Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প171 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. বিপদের শুরু

    ০৯. বিপদের শুরু

    ক্লাশ শেষ হবার পর আগে যে রকম দৌড়াতে দৌড়াতে সবার নিজের রুমে এসে আধা ঘণ্টা ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতে হলে এখন সেই যন্ত্রণাটা বন্ধ হয়েছে। কেউ চাইলে ঘুমাতে পারে কিন্তু সেটা আর কঠিন নিয়ম নয়—তাই কেউ ঘুমায় না, সবাই মিলে গল্পগুজব করে। বিকেলে নস্তা করে সবাইকে অবিশ্যি মাঠে গিয়ে খেলা ধুলা করতে হয়, সেখানেও নিয়ম পাল্টানো হয়েছে, যার যেটা ইচ্ছা খেলতে পারে। মেয়ে বলেই যে ছেলেদের খেলা খেলতে পারবে না সেরকম নিয়ম নেই তাই মেয়েরা খুব উৎসাহ নিয়ে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে। তবে এখনো সবচেয়ে প্রিয় খেলা সাত চাড়া —-তাকারণটা কী এখনো কেউ জানে না।

    যেহেতু ঘুমানো নিয়ে তাড়া নেই তাই ক্লাশ শেষ হার পর যখন রেবেকা নিতকে বলল লাইব্রেরিতে একটা বই জমা দিহে যাওয়ার সময় তার সাথে যেতে নিতু রাজি হয়ে গেল। লাইব্রেরিটা কাছেই, সোজাসুজি মাঠের ভেতর দিয়ে গেলেই তাড়াতাড়ি হয় কিন্তু আজ রেবেকার কী হয়েছে কে জানে সে খেয়া বাধানো পথ ধরে রওনা দিল। শুধু যে খোয়া বাধানো পথ ধরে রওনা দিল তাই নয় রেবেকা হাঁটতে লাগল গদাই লস্করী চালে। নিতু বিরক্ত হয়ে বলল, কী হল? তুই এরকম ঢিলে হয়ে গেলি কেন?

    রেবেকা দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, কী বললি?

    নিতু বিরক্ত হয়ে বলল, এখন সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোর শুনতে হবে? হেঁটে হেঁটে শোনা যায় না?

    যাবে না কেন? শোনা তো যায়ই। কিন্তু তবু রেবেকা নড়ে না, আরো ঢিলে হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।

    তুই যেভাবে হাঁটছিস তাতে লাইব্রেরি যেতে লাগবে একমাস। রেবেকা খুব ধীরে ধীরে আবার হাঁটা শুরু করে বলল, লাগুক না। আমাদের কি কোনো তাড়াহুড়া আছে?

    তাড়াহুড়া না থাকলেই তুই এরকম কচ্ছপের মতো হাঁটবি?

    আচ্ছা বাবা অস্থা খরগোসের মতো হাঁটছি। বলে রেবেকা খরগোসের মতো দুইটা লাফ দিয়ে আবার দাঁড়িয়ে হি হি করে হাসতে শুরু করে। তারপর হঠাৎ হাসি থামিয়ে খোয়া বাঁধানো পথের পাশে কী একটা দেখিয়ে বলে, দেখ, দেখ।

    কী দেখব?

    এই ফুল গাছটা। কী সুন্দর ফুল দেখেছিস?

    তারা প্রতিদিন সকাল বেলা এই দিক দিয়ে স্কুলে যায় বিকাল বেলা এই দিক দিয়ে স্কুল থেকে ফেরৎ আসে এই ফুলের গাছগুলি সবসময়েই দেখছে–কিন্তু এখন হঠাৎ করে রেবেকার কাছে ফুলগুলি কেন সুন্দর মনে হচ্ছে নিতু বুঝতে পারল না। রেবেকা শুধু সুন্দর ফুল দেখেই মুগ্ধ হল না হঠাৎ করে বলল, আয় গুনে দেখি গাছে কয়টা ফুল আছে!

    কী বললি?

    গুনে দেখি একটা গাছে কয়টা ফুল। তুই এদিকে থেকে গোনা শুরু কর, আমি ওদিকে থেকে গুনি— বলে সত্যি সত্যি রেবেকা গোনা শুরু করল।

    নিতু এবারে সত্যি সত্যি খেপে গেল, বলল, তোর ইচ্ছে হলে ফুল কেন, গাছের পাতা আর মাঠের ঘাস গুনতে থাক, আমি গেলাম।

    নিতু সত্যি সত্যি হোস্টেলে রওনা দিতেই রেবেকা দৌড়ে এসে নিতুর হাত ধরে ফেলল, আয় আয় প্লীজ, আমার একা যেতে ইচ্ছে করছে না।

    লাইব্রেরির দিকে রওনা দিয়েও রেবেকা শুধু ধানাই পানাই করে, লাইব্রেরিতে পৌছেও সে লাইব্রেরির দরজায় বসে থাকা বুয়ার সাথে গল্প জুড়ে দেয় শুধু তাই না তার ঘরে আসা আরেকজনকে তার আগে পাঠিয়ে দিয়ে ইচ্ছে করে খানিকটা সময় নষ্ট করে ফেলল। শেষ পর্যন্ত সে বই জমা দিয়ে দেওয়ালে বড় ঘড়িটার দিকে তাকাল এবং হঠাৎ করে হোস্টেলে ফেরার জন্যে সে খুব ব্যস্ত হয়ে গেল। নিতুকে নিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে হোস্টেলে এসে হাজির হল, ধুপ ধাপ করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসে এবং নিতুকে প্রায় টেনে নিজেদের রুমের দিকে নিতে থাকে। প্রত্যেক দিন যখন নিতুরা ক্লাশ থেকে ফিরে আসে আজকাল সব রুমে মেয়েরা হৈ চৈ করে গল্প গুজব করতে থাকে কিন্তু আজকে কেমন যেন নীরব।

    নিজেদের রুমের সামনে এসে রেবেকা দাঁড়িয়ে গেল। দরজাটা ভেজানো রেবেকা নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, যা ভেতরে ঢোক?

    নিতু একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেল, বিকাল বেলা থেকেই রেবেকা কেমন যেন বিচিত্র ব্যবহার করছে, কারণটা কী কে জানে। সে কয়েক মুহূর্ত রেবেকার দিকে তাকিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল, সাথে সাথে মনে হল একশ মেয়ে এক সাথে চিৎকার করে উঠল, হ্যা-পী-বার্থ-ডে-নি-তু-উ-উ-উ!

    নিতু কিছু বোঝার আগেই ঘরের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা মেয়েরা চিৎকার করে বের হয়ে আসে, কাগজের বাঁশি বাজাতে থাকে, হাত তালি দিতে থাকে, শীষ দিতে থাকে এবং অর্থহীন ভাষায় চিৎকার করতে থাকে। নিতু অবাক হয়ে দেখল তাদের ঘরটাকে একটা পার্টির জন্যে সাজানো হয়েছে বিছানাগুলো ঠেলে সরিয়ে মাঝখানে জায়গা করা হয়েছে সেখানে একটা টেবিল। টেবিলে একটা কেক, কেকের মাঝে মোমবাতি জ্বলছে। পিছনে দেওয়ালে কাগজ কেটে লেখা শুভ জন্মদিন—নি। ঘরে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে, ঘরের কোনায় কোনায় বেলুন ঝুলছে।

    নিতু হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল এবং হঠাৎ করে তার মনে পড়ল সত্যিই আজ তার জন্মদিন। যখন তার আম্মা বেঁচেছিলেন তখন হৈ চৈ করে তার জন্মদিন করা হয়েছে। এই বুতুরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে জন্মদিনের তারিখটা মনে রাখাটাও নিশ্চয়ই কোনো এক ধরনের অপরাধ বলে বিবেচনা করা হতো। তাই কোনো মেয়ে আর এটা নিয়ে মাথা ঘামায় নি। এখন শান্তা আপা আসার পর সব কিছু পাল্টো গেছে, শান্তা আপা ফাইল ঘেটে কবে কার জন্মদিন খুঁজে বের করে সবার জন্মদিন করা শুরু করছেন।

    নিতু চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে রইল, কী বলবে বা কী করবে সে বুঝতে পারছিল না, সবগুলো মেয়ে তাকে ঘিরে হৈ চৈ আর চেঁচামেচি করতে থাকে। রেবেকা কেন বিকেল বেলা তাকে নিয়ে অনর্থক সময় নষ্ট করছিল এখন হঠাৎ করে সেটা নিতুর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।

    শুভ জন্মদিন নিতু  শান্তা আপার গলার স্বর শুনে নিতু ঘুরে তাকাল, শান্তা আপা আজকে কী সুন্দর একটা শাড়ি পরে আছেন! নিতু শান্তা আপার দিকে তাকিয়ে কী করবে বুঝতে না পেরে হঠাৎ ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলল। শান্তা আপা অবাক হয়ে বললেন, আরে বোকা মেয়ে! একী হচ্ছে! কাঁদছ কেন?

    নিতু চোখ মুছে বলল, আপা, আপনি চলে গেলে আমাদের কী হবে? শান্তা আপা অবাক হয়ে বললেন, আমি কেন চলে যাব?

    জানি না। নিতু ফোঁপাতে ফেঁপাতে বলল, আমার খালি মনে হয় আপনি চলে যাবেন তখন আমরা আবার একা হয়ে যাব, কেউ আর আমাদের আদর করবে না।

    ধুর বোকা! শান্তা আপা নিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কেন আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাব?

    আপনি তাহলে কথা দেন কখনো আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন না?

    শান্তা আপার মুখটা হঠাৎ একটু বিষণ্ণ হয়ে যায়, নিতুর চোখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললেন, সেই কথা কী কেউ কখনো দিতে পারে? তবে আমার নিজের হাতে থাকলে তোমাদের কোনো একটা ব্যবস্থা না করে আমি কোথাও যাব না।

    নিতু চোখ মুছল। শান্তা আপা নিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, এসো এখন কেক কাটতে হবে। কেক কাঁটার পর উপহার খুলবে।

    নিতু অবাক হয়ে দেখল সত্যি সত্যি কেকের পাশে বেশ কয়টা উপহার রঙিন কাগজে মুড়ে রাখা আছে।

    ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নেভানোর আগে মিতুল বলল, তুই মনে মনে একটা কিছু ইচ্ছা করে ফুঁ দে। যদি এক ফুয়ে সব মোমবাতি নিভিয়ে দিতে পারিস তাহলে তোর ইচ্ছা পূরণ হবে।

    সত্যি?

    সত্যি।

    নিতু বুক ভরে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে এক ফুয়ে সবগুলো মোমবাতি নিভিয়ে দিতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। রুনু জিজ্ঞেস করল, কী ইচ্ছা করেছিস রে নিতু?

    নিতু ইচ্ছা করেছে যেন শান্তা আপা কখনো তাদের ছেড়ে চলে না যান, কিন্তু সেটা সবার সামনে বলতে তার একটু লজ্জা করল, সে বলল, উহুঁ বলব না। এটা সিক্রেট।

    ঝুনু বলল, বুঝেছি। নিশ্চয়ই মনে মনে একটা সুন্দর জামাই চেয়েছে।

    ঝুনুর কথা শুনে সবাই হি হি করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। শান্তা আপাও হাসতে থাকেন। হাসতে হাসতেই বললেন, নিতু এত ভালো একটা মেয়ে সুন্দর একটা বর তো চাইতেই পারে। আর সুন্দর হোক কী না হোক ভালো যেন হয়। ভালো একটা মেয়ের ভালো একটা বর! তাই না নিতু?

    নিতু লজ্জায় টমেটোর মতো লাল হয়ে উঠল। মিতুল নিতুকে একটা ছোট ধাক্কা দিয়ে শান্তা আপাকে বলল, আপা, আপনি কাকে ভালো একটা মেয়ে বলছেন? নিতু কী রকম পাজী আপনি জানেন? ও এখন পর্যন্ত কী কী করছে শুনলে আপনার হার্ট এটাক হয়ে যাবে।

    রেবেকা বলল, পাজী একটা মেয়ের পাজী একটা বর দরকার।

    শান্তা আপা বললেন, উহুঁ। তাহলে তো আরো বেশি দরকার ভালো একটা বরের, যেন দেখে শুনে রাখতে পারে। তাই না নিতু?

    বর এবং তার ভালো মন্দের আলোচনা এবং সে কী পরিমাণ পাজী সেই আলোচনায় নিতু একেবারেই মজা পাচ্ছিল না তাই আলোচনা ঘোরানোর জন্যে বলল, আমি কী কেকটা এখন কাটব?

    হ্যাঁ হ্যাঁ। মেয়েরা কেকটার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল, কাট কাট।

    শান্তা আপা বললেন, তার আগে হ্যাপি বার্থ ডে গান গাইতে হবে। বলে নিজেই শুরু করলেন, তার সাথে সবাই যোগ দিল,

    হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ
    হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ
    হ্যাপি বার্থ ডে টু নিতু
    হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ…

    সবাই উচ্চ স্বরে চিৎকার করে হাত তালি দিতে থাকে এবং তার মাঝে নিতু কেকটা কাটল। কেক কেটে টুকরো টুকরো করে সবাইকে দেয়া হল, সাথে খাবার জন্যে চানাচুর আর মিষ্টি আনা হয়েছে। তানিয়া আর মিতুল মিলে সবাইকে প্লেট করে খাবার দিতে থাকে। খাওয়া শেষ হবার পর উপহার খোলা হল। শান্তা আপা দিয়েছেন, সত্যজিৎ রায়ের বই। মেয়েরা কেউ দিয়েছে চুলের ক্লীপ, ফিতা আর চকলেটের প্যাকেট। সবচেয়ে সুন্দর যে উপহারটা সেটা হচ্ছে একটা জন্মদিনের কার্ড যেখানে সব মেয়ে কিছু একটা লিখে নিচে নিজের নাম লিখে দিয়েছে। ফুল লতা পাতা পাখি এঁকে সেই কার্ডটা নিজেরাই তৈরি করেছে।

    পার্টি শেষ হবার পর নিতুদের ঘরটার যা একটা আবস্থা হল সেটি আর বলার মতো নয়, সেটা পরিষ্কার করতে গিয়ে সবার প্রায় বারটা বেজে যাবার মতো অবস্থা। নিতুর জন্মদিন বলে কেউ তাকে হাত লাগাতে দিচ্ছি না কিন্তু তবুও সে জোর করে সবার সাথে হাত লাগালো। সব কয়জন মেয়ে তার জন্যে এমন চমৎকার একটা জন্মদিনের উৎসব করেছে, সে কেমন করে এখন এই কাজ থেকে পিছিয়ে থাকে?

     

    বেশ কয়দিন পরের কথা, সন্ধে বেলা সবাই পড়তে বসেছে এরকম সময় শান্তা আপা এসে হাজির হলেন। সবাই পড়ার টেবিল ছেড়ে লাফিয়ে উঠে শান্তা আপাকে ঘিরে দাঁড়াল। শান্তা আপা জিজ্ঞেস করলেন, কেমন হচ্ছে তোমাদের পড়াশোনা?

    সবাই সমস্বরে চিৎকার করে বলল, পড়তে ইচ্ছে করছে না আপা।

    তাহলে কেমন করে হবে। ইচ্ছে করুক আর নাই করুক, সবাইকে পড়তে হবে।

    নিতু মুখ কাচু মাচু করে বলল, প্রত্যেক দিনই তো পড়ি।

    শান্তা আপা এসে নিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে আজকে যদি সবাই মন দিয়ে পড়াশোনা কর তাহলে রাত্রি বেলা একটা মজা করতে পারি।

    সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠল। রেবেকা জিজ্ঞেস করল, কী মজা আপা?

    আজকে হচ্ছে পূর্ণিমা। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার তাই রাত্রি বেলা দেখবে কী চমৎকার জ্যোৎস্না হবে। সেই জ্যোৎস্নার আলোতে আজ রাতে গানের আসর হবে। তোমরা গান গাইতে পার তো?

    পারে আপা পারে। মিতুল পারে।

    ভেরি গুড। এখন পড়তে বসে যাও। আমি রুমে রুমে গিয়ে সবাএক বলে আসি।

    সেদিন রাত্রিবেলা যখন সবার ঘুমিয়ে যাবার কথা তখন সবাই এসে বারান্দায় গোল হয়ে বসেছে। হোস্টেলের সব কয়টি লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে তাই শুধু মাত্র জোৎস্নার নরম আলো এসে পড়েছে বারান্দায়। নিতু অবাক হয়ে জ্যোৎস্নার আলোর দিকে তাকিয়ে রইল কতবার নিশ্চয়ই এখানে পূর্ণিমা এসেছে এবং চলে গিয়েছে, কখনো চোখ মেলে দেখে নি, আজ প্রথম দেখছে। জ্যোৎস্নার আলো কী সুন্দর। মনে হয় কেউ একজন অনেক হিসেব করে এই আলোটা তৈরি করেছে, যেন বেশি উজ্জ্বল না হয়ে যায় আবার বেশি অন্ধকারও না হয়ে যায়। দেখে মনে হয় সবকিছু দেখা যাচ্ছে কিন্তু আবার ভালো করে দেখতে চাইলে সবকিছু কেমন যেন আবছা হয়ে যায়। মনে হয় কোনটা কী রং বোঝা যাচ্ছে কিন্তু ভালো করে দেখতে চাইলেই সেটা অস্পষ্ট হয়ে যায়। মনে হয় সবকিছুকে কোমল একটা কিছু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। নিতু অবাক হয়ে জ্যোৎস্নার আলো আর এই আলোতে অন্য সবার দিকে তাকিয়ে রইল। একটু আগেই যে মেয়েরা চেঁচামেচি হৈ চৈ করছিল চৈ করছিল জ্যোৎস্নার নরম আলোতে এসে তারাই আবার কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল। কী আশ্চর্য!

    শান্তা আপা মাঝখানে এসে বসে বললেন, একটা হরমোনিয়াম আর তবলা থাকলে কী চমৎকার হত।

    কেউ কিছু বলল না, নিতু মিতুলকে গান শেখানোর কথা বলার পর কী ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল সেটা সবার মনে পড়ে গেল কিন্তু এই চমৎকার পরিবেশে সেটা বলতে কারো রুচি হল না। শান্তা আপা বললেন, নাও, কে শুরু করবে?

    কেউ কিছু বলল না, তখন শান্তা আপা আবার বললেন, কী হল? এত লজ্জা পেলে কেমন করে হবে? গীও কেউ একজন।

    নিতু বলল, আমরা তো গান গাইতে পারি না, শুধু মিতুল পারে।

    শান্তা আপা বললেন, মিতুল গাও একটা গান।

    মিতুল লজ্জা পেরে বলল, আপা, আমার খুব গান গাইতে ইচ্ছে করে কিন্তু আমি তো কখনো গান গাইতে শিখি নাই, তাই কোনো গান পুরোটা জানি না!

    যেটুকু জান সেটুকুই গাও।

    মিতুল তখন গান গাইতে শুরু করল, তার গলা থেকে মধুর একটা সুর জ্যোৎস্নার আলোতে ছড়িয়ে পড়ল এবং হঠাৎ করে সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিশ্চপ হয়ে গেল। মিতুল যে কয়টা লাইন জানে সেটাই নিজের মতো করে খানিকটা ভুল সুরে এবং অনেক জায়গায় ভুল কথায় গেয়ে শোনাল কিন্তু সেটা শুনেই শান্তা আপা একেবারে হতবাক হয়ে গেলেন।

    গান শেষ হবার পর শান্তা আপা মিতুলকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, কী সর্বনাশ! মিতুল, তুমি এখানে কী করছ? খোদা তোমাকে যে গলা দিয়ে পাঠিয়েছেন তোমার তো বিশ্বজয় করতে হবে।

    নিতু বলল, আপা, মিতুল এর মাঝে হোস্টেল জয় করে ফেলেছে।

    সেটা কী রকম?

    মিতুল ইচ্ছে করলে গান গেয়ে গ্লাশ, লাইট বাল্ব জানালার কাঁচ এসব ভেঙ্গে ফেলতে পারে।

    শান্তা আপা অবিশ্বাসের সুরে বললেন, সত্যি?

    সত্যি। তখন একাধিক মেয়ে গান গেয়ে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে খোরাসানী ম্যাডাম আর আগের হোস্টেল সুপারেকে জব্দ করার ঘটনাটা শান্তা আপাকে শোনাল। শান্তা আপা হতবাক হয়ে বসে থেকে বললেন, পৃথিবীর কত বড় বড় শিল্পী আছে, তারা সারা জীবন সাধনা করে গলার মাঝে এরকম কন্ট্রোল আনে

    আর আমাদের মিতুল এখানে বসে থেকে সেটা করতে পারে? কী আশ্চর্য!

    রেবেকা বলল, আসলেই আশ্চর্য আপী। মিতুলের জ্যোৎস্না রাতের গানটা শুনেন, সেটা সবচেয়ে ভালো।

    শান্তা আপা মিতুকে বললেন, পাও মিতুল।

    মিতুল আবার গাইতে শুরু করল, আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে বসন্তের এই মাতাল সমীরণে …

    সেই গান শুনে সবার মনে হতে লাগল সত্যিই বুঝি সবাই এই জ্যোৎস্নারাতে বনে চলে এসেছে। এই হোস্টেল, এই স্কুল, মানুষজন সবকিছু মিথ্যা, মিতুল যেটা বলছে সেটাই সত্যি। মিতুল গান গাইতে গাইতে কথা ভুলে যাচ্ছিল তখন শান্তা আপা তাকে সেটা ধরিয়ে দিতে লাগলেন।

    গান শেষ হবার পরও অনেকক্ষণ সবাই চুপ করে বসে রইল, ওদের মনে হতে লাগল মিতুল বুঝি সবাইকে যাদু করে ফেলেছে।

    গানের আসর শেষ হতে হতে মাঝ রাত হয়ে গেল, চাদটা যখন মাথার উপর উঠে গেছে বারান্দায় আর জ্যোৎস্নার আলো নেই তখন শান্তা আপা সে দিনের মতো আসর শেষ করলেন। কথা থাকল এখন থেকে প্রতি রাতে এরকম গানের আসর বসবে।

    মেয়েরা আরো একটা জিনিস আবিষ্কার করল, শান্তা আপাও খুব সুন্দর গান গাইতে পারেন। সবার শেষে শান্তা আপা দুটি গান গেয়ে শোনালেন আর সেটা শুনে মিতুল শান্তা আপাকে বলল, আপা।

    কী মিতুল?

    আপনি আমাকে গান শেখাবেন?

    শান্তা আপা খিল খিল করে হেসে বললেন, আমি তোমাকে কেমন করে শেখাব? আমি কী কিছু জানি? তোমাকে গান শেখাবে সত্যিকারের গানের ওস্তাদ।

    মিতুল ম্লান মুখে বলল, কিন্তু আপা, আমি ওস্তাদ কোথায় পাব?

    তোমাকে পেতে হবে কে বলেছে? তোমার জন্যে ওস্তাদ আমি খুঁজে বের করব। এই শহরে সবচেয়ে ভালো যে গানের ওস্তাদ আছে সে তোমাকে গান শেখীবে, তারপর শেখাবে যে দেশের মাঝে সবচেয়ে ভালো ওস্তাদ সে! বুঝেছ?

    মিতুল মাথা নাড়ল। শান্তা আপা বললেন, কেন তোমার জন্যে আমি সবচেয়ে ভালো ওস্তাদ খুঁজে বের করব জান?

    কেন আপা?

    কারণ তুমি যখন সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত গায়িকা হবে তখন যখন বিবিসি থেকে তোমার ইন্টারভিউ নেয়া হবে সেখানে সাংবাদিকরা তোমাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কেমন করে গান গাইতে শিখেছ, তখন তুমি আমার কথা বলবে! আর আমিও তখন বিখ্যাত হয়ে যাব।

    আশে পাশে যারা দাঁড়িয়েছিল তারা বলল, আমরা তাহলে কেমন করে বিখ্যাত হব আপা?

    নিতু হি হি করে হেসে বলল, আমরা একদিন মিতুলকে আচ্ছা করে পিটিয়ে দিই আপা, তাহলে বলতে পারব আমরা বিশ্ববিখ্যাত গায়িকাকে পিটিয়েছি।

    সবাই হো হো করে হেসে উঠল। শান্তা আপাও।

     

    শান্তা আপী নিজের ঘরে এসে দেখলেন তার ঘরের দরজায় একটা চিঠি রাখা আছে। সবাই মিলে যখন জ্যোৎস্নার আলোয় বসে গান গাইছিল তখন কেউ একজন এসে তার দরজায় এই চিঠিটা রেখে গেছে। শান্তা আপা চিন্তিত মুখে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন, আলো জ্বেলে খাম খুলে চিঠিটা বের করলেন, ভিতরে একটা সংক্ষিপ্ত চিঠি, খোরাসানী ম্যাডাম লিখেছে। চিঠি লিখে সে জানিয়েছে স্কুল বোর্ড থেকে তাকে দেয়া ক্ষমতার বলে এই স্কুলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শান্তা চৌধুরীকে বরখাস্ত করা হল। আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে তাকে স্কুল ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে।

    শান্তা আপা তার বিছানায় গিয়ে বসলেন, কয়দিন থেকেই তার মনের ভিতরে এরকম একটা সন্দেহে দানা বেঁধে উঠছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article দীপু নাম্বার টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }