Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ০১. আমি স্বপ্ন দেখছিলাম

    নিউ মুন / মূল : স্টেফিন মেয়ার / অনুবাদ : প্রিন্স আশরাফ

    “অসম চরিত্রের ভালবাসা আবর্তিত হয়েছে গোটা উপন্যাস ঘিরে।
    অসম চরিত্রের দুই তরুণ-তরুণী, এ্যাডওয়ার্ড ও বেলা একে অপরের ভালবাসার আবর্তে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। ফরকস নামক ছোট্ট শহরে তাদের ভালবাসা নিয়ে ঘটতে শুরু করছে ঘটনার জাল।
    বেলার জন্মদিনে ছোট্ট একটু রক্তপাত থেকে শুরু হয়েছে ঘটনার সূত্রপাত। রক্তপিপাসু ভ্যাম্পায়ার পিপাসার্ত হয়ে বেলার উপর বসাতে চেয়েছে মরণ কামড়। এডওয়ার্ডকে সপরিবারে শহর ছাড়তে হয়েছে। নিঃসঙ্গ বেলার দুঃসময়ের সাথী হয়েছে জ্যাকব ব্লাক। নেকড়েমানব। ভালবেসে ফেলেছে বেলাকে। নেকড়েমানবদের জাতশত্রু ভ্যাম্পায়ার। এ্যাডওয়ার্ড হয়ে পড়ছে জ্যাকবের চরমশত্রু। এর মধ্যে পিছু নিয়েছে ভিক্টোরিয়া। তার প্রেমিককে এ্যাডওয়ার্ড হত্যা করেছিল। সেও বেলাকে হত্যা করে সেই প্রতিশোধ তুলবে। তাড়া করেছে বেলাকে… এটা শুধু ভ্যাম্পায়ার বা নেকড়েমানবের কাহিনী নয়– ভালবাসা, প্রতিশোধ, লোভ নিয়ে গড়া এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করার মত মন্ত্রমুগ্ধকর কাহিনী…”

    ০১.

    আমি নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই ভাগ নিশ্চিত, আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।

    স্বপ্নের ব্যাপারে এতটা নিশ্চিত ছিলাম তার যথেষ্ট কারণ ছিল। প্রথমত, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম উজ্জ্বল সূর্যালোকের নিচে। এই রকম উজ্জ্বল সূর্যালোক আমাদের নতুন হোমটাউন বৃষ্টিস্নাত ওয়াশিংটনের ফরকসে অসম্ভব ছিল। দ্বিতীয়ত, আমি আমার দাদীমা মেরিকে দেখেছিলাম। দাদীমা এখন থেকে বছর ছয়েক আগে গত হয়েছেন। স্বপ্নের ব্যাপারে এর চেয়ে নির্ভেজাল যুক্তি আর কী থাকতে পারে?

    দাদীমার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। মুখটা আমার যেমনটি মনে পড়ে তেমনটিই আছে। মুখের নরম চামড়াগুলো কুঁচকানো, হাজারটা ভাঁজে ভাঁজ হয়ে হাড়ের উপর লেপ্টে আছে। যেন একটা শুকনো এপ্রিকট ফল। কিন্তু তার মাথার উপরে সাদা মেঘের মত এক পশলা ঘন সাদা চুল।

    আমাদের দুজনের মুখেই একই সাথে হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল। দাদীমার বিস্মিত হাসিমুখ দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

    তার কাছে আমার একটি প্রশ্ন ছিল। একটি নয়-আসলে অনেকগুলোই। তিনি আমার সপ্নের ভেতরে এখানে কি করছেন? বিগত ছবছর তিনি কীভাবে কাটিয়েছেন? দাদামশাই ভাল আছেন? তারা কি একে অন্যকে খুঁজে পেয়েছেন? তারা এখন কোথায়? কিন্তু আমি প্রশ্ন করার আগেই দাদীমা মুখ খুললেন। কাজেই আমি থেমে তাকে আগে বলতে দিলাম। তিনিও থামলেন। একই সাথে। আমরা দুজনেই হেসে উঠলাম।

    বেলা?

    দাদীমা আমার নাম ধরে ডাকেনি। আমাদের ছোট্ট পুর্নমিলনীতে আবার নতুন কে এল দেখতে আমরা ডাকের উৎসের দিকে ফিরে তাকালাম। কার কণ্ঠস্বর আমার দেখার দরকার ছিল না। এই কণ্ঠস্বর আমি সর্বত্র শুনতে পাই। জানি সর্বত্র আছে। আমি সাড়া দেই। তা আমি জেগে থাকি কিংবা ঘুমিয়ে…। এমনকি মৃত্যুর মধ্যেও। আমি বাজি ধরতে পারি। এই কণ্ঠস্বর আমার সাথে সাথেই থাকে। আরেকটু কম নাটকীয়ভাবে বললে, প্রতিটি দিনই শুনতে পাই, তাই সে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা কিংবা অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মাঝেও হোক না কেন।

    এ্যাডওয়ার্ড।

    আমি সবসময়ই তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠি। এমনকি এখন এই স্বপ্নের ভেতরেও আমি উত্তেজিত। তখনও পর্যন্ত আমি নিশ্চিত যে আমি স্বপ্নই দেখছিলাম। আমি আতংকিত হয়ে পড়লাম। এ্যাডওয়ার্ড উজ্জ্বল সূর্যালোকের ভেতর দিয়ে আমাদের দিকে হেঁটে আসছিল।

    আমি আতংকিত। কারণ দাদীমা জানতেন না আমি ভ্যাম্পায়ারের প্রেমে পড়েছি। কেউ জানত না। সে কারণেই আমি জিনিসটা ব্যাখ্যা করতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি কীভাবে ব্যাখ্যা করতাম যখন উজ্জ্বল সূর্যরশ্মি তার শরীরের উপর পড়ে সহস্র রঙধনু তৈরি করছিল। যেন সে ক্রিস্টাল বা ডায়মন্ডের তৈরি।

    বেশ, দাদীমা, তুমি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবে আমার প্রেমিক জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। সূর্যালোকে সে জ্বলজ্বল করে। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না…

    সে কি করছিল? সমস্ত সময়টা সে ফরকসে বাস করত। ফর্ক পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোর অন্যতম। সে কারণে সে দিনের বেলা তার পরিবারের গোপনীয়তা প্রকাশ না করেই বাইরে বের হতে পারত। এখনও পর্যন্ত এই যে এখানে, সে সরাসরি আমার দিকেই আসছে। তার স্বর্গীয় মুখে সবচেয়ে সুন্দর হাসি ফুটিয়ে তুলেছে। যেন এখানে একমাত্র আমিই আছি।

    এক মুহূর্তের জন্য, আমি আশা করলাম তার রহস্যময় প্রতিভার ব্যতিক্রমের মধ্যে শুধু আমি নই। আমি স্বাভাবিকভাবেই কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম। আমিই একমাত্র ব্যক্তি যার চিন্তাচেতনা সে শুনতে পাচ্ছে না। যা নিয়ে তারা জোর আলোচনা করছে। কিন্তু এখন আমি আশা করছি সে আমাকে শুনতে পাবে। অবশ্যই। যাতে সে সেই সতর্ক সংকেত শুনতে পায়। যেটা আমি মনে মনে চিৎকার করছি।

    এক পলকের জন্য দাদীমার দিকে তাকালাম। দেখলাম দেরি হয়ে গেছে। তিনি আমার কাছে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার চোখ আমার মতই সতর্ক।

    এ্যাডওয়ার্ড–এখনও আমার দিকে সেই অদ্ভুত সুন্দর হাসি হেসে চলেছে। আমার মনে হলো আমার হৃৎপিণ্ড ভেসে উঠছে এবং আমার বুকের ভেতর বিস্ফোরিত হতে চলেছে। সে তার হাত আমার কাঁধে রাখল। তারপর সে দাদীমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল।

    দাদীমার অভিব্যক্তি আমাকে বিস্মিত করছিল। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকানোর পরিবর্তে তিনি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালেন। যেন বকাবকির জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি খুব অদ্ভুত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন। একহাত কিছুটা বেঁকিয়ে টান টান করে বাড়িয়ে দিয়েছেন। যেন তার অন্যহাত আরেকজনের কাঁধে। যাকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। অদৃশ্য কেউ….

    শুধুমাত্র তার পরে, যখন আমি বড় ছবিটার দিকে তাকালাম, আমি লক্ষ্য করলাম বিশালকার স্বর্ণখচিত ফ্রেমের মধ্যে দাদীমার ছবি। এ্যাডওয়ার্ডের কোমর থেকে মুক্ত হাতটা তুললাম। দাদীমাকে স্পর্শ করার জন্য এগিয়ে গেলাম। তিনি ঠিক সেই রকমভাবে নড়াচাড়া অনুকরণ করলেন। যেন আয়নার প্রতিবিম্ব। কিন্তু যখন আঙুলগুলো তার উপর ছোঁয়ালাম, সেখানে ঠাণ্ডা কাঁচ ছাড়া কিছুই ছিল না…

    গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ধাক্কায়, আমার স্বপ্ন অস্বাভাবিকভাবে দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো।

    সেখানে দাদীমা ছিল না।

    সেটা আমিই ছিলাম।

    আমি আয়নার মধ্যে।

    আমি-বৃদ্ধা, তোবড়ানো, কুঁচকানো, শুষ্ক, স্নান।

    এ্যাডওয়ার্ড আমার পাশে বসে ছিল। কোন রকম প্রতিক্রিয়াহীন। ভালবাসাময়। সবসময়ই সতেরো বছরের।

    সে তার বরফের মত ঠাণ্ডা, নিশ্চল ঠোঁটজোড়া আমার তোবড়ানো গালে ছোঁয়াল। শুভ জন্মদিন। সে ফিসফিস করে বলল।

    .

    আমি জেগে উঠলাম। আমার চোখের পাতা খুলে গেল। বিষণ্ণ ধুসর আলো। পরিচিত আলো যা মেঘাচ্ছন্ন সকালে দেখা যায়, যেটা আমার স্বপ্নের উজ্জ্বল সূর্যালোককেও দখল করে নিয়েছে।

    শুধুই একটা স্বপ্ন, আমি নিজেকে বললাম, এটা শুধুই একটা স্বপ্ন। আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। তারপর লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম যখন আমার এ্যালার্ম বন্ধ হয়ে গেল। ঘড়ির পাশে ছোট্ট ক্যালেন্ডার। সেটা জানিয়ে দিল আজ তেরই সেপ্টেম্বর।

    শুধু মাত্র একটা স্বপ্ন। কিন্তু যথেষ্টই ভবিষ্যদ্রষ্টা। আজ আমার জন্মদিন। অফিসিয়ালভাবে আজ আমি আঠারো বছরের যুবতী।

    আমি এই দিনের জন্য কয়েকমাস ধরে অপেক্ষা করছিলাম।

    এই গ্রীষ্মে আমি সুখীই ছিলাম। সবচেয়ে সুখী ছিলাম এই গ্রীষ্মে যেকোন জায়গায় যেকোন জনের চেয়ে। অলিম্পিক পেনিনসুলার ইতিহাসে সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল গ্রীষ্ম। এই বিবর্ণ দিনগুলো গা ঢাকা দিয়ে ছিল। বসন্তের জন্য অপেক্ষা করছিল।

    এবং এখন এটা সত্যি এসে গেছে। আমি যতটা ভয় করছিলাম এটা তার চেয়ে ভীতিকর ছিল। আমি এটা অনুভব করতে পারতাম আমি বড় হয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিদিনই আমি বড় হয়ে উঠছিলাম। কিন্তু এটা ছিল ভিন্ন। খারাপ। গণনাযোগ্য। আমি আঠারোয় পড়েছি।

    এবং এ্যাডওয়ার্ড কখনই তা হবে না।

    দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে আমি বিস্ময়াভূত অবস্থায় ছিলাম। আয়নায় দেখলাম আমার মুখ পরিবর্তন হয় নাই। আমি নিজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। দেখছিলাম আমার মসৃণ কপালের উপর কিছু ভাজের আনাগোনা। একটা মাত্র ভাঁজ আমার কপালের উপর ছিল। আমি জানতাম যদি রিলাক্স হয়ে থাকি এটা চলে যাবে। আমি রিলাক্স হতে পারছিলাম না। আমার ভ্র দুশ্চিন্তায় কুঁচকে চোখের উপর রেখা তৈরি করছিল।

    এটা শুধুমাত্র একটা স্বপ্ন ছিল, আমি নিজেকে আবার মনে করিয়ে দিলাম। শুধু একটা স্বপ্ন…কিন্তু এটা আমার জীবনের জঘন্যতম দুঃস্বপ্ন।

    সকালের নাস্তা বাদ দিলাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছি। বাবাকে এড়িয়ে এটা প্রায় সম্ভবই না। কাজেই আমি কয়েক মিনিট হাসিখুশি ভাবের অভিনয় করে কাটালাম। আমি জন্মদিনের উপহারগুলো দেখে সত্যিকারের উচ্ছ্বসিত হতে চেয়েছিলাম। আমি বাবাকে ওগুলো দিতে নিষেধ করি। কিন্তু প্রতিবার আমি হাসি। কিন্তু আমি অনুভব করছিলাম আমি কেঁদে ফেলব।

    স্কুলের মধ্যেও মুখের দুঃখী ভাব তাড়াতে পারছিলাম না। দাদীমাকে দেখার স্মৃতি ভুলতে পারছিলাম না। আমি ভাবতে পারছিলাম না এটা আমি ছিলাম। সত্যি এটা আমার মাথা থেকে তাড়ানো কঠিন ছিল। আমি কোন কিছুই অনুভব করছিলাম না। কিন্তু ঠিকই সে অবস্থাতে ফর্ক হাইস্কুলের পেছনের পার্কিং পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে এলাম। দেখলাম এ্যাডওয়ার্ড তার পোলিশ সিলভার ভলভো থেকে বেরিয়ে আসছে। আমার মনে হল সে যেন প্যাগান দেবতার মত পাথুরে সৌন্দর্য নিয়ে ভুলে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে। স্বপ্নে তাকে সুবিচার করা হয়নি। এখানে সে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রতিটি দিন সে যেমনটি করে।

    দুঃখবোধ কিছুক্ষণের জন্য উধাও হয়ে গেল। তার বদলে বিষ্ময় জায়গা দখল করল। আধাঘণ্টা তার সাথে কাটানোর পরেও এখনও বিশ্বাস করতে পারি না আমি এই সৌভাগ্যের প্রতীককে আমি পেয়েছি।

    তার বোন এলিস তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার জন্য সেও অপেক্ষা করছিল।

    অবশ্যই এ্যাডওয়ার্ড এবং এলিস একইরকম ছিল না। (গল্পটা এখানে এমন প্রচলিত ছিল, কুলিনের এই ছেলেমেয়েগুলো পালিত। তাদের বাবা ডা, কার্লিসল কুলিন এবং তার স্ত্রী, এসমে দুজনেই এতটাই তরুণ যে এরকম টিনএজ ছেলেমেয়ে থাকা তাদের পক্ষে অসম্ভব।) কিন্তু তাদের দুজনেরই চামড়া একইরঙের, ফিকে ম্লান। তাদের চোখজোড়া একই রকমের সোনালি, একই গভীরতার, চোখজোড়ার উপর ব্রাশের মত জ্বর ছাউনি। এলিসের মুখও খুবই সুন্দর। আমার মত যে কারোর কাছেই তাদের এই সাদৃশ্যগুলো চোখে পড়ার মত ছিল।

    এলিস একদিকে অপেক্ষা করছিল। তার চোখজোড়া উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করছে। একটা চারকোণা রুপালি কাগজে মোড়া বক্স তার হাতে। যেটা দেখে ভ্রুকুটি করলাম। আমি এলিসকে বলেছিলাম আমার কিছুই চাই না। কিছুই না। কোন উপহার নয়। এমনকি আমার জন্মদিনের ব্যাপারটাতে মনোযোগ না দিতে। বেশ বোঝাই যাচ্ছে সে আমার ইচ্ছেগুলোকে এড়িয়ে গেছে।

    আমি দড়াম করে গাড়ির দরজা লাগালাম। ধীরে ধীরে ওরা যেখানে অপেক্ষা করছে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। এলিস আমার সাথে দেখা করার জন্য লাফিয়ে এগিয়ে এলো। তার খুশিভরা মুখ তার কালো স্পাইকি চুলের নিচে হাসছিল।

    শুভ জন্মদিন, বেলা!

    শশশ! আমি হিসহিস করে উঠলাম। চকিত চাহনিতে বুঝিয়ে দিলাম আমি নিশ্চিত হতে চাচ্ছি কেউ যাতে ব্যাপারটা না শোনে।

    এলিস আমাকে উপেক্ষা করল। তুমি কি তোমার উপহার এখনই খুলতে চাও? নাকি পরে? সে উৎসুক্যের মত আমাকে জিজ্ঞেস করল। এ্যাডওয়ার্ড যেখানে অপেক্ষা করছিল সেদিকে আমরা এগিয়ে গেলাম।

    কোন উপহার নয়। আমি বিড়বিড় করে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলাম।

    এলিস শেষ পর্যন্ত আমার অভিব্যক্তি ধরতে পারল। ঠিক আছে, পরে, তারপর। তোমার মা যে স্ট্র্যাপবুক পাঠিয়েছে সেটা কি তুমি পছন্দ করো না? আর তোমার বাবার থেকে আসা ক্যামেরাটা?

    আমি লজ্জ্বিত হলাম। অবশ্যই সে জানত আমার জন্মদিনের উপহার কি। এ্যাডওয়ার্ডই তার পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি নয় যার এসব জানার ব্যাপারে অস্বাভাবিক দক্ষতা ছিল। এলিসও হয়তো আগেই দেখে থাকবে যা আমার পিতা-মাতা আমাকে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে।

    হ্যাঁ। সেগুলো সত্যিই পছন্দনীয়।

    আমি মনে করি এটা একটা সুন্দর আইডিয়া। তুমি এখন কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক একজন। এই অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে যথেষ্ট প্রমাণপত্র আছে।

    সিনিয়র হতে তোমার এখনও কত বছর লাগবে?

    সেটা আলাদা কথা।

    তারপর আমরা এ্যাডওয়ার্ডের কাছে পৌঁছুলাম। সে আমার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিল। আমি আগ্রহভরে ওর হাতটা নিলাম। এক মুহূর্তের জন্য আমার বিষণ্ণ গোমড়া অবস্থার কথা ভুলে গেলাম। তার তৃক বরাবরের মত মসৃণ, পাথুরে এবং বরফ শীতল। সে আমার আঙুলে মৃদু চাপ দিতে লাগল। আমি তার ধারালো স্বচ্ছ চোখের দিকে তাকালাম। আমার হৃৎপিণ্ড খুব শান্তভাবে চলছিল না। আমার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ শুনে, সে আবার হাসল।

    সে তার খোলা হাত তুলল। কথা বলার সময় তার ঠাণ্ডা আঙুলের ডগা দিয়ে সে আমার ঠোঁটের উপর চেপে ধরল, তো, যেটা আগে থেকে বলে রেখেছ, আমি তোমাকে শুভ জন্মদিনের উইশ করার জন্য অনুমতি পাব না। আমি কি ঠিক বলিনি?

    হ্যাঁ। ঠিকই বলেছ। আমি কখনও তার সঠিক উচ্চারণের অনুকরণ করতে পারি না। এটা এমন কিছু যা বিগত শতাব্দিতে অর্জিত হয়েছে।

    শুধু পরখ করে দেখছি। সে তার হাত মাথার রুপালি চুলের মধ্যে চালাল। তুমি সম্ভবত তোমার মানসিকতা পরিবর্তন করবে। অধিকাংশ লোক জন্মদিনের আনন্দ ও উপহার উপভোগ করে।

    এলিস হাসছিল। শব্দটা ঝংকারের ন্যায় বাজছিল। অবশ্যই তুমি এটা উপভোগ করবে। সকলেই আজকের দিনের জন্য তোমার প্রতি সদয় হবে। তোমাকে তোমার মত আনন্দ করতে দেবে, বেলা। সবচেয়ে খারাপ তাহলে কি ঘটতে পারে? সে আলংকারিক বাগ্মিতার সাথে প্রশ্নটা করল।

    বড় হয়ে যাচ্ছি। আমি কোনমতে উত্তর দিলাম। আমার কণ্ঠস্বর ততটা শান্ত ছিল না যেমনটি আমি চাইছিলাম।

    পাশাপাশি এ্যাডওয়ার্ডের হাসি আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছিল না।

    আঠারো খুব বেশি বড় নয়। এলিস বলল। মেয়েরা সাধারণত উনত্রিশ হওয়া পর্যন্ত জন্মদিনকে হতাশার দিকে নিয়ে যায় না।

    আমি এ্যাডওয়ার্ডের চেয়ে বড়। আমি গুনগুন করে উঠলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড লজ্জিত হলো।

    টেকনিক্যালি, এলিস বলল, তার কণ্ঠস্বর একই রকম রেখে, শুধুমাত্র একটি বছরের, যদিও।

    আমি আশা করলাম… যদি আমি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারতাম! আমি চাইতাম, নিশ্চিত হতে আমি সারাজীবনের জন্য এ্যাডওয়ার্ডের সাথে কাটাতে। এলিস এবং অন্যান্য কুলিনদের সঙ্গে…তারপর এক বছর অথবা দুই বছর আমার কাছে কোন ব্যাপারই হতো না। কিন্তু এ্যাডওয়ার্ড আমার সেই ভবিষ্যতের ঘোর বিরোধী। যেকোন ভবিষ্যৎ যা আমাকে তার মত অমরও করে রাখবে।

    এই দুবোর্ধ অবস্থায় সে আমাকে ডাকল।

    সত্যি বলতে কি, আমি সত্যিই এ্যাডওয়ার্ডের বিষয়টা ধরতে পারছিলাম না। মৃত্যুর মধ্যে কি এমন মহত্ব থাকে? একজন ভ্যাম্পায়ার হওয়া মানেই ভয়ংকর কিছু অর্জিত হওয়া নয়। যেভাবে কুলিনরা ভ্যাম্পায়ার হয়েছে সেভাবে।

    কোন সময় তুমি বাড়িতে থাকবে? এলিস বিষয় পরিবর্তন করার জন্য বলল। তার অভিব্যক্তি থেকে বোঝা যায়, যেসব বিষয় আমি এড়িয়ে যেতে চাই সেটা নিয়ে সে ঘাটাতে চায় না।

    আমি জানি না। আমার বাসায় থাকার পরিকল্পনা আছে।

    ওহ, ঠিকঠাক বলো, বেলা! সে অভিযোগের সুরে বলল। তুমি আমাদের সকল মজা এভাবে শেষ করে দিতে পার না?

    আমি ভাবছিলাম আমার জন্মদিন আমি যেমনটি চাই তেমনটি হবে।

    আমি স্কুলের পরে বেলাকে ওর বাবার ওখান থেকে তুলে নেব। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে তোয়াক্কা না করেই তাকে বলল।

    আমার কাজ আছে। আমি প্রতিবাদ করলাম।

    সত্যিকার অর্থে, তোমার কোন কাজ নেই। এলিস আমাকে ধোকা দিল। আমি এর মধ্যেই মিসেস নিউটনের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছি। তিনি তোমার শিফট পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তিনি আমাকে তোমার শুভ জন্মদিন জানিয়ে দিতে বলেছেন।

    আমি-আমি- আমি এখানো শেষ করি নি। ওর কথা শুনে আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম, একটা অজুহাত হাতড়াতে লাগলাম। আমি, বেশ, আমি এখনও ইংলিশের জন্য রোমিও জুলিয়েট দেখি নাই।

    এলিস নাক টানল। তোমার রোমিও জুলিয়েট স্মরণে আছে।

    কিন্তু মি. বের্টি বলেছেন, আমাদের পারফর্মের জন্য এটা পুরোপুরি দেখা উচিত। তারপর শুধু শেক্সপিয়ার উপস্থাপনের যোগ্য হতে পারে।

    এ্যাডওয়ার্ড তার চোখ ঘোরাল।

    তুমি এর ভেতরে ছবিটা দেখেছো। এলিস আমাকে অভিযুক্ত করল।

    কিন্তু সেটা উনষাটের ভারশন নয়। মি, বের্টি বলেছেন সেটাই সর্বোত্তম।

    শেষ পর্যন্ত, এলিস তার ধোকাবাজ হাসি বন্ধ করল। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এটা একদিকে সহজ হতে পারে। আবার অন্যদিকে কঠিন, বেলা। কিন্তু একদিকে অথবা অন্যদিকে…

    এ্যাডওয়ার্ড এলিসের কথায় বাধা দিল। রিলাক্স এলিস। যদি বেলা ছবি দেখতে চায়, তাহলে সে অবশ্যই দেখতে পারে। এটা তার জন্মদিন।

    সেইটাই। আমি যোগ করলাম।

    আমি তাকে সাতটার দিকে তুলে নেব। সে বলে চলল, সেটা তোমার গুছিয়ে নেয়ার জন্য অনেকটা সময় দেবে।

    এলিসের হাসি আবার ঝংকার তুলল। বেশ শোনাচ্ছে। আজ রাতে দেখা হবে, বেলা! এটা বেশ মজার হবে। তুমি দেখো। সে দাঁত বের করে কপট হাসি দিল। চওড়া হাসিতে তাকে পরিপূর্ণ দেখায়। তারপর আমার চিবুক ধরে নাড়া দিল। আমি কিছু বলার আগে তার প্রথম ক্লাসের দিকে রওনা দিল।

    এ্যাডওয়ার্ড, প্লিজ… আমি কাতর হয়ে পড়ছিলাম, কিন্তু সে তার ঠাণ্ডা আঙুল আমার ঠোঁটে চেপে ধরল।

    এটা নিয়ে পরে আলোচনা করি, কেমন। আমাদের ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।

    ক্লাসরুমে আমাদের প্রতিদিনকার নির্দিষ্ট সিট পেতে কেউ বিরক্ত করল না। এ্যাডওয়ার্ড আর আমি প্রতি ক্লাসেই একত্রে বসি। আমরা দুজনে এত দীর্ঘ সময়ে একত্রে থাকি যে আমাদের নিয়ে ইতোমধ্যে গালগল্পের বিষয় তৈরি হয়েছে। এমনকি মাইক নিউটনও তার প্রতারণাময় হাসি দিয়ে আমাকে বিরক্ত করেনি, যাতে আমি নিজেকে দোষী মনে করি। সে তার পরিবর্তে এখন হাসে। আমি খুশি যে আমরা দুজন এখন শুধুমাত্র ভাল বন্ধুই। মাইক গ্রীষ্মেই পরিবর্তিত হচ্ছিল। তার মুখ গোলাকৃতি রুপ হারাচ্ছিল। তার চিবুকের হাড় উঁচু হয়ে উঠেছে। সে তার ধুসর বর্ণের চুলগুলো অন্যভাবে আঁচড়েছে। এটা সহজেই বোঝা যায় কোথা থেকে তার উৎসাহ এসেছে। কিন্তু এডওয়ার্ডের চেহারায় সেরকম পরিবর্তন নেই যা কাউকে দেখে অনুকরণ করা যায়।

    কুলিন হাউজে আজ রাতে কি হতে যাচ্ছে সেটা আমি ধারণা করতে পারছি। অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য এটা খুব খারাপ হবে যখন আমি শোকসভা করতে যাচ্ছি। কিন্তু তার চেয়ে খারাপ হলো, সেখানে আমিই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকব। এবং উপহারেরও।

    মনোযোগ কখনও ভালো কোন জিনিস নয়। যেকোন দুর্ঘটনা কবলিত লোকই সেটা স্বীকার করবে। তাদের মুখের উপর স্পটলাইটের আলো পড়ক কেউ সেটা চায় না।

    আমি যেভাবে চেয়েছিলাম–এ বছর কেউ আমাকে কোন উপহার দেবে না। এটা দেখে মনে হয় বাবা ও মা রেনে একমাত্র মানুষ নয় যারা বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখেছে।

    আমার কখনই অনেক টাকা ছিল না। সেটা আমাকে বিব্রত করে না। মা রেনে আমাকে কিন্ডারগার্ডেনের টিচারের বেতন জোগাড় করে দিয়েছিল। চার্লি তার চাকরিতে অধিক উপার্জন করতে পারতেন না। তিনি ছিলেন এই ছোট্ট ফর্ক টাউনের পুলিশ প্রধান। আমার একমাত্র উপার্জন আসত আমার সপ্তাহে তিনদিনের উপার্জনের থেকে। একটা খেলাধুলার সামগ্রী বিক্রির দোকানে কাজ করে। এই ছোট্ট শহরে কাজ খুঁজে পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবর্তী ভাবতাম। প্রতিটি পয়সা আমি কলেজের ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থায় জমাতাম।

    এ্যাডওয়ার্ডের প্রচুর টাকাপয়সা আছে। সেটা যে কত তা নিয়ে আমি চিন্তাও করতে চাই না। প্রচুর অর্থবিত্ত এ্যাডওয়ার্ডের কাছে কিছু নয়। যেমনটি নয় অন্যান্য কুলিনদের কাছেও। এ্যাডওয়ার্ড বুঝতে পারত না কেন আমার পিছনে আমি তাকে অর্থ খরচ করতে দেই না। যদি সিয়াটলের কোন অভিজাত রেস্তোরাঁয় সে আমার পিছনে খরচ করে তাহলে কেন আমি অস্বস্তিবোধ করি। ঘণ্টায় পঞ্চান্ন মাইল বেগে চলে এমন গাড়ি কেন আমার জন্য কিনে দিতে আমি তাকে অনুমতি দেই না। কেন আমি আমার কলেজের টিউশন ফি তাকে দিতে দেই না। এ্যাডওয়ার্ড মনে করে আমি অপ্রয়োজনীয়ভাবে কঠিন চরিত্রের মেয়ে।

    কিন্তু কীভাবে আমি তাকে এত সবকিছু করতে দেব যেখানে বিনিময়ে আমি তাকে কিছুই দিতে পারব না? সে মাঝে মাঝে দূবোধ কারণে আমার সাথে থাকতে চায়। যা কিছু সে আমাকে দেয় না কেন সেটা আমাদের দুজনকেই ভারসাম্যহীন করে তোলে।

    সময় কাটতে লাগল। এ্যাডওয়ার্ড বা এলিস কেউ আবার আমার জন্মদিনের উপহার নিয়ে এল না। আমি কিছুটা স্বস্তিবোধ করা শুরু করলাম।

    আমরা আমাদের নির্দিষ্ট টেবিলে লাঞ্চের জন্য বসলাম।

    অদ্ভুত একটা নিরবতা আমাদের টেবিলে বিরাজ করছিল। আমরা তিনজন এ্যাডওয়ার্ড, এলিস এবং আমি টেবিলের দক্ষিণ দিকে বসেছিলাম। আমার অন্যান্য বন্ধুরা, মাইক এবং জেসিকা, এঞ্জেলা এবং বেন, এরিক, কনার, টেইলার, লরেন তারা একই টেবিলের অন্য পাশে বসেছিল।

    এ্যাডওয়ার্ড ও এলিস এই ছোটখাট অস্বস্তিকর অথবা বিব্রতকর ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। তারা খুব কমই এটা লক্ষ্য করে থাকে। লোকজন সবসময় কুলিনদের উপস্থিতিতে একটু অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। কোন অজ্ঞাত কারণে তারা ভয় পেতে থাকে। যেটার কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে না। কোন কোন সময় এটা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ্যাডওয়ার্ডের সাথে কত আরামদায়ক সহজভাবে আমি থাকি। সেভাবে আমার স্বাস্থ্যের জন্য সে ঝামেলাপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই জাতীয় মতামত দেয়া শুরু করলেই আমি তাকে থামিয়ে দেই।

    বিকেলটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। স্কুল শেষ। এ্যাডওয়ার্ড প্রতিদিনকার মত আমার সাথে সাথে আমার গাড়ির কাছে এল। কিন্তু আজকে সে প্যাসেঞ্জারের দরজা আমার জন্য খুলে ধরল। এলিস অবশ্যই তার গাড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যাবে। সে কারণেই সে এটা থেকে আমাকে বঞ্চিত না করে সাথে সাথে আসছে।

    আমি কনুই ভাঁজ করলাম। বাইরের বৃষ্টির জন্য কোন নড়াচড়া করলাম না। এটা আমার জন্মদিন। আমি কি আজ চালাতে পারব না?

    আমি অনুমান করছি এটা তোমার জন্মদিন নয়, যেভাবে তুমি পালন করতে চেয়েছো।

    যদি এটা আমার জন্মদিন না হয়, তাহলে আজ রাতে আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি না।

    ঠিক আছে। সে প্যাসেঞ্জারের দরজা বন্ধ করে দিল। আমার পাশে এলো ড্রাইভারের দরজাটা খোলার জন্য। শুভ জন্মদিন।

    শশশ, আমি ফিসফিস করলাম। আমি দরজা খোলার জন্য এগুলাম। আশা করলাম সে অন্য অফারটা গ্রহণ করবে।

    এ্যাডওয়ার্ড রেডিও চালিয়ে দিল। আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। সে রেডিওর তালে মাথা ঝাঁকাল না। পছন্দ হয়নি।

    তোমার রেডিওর ভয়ংকর অবস্থা।

    আমি ভ্রু কুঁচকালাম। যখন সে আমার গাড়িতে থাকে তখন আমি এসব পছন্দ করি না। আমার মোটরলরি আমার খুবই পছন্দের। এটার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে।

    তুমি কি সুন্দর একটা স্টেরিও চাও? তাহলে তোমার নিজের গাড়ি চালাওগে যাও। এলিসের পরিকল্পনায় আমি এতটাই নার্ভাস ছিলাম আমার এই গোমড়া অবস্থার মধ্যেও যে কথাগুলো আমি যতটা নরম স্বরে বলতে চেয়েছিলাম তার চেয়ে কঠোর শোনাল। আমি এডওয়ার্ডের উপর খুব কমই মেজাজ দেখাই। আমার কণ্ঠস্বরে তার ঠোঁট থেকে হাসি উবে গেল।

    আমাদের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করলাম। সে তার হাতের মধ্যে আমার মুখখানি তুলে ধরল। সে খুব সর্তকতার সাথে সেটা করল। তার হাতের আঙুল দিয়ে হালকা করে আমার চিবুকে, গালে চাপ দিল। যেন আরেকটু বেশি চাপ দিলে ভেঙেচুরে যাব।

    তোমার অবশ্যই ভাল মুডে থাকা উচিত। অন্তত আজকের দিনের জন্য। সে ফিসফিস করে বলল। তার সুবাসিত নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর বয়ে যাচ্ছিল।

    আর যদি আমি ভাল মুডে না থাকতে চাই? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার নিঃশ্বাস এলোমেলো।

    তার সোনালি চোখজোড়া জ্বলছিল, খুব খারাপ।

    আমার মাথা এর মধ্যেই ঘুরে গিয়েছিল। সে কাছে ঝুঁকে এল। তার বরফ শীতল ঠোঁটজোড়া আমার ঠোঁটের উপরে নেমে এল। আমি আমার সব দুশ্চিন্তা ভুলে গেছি।

    তার মুখ আমার উপর নেমে এল। ঠাণ্ডা, মসৃণ, শান্ত। আমি হাত দিয়ে তার গলা আঁকড়ে ধরলাম। নিজেকে তার হাতে সঁপে দিলাম। বেশ প্রাণশক্তির সাথে ছোট্ট করে চুমু খেলাম। আমি অনুভব করছিলাম তার ঠোঁট ধীরে ধীরে উপরে উঠছে। আমার মুখের দিকে।

    তার ঠোঁটজোড়া আমার ঠোঁটের উপর নেমে এল। সে আমার ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন করল। তারপর সেই চুম্বন আমার সমস্ত মুখে ঘুরে দেহে নেমে এল। আমি শিহরণে কেপে কেপে উঠতে লাগলাম। এটা এমন একটা ব্যাপার যা আমি এড়াতে পারি না।

    এ্যাডওয়ার্ড আমাদের শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে সর্তকতার সাথে মনোযোগ দিল। আমাকে প্রফুল্ল রাখতে চাইল। যদিও আমি বেশ একটা নিরাপদ দূরত্ব রাখছিলাম। তার রেডের মত ধারালো উঁচু দাঁতের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করছিলাম। আমি ভুলে গিয়েছিলাম সেই প্রাচীন ধারণা সম্বন্ধে যখন সে আমাকে চুমু দিচ্ছিল।

    দয়া করে ভাল আচরণ করো। সে আমার চিবুকের উপর নিঃশ্বাস ফেলছিল। সে তার ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপর আরেকবার শান্তভাবে চেপে ধরেছিল। তারপর ঠেলে দিল। আমার হাত পেটের উপর ভাঁজ করে রাখল।

    আমি আমার নাড়ির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার একহাত হৃৎপিণ্ডের উপর রাখলাম। এটা আমার হাতের তালুর নিচে নাটকীয়ভাবে অতিরিক্ত লাফাচ্ছিল।

    তুমি কি মনে করো আমি এর চেয়ে ভাল বোধ করব? আমি নিজের প্রতি বিস্মিত।

    যখন তুমি আমাকে ছোও তখন কি আমার হৃৎপিণ্ড কোন একদিন থেমে যেতে পারে?

    আমি সত্যিই আশা করি না। সে কিছুটা বিভ্রান্ত স্বরে বলল।

    আমি চোখ ঘুরালাম চল ক্যাপুলেট ও মনটেগু দেখি, ঠিক আছে?

    তোমার ইচ্ছেয় আমার আদেশ।

    ঘরে এসে এ্যাডওয়ার্ড কোচের উপর আয়েশ করে বসল। আমি মুভি দেখা শুরু করলাম। প্রথমের নামগুলো টেনে সামনের দিকে এগিয়ে নিলাম। আমি সোফার কোণায় তার সামনে এগিয়ে গেলাম। সে তার হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরল। আমাকে তার বুকের কাছে টেনে নিল। এটা সোফার কুশনের মত ততটা আরামদায়ক ছিল না। তার বুকটা শক্ত এবং ঠাণ্ডা। যেন কোন বরফের ভাস্কর্য। কিন্তু এটা সত্যিকার অর্থে উপযুক্ত। সে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। অদ্ভুত মাদকতায় আমি যেন অবশ হয়ে যেতে থাকলাম। আমার সমস্ত শরীর জুড়ে অন্যরকম শিহরণ বয়ে যেতে লাগল। যেটার ব্যাখ্যা দেয়া সহজ কিছু নয়।

    সে কোচের পিছন থেকে পুরানো চাদর টেনে নিল। আমাকে চাদর দিয়ে মুড়ে দিল যাতে শরীরের পিছনের দিকটা ঠাণ্ডা না হয়ে যায়।

    তুমি জানো রোমিওর মত আমার অত ধৈর্য নেই। ছবি শুরু হলে সে মন্তব্য করল।

    রোমিওর ভুল কি ছিল? আমি কিছুটা আক্রমণাত্বক স্বরে জিজ্ঞেস করলাম। রোমিও আমার একটা অন্যতম প্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। এ্যাডওয়ার্ডের সাথে দেখা হওয়ার আগে, আমি রোমিওর সম্বন্ধেই বারকয়েক ভেবেছিলাম।

    বেশ, প্রথমত, সে রোজালের প্রেমে পড়েছিল তোমার কি মনে হয় এটা তাকে। প্রাঞ্জল চরিত্রের গড়ে তুলেছে? এবং তারপর, তাদের বিয়ের কিছুক্ষণ পরে, সে জুলিয়েটের কাজিনকে হত্যা করেছে। সেটা খুব বেশি বুদ্ধিমত্তার কাজ ছিল না। ভুলের পরে ভুল। সে কি তার নিজের সুখগুলো এভাবেই শেষ করে দেয়নি?

    আমি লজ্জিত হলাম। তুমি কি আমাকে একাকী ছবিটা দেখতে দেবে?

    না, আমি বেশিরভাগ সময় তোমাকেই দেখব, যাই কে, তার আঙুলগুলো আমার হাতের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। তুমি কি কাঁদবে?

    সম্ভবত, আমি স্বীকার করলাম, যদি আমি মনোযোগ দিয়ে দেখি।

    আমি তাহলে তোমার মনোযোগ বিঘ্নিত করব না। কিন্তু আমি অনুভব করলাম তার ঠোঁট আমার চুলের উপর। এটা খুবই মনোযোগ বিঘ্নিত করে।

    ছবিটা তারপরও আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে। এ্যাডওয়ার্ডকে অসংখ্য ধন্যবাদ। রোমিওর লাইনগুলো এ্যাডওয়ার্ড আমার কানের কাছে আওড়ে যায়। সে অপ্রতিরোধ্য। তার কণ্ঠস্বর অভিনেতার কণ্ঠস্বরকে ছাপিয়ে যায়। সেটা তুলনামূলক মোটা। আমি কাঁদলাম। তার আনন্দের জন্য। যখন জুলিয়েট জেগে ওঠে এবং দেখে তার নব বিবাহিত স্বামী মৃত।

    আমি স্বীকার করব আমি তার প্রতি কিছুটা ঈর্ষান্বিত। এ্যাডওয়ার্ড বলল। এ্যাডওয়ার্ডের অশ্রুবিন্দু আমার চুলের মধ্যে শুকিয়ে গেল।

    সে সত্যিই খুব সুন্দরী।

    সে একটা বিরক্তিকর শব্দ করল আমি মেয়েটির আত্মহত্যার জন্য তার প্রতি ঈর্ষান্বিত নই। সে বিদ্রুপাত্বক স্বরে ব্যাপারটা পরিষ্কার করল। তোমরা মানুষরা এটাকে সহজভাবে নাও! তোমরা মানুষরা যেটা করতে পার, ছুঁড়ে ফেলে দিতে পার এই গাছের নির্যাস…

    কি? আমি জোর করে শ্বাস নিলাম।

    এটা এমন কিছু যেটা নিয়ে আমি একসময় ভেবেছিলাম। আমি কার্লির্সলের অভিজ্ঞতা থেকে জানতাম এটা সাধারণ কিছু ছিল না। আমি এমন কি নিশ্চিতও নই যে কার্লিসলে শুরুতেই কতভাবে আত্মহত্যা করতে চেয়েছে… যখন সে বুঝতে পারল সে কী হতে পারে… তার কণ্ঠস্বর, যা ধীরে ধীরে কঠোর রুপ নিচ্ছিল, আবার হালকায় চলে এল, এবং সে এখন সত্যিকারের সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী।

    আমি ঘুরে গেলাম যাতে আমি তার মুখের অভিব্যক্তি পড়তে পারি। তুমি কি ভেবেছো? আমি জিজ্ঞাসা করলাম একসময় তুমি কি নিয়ে ভেবেছিলে?

    গত স্প্রিংএ, যখন তুমি…মৃতের কাছাকাছি… সে বড় করে শ্বাস নেয়ার জন্য থামল। তার স্ক্রিপাত্বক স্বরে ফিরে আসার জন্য যুদ্ধ করতে লাগল, অবশ্যই আমি চেষ্টা করছিলাম তোমাকে জীবিত ফিরে পাবার। কিন্তু আমার মনের একটা অংশ আকস্মিক ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। যেমনটি আমি বললাম, এটা আমার কাছে অতটা সহজ কিছু নয়, যতটা মানুষের জন্য সহজ।

    এক সেকেন্ডের জন্য, ফনিক্সে আমার শেষ যাত্রার স্মৃতি আমার মস্তিস্কে খেলে গেল। আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমি এটা এত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম- উজ্বল সূর্যালোক, উত্তাপ জোরালোভাবে আসছিল। আমি দৌড়াচ্ছিলাম আশ্রয় খোঁজার জন্য। ভয়ানক ভ্যাম্পায়ারের হাত থেকে বাঁচতে। যেটা আমাকে অত্যাচার করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। জেমস, অপেক্ষা করছিল আয়নাঘরে আমার মায়ের সাথে তার অতিথি হিসাবে। অথবা যেটা আমি ভাবছিলাম। আমি জানতম না যে এটা ছিল ফাঁকিজুকি। যেমনটি জেমস জানত না এ্যাডওয়ার্ড আমাকে বাঁচানোর জন্য দৌড়ে আসছিল। এ্যাডওয়ার্ড সময়মত এসেছিল। অচিন্তনীয়ভাবে আমার আঙুলগুলো আমার হাতের ক্ষতগুলোর কাছে উঠে এল। যেটা ছিল আমার অন্য চামড়া হতে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কয়েক ডিগ্রী ঠাণ্ডা।

    আমি মাথা নাড়লাম। যেন আমার খারাপ স্মৃতিকে ঝেড়ে ফেলছি। এ্যাডওয়ার্ডের কথার অর্থ ধরতে চেষ্টা করলাম। আমার পেটে অস্বস্তি হতে থাকে। আকস্মিক ঘটনার প্রস্তুতি? আমি আবার বললাম।

    বেশ, আমি তোমাকে ছাড়া জীবনযাপন করতে চাই না। সে তার চোখ এমনভাবে ঘোরালো যেন তার ভেতরে শিশুসুলভতা স্পষ্ট কিন্তু আমি নিশ্চিত নই এটা কীভাবে করতে হয়। আমি জানি এমেট ও জেসপার কখনও সাহায্য করবে না…। সুতরাং আমি ভাবছি সম্ভবত আমি ইতালি চলে যাব এবং এমন কিছু করতে চেষ্টা করব ভুলতুরির জন্য।

    আমি বিশ্বাস করতে চাই না সে সত্যিই সিরিয়াস। কিন্তু তার সোনালি চোখ গুম হয়ে গেল। সে এমন কিছুর দিকে তাকিয়েছিল যেটা এখন থেকে অনেক দূরের। তার নিজের জীবন ধ্বংসের সাথে জড়িত।

    বিক্ষিপ্তভাবে, আমি উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলাম।

    ভলতুরি হচ্ছে একটি পরিবার। সে ব্যাখ্যা করল। তার চোখ এখন দূরে কোথাও হারিয়ে গেছে। আমাদের মত একটি খুব পুরানো শক্তিশালী পরিবার। তারা আমাদের মত সম্ভ্রান্ত পরিবারের জন্য সবচেয়ে কাছের বলে আমি মনে করি। কার্লিসলে ছোটবেলা থেকেই ইতালিতে তাদের সাথে বাস করত। সে আমেরিকায় বসবাস করার আগে থেকে। তুমি কি সেই গল্পটা মনে করতে পার?

    অবশ্যই আমি মনে করতে পারি।

    আমি কখনই ভুলব না যখন আমি প্রথমবার তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। নদীর পাশের বনের ভেতর বিশাল সাদা অট্টালিকা। অথবা যে কক্ষে কার্লিসলে-এ্যাডওয়ার্ডের পিতা বাস করেন। এ্যাডওয়ার্ডের বাবা দেয়ালে পেইন্টিং ঝুলিয়ে রেখেছেন যেখানে তার ব্যক্তিগত ইতিহাস উঠে এসেছে। নানা রকমের, সবচেয়ে বৃহৎ, সবচেয়ে চওড়া ক্যানভাস সেখানে ছিল। কার্লিসলের ইতালি বাসের সময় থেকে। অবশ্যই আমি মনে করতে পারি মানুষের শান্ত কোয়াটারগুলোর কথা। যদিও পেইন্টিং শতাব্দি পুরাতন ছিল, কার্লিসলে সাহসী দেবতার মত এখনও অপরিবর্তিত। আমি অন্য তিনজনের কথাও মনে করতে পারি। কার্লিসলের সমসাময়িক। এ্যাডওয়ার্ড কখন সেই তিনজনের জন্য ভতুরি নামটা ব্যবহার করত না। দুজন কালো চুলের, আরেকজন তুষার সাদা। সে তাদেরকে ডেকেছিল এ্যারো, কাইয়াস এবং মারকাস নামে।

    যাইহোক, তুমি কখনও ভলতুরিতে উত্তেজিত হয়ো না। এ্যাডওয়ার্ড বলে চলল যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি মরতে চাচ্ছ অথবা যাই হোক, এটা আমাদের করতে হবে। তার কণ্ঠস্বর এতটাই শান্ত তা এরই মধ্যে বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।

    আমার রাগ ভয়ে পরিণত হলো। তার মার্বেল খোদাই মুখ আমার দুহাতের মধ্যে টেনে নিলাম। খুব শক্ত করে ধরে রাখলাম।

    তুমি এই জাতীয় জিনিস নিয়ে আর কখনো চিন্তা করবে না। কক্ষনো না। আমি বললাম, সেটা কোন ব্যাপার নয়, আমার যাই ঘটুক না কেন, কিন্তু তুমি নিজেকে আঘাত দেয়ার জন্য অনুমতি পাবে না।

    আমি তোমাকে কখনো বিপদের মধ্যে যেতে দেব না। এটাই আসল কথা।

    আমাকে বিপদের মধ্যে রেখে! আমি ভেবেছিলাম আমাদের সকল দুভার্গ্যই আমার ভুল? আমি রেগে যাচ্ছিলাম। তুমি কীভাবে সেটা ভাবার সাহস কর? এ্যাডওয়ার্ডের ব্যাপারটা অস্তিত্বের, যদি আমি মারা যাই, সত্যিই সেটা খুবই দুঃখজনক হবে।

    তুমি তখন কি করবে, যদি পরিস্থিতি উল্টো দিকে মোড় নেয়? সে জিজ্ঞেস করল।

    সেটা একই জিনিস নয়।

    সে পার্থক্যটা কোন মতেই ধরতে পারল না। সে চুকচুক শব্দ করল।

    যদি সেরকম কিছু তোমার ক্ষেত্রে ঘটে তখন কি হবে? আমি সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলাম। তুমি কি চাইবে আমি আমার পথে চলে যাব?

    দুঃখের একটা ধারা ঠিকই তাকে স্পর্শ করে গেল।

    আমার ধারণা আমি তোমার পয়েন্ট কিছুটা ধরতে পেরেছি…। সে স্বীকার করল। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি করবটা কি?

    তুমি যাই করো না কেন সেটা আমি একা আসার আগে এবং তোমার অস্তিত্ব জটিল হওয়ার আগেই করতে হবে।

    সে লজ্জিত হলো। তুমি এটা এত সহজে বললে।

    এটা তা-ই। আমি সত্যিই এটা নিয়ে খুব বেশি উৎসাহী নই।

    সে তর্ক জড়িয়ে যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু সে তা করল না। বিচার্য-বিষয়। সে আমাকে মনে করিয়ে দিল। হঠাৎ করে, সে তাকে টেনে তুলল সেই অবস্থান থেকে। আমাকে একপাশে সরিয়ে দিল যাতে আমি আর ছোঁয়াছুয়ির মধ্যে না থাকি।

    বাবা? আমি ধারণা করলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড হাসল। এক মুহূর্ত পর, আমি ড্রাইভওয়ে পুলিশের গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম। আমি বেরিয়ে এলাম। শক্ত করে বাবার হাত ধরলাম। বাবা এটা খুবই পছন্দ করে।

    বাবা এক বক্স পিৎজা নিয়ে এসেছে।

    হেই বাচ্চারা, তিনি আমার দিকে দাঁত বের করে হাসলেন। আমি ভেবেছিলাম তুমি রান্না ও ধোয়ামোছার কাজটা বাদ দেবে। অন্তত জন্মদিনের সৌজন্যে। ক্ষুধার্ত?

    অবশ্যই, ধন্যবাদ, বাবা।

    চার্লি এ্যাডওয়ার্ডের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করলেন না। তিনি এ্যাডওয়ার্ডের পাশ দিয়ে ডিনারের দিকে গেলেন।

    আপনি কি কিছু মনে করবেন যদি আমি বেলাকে আজ সন্ধ্যের জন্য নিয়ে যাই? এ্যাডওয়ার্ড জিজ্ঞেস করল যখন বাবা ও আমার কাজ শেষ।

    আমি বাবার দিকে আশাবাদী চোখে তাকালাম। হতে পারে জন্মদিনে আমার ঘরে থাকার ব্যাপারে তার কোন পরিকল্পনা থাকতে পারে। পারিবারিক বিষয়। এটা তার সাথে আমার প্রথম জন্মদিন। আমার মায়ের থেকে দূরে থেকে আমার প্রথম জন্মদিন। রেনে- আমার মা। আবার বিয়ে করেছেন। ফ্লোরিডায় বসবাসের জন্য চলে গেছেন। আমি জানি না বাবা আমার কাছ থেকে কি আশা করছেন।

    সেটাই ভাল- মেরিনাররা আজ রাতে সক্স খেলছে। বাবা ব্যাখ্যা করলেন। আমি আশাহত হলাম। তো সেই কারণেই আমি এখানে ওকে কোনরকম সঙ্গ দিতে পারতাম না… তিনি ক্যামেরা বের করলেন। সেটা আমি রেনের কথা মতো পেয়েছিলাম। যাতে আমি ছবি দিয়ে স্ক্রাপবুক ভরে ফেলতে পারি। এটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন।

    আমি সে বিষয়ে ভালভাবেই জানতাম। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

    ক্যামেরাটা আমার হাত ফসকে গেল। মেঝেতে পড়ার উপক্রম হলো। এ্যাডওয়ার্ড দক্ষতার সাথে পড়ার আগেই ধরে ফেলল।

    ধরে ক্যামেরাটা বেশ ভালই রক্ষা করেছ। বাবা বললেন। যদি ওরা আজ রাতে মজাদার কিছু করে, কুলিনদের বাড়িতে আজ রাতে মজাদার কিছু হয়। বেলা, তুমি অবশ্যই কিছু ছবি তুলে আনবে। তুমি জানো, তোমার মা ছবির ব্যাপারে কতটা উৎসাহী। তোমাকে দেখার আগেই সে তোমার ছবিগুলো দেখতে চাইবে।

    ভাল আইডিয়া আঙ্কেল। এ্যাডওয়ার্ড ক্যামেরাটা আমার হাতে দিতে দিতে বলল।

    আমি ক্যামেরার লেন্স এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ঘুরালাম। প্রথম ছবিটা তারই নিলাম। এটা কাজ করে।

    খুবই ভাল কাজ করে। এই শোন, এলিসকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিও। সে কিছুদিন এখানে আসে নাই। বাবা অন্যদিকে ঘুরলেন।

    শুধুমাত্র গত তিনদিন আসেনি বাবা। আমি বাবাকে মনে করিয়ে দিলাম। বাবা এলিসের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। আমার সেই ভয়াবহ ভৌতিক অবস্থার পর থেকে এলিসের প্রতি বাবার ব্যবহার অন্যরকম। বাবা তার কাছে কৃতজ্ঞ। ঠিক আছে, আমি এলিসকে তোমার কথা বলব।

    ঠিক আছে ছেলেমেয়েরা, আজ রাতে মজা করো। এটা স্পষ্টত আমার যাওয়ার অনুমতি। বাবা এর মধ্যেই লিভিংরুমে চলে গেছেন এবং টিভি ছেড়ে দিয়েছেন।

    এ্যাডওয়ার্ড বিজয়ীর মত হাসল। আমার হাত ধরে টেনে সেখান থেকে বের করল।

    আমরা মোটরলরিতে উঠলাম। সে আবার আমার জন্য প্যাসেঞ্জার দরজা খুলে দিল। এইবার আমি আর কোন তর্কে গেলাম না। আমি এখনও কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই অন্ধকারের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া ভয়ের ব্যাপার।

    সাবধানে দেখে শুনে যেও। আমি তাকে সতর্ক করলাম।

    তোমার কী মনে হয়, তুমি কী ভালবাস? ছোট্ট একটা সুন্দর অডিকাপ গাড়ি। খুবই ঝামেলাহীন, প্রচুর পাওয়ারফুল…।

    আমার মোটরলরিতে কোন সমস্যা নেই। খরচের ব্যাপারে কথা বলা শুনতে আমার ভাল লাগে না, যদি তুমি জানতে চাও, তোমার জন্য কী ভাল? তাহলে বলব তুমি আমার জন্মদিনের উপহারের জন্য কোন টাকাপয়সা খরচ করবে না।

    এক পয়সাও না। সে নিষ্পাপ স্বরে বলল।

    ভাল।

    তুমি আমার জন্য একটা কাজ করবে?

    সেটা নির্ভর করবে কাজটি কি তার উপর।

    সে লজ্জিত হলো। তার সুন্দর প্রেমময় মুখ মুহূর্তে সিরিয়াস হয়ে গেল। বেলা, সত্যিকারের শেষ জন্মদিন আমাদের পরিবারে এমেটের। সেটাও ১৯৩৫-এ। এই বিষয়গুলো বাদ দাও। আজ রাতের জন্য খুব বেশি কঠিন হৃদয়ের হতে যেও না। সেখানে তারা সবাই উত্তেজিত হয়ে আছে।

    কথাগুলোয় আমি চমকে উঠলাম। সে এই জাতীয় জিনিসের কথা বললে আমি চমকে উঠি। ঠিক আছে, আমি সেরকমই আচরণ করব।

    আমি সম্ভবত তোমাকে সতর্ক করে…

    দয়া করে করো।

    যখন আমি বললাম তারা সবাই উত্তেজিত…আমি সেটা দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছি তারা সকলেই।

    প্রত্যেকেই? আমি শ্বাসরুদ্ধভাবে বললাম। আমি ভেবেছিলাম এমেট আর রোসালি আফ্রিকাতে। ফর্কের অন্য আরেকজন কুলিন এই বছর ডার্টমাউথ কলেজে গিয়েছে। সেটা আমি ভালই জানতাম।

    এমেট এখানে আসতে চাইবে।

    কিন্তু… রোসালি?

    আমি জানি, বেলা। দুশ্চিন্তা করো না। সে তার সবচেয়ে ভাল আচরণ এখানে করবে।

    আমি কোন উত্তর দিলাম না। এজন্য যে এসব ব্যাপারে আমি কোনরকম উদ্বিগ্ন। ছিলাম না। এ্যাডওয়ার্ডের পালিত বোন, সোনালি সুন্দরী রোসালি আমাকে খুব একটা পছন্দ করত না। প্রকৃতপক্ষে, সেই অনুভূতিটা অপছন্দের চেয়েও ভিন্নতর কিছু একটা। যতদূর জানা যায়, তাদের পরিবারের গোপন সত্য আমি জেনে যাওয়ার কারণেই রোসালি এমন অপ্রসন্ন ছিল।

    বর্তমান অবস্থার জন্য নিজেকে ভয়ানক দোষী মনে হতে লাগল। রোসালি এবং এমেটের দীর্ঘকালীন অনুপস্থিতির জন্য নিজেকে দোষী মনে হলো। এমনকি তাকে দেখে আনন্দিত হতে পারব না সে কারণেও। এমেট, এ্যাডওয়ার্ডের বড়ভাই। আমি তাকে মিস করছিলাম। অনেক দিক দিয়ে সে আমার বড় ভাইয়ের মত। আমি সবসময় চাইতাম… কিন্তু সেটা আরো বেশি ভীতিকর অবস্থা…

    এ্যাডওয়ার্ড বিষয় পরিবর্তন করল। সুতরাং, যদি তুমি আমাকে তোমার জন্য অডিকাপ গাড়ি কিনতে না দাও, আর কোন কিছু কি আমি তোমার জন্মদিনের উপহার হিসাবে দিতে পারি না?

    আমার কথাগুলো ফিসফিসানিতে রুপান্তরিত হলো, তুমি জানো আমি কি চাই।

    একটা গভীর ভ্রূকুটি তার কপালে দেখা গেল। সে অবশ্যই চাইছিল রোসালির বিষয় থেকে মোড় ঘুরাতে।

    আমারও মনে হলো এ বিষয়ে আজ সারাদিন অনেক তর্কবিতর্ক হয়ে গেছে।

    আজ রাতে নয়, বেলা। প্লিজ।

    বেশ, সম্ভবত এলিস আমি যা চাই তাই আমাকে দেবে।

    এ্যাডওয়ার্ড বিড়বিড় করল। এটাই তোমার শেষ জন্মদিন হতে যাচ্ছে না বেলা। সে প্রতিজ্ঞা করল।

    সেটা ঠিক নয়।

    আমি তার দাঁত কিড়মিড়ানির শব্দ শুনতে পেলাম।

    আমরা বাড়ির কাছাকাছি চলে এলাম। নিচতলা ও দোতলার জানালাগুলো উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। পোর্চে জাপানি লণ্ঠন জ্বালানো হয়েছে। তা থেকে নরম আলো ছড়িয়ে পড়েছে। সামনের দরজার উপর বিশাল ফুলের তোড়া। তোলায় গোলাপের সমারোহ।

    আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড নিজেকে শান্ত করতে কয়েকবার গভীরভাবে শ্বাস নিল। এটা একটা পার্টি। খেলুড়ে মনোভাবে থাকতে চেষ্টা করো।

    অবশ্যই। আমি গুনগুন করে উঠলাম।

    সে আমার কাছে চলে এল। গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে আমার হাত তার হাতে নিল।

    আমার একটা প্রশ্ন আছে।

    সে দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল শোনার জন্য।

    যদি আমি এই ফিল্মগুলো ডেভেলপ করাই ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে বললাম, তুমি সেগুলোর ছবি দেখতে দেবে?

    এ্যাডওয়ার্ড হাসতে লাগল। সে আমাকে গাড়ির বাইরে আসতে সাহায্য করল। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। দরজা খোলার আগ পর্যন্ত আমরা হাসতেই থাকলাম।

    তারা বিশাল একটা সাদা রঙের কামরায় অপেক্ষা করছিল। যখন আমি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম, তারা জোর কোরাসে চিৎকার দিল, শুভ জন্মদিন, বেলা মুহূর্তের জন্য আমার মুখ রক্তিম হয়ে উঠল। আমি নিচের দিকে তাকালাম। এলিস, আমি ধারণা করছি, প্রতিটি জায়গায় গোলাপি মোমবাতি রেখেছে। ডজনখানেক ক্রিস্টালের পাত্র ভর্তি করে শখানেক গোলাপ এনে রেখেছে। এ্যাডওয়ার্ডের বিশাল পিয়ানোর পাশেই একটা টেবিল সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। টেবিলের উপর গোলাপিরঙা জন্মদিনের কেক। গোলাপের সমারোহ, গ্লাস প্লেটের সারি এবং রুপালি কাগজে মোড়া জন্মদিনের উপহারের ছোটখাট একটা স্তূপ।

    আমি যা কল্পনা করে রেখেছিলাম এটা ছিল তার চেয়ে শতগুন বেশি কিছু।

    এ্যাডওয়ার্ড আমার হতবুদ্ধি অবস্থা বুঝতে পেরেছিল। আমার কোমরের চারিদিকে জড়িয়ে ধরে মাথার মাঝখানে আলতো করে চুমু খেল।

    এ্যাডওয়ার্ডের বাবা-মা-কার্লিসলে এবং এসমে দুজনেই প্রাণপ্রাচুর্য এবং প্রীতিময়তায় ভরপুর। তারা দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসমে সতর্কতার সাথে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তার নরম ক্যারামেল রঙের চুল আমার চিবুকের উপর এসে পড়ছিল। তিনি আমার কপালে চুমু খেলেন। আর কার্লিসলে তার হাত আমার কাঁধের উপর রাখলেন।

    এসবের জন্য দুঃখিত বেলা তিনি ফিসফিস করে বললেন, এলিসকে এসব থেকে বিরত রাখতে পারিনি।

    রোসালি এবং এমেট তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। রোসালি হাসল না। এমনকি সে নিদেনপক্ষে এক নজর দেখলও না। এমেটের মুখ টানটান হয়ে ছিল। কুচঁকে গেল। প্রায় এক মাস পরে আমি তাদের দেখলাম। আমি ভুলে গিয়েছিলাম রোসালি কত সুন্দর। তার দিকে তাকিয়ে আমি ব্যথিত হলাম। আর এমেট সেই আগের মতই…বিশাল।

    তোমার কোন পরিবর্তনই হয়নি। এমেট উপহাস উপেক্ষা করে বলল। আমি একটা পরিবর্তন আশা করেছিলাম। কিন্তু তুমি তো সেই আগের মত লালমুখোই আছে।

    অসংখ্য ধন্যবাদ, এমেট। আমি লাজরাঙা হয়ে বললাম।

    সে হাসল। আমি এক মুহূর্তের জন্য একটু আসছি। সে ষড়যন্ত্রীর মত এলিসের কাছে গেল। বলল, আমি চলে যাওয়ার সময় হাস্যকর কিছু করার চেষ্টা করবি না।

    সে দেখা যাবে।

    এলিস জেসপারের হাত ধরে সামনে এগিয়ে এল। এলিসের হাসিতে যেন মুক্তো ঝরছিল। জেসপারও হাসছিল। কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখেই সে ঝুঁকেছিল। জেসপার দীর্ঘদেহী এবং সুদর্শন। ফনিক্সে তার সাথে একান্তে কাটানোর দিনগুলির কথা মনে পড়ল। আমি ভাবলাম সে আমার প্রতি তার অনুরক্ততা দূর করেছে। সে ঠিকই ফিরে এল। কিন্তু আমাকে যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলল। যখন থেকে সে আমাকে রক্ষা করার সাময়িক প্রতিজ্ঞা থেকে মুক্ত হলো তখন থেকে আমি জানতাম এটা ব্যক্তিগত বিষয় ছিল না। এটা ছিল পূর্ব সর্তকতা। আমি এটা নিয়ে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখাচ্ছিলাম না।

    জেসপারের আবার কুলিনদের খাবারের ব্যাপারে বিড়ম্বনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল। মানুষের রক্তের গন্ধ অন্যদের মত তার পক্ষে উপেক্ষা করা কঠিন ছিল। সে অনেকদিন এসব বিষয়ে চেষ্টাও করে নি।

    এখন উপহারগুলো খোলার সময়। এলিস ঘোষণা করল। সে তার বরফ শীতল হাত আমার কনুইয়ের নিচে রাখল। আমাকে টেবিলের ধারে নিয়ে গেল। যেখানে কেক ও প্যাকেটগুলো ছিল।

    আমি আমার মুখাবয়বে দৃঢ়তা ফুটিয়ে তুললাম, এলিস, আমার মনে হয় আমি তোমাকে বলেছিলাম, যে আমার কোন কিছুই চাই না

    কিন্তু আমি সেটা শুনিনি। সে বাধা দিল, এটা খোলো সে আমার হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে নিল। একটা বড়সড়ো রুপালি কাগজে মোড়া বক্স আমার হাতে তুলে দিল।

    বক্সটা এত হালকা ছিল যে আমার মনে হচ্ছিল এটা ফাঁকা। উপরের লেখা থেকে বোঝা যাচ্ছিল এটা এমেট, রোসালি এবং জেসপারের পক্ষ থেকে। নিজে নিজেই আমি উপরের কাগজ ছিঁড়ে ফেললাম। বক্সের ভিতরে তাকালাম।

    এটা যান্ত্রিক কিছু একটা ছিল। নামের উপর অনেকগুলো সংখ্যা। আমি যন্ত্রটা খুললাম। আশা ছিল নতুন কোন আলোকপাত ঘটবে।

    কিন্তু যন্ত্রের উপরটা ফাঁকা।

    হুমম…ধন্যবাদ।

    রোসালি সত্যিই একটা হাসি দিল। জেসপার হাসছিল। এটা তোমার মোটরলরির জন্য একটা স্টেরিও। সে ব্যাখ্যা করল। এমেট এখনই এটা ইন্টস্টল করেছে যাতে তুমি ফেরত না দিতে পার।

    এলিস সবসময় আমার জন্য এক পা এগিয়ে ছিল।

    ধন্যবাদ জেসপার, রোসালি আমি তাদেরকে বললাম। মনে পড়ে গেল আজ বিকালে এ্যাডওয়ার্ডের আমার রেডিও নিয়ে অভিযোগের কথা। পুরো ব্যাপারটাই সাজানো। ধন্যবাদ এমেট আমি আরেকটু জোরে বললাম।

    আমি তার হাসির ফোয়ারা দুর থেকেই যেন শুনতে পাচ্ছিলাম। আমিও হাসি থামাতে পারলাম না।

    আমারটা এখন খোল এবং তারপরে এ্যাডওয়ার্ডেরটা। এলিস বলল। সে এত উত্তেজিত হয়ে পড়েছে যে তার কণ্ঠস্বর উঁচুগ্রামে বাজতে লাগল। তার হাতে ছোট্ট চারকোণা একটা জিনিস।

    আমি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ঘুরে তাকালাম তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে।

    সে উত্তর দেয়ার আগেই এমেট দরজা বন্ধ করে দিল। ঠিক সময়ে। সে চিৎকার দিল। সে জেসপারকে পিছনে ঠেলে দিল। জেসপার খুব ভাল করে দেখার জন্য আমার খুব কাছে এসে পড়েছিল।

    আমি এক পয়সাও খরচ করিনি। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে নিশ্চয়তা দিল। সে আমার মুখের উপরে পড়া একগুচ্ছ চুল উপরে তুলে দিল। তার স্পর্শে আমার ভেতরটা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যায়।

    আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। এলিসের দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম এটা আমার কাছে দাও। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

    এমেট জ্বল জ্বলে চোখে সেদিকে তাকাল।

    আমি ছোট্ট প্যাকেটটা নিলাম। আমার চোখ এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ঘুরতে লাগল। আমি একটা পেপার কাটার হাতে তুলে নিলাম। আঙুল কাগজের কোণায় ঢুকিয়ে দিলাম। তারপর টেপের নিচে ঝাঁকি দিলাম।

    ইস! আমি বিড়বিড় করে বললাম। কাগজ ফালি ফালি করে দিয়ে আমার আঙুল কেটে গেল। আমি ক্ষত কতটুকু দেখার জন্য আঙুল টেনে বের করলাম। এক ফোঁটা রক্ত সেই ছোট্ট ক্ষত থেকে বেরিয়ে এলো।

    তারপরের ঘটনাটা খুব দ্রুততার সাথে ঘটে গেল।

    না। এ্যাডওয়ার্ড গুঙিয়ে উঠল।

    এ্যাডওয়ার্ড লাফ দিয়ে আমার উপরে এসে পড়ল। আমাকে ধাক্কা দিয়ে টেবিলের ওপাশে সরিয়ে দিতে চাইল। আমি টেবিলের উপর পড়ে গেলাম। আমি কেক, উপহার, ফুল ও গ্লাস-প্লেটের উপর যেয়ে পড়লাম। আমি ভেঙে চুরচুর হওয়া লক্ষ কোটি ক্রিস্টালের টুকরোর উপর যেয়ে পড়লাম।

    রক্ত লোলুপ ক্রুদ্ধ জেসপার এ্যাডওয়ার্ডকে ঘুষি কষাল। শব্দটা এমন হল যেন কোন বাধের উপর পাথর ভেঙে পড়ল।

    গজরানির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। একটা ভয়ানক ক্রুদ্ধ গর্জন জেসপারের বুকের গভীর থেকে আসছিল। জেসপার চেষ্টা করছিল এ্যাডওয়ার্ডের পাশ থেকে বেরিয়ে আসতে। এ্যাডওয়ার্ডের মুখের উপর মাত্র ইঞ্চি খানেক ব্যবধানে তার ধারাল দাঁত দেখাচ্ছিল।

    এমেট পরবর্তী মুহূর্তে জেসপারকে পেছন থেকে ধরে ফেলল। তার ইস্পাত কঠিন দুহাতে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু তারপরও জেসপার ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। জেসপারের বুনো ক্রুদ্ধ, ক্ষুধার্ত চোখ একদৃষ্টিতে শুধুমাত্র আমার উপরেই ছিল।

    এই হতবুদ্ধিকর ঘটনার পরে ব্যথাও পাচ্ছিলাম। আমি পিয়ানো আঁকড়ে ধরে মেঝে থেকে উঠার চেষ্টা করলাম। মনে হল আবারও পড়ে যাচ্ছিলাম, আমার হাত স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে পতন এড়াতে পিয়ানোটা ধরে ফেলল। সেটাসহ কাঁচের টুকরোর উপর পড়লাম। ভীষণ যন্ত্রণা অনুভব করছিলাম যেন সমস্ত শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আমার কবজি থেকে কনুইয়ের ভাঁজ পর্যন্তও তীব্র যন্ত্রণা।

    সেই হতবুদ্ধিকর অবস্থার মধ্যেও আমি দেখতে পেলাম গাঢ় লাল রক্ত আমার বাহু থেকে ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়ছে জ্বল জ্বলে চোখের ছয়জন ভয়ংকর ক্ষুধার্ত ভ্যাম্পায়ারদের রক্তলোলুপ চোখের সামনে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.