Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ০৩. নিজেকে জঘন্য লাগছিল

    ০৩.

    সকালে নিজেকে জঘন্য লাগছিল। রাতে আমার ভাল ঘুম হয়নি। হাতের ব্যথা বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছিল। আমার মাথা ব্যথা করছিল। আমি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। এ্যাডওয়ার্ডের মুখ বেশ শান্তই ছিল। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি যেন কোন সুদূরে। সে আমার কপালে দ্রুত চুমু খেলো। তারপর জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল। সেই সময়ে আমি অচেতন অবস্থায় ছিলাম ভেবে ভীত হয়ে পড়লাম। আমার অচেতন অবস্থায় এ্যাডওয়ার্ড ভাল মন্দ চিন্তা করে কাটিয়েছে। দুশ্চিন্তা আমার মাথা ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

    অন্যান্য দিনের মতই এ্যাডওয়ার্ড স্কুলে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তখনও তার মুখে অন্য কিছু ছিল। অন্যরকম কিছু। সে তার চোখের আড়ালে কিছু লুকাতে চাইছিল। আমি এটা নিশ্চিত ছিলাম না। এটা আমাকে ভীত করে তুলেছিল। আমি গতরাতের কথা মনে করতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমি নিশ্চিত এটা এড়ানো আরো বেশি খারাপ।

    সে আমার গাড়ির দরজা আমার জন্য খুলে ধরল।

    তুমি এখন কেমন বোধ করছ?

    পুরোপুরি সুস্থ। আমি মিথ্যে করে বললাম। দরজার লাগানো কচকচানির শব্দ আমার মাথার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

    আমরা নিরবে হাঁটছিলাম। করার মত অনেক প্রশ্নই আমার মনে আসছিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রশ্নই পরে করার জন্য মূলতবি রাখলাম। কারণ প্রশ্নগুলোর সাথে এলিস জড়িত। আজ সকালে জেসপার কেমন আছে? আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম তারা কি বলছিল? রোসালি কি বলেছিল? এবং তার অদ্ভুত দূরদৃষ্টি দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি ঘটতে দেখেছিল? সে কি এ্যাডওয়ার্ডের চিন্তা ধরতে পেরেছিল? কেন এ্যাডওয়ার্ড এতটা বিপ্ন ছিল?

    সকালের সময়টা খুব ধীরে ধীরে অতিবাহিত হচ্ছিল। আমি এলিসকে দেখার জন্য অধৈর্য হয়ে উঠছিলাম। যদিও এ্যাডওয়ার্ডের উপস্থিতিতে আমি এলিসের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না। এ্যাডওয়ার্ডকে ভীষণ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। মাঝে মাঝে সে আমার হাতের অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছিল। আমি মিথ্যে বলছিলাম।

    এলিস সাধারণত লাঞ্চের সময় আমাদের সাথে বসে। সে আমার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। কিন্তু সে সেখানকার টেবিলে ছিল না। অন্যদিনের মত একটা ট্রেতে খাবার নিয়ে না খেয়ে অপেক্ষাও করছিল না।

    এ্যাডওয়ার্ড তার অনুপস্থিতি সম্বন্ধে কিছুই বলল না। আমি বিস্মিত হলাম। হয়তো আজ তার ক্লাস দেরিতে শুরু হবে। কিন্তু আমি তো কনার আর বেনকেও দেখলাম। তারাও ওর সাথে একই ফ্রেঞ্চ ক্লাসে।

    এলিস কোথায়? আমি উদ্বিগ্নতার সাথে এ্যাডওয়ার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম।

    সে বারের দিকে তাকাতে তাকাতে বলল, সে জেসপারের সাথে।

    জেসপার ঠিক আছে তো?

    সে কিছু সময়ের জন্য বাইরে গিয়েছে।

    কী? কোথায়?

    এ্যাডওয়ার্ড কাঁধ ঝাঁকাল। নির্দিষ্ট কোন জায়গায় নয়।

    আর এলিসও কী তার সাথে? আমি কিছুটা শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলাম। অবশ্য এটা কোন ব্যাপার ছিল না। যদি জেসপার চায় তো সে তার সাথে যেতেই পারে।

    হ্যাঁ। সেও তার সাথে গিয়েছে। সে তাকে ডেনালি নিয়ে গেছে।

    ডেনালি নির্দিষ্ট আরেকটা ভ্যাম্পায়ারদের দল। কুলিনের মতই ভালদের একটি। তারা- সেখানে বাস করে। তানিয়া আর তার পরিবার। আমি তাদের কথা প্রায়ই শুনি। এ্যাডওয়ার্ড গত শীতে তাদের ওখানে চলে গিয়েছিল। ফর্কে আমার কারণে তার থাকাটা বেশ কঠিন ছিল। জেমস কোভেনের সবচেয়ে সুসভ্য লরেনও সেখানে গিয়েছিল। কে জানে, এটাই হয়তো জেসপারকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

    আমি ঢোক গিললাম। আমার কণ্ঠস্বর বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসছিল। নিজেকে দোষী ভেবে আমার মাথা নত হয়ে আসছিল। আমিই তাদেরকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। রোসালি এবং এমেটের মতই। তাদের আমি কাছে প্লেগের বীজাণুর মত।

    তোমার হাত কি তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে? আমাকে যন্ত্রণাকাতর হতে দেখেই বোধহয় সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসল।

    কে আমার এই হতভাগা হাত নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে? আমি বিরক্তিকে বিড়বিড় করলাম।

    সে উত্তর দিল না। আমি টেবিলের উপর মাথা রাখলাম।

    দিনের শেষের দিকে, নিস্তব্ধতা ভয়ংকর অসহ্য হয়ে দেখা দিল। আমি নিজেই আগে থেকে এটা ভঙ্গ করতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু আবার আমিই চাইছিলাম প্রথমে কথা বলতে।

    তুমি কী আজ শেষ রাতের দিকে আসবে? সে আমার পাশাপাশি হাঁটতে থাকার সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম। সে নীরবে আমার মোটরলরির দিকে হাঁটছিল। সে সবসময়ই এ পর্যন্ত আসে।

    শেষ রাতে?

    তার বিস্মিত অবস্থা দেখে আমি বেশ মজা পেলাম। আমাকে কাজে যেতে হবে। মিসেস নিউটার সাথে আমার গত পরশু বন্ধের ব্যাপারে কথা বলতে হবে।

    ওহ। সে বিড়বিড় করে বলল।

    তাহলে, আমি যখন বাড়িতে থাকব তখন তুমি আসবে। ঠিক আছে? আমি হঠাৎ এই বিষয়টাকে অপছন্দ করতে শুরু করলাম।

    যদি তুমি আমাকে চাও তবে।

    আমি সবসময় তোমাকে চাই। আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম।

    আমি আশা করেছিলাম সে হেসে উঠবে। অথবা আমার কথায় যেভাবেই হোক প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

    ঠিক আছে, তাহলে। সে নিরাসক্ত কণ্ঠে বলল।

    সে দরজা বন্ধ করে দেয়ার আগে আমার কপালে আবার চুমু খেল। তারপর সে ধীরে ধীরে তার গাড়ির দিকে গেল।

    আমি পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলাম। কতক্ষণে নিউটনের কাছে পৌঁছাব এটা নিয়ে আমি আসলেই চিন্তায় ছিলাম।

    তার কিছুটা সময় দরকার, আমি নিজেকে বললাম। ব্যাপারটা সে কাটিয়ে উঠবে। হতে পারে সে দুঃখিত, কারণ তার পরিবার বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এলিস ও জেসপার তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। রোসালি ও এমেটও। যদি এটা কোন সাহায্য করত, আমি নদীর তীরে বিশাল সাদা বাড়িটা থেকে দূরে থাকতাম। আমি সেদিকে কখনও পা বাড়াতাম না। সেটা কোন ব্যাপার নয়। আমি এখনও স্কুলে এলিসকে দেখতে চাই। সে তার স্কুলের জন্যই ফিরে আসবে, ঠিক এবং সে যেভাবেই হোক আমার সাথেই থাকবে। সে কোনভাবে চার্লির অনুভূতিতে আঘাত করতে চাইবে না।

    কোন সন্দেহ নেই আমি কার্লের ইমাজেন্সি রুম থেকে দূরে থাকতে চাই।

    মোটের উপর, গতরাতে যেটা ঘটেছে সেটা তেমন কিছুই না। খারাপ কিছুই ঘটেনি। আমি পড়ে গিয়েছিলাম-সেটা আমার জীবনের ঘটনা। তাছাড়া গতবারের বসন্তের সাথে তুলনা করলে এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা নয়। জেমস আমাকে প্রায় শেষ করে ফেলেছিল। রক্তশূন্যতার কারণে আমাকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যেতে হয়েছিল। এবং তখনও পর্যন্ত এ্যাডওয়ার্ড হাসপাতালের সবকিছু নিজে সামলেছিল। সেই এক সপ্তাহ। এইবারে, তার কোন শত্রু ছিল না, যার থেকে সে আমাকে রক্ষা করতে পারত? কারণ সে ছিল তার ভাই।

    এটাই সবচেয়ে ভাল হতো যদি তার পরিবার বিছিন্ন হওয়ার আগেই সে আমাকে এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যেত পারত। কারণ আমি কিছুটা বিষণ্ণতার মধ্যে বড় হচ্ছিলাম। এ্যাডওয়ার্ড যদি শুধু স্কুলের শেষ বর্ষে থাকত, চার্লি কোন ঝামেলা করত না। আমরা কলেজে যেতে পারতাম। অথবা আমরা কি করছি তা নিয়ে ভান করতে পারতাম। যেমনটি রোসালি ও এমেট এই বছর করছে। নিশ্চিত এ্যাডওয়ার্ড একবছর অপেক্ষা করবে। এক বছর অমর হয়ে থাকবে? আমার কাছে তেমনটি মনে হচ্ছে না।

    মোটরলরি থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে চললাম। তারপর দোকানের দিকে গেলাম।

    মাইক নিউটন কাজ করছিল। আমি ভেতরে ঢুকতেই সে হাসল এবং আমার দিকে এগিয়ে এল। আমি আমার ভেস্ট নিলাম এবং তার দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ালাম। আমি এ্যাডওয়ার্ডকে নিয়ে কিছু ঘটনার কথা চিন্তা করছিলাম।

    ঠিক তখনই মাইক আমার জগতে ঢুকে পড়ল। তোমার জন্মদিন কেমন কাটল?

    ওহ! আমি বিড়বিড় করে বললাম, আমি খুশি যে এটা শেষ হয়েছে।

    মাইক দূর থেকেই তার চোখের কোণা দিয়ে এমনভাবে দেখতে থাকে যেন আমি পাগল-ছাগল কিছু একটা।

    আমি এ্যাডওয়ার্ডকে আবার দেখতে চাইছিলাম। দোয়া করছিলাম যেন সে এগুলো কাটিয়ে ওঠে। এসব কিছুই না। আমি নিজেকে বারবার এটা বলছিলাম। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

    রাস্তায় বের হয়ে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দেখলাম এ্যাডওয়ার্ডের রুপালি রঙের গাড়িটা আমাদের বাড়ির সামনে পার্ক করা। ঘটনাগুলো একইভাবে ঘটতে চলেছে দেখে আমি বিরক্ত হলাম।

    আমি তাড়াতাড়ি সামনের দরজার দিকে গেলাম। পুরোপুরি ভেতরে ঢোকার আগেই ডাক দিলাম।

    বাবা? এ্যাডওয়ার্ড?

    ডাক দেয়ার সময় ভেতরের রুম থেকে ইএসপিএনের খেলার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।

    আমি এখানে। চার্লি উত্তর দিলেন।

    আমি আমার রেইনকোট এক কোণায় ঝুলিয়ে রাখলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড আর্মচেয়ারে বসেছিল। বাবা বসেছিলেন সোফায়। দুজনের চোখ টিভি পর্দায়। বাবার দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক। এ্যাডওয়ার্ডের নয়।

    হাই। আমি দুর্বল গলায় বললাম।

    হেই বেলা বাবা টিভি পর্দা থেকে চোখ না সরিয়েই উত্তর দিলেন। আমরা কেবল ঠাণ্ডা পিজ্জা খেয়েছি। আমার মনে হয় এখনও টেবিলের উপর ওটা আছে।

    ঠিক আছে।

    আমি দরজাপথে অপেক্ষা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত, এ্যাডওয়ার্ড আমার দিকে তাকিয়ে ভদ্রভাবে হাসি দিল। আমি তোমার কিছুক্ষণ আগে এসেছি। সে বলল। তার চোখ টিভি পর্দা থেকে সরে এসেছে।

    আমি মিনিট খানিক তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। শকড। কেউ সেটা লক্ষ্য করল না। আমি কিছু একটা অনুভব করছিলাম। ভয়ের ব্যাপারই সম্ভবত। যেটা আমার বুকের ভেতরে বেড়ে উঠছিল। আমি কিচেনের দিকে পালিয়ে বাঁচলাম।

    পিৎজা খাওয়ার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখালাম না। দুপা উপরে তুলে চেয়ারে বসলাম। হাত পায়ের উপর রাখলাম। কিছু একটা ভুল হচ্ছে। হতে পারে আমি যা ভাবছি সেটাই ভুল। টিভি থেকে শব্দই আসছে।

    আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলাম। সবচেয়ে খারাপ কি ঘটতে পারে? আমি চমকে উঠলাম। এটা আমার জন্য মারাত্বক ভুল প্রশ্ন। কেননা আমার একটা খারাপ সময় যাচ্ছে এবং আমি তার ভেতরই আছি।

    ঠিক আছে। আমি আবার ভাবলাম। সবচেয়ে খারাপ কি নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারি? আমি এই প্রশ্নটা বারবার করতে পছন্দ করি না। কিন্তু আমি ভাবছিলাম এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই আজ আমাকে যেতে হবে।

    এ্যাডওয়ার্ডের পরিবার থেকে দূরে থাকতে হবে। অবশ্যই সে চাইবে না এলিস তাদের থেকে বিছিন্ন হয়ে যাক। কিন্তু যদি জেসপার সীমা অতিক্রম করে, তাহলে তার সাথে আমার আরো কম সময় মেশা উচিত। আমি মাথা নাড়লাম–আমি সেটা পারব না।

    অথবা অনেক দূরে কোথাও চলে যাওয়া। হতে পারে সে স্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেতে চাইবে না। কে জানে, হতে পারে সে এখনই হয়তো যেতে চাইবে।

    আমার সামনে, টেবিলের উপরে, চার্লি ও রেনের দেয়া উপহারটা আছে। সেটা আমি রেখে গিয়েছিলাম। ক্যামেরাটা দিয়ে কুলিনদের পরিবারের ছবি তোলার ফুরসত পাইনি। আমি আমার মায়ের দেয়া স্ট্র্যাপবুকের উপরের কভারে হাত বুলালাম। মায়ের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। যেভাবে হোক, এত দীর্ঘ সময় তাকে ছাড়া বাস করা আমার কাছে বিচ্ছেদ ছাড়া আর কিছুই না। চার্লি সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে এখানে চলে এসেছে। তারা দুজনেই এত কষ্ট পেয়েছে….

    জানি, আমি যে পথ পছন্দ করেছি সেটা আমার জন্য কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আসলে, আমি ভাবছিলাম সবেচেয়ে খারাপ দৃশ্যটি যে খারাপ অবস্থার মধ্যে আমি বর্তমানে বাস করছি।

    আমি আবার স্ট্র্যাপবুকটা হাতে নিলাম। উপরের পাতা উল্টালাম। ভেতরে ছবি রাখার এ্যালবাম। এমন হলে মন্দ হয় না আমার যা কিছু ঘটে চলেছে তার সব ছবি তুলে এখানে সেটে দিলাম। এটা নিয়েও আমি নিজের ভেতরে দ্বন্দ্ব অনুভব করছিলাম।

    আমি ক্যামেরাটা হাতে তুলে নিলাম। প্রথম ছবিটাতেই বিস্ময় প্রকাশ করলাম। এটা কি মূল ছবির কাছাকাছি কিছু এসেছে? আমার সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা ছিল না যে একটা ফাঁকা থাকবে। আমি মুখে চুকচুক শব্দ করলাম। তার গতরাতের উচ্ছল হাসির কথা চিন্তা করলাম। সবকিছু এত পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এত এলোমেলোভাবে। ব্যাপারটা মনে পড়তেই আমি কিছুটা অসুস্থবোধ করলাম। মনে হচ্ছিল, আমি উঁচু কোন একটা কিনারে দাঁড়িয়ে আছি। এরপর চলার আর কোন পথ নেই, নেই পেছনোরও পথ।

    আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না। আমি ক্যামেরাটা নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম।

    আমার রুমের ভেতরে তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। মা থাকার সময় যেমনটি ছিল তেমনটি আছে। দেয়ালটা এখনও হালকা নীল রঙের। জানালার সামনে সেই একই হলুদ রঙের পর্দা। সেখানে একটা বিছানা আছে। দাদীমার উপহার দেয়া সেই বালিশটাও সেখানে।

    কোন কারণ ছাড়াই আমি আমার রুমের ছবি তুললাম। আজ রাতে আমার করার মত তেমন কিছু নেই। বাইরে গাঢ় অন্ধকার। আমার অনুভূতিগুলো ধীরে ধীরে অদ্ভুত রুপ নিচ্ছিল। সবকিছু বেশ জটিল হয়ে যাচ্ছিল। ফর্ক ছেড়ে যাওয়ার আগে ফর্ক সম্বন্ধে সবকিছু রেকর্ড করে রাখা উচিত।

    পরিবর্তনটা আসছিল। আমি এটাই অনুভব করতে পারছিলাম। এটা কোন আরামদায়ক অনুভূতি ছিল না। বেশ তো ছিল জীবনটা একভাবে কেটে যাচ্ছিল।

    আমি নিচে আসার আগে বেশ সময় নিলাম। হাতে ক্যামেরা। পেটের মধ্যে গুড়গুড়ানির মত অস্বস্তিকর অবস্থাকে পাত্তা না দিতে চেষ্টা করলাম। আমি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকাতে চাচ্ছিলাম না। সম্ভবত সে উদ্বিগ্ন ছিল। আমাকে বলেছিল তার আপসেট অবস্থার কথা। আমি তার প্রশ্নের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম।

    আমি ওদের দিকে আসতে আসতে ক্যামেরা সেট করে ফেললাম। আমি নিশ্চিত এ্যাডওয়ার্ডকে বিস্মিত অবস্থায় ধরতে পারব। কিন্তু সে এদিকে তাকাল না। আমার পেটের মধ্যে অস্বস্তিকর কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করছিলাম। আমি সেটা উপেক্ষা করে ছবি নিলাম।

    তারা দুজনেই তখন আমার দিকে তাকাল। চার্লি ভ্রু কুঁচকালেন। এ্যাডওয়ার্ডের মুখ অনুভূতিশূন্য।

    বেলা তুমি কি করছ? চার্লি অভিযোগের সুরে বললেন।

    ওহ, এদিকে এসো। আমি হাসির ভান করলাম। আমি সোফার সামনে চার্লির পায়ের কাছে মেঝেতে বসে পড়লাম। তুমি জানো মা আমাকে শীঘই ডেকে জিজ্ঞেস করবেন আমার উপহার ব্যবহার করেছি কিনা। আমি তার অন্তরে আঘাত দেয়ার আগেই এটা নিয়ে কাজ করছি।

    কেন তুমি আমার ছবি তুলছ তাহলে? সে জিজ্ঞেস করল।

    কারণ তুমি খুবই হ্যান্ডসাম। আমি জবাব দিলাম। এটাকে হাল্কাভাবে নিয়ে অবশ্য আরেকটা কারণও আছে, তুমি যেহেতু আমার জন্য ক্যামেরা এনেছে। কাজেই তুমিই আমার বিষয় হতে বাধ্য।

    সে বোকার মত কিছু একটা নিয়ে বিড়বিড় করল।

    হেই এ্যাডওয়ার্ড আমি দূরত্ব রেখেই বললাম। আমার আর বাবার একসাথে। একটা ছবি নাও তো।

    আমি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে ক্যামেরা ছুঁড়ে দিলাম। ক্যামেরা আরেকটু হলে তার চোখে লাগত। সে সাবধানে চোখ এড়িয়ে ক্যামেরা ধরে ফেলল।

    আমি চার্লির মুখের কাছে সোফার হাতলে বসে পড়লাম। চার্লি শ্বাস নিলেন।

    একটু হাস না, বেলা এ্যাডওয়ার্ড বিড়বিড় করে বলল।

    আমি সুন্দরভাবে হাসার চেষ্টা করলাম। ক্যামেরা আলোর ঝলকানি দিল।

    এখন তোমাদের ছবি আমাকে তুলতে দাও। চার্লি উপদেশ দিলেন। আমি জানি সে নিজের উপর থেকে আমাদের মনোযোগ সরাতে চাচ্ছে।

    এ্যাডওয়ার্ড উঠে দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে ক্যামেরাটা তার দিকে ছুঁড়ে দিল।

    আমি এ্যাডওয়ার্ডের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গেলাম। আয়োজনটা সাধারণ কিন্তু আমার কাছে অদ্ভুত মনে হলো। সে তার একহাত আলতো করে আমার কাঁধে রাখল। আর আমার হাত তার কোমরে খুব নিশ্চয়তার সাথে রাখলাম। আমি চাইছিলাম তার মুখের দিকে তাকাতে। কিন্তু আমি সেটা নিয়ে ভীত ছিলাম।

    হাসো বেলা চার্লি আমাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন।

    আমি বড় করে শ্বাস নিয়ে হাসলাম। মালো চোখ ধাঁধিয়ে দিল।

    আজ রাতের জন্য অনেক ছবি তোলা হয়েছে। চার্লি বললেন। তিনি ক্যামেরাটা সোফার কুশনের উপর রেখে দিলেন। তুমি আজই সমস্ত রিল খরচ করে ফেলবে নাকি?

    এ্যাওয়ার্ড তার হাত আমার কাঁধ থেকে সরাল। খুব সাবধানে আমার হাত সরিয়ে দিল। সে আবার আর্মচেয়ারে বসল।

    আমি দ্বিধান্বিত। তারপর আবার সোফায় গিয়ে বসলাম। আমি হঠাৎ এতটা ভীত হয়ে পড়লাম যে আমার হাত কাঁপতে লাগল। আমি হাতের কাঁপুনি লুকানোর জন্য পেটের উপর হাত চেপে ধরলাম। আমার থুতনি হাঁটুর মাঝে দিয়ে টিভির দিকে মনোযোগী হলাম। যদিও আমি কিছুই দেখছিলাম না।

    শো শেষ হলো। আমি এক ইঞ্চিও নড়লাম না। চোখের কোণা দিয়ে দেখলাম এ্যাডওয়ার্ড উঠে দাঁড়াল।

    আমি এর চেয়ে বাড়ি চলে যাই। সে বলল।

    চার্লি বিজ্ঞাপন থেকে চোখ সরালেন না। আবার দেখা হবে।

    আমার পা যেন অবশ হয়ে গেছে। আমি বসা থেকে উঠতে যেয়ে জমে গেলাম। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম। দেখলাম এ্যাডওয়ার্ড সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। সে সরাসরি তার গাড়ির কাছে চলে গেল।

    তুমি কি থাকবে? আমি জিজ্ঞেস করছিলাম। ভেবেছিলাম গলা দিয়ে কথা বের হবে না।

    আমি তার উত্তর জানতাম। সেটাই আমি আশা করছিলাম। কাজেই এটা আমাকে খুব আঘাত করল না।

    আজ রাতে নয়।

    কি কারণে তা আর জিজ্ঞাসা করলাম না।

    সে তার গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নড়াচড়া করছিলাম না। আমি তেমনভাবে লক্ষ্য করলাম না যে তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি অপেক্ষা করছিলাম। জানতাম না কিসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার পেছনের দরজা খুলে না যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলাম।

    বেলা তুমি কি করছ? চার্লি জিজ্ঞেস করলেন। আমাকে একাকী বৃষ্টির ফোঁটার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলেন।

    কিছুই না। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। তারপর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

    দীর্ঘ একটা রাত। বিশ্রামের জন্য খুব কম সময় পেলাম।

    .

    আমার জানালা দিয়ে ধূসর বিবর্ণ আলো বিছানায় এসে পড়তেই উঠে পড়লাম। আমি যন্ত্রের মত স্কুলের ড্রেস পরে নিলাম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ উজ্জ্বল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি এক বাটি সুপ খেতে খেতে দেখলাম বাইরে ছবি তোলার জন্য বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আমার মোটালরির একটা ছবি তুললাম। আমাদের বাড়ির সামনের অংশের ছবি তুললাম। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। বাড়ির সামনের জঙ্গলের কয়েকটা ছবি তুললাম। আমি বুঝতে পারলাম আমি সবুজ জঙ্গলের রহস্যময়তা এসব হারাচ্ছি। সবকিছুই।

    বেরোনোর আগে আমার ক্যামেরা স্কুল ব্যাগে রাখলাম। আমার নতুন প্রজেক্টে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলাম। এ্যাডওয়ার্ডের কথা, কাল রাতের কথা এসব চিন্তা করা বন্ধ করলাম।

    ভয়ের সাথে সাথে আমি অধৈর্যও হতে শুরু করেছি। আর কতক্ষণ এটা আমাকে ভোগাবে?

    এটা সকাল পর্যন্ত থাকল। সে আমার পাশে নিঃশব্দে চলছিল। কখনও আমার দিকে তাকাচ্ছিল না। আমি ক্লাসে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এমনকি ইংলিশ ক্লাসও আমার মনোযোগ কাড়তে পারল না। মিস্টার ব্রেটি তার প্রশ্ন কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করলেন। আমি বুঝতে পারলাম তিনি আমাকে নিয়েই কথা বলছেন। এ্যাডওয়ার্ড আমার কানের কাছে সঠিক উত্তরটা ফিসফিস করে বলল। তারপর আমাকে কেমন যেন অবহেলা করল।

    লাঞ্চের সময় সেই নীরবতা বজায় থাকল। আমি অনুভব করছিলাম যেকোন মুহূর্তে আমি চিৎকার করে উঠতে পারি। কাজেই নিজের মনটাকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য আমি টেবিলের অন্যদিকে তাকালাম। জেসিকার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।

    হেই জেস।

    কি হয়েছে বেলা?

    তুমি কি আমার জন্য একটা কাজ করবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার ব্যাগে হাত দিলাম। আমার মা চান আমার বন্ধুদের কিছু ছবি এ্যালবামে রাখার জন্য। কাজেই এখানের সবারই কয়েকটা ছবি তোল। ঠিক আছে?

    আমি তার হাতে ক্যামেরা দিলাম।

    অবশ্যই। সে বলল। তারপর মাইকের মুখ ভর্তি খাবারের ছবি নিল। দৃশ্যটা ভীষণ হাস্যকর হল।

    একের পর এক ছবি উঠতে লাগল। ক্যামেরা তাদের হাতে হাতে টেবিলে টেবিলে ঘুরতে থাকল। আর গুণগুণ করে কথা বলছিল, ঘোষামোদ করছিল এবং ক্যামেরার ফিল্ম নিয়ে অভিযোগ করছিল। এটা খুবই শিশুসুলভ আচরণ। কিংবা হতে পারে আমি নিজেই স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম না।

    ওহ-হো জেসিকা ক্যামেরা ফেরত দিতে দিতে ক্ষমা সুন্দর গলায় বলল আমার মনে হয় আমরা তোমার সবগুলো ফিল্ম শেষ করে ফেলেছি।

    কোন অসুবিধা নেই। মনে হয় আমি যেসব জিনিসের ছবি নিতে চেয়েছিলাম সেগুলো ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছি। বললাম আমি।

    স্কুলের পরে, এ্যাডওয়ার্ড নীরবে আমার সাথে পার্কিং লট পর্যন্ত এল। আমাকে আবার কাজে যেতে হবে। একবারের জন্য হলেও। সময় আমার ক্ষত উপশম হচ্ছিল না। হয়তো একাকী থাকলে সময় আমার জন্য ভাল যাবে।

    আমি নিউটনের ওখানে কাজে যাওয়ার পথে আমার ফিল্ম ডেভেলপ করতে দিয়ে গেলাম। কাজের শেষে ডেভেলপ করা ছবিগুলো নিয়ে নিলাম। চার্লিকে হাই বলতে বলতে বাসার ভেতরে ঢুকেই আগে কিচেনের দিকে গেলাম। গ্রান্ডোলা খাবার নিলাম এবং ছবির খামটা নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার রুমে গিয়ে ঢুকলাম।

    আমি বিছানার মাঝখানে গিয়ে বসলাম। কৌতূহলের সাথে খামটা খুললাম। আমি ভেবেছিলাম প্রথম ছবিটা ফাঁকা যাবে।

    প্যাকেট থেকে ছবিগুলো টেনে বের করলাম। আমি সজোরে নিঃশ্বাস নিলাম। এ্যাডওয়ার্ডকে অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছিল, যেমনটি বাস্তবে তাকে দেখায়। সে ছবির ভেতর আমার দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যেটা আমি কয়েকদিন ধরে মিস করছিলাম। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সবাইকে দেখাচ্ছিল এতটাই… মানে কী বলব, অবর্ণনীয়। হাজারটা শব্দ একটা ছবির সমান নয়।

    আমি বাকি ছবিগুলো দ্রুততার সাথে বের করলাম। তারপর তার ভেতর থেকে তিনটাকে বিছানার উপর পাশাপাশি রাখলাম।

    প্রথম ছবিটা এ্যাডওয়ার্ড কিচেনে থাকা অবস্থায়। তার উচ্ছল চোখজোড়া আনন্দের প্রতিমূর্তি। দ্বিতীয়টা এ্যাডওয়ার্ড এবং চার্লির। তারা ইসপিএন দেখছে। সেখানে এ্যাডওয়ার্ডের অভিব্যক্তি ভিন্ন। এখানে তার চোখ খুবই সতর্ক। এখানেও সে দম বন্ধ করা সুন্দর। কিন্তু তার চোখের চাহনি শীতল। কতকটা ভাস্কর্যের মত। প্রাণহীন।

    শেষেরটা এ্যাডওয়ার্ড ও আমার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তোলা ছবি। এ্যাডওয়ার্ডের মুখ আগের মতই। শীতল। প্রাণহীন। কিন্তু সেটাই ছবির সমস্যাপূর্ণ দিক নয়। আমাদের দুজনের সমন্বয় এখানে বেদনাদায়ক। তাকে এখানে দেবতার মত দেখাচ্ছে। আমাকে গড়পড়তা একজনের মতই। একজন মানবী হিসাবে খুবই সাধারণ। আমি বিরক্তির সাথে ছবিগুলো সরিয়ে নিলাম।

    আমার বাড়ির কাজ করার পরিবর্তে ছবিগুলো এ্যালবামে সাজাতে লাগলাম। একটা বলপয়েন্ট কলম দিয়ে নাম ও তারিখসহ সবগুলো ছবির ক্যাপশন লিখে দিলাম। আমি এ্যাডওয়ার্ডের ও আমার ছবিটা নিলাম। সেটার দিকে বেশিক্ষণ তাকালাম না। এটাকে ভাঁজ করলাম এবং এ্যালবামের নিচে এমনভাবে ঢুকিয়ে দিলাম যাতে এ্যাডওয়ার্ডের ছবিটা উপরে থাকে।

    যখন কাজ শেষ হলো, আমি দ্বিতীয় খামগুলো থেকে বাকি ছবিগুলো বের করলাম। তারপর মাকে ধন্যবাদজ্ঞাপক একটা দীর্ঘ চিঠি লিখলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড এখনও এলো না। তার এত দেরির হয়তো কোন কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সে মোটেই এলো না। আমি মনে করতে চেষ্টা করলাম শেষবার কখন সে কোন অজুহাত ছাড়াই আমার থেকে এভাবে দূরে ছিল। একটা ফোন কল…সে কখনও করে না।

    আবারও আমি ভালমত ঘুমাতে পারলাম না।

    স্কুলে নিরবতা কাম্য। হতাশা, ভয়-ভীতি গত দুদিন ধরে আমার ভেতরে বয়ে চলছে। আমি স্বস্তি অনুভব করলাম যখন দেখলাম এ্যাডওয়ার্ড আমার জন্য পার্কিংলটে অপেক্ষা করছে।

    নানান ধরনের সমস্যার কারণে হয়তো এমনটি হয়েছে। আমার জন্মদিন এর মধ্যে দূরে সরে গেছে। যদি শুধু এলিস ফিরে আসত। এইসব বিষয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আগেই।

    কিন্তু আমি তার জন্য অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যদি আজ তার সাথে কথা বলতে না পারি, সত্যিকারের মনের কথা, তাহলে আগামীকাল আমি কার্লিসলকে দেখতে যাব। আমার কিছু একটা করা দরকার।

    স্কুলের পরে, এ্যাডওয়ার্ড এবং আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাইলাম। আমি নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি কোন অজুহাত গ্রহণ করব না।

    সে হেঁটে আমার ট্রাকের দিকে এল। আমি তখনও আমার প্রতিজ্ঞা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

    তুমি কি কিছু মনে করবে যদি আমি আজ আসি? আমরা ট্রাকে উঠার আগেই সে জিজ্ঞেস করল। যেন সে আমাকে কিল দিল।

    অবশ্যই না।

    এখন? সে আবার জিজ্ঞেস করল। আমার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছে।

    অবশ্যই। আমি গলার স্বর একই রাখলাম। যদিও আমি তার গলার স্বরে ব্যাকুলতা পাত্তা দিলাম না। আমি শুধু যাওয়ার পথে মায়ের জন্য একটা চিঠি মেইলবক্সে ফেলে দিয়ে আসব। আমি সেখানে তোমার সাথে দেখা করব।

    সে প্যাসেঞ্জার সিটের উপর রাখা মোটা সাইজের এনভেলাপটার দিকে তাকাল। হঠাৎ সে আমার কাছে চলে এল এবং এটা ছিনিয়ে নিল।

    আমি চিঠি পোস্ট করব। সে তাড়াতাড়ি বলল। এবং আমি এখনই তোমাকে, সেখানে নিয়ে যাব। সে আমার প্রিয় হাসিটাই হাসল। কিন্তু এটা ছিল ভুল। আমি তার চোখের দিকে তাকালাম না।

    ঠিক আছে। আমি একমত হলাম। প্রতি উত্তরে আমি হাসলাম না। সে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে চালাতে শুরু করল।

    সে আমাকে বাড়িতে নিয়ে এল। সে চার্লির স্পটে গাড়ি পার্ক করল। আমি বাড়ির সামনে নেমে পড়লাম। এটা একটা খারাপ লক্ষণ। সে থাকার পরিকল্পনা করেনি। আমি মাথা ঝাঁকালাম। বড় করে শ্বাস নিলাম। চেষ্টা করছিলাম কিছু সাহস সঞ্চয় করতে।

    সে গাড়ি থেকে বের হয়ে এল। আমিও মোটরলরি থেকে বের হলাম। সে আমার দিকে এগিয়ে এল। সে আমার কাছ থেকে আমার বইয়ের ব্যাগ নিল। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সে এটাকে আবার সিটের উপর ছুঁড়ে দিল। এটা অস্বাভাবিক।

    আমার সাথে একটু হাঁটবে এসো। সে আমার হাত ধরে আবেগহীন গলায় বলল।

    আমি কোন উত্তর দিলাম না। আমি প্রতিবাদ করার কোন পথ খুঁজে পেলাম না। কিন্তু ততক্ষণাৎ জানতাম আমিও বোধহয় সেটাই চাই। কিন্তু আমার মনটা আবার এটা পছন্দও করছিল না। মনে হচ্ছিল এটা খারাপ। এটা খুবই খারাপ। আমার মাথার মধ্যে একটা কণ্ঠস্বর বারবার এটা বলতে লাগল।

    কিন্তু সে কোন উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল না। সে আমাকে পূর্ব দিকে টেনে নিয়ে গেল। যেখানে বনের শুরু। আমি অনিচ্ছাসত্বেও তাকে অনুসরণ করলাম। চেষ্টা করছিলাম ভয়ের থেকে রেহাই পেতে। মনে পড়ল, এখনই সকল বিষয়ে কথা বলার সুযোগ। কেন তাহলে ভয় আমাকে এভাবে আড়ষ্ট করে রেখেছে?

    আমরা মাত্র কয়েকটা পদক্ষেপে বনের মধ্যে প্রবেশ করলাম। আমরা তখনও রাস্তার কাছাকাছি। সেখান থেকে আমি আমাদের বাড়ি দেখতে পাচ্ছিলাম।

    আমরা আরও কিছুদূর হাঁটলাম।

    এ্যাডওয়ার্ড একটা গাছের কাছে কুঁকল। তারপর সরাসরি আমার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টিভঙ্গি দুর্বোধ্য।

    ঠিক আছে। এখন কথা বলা যাক। আমি বললাম। কথাটা আমি যতটা সাহসী শোনাবে ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি সাহসী শোনাল।

    সে বড় করে নিঃশ্বাস নিল।

    বেলা, আমরা চলে যাচ্ছি।

    আমিও গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। এটা একটা বাজে অপশন। আমি ভেবেছিলাম আমার প্রস্তুতি আছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার এখনও কিছু জানার আছে।

    এখনই কেন? আরেক বছর… বললাম আমি।

    বেলা। এখনই সময়। আমরা আর কতদিন ফর্কে থাকব? বাবা তিরিশ বছর অতিবাহিত করেছে। এবং সে এখন তেত্রিশ। আমরা আমাদের শুরুটা এখনই করতে চাই।

    তার উত্তর আমাকে দ্বিধায় ফেলে দিল। আমি ভেবেছিলাম তাদের চলে যাওয়া হয়তো তাদের শান্তিতে থাকার জন্য। যদি তারা চলে যায় তাহলে আমাদেরও চলে যেতে হবে? আমি তার দিকে তাকালাম। সে কি বলছে সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম।

    সে শীতল চোখে তাকিয়ে রইল।

    আমার গা মাথা ঘুরছিল। আমি বুঝতে পারলাম ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

    যখন তুমি বল আমরা.. আমি ফিসফিস করে বললাম।

    আমি বোঝাতে চাই আমার পরিবার এবং আমি। সে প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদাভাবে উচ্চারণ করলো।

    আমি যন্ত্রের মতো মাথা সামনে পিছনে নাড়ালাম। এটা বোঝার চেষ্টা করলাম। সে অধৈর্য হওয়ার কোন চিহ্ন না দেখিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। আমার আবার কথা বলার আগে কয়েক মিনিট সময় লাগল।

    ঠিক আছে। আমি বললাম আমি তোমার সাথে যাব।

    তুমি সেটা পার না বেলা। আমরা যেখানে যাচ্ছি…সেটা তোমার জন্য সঠিক জায়গা নয়।

    তোমার কাছে আমার জন্য সঠিক জায়গা কোনটা বলে মনে হয়।

    আমি তোমার জন্য উপযুক্ত নই বেলা।

    হাস্যকর কথা বলবে না। আমি চাইছিলাম রাগান্বিত স্বরে কথা কটি বলতে। কিন্তু এটা এমন শোনাল যেন আমি ভিক্ষা চাইছি। তুমি আমার জীবনের সর্বোত্তম অংশ।

    আমার জগৎ তোমার জন্য নয়। সে গোঙানির স্বরে বলল।

    জেসপারের কি ঘটেছে- সেটা কোন ব্যাপার না, এ্যাডওয়ার্ড। কিছুই না।

    তুমি ঠিকই বলেছ। সে সম্মত হলো এটা কিন্তু এভাবেই আশা করা হয়েছিল।

    তুমি ফনিক্সে প্রতিজ্ঞা করেছিলে। তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে তুমি থাকবে।

    যতদিন আমি তোমার জন্য ভাল। সে কথার মাঝখানে বাধা দিল।

    না। এটা আমার আত্মার ব্যাপারে। তাই নয় কি? আমি চিৎকার করে বললাম। রাগান্বিত। কথাটা আমার মুখ থেকে বিস্ফোরণের মত বের হলো। কার্লির্সলে আমাকে সেই বিষয়ে বলেছিল। এবং আমি তার পরোয়া করি না, এ্যাডওয়ার্ড। আমি পরোয়া করি না। তুমিই আমার আত্মা হতে পার। আমি তোমাকে ছাড়া এটা চাই না। এটা তোমারই মধ্যে।

    সে গভীরভাবে শ্বাস নিল। তারপর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। শূন্যদৃষ্টিতে। তার মুখ যন্ত্রণায় বেঁকে গেল। সে শেষ পর্যন্ত তাকাল। তার চোখে ভিন্ন ছায়া। কঠিন দৃষ্টি। যেন তরল সোনা কঠিনে পরিণত হয়েছে।

    বেলা, আমি চাই না তুমি আমার সাথে আস। সে কথাগুলো ধীরে ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলল। তার শীতল চোখ আমার মুখের উপরে। লক্ষ্য করছে সে যা বলছে তা আমি বুঝতে পারছি কি না।

    সেখানে এক মুহূর্তের নিরবতা। আমি মাথার মধ্যে কয়েকবার সেই কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করলাম। তাদের প্রকৃত রুপ বোঝার চেষ্টা করলাম।

    তুমি.. পার না.. আমাকে চাও না? আমি কথাগুলো বলতে চেষ্টা করলাম।

    না।

    আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে রূঢ় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। তার চোখ ধারালো ব্লেডের মতো। কঠিন এবং স্বচ্ছ। আমি অনুভব করলাম আমি তার ভেতর দিয়ে মাইলের পর মাইল দেখতে পাচ্ছি।

    বেশ, অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমি বিস্মিত হলাম কতটা শান্ত এবং যুক্তিপূর্ণ আমার কণ্ঠস্বর। এটা অবশ্যই এজন্য যে আমি কতটা অবশ। আমি এখনও বুঝতে পারছিলাম না সে আমাকে কি বলছে। এটা এখনও কোন যুক্তি দেখাচ্ছে না।

    সে গাছের ফাঁক দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। তারপর আবার কথা বলতে শুরু করল। অবশ্যই। আমি তোমাকে সবসময় ভালবাসব…যেকোন প্রকারে। কিন্তু ওই রাতে যে ঘটনাটা ঘটেছে তাতেই আমি বুঝতে পেরেছি পরিবর্তনের সময় এসেছে। কারণ আমি.. চেষ্টা করছিলাম এমন কিছু হওয়ার যেটা আমি নই, বেলা। আমি মানুষ নই। সে পেছনের দিকে তাকাল। তার বরফ কঠিন মুখটা সত্যিই কোন মানুষের মুখ ছিল না। আমি এটা অনেক দিন ধরে এভাবে চলে যেতে দিয়েছি। এবং আমি সেজন্য সত্যিই দুঃখিত।

    দুঃখ করো না। আমার কণ্ঠস্বর এখন শুধু ফিসফিসানির মত আমাকে ভাসিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমনভাবে যেন আমার শিরার মধ্য দিয়ে তরল এসিড চলে যাচ্ছে।

    সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি তার চোখের ভিতর দিয়ে দেখতে পেলাম আমার কথাগুলো তার জন্য অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে। সে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

    তুমি আমার জন্য ভাল নও, বেলা। সে তার আগের কথাগুলো ঘুরিয়ে বলল। সে কারণে আমি কোন তর্কে গেলাম না। যেভাবেই হোক আমি ভাল করেই জানতাম আমি তার জন্য ভাল ছিলাম না।

    আমি কিছু বলার জন্য আমার মুখ খুললাম। এবং আবার মুখ বন্ধ করলাম। সে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল। তার মুখ থেকে সব আবেগ কেউ যেন মুছে দিয়েছে। আমি আবার চেষ্টা করলাম।

    যদি… সেটাই হয় যেটা তুমি চাও।

    সে মাথা নিচু করল।

    আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে গেল। আমার গলার নিচ থেকে যেন অসাড় হয়ে। গেছে।

    আমি একটা সুযোগের ব্যাপারে কথা বলতে পারি, যদিও সেটা খুব বেশি কিছু নয়। সে বলল।

    আমি বিস্মিত সে আমার মুখে কি দেখেছিল। কারণ কিছু একটা তার মুখের উপর খেলা করছিল। কিন্তু আমি এটা ধরতে পারার আগেই সে তার মুখ আগের মত মুখোশে পরিণত করে ফেলল।

    যে কোন কিছু। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমার কণ্ঠস্বর বেশ দৃঢ়।

    ধীরে ধীরে তার চোখের কাঠিন্য কমে আসছিল। কঠিন সোনা তরলে পরিণত হচ্ছিল আবার। গলছিল।

    বোকার মত কোন কিছু করে বসো না। সে আদেশ দিল। আগের মত বলল তুমি কি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলতে চেয়েছি?

    আমি অসহায়ের মত দুদিকে মাথা নাড়লাম।

    তার চোখ আবার বরফ শীতল। দূরত্বটা আবার ফেরত এল। আমি অবশ্যই চার্লির ব্যাপারে ভাবছিলাম। তার তোমাকে প্রয়োজন। তার জন্য অন্তত নিজের প্রতি যত্ন নাও।

    আমি আবার মাথা নোয়ালাম। আমি চেষ্টা করব। আমি ফিসফিস করে বললাম।

    তাকে এক মুহূর্তের জন্য বেশ স্বস্তিতে থাকতে দেখা গেল।

    আমি তার পরিবর্তে একটা প্রতিজ্ঞা করব। সে বলল, আমি প্রতিজ্ঞা করব এটাই শেষ সময় যখন তুমি আমাকে দেখবে। আমি আর ফিরে আসব না। আমি তোমাকে এমন কিছুর মধ্যে আর কখনও জড়াব না। আমার পক্ষ থেকে কোন ঝামেলা ছাড়াই তোমার জীবন কাটাতে পারবে। আমি এমনভাবে থাকব যেন আমি কখনও ছিলাম না।

    আমার হাঁটু জোড়া কাঁপতে শুরু করল। কারণ গাছগুলো হঠাৎ করে বাতাস ছেড়েছে। আমি বুঝতে পারলাম আমার কানের পিছনে রক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে বইছে। তার কণ্ঠস্বর যেন অনেক দূরের কোন জায়গা থেকে ভেসে আসছে।

    সে ভদ্রভাবে হাসল। দুশ্চিন্তা করো না। তুমি মানবী-তোমার স্মৃতিশক্তি একটা বীজের চেয়ে বেশি কিছু নয়। সময় তোমার ক্ষত সারিয়ে তুলবে।

    আর তোমার স্মৃতিশক্তি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। এটা এমন শোনাল যেন কোন কিছু আমার গলায় আঘাত করেছে।

    বেশ। সে এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধান্বিত হলো। আমি কোন কিছুই ভুলতে পারব না। কিন্তু আমার প্রকৃতি এমনই…আমরা খুব সহজেই বিছিন্ন হয়ে যেতে পারি। সে হাসল। সেই শান্ত হাসি যা তার চোখ ছুঁয়ে গেল না।

    সে আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। এসবই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। মনে হয় তোমাকে আর আমরা বিরক্ত করব না।

    আমরা শব্দটা আবার আমার মনোযোগ কাড়ল। সেটা আমাকে বিস্মিত করল। আমি ভেবেছিলাম আমি কোন কিছু লক্ষ্য করার উর্ধ্বে।

    এলিস ফিরে আসছে না? আমি বুঝতে পারছিলাম। আমি জানি না সে কীভাবে এটা শুনেছে। শব্দটা এমনভাবে যেন কোন শব্দ নেই। কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় সে বুঝতে পেরেছে।

    সে ধীরে ধীরে মাথা নাড়াল। সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

    না। তারা সবাই চলে গেছে। শুধু তোমাকে বিদায় জানানোর জন্য আমি থেকে গেছি।

    এলিস চলে গেছে? অবিশ্বাসে আমার কণ্ঠস্বর শূন্য হয়ে যায়।

    সে তোমাকে বিদায় জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাকে বুঝিয়েছি দেখা না করে বিদায় তোমার জন্য ভাল হবে।

    আমার মাথা ঘুরছিল। কোন কিছুতে মনোযোগ দেয়া আমার পক্ষে কঠিন ছিল। তার কথাগুলো আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগল। আমি হাসপাতালের ডাক্তারের কথা শুনতে পেলাম। এটা ফনিক্সে থাকাকালিন গত বসন্তের কথা। ডাক্তার তখন আমাকে এক্সরে দেখাচ্ছিলেন। তুমি এটা দেখ, এটা পরিষ্কার ভাঙ্গা। তার আঙুল আমার ভাঙা হাড়ের ছবির উপর। সেটাই ভাল। এটা খুব সহজেই ভাল হয়ে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি।

    আমি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমার মনোযোগের দরকার। এই দুঃস্বপ্ন থেকে বের হওয়ার জন্য একটা পথ দরকার।

    বিদায়, বেলা। সে আগের মতই শান্ত স্বরে বলল।

    একটু দাঁড়াও। আমি কোন মতে বললাম। তার কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। আমার অসাড় পা জোড়াকে কোনমতে ঠেলে ঠেলে নিয়ে গেলাম।

    আমি ভাবছিলাম সেও আমার জন্য এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তার শীতল হাত আমার কবজির চারপাশে ধরল এবং সেগুলো আমার দিকে ঘুরিয়ে দিল। সে নিচের দিকে ঝুঁকে ছিল। তার ঠোঁট আমার কপালের উপর খুব জোরে অল্প সময়ের জন্য চেপে ধরল। আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

    নিজের প্রতি যত্ন নিও। সে নিঃশ্বাস নিল। তার ত্বক আগের মতই শীতল।

    সেখানে অতিপ্রাকৃত আলো। অস্বাভাবিক বাতাস। আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ছোট ছোট আঙুলের পাতা কাঁপতে লাগল।

    সে চলে গেছে!

    আমার পা অসাড় হয়ে আছে। আমি সেটা উপেক্ষা করলাম। জানি শুধু শুধু এগিয়ে লাভ নেই। তবু আমি জঙ্গলের মধ্যে তাকে অনুসরণের চেষ্টা করলাম। তার গমন পথের চিহ্ন খুব দ্রুতই মুছে যাচ্ছিল। সেখানে কোন পদচিহ্ন ছিল না। পাতাগুলো আগের মত শান্ত। কিন্তু আমি কোনরকম চিন্তাভাবনা ছাড়া সামনের দিকে এগুতে থাকলাম। আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু করতে পারতাম না। আমাকে এগুতেই হবে। যদি আমি তাকে খোঁজ করা বন্ধ করি সব শেষ হয়ে যাবে।

    ভালবাসা, জীবন, এসবের মানে…সবকিছুই শেষ।

    আমি হাঁটছিলাম তো হাঁটছিলাম। সময় আমার মনের ভেতর কোন অনুভূতি তৈরি করছিল না। আমি আরো গভীর বনের মধ্যে প্রবেশ করছিলাম। ঘণ্টা খানেকের মত অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু এটা আমার জন্য মাত্র যেন এক সেকেন্ডের মত। হতে পারে এটা এমন মনে হচ্ছিল যেন সময় স্থির হয়ে গেছে। কারণ জঙ্গলটাকে সবদিকে একইরকম দেখাচ্ছিল। যতদুরই যাই না কেন একইরকম। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, হয়তো আমি একটা বৃত্তের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছি। একটা খুব ছোট্ট বৃত্তের ভেতর। কিন্তু আমি যাওয়া অব্যহত রাখলাম। আমি প্রায়ই হোঁচট খাচ্ছিলাম। অন্ধকার থেকে আরো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। আমি মাঝে মধ্যে পড়েও যাচ্ছিলাম।

    শেষ পর্যন্ত, আমি পুরোপুরি গাঢ় অন্ধকারের দিকে এগুতে লাগলাম। আমার কোন ধারনাই ছিল না যে আমার পায়ে কী বিধল। আমি নিচে পড়ে যেতে লাগলাম। আমি একপাশে গড়িয়ে পড়লাম যাতে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি। একটা ভেজা প্রাচীরের গায়ে কুকড়ে গেলাম।

    আমি সেখানে শুয়ে ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল যতক্ষণ পড়ে আছি তার চেয়ে অনেক বেশি সময় কেটে গেছে। আমি মনে করতে পারলাম না কতক্ষণ আগে রাত্রি শুরু হয়েছে। এখানে কি সবসমই রাতে এমনই অন্ধকার থাকে? নিশ্চিত, কোন কোন রাতে সামান্য হলেও চাঁদের আলো মেঘের ভেতর থেকে নিচে গাছের চাঁদোয়ার উপর পড়ে। আর মাটিও সেই আলোর অংশীদার হয়।

    আজ রাতে নয়। আজ রাতে আকাশ গাঢ় অন্ধকার। সম্ভবত আজ রাতে চাঁদের অস্তিত্ব নেই। আজ রাতে চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণ অমাবস্যা।

    পূর্ণ অমাবস্যা। আমি ঠাণ্ডার ভেতর না থেকেও কাঁপছিলাম।

    কারোর ডাক শোনার আগে অন্ধকারে আমার অনেকটা সময় কেটে গেছে।

    কেউ একজন চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডাকছে। আবার নিস্তব্দতা। শব্দটা আমার কাছে আসার আগেই চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা অবশ্যই আমার নাম। আমি কণ্ঠস্বরটা চিনতে পারছি না। আমি উত্তর দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলাম। কিন্তু আমি কিছুটা দ্বিধান্বিত। আমি অনেকটা সময় নিলাম উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্তে আসতে। তারপর নাম ধরে ডাকা বন্ধ হয়ে গেল।

    কিছুক্ষণ পর, বৃষ্টির ফোঁটা আমাকে জাগিয়ে দিল। আমি মোটেই মনে করি না সত্যি সত্যিই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমি শুধুমাত্র চিন্তাভাবনা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার সমস্ত অনুভূতির জগৎ ভোতা হয়ে গিয়েছে।

    বৃষ্টি আমাকে কিছুটা বিরক্ত করল। বৃষ্টির ফোঁটা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা। আমি হাতের উপরের কাপড় খুলে আমার মুখ ঢেকে ফেললাম।

    তারপর আমি আবার ডাক শুনলাম। শব্দের উৎস এই ফাঁকে আরো দূরে সরে গেছে। সময় সময় মনে হচ্ছে কয়েকটা কণ্ঠস্বর এক সাথে ডাকছে। আমি গভীরভাবে শ্বাস নিতে চেষ্টা করলাম। মনে হলো আমার উত্তর দেয়া উচিত। কিন্তু আমি ভাবলাম তারা আমার উত্তর শুনতে সমর্থ হবে কিনা। আমি কি খুব জোরে চিৎকার করার মত শক্তি অর্জন করেছি?

    হঠাৎ, সেখানে অন্য আরেকটা শব্দ। খুব কাছাকাছিই। নিঃশ্বাস নেয়ার শব্দ। কোন প্রাণীর। এটার শব্দও অনেক বেশিই মনে হচ্ছে। এখন আমি ভীত হয়ে পড়লে সমস্যা হবে। আমি ভীত হলাম না। শুধু সমস্ত শরীর অবশ হয়ে এলো যেন। এটা কোন ব্যাপার নয়। প্রাণীর শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ অন্য দিকে চলে গেল।

    বৃষ্টি এক ধারায় পড়েই যাচ্ছে। আমি অনুভব করলাম বৃষ্টির পানি আমার চিবুক গড়িয়ে নিচে পড়ছে। আমি চেষ্টা করলাম আমার সমস্ত শক্তি একত্রিত করে মাথা ঘোরাতে। আমি আলো দেখতে পেলাম।

    প্রথমে খুব মৃদু একটা আলোর রেখা দেখতে পেলাম। আলোর রেখা ধীরে ধীরে উজ্জ্বল থেকে উজ্জলতর হচ্ছিল। ফ্লাশ লাইটের আলোর মত অনেকটা জায়গা আলোকিত হয়ে উঠল।

    উজ্জল আলো আমার কাছাকাছি একটা ঝোঁপের ভেতর থেকে বের হলো। আমি দেখে বুঝতে পারলাম এটা একটা প্রোপেন লণ্ঠন। কিন্তু শুধুমাত্র উজ্জ্বল ধাঁধানো আলোটাই আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। আলোর উজ্জলতা আমাকে এক মুহূর্তের জন্য অন্ধ করে দিল।

    বেলা।

    কণ্ঠস্বরটা গভীর, গম্ভীর এবং অপরিচিত। কিন্তু সম্বোধনটা পরিচিতের ভঙ্গিতে। সে আমাকে আর খোঁজার জন্য ডাকছিল না। এটা জানানোর জন্য ডাকছিল যে আমাকে পাওয়া গেছে।

    আমি তাকিয়ে রইলাম। অতটা উঁচুতে দেখা অসম্ভব। আমি একটা অন্ধকার মুখ দেখতে পেলাম। মুখটা এখন আমার উপরে দেখতে পাচ্ছি। আমি মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার কারণে লোকটাকে অতটা লম্বা দেখাচ্ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম না।

    তুমি কি আঘাত পেয়েছো?

    আমি বুঝতে পারছিলাম প্রশ্নটা কিছু একটা অর্থ বহন করছে। কিন্তু আমি হতবুদ্ধিকর অবস্থায় শুধু তাকিয়ে রইলাম। আমার এই পড়ে থাকা অবস্থায় সেটা কি অর্থ বহন করে?

    বেলা, আমার নাম স্যাম উলি।

    নামটা আমার কাছে কোন মতেই পরিচিত মনে হচ্ছিল না।

    চার্লি তোমাকে খোঁজার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে।

    চার্লি? বাবার কথা বলায় আমি ধাক্কা খেলাম। আগের চেয়ে অধিক মনোযোগ দিয়ে সে কি বলছে সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম। চার্লিই বিষয়। আর অন্যকিছুই নয়।

    লম্বা লোকটা আমার একটা হাত ধরল। আমি তার দিকে একবার তাকালাম। আমি জানি না আমি কি করতে চাচ্ছি।

    তার কালো চোখ মুহূর্তের জন্য অবাক দৃষ্টিতে আমাকে দেখল। তারপর কাঁধ ঝকাল। খুব দ্রুততার সাথে সে আমাকে মাটি থেকে টেনে তুলল। তারপর আমাকে তার কাঁধের উপর তুলে নিল।

    আমি সেখানে ঝুলতে থাকলাম। সে তাড়াতাড়ি ভেজা জঙ্গল থেকে বেরোনোর চেষ্টা করল। আমি আপসেট-একজন অপরিচিত মানুষ আমাকে বহন করে নিয়ে চলেছে। কিন্তু আমার জন্য আপসেট হওয়ার আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

    দেখে মনে হচ্ছিল না অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। আলোকিত জায়গা এবং অনেকগুলো পুরুষের গলা শুনলাম। স্যাম উলি সেই লোকজনের কাছাকাছি এসে তার গতি ধীর করল।

    আমি তাকে পেয়েছি। সে বিস্ফোরিত স্বরে বলল।

    গুঞ্জন থেমে গেল। আমাকে আরো সাবধানের সাথে তুলে নেয়া হলো। একটা হতবুদ্ধ মুখ আমার পাশে পাশে চলছিল। স্যামের কণ্ঠস্বরটাই সেই গুঞ্জনের মধ্যে আমার পরিচিত লাগছিল। কারণ সম্ভবত আমার কান তার বুকের উপর।

    না। আমি মনে করি না সে আঘাত পেয়েছে। সে কোন একজনকে বলল। সে শুধু এটাই বলছিল সে চলে গেছে…

    আমি কথাটা উচ্চস্বরে বলেছিলাম? আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।

    বেলা সোনা, তুমি কি ঠিক আছে?

    সেটাই একমাত্র কণ্ঠস্বর যেটা আমি যেখানেই যেকোন অবস্থার মধ্যেও হোক না কেন চিনতে পারি। এই যেমন এখন। শত দুশ্চিন্তার মধ্যেও।

    বাবা? আমার নিচু লয়ের কণ্ঠস্বর অদ্ভুত শোনাল।

    এই তো আমি এখানে, সোনা।

    সেখানে আমাকে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে শিফট করা হচ্ছিল। বাবার শেরিফের চামড়ার জ্যাকেটের গন্ধ পাচ্ছিলাম। বাবা আমাকে বহন করে চলছিল।

    আমারও বোধ হয় ওকে ধরা দরকার। স্যাম উলি উপদেশ দিল।

    আমি তাকে নিতে পারব। চার্লি ছোট্ট করে শ্বাস নিয়ে বললেন।

    তিনি ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন। বেশ কষ্ট করেই। আমার মনে হচ্ছিল আমি তাকে বলি আমাকে নিচে নামিয়ে দিতে। আমি হেঁটে যেতে পারব। কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হলো না।

    আমরা চারিদিকে আলোর মধ্যে এসে পড়লাম। জনতা আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। আমার কাছে সেটা কোন প্যারেডের মতই মনে হলো। অথবা কোন শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

    আমরা এখন প্রায় বাড়ির কাছাকাছি সোনা। চার্লি বিড়বিড় করে বললেন।

    আমি চোখ খুললাম। দরজার তালা খোলার শব্দ পেলাম। আমরা এখন বাড়ির পোর্চে। লম্বা কালো লোকটা চার্লির জন্য দরজা খুলে ধরে রেখেছিল। একহাত আমাদের দিকে এমনভাবে বাড়িয়ে দিলো যদি চার্লির কাছ থেকে আমি পড়ে যাই তাহলে সে যেন ধরতে পারে।

    কিন্তু চার্লি দরজার ভেতর দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে পারলেন। আমাকে লিভিং রুমের কোচের উপর শুইয়ে দিলেন।

    বাবা, আমার পুরো শরীরই ভেজা। আমি বাধা দেয়ার স্বরে বললাম।

    সেটা কোন ব্যাপার নয়। তার কণ্ঠস্বর ম্লান। তারপর তিনি অন্য কারোর সাথে কথা বললেন, সিঁড়ির উপরের তলার কাপবোর্ডের ভেতরেই কম্বলগুলো রয়েছে।

    বেলা? একটা নতুন কণ্ঠস্বর প্রশ্ন করল। আমি ধুসর চুলের লোকটার দিকে তাকালাম। যিনি আমার মুখের উপর ঝুঁকে ছিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর ধীরে ধীরে তাকে চিনতে পারলাম।

    ডা. জেরান্ডি আঙ্কেল? আমি বিড়বিড় করে বললাম।

    ঠিকই ধরেছো সোনামনি। তিনি বললেন তুমি কি আঘাত পেয়েছো বেলা?

    কিছুটা সময় নিলাম আঘাতের বিষয়ে ভাবতে। আমি স্যাম উলির একই প্রশ্নের ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম। একমাত্র স্যাম উলিই ঠিক একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল তুমি কি আঘাত পেয়েছো? পার্থক্যটা যেভাবেই হোক মনে হলো।

    ডা. জেরান্ডি অপেক্ষা করছিলেন। তার ভ্রু কুচঁকে ছিল।

    আমি আঘাত পাইনি। আমি মিথ্যে বললাম।

    তার উঞ্চ হাত আমার কপাল স্পর্শ করল। তার আঙুলগুলো আমার কবজির উপর চাপ দিচ্ছিল। আমি দেখলাম তার ঠোঁট মনে মনে কিছু একটা গুনে চলেছে। তার চোখ ঘড়ির উপরে।

    তোমার কি ঘটেছিল? তিনি খুব সাধারণভাবেই জিজ্ঞেস করলেন।

    তার হাতের নিচে আমি জমে যাচ্ছিলাম। আমার ভেতরে ভয়টা আবার ফিরে আসছিল।

    তুমি কি জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছিলে? তিনি আঙুল দিয়ে আমাকে খোঁচা দিলেন। আশেপাশে আরো কয়েকজন শুনছিল সে ব্যাপারে আমি সচেতন ছিলাম। কালো মুখের তিনজন লম্বা মানুষ। একজন লা পুশের। আরেকজন ইন্ডিয়ান। আমি ধারণা করছি স্যাম উলিও তাদের মধ্যে আছে। তারা সকলে আমার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মি. নিউটন সেখানে মাউক এবং মি. ওয়েবারকে নিয়ে উপস্থিত। মি, ওয়েবার এঞ্জেলার বাবা। তারা সকলেই আমাকে একজন অপরিচিতের ভঙ্গিতে দেখছে। আরেকটা গম্ভীর গভীর স্বর কিচেনের দিক থেকে ভেসে এল। দরজার বাইরে থেকেও। অর্ধেকটা শহর আমাকে দেখতে চলে এসেছে।

    চার্লি ক্লজেটের কাছে ছিলেন। তিনিও আমার উত্তর শোনার জন্য ঝুঁকে এলেন।

    হ্যাঁ। আমি ফিসফিস করে বললাম। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।

    ডাক্তার চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লেন। তার হাত আমার চোয়ালের নিচের গ্লান্ডের উপর চাপ দিচ্ছিল। চার্লির মুখ কঠোর।

    তুমি কি ক্লান্তবোধ করছ? ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন।

    আমি মাথা ঝুঁকিয়ে সায় দিয়ে বাধ্যের মত চোখ বন্ধ করলাম।

    আমি মনে করি না ওর শরীরে সমস্যার কিছু আছে। আমি শুনলাম কয়েক মুহূর্ত পর ডাক্তার চার্লিকে বললেন। শুধুই ক্লান্তি। তাকে একটানা ঘুমাতে দিন। আমি তাকে চেক করার জন্য আগামীকাল আবার আসব। তিনি থামলেন। তিনি অবশ্যই তার ঘড়ি দেখছেন। কারণ তিনি যোগ করলেন, বেশ, আজকেই আবার আসব। নতুন দিন শুরু হয়েছে।

    মচমচানির শব্দ পেলাম। তারা দুজনেই কোচের উপর থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন।

    এটা কি সত্যি? চার্লি ফিসফিস করে বললেন। তাদের কণ্ঠস্বর এখন মনে হচ্ছে অনেক দুর থেকে ভেসে আসছে। আমি তাদের দিকে তাকালাম।

    তারা কি চলে গেছে?

    ডা, কুলিন আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন কিছু না বলার জন্য। ডা. জেরান্ডি উত্তর দিলেন। এই অফারটা খুব হঠাৎ করেই। তারা সেটা বেশ পছন্দ করেছে। কার্লিসলে চায়নি তাদের চলে যাওয়া নিয়ে একটা বড় ধরনের হাঙ্গামা হোক।

    একটু আগে জানান দিলে সেটা আমাদের সবার জন্য খুব ভাল হতো। চার্লি গম্ভীর স্বরে বললেন।

    ডা. জেরান্ডিকে উত্তর দেয়ার সময় একটু অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে মনে হলো, হা। বেশ। এই পরিস্থিতিতে। একটু জানিয়ে যাওয়াই উচিত ছিল।

    আমি আর বেশি কিছু শুনতে চাইছিলাম না। আমার মাথার নিচে কেউ একটা বালিশ গুঁজে দিয়ে গেছে। আমি সেটা বের করে কানের উপর চাপা দিলাম।

    আমি সর্তক অবস্থায় ছিলাম। আমি শুনলাম চার্লি ফিসফিস করে ভলেন্টিয়ারদের ধন্যবাদ জানালেন। একজনের পর একজন। তারা চলে গেল। বাবার আঙুল আমার কপালের উপরে অনুভব করলাম। তারপর আরেকটা কম্বল চাপা দেয়ার ওজন। ফোনটা কয়েকবার বেজে চলল। বাবা তাড়াতাড়ি দৌড়ে ফোন ধরতে গেলেন, যেন ফোনের রিংয়ের শব্দে আমার ঘুম না ভেঙে যায়। তিনি ফোনকারীকে নিচু স্বরে কোন একটা বিষয়ে নিশ্চিত করলেন।

    হ্যাঁ। আমরা তাকে পেয়েছি। সে ভাল আছে। সে হারিয়ে গিয়েছিল। সে এখন ভাল আছে। তিনি বারবার এটা বলতে লাগলেন।

    আমি আর্মচেয়ারের স্প্রিং গুঙিয়ে উঠার শব্দ শুনতে পেলাম। বাবা আজ রাতের জন্য আর্মচেয়ারের উপর শুয়ে পড়লেন।

    কয়েক মিনিট পরে, ফোনটা আবার বেজে উঠল।

    চার্লি বিরক্তিসূচক শব্দ করে হেঁটে সেদিকে হেঁটে গেলেন। তারপর দৌড়ে কিচেনের দিকে গেলেন। আমি কম্বলের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দিলাম। একই কথোপকথন আবার শুনতে চাচ্ছি না।

    তার কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে গেল। এটা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। তিনি কথা শুরু করলেন। কোথায়? সেখানে এক মুহূর্তের নীরবতা। তুমি নিশ্চিত এটা রিজার্ভশেনের বাইরে? আরেকটা ছোট্ট নিরবতা। কিন্তু সেখানে বাইরের দিকটা কী পুড়ে যাচ্ছে? তিনি একই সাথে উদ্বিগ্ন এবং রহস্যময় গলায় শব্দ করলেন। ওকে, আমি সেখানে ফোন করছি এবং ব্যাপারটা চেক করছি।

    আমি আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে কথোপকথন শুনতে লাগলাম। তিনি আরেকটা নাম্বারে ফোন দিলেন।

    হেই, বিলি। আমি চার্লি- দুঃখিত আমি এত সকালে ফোন দিয়েছি-না, সে ভাল আছে। সে ঘুমাচ্ছে… ধন্যবাদ। কিন্তু সেই কারণে আমি তোমাকে ফোন করিনি। আমি এই মাত্র মিসেস স্টানলির কাছ থেকে একটা ফোন পেয়েছি। তিনি জানিয়েছেন তার দোতলার জানালা থেকে সে সমুদ্রের ধারে আগুন দেখেছে।… কিন্তু আমি সত্যি সত্যি পারি না…ওহ হঠাৎ তার কণ্ঠস্বরে অধৈর্য, বিরক্তি…অথবা রাগ। এবং কেন তারা এমনটি করবে? ওহ হো। সত্যিই? তিনি সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞেস করলেন। বেশ, আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না। হ্যাঁ, হ্যাঁ। শুধু নিশ্চিত হয়ে নাও আগুনের শিখা আশে পাশে ছড়াবে না… আমি জানি, আমি জানি, আমি বিস্মিত তারা এই আবহাওয়ার মধ্যেও আগুন জ্বালিয়েছে দেখে।

    চার্লি দ্বিধাগ্রস্ত। তারপর যোগ করলেন স্যাম এবং অন্যান্যদের পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। তুমিই ঠিক-তারা জঙ্গলকে অন্য যে কারোর চেয়ে ভাল চেনে। স্যামই ওকে পেয়েছিল। সুতরাং আমি তোমার কাছে ঋণী…হা। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব। তিনি যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। ফোন রাখার পর রাগে গজগজ করতে লাগলেন।

    চার্লি বিড়বিড় করে কাউকে বকাবকি করে লিভিং রুমে চলে এলেন।

    কি হয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    তিনি তাড়াতাড়ি আমার পাশে চলে এলেন।

    আমি দুঃখিত সোনা। আমি তোমাকে জাগিয়ে দিয়েছি।

    কোন কিছু কি পুড়ে যাচ্ছে?

    না তেমন কিছুই না। তিনি নিশ্চিত করলেন। শুধু কিছু আগুন-উৎসবে কিছু আগুন ক্লিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে।

    আগুন-উৎসব? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার কণ্ঠস্বর কৌতূহলে ফেটে পড়ল। ভীষণ নিস্তেজ শোনাল।

    চার্লি ভ্রু কুঁচকালেন। কয়েকটা ছেলেপেলে এই আগুন-উৎসব করছে। তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন।

    কেন? আমি বিস্মিত।

    আমি বলতে পারি তিনি উত্তর দিতে চাচ্ছিলেন না। তিনি তার দুহাঁটুর ফাঁক দিয়ে ঘেঁঝে দেখছিলেন। তারা ওই খবরটাতে আনন্দ উৎসব করছে। তার গলার স্বরে তিক্ততা।

    এখানে একটি মাত্র খবর আছে যেটার সম্বন্ধে আমি ভাবতে পারি। চেষ্টা করছি সেটা যেন না হয়। এবং তারপর তার কথা আমার মুখে যেন চপেটাঘাত করল। কারণ কুলিনরা চলে গেছে। আমি ফিসফিস করে বললাম তারা কুলিনদের এই লা পুশে পছন্দ করে না। আমি সেই সম্বন্ধে ভুলে গিয়েছিলাম।

    কুইলেটিসদের কুসংস্কার ছিল শীতলদের সম্বন্ধে। রক্ত-পায়ীরা তাদের গোত্রের শত্রু। তাদের কাছে নেকড়ে-মানবদের পুর্বপুরুষ সম্বন্ধে অন্যরকম ধারণা ছিল। শুধু গল্পগাথাই। বেশিরভাগই লোককথা। তারপরও তাদের খুব কম লোকেই সেগুলো বিশ্বাস করত। চার্লির খুব ভাল বন্ধু বিলি ব্লাকও বিশ্বাস করত। এমনকি জ্যাকব ব্লাকও। বিলির ছেলে। সে ভাবত তারা স্টুপিড, কুসংস্কারে ভরা। বিলি আমাকে কুলিনদের থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল,..

    সেই নামটা আমার ভেতরে কিছু একটা ওলটপালট ঘটিয়ে চলছিল। কিছু একটা যেটা তার থাবা বসাতে শুরু করেছিল। কিছু একটা আমি জানতাম। কিন্তু সেটার মুখোমুখি হওয়ার সাহস আমার ছিল না।

    এটা হাস্যকর। চার্লি বললেন।

    আমরা মুহূর্তের জন্য চুপচাপ বসে ছিলাম। জানালার বাইরের আকাশ আর বেশি একটা অন্ধকার ছিল না। বৃষ্টির পর, সূর্য উঠতে শুরু করেছে।

    বেলা? চার্লি জিজ্ঞেস করলেন।

    আমি তার দিকে অস্বস্তির সাথে তাকালাম।

    সে তোমাকে জঙ্গলে একা ফেলে চলে গেছে, তাই না? চার্লি অনুমান করলেন।

    আমি প্রশ্ন দিয়ে উত্তর দিতে চাইলাম। তুমি কীভাবে জানো আমাকে কোথায় খুঁজে পাওয়া গেছে? আমার মন অন্য কিছুতে আছন্ন হয়ে ছিল।

    তোমার নোট। চার্লি উত্তর দিলেন। বিস্মিত। তিনি তার জিন্সের পেছনের পকেট হাতড়ালেন। একটা কাগজ টেনে বের করলেন। এটা ছিল নোংরা এবং ভেজা। কয়েকটা ভাঁজে কুঁচকে ছিল। ভাঁজ হয়ে ছিল। তিনি সেটাকে সোজা করলেন। সেটাকে সাক্ষী হিসাবে মেলে ধরলেন। সেই জগাখিচুড়ির হাতের লেখা আমার চোখের সামনে ধরলেন।

    এ্যাডওয়ার্ড এর সাথে হাঁটতে যাচ্ছি। সেই পথে। এতে লেখা ছিল। ফিরে এসো

    যখন তুমি ফিরে আসছিলে না আমি কুলিনদের ডাকলাম। এবং কেউ উত্তর দিল না। চার্লি নিচু স্বরে বললেন, তারপর আমি হাসপাতালে খোঁজ নিলাম এবং ডা. জেরান্ডি জানালেন কার্লিসলেরা চলে গেছে।

    তারা কোথায় গেছে? আমি বিড়বিড় করে বললাম।

    তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এ্যাডওয়ার্ড তোমাকে সেটা বলেনি?

    আমি দুদিকে মাথা নাড়লাম। তার নাম শোনার পর আমার ভেতরে যেন কিছু ঘটে গেল। একটা ব্যথা আমার নিঃশ্বাস আটকে দিতে চাইল।

    চার্লি উত্তর দেয়ার আগে আমার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালেন, কাসিলে লস অ্যাঞ্জেলসের একটা বড় হাসপাতালে চাকরি নিয়েছে। আমার ধারণা হাসপাতাল তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে চেয়েছে।

    রৌদ্রজ্জল লস এ্যাঞ্জেলস। তারা সত্যি সেখানে গিয়েছে। আমি আয়নার মধ্যের আমার দুঃস্বপ্নের কথা মনে করতে পারলাম.. উজ্জল সুর্যোলোক তার ত্বকের উপর…

    তার মুখ মনে পড়ায় একটা যন্ত্রণা আমার ভেতরে উথলে উঠতে চাইলো।

    আমি জানতে চাই এ্যাডওয়ার্ড তোমাকে জঙ্গলের মাঝামাঝি ছেড়ে চলে গেছে কিনা? চার্লি জোর দিয়ে বললেন।

    তার নাম আরেকটা শাস্তির মত আমার ভেতরে ধাক্কা দিল। আমি মাথা নাড়লাম। ব্যথাটাকে সামাল দিলাম। না বাবা, এটা আমারই দোষ ছিল। সে আমাকে এখানে পথের ধারে ছেড়ে চলে যায়। আমাদের বাড়ির কাছাকাছি…কিন্তু আমি তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছিলাম।

    চার্লি শিশুসুলভভাবে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন। আমি চোখ ঢেকে ফেললাম। আমি এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না বাবা। আমি আমার রুমে যেতে চাই।

    তিনি উত্তর দেয়ার আগেই আমি কোচ থেকে লাফিয়ে উঠলাম এবং সিঁড়ি দিয়ে আমার রুমের দিকে এগুলাম।

    কেউ একজন এই বাড়িতে একটা নোট রেখে গেছে চার্লির জন্য। একটা চিরকুট যেটাতে আমাকে খুঁজতে তাকে সাহায্য করে। সেই সময় থেকে আমি যখন বুঝতে পারলাম, একটা ভয়ানক উত্তেজনা আমার মাথার ভেতরে বাড়তে লাগল। আমি আমার রুমে ছুটে চলে এলাম। আমার পিছনে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে লক করে দিলাম। বিছানার কাছের সিডি প্লেয়ারের কাছে ছুটে গেলাম।

    সবকিছুই আমি যেভাবে রেখে গিয়েছিলাম সেরকম ছিল। সিডি প্লেয়ারের উপরের অংশটা নামানো। চাবিটা ভোলা। এটা ধীরে ধীরে খুলে গেল।

    এটা খালি।

    মায়ের দেয়া এ্যালবামটা বিছানার পাশে মেঝেতে পড়ে আছে। যেখানে আমি শেষবার রেখেছিলাম। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে এটার কভার খুললাম।

    আমি প্রথম পাতার ওপাশে উল্টাতে পারলাম না। প্রথম পাতায় কোন ছবি নেই। পাতাটা একেবারে খালি- শুধু নিচের দিকে আমার হাতের লেখাটা ছাড়া, এ্যাডওয়ার্ড কুলিন, চার্লিস কিচেন। সেপ্টেম্বর তের।

    সেপ্টেম্বর তের।

    আমি সেখানে থামলাম। আমি নিশ্চিত সে এখানে কিছু একটা করেছে।

    এটা এমনই হবে যেন আমার কখনও কোন অস্তিত্ব ছিল না। সে আমাকে তিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিল।

    আমি মসৃণ কাঠের মেঝের উপর হাঁটু ভেঙে পড়ে গেলাম। প্রথমে হাতের তালু, তারপর আমার মুখ মেঝের উপর আছড় পড়ল। আমার মনে হচ্ছিল আমি মুছা যাচ্ছি। আমি প্রাণপণে চেষ্টা করলাম জ্ঞান না হারাতে। ব্যথার অনুভূতির ঢেউ আমার ভেতরে ফুল, এখন সেটা বেড়ে গেল। মনে হচ্ছিল ব্যথাটা আমার মাথা পর্যন্ত উঠে এল। আমি যচে পড়ে গেলাম।

    উঠে দাঁড়াতে পারলাম না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.