Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ০৮-৯. ক্লাচ কোথায়

    ০৮.

    ঠিক আছে, তোমার ক্লাচ কোথায়?

    আমি আমার বাইকের বাম হান্ডেলবারের দিকে দেখিয়ে দিলাম। মুষ্ঠিবদ্ধ করতে যেয়েই মনে হচ্ছে একটা ভুল কিছু আছে। বিশাল ভারী বাইকটা এখন আমার নিচে। আমাকে পাশে ফেলে দেয়ার উপক্রম করছে। আমি হ্যান্ডেলটা আবার আঁকড়ে ধরলাম। চেষ্টা করলাম এটা সোজা করে ধরে রাখতে।

    জ্যাকব, এটা খাড়াভাবে থাকছে না। আমি অভিযোগ করলাম।

    এটা থাকবে যখন তুমি চলতে থাকবে। সে প্রতিজ্ঞা করল এখন কোথায় তোমার ব্রেক দেখাও।

    আমার ডানপায়ের নিচে।

    ভুল।

    সে আমার ডান হাত আঁকড়ে ধরে বেকিয়ে থ্রটলের উপর লিভারের কাছে নিয়ে গেল।

    কিন্তু তুমি বলেছ…।

    এই হলো সেই ব্রেক যেটা তুমি চাইছ। এখন তুমি পেছনের ব্রেক ব্যবহার করবে না। সেটা পরের জন্য। যখন তুমি জানবে তুমি কি করতে যাচছ।

    সেটা খুব ভাল শোনাচ্ছে না। আমি সন্দেহজনকভাবে বললাম। দুইটা ব্রেকই কি একই রকমের গুরুত্বপূর্ণ নয়?

    পেছনের ব্রেকের কথা ভুলে যাও, ঠিক আছে? এখানে- সে তার হাত আমার হাতের পেছনে জড়িয়ে ধরল। লিভারটা নিচে নামানোর জন্য আমার হাতে চাপ দিল। এটাই সেটা যেটা তুমি ব্রেক করতে চাইছ। এটা কখনো ভুলো না। সে আমার হাত আরেকবার চাপ দিল।

    ঠিক আছে। আমি সম্মত হলাম।

    থ্রটল?

    আমি ডান গ্রিপ মুচড়ে দেখালাম।

    গিয়ারশিফট?

    আমি এটা আমার বাম কাফ মাসলের নিচে দেখালাম।

    খুব ভাল। আমি মনে করি তুমি সব যন্ত্রপাতির ব্যাপারে জেনে গেছে। এ তোমার এটাকে শুধু চালাতে হবে।

    আহ-হা। আমি বিড়বিড় করলাম। কিছু বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। আমার পেটের ভিতর অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমার গলা ভেঙে গেছে। আমি ভীত ছিলাম। আমি নিজেকে বলার চেষ্টা করছিলাম এই ভয়টা ভিত্তিহীন। আমার জীবনে এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জিনিস ঘটে গেছে। সেটার সাথে তুলনা করে দেখলে কেন কোন কিছু আর আমাকে ভীত করে তুলবে? আমার এখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও হাসা উচিত।

    আমার পেটের ভেতর অস্বস্তি হচ্ছিল।

    আমি সোজা সামনের লম্বা ময়লা রাস্তার দিকে তাকালাম। দুপাশে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে। রাস্তাটা বালুময় এবং ভেজা। কাদার চেয়ে ভাল।

    আমি তোমাকে ক্লাচের নিচে ধরে রাখব। জ্যাকব নির্দেশনা দিল।

    আমি আঙুলগুলো দিয়ে ক্লাচটাকে ধরে রাখলাম।

    এখন এটাই সবচেয়ে সংকটময় জিনিস বেলা। জ্যাকব জোর দিল।

    এটাকে কোনমতে যেতে দিও না, ঠিক আছে? আমি তোমাকে জানিয়ে দিতে চাই যে তুমি একটা জীবন্ত গ্রেনেড নিয়ে কাজ করছ। পিন খোলা হয়ে গেছে এবং তুমি এটা এখনও ধরে আছ।

    আমি শক্ত করে চেপে বসলাম।

    ভাল। তুমি কি মনে করো তুমি কিক দিয়ে স্টার্ট দিতে পারবে?

    যদি আমি আমার পা নাড়াই আমি পড়ে যাব। আমি দাঁতে দাঁত চেপে কোনমতে তাকে কথাটা বললাম। আমার আঙুলগুলো জীবন্ত গ্রেনেডটা শক্ত করে ধরে আছে।

    ঠিক আছে। আমি এটা করে দিচ্ছি। ক্লাচটাকে কোনমতেই যেতে দিও না।

    সে একটু পিছিয়ে গেল। তারপর হঠাৎ করে তার পা পেডালের কাছে নিয়ে চাপ দিল। সেখানে প্রথমে একটা মৃদু গোঙানীর শব্দ। তার শরীরের ভারে মোটরসাইকেল একটু নড়ে উঠল। আমি এক পাশে পড়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু এটা আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়ার আগেই জ্যাকব ধরে ফেলল।

    স্থির হয়ে থাক। সে উৎসাহ দিল। তুমি কি এখনও ক্লাচটাকে ধরে আছো?

    হ্যাঁ। আমি শ্বাস ছাড়লাম।

    তোমার পা নামিয়ে রাখ- আমি আবার চেষ্টা করে দেখছি। কিন্তু সে আমার নিরাপত্তার জন্য তার হাত পিছনের সিটের উপর রাখল।

    ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার জন্য তার আরো চারটে বেশি কিক দিতে হলো। আমি অনুভব করলাম মোটরসাইকেলটা আমার নিচে এমনভাবে কাঁপতে থাকে যেন এটা কোন রাগী জানোয়ার। আমি ক্লাচটা ধরে রাখলাম যতক্ষণ না আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়।

    চেষ্টা করো থ্রটল থেকে বের হতে। সে পরামর্শ দিল। খুব আস্তে আস্তে। কোনমতে ক্লাচটাকে ছেড়ে দিও না।

    দ্বিধান্বিতভাবে, আমি ডান হ্যান্ডেলটা ঘুরালাম। যদিও নড়াচড়া খুবই অল্প ছিল, বাইকটা আমার নিচে গোঙাতে থাকে। এটাকে এখন রাগান্বিত এবং ক্ষুধার্ত মনে হতে থাকে। জ্যাকব গভীর তৃপ্তি নিয়ে হাসল।

    তোমার কি মনে আছে কীভাবে প্রথম গিয়ারটাকে ছাড়তে হয়? সে জিজ্ঞেস করল।

    হা।

    বেশ এগিয়ে যাও এবং এটা করে দেখাও।

    ঠিক আছে।

    সে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করল।

    বাম পা। সে বলে দিল।

    আমি জানি। আমি গভীর শ্বাস নিয়ে বললাম।

    তুমি কি নিশ্চিত তুমি এটা করতে চাচ্ছ? জ্যাকব জিজ্ঞেস করল। তোমাকে খুব ভীত দেখাচ্ছে।

    আমি ঠিক আছি। আমি বললাম। আমি গিয়ারে কিক দিয়ে নিচে নামালাম।

    খুব ভাল। সে প্রশংসা করল। এখন খুব শান্তভাবে ক্লাচটাকে তুলে ফেল। ছেড়ে দাও।

    সে বাইকের পাশ থেকে এক ধাপ সরে গেল।

    তুমি আমাকে এই গ্রেনেডের হাতে ছেড়ে দিচ্ছ? আমি অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞেস করলাম। কোন আশ্চর্য নয় সে পিছিয়ে যাচ্ছে।

    এভাবে চলতে হয় বেলা। শুধু এটা একটু একটু করে এগুতে হয়।

    আমি হাতের গ্রিফ ছাড়তে শুরু করতেই ধাক্কা খেলাম। এসবের মাঝে একটা কণ্ঠস্বর ঢুকে পড়েছে। সেটা এমনভাবে বলছিল যেন সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

    এটা বেপরোয়া, শিশুসুলভ এবং ইডিয়োটিক, বেলা। নরম ভালভেটের মত কণ্ঠস্বর আমাকে বলল।

    মোটর সাইকেল আমাকে নিয়ে এগিয়ে গেল। তারপর হঠাৎ আমাকে মাটি থেকে উঁচুতে তুলে আছাড় দিয়ে আমার উপর পড়ল। ইঞ্জিনের গর্জন আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগল।

    বেলা? জ্যাকব আমার উপর থেকে ভারী বাইকটা আস্তে আস্তে সরিয়ে দিল। তুমি কি ব্যথা পেয়েছো?

    কিন্তু আমি কিছুই শুনছিলাম না।

    আমি তোমাকে সেটা বলেছিলাম। সেই উপযুক্ত কণ্ঠস্বরটা বলে চলল। কাঁচের মত ঝকঝকে কণ্ঠস্বর।

    বেলা? জ্যাকব আমার কাধ ধরে ঝাঁকি দিল।

    আমি ঠিক আছি। আমি বিড়বিড় করে বললাম। আমি এখনও ঘোরের মধ্যে আছি।

    ভাল থাকার চেয়ে বেশি কিছু। আমার মাথার মধ্যে সেই কণ্ঠস্বর ফিরে এসেছে। এটা এখনও আমার কানের মধ্যে বাজছে। নরম মসৃণ প্রতিধ্বনির মত।

    তাড়াতাড়ি সম্ভাব্য সম্ভবনাগুলো খতিয়ে দেখলাম। এখানে কোন পরিচিটিমুলক কিছু ছিল না। এই রাস্তা আমি কখনো দেখিনি। এমন কিছু করছিলাম যা আমি এর আগে কখনও করিনি। সুতরাং এই হ্যালুসিনিশেন অবশ্যই অন্য কিছুর উপর নির্ভর করছে… আমি অনুভব করলাম আমার শিরাপথ দিয়ে এড্রেনালিন আবার প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে। আমি ভাবলাম আমার কাছে উত্তর আছে। কিছু এড্রেনালিনের সমম্বয় এবং বিপদের। অথবা হতে পারে শুধুমাত্র বোকামোর।

    জ্যাকব আমাকে পায়ের উপর টেনে দাঁড় করাল।

    তুমি কি তোমার মাথায় আঘাত পেয়েছো? সে জিজ্ঞেস করল।

    আমি তা মনে করি না। আমি চারিদিকে মাথা নাড়িয়ে দেখলাম। মাথা ঝাঁকিয়ে পরীক্ষা করলাম। আমি বাইকটার ক্ষতি করিনি, করেছি কি? এই চিন্তা আমাকে দুশ্চিন্ত য় ফেলে দিল। আমি আবার এই পদ্ধতিতে চেষ্টা করার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলাম। বেপরোয়া হয়ে কোন কিছু করতে গেলেই মূল্য দিতে হচ্ছে। হতে পারে আমি কোন একটা পথ পাব এই হ্যালুসিনেশন একত্রিত করার। যেটা আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    না। তুমি শুধু ইঞ্জিনটা বন্ধ করে দিয়েছে। জ্যাকব বলল। আমার চিন্তাভাবনার মধ্যে বাধা দিল। তুমি ক্লাচটা খুব দ্রুত ছেড়ে দিয়েছিলে।

    আমি স্বীকার করলাম। চল আরেকবার চেষ্টা করে দেখি।

    তুমি কি নিশ্চিত? জ্যাকব জিজ্ঞেস করল।

    হ্যাঁ।

    এইবার আমি নিজেই নিজেই কিক দিয়ে স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করলাম। এটা বেশ জটিল ব্যাপার। বেশি শক্তি দেয়ার জন্য আমাকে প্যাডেলের উপর কিছুটা লাফ দিয়ে উঠতে হচ্ছিল। প্রতিবার আমি তাই করছিলাম। বাইক চেষ্টা করছিল আমাকে প্রতিহত করতে। জ্যাকবের হাত হ্যান্ডেলবারের উপর ছিল। প্রস্তুত ছিল আমাকে ধরার জন্য যদি সেটার দরকার হয়।

    আমি বার কয়েক ভাল চেষ্টা করলাম। এমনকি কয়েকটা খারাপ হলেও। তারপর আমার নিচে ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল। গ্রেনেড ধরার কথা মনে পড়ে গেল। আমি থ্রটলটা পরীক্ষা করে দেখলাম। এটা সামান্য স্পর্শেই কাজ করছে। আমার হাসি এখন জ্যাকবের মুখে প্রতিফলিত হচ্ছে।

    ক্লাচের ব্যাপারে সহজ হও। সে আমাকে মনে করিয়ে দিল।

    তুমি কি নিজেকে মেরে ফেলতে চাও, তারপর? এটা কি হচ্ছে? অন্য কণ্ঠস্বরটা আবার কথা বলা শুরু করল। সেই কণ্ঠস্বর খুবই তীব্র।

    আমি জোর করে হাসলাম-এটা এখনও কাজ করছে–আমি প্রশ্নটা উপেক্ষা করে গেলাম। জ্যাকব আমার মধ্যে এখন আর সিরিয়াস কিছু হতে দেখল না।

    চার্লির কাছে বাসায় ফিরে যাও। কণ্ঠস্বরটা আদেশ দিল। মোটর সাইকেলের চলন্ত সৌন্দর্য আমাকে মোহিত করল। আমি আমার স্মৃতিতে এটা কোন মতেই হারাতে দিতে চাই না। যেকোন মূল্যেই না।

    খুব ধীরে ধীরে সহজ হও। জ্যাকব আমাকে উৎসাহিত করল।

    আমি চেষ্টা করব। আমি বললাম। এটা আমাকে বিরক্ত করল যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি দুজনের প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছি।

    আমার মাথার ভেতরের কণ্ঠস্বরটা মোটরসাইকেলের গর্জনের বিপরীতে গর্জাতে লাগল।

    এইবার চেষ্টা করেও কণ্ঠস্বরটা আর আমাকে চমকে দিতে পারল না। আমি আমার হাত খুব অল্প অল্প করে সহজ করতে থাকলাম। হঠাৎ গিয়ার ধরা পড়ল এবং আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল।

    আমি যেন উড়ছিলাম।

    বাতাস লাগছিল যেটা আগে সেখানে ছিল না। আমার মাথার পাশ দিয়ে বাতাস বয়ে যাচ্ছিল এবং আমার চুলগুলোকে পিছনের দিকে উড়িয়ে নিলি। আমি অনুভব করছিলাম আমার পেটের ভেতর সেই শুরুর সময়কার অনুভূতি ফিরে এসেছে। আমার শরীরের ভিতর দিয়ে এড্রেনালিন প্রবাহ হচ্ছে। আমার শিরায় আঘাত করছে। গাছগুলো আমার পাশ দিয়ে দ্রুত সরে সরে যাচ্ছে। যেন একটা ঝাপসা সবুজের দেয়াল।

    কিন্তু এটা কেবলমাত্র প্রথম গিয়ারে। আমার পা গিয়ারশিফটের উপর চুলাচ্ছিল যখন আমি আরো গ্যাসের জন্য চাপ দিচ্ছিলাম।

    না, বেলা। রাগান্বিত, মধুর স্বরের কণ্ঠস্বর আমার কানের কাছে আদেশ দিল। দেখ, তুমি কি করছ!

    গতির কারণে আমি অনেক দূর চলে এসেছি। সামনের রাস্তা ধীরে ধীরে বাম দিকে বেকে গিয়েছে। আমি তখনও সাজানো চলেছি। জ্যাকব আমাকে বলে দেয় নাই। কীভাবে ঘুরাতে হয়।

    ব্রেক, ব্রেক। আমি নিজে নিজে বিড়বিড় করলাম। আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার ডান পায়ের নিচে আঘাত করলাম, যেন আমি আমার ট্রাক চালাচ্ছি।

    মোটরসাইকেলটা হঠাৎ করে আমার নিচে অস্থির হয়ে পড়ল। প্রথমে এক দিকে কাঁপছিল। তারপর অন্য দিকে। এটা আমাকে সবুজ দেয়ালের দিকে টেনে নিচ্ছিল। আমি তখনও বেশ বেগেই চলছিলাম। আমি চেষ্টা করছিলাম হ্যান্ডেলবারকে অন্যদিকে ঘুরাতে। হঠাৎ আমার ওজন বাইকটাকে মাটির দিকে ধাক্কা দিল। এখনও গাছের দিকেই ঘুরে যাচ্ছে।

    মোটরসাইকেল আমাকে উপরে রেখেই আবার মাটিতে পড়ে গেল। জোরে জোরে শব্দ করছিল। আমাকে টেনে নিয়ে চলেছিল ভেজা বালির উপর। ধীরে ধীরে এটার গতি কমছিল। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমার মুখ মসে ভরে গিয়েছিল। আমি মাথা উপরে তোলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সেখানে কিছু একটা ছিল।

    আমার মাথা ঘুরছিল। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। এটা শুনে মনে হচ্ছিল সেখানে তিনটি জিনিসের উপস্থিতি ছিল। মোটর সাইকেল আমার উপরে, আমার মাথার ভেতরের কণ্ঠস্বর এবং আরো অন্য একটা কিছু…

    বেলা! জ্যাকব চেঁচাচ্ছিল। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম অন্য মোটরসাইকেলটা আসার শব্দ।

    মোটরসাইকেল আমাকে বেশিক্ষণ মাটিতে রাখতে পারল না। আমি নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য ঘুরলাম। গর্জন ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল।

    ওয়াও। আমি বিড়বিড় করলাম। আমি বেশ উত্তেজিত। এটা তাহলে এটাই। হ্যালুসিনেশনের একটা রেসিপি- এড্রেনালিনের সাথে বিপদ, তার সাথে বোকামি। এই জাতীয় কোন কিছুর কাছাকাছি, যাই হোক।

    বেলা? জ্যাকব উদ্বিগ্নতার সাথে হামাগুড়ি দিয়ে আমার কাছে পৌঁছাল। বেলা, তুমি কি জীবিত আছো?

    আমি বেশ আছি। আমি জোর দিয়ে বললাম। আমি আমার হাত এবং পা নাড়িয়ে দেখালাম। সবকিছুই দেখে মনে হচ্ছে ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে। চলো এটা আবার করা যাক।

    আমি সেটা মনে করি না। জ্যাকবের গলায় এখনও উদ্বিগ্নতার আওয়াজ। আমি মনে করি আমি তোমাকে আগে হাসপাতালে চালিয়ে নিয়ে যাই। সেটাই ভাল হবে।

    আমি ভাল আছি।

    উম, বেলা? তোমার কপালে বেশ বড় রকমের একটা কেটে গেছে। এবং এটা থেকে রক্ত ঝরছে। সে আমাকে জানাল।

    আমি কপালের উপর হাত দিলাম। অবশ্যই অনেকটা কেটেছে। এটা বেশ ভেজা ভেজা এবং চটচটে। আমি কোনকিছুর গন্ধ পাচ্ছিলাম না। শুধু আমার মুখের উপরের ভেজা মসের গন্ধ ছাড়া। সেটা আমাকে বমিবমি ভাবের উদ্রেক করছিল।

    ওহ, আমি দুঃখিত জ্যাকব। আমি কাটা জায়গাটায় বেশ জোরে চাপ দিলাম। যাতে বেরুনো রক্তটা আবার ভেতরে ঢুকে যায়।

    কেন তুমি রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাচ্ছ? সে বিস্মিতভাবে একটা হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে টেনে তুলল। চল যাই। আমি চালাব। সে চাবির জন্য হাত বাড়িয়ে দিল।

    মোটরসাইকেলগুলোর কি হবে? চাবিটা তার হাতে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম।

    সে এক সেকেন্ডের জন্য ভাবল। এখানে অপেক্ষা কর। এইটা নাও। সে তার টিশার্ট খুলে ফেলল। এর মধ্যে রক্তের দাগ লেগে গেছে। এটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিল। আমি এটা লুফে নিলাম। এটা আমার কপালে জোরে চেপে বাঁধলাম। আমি এখন রক্তের গন্ধ পেতে শুরু করেছি। আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। চেষ্টা করলাম অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দিতে।

    জ্যাকব কালো মোটরসাইকেলটার উপর চড়ে বসল। এমনভাবে কিক করলো যেন একবারেই স্টার্ট নেয়। রাস্তার পাশ দিয়ে চালাতে লাগল। বালি পিছনে উড়িয়ে চলতে লাগল। যখন সে পেশাগত লোকের মত হান্ডেলবারের উপর ঝুঁকে পড়ে মাথা নিচু মুখ সামনে করে চলল, তার চুলগুলো উড়তে থাকে, তখন তাকে থলেটের মত দেখায়। আমার চোখ ঈর্ষায় ছোট ছোট হয়ে গেল। আমি নিশ্চিত মাটরসাইকেলের উপর আমাকে কখনও অমনটি দেখায় না।

    কতদূরে আমি চলে এসেছিলাম দেখে বিস্মিত হলাম। আমি খুব কমই দূরত্বটা দেখতে পেলাম। সে শেষপর্যন্ত ট্রাকের কাছে পৌঁছাল। সে বাইকটা ট্রাকের পিছনের বেড়ে রেখে ড্রাইভারের সিটে বসল।

    আমি খুব একটা খারাপবোধ করছিলাম না। সে আমার ট্রাকটা নিয়ে খুব চালিয়ে আমার কাছে ফিরে এল। আমার মাথা কিছুটা ব্যথা দিচ্ছিল। আমার পেটের ভেতরেও অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। কিন্তু ক্ষতটা খুব বেশি কিছু নয়। মাথায় কাটলে যে কোন জায়গার চেয়ে বেশি রক্তপাত হয়। সেজন্য এত গুরুত্ব দেয়াটা অতোটা জরুরি নয়।

    জ্যাকব ট্রাক নিয়ে আমার পাশে এল। নামল। আমার কোমর জড়িয়ে ধরল।

    ঠিক আছে। এখন চলো তোমাকে ট্রাকে তুলে দেই।

    আমি সত্যিই বেশ ভাল আছি। আমি তাকে নিশ্চয়তা দিলাম যখন সে আমাকে সাহায্য করতে থাকে। এটা নিয়ে এত বেশি মাথা ঘামিয়ো না। এটা শুধু মাত্র একটুখানি রক্তপাত।

    এটা বেশ খানিকটা রক্ত। তাকে বিড়বিড় করে বলতে শুনলাম। সে আমার মোটরসাইকেলটা তুলতে গেল।

    এখন, এইসব নিয়ে এক সেকেন্ডের জন্য ভাব। সে আমার পাশে এলে আমি বলতে শুরু করলাম। তুমি এটার জন্য যদি আমাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাও। চার্লি অবশ্যই এটা শুনতে পাবে। আমি আমার জিন্সে লেগে থাকে বালি ও ময়লার দিকে তাকালাম।

    বেলা, আমি মনে করি তোমার সেলাইয়ের দরকার। আমি তোমাকে রক্তপাতে মারা যেতে দিতে পারি না।

    আমি মরব না। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম। প্রথমে বাইকগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। তারপর হাসপাতালে যাওয়ার আগে আমরা আমাদের বাড়িতে যাব যাতে আমি এই সব সাক্ষ্যপ্রমাণকে মুছে ফেলতে পারি।

    চার্লির ব্যাপারটা কি?

    সে বলেছিল সে আজ কাজে যাবে।

    তুমি কি সে বিষয়ে সত্যিই নিশ্চিত?

    আমাকে বিশ্বাস করো। আমার খুব সহজেই রক্তপাত হয়। এটা দেখতে যত ভয়ংকর দেখায় প্রকৃতপক্ষে ততটা ভয়ংকর নয়।

    জ্যাকব খুশি হলো না। তার মুখে ভুকুটির একটা ছাপ লেগে রইল। কিন্তু সে আমাকে কোন সমস্যায় ফেলতে চাইল না। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। তার শার্টটা আমার মাথায় ধরে রাখলাম। সে ফর্কের দিকে চালিয়ে নিয়ে যেতে লাগল।

    আমি যেমনটি চেয়েছিলাম মোটরসাইকেলগুলো তার চেয়ে অনেক ভাল। এটা দিয়ে আমার আসল উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে। আমি প্রতারণা করেছি। আমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছি। আমি এখন উদ্দেশ্যহীনভাবে বেপরোয়া। যার জন্য আমি এখন কিছুটা হলেও দুভোর্গ অনুভব করছি। দুপক্ষ থেকেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা হয়েছে।

    তারপর হ্যালুসিনেশেনের চাবিকাঠি আবিষ্কার! অন্ততপক্ষে, আমি আশা করি আমি সেটা পেরেছি। আমি সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা করে দেখতে যাচ্ছি। হতে পারে তারা আমাকে খুব তাড়াতাড়িই জরুরি বিভাগ থেকে ছেড়ে দেবে। আজ রাতেই আমি সেটা চেষ্টা করে দেখতে পারব।

    রাস্তার পাশ দিয়ে চালিয়ে যাওয়া বেশ বিস্ময়কর। বাতাসের চেয়ে আমার মুখের উপর গতি এবং স্বাধীনতা… এটা আমাকে অতীত জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কোন রাস্তা ছাড়াই যাওয়া। যখন সে দৌড়ে চলে গিয়েছিল। আমি সেই চিন্তা সেখানেই বন্ধ করলাম।

    তুমি এখনও ঠিক আছে? জ্যাকব পরীক্ষা করতে চাইল।

    ইয়াও। আমি চেষ্টা করলাম যেন স্বাভাবিক দেখায়।

    যাই হোক। সে যোগ করল। আমি আজ রাতে তোমার পায়ের ব্রেকটা সংযোগহীন করতে চাইছি।

    বাসায়, আমি প্রথমে আয়নায় নিজেকে দেখতে চাইলাম। এটা মোেটামুটি ভয়াবহ অবস্থা। রক্ত জমাট বদ্ধ বস্থায় আমার থুতনি ও কপালে লেগে আছে। আমার চুলে কাদা শুকিয়ে গেছে। আমি বজেকে ক্লিনিকালি পরীক্ষা করে দেখলাম। ভান করলাম যে রক্ত যেভাবে লেগেছে তাতে আমার পাকস্থলী কোন সমস্যা করল। আমি মুখ দিয়ে শ্বাস নিলাম। বেশ ভালই আছি।

    আমি নিজেকে যতটা পারা যায় পরিষ্কার করলাম। তারপর আমি নোংরাগুলো লুকিয়ে ফেললাম। রক্তমাখা জামাকাপড়গুলো আমার স্ত্রী বাস্কেটের একেবারে তলায় রাখলাম। নতুন জিন্স ও গলাবন্ধ শার্ট পরলাম। খুব সাবধানেই পরতে হলো। আমি এগুলো সব এক হাতেই করলাম। সবগুলো জামাকাপড়ের রক্ত দূর করলাম।

    তাড়াতাড়ি করো। জ্যাকব ডাকল।

    ঠিক আছে। ঠিক আছে। আমিও প্রতি উত্তরে চেঁচালাম। আমি নিশ্চিত হয়ে নিলাম যে কিছুই আর ঝামেলা করার মত নেই। আমি নিচতলায় চলে এলাম।

    আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? তাকে জিজ্ঞেস করলাম।

    বেশ ভাল। সে স্বীকার করল।

    কিন্তু আমাকে কি এমনটি দেখাচ্ছে যে আমি তোমার গ্যারেজের ভেতরে ছিলাম এবং তোমার একটা হাঁতুড়ির আঘাত আমার মাথায় লেগেছে?

    নিশ্চয়! আমার সেরকম ধারণা।

    তাহলে চল যাই।

    জ্যাকব তাড়াতাড়ি বের হতে চাইল। আবার নিজে চালানোর জন্য জোর দিল। হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক পথ চলে আসার পর বুঝতে পারলাম সে তখনও জামা ছাড়া।

    আমি দোযার মত ভ্রু কুঁচকালাম। তোমার জন্য একটা জ্যাকেট জোগাড় করা দরকার।

    ঠিকই তো আমাকে কিছু একটা দেয়া দরকার। সে টিজ করল। পাশাপাশি এটা ঠাণ্ডা নয়।

    তুমি কি মজা করছ নাকি? আমি কাঁপছিলাম এবং হিটারটা অন এনে দিলাম।

    আমি জ্যাকবকে দেখছিলাম। সে শুধু কাঠিন্য নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ আরামেই আছে। সে একহাত আমার সিটের নিচে রেখেছিল যাতে সেটা বেশ উষ্ণ থাকে।

    জ্যাকবকে সত্যিই ষোলর চেয়ে বেশি বড় দেখায়। যদিও সেটা চল্লিশের মত নয়, কিন্তু হতে পারে আমার চেয়ে বড়। কুইল তার মত এতটা পেশীবহুল নয়।

    জ্যাকব বেশ মোটা হাড়ের মানুষ। তার মাংসপেশীগুলো লম্বাটে টাইপের। কিন্তু সেগুলো অবশ্যই তার মসৃণ চামড়ার নিচে। তার চামড়ার রঙ এত সুন্দর যেটা আমাকে ঈর্ষান্বিত করে।

    আমি যে খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করছি জ্যাকব সেটা লক্ষ্য করল।

    কি? সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল।

    কিছুই না। আমি এটা আগে কখনও বুঝতে পারিনি। তুমি কি জানো তুমি খুবই সুন্দর।

    কথাটা আমার মুখ ফস্কে বেরুতেই চিন্তিত হয়ে পড়লাম, সে কথাটার হয়তো অন্য কোন অর্থ বের করে বসবে।

    কিন্তু জ্যাকব শুধু তার চোখ ঘোরাল। তোমার মাথায় বেশ আঘাত পেয়েছে, তাই? ঘিলু নড়ে গেছে।

    আমি সিরিয়াস।

    বেশ। একটুখানি ধন্যবাদ।

    আমি মুখ ভেঙচালাম। ধন্যবাদ দেয়ার জন্য তোমাকেও ছোটখাট ধন্যবাদ।

    আমার কপালের কাটা জোড়া লাগাতে সাতটা সেলাই দেয়া লাগল। লোকাল এ্যানেসথেশিয়ার কারণে সেখানে সেলাইয়ের সময় কোন ব্যথা ছিল না। জ্যাকব আমার হাত ধরে রেখেছিল যখন ডা. স্নো সেলাই দিচ্ছিলেন। ব্যাপারটা এতটা হৃদয়হীন কেন হয়- আমি চেষ্টা করছিলাম কথাটা চিন্তা না করতে।

    আমরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলাম। এই সময়ের মধ্যে আমি জ্যাকবকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম। রাতে চার্লির জন্য রান্না করার জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলাম। চার্লিকে দেখে মনে হলো জ্যাকবের গ্যারেজে আমার পড়ে যাওয়ার কথাটা বিশ্বাস করেছে। এতসবের পর, আমি জরুরি বিভাগে যাওয়াটার পূর্বে তাকে জানাইনি।

    আজ রাতে প্রথম রাতের মত অতটা খারাপ ছিল না। পোর্ট এ্যাঞ্জেলে সে সঠিক কণ্ঠস্বর শোনার পরের মত। ক্ষতটা ফিরে এসেছে, সেই একইভাবে যখন আমি জ্যাকবকে থেকে দূরে থাকি। কিন্তু এটা এতটা খারাপভাবে চারিদিক থেকে আসেনি। আমি এর মধ্যেই সামনে এগোনোর পরিকল্পনা করে ফেলেছি। আরো সামনে দেখার, আরো বেশি বিভ্রান্তির জন্য। সেখানে একটা বিছিন্নতা ছিল। আমি জানতাম আমি আরো ভাল বোধ করব যখন আমি আগামীকাল আবার জ্যাকবের সাথে থাকব। সেটাই এই ক্ষত এবং পরিচিত ব্যথাটা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জিত হলো। কিছুটা রিলিফও হলো। দুঃস্বপ্নও তার শক্তিমত্তা থেকে কিছুটা কমে এল। আমি কোন কিছুর জন্য ভীত ছিলাম না। সবসময়ের মতই। কিন্তু আমি খুব অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম, যখন আমি অপেক্ষা করছিলাম, সেই মুহূর্তের জন্য। চিৎকারের জন্য। আমি জানতাম দুঃস্বপ্ন শেষের দিকে চলে এসেছে।

    পরবর্তী বুধবার, জরুরি বিভাগ থেকে বাসায় চলে আসার পর ডা. জেরান্ডি বাবাকে জানিয়েছিল আমার মাথা ঘোরা ভাবের সম্ভবনা আছে। তাকে উপদেশ দিয়েছিল প্রতি দুঘণ্টা অন্তর আমাকে জাগিয়ে দিতে, যাতে বোঝা যায় এটা ক্ষতিকর কিছু নয়। আমার দুর্বল ব্যাখ্যার জন্য। চার্লির চোখ জোড়া আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

    হতে পারে তুমি শুধু গ্যারেজ থেকে বাইরে থাক, বেলা। তিনি সেই রাতের ডিনারের পরে এই উপদেশ দিলেন।

    আমি ভীত হলাম। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলাম হয়তো চার্লি এমন কিছু করবে আমাকে লা পুশে যেতে নিষেধ করবে। আর সাথে সাথে আমার মোেটরসাইকেল চালানোও বন্ধ হয়ে যাবে। আমি এটা সহজে ছেড়ে দিচ্ছি না-আমি আজ সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হ্যালুসিনেশনের মধ্যে ছিলাম। সেই অদ্ভুত নরম কণ্ঠস্বরটা আমি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আগে কমপক্ষে পাঁচবার আমাকে ডেকেছে। আমাকে গাছের কাছে নিতে সাহায্য করেছে। আমি কোন অভিযোগ ছাড়াই আজ রাতে সবরকম ব্যথা সহ্য করে নিতে পারব।

    এইটা গ্যারেজের মধ্যে হয়নি। আমি তাড়াতাড়ি প্রতিবাদ করলাম। আমরা হাইকিংয়ে গিয়েছিলাম এবং আমি একটা পাথরের উপর পড়ে গিয়েছিলাম।

    কখন থেকে তুমি হাইক শুরু করেছ? চার্লি অবিশ্বাসের স্বরে জিজ্ঞেস করলেন।

    নিউটনের ওখানে কাজ করার সময় কিছু কাজে এটা করতেই হয়। আমি নির্দেশ করলাম। প্রতিটি দিনই কিছুটা সময় বিক্রির ব্যাপারে বাইরে যেতে হয়। এমনকি এটাতে তুমি কৌতূহলী হয়ে উঠবে।

    চার্লি আমার দিকে তাকালেন। এখনও বিশ্বাস করেননি।

    আমি এখন থেকে আরো সর্তক থাকব। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, অবচেতনভাবে আমার আঙুল টেবিলের নিচে ঘোরাতে থাকলাম।

    লা পুশের চারপাশে তোমার হাইকিংয়ের ব্যাপারে আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু শহরের কাছাকাছি থাকবে, ঠিক আছে?

    কেন?

    বেশ, সম্প্রতি আমরা বেশ কিছু বন্যজন্তুর ব্যাপারে অভিযোগ পাচ্ছি। বন্য বিভাগ এটা কি ব্যাপার দেখতে যাচ্ছে। কিন্তু এই সময়ের জন্য…

    ওহ সেই বিশাল ভল্লুকটা, আমি হঠাৎ করে এটা বলে ফেললাম। হ্যাঁ। কয়েকজন হাইকার নিউটনের ওখানে এসে বলেছিল, তারা এটা দেখেছে। তুমি কি মনে করো, সেখানে সত্যিই এই জাতীয় কিছু আছে?

    তার কপাল কুঁচকে গেল। সেখানে কিছু একটা আছে। শহরের কাছাকাছি থাক। ঠিক আছে?

    নিশ্চয়, নিশ্চয় আমি তাড়াতাড়ি বললাম। তাকে দেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট মনে হলো না।

    বাবা ব্যাপারটায় নাক গলাচ্ছে। আমি জ্যাকবের কাছে অভিযোগ করলাম। শুক্রবারে স্কুলের পরে তাকে তুলে নিলাম।

    হতে পারে আমাদের মোটরসাইকেলের ব্যাপারে একটু এড়িয়ে চলতে হবে। সে আমার মুখের ভাব দেখার জন্য তাকাল। তারপর যোগ করল, কমপক্ষে এক সপ্তাহ অথবা সেরকম। তুমি এক সপ্তাহ আগে হাসপাতাল থেকে বের হয়েছে, ঠিক না?

    তুমি এখন কি করবে? আমি বললাম।

    সে আনন্দের সাথে হাসল। তুমি যেটা চাও।

    আমি এক মুহূর্তের জন্য আমি কি চাই সে সম্পর্কে ভাবলাম।

    যদি আমার মোটরসাইকেল না থাকত, আমি হয়তো আরো কোন বিপজ্জনক কিছু খুঁজে নিতাম। যেটা বিপজ্জনক এবং যাতে এড্রেনালিন প্রবাহিত হয়। সেটাই আমাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলছে। এই মুহূর্তে কিছু করতে না পারাটা কোন কাজের কথা না। ধরা যাক, আমি আবার দুশ্চিন্তায় পতিত হলাম, এমনকি জ্যাকবের সাথে থাকা সত্ত্বেও? আমাকে কোন কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে।

    হতে পারে সেখানে আরো অন্যকোন পথ খোলা আছে, আরো অন্যকোন উপাদান… অন্যকোন জায়গায়।

    বাড়িটা সম্ভবত একটা ভুল হতে পারে। কিন্তু তার উপস্থিতি অবশ্যই কোথায় আছে, আমার ভেতরে ছাড়া কোথাও না কোথাও। সেখানে কোন একটা জায়গা আছে, যেখানে তাকে আরো বেশি বাস্তব মনে হবে, এখানকার এইসব পরিচিত জায়গার চেয়েও।

    আমি একটা জায়গার কথা ভাবতে পারি যেটা হয়তো সত্য হতে পারে। একটা জায়গা যেটা সবসময় তার কাছে পরিচিত। কেউ সেখানে যায় না। একটা জাদুকরী জায়গা। আলোকিত। এমন সুন্দর জায়গা আমি আমার জীবনে মাত্র একবার দেখেছি। সূর্যালোকিত এবং তার ত্বকের উজ্জ্বল্য ছড়ায়।

    ধারণাটার মধ্যে অনেকখানি প্রাণশক্তি আছে। হতে পারে এটা ভয়ানক চিন্তা। এটা সম্বন্ধে চিন্তা করেই আমার বুকটা খালি খালি লাগতে থাকে। নিজেকে ধরে রাখা খুবই কঠিন। কিন্তু নিশ্চিতভাবে, সেখানে সব জায়গাই আছে, আমি তার কণ্ঠস্বর শুনেছি। আমি এর মধ্যেই চার্লিকে আমার হাইকিংয়ের কথা বলেছি…

    তুমি কোন বিষয় নিয়ে এত গভীর মনোযোগের সাথে ভাবছ? জ্যাকব জিজ্ঞেস করল।

    বেশ… আমি ধীরে ধীরে শুরু করলাম। আমি সেই জায়গাটা জঙ্গলের মধ্যে এক জায়গায় খুঁজে পেয়েছি। আমি এটা পেরিয়ে এসেছিলাম। হাইকিংয়ে। একটা ছোট তৃণবহুল ক্ষেত্র, সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। আমি জানি না যদি আমি নিজে নিতে এই জায়গাটা খুঁজে চলে যেতে পারতাম। এটা নিশ্চিতভাবেই নির্দিষ্ট কয়েকটা চেষ্টার পর…

    আমরা একটা কম্পাস ব্যবহার করতে পারি। তারপর একটা প্যাটার্ণ করে নিতে পারি। জ্যাকব আত্ববিশ্বাসের সাথে বলল। সে সাহায্য করতে আগ্রহী। তুমি কি জানেনা তুমি কোথা থেকে শুরু করেছিলে?

    হ্যাঁ। ট্রেইলহেডের সোজা নিচ থেকে। আমি বেশির ভাগ দক্ষিণের দিকে গিয়েছিলাম। আমি মনে করি।

    শান্ত হও। আমরা এটা খুঁজে বের করব। সবসময়ের মত, জ্যাকব আমার জন্য সবকিছু করে যা আমি চাই। সেটা কোন ব্যাপারই নয় এটা যত অদ্ভুতই হোক না কেন?

    সুতরাং শনিবার বিকেল বেলায় আমি আমার নুতন হাইকিং বুট পরে নিলাম। এটা আজ সকালে কিনেছি। কর্মচারী হিসাবে বিশ পার্সেন্ট ছাড়ের ব্যাপারটা এই প্রথমবার ব্যবহার করেছি। আমার নতুন কেনা ম্যাপটা নিলাম। তারপর লা পুশের দিকে চললাম।

    আমরা তখনই তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করতে পারলাম না। প্রথমত জ্যাকব তার লিভিংরুমের মেঝে স্প্রে করছিল–গোটা রুমে এটা বিশ মিনিট সময় নিল। সেই সময় আমি বিলির সাথে কথা বলছিলাম। বিলি আমাদের হাইকিংয়ের ব্যাপারে জানত বলে মনে হলো না। আমি বিস্মিত হলাম জ্যাকব তাকে বলেছিল আমরা কোথায় যাচ্ছি, কয়েকজনের কালো ভালুক দেখার ব্যাপারটাও জানিয়েছিল। আমি বিলিকে বলেছিলাম এই ব্যাপারে চার্লিকে কিছু না জানাতে। কিন্তু আমি ভীত যে এই অনুরোধ উল্টো ফল ফলবে।

    হতে পারে আমরা হয়তো সেই বিশাল ভালুকটা দেখতে পাব। জ্যাকব মজা করল। সে তার কাজের প্রতি মনোযোগী।

    আমি চকিতে বিলির দিকে তাকালাম। ভয় পাচ্ছিলাম চার্লির মত কোন প্রতিক্রিয়ায়।

    কিন্তু বিলি শুধু ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। সেক্ষেত্রে তোমার এক বোতল মধু নিয়ে যাওয়া উচিত, শুধু এই ক্ষেত্রে।

    জ্যাকব মুখ ভঙ্গি করল। আশা করছি তোমার নতুন বুটো জুতো দ্রুতগামী, বেলা। একটা ছোট বোতলের মধু একটা ক্ষুধার্ত ভালুককে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না।

    আমি তোমার চেয়ে অনেক দ্রুত ছুটতে পারি।

    সেটা তোমার সৌভাগ্য! জ্যাকব বলল। তার চোখ ঘুরিয়ে ম্যাপটা দেখে ভাঁজ করে রাখল। চল যাওয়া যাক।

    মজা হবে। বিলি বললেন। তার হুইলচেয়ার চালিয়ে ফ্রিজের দিকে গেলেন।

    চার্লির সাথে বাস করা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু জ্যাকবকে দেখে মনে হচ্ছে সে তার চেয়ে সহজ জীবন যাপন করে।

    আমি নোংরা রাস্তাটার শেষ মাথায় যেয়ে থামলাম। ট্রেইলহেড শুরুর চিহ্নফলকের কাছে চলে এলাম। দীর্ঘদিন পরে আমি এখানে। আমার পাকস্থলী খারাপভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করল। এটা হতে পারে খুব একটা খারাপ জিনিস। কিন্তু এটা আরো খারাপ হবে যদি আমি তাকে না শুনে যাই।

    আমি বেরিয়ে এলাম এবং গাছপালার সবুজ দেয়ালের দিকে তাকালাম।

    আমি এই পথে গিয়েছিলাম। আমি বিড়িবিড় করে বললাম। সোজা দিকে নিদের্শ দিলাম।

    উমম। জ্যাকব বিড়বিড় করল।

    কি?

    সে আমার নির্দেশিত দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর পরিষ্কারভাবে ট্রেইলটা মার্ক করে ফিরে এল।

    আমি তোমাকে একজন ট্রেইল টাইপের মেয়ে হিসাবে দেখছি।

    আমি নই। আমি হাসলাম। আমি একজন বিদ্রোহিনী।

    সে হেসে ম্যাপ বের করল।

    আমাকে এক সেকেন্ড সময় দাও। সে কম্পাসটা দক্ষ হাতে ধরল। তারপর ম্যাপের উপর ঘুরিয়ে তার নির্দেশিত জায়গায় নিয়ে এল।

    ঠিক আছে- প্রথম লাইনটা গ্রীডের দিকে। চল সেদিকে যাই।

    আমি বলতে পারি জ্যাকবকে উপরে দিকে ধীর গতির করে দিয়েছি কিন্তু সে কোন অভিযোগ করল না। আমি চেষ্টা করলাম না আমার শেষ ট্রিপটা জঙ্গলের কোন অংশে ছিল সেটা বের করতে। সেটা আসলেই খুব কঠিন ব্যাপার। সাধারণ স্মৃতিশক্তি এখনও ভয়ানক। যদি আমি পিছলে যাই, আমার বুকে ব্যথা হবে, শ্বাস নিতে সমস্যা হবে এবং আমি এগুলো জ্যাকবের কাছে কীভাবে ব্যাখ্যা করব?

    আমি যেটা বর্তমানে ভাবছি সেটার আলোকপাত করা কঠিন নয়। জঙ্গলটা দেখতে পেনিনসুলার যেকোন অংশের মতই। আর জ্যাকব এখন একটা অন্যরকম মুডে আছে।

    সে আনন্দের সাথে শিষ দিল। একটা অপরিচিত সুরে। তার হাত দোলাচ্ছে। সে খুব সহজভাবেই এবড়োখেবড়ো পথে নিচের দিকে যাচ্ছে। ছায়া ততটা অন্ধকার নয় যতটা মনে হয়।

    জ্যাকব কয়েক মিনিট পরপরই কম্পাস দেখছে। আমাদেরকে একটা সোজা লাইনে রেখেছে। তাকে দেখে সত্যিই মনে হচ্ছে কি করতে যাচ্ছে তা সে ভালভাবেই জানে। আমি তাকে সৌজন্যতা দেখাতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমি নিজেই ধরা পড়লাম। কোন সন্দেহ নেই তার বয়সের সাথে আরো কয়েক বছর যুক্ত হতে যাচ্ছে।

    আমার মন বিস্মিত যখন আমি হাঁটছিলাম। কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। সমুদ্রের ক্লিফের ধারের সেই কথোপকথন আমি ভুলি নাই। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেটা আবার আসার জন্য। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে সেটা এখুনি ঘটবে।

    হেই…জ্যাক? আমি দ্বিধান্বিতভাবে জিজ্ঞেস করলাম।

    ইয়ে?

    এমব্রির ব্যাপারটা কি? সে কি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে?

    জ্যাকব এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে রইল। এখনও সামনের দিকে লম্বা পা। এগিয়ে যাচ্ছে। যখন সে প্রায় ফিট দশেক আগে সে থেমে গেল। আমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

    না, সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে নাই। জ্যাকব বলল যখন আমি তার কাছাকাছি গেলাম। আমি আবার হাঁটা শুরু করতে পারলাম না। আমার এখন কিছুটা সময় দরকার।

    এখনও স্যামের সাথে।

    হু।

    সে তার হাত আমার কাঁধে রাখল। তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।

    তার হাত নিয়ে আনন্দিতভাবে ঝাঁকাতে পারলাম না।

    তারা কি এখনও তোমার দিকে মজার দৃষ্টিতে দেখছে?

    জ্যাকব গাছের দিকে তাকিয়ে রইল। মাঝে মাঝে।

    আর বিলি?

    আগের মতই সাহায্যকারী। সে রাগান্বিত স্বরে বলল, যেটা আমাকে বিরক্ত করল।

    আমাদের কোচ সবসময় খোলা মনের। আমি বললাম।

    সে হাসল। কিন্তু চার্লির ব্যাপারে সেই অবস্থানটা চিন্তা করো। যখন বিলি পুলিশকে ফোন করেছিল আমার কিডন্যাপিংয়ের ব্যাপারে।

    আমিও হাসলাম। খুশি যে জ্যাকব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।

    আমরা থামলাম যখন জ্যাকব জানাল আমরা ছয় মাইল এসেছি। এখন অন্যপথে যাওয়ার সময় হয়েছে। সে গ্রিডের অন্য লাইনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। সবকিছু সব জায়গায় একই রকম লাগছিল। আমার এরকম অনুভূতি হচ্ছিল যেন আমার বোকামির দণ্ড সবকিছু পন্ড হয়ে গেছে। আমি আরো অন্ধকারের ভেতর সেধিয়ে যাচ্ছিলাম। সন্ধ্যেটা রাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু জ্যাকব তখন আরো আত্মবিশ্বাসী।

    যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিশ্চিত আমরা সঠিক জায়গা থেকে শুরু করেছি… সে আমার দিকে তাকাল।

    হ্যাঁ। আমি নিশ্চিত।

    তাহলে আমরা এটা খুঁজে বের করব। সে প্রতিজ্ঞা করল। আমার হাত আঁকড়ে ধরে আমাকে টেনে নিয়ে গেল ফার্ণের জঙ্গলের মধ্যে। অন্যদিকে সেখানে একটা ট্রাক ছিল। সে অনুমানে সেদিকে গর্বিতভাবে গেল আমাকে বিশ্বাস করো।

    তুমি ভাল। আমি স্বীকার করলাম। পরবর্তী সময়ে আমরা ফ্লাশ লাইট নিয়ে আসবো।

    আমরা এখন থেকে রবিবারটা হাইকিংয়ের জন্য রেখে দেব। আমি জানতাম না তুমি এতটা ধীর গতির।

    আমি হাত টেনে নিলাম এবং ড্রাইভারের পাশটাতে গিয়ে বসলাম, যখন সে আমার প্রতিক্রিয়া দেখছিল।

    সুতরাং তুমি আগামীকাল আবার চেষ্টা করে দেখতে চাও? সে জিজ্ঞেস করল, প্যাসেঞ্জারের সিটে বসল।

    অবশ্যই, না হলে তুমি কি চাও যে আমি একাকী তোমাকে ছাড়া সেখানে যাই, যাতে তুমি আমার মুখ দেখতে না পাও।

    আমি আসব। সে নিশ্চিত করল। যদি তুমি আবার হাইকিংয়ে আস তোমার হয়তো নেয়ার জন্য কিছু জিনিস দরকার হতে পারে। আমি বাজি ধরতে পারি তুমি এই নতুন বটুজোড়া পরে এখন ভাল বোধ করছ।

    কিছুটা। আমি স্বীকার করলাম। আমি অনুভব করছিলাম আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুভূতি।

    আমি আশা করছি, আগামীকাল আমরা ভালুক দেখতে পাব। আমি এখন এই ব্যাপারে কিছুটা অসুবিধেয় আছি।

    হ্যাঁ। আমিও। আমি হাসতে হাসতে একমত হলাম। হতে পারে আগামীকাল আমরা সৌভাগ্যের দেখা পাব। কিছু একটা আমাদের খেয়ে ফেলবে।

    ভালুক মানুষ খেতে চায় না। তাদের কাছে আমরা খুব একটা সুস্বাদু নই। সে মুখ ভেঙচে আমার দিকে তাকাল। অবশ্য। তুমি হয়তো একটা ব্যতিক্রম হতে পার।

    আমি বাজি ধরতে পারি তুমি খুব সুস্বাদু।

    তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে বললাম। সেই প্রথম ব্যক্তি নয় যে এটা আমাকে বলেছে।

    .

    ০৯.

    সময় আগের চেয়ে অনেক দ্রুততালে কেটে যাচ্ছে। স্কুল, বাড়ির কাজ, এবং জ্যাকবকে নিয়েই সময় কেটে যাচ্ছে। যদিও এই তালিকার ওভাবে প্রয়োজন নেই। তারপরেও একটা পরিচ্ছন্ন তালিকা তৈরি হয়েছে। চার্লির আশা পুরণ হয়েছে। আমি আর কোন দুঃখজনক অবস্থার মধ্যে নেই। অবশ্যই আমি নিজেকে পুরোপুরি বোকা বানাতে পারছি না। যখন আমি আমার জীবনের সবকিছু থামিয়ে দেই, যেটা প্রায়ই হয় না, আমি আমার আচরণের কোন ব্যাখ্যা দিতে পারি না।

    আমি যেন একটা হারানো চঁদ আমার গ্রহ কোন না কোনভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। এমনটি যেন কোন উদ্দেশ্যে ছাড়াই আমি চলেছি। আমার কক্ষপথে থাকা গ্রহকে কেন্দ্রে করে মহাকর্ষের সুত্রকে অবহেলা করেই চলেছি আমি।

    আমি মোটর সাইকেল চালানোয় আগের চেয়ে অনেক ভাল করছি। তার মানে মাত্র কয়েকটা ব্যান্ডেজ-যা চার্লিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। কিন্তু এটার আরো মানে আমার মাথার ভেতরের কণ্ঠস্বরটা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আমি এটা শুনিনি। আমাকে শান্ত দেখালে ভীত হয়ে পড়েছি। আমি নিজেকে সেই তৃণভূমি খোঁজার কাজে রপ্ত রেখেছি। আমি আমার মস্তিষ্ককে আরেকটা এড্রেনালিন প্রবাহের কাজে ব্যস্ত রাখছি।

    আমি অতীতের দিনগুলি নিয়ে নিজেকে আর ব্যস্ত রাখছি না। তার কোন কারণও নেই। আমি এখন যতটা সম্ভব বর্তমানেই বেশি বাস করার চেষ্টা করছি। কোন অতীত দৃশ্যে নয়। কোন ভবিষ্যতের ভাবনা নয়। সুতরাং আমি বিস্মিত সেই তারিখটায় যখন জ্যাকব হোমওয়ার্কের কাজের দিন সপ্তাহে চারদিন এগিয়ে নিয়ে এল। সে অপেক্ষা করছিল যখন আমি তার বাড়ির সামনে থামলাম।

    শুভ ভালবাসা দিবস। জ্যাকব বলল, হাসছিল, কিন্তু তার মাথা ঝুকাচ্ছিল আমাকে গ্রেটিং দেয়ার জন্য।

    তার হাতে একটা ছোট গোলাপি বক্স, সে হাতের ভারসাম্য রাখছিল। কথোপকথন চলছিল।

    বেশ, আমি খুব আনন্দিতবোধ করছি। আমি বিড়বিড় করলাম আজ কি ভ্যালেন্টাইনস ডে?

    জ্যাকব দুঃখের সাথে মাথা ঝাঁকাল। তুমি মাঝে মাঝে এত বেশি অন্যরকম হয়ে যাও! হ্যাঁ। আজ ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ তারিখ। তো, তুমি কি আমার ভ্যালেন্টাইন হতে যাচ্ছ? যদিও তুমি আমাকে পঞ্চাশ সেন্টেরও একটা গিফট বক্স দাওনি, এটাই কমপক্ষে তুমি আমার জন্য করতে পারতে।

    আমি অস্বস্তিবোধ করতে শুরু করলাম। কথাগুলো ছিল বিদ্রুপাত্বক কিন্তু এটা শুধু উপরি উপরি।

    তাহলে অনিবার্য ফলস্বরুপ কি দাঁড়াচ্ছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    সাধারণত জীবনের দাস, সেই জাতীয় কিছু একটা।

    ওহ বেশ, যদি তাই সব হয়… আমি কান্ডি নিলাম। কিন্তু কোন পথে আমাদের সীমানাটা পরিষ্কার করা যায় সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। জ্যাকবের সাথে এইসব অনেক বেশি ঝাপসা বিষয়।

    তো, তুমি আজকে কি করছ? হাইকিং অথবা জরুরি বিভাগ?

    হাইকিং। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। তুমিই একমাত্র ব্যক্তি নয় যার অবসেশন আছে। আমি ভাবতে চেষ্টা করছি যে আমি সেই জায়গাটা কল্পনা করতে পারছি… আমি দ্রু কুঁচকালাম।

    আমরা এটা খুঁজে পাব। সে আমাকে আশস্ত করল। শুক্রবারে মোটরসাইকেল? সে অফার করল।

    আমি একটা সুযোগ দেখতে পেলাম। অনেক বেশি সময় নেয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিলাম।

    আমি শুক্রবারে একটা ছবি দেখতে যাচ্ছি। আমি ক্যাফেটেরিয়ার বসে বন্ধুদের বলেছি যে আমি চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি। মাইক খুশি হবে এটা শুনে।

    কিন্তু জ্যাকবের মুখের ভাব বদলে গেল। সে নিচের দিকে তাকানোর আগেই আমি তার চোখের ভাষা পড়তে পারলাম।

    তুমিও আসতে পারবে, ঠিক আছে? আমি তাড়াতাড়ি যোগ করলাম। অথবা এটা হয়তো বেশ বিরক্তিকর দৃশ্যের ব্যাপার স্যাপার হতে পারে? দুজনের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর ব্যাপারে আমার এখনও অনেক সুযোগ আছে। আমি জ্যাকবকে আঘাত দিতে চাই না। আমরা যেকোনভাবে একত্রে সংযোজিত। তার ব্যথা, আমারও একটু হলেও ব্যথা দেয়। তবুও তার সাথে সঙ্গদানের ব্যাপারটা স্বাভাবিক। আমি মাইককে কথা দিয়েছি। কিন্তু সত্যিই এটা আমার ভেতরে কোন প্রাণপ্রাচুৰ্য্য নিয়ে আসছে না।

    তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে আমার সেখানে যাওয়া পছন্দ করবে?

    হ্যাঁ। আমি সত্তাবেই স্বীকার করলাম। জানতাম এভাবে চালিয়ে গেলে নিজের পায়ে নিজে গুলি করা হবে। যদি তুমি আমার সাথে যাও তাহলে সেটা আরো বেশি মজা হবে। কুইলকে সাথে নিয়ে এসো। আমরা এটাকে এটা পার্টি করে ফেলব।

    কুইল ব্যাপারটায় উন্মত্ত হয়ে উঠবে, বয়োঃজ্যৈষ্ট বালিকা। সে টেনে টেনে হাসল। চোখ ঘুরাল। আমি এমব্রির কথা তুললাম না। সেও তুলল না।

    আমিও হাসছিলাম আমি তাকে আমার তালিকার প্রথম দিকে রাখার চেষ্টা করব।

    আমি ইংরেজি ক্লাসে বিষয়টা মাইকের কাছে তুললাম।

    হেই মাইক, ক্লাস শেষ হলে আমি তাকে বললাম। তুমি কি শুক্রবার রাতে ফ্রি আছো?

    সে আমার দিকে তাকাল। তার নীলচে চোখ আশায় জ্বলে উঠেছে। হ্যাঁ। আছি। তুমি কি আমার সাথে বাইরে যেতে চাও?

    আমি আমার উত্তর খুব সর্তকতার সাথে দিলাম। আমি দলবদ্ধভাবে যাওয়ার কথা চিন্তা করছিলাম। আমি জোর দিলাম সেই শব্দের উপরে আমরা একত্রে সহেয়ার দেখতে। আমি এই সময়ে আমার হোমওয়ার্ক করে রেখেছিলাম- এমনকি ছবিটা সম্বন্ধে পড়েও রেখেছিলাম যাতে আমাকে বেরিয়ে যেতে না হয়। এই ছবিটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রক্তবণ্যা বইয়ে দেয়। আমি এতটা সুস্থ হয়ে উঠিনি যে আমি কোন রোমান্টিক দৃশ্যে সুস্থভাবে দেখতে পারব। এটা কি একটা মজার ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না?

    অবশ্যই। সে একমত হলো। স্বভাবতই কম উৎসাহী।

    শান্ত হও। এক সেকেন্ড পর, সে তার আগের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় ফিরে গেল। কেমন হয় যদি আমরা এঞ্জেলা এবং বেনকে নেই? অথবা এরিক এবং কেটিকে?

    সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল কোন এক ধরনের দ্বৈত ডেটের ব্যাপারে।

    তারা দুই গ্রুপ হলেই কেমন হয়? আমি পরামর্শ দিলাম। এবং জেসিকাও। অবশ্যই। এবং টেইলার আর কনার। এবং হতে পারে লরেন। আমি কৌশলের সাথে বাড়িয়ে যাচ্ছিলাম। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কুইলের বৈচিত্র্যের ব্যাপারে।

    ঠিক আছে। মাইক বিড়বিড় করে বলল।

    এবং আমি বলে চললাম। লা পুশে আমার কয়েকজন বন্ধু আছে। আমি তাদের আসতে বলেছি। সুতরাং এখন দেখে মনে হচ্ছে যদি সবাই আসে তাহলে তোমার সুপারবার্ণ গাড়িটা লাগবে।

    মাইকের চোখ সন্দেহে ছোটছোট হয়ে গেল।

    এইটা কে সেই বন্ধু তুমি যার সাথে তোমার সারাটা সময় পড়াশুনা করে কাটাও?

    হ্যাঁ। ওর ভেতরে সেও একজন। আমি আনন্দিত স্বরে উত্তর দিলাম। তুমি যদি এটা পড়াশুনার ব্যাপারে ধরো তাহলে এটা শুধু সাময়িক।

    ওহ। মাইক বিস্মিত গলায় বলল। এক সেকেন্ড চিন্তাভাবনার পরে সে হাসল।

    শেষ পর্যন্ত তার সাবারবার্ণ গাড়ির প্রয়োজন হলো না।

    জেসিকা এবং লরেন মাইককে জানাল তারা এত ব্যস্ত থাকবে যে তারা এই পরিকল্পনায় অংশ নিতে পারছে না। এরিক এবং কেটির এর ভেতরে পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে। এটা তাদের তিন সপ্তাহ উদযাপন বা এই জাতীয় কিছু একটা। লরেন টেইলার ও কনারকে নিয়ে যাচ্ছে মাইকের বলার আগেই। সুতরাং এই দুজনও ব্যস্ত থাকবে। এমনকি কুইলও পর্যন্ত বাইরে– তার স্কুলের কাজে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল শুধুমাত্র এঞ্জেলা, বেন এবং অবশ্যই জ্যাকব যেতে পারবে।

    কমে যাওয়া সংখ্যা মাইকের পূর্বধারণাকে স্তিমিত করল না। এটা সব সে শুক্রবার সম্বন্ধে বলছিল।

    তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি টুমরো এন্ড ফরএভার এর পরিবর্তে দেখবে না? সে লাঞ্চের সময় জিজ্ঞেস করল। নাম বলছিল বর্তমানে চলিত রোমান্টিক কমেড়ি যেটা বক্স অফিস মাতিয়ে তুলেছিল। পচা টমোটা এটা সম্বন্ধে খুব ভাল একটা রিভিউ ছেপেছে।

    আমি ক্রসহেয়ার দেখতে চাই। আমি জোর দিলাম। আমি এখন একশন মুভির মুডে আছি। যেটাতে সাহস এবং রক্তপাত আছে।

    ঠিক আছে। মাইক ঘুরে গেল। কিন্তু তার আগেই আমি তার মুখের ভাবভঙ্গি ধরতে পারলাম। আমাকে সে উন্মত্ত ভাবছে।

    আমি স্কুল শেষে বাসায় ফিরে দেখলাম, খুব পরিচিত একটা গাড়ি আমাদের বাড়ির সামনে পার্ক করা। জ্যাকব হুডের দিকে ঝুঁকে ছিল। একটা বিশাল আলো তার মুখের উপর পড়ছিল।

    কোন উপায় নেই। আমি চিৎকার দিয়ে উঠে ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে নামলাম। তুমি এটা করেছ! আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি রাবিটটা শেষ পর্যন্ত তৈরি করেছ।

    সে হাসল। এই তো গতরাতে। এটাই সে কুমারী যাত্রা।

    অবিশ্বাস্য! আমার হাত ঘুষির মত করে তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।

    সে তার হাত আমার হাতে ঠেকাল। তারপর হাত তুলে ধরে আঙুল দিয়ে চাপ দিতে লাগল। তো আমি কি আজ রাতে চালাতে পারি?

    অবশ্যই। আমি শ্বাস নিয়ে বললাম।

    সমস্যাটা কি?

    আমি হাল ছেড়ে দিচ্ছি– আমি এই ব্যাপারে উপরে যেতে পারলাম না। সুতরাং তুমি জিতে গেছো। তুমিই বড়ো।

    সে কাধ ঝাঁকাল। আমার হঠাৎ এধরনের কথায়ও সে বিস্মিত হলো না। অবশ্যই আমি বড়।

    মাইকের সাবারবার্ন এক কোণের দিকে ছিল। আমি জ্যাকবের হাত থেকে আমার হাত টেনে নিলাম। সে এরকম একটা মুখভঙ্গি করল যেন আমি সেটা দেখতে পায়নি।

    আমি এই লোককে চিনি। সে নিচু স্বরে বলল। মাইক রাস্তার ওধারে গাড়িটা পার্ক করে রাখছিল। এই ছেলে যে তোমাকে তার গার্লফ্রেন্ডভাবে। সে কি এখনও দ্বিধান্বিত?

    আমি এক চোখের ভ্রু উপরে তুললাম। কিছু মানুষ আছে যাদেরকে অনুৎসাহীত করা খুব কঠিন ব্যাপার।

    তারপর আবার জ্যাকব চিন্তাভাবনা করে বলল ধৈর্যধারণের মূল্য দিতে হয়।

    অধিকাংশ সময়ই এটা শুধুই বিরক্তিকর।

    মাইক তার গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হলো।

    হেই বেলা সে আমাকে সম্ভাষণ করল। তার চোখ ইতস্ততভাবে ঘুরে গেল যখন সে জ্যাকবকে দেখল। আমিও চকিতে জ্যাকবের দিকে তাকালাম। চেষ্টা করছিলাম কিছু না বলতে। জ্যাকব এতটাই বড় যে মাইকের মাথা তার কাঁধের কাছে। আমি এখনও চিন্তা করতে চাই না যে আমি তার কত নিচে। তার মুখ বেশ বয়স্ক দেখায় সময়ের চেয়ে, এমনকি এক মাস আগের চেয়েও।

    হেই মাইক, তুমি কি জ্যাকব ব্লাককে মনে করতে পার?

    না, সত্যিই। মাইক তার হাত ধরল।

    পুরোনো পারিবারিক বন্ধু। জ্যাকব নিজেকে পরিচয় দিল। হ্যান্ডশেক করল। তারা প্রয়োজনের তুলনায় জোরে জোরে হাত ঝকাল। যখন তাদের কব্জি ভেঙে যাওয়ার জোগাড় মাইক তার আঙুল বাকাল।

    আমি শুনতে পেলেন রান্না ঘরে ফোন বাজছে।

    আমাকে ভেতরে যেতে হবে–এটা মনে হয় চার্লি। আমি তাদের বলে ভেতরে চলে এলাম।

    ফোন ছিল বেনের। এঞ্জেলা পাকস্থলীর সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে তাকে ছাড়া আসাটা ভাল মনে করছে না। সে না আসার জন্য আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করল।

    আমি আস্তে আস্তে হেঁটে অপেক্ষারত ওদের দুজনের কাছে এলাম। মাথা ঝাঁকালাম। আমি সত্যিই আশা করি এঞ্জেলা খুব সেরে উঠবে। কিন্তু আমি স্বীকার করতে বাধ্য যে স্বার্থপরের মত আমি এই ব্যাপারে আপসেট হয়ে পড়েছিলাম। শুধুই আমরা তিনজন। জ্যাকব মাইক আর আমি। এই সন্ধ্যেয় একত্রিত হয়েছি। সেটা খুব ভালভাবেই কাজ করেছে। আমি ব্যঙ্গত্বকভাবে মুখ ভেঙচালাম।

    এটা দেখে মোটেই মনে হলো না যে আমার অনুপস্থিতেতে জ্যাকব এবং মাইক নিজেদের মধ্যে কোনরকম বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। তারা বেশ কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়েছিল। দুজনে দুদিকে। তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। মাইক গোমড়ামুখে, কিন্তু জ্যাকব সবসময়ের মতই আনন্দিত ভঙ্গিতে আছে।

    এঞ্জেলা অসুস্থ আমি বিষণ্ণমুখে তাদের বললাম। সে আর বেন আসছে না।

    আমি ধারণা করছি এই ফ্লু আবার আরেক রাউন্ড আসবে। অস্টিন এবং কনার অজি বাইরে গেছে। হতে পারে আমরা এটা অন্য সময়ে করতে পারি। মাইক পরামর্শ দিল।

    আমি একমত হওয়ার আগেই, জ্যাকব কথা বলল।

    আমি এখন যাওয়ার পক্ষেই। কিন্তু যদি তুমি থেকে যেতে চাও। মাইক

    না আমি আসছি। মাইক মাঝখানে বলল। আমি শুধু এলো আর বেনকে নিয়ে চিন্তা করছিলাম। চলে যাওয়া যাক। সে তার সাবারবানের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল।

    হেই, তুমি কি কিছু মনে করবে যদি জ্যাকব ড্রাইভ করে? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমি তাকে বলেছিলাম সে করবে। সে এইমাত্র তার গাড়ি তৈরি শেষ করেছে। সে একটা ধ্বংসস্তূপের জঞ্জাল থেকে তৈরি করেছে। পুরোটাই নিজে নিজে। আমি নিজেই যেন জ্যাকবের কাজে গর্ববোধ করতে শুরু করলাম।

    বেশ ভাল। মাইক বলল।

    ঠিক আছে তাহলে। জ্যাকব বলল, এমনভাবে যেন সেই সবকিছু ঠিক করে রেখেছে। তাকে দেখে অন্য যে কারোর তুলনায় বেশ আনন্দে আছে বলে মনে হচ্ছে।

    জ্যাকবকে সবসময় আনন্দিত মনে হয়। সে এমনভাবে আমার সাথে কথা বলতে লাগল যেন পেছনের সিটে মাইক নেই।

    তারপর মাইক তার পদ্ধতি পরিবর্তন করল। সে সামনের দিকে ঝুঁকে এল। আমার সিটের উপর কাঁধের কাছে তার থুতনি রাখল। তার থুতনি আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

    রেডিওটা কি কাজ করছে না? মাইক কিছুটা ব্যঙ্গত্বক স্বরে জিজ্ঞেস করল। আমার ও জ্যাকবের কথোপকথনে ইচ্ছে করে বাঁধা দিল।

    হ্যাঁ। জ্যাকব উত্তর দিল। কিন্তু বেলা মিউজিক পছন্দ করে না।

    আমি জ্যাকবের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। বিস্মিত। আমি কখনও সেটা তাকে বলি নাই।

    বেলা? মাইক জিজ্ঞেস করল। বিরক্ত।

    সে ঠিক বলেছে। আমি বিড়বিড় করে বললাম। এখনও আমি জ্যাকবের দিকে তাকিয়ে আছি।

    তুমি কীভাবে মিউজিক পছন্দ না করে থাকতে পার? মাইক জানতে চাইল।

    আমি কাঁধ ঝাঁকালাম। আমি জানি না। এটা শুধু আমাকে বিরক্ত করে।

    হুম। মাইক পিছিয়ে গেল।

    আমরা থিয়েটারে পৌঁছে গেলে জ্যাকব আমার হাতে একটা দশ ডলারের বিল ধরিয়ে দিল।

    এইটা কি? আমি প্রতিবাদ করলাম।

    আমি এখনও এতটা বড় হই নাই যে আমি টিকিট কাটতে পারি। সে আমাকে মনে করিয়ে দিল।

    আমি জোরে জোরে হাসলাম। তো তোমার সেই আনুষঙ্গিক বছর। বিলি আমাকে খুন করে ফেলবে যদি জানতে পারে?

    না। আমি তাকে বলব তুমি পরিকল্পনা করে আমার ইয়োথফুল ইনোসেন্স নষ্ট করেছ।

    আমি এগিয়ে গেলাম। মাইক আমার সাথে পা মিলিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এল।

    আমি আশা করেছিলাম মাইক চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। সে সুলেন গোত্রের পার্টির প্রতি খুববেশি আসক্ত নয়। কিন্তু আমি শুধুমাত্র জ্যাকবের সাথে একাকী একটা ডেট শেষ করতে চাইছিলাম না। সেটা কোন কাজে দেবে না।

    মুভিটি ছিল ঠিক তাই যেটা প্রতিজ্ঞা করেছিল। শুরুর নাম দেখানো শেষ হলে, চারজন লোক উড়ে গেল এবং একজনের মাথা বিছিন্ন হয়ে গেল। আমার সামনের মেয়েটা চোখের সামনে হাত দিয়ে ঢেকে দিল। মুখ ঘুরিয়ে তার প্রেমিকের বুকের উপর নিল। ছেলেটা মেয়েটার পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিল এবং মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে চাপ দিচ্ছিল। ছেলেটা চোখ মুখ শক্ত করে সামনের পর্দার দিকে তাকিয়ে ছিল।

    দুই ঘণ্টা আমি পর্দার উপরের আলোকপাত, রঙ এবং চলাচল দেখে কাটালাম, লোকজনের আকৃতি এবং গাড়ি আর বাড়ি। কিন্তু তারপর জ্যাকব কাঁপতে শুরু করল।

    কি? আমি ফিসফিস করে বললাম।

    ওহ, এদিকে এসো। সে হিসহিসিয়ে বলল রক্ত লোকটার ভেতর থেকে বিশ ফুট দূরে ছড়িয়ে পড়ছে। কতটা কৃত্রিম বলে তুমি মনে করো?

    সে আবার মুখবিকৃতি করল যখন পর্দায় আরেকটা মানুষের রক্তপাতের ভয়াবহ দৃশ্য দেখানো হলো।

    তারপরে, আমি সত্যিই শোটা উপভোগ করলাম। তার সাথে হাসতে লাগলাম যখন কর্মকাণ্ডগুলো আরো বেশি হাস্যকর হতে লাগল। আমি কীভাবে বুঝে যাচ্ছি ওর সাথে সম্পর্কটা ঝাপসা করে দেয়ার ব্যাপারে, যখন আমি তার সঙ্গ এতটাই বেশি পছন্দ করি? উপভোগ করি?

    জ্যাকব ও মাইক দুজনেই আমার চেয়ারের দুপাশের চেয়ারে বসে ছিল। দুজনের হাতই চেয়ারের হাতলের উপর। জ্যাকবের একটা স্বভাব হলো আমার হাত ধরা, যখনই। সেরকম কোন সুযোগ আসে। কিন্তু এখানে এই অন্ধকার মুভি থিয়েটারে যেখানে মাইক দেখছে এটা একটা ভিন্ন কারণ হতে পারে। আমি নিশ্চিত সে সেটা জানে। আমি বিশ্বাস করি না মাইক একই জিনিস চিন্তা করছে। কিন্তু তার হাতও একইভাবে জ্যাকবের মতই আমার হাতের উপরে।

    আমি আমার বুকের কাছে হাত ভাজ করে রাখলাম। আশা করলাম তাদের দুজনের হাতই শান্ত হবে।

    মাইকই প্রথম ছেড়ে দিল। ছবির অর্ধেকখানি হয়ে গেলে সে তার হাত নিজের দিকে টেনে নিল। সামনের দিকে ঝুঁকে তার কপালে হাত ঠেকিয়ে রাখল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সে পর্দার কিছু একটা দেখে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। কিন্তু তারপর সে গুঙিয়ে উঠল।

    মাইক, তুমি কি ঠিক আছো? আমি ফিসফিস করে বললাম।

    আমাদের সামনের জুটি পেছন ফিরে তাকে দেখল যখন সে আবার গুঙিয়ে উঠল।

    না। সে শ্বাস নিল। আমার মনে হয় আমি অসুস্থ।

    পর্দার উপর থেকে আসা আলোয় আমি দেখতে পেলাম তার কপালের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

    মাইক আবার গুঙিয়ে উঠল। তারপর দরজার দিকে ছুটে গেল। আমি তাকে অনুসরণ করতে উঠে দাঁড়ালাম। জ্যাকবও তাড়াতাড়ি আমার পিছু নিল।

    না থাক। আমি ফিসফিস করে বললাম  আমি নিশ্চিত, আমি তাকে ভাল করে দিতে পারব।

    যাই হোক, জ্যাকব আমার সাথে আসতে লাগল।

    তোমাকে আমাদের সাথে আসতে হবে না। তোমার শুধু শুধু টাকাগুলো নষ্ট হবে। প্যাসেজের দিকে যেতে যেতে জোর দিয়ে বললাম।

    সেটা ঠিক আছে। তুমি নিশ্চিত তুমি তাকে নিতে পারবে, বেলা। এই ছবিটা সত্যিই জঘন্য। তার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ফিসফিস করে যখন আমরা থিয়েটারের বাইরে চলে এলাম।

    হলওয়ের পথে মাইকের কোন চিহ্ন দেখা গেল না। আমি বেশ খুশি হলাম জ্যাকবের আমার সাথে আসার জন্য। সে পুরুষের বাথরুমগুলোতে খোঁজ করল, মাইক সেখানে আছে কিনা।

    কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জ্যাকব ফিরে এল।

    ওহ, সে ওখানে আছে। সব ঠিক আছে। সে চোখ ঘুরিয়ে বলল। কি একটা ব্যাপার ঘটে গেল। তোমার এমন কাউকে নিয়ে আসা উচিত ছিল যার পাকস্থলী বেশ সহ্যক্ষমতা সম্পন্ন। এমন কাউকে যে এইসব জগাখিচুড়ি দৃশ্য দেখে হাসতে পারে। দুর্বল লোকের মত বমি করে না।

    আমি সেরকম কারোর জন্য আমার চোখ কান খোলা রাখব।

    আমরা দুজনেই সেইখানে একাকী দাঁড়িয়ে রইলাম। দুপাশের থিয়েটারেই অর্ধেক পথ। সেটা বেশ ফাঁকা জায়গা। বেশ নির্জন জায়গা।

    জ্যাকব দেয়ালের কাছে ভেলভেট মোড়ানো একটা বেঞ্চে বসল। তার পাশের জায়গা চাপড় দিয়ে আমাকে দেখালো।

    হেই, শব্দ শুনে মনে হচ্ছে তার ওখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে। সে তার লম্বা পা সামনের দিকে মেলে দিতে দিতে বলল।

    আমি একটু পরে তার সাথে যোগ দিলাম। তাকে দেখে মনে হলো সে কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে। আমি নিশ্চিত হলাম যখন আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। সে সিটের উপর থেকে হাত তুলে আমার কাঁধের উপর রাখল।

    জ্যাক আমি সামনে ঝুঁকে প্রতিবাদ করলাম। তার হাত নেমে গেল। সে আমাকে বিরক্ত করার জন্য আমার দিকে তাকাচ্ছে না। সে এবার আমার হাত দৃঢ়ভাবে নিয়ে নিল। আমার হাতের উপর রাখল যখন আমি সেটা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। সে এই জাতীয় আত্মবিশ্বাস কোত্থেকে পাচ্ছে?

    এখন, মাত্র মিনিট খানিক আমাকে ধরতে দাও, বেলা। সে শান্ত স্বরে বলল আমাকে কিছু বলতে দাও।

    আমি বিরক্তিকর মুখ ভঙ্গি করলাম। আমি মোটেই এ বিষয়টা চাচ্ছি না। শুধু যে এখন না তাই নয়, কখনই না। আমার জীবনে আর কিছুই বাকি নেই। সেটা জ্যাকব ব্লাকের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

    কি? আমি তিক্তভাবে বিড়বিড় করে বললাম।

    তুমি আমাকে পছন্দ করো, ঠিক?

    তুমি জানো আমি করি।

    ওর চেয়ে ওই যে জোকারটা ভয়ে বেরিয়ে এসে বমি করে ভাসাচ্ছে? সে বাথরুমের দরজার দিকে ইঙ্গিত করল।

    হ্যাঁ। আমি শ্বাস নিলাম।

    অন্য যে কোন ছেলের চেয়ে তুমি জানো? সে শান্ত- এমনভাবে যেন আমার উত্তর তার কাছে কোন ব্যাপার নয়। অথবা সে এর ভেতরে জানে উত্তরটা কি হবে।

    ওই মেয়েগুলোর তুলনায়ও। আমি নির্দেশ করলাম।

    কিন্তু সেটাই সব? সে বলল। এটা কোন প্রশ্ন ছিল না।

    এটার উত্তর দেয়া শক্ত। সে কি তাহলে ব্যথিত হবে এবং আমাকে এড়িয়ে চলবে? তাহলে আমি কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকব?

    হ্যাঁ। আমি ফিসফিস করে বললাম।

    সে আমার দিকে কপট হাসি দিল। তাহলে ঠিক আছে। তুমি জানো। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে পছন্দ করো সেটাই উৎকৃষ্ট। এবং তুমি জানো আমি দেখতে ভাল কিছুটা হলেও। আমি যেকোন বিরক্তিকর বিষয়গুলো নিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে পারব।

    আমি পরিবর্তিত হতে যাচ্ছি না। আমি বললাম। যদিও আমি চেষ্টা করছিলাম আমার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার, কিন্তু আমি এর ভেতরে বিষণ্ণতার সুর শুনতে পেলাম।

    তার মুখ চিন্তাযুক্ত, আর কোন টিজিং নেই, এটা এখনও অন্য আরেকজনের, তাই নয় কি?

    আমি অবনত মস্তকে ছিলাম। মজার ব্যাপার কীভাবে সে জেনেও নামটা বলল না আগের মতই গাড়িতে মিউজিকের ব্যাপারটার মতই। সে আমার সম্বন্ধে এত কিছু জেনে বসে আছে যেসব বিষয়ে আমি কখনও তাকে কিছু বলিনি।

    তুমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাও না। সে আমাকে বলল।

    আমি কৃতজ্ঞতায় মাথা নোয়ালাম।

    কিন্তু কখনও তোমার দিকে আমাকে পাগল করো না, ঠিক আছে? জ্যাকব আমার হাতের পিছনে চাপড় দিতে লাগল। কারণ আমি ছেড়ে দিচ্ছি না। আমার হাতে প্রচুর সময় আছে।

    আমি শ্বাস নিলাম। তোমার আমার জন্য সময় নষ্ট করা উচিত হবে না। আমি বললাম, যদিও আমি তাকে চাই। বিশেষত, যদি সে আমি এখন যে অবস্থায় আছি সেই অবস্থায় আমাকে গ্রহণ করে ক্ষতিকর ভালটুকু তাহলে।

    এটাই সেটা যেটা আমি চাইছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে পছন্দ করবে।

    আমি কল্পনা করতে পারি না কীভাবে আমি তোমাকে পছন্দ না করে থাকব। আমি তাকে সতোর সাথেই বললাম।

    জ্যাকব বিস্মিত। আমি সেটা নিয়ে বাঁচতে পারব।

    শুধু ওর চেয়ে বেশি কিছু আশা করো না। আমি তাকে সতর্ক করলাম, চেষ্টা করছিলাম আমার হাত টেনে নিতে। সে সেটা অবচেতনভাবে ধরে রেখেছিল।

    এটা তোমাকে সত্যিই বিরক্ত করছে না, করছে কি? সে আমার আঙুলগুলো চাপতে চাপতে বলল।

    না। আমি শ্বাস নিলাম। সত্যিকারার্থে এটা বেশ ভাল অনুভূত হচ্ছিল। তার হাত আমার হাতের চেয়ে অনেক উষ্ণ ছিল। আমি প্রায়ই এই দিনগুলোতে ঠাণ্ডা অনুভব করতাম।

    এবং তুমি নিশ্চয় কিছু মনে করছো সে কি ভাবছে তা নিয়ে। জ্যাকব তার আঙুল তুলে বাথরুমের দিকে দেখাল।

    আমার মনে হয় না।

    তো সমস্যাটা কি?

    সমস্যাটা আমি বললাম, এটা তোমার কাছে এক রকম অর্থ বহন করলেও আমার কাছে অন্যরকম।

    বেশ। সে হাত দিয়ে আমার চারদিকে বেশ শক্ত করে ধরল। এটাই আমার সমস্যা, নয় কি?

    সুন্দর। আমি অসন্তুষ্ট এটা ভুলে যেও না।

    আমি ভুলব না। গ্রেনেড থেকে পিন তুলে ফেলা হয়েছে আমার জন্য, এখন, হ্যাঁ? সে আমার রিবে চাপ দিল।

    আমি চোখ ঘুরালাম। আমি অনুমান করছি যদি সে কোন কৌতুক করা শুরু করে।

    সে কয়েক মিনিটের জন্য শান্ত থাকল যখন তার আঙুল আমার হাতের পাশে চাপ দিচ্ছিল।

    বেশ মজার ক্ষত তুমি এখানে পেয়েছো। সে হঠাৎ বলল, আমার হাত ঘুরিয়ে নিলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য। এটা কীভাবে হয়েছিল?

    তার মুক্ত হাতের তর্জনী দিয়ে সে লম্বা কাটা দাগটার উপর বুলিয়ে নিয়ে গেল।

    আমি ভ্রুকুটি করলাম। তুমি কি সত্যিকারেই আশা করো মনে করিয়ে দেবে আমার সব ক্ষতগুলো কোথা থেকে এসেছে?

    আমি স্মৃতিটা ধাক্কা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গভীর ক্ষতের মুখ খুলে যাওয়ার। কিন্তু প্রায় সময়ই যেটা হয় জ্যাকবের উপস্থিতি এটা ভুলিয়ে রাখল।

    খুব ঠাণ্ডা। সে বিড়বিড় করে বলল, আস্তে আস্তে সেই ক্ষতটার উপর চাপ দিচ্ছিল যেটা জেমসের দাঁতের কারণে হয়েছিল।

    তারপর হঠাৎ করে মাইক বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। তার মুখ ফ্যাকাশে এবং ঘামে ভেজা। তাকে ভয়ানক দেখাচ্ছিল।

    ওহ মাইক। আমি শ্বাস নিলাম।

    আগে চলে আসায় তুমি কি কিছু মনে করেছ? সে ফিসফিস করে বলল।

    না, অবশ্যই না। আমি জ্যাকবের কাছ থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলাম। মাইককে হাঁটতে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম। তাকে দেখে ভারসাম্যহীন মনে হচ্ছিল।

    মুভিটা তোমার জন্য খুব বেশি কিছু ছিল। জ্যাকব হৃদয়হীনভাবে জিজ্ঞেস করল।

    মাইক ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাকাল। প্রকৃতপক্ষে আমি এর কিছুই দেখি নাই। সে বিড়বিড় করে বলল আমি বমিবমিবোধ করছিলাম আলো নিভে যাওয়ার আগে থেকেই।

    কেন তুমি আমাদেরকে কিছু বল নাই? বেরনোর পথ দিয়ে বেরুবার সময় তাকে বকলাম।

    আমি আশা করেছিলাম এটা চলে গেছে। সে বলল।

    এক সেকেন্ড, আমরা দরজার কাছে পৌঁছুলে জ্যাকব বলল। সে তাড়াতাড়ি ছাড়ের দোকানগুলোতে ফিরে গেল।

    আমি কি একটা খালি পপকর্ণের বক্স পেতে পারি? সে বিক্রেতা মেয়েটাকে বলল। মেয়েটা একবার মাইকের দিকে তাকাল তারপর একটা বাকেট জ্যাকবকে দিল।

    দয়া করে তাকে বাইরে নিয়ে যাও। মেয়েটা কাতরকণ্ঠে বলল। সে অবশ্যই সেই একজনের মধ্যে পড়ে যে মেঝেটা সবসময় পরিষ্কার দেখতে অভ্যস্ত।

    আমি মাইককে সেখানের ঠাণ্ডা ভেজা বাতাস থেকে বাইরে নিয়ে গেলাম। সে গভীরভাবে শ্বাস নিল। জ্যাকব আমাদের ঠিক পিছনে। সে আমাকে সাহায্য করল মাইককে গাড়িতে কাছে নিয়ে যাওয়ায়। তার কাছে বাকেটটা সে সিরিয়াসভাবেই দিল।

    দয়া করে। এইটুকুই শুধু জ্যাকব বলল।

    আমরা জানালার কাঁচ নামিয়ে দিলাম। যাতে বাইরের রাতের ঠাণ্ডা বাতাস গাড়ির ভেতর চলাচল করতে না পারে। আশা করছি এতে মাইকের কিছুটা সাহায্য হবে। আমার হাত গরম রাখতে দুহাঁটুর মাঝে ঢুকিয়ে রাখলাম।

    ঠাণ্ডা লাগছে? জ্যাকব জিজ্ঞেস করল, আমি উত্তর দেয়ার আগেই তার হাত আমার পাশে রাখল।

    তোমার লাগছে না?

    সে তার হাত ঘষল।

    তোমার অবশ্যই জ্বর বা ওই জাতীয় কিছু হবে। আমি মুখ ভঙ্গি করলাম। এটা ছিল জমে যাওয়ার মত। আমি আমার আঙুল তার কপালে ছোঁয়ালাম। তার কপাল বেশ গরম।

    ওহ জ্যাক, তোমার গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

    আমি ভাল বোধ করছি। সে কাঁধ ঝাঁকাল। বেহালার মতই ফিট আছি।

    আমি ভ্রু কুঁচকালাম এবং আবার তার কপালে হাত ছোঁয়ালাম। আমার হাতের নিচে তার ত্বক জ্বলছিল।

    তোমার হাত বরফের মত ঠাণ্ডা। সে অভিযোগ করল।

    হতে পারে, এটাই আমি। আমি মেনে নিলাম।

    মাইক পিছনের সিটে বসে গোঙাচ্ছিল। সে বাকেট ছুঁড়ে ফেলে দিল। আমি মুখ ব্যাদান করলাম। আশা করছি আমার নিজের পাকস্থলী ভাল থাকবে ও ভাল আচরণ করবে। জ্যাকব তার কাঁধের উপর দিকে উদ্বিগ্নভাবে তাকাচ্ছিল যেন তার গাড়ি আবার না অপরিষ্কার হয়ে যায়।

    রাস্তাটা ফেরার সময় বেশি লম্বা মনে হচ্ছিল।

    জ্যাকব শান্ত। চিন্তাভাবনা করছে। সে তার হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। সেটা এতটাই উষ্ণ যে সেটাতে আমি ভাল বোধ করছিলাম।

    আমি অপরাধী দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে লাগলাম।

    জ্যাকবকে উৎসাহী করা খুবই ভুল হয়েছে। পুরোপুরি স্বার্থপরতা। এটা কোন বিষয় নয় যে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। যদি সে কোন কিছু আশা করে থাকে সেটা এমন কিছু হতে পারে যেটা বন্ধুত্ব থেকে অন্য কিছুতে মোড় নিচ্ছে। তারপরও আমি বিষয়টা নিয়ে পুরোপুরি পরিষ্কার নই।

    কীভাবে আমি ব্যাখ্যা করব যাতে সে বুঝতে পারে? আমি একটা ফাঁকা খোলস। এখন আমার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সামনের রুমটা বেশ ভালই সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেটাই সব– শুধু একটা ছোট অংশ মাত্র। সে সেটার চেয়ে ভাল কিছু আশা করে–একটা রুমের চেয়ে বেশি কিছু। তার দিক থেকে যে অংকের বিনিয়োগ হোক না কেন এটা এখনও বসবাসের উপযোগী হয়নি।

    এখনও আমি জানতাম যে আমি তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারছি না। কোনক্রমেই। আমাকে তার খুব বেশি দরকার। আর আমিও স্বার্থপর। আমি আমার দিক থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে থাকব। যাতে সে আমাকে ছেড়ে যায়। এই চিন্তা আমাকে ভয়ে কম্পিত করে তুলল। জ্যাকব তার হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

    আমি মাইককে তার বাড়িতে পৌঁছে দিলাম। তখন জ্যাকব আমাদের পিছু নিল আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আমি বিস্মিত যদি সে একই জিনিস ভেবে থাকে যেটা আমি ভেবে রেখেছি। হতে পারে সে তার মনমানসিকতার পরিবর্তন করেছে।

    আমি নিজেকে বাড়ির ভেতরে নিজেই আমন্ত্রণ করতে পারি, যেহেতু আমরা আগেভাগে এসে পড়েছি। সে আমার ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে বলল। কিন্তু আমি মনে করি তুমি আমার জ্বরের ব্যাপারে ঠিক ধরেছিলে। আমি এখন কিছুটা জ্বরজ্বর বোধ করতে শুরু করেছি…

    ওহ না, তুমিও না। তুমি কি চাও আমি তোমাকে ড্রাইভ করে বাড়িতে পৌঁছে দেই?

    না। সে তার মাথা নাড়ল। তার ভ্রূ জোড়া একত্র হলো। আমি এখনও ওরকম অসুস্থবোধ করছি না। শুধু….ভুল হতে পারে। যদি সেরকম হয়। আমি থেমে যাব।

    যখনই তুমি পৌঁছে যাবে তুমি কি আমাকে ফোন করবে? আমি উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞেস করলাম।

    নিশ্চয়, নিশ্চয়। সে ভ্রু কুঁচকাল। অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল। তার ঠোঁটজোড়া কামড়ে ধরে রাখল।

    আমি বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজা খুললাম। কিন্তু সে হালকা করে আমার কব্জি ধরে ফেলল এবং সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখল। আমি আবার লক্ষ্য করলাম তার ত্বক কতটা গরম।

    এটা কি জ্যাক? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    সেখানে এমন কিছু আছে যেটা আমি তোমাকে বলতে চাই বেলা… কিন্তু আমি মনে করি সেটা তোমার কাছে কিছুটা অদ্ভুত শোনাতে পারে…।

    আমি শ্বাস নিলাম। এটা থিয়েটারের ওখানের চেয়ে বেশি ই হবে। চালিয়ে যাও।

    এটা শুধু এই যে, আমি জানি তুমি কতখানি বেশি অসুখী। এবং হতে পারে এটা কোনভাবেই সাহায্য করছে না। কিন্তু আমি তোমাকে জানাতে চাই যে, আমি সবসময় এখানে। আমি তোমাকে আর নিচে নামতে দিতে পারি না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি তুমি সবসময়ই আমাকে তোমার গোনার মধ্যে ধরবে। ওয়াহ, সেটা কি শুনতে খুব অদ্ভুত শোনাচ্ছে। কিন্তু তুমি সেটা জানো, তাই না? যে আমি তোমাকে কখনও কোনভাবে আঘাত দেব না?

    হাঁ জ্যাক, আমি সেটা জানি। আমি এর মধ্যেই তোমাকে আমার গুনতির মধ্যে ধরে রেখেছি। সম্ভবত তুমি যেটুকু জানো তার চেয়ে অনেক বেশি।

    তার সারামুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল যেভাবে মেঘের কোলে রোদ হাসে। আমি এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাইলাম না। আমি এ বিষয়ে একটা শব্দও বলি নাই যেটা মিথ্যে। কিন্তু আমাকে মিথ্যে বলতে হবে। সত্যটা ভুল। এটা তাকে আঘাত করবে। আমি তাকে নিচে ফেলে দিতে পারি।

    একটা অদ্ভুত ভাব তার মুখে খেলে গেল। আমি সত্যিই মনে করি আমার এখন বাড়িতে যাওয়া ভাল। সে বলল।

    আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম।

    ফোন করো। সে বেরিয়ে যাওয়ার সময় চেঁচিয়ে বললাম।

    আমি তাকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। তাকে দেখে মনে হয় গাড়ির নিয়ন্ত্রণে অন্ততপক্ষে সমস্যা হবে না। সে চলে গেলে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। নিজেও কিছুটা অসুস্থবোধ করতে লাগলাম। কিন্তু সেটা কোন শারীরিক কারণে নয়।

    আমি কতই না আশা করি জ্যাকব ব্লাক যদি আমার ভাই হিসাবে জন্মাত। আমার রক্ত সম্পর্কের ভাই। তাইতো আমি তার উপরে কিছুটা দাবী করি। খোদায় ভাল জানেন আমি কখনও জ্যাকবকে ব্যবহার করি নাই। কিন্তু আমি সেটা পারছিলাম না। যে সমস্যাটা আমাকে দোষী করে তুলেছে সেটা এড়াতে পারছিলাম না।

    তার উপরে, আমি তাকে কখনও ভালবাসতে বোঝয়নি। একটা জিনিস আমি সত্যিই জানি–এটা আমার পাকস্থলীর অতল থেকে, আমার হাড়ের ভেতর থেকে, আমার মাথার মগজ থেকে, আমার পায়ের তলা থেকে, আমার খালি হয়ে যাওয়া বুকের ভেতর থেকে–যে কতটা ভালবাসা পেলে একজনের শক্তি নিঃশেষ হয়। সে ফতুর হয়ে যায়।

    আমি এমনভাবে ভেঙেছি যে আমার পুনরুদ্ধারের উপায় নেই।

    কিন্তু এখন আমার জ্যাকবকে প্রয়োজন। তাকে আমার একটা ড্রাগের মতই দরকার। আমি দূরে যাওয়ার জন্য তাকে ক্রাচের মত ব্যবহার করছি। এখন তাকে আঘাত করাটা সহ্য করতে পারব না। আমি তাকে আঘাত করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারব না। সেভাবে সময় এবং ধৈর্য আমাকে বদলে দেবে। কিন্তু যদিও আমি জানি সে কতটা ভুলের মধ্যে আছে। আমি আরো জানতাম যে আমি তাকে চেষ্টা করার সুযোগ দিয়েছি।

    সে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। আমি তাকে সবসময় ভালবাসি। আর এটা কখনই যথেষ্ট কিছু নয়।

    আমি ফোনের পাশে বসতে ভেতরে গেলাম। ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।

    ছবি কি এর মধ্যে শেষ হয়ে গেছে? আমি ভেতরে ঢুকলে চার্লি বিস্মিতভাবে প্রশ্ন করলেন। তিনি মেঝেতে বসে ছিলেন। টিভি থেকে মাত্র একফুট দূরে। নিশ্চয় কোন উত্তেজনাপূর্ণ খেলা।

    মাইক অসুস্থবোধ করছিল। আমি ব্যাখ্যা করলাম। কোন এক ধরনের পাকস্থলীর সমস্যা।

    তুমি ঠিক আছো?

    আমি এখন ভালবোধ করছি। আমি সন্দেহজনকভাবে বললাম। পরিষ্কারভাবে নিজেকে প্রকাশ করলাম।

    আমি কিচেনের সামনে ঝুঁকে ছিলাম। আমার হাত ফোন থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। আমি ভাবছি জ্যাকবের মুখে সেই ভয়ের অদ্ভুত ছায়া, যেটা সে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছিলাম। আমার আঙুল কিচেন কাউন্টারে তবলা বাজাতে শুরু করল। আমার উচিত ছিল জোর করে তাকে ড্রাইভ করে বাড়ি পৌঁছে দেয়া।

    আমি ঘড়ি দেখতে থাকলাম। মিনিট চলে যাচ্ছিল। দশ মিনিট। পনের মিনিট। এমনকি আমি যখন গাড়ি চালাই তখনও পনের মিনিট মাত্র লাগে। জ্যাকব আমার চেয়ে অনেক দ্রুত চালায়। আঠারো মিনিট পর আমি ফোন তুলে নিয়ে ডায়াল করলাম।

    ফোন বেজেই যাচ্ছিল। হতে পারে বিলি ঘুমিয়ে পড়েছে। হতে পারে আমি ভুল নাম্বার ডায়াল করেছি। আমি আবার চেষ্টা করলাম।

    আটবার রিং বাজার পর যখন আমি ছেড়ে দেব ভাবছিলাম, বিলি উত্তর দিল।

    হ্যালো? তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তার কণ্ঠস্বর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। যেন সে কোন খারাপ খবর আশা করছে।

    আঙ্কেল, আমি বেলা। জ্যাক কি বাড়িতে ফিরেছে? সে এখান থেকে বিশ মিনিট আগে বেরিয়েছে।

    সে বাড়িতে। বিলি একঘেয়ে স্বরে বললেন।

    তাকে আমার কাছে ফোন করার কথা ছিল। আমি কিছুটা উত্তেজিত, বিরক্ত। যখন সে এখান থেকে যায় তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল। আমি কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও ছিলাম।

    সে এতটাই অসুস্থ….কল করার জন্য। সে এখন খুব একটা ভালবোধ করছে না। বিলির কথা দূর থেকে ভেসে আসছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম সে জ্যাকবের সাথে কোথাও যাচ্ছে।

    আপনার যদি কোন সাহায্যের দরকার হয় আমাকে জানাবেন। আমি অফার করলাম। আমি আসতে পারব। আমি বিলির কথা চিন্তা করলাম। তিনি চেয়ারে বসে থাকেন এবং জ্যাকবই তাকে চালিয়ে নেয়।

    না, না। বিলি তাড়াতাড়ি বললেন। আমরা ভাল আছি। তুমি তোমার জায়গায় থাক।

    যেভাবে তিনি কথা বলছিলেন তা পুরোপুরি রূঢ় আচরণ ছিল।

    ঠিক আছে। আমি সম্মত হলাম।

    বাই, বেলা।

    লাইন কেটে গেল।

    বাই আমি বিড়িবিড় করে বললাম।

    বেশ, অন্ততপক্ষে সে বাড়িতে পৌঁছেছে। অদ্ভুত ব্যাপার আমি তেমন দুশ্চিন্তাবোধ করছিলাম না। আমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। হয়তো আমি কাল কাজে বের হওয়ার আগে তাকে দেখতে যাব। আমি তার জন্য সুপ নিতে পারি। তাকে দেখতে যাওয়ার আগে এক ক্যান ক্যাম্পবেল কোথা থেকে জোগাড় করা দরকার।

    আমি বুঝতে পারলাম আমার সমস্ত পরিকল্পনা মাঠে মারা গেল যখন আমি সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। আমার ঘড়ি জানাল সকাল সাড়ে চারটা। দৌড়ে বাথরুমে গেলাম। চার্লি আধাঘণ্টা পর আমাকে সেখানে পেল। মেঝেতে শুয়ে আছি। আমার থুতনি বাথটাবের ঠাণ্ডা কিনারের উপর রাখা।

    তিনি আমার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইলেন।

    পাকস্থলীর সমস্যা। তিনি শেষ পর্যন্ত বললেন।

    হ্যাঁ। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

    তোমার কিছু দরকার? সে জিজ্ঞেস করল।

    আমার পক্ষ থেকে নিউটনকে ফোন করো প্লীজ। আমি ঘড়ঘড়ে গলায় নির্দেশ দিলাম। তাদেরকে বল মাইকের যা হয়েছে আমারও তাই হয়েছে। সে কারণে আজ কাজে যেতে পারছি না। তাদেরকে বলো আমি দুঃখিত।

    অবশ্যই, কোন সমস্যা নেই। চার্লি আমাকে আশস্ত করলেন।

    আমি দিনের বাকি সময়টাও প্রায় বাথরুমের মেঝেতেই কাটালাম।

    মাথার নিচে তোয়ালে পাকিয়ে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা সেখানেই ঘুমিয়ে নিলাম। চার্লি জানালেন তিনি কাজে যাচ্ছেন কিন্তু আমি সন্দেহ করলাম তিনি বাথরুমে প্রবেশ করছেন। তিনি আমার পাশে মেঝেতে একগ্লাস পানি ঢেলে দিলেন যাতে মেঝেটা ভেজা থাকে এবং আমাকে ভেজা রাখে।

    তিনি বাড়ি ফিরে এসে আমাকে জাগিয়ে দিলেন। আমি রুমের ভেতর অন্ধকার দেখতে পেলাম। রাত্রি নেমে গেছে। তিনি আমাকে দেখার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলেন।

    এখনও বেচে আছো?

    কিছুটা। আমি বললাম।

    তুমি কি কোন কিছু চাও?

    না। ধন্যবাদ।

    তিনি দ্বিধান্বিত। ঠিক আছে, তারপর। এটা বলেই তিনি নিচে নেমে কিচেনে গেলেন।

    কয়েক মিনিট পর আমি ফোন বাজার শব্দ শুনতে পেলাম। বাবা কারো সাথে খুব নিচু স্বরে কথা বলছিলেন এবং তারপর রেখে দিলেন।

    মাইক ভালবোধ করছে। বাবা আমাকে ডেকে বললেন।

    বেশ, সেটা অবশ্যই ভাল খবর। সে মাত্র আমার আটঘণ্টাখানেক আগে অসুস্থ হয়েছে। আটটা অতিরিক্ত ঘণ্টা। সেই চিন্তা আমার পাকস্থলীতে আবার মোচড় দিল। আমি আবার বাথরুমের দিকে দৌড়ে গেলাম।

    আমি আবার তোয়ালের উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু যখন আমি জেগে উঠলাম আমি আমার বিছানায় শোয়া। আমার জানালার বাইরের চারিদিকে আলোকিত। আমি এখানে আসার কথা স্মরণ করতে পারলাম না। বাবা অবশ্যই আমাকে রুমে বয়ে নিয়ে এসে থাকবে। আমার বিছানার পাশের টেবিলে একগ্লাস পানিও রেখে দিয়েছেন। আমি পিপাসার্ত বোধ করলাম। আমি পানিটুকু পান করলাম। এটার স্বাদ এমন মনে হলো যে আমি সারারাত কিছুই খায়নি।

    আমি ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। আবার যেন বমিবমি ভাবটা না আসে সেই চেষ্টা করছিলাম। আমি খুব দুর্বলবোধ করছিলাম। আমার মুখের স্বাদ ভয়ানক। কিন্তু আমার পাকস্থলী ভালবোধ করছিল না। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম।

    চব্বিশ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে।

    আমি এর মধ্যে কিছুই করতে পারলাম না। নাস্তার জন্য শুধু নোনতা বিস্কুট ছাড়া কিছুই খেতে পারলাম না। বাবা আমাকে ভাল অবস্থায় দেখে বেশ স্বস্তি পেলেন বলে মনে হলো।

    যখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি গোটা দিনটা আর বাথরুমের মেঝেতে কাটাতে যাচ্ছি না, আমি জ্যাকবকে ডাকলাম।

    জ্যাকব সেখানে থাকার কারণে উত্তর দিল। কিন্তু যখন আমি তার আনন্দ অভিবাদন পেলাম আমি বুঝতে পারলাম সে এখনও ঠিক হয়নি।

    হ্যালো? তার কণ্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা।

    ওহ জ্যাক, আমি সহানুভূতির সাথে বললাম। তোমার গলা ভয়ানক শোনাচ্ছে।

    আমি ভয়ানক অনুভব করছি। সে ফিসফিস করে বলল।

    আমি সত্যিই খুব দুঃখিত যে আমি তোমাকে বাইরে নিয়ে গেছি। এই জঘন্য জিনিসে।

    আমি খুশি যে আমি গিয়েছিলাম। তার কণ্ঠস্বর এখনও ফিসফিসানির মত। নিজেকে দোষ দিও না। এটা তোমার কোন দোষ ছিল না।

    তুমি তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে উঠবে। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি আজ সকালে জেগে উঠে ভালবোধ করছি।

    তুমি অসুস্থ হয়েছিলে? সে মুদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।

    হ্যাঁ। আমিও এটা পেয়েছি। কিন্তু আমি এখন ভাল আছি।

    সেটাই ভাল। তার কণ্ঠস্বর মৃতবৎ।

    সুতরাং সম্ভবত তুমিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভাল হয়ে উঠবে। আমি উৎসাহ দিলাম।

    আমি তার উত্তর খুব অস্পষ্টভাবে শুনলাম। আমি মনে করি না আমারও তোমার মত একই জিনিস হয়েছে।

    তোমারও কি একই রকম পেটের সমস্যা হয়নি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। দ্বিধান্বিত।

    না। এটা অন্যকিছু।

    তোমার কি সমস্যা হয়েছে?

    সবকিছু। সে ফিসফিস করে বলল। আমার শরীরের সমস্ত অংশই ব্যথা হয়ে গেছে।

    তার কণ্ঠস্বরের ব্যথাটাও বোঝা যাচ্ছে।

    আমি তোমার জন্য কি করতে পারি জ্যাক? আমি তোমার জন্য কি আনতে পারি?

    কিছুই না। তুমি এখানে আসতে পার না। সে বেশ উদ্ধত্য। এটা আমাকে বিলির গতরাতের কথা মনে করিয়ে দিল।

    আমি এর মধ্যে বের করে ফেলেছি তোমার কি হয়েছে। আমি নির্দেশ করলাম।

    সে আমাকে অবহেলা করল। যখন পারি আমি তোমাকে ফোন করব। আমি তোমাকে জানাব কখন তুমি আবার এখানে আসবে।

    জ্যাকব

    আমাকে যেতে হবে। সে তাড়াতাড়ি জরুরিভাবে জানাল।

    যখন তুমি ভালবোধ করো আমাকে কল করো।

    ঠিক আছে। সে একমত হলো। তার কণ্ঠস্বর অদ্ভুত। কিছুটা তিক্ত।

    সে এক মুহূর্তের জন্য নিরব হলো। সে বিদায় জানাবে এজন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সেও অপেক্ষা করছিল।

    আমি তোমাকে শীঘই দেখতে যাব। আমি শেষ পর্যন্ত বললাম।

    আমার কলের জন্য অপেক্ষা করো। সে আবার বলল।

    ঠিক আছে…বাই জ্যাকব।

    বেলা, সে ফিসফিস করে আমার নাম ধরে ডাকল তারপর ফোন রেখে দিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.