Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম

    জাহানারা ইমাম এক পাতা গল্প110 Mins Read0

    নিঃসঙ্গ পাইন – ১৩

    ১৩

    ঘড়ির কাঁটা তিনটের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। চারদিক নিশুতি হয়ে এসেছে। সবাই নিজের নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছে। সাকিনার চোখে ঘুম নেই একফোঁটা।

    জাহানারা ইমাম রাত এগারটা পর্যন্ত থেকে চলে গেছেন। তিনি আসার পর সাকিনা প্রথমে তাঁর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুব কেঁদেছিল। তিনিও মায়ের মতো স্নেহে তাকে জাড়িয়ে ধরে চুপ করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। তারপর মৃদুকণ্ঠে প্রশ্ন করে-করে সব জেনে নিলেন। কারণ, সে ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারছিল না। সব বলার পর সাকিনা আবার আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘এখন আমি কী করব খালাম্মা?’

    খালাম্মা বলেছিলেন, ‘কী করবে, সে সিদ্ধান্ত তোমাকে নিতে হবে সাকিনা।’

    সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে? সে কি জীবনে কোনোদিন নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে? না, কেউ তাকে সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ দিয়েছে? সে কী পড়বে, বাবা-মা ঠিক করে দিয়েছেন; সে কাকে বিয়ে করবে, বাবা-মা-খালা ঠিক করে দিয়েছেন। প্রথম বাচ্চা হবার সময় বাবা-মা ভাই-বোনের পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে অচেনা দেশে এসেছে— সেটাও তার স্বামী ঠিক করে দিয়েছে। আর এখন তার জীবনের কঠিনতম সংকট ও সর্বনাশের সময় সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে!

    খালাম্মার মুখে কথাটা শোনার পর সে একটু ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। তার নিজের মা হলে কি এমনভাবে বলতে পারতেন? জাহানারা বোধকরি বুঝতে পেরেছিলেন তার মনের কথা। বলেছিলেন ‘দেখ মা, আমাদের দেশে বাবা-মায়েরা মেয়েদের মানুষ করে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল ক’রে। বিয়ের আগে নিজেদের আশ্রয়ে আগলে রাখে, বিয়ে দিয়ে স্বামী-শাশুড়ির খোঁয়াড়ে ভরে দেয়। তাই কোনো মেয়ের জীবনে যখন এ-রকম সর্বনাশ ঘটে যায়, সে সম্পূর্ণ নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। যদিবা কেউ অর্থনৈতিকভাবে অসহায় নাও হয়, মানসিকভাবে স্বামী হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়ে। কেননা, ছোটবেলা থেকে সে নিজেকে মেয়ে হিসেবেই ভাবতে শিখেছে, নিজেকে সেইভাবে গড়ে তুলেছে। কিন্তু ভেবে দেখ, বাপ-মা যদি ছেলেমেয়ে দুজনকে সমান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন— মেয়েটা যদি ভাবতে শেখে সে আগে মানুষ, তারপর মেয়ে—তাহলে জীবনের নানা দুর্ঘটনায় তার কিন্তু এতটা ভেঙে পড়ার কথা নয়। সে কষ্ট পাবে—যেমন কষ্ট একজন স্বামী পায় স্ত্রী ছেড়ে গেলে। কিন্তু সে তো ভাবে না—এটাই তার জীবনের শেষ। তাহলে তুমি কেন ভাববে তোমার জীবনের সুখ-শান্তি সব চলে গেল? মাত্র একজন মানুষের জন্য তোমার সারাজীবন তো নষ্ট হতে পারে না। তুমি নিজেকে একজনের বউ না-ভেবে পুরো একটা মানুষ হিসেবে ভাবতে চেষ্টা কর, দেখবে দুঃখটা অনেক সহজ হয়ে আসবে, সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হবে।’

    তখন খালাম্মার কথাগুলো বক্তৃতার মতো মনে হয়েছিল। আসলে উনি বক্তৃতাই দিচ্ছিলেন। এখন সাকিনা বুঝতে পারছে—ঐ বক্তৃতার দরকার ছিল। খালাম্মা বলেছিলেন, ‘তোমাকেই ভেবে ঠিক করতে হবে, তুমি দেশে ফিরে যাবে কিনা বাবা-মার কাছে। দেশে ফিরে গিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে কিনা।’

    না, তা সে পারবে না। বাবা-মা খুব সাদাসিধে, নিরীহ। অল্প আয়ের মানুষ। সে এভাবে ফিরে গেলে তাঁদের বুক ভেঙে যাবে। সেও তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না।

    খালাম্মা বলেছিলেন, ‘এদেশে থাকতে পারবে কিনা, সেটাও তোমাকেই ভেবে ঠিক করতে হবে। তুমি গাড়ি চালানো শিখেছ। গাড়িও একটা আছে। এখানে আমার তিনজন ভাই আছে, তারা ডাক্তার, প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে। তাদের বলে তোমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তুমি ভেবে দেখ, চাকরি করে এদেশে একা থাকতে পারবে কি-না। তোমার সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে আমরা কেউ কিছু করতে পারি না। আমরা বড়জোর তোমাকে পরামর্শ দিতে পারি, সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ? নো মাই চাইল্ড, ডিসিশন মাস্ট বি কমপ্লিটলি ইয়োরস।’

    তখন খালাম্মাকে একটু হৃদয়হীন মনে হয়েছিল। কোনো জবাব দেয়নি। খালাম্মাও বহুক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন। তারপর বলেছিলেন, ‘তাছাড়া রকিব তো এখনো তোমাকে কিছু বলেনি। মিরান্ডা স্ট্যানলিকে ছেড়ে চলে গেছে রকিবের কাছে— এটা স্ট্যানলির খবর। মিরান্ডা বলেছে স্ট্যানলিকে। কিন্তু মিরান্ডা স্যানডিয়েগো যাবার পর রকিবের তাকে ভালো নাও লাগতে পারে। তখন তার হুঁশ ফিরতে পারে— এ কী করছে সে বউ ফেলে!’

    সাকিনা প্রচণ্ড আবেগে প্রতিবাদ করে বলে উঠেছিল, ‘আমি কখনো তাকে আর ফিরে নিতে পারব না। সে আমাকে ফেলে অন্য মেয়ে নিয়ে থাকার পর কী করে আমি আবার..’ সাকিনার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, প্রবল অশ্রুপাতের সঙ্গে সে খালি মাথা নেড়েছিল, ‘না, কিছুতেই না—’

    জাহানারা একটুখানি হেসেছিলেন—’জীবনটা কি অতই সোজা, অঙ্কের মতো? এখানে সবসময় কি দুয়ে দুয়ে চার হয়? মানুষের পা পিছলায় না? হাড় ভাঙে না? অনেক কষ্টের পর ভাঙা হাড় জোড়া লাগে, আবার মানুষ হাঁটে। রকিবকে তার ভুল শোধরাবার একটা চান্স তো দেবে।’

    জাহানারার কথাগুলো তখন তাঁর আগে বলা কথার বিরোধী বলে মনে হয়েছিল। এখন রাত্রির শেষ-যামে কথাগুলোর অর্থ তার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে। রাত্রিবেলা মানুষের পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে নাকি? এখন তার সমস্ত মন-প্রাণ-দেহ-শিরা-উপশিরা রকিবের জন্য হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে, রকিব যদি একবার তার সামনে এসে দাঁড়ায়, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে এমন কঠিন বাহুর বাঁধনে বেঁধে ফেলবে—যাতে জীবনেও সে বাঁধন খুলতে না পারে। পাশের বেডসাইডে টেবিলে-রাখা রকিবের হাসিমুখের ফটোটা তুলে বুকে চেপে সে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ল, বাঁধ-ভাঙা কান্নার সঙ্গে বারবার করে বলতে লাগল, ‘ফিরে এসো, ফিরে এসো, ফিরে এসো।

    কাঁদতে কাদতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, ঝনঝন করে ফোন বাজতেই সে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল। সারা ঘর রোদে ভরে গেছে। পাশের টেবিলে-রাখা ঘড়ির দিকে চোখ পড়ল—সাড়ে দশটা। উহ্, এতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে? ফোনের রিসিভারটা তুলে ঘুম-জড়ানো গলায় ‘হ্যালো’ বলতে ওপাশ থেকে জাহানারা ইমামের গলা ভেসে এল, ‘ঘুম ভাঙালাম বুঝি? এত বেলা পর্যন্ত ঘুমোবে, ভাবিনি। ঘুমোতে পারনি, তাই না?’

    ‘হ্যাঁ খালাম্মা, ভোরের দিকে ঘুমিয়েছি।’

    ‘শোনো। আজ রাতে ডা. নাসিরের বাসায় কোরবানি ঈদের পার্টি। তোমারও দাওয়াত সেখানে। পাঁচটার দিকে তৈরি থেকো। আমরা সবাই সাড়ে পাঁচটায় বেরোব। আর হ্যাঁ, আমরা প্রত্যেকটি বাড়ি থেকে একটা করে খাবার রান্না করে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি তোমার সুবিধেমতো একটা-কিছু বানিয়ে নিয়ো, কেমন?’

    ‘কত লোক হবে খালাম্মা? বেশি বাঙালির ভিড়ে আমি যাব না। সবাই তো আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করবে, তখন?’

    ‘না, না, যেটা আনুষ্ঠানিক ঈদপার্টি হয় বড় করে, এটা সেটা নয়। এটা নাসিরের বাড়িতে প্রাইভেট পার্টি। ওর নিজের ভাই, বোন, ভাগনে, ভাগনী আর অন্য দুজন ডাক্তার—তাদের বউ নিয়ে যাবে। ঐ যে বলেছিলাম না—তিন ডাক্তার আছে আমার ভাই, শুধু তারাই যাবে। দুপুরের মধ্যেই আমি ওদের তিনজনকেই তোমার কথা বলে রাখব। ওরা কেউ তোমাকে পরিচয় জিজ্ঞেস করবে না। তোমার চাকরির ব্যাপারে তোমাক হেল্প করতে পারবে। ওদের সাথে তোমার পরিচয় হওয়া দরকার।’

    একটা-কিছু খাবার বানাবার ধান্ধায় সারাটা দিন সাকিনার বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই কেটে গেল। মন খারাপ করার বিশেষ সময় পেল না। সে খানিকটা পোলাও চালের জর্দা বানিয়েছে। এত অল্পসময়ে অন্য কিছু বানাবার সময় ছিল না। পাঁচটার সময় সে পরল একটা সরু পাড়ের সাদাসিধে কাতান শাড়ি, লম্বা চুল আঁচড়ে খোলা রেখে দিল। মনে পড়ল দু-বছর আগের ঈদের দিন সকালের সে বাকবিতণ্ডা— রকিব তাকে চুল খোলা রাখবার জন্য জেদ করছে, আর সে খোঁপা বাধার জন্য জেদ করছে। মাত্র দু-বছর আগে? না, দুবছরও হয়নি। সে এসেছিলই তো গতবছরের রোজার ঈদের আগে-আগে। সেই ঈদের পর এ-বছর রোজার ঈদে হয়েছে একবছর। তারপর আড়াইমাস পরে এই কোরবানির ঈদ হয়েছে গেল দুদিন আগে। তার মানে সোয়া বছর। মাত্র সোয়া বছরে তার জীবনে কী অচিন্তনীয় পরিবর্তন! শুধু কি পরিবর্তন? অকল্পনীয় সর্বনাশ। কী করে পারল রকিব? রকিবের প্রতি ক্রোধে, বিতৃষ্ণায় মন ভরে উঠল তার। সেইসঙ্গে রকিবের মা’র প্রতিও। কেন তিনি ছেলেকে তার ইচ্ছামতো বিয়ে করতে দেননি। দিলে কার কী ক্ষতিটা হত? বাঙলি মেয়ে বিয়ে করিয়ে তাঁর কি হাতি-ঘোড়া লাভ হল? মাঝখান থেকে একটি নিষ্পাপ, নিরীহ মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেল।

    না, জীবন নষ্ট হতে সে দেবে না। মনে পড়ল গতরাতে খালাম্মার ‘লেকচারের’ কথা : কোনো একজন মানুষের অভাবে অন্য একটি মানুষের জীবন নষ্ট হয় না, হতে পারে না। স্বামী চলে গেলে শুধু বাঙালি মেয়েরাই এ-ধরনের কথা ভাবতে পারে। কিন্তু জীবন তো তা বলে না। চারদিকে চোখ মেলে দেখ। পৃথিবীতে অহরহই মানুষ এ-ধরনের চোট পাচ্ছে। আবার সেরেও উঠছে কিছুদিন কষ্ট পেয়ে। আসল কথা হল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তুমি যদি নিজে রোজগার করতে পার, খাওয়া-পরা-থাকার জন্য কারো ওপর নির্ভর করতে না হয়, তাহলে দেখবে এসব মনের কষ্ট কাটিয়ে ওঠা যায়। ক্ষতচিহ্ন অবশ্য একটা থাকবে। হাত-পা ভাঙলে বা কাটলে যেমন সেরে যায়, ক্ষতচিহ্ন একটা থাকে কিন্তু তাতে আর ব্যথা লাগে না। তেমনি মনের মধ্যেও একটা ক্ষতচিহ্ন তোমার থাকবে। কিন্তু দেখবে, তাতে পরে আর কোনো কষ্ট থাকবে না মনে। আবার তুমি কাউকে ভালোবাসবে, বিয়ে করবে, আবার তোমার বাচ্চা-কাচ্চা হবে।’

    গতরাত্রে তিনঘণ্টা ধরে খালাম্মা কতরকম কথাই যে বলেছেন। মাঝেমাঝে সেগুলো পরস্পরবিরোধীও মনে হয়েছে। একবার রকিবকে ভুল শোধরাবার সুযোগ দেবার কথাও বললেন। এখন সে বুঝতে পারছে, খালাম্মা তার মনের সবকটা অন্ধি-সন্ধি ওলট-পালট করার জন্য ওভাবে বলেছিলেন—যাতে নিজের মনটাকে সে নিরাবরণ করে দেখতে পারে, বুঝতে পারে। কাল রাতেও সে রকিবের ছবি বুকে নিয়ে কেঁদেছে ‘ফিরে এসো’ ঐ বলে। কিন্তু এখন আর সেরকম আবেগ তার মনের মধ্যে নেই। ও আবেগ মিথ্যে, বাঙালি সেন্টিমেন্ট ভিত্তিহীন। ও শুধু বাঙালি মেয়েদের মনকে পরনির্ভরশীল করে রাখে; তাদেরকে শুধু কন্যা, স্ত্রী, মা হিসেবে চিহ্নিত করে রাখে; তাদেরকে মানুষ হিসেবে নিজেদের দুইপায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে দেয় না।

    নিচে টুংটাং বেল বাজল। সাকিনা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে দরজা খুলে দিয়েই অবাক। ফ্রিডা চওড়া লালপাড় গরদের শাড়ি, লাল কাচের চুড়ি, লাল টিপ পরে একেবারে লক্ষী-বউ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল—’ওমা কী চমৎকার দেখাচ্ছে তোমাকে! তুমি শাড়ি পরতে পার জানতাম না তো? কখনো পরতে দেখিনি।’

    ‘এইরকম স্পেশাল অকেশানে পরি। তোমাকেও কিন্তু চমৎকার দেখাচ্ছে ফিরোজা রঙের শাড়িতে। তোমার টিপটাও খুব সুন্দর ম্যাচ করছে। কই এসো, আমরা এখন রওনা দেব।’

    ‘দাঁড়াও, আমার খাবারের বাটিটা নিয়ে আসি। তুমি কী বানালে?’

    ‘আমি চিজ-বল বানিয়েছি। এটা আগেও একবার বানিয়েছিলাম। ওরা সবাই খুব পছন্দ করেছিল।’

    সাকিনা তার জর্দার বাটিটা ধরে বেরিয়ে দরজা টেনে বন্ধ করে দেখে একটা বাটি হাতে জামী আর তার মা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। জামীর পরনে রাজশাহী সিল্কের সুন্দর কাজ-করা পাঞ্জাবি আর ফুলপ্যান্ট। জাহানারা আজ মাথায় তাঁর পরচুলোটা পরেছেন, রাজশাহী সিল্কের শাড়ির ওপর আজকেও একটা গরম শাল জড়ানো।

    সাকিনা হেসে বলল, ‘জামী ভাই, কী সুন্দর পাঞ্জাবিটা। যা মানিয়েছে আপনাকে! খালাম্মা, আজকেও আপনার শীত গেল না। উইগটাতে খুব মানিয়েছে কিন্তু। আপনি সবসময় পরে থাকেন না কেন।’

    ‘মাথার চাঁদি চুলকোয় যে! দাঁড়াও না, আমার নিজের চুল আর ইঞ্চিদুয়েক লম্বা হোক, তারপর উইগটা ডাস্টবিনে ফেলে দেব।’

    ‘না না খালাম্মা, ওটা স্মৃতি হিসেবে ঢাকার বাড়িতে শোকেসে রেখে দেবেন।’

    সাকিনার উৎফুল্ল ভাব দেখে জাহানারা অতি সন্তর্পণে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম
    Next Article একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    Related Articles

    জাহানারা ইমাম

    একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    August 13, 2025
    জাহানারা ইমাম

    সাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নয় এ মধুর খেলা – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }