Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    প্রিন্স আশরাফ এক পাতা গল্প645 Mins Read0

    ১০. জ্যাকব ফোন করেনি

    ১০.

    জ্যাকব ফোন করেনি।

    প্রথমবার আমি যখন ফোন করলাম বিলি উত্তর দিলেন। জানালেন, জ্যাকব তখনও বিছানায় পড়ে আছে। আমি নাক গলালাম। বিলিকে বললাম, তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিনা। না হলে নিয়ে যেতে। বিলি বললেন, তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকটা কারণে আমি সেটা মেনে নিতে পারলাম না। আমি সত্যিই তাকে বিশ্বাস করি না। আমি আবার ফোন করলাম। দিনের ভেতর কয়েকবার। পরের দুদিনই। কিন্তু সেখানে কেউ নেই। যেন কখনও কেউ ছিল না।

    শনিবারে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে দেখতে যাব। তার আমন্ত্রণ গোল্লায় যাক। কিন্তু সেই ছোট লাল বাড়িটা ফাঁকা। সেটা আমাকে ভয় পাইয়ে দিল। জ্যাকব কি এতটাই অসুস্থ যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে? আমি বাড়ি ফেরার পথে হাসপাতালের সামনে থামলাম। কিন্তু ফ্রন্ট ডেস্কের মেয়েটা জানাল জ্যাকব অথবা বিলি কেউ এখানে নেই।

    আমি বাবাকে বাধ্য করলাম ক্লিয়ারওয়াটারকে ফোন করতে যখন সে কাজ থেকে বাসায় ফিরবে। আমি অপেক্ষা করছিলাম। বাবা তার পুরানো বন্ধুর সাথে কথা বলার সময় আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কথোপকথন অনন্তকাল চলতে থাকলেও সেখানে জ্যাকবের কোন উল্লেখ নেই। এটা শুনে মনে হলো হ্যারি হাসপাতালে… তার হার্টের কিছু টেস্টের জন্য। বাবার কপাল কুঁচকে ছিল কিন্তু হ্যারি তার সাথে কৌতুক করছিলেন। তিনি এটা চালিয়েই যাচ্ছিলেন যতক্ষণ না বাবা আবার হাসছিলেন। তারপরেই শুধুমাত্র জ্যাকবের কথা জিজ্ঞেস করলেন। তাদের কথোপকথন আমার বোধগম্যের মত তেমন কিছু ছিল না। শুধুমাত্র কয়েকটা হুম এবং ইয়ে শব্দ ছাড়া। আমি আঙুল দিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে তবলা বাজিয়ে গেলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তার হাত দিয়ে আমার হাত থামিয়ে দিলেন।

    শেষ পর্যন্ত, বাবা ফোন রেখে আমার দিকে ঘুরে গেলেন।

    হ্যারি বলল সেখানে টেলিফোন লাইনে কিছু একটা সমস্যা আছে। সে কারণেই তুমি এতবার দিয়েও তাদের পাও নাই। বিলি জ্যাকবকে নিচে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। তার মনে হয়েছে। এবং দেখে মনে হচ্ছে তারা একাকীত্ব পছন্দ করছে। সে সত্যিই ক্লান্ত। বিলি বলেছে কোন দর্শনার্থী নয়। বাবা জানালেন।

    কোন দর্শনার্থী নয়? আমি অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞেস করলাম।

    বাবা ভ্রু উপরে তুললেন। এখন তুমি তাদের ওখানে যেয়ে নিজেকে তুচ্ছ করে তুল না, বেলা। বিলি জানে জ্যাকের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভাল। সে শিগগিরই ভাল হয়ে উঠবে এবং উঠে দাঁড়াবে। ধৈর্য ধরো।

    আমি এটা মেনে নিতে পারলাম না। বাবা হ্যারির ব্যাপারে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। সেটাই তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন তাকে আমার সামান্য বিষয় নিয়ে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। পরিবর্তে, আমি সোজা উপরে চলে গেলাম এবং আমার কম্পিউটার চালু করলাম। আমি অনলাইনে একটা মেডিকাল সাইট পেলাম। সার্স বক্সে মনোনিউক্লিউসিস টাইপ করলাম।

    আমি এই মনো সম্বন্ধে যা জানালাম তা হলো, ধরো এটা তুমি চুমু থেকে পেতে পার, যেটা অবশ্যই জ্যাকবের ক্ষেত্রে ঘটেনি। আমি তাড়াতাড়ি এর উপসর্গগুলো পড়লাম। যে জ্বরটা উল্লেখ করল তা তার ছিল। কিন্তু বাকিগুলো সম্বন্ধে কি? কোন রকম ভয়াবহ গলাব্যথা নেই। কোন ক্লান্তি নেই। কোন মাথাব্যথা নেই। অন্ততপক্ষে যখন সে থিয়েটার শেষ করে বাসায় গেল তার আগ পর্যন্ত এসব ছিল না। সে বলেছিল সে অনুভব করছিল বেহালার মত ঝরঝরে। এটা কি তাহলে সত্যিই এত দ্রুত আসে? এই আর্টিকেলটায় বলা হয়েছে, গলাব্যথাটাই সাধারণত প্রথমে আসে।

    আমি কম্পিউটার স্ক্রিণে তাকিয়ে রইলাম। কেন আমি এটা নিয়ে খোঁজ খবর করছি এজন্য অবাক লাগল। কেন আমি এতটা…এতটা সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, যেমন, আমি বিলির কথা বিশ্বাস করিনি? কেন বিলি হ্যারিকে মিথ্যে বলবে?

    আমি সম্ভবত কিছুটা বোকা। আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। সত্যি বলতে কি, আমি ভীত ছিলাম যে আমি আর জ্যাকবকে দেখতে অনুমতি পাব না।

    আমি আরো বেশি তথ্যের জন্য বাকি আর্টিকেলটুকুতে মনোযাগ দিলাম। যেখানে মনো কীভাবে মাসখানিকের উপরে থাকতে পারে লেখা আছে সেদিকে বেশি মনোযোগ দিলাম।

    একমাস? আমার মুখ হা হয়ে গেল।

    কিন্তু বিলি সেই লম্বা সময়ে কোন দর্শনার্থীকে দেখতে না দিয়ে থাকতে পারে না। অবশ্যই না। জ্যাকব সেই দীর্ঘ সময়ে কারোর সাথে কথা না বলতে পারলে উন্মত্ত হয়ে উঠবে।

    যাই হোক, বিলি কি নিয়ে ভয় পাচ্ছে? আটিকেলটাতে বলা হয়েছে একজন মনো আক্রান্ত ব্যক্তির দরকার কোনরকম শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়ানো। কিন্তু সেখানে দর্শনার্থীদের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। সেই অসুখটা খুব একটা সংক্রামক নয়।

    আমি বিলিকে এক সপ্তাহ সময় দেব, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তারপর সেখানে যাব। এক সপ্তাহটাই বেশ ভদ্র দেখাবে।

    এক সপ্তাহ বেশ দীর্ঘ সময়। বুধবারে বুঝতে পারলাম আমি শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছি না।

    আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে জ্যাকবদের ওখানে এক সপ্তাহ যাব না। আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না জ্যাকব বিলির নিয়মকানুনের মধ্যে থাকবে। প্রতিদিন আমি স্কুল থেকে বাসায় ফিরে ফোনের কাছে ছুটে যেতাম, সে কোন ম্যাসেজ রেখেছে। কিনা দেখতে। সেখানে কোন ম্যাসেজ ছিল না।

    আমি তিনবার নিজের সাথে প্রতারণা করে তাকে ফোন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ফোন লাইন তখনও কাজ করছিল না।

    আমি বাড়িতে অনেক বেশি সময় কাটাতে লাগলাম। অবশ্যই, একা একা। জ্যাকব ছাড়া এবং এড্রেনালিন প্রবাহ ছাড়া এই ছিন্নভিন্ন অবস্থায়, সবকিছু আমার কাছে অসহ্য লাগতে লাগল। স্বপ্নটা আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেল। আমি আর এখন এর শেষটা দেখতে পারি না। অর্ধেকটা সময় জঙ্গলের ভেতরে, অর্ধেকটা সময় ফাঁকা ফার্ণের সমুদ্রের ভেতরে-সেই সাদা বাড়িটার আর কোন অস্তিত্ব নেই। কোন কোন সময় স্যাম উলি সেই বনের ভেতরে থাকে। আমাকে আবার দেখতে থাকে। আমি তার দিকে কোন মনোযোগ দেই না। তার উপস্থিতিতে আমি স্বস্তি পাই না। এটা আমাকে একাকীত্বের চেয়ে অধিক কিছু ভাবতে সাহায্য করে না। এটা আমাকে একা চিৎকার দেয়া থেকে জাগিয়ে তোলা ছাড়া আর কিছুই করে না। রাতের পর এভাবেই চলে।

    আমার বুকের ক্ষত গর্তটা আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রুপ নিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম এটা আমার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কিন্তু আমি আবার নিজেকে কুঁকড়ে কুঁজো হয়ে যেতে দেখলাম। দিনের পর দিন। নিজেকে জড়ো সড়ো করে পড়ে থাকি। বাতাসের জন্য হাসফাস করতে থাকি।

    আমি এটা কোনমতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না।

    আমি সকালে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে স্বস্তি পেলাম। মনে পড়ে গেল আজ শনিবার। আজ আমি জ্যাকবকে ফোন করতে পারব। যদি তাদের ফোন আজও কাজ না করে তাহলে আজ আমি লা পুশে চলে যাব। যেভাবেই হোক, আজ গত সপ্তাহের তুলনায় আমি অনেক বেশি ভাল থাকব।

    আমি ফোন করলাম। উচ্চাশা নিয়ে অপেক্ষা করলাম। বিলি ফোনের ওপ্রান্ত থেকে সাড়া দিলে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

    হ্যালো?

