Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প171 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. কাসেম

    ০৫. কাসেম

    মাস খানেক পরের কথা। নিতু শেষ পর্যন্ত নতুন স্কুলে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেছে। স্লিপ ওয়াকিংয়ের বিপদটা মনে হয় কেটে গেছে। যদিও খোরাসানী ম্যাডাম ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পারে নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেছে যে নিতুর কাজকর্ম পুরোটুকুই এক ধরনের স্লিপ ওয়াকিং। সে জন্যে তাকে এখনো বড় ধরনের শাস্তি দেয়া হয় নি, এই স্কুলে যখন এসেছে এখানে দীর্ঘদিন থাকবে, নিতুর মতো পুচকে মেয়েকে সিধে করে ছেড়ে দেওয়ার অনেক সুযোগ পাবে। সকলের সামনে খবরের কাগজ পাকিয়ে গালের মাঝে দুই ঘা বসিয়ে দেওয়ার অপমানটুকু সহ্য করতে হয়েছে এবং সেটা নিয়ে কিছু করতে পারছে না সেটাই খোরাসানী ম্যাডাম সহ্য করতে পারছে না। তবে কুকুরটাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হয়েছে, সেটি আর স্কুলে নেই। তাকে কী করা হয়েছে কেউ জানে না, স্কুলে জোর গুজব যে খোরাসানী ম্যাডাম নিজের হাতে কুকুরটা গলায় পাথর বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছে–খোরাসানী ম্যাডামের জন্যে সেটা মোটেও অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়।

    নিতুর সাথে তার পাঁচ রুমমেটের বন্ধুত্ব আরো বেড়েছে, অন্যেরা মনে হয় তাকে একটু ভয়ই পায়। যে খোরাসানী ম্যাডামের গালে খবরের কাগজ পাকিয়ে সেটা দিয়ে মেরে বসতে পারে, হোক না সেটা ঘুমের মাঝে-তাকে একটু ভয় পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়।

    হোস্টেলে দুটি জিনিসের অবশ্যি খুব অবনতি হয়েছে, একটি হচ্ছে হোস্টেল সুপারের অত্যাচার অন্যটি কাসেমের চালবাজী। হোস্টেলের সব নিয়ম কানুন তৈরি করে রাখা আছে, কোন কাজ কতক্ষণ করা যাবে আগে থেকে ঠিক করা তার একটু উনিশ-বিশ হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। শুধু যে শাস্তি তাই নয়—নাম পাঠিয়ে দেয়া হয় খোরাসানী ম্যাডামের কাছে, তখন যা একটা অবস্থা হয় সেটা বলার মতো নয়। দিনে দিনে কাসেমের চালবাজীও অসহ্য হয়ে উঠেছে। কোনো একটা বিশেষ কারণে কাসেম নিতুকে একেবারে দুই চোখে দেখতে পারে না, সেটা নিতুকে জানাতেও কাসেম কখনো ভুলে না। ক্লাশে কিংবা হোস্টেলে তাকে জ্বালানোর খুব বেশি সুযোগ পায় না, কিন্তু বিকাল বেলা খেলার মাঠে খেলাধূলার নামে কাসেম একেবারে নিতুর বারটা বাজিয়ে ছেড়ে দেয়।

    সেদিন ক্লাশ ছুটির পর সবাই হোস্টেলে ফিরে আসছে সিঁড়ির গোড়ায় কাসেম নিতুকে দেয়ালে চেপে ধরল, বলল, এই ছেমড়ি।

    নিতু রাগ চেপে রেখে বলল, খবরদার আমাকে ছেমড়ি বলবে না।

    তাই নাকি? কী বলব তাহলে? ছেমড়া? নাকি দামড়া?

    আমার নাম নিতু।

    তোর বাবা-মা তোর নাম রেখেছে নিতু। এই বুতুরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে তোর বাবা-মা আছে?

    নিতু কোনো কথা বলল না, কাসেম তার ধারালো দাঁত বের করে হেসে বলল, নেই। এই খানে তোর বাবা মা হচ্ছি আমি। তাই আমি তোর নাম দিলাম দামড়া। আজ থেকে সবাই তোকে ডাকবে মিস দামড়া বেগম!

    এই বলে সে হি হি করে হাসতে শুরু করল, যেন ভারি একটা মজার ব্যাপার হয়েছে। আশে পাশে যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল তাদের সবার দিকে তাকিয়ে বলল, আজ থেকে তোরা সবাই একে ডাকবি দামড়া—না হয় তোদের ঠ্যাঙ ভেঙে ফেলব।

    নিতুকে কেউ অবিশ্যি দামড়া ডাকে না, কাসেম যে কী জিনিস সেটা সবাই এতদিনে জেনে গেছে।

    এর কয়দিন পর রাতে ঘুমানোর আগে বাথরুমে নিতু দাঁত ব্রাশ করছে তখন হঠাৎ করে কাসেম এসে হাজির হল। পিছন থেকে নিতুর চুল টেনে ধরে বলল, এই ছেমড়ি।

    নিতু ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, কী হয়েছে?

    সামনে ঈদ আসছে জানিস তো?

    তাতে কী হয়েছে?

    তুই তো নতুন এসেছিস তাই জানিস না। ঈদের আগে আমি সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলি।

    চাঁদা?

    হ্যাঁ।

    একেকজনের এক এক রেট। তোর রেট হল পঞ্চাশ টাকা।

    পঞ্চাশ টাকা?

    হ্যাঁ। এক সপ্তাহের মাঝে তুই যদি পঞ্চাশ টাকা না দিস তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে।

    আমি এত টাকা কোথায় পাব?

    তোর বাবার কাছে চিঠি লিখে দে! তোদের ক্লাশে পাঠ্য আছে না, বাবার কাছে টাকা চাহিয়া পত্র লিখ—সেইটা এখন পরীক্ষা হয়ে যাবে, দেখা যাবে কত ভালো করে চিঠি লিখা শিখেছিস। কাসেম তার ধারালো দাঁত বের করে হি হি করে হাসতে শুরু করল।

    ধীরে ধীরে নিতুর জীবন মোটামুটি অতিষ্ঠ হয়ে গেল। শুধু যে নিতুর জীবন সেটা সত্যি নয়, মোটামুটি সবার জীবনই, কাসেমের মতো একটা মেয়ে থাকলে মনে হয় জীবনের খুব বেশি কিছু বাকি থাকে না। শেষে এরকম অবস্থা হল যে মনে হতে থাকে কিছু একটা করা না হলে আর এই হোস্টেলে টিকে থাকা যাবে না।

    সেদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে মশারি টানাতে টানাতে কাসেমকে নিয়েই কথা বার্তা হচ্ছিল। রুনু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, এই দ্যাখ, কাসেম কী করেছে।

    মিতুল এগিয়ে বলল, কী করেছে?

    রুনু তার গালটা দেখালো, সেখানে খামচির দাগ। মিতুল জিজ্ঞেস করল, খামচি দিয়েছে

    হ্যাঁ। বলে কী তোদের মাঝে কে রুনু কে ঝুনু বুঝতে পারি না। তাই তোর গালে খামচি দিয়ে দিলাম, যার গালে খামচির দাগ সে হচ্ছে রুন।

    মিতুল মাথা নেড়ে বলল, ইশ!

    নিতু বলল, এভাবে আর চলতে পারে না।

    কী করবি?

    কিছু একটা করতে হবে— নিতুর কথা শেষ হবার আগেই দরজায় শব্দ হল, এই হোস্টেলে দরজায় শব্দ হওয়া মানেই দুঃসংবাদ, নিশ্চয়ই কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে আর হোস্টেল সুপার এসেছে তার শাস্তি দিতে। রেবেকা ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দিতেই কাসেম এসে ঢুকল, রেবেকাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, তোরা আছিস তাহলে?

    কেউ কোনো কথা বলল না। কাসেম তার ধারালো উঁত বের করে হাসার ভান করে বলল, আমার চাঁদার টাকা যোগাড় হয়েছে তো?

    এবারেও কেউ কোনো কথা বলল না। কাসেম কয়েক পা এগিয়ে এসে নিতুর বুকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ফেলে দিয়ে বলল, চাঁদা আদায় করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মেয়েদের সন্ত্রাসী হওয়ার খুব ঝামেলা। বুঝলি? এতদিন চেষ্টা করেও একটা অস্ত্র জোগাড় করতে পারলাম না।

    অস্ত্র? নিতু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, কী অস্ত্র?

    কাঁটা রাইফেল, চাইনিজ কুড়াল যেটাই পাওয়া যায়।

    কী করবি অস্ত্র দিয়ে?

    অস্ত্র দিয়ে আবার কী করে? গাধা কোথাকার?

    রেবেকা নিচু গলায় বলল, কাসেম। এখন তো ঘুমানোর সময়। হোস্টেল সুপার যদি জানতে পারেন তুই এখানে–

    কাসেম রেবেকার মাথায় চাটি মেরে বলল, আমাকে কী বেকুব পেয়েছিস নাকি? হোস্টেল সুপার বাইরে গিয়েছে, আমি একজনকে গেটে পাহারা রেখে এসেছি। যখনি দেখবে আমাকে খবর দিয়ে যাবে।

    রেবেকা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ও।

    তোদের মতো বুদ্ধি নিয়ে তো আমি থাকি না।

    রেবেকা শোনা যায় না এরকম গলায় বলল, তা ঠিক।

    কাসেম তার মাথার কোঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, চাঁদা আদায় করতে ঝামেলা হচ্ছে। তাই ঠিক করেছি—

    নিতু ভুরু কুচকে বলল, কী ঠিক করেছিস?

    ঠিক করেছি তোকে সাব-কন্ট্রাক্ট দিব।

    কী দিবি?

    সাব-কন্ট্রাক্ট। কাসেম ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে, অর্থাৎ তুই আমার জন্যে চাঁদা তুলে দিবি। আমি দেখেছি তোকেও মেয়েরা একটু একটু ভয় পায়। তুই পারবি।

    নিতু মাথা নাড়ল, আমি পারব না।

    পারবি। তোকে পঞ্চাশ টাকা চাঁদা ধরেছিলাম, সেটা কমিয়ে তিরিশ করে ফেলেছি। কাসেম দাঁত বের করে হাসল যেন সে নিতুর জন্যে বিরাট একটা মহান কাজ করে ফেলেছে।

    নিতু জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, তোর চাঁদাবাজী তোকেই করতে হবে। আর কেউ তোর হয়ে চাঁদাবাজী করে দেবে না।

    কাসেম খানিকক্ষণ নিতুর দিকে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বলল, আর কেউ করুক আর নাই করুক, তুই করবি।

    তুই কেন করবি জানিস? নিতু অবাক হয়ে বলল, কেন?

    কারণ তুই যদি না করিস তাহলে আমি খোরাসানী ম্যাডামকে বলে দেব তুই হোস্টেলের ডাইনিং রুমের জানালা ভাংচুর করেছিস।

    নিতু চোখ কপালে তুলে বলল, আমি মোটেও হোস্টেলের ডাইনিং রুমের জানালা ভাংচুর করি নাই।

    সেটা নিয়ে তার মাথা ঘামাতে হবে না। আমিই ভাংচুর করে দিয়ে খোরাসানী ম্যাডামকে নালিশ দেব। ম্যাডাম কার কথা বিশ্বাস করবে বল দেখি —তোর না আমার?

    নিতু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই দরজা খুলে ছোটখাট একটা মেয়ে ঢুকে বলল, কাসেম আপা-হোস্টেল সুপার এসে যাচ্ছে।

    ঠিক আছে যাচ্ছি। কাসেম খোলা দরজা দিয়ে বের হতে হতে বলল, মনে থাকবে তো? এক সপ্তাহ সময়। ক্লাশ সেভেনের ওপরে দশ টাকা, নিচে পাঁচ টাকা। বুতুরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে হাত পা না ভেঙ্গে আস্ত থাকার ফি!

    কাসেম হি হি করে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল। নিতু ঘরে দাঁড়িয়ে থাকা সবার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখলি? দেখলি ব্যাপারটা? কত বড় বদমাইস দেখলি?

    তানিয়া একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, মেয়ে জাতির অপমান। আমার মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানিস?

    ছেলের নাম থাকার কারণে কাসেম এরকম বদমাইস হয়ে যাচ্ছে।

    রুনু তার গালে হাত বুলিয়ে বলল, কারণ কী জানি না কিন্তু বদমাইস যে বের হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।

    নিতু আবার বলল, কিছু একটা করতেই হবে।

    কী করবি?

    আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। তোরা ভেবে দ্যাখ কাজ করবে কি না।

    সবাই এগিয়ে আসে, কী বুদ্ধি? শুনি।

    বুদ্ধিটা কাজে লাগানোর আগে অবিশ্যি কোনো একটা অস্ত্র লাগবে। একটা দা, কুড়াল বা কাঁটা রাইফেল।

    রেবেকা শুকনো মুখে বলল, অস্ত্র পাব কোথায়?

    তানিয়া বলল, আহ! বুদ্ধিটা কি শুনি না আগে।

    দাঁড়া, আগে লাইট নিবিয়ে দিয়ে আসি, হোস্টেল সুপার টের পেলে বিপদ আছে।

     

    তিনদিন পরের কথা। হোস্টেলটি দেখে মনে হবে সবাই বুঝি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। সব ঘরের আলো নেবানো, শুধু বারান্দায় কয়টি আলো জ্বলছে। প্রকৃত ব্যাপারটি একেবারে অন্যরকম, দোতালার মাঝামাঝি ঘরটিতে ছয়টি মেয়ে এখনো জেগে আছে। কাসেমকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে যে নাটকটি করা হবে সেটি কয়েকবার রিহার্সাল দেওয়া হয়েছে, এখন সেটি অভিনয় করা হবে। নিচে ডাইনিং হলের রান্নাঘর থেকে একটা দা গোপনে সরিয়ে আনা হয়েছে কাজটি খুব সহজ হয় নি। সত্যি কথা বলতে কি দা যোগাড় করতে একটু সময় লেগে গেছে, না হয় আরো আগেই এই নাটক অভিনয় করা হতো। এই নাটকে অবিশ্যি কোনো দর্শক নেই, জেনে হোক না জেনে হোক সবাই অভিনেতা!

    প্রথমে নিতু ঘর থেকে বের হয়ে সাবধানে পা টিপে টিপে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল, নাটকের ঠিক সময় সে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উপর উঠে আসবে। এর কয়েক মিনিট পর তানিয়া আর রেবেকা গেল হোস্টেল সুপারিনটেন্ডেন্টের ঘরে, রুনু-ঝুনু আর মিতুল দাঁড়াল কাসেমের ঘরের সামনে। ঠিক যখন হোস্টেল সুপারিনটেন্ডেন্টের দরজায় শব্দ করা শুরু হল তখন রুনু ঝুনু আর মিতুলও উচ্চ স্বরে চেঁচামেচি করতে শুরু করল। প্রথমে মিতুল একটা আর্ত চিৎকার দিল–যে কারণেই হোক মিতুল খুব ভালো চিৎকার করতে পারে। তার চিৎকার শেষে। হতেই রুনু উত্তেজিত গলায় বলল, কোথায় গেছে? কোথায় গেছে?

    ঝুনু বলল, এ দিকে ঐ দিকে–

    মিতুল বলল, সর্বনাশ, এখন কী হবে?

    রুনু ঝুনু একসাথে, ভয় করছে, আমার ভয় করছে—

    মিতুল বলল, হোস্টেল সুপারের কাছে চল—

    চেঁচামেচিতে কাজ হল, ঘরের ভেতর মেয়েগুলো জেগে উঠল, কাসেম গলা উঁচিয়ে বলল, কী হয়েছে রে?

    মিতুল ভয় পাওয়া গলায় বলল, নিতুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

    খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? বলতে বলতে কাসেম দরজা খুলে বের হয়ে এল। রুনু ঝুনু আর মিতুল এক সাথে বুক থেকে একটা নিশ্বাস বের করে দেয়, তাদের নাটকের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে কাসেমের ঘরে দরজা খোলা থাকতে হবে। রুনু ঝুনু আর মিতুল খুব উত্তেজিত অবস্থায় চেঁচামেচি এবং চিৎকার করার ভঙ্গি করে ছোটাছুটি করার ভান করতে থাকে এবং দেখতে পায় তানিয়া আর রেবেকাও নাটকে তাদের অংশটা ঠিক ঠিক অভিনয় করে এসেছে, তারা উদ্বিগ্ন মুখে এই দিকে আসছে এবং তাদের পিছু পিছু রোগী কাঠির মতো চিমশে যাওয়া হোস্টেল সুপার লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে আসছে। কোনো একটি বিচিত্র কারণে গভীর রাতে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হলে সবসময়েই তাকে আরো অনেক বেশি চিমশে দেখায়।

    কিছুক্ষণের মাঝেই মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা পুরো দলটি কাসেমের দরজার সামনে একত্র হল এবং উত্তেজিত গলায় কথা বার্তা হতে লাগল। নাটকটি যেভাবে রিহার্সাল দেওয়া আছে, এখন পর্যন্ত ঠিক সেইবাবে অগ্রসর হচ্ছে। ঠিক এখন সিঁড়ি বেয়ে নিতুর ধীরে পায়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ওঠে আসার কথা এবং ঠিক ঠিক সিঁড়ি বেয়ে সে উপরে উঠে এল, দুই হাত দিয়ে সে কিছু একটা ধরে রেখেছে, জিনিসটা শরীরের পিছনে তাই সামনে থেকে দেখা যাচ্ছে না। যেভাবে রিহার্সাল করা হয়েছিল তার সাথে মিল রেখে মিতুল হাত দিয়ে নিতুকে দেখিয়ে একটা চিৎকার দেয়, সবাই সেদিকে তাকাতেই সে হঠাৎ করে মুখে হাত দিয়ে চিৎকার থামিয়ে দেয়। তানিয়া চাপা স্বরে বলল, খবরদার, কেউ শব্দ করবি না। দেখছিস না স্লিপ ওয়াকিং করছে? ঘুম ভেঙ্গে গেলে বিপদ হবে।

    রুনু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, ঘুম ভেঙ্গে গেলে কী হয়?

    তানিয়া গলা নামিয়ে ফিস ফিস করে বলল, ব্রেনে খুব প্রেসার পড়ে। পাগল টাগল হয়ে যায়।

    ঝুনু বলল, ও।

    ছোট দলটি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে রইল এবং তাদের সবার সামনে দিয়ে নিতু খুব ধীর পায়ে হেঁটে যায়, আজকে তার চোখ খোলা কিন্তু সেই চোখ দিয়ে সে কিছু দেখছে না, দৃষ্টি বহুদূরে কোনো এক অজানা লক্ষ্যে স্থির হয়ে আছে। নিতু তাদেরকে অতিক্রম করা মাত্রই সবাই অবিশ্যি চাপা স্বরে আর্তনাদ করে উঠে কারণ দুই হাত দিয়ে সে কী ধরে রেখেছে সবাই সেটা দেখতে পায়—সেটি হচ্ছে একটি দা, বারান্দার আলো প্রতিফলিত হয়ে সেটি চকচক করে ওঠে।

    হোস্টেল সুপার কাঁপা গলায় বলল, দা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?

