর জইন্য একটা খুব ভালো সম্বন্ধ আনছি। ঐ যে মহিলা দ্যাখলি, উনি আমার সই, অর পোলা ডাক্তার, আমেরিকায় থাকে। ছুটিতে বাড়িতে আইছে। সই পোলারে বিয়া করাইতে চায় একটা লক্ষীমাইয়ার লগে। তাই আমি অগোরে লয়া আইছি তগোর বাড়িতে।’

    ‘অগোরে মানে?’

    ‘মানে পোলা-ও আইছে। আর পোলার এক মামা। তরে দেইখা তাগোর খুব পছন্দ হইছে। এখন তর মতটা ক’।

    সাকিনার মাথা বুকের ওপর ঝুঁকে পড়ল। অস্ফুটে বলল, ‘আপনেরা যা ভালো মনে করেন।’ তারপর হঠাৎ কী মনে হতে মাথা তুলে বলল, ‘খালা। অগোর পছন্দ হইছে বললেন ক্যান? শুধু তো আপনের সই দ্যাখছেন।’

    খালা মুখ টিপে হাসলেন, ‘নারে পোলা-ও এর মইদ্যে তরে দেইকা ফালাইছে। তুই যখন পুকুরে সাঁতার কাটতেছিলি, তখন।’

    সাকিনার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তাহলে পুকুর-পাড়ের সেই কোট-প্যান্ট পরা লোকটা! মাগো, কী অসভ্যতা! সে বলে উঠল, ‘এ মা ছিঃ! আপনেরা তখন কই ছিলেন?’

    দুষ্টুমি-ভরা হাসি হাসতে হাসতে খালা বললেন, ‘আমরা জিপে বইসা ছিলাম। অরে শিখায়া দিলাম মোসলেম আলীর বাড়িটা কোন্ দিকে জিজ্ঞাস করতে।’

    সাকিনার মুখ শরমে রাঙা হলে উঠল, ‘খুব খারাপ, খালা খুব খারাপ। আপনে কী কইরা জানলেন যে ঐ সময় আমি সাঁতার কাটতেছিলাম?

    ‘একটু চান্স নিলাম আর কি! জিপ ঘুরায়া ওই রাস্তা দিয়া চালাইতে কইলাম। পুকুরটা পার হওনের সময় তাকায় দেখলাম—দেখন যায় তো। দেখলাম তুই সাঁতার কাটতেছিলি।’

    সাকিনা কোপ দেখাতে গিয়ে হেসে ফেলল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম
    Next Article একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    Related Articles

    জাহানারা ইমাম

    একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    August 13, 2025
    জাহানারা ইমাম

    সাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নয় এ মধুর খেলা – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }