Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প171 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. রুমমেট

    ০২. রুমমেট

    রোট মহিলা প্রথমে নিতুকে নিয়ে গেল তার হোস্টেলে। সেখানে দুইশ বারো নম্বর রুমে হাসপাতালের বেডের মতো ছয়টা বিছানা, তার একটা খালি। সেখানে তার স্যুটকেসটা রেখে তাকে নিয়ে যাওয়া হল সুপারিনটেন্ডেন্টের অফিসে। সুপারিনটেন্ডেন্ট একজন খিটখিটে মহিলা, তার বেড়ানো গাল, কোটরের ভিতর ঢুকে থাকা চোখ, শিরা ওঠা শুকনা হাত। সুপারিনটেন্ডেন্ট নিতুর কাগজপত্র নিয়ে বড় বড় কয়েকটা খাতায় অনেকক্ষণ সময় নিয়ে কী যেন লেখালেখি করল তারপর নিতুকে দাঁড় করিয়ে টানা আধঘণ্টা একটা লেকচার দিল। লেকচারের বিষয়বস্তু হল এই বুতুরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা কত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই নিয়ম ভাঙ্গলে কী রকম কঠোর শাস্তি দেয়া হয় তার লোমহর্ষক বর্ণনা। অন্য যে কোনো সময় হলে এরকম একটা বক্তৃতা শুনে নিতুর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতো কিন্তু কিছুক্ষণ আগে কেঁদো বাঘের মতো দেখতে সেই রাক্ষসী ম্যাডামের সাথে তার যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা তাকে একেবারে পাথরের মতো করে দিয়েছে, তার ভিতরে এখন ভয়-ভীতি, রাগ-দুঃখ কোনো কিছুই নেই। কেমন জানি বোধশক্তি ছাড়া একটা পুতুলের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

    হোস্টেলে সুপারিনটেন্ডেন্ট লেকচার শেষ করে জমিলার মা নামের রবোট মহিলার সাথে তাকে পাঠালো স্টোর রুমে। সেখানে ইঁদুরের মতো দেখতে আরেকজন মহিলা নিতুর শরীরের মাপ নিয়ে তাকে এক জোড়া স্কুলের পোশাক ধরিয়ে দিল। সাদা ব্লাউস আর ভুসভুসে কালো টিউনিক, দেখলেই নাড়ী উল্টে আসে। এই মন খারাপ করা পোশাক পরে তাকে এই স্কুলে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে চিন্তা করেও নিতু খুব বেশি মুষড়ে পড়ল না—মুষড়ে পড়ার ক্ষমতাও তার শেষ হয়ে গেছে। স্কুলের পোশাক দুটি দেওয়ার পর ইঁদুরের মতো দেখতে মহিলাটি আবার অনেকক্ষণ নাকী সুরে কথা বলে গেল। কথার বিষয়বস্তু হচ্ছে কীভাবে এই পোশাকের যত্ন নিতে হবে এবং পোশাকের এতটুকু ছিঁড়ে গেলে তাকে কী কী কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। স্টোর রুম থেকে তাকে নেওয়া হল লাইব্রেরিতে, সেখানে তাকে তার ক্লাশের বই দিল থলথলে মোটা একজন মহিলা। মহিলাটি সব সময় বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে, একটু নড়লেই বা একটা কথা বললেই দুইবার বড় বড় নিশ্বাস নিতে হয়। বই এবং খাতা নিতুর হাতে তুলে দিয়েও এই মহিলা একটা বড় লেকচার দিল–এখানেও লেকচারের বিষয়বস্তু এক, বই ছিঁড়ে ফেললে বা ময়লা করলে কী কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে তার একটা ভয়ংকর বর্ণনা।

    রবোট মহিলা সেখান থেকে নিতুকে নিয়ে গেল ডাইনিং রুমে, ডাইনিং রুম থেকে একটা ছোট অন্ধকার জিমনাসিয়ামে সেখান থেকে নিজের রুমে। এতক্ষণে ক্লাশ ছুটি হয়ে গেছে, সবাই নিজের রুমে চলে এসেছে। নিতু তার নিজের ঘরে এসে দেখল প্রত্যেকটা বিছানায় একটা মেয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে, হঠাৎ দেখলে মনে হয় এই ঘরটিতে বুঝি কোনো বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেই গ্যাসে সবাই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। নিতু কী করবে বুঝতে পারল না, হেঁটে হেঁটে কাছাকাছি বিছানায় শুয়ে থাকা একটা মেয়ের কাছে যেতেই মেয়েটা চোখ খুলে ফিসফিস করে বলল, তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়।

    নিতু অবাক হয়ে বলল, কেন?

    কথা বল না। যদি জানে বাচতে চাও শুয়ে পড়ো।

    নিতু কিছু বুঝতে পারল না, কিন্তু এটা নিয়ে আর তর্ক করার সাহস পেল। নিজের বিছানায় গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। প্রায় সাথে সাথে শুনতে পেল দুম দুম করে শব্দ হচ্ছে। মনে হয় ভয়ংকর কোনো একটা প্রাণী হেঁটে হেঁটে আসছে। দড়াম করে ঘরের দরজা খুলে গেল, নিতু বুঝতে পারল তাদের ঘরে সেই প্রাণীটা এসে ঢুকেছে, সে তার চোখ বন্ধ করে ফেলল, চোখ বন্ধ করেই টের পেল একজন ঘরের মাঝে হেঁটে হেঁটে তাদের পরীক্ষা করছে। ঠিক তার বিছানার কাছে এসে পায়ের শব্দ থেমে যায়, প্রাণীটা তাকে পরীক্ষা করছে। নিতু একবার ভাবল চোখের কোণা দিয়ে তাকিয়ে দেখে কিন্তু সাহস পেল না, তার মনে হতে লাগল এক্ষুনি বুঝি তার চুলের ঝুঁটি ধরে কেউ টেনে তুলে ফেলবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা ঘটল না। শুনতে পেল দুম দুম করে পায়ের শব্দ দূরে সরে যাচ্ছে, দরজার কাছে গিয়ে শব্দটী এক মুহূর্তের জন্যে থামল তারপর দরজা খুলে দড়াম করে আবার বন্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে নিতু চোখ খুলে তাকায়, দেখে আশপাশে সব বিছানায় মেয়েগুলি চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে।

    নিতু ভয়ে ভয়ে বিছানায় উঠে বসে, সাথে সাথে অন্যেরাও সাবধানে উঠে বসে। একজন পা টিপে টিপে জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকাল। তারপর নিতুর কাছে এগিয়ে এল। নিতু শুকনো গলায় বলল, কী হচ্ছে এখানে?

    চশমা পরা একটা মেয়ে বলল, তিনটার সময় স্কুল ছুটি হয়, এসে হাত মুখ ধুয়ে সাড়ে তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত ঘুম।

    ঘুম?

    হ্যাঁ। কেউ না ঘুমালে— চশমা পরা মেয়েটা কথা বন্ধ করে হাত দিয়ে ঘ্যাচ করে গলায় একটা পোচ দেওয়ার ভঙ্গি করল। নিতু আজকে দিনে এর মাঝে বেশ কয়েকবার এই দৃশ্য দেখে ফেলেছে।

    গোলগাল মতন ফর্সা একটা মেয়ে এসে গলা নামিয়ে বলল, চারটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত নাস্তা। সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত খেলাধুলা। সাড়ে পাচটা থেকে–

    চশমাপরা মেয়েটা বলল, খেলাধুলা না কছু। মাঠে নিয়ে খালি গরুর মতো দোঁড়ানো, ছাগলের মতো লাফানেনা?

    যেটাই হোক। নাম তো খেলাধূলা। সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টার মাঝে হাত মুখ ধুয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া। ছয়টা থেকে আটটা পড়াশোনা। আটটা থেকে সাড়ে আটটা খাওয়া। সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টা আবার পড়াশোনা। সাড়ে নয়টা থেকে দশটার ভিতরে ঘুমের জন্যে রেডি হওয়া। দশটার ভিতরে ঘুম।

    নিতু হা করে চশমা পরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, সব এইভাবে ভাগ করে রাখা আছে?

    হ্যাঁ।

    সব এইভাবে মানতে হয়।

    গোলগাল চেহারার মেয়েটা মাথা নেড়ে বলল, হা। তোমার কাজের জন্যে এটা হচ্ছে শাস্তি।।

    নিতু অবাক হয়ে বলল, কী কাজ?

    তুমি যেটা করেছ।

    আমি কী করেছি?

    তুমি নিশ্চয়ই কিছু একটা করেছ। না হলে তোমাকে এখানে পাঠাল কেন? এখানে শাস্তি দেওয়ার জন্যে পাঠানো হয়।

    নিতু মুখ শক্ত করে বলল, আমি কিছু করি নাই।

    শ্যামলা রংয়ের মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে বলল, তাহলে নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মা ডিভোর্স।

    না, ডিভোর্স না।

    পাশে দাঁড়ানো আরেকটা মেয়ে বলল, তাহলে নিশ্চয়ই তোমার মা মারা গেছেন।

    নিতু ঘুরে তাকিয়ে দেখল এই মেয়েটাও শ্যামলা রংয়ের আর মিষ্টি চেহারার। ভালো করে তাকিয়ে দেখল দুজন দেখতে হুবহু একই রকম। নিতুর ভ্যাবাচেকা খাওয়া দেখে সবাই হি হি করে হেসে উঠল। চশমা পরা মেয়েটা বলল, এরা দুইজন জমজ বোন। রুনু আর ঝুনু।

    কোনজন রুনু আর কোনজন ঝুনু?

    গোলগাল চেহারার মেয়েটা বলল, তাতে কিছু আসে যায় না, একজন রুনু আরেকজন ঝুনু।।

    তোমরাও জান না?

    চশমা পরা মেয়েটা বলল, জানি। এই সপ্তাহে ঝুনুর হাঁটুর ছাল উঠে গেছে, তাই এই সপ্তাহে ঝুনু হচ্ছে হাঁটু ছাল ওঠা মেয়ে।

    কিন্তু কয়েকদিন পরে তো ভালো হয়ে যাবে, তখন?

    তখন ওর কনুইয়ে ছাল উঠে যাবে। না হলে কপাল কেটে যাবে। এরা দুইজনই দোড়। কিন্তু ঝুনুটা বেশি তঁাদোড় তাই ওর শরীরে কাঁটাকাটি বেশি হয়।

    ঝুনু (নিতু হাঁটুর দিকে তাকিয়ে নিঃসন্দেহ হল মাথা নেড়ে বলল, এইখানে কে বেশি তাদোড় সেটা সে নিজেই দেখবে তোমাদের আর বক্তৃতা দিতে হবে না। তারপর ঘুরে নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু তুমি এখনো বল নাই, তোমার মা মারা গেছেন কি না।

    নিতু মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। মারা গেছেন। তুমি কেমন করে বুঝেছ?

    ঝুনু বলল, এটা বোঝা আর এমন কী কঠিন। কোন বাবা-মা নিজের ছেলেমেয়েকে এইখানে পাঠাবে? মা মারা গেলে যখন বাবা আরেকবার বিয়ে করে তখন সেই মায়ের যখন বাচ্চাকাচ্চা হয় তখন এইখানে পাঠিয়ে দেয়।

    নিতু কয়েকবার মুখ খুলল আর বন্ধ করল, তারপর বলল, এইটা— এইটা—

    এইটার আসল নাম হওয়া উচিত বুতরুন্নেসা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প।

    চশমা পরা মেয়েটা বলল, কিংবা বুতুরুন্নেসা সেন্ট্রাল জেল।

    গোলগাল মেয়েটা বলল, আহা-হা-এরকম করছিস কেন? বেচারী মাত্র এসেছে এখনই ভয় দেখাচ্ছিস কেন?

    রুনু (নিতু হাঁটুর দিকে তাকিয়ে নিঃসন্দেহ হল) বলল, কে বলল ভয় দেখাচ্ছি—সত্যি কথাটা বলছি। সত্যি কথাটি যত আগে জানবে ততই ভালো। রুনু নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি হয়তো মনে করছো এইটা স্কুল। আসলে

    এইটা স্কুল না।

    এইটা তাহলে কী?

    আমার মনে হয় পাগলা গারদ।

    পাগলা গারদ?

    হ্যাঁ। খালি একটা পার্থক্য। পাগলা গারদে পাগল মানুষেরা আসে ভালো হয়ে ফিরে যায়। এইখানে ভালো মানুষেরা আসে পাগল হয়ে ফিরে যায়।

    চশমা পরা মেয়েটা হি হি করে হেসে বলল, আমরা কী পাগল হয়ে গেছি?

    হই নাই আবার? একশবার হয়েছি। পাগল না হলে আমরা এখানে থাকতে পারি? চিন্তা করতে পারিস যখন খোরসানী ম্যাডাম চারটার সময় আমাদের দেখতে আসে আমরা তখন নাক মুখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে থাকি? মানুষ পাগল না হলে এটা করতে পারে?

    নিতু একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, খোরাসানী ম্যাডাম কে?

    গোলগাল মেয়েটা বলল,  কে না, বল কী!

    সবাই আবার হাসতে শুরু করে হঠাৎ করে থেমে গেল, খোরাসানী ম্যাডাম এত ভয়ংকর যে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেও তারা ভয় পায়।

    নিতু আবার জিজ্ঞেস করল, খোরাসানী ম্যাডাম কী?

    একটা রাক্ষসী। এই পাহাড়ের মতো বড়, মুখটা এই এত বড় গোলগাল মেয়েটা দুই হাত ছড়িয়ে দেখাল।

    বুঝেছি। আমার সাথে দেখা হয়েছে।

    দেখা হয়েছে? মেয়েগুলি অবাক হয়ে নিতুর দিকে ঘুরে তাকাল, এর মাঝে দেখা হয়ে গেছে?

    হ্যাঁ।

    কিছু করেছে তোমাকে?

    আমার টেডি বিয়ারকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে।

    চশমাপরা মেয়েটা বলল, তোমার কপাল ভালো তোমাকে লাথি মারে নাই। গত বছর ক্লাশ সিক্সের একটা মেয়েকে লাথি মেরে তার বুকের হাড়ি ভেঙ্গে ফেলেছিল।

    রুনু বলল (হাঁটু দেখে বোঝা গেল, রুনু, ছাল ওঠা নেই), ম্যাডাম খোরাসানীর হবি হচ্ছে চড় মারা। চড় মেরে সে আসলেই দাঁত ফেলে দিতে পাবে। এখন পর্যন্ত তার রেকর্ড এক চড়ে তিন দাঁত।

    ঝুনু বলল, তার মাঝে অবিশ্যি দুইটা দুধ দাঁত। তবুও তো দাঁত।

    মেয়েদের মাঝে যে সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে গম্ভীর এবং এতক্ষণ পর্যন্ত যে একটাও কথা বলে নি এবারে মুখ খুলল, বলল, তোমরা খালি নিজেরা কথা বলছ। আমাদের যে নূতন একটা রুমমেট এসেছে তার নাম টাম জিজ্ঞেস করবে না?

    গোলগাল মেয়েটা বলল, হঁ, ঠিকই বলেছিস। তোমার নাম কী ভাই?

    আমার নাম নিতু। তোমাদের নাম?

    চশমা পরা মেয়েটা বলল, আমার নাম রেবেকা।

    গোলগাল মেয়েটা হি হি করে হেসে বলল, আমরা নামটা আরো শর্ট করে নিয়েছি। আমরা ডাকি বেকা!

    আর তোমার নাম?

    মিতুল।

    চশমা পরা মেয়েটি যার নাম রেবেকা এবং যার নাম শর্ট করে বেকা করে ফেলা হয়েছে এবারে মাথা নেড়ে বলল, আর মিতুলের নামটা অবিশ্যি শর্ট করি নাই আরেকটু বড় করেছি! মিতুল হচ্ছে তুলতুলে মিতুল!

    রুনু (কিংবা কে জানে ঝুনুও হতে পারে) বলল, কেন তুলতুলে মিতুল বুঝেছ তো? কারণ সে নাদুস নুদুস গোলগাল তুলতুল।

    গোলগাল চেহারার তুলতুলে মিতুল, চোখ পাকিয়ে বলল, দেব একটা দাবড়ানি। কিন্তু বলা পর্যন্তই মুখ দেখে মনে হয় তার নিজের নামটা সে পছন্দই করেছে।

    মেয়েগুলির মাঝে যে সবচেয়ে ছোট এবং এদের মাঝে যে সবচেয়ে কম কথা বলে সে গম্ভীর গলায় বলল, এই দুইজনের নাম তো বলেছি—রুনু আর ঝুনু। আর আমি হচ্ছি তানিয়া।

    মিতুল আবার হি হি করে হেসে বলল, কি নিয়া?

    তানিয়া গম্ভীর হয়ে বলল, ফাজলেমি করবি না।

    মিতুল চোখ বড় বড় করে অভিনয় করার মতো করে বলল, চা-নিয়া? উহুঁ তানিয়া!

    তানিয়া মুখ আরো গম্ভীর করে বলল, দ্যাখ নাম নিয়ে কখনো ফাজলেমি করবি না। মানুষের নাম খুব ইম্পর্ট্যান্ট। কবি রবীন্দ্রনাথের নাম যদি রবীন্দ্রনাথ না হয়ে মাহতাব মিয়া হতো তাহলে কি কখনো কবিতা লিখতে পারতেন?

    চশমা পরা রেবেকা বলল, ভাই তুমি তো বুঝতেই পারছ আমাদের মাঝে তানিয়া হচ্ছে মাস্টার মশাই। চল্লিশ বছরের একটা মানুষ ওই ছোট শরীরের মাঝে আটকা পড়ে আছে।

    উহুঁ চল্লিশ না। গোলগাল মিতুল মাথা নেড়ে বলল, ফিফটি ফাইভ।

    তানিয়া আরো গম্ভীর হয়ে বলল, দ্যাখ, তোরা বেশি ফাজলেমি শুরু করেছিস।

    রুনু (কিংবা ঝুনু হেসে বলল, আমাদের তানিয়া সব সময় তোমাকে উপদেশ দিবে।

    ঝুনু কিংবা রুন) বলল, যে কোনো বিষয়ে উপদেশ। কেমন করে কথা বলতে হয়, কেমন করে নাক ঝাড়তে হয়, কেমন করে কান চুলকাতে হয়—

    তানিয়া আবার বলল, বাজে কথা বলবি না ঝুনু। তোরা বড় বেশি কথা বলিস।

    চশমাপরা রেবেকা বলল, আসলে আমরা বেশি কথা বলি না। আমাদের এই বেডটা খালি ছিল তো তাই খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম কে মা কে রুমমেট হিসাবে আসে! তোমাকে দেখে ভয় কেটে গেছে তো তাই সবাই বকবক করছে।

    নিতু একটু অবাক হয়ে বলল, আমাকে দেখে ভয় কেটে গেছে? আমার সম্পর্কে তো কিছুই জান না!

    জান না কেন। তোমার মা মারা গেছেন তাই তোমাকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। এইটুকুন জানলেই তো সব জানা হয়ে যায়। তুমি তো আমাদের মতোই একজন।

    এখানে তোমরা সবাই এরকম?

    হ্যাঁ। হয় বাবা মা ডিভোর্স না হলে বাবা-মা মারা গেছেন, তা না হলে মা মারা গেছেন।

    নিতু একটু অবাক হয়ে সবার মুখের দিকে তাকাল, কত অল্প বয়সের সবাই এর মাঝে সবাই কত বড় বিপদের মাঝে দিয়ে গিয়েছে!

    মিতুল নিতুর গায়ে হাত দিয়ে বলল, তুমি মন খারাপ করো না। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগবে, তারপর দেখবে অভ্যাস হয়ে গেছে।

    নিতু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন বাইরে থেকে একটা কর্কশ হুইসিলের শব্দ শুনতে পেল। রেবেকা লাফিয়ে উঠে বলল, বাঁশি বেজে গেছে! তাড়াতাড়ি।

    কীসের বাঁশি?

    নাস্তা করে খেলার মাঠে যাওয়ার বাঁশি! দেরি যেন না হয় বিপদ হয়ে যাবে। তাহলে।

    অন্য সবার সাথে নিতুও ছোটাছুটি করে রেডি হতে শুরু করে, বুতুরুন্নেসা আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে পদে পদে বিপদ, সেটা সে এতক্ষণে বেশ ভালো করেই বুঝে গেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article দীপু নাম্বার টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }