Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প171 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. শান্তা আপা

    ০৮. শান্তা আপা

    সব আনন্দের পিছনে একটা করে দুঃখ থাকে। বুরুন্নেসা আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েদের জন্যে সেটা বেশি রকম সত্যি। তাদের কখনো কোনো আনন্দ থাকে না, যদি ভুল করে একটা আনন্দ হয়ে যায় তাহলে তার জন্যে মনে হয় দশটা দুঃখ এসে জমা হয়। কাজেই হোস্টেল সুপার চলে যাওয়ার জন্যে যে কিছু দুঃখ হাজির হবে তাতে অবাক হবার কী আছে। প্রথম দুঃখটি হল নেংটি ইঁদুরের বাচ্চাটিকে নিয়ে। একদিন ভোর বেলা সেটি বারান্দা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে তখন কোথা থেকে বিচ্ছিরী একটা কাক এসে ছোঁ মেরে তাকে ধরে নিয়ে উড়ে গেল। নিতুর এতো মন খারাপ হল যে সেটি বলার নয়। সে অবিশ্যি কল্পনা করে তার ইঁদুরের বাচ্চাটা কাকের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে গিয়ে দূরে কোনো এক গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। একদিন তার সাথে দেখা করার জন্যে হেটে হেঁটে হোস্টেলে ফিরে আসবে ঠিক রূপকথার গল্পের মতো।

    নিতু এবং তার বন্ধুদের দুই নম্বর দুঃখটি তাদের নূতন হোস্টেল সুপার নিয়ে। আগের হোস্টেল সুপার চলে যাওয়ায় নূতন একজনকে খোঁজা হচ্ছে এবং গত কয়েকদিন হল একজন মহিলাকে স্কুলে আসতে এবং যেতে দেখা যাচ্ছে। এই মহিলাটি নাকি কমবয়সী, ফর্সা এবং সুন্দরী। সেটাই হচ্ছে ভয়ের কারণ, কারণ দেখা গেছে একজন মানুষের চেহারা যত ভালো হয় সে তত অহংকারী হয়, আর মানুষ যত অহংকারী হয় তত বেশি নিষ্ঠুর হয়। একজন মানুষ যদি ভালো হয় নিতু-৫

    তাকে এই স্কুলে নেয়া হয় না, এই স্কুলে যোগ দেওয়ার আগে একশ বার পরীক্ষা করে দেখা হয় মানুষটা কী রকম নিষ্ঠুর। হোস্টেলের মেয়েরা শুনেছে ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় কেউ যদি হেসে ফেলে সাথে সাথে তাকে বাতিল করে দেওয়া হয়, বুতুরুন্নেসা আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে কখনো প্রকাশ্যে কেউ হাসতে পারে না।

    কাজেই যেদিন এসেম্বলিতে নূতন হোস্টেল সুপার এসে দাঁড়াল সবাই মনে মনে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। মহিলাটি হালকা পাতলা, কম বয়সী, ফর্সা এবং সুন্দরী, ঠিক যেরকম শুনেছিল, চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় মহিলাটি কত নিষ্ঠুর, বিশেষ করে ঠোটের কোনায় চাপা হাসিটি দেখেই কেমন জানি বুকের মাঝে ধ্বক করে উঠে।

    এসেম্বলি শেষ হওয়ার পর খানিকক্ষণ ব্যায়াম হল—যখন হাত পা ছুড়ে লাফালাফি করতে হয়, তারপর খোরাসানী ম্যাডাম বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে একটু এগিয়ে এল। সবার দিকে একবার তাকিয়ে খোরাসানী ম্যাডাম ট্রেনের ইঞ্জিনের মতো ফেঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে হুংকার দিয়ে বলল, পাজী, বদমাইশ হতচ্ছাড়া বেজন্মা শয়তানের ঝাড়–

    লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা ঠিক এরকমই একটা কিছু আশা করছিল কিন্তু তাদের নূতন হোস্টেল সুপার কেমন যেন চমকে ওঠে খোরাসানী ম্যাডামের দিকে তাকাল। খোরাসানী ম্যাডাম অবশ্যি ভ্রুক্ষেপ না করে কথা বলতে থাকে, তোদের পিটিয়ে ছাল চামড়া তুলে দেবার সময় হয়েছে। ভেবেছিলি হোস্টেলে কোনো সুপার নাই, মামদোবাজী আর ঘিড়িংগাবাজী করে সময় কাঁটাবি? তোদের সেই দিন শেষ। হোস্টেলে নূতন সুপার এসেছে, সে যেন তোদের রগড়া দিয়ে সিধে করে রাখে সেটা আমি নিজে ব্যবস্থা করব। মনে থাকে যেন বুতুরুন্নেসা স্কুল কোনো রং তামাশার জায়গা না। এখানে বানর হয়ে ঢুকৰি মানুষ হয়ে বের হবি। খোরাসানী ম্যাডাম সেনাপতির মতো সবার দিকে তাকিয়ে একটা হুংকার দিয়ে বলল, মনে থাকবে তো?

    সবগুলি মেয়ে চিৎকার করে বলল, থাকবে ম্যাডাম।

    খোরাসানী ম্যাডাম রক্তচক্ষু করে হুংকার দিল, জোরে।

    সবাই দম ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল, থাকবে ম্যাডাম।

    লাইনে দাঁড়ানো শ খানেক মেয়ে অবাক হয়ে দেখল তাদের নূতন হোস্টেল সুপার হঠাৎ শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে খুক খুক করে হাসতে শুরু করেছে। এই স্কুলে কেউ হাসছে তাও একজন শিক্ষিকা, এসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে—এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার, কেউ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না। সবাই ভালো করে তাকাল, চোখের ভুল নয় সত্যিই নূতন হোস্টেল সুপার হাসছে। অন্য শিক্ষিকারা কেমন যেন ভয় পেয়ে তাকিয়ে আছে আর তাই দেখে খোরাসানী ম্যাডামের চোখ মুখ একেবারে থমথমে হয়ে গেল। সে এগিয়ে গিয়ে নূতন হোস্টেল সুপারকে নিচু গলায় কিছু একটা বলল, তখন হোস্টেল সুপার হাসি থামিয়ে এক পা সামনে এগিয়ে আসে। মনে হয় কিছু একটা বলবে, গালাগাল দিয়ে শুরু করবে নিশ্চয়ই, কী গালাগাল দেবে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।

    মহিলাটি হাসি হাসি মুখে সবার দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে বলল, আমি তোমাদের নূতন হোস্টেল সুপারিনটেন্ডেন্ট। তোমাদের মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আমাকে তোমাদের বেশি পছন্দ হয় নাই, তাই সবাই এরকম মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছ! তাই না?

    নিতু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, তাদের নূতন হোস্টেল সুপার গালাগাল না দিয়ে কথা বলছে! শুধু যে গালাগাল দিচ্ছে না তাই না এমন ভাবে কথা বলছে যেন তাদেরকে পছন্দ করে। মেয়েগুলির চোখে প্রথমে অবিশ্বাস তারপর বিস্ময় এবং হঠাৎ করে একসাথে হাসি ফুটে উঠল। নূতন হোস্টেল সুপারের মুখও সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠে, এই তো সবাই হাসছে! কী সুন্দর লাগছে দেখতে, হাসি মুখ থেকে পৃথিবীতে সুন্দর কিছু আছে? নেই। হোস্টেল সুপারের কাজ খুব কঠিন। এত গুলি মেয়ের নিশ্চয়ই এতগুলি সমস্যা। কারো জ্বর উঠেছে, কারো মন খারাপ। কেউ বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে আড়ি দিয়েছে, কারো বাসা থেকে চিঠি আসে নি, কারো পুতুলের মাথা আলগা হয়ে গেছে। কারো খেতে ইচ্ছে করছে না। কারো পড়তে ইচ্ছে করছে না। এত সমস্যা কী আর এক দিনে সমাধান করা যাবে? যাবে না। এই সব সমস্যা আস্তে আস্তে সমাধান করতে হবে। তোমরা আর অমিরা মিলে সমাধান করে ফেলব। সব অবিশ্যি সমাধান করা যাবে না, কিছু তো থেকেই যাবে। আর লাইফে যদি একটু আধটু সমস্যা না থাকে লাইফের কোনো মজাই থাকে না। তাই না?

    সবগুলি মেয়ে গলা ফাটিয়ে চিঙ্কার করে বলল, জি, ম্যাডাম।

    তাদের নূতন হোস্টেল সুপার মুখে আঁচল দিয়ে আবার খুক খুক করে হাসতে শুরু করলেন। তারপর হাসি থামিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, প্লীজ তোমরা আমাকে ম্যাডাম ডেকো না! ম্যাডাম শুনলেই আমার মনে হয় আমি বুঝি সুবেদার মেজর আর তোমরা সব আর্মী জওয়ান! হোস্টেল সুপার আবার মুখে আঁচল দিয়ে খুক খুক করে হাসতে লাগলেন।

    তখন একটা ব্যাপার ঘটল যেটা বুতুরুনেসা বালিকা বিদ্যালয়ে আগে কখনো ঘটে নি, নিতু নিজে থেকে হাত তুলে জিজ্ঞেস করে বসল, তাহলে আপনাকে কী ডাকব!

    আমাকে আপা ডাকতে পার। আমার নাম শান্তা, তাই শান্তা আপা। ঠিক আছে?

    সবগুলি মেয়ে এক সাথে আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল, ঠিক আছে শান্তা আপা!

    শান্তা আপা আবার মুখে আঁচল দিয়ে খুক খুক করে হাসতে লাগলেন, কী জনে। কে জানে! হাসি অত্যন্ত সংক্রামক, এটি জলবসন্ত হাম আর হুপিং কফ থেকেও বেশি সংক্রামক তাই প্রথমে এক দুইজন তারপর দশ বারোজন এবং শেষে সবাই শান্তা আপার মতো খুক খুক করে হাসতে শুরু করল।

    নিতু দেখল খোরাসানী ম্যাডাম বিস্ফোরিত চোখে একবার শান্তা আপা আরেকবার মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে কিছু একটা বলতে চাইছে, কয়েকবার মনে হয় চেষ্টাও করল কিন্তু বলতে পারল না।

     

    এসেম্বলি শেষে সবাই সেদিন ক্লাশে গেল একটা অবিশ্বাস্য আনন্দ নিয়ে তাদের হোস্টেলে শেষ পর্যন্ত একজন সুপার এসেছে যে বাচ্চাদের পছন্দ করে। কী আশ্চর্য!

    বিকাল বেলা ছুটির পর ক্লাশ থেকে সবাই দুদ্দাড় করে হোস্টেলে ফিরে এল, তাদের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তাদের হোস্টেল সুপার হচ্ছে শান্তা আপা! তারা তাড়াতাড়ি ফিরে এসে দেখতে চায় একটি সত্যি এটি আসলে স্বপ্ন নয়।

    হোস্টেলে ফিরে এসে তারা আবিষ্কার করল এটি সত্যি। শান্তা আপা অদৃশ্য হয়ে যান নি, এখনো আছেন। শুধু আছেন না, ভালোমতোই আছেন, কোমরে শাড়ি প্যাঁচিয়ে তার ঘরটা পরিষ্কার করছেন। ঘরের বারান্দায় শান্তা আপার জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। মেয়েদেরকে ক্লাশ থেকে ফিরে আসতে দেখে উজ্জ্বল চোখে বললেন, কেমন হল তোমাদের ক্লাশ?

    নিতুর চোখে পানি এসে গেল হঠাৎ, কতদিন হয়ে গেল কেউ তাদের সাথে এরকম নরম গলায় কথা বলে নি, তারা ভুলেই গিয়েছি যে তারা আসলে ফুটফুটে ছোট ছোট মেয়ে তাদের সাথে মিষ্টি করে কথা বলা যায় তখন তারাও মিষ্টি করে কথা বলে। তাদেরকে ভালবাসা যায় তখন তারাও ভালবাসে।

    নিতু ঘাড় নেড়ে বলল, ভালো হয়েছে আপ।

    ভেরি গুড়। যাও হাত মুখ ধুয়ে একটু বিশ্রাম নাও। তোমাদের তো বাড়ন্ত বয়স, ভালো করে খেতে হবে সবার। বেশি করে ক্যালসিয়াম, হাড় গুলি যেন শক্ত হয়।

    আহা! কী ভালো লাগছে শুনতে, কেউ একজন সত্যি সত্যি তাদের ভালো চাইছে। নিতুর মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো, তার মা যেরকম তার ভালো চাইতেন ঠিক সেরকম। নিতু স্কুলের ব্যাগটা নিচে রেখে বলল, আপা, আমি আপনার সাথে ঘর পরিষ্কার করি?

    শান্তা আপা কিছু বলার আগে অন্য সব কয়জন মেয়ে বলে উঠল, আপা, আমরাও করি?

    শান্তা আপা চোখ কপালে তুলে বললেন, সে কী! তোমরা ক্লাশ করে টায়ার্ড হয়ে এসেছো, এখন ঘর পরিস্কার করবে কি? আগে একটু রেস্ট নিয়ে খেয়ে দেয়ে এসো!

    না আপা এখনই করি বলে সবাই মিলে শান্তা আপার ঘর পরিষ্কার করতে শুরু করে দিল। শান্তা আপা হাসি মুখে ভালবাসার এই উৎপাতটুকু মেনে নিলেন, একা হলে হয়তো কাজটা গুছিয়ে করা যেতো, ঘরটা আরো ভালো করে সাজিয়ে নেয়া যেতো কিন্তু এরকম উৎসাহে বাধ সাধতে তার ইচ্ছে করল না।

    ঘর যখন পুরোদমে সাজানো হচ্ছে তখন হঠাৎ করে দরজা অন্ধকার করে কী একটা দাঁড়াল, নিতু এবং অন্য মেয়েরা তাকিয়ে দেখল খোরাসানী ম্যাডাম। অন্য সময় হলে ভয়ে তাদের হার্ট ফেল করে যেতো কিন্তু আজ সবাই জানে তাদের শান্তা আপা ভয়ংকর খোরাসানী ম্যাডামের হাত থেকে রক্ষা করবেন, তাই কেউ ভয় পেল না। সোজাসুজি যেন খোরাসানী ম্যাডামের চোখে পড়তে না হয় সে জন্যে তারা শান্তা আপার পিছনে লুকিয়ে গেল। খোরাসানী ম্যাডাম চোখ লাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলল, তোরা এখানে কী করছিস?

    ওরা কিছু বলার আগেই শান্তা আপা কাছে যারা আছে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আমি আজ নতুন এসেছি বলে ওরা আমাকে হেল্প করছে! কী সুইট দেখেছেন?

    খোরাসানী ম্যাডাম কিছু বলার চেষ্টা করে তোতলাতে শুরু করল তারপর থমথমে মুখে বলল, এই স্কুলে একটা নিয়ম কানুন আছে, ডিসিপ্লিন আছে—

    শান্তা আপা মুখের হাসিটুকু একটুও না সরিয়ে ইংরেজিতে বললেন, আমি এই বিষয়গুলো আপনার সাথে পরে আলাপ করব। এদের সামনে নয়।

    খোরাসানী ম্যাডামের কালো মুখ লাল হওয়ার চেষ্টা করে কেমন জানি বেগুনি হয়ে গেল, সেই অবস্থায় নাক দিয়ে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বলল, এদের এখন ঘুমানোর কথা। ঘুম থেকে উঠে খেলাধুলা করার কথা।

    সেটাই যদি নিয়ম হয় তাহলে সেটাই করবে। তবে আমি আজ নতুন এসেছি তো তাই এদের সাথে পরিচয় করার জন্যে আজ একটু রুটিন পাল্টানো হতে পারে–

    খোরাসানী ম্যাডামকে দেখে মনে হল সে বুঝি এক্ষুনি শান্তা আপার উপর লাফিয়ে পড়বে, দাঁতে দাঁত ঘষে হিংস্র গলায় বলল, এই বদমাইস হতচ্ছাড়া পাজী মেয়েগুলোকে–

    শান্তা আপা আশ্চর্য রকম শান্ত কিন্তু কঠিন গলায় বললেন, এরা মোটেই বদমাইস হতচ্ছাড়া এবং পাজী মেয়ে নয়।

    খোরাসানী ম্যাডামকে দেখে মনে হল কেউ বুঝি তার নাকের মাঝে দুই ইঞ্চি

    তক্কা দিয়ে মেরে বসেছে। খানিকক্ষণ মুখ হা করে নিশ্বাস নিয়ে বলল, পনের বছর থেকে এই স্কুলের নিয়ম কানুন চলে আসছে, তুমি সেদিনের মেয়ে—

    শান্তা আপা চোখের পাতি না ফেলে বললেন, আমার নামা শান্তা চৌধুরী। কথাবার্তা বলার সময় আমাকে মিসেস চৌধুরী বলে সম্বোধন করবেন। আর আমাকে দেখে বোঝা না গেলেও আমার বয়স খুব কম নয়। আমাকে সহজেই আপনি করে সম্বোধন করা যায়।

    খোরাসানী ম্যাডামকে দেখে মনে হল সে বুঝি এখন ফটাশ শব্দ করে ফেটে যাবে। দরজাটা খামচে ধরে হিংস্র চোখে শান্তা আপার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমি যেভাবে চালাই এই স্কুলে সেভাবে চলে।

    শান্তা আপা ফিক করে হেসে ফেললেন, বললেন, বেশ! তাহলে সেটাই হোক, আপনি যেভাবে চালাবেন সেভাবে এই স্কুল চলবে আর আমি যেভাবে চালাব সেভাবে এই হোস্টেল চলবে।

    খোরাসানী ম্যাডাম হঠাৎ করে ঘুরে গেল তারপর দুম দুম শব্দ করে হেঁটে বের হয়ে গেল। শান্তা আপা তখন সাথে সাথে মেয়েদের দিকে ঘুরে যেন কিছুই হয় নি সেভাবে বললেন, এখন শেলফে বইগুলো তুলে ফেললেই আমাদের কাজ শেষ তাই না।

    সবাই মিলে বইগুলো শেলফে তুলতে থাকে। তাদের মনে হতে থাকে যেন সত্যিই কিছু হয় নি। তাদেরকে কেউ বলে দেয় নি কিন্তু তারা বুঝে গেছে হালকা পাতলা ছোট-খাট কমবয়সী শান্তা আপা একই সাথে লোহার মতো শক্ত আবার মাখনের মতো নরম। শক্তটা হচ্ছে খোরাসানী ম্যাডামের জন্যে আর নরমটা তাদের জন্যে। কী মজা!

    নিতুর ইচ্ছে করল শান্তা আপাকে জড়িয়ে তার গালে একটা চুমু দিয়ে দেয় তার মাকে সে যেভাবে দিত।

    শান্তা আপার ঘর গুছিয়ে তারা যখন বের হয়ে আসছে তখন বেশি উৎসাহ নিয়ে না দেখে হাঁটার জন্যে ঝুনু দেয়াল থেকে বের হয়ে আসা একটা ধাপের মতো জায়গায় পা বেঁধে আছাড় খেয়ে পড়ল। সাথে সাথে তার হাঁটুর কাছে খানিকটা ছাল উঠে গেল, দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করে ঝুনু ওঠার চেষ্টা করল এবং তখন অন্যেরা তাকে ধরে টেনে তুলল। রেবেকা ধমক দিয়ে বলল, তোর হয়েছেটা কী? দেখে হাঁটতে পারিস না?

    ঝুনু ছিলে যাওয়া হাঁটুটা দেখে বলল, দেখেই তো হাঁটছিলাম।

    শান্তা আপা এগিয়ে এসে নরম গলায় বললেন, আহা! ওকে বকছ কেন? ও তো ঠিকই হাঁটছিল, হঠাৎ করে ঘরের ভেতরে এরকম ভাবে একটা ধাপ করে রাখবে কে জানত?

    নিতু তাকিয়ে দেকে সত্যিই তাই। ঘরের মাঝখানে হঠাৎ করে একটা ধাপের মতো জায়গা বের হয়ে এসেছে। এখানে এটা কেন করেছে কে জানে? সবাই যখন ঝুনুর ছিলে যাওয়া হাঁটু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে তখন নিতু ধাপটাকে পরীক্ষা করল। ঠোকা দিয়ে মনে হল এটা ফাপা, নিচু হয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখল, পাশে খানিকটা জায়গা থেকে সিমেন্টের আস্তরণ খসে পড়ে ভেতরে কাঠের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। শান্তা আপা যখন ঝুনুর ছিলে যাওয়া হাঁটু ধুয়ে সেখানে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে একটা তুলো বসিয়ে টেপ লাগিয়ে দিচ্ছিলেন তখন নিতু তার বল পয়েন্ট কলম দিয়ে ধাপের ভেতরের অংশটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছিল। সত্যিই এই ধাপটি ফাঁপা আর ভেতরে একটা বাক্সমতন কিছু একটা আাছে। ঝুনুকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সবাই নিতুর দিকে তাকাল, মিতুল বলল, তুই কী করছিস?

    নিতু গম্ভীর হয়ে বলল, এই ধাপটা ফাঁপা। এর ভিতরে একটা গোপন বাক্স আছে।

    গোপন বাক্স?

    হ্যাঁ, এই দেখ, এদিক দিয়ে দেখা যাচ্ছে।

    নিতুর কথা শুনে সবাই আবার ধাপটার চারিদিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। শান্তা আপা চোখ বড় বড় করে বললেন, কী বললে, গোপন বাক্স?

    জি আপা, এই দেখেন, নিতু ঠোকা দিয়ে বলল, এটা ফাঁপা।

    শান্তা আপাও ধাপটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিকই বলছ, মনে হচ্ছে এই ধাপটার মাঝে বাক্স জাতীয় কিছু আছে।

    সবাই এবারে চোখ বড় বড় করে শান্তা আপার দিকে তাকাল। মিতুল চোখ বড় বড় করে বলল, কী হতে পারে আপা? কোনো গুপ্তধন?

    শান্তা আপা ফিক করে হেসে ফেললেন, বললেন, একেবারে ঘরের ভেতরে গুপ্তধন?

    নিতু মাথা নেড়ে বলল, কিংবা কাউকে মার্ডার করে ডেডবড়ি লুকিয়ে রেখেছে।

    শান্তা আপা একটু শিউরে উঠলেন, কী বলছ তুমি?

    তানিয়া মাথা নাড়ল, বলল, হতে পারে আপা। বুতুরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে দুই চারটা মার্ডার নিশ্চয়ই হয়েছে।

    শান্তা আপা খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ঠিক আছে। যখন আমাদের খুব এডভেঞ্চারের মুড হবে তখন আমরা এই গোপন বাক্সটা বের করে দেখব কী আছে ভেতরে।

    ঝুনু ভয় পাওয়া গলায় বলল, আপা —

    কী হল?

    আপনার ভয় করবে না, ঘরের ভেতরে একটা গোপন বাক্সের ভিতরে হয়তো একটা ডেডবড়ি?

    শান্তা আপা খিল খিল করে হেসে বললেন, চারপাশে তোমরা এতগুলি মেয়ে, ভয় করবে কেন? আর যদি খুব বেশি ভয় করে তখন আমি না হয় তোমাদের ঘরে চলে আসব। থাকতে দেবে না?

    সবগুলি মেয়ে সমস্বরে চিৎকার করে বলল, দেব আপা দেব।

    নিতুদের পাশের ঘরে থাকে—ছোটখাট একটা মেয়ে বলল, আপা, আমাদের আগের হোস্টেল সুপার কিন্তু সত্যি সত্যি ভূতের ভয় পেয়ে চলে গেছেন।

    তাই নাকি?

    জি আপা। ইঁদুরের ভূত।

    নিতু আর তার রুম মেটরা অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রাখল, শান্তা আপা খুব ভয় পেলেন বলে মনে হল না, হাসি মুখে বললেন, ইঁদুরের ভূত হলে সমস্যা নেই। খুঁজে পেতে একটা বিড়ালের ভূত নিয়ে আসব–তাহলেই ধারে কাছে আসবে না।

    সবার মনে আনন্দের একটা ফুরফুরে ভার ছিল বলে এই ছোট কথাটিতেই সবাই হেসে গড়াগড়ি খেতে নাগল। ওরা যখন বের হয়ে যাচ্ছে তখন শান্তা আপা ঝুনুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আমি খুব দুঃখিত, যে তুমি আমার ঘরে এসে এরকম ব্যথা পেলে।

    মিতুল হি হি করে হেসে বলল, আপা, ঝুনুর কাজই হচ্ছে ব্যথা পাওয়া। আপনার এখানে না হলে নিজের ঘরে ব্যথা পেতো। নিজের ঘর না হলে বাইরে গিয়ে ব্যথা পেতো।

    রেবেকা বলল, আর এখন আমাদের সুবিধে হল কে রুনু কে ঝুনু বের করা। এই সপ্তাহে ঝুনু হচ্ছে যার পায়ে ছাল উঠে গেছে সে।

    সবার মন ভালো বলে আবার সবাই হি হি করে হাসতে থাকে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article দীপু নাম্বার টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }