Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প310 Mins Read0

    অধ্যায় ৬ – অনুবাদকের বন্ধু

    এক

    চায়ের কাপ হাতে নিয়ে হাসছে মিনেকো মিতসুয়ি। পরনে একটা টিশার্ট ও জিন্স। ঢেউ খেলানো চুলগুলো পেছনের দিকে টেনে হালকাভাবে বাঁধা।”

    “হায় ঈশ্বর, বলল তামিকো। “ভেবেছিলাম তুমি মারা গিয়েছো।”

    কিছু না বলে কেবল হাসল মিনেকো।

    ডোরবেলের আওয়াজ ভেসে এলো এসময়। ঘুরে বসে দরজার দিকে তাকায় তামিকো। দরজাটা খোলা, কেউ একজন বের হচ্ছে সেখান দিয়ে।

    মিনেকো, ভাবল সে। একমুহূর্ত আগেই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল ও, এরই মধ্যে চলে গেলো। আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছে তামিকো, কিন্তু নড়তে ইচ্ছা করল না। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু জমে গিয়েছে পা।

    আবারও ভেসে এলো আওয়াজ। নিশ্চয়ই মিনেকো, তাকে এভাবে ছাড়া উচিত হয়নি। ফিরিয়ে আনতে হবে।

    নিজের পায়ের গোড়ালিতে ভারী কিছু অনুভব করল তামিকো, যা আটকে ফেলছে তাকে। নিচে তাকাল। পায়ের কাছে পড়ে আছে কেউ একজন। মাথা নিচু করে মেঝেতে পড়ে আছে মিনেকো! আস্তে আস্তে মাথা তুলছে সে, যেকোনো সময় দেখা যাবে চেহারা…

    কাঁপুনি দিয়ে জেগে উঠল তামিকো। কম্পিউটারের সামনে বসে আছে। অসম্পূর্ণ একটা ইমেইল ভাসছে সামনের স্ক্রিনে। ইমেইলটার শেষ প্যারাতে অর্থহীন কিছু অক্ষরের ছড়াছড়ি। অজান্তেই ঘুম চলে এসেছিল। ঘেমে একাকার অবস্থা, বেড়ে গিয়েছে হৃৎস্পন্দন।

    তৃতীয়বারের মত শোনা গেল ডোরবেলের আওয়াজ। এবার আওয়াজটা বাস্তবই মনে হল। উঠে দাঁড়িয়ে দেয়ালে থাকা ইন্টারকমের কাছে গেল তামিকো।

    “কে?”

    তৎক্ষনাৎ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। “নিহনবাশি থানা থেকে এসেছি। কয়েকটা কথা বলা যেতে পারে?”

    লোকটা পুলিশ এটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগল তামিকো মিনেকো হত্যার তদন্ত করছে নিহনবাশি পুলিশ স্টেশন।

    “মিস ইয়োশিকো? তামিকো ইয়োশিকো?” তার নাম ধরে ডাকল পুলিশের লোকটা।

    “দুঃখিত…ওহ…হ্যাঁ আসুন।”

    নিচতলার অটো ডোরের বাটন চেপে হ্যান্ডসেটটা জায়গামত রেখে দিলো তামিকো। কম্পিউটারের সামনে গিয়ে আবারও বসে পড়ল চেয়ারে। টেবিলে এখনও একটা মগের প্রায় এক তৃতীয়াংশ দুধ চা রয়ে গেছে। ঘুমানোর আগে ওটা পান করছিল সে। মগটা তুলে ঠোঁটে ছোয়াল, ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে চা।

    স্বপ্নটা নিয়ে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তামিকো। কেবল মিনেকোর হাসির আবছা দৃশ্যটাই মনে আছে তার। স্বপ্নে তার বন্ধু কি তাকে কিছু বলতে চাইছিল? আধ্যাত্মিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে আলাপ করতে ভালো লাগলেও, প্রেতে বিশ্বাস নেই তামিকোর। ডেস্কে কনুই রেখে হাতের উপর মাথাটা স্পর্শ করল সে। কয়েকদিন ধরেই মাথা ব্যাথায় ভুগছে। নিশ্চিত এই মাথা ব্যাথার কারণ নিদ্রাহীনতা। খুনের পর থেকে একদিনও ভালোমত রাতে ঘুমাতে পারেনি। মাঝেমধ্যে একটু সময়ের জন্য হুটহাট ঘুমিয়েছে, এই যা। ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করলেই মাথার মধ্যে ভেসে ওঠে দুঃসহ স্মৃতি, হারাম করে দেয় ঘুম।

    অ্যাপার্টমেন্টের ডোরবেল বাজল। কোনোমতে উঠে গিয়ে দরজার পিপহোলে চোখ রাখল তামিকো। বাইরের প্যাসেজওয়েতে দাঁড়িয়ে একজন লোক। টিশার্টের ওপর একটা শার্ট পরনে তার, হাতে শপিং ব্যাগ। কোনোভাবেই পুলিশের লোক বলে মনে হচ্ছে না। তবে কোনো সন্দেহ করল না তামিকো। এই লোকটার সাথে আগেও দেখা হয়েছে তার, যদিও নামটা মনে নেই। লোকটা নিজের একটা বিজনেস কার্ড দিয়েছিল অবশ্য, কিন্তু সেটা আর দেখা হয়নি।

    দরজা খুলে দিল তামিকো। সামান্য হেসে বাউ করল ডিটেকটিভ।

    “আবারও বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।”

    সংশয় নিয়ে তার দিকে তাকাল তামিকো।

    “কি চান আবার? ডিটেকটিভের একটা পুরো টিম আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।”

    তামিকো পুলিশকে কল করার পর, এই ডিটেকটিভই সিনে প্রথমে দেখা দেয়।

    ক্ষমা চাওয়ার অঙ্গভঙ্গি করল ডিটেকটিভ।

    “জানি ব্যাপারটা অস্বস্তিকর। তবে তদন্তে নতুন নতুন বিষয় বেরিয়ে আসে। নতুন কিছু জানার পর কেসের সাথে সম্পর্কিত লোকদের পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। এই কেসটা সমাধানে সাহায্য করছেন আপনি, আপনার সহায়তা আমাদের কাম্য।”

    দীর্ঘশ্বস ফেলল তামিকো।

    “কি জিজ্ঞেস করতে চান আমাকে?”

    হঠাৎই ডিটেকটিভের নামটা মনে পড়ে গেল তামিকোর। কাগা। বেশ ভদ্রভাবে কথা বলে লোকটা, যা তার ওপর আস্থা রাখতে সাহায্য করে।

    “একটু সময় লাগবে…বাইরে গিয়ে কোথাও বসে কথা বলতে পারলে ভালো হত। ওহ, আপনার জন্য এটা এনেছি। এগুলো ভালো হওয়ার কথা।” হাতের ব্যাগটা উঁচিয়ে ধরল কাগা। মনে হচ্ছে মিষ্টি রয়েছে ওতে।

    “এটা আমার জন্য?”

    “হ্যাঁ। ফ্রুট অ্যান্ড সুইট আলমন্ড প্যাস্ট্রি বা এরকম কিছু। মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন না?”

    “না, করি…“

    “আচ্ছা, নিন এটা। রেফ্রিজারেটরে রাখলে অনেকক্ষণ ভালো থাকবে।”

    “ধন্যবাদ,” তার হাত থেকে ব্যাগটা নিলো তামিকো। বরফ গলে ভিজে গিয়েছে ব্যাগের নিচের দিকে। সম্ভবত ড্রাই আইস ব্যবহার করা হয়েছিল এতে।

    আশা করি এরকম কিছু খেতে অসুবিধা হবে না, ভাবল তামিকো খুনের পর থেকে ভালোমত কিছুই খেতে পারেনি সে। ক্ষুধা জিনিসটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

    “রাস্তার ওই পাশের ক্যাফেটা চেনেন?” বলল কাগা। “ওইখানে দাঁড়িয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি আমি। কথা দিচ্ছি বেশি সময় নেব না।”

    “মাথা নেড়ে ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলল তামিকো।

    “শুধু কথা বলতে চাইলে এখানে বসে কথা বলাই ভালো।”

    “আপনাকে জোর করছি না আমি।”

    “আর আমি পোশাকও বদলাতে চাইছি না। বাইরে গেলে আবার মেকআপ করতে হবে।”

    তামিকোর পরনে রয়েছে টেরি-ক্লথ বাথরোব। বাড়িতে থেকেই কাজ করে সে, ফলে সবসময় এরকম পোশাকেই থাকে। “অচেনা মানুষের সাথে একা থাকার ভয়ের বয়স অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছি। ভেতরে আসুন। জায়গাটা এলোমেলো বলে দুঃখিত।”

    অনিশ্চিত দেখাল কাগাকে। “ঠিক আছে, তাহলে,” বলে ভেতরে ঢুকল কাগা।

    এই অ্যাপার্টমেন্টে একটা লিভিংরুম, একটা কিচেন ও একটা আলাদা বেডরুম রয়েছে। লিভিংরুমে রয়েছে কয়েকটি আর্মচেয়ার ও একটা কফি টেবিল। ঠিক শেষপ্রান্তে রয়েছে কম্পিউটার টেবিল। তামিকোর কোনো ডাইনিং টেবিল নেই।

    কাগাকে একটি আর্মচেয়ারে বসতে দিয়ে কিচেনে গেল তামিকো। দুই গাস বার্লে চা নিয়ে ফিরে এলো সে।

    “ধন্যবাদ,” হালকা মাথা নেড়ে বলল কাগা। “যা ঘটেছে সেটা কি মেনে নেয়া শুরু করেছেন?” চায়ে চুমুক দিয়ে বলল। তার নজর তামিকো আর কম্পিউটারের মাঝামাঝি

    “এখনও মাথা থেকে বের করতে পারিনি ব্যাপারটা। মাঝেমধ্যে মনে হয় দুঃস্বপ্ন দেখছি। কিন্তু এটা তো বাস্তব, ঠিক না? যতবার মনে হয়, ততবারই হতাশ হয়ে পড়ি। আমাকে ব্যাপারটা মেনে নেয়া শিখতে হবে… সম্ভবত এখন সেটাই করছি। বলতে গেলে, কিছুই করছি না এখন, “ ম্লান হাসি হাসল তামিকো।

    “গতকাল তো শেষকৃত্য ছিল। গিয়েছিলেন?

    মাথা নেড়ে সায় জানালো তামিকো।”

    “হ্যাঁ, শেষ বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম। যদিও ভেবেছিলাম যাবো না। ওর পরিবারের সামনে দাঁড়াতে লজ্জা লাগছিল। জানি না কিভাবে মিনেকোর কাছে ক্ষমা চাইবো। বেদিতে থাকা ওর ছবির দিকেও তাকাতে পারছিলাম না।”

    ভ্রু কুঁচকে তাকাল কাগা

    “এরকম মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। যা ঘটেছে সেটাতে আপনার কোনো দোষ নেই। একমাত্র দোষী হল সেই ব্যক্তি: যে তাকে হত্যা করেছে।”

    “হ্যাঁ, কিন্তু…” কথা শেষ না করেই চোখ নিচু করল তামিকো। আবারও কান্না পাচ্ছে তার।

    “জানি ব্যাপারটা বিব্রতকর। কিন্তু আমি পুরো বিষয়টা আরেকবার বিস্তারিত শুনতে চাইছি,” বলল কাগা। “আপনার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মিস মিতসুইর অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক সাড়ে ছয়টায় ফোন করে জানান আটটার দিকে যাবেন। ঠিক বলেছি?”

    ভারী নিঃশ্বাস ফেলল তামিকো। ডিটেকটিভ আসলেই জানে না ব্যাপারটা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, ভাবল সে, আর কতবার আমাকে এই দুঃসহ স্মৃতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

    “হ্যাঁ, ঠিক সাতটার সময় আমার আরেকজনের সাথে দেখা করার কথা ছিল। এজন্য সাতটায় ওর সাথে দেখা করতে যাওয়া বাতিল করি।”

    নিজের নোটবুক খুলল কাগা।

    “যে লোকটার সাথে আপনি দেখা করেছিলেন তার নাম কোজি তাজিবানা। একজন জাপানি বংশোদ্ভূত ইংলিশ তিনি। আর বাকি দুজনের সাথে দেখা করেছিলেন কোটেশিয়া মানে গিঞ্জার এক জুয়েলারি শপে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দোকানটা থেকে বেরিয়ে সরাসরি চলে যান মিস মিতসুয়ির অ্যাপার্টমেন্টে। গিয়ে আবিষ্কার করেন তার মৃতদেহ। এতদূর পর্যন্ত ভুল কিছু বলেছি?”

    “নাহ। ঠিক এমনটাই ঘটেছে।”

    তামিকো জানে পুলিশরা বারবার জিজ্ঞাসা করে দেখার চেষ্টা করছে তার আনুষ্ঠানিক বিবৃতির সাথে বলা কথার মিল আছে কিনা। টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশের এক ডিটেকটিভ দেখা করতে এসেছিল কোজির সাথেও।

    “ওদের বলিনি আমরা কেন দেখা করেছিলাম, তবে মনে হচ্ছিল ওরা কারণটা জানার জন্য উদগ্রীব,” রহস্যময় ভঙ্গিতে ফোনে বলছিল কোজি। তামিকোর কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে সে বুঝতে পারে এভাবে বলা ভুল হয়েছে, পরে ক্ষমা চায়। জাপানেই কোজির জন্ম, বেশ ভালো জাপানি বলতে পারে। তার বাবা কাজের সুবাদে যুক্তরাজ্যে চলে গেলে পরবর্তীতে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পায় কোজি

    “কেউ কি জানত ওই সন্ধ্যায় আপনার ও মিস মিতসুইর দেখা করার কথা আছে?” জিজ্ঞেস করল কাগা।

    “একমাত্র মিস্টার তাজিবানাকেই বলেছিলাম।“

    ঘরটার চারিদিকে তাকাল কাগা।

    “ওখানে ঐটা আপনার মোবাইল ফোন?”

    “জ্বি।”

    “আমি কি একটু দেখতে পারি ওটা?”

    “দরকার হলে অবশ্যই।”

    মোবাইল ফোনটা তুলে কাগার হাতে ধরিয়ে দিলো তামিকো। তাকে ধন্যবাদ জানাল কাগা। তামিকো লক্ষ করল ফোনটা ধরার আগে হাতে সাদা গ্লোভস পরে নিয়েছে কাগা।

    মোবাইল ফোনটা লাল রঙয়ের, চেরি ব্লসম প্যাটার্নের ডিজাইন রয়েছে এতে। বেশ কয়েক বছর পুরানো। ফোনটা বদলানোর কথা ভাবছে তামিকো।

    আবারও ধন্যবাদ দিয়ে ফোনটা তাকে ফিরিয়ে দিলো কাগা।

    “আপনি কি…?”

    “প্রশ্নটা আগেও করা হয়ে থাকতে পারে। আপনার জানামতে মিস মিতসুয়ির কোনো বন্ধু বা পরিচিতি কেউ কি এরইমধ্যে নিজেদের মোবাইল ফোন হারিয়েছে? পুরুষ বা মহিলা?”

    “কেউ ফোন হারিয়েছে কিনা? আমি এরকম কিছু শুনিনি।”

    “আচ্ছা,” ভাবনার ছাপ ফুটে উঠল কাগার চেহারায়।

    “এর সাথে খুনের কি সম্পর্ক? কেউ সেলফোন হারিয়ে থাকলে কি হবে?”

    ভাবনায় ডুবে থাকা কাগা সাথে সাথে জবাব দিলো না।

    নিশ্চয়ই ব্যাপারটা গোপন যা সবার কাছে প্রকাশ করা যাবে না, ভাবছিল তামিকো, ঠিক তখনই বলে উঠল ডিটেকটিভ।

    “কেউ একজন তাকে পে-ফোন থেকে কল করেছিল। কলটা আসে ছয়টা পঁয়তাল্লিশে। এর কিছুক্ষণ পরই খুন হয় সে। আমাদের কোনো ধারণাই নেই কলারটা কে, তবে এটুকু নিশ্চিত মিস মিতসুইর বেশ কাছের মানুষ। একজন শুনতে পেয়েছিল মিস মিতসুইর প্রান্তের কথাগুলো। খুবই আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথা বলছিল সে। মিস মিতসুইর ফোনে কথা বলার ধরন দেখে আমরা ধারণা করছি অপরপ্রান্তের মানুষটা ফোন হারিয়েছে।

    তামিকোর দিকে দৃষ্টি স্থির করল কাগা। “আপনার কি ধারণা? কে হতে পারে এটা?”

    “জানি না। এতে কি আসে যায়?”

    “আমাদের মতে যে মানুষটা ফোন হারিয়েছে তার খুনি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। ক্রাইম সিন দেখে আমাদের বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে মিস মিতসুই খুনিকে চিনতো আর সে-ই নিজ থেকে তাকে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে দিয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, খুনি মিস মিতসুইকে ফোন করেছিল তার আসার ব্যাপারটা জানাতে। আপনার সাথে মিস মিতসুই প্রথমে দেখা করার কথা ছিল সাতটা নাগাদ। ওই সময়টা না বদল হলে মিস মিতসুয়ি হয়তো খুনিকে সন্ধ্যায় আসতে মানা করত। কিন্তু এমনটা করেনি সে, উল্টো অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে দিয়েছে খুনিকে। আপনি আপনার দেখা করার সময় এক ঘণ্টা পেছান বলেই এমনটা করেছে সে।”

    এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে তামিকোর প্রতিক্রিয়া দেখে তার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করল কাগা। “কোনোভাবেই আপনার সমালোচনা করছি না আমি। দয়া করে ভুল বুঝবেন না।”

    “জানি আমি…দেখা করার সময়টা পিছিয়েছি বলেই খুনটা হয়েছে,” চেহারা শক্ত করে বলল তামিকো। “আপনি বলতে থাকুন।”

    গলা খাকারি দিলো কাগা।

    “মানে খুনি মিস মিতসুইকে ফোন দেয় আপনার কলের পর আমরা কল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখতে পাই আপনার কলের পরই ছিল ওই পে-ফোনের কলটা।”

    অবশেষে তামিকো বুঝতে পারল প্রসঙ্গ কোনদিকে এগোচ্ছে। “আপনার থিওরিটা বুঝতে পারছি, কিন্তু ওরকম কারোর কথা মনে হচ্ছে না আমার।”

    খুবই ভালোভাবে ভাবুন। ওই ব্যক্তি মিস মিতসুয়ির খুবই কাছের ছিল এমনটা মনে করার অনেক কারণ আছে আমাদের। এমনও হতে পারে বেশ কয়েকবার আপনার কাছে তার নাম উল্লেখ করেছে সে।”

    অনেকটা জোর দিয়েই বলল কাগা।

    “কিভাবে এত নিশ্চিত হচ্ছেন?” ডিটেকটিভের দিকে তাকিয়ে বলল তামিকো। “মাঝেমধ্যে আমিও শুদ্ধ জাপানিতে কথা বলি না, এমনকি অনেক অপরিচিত মানুষের সাথেও।”

    “টেলিফোনে মিস মিতসুইর কথা বলার ধরন ব্যতীত অন্যন্য এভিডেন্সও আছে আমাদের হাতে,” পাল্টা জবাব দিলো কাগা। আগেই বলেছি কলটা এসেছিল ছয়টা পঁয়তাল্লিশে। আচ্ছা, ধরা যাক যে ব্যক্তি কল করেছিল, সে জানতে চায় ওই সন্ধ্যায় সে মিস মিতসুইর সাথে দেখা করতে আসতে পারবে কিনা। যেহেতু আটটার দিকে আপনার সাথে দেখা করার কথা ছিল, সেহেতু সময়ের অভাবে ওই ব্যক্তিকে না করে দেয়ার কথা মিস মিতসুইর। কিন্তু সে সেটা করেনি। কেন এমনটা করল বলে আপনার মনে হয়?”

    মাথা নাড়িয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নিলো তামিকো।

    “একটা সম্ভাবনাই মাথায় আসছে: যে ব্যক্তি কলটা করেছিল সে মিস মিতসুইর বিল্ডিংয়ের খুবই কাছে থাকে। সম্ভবত বুঝতে পারছেন কি বলতে চাইছি?”

    কাগার হুটহাট প্রশ্ন ছুড়ে দেয়ার অভ্যাস অস্বস্তিতে ফেলছে তামিকোকে। কিন্তু ওর ইঙ্গিত একদম পরিষ্কার।

    “সেলফোনের মালিক জানত মিস মিতসুই কোথায় থাকে?”

    “ঠিক,” চেহারায় সন্তুষ্টির ছাপ ফুটিয়ে একমত হল কাগা। “এমনকি মিস মিতসুইর সাবেক স্বামী ও সন্তানও জানে না কোথায় থাকে সে। আপনিও আমাকে বলেছিলেন কেন সে কোদেনমাচোতে উঠেছে সেটা আপনার জানা নেই।”

    “আমাকে বলেনি ও। শুধু অস্পষ্টভাবে বলেছিল ওর ‘অনুপ্রেরণার’ ব্যাপারে।”

    “তাহলে কোদেনমাচোর সাথে মিস মিতসুইর তেমন কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই। ফলে খুনি এই এলাকারই কেউ এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে আমাদের ধারণা খুনি জানত সে ওখানে থাকে, এই ব্যাপারটাই বিবেচনা করার চেষ্টা করছি শুধু। মানে খুনির কাছে মিস মিতসুইর ঠিকানা ছিল। আর খুনির কোনোমতে ফোনে জানিয়ে হুট করে চলে আসার ব্যাপারে কোনো আপত্তি ছিল না তার। এটা থেকে নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় খুনি ও ভিক্টিম একে অপরের বেশ ভালোভাবেই পরিচিত।”

    ডিটেকটিভের কথায় যুক্তি আছে।

    “আপনার থিওরি ধরতে পারছি, সেইসাথে বুঝতেও পারছি কেন আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন আপনি। কিন্তু ওরকম কারোর কথা মনে করতে পারছি না আমি। আরেকটু ভাবার জন্য কিছু সময় দেবেন?”

    “নিশ্চয়ই। যতটা সময় প্রয়োজন নিন। আপনার কাছে আমার কার্ড আছে না?”

    তামিকোর বিব্রত মুখভঙ্গি দেখে আরেকটা কার্ড বের করে কফি টেবিলে রাখল কাগা।

    “কিছু মনে পড়লে আমাকে কল করবেন,” বলে উঠে দাঁড়াল সে। কাগাকে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে দেখল তামিকো। দরজার ডোরনবে হাত রেখে তার দিকে তাকাল ডিটেকটিভ।

    যেমনটা বললাম, যা ঘটেছে সেটার জন্য নিজেকে দোষারোপ করবেন না। খুনের ব্যাপারে দ্রুতই জানা গিয়েছে আর আমরা খুনের একটা সময়ক্রম দাঁড় করাতে পেরেছি আপনার কারণেই।”

    তামিকো জানে শুধুমাত্র বলার জন্যই নয়, বেশ আন্তরিকভাবেই কথাটা বলেছে কাগা। কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হল তামিকো। চোখ নামিয়ে মাথা নাড়ল শুধু।

    “আপনার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ,” বলে হাঁটা ধরল ডিটেকটিভ।

    দুই

    তামিকোর কলেজ জীবনে যে কয়জন হাতেগোনা বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে মিনেকো মিতসুয়ি একজন। আরও কয়েকজন বন্ধু ছিল ঠিকই, কিন্তু ওদের কারোর বিয়ে বা বাচ্চা হলেই অন্য জায়গায় চলে যেত ওরা। মাঝেমধ্যে তামিকো ভাবত তার বিবাহিত বন্ধুরা কি একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখে, নাকি সে সিঙ্গেল বলে তাকে সবাই এড়িয়ে চলে।

    প্রথমে যাদের বিয়ে হয় তাদের মধ্যে মিনেকো অন্যতম। মিনেকোর বাচ্চা হওয়ার পরপরই তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তামিকোর। মিনেকোর প্রত্যেকটা মুহূর্ত-ই কাটত বাচ্চার খেয়াল রাখার পেছনে। কম বয়সেই মা হওয়ার কারণে বাচ্চা লালন-পালন করতে গিয়ে দ্রুতই হাঁপিয়ে ওঠে মিনেকো। তার ছেলে এলিমেন্টারি স্কুলে পড়ার সময় প্রায়ই ফোন করতো। বেশিরভাগ সময়ই বলত কতটা নিরস কাটছে তার জীবন। একবার তামিকো তাকে বলে তার

    জীবন বাকিদের তুলনায় সহজ। কিন্তু সেটা মানতে নারাজ ছিল মিনেকো। “আমার কেমন লাগে তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না, বলে মিনেকো। আরেকদিন কান্নায় ভেঙে পড়ে সে, বেঁচে থাকার ইচ্ছা নাকি দিনে দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছিল তার। পরিবারের দিকে ঠিকই খেয়াল রাখত তার স্বামী। কিন্তু ভালোবাসার অভাব দেখা দেয় দুজনের মধ্যে।

    তামিকোকে ঈর্ষা করত মিনেকো। তামিকোর চাকরিজীবী বলে নয়, সে একজন অনুবাদক বলে। কলেজে পড়াকালীন একজন রূপকথা ও লোককথার অনুবাদক হিসেবে কাজ করার স্বপ্ন দেখত মিনেকো তাকে এই কাজটা চেষ্টা করে দেখার পরামর্শ দেয় তামিকো। ওর মতে অনুবাদের কাজটা বাড়ির কাজের ফাঁকে টুকটাক সময় পেলে ও করে ফেলা যায়। তবে মিনেকোর মতে কাজটা তার জন্য অতটাও সহজ নয়। তার মনে হত, স্ত্রীর কাজ করার ব্যাপারটা ভালো নজরে দেখবে না তার স্বামী। আর তাকে এই কাজ করতেও দেবে না।

    তামিকো জানত স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝামেলার মাঝে না জড়ানোই ভালো। ফলে তাকে সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ওর।

    তবে সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল। ছেলে পড়াশোনার জন্য বাড়ি ছাড়লে স্বামীকে ছাড়ার ব্যাপারটা গুরুত্বের সাথে নেয় মিনেকো। কিন্তু সমস্যা হল একা কিভাবে চলবে জানা ছিল না তার।

    “আমার কাজে সহায়তা করতে পারবে?” তাকে সানন্দেই প্রস্তাব দেয় তামিকো। সহকারী চাকরী ছেড়ে যাওয়ার কারণে একজন নতুন সহকারীর প্রয়োজন ছিল ওর।

    তার একটা ছোটখাটো পরীক্ষা নেয় তামিকো। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলেও অনুবাদের কাজে বেশ ভালোই দক্ষতা দেখায় মিনেকো।

    নিজে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম বুঝতে পেরে স্বামীর কাছে ডিভোর্স চাইবে বলে মনস্থির করে সে। তাকে অবাক করে দিয়ে ডিভোর্স দিতে রাজি হয়ে যায় স্বামীও। স্বামীর কাছ থেকে সামান্য মাসোহারা নিতেই সম্মত হয় মিনেকো। আরও বেশি চাওয়ার জন্য তাকে জোর দিয়েছিল তামিকো। কিন্তু রাজি হয়নি সে। “আমার কিছু যায় আসে না,” বলেছিল মিনেকো। “তার কাছ থেকে টাকা নেয়ার চাইতে আমার স্বাধীনতা বেশি জরুরী।”

    মিনেকো সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে আসার পর তার কাছে নিয়মিত অনুবাদের কাজ পাঠাতে থাকে তামিকো। একজন পরিণত অনুবাদক হয়ে ওঠার আগপর্যন্ত বন্ধুর ওপর নজর রাখবে বলে ঠিক করে কেননা অনুবাদক হওয়া সহজ কোনো কাজ নয়। তবে বন্ধুর সাথে কাজ করতে পেরে বেশ খুশিই ছিল তামিকো। ডিভোর্সের পর কামাতাতে আরেক বন্ধুর বাড়িতে ওঠে মিনেকো। ঠিক এর কয়েক মাস পর নিহনবাশির কাছে কোদেনমাচোতে চলে আসে সে।

    এই এলাকাতেই কেন এসেছে সে ধারণা নেই তামিকোর। যদিও নিজের কোনো “অনুপ্রেরণার” কথা বলেছিল সে। তামিকো ধরেই নিয়েছিল এই এলাকায় এসে ওঠার পেছনে তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। এই প্রসঙ্গ উঠলেই জ্বলজ্বল করে উঠত মিনেকোর চেহারা। এই এলাকার কিছু নিশ্চিতভাবেই রোমাঞ্চিত করত তাকে। তবে সেটা নিজের মধ্যেই গোপন রেখেছিল মিনেকো। এই ব্যাপারে তাকে আর প্রশ্ন করেনি ও।

    সবকিছু ঠিকই চলছিল, হঠাৎ করেই ঘটল একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। যা হুমকির মুখে ফেলে ওদের বন্ধুত্ব। তবে দায়টা মিনেকোর নয়, ছিল তামিকোর-ই।

    কোজি তাচিবানার সাথে বছরখানেক আগে প্রথমবারের মত দেখা হয় তামিকোর। প্রকাশনা জগতের কয়েকজন বন্ধুর সাথে ইম্পেরিয়াল প্যালেসের কাছাকাছি এক জায়গায় চেরি ব্লসমের রাত্রিকালীন দৃশ্য দেখতে যায় তামিকো। পরিচিত এক সম্পাদক সাথে করে নিয়ে আসে কোজিকে। তামিকোর থেকে বছর তিনেকের ছোট কোজি। সিঙ্গেল। ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করে সে, বছর তিনেক আগে পাকাপাকিভাবে চলে এসেছে জাপানে।

    এরপর থেকেই বেশ কয়েকবার নিজেরা দেখা করে তামিকো ও কোজি। ক্রমেই গাঢ় হয়ে ওঠে ওদের সম্পর্ক। বিয়ে বা একসাথে থাকার প্রসঙ্গ দুজনের কেউই তোলেনি। দুজনের জীবনযাপনের ধরন-ই এক: বাড়িতে বসে কাজ করা। কাজের ক্লান্তি কাটাতে একে অপরের সাথে দেখা করত ওরা।

    কিন্তু হঠাৎই একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়ে বসে কোজি। জানায়, আবারও লন্ডনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সে, তবে সাথে নিতে চায় তামিকোকে নিজের স্ত্রী হিসেবে।

    তামিকোর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল সংশয় ও চমক মিশ্রিত। তবে বুঝে ওঠার সাথে সাথেই সংশয় ও চমক কেটে গেলেও রয়ে গিয়েছিল আনন্দ ও রোমাঞ্চ। বয়স্ক বাবা-মা কিংবা কোনো পিছুটান ছিল না ওর। অনেকটাই স্বাধীন ও, চাইলেই উড়াল দিতে পারে কোজির সাথে। তবে ওর মাথাতে চলছিল একটাই ব্যাপার: মিনেকো।

    তামিকোর ওপর ভরসা রেখেই নতুন জীবন শুরুর সাহস পায় সে। একজন অনুবাদক হিসেবে সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সাহায্য করার কথা দেয় তামিকো। বন্ধুকে দেয়া কথা না রাখতে পারলে নিজেকেই ছোট মনে হবে। অপরদিকে কোজিকেও ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না ওর পক্ষে। তাকে ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করতে পারে না ও।

    নিজেকে অনেক বোঝানোর পর তামিকো ভাবে বন্ধুর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে সরাসরি আলাপ করবে। আশা করেছিল মিনেকো বুঝতে পারবে ওর ব্যাপারটা।

    কিন্তু কপাল মন্দ। যতই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে তামিকো ততই চেহারায় অন্ধকার নেমে আসে তার।

    “আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। তুমি সাহায্য করবে এই আশাতেই ডিভোর্স নিয়েছি আমি…” তিক্তভাবে বলে মিনেকো।

    খারাপ লাগে তামিকোরও। কেউ যদি ওর সাথে এমন করত খারাপ লাগত ওর নিজেরও। তবে এখানে খারাপ লাগার চাইতে অনিরাপত্তার দিকটাই বেশি। ওদের নিজেদের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এরপরই আলাদা হয়ে যায় দুই বন্ধুর পথ। তিন সপ্তাহ আগের ঘটনা এটা। এই ঘটনার পর ওদের আবারও দেখা হওয়ার কথা ছিল ওই দিন, ১০ জুন। তার সাথে সাতটাই দেখা করার কথা থাকলেও সময়টা বদলায় তামিকো। কেননা ওই সময় জরুরী ভিত্তিতে কোজি দেখা করতে চেয়েছিল। গিনজায় ওর জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তামিকো গিয়ে পৌঁছাতেই ওকে নিয়ে সরাসরি জুয়েলারির দোকানে চলে যায় কোজি। দোকানের পেছনের বসার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় ওকে আর ওর সামনে হাজির করা হয় অসাধারণ এক হীরার আংটি।

    “শুধু বলো তোমার পছন্দ হয়েছে, আমি এখনই নিয়ে নেব এটা, আবেগে কেঁদে ফেলে তামিকো। আশেপাশে মানুষ না থাকলে তখনই কোজিকে জড়িয়ে ধরত ও।

    দোকানটা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রিংটা আপাতত কোজির কাছে রেখেই কোদেনমাচোর ট্যাক্সি ধরে। সেদিনই কেবল দ্বিতীয়বারের মত মিনেকোর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিল ও।

    আটটা বাজার চার কি পাঁচ মিনিট আগে ওখানে পৌঁছায় তামিকো। এলিভেটরে চড়ে চারতলায় উঠেই ডোরবেল বাজায়। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়বার বেল বাজায় ও। এবারও একই হাল। অদ্ভূত লাগে ওর কাছে। ডোরনবে হাত দেয় এরপর, খোলাই ছিল দরজাটা।

    অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকেই ওর নজরে পড়ে মেঝেতে পড়ে থাকা মিনেকোর দেহটা। হার্ট অ্যাটাক নাকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ?

    মিনেকোর নিথর দেহটার কাছে হাঁটু গেড়ে বসার পরপরই লক্ষ করে তার গলার ওপর পাংশু হয়ে থাকা দাগটা। কাঁপা হাতে তখনই নিজের সেলফোন দিয়ে পুলিশকে ফোন করে তামিকো। ওর মনে নেই পুলিশকে কি বলেছিল। কথা শেষ করে অ্যাপার্টমেন্টের হলওয়েতে পুলিশের আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। পুলিশই সম্ভবত এমনটা করতে বলেছিল ওকে, ঠিক খেয়াল নেই। দ্রুতই চলে আসে পুলিশ, তামিকোকে নিয়ে একটা প্যাট্রোল কারে বসায় ওরা। ধারণা করছিল ওকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে, কিন্তু একটা ডিটেকটিভ এসে কিছু প্রশ্ন করা শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই তখন কোনো প্রশ্নের ঠিকমত উত্তর দিতে পারেনি তামিকো। অধৈর্য্যের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি ডিটেকটিভের ভেতরে। ধীরে ধীরে নিজেকে শান্ত করে তামিকো। ডিটেকটিভটা ছিল কাগা।

    নিজেকে শান্ত করার পরপরই তামিকো টের পায় দেখা করার সময়টা পরিবর্তন না করলে হয়তো খুন হওয়া লাগত না মিনেকোর

    ওইদিন সন্ধ্যার স্মৃতিটা এখনো জীবন্ত: কোজির সাথে স্বর্গীয় এক মুহূর্ত কাটিয়েছিল ও। ভাসছিল সুখের সাগরে। কারোর জন্যই নিজের এই সুখ বিসর্জন দিতে রাজি ছিল না ও। আর ঠিক পরমুহূর্তেই মিনেকোর মৃত্যু ওর মনে সৃষ্টি করল নারকীয় যন্ত্রণার।

    দুঃখ, অনুতাপ, আফসোসে ভরে উঠেছিল তামিকোর অন্তর। ডিটেকটিভ কাগার সামনেই ভেঙে পড়ে ও, “সব আমার দোষ। আমি দেখা করার সময়টা না বদলালে সব আমার দোষ। আমি এতটা স্বার্থপরের মতন আচরণ না করলে… মিনেকোর মৃত্যুর জন্য দায়ী আমিই। সব আমার দোষ।”

    তিন

    রাতে তামিকোকে ফোন করল কোজি, জানতে চাইলো ডিনার করতে যাবে নাকি একসাথে।

    “দুঃখিত, যাওয়ার মত অবস্থায় নেই আমি।”

    “আচ্ছা, তাহলে আমি তোমার ওখানে আসছি। আসার সময় কিছু নিয়ে আসবো। কি খেতে ইচ্ছা করছে?”

    ফোন কানে নিয়েই মাথা নাড়ে তামিকো

    “দাঁড়াও বৃষ্টি আসতে পারে নাকি দেখি। বাড়ি একেবারে এলোমেলো হয়ে আছে। কোনো মেকআপও করিনি।”

    “তো কি হয়েছে? তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমি। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছ তো?”

    “হ্যাঁ করছি। তোমার দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমি শুধু একা থাকতে চাইছি এই যা।”

    ওর কথা বলার ধরন দেখে চুপ হয়ে গেল কোজি।

    “আমি দুঃখিত,” ক্ষমা চাইলো তামিকো। “তোমার সাথে আমিও দেখা করতে চাই। তুমিও নিশ্চয়ই জানো সেটা। তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরার থেকে শান্তির আর কিছু নেই। তোমার সাথে থাকলেই হয়তোবা এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব।”

    “তাহলে আমাকে আসতে না করছ কেন?”

    “ব্যাপারটা ঠিক মনে হচ্ছে না। একবার ভাবো, বেচারি মিনেকো কেমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বাঁচা আমার কাছে উচিত মনে হচ্ছে না। তোমার সাথে সময় কাটানো মানে একটু সময়ের জন্য হলেও মিনেকোকে ভুলে থাকা। আমি এখন এমনটা চাইছি না।”

    আবারও চুপ হয়ে গেল কোজি। সম্ভবত তামিকোর বলা কথাগুলো হজম করার চেষ্টায় আছে সে।

    যদিও প্রত্যেকটা কথাই মন থেকে বলেছে তামিকো, কিন্তু হুট করেই আবেগের বশে বলে ফেলা নয় কথাগুলো। এখনো ওর মনে হয়, সেদিন সন্ধ্যায় কোজির সাথে ও দেখা না করলে খুন হতে হতনা মিনেকোকে। ওর মনে হচ্ছে কোজি যদি ওর ভেতরে থাকা এই অনুতাপ বুঝতে পারে তবে ওদের দুজনের সম্পর্কটা আর কখনোই আগের মত থাকবে না। মধুর সব স্মৃতিগুলো হয়ে যাবে তিক্ত। কোজিকে বলতেও পারছে না ঠিক কোন জিনিসটা কুঁড়ে খাচ্ছে ওকে বললে দেখা যাবে কোজিও নিজেকে দোষারোপ করা শুরু করবে। কেননা তার জন্যই মিনেকোর সাথে দেখা করার সময়টা বদলেছিল তামিকো।

    “সত্যিই কি আমার করার মত কিছু নেই?”

    “তুমি আমার পাশে আছো এটাই অনেক।”

    ফোনের অপরপ্রান্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলল কোজি।

    “যে এই জঘন্য কাজটা করেছে তাকে আমি ঘৃণা করি। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃণা করি। তোমার বন্ধুর খুন অবশ্যই জঘন্য ব্যাপার, কিন্তু এর ফলে তোমাকে যে মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, সেটা ক্ষমার অযোগ্য। যে এসবের জন্য দায়ী তাকে খুন করতে পারলে ভালো লাগত।”

    ফাঁকা হাতটা দিয়ে কপাল ঘষলো তামিকো।

    “ঈশ্বরের দোহাই কোজি, খুনের কথা মুখে এনো না।”

    “আমি দুঃখিত।”

    “আমার যন্ত্রণা বড় কিছু নয়। আমি শুধু জানতে চাই কেন এটা হল। অসাধারণ একজন মানুষ ছিল মিনেকো…পুলিশ আমাকে সবধরণের প্রশ্নই জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কোনো ধরনের দরকারী তথ্য দিতে পারিনি ওদেরকে। নিজেকেই অকর্মা বলে মনে হচ্ছিল।”

    “নিজেকে ছোট ভেবো না। যে যেটা জানে না সেটা তার পক্ষে কখনোই জানা সম্ভব নয়, ঠিক না?

    “আমি মিনেকোর ভালো বন্ধু ছিলাম।”

    “শোনো আমিও আমার ভালো বন্ধুদের ব্যাপারে সবকিছু জানি না। জীবনটা এরকমই।”

    এবার তামিকোর নীরব হয়ে যাওয়ার পালা। ও জানে কি বলতে চাইছে কোজি, কিন্তু তার কথা বলার ধরনে কষ্ট বাড়ল বৈ কমলো না।

    “আজ একজন ডিটেকটিভ দেখা করতে এসেছিল আমার সাথে, “বলল কোজি। “গতবার যে এসেছিল সে নয়। এবারের লোকটার নাম কাগা।”

    “চিনি উনাকে। কয়েকবার দেখা হয়েছে তার সাথে।”

    “লোকটা একটু অদ্ভুত। জানি না কেন। তবে আমার জন্য একটা উপহার এনেছিল: রোলড অমলেট।”

    “রোলড অমলেট?”

    “হ্যাঁ, কারণ তার মতে ‘এটা ঐতিহ্যবাহী খাবার’। যাইহোক, জিনিসটা আমার হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করল ছুরি-কাঁটাচামচ নাকি চপস্টিক দিয়ে খেতে পছন্দ করি। আজব প্রশ্ন! তাকে বলেছি, পুরানো চপস্টিক দিয়ে মোটামোটি খেতে পারি আমি।”

    “খুনের প্রসঙ্গে কি বলল সে?”

    “প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছে মিনেকোর সাথে আমার কখনো দেখা হয়েছে নাকি। বলেছি হ্যাঁ, আমরা তিনজন একসাথে বেশ কয়েকবার ডিনারে গিয়েছি। এরপর জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপারে আলাপ হয়েছিল সেটা মনে আছে নাকি আমার। বলেছি সেভাবে বিস্তারিত মনে নেই, সম্ভবত তোমার সাথে কিভাবে পরিচয় হয়েছে সেই বিষয়েই কথা বলছিলাম। সে বলল, ‘এই ব্যাপারে আমাকেও বলুন।”

    “কিভাবে তোমার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল সেই ব্যাপারে? এটা শুনে কি করবে সে?”

    “জানি না। আমিও একই প্রশ্ন করেছিলাম, আমাকে সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি। যেমনটা বললাম, লোকটা অদ্ভুত! এরপর জিজ্ঞেস করল আমার সেলফোন আছে নাকি। বললাম আছে, তখন সেটা দেখতে চাইলো।”

    একটু আগে কাগা এসে ওকে যা বলেছে সেটা মনে করল তামিকো।

    “দেখিয়েছ?”

    “নিশ্চয়ই। আর এরপর জিজ্ঞেস করল, ‘কতদিন ধরে এই ফোনটা ব্যবহার করেন?’ এসব জেনে কি হবে?”

    “একমাত্র ঈশ্বরই জানেন,” বলল তামিকো। যদিও ও জানে কিসের খোঁজে রয়েছে কাগা। কাগার বিশ্বাস পে-ফোন থেকে মিনেকোকে ফোন করেছিল খুনি-ই, এজন্যই খতিয়ে দেখছিল কোজি নিজের ফোন হারিয়েছে কিনা। এককথায় কোজিকেও একজন সন্দেহভাজন হিসেবে দেখছে কাগা।

    কতটা নির্বোধ, ভাবল তামিকো। মিনেকোর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে তার লাশ খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তামিকোর সাথেই ছিল কোজি। তার অ্যালিবাই একেবারে শক্ত। পুলিশের পক্ষেও সেটা জানা খুব একটা কঠিন নয়।

    যদি না…

    যদি না কাগা ওর কথা অবিশ্বাস করে। নাকি সে ভাবছে ও পৌঁছানোর আগেই কোনোভাবে কোজি অ্যাপার্টমেন্টে এসে খুন করে গিয়েছে ওর বান্ধবীকে? কাগাকে ও জানিয়েছে, কোজির সাথে লন্ডনে পাকাপাকিভাবে চলে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে মনমালিন্য হয়েছিল ওর আর মিনেকোর। নিশ্চিতভাবেই, কোনো যৌক্তিক লোকের এই তুচ্ছ বিষয়টাকে খুনের মোটিভ হিসেবে ধরার কথা নয়। নাকি কাগা ভাবছে কোজির অন্য কোনো মোটিভ ছিল?

    তামিকোর কাছে ইতিবাচকই লেগেছে কাগার আচরণ। তার ব্যক্তিত্ব দেখে মনে হয়েছে তাকে ভরসা করা যায়। একারণেই কাগার সাথে শুরু থেকেই আন্তরিক-খোলামেলা আলাপ করেছে ও। এখন সমস্যাটা হল, বোঝার উপায় নেই কাগা ওর কাছে কিছু লুকাচ্ছে কিনা। সম্ভবত সে সমব্যথী হওয়ার নাটক করছে।

    “তামিকো, লাইনে আছো এখনো?” বলল কোজি।

    “ওহ…হ্যাঁ বলো। আর কি জিজ্ঞেস করেছে কাগা?”

    “এগুলোই। হুট করেই এসে কয়েকটা প্রশ্ন করে ধোঁয়ার মত উধাও হয়ে যায় সে। বেশ উদ্ভট ব্যাপার।”

    “দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সম্ভবত সবকিছু ডাবল-চেক করছে সে।”

    “আমারও সেটাই মনে হয়,“ ফিসফিস করে বলল কোজি।

    “শোনো, আমি একটু ক্লান্ত। ঘুমিয়ে পড়ব ভাবছি।”

    “ঠিক আছে। এতক্ষণ ফোনে আটকে রাখার জন্য দুঃখিত। ঠিকমতো ঘুমিও।”

    “ধন্যবাদ। চেষ্টা করব। শুভরাত্রি। “শুভরাত্রি,” বলল কোজি।”

    “ফোন রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল তামিকো। ভাবল অদূর ভবিষ্যতের কথা। এই বিষাদ কি একাই কেটে যাবে? আবারও কি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে পারবে কোজির সাথে? মিনেকোর সাথে যা ঘটেছে সেটা কিভাবে হজম করবে ও? নাকি সময়ের সাথে সাথে এমনিতেই ভুলে যাবে ব্যাপারটা?

    চোখ বন্ধ করল তামিকো। আশা করল সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ার, কিন্তু সেটা হল না। উল্টো মাথা ভার লাগল।

    “এটাই কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত?”

    হঠাৎ-ই মাথার ভেতরে মিনেকোর কন্ঠস্বর শুনতে পেল ও। মনের চোখে ভেসে উঠল তার চেহারাটা। ওর আর কোজির লন্ডনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনাটা মিনেকোকে জানানোর পর উৎকণ্ঠার ছাপ ভেসে উঠেছিল তার চোখে।

    “হ্যাঁ, এমনটাই ভেবেছি,” জবাব দেয় তামিকো ।

    “তোমার কাজের কি হবে? অনুবাদ ব্যবসাটার কি করবে?”

    “হাতে থাকা কাজগুলো সব শেষ করে ব্যবসাটা বন্ধ করে দিব। আমি লন্ডন চলে যাওয়ার পর আমার কাজগুলো আর না চলার সম্ভাবনাও আছে।”

    শূণ্যতা ভর করেছিল মিনেকোর দৃষ্টিতে। সেটা দেখে তামিকো দ্রুত বলে ওঠে, “অবশ্যই আমার পক্ষে যতটা সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করব তোমাকে। কয়েকটা এজেন্সির সাথে পরিচয় করিয়ে দেব তোমাকে, সেইসাথে কয়েকজন প্রকাশকের সাথেও। ওরাই কাজ দেবে তোমাকে। দুশ্চিন্তার কিছুই নেই।”

    ওর চোখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয় মিনেকো।

    “আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। তুমি সাহায্য করবে এই আশাতেই ডিভোর্স নিয়েছি আমি…”

    কিছু না বলতে পেরে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে তামিকো।

    “আমি দুঃখিত,” বলে ও। “বুঝিনি এমন কিছু হবে।”

    হাত দিয়ে নিজের কপাল ঘষে মিনেকো।

    “আমি শেষ হয়ে গেলাম,” বিড়বিড় করে আপনমনেই বলে ওঠে

    সে। “যদি ধারণা করতে পারতাম এমন কিছু ঘটবে তাহলে আমার স্বামীর থেকে আরও বেশি টাকা দাবি করতাম।” বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাটার দিকে ইঙ্গিত করে সে

    “দুশ্চিন্তা করবে না। তুমি দারুণ একজন অনুবাদক। প্রয়োজনের চাইতেও অতিরিক্ত কাজ পাবে তুমি।”

    শীতল দৃষ্টি হানল মিনেকো।

    “তুমি কিভাবে জানো? অত সহজ না এটা।”

    “কথাটা মন থেকেই বললাম।”

    “এই প্রসঙ্গে আর কথা বলতে চাইছি না। তোমাকে দোষারোপ করছি না আমি। তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে বিয়ের কথা বলার সাথে সাথেই বন্ধুকে করা তোমার প্রতিজ্ঞা জানালা দিয়ে পালালো। এটাই অবশ্য স্বাভাবিক।”

    “ব্যাপারটা অমন নয়। খুবই খারাপ লাগছে আমার নিজেরও। এটুকু তো বিশ্বাস করো?”

    “নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হলে… মাথা নেড়ে বলল মিনেকো। “সেই অনুতাপের কোন প্রতিফলন তো দেখছি না। আমার কারোর ওপর ভরসা করাই উচিত হয়নি। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে আমার।”

    “কিন্তু মিনেকো… “ তাকে বাঁধা দিয়ে বলতে চাইল তামিকো।

    ড্রিঙ্কের টাকা টেবিলের ওপর রাখল মিনেকো। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেল ক্যাফে থেকে। সেদিনই তাকে শেষবারের মত জীবিত অবস্থায় দেখে ও।

    অনুতাপ কুঁড়ে খাচ্ছে ওকে। পুরো ব্যাপারটা এভাবে শেষ করা উচিত হয়নি আমার। উঠে গিয়ে তাকে আটকানো উচিত ছিল। হয়তো একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারতাম।

    সেটা না করে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় তামিকো। ওকে স্বার্থপর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবার যথেষ্ট কারণ মিনেকোর ছিল। আবারও সবকিছু ঠিক করার সুযোগ যখন এলো, একেবারে শেষমুহূর্তে তাকে কল করে দেখা করার সময় এক ঘণ্টা পেছায়। ফোনে মিনেকো শুধু বলেছিল, “আচ্ছা, আটটার দিকে দেখা হচ্ছে তাহলে। “ ভেতরে ভেতরে হয়তো তারও খারাপ লাগছিল। কিন্তু ওই এক ঘণ্টা দেরীই কেড়ে নিলো মিনেকোর জীবন।

    “আমাকে ক্ষমা করে দিও, মিনেকো,” বিড়বিড় করল তামিকো একমাত্র ঈশ্বরই জানেন খুনটা হওয়ার পর থেকে কতবার আপনমনেই এই কথাটা বলেছে ও। কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ও ঠিকই জানেন, যতবার-ই ক্ষমা চাওয়া হোক না কেন, ওর বন্ধুর পক্ষে সেটা আর শোনা সম্ভব হবে না।

    চার

    স্লাইডিং গাসডোরের বাইরে পা রাখার সাথে সাথেই ধাক্কা দিলো আর্দ্র বাতাস। ওই একমুহূর্তেই মনে হল যেন ঘামতে শুরু করেছে ও। অস্বস্তিটা পাত্তা না দিয়ে স্যান্ডেলে পা গলালো তামিকো। বিল্ডিংয়ের বাইরে যাওয়ার জন্য এখনও মানসিকভাবে প্রস্তুত নয় ও, তবে অ্যাপার্টমেন্টে এভাবে পড়ে থাকতে গিয়ে জীবন বিষিয়ে উঠেছে। দরকার এক পশলা মুক্ত বাতাসের

    শেষ কবে ব্যালকনিতে আসা হয়েছে ওর? এই অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছে কেননা এখান থেকে একটা ছোট্ট পার্ক দেখা যায়, কিন্তু এখানে ওঠার পর সেই দৃশ্য খুব বেশি উপভোগ করা হয়নি। ব্যালকনির রেলিংয়ে হেলান দিতে গিয়ে লক্ষ করল ময়লা লেগে আছে ওতে। মোছার জন্য ন্যাকড়া আনতে ভেতরে গিয়ে দেখল সেলফোনে কোজির মেসেজ এসেছে।

    ‘আমাদের যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা গুরুত্ব নিয়ে ভাবতে চাইছি। তোমার মতামত কি? জানিও।’

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা বন্ধ করে দিলো তামিকো। অস্থির হয়ে উঠেছে কোজি। লন্ডন ফিরে যাওয়ার তারিখ না ঠিক করে নিজের কর্মপরিকল্পনাও সাজাতে পারছে না সে। মেসজটা পড়ে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন কোজি। ইচ্ছে করেই এমনভাবে মেসেজটা লিখেছে যেন তামিকো কোন প্রকার চাপ অনভব না করে।

    একটা কাপড়ের ন্যাকড়া নিয়ে আবারও ব্যালকনিতে ফিরল ও। রেলিংটা মোছার সময় ভাবল কোজিকে নিয়ে। তার সরলতার সুবিধা নেয়াটা ঠিক হচ্ছে না। মৃত কাউকে কোনোভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। একসময় মিনেকোকে ভুলতেই হবে। কিন্তু এত সহজেই সবকিছু ভুলে কি লন্ডনে চলে যাওয়া যায়? একারণে কি নিজের প্রতিই ঘৃণা জন্মাবে না ওর?

    হ্যান্ডরেলিংটা এখন নতুনের মতই চকচক করছে। বুকভরে শ্বাস নিয়ে নিচের রাস্তায় তাকালো ও। এগিয়ে আসতে দেখলো একটা অবয়বকে। ডিটেকটিভ কাগা, এবার তার হাতে প্লাস্টিকের সাদা ব্যাগ।

    হঠাৎ করেই ওপরের দিকে তাকাল কাগা। নিশ্চিতভাবেই আশা করেনি ওপর থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে তামিকো। ওকে দেখে হাসল কাগা। হালকা মাথা নেড়ে সায় জানালো তামিকো।

    ভালো সময়েই এসেছে লোকটা, ভাবল ও, তাকে জিজ্ঞেস করতে পারব কোন উদ্দেশ্যে দেখা করতে গিয়েছিল কোজির সাথে।

    কয়েক মিনিট পর দরজার সামনে এসে দাঁড়াল কাগা।

    “এবার মিষ্টির বদলে আপনার জন্য রাইস ক্র্যাকার এনেছি।“

    ব্যাগটা উঁচিয়ে ধরল সে।

    অতিকষ্টে হাসল তামিকো। “যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সবসময়ই তাদের জন্য উপহার নিয়ে যান?”

    “হুহ? না… আপনি রাইস ক্র্যাকার পছন্দ করেন না?”

    “করি। কিন্তু আপনার কাছ থেকে এই উপহারগুলো নিতে অপরাধবোধ হচ্ছে।” ব্যাগটা নিয়ে বলল তামিকো। “যাইহোক, ভেতরে আসুন। বরাবরের মতোই অগোছালো হয়ে আছে ভেতরটা।”

    নড়লনা কাগা। বুকের ওপর হাত জড়ো করল সে। চেহারায় ফুটে উঠেছে ভাবনার ছাপ ।

    “কি হয়েছে?”

    “আজকে আমার সাথে বাইরে আসতে পারবেন?” বলল কাগা। আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। বরং বলা ভালো, আপনাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই।”

    রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে তামিকো বলল, “কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

    “আপনার পরিচিত এক জায়গায়। নিনগিয়োচো এলাকায়। মিনেকো মিতসুইর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মাত্র দশ মিনিটের হাঁটা পথ

    “ওখানে যাওয়ার কি দরকার?”

    “গেলেই বুঝতে পারবেন। নিচতলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আমি। তাড়াহুড়োর কিছু নেই, সময় নিয়েই তৈরি হন।” তামিকো কিছু বলার আগেই ঘুরে দাঁড়িয়ে এলিভেটরে কাছে চলে গেল কাগা

    ওকে কোথায় নিয়ে যাবে সে? কি দেখানোর পরিকল্পনা করছে? কাগার মাথায় কি চলছে সেই ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই ওর। তবে অনেকদিন পর ভালোমত তৈরি হল তামিকো।

    রাস্তায় নামার পর একটা ক্যাব নিলো কাগা।”

    “আচ্ছা, ওটা ভালো লেগেছিল আপনার?” ক্যাবের গতি বাড়ার সাথে সাথে বলল কাগা। গতবার যে মিষ্টি অ্যালমন্ড প্যাস্ট্রি এনেছিলাম, সেটা?

    “দারুণ ছিল। আপনার রুচির প্রশংসা করতে হয়,” বলল ও। কথাটায় কোনো খাদ নেই, আসলেই খাবারটা ভালো লেগেছে তামিকোর।

    “ওহ, স্বাদের ব্যাপারে জানা ছিল না আমার। তবে আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।”

    “শুনলাম আমার বয়ফ্রেন্ডকে নাকি রোলড অমলেট দিয়েছেন।”উনি বলেছেন আপনাকে? আমি আসলে নিশ্চিত ছিলাম না লন্ডন ফেরত কারোর জন্য কি খাবার নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। শেষপর্যন্ত অমলেট নিয়ে গিয়েছি। মিস্টার তাচিবানা বিরক্ত হননি তো?”

    “অবশ্যই না। তবে ওর নাকি আপনাকে একটু অন্যরকম মানুষ বলে মনে হয়েছে।”

    “নিনগিয়োচোতে হাঁটাহাঁটি করার সময় সবগুলো ঘুরেফিরে দেখেছি। দোকানগুলোতে গেলেই কারোর জন্য উপহার কিনতে ইচ্ছা করবে। তবে রোলড অমলেট নিয়ে গেলে মানুষের একটু অস্বাভাবিক লাগাই স্বাভাবিক। আমার আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।” দাঁত বের করে হাসল কাগা।

    রাস্তার সুতেনগুমে ইন্টারসেকশনের কাছে পৌঁছানোর পর ড্রাইভারকে থামতে বলল সে। একমুখী এক রাজপথে নামল ওরা, রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁ। ফুটপাতে ধরে কিছুক্ষণ হেঁটে একটা ক্রোকারিজ শপে ঢুকল কাগা। দোকানের ওপর লেখা “ইয়ানাগিসাওয়া”।

    “হ্যালো,” ভেতরে ঢুকেই বলল কাগা।

    “জ্বি,” দোকানের পেছন থেকে এসে বলল এক মহিলা।

    তার বয়স বিশের মত, চুলগুলো বাদামী রঙ করা, কানে দুল কানে দুল। পরনের জিন্সটা জায়গায় জায়গায় ছেড়া।

    “ওহ, আপনি আবারও এসেছেন, ডিটেকটিভ কাগা?” হাসি উধাও হয়ে গিয়েছে তার মুখ থেকে।

    “দুঃখিত, আমি আপনার পুরোদস্তুর কাস্টমার নই।”

    “ব্যাপার না, কি চান আজকে?

    এখানে আগেও এসেছে কাগা। দোকানীর মুখভঙ্গি দেখেই তামিকো বুঝতে পারল কেনাকাটা নয় বরং জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই এখানে আসত কাগা!

    “আগেরদিন যে জিনিসগুলো দেখিয়েছিলেন ওগুলো এখনো আছে?” জিজ্ঞেস করল কাগা।

    “হ্যাঁ, ওগুলো রাখতে বলেছিলেন।”

    “এক মিনিটের জন্য ওগুলো দেখাতে পারবেন?”

    “নিশ্চয়ই।”

    দোকানের পিছে চলে গেল মহিলাটা। তামিকোর দিকে ঘুরল কাগা।

    “সত্যি বলতে এখানকার একটা জিনিসই আপনাকে দেখাতে চাইছি। খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে এদের চপস্টিক দেখে গিয়েছিল মিনেকো মিতসুয়ি। আমার মতে, ওগুলো কাউকে উপহার দেয়ার কথা ভাবছিল সে। আমি চাই আপনি অনুমানের চেষ্টা করুন ওগুলো কাকে দিতে চাইছিল সে।”

    “চপস্টিক। আপনার কথা শুনে…

    দোকানের মহিলাটা ফিরে আসায় থেমে গেল তামিকো। মহিলার হাতে লম্বা, পাতলা বক্স।

    “এগুলোর কথা বলছিলেন?” কাগার হাতে বক্সটা ধরিয়ে বলল সে।

    বক্সটা খুলে মাথা নেড়ে সায় জানাল কাগা। “একটু দেখুন,” জোর দিলো তামিকোকে।

    বক্সের ভেতরে উঁকি দিলো তামিকো। এতে রয়েছে দুই সেট চপস্টিক। একজোড়া লম্বা ও কালো, অপরটা একটু ছোট ও লাল। মনে হচ্ছে দম্পতিদের ব্যবহারের উপযোগী এই সেট।

    “শুধুমাত্র দেখে কিছু বলতে পারব না আমি,” বলল ও।

    “বের করে ভালোমত দেখুন। সুন্দর নকশা করা আছে ওগুলোতে।”

    কালো চপস্টিকটা বের করল তামিকো। কাগার কথাই ঠিক। নকশাটা চোখে পড়ল ওর।

    “কি মনে হচ্ছে আপনার?” জিজ্ঞেস করল কাগা। “চেরি ব্লসমের নকশাটা করা হয়েছে মুক্তোর প্রলেপ দিয়ে। এজন্য এটাকে রূপালী দেখায়।”

    “কি? মিনেকো তাহলে ভাবছিল…”

    “সেদিন আপনার দোকানে এই সেটটা শেষ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক না?” দোকানীকে বলল কাগা। “কি হয়েছিল সেদিন একটু বলবেন?”

    মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে একধাপ এগিয়ে এলো দোকানী।

    “আগে একবার একসেট চপস্টিক পছন্দ করে রেখে যায় মিস মিতসুই। তো ওটাই কিনতে এসেছিল সে। জিনিসটা শেষ হয়ে গিয়েছে শুনে হতাশ হয়। খালি হাতেই বাড়ি ফিরে যায়। তবে আমি ঐ জিনিস আবারও অর্ডার করি। গতপরশু যা এসে…”

    মহিলা কথা শেষ করার আগেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল তামিকো। চেহারা লাল হয়ে উঠেছে ওর। পানি পড়তে থাকল চোখ বেয়ে।

    “মনে হয় বুঝতে পেরেছেন কাকে ওগুলো উপহার দেয়ার কথা ভাবছিল সে,” বলল কাগা।

    মুখে হাত চেপে, মাথা ওপর নিচ করল তামিকো।

    “আ…আমাকে। আমাকে ও আমার বাগদত্তাকে ওগুলো উপহার দিতে চাইছিল ও।”

    “চেরি ব্লসমের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে আপনার ও মিস্টার তাচিবানার কাছে। রাত্রীকালীন চেরি ব্লসমের দৃশ্য উপভোগ করতে গিয়েই আপনার সাথে পরিচয় হয় মিস্টার তাচিবানার।”

    “ঠিক, জীবনে খুব বেশি চেরি গাছ দেখেনি কোজি। ভালো লেগেছিল ওর। আমাদের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে ওঠে চেরি ব্লসম।

    “এজন্যই মনে হয় আপনার মোবাইলে চেরি ব্লসম ডিজাইনের স্ট্র্যাপ দেয়া। মিস্টার তাচিবানার ফোনেও লক্ষ্য করেছি সেটা।”

    বড় হয়ে গেল তামিকোর চোখ।

    “তো এজন্যই ওর ফোনটা দেখতে চেয়েছিলেন আপনি?”

    মাথা নেড়ে সায় জানাল কাগা ।

    “আপনার ফোন দেখার পর আমার মনে হয় আপনিই সেই ব্যক্তি যার জন্য চপস্টিক কিনতে চাইছিল মিস মিতসুই। তখন এটা কেবলই একটা অনুমান ছিল মাত্র, কোনো প্রমাণ ছিল না হাতে। আপনাকে চপস্টিকটা দেখানোর পর আমার ধারণা ভুল হলে বরং আপনি কষ্ট পেতেন। এজন্য আমি মিস্টার তাচিবানার কাছে আগে যাই।”

    “ভেবেছিলাম ওকে একজন সন্দেহভাজন মনে করছেন আপনি। পুলিশরা তো পিছে লেগে থাকতে ওস্তাদ। ফলে এমনটা ভাবা অস্বাভাবিক নয়। আমার পক্ষ থেকে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন প্লিজ।

    আরেকবার চপস্টিকের দিকে তাকাল তামিকো। মিনেকো যে ওকে ক্ষমা করে দিয়েছিল এগুলো সেটারই প্রমাণ। ওকে আর কোজিকে এই চপস্টিকগুলো উপহার দিতে চেয়েছিল সে, যেন লন্ডনে যাওয়ার পর টোকিওর চেরি ব্লসমের স্মৃতিচারণ করতে পারে ওরা।

    “সেদিন যে জিনিগুলো আপনার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম- ফ্রুট অ্যান্ড সুইট অ্যালমন্ড প্যাস্ট্রি- খুন হওয়ার ঠিক আগে ওগুলো কেনার চেষ্টা করেছিল মিনেকো মিতসুই বলল কাগা। “আমার ধারণা ওগুলো দিয়ে আপনাকে সেদিন আপ্যায়ন করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে দুর্ভাগ্যবশত ওগুলোও কিনতে পারেনি।”

    “ওই পেস্ট্রিগুলো…“

    “পেস্ট্রিশপে খোঁজ নিয়ে এই বিষয়ে জানতে পারি আমি। তখনই বুঝতে পারি, মিস মিতসুই আপনার সাথে জমা বরফটা গলানোর চেষ্টা করছিল। অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাই কাকে ওই চপস্টিক দিতে চাইছিল সে।”

    হাতের পিছন দিয়ে চোখের পানি মুছে ডিটেকটিভের দিকে তাকাল তামিকো।

    “আপনার তো খুনের তদন্ত করার কথা, ডিটেকটিভ।”

    “ওহ, আমি তার খুনের তদন্তই করছি; সেটাই আমার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বিষয়টা কি, একটা অপরাধের কারণে যারা ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়, তাদের প্রত্যেকেই কিন্তু ভিক্টিম। তাদের যন্ত্রনা উপশমের চেষ্টা করাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”

    চোখ নিচু করল তামিকো। এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ওর হাতে থাকা চপস্টিকের ওপর।

    মাথার উপরে রিনরিনে শব্দে বেজে উঠলো একটা উইন্ড চাইম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো
    Next Article দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.