Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ১৬-১৭. পানির উপরিতলে ভেসে

    ১৬.

    সেই মুহূর্তে আমার মাথা পানির উপরিতলে ভেসে উঠলো।

    কীভাবে সম্ভব! আমি তো নিশ্চিত ছিলাম আমি ডুবে যাচ্ছি।

    স্রোত আমাকে যেতে দিল না। ঢেউ আমাকে আরো বেশি পাথরের উপর আছড়ে ফেললো। সেগুলো আমার পিঠের মাঝখানে তীব্রভাবে আঘাত করছিল। ছন্দের তালে তালে ধাক্কা দিয়ে আমার ভেতর থেকে পানি বের করে দিচ্ছিল। একেকবারে বিপুল পরিমাণ পানি বের হয়ে আসছিল। এগুলো আমার নাক মুখ দিয়ে একভাবে বেরিয়ে যাচ্ছিল। লবণাক্ততা আমাকে পুড়িয়ে দিচ্ছিল। আমার ফুসফুসে যেন আগুন ধরে গিয়েছিল। আমার গলায় এতবেশি পরিমাণ পানি ছিল যে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। পাথরগুলো আমার পিঠে আঘাত করছিলো। যেভাবেই হোক আমি এক জায়গায় স্থির ছিলাম। যদিও আমার চারিদিকে তখনও স্রোতের ব্যাপক আনাগোণা। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। চারিদিকে পানি। আমার মুখের দিকে আসছিল।

    শ্বাস নাও! একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। উদ্বিগ্নতায় বন্য হয়ে গেছে। আমাকে আদেশ করল। আমি একধরনের ব্যথা পেলাম যখন আমি কণ্ঠস্বরটা চিনতে পারলাম। এটা এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর ছিল না।

    আমি আদেশ মানলাম না। আমার মুখ থেকে পানি বের হওয়া বন্ধ হচ্ছে না। শ্বাস নেয়ার মত যথেষ্ট অবস্থা এখনও আমার হয়নি। কালো বরফ শীতল পানি আমার বুকে ভর্তি হয়ে আছে। আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে।

    পাথর আমার পিঠে আবারও আঘাত করছে। আমরা দুই শোল্ডার বেল্ডের ঠিক মাঝখানে আঘাত করছে। আরেক দমকা পানি আমার ফুসফুসের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল।

    শ্বাস নাও বেলা! ফিরে এসো। জ্যাকব কাতর কণ্ঠে বলল।

    আমার চোখের সামনে কালো মুর্তি দেখা গেল। সেটা ধীরে ধীরে বড় থেকে আরো বড় হচ্ছে। আমার চোখের সামনের আলো আড়াল করে রেখেছে।

    পাথর আবার আমাকে আঘাত করল।

    পাথর পানির মত ঠাণ্ডা ছিল না। এটা আমার ত্বকের উপর গরম অনুভূতি দিলো। আমি বুঝতে পারলাম এটা জ্যাকবের হাত। আমার ফুসফুসের ভেতর থেকে পানি বের করার চেষ্টা করছে। যে লোহার মত জিনিসটা আমাকে পানি থেকে টেনে তুলেছে…সেটাও উষ্ণ…আমার মাথা ঘুরতে লাগল। কালো জিনিস চারিদিকে ঘিরে আছে..

    আমি কি তাহলে আবার মারা গেছি, তারপর? এখন শুধুমাত্র অন্ধকার। এখানে আনন্দদায়ক কিছুই দেখছি না। স্রোতের তীরে ভেঙে পড়া ধীরে ধীরে মুছে হারিয়ে যাচ্ছে। শান্ত বয়ে যাচ্ছে। হুইশ শব্দটাও আমার বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আমার কানে আসছে…

    বেলা? জ্যাকব জিজ্ঞেস করল। তার কণ্ঠস্বর এখনও উদ্বিগ্ন। কিন্তু আগের মত ততটা বন্য নয়। বেলা, সোনা, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?

    আমার মাথার ভেতরে ঘুরতে লাগল। আমি অসুস্থবোধ করতে লাগলাম। যেন মনে হচ্ছিল সবকিছু এখন পানির ভেতরে…

    সে কতক্ষণ ধরে ওরকম অজ্ঞান অবস্থায় আছে? কেউ একজন প্রশ্ন করল।

    যে কণ্ঠস্বরটা জ্যাকবের ছিল না, সেটা আমাকে যেন ধাক্কা দিল। আমার আরো অধিক সচেতন করে তুলল।

    আমি বুঝতে পারলাম আমি স্থির হয়ে আছি। আমার চারপাশে এখন আর স্রোতের কোন যুদ্ধ নেই। ভারী ভাবটা আমার মাথার ভেতরেই। আমার শরীরের নিচের জায়গাটা সমতল এবং গতিহীন। আমার খোলা হাড়ে আমি সেটার স্পর্শ পেলাম।

    আমি জানি না। জ্যাকব রিপোর্ট করল। এখনও উন্মত্ত। তার কণ্ঠস্বর খুব কাছাকাছি। তার হাত খুবই উষ্ণ। সেটা আমার চুলের উপর দিয়ে বুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এই তো কয়েক মিনিট? খুব আগে তো সে সমুদ্রে সৈকতে আসে নাই।

    আমার কানের ভেতরের শো শো শব্দটা সমুদ্র স্রোতের শব্দ নয়। এটা আমার ফুসফুসের ভেতরে বাতাস চলাচলের শব্দ। প্রতিটা নিঃশ্বাস জ্বলে যাচ্ছিল। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের পথটা এতটা অমসৃণ হয়ে আছে যেন ইস্পাতের তৈরি। কিন্তু আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম।

    আমি জমে যাচ্ছিলাম। হাজার হাজার বরফ কুচি যেন আমার মুখ হাত পা জমিয়ে দিচ্ছিল।

    সে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সে ফিরে আসছে। আমাদের তাকে এখন এই ঠাণ্ডার মধ্য থেকে বাইরে বের করে নেয়া উচিত। ওর মুখের রঙ যেভাবে বদলাচ্ছে আমার সেটা পছন্দ হচ্ছে না… আমি এইবারে স্যামের কণ্ঠস্বর চিনতে পারলাম।

    তুমি কি মনে করো তাকে এখন থেকে নড়ানো এখন ঠিক হবে?

    সে যখন পড়ে গেছে তখন তার পিছনে অথবা অন্য কোথাও আঘাত পায় নি তো?

    আমি জানি না।

    তারা দ্বিধা করতে লাগল।

    আমি আমার চোখ খুলতে চেষ্টা করলাম। এটা মিনিট খানেক সময় নিল। কিন্তু তারপর আমি অন্ধকার দেখতে পেলাম। দেখতে পেলাম পার্পল রঙের গাঢ় মেঘ যেটা ঠাণ্ডা বৃষ্টি নামাচ্ছিল। জ্যাক? আমি কেঁদে উঠলাম।

    জ্যাকবের মুখ আকাশ আড়াল করে দাঁড়াল। ওহ! সে শ্বাস নিল। তার শরীরের উপর দিয়ে স্বস্তির একটা ঢেউ বয়ে গেল। তার চোখ বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল। ওহ, বেলা! তুমি কি ঠিক আছে? তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? তোমার কি কোথাও আঘাত লেগেছে?

    শু-ধু আমার গলায়। আমার কথা আটকে আটকে গেল। ঠাণ্ডায় আমার ঠোঁট কাঁপছিল।

    তাহলে আগে চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। জ্যাকব বলল। সে আমার নিচে তার হাত ঢুকিয়ে দিল। কোন শক্তি খরচ ছাড়াই আমাকে টেনে তুলল যেন একটা খালি বক্স উঁচু করছে। তার বুক নগ্ন এবং উষ্ণ। সে কাধ কুজো করে আমার উপর থেকে বৃষ্টি পড়া আড়াল করল। আমার মাথা তার হাতের উপর ঝুলতে লাগল। আমি শূন্যদৃষ্টিতে পেছনের উন্মত্ত পানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।

    তুমি তাকে পেয়েছো? আমি শুনতে পেলাম স্যাম জিজ্ঞেস করছে।

    হ্যাঁ। আমি তাকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে ফিরে যাও। আমি তোমার সাথে পরে যোগ দেব। ধন্যবাদ স্যাম।

    .

    আমার মাথা তখনও ঘুরছিল। প্রথমে তার কোন কথায় আমি বুঝতে পারছিলাম না। স্যাম কোন উত্তর দিল না। সেখানে কোন শব্দ ছিল না।

    জ্যাকব আমাকে বহন করে নিয়ে চলল। আমি চিন্তিতভাবে পানির দিকে তাকালাম। আমার চোখের দৃষ্টিতে আগুনের ফুলকির মত কি যেন কালো পানির উপর খেলা করছিল। সমুদ্রের সৈকত থেকে সেটা বেশ দূরে। সেই আকৃতিটা আমার মনে কোন সেন্স তৈরি করল না। আমি বুঝতে পারলাম আমি এখনও কতটা অচেতন অবস্থায় আছি। আমার মাথা সেই কালো পানির স্মৃতি খেলা করতে থাকে- এতটাই হারিয়ে গেছি যে আমি পড়া অথবা উঠার কথা মনে করতে পারছি না। এতটাই হারিয়ে…কিন্তু যেভাবেই হোক জ্যাকব…

    তুমি আমাকে কীভাবে খুঁজে পেয়েছো? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    আমি তোমাকে খোঁজ করছিলাম। সে আমাকে বলল। সে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমাকে নিয়ে কিছুটা দৌড়ানোর মত করে এগুচ্ছিল। বিচের নিকটবর্তী রাস্তার দিকে চলছিল। আমি তোমার ট্রাকের টায়ারের দাগ ধরে এগিয়েছিলাম। তারপর আমি তোমার চিৎকার শুনতে পাই… সে কেঁপে উঠল। তুমি কেন লাফ দিয়েছিলে, বেলা? তুমি কি খেয়াল করে দেখোনি যে বাইরে তখন ঝড়ো হাওয়াটা হ্যারিকেনের রুপ নিতে শুরু করেছে? তুমি কি আমার জন্য দেরি করতে পারো নি? তার সেই স্বস্তিকর অবস্থা আবার রাগে পরিণত হলো।

    দুঃখিত। আমি বিড়বিড় করে বললাম আমি একটা বোকা গাধা।

    হ্যাঁ। সত্যিই এটা বোকার মত কাজ। সে একমত হলো। সে ঝুঁকে এলে তার চুল থেকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছিল। দেখ, তুমি কি কিছু মনে করবে যখন আমি আশেপাশে থাকি তখনকার জন্য? আমি মনোসংযোগ করতে পারছি না যদি আমি মনে করি তুমি আমার পেছনেই ক্লিফ থেকে লাফ দিয়ে পড়েছিলে।

    নিশ্চয়। আমি সম্মত হলাম। কোন সমস্যা নেই। আমি একজন চেইনস্মোকারের মত স্বরে বললাম। আমি গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করলাম। তারপর কেঁপে উঠলাম। গলা পরিষ্কার করতে গিয়ে মনে হলো কেউ আমার ফুসফুসে ছুরি চালিয়েছে। আজ কি ঘটেছিল? তুমি কি তাকে…তাকে খুঁজে পেয়েছিলে? এখন আমার কেঁপে ওঠার কথা। যদিও সেখানে ততটা ঠাণ্ডা ছিল না। তার হাস্যকার শরীরের তাপমাত্রা পাচ্ছিলাম আমি।

    জ্যাকব দুদিকে তার মাথা নাড়ল। সে এখনও হাঁটার চেয়ে অনেক বেশি দৌড়ানোর মত করে চলছে। সে রাস্তা থেকে তার বাড়ির দিকে চলেছে। না, সে পানিতে লাফিয়ে পড়েছিল। সেই রক্তচোষার সেখানে সেই সুযোগটা ছিল। সেটার কারণেই আমি বাড়িতে ছুটে এসেছিলাম। আমি ভীত ছিলাম যে সে দ্বৈত সাঁতার কেটে এদিকে আসবে। তুমি এত বেশি সময় সীবিচে কাটাও  সে কথা বন্ধ করে দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল।

    স্যাম তোমার সাথে ফিরে এসেছিল… প্রত্যেকেই কি বাড়িতে ফিরে এসেছে? আমি আশা করছি তারা এখনও তাকে খুঁজে ফিরছে না।

    হ্যাঁ। সেই রকমই।

    আমি তার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলাম। তার চোখ খুব কঠোর হয়ে আছে সেটা দুশ্চিন্তায় অথবা ব্যথায়ও হতে পারে।

    হঠাৎ করে তাদের বলা ওই কথাগুলো আমার কাছে কোন অর্থ বহন করল না। তুমি বলেছিলে…হাসপাতালে। এর আগে স্যামকে। কেউ কি আহত হয়েছে? সে কি তোমাদের সাথে লড়াই করেছে? আমার কণ্ঠস্বর লাফিয়ে চড়া সুরে উঠে গেল। অদ্ভুত কর্কশ শোনাল।

    না, না। আমরা যখন ফিরে এলাম, এমিলি আমাদের জন্য একটা সংবাদ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। হ্যারির আজ সকালে একটা হার্ট এ্যাটাক হয়েছে।

    হ্যারি? আমি মাথা নাড়লাম। চেষ্টা করছিলাম সে যেটা বলেছে সেটা বুঝে উঠার। ওহ, না! বাবা কি ব্যাপারটা জানেন?

    হা। তিনিও এখান সেখানেই আছে। আমার বাবার সাথে।

    হ্যারি কি তাহলে ঠিক হতে চলেছে?

    জ্যাকবের চোখ হঠাৎ করে কঠিন হয়ে গেল। তাকে এখন এই মুহূর্তে ততটা ভাল দেখাচ্ছে না।

    বেপরোয়াভাবে আমি সত্যিই এই ব্যাপারে নিজেকে দোষীভেবে অসুস্থবোধ করতে লাগলাম। এইরকম বোকার মত ক্লিফ ডাইভিংয়ের ব্যাপারে নিজেকে ভয়ানক লাগছিল। এখন এই মুহূর্তে আমাকে নিয়ে কারো দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। এই রকম একটা সময়ে আমি কেন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলাম।

    আমি এখন কি করতে পারি? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    সেই মুহূর্তে বৃষ্টি থেমে গেল। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমরা এরই মধ্যে জ্যাকবের বাড়িতে পৌঁছে গেছি। আমরা দরজা পর্যন্ত হেঁটে এসে বুঝতে পারলাম। ঝড় তাদের ছাদে আঘাত হানছিল।

    তুমি এখানে অপেক্ষা করতে পার। সে আমাকে ছোট্ট কোচের উপর বসিয়ে দিয়ে বলল। আমি এটাই বোঝাচ্ছি–ঠিক এখানেই। আমি তোমার জন্য কিছু কাপড়চোপড় আনতে যাচ্ছি।

    অন্ধকার রুমে আমার চোখ সয়ে নিতে লাগলাম। জ্যাকব সে সময়ে তার বেডরুমে গেল। বিলিকে ছাড়া এই ছোট্ট রুমটা খুবই ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। খুবই নির্জন। এটা সত্যিই অন্যরকম সম্ভবত তিনি এখন কোনখানে এটা আমি জানি বলেই।

    জ্যাকব কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফিরে এল। সে আমার দিকে কাপড়ের স্তূপ ছুঁড়ে দিল। এগুলো তোমার জন্য মনে হয় অনেক বড়ো হয়ে যাবে। কিন্তু সবচেয়ে ভাল এইগুলি আমি পেয়েছি। আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি যাতে তুমি পোশাক পরিবর্তন করতে পার।

    কোথাও যেও না। আমি এতটাই ক্লান্ত যে নড়তে পারছি না। শুধু আমার সাথে থাক।

    জ্যাকব আমার পাশে মেঝেতে বসে পড়ল। সে কোচের গায়ে হেলান দিয়ে বসল। আমি বিস্মিত কখন সে শেষবার ঘুমিয়েছিল। আমি যেরকম অনুভব করছিলাম তাকে ততটাই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।

    সে আমার পাশের কুশন তার মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল তার চেয়ে ভাল হয় আমি মিনিট খানিকের জন্য বিশ্রাম নেই…

    সে তার চোখ বন্ধ করল। আমিও আমার চোখ বন্ধ করলাম।

    বেচার হ্যারি। বেচারা সুই। আমি জানি চার্লি এখন তাদের পাশে আছে। হ্যারি তার ভাল বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। জ্যাকবের ওই নৈব্যক্তিক আলাপের পরও আমি আশা করতে পারি হ্যারি ভাল হয়ে উঠবে। চার্লির জন্য। সুই, লেহ এবং সেথের জন্য..

    বিলির সোফা রেডিয়েটরের একেবারে কাছাকাছি। আমি উষ্ণ হয়ে উঠলাম। আমার ভেজা কাপড়চোপড় সত্বেও। আমার ফুসফুস ব্যথা করছিল যে আমি জেগে উঠার পরিবর্তে অচেতন হয়ে পড়তে লাগলাম। আমি জানি এখানে ঘুমিয়ে পড়াটা খারাপ ব্যাপার হবে…জ্যাকব মৃদু স্বরে নাক ডাকতে শুরু করেছে। সেটার শব্দ একটা ছোট্ট ঘুমন্ত বাচ্চার মত। আমি নিজেও খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম।

    এই প্রথমবারের মত দীর্ঘ সময়ের পরে, আমার স্বপ্ন একটা সাধারণ স্বপ্ন হলো। শুধু পুরানো স্মৃতির ঝাপসা ব্যাপারস্যাপার-ফনিক্সের উজ্বল সূর্যালোক, আমার মায়ের মুখ, গাছের উপরের ঘর, দেয়ালভর্তি আয়না, কালের পানির উপর আগুনেয় শিখা…আমি প্রত্যেকটাকে ভুলে গেলাম যখন একের পর এক সেটা পরিবর্তিত হয়ে গেল।

    শেষের ছবিটাই আমার মাথার মধ্যে গেঁথে রইল। এটা পুরোপুরি অর্থহীন স্বপ্ন–শুধু দেখতে পেলাম একটা স্টেজ শো। রাতের বেলকনি। আঁকানো চাঁদ আকাশে ঝুলানো আছে। আমি লক্ষ্য করলাম রাতের পোশাক পরা মেয়েটি বেলকনির রেলিং ধরে ঝুঁকে আছে। এবং সে নিজের সাথে কথা বলে চলেছে।

    অর্থহীন… কিন্তু আমি যখন ধীরে ধীরে সচেতন হলাম আমি বুঝতে পারলাম, জুলিয়েটই আমার মনের মধ্যে।

    জ্যাকব তখনও ঘুমিয়ে ছিল। সে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল এবং তার নিঃশ্বাস আরো গাঢ় ও একই রকম হয়ে গেল। বাড়িটা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি অন্ধকার। জানালার ওপাশে এখন গাঢ় অন্ধকার। আমি শক্ত হয়ে ছিলাম। কিন্তু উঞ্চ এবং পুরোপুরি শুকিয়ে গেছি। আমার ভেতরে প্রতিবার নিঃশ্বাস নেয়ার সাথে সাথে জ্বলে যাচ্ছে।

    আমি উঠতে যাচ্ছি। অন্তত পক্ষে, আমার একটা পানীয়ের দরকার। কিন্তু আমার শরীর চাচ্ছে এই মুহূর্তে এখানে শুয়ে পড়তে। আর কখনও না নড়তে।

    নড়াচড়া করার পরিবর্তে, আমি জুলিয়েট সম্বন্ধে আরো বেশি চিন্তাভাবনা করতে লাগলাম।

    আমি বিস্মিত সে কি করবে রোমিও যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়? শুধু এই কারণে নয় যে তাকে যেতে হবে কিন্তু এই কারণে যে সে আগ্রহ হারিয়েছে? কি হবে যদি রোসালি তাকে সেই সময়টুকু দেয় এবং তার মন পরিবর্তিত করে ফেলে? কি হবে জুলিয়েটকে বিয়ে করার পরিবর্তে সে যদি শুধু অদৃশ্য হয়ে যায়?

    আমি ভাবলাম, আমি জানি জুলিয়েটের কেমন লাগে।

    সে বাস্তবিক পক্ষে তার পুরানো জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। সে এমনকি এখান থেকে চলেও যেতে পারবে না। আমি সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম। এমনকি যদি সে বৃদ্ধা হওয়া পর্যন্তও বেঁচে থাকে, প্রতিবার সে যখন তার চোখ বন্ধ করবে সে ততবারই রোমিওর মুখ দেখতে পাবে। তাকে সেটা গ্রহণ করতে হবে ঘটনাক্রমে।

    আমি বিস্মিত সে যদি শেষ পর্যন্ত প্যারিসকে বিয়ে করে ফেলে। শুধু তার পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। শান্তি রক্ষা করার জন্য। না, সম্ভবত না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু তারপর, গল্পটা প্যারিস সম্বন্ধে খুববেশি কিছু বলে নাই। সে শুধুমাত্র একটা জড়িত চরিত্র। একটা জায়গাপূর্ণকারী, একটা আতংক। একটা ডেডলাইন।

    কি হবে যদি সেখানে প্যারিসকে আরো বেশি মনোযোগ দেয়া হয়?

    কি হবে যদি জুলিয়েট প্যারিসের বন্ধু হয়? তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু? কি হবে যদি সেই একমাত্র একজন হয় যে রোমিরও ব্যাপারটাকে ভুলিয়ে দিতে পারবে? সেই একমাত্র ব্যক্তি যে তাকে বুঝতে পাবে এবং তাকে আবার আগের অনুভূতিতে ফেরত নিয়ে আসবে? কি হবে যদি সে ধৈর্যশীল ও দয়ালু হয়? কি হবে যদি সে তার প্রতি যত্ন। নেয়? কি হবে যদি জুলিয়েট তাকে ছেড়ে বেঁচে থাকতে না পারে? কি হবে যদি সে সত্যিই তাকে ভালবেসে এবং তাকে সুখী দেখতে চায়?

    এবং… কি হবে যদি সে প্যারিসকে ভালবাসে? রোমিওর মত নয় হয়তো। সেরকম কিছু নয় অবশ্যই। কিন্তু তাকে সুখী করার জন্য যথেষ্ট?

    জ্যাকবের ধীর, গভীর নিঃশ্বাসের শব্দই সেই রুমের একমাত্র শব্দ। মনে হচ্ছে। যেন কোন শিশুকে ঘুমপাড়ানি গান শোনানো হচ্ছে। রকিং চেয়ারের ফিসফিসানির মত। পুরানো ঘড়ির শব্দের মত। এটা এক ধরনের স্বস্তিকর শব্দ।

    যদি সত্যিই রোমিও চলে যায়, আর কখনও ফিরে না আসে, এটা কি জুলিয়েটের কাছে কোন ব্যাপার হবে সে প্যারিসের অফার গ্রহণ করবে কি না? হতে পারে সে জীবনটাকে অন্যভাবে সাজাতে চাইবে। হতে পারে সেটা সুখের খুব কাছাকাছি কিছু একটা হবে।

    আমি শ্বাস নিলাম। তারপর গুঙিয়ে উঠলাম যখন সেই বাতাস আমার গলাকে টুকরো টুকরো করতে লাগল। আমি এই গল্পটা খুববেশি পড়ে ফেলেছি। রোমিও তার মন পরিবর্তন করবে না। সে কারণেই লোকজন এখনও তার নাম মনে রেখেছে। সবসময় সেটা জোড়া বেধেই বলে রোমিও আর জুলিয়েট। সেকারণেই এটা একটা ভাল গল্প। জুলিয়েট জেগে উঠলো এবং প্যারিসের সাথে সম্পর্ক করল। এই গল্প কখনই হিট হতো না।

    আমি চোখ বন্ধ করলাম এবং আমার মন থেকে এই বোকার মত নাটক মুছে ফেলার চেষ্টা করলাম। এটা নিয়ে আমি আর ভাবতে চাইলাম না। আমি তার পরিবর্তে বাস্তবতা ভাবার চেষ্টা করলাম। ক্লিফের উপর থেকে লাফ দেয়া নিয়ে। সেটা কোন উর্বর মস্তিষ্কের একটা কাজ হয়েছে। এবং শুধু সেই ক্লিই নয়। কিন্তু সেই মোটরসাইকেল। কি হতো যদি খারাপ কিছু একটা আমার হয়ে যেতো? তাহলে সেটা চার্লির উপর কেমন হতো? হ্যারির হার্টএ্যাটার্ক আমাকে হঠাৎ করে সবকিছু একটা দৃশ্যমান করে তুলল। যেটা আমি এর আগে দেখি নি কারণ- যদি আমি স্বীকার করি সত্যটা আমি আমার পথ পরিবর্তেনর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমি কি সেভাবে জীবন যাপন করতে পারি?

    হতে পারে, এটা কোন সহজ কিছু হবে না। এই হ্যালুসিনেশন ত্যাগ করা আমার জন্য দুঃখ দুর্দশার কারণ হবে। আমাকে বড় হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু হতে পারে আমি এটা করতে পারব। এবং হতে পারে আমি এটা পারব। যদি জ্যাকব আমার সাথে থাকে।

    আমি এই মুহূর্তে সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলাম না। এটা আমাকে খুবই আঘাত করল। আমাকে আরো অধিক কিছু ভাবতে হবে।

    সেই বিকালের খারাপ ঘটনা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আমি যতই ভাল কিছু চিন্তা করতে চাইলাম খারাপ বিষয়গুলো এসে গেল…পতনের সময় বাতাসের অনুভূতি, কালো জলের অন্ধকার, স্রোতের তীব্রতা… এ্যাডওয়ার্ডের মুখ… আমি সেটা অনেক সময় ধরে মনে করতে পারলাম। জ্যাকবের উঞ্চ হাত, আমাকে আবার জীবনের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আঘাত… ঘন মেঘের মাঝখান দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা…স্রোতের উপর অদ্ভুত আগুনের মত…

    সেখানে সেই স্রোতের উপরে আমার পরিচিত কোন রঙের ঢেউ মনে হচ্ছে খেলে গিয়েছিল। অবশ্যই এটা কখনই আগুনের হালকা হতে পারে না–

    আমার চিন্তাভাবনা বাধাগ্রস্ত হলো। বাইরের কাদার উপর গাড়ির চাকার থামার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি শুনতে পেলাম এটা বাড়ির সামনে এসে থামল। শুনলাম দরজা খুলে গেল এবং আবার বন্ধ হয়ে গেল। আমি উঠে বসার চিন্তাভাবনা করছিলাম। তারপর আবার সেই চিন্তা বাদ দিলাম।

    বিলির কণ্ঠস্বর খুব সহজেই চিনতে পারলাম। কিন্তু তিনি খুব নিচু স্বরে কথা বলছিলেন। সেটা শোনার জন্য খুব একটা যথেষ্ট ছিল না।

    দরজা খুলে গেল। ঘরের ভেতরের আলো জ্বলে উঠল। মুহূর্তের জন্য আমি আলোতে যেন অন্ধ হয়ে গেলাম। আমি চোখ বন্ধ করলাম। জ্যাক চমকে জেগে উঠল। বড় করে শ্বাস নিয়ে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

    দুঃখিত। বিলি বললেন, আমরা কি তোমাকে জাগিয়ে দিয়েছি?

    আমার চোখ ধীরে ধীরে তার মুখের উপর পতিত হলো। তারপর যখন আমি তার মুখের অভিব্যক্তি পড়তে পারলাম, তার চোখ কান্নার জলে পরিপূর্ণ।

    ওহ, না, চাচা! আমি গুঙিয়ে উঠলাম।

    তিনি ধীরে ধীরে মাথা নোয়ালেন। তার অভিব্যক্তি দুঃখে পরিপূর্ণ। জ্যাক তাড়াতাড়ি তার বাবার কাছে গেল। বাবার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিল। ব্যথার যন্ত্রণাটা তার মুখের ভাব হঠাৎ করে শিশুসুলভ হয়ে গেল। এটা ওরকম একজন মানুষের জন্য খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছিল।

    স্যাম বিলির ঠিক পিছনে। দরজা দিয়ে তার চেয়ার ঠেলে নিয়ে আসছিল। তার স্বাভাবিক অভিব্যক্তি মুখ থেকে সরে গিয়ে দুঃখে ভরে আছে।

    আমি খুবই দুঃখিত। আমি ফিসফিস করে বললাম।

    বিলি মাথা নোয়ালেন। চারিদিকের সবকিছু খুব জটিল হয়ে যাচ্ছে।

    বাবা কোথায়?

    তোমার বাবা এখনও সুইয়ের সাথে হাসপাতালে আছে। সেখানে অনেক কিছুই…এখনও অনেক কিছুই জোগাড়যন্ত্র করার দরকার আছে।

    আমি ঢোক গিলোম।

    সবচেয়ে ভাল হয় আমি সেখানে ফিরে যাই। স্যাম বিড়বিড় করে বলল। সে তড়িঘড়ি করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

    বিলি জ্যাকবের হাত থেকে তার হাত টেনে নিলেন। তারপর তিনি নিজেকে ঠেলে ঠেলে কিচেনের দিকে নিয়ে গেলেন।

    জ্যাক মিনিট খানিক ধরে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আমার পাশে এসে মেঝেতে আবার বসে পড়ল। সে তার মুখ হাতের উপর রাখল। আমি তার কাঁধ ঘষে দিলাম। আশা করছি আমি যেকোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

    দীর্ঘক্ষণ পর, জ্যাকব আমার হাত টেনে নিল এবং তার মুখে ঘষল।

    তুমি কেমন বোধ করছ? তুমি ঠিক আছে তো? আমার সম্ভবত তোমাকে একজন ডাক্তার বা এই জাতীয় কারোর কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। সে নিঃশ্বাস নিল।

    আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। আমি বললাম।

    সে আমার দিকে তাকানোর জন্য মাথা ঘোরাল। তার চোখ জোড়া লাল হয়ে ছিল। তোমাকে খুব একটা ভাল দেখাচ্ছে না।

    আমি খুব একটা ভালবোধ করছি না। মানে আমি অনুমান করছি।

    আমি তোমার ট্রাক আনতে যাব এবং তারপর তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাব। তোমার সম্ভবত সেখানে থাকা উচিত। আর চার্লিও তখন বাড়িতে ফিরে আসবে।

    ঠিক।

    .

    আমি চিন্তাহীনভাবে সোফার উপর কাত হয়ে শুয়েছিলাম। বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। বিলি অন্য রুমে নীরবেই আছেন। আমার নিজেকে একজন পিপিং টমের মত মনে হলো। মানুষের ব্যক্তিগত দুঃখের মধ্যে নাক গলিয়ে আমি তাদের প্রাইভেসি নষ্ট করেছি।

    জ্যাকব খুববেশি সময় নিল না। আমার ট্রাকের ইঞ্জিনের গর্জন নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খান খান করে দিল। এটা আমি আশা করার আগেই এসে গেছে। সে কোন কথা না বলে আমাকে সোফা থেকে বাইরে নেয়ায় সাহায্য করল। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বাইরে নিয়ে এল যখন বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস আমাকে কাঁপিয়ে দিল। তারপর আমাকে কোলে তুলে শক্ত করে ধরে রাখল। আমার মাথা তার বুকের উপর ঝুঁকে ছিল।

    তুমি কীভাবে বাড়িতে ফিরে আসবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    আমি বাড়িতে ফিরে আসতে যাচ্ছি না। আমরা এখনও সেই রক্তচোষাকে ধরতে পারি নি, সেটা মনে আছে?

    আমি আবারও কেপে উঠলাম, সে কাঁপুনি কোনমতেই শীতের কারণে নয়।

    এটা তারপর খুব নীরব একটা যাত্রা হলো। ঠাণ্ডা বাতাস আমাকে জাগিয়ে দিল। আমার নীরব মন সচেতন ছিল। এটা খুব কাঠোরভাবে এবং খুব গতিতে কাজ করে চলছিল।

    কি হবে তাহলে? এখন সবচেয়ে সঠিক কি কাজ করার আছে?

    আমি এখন নিজের জীবনকে জ্যাকব ছাড়া কল্পনাও করতে পারি না। আমি সেটা ব্যতীত কোন কিছু কল্পনাতে আনি না। যেভাবেই হোক, আমার বেঁচে থাকার জন্য সে খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু যেভাবে তারা আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে…সেটা খুবই নিষ্ঠুর, যেভাবে মাইক দোষী হয়েছিল?

    আমি মনে করতে পারলাম আমার সেই ইচ্ছে, যদি জ্যাকব আমার ভাই হতো। আমি এখন বুঝতে পারলাম আমি সত্যিই চাই আমি তার প্রতি দোষারোপ করি। আমি তেমন ভ্রাতৃত্ববোধ অনুভব করি না যখন সে আমাকে এভাবে ধরে রাখে। এটা শুধু অদ্ভুত সুন্দর একটা অনুভূতি। উষ্ণ এবং আরামদায়ক এবং পরিচিত। নিরাপদ। জ্যাকব আমার জন্য ঠিক একটা নিরাপদ জলাশয়।

    আমি অবশ্য একটা দোষ দিতে পারি। আমার সেরকম শক্তি আছে।

    আমি তাকে সবকিছু বলতে পারি। আমি সেটা জানি। এটাই একমাত্র পথ যে পথে তার কাছে নিষ্কলুষ থাকা যায়। আমার ঠিক এই মুহূর্তে এটা ব্যাখ্যা করা উচিত। যাতে সে জানতে পারে আমি সেটা সেটেল করছি না। সে আমার জন্য কতটা ভাল। সে এরই মধ্যে জেনে গেছে আমি ভাঙা সম্পকের। সেই অংশ তাকে বিস্মিত করে নাই। কিন্তু তার সেটার ব্যাপ্তি জানা প্রয়োজন। আমার স্বীকার করার উচিত যে আমি উন্মত্ত। সেই কণ্ঠস্বর শোনার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা উচিত। তার সবকিছু জানা প্রয়োজন। সে যেকোন একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে।

    কিন্তু, এমনকি আমি সেই প্রয়োজনটা ধরতে পারার পরও, আমি জানতাম সে আমার এ সবকিছুর পরিবর্তে গ্রহণ করবে। সে এমনকি থেমে যাওয়ার ব্যাপারটা চিন্তা ও করতে পারে না।

    আমার এই ব্যাপারে কথা রাখা উচিত। প্রত্যেকেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ছে। এটাই একমাত্র পথ তার কাছে নিষ্কলঙ্ক থাকা। আমি কি সেটা পারব?

    এটা কি খুব ভুল কিছু হবে যে জ্যাকবকে সুখী দেখার চেষ্টা করা? এমনকি যদি তার প্রতি আমি যে ভালবাসা পোষণ করি সেটা মাত্র দুর্বলতার ব্যাপার না হয়ে থাকে। এমনকি যদি আমার হৃদয় অনেক দূরেও থাকে, সেই রোমিওর প্রতি দৃঢ়তা থাকতে হবে, সেটা কি খুব ভুল কিছু হবে?

    জ্যাকব আমাদের বাড়ির অন্ধকারের সামনে ট্রাক থামাল। হঠাৎ করে ইঞ্জিন থামানোর কারণে চারিদিক নিস্তব্ধতায় ভরে গেল। অন্যান্য অসংখ্যবারের মত, সে আমার চিন্তাভাবনার যোগসুত্র ধরে ফেলতে পারল।

    সে তার অন্যহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ফেলল। আমাকে তার বুকের উপর রাখল। এক হাতে জড়িয়ে ধরল। দারুণ অনুভূতি হলো। প্রায়ই পুরো একজন মানুষের মতই মনে হলো তাকে।

    আমি ভাবছিলাম সে হয়তো হ্যারির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু তারপর যখন সে কথা বলল। তার কণ্ঠস্বর ক্ষমাপ্রার্থনা সূচক। দুঃখিত, আমি জানি তুমি আমার মত একইভাবে একই রকম অনুভূতি পোষণ করো না বেলা। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি তাতে কিছু মনে করি নি। আমি শুধু এটুকুতেই খুশি যে তুমি ভাল আছো ঠিক আছে যেকারণে আমি গান গাইতে পারছি এবং সেটা কেউ কখনো শুনতে পায় না। সে আমার কানের কাছে আনন্দিত স্বরে হেসে উঠল।

    আমার শ্বাস প্রশ্বাস গলার কাছে যেন বেঁধে গেল।

    এ্যাডওয়ার্ড কি এইসব ঘটনার পর আমাকে সুখী করতে চায় যতটা সম্ভব? তার কাছ থেকে কি পর্যাপ্ত বন্ধুত্ব আমি পেয়ে যাই নাই যেটা সে আমাকে দিয়েছে? আমি ভাবছি সে করেছে। সে আমাকে এইভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে দেয় নাই। দিয়েছে। এই ছোট্ট ভালবাসা যেটা সে আমাকে জ্যাকবের বন্ধু হতে দিতে চায় নি। সর্বোপরি, এটা সেই একই প্রকারের ভালবাসা নয়।

    জ্যাকব তার উষ্ণ চিবুক আমার মাথার চুলের উপরে চেপে ধরল।

    যদি আমি আমার মুখ তার দিকে ঘোরাই… যদি আমি আমার ঠোঁট তার ভোলা কাঁধে চেপে ধরি…আমি সন্দেহাতীতভাবেই জানি সেটা তাহলে কোন দিকে নিয়ে যাবে। এটা খুব সহজ ব্যাপার হবে। সেখানে আজ রাতে কোন ব্যাখ্যারই কোন দরকার হবে না।

    কিন্তু আমি কি সেটা করতে পারি? আমি কি আমার অনুপস্থিত হৃদয়কে দু ভাগ জীবনের জন্য রক্ষা করতে পারি?

    আমি সেসব কথা চিন্তা করতেই আমার পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।

    তারপর একদম পরিষ্কারভাবে যেন আমি কোন বিপদের মধ্যে পতিত হয়েছি তেমনভাবে এ্যাডওয়ার্ডের মসৃণ কণ্ঠস্বর আমার কানের কাছে ফিসফিস করল।

    সুখী হও। সে আমাকে বলল।

    আমি জমে গেলাম।

    জ্যাকব আমার শক্ত হয়ে যাওয়া বুঝতে পারল এবং আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছেড়ে দিল। তারপর দরজার কাছে পৌঁছাল।

    অপেক্ষা করো। আমি সেটা বলতে চাইল। শুধু এক মিনিটের জন্য। কিন্তু আমি তখনও সে জায়গায় জমে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার মাথার মধ্যে এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলাম।

    ট্রাক থেকে নামার সাথে সাথে ঠাণ্ডা শীতল বাতাস বয়ে গেল।

    ওহ! জ্যাকবের ভেতর থেকে শব্দটা এমনভাবে বের হলো যেন কেউ একজন তার মুখে ঘুষি মেরেছে। হলি কাউ!

    সে দড়াম করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল। তার হাত এতটাই কাঁপছিল যে আমি জানি না কীভাবে সে এটি ম্যানেজ করবে।

    কি সমস্যা?

    সে খুব দ্রুততার সাথে আবার ইঞ্জিন চালু করে দিল এবং সেটা চালু হলো না।

    ভ্যাম্পায়ার। সে বলল।

    আমার মাথার ভেতরে ঝলকে রক্ত চলে এল এবং সেটা আমার মাথা ঘোরাতে লাগল। তুমি কীভাবে সেটা জানো?

    কারণ আমি এটার গন্ধ পাই! গোল্লায় যাক!

    জ্যাকবের চোখ বন্য হয়ে উঠেছে। সে অন্ধকার রাস্তার দিকে খুঁজে ফিরছে। তার শরীরের উপর দিয়ে কাঁপুনির একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মুখোমুখি হও অথবা তাকে ওখান থেকে বের করে নিয়ে আসো? সে হিসহিসিয়ে নিজেকে বলল।

    সে মুহূর্তের জন্য একবার আমার দিকে তাকাল। আমার ভয়ার্ত চোখ দেখতে পেল। আমার মুখ কাগজের মত সাদা হয়ে গেছে। সে আবার রাস্তার দিকে দেখতে লাগল। ঠিক, বেরিয়ে যেয়ে ধরে তাকে।

    ইঞ্জিনের গর্জন শোনা গেল। ট্রাক ঘোরার সময় টায়ারের ঘর্ষণের শব্দ শোনা গেল। ট্রাকের হেডলাইট পথের দিকে আলোকিত করল। অন্ধকার জঙ্গলের দিকে সে আলোর মুখ ঘোরাল। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের বাড়ির বিপরীতে একটা গাড়ি পার্ক করা দেখতে পেল।

    থামো! আমি নিঃশ্বাস নিলাম।

    এটা একটা কালো গাড়ি। এই গাড়িটা আমি চিনি। আমি হয়তো গাড়ি সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানি না। কিন্তু আমি এই গাড়িটা সম্বন্ধে সবকিছুই বলতে পারি। এটা একটা মার্সিডিজ এএমজি গাড়ি। আমি এটার অশ্বশক্তির ব্যাপারেও জানি। এর ভেতরে রঙও বলে দিতে পারি। আমি এর শক্তিশালী ইঞ্চিন সম্বন্ধে জানি। আমি এর ভেতরের চামড়ার সিটের গন্ধ পর্যন্ত জানি।

    এটা কার্লিসলের গাড়ি।

    থামো! আমি গুঙিয়ে কেঁদে উঠলাম। এইবারে বেশ শব্দ করে। কারণ জ্যাকব ট্রাকটা সেদিকে নিয়ে চলেছিল।

    কি?

    এটা ভিক্টোরিয়া নয়। থামো, থামো! আমি পেছনের দিকে যেতে চাই।

    সে এত জোরে ব্রেক কষল আমি প্রায় ড্যাশবোর্ডের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।

    কি? সে আবার জিজ্ঞেস করল। সে আমার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

    এটা কার্লিসলের গাড়ি! এটা কুলিনরা। আমি এটা জানি।

    সে আমার মুখের দিকে তাকাল। একটা ভয়াবহ কঁপনি তার শরীরের উপর দিয়ে বয়ে গেল।

    হেই, শান্ত হও জ্যাক। এটা ঠিক আছে। কোন বিপদ নেই। দেখ? শান্ত হও।

    হা। শান্ত। সে হাঁপাতে লাগল। সে মাথা নিচের দিকে করল এবং তার চোখ বন্ধ করল। যখন সে মনোযোগ দিচ্ছিল সে নেকড়ে হিসাবে বিস্ফোরিত হলো না। আমি পেছনের জানালা দিয়ে সেই কালো গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

    এটা শুধুই কার্লিসল আমি নিজেকে বললাম। তার চেয়ে আর বেশি কিছু আশা করো না। হতে পারে এসমে….এখনি এখানে থামো। আমি নিজেকে বললাম। শুধু কার্লিসল। সেটাই অনেক কিছু। আমি আবার যাক কিছু ভাবছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।

    সেখানে তোমার বাড়িতে একটা ভ্যাম্পায়ার আছে। জ্যাকব হিসহিসিয়ে উঠল, এবং তুমি সেখানে ফেরত যেতে চাইছ?

    আমি তার দিকে তাকালাম। অনেক কষ্টে অনিচ্ছাসত্বেও মার্সিডিজের উপর থেকে চোখ ফেরালাম। ভয় পাচ্ছিলাম দ্বিতীয়বার যখন ওদিকে তাকাব দেখব সেটা চলে গেছে।

    অবশ্যই। আমি বললাম। তার এই প্রশ্নে আমার কণ্ঠস্বর বিস্ময়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি সেখানে ফিরে যেতে চাই।

    জ্যাকবের মুখ কঠোর হয়ে গেল। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। চাইছিলাম সে শান্ত হয়ে উঠুক। আমি তার চোখেমুখে অন্যরকম আলো খেলা করতে দেখলাম। তার হাত তখনও কাঁপছিল। তাকে আমার চেয়ে দশ বছরের বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছিল।

    সে গভীরভাবে শ্বাস নিল। তুমি নিশ্চিত যে এটা কোন ধোকাবাজি নয়? সে ধীরে ধীরে ভারী স্বরে আমাকে প্রশ্ন করল।

    এটা কোন ধোঁকাবাজি নয়। এটা কার্লিসল। আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও!

    তার চওড়া কাঁধের উপর দিয়ে একটা কাঁপুনি বয়ে গেল। কিন্তু তার চোখ জোড়া নিরুত্তাপ অভিব্যক্তিহীন। না।

    জ্যাক, সবকিছু ঠিক আছে…

    না, নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও বেলা তার কণ্ঠস্বর যেন চড় মারার মত। আমি তার সেই কণ্ঠস্বরে কেঁপে উঠলাম। তার চোয়াল বাড়ি খাচ্ছিল।

    দেখ বেলা। সে আগের মতই কঠোর স্বরে বলল। আমি ফিরে যেতে পারি না। চুক্তি হোক বা না হোক। সেখানে আমার শত্রু আছে।

    এটা সেরকম কিছু নয়

    আমাকে এখনই স্যামকে এ ব্যাপারে বলতে হবে। এই পরিবর্তের ব্যাপারটা। আমরা তাদের এই কৌশল ধরতে পারছি না।

    জ্যাক, এটা কোন যুদ্ধ নয়!

    সে সেটা শুনল না। সে ট্রাকটাকে গতিহীন করে রাখল। তারপর দরজা দিয়ে লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেল এবং দৌড়াতে শুরু করল।

    বিদায় বেলা। সে পেছন দিক থেকে ডেকে বলল। আমি সত্যিই আশা করি তুমি মারা যাবে না। সে অন্ধকারের মধ্যে দৌড়াতে শুরু করল। এত জোরে নিজেকে নাড়াল যে তার শরীর ঝাপসা হয়ে গেল। আমি তাকে মুখ খুলে ডাকার আগেই সে অদৃশ্য হয়ে গেল।

    আমি এক সেকেন্ড সিটে অর্থবের মত বসে রইলাম। আমি জ্যাকবের প্রতি কি এমন করেছি?

    কিন্তু আমাকে সেভাবে বেশিক্ষণ বসে থাকতে দিল না।

    আমি সিট থেকে সরে ডাইভিং সিটে এলাম। আমার হাত জ্যাকবের হাতের মতই কাঁপছিল। এটা মিনিটখানিক সময় নিল মনোযোগ দেয়ার জন্য। তারপর আমি সর্তকতার সাথে ট্রাকটাকে ঘুরালাম এবং এটা আমার বাড়ির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম।

    আমি বাড়ির সমানে যখন হেডলাইট অফ করে দিলাম তখন সেখানে খুব অন্ধকার হয়ে গেল। চার্লি এতটাই দ্রুততার সাথে চলে গেছেন যে তিনি সামনের পোর্চের আলো জ্বালতে ভুলে গেছেন। আমি সন্দেহের দোলায় পড়ে গেলাম। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। গভীর ছায়ার দিকে। কি হবে যদি এটা সত্যিই একটা ট্রিক হয়ে থাকে?

    আমি পিছনের কালো গাড়িটার দিকে আবার তাকালাম। রাতের অন্ধকারে এটা প্রায় অদৃশ্যই বলা চলে না। আমি এই গাড়িটাকে চিনি।

    এখনও, আমার হাত আগের চেয়ে খারাপভাবে কাঁপতে লাগল। আমি যখন দরজার চাবি হাতে নিলাম তখনও হাত কাঁপতে লাগল। যখন আমি দরজার নকে হাত দিলাম এটা ভোলার জন্য, এটা আমার হাতের নিচে খুব সহজেই ঘুরে গেল। আমি বুঝতে পারলাম দরজাটা খোলা। হলওয়ের পথটা অন্ধকারে ঢাকা।

    আমি কোন কিছু সম্বোধন করতে চাইলাম কিন্তু আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। আমি নিঃশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছি না।

    আমি ভেতরে এক পা দিলাম এবং আলোর সুইচ খুঁজতে লাগলাম। এটা এতটাই অন্ধকার যেন সেই কালো জলের মত…কোথায় সেই সুইচটা?

    সেই কালো জলের মত, সেই কমলা রঙের অগ্নিশিখার মত যেটা কালো জলের উপরে ছিল। অগ্নিশিখার মত কিন্তু যেটা অগ্নিশিখা নয় কিন্তু তাহলে সেটা কি…? আমার আঙুল দেয়াল সুইচ খুঁজতে লাগ। এখনও খুঁজছি, এখনও কাঁপছি–

    হঠাৎ করে, আজ সন্ধ্যেয় জ্যাকব যেটা বলেছিল সেটা আমার মাথার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল, শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম…সে পানিতে চলে যায়, সে বলেছিল, সেই রক্তচোষার সেই সুবিধাটা আছে। সে কারণেই আমি বাড়িতে ফিরে এসেছি। আমি ভীত ছিলাম যে সে হয়তো সাঁতার কেটে সেখানে চলে যাবে। যেখানে তুমি…

    আমার হাত খুঁজতে যেয়ে থমকে থেমে গেল। আমার সমস্ত শরীর ভয়ে জমে গেল। যখন আমি বুঝতে পারলাম পানির উপরের সেই অদ্ভুত কমলা রঙের অগ্নিশিখার ব্যাপারটা।

    ভিক্টোরিয়ার চুল, বাতাসে বেপরোয়াভাবে ভাসছিল, যেটার রঙ অগ্নিশিখার মত…

    সে এখানে থাকতে পারে। সেখানে থাকতে পারে সেই জলাশয়ে আমার আর জ্যাকবের সাথে। যদি স্যাম সেখানে না থাকে, এটা শুধুমাত্র আমাদের দুজনের মধ্যে হয়ে থাকে…? আমি শ্বাস নিতে বা নড়তে পারছি না।

    আলো জ্বলে উঠল হঠাৎ করে। আমি দেখতে পেলাম সেখানে কেউ একজন আছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

    .

    ১৭.

    অস্বাভাবিকভাবে স্থির এবং সাদা, বড় বড় কালো চোখ মেলে সরাসরি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার দর্শনার্থী প্রকৃতপক্ষে স্থিরভাবে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। সে অপেক্ষা করছিল হলঘরের মাঝখানে। আমার কল্পনার চেয়ে সে সুন্দরী।

    আমার হাঁটু কাঁপতে শুরু করল। আমি প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম করলাম। কোন মতে সামলে নিলাম।

    এলিস, ওহ, এলিস! আমি কেঁদে উঠলাম যখন আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

    আমি ভুলে গিয়েছিলাম সে কতটা শক্ত। এটা এমনটি মনে হলো যেন আমার মাথা কোন শক্ত সিমেন্টের দেয়ালে আঘাত করেছে।

    বেলা? সেখানে তার কণ্ঠস্বরে অদ্ভুত এক ধরনের স্বস্তি এবং একইসাথে এক ধরনের দ্বিধা খেলা করছে।

    আমি আমার বাহু দিয়ে তার চারিদিকে জড়িয়ে ধরলাম। নিশ্বাস নিচ্ছিলাম এত বেশি যাতে তার ত্বকের গন্ধ আমার নাকে লাগে। এটা অন্য কিছুর মত ছিল না। ফুলের গন্ধও না মশলার গন্ধও না। পৃথিবীর কোন সুগন্ধী এর সাথে তুলনা চলে না। আমার স্মৃতিতে এটার বিচার্য কিছু নেই।

    আমি লক্ষ্য করলাম না কখন আমার শ্বাস নেয়া অন্য কিছুতে রুপান্তরিত হয়ে গেল। আমি শুধু বুঝতে পারলাম আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি যখন এলিস আমাকে লিভিংরুমের কোচের উপর টেনে নিয়ে গেল। আমাকে তার কোলের উপর টেনে তুলল। এটা এমন যেন একটা ঠাণ্ডা পাথরের উপর কুঁকড়ে আছি। কিন্তু এই পাথরটা আমার শরীর সাথে আরামদায়ক অবস্থানে ছিল। সে আমার পিঠে সহজ ছান্দিক ছন্দে পিট চাপড়ে দিতে লাগল। অপেক্ষা করছিল যাতে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেতে পারি।

    আমি…দুঃখিত। আমি বিড়বিড় করে বললাম, আমি শুধু…এতটাই সুখী…তোমাকে দেখতে পেয়ে!

    এটা ঠিক আছে বেলা। সবকিছুই ঠিক আছে।

    হ্যাঁ। আমি বললাম এবং একবারের জন্য এটা তেমনটিই মনে হলো।

    এলিস শ্বাস নিল। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি কতটা এলোমেলো। সে বলল। তার কণ্ঠস্বর অন্যরকম।

    আমি চোখের পানি গড়িয়ে পড়া চোখ দিয়ে তাকে দেখতে লাগলাম। এলিসের ঘাড় শক্ত হয়ে আছে। আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তার ঠোঁট জোড়া শক্তভাবে চেপে আছে। তার চোখের দৃষ্টি পিচের মত কালো।

    ওহ! আমি নিঃশ্বাস নিলাম। আমি সমস্যাটা বুঝতে পারলাম। সে তৃষ্ণার্ত। আমি তার ক্ষুধার উদ্রেক করছি। তেমন গন্ধ দিচ্ছি। আমি সেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করলাম। দুঃখিত।

    এটা আমার নিজের দোষ। আমি দীর্ঘ দিন ধরে শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমি নিজেকে এতটা তৃষ্ণার্ত হতে দিতে চাইনি। কিন্তু আমার আজ বেশ ব্যস্ততা রয়েছে। সে আমার দিকে সরাসরি যেভাবে তাকিয়ে রইল সেটা একদৃষ্টিতে তাকানো। কোন বিষয়ে কথা বলা তুমি কি আমাকে ব্যাখ্যা করবে কীভাবে তুমি জীবিত আছো?

    সেটা সহজেই আমাকে ঘটনায় নিয়ে এল এবং আমি ফুঁপিয়ে কান্না বন্ধ করলাম। আমি বুঝতে পারলাম তাড়াতাড়ি কি ঘটে চলেছে এবং কেন এলিস আজ এখানে।

    আমি তাড়াতাড়ি ঢোক গিলোম তুমি আমাকে পড়তে দেখেছিলে?

    না। সে অসম্মত হলো। তার চোখ জোড়া ছোট হয়ে গেল। আমি তোমাকে লাফ দিতে দেখেছিলাম।

    আমি ঠোঁট চেপে ধরে চিন্তা করতে লাগলাম। সেই ব্যাখ্যাটা খুব ভাল শোনাচ্ছে না।

    এলিস তার মাথা নাড়ল। আমি তাকে বলেছিলাম এটা ঘটতে পারে। কিন্তু সে আমাকে বিশ্বাস করে নাই। বেলা প্রতিজ্ঞা করেছে। তার কণ্ঠস্বর সে এমনভাবে নকল করল যে আমি একটা ধাক্কা খেলাম। ব্যথার যন্ত্রণাটা আবার আমার ভেতর ছড়িয়ে পড়ল। তার ভবিষ্যতের দিকে নজর দিয়ো না। সে এখনও তাকে কোট করে চলেছে আমরা এর মধ্যে অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি।

    কিন্তু শুধু সে কারণে আমি দেখছিলাম না। তার অর্থ হচ্ছে আমি দেখছিলাম না। সে বলে চলল, আমি শুধুমাত্র তোমার উপর নজর রাখছিলাম। আমি প্রতিজ্ঞা করছি বেলা। এটা শুধু এই যে আমি এরই মধ্যে তোমার উপর নজর রেখেছি…যখন আমি তোমাকে লাফ দিতে দেখলাম, আমি কোন চিন্তাভাবনা করিনি। আমি শুধু প্লেনে উঠে বসেছি। আমি জানতাম আমি হয়তো খুব দেরি করে ফেলব। কিন্তু আমি আর কিছু করতে পারতাম না। তারপর আমি এখানে চলে এলাম। ভাবছিলাম হতে পারে আমি যেকোনভাবে চার্লিকে সাহায্য করতে পারব। এবং তুমি চলে এলে। সে তার মাথা নাড়ল, এবার সে পুরোপুরি দ্বিধার মধ্যে। তার কণ্ঠস্বর অদ্ভুত শোনাল আমি দেখেছিলাম তুমি পানির মধ্যে চলে গেছে। আমি অপেক্ষার পর অপেক্ষা করছিলাম, তোমার উপরে উঠে আসার জন্য কিন্তু তুমি ওঠো নাই। কি হয়েছিল? এবং তুমি কীভাবে চার্লির প্রতি এটা করতে পারলে? তুমি কি এটা চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছিলে যে সেটা তার জন্য কেমন হবে? এবং আমার ভাইয়ের জন্য? তোমার কি কোন ধারণা আছে যে এ্যাডওয়ার্ড কীভাবে…

    আমি তাড়াতাড়ি তাকে থামিয়ে দিলাম যখন সে তার নাম উচ্চারণ করল। আমি তাকে তারপরও বলতে দিতাম যদিও আমি বুঝতে পারছিলাম কীভাবে ভুল বোঝাবুঝি তার মধ্যে আছে। শুধুমাত্র তার সেই উপযুক্ত কণ্ঠস্বর শুনতে চাচ্ছি। কিন্তু এইবারে আমি তাকে বাধা দিলাম।

    এলিস, আমি আত্মহত্যা করতে যাই নি।

    সে আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাল। তুমি কি বলতে চাইছো তুমি ক্লিফ থেকে লাফ দিয়ে পড়ো নি?

    না, কিন্তু… আমি মুখভঙ্গী করলাম এটা শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে।

    তার অভিব্যক্তি কঠোর হয়ে গেল।

    আমি জ্যাকবের কয়েকজন বন্ধুকে ক্লিফ থেকে লাফ দিতে দেখেছিলাম। আমি জোর দিয়ে বললাম এটা দেখে মনে হয়েছিল….মজার কিছু এবং আমি খুবই বোর ফিল করছিলাম…

    সে অপেক্ষা করতে লাগল।

    আমি মোটেই ঝড় কীভাবে স্রোতের উপর প্রভাব ফেলছে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করি নি। প্রকৃতপক্ষে, আমি পানির ব্যাপারটা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাই নি।

    এলিস এটা মেনে নিতে পারল না। আমি দেখতে পেলাম সে এখনও ভাবছে যে আমি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। আমি সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। তো যদি তুমি আমাকে সেখানে লাফ দিতে দেখ, তাহলে কেন তুমি জ্যাকবকে দেখতে পাও নি?

    সে দুপাশে তার মাথা নাড়াল। তাকে বিভ্রান্ত দেখাল।

    আমি বলে চললাম, এটা সত্য যে সম্ভবত আমি ডুবেই মারা যেতাম যদি সেই সময় জ্যাকব আমার কাছে লাফ দিয়ে না পড়ত। বেশ, ঠিক আছে, সেখানে এ ব্যাপারে কোন সম্ভবনা নেই। কিন্তু সে করেছিল। সে আমাকে পানি থেকে টেনে বের করেছে। আমি ধারণা করছি সে আমাকে টেনে সৈকতের দিকে নিয়ে গেছে। যদিও আমি সেই সময়ে সে ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। এটা সম্ভবত এক মিনিটেরও বেশ হবে না যখন আমি পানির তলে ছিলাম। তারপর সে আমাকে ধরে ফেলে। কীভাবে তাহলে সেটা তুমি দেখতে পাও নাই?

    সে দ্বিধান্বিতভাবে ভ্রু কুঁচকাল। কেউ একজন তোমাকে টেনে তুলে এনেছে?

    হ্যাঁ। জ্যাকব আমাকে বাঁচিয়েছে।

    আমি কৌতূহলের সাথে লক্ষ্য করলাম তার মুখের ভাব পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা তাকে বিরক্ত করছে। সেটা কি তার দুরদর্শনের অসাধুতা? কিন্তু সেটা সত্য নয়। তারপর সে আমার দিকে ঝুঁকে এল এবং আমার কাঁধের উপর নাক খুঁজে ফুপাতে লাগল।

    আমি জমে গেলাম।

    হাস্যকর হয়ো না। সে বিড়বিড় করে বলল। আরো বেশি করে ফুপাতে লাগল।

    তুমি কি করেছ?

    সে আমার প্রশ্ন উপেক্ষা করে গেল। কে এখন এই মুহূর্তে বাইরে তোমার সাথে ছিল? তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল তোমরা তর্ক করছিলে।

    জ্যাকব ব্লাক। সে আমার…সে আমার এক প্রকারের সবচেয়ে ভাল বন্ধু। আমি মনে করি। অন্ততপক্ষে, সে হচ্ছে… আমি জ্যাকবের রাগের ব্যাপারে চিন্তা করলাম। তার প্রতারিত মুখ এবং এখন সে আমার প্রতি কেমন আচরণ করছে সেই বিষয়টা।

    এলিস মাথা নোয়াল। দেখে মনে হচ্ছে আগের থেকেই জানত।

    কি?

    আমি জানি না। সে বলল আমি নিশ্চিত নই এটার মানে কি।

    বেশ, অন্ততপক্ষে, আমি মারা যাই নাই।

    সে তার চোখ ঘোরাল। সে এতটাই বোকা যেভাবে তুমি একাকী বেঁচে থাকতে পারবে। আমি কখনও কাউকে দেখি নাই যে এতটাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোকামি করতে পারে।

    আমি বেঁচে আছি। আমি সেটা জোর দিয়ে বললাম।

    সে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিল। তো, যদি স্রোতটা তোমার জন্য অত বেশি হয়ে থাকে, তাহলে জ্যাকব সেটা কীভাবে ম্যানেজ করতে পারল?

    জ্যাকব এতটাই…শক্তিশালী।

    সে আমার কণ্ঠস্বরের দ্বিধার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল। সে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাল।

    আমি সেকেন্ডের জন্য ঠোঁট চেপে রইলাম। এটা কি একটা গোপনীয় বিষয় অথবা না? যদি এটা তাই হয়ে থাকে তাহলে কে আমার সবচেয়ে বেশি শুভাকাঙ্খী জ্যাকব না এলিস?

    এটা খুব কঠিন যে গোপনীয়তা বজায় রাখা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। জ্যাকব সবকিছুই জানে। তাহলে এলিসও কেন জানবে না?

    দেখ, বেশ, সে একজন…সে আসলে একরকমের নেকড়েমানব। আমি তাড়াতাড়ি সেটা স্বীকার করলাম। কুইলেটরা নেকড়েতে রুপান্তরিত হয়ে যায় যখন তাদের আশেপাশে কোন ভ্যাম্পায়ার থাকে। তারা কার্লির্সলে অনেক আগে থেকেই জানত। তুমি কি কার্লিসলের সাথে ফিরে এসেছো?

    এলিস আমার দিকে মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে রইল। তারপর আবার নিজের অবস্থানে ফিরে গেল। দ্রুত শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বেশ, আমি অনুমান করছি সেটাই গন্ধের ব্যাখ্যা করে। সে বিড়বিড় করে বলল কিন্তু এটার কি ব্যাখ্যা যেটা আমি দেখতে পাই নি? সে ভ্রু কুঁচকাল। তার কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়ল।

    গন্ধটা? আমি পুনরাবৃত্তি করলাম।

    তোমার গন্ধ ভয়ানক। সে অন্যমনস্কভাবে বলল। এখনও ভ্রু কুঁচকে আছে। একজন নেকড়েমানব? তুমি কি সে বিষয়ে নিশ্চিত?

    খুবই নিশ্চিত। আমি জোর গলায় প্রতিজ্ঞা করলাম। রাস্তায় জ্যাকব ও পলের সেই লড়াইয়ের কথা আমার মনে পড়ে গেল। আমি অনুমান করছি তুমি তখন কার্লিসলের সাথে ছিলে না, শেষবার যখন এই ফরকসে নেকড়েমানবরা ছিল?

    না। আমি এখনও তাদেরকে খুঁজে পাই নাই। এলিস এখন তার চিন্তাভাবনা হারানোর মধ্যে আছে। হঠাৎ, তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে আমার দিকে ঘুরে এক দৃষ্টিতে হতভম্বের মত তাকিয়ে রইল। তোমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু একজন নেকড়েমানব?

    আমি লজ্জিতভাবে মাথা উপর নিচ করলাম।

    সেটা কতদিন ধরে এরকম চলছে?

    খুব বেশিদিন নয়। আমি আত্মরক্ষামূলক স্বরে বললাম। সে শুধুমাত্র কয়েক সপ্তাহের আগে ওয়ারউলফের মূর্তি ধারণ করেছিল।

    সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। একজন নবীন ওয়ারউলফ? সবচেয়ে খারাপ। এ্যাডওয়ার্ডই তাহলে ঠিক- তুমি একজন বিপদের ম্যানেজার। তুমি কি বিপদ বা সমস্যা থেকে কি বাইরে কোনভাবে থাকতে পার না?

    সেখানে নেকড়েমানবদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই। আমি গম্ভীর মুখে বললাম। তার সমালোচনা আমার সহ্য হচ্ছে না।

    যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায়। সে তার মাথা দ্রুতগতিতে এপাশে ওপাশে নাড়াল। এটা তোমার উপরে ছেড়ে দাও বেলা। যে কেউ খুব ভাল থাকবে যখন ভ্যাম্পায়ার শহর ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু তুমি এখনও সেই দৈত্যের সাথে জড়িয়ে আছে।

    আমি এলিসের সাথে কোনরকম তর্কের ভেতর গেলাম না। আমি এখনও আনন্দে কাঁপছিলাম যে সে সত্যিই এখন এখানে। আমি এখন তার মার্বেলের মত ত্বক স্পর্শ করতে পারি এবং তার ছন্দের মত কণ্ঠস্বর শুনতে পারি। কিন্তু সে সবকিছু ওলোটপাটে করে ফেলছে।

    না এলিস। ভ্যাম্পায়ার সত্যি সত্যিই এখান থেকে যায়নি। তাদের সবাই যায়নি। যাইহোক। সেটাই হলো মস্ত সমস্যা। যদি সেখানে এই নেকড়েমানবেরা না থাকত, ভিক্টোরিয়া এখন আমাকে পেয়ে যেতো। বেশ, যদি এটা জ্যাক এবং তার বন্ধুদের জন্য হয়ে থাকে, ভিক্টোরিয়া পাওয়ার আগে লরেন্ট আমাকে পেয়ে গিয়েছিল, আমি অনুমান করছি, সুতরাং…

    ভিক্টোরিয়া? সে হিসহিস করে উঠল। লরেন্ট?

    আমি মাথা নোয়ালাম। তার কালো চোখের তারায় সতর্ক সংকেত দেখতে পেলাম। আমি নিজের বুকের দিকে নির্দেশ করলাম। বিপদের ম্যানেজার, মনে আছে?

    সে আবার তার মাথা নাড়ল। আমাকে সবকিছু খুলে বলো। একেবারে শুরু থেকেই।

    আমি একেবারে শুরু থেকে শুরু করলাম। শুধু মোটরসাইকেল চালানো ও সেই কণ্ঠস্বরের ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম। কিন্তু তাকে সবকিছুই বললাম। একেবারে আজকের এই ভুল বোঝাবুঝির অ্যাডভেঞ্চার পর্যন্ত। এলিস আমার বোর হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খোঁড়া যুক্তি গ্রহণ করল না। এবং ক্লিফের উপর থেকে লাফ দেয়ার ব্যাপারটা। তো আমি তাড়াতাড়ি পানির উপর দেখা সেই অদ্ভুত অগ্নিশিখার কথা বললাম। আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটার কথা বললাম। এই অংশ শোনার পর তার চোখ ছোট ছোট হয়ে গেল। এত অদ্ভুত যে তার দৃষ্টি এতটাই… এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠল- ঠিক একটা ভ্যাম্পায়ারের মত। আমি কঠিনভাবে ঢোক গিলোম। তারপর হ্যারির ঘটনা পর্যন্ত বাকি ঘটনা বলে গেলাম।

    সে কোনরকম বাধা দেয়া ছাড়াই আমার গল্প শুনে গেল। মাঝে মাঝে সে তার মাথা নাড়াতে লাগল। তার কপালের ভাঁজ গল্প শোনার সময় এমনভাবে পড়ল যেন মনে হলো সেটা স্থায়ী হয়ে যাবে। সে কোন কথা বলল না। শেষ পর্যন্ত, আমি থেমে গেলাম। হ্যারির চলে যাওয়ার জন্য মন দুঃখিত হয়ে উঠল। আমি চার্লির কথা চিন্তা করলাম। তিনি তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসবেন। তিনি এখন কেমন অবস্থায় আছেন?

    আমাদের চলে যাওয়া তোমার জন্য আদৌ কোন ভাল ফল বয়ে আনেনি। তাই নয় কি? এলিস বিড়বিড় করে বলল।

    আমি হঠাৎ করে হেসে উঠলাম। এটা হিস্টোরিয়ার হাসির মত শোনাল। সেটা কখনও কোন পয়েন্ট ছিল না যদিও, তাই ছিল কি? এটা এমন কিছু নয় যে তুমি আমার ভালোর জন্য চলে গিয়েছিলে?

    এলিস এক মুহূর্তের জন্য মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। বেশ,,আমি অনুমান করছি আমি আজ বেশ অন্যরকম আচরণ করছি। আমি সম্ভবত একজন অনুপ্রবেশকারী নই।

    আমি অনুভব করলাম রক্ত আমার মুখে প্রবাহিত হচ্ছে। আমার পেটের ভেতর মোচড় দিচ্ছে। যেও না এলিস। আমি ফিসফিস করে বললাম। আমার আঙুল দিয়ে তার সাদা শার্টের কলার আকড়ে ধরলাম। আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকলাম। দয়া করে আমাকে ছেড়ে যেও না।

    তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ঠিক আছে। সে বলল। খুব ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলল, আমি আজ রাতে আর কোথাও যাচ্ছি না। দয়া করে বড় করে শ্বাস নাও।

    আমি সেটা মানার চেষ্টা করলাম। যদিও আমি ফুসফুসে বাতাসে ভরতে পারছি না।

    সে আমার মুখের দিকে তাকাল যখন আমি শ্বাস নেয়ার জন্য মনোযোগী হলাম। সে আমার শান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

    তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছ বেলা।

    আমি আজ ডুবে গিয়েছিলাম। আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম।

    এটা তার চেয়ে অনেক গভীরের কিছু। তুমি সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছো।

    আমি কেঁপে উঠলাম। দেখ, আমি আমার সবচেয়ে ভালটুকু করার চেষ্টা করছি।

    তুমি কি বোঝাতে চাইছ?

    এটা খুব সহজ কিছু ছিল না। আমি এটার উপরে কাজ করছি।

    সে ভ্রু কুঁচকাল। আমি তাকে বলেছিলাম। সে নিজেকে নিজে বলল।

    এলিস? আমি শ্বাস নিলাম। তুমি কি ভেবেছিলে তুমি কি খুঁজে পেতে যাচ্চিলে? আমি বুঝাতে চাইছি, আমার মৃত্যুর পর? তুমি কি আশা করেছিলে আমাকে দেখতে পাবে চারপাশে এবং শিষ দিতে দেখবে? তুমি সেটা আমার চেয়ে অনেক ভাল জানো।

    আমি সেটা করেছি। কিন্তু আমি আশা করেছিলাম।

    তাহলে আমি অনুমান করছি আমার এই বোকামোর কোন অর্থ নেই।

    ফোন বেজে উঠল।

    মনে হয় বাবার ফোন। আমি বললাম। নিজের পায়ে দাঁড়ালাম। আমি এলিসের পাথুরে হাত আঁকড়ে ধরলাম এবং তাকে টানতে টানতে কিচেনে নিয়ে এলাম। আমি তাকে আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে কোন মতেই যেতে দিতে পারি না।

    বাবা? আমি ফোনের উত্তর দিলাম।

    না, এটা আমি। জ্যাকব বলল।

    জ্যাক!

    এলিস আমার অভিব্যক্তি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।

    শুধু এটুকু নিশ্চিত হতে ফোন করেছি যে তুমি এখনও বেঁচে আছে কিনা। জ্যাকব তিক্ত স্বরে বলল।

    আমি ভাল আছি। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে এটা তা নয়

    হ্যাঁ। আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। বিদায়।

    জ্যাকব ফোন রেখে দিল।

    আমি শ্বাস নিলাম। উপরের দিকে তাকালাম। সিলিংয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। সেটা একটা সমস্যার সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।

    এলিস আমার হাতে চাপ দিল। আমি এখানে সে ব্যাপারে তারা উত্তেজিত নয়।

    বিশেষত নয়। কিন্তু এটা এখন আর তাদের ব্যাপার স্যাপার নেই।

    এলিস তার হাত আমার চারিদিকে রাখল। তো এখন আমরা কি করতে যাচ্ছি? সে বিভ্রান্ত। তাকে দেখে মনে হলো সে নিজের সাথেই এ ব্যাপারে কথা বলছে। কিছু একটা করতে হবে। ঢিলে জিনিসে গিট দিতে হবে।

    কি জিনিস করার আছে?

    হঠাৎ করে তার মুখের ভাব সর্তক হয়ে উঠল। আমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে জানি না…আমার কার্লিসলের সাথে দেখা করা প্রয়োজন।

    সে কি খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে? আমার পেট আবার মোচড় দিতে লাগল।

    তুমি কি থাকতে পারবে? আমি কাতর কণ্ঠে বললাম, প্লিজ? শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য। আমি তোমাকে এতটাই মিস করছি। আমার কণ্ঠস্বর ভেঙে গেল।

    যদি তুমি মনে করো সেটা ভাল ব্যাপার হবে। তার চোখের দৃষ্টি সুখী নয়।

    আমি মনে করি। তুমি এখানে থাকতে পার। বাবা সেটা পছন্দ করবে।

    আমার নিজের একটা বাড়ি আছে, বেলা।

    আমি মাথা নোয়ালাম। হতাশ কিন্তু হাল ছেড়ে দিলাম। সে দ্বিধা করতে লাগল। আমাকে দেখতে লাগল।

    বেশ, আমার অন্তত পক্ষে এক সুটকেস কাপড়চোপড়ের দরকার, কিছু না হলেও।

    আমি দুহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম, এলিস তুমি সবেচেয়ে ভাল!

    এবং আমি মনে করি আমার খুব তাড়াতাড়ি শিকারে বেরুনো দরকার। সে অদ্ভুত স্বরে যোগ করল।

    ওপস! আমি এক পা পিছিয়ে এলাম।

    তুমি কি ঘণ্টাখানিকের জন্য কোন ঝামেলা ছাড়াই থাকতে পারবে? সে পলায়নপরভাবে জিজ্ঞেস করল। তারপর, আমি উত্তর দেয়ার আগে, সে এক আঙুল উঁচু করে তার চোখ বন্ধ করল। তার মুখ কয়েক সেকেন্ডের জন্য মসৃণ এবং ফাঁকা হয়ে গেল।

    তারপর তার চোখ খুলল এবং সে নিজেই তার নিজের প্রশ্নের উত্তর দিল। হ্যাঁ, তুমি ভাল থাকবে। আজ রাতের জন্য যেভাবেই হোক। সে মুখ ভেংচি দিল। এরকম মুখ ভঙ্গি করার পরও তাকে দেবদূতের মত লাগতে লাগল।

    তুমি ফিরে আসবে? আমি নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম।

    আমি প্রতিজ্ঞা করছি এক ঘণ্টা পর।

    আমি কিচেন টেবিলের উপরের ঘড়ির দিকে তাকালাম। সে হেসে উঠল। তারপর তাড়তাড়ি ঝুঁকে আমার গালে চুমু খেল। তারপর সে চলে গেল।

    আমি বড় করে শ্বাস নিলাম। এলিস ফিরে আসতে পারে। আমি হঠাৎ করে খুব ভালবোধ করতে লাগলাম।

    অপেক্ষা করার সময় আমার নিজের অনেক কাজ করার আছে। প্রথমেই আমাকে একটা শাওয়ার নিতে হবে। আমি পোশাক পরিবর্তনের সময় নাক টানলাম। কিন্তু আমি কোন কিছুর গন্ধ পেলাম না। শুধুমাত্র সাগরের গন্ধ পেলাম। আমি বিস্মিত হলাম এলিস আমার নিকট থেকে খারাপ গন্ধের ব্যাপারে কি বলছিল।

    যখন আমি পরিষ্কার হলাম, আমি কিচেনে ফিরে গেলাম। চার্লির সম্প্রতি খাওয়ার ব্যাপারে আমি কোনরকম চিহ্ন দেখতে পেলাম না। তিনি যখন ফিরে আসবেন সম্ভবত তিনি খুব ক্ষুধার্ত থাকবেন। আমি গুনগুন করে সুর তুলতে তুলতে কিচেনে ঘোরাঘুরি করতে লাগল।

    যখন মাইক্রোওয়েভে রান্না হতে লাগল, আমি কোচের উপর শিট এবং বালিশ পেতে দিলাম। এলিসের এটা দরকার হবে না। কিন্তু চার্লির এটার দরকার হবে। আমি সর্তক যে সহজে ঘড়ি দেখব না। নিজেকে আতঙ্কিত করার কোন কারণ নেই। এলিস আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে।

    আমি তাড়াতাড়ি আমার ডিনার সারলাম। কোনরকম স্বাদ পেলাম না। শুধু খাবার গলা দিয়ে নামার সময় ব্যথা পেলাম। বেশিরভাগ সময়ই আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম। খাবার শেষ করে উঠার সময়ে আমি প্রায় আধ গ্যালন পানি খেয়ে শেষ করলাম। সমুদ্রের লবণাক্ততা আমার শরীর শুষ্ক করে ফেলেছে।

    অপেক্ষা করার সময় আমি টিভি দেখে সময় কাটানোর চেষ্টা করলাম।

    এলিস এর মধ্যেই সেখানে এসে গেছে। সে বিছানায় বসে আছে। তার চোখে এক ধরনের তারল্য খেলা করছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল এবং বালিশে চাপড় দিতে লাগল। ধন্যবাদ।

    তুমি তাড়াতাড়িই ফিরেছ। আমি বললাম।

    আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। আমার মাথা তার কাঁধের উপর ঝুঁকিয়ে দিলাম। সে তার ঠাণ্ডা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে নিল।

    বেলা, আমরা তোমার প্রতি কি করেছি?

    আমি জানি না। আমি স্বীকার করলাম। আমি সত্যিই আমার সর্বোত্তম চেষ্টা করেছি।

    আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।

    সেখানে এক মুহূর্তের নিরবতা।

    সে কি ..সে কি… আমি গভীর করে শ্বাস নিলাম। জোরে জোরে তার নাম বলার আমার জন্য কঠিন। এমনকি যদিও আমি এখন তাকে নিয়েই ভাবছি। এ্যাডওয়ার্ড কি জানে যে তুমি এখানে? আমি জিজ্ঞেস না করে পারলাম না। এটা আমার যন্ত্রণা যাইহোক। সে চলে যাওয়ার পরে আমি এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি। আমি নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি এই চিন্তায় অসুস্থবোধ করতে লাগলাম।

    না।

    সেখানে একটি মাত্র পথ আছে যাতে ব্যাপারটা সত্য হতে পারে। সে কি কার্লির্সলে ও এসমের সাথে নেই?

    সে প্রতি মিনিটেই সেটা পরখ করে দেখে।

    ওহ, সে অবশ্যই তার এই বিছিন্নতাকে উপভোগ করছে। আমি জিনিসটাকে আরো নিরাপদ বিষয়ে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিয়ে গেলাম। তুমি বলছিলে তুমি এখানে উড়ে এসেছো….তুমি কোথা থেকে এসেছো?

    আমি ডেনালিতে ছিলাম। তানিয়ার পরিবার ভিজিট করছিলাম।

    জেসপার কি সেখানে আছে? সে কি তোমার সাথে এসেছে?

    সে তার মাথা নাড়ল। সে আমার এই নাক গলানো পছন্দ করে না। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম… সে হঠাৎ থেমে গেল। তারপর তার গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে গেল। এবং তুমি মনে করো চার্লি আমি এখানে থাকায় কিছু মনে করবে না? সে চিন্তি তভাবে জিজ্ঞেস করল।

    বাবা মনে করে তুমি অপুর্ব একটা মেয়ে এলিস।

    বেশ, আমরা সেটা দেখতে পারব।

    আমি নিশ্চিত কয়েক সেকেন্ড পর ড্রাইভওয়েতে ক্রুজার গাড়ি থামার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম এবং তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ধরলাম।

    চার্লি খুব ধীরে হেঁটে আসছিলেন। তার চোখ মাটির দিকে। তার কাঁধ ঝুলে পড়েছে। আমি তার সাথে দেখা করার জন্য এগিয়ে গেলাম। আমি তার কোমর জড়িয়ে ধরার আগ পর্যন্ত তিনি আমাকে দেখতে পান নাই। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

    আমি হ্যারির ব্যাপারে খুবই দুঃখিত, বাবা।

    আমি সত্যিই তাকে খুবই মিস করব। চার্লি বিড়বিড় করে বললেন।

    সুই এখন কি করছে?

    তাকে দেখে হতবুদ্ধি মনে হলো। যেন সে এখনও ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। স্যাম তার সাথে থাকছে… তার গলার স্বর উঠানামা করতে লাগল। বেচারা বাচ্চাগুলো, লিহ মাত্র তোমার চেয়ে এক বছরের বড়। আর সেথ কেবলমাত্র চৌদ্দ বছরের… তিনি মাথা নাড়লেন।

    উম, বাবা? আমি চিন্তা করলাম তাকে আগেই ব্যাপারটা সচেতন করে দেই। তুমি কখনও অনুমান করতে পারবে না ভেতরে কে এসেছে।

    তিনি আমার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকালেন। তার মাথা চারিদিকে ঘুরে গেল। তিনি রাস্তার ওপাশের মার্সিডিজ গাড়িটা দেখতে পেলেন। পোর্চের আলো কালোর গায়ে চকচক করছিল। তিনি কোনরকম প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে এলিস দরজা পথে উঁকি দিল।

    হাই, আঙ্কেল চার্লি। সে খুব নরম স্বরে বলল। আমি খুবই দুঃখিত যে আমি এরকম একটা খারাপ সময়ে এসে পড়েছি।

    এলিস কুলিন? তিনি তার সামনের মানুষটার দিকে অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। এলিস, এটা কি তুমিই?

    হ্যাঁ, এটা আমি। সে নিশ্চিত করল আমি আপনার সেই প্রতিবেশি।

    তাহলে কার্লিসলি কি…?

    না, আমি একা এসেছি।

    এলিস এবং আমি দুজনেই জানতাম তিনি সত্যিই কার্লিসলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন না। তার হাত আমার কাঁধের উপর শক্ত করে বসে গেল।

    সে এখানে থাকতে পারে, তাই নয় কি? আমি অনুনয় করে বললাম। আমি এরই মধ্যে তাকে থাকতে বলেছি।

    অবশ্যই। চার্লি যান্ত্রিক কণ্ঠে বললেন। তুমি আসায় আমরা খুবই খুশি হয়েছি এলিস।

    ধন্যবাদ চাচা। আমি জানি এটা খুব ভয়ংকর সময়।

    না, এটা ঠিক আছে। সত্যিই। আমি এখন সত্যিই খুব ব্যস্ত থাকব হ্যারি পরিবারের জন্য আমি কি করতে পারি সে ব্যাপারে। এটার বেলার জন্য খুবই ভাল হবে যে সে এখন একজন সঙ্গী পাবে।

    বাবা তোমার জন্য টেবিলে ডিনার রেডি করা আছে। আমি তাকে বললাম।

    ধন্যবাদ বেলা। তিনি কিচেনের দিকে যাওয়ার আগে আমাকে আরেকটা চাপ দিলেন।

    এলিস কোচে ফিরে গেল। আমি তাকে অনুসরণ লাম। এইবার সে আমাকে কাঁধ ধরে তার দিকে টেনে নিল।

    তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

    হা। আমি সম্মত হয়ে শ্রাগ করলাম। মৃত্যুর প্রায় কাছাকাছি হওয়ার অভিজ্ঞতা আমাকে সেটা দিয়েছে…তো, তুমি এখানে থাকার ব্যাপারে কার্লিসল কি চিন্তাভাবনা করছে।

    তিনি জানেন না। তিনি ও এসমে একটা শিকার ধরার ট্রিপে আছে। আমি কয়েকদিনের মধ্যে তার কাছ থেকে শুনতে পাব। যখন তিনি ফিরে আসবেন।

    তুমি তাকে বলো নাই যদিও..যখন তিনি আবার চেক করতে আসবেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম। সে জানত আমি এখন আর কার্লিসলর কথা বলছি না।

    না। সে কামড়ে আমার মাথা ছিঁড়ে ফেলবে। এলিস মুখ বিকৃত করে বলল।

    আমি হেসে উঠলাম তারপর শ্বাস নিলাম।

    আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই না। আমি সারারাত এলিসের সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিতে চাই। এটা আমার কোন ক্লান্তি আসবে না। প্রায় সারাটা সময় জ্যাকবের কোচের উপর শুয়েছিলাম। কিন্তু ডুবে যাওয়া সত্যি সত্যিই আমার কাছ থেকে অনেক কিছু নিয়ে গেছে। চোখ খোলা রাখতে পারছি না। আমি তার পাথরের মত কাঁধের উপর মাথা রাখলাম। তারপর অনেক বেশি শান্তির সাথে আশা করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    আমি সকাল সকাল জেগে উঠলাম। গভীর ঘুম দিয়েছে কোন স্বপ্ন দেখা ছাড়াই। অনুভব করছিলাম প্রচুর বিশ্রাম নেয়া হয়েছে। কিন্তু শরীরের জড়তা এখনও কাটে নাই। আমি কোচের উপর কম্বল জড়িয়ে শুয়েছিলাম যে কম্বলটা এলিসের জন্য রেখেছিলাম। আমি শুনতে পেলাম সে এবং চার্লি কিচেনে কথা বলছে। এটা শুনে মনে হচ্ছে চার্লি সকালের নাস্তা প্রস্তুত করছে।

    এটা কতটা খারাপ ছিল চাচা? এলিস নরম গলায় প্রশ্ন করল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তারা হ্যারিকে নিয়ে আলাপ করছে।

    চার্লি বললেন। সত্যিই খারাপ।

    আমাকে এই সম্বন্ধে বলুন। আমি জানতে চাই প্রকৃতপক্ষে আমরা চলে যাওয়ার পর কি ঘটেছিল।

    সেখানে কিছুক্ষণের নিরবতা। তখন কাপবোর্ডের দরজা বন্ধ করা এবং চালু স্টোভ বন্ধ করার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি অপেক্ষা করছিলাম।

    আমি অতটা অসহায় কখনো বোধ করিনি। চার্লি ধীরে ধীরে বলা শুরু করল। আমি জানতাম না আমি কি করব। প্রথম সপ্তাহে আমি ভেবেছিলাম আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিতে যাচ্ছি। সে কোনরকম খাওয়া দাওয়া বা পানি খেতো না। সে কোন নড়াচড়া করত না। ডাক্তার জেরান্ডি তাকে বলেছিল সে কাটাটনিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তাকে সে অবস্থায় দেখতে পারছিলাম না। আমি ভীত ছিলাম যে এটা তাকে ভীত করে তুলছে।

    সে এটা থেকে কীভাবে বেরিয়ে এলো?

    আমি রেনেকে বলেছিলাম তাকে এসে ফ্লোরিডায় নিয়ে নিতে। আমি শুধু সেই একজন হতে চাই নাই…যদি সে হাসপাতালে যেতে অথবা সেরকম কিছু করত। আমি আশা করেছিলাম তার মায়ের সাথে থাকলে হয়তো উপকার হবে। কিন্তু যখন আমরা তার জামাকাপড় গোছানো শুরু করলাম, সে যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠল। আমি কখনও বেলা সেরকম উপযুক্ত আর দেখি নি। সে কোন তন্ত্রমন্ত্রের উপর ছিল না। কিন্তু সে রাগান্বিত হয়ে উঠল। সে চারিদিকে তার জামাকাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলল এবং তারপর সে চেঁচাতে লাগল যে সে এখান থেকে যাবে না এবং সে শেষ পর্যন্ত কাঁদতে শুরু করল। আমি ভেবেছিলাম এটাই তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে। আমি আর তার সাথে তর্ক করিনি যখন সে এখানে থেকে যেতে চাইল, এবং প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল সে অনেক ভাল আছে…

    চার্লি বলা বন্ধ করলেন। এটা আমার জন্য শোনা খুব কষ্টকর ব্যাপার। এটা জানাও কষ্টকর যে আমি তাকে কতটা কষ্ট দিয়েছিলাম।

    কিন্তু? এলিস প্রতিজ্ঞা করল।

    সে স্কুলে ফিরে গেল এবং কাজেও গেল। সে খেত, ঘুমাত এবং তার বাড়ির কাজ করত। কেউ যদি তাকে সরাসরি কোন প্রশ্ন করত সে সরাসরি উত্তর দিত। কিন্তু সে ছিল…শূন্য। তার চোখের দৃষ্টি শূন্যদৃষ্টি। সেখানে অনেক ছোট ছোট জিনিস ছিল। সে কোনরকম সংগীত শুনত না।

    আমি আর্বজনার বাস্কেটে এক গাদা সিডি ভেঙে ফেলা দেখলাম। সে কোন কিছু পড়ত না। টিভি অন থাকলে সে সেই রুমে যেত না। যদিও আগে সে খুব বেশি টিভি দেখত না। আমি শেষ পর্যন্ত এটা খুঁজে বের করলাম…সে সবকিছু এড়িয়ে চলত যে সবকিছু তার তাকে মনে করিয়ে দেয়…তাকে।

    আমরা খুবই কমই কথাবার্তা বলতাম। আমি এতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম কিছু একটা তাকে বললে যদি সে আবার আপসেট হয়ে যায়–ছোট ছোট জিনিসই তাকে অন্যরকম করে তোলে। সে কখনও নিজে থেকে কোন কিছু করত না। সে শুধু উত্তর দিত যদি আমি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতাম।

    সে সারাটা সময় একাকী কাটাত। সে তার বন্ধুদের ফোন করে ডাকত না। এবং কিছুদিন পর তারা তাকে ডাকা বন্ধ করে দিল।

    রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর এখনও আমি ঘুমের মধ্যে তার চিৎকার শুনতে পাই…

    আমি প্রায় তাকে কাঁপতে দেখলাম। আমিও কাঁপছিলাম সেই কথা মনে করে। তারপর আমি শ্বাস নিলাম। আমি তাকে দুঃখ দিতে চাই না। এক সেকেন্ডের জন্যও না।

    আমি খুবই দুঃখিত চাচা। এলিস গোমড়ামুখে বলল।

    এটা তোমার দোষ নয়। তিনি যেভাবে এলিসকে কথাটা বললেন তাতে স্পষ্টত বোঝা গেল যে তিনি নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী ভাবছেন। তুমি সবসময়ই তার খুব একজন ভাল বন্ধু।

    তাকে এখন খুবই ভাল দেখাচ্ছে যদিও।

    হ্যাঁ। যখন থেকে সে জ্যাকব ব্লাকের সাথে বেরুতে শুরু করেছে তখন থেকে। আমি সত্যিকারের উন্নতি দেখতে পেয়েছি। যখন সে বাড়িতে ফিরে আসে তার গালে কিছু রঙ খেলা করে। তার চোখে উজ্জ্বল্য খেলা করে। তাকে সুখী দেখায়। তিনি থেমে গেলেন। তার কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে গেল যখন তিনি আবার কথা বলা শুরু করলেন। জ্যাকব তার চেয়ে এক বছর বা সে রকমের ছোট। আমি জানি সে তাকে একজন ভাল বন্ধু হিসাবেই ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু আমি মনে করি হতে পারে এটা তার চেয়ে বেশি কিছু এখন অথবা সেই বন্ধুত্বের দিক এখন পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। চার্লি খুব নিচু স্বরে কথাগুলো বললেন, এটা একটা সর্তক সংকেত, এটা এলিসের জন্য নয় কিন্তু এটা এলিস যাতে অন্যকে জানায়। জ্যাকের চেয়ে সে বয়সে বড় তিনি বলে চললেন। এখনও তার কণ্ঠস্বর আত্মরক্ষামূলক। সে তার পিতার শারীরিক সমস্যায় দেখা শুনা করে। যেভাবে বেলা আবেগগত দিক দিয়ে তার মাকে দেখাশুনা করে। এটা তাকে পরিপক্কতা দান করেছে। সে খুব ভাল চেহারার ছেলে। তার মায়ের চেহারাটা পেয়েছে। সে বেলার জন্য ভাল, তুমি জানো। চার্লি জোর দিয়ে বললেন।

    তাহলে এটা খুবই ভাল, সে তার সাথে আছে। এলিস একমত হলো।

    চার্লি বড় করে একটা শ্বাস নিলেন। তাড়াতাড়ি অন্য কথা চিন্তা করলেন। ঠিক আছে, তো আমি অনুমান করছি সেই অতিরিক্ত জিনিসটা। আমি জানি না…এমনকি জ্যাকবের সাথেও, প্রায়ই আমি তার চোখে অন্য কিছু খেলা করতে দেখি। আমি বিস্মিত যদি আমি জানতে পারতাম কতটা যন্ত্রণা এখনও সে বুকে ধারণ করে। এটা স্বাভাবিক নয়, এলিস। এবং এটা…এটা আমাকে ভীত করে। আদৌ স্বাভাবিক নয়। অন্যদের মত দেখায় না…তার দিকে দেখ ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু মনে হয় যেন কেউ মারা গেছে। তার কণ্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা হয়ে গেল।

    এটা এমনটি যেন কেউ একজন মারা গেছে যেন আমি মারা গেছি। কারণ প্রকৃত ভালবাসা আমি হারিয়েছি। এটা কি একজনকে হত্যা করার চেয়ে বেশি কিছু নয়। এটা অবশ্যই সমস্ত সত্তা হারানোর মতই, একটা গোটা পরিবার একটা গোটা জীবন যেটা আমি পছন্দ করে নিয়েছিলাম…

    চার্লি আশাহত স্বরে বলে চললেন। আমি জানি না যদি সে এটা থেকে বেরিয়ে এসেছে কিনা। আমি নিশ্চিত নই এটা তার প্রকৃতি কিনা এভাবেই সে সেরে উঠবে। সে সবসময়ই কিছু না কিছু ছোটখাট জিনিস নিয়ে আছে। সে তার অতীতের জিনিস পাচ্ছে না। তার মন পরিবর্তন করতে পারছে না।

    সে ওই এক রকমের। এলিস শুষ্ক কণ্ঠে সম্মত হলো।

    এবং এলিস… চার্লি দ্বিধা করতে লাগলেন। এখন, তুমি জানো আমি তোমার প্রতি কতটা অনুরক্ত। আমি তোমাকে বলতে পারি সে তোমাকে দেখে খুশি হয়েছে, কিন্তু …আমি কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তোমার এই দর্শন তার প্রতি কিরুপ প্রভাব ফেলবে।

    আমিও তাই চাচা। আমিও তাই। আমি ফেরত আসতাম না যদি আমার কাছে তেমন কোন ধারণা থাকত। আমি দুঃখিত।

    ক্ষমা চেও না সোনা। কে জানে? হতে পারে এটা তার জন্য ভালই হবে।

    আমি আশা করি আপনি ঠিক বলছেন।

    সেখানে বেশ খানিকটা সময়ের জন্য নীরবতা। প্লেটের উপর চার্লির কাটাচামুচ ও চিবানোর শব্দ শোনা যেতে লাগল। আমি বিস্মিত এলিস তার খাবারগুলো কোথায় লুকিয়ে রেখেছে সেটা ভেবে।

    এলিস আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। চার্লি ভয়ানক স্বরে বললেন।

    এলিস বেশ শান্ত। বলে যান।

    এ্যাডওয়ার্ড আবার দেখা করতে ফিরে আসছে না, তাই কি? আমি চার্লির কণ্ঠস্বরে এক ধরনের রাগের বহিঃপ্রকাশ পেলাম।

    এলিস নরম আশ্বাস দেয়া স্বরে উত্তর দিল। সে এমনকি এখনও জানে না যে আমি এখানে। শেষবার আমি যখন তার সাথে কথা বলেছিলাম সে তখন দক্ষিণ আমেরিকায় ছিল।

    এই নতুন তথ্য পেয়ে আমি শক্ত হয়ে জমে গেলাম।

    সেটাই কিছু একটা অন্তত পক্ষে। চার্লি নাক টানলেন। বেশ, আমি আশা করছি সে নিজেকে নিজে উপভোগ করছে।

    প্রথমবারের মত এলিসের কণ্ঠস্বর কিছুটা রুক্ষ্ম শোনাল। আমি কোন ধারণা দিতে পারছি না চাচা। আমি জানি যখন সে এই স্বরে কথা বলে কীভাবে তার চোখ জ্বলে ওঠে।

    টেবিলের ধার থেকে একটা চেয়ার সরানোর শব্দ হলো। সেটা সজোরে মেঝেতে টানা হলো। আমি বুঝতে পারলাম চার্লি উঠে দাঁড়িয়েছেন। এলিস এই জাতীয় শব্দ করবে সেরকম কোন উপায় নেই। পানি পড়ার শব্দ হলো। প্লেটের উপর পানি পড়ছে।

    আমি এ্যাডওয়ার্ডের ব্যাপারে তাদের আর কোন রকম কথোপকথন শুনতে পেলাম না। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এখনই জেগে উঠার সময় হয়েছে।

    আমি পাশ ফিরলাম। খাট ককিয়ে উঠল। তারপর আড়মোড়া ভাঙলাম।

    কিচেনে সবকিছু শান্ত হয়ে গেল।

    আমি হাতপা টান টান করলাম এবং চেঁচিয়ে উঠলাম।

    এলিস? আমি নিষ্পাপস্বরে জিজ্ঞেস করলাম। আমার গলার স্বর অপূর্ব শোনাচ্ছিল।

    আমি কিচেনে বেলা। এলিস ডাকল। তার কণ্ঠস্বরে ধরা পড়ে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই। কিন্তু সে এসব ব্যাপার লুকানোর ওস্তাদ।

    বাবা তারপর বেরিয়ে গেলেন। তিনি হ্যারির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সুইকে সাহায্য করতে গেলেন। এরপরের দিনগুলো এলিসকে ছাড়া আমার জন্য দীর্ঘ একটা দিন হবে। সে কখনও চলে যাওয়ার ব্যাপারে বলছে না। এবং আমিও তাকে সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি না। আমি জানি তাকে ধরে রাখতে পারব না। কিন্তু সেটা আমি আমার মনে মনে রেখেছি।

    পরিবর্তে, আমরা তার পরিবার নিয়ে কথা বলতে লাগলাম।

    কার্লিসল রাতে ইটচাতে কাজ করেন। আর করনেলে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেন। এসমে সপ্তদশ শতাব্দির একটা বাড়ি গোছানোর কাজে ব্যস্ত। একটা ঐতিহাসিক বাড়ি। এমেট এবং রোসালি নতুন মাসে আরেকটা হানিমুনের জন্য ইউরোপ গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা ফিরে এসেছে। জেসপারও করনেলে আছে। এইবার দর্শন বিষয়ে পড়াশোনা করছে। এবং এলিস কিছু ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে রিসার্চ করছে। গত বসন্তে আমি যে তথ্যগুলো উন্মোচন করে দিয়েছিলাম সেগুলো নিয়েই সে মনোযোগ দিয়েছে। সে সফলতার সাথে সেই এ্যাসাইলামে ঘুরে এসেছে যেখানে সে গতবছর মানুষ হিসাবে মানুষের জীবন যাপন করেছে। সেই জীবনের কোন স্মৃতি তার কাছে নেই।

    আমার নাম মেরি এলিস ব্রান্ডন। সে আমাকে শান্ত স্বরে বলল। আমার ছোট্ট একটা বোন আছে নাম সিনথিয়া। তার মেয়ে আমার ভাগ্নি- সে এখনও বিলোক্সিতে বেচে আছে।

    তুমি কি সেটা খুঁজে বের করেছ যে কেন তারা তোমাকে এখানে দিয়ে গেছে…এই জায়গায়? কি পিতামাতাকে এই কাজে ঠেলে পাঠিয়েছি। এমনকি যদি তাদের মেয়ে ভবিষ্যত দেখতে পারে…।

    সে শুধুমাত্র তার মাথা নাড়ল। তার ধারালো চোখে চিন্তা খেলা করছে। আমি তাদের সম্বন্ধে খুববেশি কিছু খুঁজে পাই না। আমি তাকে সংরক্ষিত পুরোনো দিনের পত্রিকা দেখে কাটিয়েছি। আমার পরিবার এ ব্যাপারে কিছুই মনে করল না বা এ ব্যাপারে জানতেও চাইলো না। পেপারে যে সব সামাজিক চক্রের বিষয় আশ্রয় থাকে ওরা তার বাইরে। আমার বাবা মার এনগেজমেন্ট হয়েছিল সেখানে, আর সিনন্থিয়ারও। আমার নাম হঠাৎ করে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার জন্মের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল…এবং আমার মৃত্যুর। আমি আমার কবর খুঁজে পেলাম। আমি অবশ্য পুরোনো এ্যাসাইলামে আমার এডমিশন শিটও খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার এডমিশনের তারিখ এবং এপিটাফে আমার মৃত্যুর তারিখ একই।

    ছোটখাট এই বিরতির পর আমি বুঝতে পারলাম না কী বলা উচিত, এলিস আসল আলোচনায় ফিরে গেল।

    একটা ব্যাপার বাদে কুলিনরা এখন প্রায় একইরকম, ডেনালিতে তানিয়ার পরিবারের বসন্তের ছুটি কাটাচ্ছে। আমি এ ধরনের তুচ্ছ ব্যাপারগুলোও বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনি। একজনের ব্যাপারে আমি অনেক বেশি আগ্রহী ছিলাম সেটা কিন্তু ও বলল না, সেজন্য আমি খুশিও হলাম। এক সময় ওই পরিবার সম্পর্কে যে সব গল্প শোনার যে স্বপ্ন ছিল তার অনেকটাই শুনে ফেললাম।

    অন্ধকার হয়ে আসার আগ পর্যন্ত বাবা ফিরল না, আগের রাতের তুলনায় তিনি অনেক সতর্ক। হ্যারির শেষকৃত্যের আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে, তাই তিনি আগেই বের হয়ে গেছেন। আমি এলিসের সাথে চেয়ারে বসে থাকলাম।

    .

    সূর্য ওঠার আগে বাবা যখন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিলেন তখন তাকে পুরোপুরি অন্যমানুষ মনে হচ্ছিল। তিনি যে স্যুটটা পরে ছিলেন সেটা অনেক পুরোনো, আগে কখনো দেখিনি। জ্যাকেকটার বুক খোলা; বোধহয় বাঁধতে গেলে টাইট হয়ে যাচ্ছিল বলে বাঁধেন নি। টাইটা ছিল সাধারণের চাইতে সামান্য বড়। তিনি সন্তপনে দরজাটা বন্ধ করলেন যেন আমরা জেগে না যাই। এলিস যেমন হেলান দিয়ে পড়েছিল আমিও তেমন করে ঘুমিয়ে থাকার ভান কর বাবাকে চলে যাওয়ার সুযোগ দিলাম।

    বাবা দরজা পেরিয়ে চলে যেতেই এলিস উঠে বসল। লেপের নিচে থাকা স্বত্বেও ও ড্রেস পরে তৈরি ছিল।

    এবার, আমরা আজ কী করতে যাচ্ছি?

    আমি জানি না–তুমি কি মজাদার কিছু ঘটতে দেখেছো?

    সে হাসল। তার মাথা দুদিকে নাড়ল। কিন্তু এটা এখনও খুব সকাল সকাল।

    বেশিরভাগ সময়ই আমি লা পুশে সময় কাটিয়েছি। এক গাদা জিনিস বাসায় পড়ে আছে যেগুলো আমি অবহেলা করে কাটিয়েছি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম গৃহস্থালীর কাজগুলো শেষ করব। আমি কিছু করতে চাইছিলাম। যেকোন কিছু চার্লির জীবনকে সহজ করে তুলবে। হতে পারে এটা তার কাছে, বাড়িতে আরো সহজ করতে চেয়েছি। আমি বাথরুম থেকে শুরু করলাম। এটার অধিকাংশ জায়গা অবহেলার চিহ্ন লেগে রয়েছে।

    যখন আমি কাজ শুরু করলাম, এলিস দরজার উপর থেকে ঝুঁকে দাঁড়াল। আমাকে নানাবিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগল। তার মুখ শান্ত এবং অভিব্যক্তিহীন। কিন্তু আমি তাকে সে ব্যাপারে অনুমতি দিলাম না। অথবা হতে পারে আমি শুধু তার ও চার্লির কথোপকথন শোনার কারণে অন্যরকম বোধ করছিলাম।

    আমি মেঝে পরিষ্কার করার সময় ডোরবেল বেজে উঠল।

    এক বারের জন্য এলিসকে দেখলাম। তার অভিব্যক্তি হতবুদ্ধি, বেশিরভাগই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সেটা বেশ অদ্ভুত। এলিস কখনও এরকম বিস্মিত হয় না।

    ধরে থাকো। আমি সামনের দরজার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করলাম। উঠে দাঁড়ালাম এবং তাড়াতাড়ি কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করলাম।

    বেলা, এলিস হতাশাজনক স্বরে ডাকল। আমি খুব ভাল ধারণা করতে পারি যে কে সেটা হতে পারে। এবং আমি মনে করি আমার মনে হয় আমি বাইরে চলে যাই।

    অনুমান? আমি প্রতিধ্বনি করল। কখন থেকে এলিস যেকোন জিনিস অনুমান করতে পারে।

    যদি গতবারে মত এটা যদি আমার ভবিষ্যৎ বলার মত ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে এটা জ্যাকব ব্লাক না হয়েই যায় না…সাথে তার বন্ধুরাও।

    আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তুমি নেকড়েমানবদের দেখতে পাও না?

    সে মুখ ভেঙচি দিল। তো এটা দেখে মনে হয়। সে সুস্পষ্টত বিরক্ত হয়েছে।

    দরজার বেল আবার বেজে উঠল। দুবার এক সাথে বাজালো এবং অধৈর্যভাবে।

    তোমার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, এলিস। তুমি এখানে আগে এসেছিলে।

    সে ছোট্ট করে হাসি দিল। আমাকে বিশ্বাস করো- এটা খুব ভাল ব্যাপার হবে না জ্যাকব ব্লাক ও আমি একই রুমে একত্রে থাকব।

    সে আমার গালে মিষ্টি করে চুমু খেল। তারপর সে চার্লির দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। জানালা দিয়ে বের করল। কোন সন্দেহ নেই।

    দরজার বেল আবার বেজে উঠল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.