Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ১৮-১৯. সিঁড়ি দিয়ে দরজার কাছে

    ১৮.

    আমি সিঁড়ি দিয়ে দরজার কাছে নেমে এলাম। ধাক্কা দিয়ে দরজা খুললাম।

    এটা অবশ্যই জ্যাকব। এমনকি অন্ধভাবে বললেও, এলিস ধীরগতির নয়।

    সে দরজা থেকে প্রায় ছয় ফুট পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তার নাক কোন একটা গন্ধ শুঁকে কুঁচকে আছে। কিন্তু তার মুখ একেবারে মসৃণ সমান্তরাল। মুখোশের মত। সে আমাকে বোকা বলতে পারবে না। আমি তার হাতের কাঁপন দেখতে পাচ্ছি।

    শত্রুতা তাকে স্রোতের মত ঘুরিয়ে দিয়েছে। এটা সেই ভয়ানক বিকালে ফিরে নিয়ে গেছে যখন সে আমাকে বাদ দিয়ে স্যামকে পছন্দ করে নিয়েছিল। আমি বুঝতে পারলাম আবেগে আমার চিবুক থরথর করে কাঁপছে।

    জ্যাকবের র‍্যাবিট গাড়ি গ্যারেজের সামনে। জ্যারেড স্টিয়ারিংয়ে বসা। এমব্রি পেছনের সিটে। আমি এটার মানে কি বুঝতে পারলাম। তারা তাকে এখানে একাকী আসতে দিতে ভয় পেয়েছে। এটা আমাকে দুঃখিত করল। কিছুটা বিরক্তও হলাম। কুলিনরা সেই প্রকৃতির নয়।

    হেই, যখন দেখলাম সে কোন কথা বলছে না, আমিই আগে বললাম।

    জ্যাকব ঠোঁট চেপে আছে। এখনও দরজা থেকে বেশ কিছুটা পেছনেই আছে। তার চোখ জোড়া বাড়ির সামনের দিকটাতে বারবার পলক ফেলে দেখছে।

    আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, সে এখানে নেই। তোমার কি কোন কিছুর প্রয়োজন?

    সে দ্বিধা করতে লাগল। তুমি একাই আছো?

    অবশ্যই।

    আমি কি তোমার সাথে এক মিনিট কথা বলতে পারি?

    অবশ্যই, তুমি তা পারো, জ্যাকব। ভেতরে এসো।

    জ্যাকব তার কাঁধের উপর দিয়ে পিছনের গাড়িতে বসা বন্ধুদের দিকে তাকাল। আমি দেখতে পেলাম এমব্রি শুধু তার মাথাটা একটু ঝাঁকাল। কোন কোন সময়ে, এটা আমার কাছে কোন অর্থ প্রকাশ করে না।

    আমি আবারও দাঁতে দাঁত চেপে বললাম মুরগির বাচ্চা।

    জ্যাকের চোখ আমার দিকে। তার মোটা কালো একটা অদ্ভুত কোণে তার গভীর কালো চোখের উপর উঠে গেল। তার চোয়াল চেপে আছে। সে পায়ে পায়ে। হেঁটে এল। কিছুটা রোবটিক সৈন্যদের ভঙ্গিতে। সেখানে আর কোন উপমা নেই যেটা দিয়ে তার হাঁটা বর্ণনা করা যায়। সে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এল এবং আমার পাশ দিয়ে শ্রাগ করে ভেতরে ঢুকল।

    আমি প্রথমেই জারেড এবং তারপর এমব্রির দিকে ক্রুর চোখে তাকালাম। তারা যেরকম কঠিনভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে সেটা আমি পছন্দ করছি না। তারা কি সত্যিই মনে করে যে আমি কোন কিছুর মাধ্যমে জ্যাকবকে আহত হতে দিতে পারি? আমি তাদের মুখের উপরেই দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

    জ্যাকব আমার পিছনে হলঘর এল। বসার ঘরে ওলোটপালোট কম্বলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

    হ-য-ব-র-ল পার্টি? পুর্নমিলনী? সে ব্যঙ্গাত্বক স্বরে জিজ্ঞেস করল।

    হা আমিও ঝাঝালোভাবে ব্যঙ্গাত্বক স্বরে উত্তর দিলাম। আমি জ্যাকবের এই রকম আচরণ পছন্দ করি না। তাতে তোমার কোন কিছু?

    সে আবারও তার নাক কুঁচকে ফেলল যেন সে কোন কিছুর গন্ধ পাচ্ছে। গন্ধটা অস্বস্তিকর। তোমার বন্ধু কোথায়? আমি তার গলার স্বরের মধ্যে এক ধরনের টান টান ভাব শুনলাম।

    তাকে কোন কাজের জন্য দৌড়াতে হয়েছে। দেখ, জ্যাকব তুমি এখানে কি চাও?

    রুমের ভিতরের কোন কিছু একটা দেখে তার সন্দেহ হয়তো আরো ঘনীভুত হলো। তার হাত কাঁপতে লাগল। সে আমার প্রশ্নের উত্তর দিল না। তার পরিবর্তে সে কিচেনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। তার উৎসুক্য চোখ বিরামহীনভাবে সবত্র খুঁজে বেড়াতে লাগল।

    আমি তাকে অনুসরণ করলাম। সে পিছিয়ে এল। তারপর ছোট কাউন্টার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল।

    হেই আমি তার পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে বললাম। সে থেমে গেল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তোমার সমস্যা কি?

    আমি এখানে থাকা পছন্দ করছি না।

    কথাটা আমাকে আঘাত করল। আমি তাকালাম। তার চোখে কাঠিন্য।

    তাহলে আমি দুঃখিত তুমি এখানে এসেছো বলে। আমি বিড়বিড় করে বললাম তুমি কেন আমাকে বলছো না তোমার কি প্রয়োজন, যেটা হলে তুমি চলে যাবে?

    আমি তোমাকে শুধু কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। এটাতে খুববেশি সময় নেবে না। তুমি তাহলে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য যেতে পারবে।

    ঠিক আছে। তাহলে প্রশ্ন করা এখনই শুরু হোক। আমি সম্ভবত অতিরিক্ত করে। ফেলছি। কিন্তু আমি মোটেই দেখতে চাই না যে কতটুকু আহত হয়েছে। আমি জানতাম আমি ঠিক করছি না। সর্বোপরি, আমি সেই রক্তচোষাকে তার সামনে থেকে গতরাতে তুলে এনেছি। আমিই তাকে প্রথমে আহত করেছি।

    সে বড় করে শ্বাস নিলাম। তার কাঁপতে থাকা হাতের আঙুলগুলো হঠাৎ করে থেমে গেল। তার মুখের উপর থেকে মুখোশ সরে গিয়ে একটা শান্তিময় প্রতিকৃতি তৈরি হলো।

    কুলিনদের একজন তোমার সাথে এখানে আছে। সে বিবৃতি দিয়ে শুরু করল।

    হ্যাঁ। এলিস কুলিন।

    সে চিন্তিতভাবে মাথা নাড়ল। সে কতক্ষণ ধরে এখানে থাকবে?

    যতক্ষণ সে চাইবে। আমার কণ্ঠস্বরে এখনও আগের সেই ঝাঝালো ভাব। এটা খোলামেলা আমন্ত্রণ।

    তুমি কি মনে করো তুমি পারবে…দয়া করে…তার কাছে অন্য আরেকজনের ব্যাপারে ব্যাখ্যা করে বলো ভিক্টোরিয়ার ব্যাপারে?

    আমি বিবর্ণ হয়ে গেলাম আমি তার সম্বন্ধে তাকে বলেছি।

    সে মাথা নোয়াল। তোমার জানা উচিত যে আমরা শুধুমাত্র আমাদের নিজস্ব জায়গায় একজন কুলিন আছে সেটা দেখে রাখতে পারি। তুমি শুধুমাত্র লা পুশে নিরাপদ থাকবে। আমি তোমাকে এখানে রক্ষা করতে পারছি না।

    ঠিক আছে। আমি ছোট্ট কথায় বললাম।

    সে পেছনের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। সে কথোপকথন চালিয়ে গেল না।

    এটাই কি সবকিছু?

    উত্তর দেয়ার সময়ও তার চোখ জানালার কাঁচের দিকেই শুধু আরেকটা জিনিস।

    আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু সে কিছুই বলল না।

    হ্যাঁ? আমি শেষ পর্যন্ত স্মরণ করিয়ে দিলাম।

    বাকিরা কি সব ফিরে আসতে শুরু করেছে? সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল। এটা স্যামের সবসময়ের শীতল আচরণের কথা মনে করিয়ে দিল। জ্যাকব এখন অনেক বেশি স্যামের মত হতে শুরু করেছে.. আমি বিস্মিত হলাম সেটা কেন আমাকে এতটা বিরক্ত করছে।

    আমি কোন কথা বললাম না। সে উত্তরের আশায় আমার মুখের দিকে তাকাল।

    বেশ? সে জিজ্ঞেস করল। তার ভেতরের রাগ চাপা দিয়ে শান্তিময় অভিব্যক্তি ধরে রাখতে সে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে লাগল।

    না। আমি প্রতিহিংসামূলকভাবে শেষ পর্যন্ত বললাম। তারা ফিরে আসছে না।

    তার অভিব্যক্তি পরিবতির্ত হলো না। ঠিক আছে। এটাই সব।

    আমি তার দিকে বিরক্ত চোখে তাকালাম। বেশ, এখন চলে যাও। স্যামকে বলে গিয়ে যে সেই ভয়ংকর দৈত্যটা তোমাকে ধরার জন্য আসছে না।

    ঠিক আছে। সে পুনরাবৃত্তি করল। এখনও শান্ত।

    জ্যাকব দ্রুততার সাথে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সামনের দরজা খোলার শব্দের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুই শুনতে পেলাম না। স্টোভের উপর ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পেলাম। আমি বিস্মিত হলাম এটা ভেবে যে কতটা নিঃশব্দে সে বেরিয়ে যেতে পারে।

    কি এক ঝড়! কীভাবে আমি এত অল্প সময়ের মধ্যে তার সাথে এরকম আচরণ করতে পারলাম?

    এলিস চলে গেলে সে কি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে? যদি সে সেটা না করে তাহলে কি হবে?

    আমি কাউন্টারের কাছে ধপাস করে বসে পড়ে হাতের মধ্যে মুখ ঢেকে ফেললাম। আমি কীভাবে সবকিছু এমনভাবে গুবলেট পাকিয়ে ফেলছি? কিন্তু আমি আলাদাভাবে আর কিইবা করতে পারতাম? এমনকি এখনও পর্যন্ত আমি এর চেয়ে ভাল কোন কিছুর কথা চিন্তা করতে পারি না। আর কোন উপযুক্ত কাজের কথা।

    বেলা…? জ্যাকব সমস্যা জর্জরিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।

    আমি হাতের মধ্য থেকে মুখ বের করলাম। দেখলাম জ্যাকব দ্বিধান্বিতভাবে কিচেনের দরজা পথে দাঁড়িয়ে আছে। সে চলে গিয়েছি ভাবলেও তখনও সে চলে যায়নি। আমার হাতের মধ্যে পানির ফোঁটা দেখে বুঝতে পারলাম আমি কাঁদছিলাম।

    জ্যাকবের শান্ত অভিব্যক্তি চলে গেছে। তার মুখ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং অনিশ্চিত। সে তাড়াতাড়ি হেঁটে আমার সামনে চলে এল। তার মাথা ঝুঁকিয়ে দিল যাতে তার চোখ আমার চোখের খুব কাছাকাছি একই সমতলে থাকে।

    এটা কি আবার হয়েছে? আমি কি করিনি?

    কি করেছ? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার কণ্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা।

    আমার প্রতিজ্ঞা ভেঙেছি। দুঃখিত।

    এটা ঠিক আছে। আমি বিড়বিড় করে বললাম। এইবারে আমিই এটা শুরু করেছিলাম।

    তার মুখ ঘুরে গেল। আমি জানি তুমি তাদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করো। এটা আমার কাছে এই জন্য কোন বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে দেখা দেয়নি।

    আমি তার চোখে মুখে প্রতিহিংসার কোন চিহ্ন দেখতে পেলাম না। আমি তার কাছে ব্যাখ্যা করতে চাইলাম যে এলিস আসলেই কোন প্রকৃতির। আমি এলিসের পক্ষ নিয়ে তাকে বলতে চাইলাম। কিন্তু কিছু একটা আমাকে সতর্ক করে দিচ্ছিল যে সেটার এখনও সময় আসেনি।

    সুতরাং আমি শুধু দুঃখিত বললাম।

    এখন এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না, ঠিক আছে? সে শুধু দেখতে এসেছে, ঠিক না? সে চলে যাবে। এবং সবকিছুই আগের মতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

    আমি কি একই সময়ে একইসাথে তোমাদের দুজনেরই বন্ধু ছিলাম না? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার কণ্ঠস্বরে একটুও লুকানোর চেষ্টা করলাম না যে কতটা কষ্ট আমি পেয়েছি।

    সে ধীরে ধীরে মাথা নাড়াল। না। আমি মনে করি, তুমি তা পারো না।

    আমি নাক টানলাম এবং তার বিশাল পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, ঠিক না? তুমি এখনও আমার বন্ধু হিসাবেই থাকবে, যদিও আমি এলিসকেও খুব ভালবাসি?

    আমি তার দিকে তাকালাম না। উত্তর দিতে তার মিনিট খানিক সময় লাগল। সুতরাং আমি সম্ভবত তার দিকে তাকাতে পারি না।

    হ্যাঁ। আমি সবসময়ই তোমার বন্ধু থাকব। সে মেপে মেপে বলল।

    সেটা কোন ব্যাপার নয় কাকে তুমি ভালবাস।

    প্রতিজ্ঞা করছ?

    প্রতিজ্ঞা করছি।

    আমি তার হাত টেনে নিলাম। তার বুকের উপর ঝুঁকে পড়লাম। সে এখনও নাক টানছে। তাহলে ঠিক আছে।

    হ্যাঁ। তারপর সে আমার চুলের কাছে নাক টানল এবং বলল এ্যায়াও!

    কি! আমি জানতে চাইলাম। আমি মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম তার নাক। আবারও কুঁচকে গেছে। কেন সবাই আমার সাথে এমন করতে শুরু করেছে? আমি গন্ধ নিতে পারছি না।

    সে ছোট্ট করে হাসল। হ্যাঁ। তুমি পার। তুমি তাদের মতই গন্ধযুক্ত। এতটাই মিষ্টি- অসুস্থভাবে মিষ্টিগন্ধ। এবং…শীতল। এটা আমার নাককে যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে।

    সত্যিই? সেটা অদ্ভুত। এলিসের গন্ধ অবিশ্বাস্যভাবে সুন্দর। কিন্তু তাহলে এলিসও কেন ভাবে যে আমি অন্যরকম গন্ধযুক্ত?

    সেটাতে তার হাসি মুছে গেল। হাহ। হতে পারে আমি তার মত এতটা ভালভাবে গন্ধ নিতে পারি না, হাহ?

    বেশ, তোমাদের দুজনেরই গন্ধ আমার কাছে সুন্দর। আমার মাথা তার বুকের উপর রাখলাম। আমি তাকে ভয়ানকভাবে মিস করতে শুরু করব যখন সে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এটা খুব খারাপ একটা ব্যাপার। আমি চাইছিলাম এলিস চিরদিনের জন্য এখানে থাকুক। আমি মারা যেতে চলেছি-রুপকগতভাবে যখন সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু কীভাবে আমি জ্যাকবকে দীর্ঘসময় না দেখে থাকতে পারব? কি এক জগাখিচুড়ি অবস্থা। আমি সেটা আবার ভাবলাম।

    আমি তোমাকে মিস করব। জ্যাকব ফিসফিস করে বলল। যেন আমার চিন্তাভাবনারা প্রতিধ্বনি করল। প্রতি মিনিটে। আমি আশা করছি সে খুব শিগগিরই চলে যাবে।

    এটা সত্যিই সেইভাবে কিছু ঘটবে না, জ্যাক।

    সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হ্যাঁ। এটা সত্যিই ঘটবে। বেলা, তুমি…তাকে ভালবাস। সুতরাং সবচেয়ে ভাল হয় কোথায় যাবে না তার কাছাকাছি। আমি নিশ্চিত নই সেই ব্যাপারটা হস্তগত করতে গিয়ে আমি এমন শান্ত মেজাজে থাকতে পারব। স্যাম। পাগলের মত হয়ে যাবে যদি আমি তাদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করি এবং… তার কণ্ঠস্বর বিদ্রুপাত্বক হয়ে গেল। তুমি সম্ভবত এটা খুব একটা পছন্দ করবে না যদি আমি তোমার বন্ধুকে হত্যা করি।

    সে এটা বলতেই আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। কিন্তু সে তার বাহু দিয়ে আমাকে জোর করে চেপে ধরে রইল। আমাকে বের হতে দিতে অস্বীকার করল। সেখানে সত্যটাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন পয়েন্ট নেই। সেটাই সেই পথ যেভাবে ঘটবে বেলা।

    তুমি যেভাবে চিন্তাভাবনা করছে সেটা আমি পছন্দ করছি না।

    জ্যাকব একহাত মুক্ত করে দিল যাতে সে তার বিশাল বাদামী হাত দিয়ে আমার চিবুকের নিচে রেখে উঁচু করে ধরতে পারে। আমাকে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করল। হ্যাঁ। এটা অনেক সহজ যখন আমরা দুজনেই মানুষ। এটা কি তাই নয় কি?

    আমি নিঃশ্বাস নিলাম।

    আমরা একে অন্যের দিকে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে রইলাম। তার হাত আমার শরীরের উপর মৃদুভাবে ঘষে চলেছে। আমি জানি সেখানে কিছুই নেই। আমি তাকে এই মুহূর্তে বিদায় জানাতে চাচ্ছি না। সেটা কোন ব্যাপারই নয় তাই যতই অল্প সময়ের জন্য হোক না কেন। প্রথমে তার মুখে আমার মুখের ছায়া পড়ল। কিন্তু তারপর আমাদের দুজনের কেউ কিছু দেখতে পেলাম না। তার অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হয়ে গেল।

    সে আমাকে মুক্ত করে দিল। তার অন্য হাতটা উঁচু করে ধরল। আমার গালে আঙুল ঘষে চোয়ালে নামিয়ে নিয়ে আসল। আমি অনুভব করলাম তার আঙুল কাঁপছে। এইবার আর কোন রাগের কারণে নয়। সে তার হাতের তালু আমার গালের উপর চেয়ে ধরল। যাতে আমার মুখ তার পুড়তে থাকা হাতের ফাঁদে পড়ে।

    বেলা। সে ফিসফিস করে বলল।

    আমি জমে গেলাম।

    না! আমি এখনও সেই সিদ্ধান্ত নেই নি। আমি এখনও জানি না যদি আমি তাই করি। এখন আমি এসব চিন্তা থেকেও দূরে। কিন্তু আমি অনেক বোকামো করব যদি আমি ভাবি যে আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করব।

    আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমার জ্যাকব নয়। কিন্তু সে হতে পারে। তার মুখ পরিচিত এবং ভালবাসাময়। অনেকগুলো সত্যিকারের পদ্ধতিতে আমি তাকে ভালবাসতাম। সে আমার আরামদায়ক অবস্থা। আমার নিরাপদ দ্বীপ। ঠিক এখন, আমি পছন্দ করতে পারি তার কাছে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে।

    এলিস এই মুহূর্তের জন্য ফিরে এসেছে কিন্তু সেটায় কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে না। সত্যিকারের ভালবাসা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। রাজপুত্র কখনও ফিরে আসে না। মন্ত্রমুগ্ধকর ঘুম থেকে ভাঙিয়ে চুমু দেয়ার জন্য। সর্বোপরি, আমি কোন রাজকুমারী নই। তাহলে সেই রুপকথার সেই চুমুর ব্যাপারটা কি হবে? সেটা কি কোন কুহক ভাঙবে না?

    হতে পারে এটা অনেক সহজ। যেমনটি তার হাত ধরা। অথবা তার হাত আমার চারিদিকে নেয়া। হতে পারে এটার অনুভূতি অসাধারণ হবে। হতে পারে এটা কোন প্রতারণার অনুভূতি দেবে না। পাশাপাশি, কাকে আমি প্রতারণা করছি? শুধু নিজেকেই।

    তার চোখ আমার উপরে রেখেই জ্যাকব তার মুখ আমার মুখের দিকে ঝুঁকিয়ে দিতে লাগল। আমি এখনও প্রকৃতপক্ষে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগলাম।

    টেলিফোনের তীক্ষ্ম শব্দ আমাদের দুজনকেই চমকে দিল। আমরা লাফিয়ে উঠলাম। কিন্তু এটা তার দৃষ্টিশক্তিকে বাধা দিল না। সে তার হাত আমার থুতনির নিচ থেকে নিয়ে নিল। রিসিভার তোলার জন্য এগিয়ে গেল। কিন্তু তখনও সে আমার মুখ সতর্কতার সাথে ধরে রেখেছিল। তার গাঢ় কালো চোখ আমার থেকে সরিয়ে নিচ্ছিল না। আমি খুবই অভিভুত ছিলাম প্রতিক্রিয়া। এমনকি এটার সুযোগও গ্রহণ করার চেষ্টা করলাম।

    সোয়ান আবাসিক জ্যাকব বলল, তার হাস্কি স্বর নিচু এবং চিন্তাগ্রস্ত।

    কেউ একজন উত্তর দিল। জ্যাকব সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে গেল। সে সোজা দাঁড়িয়ে গেল। তার হাত আমার মুখের থেকে সরে গেল। তার চোখ দৃষ্টিহারা হয়ে গেল। তার মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই। আমি আমার এতদিনের সংরক্ষিত কলেজ ফান্ডের সব টাকা বাজি ধরে বলতে পারি যে এটা অবশ্যই এলিস।

    আমি নিজেকে পুনরুদ্ধার করলাম। আমি ফোনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। জ্যাকব আমাকে উপেক্ষা করল।

    তিনি এখানে নেই। সে চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দিল।

    ওপ্রান্তে খুব ছোট্ট একটা উত্তর। আরো বেশি তথ্যের জন্য কোন একটা অনুরোধের ব্যাপার মনে হলো। কারণ জ্যাকব অনিচ্ছাস্বত্বেও যোগ করল, তিনি এখন শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে আছেন।

    তারপর জ্যাকব ফোন রেখে দিল। বেজন্মা রক্তচোষার দল। সে বিড়বিড় করে বলল। সে যখন আমার দিকে মুখ ফেরাল তার মুখে আবার সেই তিক্ত মুখোশ দেখতে পেলাম।

    কাকে তুমি এইমাত্র রেখে দিলে? আমি রাগান্বিতভাবে জিজ্ঞেস করলাম। আমার বাড়িতে এবং আমার ফোনে?

    সহজেই! সে আমার মুখের উপর রেখে দিল।

    সে? কে সেটা?

    সে দাঁত কিড়মিড় করে টাইটেলটা বলল, ডা. কার্লিসল কুলিন।

    কেন তুমি তার সাথে আমাকে কথা বলতে দিলে না?

    সে তোমার কথা জিজ্ঞেস করে নাই। জ্যাকব ঠাণ্ডাস্বরে বলল। তার মুখ মসৃণ, অভিব্যক্তিহীন। কিন্তু তার হাত কাঁপছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল চার্লি কোথায় এবং আমি তাকে সেটা বলেছি। আমি মনে করি আমি এটিকেটের কোন নিয়মকানুন ভঙ্গ করি নাই।

    তুমি আমার কথা শোেন জ্যাকব ব্লাক…

    কিন্তু সে আমার কোন কথা শুনছিল না। সে তাড়াতাড়ি তার কাঁধের উপর দিয়ে তাকাল। যেন কেউ একজন অন্য রুম থেকে তার নাম ধরে ডেকেছে। তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তার শরীর শক্ত হয়ে গেল। তারপর সে কাঁপতে শুরু করল। আমিও সেটা শুনতে পেলাম। স্বতঃস্ফুর্তভাবে, কিন্তু কিছুই শুনতে পেলাম না।

    বিদায় বেলা। সে থুতু ফেলল। সে সামনের দরজার দিকে ঘুরে গেল।

    আমি তার দিকে দৌড়ে গেলাম। হচ্ছে কি?

    তারপর আমি তার সাথে দৌড়ে গেলাম। সে গতি বাড়িয়ে দিল। সে আমার পাশ দিয়েই ঘুরে গেল। আমি তাকে পাকড়াও করার চেষ্টা করলাম। আমি পা পিছলে মেঝেতে পড়ে গেলাম। আমার পা তার পায়ের সাথে জড়িয়ে গেল।

    শুট, আউ! সে দ্রুতগতিতে তার পা ঝাঁকি দিয়ে মুক্ত করে নিলে আমি প্রতিবাদ জানালাম।

    আমি যুদ্ধ করতে লাগলাম নিজেকে টেনে তোলার জন্য। সে পিছনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল। সে হঠাৎ করে যেন জমে দাঁড়িয়ে গেল।

    এলিস চিত্রাপিত্রের মত সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

    বেলা। সে ঢোক গিলল।

    আমি তার পাশে চলে এলাম। তার চোখে ঢুলুঢুলু দৃষ্টি। যেন সে বহু দূরে তাকিয়ে দেখছে। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে ঝুলে পড়েছে। হাড়ের মতই সাদা হয়ে গেছে। তার ছিপছিপে শরীর বেতস লতার মত কাঁপছে।

    এলিস, কি হয়েছে? কি সমস্যা? আমি কেঁদে উঠলাম। আমার হাত তার মুখের উপর রাখলাম। চেষ্টা করলাম তাকে শান্ত করতে।

    তার চোখ বেপরায়াভাবে আমার মুখের উপর তাকিয়ে রইল। যন্ত্রণায় যেন সেটা বড় হচ্ছে।

    এ্যাডওয়ার্ড! সে ফিসফিস করে এইটুকুই বলল।

    আমার শরীর আমার মনের চেয়ে অনেক দ্রুত এই কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাল। তার উত্তরের সাথেই সাথেই ব্যাপারটা ঘটতে শুরু করল। প্রথমে আমি বুঝতে পারি নাই কেন গোটা রুম এমনভাবে ঘুরছে। অথবা আমার কানের মধ্যে কেন কোন শব্দ নেই। ফাঁকা, ফাঁকা। আমার মনও বুঝছে। এলিসের শূন্য মুখও মনে করতে সমর্থ হচ্ছি না। এটা কীভাবে এ্যাডওয়ার্ডের সাথে সম্পর্ক যুক্ত হতে পারে। আমার শরীর এরই মধ্যে কাঁপছে। অজ্ঞান হওয়ার আগেই আমি সেই ব্যাপারটা থেকে মুক্ত হলাম। বাস্তবতা আমাকে আঘাত করল।

    সিঁড়িপথ যেন অদ্ভুতভাবে উঁচু নিচু হচ্ছে।

    জ্যাকবের রাগান্বিত কণ্ঠস্বর হঠাৎই আমার কানে প্রবেশ করল। যেন তপ্ত শিসার মত কানে ঢুকল। আমি একটা ব্যর্থ অনুভূতিতে ভুগতে লাগলাম। তার নতুন বন্ধুর পরিষ্কারভাবেই একটা খারাপ শক্তি আছে।

    আমি কোচের উপর বসে পড়লাম। জ্যাকব এখনও রাগে গজরাচ্ছে। এটা এমনই অনুভূত হচ্ছে যেন সেখানে ভূমিকম্প হচ্ছে। আমার নিচের কোচও কাঁপছে।

    তুমি তাকে কি করেছ? জ্যাকব জানতে চাইল।

    এলিস তাকে উপেক্ষা করে গেল বেলা? বেলা। ওকে দূর করে দাও। আমাদের কিছুটা ব্যস্ততা আছে।

    পিছিয়ে এসো। জ্যাকব হুমকি দিল।

    শান্ত হও। জ্যাকব ব্লাক। এলিস আদেশ করল। তুমি তার খুব কাছাকাছি যেতে পার না।

    আমি মনে করি না আমি তার পাশাপাশি থাকলে কোন সমস্যার সৃষ্টি হবে। সে শান্ত হলো। তার কণ্ঠস্বর কিছুটা ঠাণ্ডা শোনাল।

    এলিস? আমার কণ্ঠস্বর বেশ দুর্বল। কি ঘটেছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম যদিও এখন আমি কোন কিছু শুনতে চাচ্ছি না।

    আমি জানি না। সে হঠাৎ গুঙিয়ে উঠল সে ভেবেছেটা কি?

    আমি মাথা ঘোরা কাটিয়ে কষ্ট করে নিজেকে টেনে তোলার চেষ্টা করলাম। আমি বুঝতে পারলাম এটা জ্যাকবের হাত যেটা আমি ভারসাম্যের জন্য আঁকড়ে ধরেছি। সেই একজন যে আমাকে ঝাঁকাচ্ছে। কোচটা নয়।

    এলিস তার ব্যাগ থেকে ছোট্ট রুপালি রঙের ফোন বের করল। তার আঙুল দিয়ে সে এতদ্রুত নাম্বারগুলো চাপল সেটা আমার কাছে ঝাপসা লাগল।

    রোজ, আমি এখনই বাবার সাথে কথা বলতে চাই। তার কণ্ঠস্বর যেন শব্দগুলোকে চাবুকের মত মারল। খুব ভাল, যত তাড়াতাড়ি সে ফিরে আসে। না। আমি একটা প্লেনে থাকব। দেখ, তুমি কি এ্যাডওয়ার্ডের কাছ থেকে কোন কিছু শুনেছো?

    এলিস এখন থেমে আছে। খুব মনোযোগের সাথে ও প্রান্তের কথোপকথন শুনছে। তার মুখ ভয়ে হা হয়ে গেল। তার হাতের ফোন কাঁপতে লাগল।

    কেন? সে শ্বাস নিল। কেন তুমি সেটা করতে গেলে রোসালি?

    সেই উত্তরটা যাই হোক না কেন, এটা তার চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে গেল। তার চোখ বারবার পলক পড়তে লাগল। ছোট হয়ে গেল।

    বেশ, তুমি দুই দিক দিয়েই ভুল করেছে, রোসালি, সুতরাং তুমি একটা সমস্যা হয়ে দেখা দেবে, তুমি কি তাই মনে করো না? সে তিক্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল হা। সেটাই ঠিক। সে সত্যিকার অর্থেই ভাল আছে। আমি ভুল করেছিলাম…এটা অনেক বড় গল্প…কিন্তু তুমি তোমার সেই অংশে ভুল করেছ। সেটাই এই কারণ যে আমি ফোন করেছি…হ্যাঁ। সেটাই। প্রকৃতপক্ষে আমি যা দেখেছিলাম।

    এলিসের কণ্ঠস্বর খুব কঠোর হয়ে গেল। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াতে লাগল। এটা কিছুটা দেরি হয়ে গেছে রোজ, তোমার দূরবর্তীকে রক্ষা করো এমন কারোর জন্য যে এটা বিশ্বাস করে। এলিস ঠাস করে ফোন বন্ধ করে দিয়ে হাতের একটা মোচড়ের মধ্যেই রেখে দিল।

    তার চোখজোড়া আহত মনে হচ্ছিল যখন সে আমার দিকে তাকাল।

    এলিস। আমি তাড়াতাড়ি বললাম। আমি তাকে এই মুহূর্তে কথা বলতে দিতে চাচ্ছি না। সে কথা বলার আগে আমার আরো কয়েক সেকেন্ডে বেশি দরকার। তার কথা আমার বাকি জীবনের সবকিছু ধ্বংস করবে। এলিস, কার্লিসল ফিরে এসেছে যদিও। সে একটু আগেই ফোন করেছিল..

    সে আমার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কতক্ষণ আগে? সে শূন্য স্বরেই জিজ্ঞেস করল।

    তুমি দেখা দেয়ার আধা মিনিট আগে।

    সে কি বলেছে? সে প্রকৃতপক্ষেই জানতে চাচ্ছে। আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে।

    আমি তার সাথে কথা বলি নাই। আমি জ্যাকবের দিকে চোখ নাচালাম।

    এলিস তার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি ঘুরিয়ে জ্যাকবের দিকে তাকাল। সে একটু কেপে উঠল। সে ভীতভাবে বসেছিল। যেন সে তার শরীর দিয়ে বর্ম হয়ে আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।

    সে চার্লিকে চাচ্ছিল। আমি তাকে বলে দিয়েছি চার্লি এখানে নেই। জ্যাকব বিড়বিড় করে জানাল।

    এটাই কি সবকিছু? এলিস জানতে চাইল। তার কণ্ঠস্বর বরফের মত ঠাণ্ডা।

    তারপর সে ওপাশ থেকে ফোন রেখে দেয়। জ্যাকব পিছন ফিরে থুতু ফেলল। একটা কাঁপুনি তার মেরুদণ্ড বেয়ে বয়ে গেল। এটা আমাকেও কাঁপিয়ে দিল।

    তুমি তাকে বলেছিলে যে চার্লি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গিয়েছে। আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।

    এলিস মাথা ঝাঁকিয়ে আমার দিকে তাকাল তার প্রকৃত কথাটা কি ছিল?

    সে বলেছিল সে এখানে নেই। যখন কার্লিসল জিজ্ঞেস করেছিল চার্লি কোথায় গিয়েছি জ্যাকব বলেছিল শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে।

    এলিস গুঙিয়ে উঠে বসে পড়ল।

    এলিস, আমাকে বলো। আমি ফিসফিস করে বললাম।

    ফোনে সেটা কার্লিসল ছিল না। সে আশাহত স্বরে বলল।

    তুমি কি আমাকে মিথ্যেবাদি বলতে চাও? জ্যাকব আমার পাশ থেকে গর্জন করে উঠল।

    এলিস তাকে উপেক্ষা করে গেল। সে আমার হতবুদ্ধির মুখের দিকে তাকাল।

    এটা ছিল এ্যাডওয়ার্ড। শব্দটা যেন ঠিক ফিসফিসানির মত আমার কানে ঢুকল। সে ভেবেছে তুমি মারা গেছ।

    আমার মন আবার কাজ করতে শুরু করেছে। এই শব্দটা সেটাই নয় যেটার জন্য আমি ভয় পাচ্ছিলাম। এটা আমার মাথায় স্বস্তির ভাব নিয়ে এল।

    রোজালি তাকে বলেছে আমি আত্মহত্যা করেছি, তাই নয় কি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। স্বস্তির সাথে শ্বাস নিলাম।

    হ্যাঁ। এলিস স্বীকার করল। তার চোখ কঠিনভাবে দেখতে লাগল। তার পক্ষ থেকে সে এটাই বিশ্বাস করে। সে দূরের যেকোন কিছুর জন্য আমার দৃষ্টির উপর খুব বেশি নির্ভর করে। যেটা আসলে অপূর্ণভাবে কাজ করে। কিন্তু তার জন্য তাকে খুঁজে বের করে সেটা বলে দিয়েছে। সে কি বুঝতে পারে নাই… অথবা যত্ম নেয়া… তার কণ্ঠস্বরের ভয় ধীরে ধীরে মুছে যেতে লাগল।

    এবং যখন এ্যাডওয়ার্ড এখানে ফোন করেছিল সে ভেবেছিল জ্যাকব শেষকৃত্য বলতে আমার শেষকৃত্য বোঝাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম। এটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে দিল আমি কতটা এটার কাছাকাছি ছিলাম। আমি তার কণ্ঠেস্বরের মাত্র এক ইঞ্চি দূরে ছিলাম। আমার নখ জ্যাকবের বাহুর উপর বসে গেল। কিন্তু সে কোন নড়াচড়া করল না।

    এলিস অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকাল। তুমি আপসেট নও। সে ফিসফিস করে বলল।

    বেশ। এটা সত্যিই খুব খারাপ সময়। কিন্তু এটা সবকিছুকে সরাসরি প্রকাশ করে দিয়েছে। পরেরবার যখন সে কল করবে কেউ একজন তাকে বলবে….কি …সত্যিই… আমি থেমে গেলাম। তার তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা আমার গলায় বিধে গেল।

    কেন সে এতটা আতঙ্কিত? কেন তার মুখ সমবেদনা আর ভয়ে বেকে গেছে? সে ঠিক এখনই রোজালিকে ফোনে কি বলেছিল? এমন কিছু একটা যেটা সে দেখেছ… এবং রোজালির দূরবর্তীতা নিয়ে। রোজালি কখনও কোন কিছু নিয়ে একাতীত্ববোধ করে যেটা তার উপরে ঘটে গেছে। কিন্তু যদি সে তার পরিবারকে আঘাত করে থাকে, তার ভাইকে আহত করে থাকে…

    বেলা। এলিস ফিসফিস করে বলল এ্যাডওয়ার্ড আর ফোন করবে না। সে তাকে বিশ্বাস করে।

    আমি বুঝতে পারছি না। আমার মুখ থেকে প্রতিটি শব্দ নৈঃশব্দের মত বেরিয়ে এল। বাতাস সরিয়ে আমার প্রকৃত কথাটা বলতে পারছি না। যেটা তাকে ব্যাখ্যা করে বলবে এটার মানে কি।

    সে ইতালি চলে যাচ্ছে।

    এটা কি তা বুঝে উঠতে আমার কিছুটা সময় লাগল।

    এ্যাডওয়ার্ডর কণ্ঠস্বর আমার কাছে ফিরে আসে। এটা আমার বিভ্রান্ত্রির উপযুক্ত নকল ছিল না। এটা শুধু আমার স্মৃতির দুর্বল ঝাপসা স্বর। কিন্তু শব্দগুলো আমার বুকে ক্ষত জাগানোর জন্য যথেষ্টই ছিল। শব্দগুলো এমন সময়ে এল যখন আমি সবকিছু নিয়েই বাজি ধরতে পারি অথবা এমন কিছু ধার করতে পারি যা আমার ভালবাসার জন্য।

    বেশ, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে যাচ্ছি না, সে বলেছিল যখন আমরা রেমিও জুলিয়েট দেখছিলাম এবং জুলিয়েট মারা যাচ্ছিল। এখানে এই রুমেই। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই এটা কীভাবে করতে হবে…আমি জানতাম এমিট এবং জেসপার কখনও সাহায্য করবে না…সুতরাং আমি ভেবেছিলাম হতে পারে আমি ইতালিতে চলে যাব এবং কিছু একটা করব এই প্রতারণাময় অবস্থা কাটাতে…তুমি তাদেরকে উত্তেজিত করো না। যদি না তুমি মরতে চাও।

    যদি না তুমি মরতে চাও।

    না! সেই ফিসফিসানির মত কথাগুলো আমার কানের কাছে এমন স্বরে বাজতে লাগল যে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম। এতে সবাই লাফিয়ে উঠলো। আমি অনুভব করলাম আমার মুখে রক্ত উঠে আসছে। আমি বুঝতে পারলাম সে কি দেখেছিল, না। না, না না! সে পারে না! সে এটা করতে পারে না!

    সে তার মন তৈরি করেছে, তোমার বন্ধু যত তাড়াতাড়ি নিশ্চিত করেছে যে তোমাকে বাঁচাতে তার খুব দেরি হয়ে গেছে।

    কিন্তু সে…সে চলে গেল। সে আমাকে আর চাইল না! সে জানত আমি যে কোন সময় মারা যেতে পারি।

    আমি মনে করি না সে কখনও এমন পরিকল্পনা করেছে যে তোমাকে ছাড়া খুব দীর্ঘদিন থাকবে।

    কীভাবে সে সাহস করে! আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমি এখন দাঁড়িয়ে গেছি। জ্যাকব আকস্মিকভাবে এলিস আর আমার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে গেছে।

    ও, আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও জ্যাকব। আমি কনুই দিয়ে তার কাঁপতে থাকা শরীরে বেপরোয়াভাবে ধাক্কা দিলাম। আমরা এখন কি করতে পারি? আমি এলিসের কাছে কাতর কণ্ঠে বললাম। সেখানে কিছু একটা থাকতে হবে। আমরা কি তাকে ডাকতে পারি না? কল করতে পারি না? কার্লিসলকেও পারি না?

    সে দুদিকে মাথা নাড়ল। সেটাই প্রথম জিনিস যেটা আমি করেছিলাম। সে রিওর। আর্বজনার স্তূপে তার ফোন ফেলে দিয়েছে। কেউ একজন সেটা নিয়ে উত্তর দিয়েছে… সে ফিসফিস করে বলল।

    তুমি বলেছিলে আমাদের তাড়াতাড়ি করতে হবে। কতটা তাড়াতাড়ি? এখন এটা করো, তাই এটা যাই হোক।

    বেলা, আমি-আমি মনে করি না তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম… সে সিদ্ধান্ত হীনতায় কথা বন্ধ করে দিলো।

    আমাকে জিজ্ঞেস করো! আমি নির্দেশ দিলাম।

    সে আমার কাঁধে হাত রাখল। আমাকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল। তার আঙুল যেন অস্থিরভাবে কথাগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছে। হতে পারে আমরা এর মধ্যে দেরি করে ফেলেছি। আমি তাকে ভলচুরিতে যেতে দেখেছি… এবং মৃত্যুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে। আমরা দুজনেই শিহরে উঠলাম। আমার চোখ হঠাৎ করে যেন অন্ধ হয়ে গেল। আমি জ্বরগ্রস্তর মতো চোখ থেকে পানি ঝরালাম। এর পুরোটা নির্ভর করছে তারা কি পছন্দ করছে তার উপর। আমি সেটা দেখতে পারছি না তারা যতক্ষণ না কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

    কিন্তু যদি তারা না বলে এবং হতে পারে তারা এ্যারো কার্লিসলের ভক্ত এবং তাকে আর নাও ছাড়তে চাইতে পারে। এ্যাডওয়ার্ডের একটা ব্যাকআপ প্লান আছে। তারা তাদের শহরে খুবই সুরক্ষিত। যদি এ্যাডওয়ার্ড শান্তিভঙ্গের মত সেখানে কিছু করে, সে মনে করে তারা তাকে থামানোর জন্য কাজ করবে। এবং সে ঠিক বলেছে। তারা সেটা করবে।

    আমি হতাশার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি এমন কিছু শুনিনি যার জন্য আমরা এখনও এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি।

    সুতরাং যদি তারা সম্মত হয় তার পক্ষে কাজ করতে। আমরা অনেক দেরি করে। ফেলেছি। যদি তারা না বলে এবং তাদের যদি কোন পরিকল্পনা থাকে তাদের এড়ানো সেটা খুব দ্রুতই হব। আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। যদি সে অনেক বেশি সময় ব্যয় করার প্রবণতা ধরে রাখে…হতে পারে আমাদের হাতে সময় আছে।

    তাহলে চলো।

    শোনো, বেলা! আমাদের হাতে সময় থাকুক আর নাই থাকুক আমরা ভলচুরি শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে চলে যাব। আমি তার সেই সাফল্যের ব্যাপারে প্রশংসা করব। তুমি একজন মানবী হবে যে শুধু অনেক বেশি কিছুই জানে না কিন্তু অনেক ভাল ঘ্রাণ পাও। সেখানে খুব ভাল একটা সুযোগ আছে। তারা আমাদের সবাইকে উপরে তুলে দেবে। যদিও তোমার ক্ষেত্রে এটা ডিনার টাইমের এত বেশি শাস্তি হবে না।

    এটাই তাহলে সেটাই যেটা আমাদের এখানে ধরে রাখছে? আমি অবিশ্বাসের স্বরে জিজ্ঞেস করলাম। আমি একাকীই সেখানে যাব যদি তুমি ভয় পাও। আমি মনে মনে আমার একাউন্টে কত টাকা আছে সেটার হিসাব করতে লাগলাম। বিস্মিত হবো যদি এলিস আমাকে বাকি টাকাটা ধার দেয়।

    আমি শুধুমাত্র ভয় পাচ্ছি সেখানে তুমি খুন হয়ে যাবে।

    আমি বিরক্তিতে নাক টানলাম। আমি প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে খুন হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে যাই। আমাকে বলো আমার কি করতে হবে!

    তুমি চার্লির কাছে একটা নোট লিখে রেখে যাও। আমি এয়ারলাইনে ফোন দিচ্ছি।

    চার্লি! আমি শ্বাস নিলাম।

    এমন না যে আমার উপস্থিতি তাকে রক্ষা করছে। কিন্তু আমি কি তাকে এখানে একাকী ফেলে রেখে যেতে পারি মুখোমুখি হতে সেই…

    আমি চার্লির কোন কিছু ঘটতে দিতে যাচ্ছি না। জ্যাকবের নিচু স্বরের ভেতরে দৃঢ়তা এবং রাগের বহিঃপ্রকাশ। চুক্তির গুষ্টি কিলাই।

    আমি তার দিকে তাকালাম। সে যেন আমার অভিব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বকাঝকা করতে লাগল।

    তাড়াতাড়ি করো বেলা। এলিস গুরুত্ব সহকারে কথার মাঝে বাধা দিল।

    আমি রান্নাঘরে দৌড়ে গেলাম। ড্রয়ার টেনে খুললাম। ড্রয়ারের ভেতর যা কিছু ছিল সব টেনে নিচের মেঝেতে ফেললাম। একটা কলম খুঁজে পাওয়ার জন্য। একটা বাদামী রঙের কলম আমার হাতে উঠে এল।

    ধন্যবাদ। আমি বিড়বিড় করে বললাম। দাঁত দিয়ে কলমের মুখ টেনে খুললাম। জ্যাকব নিঃশব্দে আমার দিকে একটা লেখার প্যাড এগিয়ে দিল যেখানে আমরা ফোন ম্যাসেজ লিখে থাকি। আমি উপরের কাগজটা টেনে ছিঁড়ে নিলাম এবং লিখতে শুরু করলাম।

    বাবা, আমি লিখলাম। আমি এলিসের সাথে। এ্যাডওয়ার্ড সমস্যার মধ্যে আছে। আমি যখন ফিরে আসব তুমি খুবই রাগ করবে জানি। আমি জানি এটা খারাপ সময়। আমি খুবই দুঃখিত বাবা। তোমাকে এতটাই ভালবাসি যে তুমি কল্পনাও করতে পাবে না বাবা। বেলা।

    যেও না। জ্যাকব ফিসফিস করে বলল। এলিস তার চোখের সামনে থেকে সরে যেতেই তার সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেল।

    আমি তার সাথে তর্ক করে সময় নষ্ট করতে গেলাম না। প্লিজ, প্লিজ। দয়া করে চার্লির দিকে নজর রেখো। তাকে দেখে রেখো। আমি বলতে বলতে সামনের রুমের দিকে চলে এলাম। এলিস তার কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে দরজাপথে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।

    তোমার মানিব্যাগ নাও। তোমার আইডি কার্ডের প্রয়োজন হবে। দয়া করে বলো যে তোমার পাসপোর্ট করা আছে। আমার হাতে তা করে নেয়ার মত কোন সময় নেই।

    আমি মাথা নোয়ালাম। তারপর দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলাম। মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার হাঁটু নুয়ে আসতে চাইল। আমার মা মেক্সিকোতে ফিলকে বিয়ে করেছিল। অবশ্যই সবই তার পরিকল্পনা মত, এটা সেভাবেই হয়েছিল। কিন্তু এর আগে আমি সব বাস্তবসম্মত আয়োজন করে রেখেছিলাম।

    সোজা আমার রুমে চলে এলাম। পুরানো ওয়ালেট খুঁজে বের করলাম। একটা পরিচ্ছন্ন টিশার্ট এবং একটা প্যান্ট আমার ব্যাকপ্যাকে নিয়ে নিলাম। তারপর এটার উপরে টুথব্রাশ রাখলাম। আমি তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম। কমপক্ষে শেষবারের মত যখন আমি ফর্ক থেকে দৌড়ে পালাচ্ছিলাম তৃষ্ণার্ত ভ্যাম্পায়ারের হাত থেকে, যাতে তারা খুঁজে না পায়। আমি তখনও চার্লিকে বিদায় জানাতে পারি নাই।

    জ্যাকব এবং এলিস সামনের খোলা দরজার সামনে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যে প্রথম দেখায় কেউ মনে করবে না যে তারা দুজনে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দুজনের কেউই আমার তাড়াহুড়ো করে আসার শব্দ শুনতে পেল না।

    হতে পারে অবস্থা অনুযায়ী তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার। কিন্তু এইসব রক্তচোষা শয়তানগুলো যাদের কাছে তুমি তাকে নিয়ে যাচ্ছ… জ্যাকব রাগান্বিতভাবে তাকে দোষারোপ করে চলেছে।

    হ্যাঁ। তুমি ঠিক বলেছ কুত্তা। এলিসও রাগান্বিত। ভলচুরি আমাদের প্রকৃতির গন্ধে আপুত। সেটাই সেই যে কারণে তোমার চুল খাড়া হয়ে আছে আর তুমি আমার গন্ধ পেয়েছ। তারাই তোমার ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের বিষয়বস্তু। তোমার অনুভূতিতে ভয়ের স্রোত বয়ে দিয়েছে। আমি সেটা সম্বন্ধে সচেতন নই।

    এবং তুমি তাকে তাদের কাছে এমনভাবে নিয়ে যাচ্ছ যেন সে তাদের পার্টিতে একবোতল মদ। সে চিৎকার করল।

    তুমি কি মনে করো এখানে আমি তাকে একাকী ছেড়ে গেলে সে ভাল থাকবে? যেখানেই থাক ভিক্টোরিয়া তার পিছু নিয়েছে?

    আমরা এই লালমাথাগুলোরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

    তাহলে কেন সে এখনও তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে?

    জ্যাকব গুঙিয়ে উঠল। তারা সারা শরীর জুড়ে একটা কাঁপুনি বয়ে গেল।

    এসব বন্ধ করো! আমি তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করলাম। অধৈর্য হয়ে গেছি। তর্ক করো যখন আমরা ফিরে আসব। এখন চলো!

    এলিস তার গাড়ির দিকে ঘুরে গেল। তার মধ্যে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি তার পিছুপিছু তাড়াতাড়ি গেলাম। অটোমেটিকভাবে ঘুরে গেলাম এবং দরজা বন্ধ করে দিলাম।

    জ্যাকব তার কাঁপতে থাকা হাতে আমার হাত ধরে ফেলল। প্লিজ বেলা। আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

    তার গাড় কালো চোখ পানিতে চকমক করছে। একটা বাষ্প আমার গলার কাছে আটকে গেল।

    জ্যাক, আমি আছি তো….

    তুমি পারো যদিও। তুমি সত্যিই পারো না। তুমি এখানে আমার সাথে থাকতে পার। তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। চার্লির জন্য। আমার জন্য। কার্লিসলের ম্যার্সিডিজের ইঞ্জিন শব্দ করতে শুরু করেছে। এলিস হর্ণে ছন্দময়ভাবে অধৈর্য হয়ে চাপ দিয়ে চলেছে।

    আমি মাথা নাড়লাম। আমার চোখ বেয়ে পানি খুবতই নেমে যাচ্ছে। আমার হাত টেনে মুক্ত করলাম। সে আর আমাকে বাধা দিল না।

    মরে যেও না বেলা। সে ঢোক গিলল। যেও না। না।

    কি হবে যদি আমি আর আবার তাকে না দেখি?

    সেই চিন্তাটা আমাকে নিঃশব্দ কান্নায় নিয়ে গেল। একটা ব্যথা ব্যথা কষ্ট আমার বুক ভেঙে দিতে লাগল। আমার হাত তার কোমরে রাখল। তাকে খুব অল্প সময়ের জন্য জড়িয়ে ধরলাম। আমার ভেজা মুখ তার বুকের উপর। সে তার বিশাল হাত আমার চুলের উপর রাখল।

    বিদায় জ্যাক। আমি তার হাত আমার চুল থেকে টেনে নিলাম। তার হাতের তালুতে চুমু খেলাম। আমি তার মুখের দিকে তাকানো সহ্য করতে পারছি না।

    দুঃখিত। আমি ফিসফিস করে বললাম।

    তারপর আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে গাড়ির দিকে দৌড়ে গেলাম। প্যাসেঞ্জার পাশের দরজা খোলা ছিল। সে অপেক্ষা করছিল। আমি আমার ব্যাকপ্যাক মাথা রাখার জায়গা দিয়ে পেছনের দিকে ছুঁড়ে দিলাম। ভেতরে ঢুকলাম। দড়াম করে আমার পেছনে দরজা আটকে গেল।

    চার্লির প্রতি নজর রেখো। আমি জানালা খুলে চিৎকার দিলাম। কিন্তু জ্যাকব আশেপাশে কোথাও নেই। এলিস গ্যাস বাড়িয়ে দিল। টায়ারগুলো মানুষের চিৎকারের মত শব্দ করতে লাগল। আমরা রাস্তার দিকে ঘুরে গেলাম। আমার চোখে গাছের গোড়ায় একটা সাদা বস্তু ধরা পড়ল। এক পাটি জুতো।

    .

    ১৯.

    ফ্লাইটের প্রতিটা মুহূর্ত আমরা সতর্কতার সাথে ব্যয় করছিলাম। তখনই আসল অত্যাচার শুরু হল। প্লেন অলসভাবে টারম্যাকে পড়েছিল। ফ্লাইট এটেন্ডেন্টরা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কম্পার্টমেন্টের ভেতর বাক্স প্যাটরা ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছিল। পাইলট ককপিটে হেলান দিয়ে গল্প গুজব করছিল, যেমনটি তারা এতদিন করে আসছে। এলিস শক্ত করে আমার কাঁধ আঁকড়ে আমাকে সিটে ঠেসে ধরল। আমি উৎকণ্ঠার সাথে উপর নিচ দুলছিলাম।

    এটা কিন্তু দৌড়ের চেয়ে দ্রুত গতির। সে আমাকে নিচু স্বরে মনে করিয়ে দিল।

    আমি দুলতে দুলতেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।

    এক সময় প্লেন রানওয়ে থেকে অলস গতিতে চলতে আরম্ভ করল। গতিও গড়পড়তা যা আমাকে আগের চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছিল। আমি খুব আশা করছিলাম একবার উপরে উঠে যেতে পারলেই নিশ্চিন্ত হব, কিন্তু আমার ধৈর্য বাধ মানছিল না।

    এলিস ফোনটা নিয়ে কোথায় জানি রিং করল। আমার দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল যা তাকে প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখল।

    আমি প্রচণ্ড ক্লান্তিতে খেই হারিয়ে ফেললাম। এলিস জেসপারের সাথে নিচুস্বরে গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করছিল। আমি সেগুলো শুনতে চাচ্ছিলাম না, কিন্তু তারপরও কিছু কিছু শুনে ফেললাম।

    আমি ঠিক নিশ্চিত নই, তবে আমি তাকে ভিন্ন কিছু করতে দেখেছি। সে মনকে পরিবর্তিত করেছে…শহর জুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, পাহারাদারদের আক্রমণ করেছে, মেইন স্কয়ারের মাথায় গাড়ি তুলে দিয়েছে… বেশিরভাগ জিনিস সে তাদের কাছে প্রকাশ করে দিয়েছে। সে জানে প্রতিক্রিয়া তৈরি করার এটাই সবচেয়ে দ্রুততর পথ…

    না, তুমি পার না। এলিসের কণ্ঠস্বর উচ্চগ্রামে উঠল। যদিও সেটা কাছাকাছি শ্রবণযোগ্য ছিল না। আমি কেবল ইঞ্চি পরিমাণ দূরত্বে থাকায় কোন ধরনের বাধা ছাড়াই বেশ ভালভাবেই শুনতে পেলাম। এমেটকে এসব করতে মানা কর… ঠিক আছে, এমেট আর রোজালের কাছে যাও এবং তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আস… ভাবতে পার জেসপার, সে যদি আমাদের কাউকে দেখে তাহলে সে কী করবে বলে তুমি মনে কর?

    সে মাথা দোলালো, এটাই ঠিক। আমি মনে করি বেলাই একমাত্র সুযোগ, যদি সেখানে কোন সুযোগ থেকে থাকে… যা করার আমি করব। কিন্তু কার্লিসলেকে তৈরি করতে হবে, সব কেমন ভাল ঠেকছে না।

    সে হেসে ফেলল। তার স্বরে অন্যরকম কিছু একটা ছিল। আমি সেটা ভেবেছি… হ্যাঁ। আমি প্রতিজ্ঞা করছি জেসপার, কোন না কোনভাবে আমি বেরিয়ে যাবই… আর… আমি তোমাকে ভালবাসি।

    সে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল, আমি তার সাথে মিথ্যে বলতে ঘৃণা করি।

    আমাকে সবকিছু বল এলিস আমি জানতে চাইলাম। আমি বুঝতে পারছি না কেন তুমি জেসপারকে বললে এমেটকে থামাতে, কেন তারা আমাদের সাহায্য করতে এল না?

    দুটো কারণে। সে ফিসফিসিয়ে বলল, কিন্তু তার চোখ ঠিকই বন্ধ ছিল। প্রথম যেটা আমি তাকে বলেছি, আমরা আমাদের মত করে এ্যাডওয়ার্ডকে থামানোর চেষ্টা করতে পারি। যদি এমেট তার সাথে হাত মেলায়, তাহলে আমরা এই বলে তাকে প্ররোচিত করে থামাতে পারবো যে তুমি বেঁচে আছ। কিন্তু আমরা এ্যাডওয়াডের প্রতি খারাপ আচরণ করতে পারব না। সে যদি জানে যে আমরা তার কাছে আসছি তাহলে আগের চেয়েও খারাপ আচরণ করবে। হয়ত সে দেয়ালে একটা বুইক ছুঁড়ে মারবে অথবা অন্য কিছু, আর তখন ভলচুরি তাকে গোল্লায় নিয়ে যাবে।

    সেটা অবশ্য দ্বিতীয় কারণ, যে কারণটা আমি জেসপারকে বলিনি। যদি তারা সেখানে থাকে এবং এ্যাডওয়ার্ড ভলচুরিতে খুন হয়, তারা তাদের সাথে লড়বে, বেলা। সে তার চোখ খুলল এবং বিস্ময় আর অনুনয় ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। যদি সেখানে জেতার কোন সুযোগ থাকত… যদি কোন পথ থাকত যে আমরা চারজন যুদ্ধ করে আমার ভাইকে বাঁচিয়ে আনব। মনে হয় সেটা অন্যরকম হবে। কিন্তু আমরা পারব না। আর বেলা, আমি জেসপারকে ওভাবে হারাতে পারব না।

    আমি বুঝতে পারলাম কেন তার দৃষ্টি আমার কাছে করুণা ভিক্ষা চাইছে। আমাদের মাধ্যমে সে জেসপারকে রক্ষা করতে চাচ্ছে। হয়ত এ্যাডওয়ার্ডকেও। আমি বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমি সে সম্পর্কে খারাপ কোন চিন্তা করলাম না। আমি ধীরে ধীরে মাথা নাড়লাম।

    এ্যাডওয়ার্ড তোমার কথা শোনেনি, শুনেছি কি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। সে কি জানবে না যে আমি জীবিত ছিলাম। এই ব্যাপারে কি কোনভাবেই জানানো যাবে না?

    এমন না যে সেখানে এইটা ছাড়া কোন বিচার্য বিষয় ছিল না। আমি এখনও পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না সে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পেরেছে। এটা ছিল বোধ বুদ্ধিহীন! আমার মনে পড়ল সেদিন সোফায় বসে তার ব্যথা ভরা নির্মম কথাগুলো। তখন আমরা দেখলাম রোমিও এবং জুলিয়েট একজনের পর আরেকজন নিজেদের খুন করছে। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারতাম না, সে এমনভাবে বলেছিল যেন সেটা ছিল সুস্পষ্ট পরিণতি। কিন্তু…

    যদি সে শুনে থাকে, সে ব্যাখ্যা করল। কিন্তু বিশ্বাস কর আর নাই কর, তোমার চিন্তাভাবনা অনুযায়ী এটা সম্ভব। যদি তুমি মারা যেতে তাহলে তুমি তাকে থামাতে পারতে। চিন্তা করতে পারতে সে বেঁচে আছে, সে বেঁচে আছে যেমন কঠিনভাবে আমি করতাম। সে সেটা জানে।

    আমি নীরব হতাশায় দাঁতে দাঁত চাপলাম।

    যদি তোমাকে ছাড়াই কোন কিছু করার পথ খোলা থাকত বেলা তাহলে আমি তোমাকে এই বিপদে ফেলতাম না। এটা আমার ভীষণ অন্যায় হয়েছে।

    বোকার মত কথা বলো না। আমি তোমার চিন্তা করার মত শেষ বিষয়। আমি অধৈর্যের সাথে মাথা ঝাঁকালাম। বল আমাকে, জেসপারকে মিথ্যা বলতে ঘৃণা করা নিয়ে তুমি কী বলতে চাচ্ছ?

    সে গম্ভীরভাবে হাসল। আমি তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তারা আমাকে খুন করার আগেই আমি চলে যাব। এটা এমন না যে আমি গ্যারান্টি দিয়েছিলাম। সে ঐ নাচাল। সে বাস্তবিকই আমাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি বিপদের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

    ভলচুরিতে কে কে আছে? আমি ফিসফিসিয়ে বললাম। কী এমন আছে তাদের মধ্যে যা তাদের এমেট, জেসপার, রোসালি এবং তোমার চাইতেও ভয়ংকর করে তুলেছে? এর চেয়ে বেশি কল্পনা করতেও তো ভয় লাগছে।

    সে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিল। তারপর আকস্মিকভাবে আমার কাঁধের কালো জায়গা বরারব তাকাল। সে সময় আমি পাশের সিটের লোকটির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে খেয়াল করছিলাম সে আসলেই আমাদের কথা শুনছে কিনা? তাকে ঠিক ব্যাবসায়ীর মত দেখাচ্ছিল। পরনে কালো স্যুট, কালো টাই এবং হাঁটুর ওপর ল্যাপটপ। যখন আমি উত্তেজনার সাথে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখন সে তার কম্পিউটার খুলল এবং লক্ষ্য করার মতই হেড ফোনটা কানে পরল।

    আমি এলিসের দিকে এগিয়ে এসে ঝুঁকে পড়লাম। তার ঠোঁট আমার কানের এতটাই কাছে ছিল যে সেটা আমার কানে নিঃশ্বাস ফেলছিল।

    আমি খুব অবাক হয়েছি যে তুমি নামটা চিনতে পেরেছ। সে বলল।

    তাহলে আমি এখন যা বলব তুমি তা তাড়াতাড়ি ধরতে পারবে। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এ্যাডওয়ার্ড তোমাকে কতটুকু বলেছে?

    সে শুধু এটুকু বলেছিল যে সেখানে একটি পুরানো ক্ষমতাবান পরিবার থাকবে ঠিক যেন রাজার রাজত্ব। সেখানে তুমি তাদের সাথে কখনই শত্রুতা করবে যদি না তুমি… মরতে চাও। আমি ফিসফিসিয়ে বললাম। শেষ শব্দ দুটো শ্বাসরোধ করে দেয়ার মত।

    দেখ, তোমাকে বুঝতে হবে, সে বলল, তার কণ্ঠস্বর ছিল ধীর এবং পরিমিত। তুমি যা জানো তার চাইতেও আমরা কুলিনরা অনেক দিক দিয়েই অন্যরকম। এটা আসলে… এক দিক দিয়ে অস্বাভাবিক। এক সাথে শান্তিতে বাস করা। উত্তরে বাস করা তানিয়াদের পরিবার। কার্লিসলে মনে করে নির্লিপ্ত থাকাটাই আমাদের পক্ষে সামাজিকতা রক্ষা করার উপায়। ভালবাসা নির্ভর আনুষ্ঠানিকতা, সগ্রাম এবং সুবিধার চাইতেও। এমনকি জেমসের তিনটি ছোট কভেনও ছিল অস্বাভাবিক বড়- দেখেছ নিশ্চয়ই লরেন্ট সেগুলোকে কীভাবে ফেলে এসেছে। স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের ভ্রমণ হয় একা, কিংবা জোড়া। আমি যতদূর জানি কার্লিসলের পরিবার অস্তিত্বের দিকে দিয়ে অনেক বিশাল। শুধু একটাই ব্যতিক্রম, ভলচুরি।

    সেখানেও প্রকৃতপক্ষে তিনজন আছে, এরো, কাইয়াস আর মারকাস।

    আমি দেখেছি তাদের। অস্পষ্টভাবে বললাম। কার্লিসলে স্টাডিরুমের ছবিতে।

    এলিস মাথা দুলাল। দুজন মহিলা সে সময় যোগদান করেছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন পরিবার গঠনে ভূমিকা রেখেছিল। আমি ঠিক নিশ্চিত না, কিন্তু আমি ধারণা করছি তাদের বয়সটাই তাদের শান্তিতে থাকার ক্ষমতা দিয়েছিল। তারা এখন তিন হাজার বছর ধরে টিকে আছে। এমনও হতে পারে এটা তাদের উপহার, যে তাদের অতিরিক্ত সহ্য ক্ষমতা রয়েছে। ঠিক যেমন এ্যাডওয়ার্ড ও আমি। এরো এবং মারকাসও… বুদ্ধিমান।

    আমি জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত সে বলে গেল, অথবা এমনও হতে পারে তাদের ভালবাসার শক্তি তাদের একতাবদ্ধ রেখেছে। রাজত্ব হচ্ছে একটা একতাবদ্ধতার ব্যাপার।

    কিন্তু যদি সেখানে মাত্র পাঁচটা-

    পাঁচ জনই পুরো পরিবার গঠন করেছে। সে শুধরিয়ে দিল। সেখানে পাহারাদাররা অন্তর্ভুক্ত নয়।

    আমি গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিলাম। এটা তো… ভয়ঙ্কর।

    ওহ্, সেটা, সে আমাকে আশ্বস্ত করল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে স্থায়ী পাহারাদারের সদস্য সংখ্যা নয়, ট্রানজিটরিতে আরও অনেক থাকতে পারে। এটা অবশ্য পরিবর্তনশীল। এবং তাদের মধ্যে অনেকেই …

    আমি মুখ খুলতে গিয়েও বন্ধ করে ফেললাম। আমি ঠিক চিন্তা করে কুল পাচ্ছি না যে সেখানে কী পরিমাণ খারাপ বিষয় থাকতে পারে।

    সে আবারও মাথা দোলাল। সে ঠিক বুঝতে পেরেছে আমি কী ভাবছি। তারা একসাথে সম্মুখীন হয় না। তারা এত বোকা নয় যে তারা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করব। তারা শহরেই থাক, বাস করে, নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে যায়।

    ডিউটি? আমি বিস্মিত হলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড তোমাকে এ ব্যাপারে বলেনি যে তারা কী করে?

    না। আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।

    এলিস আমার মাথার উপর দিয়ে ব্যবসায়ী লোকটাকে একবার দেখে নিল। তারপর আবার আমার কানের কাছে মুখ নিল।

    তাদের রাজ পরিবার বলার একটা কারণ আছে…তারা শাষকশ্রেণী। শত সহস্র বছর ধরে… তারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে চলেছে।

    বিস্ময়ে আমার চোখ বিস্ফোরিত হল। এখানে নিয়ম আছে? আমি যে আওয়াজ করেছিলাম তা অনেক বেশি জোরে হয়ে গেল।

    ইস্!

    তাহলে আমাকে আগে কেউই বলেনি কেন? আমি রাগ মেশানো গলায় ফিসফিসিয়ে উঠলাম। আমি বলতে চাচ্ছিলাম… আমি তোমাদেরই একজন হতে চেয়েছিলাম। কেউ কি আমাকে এ ব্যাপারে বলতে পারত না?

    আমার আচরণে এলিস মুখ টিপে হাসল। এটা এমন কিছু জটিল ব্যাপার নয়, বেলা। এখানে একটাই মাত্র বাধা… যেটা তুমি একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে।

    আমি ভাবলাম। নাহ, আমার কোন ধরনের ধারণাই নেই।

    সে হতাশার সাথে মাথা ঝাঁকাল। হতে পারে এটাই সুস্পষ্ট। আমাদের অবশ্যই আমাদের অবস্থান গোপন রাখতে হবে।

    ওহ, আমি অস্পষ্ট স্বরে বললাম, এটা সুস্পষ্ট ছিল।

    এটা বোঝার মত একটা বিষয়। আমাদের কাউকেই কৌশল খাটাতে হয় না। সে বলে চলল। কিন্তু বেশ কয়েক শতাব্দি পরে, কখনও হয়তো আমাদেরই কেউ বিরক্ত হয়ে গেছে কিংবা মাথা পাগলা হয়ে গেছে। আমি জানি না। তারপর… বাকিরাও।

    তো এ্যাডওয়ার্ড…।

    পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তার নিজস্ব শহরের দিকেই এগোচ্ছে শহরটা তারা হাজার বছর ধরে গোপনে আগলে রেখেছে, এটরুসকানস-এর আমল থেকে। তারা সেখানে এতটাই সুরক্ষিত থাকে যে দেয়ালের ভেতরে তারা কোন ধরনের শিখারও অনুমোদন করে না। কাছে পিঠে ভ্যাম্পায়ারের আক্রমণ থেকে ভলতেরাই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদতম শহর।

    কিন্তু তুমি বলেছ যে তারা স্থান ত্যাগ করে যায় না। তাহলে তারা কী খেয়ে বাঁচে?

    তাদের অবস্থান ছাড়তে হয় না। তারা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসে, কখনো সখনো অনেক দূর দূরান্ত থেকেও।

    তো… আমরা এখন কী করতে পারি বেলা। সময় তো এখনও শেষ হয়ে যায় নি।

    এখনও না। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম। যদিও জানি আমাদের সুযোগ খুবই কম। আর আমরা যদি ভজকট পাকাই তাহলে ভুলচুরিতে আমাদের খবর আছে।

    এলিস আড়ষ্ট হয়ে গেল। তুমি বলতে চাইছ যে এটা ভালোর দিকে যাবে।

    আমি শ্রাগ করলাম।

    ব্যাপারটা মাথায় রেখ বেলা, তা না হলে হয় আমরা সারা নিউ ইয়র্কে ঘুরে মরব নতুবা দূর্গে ফিরে যাব।

    কী?

    তুমি তো জানো, যদি আমরা এ্যাডওয়াডের ব্যাপারে বেশি দেরি করে ফেলি…আমি তোমার কাছ থেকে কোন ধরনের ঝামেলা চাই না। তুমি কী বুঝতে পারছ?

    অবশ্যই এলিস।

    সে পেছনে সামান্য হেলান দিয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল, কোন সমস্যাই না।

    যথা আজ্ঞা। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

    সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করল।

    আমাকে এখন মনো সংযোগ করতে দাও। আমি চেষ্টা করছি সে কী ফন্দি আটছে সেটা জানতে।

    সে আমার কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে সিটে মাথা হেলান দিল এবং চোখজোড়া বন্ধ করল। দুহাত মুখের দুপাশে নিয়ে জোরে জোরে গাল ঘষতে লাগল।

    আমি গভীর বিস্ময়ে অনেকক্ষণ ধরে ওকে খেয়াল করতে লাগলাম। ক্রমশ সে আবেগশূন্য হয়ে পড়ছিল। এক সময় তার মুখ পাথরের মূর্তির মত হয়ে গেল। বেশ কয়েক মিনিট পার হল। ঠিক বুঝতে পারলাম না ও ঘুমিয়ে পড়ল কিনা? কী ঘটে চলেছে তাও ওকে জিজ্ঞেস করতে সাহসে কুলালো না।

    আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না। হতে পারে আমি ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভাগ্যবতী। হয়তোবা কোনভাবে এ্যাডওয়ার্ডকে বাঁচিয়ে আনতে পারব। কিন্তু আমি বোকার মত এটা ভাবছিলাম না যে ওকে বাঁচিয়ে আনা মানে ওর সাথে থাকতে পারা। আমি কোন কালে ব্যতিক্রম ছিলাম না। ওর এমন কোন কারণ থাকতে পারে না যে সে আমাকে এখনই পেতে চায়। তাকে দেখব এবং আবার হারাব…

    আমি সেই যন্ত্রণার বিরুদ্ধে লড়তে লাগলাম। তার জীবন রক্ষার মূল্য হিসাবে আমি এটা পেয়েছি। এটার মূল্য আমাকে পরিশোধ করতে হবে।

    তারা একবার আমাকে চলচ্চিত্র দেখিয়েছিল। আমার প্রতিবেশীর হেড ফোন ছিল। ছোট স্ক্রীনে অবয়বগুলি নড়ছিল চড়ছিল। কিন্তু আমি বলতে পারছিলাম না চলচ্চিত্রটা রোমান্সের ছিল নাকি ভূতের।

    একটা স্বর্গীয় অনুভূতির পরে প্লেন নিউইয়র্ক সিটির দিকে রওনা হল।

    এলিস আগের মতই মোহাবিষ্টের মত পড়ে রইল।

    এলিস, আমি শেষ পর্যন্ত বললাম। এলিস আমাদের যেতে হবে।

    আমি তার বাহু স্পর্শ করলাম।

    ধীরে ধীরে তার চোখ খুলে গেল। কয়েক মুহূর্তের জন্য সে এপাশ ওপাশ মাথাটা ঝাঁকিয়ে নিল।

    নতুন কিছু? অন্য পাশ থেকে লোকটা আমাদের কথা শুনছে কিনা দেখে নিয়ে সর্তকতার আমি তাকে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম।

    ঠিক তা নয়। সে নিঃশ্বাস ফেলার মত এমন স্বরে বলল যে আমি খুব কষ্টে তা বুঝতে পারলাম। ও আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। ও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে ও কী প্রশ্ন করতে পারে।

    যোগাযোগের জন্য, আমাদের অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, বসে বসে অপেক্ষা করার চেয়ে সেটা আরও ভাল। প্লেন আকাশে উড়লে সে আবারও আগের মত সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আমি ভীষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকলাম।

    আমি আমার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উপর খুব কৃতজ্ঞ ছিলাম। যা আমি বেশ কয়েক মাস চর্চা করেছিলাম। ভয়ানক সম্ভাবনার মধ্যে বাস করার চাইতে বরং এলিস যা বলছিল, আমি কোন সংগ্রামের সংকল্প করিনি। আমি মূল সমস্যাগুলোতে মনোসংযোগ করেছি। ঠিক যেমন ফিরে আসলে আমি যা চার্লিকে বলব। আর জ্যাকব? সে আমাকে কথা দিয়েছিল যে সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু সেটার কী কোন বাস্তব প্রয়োগ হবে? হয়তবা আমি টিকে থাকতে চাইনি, জানি না কী থেকে কী হয়ে গেল।

    এলিস আমার কাঁধ ঝাঁকানোর আরও পরে মনে হল কেউ আমাকে ঝাঁকাচ্ছে। বুঝতেই পারিনি যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

    বেলা, সে হিসহিসিয়ে বলল। ঘুমন্ত মানুষে পূর্ণ অন্ধকার কেবিনে তার গলার আওয়াজ অনেক উচ্চ স্বরের ছিল।

    আমি অবিন্যস্ত ছিলাম না। আবার এর জন্য প্রস্তুতও ছিলাম না।

    কী হল এমন?

    আমাদের দুজরে মাঝখানে রাখা পড়ার ল্যাম্পের নিস্তেজ আলোয়ও ওর চোখ দুটো ভীষণ উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল।

    কিছুই কী ঘটেনি? সে ভীষণ হেসে উঠল। ঠিকই আছে। তারা বিচার বিবেচনা করছে, এবং ঠিক করেছে তাকে না বলবে।

    ভলচুরি? আমি অস্পষ্ট স্বরে গুঙ্গিয়ে উঠলাম।

    অবশ্যই বেলা, দেখই না। আমি দেখতে পাচ্ছি তারা কী বলতে যাচ্ছে।

    আমাকে বল।

    এক কর্মচারী গুটি গুটি পায়ে আমাদের কাছে এগিয়ে এল। ভদ্র মহদয়া, আপনাদের কী আমি বালিশ দেব? আমাদের উচচ স্বরের যৌথ আলাপচারিতায় তার কর্কশ ফিসফিসানি ভর্ৎসনার মত লাগল।

    না, ধন্যবাদ। সে হাস্যোজ্জ্বলভাবে তার দিকে তাকাল। দুভাগ্যজনকই বলা যায়, ওর হাসিটা খুব সুন্দর। কর্মচারীটার এমনই ধাঁধা লেগে গিয়েছিল যে ফিরে যাওয়ার সময় হোঁচট খেল।

    বল আমাকে। আমার শ্বাস প্রশ্বাসও যেন স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার জোগার।

    সে আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, তারা ওর প্রতি খুবই আগ্রহী। ভাবছে ওর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো যায় কিনা? তারা তাদের সাথে থাকার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে।

    সে কী বলল?

    আমি এখনও সেটা দেখিনি, কিন্তু বাজি ধরে বলতে পারি যা দেখেছি তা সত্যি একেবারে রঙিন ছিল। সে অবজ্ঞার মত হাসল। এটাই মূলত প্রথম ভাল সংবাদ- প্রথম অর্জন। তারা চক্রান্ত করেছিল; সত্যিসত্যি ওকে মেরে ফেলতে চায় না ওরা অপচয়কারী। শব্দটা অরোই ব্যবহার করবে এবং সেটা হয়তবা তাকে আরো সৃষ্টিশীল হতে সাহায্য করবে। সে তাদের পরিকল্পনা থেকে যত দূরে থাকবে, ততই আমাদের জন্য। মঙ্গল।

    এটা আমাকে আশা জোগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না যে প্রশান্তি সে পাচ্ছে। এখনও অনেক পথ রয়েছে যা আমাদের ভীষণ দেরি করিয়ে দিতে পারে।

    এলিস?

    কী?

    আমি দ্বিধায় ভুগছি। তুমি কীভাবে এগুলো এত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ? অন্যান্য সময়েও তুমি সেগুলো অনেক দূর থেকে দেখতে পাও যখন তা ঘটছে না।

    তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। আমি যা ভাবছি সে আবার তা বুঝতে পারছে কী না। তা ভেবে মনে মনে একটু অবাক হলাম।

    এটা পরিষ্কার কারণ এটা ঘটতে যাচ্ছে। এবং বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই। আর আমি আসলেই মনোসংযোগ করছি। যেগুলো অনেক দূরের বিষয় সেগুলোও নিজে নিজে অতি দ্রুত ক্ষণিক চমকানোর মত দৃশ্যপটে আসে। আরো যে ব্যাপারটা, আমি আমার সমসাময়িকদের তোমার চাইতে আরও সহজে দেখতে পারি। এ্যাডওয়ার্ডকে দেখা আরও সহজ কারণ আমি…

    তুমি কী মাঝে মধ্যে আমাকে দেখ? আমি তাকে মনে করিয়ে দিতে চাইলাম।

    সে মাথা ঝাঁকাল, ঠিক স্পষ্ট না।

    আমি শ্বাস নিলাম। আমি সত্যিই আশা করি তুমি আমার ব্যাপারে সঠিক থাকবে। একেবারে শুরুতে, যখন তুমি প্রথমে আমার ব্যাপারে দেখেছিলে, এমনকি আমাদের সাক্ষাতের আগে…

    তুমি কী বলতে চাচ্ছ?

    তুমি দেখেছ যে আমিও তোমাদের একজন হতে যাচ্ছি। আমি দাঁতে দাঁত চেপে শব্দগুলো বললাম।

    সে মাথা নাড়ল। এটা সে সময়ে হলে একটা কথা ছিল।

    সে সময় হলে। আমি আবার বললাম।

    আসলে কী, বেলা… সে দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগতে লাগল এবং কিছু বানিয়ে বলার চেষ্টা করতে লাগল। সত্যি করে বলছি, আমি মনে করি যা ঘটে গেছে তা নিয়ে পরিহাস করে লাভ নেই। আমি নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য নিজের সাথে লড়ে যাচ্ছি।

    আমি বরফশীতল কাঠিন্যে ওর দিকে তাকালাম। তৎক্ষণাৎ আমার মন তার বলা শব্দের প্রতি প্রতিরোধ সৃষ্টি করল। সে যে নিজের মন পরিবর্তন করবে এই ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারি না।

    আমি কী তোমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছি? সে অবাক হল। আমি ভেবেছিলাম তুমি এগুলোই জানতে চাচ্ছ।

    হ্যাঁ। তাই চেয়েছি! শ্বাসরোধ হয়ে এল আমার। ওহ এলিস, এখনই তা কর! আমি তোমাকে অনেক সাহায্য করতে পারি- আমি তোমাকে থামিয়ে দিতে চাই না, কামড়ে দাও আমাকে! আমাকে কামড়ে দাও!

    ইশশ.. সে সাবধান করে দিল। কর্মচারীটা আমাদের দিকে লক্ষ্য করে আবার তাকাল। বাস্তববাদী হওয়ার চেষ্টা কর। সে ফিসফিসিয়ে বলল। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। আমাদের কালই চুরিতে নামতে হবে। ভেব না যে অন্যান্য যাত্রীরা এতে ভাল আচরণ করবে।

    আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। তুমি যদি সেটা এখনই না কর তাহলে তোমাকে তোমার মত পাল্টাতে হবে।

    না। সে ভ্রূকুটি করল। আমি মনে হয় তা করব না। সে খুবই রেগে যাবে, জানি না সে কী করতে কী করে?

    আমার হার্টবিট আরও দ্রুততর হল, কিছুই হবে না

    সে মৃদু হাসল, আমার ওপর তোমার অনেক বিশ্বাস বেলা। আমি নিশ্চিত না যে আমি সেটা করতে পারি। তোমাকে খুন করলে সম্ভবত আমি শেষ হয়ে যাব।

    আমি আমার সুযোগ নিতে চাই।

    তুমি এতটাই জটিল, মানুষ হওয়া সত্বেও।

    ধন্যবাদ।

    ভালই, যাই হোক সেটা অনেক প্রমাণ সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রথমে আমাদের আগামীকাল পর্যন্ত বাঁচতে হবে।

    আসল পয়েন্ট। কিন্তু অন্ততপক্ষে কিছু একটা তো আমরা আশা করতে পারি। যদি তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে এবং সে আমাকে হত্যা না করে তাহলে এ্যাডওয়ার্ড যে দুরত্বে যাক না কেন আমি তাকে অনুসরণ করতে পারব। আমি তাকে বিছিন্ন হতে দেব না। হতে পারে, যখন আমি সুন্দরী ও শক্তিশালী, সে হয়তো বিছিন্ন হবে না।

    ঘুমিয়ে পড়। সে তাড়া দিল। নতুন কিছু হলে আমি তোমাকে জাগাব।

    ঠিক আছে। আমি বিরক্তির সাথে বললাম। ঘুমিয়ে পড়াটা অবশ্য একটা ফালতু ব্যাপার হবে। এলিস সিটের ওপর পা তুলে বসল। দুহাতে পা জড়িয়ে ধরে মাথা হাঁটুতে ঠেকিয়ে সামনে পেছনে দোল খেতে লাগলে যেন সে মনোসংযোগ করছে।

    আমি আরাম করে সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলাম। ওকে দেখতে লাগলাম।

    কী ঘটছে? আমি বিড়বিড় করে বললাম।

    তারা তাকে না বলেছে। সে আস্তে করে বলল। আমি খেয়াল করলাম ওর সমস্ত উৎসাহ উবে গেছে।

    আকস্মিক ভয়ে আমার গলার কাছে যেন কথা আটকে গেছে। সে কী করতে যাচ্ছে?

    প্রথমে খুব বিশৃঙ্খলা ছিল। আমি কেবল কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম, সে তার পরিকল্পনা খুব দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলেছে।

    কী ধরনের পরিকল্পনা? আমি চেপে ধরলাম।

    সেখানে খুব খারাপ সময় যাচ্ছিল। সে ফিসফিসিয়ে বলল, সে শিকারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।

    শহরের মধ্যেই, সে বলল।

    সে কার্লিসলকে হতাশ করতে চায়নি আমি বিড়বিড় করে বললাম।

    এটাই শেষ নয়।

    সম্ভবত, সে একমত হল।

    সেরকম সময় পাওয়া যাবে কী? যখন আমি কথা বলছি তখন শক্তির পরিবর্তন হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারলাম প্লেন কৌণিকভাবে নিচের দিকে যাচ্ছে।

    আমিও সেরকম আশা করছি যদি সে তার নতুন সিদ্ধান্তে অটল থাকে, হতেও পারে।

    কী হতে পারে?

    সে ব্যাপারটাকে সাধারণই রাখছে। সূর্যস্নানে যাওয়ার মতই।

    কেবল রোদ্রে হেঁটে আসা। ব্যাস এটাই।

    এটাই যথেষ্ট। এ্যাডওয়ার্ডের প্রতিচ্ছবি…যেন তার চামড়া মিলিয়ন হীরার কণা এখনও জ্বলজ্বল করছে আমার স্মৃতিতে। কোন মানুষ সারাজীবনেও ভুলবে না যে সে দেখেছে। ভলচুরি সম্ভবত এটা সহ্য করবে না। যদি না তারা তাদের শহরকে অরক্ষিত রাখতে চায়।

    আমি জানালা থেকে বয়ে আসা ক্ষীণ ধারার ধুসর আলোর দিকে তাকালাম। আমাদের অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি ফিসফিসিয়ে বললাম, প্রচণ্ড কষ্টে আমার গলার কাছটা বন্ধ হয়ে এল।

    সে মাথা নাড়ল। ঠিক এ সময়, সে অতি নাটকীয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। সে চাচ্ছে যতটা সম্ভব বেশি দর্শক যাতে করে সে সময় দালানের নিচের মূল ভবনটা বেছে নিতে পারে। সেখানের দেয়ালগুলো উঁচু। সে সূর্য ঠিক মাথার ওপর ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

    তাহলে দুপুর পর্যন্ত সময় আছে?

    যদি আমরা ভাগ্যবান হয়ে থাকি এবং যদি সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।

    পাইলট ইন্টারকমে ঘোষণা করল, প্রথমে ফ্রেঞ্চে এবং পরে ইংরেজিতে, আমাদের। আসন্ন অবতরণ হতে যাচ্ছে। সিট বেল্ট এর বাতিটা জ্বলে উঠল।

    ভলতেরা থেকে ফ্লোরেন্স কত দূর?

    সেটা নির্ভর করছে কত দ্রুত তুমি গাড়ি চালিয়ে যেতে পারবে… বেলা।

    তাই?

    সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল, কীভাবে তুমি গ্রান্ড থেফট অটোকে চালিয়ে নাও?

    .

    আমি যেখানে পায়চারি করছিলাম তার থেকে কয়েক ফিট দূরে একটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের পোর্শে গাড়ি থেমে ছিল। এটার পেছনে সিলভার প্লেটে টারবো শব্দটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। আমার পাশে যারা ছিল তারা বিমান বন্দরের সাইড ওয়াকের দিকে কৌতূহলে ভিড় জমিয়েছিল।

    তাড়াতাড়ি, বেলা! যাত্রী ছাইনিতে এলিস অধৈর্য হয়ে চিৎকার করল।

    আমি দরজার কাছে দৌড়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার এমন অনুভূতি হল যেন আমি মাথা জোড়া কালো মোজা পরে আছি।

    ওহে এলিস আমি অভিযোগ জানালাম। তুমি কি চুরি করার মত আর কোন গাড়ি পাওনি খুঁজে পাও নি?

    গাড়ির অভ্যন্তরীন সবকিছু কালো চামড়ায় মোড়া, এমন কি জানালার কাঁচও কালো, আমার মনে হচ্ছিল যেন এখন রাত।

    এলিস ততক্ষণে বিমানবন্দরের ঘন ট্রাফিকের মধ্যেও স্পিড তুলে দিয়েছে- সঙ্কীর্ণ জায়গায় দুটো গাড়ির মধ্যে গড়িয়ে যেতেই আমি সিট বেল্ট বাধার জন্য গুঙ্গিয়ে উঠলাম।

    আসল কথা হল এই যে, সে বলল, আমি যে এত দ্রুতগামী একটা গাড়ি চুরি করতে পারব তা কল্পনাও করিনি। আমরা আসলেই ভাগ্যবতী।

    আমি নিশ্চিত রোডব্লকের ক্ষেত্রে এটা খুবই আরামদায়ক হবে।

    এলিস খিলখিল করে হেসে উঠল, আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পার বেলা। রোডব্লকে যদি কেউ থাকে তবে সে আমার পেছনেই থাকবে। সে তার কথা প্রমাণ করার জন্য গ্যাসে চাপ বাড়াল।

    আমি জানালার বাইরে তাকিয়েছিলাম। সম্ভবত ফ্লোরেন্স শহর এবং তাসান ভূখণ্ডের দৃশ্য গাড়ির গতির সাথে ঝাপসা দেখাচ্ছিল। এটাই আমার বাইরে কোথাও প্রথম ভ্রমণ এবং খুব সম্ভবত শেষও। এলিসের ড্রাইভিং.আমাকে ভয় পাইয়ে দিল। ঘটনাক্রমে, আমি জানি ওর হুইলের সামনে বসাকে আমি কতটুকু বিশ্বাস করি। আতঙ্কে আমি অনেক বেশি জর্জরিত হচ্ছিলাম। আমি দূরের পাহাড় আর দেয়াল ঘেরা শহর দেখছিলাম, যেগুলোকে দূর থেকে দূর্গ বলে মনে হচ্ছিল।

    তুমি কী আর নতুন কিছু দেখছ?

    এখানে কিছু ঘটতে চলেছে, এলিস বিড়বিড় করে বলল। কোন ধরনের উৎসব। রাস্তাঘাট সব লোকে লোকারণ্য এবং সবখানে লাল পতাকা। আজ কয় তারিখ?

    আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না। হতে পারে উনিশ তারিখ।

    হয়েছে, ঘটল তো কাণ্ড। আজ সেইন্ট মারকাস ডে।

    তার মানে কি?

    সে নীরবে মুখ টিপে হাসল, এই শহরে প্রতিবছর এইদিন উদযাপন করে আসছে। কিংবদন্তি বলে, একটি খিস্ট্রান মিশনারীতে মারকাস নামের এক ফাদার- ভলচুরির মারকাস, প্রকৃতপক্ষে পনের হাজার বছর আগে ভলচুরি থেকে সমস্ত ভ্যাম্পায়ার তাড়িয়ে দিয়েছিল। গল্পটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন তিনি রোমানিয়ায় ভ্যাম্পায়ার ঝুঁজকে তাড়াতে গিয়ে শহীদ হন। অবশ্যই সেটা গাঁজাখুরি- সে কখনই শহর ছেড়ে যায় নি। কিন্তু ক্রস আর রসুনের মত কুসংস্কারগুলো কোত্থেকে এল। ফাদার মারকাস সেগুলো বেশ ভালভাবেই ব্যবহার করেছিলেন। আর ভ্যাম্পায়াররা ভলতেরাতে তেমন সুবিধা করতে পারেনি, তার মানে সেগুলো কাজ করেছিল। এলিসের হাসি ছিল বিদ্রুপাত্মক। এটা ক্রমে শহরের একটা উৎসবে পরিণত হল এবং বলতে গেলে পুলিশের সাহায্যের অনুমোদন নিয়েই। ভলতেরা আশ্চর্যজনকভাবেই নিরাপদ শহর। পুলিশরা এটার ক্রেডিট পায়।

    আমি বুঝতে পারলাম কাণ্ড ঘটার ব্যাপারটা বলতে এলিস কী বুঝিয়েছে। সেটা খুব খুশির কোন ব্যাপার হবে না যদি এ্যাডওয়ার্ড সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে বসে, তাদের সেন্ট মার্কাস দিবসে, তারা করবে কি?

    সে মাথা নাড়ল। তার অভিব্যক্তি ব্যঙ্গাত্বক। না। তারা খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে।

    আমি বাইরের দিকে তাকালাম। নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে এমনভাবে চেপে ধরলাম সেগুলো আমার নিচের ঠোঁটের চামড়ার উপর কেটে বসে গেল যেন। রক্তাক্ত হওয়া এই মুহূর্তের সবচেয়ে ভাল আইডিয়া নয়।

    ধুসর বিবর্ণ আকাশে সুর্য ভয়ানক উচ্চতায় উঠে বসে আছে।

    সে কি এখনও বিকালের জন্য পরিকল্পনা করছে? আমি পরখ করার জন্য বললাম।

    হা। সে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং তারা তার জন্য অপেক্ষা করছে।

    তাহলে আমাকে বল এখন আমি কি করতে পারি?

    সে তার চোখ বাতাস বওয়া রাস্তার দিকেই রাখল। স্পিডোমিটারের গতির কাটা তার সবোর্চ সীমা স্পর্শ করতে যাচ্ছে।

    তোমার কোন কিছুই করার নেই। সে শুধু তোমাকে দেখতে চাইছে। সে আলোতে ঘোরাফেরা করার আগে। এবং সে তোমাকে দেখতে চাইছে আমাকে দেখার আগে।

    আমরা কীভাবে সেটা নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি?

    একটা ছোট রেসিং কার আমাদের পিছন দিকে আসছে। এলিস সেটার দিকে দেখল।

    আমি তোমাকে যতটা সম্ভব কাছাকাছি পেতে যাচ্ছি। তারপর তুমি দৌড়াতে থাকবে সেদিকে যেদিকে আমি নির্দেশ করি।

    আমি মাথা নোয়ালাম।

    কোন ট্রিপের চেষ্টা করো না। সে যোগ করল। আমাদের আজকের দিনে সেটা করার সময় নেই।

    আমি গুঙিয়ে উঠলাম। সেটা শুধু আমার মতই হতে পারে। সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। গোটা দুনিয়া ধ্বংস করে দেবে। এক মুহূর্তে।

    সূর্য আকাশের উপরের দিকে উঠতে শুরু করল যখন এলিস এটার বিপরীতে চালাতে লাগল। এটা খুবই উজ্বল। সেটা আমাকে আতংকিত করে তুলল। হতে পারে সর্বোপরি আজ অপরাহ্নের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাও পড়তে পারে।

    সেখানে। এলিস বেপরোয়াভাবে বলল, কাছাকাছি পাহাড়ের উপরের দুর্গ শহরের দিকে নির্দেশ করে।

    আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। এই প্রথমবারের মত নতুন এক ধরনের ভয়ের অনুভূতি হলো। গতকাল সকালের পর থেকে প্রতি মিনিটে এটা মনে হচ্ছে এক সপ্তাহ আগের– যখন এলিস তার নাম বলেছিল। সিঁড়ির শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে। সেখানে একটা মাত্র ভয় ছিল। এখনও পর্যন্ত, আমি প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক সিয়েনা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছি। পাহাড়ের শেষ মাথার উপর টাওয়ার মুকুটের মত দাঁড়িয়ে আছে। আমি অন্যরকম অনুভব করলাম, অনেক বেশি স্বার্থপর প্রকৃতির, ভয়ের রোমাঞ্চ আমার শরীরের ভেতরে বয়ে গেল।

    আমি মনে করলাম শহরটা খুব সুন্দর। এটা প্রকৃতপক্ষেই আমাকে আতংকিত করে তুলেছে।

    ভলতেরা। এলিস শান্ত বরফ শীতল কণ্ঠে ঘোষণা করল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.