    ওহ, হেই, ফোনটা তাহলে আবার কাজ করছে! হাই আঙ্কেল। আমি বেলা। আমি শুধু ফোন করেছি জ্যাকব এখন কেমন আছে, কি করছে এটা জানতে। এখন কি তার কাছে দর্শনার্থীরা যেতে পারে? আমি ভাবছিলাম যে আমি ওদিকে একবার…

    আমি দুঃখিত বেলা। বিলি কথার মাঝখানেই বললেন, আমি বিস্মিত যে সে হয়তো টিভি দেখছে, শব্দ শুনে তেমনটি মনে হলো। সে বাড়ি নেই।

    ওহ। এটা বুঝতে এক সেকেন্ড সময় নিল। তো সে এখন তাহলে বেশ ভালবোধ করছে?

    হা। বিলিকে দ্বিধান্বিত মনে হলো। শেষ পর্যন্ত এটা মনোতে রুপ নেয়নি। শুধু কোন অন্য ভাইরাস।

    ওহ। তো….সে কোথায়?

    সে কয়েকজন বন্ধুর সাথে পোর্ট এ্যাঞ্জেল বেড়াতে গিয়েছে। আমার মনে হয় তারা দুটো প্রোগ্রাম করে বেরিয়েছে বা এই জাতীয় কিছু একটা। সে আজ সারা দিনের জন্য বেরিয়ে গেছে।

    বেশ। সেটা খুবই স্বস্তির কথা। আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। আমি খুশি সে বাইরে যাওয়ার মত সুস্থ হয়ে গেছে। আমার কণ্ঠস্বর হঠাৎ করে ভয়ানকভাবে বিড়বিড়ানির মত হয়ে গেল।

    জ্যাকব সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এতটাই সুস্থ যে আমাকে ফোন করার মত সময় নেই। সে তার বন্ধুদের নিয়ে বাইরে বেরিয়েছে। আমি বাড়িতে বসে আছি। তাকে মিস করছি প্রতি ঘণ্টায়। আমি একাকী। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিরক্ত। ছিন্নভিন্ন। এখন আমি বুঝতে পারছি যে এক সপ্তাহ তার থেকে দূরে থাকাটা তার কাছে কোনমতেই তার ক্ষেত্রে একই প্রতিক্রিয়া হয়নি।

    তোমার কি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে কিছু বলবার বা জানবার আছে? বিলি দ্রভাবে জিজ্ঞেস করলেন।

    না। সত্যি না।

    বেশ, তাহলে আমি তাকে বলব যে তুমি ফোন করেছিলে। বিলি প্রতিজ্ঞা করলেন বাই, বেলা।

    বাই। আমি উত্তর দিলাম, কিন্তু তিনি এর ভেতরে ফোন রেখে দিয়েছেন।

    ফোনের রিসিভার হাতে ধরে রেখে আমি তখনও কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলাম।

    জ্যাকব অবশ্যই তার মন পরিবর্তন করেছে। যেটা নিয়ে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। সে আমার উপদেশ মেনে নিয়েছে। আর কোন সময় নষ্ট করতে চাচ্ছে না, এমন কারোর জন্য যে তার অনুভূতিগুলোর কোন প্রতিদান দেবে না। আমি বুঝতে পারলাম আমার মুখ থেকে রক্ত সরে যাচ্ছে।

    কোন সমস্যা? বাবা সিঁড়ির কাছে নেমে এসে জিজ্ঞেস করলেন।

    না। আমি মিথ্যে বললাম। ফোনের রিসিভার তখনও ধরে রাখা। আঙ্কেল বলছিলেন জ্যাকব এখন ভাল আছে। এটা মনো ছিল না। তো সেটাই ভাল।

    সে কি এখানে আসছে? না তুমি তার ওখানে যাচ্ছ? বাবা ফ্রিজের দিকে এগিয়ে যেয়ে অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করলেন।

    কোনটাই না। আমি স্বীকার করলাম। সে তার অন্য বন্ধুদের সাথে বাইরে বেরিয়েছে।

    আমার কণ্ঠস্বর শেষ পর্যন্ত বাবার মনোযোগ কাড়ল। তিনি হঠাৎ করে আমার মুখের দিকে তাকালেন। এক প্যাকেট জমাট বাধা স্লাইস নিয়ে তার হাত থেমে গেল।

    এটা কি লাঞ্চের জন্য কিছুটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? আমি হালকাভাবে জিজ্ঞেস করলাম যেন আমি সেটা ঠিক করে নিয়েছি। চেষ্টা করছিলাম তার মনোযোগ অন্য দিকে নিতে।

    না। আমি শুধু কিছু জিনিস প্যাকিং করে নিচ্ছিলাম নদীর দিকে যেতে হবে বলে….

    ওহ আজকে ফিশিং। মাছ ধরা।

    বেশ। হ্যারি ফোন করেছিল… এবং এখন বৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি কথা বলতে বলতে খাবারের একটা ছোটখাট স্তূপ তৈরি করে ফেললেন। হঠাৎ আবার আমার দিকে তাকালেন যেন কিছু একটা বুঝে উঠার চেষ্টা করছেন। বেলা, তুমি কি চাও যে আমি তোমার সাথে থাকি, যখন জ্যাক বাইরে বেরিয়ে গেছে?

    সেটা ঠিক আছে বাবা। আমি বললাম, চেষ্টা করলাম যাতে অন্যরকম শোনা যায় মাছগুলো আবহাওয়া ভাল থাকলে বেশ ধরা পড়ে।

    বাবা আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার মুখেরভাব সিদ্ধান্তহীনতা খেলা করছে। আমি জানতাম তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আমাকে একা ছেড়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। যদি আমি আবার সেই নিস্তেজ অবস্থায় ফিরে যাই।

    সিরিয়াসলি বাবা। আমি ভাবছি জেসিকাকে ফোন করব। আমি তাড়াতাড়ি সামলে নিলাম। তিনি আমাকে চোখে চোখে রাখার চেয়ে ভাল সারাদিন একা একা থাকব। আমাদের একটা ক্যালকুলাস টেস্ট আছে। তার জন্য পড়াশুনা করতে হবে। আমি তার কাছ থেকে সাহায্য নেব। এই অংশটা সত্য। কিন্তু আমি সেটা তার সাহায্য ছাড়াই বেশ ভালভাবে চালিয়ে নিতে পারব।

    সেটা বেশ ভাল কথা। তুমি জ্যাকবের সাথে এত বেশি সময় কাটিয়েছে যে তোমার অন্য বন্ধুরা ভাবছে যে তুমি হয়তো তাদের ভুলে গেছো।

    আমি হাসলাম এবং তার দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ালাম, যেন আমি আমার অন্য বন্ধুদের চিন্তাভাবনা নিয়ে মাথা ঘামাই।

    বাবা এগুতে শুরু করলেন কিন্তু তারপর হঠাৎ ফিরে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন হেই, তুমি কি এখানে পড়াশুনা করবে, নাকি জেসের ওখানে যাবে, তাই না?

    নিশ্চয়, এক জায়গায় হলেই হয়।

    বেশ, শুধু আমি তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি, বনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সতর্ক থাকবে। যেমনটি আমি আগে তোমাকে বলেছিলাম।

    আমার এক মিনিট সময় লাগাল ব্যাপারটা বুঝতে। অন্যমনস্ক ছিলাম। আবারো ভালুক সমস্যা?

    বাবা মাথা নাড়ালেন। ভ্রু কুঁচকালেন। আমরা একজন হারিয়ে যাওয়া হাইকারকে খুঁজে পেয়েছি–রেঞ্জাররা আজ খুব সকালে তার ক্যাম্পে তাকে পেয়েছে, কিন্তু সেখানে কোন চিহ্ন নেই। সেখানে কোন একটা বিশাল প্রাণীর পায়ের ছাপ…অবশ্যই সেটা পরে আবার ফিরে আসবে, খাবারের গন্ধে…। যাই হোক, তারা এটার জন্য ফাঁদ পাতছে।

    ওহ। আমি শূন্যভাবে বললাম। আমি সত্যিই তার সর্তক বাণী শুনছিলাম না। আমি এখনও জ্যাকবের ব্যাপারটা নিয়ে অনেক বেশি আপসেট। একটা ভালুকে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনার চেয়ে সেটা বেশি কিছু।

    আমি খুশি যে বাবার তাড়া ছিল। তিনি জেসিকাকে ডাকার জন্য অপেক্ষা করলেন না। সুতরাং আমি আর ওই ব্যাপারটার দিকে গেলাম না। আমি জড়ো করে রাখা স্কুলের বইগুলোর দিকে এগুলাম। সেগুলোকে রান্নাঘরের টেবিলের উপর রাখলাম। তারপর আমার ব্যাগে ঢুকালাম। সেটা সম্ভবত খুব বেশি কিছু। যদি সে ক্ষতগুলোকে আঘাত করায় আগ্রহী না হয়, আমি তাকে হয়তো সন্দেহগ্রস্ত করে তুলতে পারি।

    আমি নিজেকে খুবই ব্যস্ততার মধ্যে রাখি। তারপরও সারাটা দিন আমি কি করব বুঝে উঠতে পারে না। বাবা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে গেলে আমি ব্যস্ততার ভাব বন্ধ করি। আমি শুধুমাত্র মিনিট দুই রান্নাঘরের ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নেই, আমি আজ বাড়িতে থাকছি না। আমি আমার অপশনগুলো খতিয়ে দেখছি।

    আমি জেসিকাকে ফোন করতে যাচ্ছি না। যতই আমি বলি না কেন, জেসিকা এই অন্ধকারের দিকে আসবে না।

    আমি লা পুশে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারি। আমার মোটরসাইকেল নিতে পারি। এটা ভাল চিন্তা কিন্তু একটা ছোটখাট সমস্যা আছে। কে আমাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাবে, যদি আমার সেটার দরকার হয়?

    অথবা…ট্রাকিংয়ের জন্য আমাদের মানচিত্র ও কম্পাস আছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত আমি প্রক্রিয়াটা অনেক ভাল বুঝতে পেরেছি। আমি সেখানে হারিয়ে যাব না। হতে পারে আমি আজ আরেকটু বেশি এগিয়ে যাব। এই কাজটা করে রাখতে পারি কখন আবার জ্যাকব, এটাতে যেতে আগ্রহী হবে। আমি এই ভাবনা ছেড়ে দিলাম, কেননা সেটা কত দীর্ঘদিন হবে কে জানে। অথবা এমনও হতে পারে এটা আর কখনই হবে না।

    আমি নিজেকে অপরাধী ভাবলাম। বাবা যখন এসব ব্যাপার বুঝতে পারবেন কি মনে করবেন। কিন্তু আমি সেটাকে অবহেলা করলাম। আমি এই বাড়িতে আজ আর কাটাতে চাচ্ছি না।

    কয়েক মিনিট পরে আমি সেই পরিচিত অপরিছন্ন রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কোন নির্দিষ্ট দিকে নয়। আমি জানালার কাঁচ নামিয়ে দিলাম। আমার ট্রাকের পক্ষে যত জোরে সম্ভব চালিয়ে যেতে লাগলাম। চেষ্টা করছিলাম আমার মুখের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাস উপভোগ করতে। এটা ছিল মেঘাচ্ছন্ন কিন্তু পুরোপুরি শুকনো আবহাওয়া। ফর্কের জন্য একটা ভাল দিন।

    এটা শুরু করতে জ্যাকবের চেয়ে বেশি সময় নিল। আমি নির্দিষ্ট স্পটে পার্ক করার পরে, পনের মিনিট সময় কাটালাম খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে। কম্পাসের সুঁচের মত কাঁটার ওঠানামা ও মানচিত্রটা পর্যালোচনা করলাম। যখন আমি প্রায় নিশ্চিত যে আমি নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমি বনের দিকে দিক ঠিক করে নিলাম।

    জঙ্গলটা আজ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। সমস্ত ছোটপ্রাণগুলো আজকের শুষ্কতা উপভোগ করছে। এমনকি পাখিগুলো কিচিমিচি করছে। কীটপতঙ্গ গুঞ্জন করছে। আমার মাথার চারিদিকে যেন প্রাণের সমারোহ। জঙ্গলটাকে আজকে আরো বেশি লতানো মনে হচ্ছে। এটা আমাকে আমার সম্প্রতি দেখা দুঃস্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমি জানতাম এটা হবেই, কারণ আমি একাকী। জ্যাকবের সর্তক সংকেত সেখানে নেই। আরেক জোড়া পায়ের শব্দ আমার পিছু পিছু ভেজা মাটিতে পড়ছে না।

    জঙ্গলের আরো গভীরে প্রবেশ করার পর অস্বস্তি আরো বাড়তে লাগল। নিঃশ্বাস নেয়া আগের চেয়ে আরো কষ্টকর হয়ে পড়ল। সেটা মোটেই ক্লান্তির জন্য নয়। আমি আমার বুকের সেই গভীর ক্ষতের সমস্যায় পড়লাম। আমি দুহাত বুকের উপর চেপে ধরে রাখলাম। আমার চিন্তাভাবনা থেকে সেই জিনিসটার চিন্তা সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করছিলাম। আমি প্রায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু যে শক্তি আমি এর মধ্যে খরচ করে ফেলেছি সেটাকে ঘৃণা করি।

    আমার পায়ের শব্দের ছন্দ আমার মনে অবশ ভাব এনে দিল। আমার নিঃশ্বাস আগের মত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। এখান থেকে ফিরে যাচ্ছি না বলে আমি খুশি। এই ঝোঁপজঙ্গলের মধ্যে হেঁটে আমার বেশ ভালই লাগছে। আমি এখন বলতে পারি আগের চেয়ে বেশ জোরেই যাচ্ছি।

    আমি বুঝতে পারছিলাম না কতটা আন্তরিকতার সাথে আমি এগিয়ে চলছিলাম। কতদুর এগিয়ে গেছি। আমি ভেবেছিলাম সম্ভবত মাইল চারেক গেছি। এখন আর শুরুর জায়গাটা দেখতে পাচ্ছি না। তারপর বেপরোয়াভাবে একটা ছোট নিচু জায়গা মত পথ দিয়ে আঙুরের ক্ষেতের দিকে এগিয়ে গেলাম। সেগুলো আমার বুকে ফার্ণের ধাক্কা দিচ্ছিল। আমি সেই তৃণভূমিতে পৌঁছুলাম।

    এটা সেই একই জায়গা। আমি তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত হলাম। আমি কখনও এমন সাদৃশ্যপূর্ণ জিনিস এর আগে দেখি নাই। এটা এতটাই গোল যেন দেখে মনে হয় কেউ একজন ইচ্ছাকৃতভাবে এই বৃত্তটা তৈরি করেছে। গাছগুলো সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু কোন প্রমাণ রাখেনি। পূর্বদিকে পানির বুদবুদের শব্দ শুনতে পেলাম।

    জায়গাটায় সূর্যের আলো পড়ে না। কিন্তু এটা এখনও খুবই সুন্দর এবং শান্ত। এটা বন্য ফুলের জন্য ভুল সময়। জমিন লম্বা জমাট ঘাসে ভরে আছে। হালকা বাতাসে লেকের জলের মত ঢেউ খেলে যাচ্ছে।

    এটা সেই একই জায়গা…কিন্তু আমি যেটা খুঁজছি তা এখানে নেই।

    এটা আমাকে খুবই হতাশ করল। জায়গাটা পেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলাম। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই বসে পড়লাম। বসে ভালভাবে চারিদিকে দেখতে লাগলাম।

    আরো বেশিদুর যাওয়ার আর কি কারণ থাকতে পারে? এখানে কিছুই নেই। আমার সেই স্মৃতিটুকু ছাড়া কিছুই নেই। আমি যখন চাই স্মৃতিটাকে ডেকে আনতে পারি। যদি আমি চাই সেই ব্যথাটুকু ফিরে আসুক। ওর সাথে ছাড়া এই জায়গাটার কোন বিশেষত্ব নেই। আমি প্রকৃতপক্ষে ঠিক জানি না আমি আসলে এখানে কি অনুভব করব আশা করেছিলাম। কিন্তু তৃণভুমি শূন্য। সবকিছুর মতই শূন্য। সবখানের মতই। আমার দুঃস্বপ্নের মতই। আমার মাথা ঘুরতে লাগল।

    অন্ততপক্ষে আমি একাকী এসেছি। আমি নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম যে আমি সেই জিনিসটা বুঝতে পেরেছি। যদি আমি এই তৃণভূমিটা জ্যাকবের সাথে খুঁজে পেতাম… বেশ সেখানে কোন পথ ছিল না তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার। কীভাবে আমি তাকে বুঝিয়ে বলতাম আমি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছি। আমার বুকের ভেতর গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে? এটা অনেক বেশি ভাল হয়েছে আমার আশেপাশে কোন দর্শক নেই।

    আমার কারো কাছে কোন ব্যাখ্যা দিতে হবে না, কেন আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য এত ব্যস্ততা লাগিয়েছি। জ্যাকব হয়তো কিছু একটা অনুমান করে নিত। এত ঝামেলা করে গাধার মত জায়গাটা খুঁজে বের করা, আমি আর কয়েক সেকেন্ডের বেশি এখানে ব্যয় করতে চাই না। কিন্তু আমি এর মধ্যেই চেষ্টা করছি পায়ে ফিরে যাওয়ার মত শক্তি নিয়ে আসতে। নিজেকে জোর করলাম যাতে আমি এই জায়গা থেকে বেরিয়ে যেতে পারি। এই ফাঁকা জায়গায় বহন করার মত অনেক বেশি ব্যথা পেয়েছি। আমি হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।

    আমি কত সৌভাগ্যবতী যে আমি একাকী!

    একাকী। আমি বেশ আত্মতৃপ্তির সাথে কথাটা বারবার আওড়ালাম। আমি পায়ে বেশ জোর পেলাম। তার পরের মুহূর্তে আমি দক্ষিণ দিকে গাছের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। তিরিশ পা এর মত।

    কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাথা ঘুরানির মত একটা অনুভূতি আমাকে ঘিরে ধরল। প্রথমত আমি বিস্মিত হলাম। আমি যে কোন ট্রেইল থেকে এখন বেশ দূরে। আমি কোন সঙ্গ আশা করতে পারি না। তারপর, যখন আমার চোখজোড়া সেই স্থবির মূর্তির দিকে গেল। আমি স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। সেই পান্ডুবর্ণের ত্বক, আমার আশাকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। আমি এটা অভিশপ্তের মত চেপে গেলাম। আমি নিজের সাথে লড়তে লাগলাম। আমার চোখ কালো চুলের নিচে সেই মুখের দিকে। সেই মুখ যেটা আমি কখনও দেখতে চাই না। ভয় ঘিরে ধরেছে আমাকে, এটা সেই মুখ নয় যেটা আমি দেখতে পারি। কিন্তু এটা এতটাই কাছাকাছি। যে মানুষটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে কোন হাইকার নয়। এবং শেষ পর্যন্ত, আমি তাকে চিনতে পারলাম।

    লরেন্ট! আমি আনন্দে কেঁদে উঠলাম।

    এটা ছিল একটা বিরক্তিকর সাড়া। আমার সম্ভবত ভয় পাওয়া বন্ধ করা উচিত।

    লরেন্ট হলো জেমসের কোভেনের একজন। সে সময়ই তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। সে সেই শিকারের সাথে জড়িত ছিল না যেটা আমাকে তাড়া করেছিল। সেই শিকার যেখানে আমি ছিলাম পাথরের খাদে। কিন্তু সেটা ছিল একমাত্র এইজন্য যে আমি ভীত ছিলাম। আমি তাদেরটা থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম একটা বড় কোভেনের দ্বারা। এটা ভিন্ন হতে পারে যদিও সেটা সেই কেস ছিল না। তার সেই সময়ে কোন ভূমিকা ছিল না। সেই সময়ে আমাকে তাদের খাবার কথা ছিল। অবশ্যই সে পরিবর্তিত হয়ে থাকবে। কারণ আলাস্কায় গিয়েছিল অন্যান্য সভ্য কোভেনদের সাথে বাস করার জন্য। অন্যান্য পরিবার যারা নৈতিক কারণে মানুষের রক্তপান করতে অস্বীকৃতি জানায়। অন্যান্য পরিবার যেমনটি… কিন্তু আমি সেই নামটা আর চিন্তাও করতে চাই না।

    হ্যাঁ, ভয় আমাকে আরো বেশি অনুভূতিপ্রবণ করে তুলল। কিন্তু যেটা আমি সব থেকে অনুভব করছিলাম অতিরিক্ত সন্তুষ্টি। তৃণভূমিটা আবারো জাদুকরী জায়গা। একটা কালো গাঢ় ম্যাজিক যেমনটি আমি আশা করেছিলাম। নিশ্চিত হতে কিন্তু ম্যাজিকগুলো একই। এখানেই সেই সংযোগ আছে যেটা আমি অনুমান করেছিলাম। প্রমাণ যেভাবেই হোক হয়ে গেছে একই পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যেখানে আমি বাস করি- তার অস্তিত্ব আছে।

    লরেন্ট কীভাবে একই রকম দেখতে থাকে? এটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেখানে অন্য কিছু ছিল… আমি এটা এড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারছিলাম না।

    বেলা? সে জিজ্ঞেস করল। তাকে দেখে যতটা আমি অনুভব করছিলাম সে তার চেয়ে অধিক বিস্মিত মনে হচ্ছে।

    তোমার মনে আছে। আমি হাসলাম। এটা খুবই হাস্যকর যে আমি খুবই আনন্দিত কারণ একজন ভ্যাম্পায়ার আমার নাম জানে।

    সে মুখ ভঙ্গি করল। আমি তোমাকে এখানে দেখবো আশা করিনি। সে আমার দিকে এগিয়ে এল। তার অভিব্যক্তি অন্যরকম।

    এটা কি অন্য দিক দিয়েও তাই নয় কি? আমি এখানে বাস করি। আমি ভেবেছিলাম তুমি আলাস্কায় চলে গেছো।

    সে আমার সামনে দশ পা এগিয়ে থেমে গেল। তার মাথা পাশে ঘুরাল। আমি দেখেছি তার মুখ সবচেয়ে সুন্দর। মুখটাতে একটা স্বর্গীয় আভা আছে। আমি অদ্ভুতভাবে তাকে বুঝতে চেষ্টা করলাম। এখানে কেউ একজন আছে আমি জানি না তার সাথে কেমন আচরণ করব। কেউ একজন যে এর মধ্যে জানে সবকিছু আমি যা কখনও বলি নাই।

    তুমি ঠিক। সে একমত। আমি আলাস্কায় গিয়েছিলাম। এখনও। আমি আশা করি নাই….যখন আমি দেখতে পেলাম কুলিনের জায়গা খালি। আমি ভেবেছিলাম তারা চলে গেছে।

    ওহ। নামটা আমার কানে আসার সাথে সাথে আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। ক্ষতের কিনারাগুলো ব্যথা দিতে শুরু করেছ। নিজেকে ঠিক রাখতে এক সেকেন্ড সময় নিলাম। লরেন্ট কৌতূহলী চোখে অপেক্ষা করছিল।

    তারা এখান থেকে চলে গেছে। আমি শেষ পর্যন্ত নিজেকে গুছিয়ে তাকে বলতে পারলাম।

    উমম। সে বিড়বিড় করে বলল। আমি বিস্মিত যে তারা তোমাকে ফেলে চলে গেছে। তুমি কি তাদের এক প্রকার পোষা হয়ে ছিলে না? তার চোখ জোড়া যেকোন ব্যাপারে নিষ্পাপ ধরনের।

    আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাসলাম। সেরকম কিছু একটা।

    হুমমম। সে ভেবে বলল।

    সেই মুহর্তে আমি বুঝতে পারলাম সে সেই একইভাবে তাকাচ্ছে। অনেক বেশি সেই একইভাবে। কার্ল আঙ্কেল আমাদেরকে বলেছিলেন লরেন্ট তানিয়ার পরিবারের সাথে থাকে। আমি তাদের দেখতে শুরু করেছিলাম। খুব কম উপলক্ষে আমি তার কথা ভাবতাম। সেই একই রকম সোনালি চোখ…কুলিন- আমি জোর করে সেই নাম মনে আনলাম না।

    আমি অজান্তেই কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। সে কৌতূহলী গাঢ় লাল চোখ আমার নড়াচড়া দেখল।

    তারা কি প্রায়ই দেখতে আসে? সে জিজ্ঞেস করল। এখনও স্বাভাবিক, কিন্তু তার আমার দিকে ঝুঁকে আসছে।

    মিথ্যে! সেই সুন্দর ভেলভেটের মত মসৃণ কণ্ঠস্বর আমাকে ফিসফিস করে বলল।

    আমি ওর কণ্ঠস্বরে চমকে উঠলাম। কিন্তু এটা আমাকে মোটেই বিস্মিত করল না। আমি কি এখন কল্পনাতীত বিপদের মুখে পতিত হয়নি? মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা এই বিপদের পাশে বিড়াল ছানার মতই সুবোধ একটা জিনিস।

    সেই কণ্ঠস্বর আমাকে যা করতে বলল আমি সেটাই করলাম।

    এখন এবং আবার আমি চেষ্টা করলাম আমার কণ্ঠস্বর খুব হালকা স্বস্তিদায়ক করার সময়টা আমার কাছে বেশ লম্বাই মনে হচ্ছে। আমি কল্পনা করতে পারি। তুমি জানো তারা কীভাবে এখান থেকে চলে গেছে… আমি অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করলাম। আমার এখন চুপ করে যাওয়া উচিত।

    হুমম। সে আবার বলল। বাড়িটার গন্ধ এমন মনে হয় যেন এটা এই মাত্র খালি করা হয়েছে।

    তার চেয়ে ভাল হয় তুমি মিথ্যে কথা বলো, বেলা। কণ্ঠস্বরটা সম্মত হলো।

    আমি চেষ্টা করলাম আমি আঙ্কেলকে জানাবো তুমি এখানে এসেছিলে। তিনি দুঃখিত হবেন। তারা তোমাকে মিস করেছে। আমি অনুমান করলাম এক সেকেন্ডের জন্য কিন্তু আমি সম্ভবত এটা উল্লেখ করতে পারব না…এ্যাডওয়ার্ড, আমি মনে করি। আমি অনেক কষ্টে তার নাম উল্লেখ করলাম এবং এটা আমার আবেগ অনুভূতিকে ঘুলিয়ে দিল, আমার ধাপ্পাবাজিও সে ছিল এমন মেজাজের…বেশ, আমি নিশ্চিত তুমি মনে করতে পার। সে এখনও সেই জেমসের গোটা ব্যাপার নিয়ে স্পর্শকাতর। আমি চোখ ঘোরালাম। একহাত এমনভাবে নাড়ালাম যেন এসব খুব প্রাচীন ইতিহাস। কিন্তু আমার কণ্ঠস্বরের মধ্যে হিস্টোরিয়ার মত একটা লক্ষণ ছিল। আমি বিস্মিত যদি সে সেই জিনিসটা বুঝতে পারে।

    তা কি সত্যি? লরেন্ট সন্তুষ্টভাবে জিজ্ঞেস করল…এড়িয়ে যাওয়ার মত করে।

    আমার উত্তর সংক্ষিপ্ত করে রেখেছিলাম। যাতে আমার কণ্ঠস্বর দিয়ে ভয়ের ব্যাপারটা প্রকাশ না পায়। উমম।

    লরেন্ট পাশের দিকে একটা সাধারণ পদক্ষেপ নিল। ছোট্ট তৃণভূমির দিকে একবার তাকিয়ে নিল। আমি সেই পদক্ষেপটা মিস করলাম না যেটা তাকে আমার আরো কাছে নিয়ে এসেছিল। আমার মাথার মধ্যে, কণ্ঠস্বরটা নিচুলয়ের গর্জনে সাড়া দিচ্ছিল।

    তো ডেনালিতে দিনগুলো কেমনভাবে যাচ্ছে? কাল আমাকে বলেছিল তুমি তানিয়াদের সাথে থাকছ? আমার কণ্ঠস্বর বেশ উঁচু।

    প্রশ্নটা তাকে থামিয়ে দিল। আমি তানিয়াকে খুব পছন্দ করি। সে বলল এবং তার বোন আরিনাকে আরো বেশি…আমি এর আগে কখনও এক জায়গায় এত বেশি সময় ছিলাম না। আমি এই সুযোগ সুবিধাগুলো উপভোগ করেছি। এর মহত্ত্বের দিকটাও। কিন্তু নিয়মকানুনগুলো খুবই কঠিন…আমি বিস্মিত যে কেউ এটা খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না। সে আমার দিকে ষড়যন্ত্রীর মত হাসল। মাঝে মাঝে আমি প্রতারণা করি।

    আমি ব্যাপারটা হজম করতে পারলাম না। আমার পা সহজভাবে পিছাতে লাগল। কিন্তু আমি থেমে গেলাম যখন দেখলাম তার লাল চোখ আমার চলাচলের দিকে নজর রাখছে।

    ওহ। আমি মুছিত স্বরে বললাম জেসপারের সেই ধরনের সমস্যা হচ্ছিল।

    নড়ো না। সেই কণ্ঠস্বর ফিসফিস করে বলল। আমি চেষ্টা করলাম সে যা নির্দেশ দিচ্ছিল সেটা মানতে। এটা খুব কঠিন। কণ্ঠস্বরের স্বতঃস্ফুর্ত আসা প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন।

    সত্যিই? লরেন্টকে দেখে বেশ উৎসাহী মনে হলো। এটা কি তাহলে তাদের চলে যাওয়ার কারণ?

    না। আমি সত্তাবে উত্তর দিলাম। জেসপার বাড়িতে অনেক বেশি সতর্ক।

    হ্যাঁ। লরেন্ট একমত হলো। আমিও।

    সে যে পদক্ষেপে সামনের দিকে এগুচ্ছিল সেটা আরো বেপরোয়া।

    ভিক্টোরিয়া কি কখনও তোমাকে খুঁজে পেয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম। তাণে অন্য দিকে আকর্ষণ করানোর জন্য বেপরোয়া। এটাই প্রথম প্রশ্ন যেটা আমার মাথায় প্রথমে এসেছে। আমি কৃতজ্ঞ এই কথাটাই মাথায় এসেছে। ভিক্টোরিয়া–যে আমাকে জেমসের সাথে শিকার করতে চেয়েছিল। তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়। সে এরকম একজন যাকে আমি এই বিশেষ মুহূর্তে ভাবতে চাই না।

    কিন্তু এই প্রশ্নটা তাকে থামিয়ে দিল।

    হ্যাঁ। সে বলল। পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে ইতস্তত করছে। আমি প্রকৃতপক্ষে এখানে এসেছে তার জন্যই। সে মুখ ভঙ্গি করল সে এই ব্যাপারে খুশি হবে না।

    কোন ব্যাপারে? আমি আগ্রহীভাবে জিজ্ঞেস করলাম। বিষয়টা সে যাতে চালিয়ে যায় সেটাই চাচ্ছিলাম। সে গাছগুলোর দিকে একবার তাকাল। আমার দিক থেকে সরে এল। আমি তার সেই সরে যাওয়ার সুযোগ নিলাম। কয়েক পা পিছিয়ে এলাম।

    সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তাকে একজন কালো চুলের দেবতার মত লাগছিল।

    তোমাকে হত্যা করার ব্যাপারে। সে নেশাতুর গলায় উত্তর দিল।

    আমি আরেক ধাপ পিছিয়ে এলাম। আমার মাথার মধ্যের উন্মত্ত গোঙানীর কারণে এসব শুনতে সমস্যা হচ্ছিল।

    সে চেয়েছিল সেই দিকটা রক্ষা করতে। সে বলে চলল। সে যে-কোন এক প্রকারে…তোমাকে নিয়ে যেতে চায়, বেলা।

    আমাকে? আমি চিচি করে বললাম।

    সে মাথা নেড়ে মুখ ভঙ্গি করল। আমি জানি, ব্যাপারটা তোমার কাছে কিছুটা পুরাতন মনে হবে। কিন্তু জেমস তার সঙ্গী ছিল এবং তোমার এ্যাডওয়ার্ড জেমসকে হত্যা করেছে।

    এমন কি এইখানে, মৃত্যুর প্রসঙ্গে তার নাম উচ্চারণে আমার ভেতরের ক্ষত যেন আরো ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল।

    লরেন্ট অবশ্যই আমার প্রতিক্রিয়ায় অবাক হলো। সে ভেবেছিল এ্যাডওয়ার্ডের চেয়ে তোমাকে হত্যা করা বেশি উপযুক্ত হবে। উপযুক্ত প্রতিশোধ। সঙ্গীর বদলে সঙ্গী। সে আমাকে বলেছিল সেই জায়গাটুকু তার জন্য ধার দিতে, এভাবেই বলা যায়। আমি কখনও কল্পনাও করিনি তোমাকে এত সহজে পেয়ে যাওয়া যাবে। তো, হতে পারে তার পরিকল্পনা তোমাকে ক্ষতবিক্ষত করা দেখে মনে হয় সে যে প্রতিশোধ কল্পনা করেছে তা হবে না। যেহেতু তুমি এখন আর এ্যাডওয়ার্ডের কাছে তেমন কেউ নয়। সে তোমাকে এখানে অরক্ষিত অবস্থায় রেখে গেছে।

    আরেকটা রক্তপাত, আরেকটা কাটাছেড়া, আমার বুকের ভেতরে হতে থাকে।

    লরেন্ট তার দিক থেকে একটুখানি এগিয়ে আসে। আমি হতবুদ্ধ অবস্থায় আরেক পা পিছিয়ে যাই।

    সে ভ্রু কুঁচকাল। আমার মনে হয় সে রাগান্বিত হবে। একই কথা।

    তাহলে তার জন্য অপেক্ষা করছ না কেন? আমি তাকে বললাম।

    তার অভিব্যক্তিতে অদ্ভুত ভংয়কর একভাব ফুটে উঠল। বেশ, তুমি খুব খারাপ সময়ে আমার হাতে ধরা পড়েছ, বেলা। আমি এই জায়গায় ভিক্টোরিয়ার মিশন সফল করতে আসিনি। আমি শিকার খুঁজছিলাম। আমি কিছুটা তৃষ্ণার্ত। এবং তোমার গন্ধ পাচ্ছি….সাধারণভাবে বলতে গেলে আমার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে।

    লরেন্ট আমার দিকে সম্মতির দৃষ্টিতে তাকাল যেন আমি তার কাছে সৌজন্যবশত এসেছি।

    তাকে হুমকি দাও। সেই মনোরম কণ্ঠস্বর আদেশ করল। তার কণ্ঠস্বর আমার মাথার ভেতরে ফাঁকা শোনাল।

    সে জানে এটা তুমি। আমি বাধ্যবাধকের মত ফিসফিস করে বললাম তুমি এটা থেকে রেহাই পাবে না।

    এবং কেন নয়? লরেন্টের হাসি প্রসারিত হলো। সে আশেপাশের গাছগুলোর দিকে তাকাল। এই গন্ধটা পরবর্তী বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে। কেউ তোমার মৃতদেহ খুঁজে পাবে না। তুমি সাধারণভাবে শুধু হারিয়ে যাবে। অন্য অনেকের মত। অন্য অনেক মানুষের মত। সেখানে এ্যাডওয়ার্ডের আমার ব্যাপারে চিন্তা করার কিছু নেই, যদি সে এই ব্যাপারে কোন অনুসন্ধান করতে চায়। এটা কোন ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। আমাকে আগে নিশ্চিত করতে দাও বেলা। আমি শুধুই তৃষ্ণার্ত।

    করুণা ভিক্ষা চাও। আমার হ্যালুসিনেশন বলল।

    দয়া করো।

    লরেন্ট মাথা নাড়ল। তার মুখে দয়ালুর ভাব। এই দিকে দেখ, বেলা। তুমি খুবই ভাগ্যবতী যে আমিই তোমাকে খুঁজে পেয়েছি।

    আমি কি? আমি আরেক পদক্ষেপ পিছিয়ে গিয়ে বললাম।

    লরেন্ট খুশি মনে আমাকে অনুসরণ করল।

    হ্যাঁ। সে আশ্বস্ত করল। আমি খুব তার সাথে কাজ করব। তুমি একটু কিছুও বুঝতে পারবে না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি। ওহ, স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যাপারে পরে ভিক্টোরিয়াকে মিথ্যে বলব। শুধু তাকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেব। কিন্তু তুমি যদি জানতে সে তোমাকে নিয়ে কি পরিকল্পনা করেছে বেলা…. সে ধীরে ধীরে তার মাথা নাড়ল। যেন সে খুবই বিরক্ত। আমি অনুমান করছি তুমি এটার জন্য আমাকে ধন্যবাদ দেবে।

    আমি ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকালাম।

    সে নাক টানল, আমার চুলের উপর দিয়ে তার নিঃশ্বাসের বাতাস প্রবাহিত হলো। লালা ঝরছে। মুখে পানি এসে গেছে। সে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল।

    আমি স্পিংয়ের মত টানটান হয়ে গেলাম। আমার চোখ চারিদিক দেখতে লাগল। এ্যাডওয়ার্ডের আগত গোঙানী আমার মাথার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। আমি যে প্রতিরোধের দেয়াল তৈরি করেছিলাম তার চারিদিকে তার নাম প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। এ্যাডওয়ার্ড, এ্যাডওয়ার্ড, এ্যাডওয়ার্ড। আমি মারা যেতে চলেছি। এটা আর এখন কোন ব্যাপার নয় যদি আমি তাকে নিয়ে চিন্তা করি। এ্যাডওয়ার্ড, আমি তোমাকে ভালাবাসি।

    আমার চোখ ছোট ছোট হয়ে গিয়েছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, লরেন্ট শ্বাস নেয়ার জন্য থেমে গেল। বাম দিকে থেকে তার মাথার উপর যেন চাবুকের আঘাত পড়তে লাগল। তার কাছে থেকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে আমি ভীত হয়ে পড়লাম। তাকে দেখতে লাগলাম। যদিও তার অন্যমনস্ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। অথবা অন্যকোন কৌশল আমার উপরে প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। আমি খুবই বিস্মিত হলাম। স্বস্তি র সাথে দেখলাম সে ধীরে ধীরে আমার দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

    আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। সে বলল। তার কণ্ঠস্বর এত নিচু যেটা আমি এর আগে কখনও শুনিনি।

    আমি তার দিকে তাকালাম। আমার চোখ তৃণভূমিটায় ঘুরে পরখ করে এল। সেই কারণটা খুঁজছিলাম যেটা আমার মৃত্যুকে কয়েক সেকেন্ড পিছিয়ে দিয়েছে। প্রথমে আমি কিছুই দেখতে পেলাম না। আমার চোখের দৃষ্টি পলকে লরেন্টের উপর থেকে ঘুরে এল। সে এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করছে। তার চোখ বিরক্তি নিয়ে জঙ্গলের দিকে তাকাচ্ছে।

    তারপর আমি এটাকে দেখলাম। একটা বিশাল কালো আকৃতি গাছের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। ছায়ার মত বিশাল এবং শান্ত। এটা বেপরোয়াভাবে ভ্যাম্পায়ারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা বিশাল একটা ঘোড়ার মত উঁচু কিন্তু বিশালদেহী, আরো বেশি মাংসপেশীবহুল। বিশাল জটা মুখ খিচাচ্ছিল, দাঁত বেরিয়েছিল। ছুরির মত ধারালো দাঁত। জটা ঝড়ের মত গর্জন করে আসছিল।

    একটা ভালুক।

    এটাকে শুধু ভালুক বললে ভুল বলা হবে। একটা দূরত্ব থেকে, যে কেউ ধারণা করবে যে এটা একটা ভালুক। এতটাই বিশাল ও শক্তিশালীভাবে সৃষ্টি হয়েছে?

    আমি ভাগ্যবতী যে এটাকে এত কাছ থেকে দেখতে পারছি। পরিবর্তে, এটা নিঃশব্দে ঘাযের উপর দিয়ে এগিয়ে আসছে। এটা আমার থেকে মাত্র দশ ফিট দূরে।

    এক ইঞ্চিও নড়ো না। এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বর ফিসফিস করে বলল।

    আমি এক দৃষ্টিতে সেই দানবীয় প্রাণীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার মন বলছিল আমি এর কিছু একটা নাম দিয়ে দেই। এটার নড়ার সময়, দুর থেকেই দাঁত ঘর্ষণের শব্দ ভেসে আসছিল। আমি শুধু একটাই সম্ভবনা দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে তা সেভাবে ভয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। যদিও আমি কখনও কল্পনাও করিনি যে একটা বন্য নেকড়ে এতটাই বড় হতে পারে।

    আরেকটা গোঙানী এটার গলার ভেতর থেকে ভেসে এল। সেই গোঙানীতে আমি কেঁপে উঠলাম।

    লরেন্ট গাছের দিকে পিছু ফিরে যেতে লাগল। আমি ভয়ে জমে দাঁড়িয়ে রইলাম।

    নানা প্রশ্ন মনের ভেতর খেলা করছিল। কেন লরেন্ট এরকম আচরণ করছে? মানলাম এই নেকড়েটা দৈত্যকৃতির। কিন্তু এটা শুধু মাত্র একটা প্রাণী। একটা ভ্যাম্পায়ারের একটা প্রাণীকে ভয় করার কি কারণ থাকতে পারে? লরেন্ট ভয় পেয়েছে। তার চোখ জোড়া আমার মতই ভয়ে বড় বড় হয়ে গেছে।

    আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেলাম, হঠাৎ করে আসা এই বিশাল নেকড়েটা একা নয়। অন্য দুই দিক থেকে আরো দুটো বিশাল নেকড়ে সেই তৃণভূমির দিকে এগিয়ে আসছে। একটা হলো, গাঢ় ধূসর রঙের। অন্যটা বাদামী রঙের। তবে প্রথমটার মত কোনটাই অতত উঁচু নয়। ধুসর নেকড়েটা গাছপালার ভেতর দিয়ে আসছে। এটা আমার থেকে মাত্র কয়েক ফিট দূরে। এটা সোজাসুজি লরেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে।

    আমি কোন রকম প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে, আরো দুটো নেকড়ে অনুসরণ করল। একটা ভি অক্ষরের মত লাইন করে এগুতে লাগল। এর ভেতরে বাদামী নিকড়েটা আবার আমার এত নিকটে যে ইচ্ছে করলেই সে আমাকে স্পর্শ করতে না পারে।

    আমি অজান্তেই নিঃশ্বাস নিয়ে লাফ দিয়ে পিছিয়ে এলাম। যেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বোকাম। আমি আবার জমে স্থির হয়ে রইলাম। অপেক্ষা করছিলাম নেকড়েটা ঘুরে আমার দিকে আসার জন্য। আমি আশা করছিলাম লরেন্ট নেকড়েগুলোর দিকে এগিয়ে যাবে এবং এগুলোকে শেষ করে ফেলবে। এটা তার জন্য খুব সাধারণ ব্যাপার হবে। আমি অনুমান করলাম দুজনের মধ্যে তুলনামূলকভাবে নেকড়েগুলোর কাছে আমাকে না খাওয়া হবে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার।

    একটা নেকড়ে আমার খুব কাছে চলে এল। লাল বাদামী রঙেরটা। এটা মাথা ঘুরিয়ে আমার নিঃশ্বাসের শব্দের দিকে লক্ষ্য করল।

    নেকড়ের চোখ গাঢ় অন্ধকার। কালো। এটা আমার দিকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে তাকিয়ে থাকল। গাঢ় চোখ জোড়ায় একটা বন্যপ্রাণীর চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমত্তা খেলা করছে।

    এটা আমার দিকে তাকালে হঠাৎ কৃতজ্ঞতার সাথে জ্যাকবের কথা মনে পড়ল। অন্ততপক্ষে আমি এই রুপকথার তৃণভূমিতে একাকী এসেছি। রুপকথার তৃণভূমি ভয়ংকর দৈত্যে ভরা। কমপক্ষে, জ্যাকব অন্তত মারা যাচ্ছে না। অন্ততপক্ষে তার মৃত্যু আমার হাত দিয়ে হচ্ছে না।

    নিচু স্বরে গোঙানো নেতা গোছের অন্য নেকড়েটা হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে লরেন্টের দিকে তাকাল। তারপর সেদিকে এগিয়ে গেল।

    লরেন্ট এতগুলো দৈত্যের মত নেকড়ের এভাবে আক্রমণে প্রচণ্ড শক পেয়ে ভয়ে জমে গেল। প্রথমে আমি এটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম যখন কোন রকম সর্তক সংকেত ছাড়াই সে ঘুরে দাঁড়িয়ে বনের গাছপালার মধ্যে ঢুকে গেল।

    সে দৌড়ে পালাল।

    নেকড়েগুলো এক সেকেন্ডের মধ্যে তাকে অনুসরণ করল। তার পিছু নিল। গর্জন করতে লাগল। এত জোরে জোরে সেই শব্দ হতে লাগল যে আমি অজান্তেই দুহাতে আমার কান ঢেকে ফেললাম। শব্দটা আস্তে আস্তে খুবদ্রুত তার সাথে কমে গেল। প্রাণীগুলো জঙ্গলের মধ্যে মিলিয়ে গেল।

    তারপর আমি আবার একাকী হয়ে গেলাম।

    আমার হাঁটুতে জোর রইল না। হাঁটু ভেঙে বসে পড়লাম। আমি হাতের উপর পড়লাম। আমার কণ্ঠস্বর বাষ্পরুদ্ধ হয়ে গেল।

    আমি জানতাম আমার এখান থেকে চলে যাওয়া দরকার। এখনই চলে যাওয়া উচিত। নেকড়েগুলো আবার আমার দিকে ফিরে না এসে কতক্ষণ লরেন্টের পিছু নিবে? অথবা লরেন্ট কি নিজেই এদিকে ঘুরে আসবে না? সে কি আবার আমাকে খুঁজতে চলে আসবে না?

    আমি প্রথমে নড়তে পারলাম না। যদিও আমার হাত ও পা কাঁপছিল।

    আমি জানি না কীভাবে আমি আবার নিজের পায়ের উপর উঠে দাঁড়াব।

    আমার মন থেকে ভয় তাড়াতে পারছিলাম না। আতঙ্ক অথবা দ্বিধা। বুঝতে পারছিলাম না এইমাত্র আমি কোন ঘটনার সাক্ষী হলাম।

    একটা ভ্যাম্পায়ার এভাবে কয়েকটা তেড়ে আসা নেকড়ে দেখে পালিয়ে যাবে না। নেকড়ের দাঁত কীভাবে ওই গ্রানাইটের মত পাথরের চামড়ার উপর বসবে?

    নেকড়েগুলো লরেন্টকে ধাওয়া করেছে। এমনকি যদি তাদের বিশাল সাইজ তাদের কোন কিছু ভয় না করতে শেখায়, এটা কোন কাজের কথা নয় যে তারা তাকে অনুসরণ করে বেড়াবে। আমার সন্দেহ আছে তার বরফের মত পাথরের চামড়ায় এমন গন্ধ পেয়েছে যেটা খাবারের গন্ধের মত। কেন সেগুলো আমার মত উষ্ণ রক্তের এবং দুর্বল একজনকে পাশ কাটিয়ে লরেন্টের পিছু নেবে?

    আমি এটা কোনভাবে মিলাতে পারছিলাম না।

    একটা ঠাণ্ডা বাতাস তৃণভূমির ভেতর দিয়ে বয়ে গেল। সেটা চাবুকের মত আমার গায়ে এসে লাগল। এমনভাবে ঘাসের উপর দিয়ে বয়ে গেল যেন কিছু একটা এর উপর দিয়ে চলে গেল।

    আমার পা কাঁপতে লাগল। সেই ঝড়ো বাতাস আমার উপর দিয়ে বয়ে গেল। পিছিয়ে এলাম। হতবুদ্ধিকর অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ালাম। মাথা ছাড়ানো গাছগুলোর ভেতর দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম।

    পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা, দুঃসহ যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেল। গাছগুলোর ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যেতে আগের চেয়ে তিনগুণ বেশি সময় নিল।

    কোন দিকে যাচ্ছি সে বিষয়ে প্রথমে আমি কোন মনোযোগ দেয়নি। আমি শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম। এই সময়ে আমি মনে মনে আমার কম্পাসের ব্যাপারে স্মরণ করছিলাম। আমি এখন গভীর অপরিচিতি জঙ্গলের ভেতরে। আমার হাত এতটাই কাঁপতে লাগল যে কম্পাসটা সেই কাদামাখা ভূমিতে রেখে এটার দিক নির্দেশনা পড়তে অসুবিধা হচ্ছিল। কম্পাসটা নিচে রাখার জন্য প্রতি কয়েক মিনিট অন্ত র আমি থমকে দাঁড়াচ্ছিলাম। পরীক্ষা করে দেখছিলাম আমি এখনও উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার পায়ের শব্দের পিছনে পিছনে আরেকটা শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম, যেটা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না কিন্তু সেটা চলছিল।

    অন্ততপক্ষে সেখানে একটা গাছের ভাঙা অংশ ছিল। আমি ফাঁকা রাস্তার উপর এসে পড়লাম। এক মাইল অথবা ওই রকম দক্ষিণে আমার ট্রাক রেখে এসেছিলাম। আমি খুব বেশি ক্লান্ত ছিলাম না। জগিং করতে করতে সেই লেন ধরে এগুতে এগুতে আমি ট্রাকটা পেয়ে গেলাম। সেই সময়ে কোনমতে গাড়িতে উঠে বসলাম। আমি তখনও ফেঁপাচ্ছিলাম। আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিলাম। পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করলাম। ইঞ্জিনের গর্জন আমার স্বস্তি এনে দিল। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলাম। এটা আমাকে কান্না আটকাতে সাহায্য করল। আমি এত জোরে চালাতে লাগলাম যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাক হাইওয়েতে উঠে এল।

    আমি শান্ত ছিলাম। কিন্তু তখনও ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। আমি বাড়িতে পৌঁছুলাম। বাবার ক্রসার গাড়ি ড্রাইভওয়েতে ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কতটা দেরি করে ফেলেছি। আকাশ তখনও বোয়াচ্ছন্ন।

    বেলা? বাবা জিজ্ঞেস করলেন যখন আমি দরজা ধাক্কা দিয়ে আমার পেছনে সামনের দরজা বন্ধ করে দিলাম। তাড়াতাড়ি দরজাটা লক করে দিলাম।

    হ্যাঁ। আমিই বাবা। আমার কণ্ঠস্বর অস্থির।

    তুমি কোথায় গিয়েছিলে? বাবা বিস্মিত। কিচেনের দরজা দিয়েও তার বিস্মিকয়কর অনুভূতি বোঝা যাচ্ছিল।

    আমি দ্বিধা করছিলাম। তিনি সম্ভবত স্টানলিকে ফোন করেছিলেন। সত্য কথা বলাই ভাল।

    আমি হাইকিংয়ে গিয়েছিলাম। আমি স্বীকার করলাম।

    বাবার চোখ জোড়া স্থির হয়ে আছে। জেসিকার কাছে যাওয়ার ব্যাপারে কি ঘটেছিল?

    আজ আর আমার ক্যালকুলাস করতে ইচ্ছে করছিল না।

    বাবা বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে রাখলেন। আমার মনে হয় আমি তোমাকে জঙ্গল থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম।

    হ্যাঁ। আমি জানি। দুশ্চিন্তা করো না। এটা আর হবে না। আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম।

    বাবা সত্যিকারভাবে প্রথমবারের মত ভালভাবে আমার দিকে তাকালেন। আমার মনে পড়ল আমি আজ জঙ্গলের ভূমিতে কিছু সময় শুয়ে কাটিয়েছিলাম। আমি নিশ্চয় খুব বিশ্রি অবস্থায় আছি।

    কি হয়েছিল? বাবা জানতে চাইলেন।

    আমি আবার সত্যিটাই বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। অথবা কিছুটা সত্য, যাই থোক। সেটাই সবচেয়ে ভাল। আমি এতটাই কাঁপছিলাম যে দেখে অনুমান হয় আমি কিছুটা সময় জঙ্গলের গাছপালার মধ্যে কাটিয়েছি।

    আমি ভালুকটাকে দেখেছিলাম। আমি চেষ্টা করছিলাম এটা শান্তভাবে বল। কিন্তু আমার কণ্ঠস্বর খুব উঁচু এবং কাঁপছিল। এটা যদিও একটা তাল্লুক ছিল না- এটা এক প্রকার নেকড়ে। সেখানে সংখ্যায় পাঁচটা ছিল। একটা বিশাল কালো বড়। ধুসর লালচে বাদামী….

    বাবার চোখ ভয়ে বিস্ফোরিত হলো। তিনি তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে এলেন। আমার হাত ধরে ফেললেন।

    তুমি ঠিক আছে তো?

    আমি দুর্বলভাবে মাথা নাড়লাম।

    আমাকে বলল কি ঘটেছিল।

    সেগুলো আমার দিকে মোটেই মনোযোগ দেয়নি। কিন্তু সেগুলো চলে যাওয়ার পর আমি দৌড়ে পালিয়েছি এবং কয়েকবার পড়ে গিয়েছি।

    বাবা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বেশ অনেকক্ষণ তিনি কিছুই বললেন না।

    নেকড়ে। তিনি বিড়বিড় করে বললেন।

    কি?

    রেঞ্জাররা বলেছিল তারা যেটার ট্রাক করেছিল তা একটা ভালুকের নয়। কিন্তু নেকড়েরা কখনওই অতোটা বড় হয় না।

    এইগুলো ছিল খুবই বিশাল।

    তুমি কতগুলো দেখেছো বললে?

    পাঁচটা।

    বাবা মাথা নাড়লেন। দুশ্চিন্তায় ভ্রু কুঁচকে গেল। তিনি শেষ পর্যন্ত যে স্বরে কথা বললেন তাতে কোন তর্ক চলবে না। আর কোন হাইকিংয়ে যাওয়াযায়ী নেই।

    কোন সমস্যা নেই। আমি দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করলাম।

    আমি যা দেখেছি তা রিপোর্ট করার জন্য বাবা স্টেশনে ফোন করলেন। কোথায় নেকড়েগুলোকে দেখেছি সে ব্যাপারে আমি কিছুটা হতবুদ্ধিকর অবস্থায় পড়লাম। জানালাম আমি এগুলোকে উত্তর দিকের ট্রেইলের দিকে দেখেছি। আমি বাবাকে মোটেই জানাতে চাই না জঙ্গলের কতটা গভীরে আমি গিয়েছিলাম। তার ইচ্ছে ব্যতিরেকে এবং তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমি কাউকেই জানাতে চাই না কোথায় লরেন্ট আমাকে খুঁজছিল। সম্ভবত এখনও খুঁজে ফিরছে। এই চিন্তা আমাকে অসুস্থ করে তুলছে।

    তুমি কি ক্ষুধার্ত? ফোন রেখে দিয়ে বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

    আমি দুদিকে মাথা নাড়লাম। যদিও আমার অবশ্যই খিদে পেয়েছে। আমি আজ সারাদিন খাই নাই।

    শুধুই ক্লান্ত। আমি তাকে বললাম। আমি সিঁড়ির দিকে ঘুরলাম।

    হেই। বাবা হঠাৎ সন্দেহজনকভাবে ডাকলেন। তুমি কি আমাকে বলো নাই জ্যাকব আজ দিনের জন্য বেরিয়ে গেছে?

    সেটাই তো আঙ্কেল আমাকে বলেছিলেন। আমি তাকে বললাম। তার প্রশ্নে কনফিউজড।

    তিনি মিনিট খানিক ধরে আমার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলেন। তাকে দেখে মনে হলো তিনি যা দেখতে চেয়েছিল সেটা পেয়ে সন্তষ্ট।

    হাই।

    কেন? আমি জানতে চাইলাম। এটা শুনে মনে হচ্ছিল আমি আজ সকালে তাকে মিথ্যে বলেছিলাম এমনটিই তিনি ধারণা করে আছেন। জেসিকার সাথে পড়তে না যেয়ে অন্য কিছু।

    বেশ। আমি হ্যারিকে তুলে নেয়ার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। আমি দেখলাম জ্যাকব তার কয়েকটা বন্ধুবান্ধবের সাথে ওখানে আছে। আমি তাকে হাই করলাম। কিন্তু সে….বেশ, আমি ধারণা করছি আমি জানি না সে আমাকে দেখেছিল কিনা। আমি মনে করি, হতে পারে সে তার বন্ধুদের সাথে তর্ক করছিল। তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। যেন সে কোন একটা বিষয় নিয়ে বেশ আপসেট। এবং… ভিন্ন। এটা দেখে মনে হয় তুমি দেখেছো সেই ছেলেটাকে বেড়ে উঠতে। প্রতিবারে যখনই আমি তাকে দেখি বিশাল হয়ে উঠছে।

    আঙ্কেল বলেছিলেন জ্যাক এবং তার বন্ধুরা কোন একটা মুভি দেখতে পোট এ্যাঞ্জেলসে যাবে। তারা সম্ভবত কোন একজনের আসার জন্য অপেক্ষা করছিল।

    ওহ। বাবা মাথা ঝাঁকিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন।

    আমি হলঘরে দাঁড়িয়ে রইলাম। জ্যাকব সম্বন্ধে চিন্তা করছিলাম। জ্যাকব তার বন্ধুদের সাথে তর্ক করছিল। আমি বিস্মিত যদি সে এমব্রির স্যামের সাথের ব্যাপার নিয়ে তর্ক করে থাকে। হতে পারে সেই কারণে সে আমার সাথে থেকে বিছিন্ন হয়েছে। এটা শুধু এমব্রির ব্যাপার হলে আমি খুশি।

    আমি আমার রুমে যাওয়ার আগে লকটা আবার পরীক্ষা করে দেখলাম। এটা এটা বাজে বিষয়। কি পার্থক্য হবে যদি সে দৈত্যগুলো এখানে এসে পড়ে তাহলে? সামান্য তালা দেয়ায় কোন কাজই হবে না। আমি ধারণা করলাম, এই হাতলটা নেকড়ের এক ধাক্কায় খুলে যাবে। যদিও তাদের বুড়ো আঙুল নেই। এবং যদি লরেন্ট এখানে আসে…

    অথবা.. ভিক্টোরিয়া!

    আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুমের আশাবাদ দিয়ে ভয়ে কাঁপছিলাম। আমি বিছানায় একটা গোটানো বলের মত কুঁকড়ে পড়েছিলাম।

    সেখানে আমার করার মত কোন কিছুই ছিল না। সেখানে কোন পুর্বসর্তকতা নেই যেটার জন্য আমি পদক্ষেপ নিতে পারি। সেখানে কোন লুকানোর জায়গা নেই যেখানে আমি লুকাতে পারি। সেখানে কেউ নেই যে আমাকে সাহায্য করতে পারে।

    আমি বুঝতে পারছিলাম, একটা বমিবমি ভাব আমার পাকস্থলীর মধ্যে মোচড় দিচ্ছে। অবস্থা যেরকম হয়েছে তার চেয়ে আরো খারাপ হতে পারত। কারণ বাবার উপরেও এর প্রভাব পড়েছে। বাবা আমার থেকে এক রুম দূরে ঘুমাচ্ছে। আমার উপর নিশানা থাকলে সেটা এখানেও প্রভাবিত হবে। আমার গন্ধ তাদেরকে আমি এখানে থাকি বা না থাকি এখানে টেনে নিয়ে আসবে। সেটা বাবার উপর পড়বে।

    ভয়ংকর ব্যাপারটা আমাকে কাঁপাতে লাগল যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার দাঁতে দাঁতে বাড়ি লেগে কাঁপতে থাকে।

    আমি নিজেকে শান্ত করলাম। আমি অসম্ভব কল্পনা করতে লাগলাম।

    আমি কল্পনা করলাম সেই বিশাল নেকড়েগুলো বনের মধ্যে লরেন্টকে ধরে ফেলেছে। তার অমরত্ব থাকা সত্বেও একজন সাধারণ মানুষের মতই তাকে ছিন্ন ভিন্ন। করে ফেলেছে। এটা ঘটা প্রায় অসম্ভব জেনেও এই ধারণাটা আমাকে স্বস্তি দিল। যদি সেই নেকড়েগুলো তাকে মেরে ফেলে, তাহলে সে ভিক্টোরিয়াকে বলতে পারছে না আমি এখন একাকী এখানে আছি। যদি সে ফিরে না আসে তাহলে হয়তো ভিক্টোরিয়া ভাববে। কুলিনরা এখনও আমাকে রক্ষা করে চলেছে। যদি সেই নেকড়েগুলো এই যুদ্ধে জয়ী হয়।

    আমার ভাল ভ্যাম্পায়ারটা আর কখনও ফিরে আসবে না। এটা কত শান্তিদায়ক। কল্পনা করা অন্যান্য প্রকারেরগুলোও আসবে না।

    আমি জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। অপেক্ষা করতে থাকলাম ঘুমানোর জন্য। আমার দুঃস্বপ্ন শুরু হওয়ার সময় এসেছে। তার চেয়ে ভাল সেই ধুসর সুন্দর মুখ আমার পিছন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে হাসবে।

    আমার কল্পনায়, ভিক্টোরিয়ার চোখ পিপাসার্ত, আশায় উজ্জ্বল এবং তার ঠোঁট জোড়া আনন্দে বেকে গেছে। তার লাল চুল আগুনের মত উজ্জল। এটা তার বন্য মুখের উপর এলোমেলো হয়ে ঝুলছে।

    লরেন্টের কথাগুলো আমার মাথার মধ্যে পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। যদি তুমি জানতে সে তোমার জন্য কি পরিকল্পনা করে রেখেছে…

    আমি চিৎকার দেয়া বন্ধ রাখতে মুখের উপর হাত চাপা দিয়ে রাখলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো
    Next Article আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    Related Articles

    প্রিন্স আশরাফ

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    প্রিন্স আশরাফ

    দ্য জাহির – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.