Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    ইশরাক অর্ণব এক পাতা গল্প310 Mins Read0

    অধ্যায় ২ – রেস্তোরাঁর নতুন ওয়েটার

    এক

    প্রতিদিন বিকেল চারটায় রেস্তোরাঁর বাইরে ফুটপাতে পানি ছিটাতে হয় সুহেইকে। একটা পুরনো অ্যাপ্রন গায়ে চাপিয়ে বালতি থেকে হাত দিয়ে পানি ছিটায় সে। পাইপ ব্যবহার করলে সুবিধা হতো, সেটা জানা আছে ওর। কিন্তু রেস্তোরাঁর দুই মালিকের একজন, ইয়োরিকোকে পাইপের কথা বলার পর চোখ গরম করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। বোকার হদ্দ বলে গালও দিয়েছে।

    “তুমি কি গাড়ি ধুচ্ছ যে হোস পাইপ দরকার? তোমাকে পানি ছিটাতে বলেছি যেন ধুলো উড়ে ভেতরে না আসে। বাইরে পুকুর বানিয়ে ফেললে কাস্টোমারদের হাঁটতে অসুবিধা হবে না?

    “যারা আমাদের রেস্তোরাঁয় খেতে আসে, তাদের জন্যে আশপাশের পরিবেশ বড় একটা বিষয়, মনে রাখবে। শিক্ষানবিশ কোন ওয়েটার বালতি থেকে নিজের হাতে পানি ছিটাচ্ছে সামনে, এই দৃশ্যটা তাদের কাছে যতটা ভালো লাগবে, জিন্স প্যান্ট পরে কেউ পাইপ দিয়ে পানি ছিটালে ততটা লাগবে না। সবকিছুরই একটা কাব্যিকতা আছে, বুঝতে পারছ আমার কথা?”

    রেস্তোরাঁর কাস্টোমারেরা সাধারণত সন্ধ্যা ছ’টার দিক থেকে আসা শুরু করে, প্রতিবাদ করে বলেছিল সুহেই। তাদের কেউই আসলে ওকে পানি ছিটাতে দেখবে না। তাহলে লাভটা কি হচ্ছে?

    জবাবে মাথায় একটা গাট্টা খেয়েছিল। “কথায় কথায় তর্ক করতে না বলেছি?”

    এটা কেমন হলো? ভাবে সুহেই। কিন্তু এবারে কিছু বলে না। মাঝে-সাঝে ইয়োরিকোর এরকম হাত চললেও, ম্যানেজার হিসেবে তাকে যথেষ্ট সম্মান করে ও।

    সুহেই কেবলই পানি ছিটানো শেষ করেছে এমন সময় একটা লোক বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। ইয়োরিকোর স্বামী, তাইজি। মাতসুয়া রেস্তোরাঁর আরেক মালিক। একটা বুক খোলা হাওয়াইয়ান শার্ট আর সাদা চিনো প্যান্ট পরনে তার। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, গলায় সোনার পুরু চেন। তাইজির মতে এই তল্লাটে তার মতন ফ্যাশন সচেতন লোক কমই আছে। যদিও সুহেই এই কথার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করবে। ওর মতে তাইজকে বি-গ্রেড সিনেমার মাস্তানদের চেলার মত দেখায় এরকম পোশাকে। কিন্তু সব কথা তো আর চাইলেই বলা যায় না।

    “কিরে, আমার জিনিসগুলো এনেছিস?” অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে তাইজি।

    “হ্যাঁ, এনেছি।”

    “কোথায়?

    “লুকানো আছে।”

    “সাব্বাশ। যা নিয়ে আয়।”

    সুহেই বালতিটা নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে দৌড়ে যায় রেস্তোরাঁর এক পাশে। সেখানে পার্ক করে রাখা একটা সাইকেলের ঝুড়ি থেকে সাদা ব্যাগ বের করে আবার ফিরে আসে তাইজির কাছে নার্ভাস ভঙ্গিতে বারবার ঘড়ির দিকে আর রেস্তোরাঁর প্রবেশ পথে তাকাচ্ছে তাইজি। ইয়োরিকো হঠাৎ বেরিয়ে আসে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তায় আছে বেচারা।

    “এই নিন,” প্লাস্টিকের ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বলে সুহেই।

    “ধন্যবাদ, ধন্যবাদ। তোর একটা ট্রিট পাওনা থাকলো,” ব্যাগের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলে তাইজি। “যা যা বলেছিলাম, সেগুলোই নিয়েছিস তো?”

    “হ্যাঁ, সাতটা বিন পেস্ট সহ। তিনটা ছাড়া।“

    “ভালো। ভালো। বাকি টাকাটা তুই রেখে দে।”

    “ঠিক আছে,” মাথা নিচু করে বলে সুহেই। বাকি টাকা বলতে মাত্র পঞ্চাশ ইয়েন।

    “এগুলোর কথা কিন্তু কাউকে কিছু বলবি না, খবরদার। বুঝতে পারছিস আমার কথা?” তর্জনী ঠোঁটের সামনে নিয়ে এসে বলে তাইজি।

    “জ্বি, বস। জানি।”

    “কাকপক্ষীও যেন না টের পায়। তাহলে কিন্তু তোর রক্ষা নেই।”

    “বলেছি তো কেউ জানবে না।”

    “আচ্ছা। ভুলবি না।” প্লাস্টিকের ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরে মেইন রোডের দিকে এগিয়ে গেল তাইজি। সেদিকে তাকিয়ে একবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সুহেই।

    ছ’টা নাগাদ বেড়ে গেল কাস্টোমারদের আনাগোনা। সুহেই রেস্তোরাঁর ওয়েটার; রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে পরিবেশন করাই ওর দায়িত্ব। বাবুর্চিরা প্রত্যেকটা পদ ওর হাতে তুলে দেয়ার সময় বুঝিয়ে দেয় কি উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে পদটা তৈরি করতে, কিভাবে খেতে হবে ওটা। কিন্তু প্রায়শই ওকে বেকায়দায় পড়তে হয় কাস্টোমারদের হুটহাট করে বসা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে। সেক্ষেত্রে আবারো রান্নাঘরে গিয়ে বাবুর্চি কিংবা ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে আসে। তখন দশবারের মধ্যে নয়বারই বকুনি খেতে হয় মনোযোগ দিয়ে কথা না শোনার জন্যে।

    নিয়মিত খদ্দেররা রেস্তোরাঁয় খেতে এলে ইয়োরিকো নিজে এসে তাদের স্বাগত জানায়। সবসময় একটা কিমোনো পরনে থাকে তার। সুহেইয়ের জানা আছে যে ঋতুভেদে কিমোনোর ধরণ পাল্টায়, ইয়োরিকো সেই নিয়মগুলো ধর্মীয় আচারের মত পালন করে থাকে। সেদিন রাতে তার পরনে ছিল একটা গোলাপী মতন প্রায়-স্বচ্ছ কাপড়ের তৈরি কিমোনো।

    ইয়োরিকোকে কোন খদ্দেরের সাথে কথা বলতে দেখলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুহেই। প্রাণোচ্ছ্বল চেহারা দেখে তখন মনে হয় বয়স যেন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে তার, সুশ্রী চেহারাটার সৌন্দর্যও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সুহেইয়ের তো বিশ্বাসই হতে চায় না যে ইয়োরিকো প্রায় তার মায়ের বয়সী।

    একমাত্র রেস্তোরাঁর খদ্দেরদেরই নিজের ওই সম্মোহনী হাসিটা উপহার দেয় ইয়োরিকো। টেবিল থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মাত্র চোখ-মুখ শক্ত হয়ে যায় আবারো

    “এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘাস কাটছ কেন? ওই টেবিলের ভদ্রলোকের গ্লাস যে খালি, চোখে পড়ছে না?”

    “ইয়ে…সরি।”

    ইয়োরিকোর প্রতিটা তীর্যক বাণী কানে আসা মাত্র ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতন লাফিয়ে ওঠে সুহেই।

    রাত দশটা নাগাদ বেশিরভাগ খদ্দের বাড়ি ফিরে যায়। বিদায়

    জানানোর সময় তাদের মুখ থেকে খাবারের প্রশংসা শুনে আনন্দে ঝলমল করে সুহেইয়ের চেহারা; যদিও রান্নার সাথে দুর দুর পর্যন্ত তার কোন সম্পর্ক নেই।

    এরপর সবকিছু পরিষ্কার করার পালা। সব এটো থালাবাসন সুহেইকেই ধুয়ে ফেলতে হয়। রান্নাঘর মোছার দায়িত্বটাও ওর। যেহতু মাত্রই গত বসন্তে রেস্তোরাঁয় যোগ দিয়েছে ও, এখন অবধি ছুরি কিভাবে ধরতে হয়, সেটাও শেখেনি। কাতসুয়া নামের আরেকজন শিক্ষানবিশ বছর দুই আগে যোগ দিয়েছিল রেস্তোরাঁয়। এতদিনে রান্নার কাজে টুকটাক সাহায্য করার অনুমতি মিলেছে তার। সুহেইকে বর্তমান দায়িত্বগুলো নিষ্ঠার সাথে আরো বেশ কয়েকদিন পালন করে যেতে হবে।

    ওর বয়স সবে সতেরো। গত বছর অবধি হাইস্কুলের ছাত্র ছিল, কিন্তু স্কুলে যেতে কখনোই ভালো লাগতো না সুহেইয়ের সহপাঠীদের সাথে তাল তো মেলাতে পারতই না, শিক্ষকদের পড়ানোর ধরণও ভালো লাগতো না। দিন কাটত প্ৰচণ্ড হতাশায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার স্বপ্ন কোন কালেই ছিল না সুহেইয়ের। কিন্তু বাবা-মা খুব করে অনুরোধ করেছিল যেন হাইস্কুলের পড়াশোনাটুকু শেষ করে অন্তত। তাই অনিচ্ছসত্ত্বেও চেষ্টা করে গেছে। শেষ পর্যন্ত আর সম্ভব হয়নি।

    হাইস্কুল থেকে ড্রপ আউট হবার পর বাবা-মা জানতে চায়, এবারে কি করার পরিকল্পনা ওর। তখন জবাব দিতে দেরি করেনি সুহেই। পেশাদার শেফ হতে চায় ও। এর কারণ হচ্ছে ওদের বাসার উল্টোদিকে একটা সুশি রেস্তোরাঁটা। সেই রেস্তোরাঁর শেফদের সবকিছু একদম ছোটবেলা থেকেই ভীষণ আকর্ষণ করতো ওকে। শেষমেষ ওর বাবা পরিচিত লোকদের বলেকয়ে মাতসুয়ার চাকরিটা যোগাড় করে দেয়।

    সবকিছু ধোয়ামোছা শেষে সুহেই কেবল বের হবে, এসময় তাইজি ঢোকে ভেতরে। বিকেলের সেই পোশাকই তার পরনে। নিশ্চয়ই পুরো সন্ধ্যা বাইরে বাইরে কাটিয়েছে।

    “আজকে কেমন ভিড় ছিল রেস্তোরাঁয়?” সুহেইয়ের সদ্য মুছে রাখা একটা গ্লাস উল্টে নিয়ে জিজ্ঞেস করে তাইজি। শেলফে রাখা সাকির বোতলটা নামায় কাঁপা কাঁপা হাতে।

    “একই রকম। ওহ, প্রফেসর ওকাবে এসেছিলেন আজকে।”

    “ওই আহাম্মকটা? কোন কিছুতেই স্বাদ খুঁজে পায় না যে?” গ্লাসে সাকি ঢেলে বড় চুমুক দেয় তাইজি। চেহারা টকটকে লাল। নিশ্চয়ই আজকে গলা পর্যন্ত মদ খেয়েছে, ভাবে সুহেই।

    বাকি সাকিটুকু শেষ করে গ্লাসটা টেবিলের উপরে নামিয়ে রাখে তাইজি। “স্বাদটা ভালো তো,” বলে বেরিয়ে যায়।

    এমনিতেই সারাদিন কাজের অভাব নেই, এখন রাত-বিরাতে এই উপদ্রব প্রতিদিন, মুখ গোমড়া করে ভাবতে ভাবতে এঁটো গ্লাসটা তুলে নেই সহেই।

    দুই

    মাতসুয়ার লাঞ্চবক্সটা স্থানীয় অফিস কর্মীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় দাম বেশ কম, কিন্তু পুষ্টিমান অন্যান্য রেস্তোরাঁর খাবারগুলোর তুলনায় ঢের বেশি।

    সুহেই টেবিল থেকে টেবিলে খাবার পরিবেশন করে সেরে উঠতে পারছে না, এসময় কাতসুয়া, পুরনো শিক্ষানবিশ ছেলেটা এগিয়ে আসে ওর দিকে।

    “বস তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে সাইপ্রেস রুমে।”

    অবাকই হলো সুহেই। লাঞ্চের সময় কখনোই ব্যবহৃত হয় না সাইপ্রেস রুমটা।

    ওখানে গিয়ে দেখে টেবিলের একদিকে বসে আছে ইয়োরিকো আর তার বিপরীত দিকে বসে আছে তিনজন ভদ্রলোক। তাদের মধ্যে দু’জনের পরনে স্যুট। আরেকজন ক্যাজুয়াল পোশাকে এসেছে। টিশার্টের উপরে একটা চেক শার্ট চাপানো তার।

    “এই তিনজন ভদ্রলোক থানা থেকে এসেছেন। ডিটেকটিভ। তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে চান,” ইয়োরিকো বলে।

    “এরকম ব্যস্ত সময়ে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত,” শার্ট পরিহিত লোকটা বললো। “ম্যাম, আপনি যদি কিছু না মনে করেন, ওনার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাচ্ছিলাম আমরা।”

    “কোন সমস্যা নেই,” ইয়োরিকো বলে। মুখের সুন্দর হাসিটা মলিন হলো না তার, কিন্তু সেই হাসির কোথায় যেন একটা অস্বস্তির রেশ রয়েই গেল। এদিকে সুহেইয়ের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। পুলিশের লোকের তার সাথে কি কাজ?

    ডিটেকটিভ তিনজন রেস্তোরাঁর সামনের দরজার দিকে হাঁটা দিল। উপায়ান্তর না দেখে তাদের পিছু নিল সুহেই। নিনগিয়োচো বুলভার্দে এসে থামল ছোট্ট দলটা।

    নিনগিয়াচো হচ্ছে কয়েক লেনের একটা রাস্তা। চারধারে ছোটবড় অনেকগুলো রেস্তোরাঁ আর বার।

    “আজকে যেরকম গরম পড়েছে! ঠাণ্ডা কিছু খাবে নাকি?” বলে সুহেইয়ের দিকে একটা ব্যাগ বাড়িয়ে ধরলো টি-শার্ট পরিহিত ডিটেকটিভ। ভেতরে অনেকগুলো কোল্ড কফির ক্যান।

    “নাহ, থাক।”

    “আরে না বলবেন না তো। আপনি মানা করে দিলে আমরাও

    খেতে পারব না।”

    “তাই?” বলে অগত্যা ব্যাগ থেকে একটা ক্যান বের করে নিল ও। অন্য ডিটেকটিভেরাও একই কাজ করলো।

    “আপনাদের রেস্তোরাঁয় ফাউন্টেইন বিয়ার পাওয়া যায় নাকি?” মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করে দেয় সুহেই।

    “না। শুধু বোতল। তবে এই বিয়ারগুলো জিফু প্রিফেকচারের বিশেষ একটা ব্যুয়ারি থেকে আনা।”

    “শুনে তো ভালোই মনে হচ্ছে। খান, খান, শেষ করে ফেলুন।”

    “হু,” বলে ক্যানের ছিপি খুলে ফেলল সুহেই। কেবল জুনের শুরু, কিন্তু তাতেই গরমে একদম তেতে আছে চারপাশ। ঠাণ্ডা পানীয়টুকু আসলেই শান্তির পরশ বুলিয়ে দিল শরীরে।

    “শুনলাম সেদিন অনেকগুলো নিংইয়ো-ইয়াকি কিনেছেন একসাথে?” স্যুট পরিহিত ডিটেকটিভদের মধ্যে বয়স্কজন কফির ক্যানে এক চুমুক দিয়ে বললো। নিংইয়ো-ইয়াকি হচ্ছে এক ধরণের বিশেষ ছাঁচে বানানো কাপকেক। টোকিও ছাড়া অন্য কোথাও খুব একটা দেখা যায় না।

    আরেকটু হলেই কফিটুকু গলায় আটকে যাচ্ছিল সুহেইয়ের। “কি?” চোখ পিটপিট করে জিজ্ঞেস করলো ও।

    “তিনদিন আগে একটা দোকান থেকে বেশ কয়েকটা কেক কিনেছিলেন আপনি, তাই না?” সহেইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো ডিটেকটিভ।

    সুহেইয়ের বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো। সরাসরি একজন পুলিশ অফিসারের মুখের উপর তো আর মিথ্যে কথা বলা যায় না।

    “হ্যাঁ, কিনেছিলাম।”

    “কখন?”

    “এই চারটার একটু আগে।”

    “আচ্ছা। কয়টা কিনেছিলেন?”

    “দশটা। সাতটা সুইট বিন পেস্ট ফিলিং সহ আর তিনটা ছাড়া।“

    “কাঠের বাক্সে ওগুলো দিয়ে দিয়েছিল দোকান থেকে?”

    “নাহ। স্বচ্ছ প্লাস্টিকের কন্টেইনারে।”

    “কারো জন্যে উপহার হিসেবে কিনেছিলেন?”

    মাথা ঝাঁকিয়ে নার্ভাস ভঙ্গিতে একবার ঠোঁট ভিজিয়ে নিল সুহেই। তাইজিকে সে কথা দিয়েছিল যে এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবে না। “না, আসলে আমি নিজের জন্যেই কিনেছিলাম।”

    “আসলেই? দশটা কেক শুধুমাত্র নিজের জন্যে?” স্যুট পরিহিত ডিটেকটিভদের খাটোজন অবাক কণ্ঠে জানতে চায়। চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেছে তার।

    “কয়েকটা বিকেলে খেয়েছি আর বাকিগুলো রাতে।”

    ওর জবাব শুনে বাকা হাসি ফুটলো অন্য ডিটেকটিভের মুখে। “আপনাদের বয়সেই কেবল এগুলো সম্ভব।”

    “আপনি আসলেই একা দশটা কেক খেয়েছেন?” খাটোজন আবার জানতে চায়।

    “হ্যাঁ…..”

    “প্লাস্টিকের কন্টেইনারটা কি করেছেন?”

    “ফেলে দিয়েছি।”

    কোথায়?”

    “ইয়ে…” এখন কথা জড়িয়ে যাচ্ছে সুহেইয়ের। এই প্রশ্নটা কিভাবে এড়ানো যায় বুঝে উঠতে পারছে না। “ভুলে গেছি, কোন একটা ডাস্টবিনে হবে হয়তো।”

    “রেস্তোরাঁর মালিক বললেন আপনি নাকি উপরেই থাকেন।

    “তাহলে আপনার ঘরের ডাস্টবিনে?”

    “হয়তো…না, না, অন্য কোথাও।“

    “মনে করার চেষ্টা করুন। আমাদের দরকার ওটা।”

    “খালি প্লাস্টিকের কন্টেইনার?”

    “হ্যাঁ,” ডিটেকটিভদের অন্তর্ভেদী দৃষ্টির সামনে নিজেকে বড্ড অসহায় ঠেকছে সুহেইয়ের।

    চোখ নামিয়ে নিল ও। বিপদে পড়ে গেছে ভীষণ। এখন উচিৎ কাজটা হবে ভদ্র মানুষেএ মতন পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে নেয়া। কেকগুলো আসলে তাইজির জন্যে কিনেছিল ও। কিন্তু সেক্ষেত্রে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে কয়েক সেকেন্ড পর একটা চিন্তা খেলে গেল ওর মাথায়। এবারে মুখ তুললো।

    “আজকেই ময়লা বাইরে ফেলে দিয়েছি।”

    ডিটেকটিভদের চেহারায় অসন্তোষ আর চাপা থাকলো না।

    “কি? আজ সকালে? অন্য সব ময়লার সাথে?” খাটো ডিটেকটিভ জিজ্ঞেস করলো।

    “হ্যাঁ, আজকেই ময়লা নেয়ার জন্যে লোক আসে।”

    এটা মিথ্যে বলেনি। আর রেস্তোরাঁর ময়লা বাইরের বড় ডাস্টবিনে ফেলে আসা সুহেইয়ের দায়িত্ব।

    স্যুট পরা দুই ডিটেকটিভ দৃশ্যত হতাশ হলেও অন্য ডিটেকটিভের মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। সুহেইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললো, “কফি শেষ করুন।”

    “ওহ, হ্যাঁ,” বলে বাকি কফিটুকু গলায় চালান করে দিল সুহেই বড্ড তেষ্টা পেয়েছিল।

    “ঠিক আছে তাহলে, আমাদের সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ,” খাটোমতন ডিটেকটিভ বললো।

    “হ্যাঁ, আমাদের তদন্তে সাহায্য করার জন্যেও ধন্যবাদ।”

    এসময় প্লাস্টিকের ব্যাগটা সুহেইয়ের সামনে বাড়িয়ে ধরলো চেক শার্ট পরিহিত ডিটেকটিভ। “ক্যানটা এখানে রেখে দিন। আমি সুযোগ বুঝে ফেলে দিন।”

    “ওহ…আচ্ছা…ধন্যবাদ,” খালি ক্যানটা ব্যাগে রেখে দিল সুহেই।

    ইয়োরিকো রেস্তোরাঁর প্রবেশপথের করিডোরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল সুহেইয়ের জন্যে।

    “কি অবস্থা? কি জিজ্ঞেস করলেন ওনারা?” জানতে চায় সে।

    জবাবে কেবল গাইগুই করতে লাগলো সুহেই। বিশ্বাসযোগ্য কিছু বানিয়ে বলতে বেগ পেতে হচ্ছে ওকে।

    “স্ন্যাক কেকগুলোর ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল নাকি?”

    অবাক হলেও চেহারায় তা ফুটতে দেয় না সুহেই। মাথা নাড়ে কেবল। পুলিশের লোকগুলো নিশ্চয়ই ইয়োরিকোকে বলেছে তাকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

    “তিন দিন আগে অনেকগুলো ছোট কেক কিনেছিলে তুমি। ওগুলো কি করেছ, সেটাই জানতে চাইছিল তো?”

    “জ্বি, ম্যাম।”

    “কি বলেছ তুমি?”

    ডিটেকটিভদের যে গল্পটা বলেছে, সেটারই পুনরাবৃত্তি করলো সুহেই। এছাড়া আর কি-ই বা করার আছে?

    ও ভেবেছিল কাজে ফাঁকি দিয়ে কেক কিনতে গিয়েছিল শুনে ইয়োরিকো হয়তো বকাঝকা করবে, কিন্তু সেরকম কিছু হলো না। বরং বারবার পুলিশ তাকে আর কি জিজ্ঞেস করেছে সেটাই জানতে চাচ্ছে রেস্তোরাঁ মালিক।

    “আর কিছু না।“

    “ঠিক আছে। যাও এখন, দাঁড়িয়ে থেকো না, কাজে লেগে পড়ো।”

    “জ্বি ম্যাম। কিন্তু আমাকে এসব কেন জিজ্ঞেস করতে এসেছিল ওঁরা? আমার সাথে ডিটেকটিভদের কি কাজ?”

    এবারে অস্বস্তি ভর করলো ইয়োরিকোর চেহারায়।

    “তিনদিন আগে সন্ধ্যায় কোদেনমাচোতে একটা খুন হয়েছে। সেটা নিয়েই তদন্ত চলছে।”

    “কোদেনমাচোতে? সেটার সাথে আমার কি সম্পর্ক?

    “পুলিশের লোকেরা ভিক্টিম মহিলার অ্যাপার্টমেন্টে কয়েকটা ছোট কেক খুঁজে পেয়েছে। তাই সেদিন দোকানটা থেকে যারা কেক কিনেছিল, তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে।”

    খাবি খাওয়ার জোগাড় হলো সুহেইয়ের। মুখের ভেতরটা বড্ড তেতো আর শুকনো লাগছে অকস্মাৎ। তবে নিজের এই বিহ্বল দশা যথাসম্ভব গোপন করার চেষ্টা করলো ও।

    “আমি যে কেক কিনেছি, এটা জানলো কি করে?” বিড়বিড় করে আপনমনেই প্রশ্নটা করলো। গলার স্বর নিজের কানেই খসখসে ঠেকছে।

    “কি জানি কিভাবে। সেই বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি। যাইহোক, তোমার সাথে তো আর খুনের ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই, তাই না?”

    জোরে জোরে মাথা ঝাঁকায় সুহেই। “আমি তো জানতামও না যে খুন হয়েছে।”

    “তাহলে তোমার দুশ্চিন্তার কিছ নেই। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এবার কাজে লেগে পড়ো, যাও। কাস্টোমারদের যেন কোন অসুবিধা না হয়,” ইয়োরিকোও তার কন্ঠস্বরের দীপ্ততা খুঁজে পেয়েছে আবার

    “সরি, ম্যাম,” বলে সুহেই। ক্ষমাপ্রার্থনার ভঙ্গিতে একবার মাথা নুইয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।

    লাঞ্চ শেষে কিছুক্ষণের বিরতি মেলে সুহেইয়ের। পুরনো খবরের কাগজ যেখানে রাখা হয় সেখানে গিয়ে গত পরশুর সন্ধ্যাকালীন সংখ্যায় খুনের খবরটা খুঁজে পায়। ভিক্টিম একজন। নারী বয়স পয়তাল্লিশ বছর। নিজের অ্যাপার্টমেন্টেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তাকে। ক্রাইম সিন যাচাই করে পুলিশ অভিমত দিয়েছে পরিচিত কারো হাতে খুন হয়েছে সে। খুব সম্ভবত শেষ বিকেল থেকে সন্ধ্যার শুরুর মধ্যবর্তী কোন একটা সময়ে

    কেকের ব্যাপারে সেখানে কিছু বলা হয়নি। এইসব তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করার কথাও নয় তাদের

    যে ডিটেকটিভদের সাথে ওর কথা হয়েছে, তাদের চেহারা কল্পনা করতে গিয়ে রীতিমত ঘাম ঝরতে লাগলো সুহেইয়ের শরীর বেয়ে। গরমও একটা কারণ।

    তাইজির ব্যাপারে যেসব কানাঘুষো প্রচলিত, সেগুলো জানা আছে ওর। ইয়োরিকোর স্বামীর খুব সম্ভবত গোপন অভিসার চলছে কারো সাথে। সহকর্মীদের এই বিষয়ে ফুসুর ফুসুর আলাপ করতে শুনেছে ও। তারা তো এটাও বলাবলি করছিল যে সেই প্রেমিকাকে কোদেনমাচোর একটা অ্যাপার্টমেন্টে তুলেছে তাইজি।

    তিনদিন আগে যে সুহেই তাইজির জন্যে ছোট ছোট কেকগুলো কিনে এনেছিল, সেবারই কিন্তু প্রথম নয়। আর প্রতিবারই কেকগুলো পাওয়ার সাথে সাথে কোথায় যেন রওনা হয়ে যেত তাইজি। তবে সাবওয়ে স্টেশনটার দিকে নয়, বরং উল্টোদিকে এগোতো সে। আর সেই পথে দশ মিনিট হাঁটলে কোদেনমাচো।

    সুহেই ধরেই নিয়েছিল কেকগুলো তাইজির গার্লফ্রেন্ডের জন্যে উপহার।

    আর এখন কিনা শুনছে সেই কোদেনমাচোতে খুন হয়েছে। আর ও সেদিন বিকেলে যেরকম কেক কিনেছিল, সেরকম কেকই পাওয়া গিয়েছে ভিক্টিমের অ্যাপার্টমেন্টে।

    সুহেই মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো গোটা বিষয়টা যেন কাকতাল ছাড়া আর কিছু না হয়। কিন্তু কাকতালেরও তো একটা সীমা আছে, নাকি? সবকিছু একটু বেশিই ঘোলাটে ঠেকছে। তাছাড়া ডিটেকটিভদের দলটা ওর সাথেই কথা বলতে এসেছিল, যেখানে কিনা দোকানটা থেকে প্রতিদিন শত শত ক্রেতা একই ধরণের কেক কেনে।

    তাইজির প্রেমিকাই কি খুন হয়েছে? তাহলে তো… কল্পনার চাকাটা বনবন করে ঘুরতে থাকে সুহেইয়ের, কিন্তু কারো সাথে যে এই ব্যাপারে আলাপ করবে, সেটাও সম্ভব নয়। ইয়োরিকো ম্যাডামকে তো কিছু বলাই যাবে না, সহকর্মীদেরও না। তাইজির সাথে কথা বলবে কিনা, সেটা নিয়ে দোনোমনায় ভুগে বাতিল করে দিল চিন্তাটা। শুধুশুধু বকাঝকা শোনার কোন মানে নেই। “নিজের মালিককে খুনী বলছিস! তোর সাহস তো মন্দ না!”

    এইসব চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাওয়ায় কাজে মনোযোগ দিতে পারল না সুহেই। অসংখ্য ছোটখাট ভুল করলো সেই রাতে। ফলস্বরূপ রেস্তোরাঁর সহকর্মীদের কাছ থেকে কথাও শুনলো বিস্তর।

    তিন

    পরদিন সন্ধ্যায় চেক শার্ট পরিহিত সেই ডিটেকটিভ আবার এলো রেস্তোরাঁয়। তবে এবারে কাস্টোমার হিসেবে এসেছে। চেক শার্টের উপরে ধূসর রঙের স্যুটও চাপিয়েছে একটা। তাকে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে রিজার্ভেশন লিস্টটায় চোখ বুলালো সুহেই। ভদ্রলোকের নাম কাগা

    “আরে, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ভূত দেখেছেন বুঝি,” বেশ উচ্ছল কণ্ঠে বললো কাগা। “নিশ্চয়ই ভাবছেন আমার মত গরীব পুলিশ অফিসার এরকম একটা রেস্তোরাঁয় খেতে এলো কিভাবে?”

    “না, স্যার। একদমই না,” চোখ নামিয়ে বলে সুহেই। “সেদিন যে হিদা থেকে আনানো বিয়ারগুলোর কথা বলছিলেন, ওগুলোর একটা দিয়েই শুরু করি, নাকি?” ড্রিঙ্কসের মেন্যুতে চোখ না বুলিয়েই বললো কাগা। আগেরদিনের কথা ঠিকই মনে রেখেছে সে সন্ধ্যেবেলাতে সাধারণত পূর্ব নির্ধারিত কিছু সেট মেন্যু সার্ভ করা হয় মাতসুয়াতে। প্রথমে একটা অ্যামুজ-বুশের (মূল খাবার শুরুর আগে একবারে খাওয়া যায় এরকম কোন খাবার) সাথে বিয়ারটা দিয়ে গেল সুহেই। এরপর এলো অ্যাপেটাইজার। এবারে ড্রিঙ্কস মেন্যু নিয়ে আসতে বললো কাগা।

    “আপনাদের মিস্ট্রেসের তৈরি করা সাকে পেয়ারিং (বিশেষ কিছু খাবারের সাথে সাকে গ্রহণ করলে স্বাদ বেড়ে যায়) মেন্যুটা তো বেশ লোভনীয়। এটাই নিব।”

    “জ্বি, স্যার।”

    “আপনার বোধহয় মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ভালো লাগে?” সুহেই রান্নাঘরের যেতে উদ্যোত হলে জিজ্ঞেস করে কাগা।

    দ্রুত কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে আরেকটু হলেই না বলে দিয়েছিল সুহেই, কিন্তু সেসময় ওর মনে পড়ে যায় আগের দিন গোটা এক বক্স কেক নিজে খাওয়ার কথা বলেছে।

    “হ্যাঁ…মানে…লাগে আর কি।”

    “তাহলে জিরো স্যুগার ক্যানটা নিলেন যে সেদিন?”

    “জিরো স্যুগার ক্যান?”

    “আরে, কোল্ড কফির ক্যানের কথা বলছি,” বিয়ারে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলে কাগা। “আপনি স্যুগার-ফ্রি ক্যানটা নিয়েছিলেন।”

    চমকে উঠলো সুহেই। কাগা ঠিকই বলেছে। সেদিন অভ্যাশবশত সুগার-ফ্রি কফি নিয়ে ফেলেছিল ও।

    “কফির ব্যাপারটা আলাদা…একটু কড়া আর তেতো না হলে ভালো লাগে না আমার।

    “তাই নাকি?” খালি গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখে কাগা। “ঠিক আছে, সাকেটা নিয়ে আসুন তাহলে এবার।”

    “এক্ষুনি আনছি, স্যার,” বলে বুথটা থেকে বেরিয়ে এল সুহেই। এখন আবার কি নিয়ে পড়েছে? স্যুগার ফ্রি কফির ক্যানটা নিয়েছি তো কি হয়েছে?

    ঠাণ্ডা ঘাম ছাড়ল সুহেইয়ের শরীরে। এতক্ষণে বুঝে গেছে যে কাগার রেস্তোরাঁয় আসার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। সে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেনি সুহেই একাই অতগুলো কেক খেয়েছে। সেজন্যে এসব প্রশ্ন করছে এখন।

    সাহায্যের জন্যে কারো সাথে কিছু আলাপ করবে, সেই উপায়ও নেই। ডিটেকটিভের সাথে কথা বলতেই হবে।”

    “এই সাকেটা আকিতা প্রিফেকচার থেকে আনা। নাম রোকুশু, একটা মাটির বোতল থেকে সাকে পরিবেশনের কাপে সাকেটুকু ঢেলে বলে সুহেই। “কার্বোনেটেড সাকে। দু’বার ফার্মেন্ট(গাঁজন) করায় বুদবুদের পরিমাণ বেশি।”

    “চমৎকার!” এক চুমুক দিয়ে বলে কাগা। “অনেকটা শ্যাম্পেইনের মতন। একইভাবে তৈরি বোধহয়

    “আমি…হু…খুব সম্ভবত। প্রথমে জুনমাইশু’র সাথে ইস্ট মেশায়- এই সাকে তৈরিতে চিনি বা আগে থেকে অ্যালকোহলিক কিছু মেশানো হয় না প্রথমে- এরপর আবার ফার্মেন্ট করে।”

    “শ্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে ইস্টের সাথে কিছুটা চিনিও মিশিয়ে দেয়। আর এই সাকেতে?”

    “এ-একটু সময় দিন আমাকে, স্যার। আমি জেনে আসছি।”

    “সেটার দরকার নেই। পরে বলবেন নাহয়। আচ্ছা আপনি কি কোদেনমাচোর খুনের ঘটনাটা সম্পর্কে কিছু শুনেছেন?”

    এরকম অকস্মাৎ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে শত চেষ্টা সত্ত্বেও বিস্ময় গোপন করতে সক্ষম হলো না সুহেই। “শুনেছেন তাহলে?” হাসি ফুটলো কাগার মুখে।

    “কি হয়েছে তাতে?”

    “আপনার বস নিশ্চয়ই বলেছেন ক্রাইম সিনে বেশ কয়েকটা কেক খুঁজে পেয়েছি আমরা। আমাদের ধারণা খুন হবার আগে কেকগুলোই খাচ্ছিল ভিক্টিম। ময়নাতদন্তে তার পাকস্থলীতে কেকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সামনের প্লাস্টিক কন্টেইনারেও রাখা ছিল। সমস্যাটা হচ্ছে, আমরা জানি না কেকগুলো কার কেনা।”

    “ভিক্টিম নিজে কেনেনি?”

    “দুর্ভাগ্যবশত, না। একজন ইন্স্যুরেন্স কর্মী সেদিন ভিক্টিমের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিল। তাকেও কেক খেতে বলেছিল ভিক্টিম। সাথে

    এটাও জানায় যে কেউ একজন কেকগুলো দিয়ে গেছে তাকে।”

    “ওহ,” এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হলো না সুহেইয়ের পক্ষে।

    “কেকগুলো কোথা থেকে কেনা হয়েছে সেটা বের করতে খুব বেশি ঝামেলা হয়নি আমাদের। প্লাস্টিক কন্টেইনারের ঢাকনায় নাম সাটা ছিল। তবে তাতে যে আমাদের খুব সাহায্য হয়েছে, এমন নয়। কারণ প্রতিদিন কমসেকম এক থেকে দেড়শোজন ওই দোকান থেকে কেক কেনে। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো, ভিক্টিমের বাসায় যে কেকগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো কিছুটা অন্যরকম ছিল। কয়েকটার ভেতরে কোন বিন পেস্টের ফিলিং ছিল না। সাধারণত আগে থেকে বিশেষভাবে অর্ডার না করলে এরকম বিক্রি করে না দোকানটা। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কৌতূহল হয় যে কে ওরকম কেকের অর্ডার দিয়েছিল। কিন্তু তখন দোকানের কর্মচারী মহিলা আমাদের জানায় ওরকম বেশ কয়েকটা অর্ডার ছিল সেদিন। সবার কথা মনে নেই তার, তবে এটুকু মনে আছে যে মাতসুয়ার তরুণ শিক্ষানবিশ ওয়েটার এরকম এক কন্টেইনার কেক নিতে গিয়েছিল সেদিন ওখানে,” সুহেইয়ের দিকে ইশারা করে বলে কাগা। “আপনি নাকি প্রায়ই যান কেক কিনতে?”

    জবাবে নাক দিয়ে কেবল শব্দ করলো সুহেই। এতক্ষণে পরিষ্কার হলো ডিটেকটিভদের দলটা কেন ওর পেছনে লেগেছে এভাবে।

    সুহেইয়ের মনে হচ্ছে ওর পায়ে শেকড় গজিয়েছে বুঝি। এসময় কাতসুয়া উঁকি দিল বুথটার ভেতরে। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো এতক্ষণ ধরে এক জায়গায় কি করছে ও।

    “সরি, স্যার। আমি একটু পরে আবার আসব,” কোনমতে বলে কাগার কাছ থেকে সরে এলো সুহেই।

    “এরকম ব্যস্ত সময়ে একজন কাস্টোমারের সাথে আড্ডা জুড়ে দিয়েছ কেন, বলো তো?” কাতসুয়া সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

    “আরে, উনিই কথা বলছিলেন আমার সাথে…”

    “তোমাকে ভালো করে বুঝতে হবে এরকম পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ। একজন কাস্টোমারের পেছনে এত সময় দিলে অন্যেরা কি ভাববে?”

    “সরি। ভুল হয়ে গেছে।”

    মাথা নিচু করে রান্নাঘরের দিকে এগোলো সুহেই। মুখ ফুটে এখন এটা তো বলা সম্ভব না যে কেবলমাত্র ওর সাথে কথা বলার জন্যেই আজকে রেস্তোরাঁয় এসেছে কাগা।

    এরপর আরো কয়েকবার কাগার খাবার পরিবেশন করার জন্যে গেল সুহেই, তবে ডিটেকটিভ আর কথা বাড়াল না। দেখে মনে হচ্ছে খাবারগুলো বেশ উপভোগ করছে সে।

    এতে সুহেই আরো নার্ভাস হয়ে উঠলো। ডিটেকটিভ লোকটার পরিকল্পনাটা কি? মাথায় কি ঘুরছে লোকটার? আজকে রাতে এসেছে কেন? শুধু খাবার খেতে আসেনি, এটা নিশ্চিত।

    “এটা জাপানিজ মাস্টার্ড স্পিনাচ। আমরা স্টকের সাথে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করি প্রথমে। এরপর ওটাকে শুকাই। উপরের এটা হচ্ছে শুকনো মাছের গুড়ো।”

    কাগার সামনে প্লেটটা নামিয়ে রাখার সময় তার অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করলো সুহেই। কিন্তু কাগা একদম পাক্কা ভোজনরসিকের মতন খাবারটার প্রশংসা করে চপস্টিকসের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। উল্টো ঘুরে রান্নাঘরের দিকে এগোতে শুরু করলো সুহেই।

    “আমরা তিনজন ব্যক্তির আঙুলের ছাপ পেয়েছি,” কাগা বলে এসময়।

    চকিতে থেমে ঘুরে দাঁড়ায় সুহেই। খাবার মুখেই ওর দিকে তাকায় কাগা।

    “স্বাদটা একদম অন্যরকম। পেস্ট হলেই জাপানিজ স্পিনাচের স্বাদটা আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে। সেটাই তো হবার কথা, তাই না?”

    “মানে?” সুহেই বলে। “আঙুলের ছাপের কথা বলছেন?”

    সাথে সাথে কিছু না বলে আয়েশী ভঙ্গিতে সাকে কাপটা তুলে মুখে ছোঁয়ায় কাগা।

    “কেকের প্লাস্টিক কন্টেইনারে তিনজনের আঙুলের ছাপ পেয়েছি আমরা এরমধ্যে একটা ছাপ ভিক্টিমের। দ্বিতীয় আঙুলের ছাপটা কেকের দোকানের কর্মচারীর। বাকি থাকে আরেকটা। সব কিছু ধর্তব্যের মধ্যে নিলে এটা আন্দাজ করাই যায় যে সেই ছাপটা খুনীর।”

    “খুনী’ শব্দটা শোনার সাথে সাথে ভয়ের শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল সুহেইয়ের মেরুদণ্ডের মাঝ বরাবর। চেহারার পেশিগুলোও টানটান হয়ে গেছে। ও এত ভালো অভিনেতা নয় যে চট করে অভিব্যক্তি গোপন করতে পারবে।

    “ওই…ওই কেকগুলো আমি কিনিনি,” কাঁপছে এখন ওর কন্ঠস্বর।

    “না, কারণ আপনি তো আপনার কেনা কেকগুলো সব খেয়ে ফেলেছেন, তাই না?”

    জোরে জোরে মাথা নেড়ে সায় দিল সুহেই।

    “এখন আপনার বাড়ন্ত শরীর। নিশ্চয়ই কাজের মধ্যেও সময় পেলে কিছু না কিছু খান। রেস্তোরাঁর মালিক আমাদের জানিয়েছে বিকেলের সময়টায় নাকি বাইরের ফুটপাতে পানি ছিটান আপনি। কেক কিনে আনার পর কোথায় রাখেন? আপনার সাদা অ্যাপ্রনটায় তো কোন পকেট নেই।”

    “এজন্যেই আমি…ইয়ে…বাইসাইকেলের ঝুড়িতে রেখে দেই।”

    “বাইসাইকেল?”

    “আমার বাইকটা রেস্তোরাঁর পাশের গলিটায় রেখে দেই প্রতিদিন সকালে। কেক কিনে এনে ওটার ঝুড়িতেই ঢুকিয়ে রাখি সাধারণত। ফুটপাতে পানি ছিটানো শেষ হলে ভেতরে নিয়ে আসি।”

    কাগা এখন শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেয়ালের দিকে। হয়তো মনে মনে কল্পনা করার চেষ্টা করছে দৃশ্যটা। কিছুক্ষণ বাদে সুহেইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো ডিটেকটিভ।

    “সেটাই করার কথা। নাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে তো আর কেকগুলো খেতে পারবেন না।”

    “আর কিছু কি বলবেন?”

    “না, আপনাকে আটকে রাখার ইচ্ছে নেই, “ চপস্টিক তুলে নিয়ে বললো কাগা। “যাওয়ার আগে একটা কথা শুনে যান। তৃতীয় আঙুলের ছাপটার সাথে আপনার আঙুলের ছাপ মেলেনি।”

    এবারে সুহেইয়ের চোখ যেন কোটর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে। “আমার আঙুলের ছাপ? কিন্তু….কিভাবে…কখন…?”

    “আমাদের কাজের আলাদা ধরণ আছে,” কাগার মুখের হাসি প্রায় কান স্পর্শ করলো।

    এদিকে বিরক্তিতে কুঁচকে উঠেছে সুহেইয়ের কপাল। “কফির ক্যান!”

    এবারে ও বুঝতে পারছে সেদিন ওর কাছ থেকে ক্যানটা নেয়ার জন্যে কেন ওরকম উতলা হয়েছিল কাগা। এত যত্ন করে ডেকে কফি খাওয়ানোর কারণটাও স্পষ্ট। একইসাথে কয়েকটা পরীক্ষা দিতে হয়েছিল ওকে সেদিন। সুগার ফ্রি ক্যানটা নেয়া, হাতের ছাপ রেখে আসা। এক ঢিলে কয়েক পাখি।

    “যত্তসব ঝামেলা,” নিজেকে সামলানোর আগেই হিসিয়ে ওঠে সুহেই।

    “পুলিশদের কাজের ধরণটাই এমন,” সাকেতে আরেক চুমুক দেয় কাগা।

    এরপর থেকে কাগার জন্যে ডেজার্ট পরিবেশন করা অবধি একটা শব্দও উচ্চারণ করে না সুহেই। একবার তার চোখের দিকেও তাকায়নি।

    কাগা চলে যাওয়ার পর তার এঁটো বাসনগুলো রান্নাঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় ইয়োরিকো ডাক দেয় ওকে।

    “নিহনবাশি থানার ডিটেকটিভটা তোমাকে জ্বালাচ্ছে, তাই না?”

    “উনি নিহনবাশির?”

    “আমি একটু খোঁজ খবর নিয়েছি। কয়েকদিন আগেই বদলি হয়ে এসেছে এখানে। যাইহোক, এবারে কি জানতে চাইছিল?

    ডিটেকটিভের এরকম হঠাৎ আক্রমনে কিছুটা পর্যদুস্ত হলেও মিথ্যে বলবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিল সুহেই। কেবলমাত্র তাইজির ব্যাপারটা সম্পর্কে কিছু না উল্লেখ করলেই হবে।

    “বিশ্বাসই হচ্ছে না! শুধু এসব প্রশ্নের জন্যে রেস্তোরাঁয় খেতে এসেছিল!”

    “আমার এখন কি করা উচিৎ?”

    “তোমার চিন্তার কিছু নেই। ক্রাইম সিনে যেহেতু তোমার আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি, তাই তুমি বিপদমুক্ত। এখন কাজের মধ্যে তোমাকে ডাকাটা আসলে উচিৎ হয়নি আমার। যাও, সব পরিষ্কার করে ফেল,” হুট করে মুখ ফিরিয়ে নিল ইয়োরিকো।

    চার

    সুহেই ব্যস্তসমস্ত হয়ে বাসন পরিষ্কারের কাজ করছে, এসময় দুদ্দাড় করে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো তাইজি। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আজ সন্ধ্যায় পেটে কিছু পড়েনি।

    “আরে কাজ বাদ রাখ্ তো, একদিন তো আমার সাথে বাইরে গেলেও পারিস।”

    “কোথায়?”

    “এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নকি? চল্, আজকেই যাবি। দেখবি কোথায় যাই আমি।”

    “এখনও তো এগুলো পরিষ্কার করা হয়নি।”

    “কে বস? তুই না আমি? মুখ বন্ধ করে যা বলছি ক। রেডি হয়ে আয়। আমি বাইরে আছি।”

    “ওহ…ইয়ে…আচ্ছা।” সুহেই দ্রুত কাপড়ে হাত মুছে বেরিয়ে যায় রান্নাঘর থেকে।

    এই প্রথম ওকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে তাইজি। নার্ভাস ভঙ্গিতে রাস্তায় বেরিয়ে এলো ও। তাইজি কোথায় নিয়ে যাবে?

    “কিরে! তোর কি জুতের কোন জামাকাপড় নাই নাকি?” চোখ পাকিয়ে সুহেইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে তাইজি।

    “সরি, বস। এতে কাজ চলবে না?” একটা জিন্স আর টিশার্ট পরনে ওর। “কাপড় বদলে আসব?”

    “নাহ, থাক। ঠিকই আছে। চল এখন।”

    মেইন রোডে গিয়ে একটা ট্যাক্সি ডাক দিল তাইজি। সুহেই যখন শুনলো ড্রাইভারকে গিনজায় যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে সে, অবাক না হয়ে পারল না। গিনজা হচ্ছে টোকিওর সবচেয়ে নামকরা, অভিজাত শপিং ডিস্ট্রিক্টগুলোর একটা। গোটা দুনিয়াতেই এরকম জায়গা খুব কম আছে। সুহেই কখনো ওখানে যায়নি।

    “কিরে, কি হলো তোর? গিনজার নাম শুনে হাওয়া বেরিয়ে গেল কেন, হ্যাঁ?” তাইজি মুখে হাসি টেনে বলে। “তুই না ভালো বাবুর্চি হতে চাস। মাঝে মাঝে বড়দের জগতেও একটু টু-টু মারতে হবে তো, নাকি?”

    আমতা আমতা করে কিছু একটা বললো সুহেই।

    “চিন্তা রাখ তো। তোকে আমি ওখানে নিয়ে গিয়ে কোন বিল- টিল ধরিয়ে দিব না,” এবারে হাসিতে ফেটে পড়লো তাইজি।

    কিছুক্ষণ পর গাড়িতে গিজগিজ করছে, এরকম একটা রাস্তায় এসে থামল ট্যাক্সিটা। ফুটপাতে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে ধোপদুরস্ত পোশাক পরা অফিসকর্মীরা। নাইটক্লাব আর নামকরা বারের হোস্টেসদেরও দেখা যাচ্ছে। নিনগিয়োচোতেও এরকম দৃশ্য আগে চোখে পড়েছে সুহেইয়ের। তবে এই ডিস্ট্রিক্টটা কেবল নৈশ প্রমোদের জন্যেই বরাদ্দ। সুতরাং, এখানে রকম-সকমই আলাদা।

    “আকাশ পাতাল চিন্তা না করে আমার পিছে পিছে আয়,” তাইজি ধমকে ওঠে এবারে।

    সুহেই দ্রুত তাইজির পেছনে হাঁটতে হাঁটতে একটা বিল্ডিংয়ের ছয় তলায় অবস্থিত একটা নাইটক্লাবে আবিষ্কার করে নিজেকে। নাইটক্লাবটা অনেক বড়, কিন্তু সবগুলো টেবিলে মানুষ। খালি নেই কোনটাই। বাতির ঝলকানিতে চোখ খুলে রাখা দায়। কিন্তু এর মাঝেও পুরুষ খদ্দেরদের সাথে বসে থাকা হোস্টেসরা আপন আলোয় আলোকিত। সুহেইয়ের মনে হচ্ছে অচেনা গ্রহে এসে পড়েছে বুঝি।

    কালো স্যুট পরিহিত একটা লোক সুহেইকে একটা টেবিলে নিয়ে গেল। ওরা বসার কিছুক্ষণ পরই এক নারী এগিয়ে এলো। তার পরনে সুন্দর একটা গাউন ড্রেস। আকর্ষণীয়, মাঝারি গড়নের দেহবল্লরী। চুল পেছনের দিকে টেনে পনিটেইল করে রাখা।

    তাইজি সুহেইয়ের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিল। ভদ্রমহিলা বললো তার নাম আসামি।

    “তোমার বয়স মাত্র সতেরো? বাহ! শেফ হতে চাও? দারুণ তো! কিন্তু এখনও ড্রিঙ্ক করার বয়স হয়নি তোমার, নাকি?” পানির সাথে হুইস্কি মেশাতে মেশাতে হঠাৎ হাত থেমে গেল আসামির

    “বিয়ার খেতে পারবে। একজন উঠতি শেফ যদি ড্রিঙ্কই করতে না পারে, তার শেফ হবার কোন যোগ্যতাই নাই।”

    সুহেই অস্বস্তি বোধ করছে এখন। এরকম একটা জায়গায় কেমন আচরণ করতে হয় বা কিভাবে কথা বলতে হয়, সেটা জানা নেই ওর

    এসময় কেউ একজন আসামিকে ডাক দেয়ায় চলে গেল সে। হাত নেড়ে সুহেইকে ডাকল তাইজি।

    “শোন্।”

    তাইজির পাশে গিয়ে বসলো সুহেই। পরবর্তী কথাগুলো ওর কানে কানে বললো সে। “এই যে আসামিকে দেখছিস, ও-ই হচ্ছে আমার…” একবার চোখ টিপ দিল তাইজি। “ওর জন্যেই কেক কিনিস তুই।”

    “ওহ…” বিস্ফোরিত নয়নে তাইজির দিকে তাকিয়ে বলে সুহেই। “বউ বললো তোকে নাকি নিহনবাশি থানার কোন অগমগা ডিটেকটিভ বিরক্ত করছে কয়েকদিন ধরে। চিন্তা করবি না। খুনের সাথে দুর দুরান্তে কোন সম্পর্ক নেই আমার।”

    “চিন্তা করছিলাম না …”

    “আমার সামনে শক্ত সাজার কোন দরকার নেই। জানি তোর মাথায় কি ঘুরছিল। ভেবেছিলি যে মহিলা মারা গেছে, সে-ই আমার…?” ডান হাতের কনিষ্ঠা উঁচু করে তাইজি। জাপানিজে সংস্কৃতিতে এর অর্থ ‘গার্লফ্রেন্ড’। “আসলে পুরোটাই কাকতালীয় ব্যাপার, আর কিছু না। যে বিল্ডিংয়ে খুনটা হয়েছে, সেখানেই একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকি আসামি।”

    “কিহ!” সুহেইয়ের দম আটকে যায়।

    “হ্যাঁ। আমিও তোর মতনই অবাক হয়েছিলাম প্রথমে। কিন্তু যেমনটা বললাম, এসবের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাই তোরও চিন্তার কোন কারণ দেখছি না।”

    মাথা নেড়ে সায় দেয় সুহেই। তাইজির ভাব দেখে মনে হচ্ছে না সে মিথ্যে বলছে।

    “তাহলে ডিটেকটিভ লোকটা আমাকে ওভাবে জ্বালাচ্ছিল কেন?”

    “কে জানে। হয়তো নিরীহ লোকদের জ্বালিয়ে মজা পায় ওরা।”

    এসময় আসামি ফিরে এলো টেবিলে।

    “কি ফিসফাস করছ দু’জন?”

    ছেলেদের কথা এসব। এখন বলো, আমার বাবুটা কেমন আছে, হ্যাঁ?”

    সুহেইয়ের চোয়াল এবারে মেঝে ছোয়ার জোগাড়। আসামি ওর অভিব্যক্তি দেখে হেসে উঠলো খিলখিল করে

    “ওর পেট ভর্তি এখন সুইট বিন পেস্ট। বাবাকে দেখতে চায়।“

    “বাহ, বাহ। আমার পক্ষ থেকে আদর করে দিও কিন্তু।“

    বড়দের এই কথোপকথন দুর্বোধ্য ঠেকে সুহেইয়ের কাছে।

    ওর সামনে বিয়ারের একটা গ্লাস রাখা। সেটা উঠিয়ে বড় একটা চুমুক দেয়।

    এর আগেও বিয়ার খেয়েছে সুহেই। কিন্তু গিনজার এই নাইটক্লাবের বিয়ারটা একটু যেন বেশিই তিতকুটে। বড়দের দুনিয়ার স্বাদ তাহলে এমনই, ভাবে ও।

    পাঁচ

    একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ইয়োরিকোর বুক চিড়ে। বারটার একদম ডান দিকে পিলারের আড়ালে বসে আছে সে। এখানে এলে ঠিক এই জায়গাটাতেই বসে প্রতিবার। আরো একটা সপ্তাহের সফল সমাপ্তি। সপ্তাহের এই দিনটায় স্বস্তিতে একটু শ্বাস ফেলা যায়। কিমোনো বাদে অন্য কিছু পরতে পারে।

    এসময় ওয়েটার এসে দাঁড়াল টেবিলের পাশে। “যেটা নেই সবসময়,” হেসে বলে ইয়োরিকো। মাথা নেড়ে চলে গেল তরুণ ওয়েটার। প্রতি শনিবার একটা আবাসিক হোটেলের বেইজমেন্টে অবস্থিত এই বারটায় নিয়ম করে আসা হয় তার। এই এলাকাটা অবশ্য বার কিংবা নাইটক্লাবের জন্যে অতটা পরিচিত নয়। মূলত সেজন্যেই আসা। ইয়োরিকো চায় না পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে যাক।

    “এই নিন, ম্যাডাম।”

    জিনের ছোট একটা গ্লাস এবং কয়েকটা তেতো আঙুর টেবিলে রাখল ওয়েটার। মিষ্টি ককটেল পছন্দ নয় ইয়োরিকোর।

    গ্লাসটা কেবলই হাতে নিয়েছে এসময় তার পাশের সিটটায় কেউ এসে বসল।

    “বনেদি একটা রেস্তোরাঁর মালিকের হাতে এরকম ড্রিঙ্কই মানায়।”

    ভারি কন্ঠস্বরটা চিনতে অসুবিধে হলো না ইয়োরিকোর।

    ঘুরে তাকাকেই পরিচিত চেহারাটা দেখতে পেল।

    “আপনার কিছু সময় নিতে পারি আমি?” হেসে জিজ্ঞেস করলো কাগা।

    “নিশ্চয়ই,” পাল্টা হেসে জবাব দেয় ইয়োরিকো। কাগার পরনে সেই একই ধূসর স্যুট।

    “গিনেস বিয়ার থাকলে আমাকে দিয়ে যাবেন, প্লিজ, “ ওয়েটারের উদ্দেশ্যে বললো ডিটেকটিভ।

    “আপনার নিশ্চয়ই ডিউটি নেই এখন, এজন্যেই ড্রিঙ্ক করছেন, ইয়োরিকো মন্তব্য করে।”

    “ঠিক ধরেছেন। আসলে খুনের রহস্যটার সাথে জড়িত ছোট একটা সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি, তাই নিজেকে নিজেই ট্রিট দিচ্ছি।”

    “তাই বলে একা একা? আপনার বন্ধুরা কোথায়?”

    একবার মৃদু মাথা ঝাঁকায় কাগা।

    “ওসলে ওভাবে উদযাপনের মতন কিছু নয় বিষয়টা। একটা কুকুরকে খুঁজছিলাম গত কয়েকদিন ধরে, সেটাকে খুঁজে পেয়েছি আরকি।”

    “কুকুর? খুনের সাথে কুকুরও জড়িত নাকি?”

    “জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি যে কুকুরটা খুন করেনি!”

    কাগার কন্ঠস্বর গম্ভীর শোনাচ্ছে। তার অভিব্যক্তি ভালো করে খেয়াল করলো ইয়োরিকো। রেস্তোরাঁর

    রেস্তোরাঁর মালিক হিসেবে কাস্টোমারদার মনোভাব বোঝা তার কাজের মধ্যেই পড়ে।

    “থানার কমিশনার প্রায়ই মাতসুয়ায় খেতে আসেন। সেদিনও এসেছিলেন একজনকে নিয়ে।”

    “তাই নাকি? আমি আগে যে থানায় ছিলাম, সেখানকার কমিশনারও এরকম ঘুরে বেড়াতেন কিন্তু। টোকিও’র কমিশনারেরা ভালোই আনন্দ উদযাপন করেন! স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যাপারে খোঁজ খবর জানতে চাইলে ইন্টারনেটের চেয়ে তারাই ভালো জানাতে পারবেন।”

    শব্দ করে হেসে উঠলো এবারে ইয়োরিকো। “তখনই কমিশনার সাহেব আমাকে বলেছিলেন তাদের থানায় বেশ ‘জবরদস্ত’ নতুন একজন ডিটেকটিভ এসেছে। ‘জবরদস্ত’ বলতে কি বোঝাচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে বলেন যে নতুন ডিটেকটিভ অত্যন্ত বুদ্ধিমান, চটপটে এবং একটু গোয়ার স্বভাবের। আপনার ব্যাপারে বোধহয় বলছিলেন তিনি, ডিটেকটিভ কাগা?”

    “কে জানে…”

    “এসময় ওয়েটার এসে গিনেজের একটা বোতল আর গ্লাস রেখে গেল কাগার সামনে। “আজকে বেশ কঠিন একটা দিন গেল, গ্লাসটা ঠোঁটে ছুঁইয়ে বললো ডিটেকটিভ।

    “চিয়ার্স,” বলে নিজের জিনে চুমুক দিল ইয়োরিকো।

    “আপনাকে কিন্তু কিমোনোর পাশাপাশি ওয়েস্টার্নেও ভালো মানায়। দুই ধরণেই পোশাকেই আপনার আভিজাত্য একদম স্পষ্ট ফুটে ওঠে,” অভিভূত ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললো কাগা।

    “আমাকে নিয়ে মজা করবেন না তো।”

    “মজা করবো কেন! আচ্ছা, একটু হয়তো অন্যভাবে বলে ফেলেছি কথাটা।”

    গ্লাসটা নামিয়ে রাখে ইয়োরিকো। “মানে?”

    “মানে বলতে চাইছি, আপনার মধ্যে একটু বাচ্চামো স্বভাবও আছে কিন্তু। প্র্যাকটিকাল জোক করতে পছন্দ করেন যেহেতু।”

    “ডিটেকটিভ,” এবারে ঘাড় ঘুরিয়ে সোজাসুজি কাগার চোখে চোখ রাখে ইয়োরিকো। “আপনার যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে সরাসরি বলে ফেলুন। পরিচিত কেউই কিন্তু আমাকে খুব একটা ধৈর্য্যশীল হিসেবে জানে না।”

    “মাফ করবেন। এবারে মুল আলাপে আসা যাক, নাকি? কোদেনমাচোর খুনটার ব্যাপারে একটু কথা ছিল।”

    “আপনি কি বলতে চাইছেন খুনটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে?”

    “ঠিক ক্রম অনুসারেই আপনাকে বলি নাহয়। যেমনটা সেদিন বলছিলাম, ক্রাইম সিনে আমরা বেশ কয়েকটা ছোট কেক পাই। শুধুমাত্র টোকিওতে পাওয়া যায় কেকগুলো। কিন্তু আমরা এখনো জানি না যে ওগুলো কার কেনা। কেকের কন্টেইনারে তিনজনের আঙুলের ছাপ পেয়েছি আমরা। একটা ভিক্টিমের, একটা দোকানের বিক্রেতার আর তৃতীয়টা অজানা কারো।”

    “সুহেই আমাকে জানিয়েছে এসব। আঙুলের ছাপটা তো ওর না।”

    “নাহ।”

    “এটা শুনেই অবাক হয়েছি। আঙুলের ছাপ যদি ওর না হয়েই থাকে তাহলে আমাদের রেস্তোরাঁর আশপাশে এত ঘোরাঘুরি করছেন কেন আপনি, ডিটেকটিভ? ওই দোকানটা থেকে তো অনেকেই স্ন্যাক কেক কেনে। কয়েক ধরণের কেকের ওই কন্টেইনারটা যে শুধু সুহেই অর্ডার করেছিল, এমন তো নয়। এখন অন্যদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া শুরু করা উচিৎ নয় আপনাদের?”

    “আসলে, আপনার সাথে ঠিক এই বিষয়ে কথা বলতেই এসেছি আজকে। আপনি যেমনটা বলছিলেন, ওরকম মিক্সড কেকের অর্ডারদাতা সুহেই একমাত্র ব্যক্তি ছিল না সেদিন। কন্টেইনারেও তার হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি। সেজন্যেই মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহভাজনের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। তাদের আচার আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছিল, কেক যে কিনেছে, তাকে আসলে প্রথম থেকেই সন্দেহের আওতার বাইরে রেখেছে তারা।”

    “তাই?” ইয়োরিকোর মুখ হা হয়ে গেল।

    “ইয়োরিকোর অ্যাপার্টমেন্টের অনেক জায়গায় হাতের ছাপ মুছে ফেলা হয়েছে,” কিছুটা শ্লেষাত্মক কণ্ঠে কথাটা বললো কাগা বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিল একবার।

    “অর্থাৎ?”

    “অর্থাৎ, খুনী যদি নিজের হাতের ছাপ নিয়ে এতটাই চিন্তিত থেকে থাকে, তাহলে সবার আগে কন্টেইনারটা থেকে ছাপ মুছে ফেলার কথা ছিল তার। অর্থাৎ, কেক যে কিনেছে এবং খুনী ভিন্ন ব্যক্তি। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত কন্টেইনারটা কেউ কিছু দিয়ে মোছেনি।”

    “ওহ! এবারে বুঝতে পারছি।”

    কাগার ক্লান্ত চেহারার দিকে তাকালো ইয়োরিকো।

    “তাহলে ডিটেকটিভ, আপনারা কেক নিয়ে এত মেতেছেন কেন? যদি মূল অপরাধের সাথে কেকগুলোর কোন সম্পর্কই না থেকে থাকে, তাহলে কে কিনল না কিনল তাতে কি আসে বা যায়?”

    “পুলিশি তদন্ত তো আর এসব ভেবে হয় না। সব বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে হয়। প্রশ্নবিদ্ধ করতে হয় সব সিদ্ধান্তকে। এসব ছোট ছোট সুত্রই একসময় মুল সত্যটার কাছে নিয়ে যায় আমাদের। আপাত দৃষ্টিতে হয়তো মনে হতে পারে যে এসবের সরাসরি কোন সম্পৃক্ততা নেই।”

    ইয়োরিকোর গ্লাস ফাঁকা এখন। ওয়েটারকে ডেকে রিফিল দিতে বললো সে।

    “সুহেইয়ের দাবি সবগুলো কেক সে একাই সাবাড় করেছে। কাজে ফাঁকি দিয়ে এভাবে কেক কিনে আনাটা পেশাদার নয়, “ইয়োরিকো বলে।”

    “দয়া করে ছেলেটাকে আর কিছু বলবেন না। ও আসলে খায়নি কেকগুলো,” এবারে ঘোষণার সুরে বললো কাগা।

    “আপনি এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে? বুঝতে পারছি না আমি।”

    “আরেকটু হলেই বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম আপনার কথাটা। তবে আপনি কি বুঝতে পারছেন না, সেটা বলি- সুহেইয়ের কেনা কেকগুলো খুন হয়ে যাওয়া মহিলার অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছাল কি করে।”

    সতর্ক হয়ে উঠলো ইয়োরিকো। কাগা কি করে বুঝলো তার মাথায় কি ঘুরছে? দ্রুত নিজেকে সামলে নিল সে।

    “যেমনটা আগেও বলেছি আমি, ডিটেকটিভ। কিছু বলার থাকলে বলে ফেলুন।”

    এবারে সিটে সোজা হয়ে বসে ইয়োরিকোর দিকে তাকায় কাগা।

    “ঠিক আছে। উপসংহার থেকেই শুরু করা যাক নাহয়। ক্রাইম সিনে আমরা যে কেকগুলো খুঁজে পেয়েছি, সেগুলো আসলেও সুহেইয়ের কেনা। এই বিষয়ে এতটা নিশ্চিত হচ্ছি কি করে? কারণ ওগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ কেক ছিল। আপনি বোধহয় বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি?”

    ঢোক গিলে মুখ অন্য দিকে ফেরায় ইয়োরিকো।

    হেসে ওঠে কাগা।

    “আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্টদের ঘাম ছুটে গিয়েছিল রীতিমত। বিশ্বাসই করতে পারছিল না একেকজন। আমি নিজেও অবাক হই যখন শুনি একটা কেকে ওয়াসাবি মেশানো ছিল! অবিশ্বাস্য!”

    আরেক গ্লাস জিন রেখে যাওয়া হলো ইয়োরিকোর সামনে। সেটা তুলে নিয়ে কাগার দিকে ফিরলো রেস্তোরাঁর মালিক।

    “গল্পটা শুনতে ভালোই লাগছে কিন্তু। আমি বাগড়া দিব না। নির্দ্বিধায় বলে যেতে পারেন পুরোটুকু।”

    “আমি যদি আরেকটা ড্রিঙ্কের অর্ডার দেই, আপনি কিছু মনে করবেন?”

    কাউন্টারে খালি গ্লাসটা দিয়ে একবার শব্দ করলো কাগা।

    হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা সিগারেট আর লাইটার বের করে আনলো ইয়োরিকো। একমাত্র এই বারটাতেই সে ধুমপান করে। মাতসুয়ার মালিক এবং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সবসময় সতর্ক থেকেছে যাতে ধূমপানের সময় কারো সামনে না পড়ে যায়।

    “ক্রাইমসিনে যে কেকগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলোর মধ্যে একটায় ওয়াসাবি মেশানো ছিল। কাজটা যে করেছে, যথেষ্ট যত্নের সাথেই করেছে, এটা স্বীকার করতেই হবে। কেকের ভেতরে শুধু ওয়াসাবির পেস্টই ভরেনি, সময় নিয়ে কাটা জায়গাটা স্টার্চ পেস্ট দিয়ে ঢেকেও দিয়েছে। এটা বলাই বাহুল্য যে দোকানটায় ওয়াসাবি ফ্লেভারের কোন কেক পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, কেউ একজন কেনার পরে করেছে কাজটা। কিন্তু সেই ‘কেউ’ আসলে কে? যে কেক কিনেছে? ভিক্টিম নিজে? নাকি যার কাছ থেকে কেকগুলো পেয়েছে? আবার এমনও হতে পারে সেই ব্যক্তি সম্পূর্ণ অন্য কেউ। সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্যে আমাদের হাতে কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত আছে। আমাদের ফরেনসিক টিমের বিশ্লেষণের মতে ওয়াসাবি ফ্লেভারের কেকটা অন্যান্য কেকগুলোর তুলনায় কিছুটা পুরনো। একটু শক্ত আর শুকনো হয়ে গিয়েছিল সেটা। ওদের মত কমসেকম একদিন আগে বেক করা হয়েছে কেকটা। এ থেকে আমরা কি বুঝতে পারি? যে ব্যক্তি সদ্য কেনা কেকগুলোর সাথে ওয়াসাবি পেস্ট মেশানো কেক ঢুকিয়ে দিয়েছিল, সে সেদিনকার কেকগুলোর কোনটায় পেস্ট মেশায়নি। বরং ওরকম একটা কেক আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিল সে। সুযোগ পাওয়া মাত্র বদলে দিয়েছে কেবল। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে দুইবার কেনা হয়েছিল কেকগুলো। আমি দোকানে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। যখন জিজ্ঞেস করি ওই বিশেষ কেকগুলো পরপর দু’দিন কেউ কিনেছে কিনা, কারো নাম মনে করতে পারেনি দোকানের কর্মচারী। তবে আমাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা তথ্য দিয়েছিল সে। সেটাও কম কৌতূহলদ্দীপক নয় কিন্তু।”

    আরেকটা গিনেস রেখে যাওয়া হলো কাগার সামনে। ছোট্ট একটা চুমুকে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল সে। হাতের চেটো দিয়ে মুখ মুছে আবারো ইয়োরিকোর দিকে ফিরল।

    “আমাকে বলা হয়েছে মাতসুয়ার নতুন শিক্ষানবিশ ওয়েটার যেদিন কেক কিনতে এসেছিল, তার ঠিক আগের দিন মাতসুয়ার মালিকও এসেছিল সেখানে। একটা নামকরা, বনেদি রেস্তোরাঁর মালিক হিসেবে এলাকার সবাই মোটামুটি আপনার চেহারা চেনে।”

    অ্যাশট্রেতে সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলল ইয়োরিকো

    এই ডিটেকটিভের মাথায় তো আসলেও বুদ্ধি গিজগিজ করে দেখি, ভাবে সে। নিহনবাশির মত ছোট স্থানীয় একটা থানায় সময় নষ্ট করছে কেন, কে জানে! অভিজ্ঞতার ঝুলি নিশ্চয়ই অনেক ভালো এই লোকের।

    মনে মনে নিজেকে অভয় দিল ইয়োরিকো। লুকোছাপার আর

    কোন মানে হয় না।

    “আচ্ছা। তারমানে সুহেই নয়, আমার সাথে দেখা করাটাই মূল লক্ষ্য ছিল আপনার, ডিটেকটিভ কাগা।“

    “সুহেইকেও দরকার ছিল আসলে। আমি ধারণা করেছিলাম আপনার স্বামীর জন্যেই কেকগুলো কিনেছে সে। মাফ করবেন, কিন্তু রেস্তোরাঁয় একমাত্র আপনার স্বামীই সন্ধ্যে বা বিকেলবেলায় কিছু করেন না। তাই সুহেইয়ের সাথে কথা না বললে আন্দাজ করতে পারতাম না কখন ওয়াসাবি পেস্ট মেশানো হয়েছিল কেকটায়।”

    “সেটাও জেনে গেছেন?”

    “মনে তো হয়,” মাথা নেড়ে সায় দিল কাগা। “আপনার স্বামীর হাতে দেয়ার আগে সাধারণত বাইসাইকেলের ঝুড়িতে কেকগুলো রেখে দেয় সুহেই। এই তথ্যটা আগে থেকে জানা থাকলে কেক বদলে দেয়া কোন ব্যাপারই না। কারণ রেস্তোরাঁর পেছনের দিকে সহজে যায় না কেউ। ওই গলিটা একটু নির্জন।”

    প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে ইয়োরিকোর দিকে তাকাল কাগা। “আপনিই ওয়াসাবি মিশিয়েছিলেন, তাই না?”

    “এখন অস্বীকার করাটা সময় নষ্ট বৈ আর কিছু হবে না।”

    “যদি অস্বীকার করেন, তাহলে আপনার আঙুলের ছাপ নিতে বাধ্য হব আমরা। যাতে কন্টেইনারের গায়ে প্রাপ্ত তৃতীয় ছাপটার সাথে মিলিয়ে দেখা যায়।”

    দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরেকটা সিগারেট ধরালো ইয়োরিকো।

    “আপনার কাছে আমি আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি, মি. কাগা। আপনি এতক্ষণ যা যা বলেছেন, একটাও ভুল নয়। কিন্তু আমি যা করেছি, সেটাকে নিশ্চয়ই অপরাধ বলা যাবে না?”

    “অবশ্যই না,” কাগা তাল মেলায়। “প্র্যাকটিকাল জোক বলা যেতে পারে বড়জোর। আপনার স্বামীর প্রেমিকাকে এক হাত নিতে চেয়েছিলেন আর কি।”

    শব্দ করে হেসে উঠোলো ইয়োরিকো। কয়েক দমক সাদা ধোঁয়া বেরিয়ে এলো তার মুখ দিয়ে। “আপনি যে পরিমাণ খোঁজখবর নিয়েছেন, নিশ্চয়ই ওই মেয়েটার ব্যাপারেও সব জানেন।”

    “তাকে খুঁজে বের করতে আসলে খুব বেশি একটা কসরত করতে হয়নি। আপনার স্বামী যে ক্লাব আর বারগুলোয় নিয়মিত যায়, সেগুলোয় ঢুঁ মেরেই পেয়ে গেছি। ওখানকার সবাই আবার পেটের কথা উগড়ে দেয়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকে। মেয়েটার নাম যেন কি? আসামি বোধহয়। গিনজায় একটা ক্লাবে কাজ করে। ভিক্টিম যে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংটায় থাকত, সেখানে একই তলায় অন্য একটা ফ্ল্যাটে থাকে সে।”

    “আস্ত বদ একটা মেয়ে। কিন্তু আমার গর্দভ স্বামী কেন যেন এরকম মেয়েদের প্রতিই আকৃষ্ট হয় প্রতিবার। ওর কি ছেলেমেয়ে আছে নাকি কোন?”

    “হ্যাঁ। এক বছরের একটা মেয়ে।”

    “হারামিটা গুজব রটিয়েছে তাইজি হচ্ছে ওই বাচ্চার বাবা। ঘটে বুদ্ধি আছে এমন যে কেউ বুঝতে পারত মিথ্যে বলছে সে। কিন্তু ও তো দয়ার সাগর। একদম আদর্শ বাবা। তাই সময় পেলেই চলে যায় বাচ্চাটাকে মাথায় তুলে নাচতে। মাসে মাসে তো খরচের টাকাও দেয়।”

    “কি বলতে চাইছেন?”

    “পুরো বিষয়টাই মিথ্যে, বানোয়াট। বেশ কয়েকদিন আগে একজন ডিটেকটিভকে ভাড়া করেছিলাম আমি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার জন্যে। কাজে যাওয়ার আগে প্রতিদিন বাচ্চাটাকে উয়েনোতে একটা লোকের কাছে রেখে যায় সে। ওই হারামজাদাই হচ্ছে বাচ্চার আসল বাবা। মাফ করবেন, একটু বেশিই গালাগাল করে ফেলছি বোধহয়।”

    “তাহলে তারা একসাথে থাকে না কেন?”

    আরে, একসাথে থাকলে তো আমার হতচ্ছাড়া স্বামীর পকেট খসাতে পারবে না। এক না এক সময় তো সত্যটা জানাজানি হয়েই যাবে। তার আগ পর্যন্ত যত টাকা বের করে নিতে পারে তাইজির পকেট থেকে।”

    “তাই তাকে সাবধান করে দেয়ার জন্যে কেকে ওয়াসাবি মিশিয়েছিলেন আপনি?’

    “হাসি ফুটলো ইয়োরিকোর মুখে।

    “আপনি দারুণ বুদ্ধিমান, ডিটেকটিভ কাগা। কিন্তু এই একটা আন্দাজ একটু ভুল করে ফেলেছেন।”

    “ভুল করেছি?”

    “হ্যাঁ। আসলে ওই হতচ্ছাড়া মহিলা নয়, আমি চাইছিলাম আমার গর্দভ স্বামীকে কেকটা খাওয়াতে। বাক্সটায় সাতটা কেক হচ্ছে বিন পেস্ট সহ এবং বাকি তিনটা পেস্ট ছাড়া। এই তিনটা কেক সুহেইকে দিয়ে সে কেনায় নিজের জন্যে। বিন পেস্ট ভালো লাগে না ওর।”

    “আর আপনি সুইট বিন পেস্ট ছাড়া একটা কেকে ওয়াসাবি মিশিয়েছিলেন?”

    অ্যাশট্রেতে সিগারেটের ছাই ঝেরে মাথা নেড়ে সায় দেয় ইয়োরিকো।

    “আমার স্বামীর উচিৎ মাঝে মাঝে মগজটাকে একটু ব্যবহার করা। মানে বাচ্চাটার ব্যাপারে বলছি। তাইজির আসলে বাবা হবার ক্ষমতাই নেই।”

    আরেকটু হলেই গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল কাগার।

    “আসলেই?”

    “তাহলে আর বলছি কি? হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা-টরীক্ষা করে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ওই মহিলাকে কথাটা বলবে না ও। ভয় পায় যে সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবে। তাইজির এটা ভাবতে ভালো লাগে যে কেউ একজন ওর প্রতি নির্ভরশীল। তাছাড়া গোপন একটা সন্তান আছে, এই ফ্যান্টাসিতে ভুগেও নিশ্চয়ই মজা পায়। ভেতরে ভেতরে কিন্তু জানে যে পুরো ব্যাপারটাই ধোঁকা। নিজেকে প্লেবয় ভাবতে ভালোবাসে। বিয়ে করা বউ থাকা সত্ত্বেও বেলেল্লাপনা করে বেড়াচ্ছে, এমনটা জহির করে। আদতে কাপুরুষ ছাড়া কিছু নয় ও। ওই মহিলার সাথে খুব বেশিবার শুতে পেরেছে বলে মনে হয় না।”

    শব্দ করে শ্বাস ছাড়ে কাগা।

    “এজন্যেই আপনার যত ক্ষোভ?”

    “খুশি তো হবার কথা না, তাই না? ও এমন ভাব নেয় যেন আমাকে খুব বোকা বানাচ্ছে। ওয়াসাবির ব্যাপারটা আসলে ওকে শাস্তি দেয়ার জন্যেই। যেমনটা আপনি বলেছিলেন ডিটেকটিভ কাগা, প্র্যাক্টিক্যাল জোক আর কি।”

    “সমস্যাটা হচ্ছে আপনার স্বামীর ধারণাও নেই যে তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে! ওয়াসাবি ফ্লেভারের কেক সম্পর্কেও কিছু জানে না। আর এটাও বোধহয় তার জানা নেই যে কেকগুলো ক্রাইম সিনে পাওয়া গেছে।”

    “এটাই আমার মাথায় ঢুকছে না। কেকগুলো ওখানে গেল কি করে?”

    শুকনো হেসে কয়েকদিনের দাড়ি না কামানো গাল চুলকাতে লাগল কাগা।

    “আসামিকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম আমি। ভিক্টিমকে কেকগুলো দিয়ে দেয়ার কথাটা স্বীকার করেছে সে। তবে তাকে কেকগুলো কে দিয়েছে, এটা বলেনি। কেন বলেনি, বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়ই। শুধু বলেছিল ‘বারের ভালো একজন কাস্টোমারের কাছ থেকে পেয়েছি।’”

    “দিয়ে দিয়েছিল কেন কেকগুলো?”

    “কারণ…” ভ্রু কুঁচকে গেল কাগার। যেন বুঝতে পারছে না কথাটা কিভাবে বলবে। “কারণ ওগুলো আসলে পছন্দ নয় তার।”

    “কি!”

    “হ্যাঁ। তার নাকি জাপানিজ কোন মিষ্টান্নই ভালো লাগে না। বিন পেস্ট থাকুক বা না থাকুক, কোন প্রকার জাপানিজ কেক খায় না সে। আপনার স্বামী একবার তাকে কেকের একটা কন্টেইনার কিনে দেয়। তখন ভদ্রতার খাতিরে ‘ভালো লেগেছে’ বলেছিল। আর সেটাই কাল হয়েছে। এরপর থেকে যতবার দেখা হয়, আসামির জন্যে কেক নিয়ে যায় আপনার স্বামী। বিষয়টায় সে এতই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল যে সেদিন মি. তাইজি চলে আসার পরপরই প্রতিবেশীকে দিয়ে দেয় ওগুলো। দেয়ার সময় কেকগুলো পেস্ট্রি শপটার ব্যাগের ভেতরে ছিল। এজন্যেই কন্টেইনারের গায়ে আপনার, আপনার স্বামীর বা সুহেইয়ের ছাপ পাইনি আমরা।”

    “আসলেই তাইজিকে মহা বোকা বানাচ্ছে ওই মহিলা!” কপাল চাপড়ে বলে ইয়োরিকো। “মানে আপনি বলতে চাইছেন যে কেকগুলো না খুলেই দিয়ে দেয় সে? কি আর বলবো! এরকম একটা গর্দভের সাথে বাকি জীবন কাটাতে হবে আমার ভাবলেই কেমন যেন লাগে। সুহেইকে বলতে হবে যেন ওর জন্যে আর কেক না কিনে আনে।”

    “ওহ, ভাল কথা। সুহেইয়ের জন্যে খারাপই লাগছে আমার। তার সাথে বোধহয় একটু বেশি বেশিই করে ফেলেছিলাম। ছেলেটা ভাল; এত কিছুর পরেও কিন্তু স্বীকার করেনি যে কেকগুলো আপনার স্বামীর অনুরোধে কিনে আনত।”

    “মাতসুয়া দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সদস্য ও। যে কেউ রান্না শিখতে পারে, কিন্তু মুখ বন্ধ রাখতে শেখা সবাইকে দিয়ে হয় না। আমাদের ব্যবসার লাইনে এরকম মানুষ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

    “ওর উদ্দেশ্যে একটা টোস্ট করা যাক! আশা করি মাতসুয়ার ভবিষ্যত তার হাতে নিশ্চিন্তে সঁপে দিতে পারবেন আপনি।”

    “যদি না তার আগে আমার গর্দভ স্বামীর কারণে পথে না বসতে হয়!”

    ওয়েটারকে ডাকার জন্যে হাত উঁচু করলো ইয়োরিকো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো
    Next Article রিং – কোজি সুজুকি

    Related Articles

    ইশরাক অর্ণব

    রিং – কোজি সুজুকি

    July 11, 2025
    ইশরাক অর্ণব

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.