Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নির্ঝর – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প30 Mins Read0

    দীওয়ান–ই–হাফিজ

    হাঁ, এয় সাকি , শরাব ভর্ লাও বোলাও পেয়ালী চালাও হর্‌দম্!
    প্রথম প্রেম-পথ সহজ-সুন্দর, শেষের দিক তা-র ঢালাও-কর্দম!

    কসম তার ভাই ভোরের বায় ভায় অলক-গুচ্ছের যে-বাস কান্তার,
    বহুত দিল্ খুন করলে কুন্তল কপোল-চুম্বী চপল ফাঁদদার।

    যদিই ক-ন তোর সাগ্নিক ওই পির মুসল্লায় কর শরাব-রঙ্গিন,
    পথেই রথ যার অচিন নয় তার কোথায় পথ-ঘাট খারাব সঙ্গিন

    আরাম সুখ মোর হারাম বিলকুল পথের মঞ্জিল পিয়ার মুল্‌কের,
    নকিব হরদম হাঁকায় হাম্‌দম্ – পথিক! দূরপথ গাঁঠারি তুল্ ফের!

    অন্ধকার রাত, ঊর্মি-সংঘাত, ঘূর্ণাবর্তও তুমুল গর্জে,
    বেলায় বাস যার বুঝবে ছাই তার পথের ক্লেশ মোর সমুন্দর যে!

    তামাম মোর কাম শুধুই বদনাম, নিজের দোষ ভাই নিজের দোষ সে,
    গোপন দূর ছাই রয় কি নাম তার রাজ-সভায় যার চর্চা জোর-সে।

    প্রসাদ চাস? বাস, গাফিল হোসনে হাফিজ হরদম হাজির-মজলিস!
    এ সব তঞ্চট ঝক্কি-ঝঞ্‌ঝট ছোড়্ দে, তারপর পিয়ার খোঁজ নিস।

    —————
    ছন্দসূত্র :–
    “আলাইয়্যা আইয়োহাস্ সাকি আদির্ কা-সা ওয়ানা বিল্‌হা!”
    হাঁ, এয়্ সাকি শরাব ভর্ লাও বোলাও পেয়ালী চালাও হরদম্।”

    গজল ২

    হে মোর সুন্দর! চাঁদের চাঁদমুখ তোমার রৌশন রূপ মেখেই,
    রূপের জৌলুস তোমার টোলদার চিবুক-গন্ডের কূপ থেকেই।

    ওষ্ঠে প্রাণ! হায়, দেখতে চাও তায় গোল-বদন ওই ঘোমটা-হীন,
    জানাও ফরমান জ্বলবে আর না নিববে জান্‌টার মোমটা ক্ষীণ!

    তোমার কেশপাশ আমার দিল্ বাস – জমবে জোট সেই এক জা-গায়, –
    আরজ এই ক্ষীণ মিটবে কোন দিন? আর না বিচ্ছেদ – দেক লাগায়!

    নার্গিস-অক্ষি! হরলে সব সুখ তোমার নয়নার অত্যাচার
    মস্ত্ চাউনির হস্তে তাই কই যাক সতীত্বও হত্যা ছার!

    খুলবে এইবার নয়ন-পাত তার বদ-নসিব মোর নিঁদ-আতুর,
    আজ যে প্যারির উজ্‌লি স্মিরতি-য় আনলে নির্ঝর ক্ষীণ আঁসুর!

    পাঠিয়ো ভোর বায় ফুল্ল ফুল তুল তোমার গণ্ডের ফুল-তোড়া!
    যদিই পাই তায় তোমার বোঁস্তার খোশবুদা খাক ধুল থোড়া!

    দে খবর দিল্-দার পিয়ায় সই বক্ষে আজ মোর জোর ব্যথা,
    মাথার দিব্যি রইল সই লো, জরুর কস তায় মোর কথা!

    জামশেদের দর্-বারের সাকি! বাড়ুক পরমাই মদ্য-পিয়ো!
    তোমার হস্তে এ-মদের ভাঁড় মোর পুরল নাই ভাই যদ্যপিও!

    ‘য়্যাজদ্’ মুল্‌কের বাসিন্দায় সব বলবে, বন্ধু ভোর-সমীর!
    ভরুক ময়দান লুটাক পায়-পায় অকৃতজ্ঞের খণ্ড শির!

    “বহুত দূর পথ বহুত বিচ্ছেদ স্মৃতির ভুল হায় হয়নি তায়,
    তাদের বাদশার গোলাম আজকেও তাদের খোশনাম কয় সদাই।”

    চলতে মোর পথ সামলো প্যারি, আঁচর, খাক আর খুন হতে;
    তোমার এশ্‌কের নিরাশ খুন-দিল্ লোহুয় পথ এ পূর্ণ যে!

    এয়্ শাহানশা্‌হ! ওয়াস্তে আল্লার শক্তি দাও এই, অহর্নিশ্-
    আশমানের ন্যায় চুম্বি অমনি তোমার খাস রং-মহল শীষ!

    আশিস চায় এই ‘হাফিজ’ হরদম, কও ‘আমিন’ সব খুব মনে –
    “লাল শিরীন ঠোঁট পিয়ার রোজ পাই, ভরাই লাখ লাখ চুম্বনে!”

    ——————–
    ছন্দসূত্র :–
    এয়্ ফরোগে মাহে হোসন আজ রূয়ে রোখ্‌শা নে শুমা
    আবরূয়ে খূবি আজ চা- হো জনখদা নে শুমা।

    গজল ৩

    হাত হতে মোর হৃদয় যায় দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান!
    আপশোশ! আমার গোপন সব ফসকে যে দেয় নিদয় প্রাণ।

    দশ দিনের এই দুন্‌য়া ভাই, স্বপ্ন-কুহক কল্পলোক;
    করতে ভালোই বন্ধুদের, বন্ধু, তোমার লক্ষ্য হোক!

    বও অনুখূল বায়, এ নাও ভগ্ন, মনেও শ্রান্তি, হায়!
    হয় তো দু-বার দেখব ফের সেই হারা মোর প্রাণ-প্রিয়ায়।

    শরাব-সভায় কুঞ্জে আজ বুলবুলি বাঃ বোল বিলায় –
    লাও প্রভাতের মদের ভাঁড়, মস্তানা সব জলদি আয়!

    হাজার লাখ হে মহান-প্রাণ, সালাম সালাম ধন্যবাদ!
    দরবেশ এ দীন একটি দিন প্রসাদ চায়, নাই অন্য সাধ।

    ‘দুই দুনিয়ার আরাম’ সব ব্যাখ্যা ভাই এই এক কথায়, –
    দোস্তে মধুর স্নিগ্ধ ভাষ, শত্রু যে – দাও বক্ষ তায়।

    সুনাম সুযশ লাভের পথ করলে হারাম , হে দুর্বোধ!
    মন্দ বোধ হয় কু-নাম আজ? বদলে দাও, বাস এ দূর পথ।

    জমশেদের এই মদের গ্লাস সিকান্দারের আয়না ভাই;
    দারার দেশের সকল হাল ওই হের বাঃ, ভায় না তায়?

    শির ঝোঁকা, নয় মোমের ন্যায় জ্বালবে – সে কি শরম কম? –
    ওই পিয়া যার – পরশ ঘায় কঠিন শিলা ও নরম মোম।

    বন্ধু দে সব বৈতালিক গায় যদি এই ফারসি-গীত
    সন্ন্যাসী পির ভাব-মোহিত নাচবে; এ-গান সার-নিহিত।

    ওই খাঁটি মদ – সুফির দল পাপের মা কয়? – আ দুত্তোর!
    আইবুড়ো সব ছুকরিদের ঠোঁট-চুমোরও মধুরতর!

    হাতখালি? বাস, আয়াস কর আয়েস করার, শেখ সুখেও;
    পরশ-পাথর মত্ততার ‘কারুন’ বানায় ভিক্ষুকেও।

    পর্‌মায়ু দেয় মুমুর্ষুরে ফারেস দেশের দিল্-পিয়ায়,
    এয়্ সাকি, এই খোশখবর জ্ঞান-বুড়োদের বলবি ভাই!

    খাম্‌খা হাফিজ দেয়নি গা-য় শরাব-রঙিন কুর্তি এই,
    আলখেলা পাক গায় হে শেখ! লাচার, সব এই ফুর্তিতেই!

    ———————
    ছন্দসূত্র :–
    “দিল্ নি রওদ যে দস্তম সাহিব দিলাঁ খোদা রা”
    হাত হতে মোর হৃদয় যায় দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান্ !

    গজল ৪

     মোর   পাত্র মদ্য-রোশনায়ে কর রৌশন এয়্ সাকি!
     গাও    বান্দা , “মোদের পুরবে সব আশ দুন্‌য়া নয় ফাঁকি!”
     মদ-    পাত্রে মোর আজ বিম্বিত ছবি প্রিয়ার চাঁদ মুখের,
     শোন    বঞ্চিত যত হরদমই মদ-টানার স্বাদ সুখের!
     ঝাউ    ছিপছিপে তন-নাঙ্গীদে ‘নাজ নখরা’ সব ফুরোয়,
     ক্ষীণ    দেবদারু-তনু মরালী পিয়ার যেই হয় অভ্যুদয়।
    সে যে    মৃত্যুঞ্জয়ী শাশ্বত চির-জাগ্রত প্রেম যার;
     অবি-    নশ্বর মম নাম তাই দোলে কাল-বুকে হেম-হার।
     মোর    “দিল্‌রুবা” পিয়ার আঁখিয়ার বড়ো মিঠি দিঠি আধ-ঘোর,
     তাই    চাউনির ওরই হাতে সঁপা মোর বাসনার বাগ-ডোর ।
     রোজ    কিয়ামতে ভাই, জিতবে না, - আহা, দুঃখে গাল খুঁটি!
     মোর    হারাম মদকে ভণ্ড শেখের হালাল দাল-রুটি।
     কভু    বন্ধুদের সে ফুলবাগে যদি যাও দখিন হাওয়া;
     মোর    কান্তারও কাছে এই কথাটুকু জরুর চাই যাওয়া;
     বলো    প্রিয়তম! স্মৃতি জোর করে ছি ছি ভোলা কি কখনও যায়?
     ওগো    আপনি সেদিনও আসিবে, আর না দেখিবে স্বপ্ন তায়!
      ওই    পাতলা ছুঁড়িরই প্রেম দাগ বুকে ‘লালা’ –ফুল-সম চিন্;
      মম    জালে ধরা দেবে মিলন-বিহগ – বাকি আর কতদিন?
      ওই    সব্‌জা দরিয়া আশমানের, আর চাঁদের নৌকা সেই,
      সব    ডুব গিয়া ভায়া ‘কওয়াম হাজি’ র মাল এ মদ গ্লাসেই!
     ফেল    অশ্রুবিন্দু – শস্য-কণিকা হাফিজ কাঁদ রে কাঁদ,
     ওরে    মিলন-পক্ষী হয়তো লক্ষ করবে তা হলে ফাঁদ!

    ———————–
    ছন্দসূত্র :–
    সা   কি ব-নুরে  বা-দা বর্-অফ্  রোজে জা-ম্ এমা
    মোর পাত্র মদ্য–রোশনায়ে কর রৌশন এয় সা – কি !

    গজল ৫

    কোথায় সুবোধ সংযমী, তার তুল্ এ-মাতাল অপাত্রে ছাই!
    তাদের ফথ আর আমার এ-পথ বহুত বহুত তফাত যে ভাই!

    ধরম শরম? চুলোয় সে যাক! প্রেম-শিরাজির প্রেমিক এ-জন,
    নীতির নীরস ঠোঁট চেপে শোন রবাব -বীণের ঝিঁঝিট-বেদন?

    মসজিদে গে শিখনু পরা ফেরেববাজির কুর্তি কালো;
    ভাই রে, আমার আতশ -পূজা শরাব-শিরীর স্ফূর্তি ভালো।

    মিলন-চুমুর শিরীন স্মৃতি আবছায়া তাও হয় না মনে!
    হায় কোথা সেই জাদুর মায়া, মান করে জল নয়না-কোণে?

    দোস্তের অরূপ রূপ-দরিয়ায় দুশমনে ছাই পায় না রতন,
    রবির শিখায় স্তিমিত প্রদীপ জ্বালতে সে ছাই খাম্‌খা যতন!

    সেবের মতন স-টোল চিবুক-কূপটি প্রিয়ার রাস্তাতে না?
    আশেক পথিক, সামলে চলিস! আস্তে! পড়েই যাস তাতে বা!

    সুরমা আঁখির অঞ্জন আমার, পিতম, তোমার চরণ-রেণু,
    এই মদিনা-মক্কা, হেথাই বাজবে আমার মরণ-বেণু!

    আশ্ কোরো না বন্ধু আমার, হাফিজ হতে চুম-ভরা ঘুম,
    শান্তি কী চিজ? আরাম কোথায়? কলজেতে মোর জ্বলছে আগুন।

    গজল ৬

    যদিই কান্তা শিরাজ সজ্‌নি ফেরত দেয় মোর চোরাই দিল্ ফের,
    সমরখন্দ আর বোখারায় দিই বদল তার লাল গালের তিল্‌টের!

    লে আও সাকি, শরাব শেষটুক! কোথাও নাই ভাই, বেহেশতেও সে,
    নহর , ‘রোকনা-আবাদ’ -তীর আর এমন ঈদগাহ, এদেশ সেও সে।

    বাঁচাও বন্ধু! নিলাজ চঞ্চল চটুল চুলবুল প্রিয়ার মুখচোখ,
    তুর্কি সৈন্যের ‘লুটের খাঞ্চা’র মতোই বিলকুল লুটলে সুখ-লোক!

    অপূর্ণই মোর এশ্‌ক্-গুলবাগ তাতেই মশগুল ভোমর চঞ্চল,
    হুর যে চায় না স-টোল লাল গাল, হরিণ চোখ, মুখ কোমল ঢলঢল।

    আগেই জানতাম, ব্যাকুল-দিন-দিন আকুল-যৌবন হাসিন ‘ইউসফ’ –
    প্রেমের টান তার নাশবে হরবে ‘জুলায়খা’র সব নারীর গৌরব।

    চলুক সেহলির শরাব-সংগীত, কালের কুঞ্জি নাই তলাশ তার,
    না-হক কসরত গ্রন্থি খুলবার রহস্যের এই রশি ফাঁসটার!

    নীতির গীত শোন পিতম চঞ্চল! শান্ত সুন্দর তারই ঠিক প্রাণ,
    জ্ঞানের বৃদ্ধের নীতির বশ যে, সৎ কোথায় যার প্রাণ-অধিক জ্ঞান।

    মন্দ কও? আহ্ তাতেই জান্ তর্ ! আবার গাল দাও হে মোর লক্ষ্মী;
    গাল তো নয় ও, মিষ্টি শরবত ঢালছে পান্নার শিরীন ঠোঁটটি!

    গজল-গীত নয়, মুক্তো গাঁথছিস, হাফিজ আয়, ফের মধুর তান ধর!
    তারার লাখ হার ছুড়বে বারবার অধীর আশমান শুনলে গান তোর।

    —————–
    ছন্দসূত্র :–
    আগন আঁ তুর কে শিরাজি বদসত আ-রদ দিলে মারা।
    যদিই কান্তা শিরাজ সজ্‌নি ফেরত দেয় মোর চোরাই দিল্ ফের।

    গজল ৭

    ত্যজি মসজিদ কাল মুর্শিদ মম আস্তানা নিল মদশালা,
    নেবে কোন পথ এবে পথ-রথ ওগো সুহৃদ সখী পথ-বালা!

    আমি মুসাফির যত শারাবির ওই খারাবির পথ মঞ্জিলে,
    সখীমাফ চাই, বিধি এই রায় ভালে লিখেছিল আমি জন্মিলে।

    ‘কাবা শরিফের’ পানে করি ফের মুখ কোন বলে আমি কও সখী,
    পির শারাবের পথ-মদরত যবে, আন-পথে যাবে শিষ্য কি?

    জ্ঞান বোঝে যদি কেন বাঁধি হৃদি পিয়া-কুন্তল-ফাঁদে সেধে সেধে,
    যত জ্ঞানী পির ওই জিঞ্জির লাগি দিওয়ানা হবে গো কেঁদে কেঁদে।

    মম ঠোঁটে ওগো বধূ ‘আয়েত’ -মধু যে ঢালে তব ও-মুখ ‘কোরআনে’,
    তাই সুধা আর সীধু ফেটে পড়ে শুধু কবিতাতে আর মোর গানে।

    মম অগ্নি-বর্ষী ‘আহা’-শ্বাস আর একা-রাতে-জাগা কাতরানি,
    তব মর্মর-মোড়া মর্মে কি দিল ব্যথা আঁকি কোনো রাত-রানি!

    মন- ময়ূরীর লাগি ‘বিরহ’-ভুজগী ফেঁসেছিল ভালো কেশ-জালে,
    কেন খুলে দিয়ে বেণি ‘বিচ্ছেদ’-ফণী ছেড়ে দিলে প্রিয়া শেষ-কালে!

    তব এলোচুলে বায়ু গেল বুলে মম আলো নিভে গেল আঁধিয়ারে,
    ওই কালোকেশে আমি ভালোবেসে শেষে দেশে দেশে ফিরি কাঁদিয়া রে!

    মোর বুক-ফাটা ‘উহু’-চিৎকার-বাণ চক্কর মারে নভ চিরে,
    দেখো হুশিয়ার মম প্রিয়তম, তির-বাজপাখি উড়ে তব শিরে!

    মোর জ্ঞানী পির আজ খারাবির পথে, এসো মোর সাথি পথ-বালা,
    ওই হাফিজের মতো আমাদেরও পথ প্রেম-শিরাজিরই মদশালা।

    গজল ৮

    বুক-ব্যথানো বেণুর বেদন বাজিয়েছিল কাল রাতে
    বনশিওয়ালা – আল্লাতালা রাখুন তারে আহ্লাদে!

    করলে আমায় ক্লান্ত এতই তার সে মুরজ মুরঝা সুর –
    বোধ হল মোর বিশ্ব-নিখিল কেবল কান্না-বেদনাতুর!

    পার্শ্বে ছিল ছুকরি সাকি ঠোঁট-কূপে যার ‘আব-হায়াত’
    মুখ আলো আর কেশ কালো যার খেলায় সদাই দিন ও রাত।

    বিহ্বল আমার তৃষ্ণা দেখে পাত্রে আরও ঢালল মদ,
    মদ-মদালস কইনু আমি চুম্বি সাকির পুণ্য পদ –

    “মুক্তি দিলে আমার ‘অহম’-দুঃখ থেকে আজ তুমি,
    মদ ঢেলে যেই করলে অধর কাচ-পেয়ালার নাচ-ভূমি।

    আল্লা তোমায় আগলে রাখুন আলাই-বালাই আপনি নে,
    সাকি! তোমার সর্বলোকে কল্যাণ হোক সব দিনে।”

    হাফিজ যখন আপন-হারা কোথায় বা তোর ‘কায়কাউস’,
    কায়কোবাদের কুল-মুলুক? এক তিল বরাবর তখত্‌তাউস।

    গজল ৯

    জাগো সাকি হামদরদি, জাম-বাটিতে দাও শরাব,
    চুলোয় যাক এই দুঃখ-ব্যথা, ধুলোয় ঢাকুক সব অভাব!

    ভর পিয়ালা হস্তে দে দোস্ত, মস্ত হয়ে বুঁদ সেই নেশায়
    দিই ফেলে এই শির হতে ওই সুনীল আকাশ-গাঁঠরিটায়!

    ভয় কী সখি? করবে নিন্দা শাস্ত্র-শকুন বন্ধুরা?
    বদনামে মোর পরোয়া থোড়াই! চালাও পানসি, দাও সুরা।

    নেশার দারু জরুরি ভাই, খোদ-দেমাকির নাশতে জাত,
    ঢালো শরাব, আত্ম ভোলাও, চেতন আমার হোক নিপাত!

    দহন-দারুণ দিল্ ছেপে মোর উঠছে যে শ্বাস বহ্নি-শিস,
    কতই কাঁচা শুষ্ক হৃদয় পুড়ছে তাতে অহর্নিশ!

    সব অজানা জানার মাঝে প্রেম-দেওয়ানা ফিরনু ভাই,
    দুনিয়া জুড়ে দেখনু ঢুঁড়ে দিল্-দরদি বন্ধু নাই।

    তারই তরে জান কাঁদে মোর, সেই জানি মোর দিল্-আরাম,
    করল যে মোর এই জীবনের সকল সোয়াদ-সুখ হারাম!

    গুলবাগে আর দেবদারুকে দেখতে কারুর রয় না সাধ,
    দেখলে প্রিয়ার সরল ছাঁদ আর চাঁদনি-সফেদ বদন-চাঁদ!

    মাটির ভাঁটির রস ছিল যা, সব পিয়েছিস, কীসের দুখ?
    খাও পিয়ো আর স্ফূর্তি চালাও, চালাও – মউজে দিন কাটুক।

    দিবানিশি পাস যে ব্যথা, ওরে হাফিজ, দু-দিন থাম!
    আসবে প্রিয়া দিল্-জানিয়া, পূর্ণ হবে মনস্কাম!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপুবের হাওয়া – কাজী নজরুল ইসলাম
    Next Article নতুন চাঁদ – কাজী নজরুল ইসলাম

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    ব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    গানের মালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    যুগবাণী – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মহুয়ার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }