Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ১৪-১৫. জ্যাকবের পাশে

    ১৪.

    আমি ভীত সন্ত্রস্তের মত জ্যাকবের পাশে পাশে হাঁটতে লাগলাম। আমার চোখ অন্যান্য নেকড়েমানবদের দেখার আশায় তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল। যখন তারা গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আসল, তখন বুঝলাম আমি যেমন মনে করেছিলাম তারা তা নয়। আমার মাথার ভেতর কাজ করছিল যে আমি নেকড়েরুপী ওদের দেখতে পাব। কিন্তু এরা চারজন বিশালদেহী অর্ধনগ্ন ছেলে।

    আবার, তারা আমাকে ভাইয়ের কথা মন করিয়ে দিল। তারা আমাদের পাশে পাশে সমান দূরত্ব রেখে রাস্তা ধরে চলতে লাগল। তাদের একই বাদামী রঙের চামড়ার নিচে মাংসল পেশী, একই রকম ঘন কালো চুল, তাদের প্রত্যেকের অনুভূতি প্রকাশও প্রায় একই সময়ে হচ্ছে।

    তাদের দু চোখে বিস্ময় এবং সতর্কতা। তারা যখন আমাকে জ্যাকবের পেছনে দেখল, তখন তারা সবাই এক সাথে খিঁচিয়ে উঠল।

    স্যাম সবচেয়ে বিশাল, যদিও জ্যাকব ওর সমকক্ষ নয়। স্যামকে ঠিক ছেলে বলা যাবে না। ওর চেহারায় বয়সের একটা ছাপ আছে সেটা মুখের রেখায় নয়। প্রাপ্তবয়স্কতারর কারণে, তার অনুভূতি প্রকাশের ধৈর্যের কারণে।

    তুমি কী করেছ, জ্যাকব? সে জানতে চাইল।

    অন্যদুজনের একজনকে আমি চিনতে পারলাম না- জারেড বা পল হতে পারে–স্যামের পেছনে, জ্যাকব নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিছু বলার আগেই সে বলে উঠল, তুমি কেন নিয়ম-নীতি মানলে না, জ্যাকব? সে বাতাসে তার হাত ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চাইল। তুমি কী মনে করেছ? এই মেয়ে কী সবকিছুর চাইতে জরুরি–পুরো দলের চাইতেও? যে লোকগুলো খুন হয়েছে তাদের চাইতেও?

    সে আমাদের সাহায্য করতে পারবে। জ্যাকব আস্তে করে বলল।

    সাহায্য! রাগী ছেলেটা চিৎকার করে উঠল। ওর হাত যেন উন্মত্ত হয়ে গেল। ওহ্, তাই বল! আমি নিশ্চিত রক্তচোষার প্রেমিকা আমাদের সাহায্য করার জন্য মরতে এসেছে!

    ওকে নিয়ে এভাবে কথা বলবে না! ছেলেটার সমালোচনা শুনে জ্যাকব গর্জে উঠল।

    একটা ছেলে এসে ওর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে ওকে ঠেলে সরাল।

    পল! শান্ত হও! স্যাম আদেশ দিল।

    পল মাথা ঝাঁকিয়ে সরে দাঁড়াল। প্রতিরক্ষার কারণে নয়, যেন তারা মনোযোগ দিতে পারে।

    বেশ পল, ছেলেগুলোর একজন খুব সম্ভবত জারেড-বিড়বিড় করে বলল, ওকে শক্ত করে ধর।

    পল জারেডের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল, ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। তারপর তাদের দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ হল। জ্যাকব এক পা এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়াল।

    তাই নাকি, রক্ষা করছ ওকে! পল ওর গায়ে আবারও প্রবল ধাক্কা দিয়ে ভীষণ রকম গর্জে উঠল। সে হঠাৎ মাথাটা হেলিয়ে দিল, সত্যি সত্যি তীক্ষ্ম দাঁত বেরিয়ে এল।

    পল! স্যাম আর জ্যাকব দুজনেই চিৎকার করে উঠল।

    ছেলেটার গায়ে ঘন ধূসর লোম বেরিয়ে এল, যা তাকে তার অবয়বের পচগুণ দেখাল। ভীষণ ভয়ঙ্কর, যেন এখনি স্প্রিং এর মত লাফ দেবে। ওর ঘন কালো চোখ আমার দিকে নিবদ্ধ হল।

    ঠিক সে সময়ে জ্যাকব সামনে এগিয়ে গেল। ওর গলা চিরে তীক্ষ্ণ শব্দ বেরুলো। ওর চামড়া ফেটে লোম বেরিয়ে এল। সাদাকালো স্টাইপওয়ালা কাপড় ফেটে চৌচির হয়ে গেল। এসব এদ্রুত ঘটে গেল যে আমি থমকে গেলাম।

    এক সেকেন্ডের জন্য জ্যাকব শূন্যে উঠে গেল। ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়াল ভীষণ ভয়ঙ্কর। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল জ্যাকবের রুপালি বুকের নিচে কিছু একটা যন্ত্র চালু হয়ে গেছে।

    জ্যাকব অন্য নেকড়েমানবের সাথে মাথা ঠোকাঠোকি করল। তাদের রাগী ভঙ্গিতে ঝাঁপিয়ে পড়ায় এমন শব্দ হল যেন গাছের গায়ে বাজ পড়ল।

    সাদা কালো ডোরা জামা মানে সেটা জ্যাকব- সে হঠাৎ মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।

    জ্যাকব! আমি ওর দিক দৌড়ে যাচ্ছিলাম।

    তুমি যেখানে আছ সেখানে থাক বেলা। স্যাম আমাকে আদেশ করল। লড়াই করতে থাকা নেকড়েমানবদের গর্জন ছাপিয়ে সে কথা শোনা বেশ কষ্টকর হল। ওরা দাঁত খিঁচিয়ে একে অন্যকে কামড়ে ফালাফালা করার চেষ্টা করছে। নেকড়েমানব জ্যাকবকে অন্য নেকড়েটার তুলনায় আকারে অনেক বড় দেখাচ্ছে। শক্তিশালীও। সে কাঁধ দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ধূসর রঙা নেকড়েমানবটাকে ঠেলে গাছের দিকে নিয়ে চলল।

    এই মেয়েটিকে এমিলির কাছে নিয়ে চল। স্যাম দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আদেশ করল, যে এতক্ষণ লোলুপ দৃষ্টিতে লড়াই দেখছিল। জ্যাকব আর নেকড়েমাবটা লড়াই করতে করতে রাস্তা থেকে নেমে বনের দিকে সরে গেল। তখনও ওদের তীক্ষ্ণ আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। স্যাম পা ছুঁড়ে জুতো-টুতো খুলে ওদের দিকে দৌড় দিল। সে যখন গাছের আড়ালে চলে যাচ্ছিল, দেখতে পেলাম রাগে ওর মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত কাঁপছিল।

    দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে ওদের গর্জন আর হুঙ্কার হালকা হয়ে এল। এক সময় শব্দ শোনা গেল না। রাস্তাটা ভীষণ নির্জন হয়ে গেল।

    ছেলেগুলো ভীষণ হাসতে শুরু করল।

    কে হাসছে দেখার জন্য আমি ঘুরে তাকালাম–সাথে সাথে আমি বরফের মত জমে গেলাম। চোখে দুপাতা এক করতে পারছিলাম না।

    আমার অবস্থা দেখে ছেলেটা আরও হেসে উঠল।

    তো, এ জিনিসগুলো তোমার নিশ্চয় প্রতিদিন দেখা পড়ে না? সে খিকখিক করে হাসতে লাগল। ওর মুখটা আমার কেমন যেন চেনাচেনা লাগল–অন্য সবার চেয়ে হালকা পাতলা… এমব্রি কল।

    আমি দেখি। আরেকজন যে, জারেড, সে গম্ভীর মুখে বলল, প্রত্যেক দিন।

    ও-ও, পল তো প্রতিদিন এভাবে রেগে যায় না। এমব্রি ওর কথায় দ্বিমত পোষণ করল। হতে পারে, দুই কী তিনবার।

    জারেড মাটি থেকে সাদা রঙের কিছু একটা তুলে নিল। সেটা এমব্রির দিকে তুলে দেখাল।

    একেবারে ফালিফালি হয়ে গেছে, জারেড বলল। বিলি বলেছিল এই শেষ জোড়া জুতা, এরপর আর সে কিনে দিতে পারবে না। ধারণা করছি জ্যাকবকে এখন থেকে খালি পায়ে চলাফেরা করতে হবে।

    এটা দেখ। অনেক কষ্ট করে টিকে আছে। থ্যাবড়া মেরে জাওয়া জুতার অন্য পাটিটা দেখাতে দেখাতে জারেড বলল, জ্যাককে এবার খুড়িয়ে চলতে হবে। সে হাসতে হাসতে বলল।

    জারেড ময়লার স্তূপ থেকে কাপড়ের টুকরো-টাকরা খুঁজে খুঁজে তুলতে লাগল। স্যামের জুতো জোড়াও নেয়া উচিত, খুঁজবে একটু? জঞ্জালের মধ্যে কোথাও আছে।

    এমব্রি মুঠোয় ধরে রাখা জুতার পাটিটি শক্ত করে ধরে রেখে সামনের গাছের দিকে এগোলো। সেখানে স্যাম রাগে কিড়মিড় করছিল। কয়েক সেকেণ্ড পর সে যখন ফিরে আসল তখন ওর হাতে পল এর জিন্সের টুকরো। সে জ্যাকব আর পলের কাপড়ের ছেঁড়াফাটা টুকরোগুলো বলের মত পাকাল। তারপর হঠাৎ আমার কথা খেয়াল হল।

    এই তুমি আবার জ্ঞান-টান হারাবে না তো?

    আমি তা মনে করি না। আমি তাচ্ছিল্যের স্বরে বললাম।

    তোমার অবস্থা তো ভাল ঠেকছে না। তোমার বসা উচিত।

    ঠিক আছে। আমি বিড়বিড় করে বললাম। সকাল থেকে এই পর্যন্ত এই দ্বিতীয়বারের মত আমি হাঁটুতে আমার মাথা ঠেকাতে পারলাম।

    জ্যাকের উচিত ছিল আমাদের সতর্ক করে দেয়া। এমব্রি নালিশ করল।

    ওর গার্লফ্রেন্ডকে এর মধ্যে নিয়ে আসা ওর মোটেও উচিত হয়নি। সে চাচ্ছিল কী?

    যাক গে, নেকড়েগুলো এখন সীমানার বাইরে। এমব্রি বলল। ওই পথে যাও, জ্যাক।

    আমি মাথা তুলে হাস্যালাপ করতে থাকা দুজনের দিকে তাকালাম। তোমাদের কী ওদের জন্য একটুও দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে না? আমি জানতে চাইলাম।

    বিস্ময়ে এমব্রির চোখ পিটপিট করে উঠল। দুশ্চিন্তা? কেন?

    ওরা একে অন্যকে আঘাত করতে পারে।

    এমব্রি আর জারেড ফোঁস করে উঠল।

    আমি আশা করছি পল ওকে একচোট নিয়েছে, জারেড বলল। ওর উচিত শিক্ষা প্রয়োজন।

    আমি চমকে উঠলাম।

    হ্যাঁ, ঠিক বলেছ! এমব্রি আরও বলল, তুমি কী জ্যাককে দেখেছিলে? স্যামের ওদের দিকে ওভাবে উড়ে যাওয়ার দরকার পড়ত না। সে দেখেছিল পল হেরে যাচ্ছে তাই সে সেদিকে আক্রমণ করতে গিয়েছে। ছেলেটা ভালই পুরস্কার পেয়েছে।

    পল তো অনেক সময় ধরে লড়াই করেছিল, আমি দশটা মুদ্রা বাজি ধরে বলতে পারি সে হেরে যাবে।

    ঠিকই বলেছ, জ্যাকের শক্তি আছে, পল তো কোন প্রার্থনাও করে না।

    আমি ওদের কথা বলার বিরতিতে নিজেকে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমি মাথা থেকে নেকড়েমানবদের লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো কিছুতেই সরাতে পারলাম না। আমার পেটটাও মোচড় দিয়ে উঠল। ক্ষিধে পেয়েছে। মাথাও ভীষণ ব্যথা করছিল।

    চল এমিলির কাছে যাই। সে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। এমব্রি আমার দিকে তাকিয়ে বলল। মন বলছে গাড়ি চড়ে গেলে হয়।

    কোন সমস্যা নেই। চল। আমি সায় দিলাম।

    জারেড একটা ভ্র তুলে আমার দিকে তাকাল। মনে হয় গাড়ি তোমারই চালানো উচিত এমব্রি। সে আবার উল্টাপাল্টা কিছু করে বসতে পারে।

    ভাল বুদ্ধি। চাবিটা কোথায়? এমব্রি আমাকে জিজ্ঞেস করল।

    ইগনিশনে।

    এমব্রি প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজাটা খুলে দিয়ে উফুল্ল ভঙ্গিতে আমাকে উঠতে বলল। তুমি ওঠো এতে। আমার একটা হাত ধরে আমাকে মাটি থেকে উঠাতে উঠাতে বলল। সে আমার ড্রাইভিং সিটের বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে জারেডের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে পেছনে বসতে হবে জারেড।

    বেশ তো। কিন্তু আমি একটু দুর্বল পাকস্থলীর। ওর সাখে ওখানে বসতে চাচ্ছি না। যদি আঘাত-টাঘাত করে বসে।

    আমি বাজি ধরে বলতে পারি সে সেটা করবে না। সে ভ্যাম্পায়ারদের সাথে চলে।

    পাঁচ টাকা? জারেড জিজ্ঞেস করল।

    রাজী। আমি খুব দুঃখিত যে তোমার কাছ থেকে এভাবে টাকা গছিয়ে নেয়ার জন্য।

    দরজা বন্ধ হয়ে যেতেই সে আমার দিকে ফিরে বলল, লাফ-টাফ দিও না বুঝলে?

    ঠিক আছে। আমি ফিসফিসিয়ে বললাম।

    এমব্রি গ্রামের দিকে গাড়ি ছোটাল।

    হেই, জ্যাকের আদেশ-উপদেশ কীভাবে মিলবে?

    কেমন?

    এই ধর, আদেশ, জানো বোধহয়, জিনিসগুলো নষ্ট করো না। সে কীভাবে তোমাকে এ সম্পর্কে বলেছিল?

    ওহ্, সেটা। আমি বললাম। চেষ্টা করলাম গতরাতে জ্যাকব যেসব সত্য বলেছিল সে জানে না। মনে হয় আমার ধারণায় ভুল নেই।

    এমব্রি ঠোঁট বাঁকাল, চোখে একরাশ বিস্ময়, হুম। মনে হয় এটা কাজ করবে।

    আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    এমিলির বাসায়। সে স্যামের গার্লফ্রেন্ড… না, বাগদত্তা, এখন আমি যেটা ধারণা করছি। ওরা ফিরে এসে ওখানে দেখা করবে। আর পল আর জ্যাকের কিছু নতুন জামা কাপড়ও দরকার।

    এমিলি কী এসব বিষয়ে জানে…?

    হা। আর শোন, ওর দিকে বেশি তাকিয়ে থেকো না। ও স্যামের সম্পত্তি।

    আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে বললাম কেন আমি তা করব?

    এমব্রিকে অপ্রস্তুত দেখাল। যেমনটি তুমি এখন দেখাচ্ছ। নেকড়েমানবের চারিদিকে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আছো। সে দ্রুত বিষয় পরিবর্তন করল। হেই, তুমি কি গোটা বিষয়টা নিয়ে ঠিক আছে। সেই যে তৃণভূমিতে কালো চুলের রক্তচোষার ব্যাপারে? আমার তাকে দেখে মনে হয়নি যে সে তোমার কোন একজন বন্ধু, কিন্তু… এমব্রি শ্রাগ করল।

    না, সে আমার বন্ধু ছিল না।

    বেশ ভাল। জানো বোধহয়, আমরা কোন কিছু শুরু করতে চাই না, কোন সন্ধিভঙ্গও নয়।

    ওহ্, হ্যাঁ, জ্যাকব একবার আমাকে এই সন্ধির ব্যাপারে বলেছিল। লরেন্টকে খুন করা কেন সন্ধি ভঙ্গ নয়?

    লরেন্ট, নাক কুঁচকে সে দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করল। যেন ভ্যাম্পায়ারদের নাম থাকাতেই সে বিস্মিত। বেশ, আমরা টেকনিক্যালি কুলিনদের বিপক্ষে। যতক্ষণ না কুলিনরা আমাদের মাটিতে তাদের সন্ধি ভঙ্গ করে, তার আগ পর্যন্ত ওদের আক্রমণ করার আমাদের কোন নিয়ম নেই। কালো চুলের একজন তাদেরই আত্মীয় কি না বুঝতে পারছি না। মনে হয় তুমি তাকে চেনো।

    ওরা কীভাবে তোমাদের নিয়ম ভঙ্গ করতে পারে?

    যদি তারা কোন মানুষকে দাঁত ফুটায়। জ্যাকবের অত দূর যাওয়ার মত ধীশক্তি নেই।

    ওহ্। উম, ধন্যবাদ। আমি আনন্দিত যে তুমিও সেটার জন্য অপেক্ষা করবে না।

    আমাদেরও আনন্দ।

    কিছুক্ষণ হাইওয়ে ধরে চলার পর সে সরু নোংরা একটা গলির দিয়ে চলল। তোমার ট্রাকটা ধীরগতির। সে বলল।

    দুঃখিত।

    লেনের শেষ মাথায় ছোটখাট একটা ধূসর রঙা বাড়ি দেখা গেল। নীল রঙের দরজার পাশে এ বাড়িটার বাইরের দিকে এই একটাই মাত্র জানালা। কিন্তু সেই জানালার নিচটা কমলা রঙের ম্যারীগোল্ড ফুলে পূর্ণ থাকায় চমৎকার শোভাময় দেখাচ্ছে।

    এমব্রি ট্রাক থেকে নেমে নাচ উঁচু করে ঘ্রাণ নিল। উমম, এমিলি রান্না করছে।

    জারেড লাফ দিয়ে ট্রাক থেকে নেমে দরজার দিকে গেল। কিন্তু এমব্রি ওর হাত জারেডের বুকে ঠেকিয়ে ওকে থামাল। সে আমার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আর গলাটাও কেশে পরিষ্কার করে নিল।

    আমার সাথে আমার টাকার থলেটা নেই। জারেড বলল।

    ঠিক আছে। আমি কিন্তু এ ব্যাপারে ভুলছি না।

    সে একসিঁড়ি দু সিঁড়ি বেয়ে দরজা নক করা ছাড়াই ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। আমি ধীরে ধীরে তাদের অনুসরণ করলাম।

    সামনের রুমটা বিলির ঘরের মতই, বিশেষ করে রান্নাঘরটা। সিঙ্কের পাশে একজন মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, চুলগুলো সোজা আর ঘন কৃষ্ণবর্ণের। কাগজের প্লেটে বড় একটা টিন থেকে বড় বড় মাফিন বের করে রাখা হয়েছে। এক সেকেণ্ডের জন্য আমার মনে পড়ে গেল এমৰি কেন আমাকে বলেছিল এমিলির দিকে তাকিয়ে না থাকতে, কারণ আসলেই সে অসম্ভব রুপবতী।

    সে আমাদের বলল, তোমাদের কী ক্ষিদে লেগেছে? চমঙ্কার মধুর গলা, যখন সে পুরোপুরি মুখটা ঘুরাল তখন ওর ঠোঁটে মৃদু হাসি।

    ওর মুখের ডান পাশটায় ক্ষতচিহ্ন, কপালের গোড়া থেকে চিবুক পর্যন্ত তিনটা লাইনে ঘন লাল দাগ। একটা লাইন ওর জলপাই রঙা চোখের ওপর ছড়িয়ে আছে। বাকি দুভাগ মুখের ডানপাশটায় যেন স্থায়ীভাবে আছে।

    এমব্রির করা পূর্বসতর্কতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ হলাম। আমি দ্রুত আমার চোখ সরিয়ে ওর হাতের মাফিনের দিকে ফেরালাম। চমৎকার গন্ধ আসছে ওগুলো থেকে যেন ফ্রেশ ব্লুবেরী।

    ওহ্, এমিলি অবাক হয়ে বলল, কে এ?

    আমি ওর দিকে তাকালাম, যথা সম্ভব চেষ্টা করলাম ওর মুখের বাম পাশে তাকাতে।

    বেলা সোয়ান, শ্রাগ করার ভঙ্গিতে জারেড তাকে বলল, দৃশ্যত, আমাকে আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনার বিষয়বস্তু হতে হয়েছিল। আর কে জানো নাকি?

    এটা জ্যাকব এর ওপর ছেড়ে দাও। সে বিড়বিড় করে বলল। আমার দিকে তাকল, ওর একটু আগের সুন্দর মুখটা আর আগের মত সুন্দর দেখাচ্ছিল না। তাহলে, তুমিই সেই ভ্যাম্পায়ার গার্ল?

    আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম। হ্যাঁ। আর তুমিই বুঝি সেই নেকড়ে গার্ল?

    সে হাসল, এমব্রি আর জারেডও সে হাসিতে যোগ দিল। ওর মুখের বামপাশ লালাভ হয়ে উঠল। মনে হয় আমি তাই। সে জারেডের দিকে ফিরল। স্যাম কোথায়?

    বেলা, আজ সকালে পলকে চমকে দিয়েছিল।

    এমিলি তার সুন্দর চোখ দুটো ধীরে বন্ধ করে ফেলল, ওহ্, পল, সে লজ্জা পেল যেন। তুমি কী মনে কর তাদের আসতে দেরি হবে? আমি মাত্র ডিম রান্নাটা মাত্র শুরু করেছি।

    চিন্তা করো না, এমব্রি ওকে বলল, ওরা যদি দেরি করেও আসে তাহলেও আমরা কোনটাই নষ্ট হতে দেব না।

    এমিলি খিলখিল করে হেসে উঠল এবং ফ্রিজটা খুলল। কোন সন্দেহ নেই, সে বলল। বেলা তুমি কী ক্ষুধার্ত? যাও, মাফিনটা নিয়ে নাও।

    ধন্যবাদ, আমি প্লেট থেকে একটা উঠিয়ে নিলাম। ভীষণ মজার হয়েছে খেতে, খালি পেটে বেশ ভালই লাগল। এমব্রি তৃতীয়বারের মত আরেকটা উঠিয়ে নিল আর পুরোটাই মুখের ভেতর পুরে দিল।

    আরে ভাইদের জন্যও কিছু তো রাখ, এমিলি কাঠের চামচের আগা দিয়ে এমব্রির মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে বলল। কথাগুলো শুনে আমি বেশ আশ্চর্য হলাম।

    শুয়োর, জারেড মন্তব্য করল।

    আমি এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের পরিবারের মত আচরণ দেখছিলাম। এমিলির রান্নাঘরটা চমৎকার সাজানো-গোছানো। সাদা রঙের কাপবোর্ড আর মেঝেটাও কেমন সুন্দর কাঠের বোর্ডের। গোল খাবার টেবিলটা নীল সাদা চীনা পাথরের তৈরি যেটা এখন বর্ণিল সব বনফুলে সাজানো। এমব্রি আর জারেড বোধহয় প্রায় এখানে আসে।

    এমিলি একটা বড়পাত্রে বেশ কয়েক ডজন ডিম ফোঁটাচ্ছিল। ওর শার্টের হাতা গুটানো এবং তখনই আমি খেয়াল করলাম ক্ষতটা ওর ডান হাত পর্যন্তও আছে। এমব্রি যা বলছিল, নেকড়েমানবদের সাথে থাকাটা আসলেই বিপজ্জনক।

    সামনের দরজাটা খুলে গেলে সামকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল।

    এমিলি, এত আবেগ ঝরে পড়ছিল ওর গলা দিয়ে আমি রীতিমত বিব্রতবোধ করলাম, খানিকটা অপ্রস্তুতও হলাম। দেখলাম সে ওকে রুমের একপাশে নিয়ে গিয়ে তার বিশাল হাতে ওর মুখটা ছুঁয়ে দিল। ওর মুখের ক্ষতস্থানের জায়গায় একটা চুমু দিল, তারপর বাম গালে এবং ঠোঁটে চুমু খেল।

    হে, করছ কী, এর কোনটাই পারব না। জারেড বলল, আমি কিন্তু খাচ্ছি।

    তাহলে চুপ কর আর খেতে থাক। স্যাম শ্রাগের ভঙ্গিতে বলল। সে এমিলির মুখের ক্ষতভরা জায়গাটায় আবারও চুমু খেল।

    এটা যে কোন রোমান্টিক মুভিকে হার মানিয়ে দেবে। এটা এতটাই বাস্তব যা ঘোষণা করছিল জীবনের আনন্দ আর সত্যিকারের ভালবাসা। আমি হাতের মাফিনটা নামিয়ে রাখলাম এবং বুকের কাছে দুহাত জড়ো করলাম। ফুলের দিকে তাকিয়ে ওদের শান্তিময় মুহূর্তকে এড়িয়ে আমি একে একে আমার দুঃখের কথা স্মরণ করলাম।

    আমি সত্যি কৃতজ্ঞ যে জ্যাকব আর পল দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকার কারণে আমার ভাবনা ছুটে গেল, আমি শকড হলাম যখন দেখলাম ওরা হাসছে। আমি যখন ওদের দেখছিলাম তখন পল জ্যাকবের ঘাড়ে একটা গুতো দিল, জ্যাকবও পাল্টা ওর পেটের কাছ আরেকটা দিল। ওরা আবারও হেসে উঠল। ওদের দুজনকেই একই রকম সুখী দেখাচ্ছিল।

    জ্যাকব সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজল, এবং যখন দেখল আমি রান্না ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে আছি তখন সে থমকে তাকাল।

    হেই, বেলা এস আনন্দপূর্ণ গলায় আমাকে ডাকল। সে দুটো মাফিন তুলে নিয়ে আমার পাশে এসে বসল। আগের ঘটনাটার জন্য দুঃখিত। সে চাপা স্বরে বিড়বিড় করল, এখানে কোন সমস্যা হচ্ছে?

    চিন্তা করো না, আমি ভালোই আছি। চমৎকার হয়েছে মাফিনটা। আমি নামিয়ে রাখা মাফিনটা উঠিয়ে নিলাম, আবার ডিমের কোণা খুঁজতে লাগলাম। জ্যাকব ফিরে আসায় আমার বুকটা শান্তিতে ভরে গেল।

    ওহ হো! জারেড আমাদের বাধা দিয়ে বলল।

    আমি তাকালাম আর দেখলাম সে আর এমব্রি গভীর মনোযোগে পলের কুনই থেকে কব্জির আগ পর্যন্ত বিস্তৃত একটা লালচে দাগ দেখছে। এমব্রি গুঙ্গিয়ে উঠল।

    পনের ডলার। সে চিৎকার দিল।

    তুমি এটা করেছ? বাজির কথা মনে পড়তেই আমি ফিসফিসিয়ে জ্যাকবকে জিজ্ঞেস করলাম।

    আমি সামান্যই আঘাত দিয়েছি। সে সূর্যডোবার সাথে সাথেই ঠিক হয়ে যাবে।

    সূর্যডোবার পরে মানে? পলের হাতের অদ্ভুত দাগের দিকে তাকাতে তাকাতে আমি দুর্বল গলায় প্রশ্ন করলাম।

    নেকড়ের ব্যাপার-স্যাপার আর কি, জ্যাকব ফিসফিসিয়ে বলল।

    আমি মাথা নাড়লাম, ওদিকে না তাকানোর যথা সম্ভব চেষ্টা করলাম।

    তুমি ঠিক আছ তো? আমি বন্ধ করা দম নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

    একটা দাগও পড়তে দেই নি। ওর অভিব্যক্তি ছিল নিখুঁত।

    এই যে শোন সবাই, ছোট ঘরের ভেতর আলাপ করতে থাকা সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য স্যাম জোরাল গলায় বলল। এমিলি চুলার কাছে ছিল। সে ডিমের মিশ্রণটিকে বড় একটা হাড়িতে ঢালছিল। স্যামের একটা হাত ওর পিঠের দিকে স্পর্শ করা। খানিকটা সন্দেহ মেশানো ধারণায় বলল, জ্যাকব আমাদের একটা তথ্য দেবে।

    পল আশ্চর্য হল বলে মনে হল না। জ্যাকব হয়ত ইতোমধ্যে ওকে বলেছে সে বিষয়ে এবং হয়ত স্যামকেও বলেছে। অথবা… ওরা হয়ত জ্যাকবের মাথার ভেতরের চিন্তা এইমাত্র পড়ে ফেলেছে।

    আমি জানি লালচুলো কী চায়, জ্যাকব সরাসরি জারেড এবং এমব্রির দিকে তাকিয়ে বলল। যে কারণে আমি আগেই এটা তোমাদের বলতে চেয়েছিলাম। সে পলের চেয়ারের একটা কোণায় লাথি দিলে ওটা সামান্য সরে গেল।

    আর? জারেড জানতে চাইল।

    জ্যাকবের মুখটা সিরিয়াস হয়ে গেল। সে তার বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে শুধু এ কারণে না যে আমরা সেই কালো চুলো রক্তচোষাটাকে খুন করেছি বলে। কুলিনরা। গত বছর তার নতুন বন্ধু পেয়েছে, এজন্য এবার সে বেলার পেছনে লেগেছে।

    এটা আমার কাছে উল্লেখযোগ্য কোন সংবাদ ছিল না তবু আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।

    জারেড, এমব্রি আর এমিলি মুখ হা করে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

    সে সামান্য একটা মেয়ে, এমিলি বলল।

    আমি সে অর্থে এ কথা বলিনি। কিন্তু এ কারণেই সে রক্তচোষাটা চেষ্টা করছে ওর পিছু নিতে। সে দুর্গে ঢোকার জন্য মুখিয়ে আছে।

    তারা বেশ কিছু সময়ের জন্য আমার দিকে মুখ হা করে তাকিয়ে রইল। আমি মাথা দোলালাম।

    চমৎকার, জারেড ঠোঁটের কোণে একটা মৃদু হাসি ঝুলিয়ে শেষ পর্যন্ত বলল। আমরা তাহলে একটা টোপ পেয়েছি।

    অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে জ্যাকব ক্যান খোলার চিমটেটা জারেডের মাথার দিকে ছুঁড়ে মারল। আমার কল্পনাকে হার মানিয়ে জারেডের হাত আরও গতিতে দ্রুত উঠে গেল, সেটা ওর মুখে আঘাত করার ঠিক আগ মুহূর্তে সে লুফে নিল।

    বেলা কোন টোপ নয়।

    তুমি জানো আমি কী বোঝাতে চাইছি। সে বিব্রত হয়ে বলল।

    তাহলে আমরা আমাদের পরিকল্পনা বদলাচ্ছি। স্যাম ব্যাপারটা উপেক্ষা করে বলল। আমরা চেষ্টা করছি ওর জন্য কয়েকটা গর্ত খুড়তে। আমি দেখতে চাই ও সে গর্তে পড়ে কী না। গর্তগুলো তরলে ভর্তি করে রাখবো, যদিও আমি সেটা পছন্দ করি না। কিন্তু যদি এমন হয় যে সত্যি সে বেলার পেছনে লেগেছে, তাহলে খুব সম্ভবত সে আমাদের বিভক্ত হয়ে যাওয়া সদস্যদের কারণে একটা সুযোগ পেতে চাইবে।

    কুইলও আমাদের সাথে যোগ দিতে আসছে। এমব্রি বিড়বিড় করে বলল। তারপর আমরা পুরোপুরি সেগুলো উপচে দিতে পারব।

    প্রত্যেকে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি জ্যাকবের মুখের দিকে তাকালাম। ভীষণ অসহায় দেখাচ্ছে ওকে। যেন এটা গতকালই তার ঘরের সামনে ঘটেছে। এই চমৎকার কিচেনে তাদের মুখটা যতটাই স্বস্তির মনে হোক না কেন, কেউ বন্ধুর একই রকম পরিণতি চায় না।

    বেশ, আমরা আগেরটা কাউন্ট করব না। সে বেশ নিচু গলায় বলতে লাগল। পরক্ষণেই আবার স্বাভাবিক গলায় বলল, পল, জারেড আর এমব্রি বাইরের দিকটা দেখবে, আর জ্যাকব আর আমি ভেতরের দিকটা। ওকে ফাঁদে না ফেলা পর্যন্ত আমাদের স্বস্তি নেই।

    আমি খেয়াল করলাম স্যাম এত ছোট একটা দলে থাকবে সেটা সে চাচ্ছে না। ওর দুঃশ্চিন্তার কারণে আমি জ্যাকবকে নিয়েও চিন্তিত হলাম।

    স্যামের সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেল। জ্যাকব মনে করে এটাই সবচেয়ে ভাল হবে যদি তোমরা এখানে এই লা পুশে থাক। এ ক্ষেত্রে সে ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না যে তোমরা কোথায় আছ।

    বাবার কী হবে? আমি জানতে চাইলাম।

    প্রতিরক্ষা বাহিনী এখনও কাজে আছে, জ্যাকব বলল। আমি মনে করি যখন তোমার বাবা কাজে থাকবে না তখন হ্যারি আর বিলি তাদের সরাতে পারবে।

    দাঁড়াও, দাঁড়াও, একহাত তুলে স্যাম বলল, ওর চোখ একবার এমিলি আরেকবার আমার দকে নিবদ্ধ হল। জ্যাকব যেটা চিন্তা করেছে সেটা বেশ চমৎকার মনে হচ্ছে, কিন্তু তোমাদেরও একটা মতামত আছে। এই ঝুঁকি বহনের ক্ষেত্রে তোমাদের দুজনকেই বেশ সিরিয়াস হতে হবে। আজ সকালেই তো দেখতে পেয়েছ, সামান্য একটা ব্যাপার কত ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করল। আর কত দ্রুত ওরা হাত ছাড়া হয়ে গেল। তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তোমরা আমাদের সাথে থাকতে পার, কিন্তু আমরা তোমাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারব না।

    আমি ওকে আঘাত করব না। জ্যাকব মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বলল।

    স্যাম এমন ভান করল যে সে ওর কথা শুনতেই পায়নি। আর কোন জায়গা যদি থাকত যেখানে তোমরা নিরাপদ…

    আমার ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। আমি যেখানে যাব সেখানে কী আরেকজনকেও বিপদে ফেলব না? আমি ভিক্টোরিয়াকে অন্য কোথাও দাবড়িয়ে নিতে চাই না, আমি ফিসফিসিয়ে বললাম।

    স্যাম মাথা নাড়ল। ঠিকই বলেছ। ওকে এখানে আনাটাই সবচেয়ে ভাল হবে, আমরা এখানেই ওকে শেষ করতে পারি।

    আমি কুণ্ঠাবোধ করলাম। আমি চাই না জ্যাকব কিংবা ওদের কেউ একে শেষ করুক। আমি জ্যাকের মুখের দিকে তাকালাম। ওকে বেশ রিলাক্স দেখাচ্ছে। এমনও হতে পারে নেকড়ের জাদুগুণে সে আমার মাথার ভেতরের সবতথ্য পড়ে ফেলেছে, আমি এখন যা ভাবছি তা জেনে গেছে। আমি আসলে অন্যমনষ্কভাবে ভ্যাম্পায়ারদের কথা ভাবছিলাম।

    তোমাদের সবাইকে সাবধান থাকতে হবে, ঠিক আছে? আমি যথা সম্ভব গলায় আওয়াজ তুলে বলার চেষ্টা করলাম।

    বসে থাকা সবাই হেসে খুন হওয়ার জোগাড়। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল- বিশেষত এমিলি। আমার সাথে ওর চোখাচোখি হল। ওর মুখের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটাও চোখে পড়ল। সে এখনও অনেক সুন্দর কিন্তু ও যখন কোন ব্যাপারে মেতে ওঠে তখন ওকে আমার চেয়েও ভয়াবহ দেখায়। ওদের ভালবাসা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো আমাকে আরেকবার বিদ্ধ করার আগেই আমাকে চোখ ফেরাতে হল।

    খাবার তৈরি। সে ঘোষণা দিল। কৌশলগত আলাপগুলো মুহূতে অতীত হয়ে গেল। সবাই হুড়মুড় করে খাবার টেবিল ঘিরে বসল। এতটাই ঘিঞ্জি আর বিপজ্জনক মনে হচ্ছিল যে আরেকটু হলে বুঝি ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় আছে। এমিলি খুব অল্প সময়েই বিশাল সাইজের ডিমের অমলেট এনে দিল। এমিলি আমার মত কাউন্টার টেবিলের উপর ঝুঁকে ছিল। সে বিছানার পাশের টেবিল এড়িয়ে গেল। তাদেরকে স্নেহাতুর চোখে দেখতে লাগল। তার অভিব্যক্তিতে এটা স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছিল যে এটা তার পরিবার।

    মোটামুটি এই ছিল, যা আমি একটি নেকড়েমানবদের পরিবার থেকে আশা করেছিলাম।

    আমি সেদিনটা লা পুশেই বিলিদের বাসায় অন্যান্যদের সাথে কাটিয়ে দিলাম। তিনি স্টেশনে বাবাকে ফোনে একটা মেসেজ দিয়েছিলেন। আর বাবাও ডিনারটাইম হওয়াতে দুটো বড় পিৎজ্জা নিয়ে দেখা করলেন। একদিক থেকে বেশ ভালই হয়েছিল যে পিৎজ্জা দুটো আকারে বেশ বড় ছিল। জ্যাকব পুরো একটা একাই খেয়ে সাবাড় করে ফেলল।

    আমি বাবাকে আমাদের দুজনের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখেছিলাম। ব্যাপারটা জ্যাকবের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। বাবা ওর চুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলেন। জ্যাকব শ্রাগ করে বলল যে এটা হচ্ছে কেবলই সুবিধার জন্য।

    আমি জানতাম যখনই আমি আর বাবা বাড়ির দিকে রওনা হব, তখন জ্যাকবও বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নেকড়েমানবরূপে আমাদের সাথে সাথে আসবে। ও আর ভাইরা সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি রাখবে যে ভিক্টোরিয়া আসছে কিনা? কিন্তু গতরাত থেকে তারা ওকে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল, খুঁজতে খুঁজতে কানাডার দিকে অর্ধেকটা পথ পেরিয়ে গেল। জ্যাকব ধরে নিল সে আক্রমণের আরেকটা নতুন ফন্দি আটছে।

    আমি আশা ছাড়লাম না। সে আমাদের প্রতি হাল ছেড়ে দিয়েছে। আমার সে ধরনের ভাগ্যের দরকার নেই।

    ডিনারের পর জ্যাকব আমার সাথে সাথে ট্রাকের কাছে এগিয়ে দিতে আসল। গাড়ির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে উঠি উঠি করেও উঠলাম না। অপেক্ষা করলাম যতক্ষণ না বাবা ড্রাইভিং সিটে উঠে বসেন।

    আজ রাতে ভয় পেও না। বাবা সিট বেল্ট বাধা নিয়ে বিপত্তি পড়লে সে ফাঁকে জ্যাকব আমাকে বলল। আমরা বাইরে থাকব। নজর রাখব।

    আমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তাই করব না। আমি কথা দিলাম।

    তুমি আসলে একটা বোকা মেয়ে। শিকারি ভ্যাম্পায়ারগুলো একটা মজার বিষয়। যত ঝামেলার এরাই মূল।

    আমি মাথা নাড়লাম। আমি যদি বোকা হয়ে থাকি তবে তাই, কিন্তু তুমি তো তারও চেয়ে বিপজ্জনকভাবে ভারসাম্যহীন।

    আমি চেষ্টা করব।

    বাবা অধৈর্য হয়ে হর্ণ বাজালেন।

    কাল দেখা হবে। জ্যাকব বলল। ঘুম ভাঙতেই চলে এসো।

    তাই হবে।

    বাবা বাড়ির দিকে গাড়ি চালিয়ে নিতে লাগলেন। আমি রিভিউ মিরের দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতেই চমকে উঠলাম, স্যাম ও জারেড আর এমব্রি ও পল অন্ধকারে আমাদের সাথে সাথে এগিয়ে আসছে। জ্যাকব এখনই তাদের সাথে যোগ দিয়েছে কিনা এ ব্যাপরটাও আমাকে রোমাঞ্চিত করল।

    বাড়ি পৌঁছে যথা সম্ভব দ্রুতগতিতে আমি সিঁড়ে বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। বাবা আমার ঠিক পেছনেই ছিলেন।

    এসব কী ঘটে চলেছে বেলা? আমি পালানোর আগেই বাবা জানতে চাইলেন। আমি তো মনে করেছিলাম জ্যাকব একটা গ্যাং এর সদস্য আর তোমরা দুজন তর্কাতর্কি করছিলে।

    আমরা কী তাই করেছি নাকি?

    আর গ্যাংএর ব্যাপারটা?

    আমি জানি না টিন এজদের ব্যাপার স্যাপার কেই বা বুঝতে পারে? এখানে আসলে একটা রহস্য আছে। তারপর দেখ স্যাম আর ওর বাগদত্তার সাথেও দেখা হয়ে গেল। ওদের আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি ত্যাগের ভঙ্গি করলাম। মনে হয় সবটায় একটা ভুল বোঝাবুঝি ঘটছে।

    বাবার চোহারাটা বদলে গেল। আমার এটা কানে আসেনি যে সে আর এমিলি এটা অফিসিয়ালভাবেই করেছে। যাই হোক, ভালোই। দুঃখী মেয়েটা।

    তুমি কী জানো ওর এটা কীভাবে হয়েছে?

    ভালুকের দ্বারা জখম হয়েছিল, উত্তরের দিকে স্যামন মাছের প্রজননের সময় বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা। এটা এখন থেকে একবছর আগে ঘটেছিল। শুনেছিলাম স্যাম এতে খুব ভেঙে পড়েছিল।

    সত্যি বিভীষিকাময়। আমি প্রতিধ্বনির মত করে বললাম। এক বছর আগে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা ঘটেছিল যখন লা পুশে একটাই মাত্র নেকড়েমানব ছিল। আমি কেঁপে উঠলাম এই ভেবে, যখন স্যাম এমিলির মুখের দিকে তাকায় তখন ওর কেমন অনুভূতিই না জানি হয়।

    সে রাতে আমি শুয়ে শুয়ে সমস্ত দিনের ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো ভাবতে লাগলাম। বিলি, জ্যাকব আর বাবার সাথে ডিনার, ব্লাকদের বাড়িতে সারাটা বিকেল কাটানো, জ্যাকবের কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য উদগ্রীব অপেক্ষা, এমিলির রান্নাঘর, আজকের নেকড়ে লড়াই, বিচে জ্যাকবের সাথে কথাবার্তা।

    আমি ভাবতে লাগলাম আজ সকালে জ্যাকব ভণ্ডামি সম্পর্কে যা বলছিল। আমি অনেক সময় ধরে তা নিয়ে ভাবলাম। আমি একটা ভণ্ড এই চিন্তাটা আমার ভাল লাগল না। শুধু এই ব্যাপারটাই কী আমার সম্পর্কে মিথ্যা ছিল।

    আমি একটা ছোট্ট বলের মত কুঁকড়ে গেলাম। না। এডওয়ার্ড কোন খুনি নয়। ওর অন্ধকার জীবনে ও কখনও কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে খুন করেনি।

    কিন্তু এটা ছাড়া ওর কী-ই বা আর করার ছিল? কী হত যদি সে সময় আমি ওকে চিনতাম, সে কী অন্যান্য ভ্যাম্পায়ারের মত ছিল না? কী হত এখনকার মত লোকজন বনকে নিয়ে বিভীষিকায় থাকলে? এগুলো কী আমাকে ওর কাছ থেকে আলাদা করে রাখতে পারত?

    আমি ব্যথা ভরা মনে দুদিকে মাথা ঝাঁকালাম। আমি নিজেকে নিজে স্মরণ করিয়ে দিলাম ভালবাসা বিচারশক্তিহীন। যতবেশি কাউকে ভালাবাসা যায়, ততই সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়।

    আমি কুঁকড়ে গেলাম এবং আরো কিছু নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করলাম। আমি জ্যাকব ও তার ভাইদের ব্যাপারে ভাবছিলাম। যারা অন্ধকারের ভেতরে দৌড়ে গিয়েছিল। আমি নেকড়েমানবের কল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। যেগুলো রাতে অদৃশ্য হয়ে আমাকে বিপদ থেকে পাহারা দেয়। যখন আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমি সেই বনে আবার দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু আমি বিস্মিত হলাম না। আমি এমিলির ক্ষত বিক্ষত হাত ধরে ছিলাম। আমরা ছায়ার দিকে মুখ করে ছিলাম। আর উদ্বিগ্ন মুখে আমাদের নেকড়ে মানবদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

    .

    ১৫.

    ফর্কে আবার বসন্ত দোলা দিয়েছে। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে এটা হজম করতে বিছানায় কয়েক মুহূর্ত বসে রইলাম। গত বসন্তেও আমি একজন ভ্যাম্পায়ারের শিকারের কবলে পড়েছিলাম। আমি আশা করছি এই ব্যাপারটা একটা প্রথার মত হয়ে দাঁড়াবে না।

    এরই মধ্যে লা পুশে আমি এই ধরনের ব্যাপারের মধ্যে পড়ে গেছি। আমি রবিবারের অধিকাংশ সময়ই সমুদ্র সৈকতে কাটিয়েছি। সে সময়ে বাবা চার্লি ব্লাকদের বাড়িতে বিলির সাথে ছিলেন। আমি জ্যাকবের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু জ্যাকবের অন্য জিনিস করার ছিল। সে কারণেই আমি একাকী ঘুরেছি। বাবার কাছ থেকে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম।

    যখন জ্যাকব আমাকে নামিয়ে দিয়ে আসতে গেল, সে আমাকে সময় দিতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইল। সে আমাকে বলল, তার নিয়মকানুন সবসময় এমন উল্টাপাল্টা ছিল না। কিন্তু যতক্ষণ ভিক্টোরিয়া না থামবে, নেকড়েরা সবসময় রেড এলার্ট হয়ে থাকবে।

    আমরা সমুদ্র সৈকত দিয়ে হাটার সময় সে সবসময় আমার হাত ধরে রইল।

    এটা আমাকে কিছুটা গোমড়ামুখো করে রাখল। জারেড বলেছিল জ্যাকবের গার্লফ্রেন্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে। আমি বুঝতে পারলাম বাইরের থেকে দেখলে এটা সত্যিই ঠিক সেরকমই দেখায়। যতক্ষণ পর্যন্ত জ্যাকব এবং আমি জানতে পারছি সত্যিকারের ব্যাপারটা কি, আমার এই রকমের ব্যাপারে বিরক্ত হওয়ার কোন দরকার নেই। হয়তো তারা সেটা নাও ভাবতে পারে, যদি আমি না জানি জ্যাকব অন্য জিনিসকে ভালবাসে। কিন্তু তার হাত আমার কাছে বেশ উষ্ণ ও আরামদায়ক মনে হচ্ছিল। আমি এটার প্রতিবাদ করলাম না।

    আমি মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কাজ করলাম। আমি নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছেছি কিনা জ্যাকব সেটা মোটরসাইকেল নিয়ে দেখতে এল। মাইক সেটা লক্ষ্য করল।

    তুমি কি লা পুশের ওই ছেলের সাথে ডেটিং করছ নাকি? ওই গাধাটার সাথে? সে বিরক্তকর এক ধরনের স্বরে আমাকে প্রশ্ন করল।

    আমি শ্রাগ করলাম। এটা তোমার ওই টেকনিক্যাল দিক দিয়ে বলা যাবে না। আমি যদিও আমার অধিকাংশ সময়ই জ্যাকবের সাথে কাটাই। সে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু।

    ঈর্ষায় মাইকের চোখ সরু হয়ে গেল। নিজেকে হাস্যকর করো না বেলা। ওই ছেলের মাথা তোমার জন্য খারাপ হয়ে আছে। ও তোমার নখের যোগ্য নয়।

    আমি জানি। আমি নিঃশ্বাস নিলাম। জীবন জটিল ব্যাপার।

    এবং মেয়েরা নির্দয়। মাইক নিঃশ্বাস চেপে বলল।

    আমি মনে করলাম এটা আমার প্রতি তার সহজ ধারণা।

    সেই রাতে স্যাম আর এমিলি বাবা আর আমার সাথে বিলির বাড়িতে মিলিত হলো। এমিলি একটা কেক নিয়ে এসেছিল যেটা চার্লির মত কঠিন মানুষের মন জয় করেছিল। আমি দেখতে পেলাম, কথাবার্তা স্বাভাবিক গতিতে সাধারণ বিষয় নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। চার্লির লা পুশের ওই গ্যাংকে উঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই।

    জ্যাকব আর আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম। আমাদের কিছু গোপনীয় ব্যাপার আছে। আমরা তার গ্যারেজে গিয়ে র‍্যাবিট গাড়িতে বসলাম। জ্যাকব তার মাথা পিছনে হেলিয়ে দিয়েছিল। তাকে কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।

    তোমার কিছুটা ঘুমের দরকার জ্যাক।

    সবকিছু শেষ হলে আমি ঘুমের জন্য যাব।

    সে আমার কাছে এসে আমার হাত তুলে নিল। তার ত্বকের স্পর্শ আমাকে মোহিত করছিল।

    এটা সেই যেকোন একটা নেকড়ের ব্যাপার স্যাপার? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। এই উত্তাপ, আমি এইটা বুঝাতে চেয়েছি।

    হ্যাঁ। আমরা সাধারণ মানুষের চেয়ে কিছুটা উষ্ণ রক্তের হয়ে থাকি। আমি কখনও মোটেই শীতল হই না। আমি এরকমভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি- সে তার খালি গায়ের দিকে দেখাল তুষারঝড়ের মধ্যেও এটা আমাকে বিরক্ত করতে পারে না। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে থাকি সেখানে বরফ কুঁচি পানিতে পরিণত হয়।

    এবং তোমরা সবাই খুবদ্রুত সেরে ওঠো- সেটাও নেকড়ের ব্যাপারস্যাপার, তাই নয় কি?

    হ্যাঁ। দেখতে চাও? এটা খুবই ঠাণ্ডা। তার চোখ খুলে গেল এবং সে মুখ কুঁচকাল। সে আমার আরো কাছের গ্লোভ কম্পার্টমেন্টের কাছে এল এবং আমার চারিদিকে এক মিনিটের জন্য কি যেন খুঁজল। তার হাতে একটা পকেট ছুরি নিয়ে বেরিয়ে এল।

    না। আমি দেখতে চাই না। আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম যখন আমি বুঝতে পারলাম সে কি করার চিন্তা ভাবনা করছে। ওটা এখনই সরাও।

    জ্যাকব মুখ চেপে হাসল। কিন্তু সে ছুরিটা যেখান থেকে বের করেছিল সেখানে আবার রাখল। ঠিক আছে। এটা খুব ভাল ব্যাপার যে আমরা সেরে উঠি যদিও। তুমি কোন ডাক্তারকে দেখাতে যাচ্ছ যখন তুমি এরকম তাপমাত্রায় উঠে গেছে যেটা মৃতের মত।

    না। আমি অনুমান করছি না। আমি সেটা সম্বন্ধে মিনিট খানেক ভাবলাম।

    এবং এতটাই বড় হয়ে যাওয়া–সেটাও এটার একটা অংশ? এটাই কি তাই যে কারণে তোমরা কুইলকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত?

    সেটাই এবং ঘটনা হলো কুইলের দাদা জানায় যে এই ছেলে তার কপালের উপর রেখে ডিম ভাজতে পারে। জ্যাকবের মুখ আশা শূন্য হয়ে গেল। এটা এখন আর দীর্ঘ নয়। সেখানে কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই… এটা শুধু গড়তে থাকে। গড়তে গড়তে এবং তারপর হঠাৎ সে থেমে গেল। আবার কথা শুরুর আগে সে কয়েক মুহূর্ত দেরি করল, কিছু কিছু সময়, যদি তুমি সত্যিই আপসেট হয়ে যাও অথবা এই জাতীয় কিছু, সেটা তাহলে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমি কখনও কোন কিছু নিয়ে আপসেট হই না আমি সুখী। সে তিক্তভাবে হাসল তার কারণ তুমি। সে কারণেই এটা খুব তাড়াতাড়ি আমার ক্ষেত্রে ঘটতে পারছে না। আমার ভেতরে এটা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। আমি যেন একটা টাইম বোমার মত। তুমি কি জানো কি আমার ভেতরে গড়ে উঠছে? আমি সেই মুভি থেকে ফিরে এসেছিলাম এবং বাবা আমাকে জানাল আমাকে বেশ দুশিন্তাগ্রস্ত দেখাচ্ছে। সেটাই সবকিছু। কিন্তু আমি শুধু যেন থাপ্পড় খেয়েছিলাম। তারপর আমি বিস্ফোরিত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি প্রায় আমার বাবার মুখের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়েছিলাম। আমার নিজের বাবা! সে কাঁপতে লাগল। তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল।

    এটা কি সত্যিই খারাপ, জ্যাক? আমি উদ্বিগ্নতার সাথে জিজ্ঞেস করলাম। আশা করছিলাম আমি যে কোনভাবে তাকে সাহায্য করতে পারব। তুমি কি দুর্দশার মধ্যে আছ?

    না। আমি কোন কষ্টের মধ্যে নেই। সে আমাকে বলল। এখন আর নেই। তুমি জানো এখন আর নেই। সেটা আগে খুবই কঠিন অবস্থা ছিল। সে এমনভাবে বুবল যাতে তার থুতনি আমার মাথার উপরে থাকে।

    সে এক মুহূর্তের জন্য নিরব হয়ে থাকল। আমি বিস্মিত সে কি বিষয় নিয়ে ভাবছিল। হতে পারে আমি সেটা জানতে চাই না।

    সবচেয়ে কঠিন অংশটা কি? আমি ফিসফিস করে বললাম। এখনও আশা করছি তাকে সাহায্য করতে পারব।

    সবচেয়ে কঠিনতম অংশটা হচ্ছে অনুভূতি…নিয়ন্ত্রণহীণ অনুভূতি সে ধীরে ধীরে বলল। অনুভূতি এমন যেটা সম্বন্ধে আমি নিজেও নিশ্চিত নই- এমনটি যেন হতে পারে তুমি আমার পাশে থাকবে না। এমনটি যেন কেউ আমার পাশে থাকবে না। এমনটি যেন আমি একটা দৈত্য যে যেকোন মুহূর্তে যে কাউকে আঘাত করতে পারি। তুমি এমিলিকে দেখেছো। স্যাম শুধুমাত্রও এক সেকেন্ডের জন্য তার নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল… এবং এমিলি খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। এখন সেখানে আর কোন কিছুই নেই যেটার দ্বারা সে আবার এটা ঠিক করতে পারে। আমি তার চিন্তাভাবনা শুনতে পাই- আমি জানি সেটা কিরকম অনুভূতি হয়…

    কে দুঃস্বপ্নের মধ্যে যেতে চায়, কেইবা একজন দৈত্য হতে চায়?

    এবং তারপর, যে পথে এটা খুব সহজেই আমার কাছে আসে, যেভাবে তাদের বাকি সবার চেয়ে অনেক বেশি ভাল সেটা কি আমাকে অনেক কম মানুষে পরিণত হলে এমব্রি অথবা স্যামের চেয়ে? মাঝে মাঝে আমার ভয় করে যে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি।

    এটা কি খুব কঠিন? নিজেকে আবার খুঁজে পাওয়া?

    প্রথমত সে বলল এরকম আগে পিছে যাওয়ার জন্য কিছুটা প্রশিক্ষণের দরকার হয়। কিন্তু এটা আমার কাছে অনেক সহজ বিষয়।

    কেন? আমি বিস্মিত।

    কারণ ইফ্রাইম ব্লাক হচ্ছে আমার বাবার দাদা। আর অন্য দিকে কুইল এরিয়েটা আমার মায়ের দাদা।

    কুইল? আমি দ্বিধান্বিতভাবে জিজ্ঞেস করলাম।

    তার বড় দাদার দাদা। জ্যাকব বিষয়টা পরিষ্কার করল তুমি কি জানো কুইল হচ্ছে আমার দ্বিতীয় কাজিন।

    কিন্তু কে তোমার দাদার পরদাদা এসব বিষয়গুলো কেন আসছে?

    কারণ ইফ্রাহিম এবং কুইল হচ্ছে শেষ দল। লেভি উলি হচ্ছে তৃতীয় দল। এটা দুই দিক থেকেই আমার রক্তে আছে। আমার কখনও কোন সুযোগ নেই। যেমনটি কুইলেরও কোন সুযোগ নেই।

    তার অনুভূতি যেন অভিব্যক্তি শূন্য।

    এর ভেতরে সবচেয়ে ভাল অংশটি কি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আশা করছিলাম আমি তাকে খুশি করে তুলতে পারব।

    সবচেয়ে ভাল অংশ সে হঠাৎ হেসে ফেলে বলল সেটা হচ্ছে গতি।

    মোটরসাইকেলের চেয়ে বেশি?

    সে মাথা নোয়াল। প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সেখানে কোন তুলনা নেই।

    কতটা দ্রুত তুমি পার…?

    দৌড়ানো? সে আমার প্রশ্ন শেষ করল যথেষ্ট দ্রুত। আমি এটার পরিমাপ কি দিয়ে করব? আমি কল্পনা করতে পারি এটা অন্য যে কারোর কাছে যা বোঝাবে তোমার কাছে তার চেয়ে বেশি বোঝাবে।

    এটা আমার কাছে কিছু একটার অর্থ বহন করে। আমি সেটার কল্পনা করতে পারি না। নেকড়েরা ভ্যাম্পায়ারের চেয়ে অনেক জোরে দৌড়াতে পারে। যখন কুলিরা দৌড়ায়, তারা সবাই কিন্তু গতির কাছে অদৃশ্য হয়ে যায়।

    তো, আমাকে এমন কিছু বলো যেটা আমি জানি না। সে বলল, ভ্যাম্পায়ার সম্বন্ধে কিছু বল। তুমি কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাক? এটা কি তোমাকে ভীত করে না?

    না। আমি শান্ত স্বরে বললাম।

    আমার কণ্ঠস্বরের ঝাঁঝ তাকে কয়েক মিনিটের জন্য ভাবতে বাধ্য করল।

    বল, কেন তোমার সেই রক্তচোষা সেই জেমসকে হত্যা করেছিল, যাই হোক? সে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল।

    জেমস আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করছিল– এটা তার কাছে একটা খেলার মতই ছিল। সে হেরে গিয়েছিল। তুমি কি গত বসন্তে যখন আমি ফনিক্সে হাসপাতালে ছিলাম সেটার কথা মনে করতে পার?

    জ্যাকব গাঢ় করে শ্বাস নিল। সে ততটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিল?

    সে খুবই কাছে চলে এসেছিল। আমি সেই ভয়ের ব্যাপারটা মনে করলাম। জ্যাকব সেটা লক্ষ্য করল। কারণ আমি যে হাতটা নাড়ছিল সে সেইটা ধরে রাখা ছিল।

    সেটা কি ছিল? সে হাতটা ধরে পরীক্ষা করতে লাগল। এটা তোমার সেই মজার ক্ষত, সেই ঠাণ্ডা একটা। সে আমাকে খুব কাছ থেকে দেখতে লাগল। নতুন দৃষ্টিতে এবং শ্বাস নিল।

    হ্যাঁ। এটা তাই যেটা তুমি ভাব। আমি বললাম জেমস আমাকে কামড়ে দিয়েছিল।

    তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তার মুখ অদ্ভুতভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেল। তার ত্বকের রঙ পরিবর্তিত হয়ে গেল। তাকে দেখে মনে হলো সে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

    কিন্তু যদি তোমাকে সে কামড়ে দেয়…? তুমিও কি তাহলে হবে না…? সে তোক গিলল।

    এ্যাডওয়ার্ড আমাকে দ্বিতীয়বারের মত বাঁচায়। আমি ফিসফিস করে বললাম। সে চুষে শিরা থেকে রক্ত বের করে ফেলে। তুমি জানো, একটা র‍্যাটল সাপের মতই। আমার ক্ষতের ভেতরে ব্যথার স্রোত বয়ে গেল।

    কিন্তু শুধু আমি কাঁপছিলাম না। আমি অনুভব করলাম জ্যাকবের গোটা শরীর আমার পরে কাঁপছে। এমনকি গাড়িটাও কাঁপছে।

    সতর্ক হও, জ্যাক। সহজ হও। শান্ত হও।

    হা। সে বিবর্ণ হয়ে গেল। শান্ত। সে দ্রুতবেগে তার মাথা সামনে পিছনে নাড়তে লাগল। এক মুহূর্ত পর, শুধুমাত্র তার হাত কাঁপছে।

    তুমি ঠিক আছ?

    হা। প্রায় পুরোটাই। আমাকে আরো বেশি কিছু বলো। আমাকে আরো কিছু এ ব্যাপারে ভাবার মত কিছু বল।

    তুমি কি ব্যাপারে জানতে চাও?

    আমি জানি না। সে তার চোখ বন্ধ করল। মনোযোগ দিচ্ছে। আরো অতিরিক্ত কিছু আমি অনুমান করছি। অন্য কোন কুলিনদের মধ্যে কি… অতিরিক্ত মেধা আছে? যেমন ধরো তারা কি মন পড়তে পারে?

    আমি এক সেকেন্ডের জন্য দ্বিধা করলাম। সেটা আমার কাছে এমন মনে হলো যেন সে একজন গুপ্তচরের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছে। তার বন্ধুর কাছ থেকে নয়। কিন্তু আমি যা জানি তা লুকিয়ে রাখার কি কারণ থাকতে পারে? এটা আমার কাছে এখন আর কোন ব্যাপার নয়। এটা তার নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

    সুতরাং আমি তাড়াতাড়ি বললাম। এমিলির ধ্বংসপ্রাপ্ত মুখটা আমার মনে পড়ে গেল। জ্যাকবের চুল আমার হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল। আমি কল্পনা করতে পারি না যে একটা ভংয়কর ক্ষ্যাপা নেকড়ে এই র‍্যাবিট গাড়ির মধ্যে বসে আছে। জ্যাকবের গ্যারেজের সব কিছু শেষ করে দিতে পারে যদি সে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

    জেসপার পারে…তার আশেপাশের মানুষদের আবেগকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটা খারাপ পথে নয়। শুধু কাউকে শান্ত রাখার জন্য করে। সেই জাতীয় জিনিস। এটা সম্ভবত পলকে অনেকখানি সাহায্য করতে পারে। আমি কিছুটা টিজিংয়ের স্বরে যোগ করলাম। এবং তারপর এলিস কোথাও কিছু ঘটতে থাকলে বা ঘটবে সেটা দেখতে পারে। সে ভবিষ্যত দেখতে পারে। তুমি জানো কিন্তু সেটাও পুরোপুরি নয়। সে যে জিনিস দেখতে পারে সেটাও পরিবর্তিত হয়ে যায় যদি কেউ একজন সেই পথ পরিবর্তিত করে দেয়…।

    কীভাবে সে আমার মৃত্যুর ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছিল… এবং সে আমাকে দেখেছিল তাদের একজন হয়ে গেছি। এই দুটো জিনিস কখনওই ঘটে নাই। আরেকটা তো কখনও ঘটবে না। আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমি বাতাসে টেনে নেয়ার মত যথেষ্ট অক্সিজেন পাচ্ছিলাম না।

    জ্যাকব এখন পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে। আমার পাশে খুব শান্তভাবে বসে আছে।

    কেন তুমি সেটা করেছিলে? সে জিজ্ঞেস করল। সে শক্ত করে আমার হাত ধরে রইল। আমি এখনও বুঝতে পারছি না আমি সেখান থেকে নড়ব কিনা। তুমি সেটা করো যখন তুমি আপসেট থাকো, কেন?

    তাদের সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা আমাকে ব্যথিত করে। আমি ফিসফিস করে বললাম। এটা এমনটি যেন আমি শ্বাস নিতে পারি না।…এমনটি যেন আমি অসংখ্য টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছি… আমি ব্যাপারটা জ্যাকবকে কীভাবে বলব সেটা তালগোল পাকিয়ে ফেললাম। আমাদের দুজনের এখন আর কোন গোপন বিষয় নেই।

    সে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। এটা ঠিক আছে। বেলা। এটা ঠিক আছে। আমি আবার আর এটা টেনে আনব না। আমি দুঃখিত।

    আমি ঠিক আছি। আমি শ্বাস নিলাম। এটা সবসময়ে ঘটে থাকে। এটা তোমার দোষ নয়।

    আমরা এক জোড়া হতভাগ্য তালগোল পাকানো জোড়া, তাই নয় কি? জ্যাকব বলল আমাদের কেউ নিজেদেরকে সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারি না।

    দুর্ভাগ্যজনক। আমি সম্মত হলাম। এখনও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

    অন্ততপক্ষে, আমাদের দুজনে একে অন্যের জন্য আছি। সে পরিষ্কারভাবে বলল।

    আমি স্বস্তিবোধ করছিলাম। অন্ততপক্ষে সেখানে সেটা আছে। আমি সম্মত হলাম।

    আমরা এক সাথে থাকলে ভাল থাকি। কিন্তু জ্যাকবের আছে ভয়ানক, বিপজ্জনক কাজ যেটা সে করতে বাধ্য। সে কারণেই আমি প্রায়ই একাকী থাকি। লা পুশে চলে আসি আমার নিরাপত্তার জন্য। সেখানে আমার করার তেমন কিছুই নেই।

    আমি ভয়ানক অনুভব করলাম। সবসময় বিলির ওখানেই সময় কাটাচ্ছি। সামনের সপ্তাহে যে ক্যালকুলাস টেস্ট আসছে সেটার জন্য আমার কিছু পড়াশোনা করা দরকার। কিন্তু আমি অনেকদিন ধরে অংকের ব্যাপারটা তেমন দেখছি না। যখন আমার হাতে সুস্পষ্ট করার কিছু থাকে না। আমি অনুভব করি আমি বিলির সাথে কথোপকথন চালিয়ে যাব। সাধারণ সামাজিক নিয়মকানুন সম্বন্ধে। কিন্তু বিলি আমার সেই চাহিদা পূরণ করে না। সুতরাং আমার সেই ভয়ানকত্ব চলতেই থাকে।

    বুধবার বিকালে আমি একটা পরিবর্তনের জন্য এমিলির বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমত সে একজন বেশ অসাধারণ চরিত্রের মানুষ। এমিলি একজন আনন্দদায়ক মানুষ যে কখনো এক জায়গায় স্থির বসে থাকে না। আমি তার বাড়িতে যেয়ে দেখি সে মেঝে পরিষ্কার করছে। পরে রান্না শুরু করবে। সে ছেলেদের ক্ষুধা একের পর এক বাড়িয়ে চলছে। কিন্তু এটা খুব সহজ বিষয় হয়ে গেছে ছেলেদের কাছে। এটা তার জন্য কঠিন কিছু নয়। সর্বোপরি আমরা দুজনেই এখন নেকড়েমানবের গার্লফ্রেন্ড।

    কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে স্যাম চলে এল। আমি আরো কিছুক্ষণ সেখানে কাটালাম যে নিশ্চিত হতে যে জ্যাকব ভাল আছে। সেখানে কোন সংবাদ নেই। তারপর আমি সেখান থেকে চলে এলাম। তাদের দুজনের ভেতরে যে গভীর ভালবাসা দুজনকে ঘিরে আছে, সেখানে তৃতীয় কারোর প্রবেশাধিকার নেই।

    সে কারণে আমি সেখান থেকে একাকী সমুদ্র সৈকতে চলে এলাম।

    একাকী সময় আমার জন্য ভাল ছিল না। জ্যাকবের নতুন সতোকে ধন্যবাদ। আমি কথা বলছিলাম এবং চিন্তাভাবনা করছিলাম কুলিনদের ব্যাপারে। সেটা কোন ব্যাপার নয় আমি তাদের থেকে কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। আমার অনেক কিছু চিন্ত ভাবনা করার আছে। আমি সত্যিকারের সতোর সাথে এবং বেপরোয়াভাবে জ্যাকব এবং তার নেকড়ে ভাইদের নিয়ে দুশ্চিন্না করছিলাম। আমি চার্লির ব্যাপারে ভীত হয়ে উঠছিলাম। অন্যদিকে তারা প্রাণী শিকার করে বেড়াচ্ছিল। আমি গভীর থেকে গভীরভাবে জ্যাকবের সাথে জড়িয়ে পড়ছিলাম। আমি জানি না এটা কি। যেগুলোর কোন কিছুই বাস্তবসম্মত নয়। আমি এমনকি ভালমত হাঁটতে পারি না। কারণ আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না। আমি একটা পাথরের উপর বসে বলের মত কুঁকড়ে থাকলাম।

    জ্যাকব আমাকে সেই অবস্থায় খুঁজে পেল। আমি তার অভিব্যক্তি দেখে বুঝতে পারলাম সে আমাকে বুঝতে পারল।

    দুঃখিত। সে ঠিক সেই কথাটাই বলল। সে আমাকে মাটি থেকে টেনে তুলল। সে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। আমি তার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি যে আমার ঠাণ্ডা লাগছিল। তার উষ্ণতা আমাকে কাঁপিয়ে তুলল। কিন্তু অন্ততপক্ষে সেখানে সে থাকার কারণে আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম।

    আমি তোমার এই বসন্তের সময়টা নষ্ট করে দিয়েছি। জ্যাকব বিচ থেকে দূরে সরে যেতে যেতে নিজেকে অভিযুক্ত করল।

    না। তুমি তা করেনি। আমার কোন পরিকল্পনা ছিল না। আমি মনে করি না আমার কোন সময় নষ্ট হয়েছে।

    আমি আগামীকাল সকালে ছুটি নেব। অন্যরা আমাকে ছাড়াও বেশ যেতে পারবে। আমরা দুজনে মজাদার কিছু করব।

    এই কথাগুলো শুনে মনে হলো আমার জীবন খুব স্বাভাবিকভাবে চলে যাচ্ছে। মজাদার?

    মজাদার কিছু যেটাই তোমাকে প্রকৃতপক্ষে দরকার, হুম… সে আমাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার চোখ তারপর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইল।

    পেয়ে গেছি! সে চেঁচিয়ে রইল। আরেকটা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য।

    তুমি কি নিয়ে কথা বলছ?

    সে আমার হাত ছেড়ে দিল এবং বিচের দক্ষিণ দিকে নির্দেশ করল। সেদিকে সমুদ্রের খাড়ির কাছে অর্ধ চাঁদের মত পাথর ছড়িয়ে আছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।

    আমি কি তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করি নাই যে ক্লিফ ডাইভিংয়ে নিয়ে যাব?

    আমি কাঁপতে লাগলাম।

    হা- এটা কিছুটা শীতল হতে পারে- এতটাই হবে না যতটা আজকে ঠাণ্ডা। তুমি কি আবহাওয়া পরিবর্তিত হচ্ছে সেটা অনুভব করতে পারছ? ওই চাপটা? আগামীকাল বেশ উষ্ণ হতে থাকবে। তুমি এটার জন্য উপযুক্ত হবে?

    সেই কালো জল আমাকে কোন আমন্ত্রণ জানালো না। এই দিক থেকে ক্লিফটাকে। আগের চেয়ে অনেক বেশি উঁচুতে মনে হচ্ছে।

    কিন্তু এটা অনেকদিন গত হয়েছে আমি এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর শুনেছি না। সেটাই আমার সমস্যার একটা অংশ হতে পারে। আমি আমার বিভ্রান্তির শব্দে আসক্ত হয়ে পড়েছি। এটা আরো খারাপ হবে যদি আমি আরো অনেক বেশি দিন এভাবে যেতে দেই। ক্লিফ থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়া সেই ধরনের সমস্যার একটা সমাধান হতে পারে।

    নিশ্চয়, আমি এটার জন্য প্রস্তুত, মজার।

    এটা বিপজ্জনক সাহসী। সে বলল। আমার কাঁধের উপর তার হাত রাখল।

    ঠিক আছে- এখন যাও, যেয়ে একটু ঘুম দাও। আমি তার এইভাবে তাকানোটা পছন্দ করছিলাম না।

    .

    পরবর্তী দিন সকালে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। পোশাক পরিবর্তন করে বাইরের পোশাক পরলাম। আমার একটা অনুভূতি হয়েছিল যে চার্লি আমার আজকের এই পরিকল্পনা অনুমতি দেবে না যেভাবে তিনি কখনও আমার মোটরসাইকেলের ব্যাপারে অনুমোদন দেবেন না।

    আমার সমস্ত দুশ্চিন্তাকে খণ্ডবিখন্ড করে দেয়ার ধারণাটা আমাকে উত্তেজিত করে তুলল। হতে পারে এটা একটা মজা হবে। জ্যাকবের সাথে একটা ডেট। এ্যাডওয়ার্ডের সাথেও একটা ডেট…. আমি গভীরভাবে হেসে উঠলাম। জ্যাকব বলতে পারে আমাদের এই উল্টোপাল্টা জুটিকে সে চায়। আমিই সেই একজন যে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে ফেলি। আমি দেখেছি নেকড়েমানব দেখে মনে হয় স্বাভাবিক সাধারণ অবস্থায় ফিরে আসছে।

    আমি আশা করেছিলাম জ্যাকব আমার সাথে বাইরে দেখা করবে। সেই একইভাবে যখন আমার শব্দ করা ট্রাকটা আমার উপস্থিতি ঘোষণা করে। তখন সে বেরিয়ে এল না। আমি অনুমান করলাম যে সে সম্ভবত এখনও ঘুমাচ্ছে। আমি অপেক্ষা করব- তার যতক্ষণ পর্যন্ত ইচ্ছে ততক্ষণ সে বিশ্রাম নিক। তার ঘুমের দরকার। সেটুকু হলে দিনের বেলা তাকে আরো অনেক বেশি প্রাণবন্ত হবে। জ্যাকব আবহাওয়ার ব্যাপারে ঠিক বলেছিল। এটা রাতেই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। একটা ঘন মেঘের স্তর বাতাসকে ভারী করে রেখেছে। এটাকে এরই মধ্যে লবণাক্ত করে ফেলেছে। এটা ছিল উষ্ণ এবং এটা ধুসর কম্বলের মত লাগছিল। আমি আমার সোয়েটার ট্রাকে রেখে এলাম।

    আমি শান্তভাবে দরজায় নক করলাম।

    এদিকে এসো বেলা। বিলি বললেন।

    তিনি রান্নাঘরের টেবিলের কাছে ছিলেন। ঠাণ্ডা সিরিয়াল খাচ্ছিলেন।

    জ্যাক ঘুমাচ্ছে?

    অরর, না। তিনি তার চামুচ নিচে নামিয়ে রাখলেন। তার জোড়া একত্রিত হয়ে গেল।

    কি হয়েছে? আমি জানতে চাইলাম। তার অভিব্যক্তি দেখেই আমি বুঝতে পারছিলাম খারাপ কিছু একটা ঘটে গেছে।

    এমব্রি, জারেড এবং পল আজ সকালে একটা পরিষ্কার ট্রেইলের জন্য বেরিয়েছে। স্যাম আর জ্যাক তাদের সাহায্যের জন্য বেরিয়েছে। স্যাম আশাবাদী তারা সেই মেয়েটাকে পাহাড়ের পিছনে পাবে বলে আশা করছে। তারা ভাবছে ওকে শেষ করে দেয়ার একটা ভাল সুযোগ পাওয়া গেছে।

    ওহ, না চাচা আমি ফিসফিস করে বললাম ওহ না।

    তিনি নিচু স্বরে গভীরভাবে শব্দ করলেন। তুমি কি সত্যিই লা পুশের এখানে তোমার থাকা এখানে পছন্দ করো?

    মজার কথা বলো না, চাচা। এটা খুবই ভয়ের ব্যাপার।

    তুমি ঠিক বলেছ। তিনি একমত হলেন। তার প্রাচীন চোখজোড়া দুবোর্ধ মনে হলো। এই ব্যাপারটা কৌশলগত।

    আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।

    তুমি যতটা বিপজ্জনক ভাবছ এটা তাদের জন্য ততটা বিপজ্জনক নয়। স্যাম জানে সে কি করতে যাচ্ছে। তুমি একমাত্র একজন যে ব্যাপারটা নিয়ে এতটা দুশ্চিন্তা করছ। ভ্যাম্পায়ার তাদের সাথে লড়াই করতে চায় না। সে শুধু একটা পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে…তোমার জন্য।

    স্যাম কীভাবে জানে সে কি করছে? আমি জানতে চাইলাম তারা শুধুমাত্র একটা ভ্যাম্পায়ারকে হত্যা করেছে- সেটা তো তাদের সৌভাগ্যক্রমে হতে পারে।

    আমরা যেটাই করি সেটা খুবই সিরিয়াসলিই নেই, বেলা। কোনকিছুই ভুলে যাই না। তাদের সবকিছুই জানতে হয় যেগুলো তারা বাবা থেকে ছেলেতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জানতে পারে।

    তাদের সেই পদ্ধতি আমাকে তেমন কোন স্বস্তি দিল না। ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি আমার স্মৃতিতে জাগরুক। সে বন্য, বিড়ালের মত, হিংস্র এবং খুবই শক্তিশালী। যদি সে নেকড়েগুলোর আশেপাশে নাও থাকে, সে সম্ভবত তাদেরকে খুঁজে নেবে।

    বিলি সকালের নাস্তায় ফিরে গেলেন। আমি সোফায় বসে থাকলাম। বসে বসে অসংলগ্নভাবে টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করে চললাম। সেটাও বেশিক্ষণ করলাম না। আমি সেই ছোট রুমটাকে নিজেকে বদ্ধ বদ্ধ অনুভব করলাম। ঘাবড়ে গেলাম যে রুমটাকে আমি কোন জানালা দেখতে পাচ্ছিলাম না।

    আমি সীবিচে থাকব। আমি বিলিকে বেপরোয়াভাবে বললাম। তারপর দ্রুত বেগে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

    বাইরে বেরিয়ে আমি যেমনটি ভেবেছিলাম তেমন কোন সাহায্য হলো না। আকাশের মেঘগুলো যেন আরো নিচে নেমে এসেছে। জঙ্গলটা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক বেশি শূন্য মনে হলো। আমি কোন জীবজন্তু দেখতে পেলাম না। কোন পাখি নয়, কোন কাঠবিড়ালী নয়। আমি কোন পাখির কলকাকলী শুনতে পেলাম না। নিঃশব্দটা অন্যরকম। সেখানে এমনকি গাছের পাতার বাতাসেরও কোন শব্দ নেই।

    আমি জানতাম এ সবকিছুই আবহাওয়ার কারণে ঘটছে। কিন্তু আমাকে এখনও এটা অন্যরকম ভাবাচ্ছে। সেটা খুব ভারী। উষ্ণ চাপের কারণে আবহাওয়ার প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেটা আমার মানবিক অনুভূতিতে এটা জানিয়ে দিচ্ছে যে ঝড় বিভাগে কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে। আকাশের মেঘগুলোর কারণে বাতাস অন্যভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। কাছের মেঘগুলো থোয়াটে বিবর্ণ। কিন্তু দুইটা স্তরের মাঝে আরেকটা স্তর অন্য রঙের। আকাশকে আজ খুবই ভয়ংকর মনে হচ্ছে। জম্ভগুলোও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে মনে হয়।

    সীবীচে পৌঁছে মনে হলো আমার না আসায় ভাল ছিল। আমি এর মধ্যেই এই জায়গা সম্বন্ধে অনেক বেশি জানি। আমি প্রায় প্রতিদিনই এখানে কাটাই। একাকী কাটাই। এটা কি আমার দুঃস্বপ্ন থেকে অনেক বেশিই ভিন্ন? কিন্তু আমি আর কোথায় যেতে পারি? আমি গাছের কাছাকাছি গেলাম। গাছের শিকড়গুলোর ওখানে ঝুঁকে বসলাম। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

    আমি জ্যাকব আর তার বন্ধুদের বিপদ সম্বন্ধে না ভাবতে চেষ্টা করছিলাম। কারণ জ্যাকবের কোন কিছু ঘটতে পারে না। এই চিন্তা অমোচনীয়। আমি এরই মধ্যে অনেক বেশি হারিয়ে ফেলেছি। শেষ কিছুটা কি আমার জন্য থাকতে পারে না? সেটা দেখে খুবই আনফেয়ার মনে হচ্ছে। ভারসাম্যের বাইরে। কিন্তু হতে পারে আমি কিছু অজানা নিয়ম ভাঙতে পারে। হতে পারে মিথ এবং কিংবদন্তীর মধ্যে কাটানো ভুল ব্যাপারে, সেখান থেকে মানবীয় জগতে ফিরে আসাটা অন্যরকম। হতে পারে…

    না। জ্যাকবের কিছুই হতে পারে না। আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না অথবা এটা মোটেই কাজ করতে পারবে না।

    আহ! আমি গুঙিয়ে উঠলাম। গাছের গুঁড়ির উপর থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। আমি স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছি না। এটা দৌড়ানোর চেয়ে খারাপ কিছু।

    আমি সত্যিই এই সকালে এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর শুনতে চেয়েছিলাম। এটাই মনে হয় একমাত্র জিনিস যেটার কারণে আমি গোটা দিন কাটাতে পারি। আমার ব্যথার ক্ষত তীব্র যাতনা নিয়ে ফিরে আসছে। জ্যাকবের উপস্থিতিতে এটা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এখন যেন তার প্রতিশোধ নিতে চাইছে। ক্ষতের যন্ত্রণা আমাকে পুড়িয়ে দিতে চাইছে।

    আমি হাঁটতে থাকলে সমুদ্র স্রোত আমার পিছু নিল। পাথরের উপর আছড়ে পড়তে লাগল। কিন্তু সেখানে তখনও কোন বাতাস ছিল না। আমি ঝড়ের উপস্থিতি বুঝতে পারছিলাম। আমার চারদিকের সবকিছুই ঘুরছে। কিন্তু আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। বাতাসের যেন অবশকারী বৈদ্যুতিক আবেশ ছিল। আমার চুলে স্থির বিদাঁতের উপস্থিতি বুঝতে পারছিলাম।

    সমুদ্রের স্রোত তীরের কাছে এসে আরো প্রবল উন্মত্ত হয়ে উঠছিল। আমি দেখতে পেলাম সেগুলো ক্লিফের নিচে জড়ো হচ্ছে। সাদা ফেনার মেঘ তৈরি করছে। তখনও বাতাসের কোন চলন ছিল না। যদিও এখন মেঘগুলো আগের চেয়ে অধিক বেগে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এটা দেখে মনে হচ্ছে যেন মেঘগুলো তাদের ইচ্ছেমত ঘোরাফেরা করছে। আমি কাঁপছিলাম। যদিও আমি জানতাম এটা শুধুমাত্র ঝড়ের চাপ।

    জীবন্ত আকাশের নিচে ক্লিফটাকে ধারালো ছুরির মত মনে হচ্ছিল। সেদিকে তাকিয়ে আমি জ্যাকবের সেদিনের কথা মনে করতে পারলাম। যেদিন জ্যাকব আমাকে স্যাম এবং তার দলের কথা বলেছিল। আমি ছেলেগুলোর কথা চিন্তা করলাম। সেই মায়ানেকড়েরা। যারা নিজেদের শূন্য বাতাসে ছুঁড়ে দেয়। তাদের সেই পড়ার দৃশ্য, শূন্যে ডিগবাজি খাওয়ার দৃশ্য এখন আমার মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে আছে। আমি মুক্ত বাতাসে পড়ার সেই দৃশ্য কল্পনা করতে পারি…এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর আমার মাথার মধ্যে কীভাবে চলে আসে আমি সেটাও কল্পনা করতে পারি। রাগান্বিত, মসৃণ, উপযুক্ত…যেটা আমার বুকের ভেতর জ্বলতে থাকে।

    সেখানে কোন একটা উপায় থাকা উচিত এটা থেকে বের হওয়ার জন্য। যন্ত্রণাটা দিন দিন আরো বেশি অসহ্য হয়ে উঠছে। আমি ক্লিফ এবং ভেঙে পড়া স্রোতের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

    বেশ, তাহলে কেন নয়? কেন এখনওই আমি সেটা করছি না?

    জ্যাকব আমাকে ক্লিফ ডাইভিং শেখানোর ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেছিল, করেনি কি? শুধুমাত্র এই কারণে যে সে এখন তাকে খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি আমার যেটা এতটা প্রয়োজন সেটা আমি ত্যাগ করব? খুবই খারাপভাবে প্রয়োজন কারণ জ্যাকব তার জীবনের ঝুঁকি নিতে যাচ্ছে? আমার জন্য ঝুঁকি। যদি এটা আমার জন্য না হয়ে থাকে, ভিক্টোরিয়া সেখানে মানুষকে হত্যা করে বেড়াত না…শুধু অন্য কোথাও চলে যেতো। অনেক দূরে। যদি জ্যাকবের কোনকিছু ঘটে যায়, তাহলে এটা আমার দোষেই ঘটবে। এই উপলদ্ধি আমাকে খুব বেশি ভাবাল। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বিলির বাড়ির দিকে দৌড়ানো শুরু করলাম। যেখানে আমার ট্রাক রাখা আছে।

    আমি ক্লিফের কাছাকাছি দিয়ে যাওয়ার সেই পথটাকে চিনতাম। কিন্তু আমি সেই ছোট্ট পথটা খুঁজছিলাম যেটা আমাকে আরো সহজে সেখানে নিয়ে যাবে।

    যখন আমি সেদিকে গেলাম আমি ফর্কের দিকে তাকালাম। জানতাম যে জ্যাকব আমাকে একেবারের উপরে না উঠিয়ে মাঝামাঝি নিচু জায়গা থেকে ডাইভিং দেয়া শেখাবে। কিন্তু উপরের সেই হালকা জায়গাটার উপর আমার অন্যরকম আকর্ষণ। আমি নিচে আরো কোন ভাল জায়গা খুঁজে বের করার মত সময় পেলাম না। ঝড় এখন খুব দ্রুত বেগে চলাচল করছে। শেষ পর্যন্ত বাতাস আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। মেঘগুলো মাটির কাছাকাছি নেমে আসতে চাইছে। যখন আমি সেই জায়গাটায় পৌঁছুলাম যেখানে নোংরা পথ শেষ হয়ে গেছে, বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা আমার মুখে পড়ল।

    আমার এখন অন্যকোন পথ খুঁজে নেয়ার মত পর্যাপ্ত সময় হাতে নেই। আমি একেবারে সুউচ্চ থেকে লাফ দিতে চাই। সেটাই সেই প্রতিমূর্তি যেটা আমি আমার মস্তিষ্কে ধারণ করে রেখেছি। আমি দীর্ঘ পতন চাইছিলাম যেটা আমাকে উড়ার মত আনন্দ দেবে।

    আমি জানতাম এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বোকার মত, সবচেয়ে বেপরোয়া বিপজ্জনক কাজ হবে যা এতদিন করেছি তার চেয়ে। ব্যথার যন্ত্রণাটা এরই মধ্যে সহজ হয়ে এসেছে। এটা এমন যেন আমার শরীর এখনই জানে যে এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর মাত্র সেকেন্ড দূরে…

    সমুদ্রের শব্দ এখান থেকে অনেক দূরে। যেভাবেই হোক আগের চেয়ে অনেক দূরে। যখন আমি গাছের ভেতরের পথ দিয়ে ছিলাম তার চেয়ে দূরে। আমি শিহরে উঠলাম যখন আমি সম্ভাব্য তাপমাত্রার ব্যাপারটা চিন্তা করলাম। কিন্তু এটা এখন আর আমাকে থামাতে পারবে না।

    বাতাস এখন অনেক শক্তিশালীভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা চাবুকের মত আমার উপরে পড়ছে।

    আমি হেঁটে হেঁটে সুউচ্চ খাড়ির একেবারে কিনারায় গেলাম। আমার চোখ সামনের শূন্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। আমার পায়ের আঙুলগুলো যেন ভোতা অনুভূতি হচ্ছিল। খুব সাবধানে খাড়ির উপরের কিনারার পাথরের উপর একটু একটু করে এগুচ্ছিলাম। আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম এবং এটা ধরে রাখলাম… অপেক্ষা করছি।

    বেলা।

    আমি হাসলাম এবং শ্বাস ছাড়লাম।

    হা? আমি জোরে শব্দ করে উত্তর দিলাম না। এই ভয়ে দিলাম না যে আমার শব্দে এখনকার এই অপূর্ব বিভ্রান্তি হয়তো দূর হয়ে যাবে। তার কণ্ঠস্বর এতটাই বাস্তব, এতটাই কাছাকাছি। এটা শুধুমাত্র যখন আমি তার প্রকৃত স্মৃতি স্মরণ করতে পারি। সেই মসৃণ কণ্ঠস্বর এবং সংগীতপূর্ণ কণ্ঠস্বর যেটা আমাকে সমস্ত কণ্ঠস্বরের মধ্যে উপযুক্ত রাখে।

    এটা করো না। সে কাতর কণ্ঠে বলল।

    তুমি চেয়েছিলে আমি মানুষ হিসাবে থাকি। আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম। বেশ, লক্ষ্য কর।

    দয়া করো। আমার জন্য।

    কিন্তু তুমি আমার সাথে যেকোন উপায়ে থাকছ না।

    প্লিজ এটা ফিসফিসানির মত বৃষ্টির ফোঁটার সাথে আমার উপর এসে পড়ল। বৃষ্টি আমার জামাকাপড় ভিজিয়ে দিল। সেটা আমাকে এমনভাবে ভিজিয়ে দিল যেন আমি সেইদিনে দ্বিতীয়বারের মত লাফ দিচ্ছি।

    না, বেলা! সে এখন রাগান্বিত। তার সেই রাগ এতটাই ভালবাসাপুর্ণ।

    আমি হাসলাম এবং আমার দুহাত সোজা দুইদিকে প্রসারিত করলাম। আমি এখন ডাইভ দিতে যাচ্ছি। বৃষ্টির মধ্য থেকে মুখ তুললাম। কিন্তু এটা সাধারণ প্লাবিক পুলে সাঁতার কাটার চেয়ে অনেক বেশি অন্যরকম। প্রথমে পা, প্রথমবার। আমি সামনে ঝুঁকে পড়লাম। বেশি শক্তির জন্য হামাগুড়ি দিলাম…

    এবং আমি ক্লিফের উপর থেকে যেন উড়ে চললাম।

    আমি চিৎকার দিলাম যখন আমি শূন্য বাতাসে একটা উল্কাপিন্ডের মত উড়তে লাগলাম। কিন্তু এই চিৎকার আনন্দের চিৎকার। ভয়ের নয়। বাতাস বাধা দিচ্ছিল। ব্যর্থভাবে চেষ্টা করছিল মধ্যাকষর্ণে রাখতে। আমাকে ধাক্কা দিচ্ছিল এবং এমনভাবে ঘোরাচ্ছিল যেন একটা রকেট মাটিতে ক্রাশ করতে যাচ্ছে।

    হ্যাঁ! এই শব্দ আমার কানে মাথার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। আমি পানির উপরে পতিত হলাম। এটা ছিল বরফের মত ঠাণ্ডা, আমি যেমনটি ভয় পাচ্ছিলাম তার চেয়ে অধিক ঠাণ্ডা। আর সেই সাথে উপর থেকে পতিত হওয়ার কারণে ভয়ের স্রোত বয়ে গেল।

    আমি নিজেকে নিয়ে গবির্ত ছিলাম যখন গভীর কালো বরফ শীতল জলের ভেতর সেধিয়ে যাচ্ছিলাম। এক মুহূর্তের জন্য আমি আতংকের কোন কারণ দেখলাম না। শুধুই এড্রেনালিন প্রবাহিত হতে লাগল। সত্যিই, এই পতনটা আদৌ কোন ভয়ের ব্যাপার নয়। তাহলে সেই চ্যালেঞ্জটা কোথায়?

    সেটা তখনই হলো যখন স্রোত আমাকে পাকড়াও করে ফেলল।

    আমি আগের থেকেই ক্লিফের উচ্চতা, উচ্চতা থেকে পতনের বিপদ এইসব নিয়ে এতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম যে কালো জলের ভেতরেই বিপদ অপেক্ষা করছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে প্রকৃত বিপদটা আসবে পানিতে পতনের পর, গভীর স্রোতের ভেতরে।

    আমি এরকম অনুভব করছিলাম স্রোত আমার উপরে লড়াই করে চলেছে। আমাকে সামনে পিছনে ঝাঁকি দিয়ে নিয়ে চলেছে। যদিও আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম অর্ধেকটা টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। আমি জানতাম কীভাবে স্রোতের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হয়। তীরের কাছে যাওয়ার জন্য লড়াই করার চেয়ে বিচের সমান্ত রালে সাঁতার কাটাই শ্রেয়। কিন্তু সেই জ্ঞান আমাকে সামান্য ভাল লাগা দিল। আমি জানতাম না সমুদ্রের তীর কোন দিকে।

    আমি এমনকি এই বলতে পারি না কোন দিকে পানির উপরিতল।

    ফুঁসতে থাকা পানি সবদিক থেকে অন্ধকার করে চেপে আছে। সেখানে আমাকে উপরে উঠানোর জন্য কোনরকম উজ্জ্বলতা নেই। বাতাসের সাথে তুলনা করলে এখানে ভেতরের মধ্যাকর্ষণ অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু স্রোতের ভেতরে এটা কিছুই না। আমি নিচের দিকে কোন কিছু অনুভব করতে পারলাম না। যেকোন দিকে ডুবে যাওয়া। শুধু স্রোতটা আমাকে একটা পুতুলের মত একের পর এক ঘোরাতে লাগল।

    আমি নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য যুদ্ধ করতে লাগলাম। ঠোঁট চেপে বন্ধ করে রাখলাম ভেতরের শেষ অক্সিজেনটুকু ধরে রাখার জন্য।

    আমি মোটেই সেই বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হলাম না যে এ্যাডওয়ার্ড সেখানেও আছে। সে আমার কাছে অনেক ঋণী। আমি মারা যাচ্ছি এটার সাথে তুলনা করলে। এই জ্ঞান উপলদ্ধি করে আমি বিস্মিত হলাম। আমি ডুবে যাচ্ছি। আমি ডুবে মারা যাচ্ছি।

    সাঁতার কাটতে থাকো! এ্যাডওয়ার্ড গুরুত্বের সাথে আমার মাথার ভেতর বলতে লাগল।

    কোথায়? সেখানে শুধু অন্ধকার ছাড়া আর কোন কিছুই নেই। সেখানে সাঁতার কাটার মত কোন জায়গাও নেই।

    থামো তাহলে! সে আদেশ করল তোমার ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সাহস করো কীভাবে!

    ঠাণ্ডা পানির শীতলতা আমার হাত পা অবশ করে দিতে লাগল। আমি এর আগে কখনও এতটা অবশ অবস্থায় পড়ি নাই। এটা এখন তন্দ্রাচ্ছন্নতার চেয়ে বেশি কিছু। পানির ভেতরে সাহায্যহীনভাবে ঘুরতে থাকা।

    কিন্তু আমি তাকে শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি হাত ছুঁড়ে সেদিকে পৌঁছনোর চেষ্টা করছিলাম। আমার পা দিতে আরো জোরে আঘাত দিতে থাকলাম। যদিও প্রতি সেকেন্ডে আমি আরেকটা নতুন অভিমুখে যাত্রা করছিলাম। এটা কোন ভাল কিছু হচ্ছিল বলে মনে হলো না। সেখানে পয়েন্টটা কি?

    লড়াই করো! সে চিৎকার দিল। গোল্লায় যাক বেলা, লড়াই অব্যহত রাখো।

    কেন?

    আমি আর কোন রকম লড়াই করতে চাই না। আর এটা কোন সহজ কাজ ছিল না। সেই ঠাণ্ডা। সেই ব্যর্থতা। আমার হাতের মাংসপেশী শ্রান্ত হয়ে পড়েছে। সেটা আমি যেখানে আছি সেখানে থাকতে বাধ্য করছে। আমি এর মধ্যেই সুখী ছিলাম যে এটা শেষ হতে চলেছে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে সহজ শত্রু অন্য যেগুলোর আমি মুখোমুখি হয়েছি তার চেয়ে। আরামদায়ক মৃত্যু।

    আমি সংক্ষিপ্তভাবে গোটা ব্যাপারটা ভেবে দেখলাম। কীভাবে জীবনটা চোখের উপর একের পর এক ভেসে ওঠে। আমি অনেক বেশি সৌভাগ্যবতী। কে এখন আর আবার সেখানে ফেরত যেতে চায়, যেভাবেই হোক?

    আমি তাকে দেখেছিলাম। আমার আর লড়াই করার কোন ইচ্ছে ছিল না। এটা এতটাই সুস্পষ্ট, এতটাই পরিষ্কার যেকোন স্মৃতির চেয়ে। আমার অবচেতন মন এ্যাডওয়ার্ডের সবকিছু ধারণ করে রেখেছে। তাকে শেষ মুহূর্তের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছে। আমি তার প্রকৃত মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম যেন সে সত্যিকারেই সেখানে আছে। তার বরফ শীতল ত্বকের প্রকৃত রুপ, তার ঠোঁটের গড়ন, তার চোয়ালের ওঠানামা, তার স্বর্ণাভ চোখের দৃষ্টি। সে খুবই রাগান্বিত, স্বাভাবিকভাবেই। কারণ আমি বাঁচার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছি। তার দাঁত রাগে গিড়মিড় করছিল। রাগে তার নাকের পাটা ফুলে উঠছিল।

    না! বেলা, না!

    আমার কান ঠাণ্ডা পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছিল। কিন্তু বরাবরের মতই তার কণ্ঠস্বর পরিষ্কার। আমি তার কথাতে গুরুত্ব দিলাম না। কিন্তু তার কণ্ঠস্বরের শব্দে মনোযোগী হলাম। কেন আমি লড়তে যাব যখন আমি যেভাবে আছি এভাবেই এতটা সুখী? যদিও আমার ফুসফুস আরো অধিক বাতাসের জন্য পুড়ে যাচ্ছিল এবং আমার পা বরফ শীতল পানিতে জমে যাচ্ছিল। আমি সেগুলো ধারণ করছিলাম। আমি ভুলে গিয়েছিলাম প্রকৃত সুখী থাকাটা কীভাবে অনুভূত হয়।

    সুখী হওয়া। এটা আমাকে গোটা মৃত্যুর ব্যাপারটাকে সহ্যের মধ্যে নিয়ে এসেছে।

    সেই মুহূর্তে স্রোত আমাকে পেয়ে গেল। আমাকে বেপরোয়াভাবে কোন কিছুর দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। শক্ত কিছু, এক মুহূর্তের জন্য পাথর দেখতে পেলাম। এটা সরাসরি আমার বুকে আঘাত করল। আমাকে একটা লোহারপাতের মত তার উপরে নিয়ে ফেলল। আমার বুকের ভেতর থেকে ফুস করে বাতাস বেরিয়ে গেল। রুপালি বুদবুদের মেঘ উঠল। পানি আমার গলার ভেতরে ঢুকে গেল। এটা আমাকে যেন পুড়িয়ে দিচ্ছিল। লোহারপাত যেন আমাকে টেনে নিয়ে চলছিল। আমাকে এ্যাডওয়ার্ড থেকে দূরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আরো গভীর অন্ধকারের দিকে। সাগরের অতলের দিকে।

    বিদায়, আমি তোমাকে ভালবাসি, সেটাই আমার শেষ চিন্তাভাবনা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.