    জানি না রেবেকা কাঁপা গলায় বলল, আমার ভয় করছে। ভয় চিকেন পক্স থেকেও বেশি সংক্রামক, রেবেকার কথা শোনা মাত্র সমস্তু দলটির মাঝে ভয়ের একটা শিহরণ বয়ে গেল। সবাই ফ্যাকাসে মুখে নিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে, মেঝেতে পা ঘষে ঘষে সে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল তখন সবাই আবার চাপা আর্তনাদ করে উঠল। নিতু খুব ধীরে ধীরে ঘুরে গিয়ে এবারে তাদের দিকে হেঁটে ফিরে আসতে থাকে। শরীরে সাদা একটা ঘুমের পোশাক, চুল উশখুশকো হয়ে ওড়ছে, চোখে ভয়ংকর একটা প্রাণহীন দৃষ্টি, দুই হাতে শক্ত করে রাখা ধারালো দা, ঘটনাটা সাজানো জেনেও তানিয়ার সারা শরীর শিউরে উঠল।

    রেবেকা ফিস ফিস করে বলল, সর্বনাশ! আমাদের দিকে আসছে।

    রুনু চাপা গলায় বলল, আমরা কী করব?

    তানিয়া বলল, কেউ নড়বি না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। হঠাৎ করে নড়লে চমকে উঠে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।

    নিতু পা ঘষে ঘষে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কাছাকাছি এসে হঠাৎ করে একটু ঘুরে সোজাসুজি কাসেমের দিকে তাকায়। হঠাৎ করে তার নাক ফুলে উঠে, মুখ অল্প হা হয়ে দাঁত বের হয়ে যায়, সে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে, শরীর অল্প অল্প করে কাঁপতে থাকে, দেখে মনে হয় এই মুহূর্তে কিছু একটা ঘটে যাবে। মিতুল আর্ত চিৎকার করে বলল, সর্বনাশ! কাসেম – তোর দিকে যাচ্ছে নাকি?

    কাসেম রক্তশূন্য মুখে নিতুর দিকে তাকিয়ে দুই পা পিছনে সরে এল, সাথে সাথে নিতুও কাসেমের দিকে আবার ঘুরে দাঁড়াল এবার কারো মনে এতটুকু সন্দেহ নেই যে নিতু কাসেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঝুনু ভাঙ্গা গলায় বলল, এখন কী হবে?

    দেখা গেল নিতু ধীরে ধীরে ধারালো দাটা উপরে তুলছে, আজকের নাটকের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, একটু ভুল হলে রক্তারক্তি ব্যাপার ঘটে যেতে পারে। কাসেম রক্তশূন্য মুখে দুই পা পিছিয়ে যায় নিতুও তার দিকে দুই পা এগিয়ে যায়।

    সর্বনাশ! মিতুল আর্ত চিৎকার করে নিতুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করল, নিতু হাত দিয়ে ঝটকা দিতেই মিতুল ছিটকে গিয়ে পড়ল, হঠাৎ করে নিতুর শরীরে মনে হয় মত্ত হাতির জোর চলে এসেছে। মিতুল মেঝেতে পড়ে থেকে কো কো করে কেঁাকাতে থাকল তখন রুনু আর কুনু গিয়ে নিতুকে দুই পাশ থেকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করল, নিতু আবার একটা ঝটকা দিতেই দুজন ছিটকে দুই পাশে আছাড় খেয়ে পড়ল। নিতু তার ধারালো দা টি আরো উপরে তুলে নেয়, এখন একটা কোপ বসালে নির্ঘাত কাসেমের মাথায় পড়বে। কাসেম ভয়ে চিল্কার করে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যায়, মেঝেতে ঘষে ঘষে নিজেকে পিছনে টেনে নেয়, নিতু ও তখন আরো দুই পা এগিয়ে যায়, আর এক মুহূর্ত তারপরেই একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যাবে। ভয়ে আতংকে সবাই চুপ করে গেছে কোখাও কোনো শব্দ নেই। সবাই চোখ বন্ধ করে আছে, এভাবে কয়েকমুহুর্ত কেটে যায়, কাসেম সাবধানে চোখ খুলে তাকায় তখন, নিতু তখনো দা উপরে তুলে রেখেছে, সেইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে খুব সহজ গলায় বলল, কাসেম।

    কাসেমের কথা বলায় কোনো ক্ষমতা নেই, অস্পষ্ট একটা শব্দ করল মাত্র।

    নিতু সাবধানে দাটা নিচে নামিয়ে বলল, কাসেম, আমি তোর জন্যে চাঁদা তুলতে পারব না।

    ঘরে কোনো শব্দ নেই। হোস্টেল সুপার বিড় বিড় করে কী একটা সূরা পড়ছিল এবারে সেটা থামিয়ে এগিয়ে এল, বলল, কীঃ কী বলছেঃ

    কেউ কোনো কথা বলল না। নিতু হাত দিয়ে চোখ কচলে ঘুম থেকে ওঠার ভঙ্গি করে বলল, কাসেম! তুই তোর চাঁদা নিজে তুলে নে–

    হঠাৎ করে নিতু চারিদিকে ঘুরে তাকাল, মনে হল ঘুম থেকে পুরোপুরি জেগে উঠেছে। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে বলল, কী হয়েছে? কী হয়েছে এখানে?

    নিতু তাকিয়ে দেখে কাসেম তার পায়ের কাছে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে আছে, সে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, আমি কী একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। তুই যেন আমাকে বলছিস আমি চাঁদা না তুললে আমাকে মেরে ফেলবি, আমিও যেন–।

    নিতু কথা বলতে বলতে চারিদিকে তাকায় তারপর কেমন জানি অপ্রস্তুত হয়ে যায়। হাতের দাটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, কী হচ্ছে এখানে।

    মিতুল এগিয়ে এসে তার হাত থেকে দাটা নিয়ে বলল, তুই স্নিপ ওয়াকিং করছিলি।

    স্লিপ ওয়াকিং?

    হ্যাঁ।

    নিতু মুখ কাচু মাচু করে বলল, আসলে ঐ চাঁদার ব্যাপারটা নিয়ে এত দুশ্চিন্তার মাঝে ছিলাম, সারাক্ষণ মাথায় মাঝে ঘুরছে। ঘুমালেও স্বপ্ন দেখি।

    তানিয়া গম্ভীর হয়ে বলল, হ্যাঁ, অবচেতন মনে থেকে যায় তো। সেই জন্যে।

    হোস্টেল সুপার পুরো ব্যাপারটির মাঝে একটা রহস্যের গন্ধ পেল, এগিয়ে এসে তার চিমশে মুখটিকে আরো চিমশে করে ধমক দিয়ে বলল, এখানে কী হচ্ছে আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলবে?

    কাজেই পুরো ব্যাপারটা হোস্টেল সুপারকে বুঝিয়ে বলতে হল। নিতু ভান করল একেবারেই বলতে চাইছে না কিন্তু বাধ্য হয়ে বলছে। কাসেমের কীর্তিকলাপ অত্যাচার, চালবাজী কিছুই আর বাকি থাকল না। তার চাঁদা তোলার কথা, সে জন্যে নিতুকে সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া, ভয় দেখানো রুনুর গালে খামচি, সব কিছুই খুলে বলতে হল।

    মধ্যরাতে সবাই যখন নিজের ঘরে ফিরে যাচ্ছে তখন নিতু কাসেমের কাছে গিয়ে গলা নিচু করে বলল, তোর কপাল খুব ভালো, ঠিক সময়ে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। নাহলে যে কী হতো! নিতু ঘটনাটা চিন্তা করে শিউরে উঠে বলল, একেবারে ইত্তেফাকে খবর উঠে যেতো হেড লাইন হয়ে যেতো নৃসংস।

    ইত্তেফাকে খবর ওঠার ভয়েই হোক আর হোস্টেল সুপার এবং খোরাসানী ম্যাডামের দলাই মলাইয়ের ভয়েই হোক কাসেম টুঁ শব্দটি করল না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article দীপু নাম্বার টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }