অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ
রাবাংলার বুদ্ধ পার্কের সামনেই হলো ঘটনাটা৷ আরে তোরা উঠে আসছিলিস, আমি তখন অস্তগামী সূর্যের আলোয় সোনার রঙের বুদ্ধকে আরেকবার দেখছিলাম৷ কিছু বোঝার আগেই চোখে আলোটা পড়লো৷ এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি ডিএসএলআর-টা বাগিয়ে অকারণে পারমিশন না নিয়েই আমার ছবি তুলে যাচ্ছে৷ এ তো মহা মুশকিল! এখন থেকে কি বোরখা পরে রাস্তায় বেরোতে হবে নাকি?
ছেলেটাকে কি তুই দেখেছিস নয়নিকা ?
মেয়েদের গ্রুপটায় বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বিষয়টা নিয়ে৷
এরই মধ্যে রচনা একটু হিংসুটে স্বরে বললো, আমি তো একটা জিনিসই বুঝতে পারছি না, আমরা সকলে থাকতে নয়নিকার ছবি তুলতে যাবেই বা কেন? রচনা ওদের ইউনিভার্সিটির জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট-এর মধ্যে সব চেয়ে সুন্দরী মেয়ে৷ তাই কোনো ইয়ং ফটোগ্রাফার রচনার ছবি না তুলে শেষে কিনা নয়নিকার?
শ্যামলা রঙেই তো নয়নিকার অর্ধেক সৌন্দর্য হ্রাস পেয়েছে৷ ওই দুটো বাঙময় চোখ ছাড়া ওর মধ্যে কি এমন রূপের সন্ধান পেলো কে জানে?
রচনার ধারণা, সুন্দরী মানেই তাকে দুধে আলতা, বা মটর দানার মতো রঙের অধিকারিণী হতে হবে৷ শুধু রচনা কেন,হয়তো বেশির ভাগেরই ধারণা৷ তাহলে,ওদের ব্যাচের এত এত রূপসী থাকতে ওই সাধারণ চেহারার নয়নিকার ছবি কেউ কেন লুকিয়ে তুলবে!
অরুন্ধতী বেমক্কা বলে বসলো, দেখ হয়তো ফেসবুকে সোনার গয়নার পেজের হিরোইন বানাবে তোকে নিয়ে৷ হয়তো শ্যামলা মেয়ের মুখের সাথে ওই পেজের বাজার ভালো কাটবে৷ কালোর মধ্যে সোনালি রঙের জেল্লা৷ মেয়েদের এই আলোচনায় বিধস্ত লাগছে নয়নিকার৷
এরাই ওর কাছের বান্ধবী?
এদের সাথেই ও হোস্টেল থেকে টুরে এসেছে?
মুখটা নিচু করে নয়নিকা বললো, আমি তো মানুষটাকেই দেখি নি৷ সে খারাপ মানুষ না ভালো সেটাই তো জানি না৷ শুধু পিছন ফিরে চলে যাওয়ার সময় দেখলাম, একটা ব্লু সোয়েটার৷
এমনকী মাথায় টুপি ছিল বলে, আর কিছুই বুঝতে পারেনি নয়নিকা৷ তবে বান্ধবীদের এ হেন আলোচনায় নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করেছে৷ মনে হচ্ছে ওই দু-বার আলোর ঝলকানিটাতেও বোধহয় এতটা খারাপ লাগা ছিল না যতটা হচ্ছে এদের আলোচনায়!
নয়নিকা একটা খারাপ লাগা নিয়েই বান্ধবীদের সাথে হোটেলে ফিরলো৷ কিন্তু সন্ধ্যের চায়ের আসরে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না নয়নিকা৷
ওই আনমনা অবস্থায় চোখে লাগা ঝলকানিটা আরেকবার মনে করল নয়নিকার৷
অনেকক্ষণ ধরে হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে মুখটা শুকনো হয়ে গেছে ওর৷ ব্যাগটা খুলে ক্রিমটা বের করতে গিয়েই দেখতে পেল ছোট্ট চিরকুটটা৷ ব্যাগে এই চিরকুটটা কে দিলো? ব্যাগের চেনটা একটু খোলা ছিল৷ তারমধ্যেই কেউ রেখে গেছে এটা৷ ভয়ে ভয়েই বান্ধবীদের চোখ এড়িয়ে ছোট্ট কাগজটা খুলে ফেললো নয়নিকা৷
এক্সট্রিমলি সরি ম্যাম৷ এভাবে লুকিয়ে আপনার ছবি তোলা অন্যায়৷ তাই এভাবে পারমিশন নিলাম৷ নিচে একটা দশ ডিজিটের নাম্বারের শেষ অক্ষরটা জিরো না নাইন সেটা বোঝা যাচ্ছে না৷ সম্ভবত তাড়াহুড়ো করে লিখতে গিয়ে শূন্য থেকে একটা ফ্যাকরা বেরিয়ে এসেছে৷ অথবা লোকটা এমন ভাবেই অপরিষ্কার নয় লেখে৷
ধুর! মরুক গে এই নিয়ে কিছুতেই ভাববে না আর নয়নিকা৷ তবুও রচনার মতো সুন্দরীর কপালে যখন হাজার হাজার প্রেমপত্র জোটে তখন শ্যামলা নয়নিকার ভাগ্যে তেমনি হাতে গোনা৷ তার মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে দেখলেই প্রেমে পড়া পার্টি৷ তাই চিরকুটটা ফেলতে গিয়েও ফেললো না ও৷
মুচকি হেসে রেখে দিল হ্যান্ড ব্যাগে৷
পরেরদিন খুব ভোরে উঠেই চলে যাবে রাবাংলার আরেকটু ভিতরের ছোট্ট গ্রামে৷ নয়নিকা অনেক ভেবে চিন্তে এখানের ঝকঝকে আকাশের সাথে পাল্লা দিয়েই ঘন আকাশি পোশাকটা বাছলো কালকের জন্য৷ নিজের গায়ের রঙের দিকে লক্ষ্য রেখেই খুব উগ্র রংগুলোকেও এভয়েড করে৷ আর সেই জন্যই নয়নিকা খুব সহজেই স্নিগ্ধতা নিয়ে ধরা দেয় অপরিচিতের লেন্স-এ৷
নয়নিকার কেন যে মনে হচ্ছে,ওর ছবি ক্যামেরাবন্দি করা মানুষটা কোনো খারাপ লোক নয়৷ হোটেল থেকে বেরোনোর সময়েই নয়নিকা খেয়াল করলো রচনা, অরুন্ধতীরা যেন একটু এড়িয়ে চলছে ওকে৷ রচনা বললো, কি রে আজ আবার কোথায় আনমনে দাঁড়িয়ে থাকবি!… মানুষ আকাশপরি ভেবে ছবি তুলে নিয়ে যাবে?
নয়নিকার অসহ্য লাগছে বন্ধুদের এমন ব্যবহার৷ কথা না বাড়িয়ে রাবাংলার সবুজের হাতছানিতে দূরের দিকে পা বাড়ালো৷
অরুন্ধতী বললো, এই নয়ন কোথায় যাচ্ছিস ওইদিকে?
আমরা কিন্তু আজ কোনো গ্রামে যাব না৷ হস্তশিল্পের মেলা চলছে, ওখানে চললাম৷ পরিচিত বান্ধবীদের প্রতি তীব্র অভিমানেই নয়নিকা বললো, আমি একাই যাবো৷
এমনিতেও নয়নিকা বড্ড চাপা স্বভাবের৷ কখনো পরিষ্কার করে নিজের পছন্দ অপছন্দ বলতে পারে না৷ এমনকী ওর বাবা মাও মেয়ের মুখ দেখে বুঝতে পারে না, মেয়ের মনের মধ্যে এখন কি চলছে৷ মাঝে মাঝে মা রেগে গিয়ে বলে,এর থেকে তো দুটো চিৎকার করে কথা বলাও ভালো৷ কিন্তু নয়নের অভিমান হলেই ও বড্ড নিশ্চুপ৷ কিছুতেই বোঝা যায় না কি চলছে ওর মনের মধ্যে!
সরু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে সাবধানে চলছে ও৷ মনের মধ্যে একটা অব্যক্ত কান্না দলা পাকাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরেই৷ আর মাত্র দেড় দিন পরেই ফিরে যেতে হবে কলকাতায়৷ আবার সেই বাবার শাসন৷ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে…
আবার মায়ের সাবধান বাণী, রোদে ঘুরিস না এই ক-দিন৷ একটু পার্লারে ঘুরে আসিস৷ সেই নয়নিকার ছবি নিয়ে বাবার স্টুডিওতে যাওয়া৷ দেখুন তো,ছবিটা আরেকটু লাইট করে দিয়ে, গায়ের রংটা আরেকটু ফর্সা করে দেওয়া যায় কি না?
এই লোক ঠকানো ব্যাপারটা একদম হজম হয় না ওর৷ বলতে গেলেই মা বলে, আরে ওরা তো তোকে দেখবে নাকি?
এটাই তো বোঝাতে পারে না নয়নিকা ..ছবিতে ফর্সা দেখে এসে শ্যামলা নয়নিকার দিকে ওরা কেমন একটা বিদ্রুপের হাসি নিয়ে তাকায়৷ হতে পারে নয়নের চোখের ভুল৷ অথবা ওর ক্ষত মনের ভাবনার স্বরূপ৷
এক্সকিউজ মি!
পিছন থেকে একটা অপরিচিত গলা…
মরেছে… এমনিতেই রাগের মাথায় নয়ন কোথায় যাচ্ছিল সেটা নিজেই জানে না৷ পিছন থেকে কি কেউ পথনির্দেশ জানতে চাইবে নাকি?
রাস্তায় ঘড়ি পরা লোক দেখলেই অনেকেরই অকারণ সময় জানতে ইচ্ছে করে৷ তেমনিই এই নিরিবিলি পাহাড়ি রাস্তায় একমাত্র মানুষ দেখে ওকেই হয়তো গাইড করবে ভাবছে পিছনের রেড ব্ল্যাক সোয়েটার ভদ্রলোক৷
পিছন ফিরে থমকে দাঁড়িয়েছে নয়ন৷ ভদ্রলোক বললে একটু গম্ভীর লাগবে,এর বয়েস বড়জোর আঠাশ-ঊনত্রিশ৷ কিন্তু মুখে একটা সবজান্তা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ যেন মনে হচ্ছে, স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ তার জ্ঞানের ভান্ডার নিয়ে নয়নের সামনে হাজির হয়েছে৷ এমন জ্ঞানী লোককে নয়ন ইতিহাসের পাতায় সম্মান করলেও সামনে পেলে এড়িয়ে যায়৷ কারণ অযাচিত জ্ঞান দিয়ে এরা নয়নের ছোট্ট মাথায় যেটুকু ছিল সেটুকুও নিঃশেষ করে দেয়৷
ছেলেটি হাঁপাতে হাঁপাতে কয়েকটা ধাপ নেমে এসে বললো, আরে আপনি তো মহা কালা৷ কখন থেকে ডেকে চলেছি৷ শুনতেই পান না৷ কোন রাজ্যে বিচরণ করেন কে জানে?
বিরক্ত লাগছে নয়নিকার৷
অপরিচিত ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলার নূন্যতম সহবত শেখেনি লোকটা৷
নয়ন নিজেকে সামলে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, কেন? পলাশীর যুদ্ধ লেগেছে? নাকি ঋত্বিক রোশন আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে? হঠাৎ অকারণে আপনি আমাকে ডাকছেনই বা কেন?
ছেলেটি বললো, আরে আপনি তো আচ্ছা গোঁয়ার পাবলিক! একে তো উপকারীর উপকার স্বীকার করেন না, উল্টে তাকেই মেজাজ দেখান৷
নয়নের এবার বিস্ময়ের পালা! এই মানুষটা ঠিক কি ভাবে ওর বিশাল উপকার করলো সেটাই তো বুঝতে পারছে না ও!
ছেলেটি বললো, শুধু আকাশের আর সবুজের সৌন্দর্য দেখলেই চলে না৷ রাস্তার শেষটা দেখে ফিরতে হয় বুঝলেন? সামনে দেখুন!
এতক্ষনে নয়ন যে পথে যাচ্ছিল সেদিকে তাকালো৷
চমকে উঠলো৷ একটু টাল খেয়ে গেল মাথাটা৷ সামনে আর কোনো রাস্তাই নেই৷ শুধুই বড়ো একটা খাদ৷ খাদের অন্য প্রান্তে আবার গ্রাম৷ কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর রাস্তা বোধহয় অন্য কোনো ঘুরপথে৷ আর গুনে গুনে ঠিক পাঁচ পা হাঁটলেই নয়নিকা নামটা হয়তো মুছে যেত ওদের ২০১৮-র জিওগ্রাফির ব্যাচ থেকে৷
সামনে এত বড়ো বিপদ দেখলে অনেক সাহসী মানুষেরও নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে যায়৷ সেটা ভেবেই হয়তো ছেলেটি ধরেছিল নয়নের হাতটা৷ এখুনি কি ঘটে যাচ্ছিলোর ভাবনাতেই ভীত হয়ে নয়ন খেয়ালই করেনি ওর বাম হাত তখন একটা অপরিচিত স্পর্শে নিরাপদে রয়েছে৷
চমকে উঠে হাতটা সরাতে গিয়েই দেখলো, একজোড়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে বিদ্ধ হচ্ছে ও৷ ছেলেটি অপলক তাকিয়ে আছে নয়নিকার দিকে৷ একটা হালকা অস্বস্তি ছুঁয়ে যাচ্ছিল নিশ্চুপ পাহাড়ি পরিবেশে৷
নয়নিকা সামলে নিয়ে বললো, অনেক ধন্যবাদ৷
ছেলেটি বললো, আমি প্লাবন৷ প্লাবন রায়৷ নেহাতই বেকার মানুষ৷ ঘুরে বেড়ানোটাই পেশা বলতে পারেন৷ তবে এই সবুজ আর নীলে রাঙানো প্রকৃতির বুকে ‘ধন্যবাদ’ কথাটা যেন একঝাঁক বিষাক্ত ধোঁয়ার মতো৷ কলকাতার পরিবেশে খুব সাবলীল৷ কিন্তু এখানে?
নয়নিকা আলতো হেসে বললো, তাহলে কি বলবো?
প্লাবন দূরের দিকে তাকিয়ে, বাতাসে কথাটা ভাসিয়ে দিলো… বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো হাতটাকে ফেরত দিতে নেই৷
বলুন, আর কতদিন আছেন রাবাংলায়!
মাত্র দেড় দিন৷ পরশু বিকালে ট্রেন ধরবো নিউজলপাইগুড়ি থেকে৷
তারপর আবার কংক্রিটের পাহাড় কলকাতা৷
প্লাবন বলল,কলকাতার বাতাসেও কিন্তু মুগ্ধতা আছে, চাওয়া পাওয়া আছে৷ শুধু দৃষ্টি পথকে রোম্যান্টিক করে তুলতে পারলেই আপনি বারোমাস আনন্দে৷
অদ্ভুত একটা পজেটিভ এনার্জি নিয়ে আসা মানুষ হলো প্লাবন৷ একটু বেশি কথা বলে ঠিকই কিন্তু প্রতিটা কথায় লুকিয়ে আছে অনেকটা মুক্ত বাতাস৷
ওপরে উঠতে উঠতেই আলটপকা প্লাবন বললো,আচ্ছা ম্যাডাম , আপনার বাবা মা কি আপনার এই অসাধারণ চোখ দুটোর দিকে তাকিয়েই নাম রেখেছিলেন নয়নিকা?
সামনাসামনি খুব বেশি রূপের প্রশংসা শোনেনি ও৷ তাই লজ্জায় মুখটা নিচু করে বললো, আপনি কি কোনো বন্যার বছর জন্মেছিলেন?
প্লাবন জোরে জোরে হেসে বললো, না না ঠিক সেটা নয়৷ আসলে আমি স্রোতহীন নদীকেও ভাসাতে পারবো বলেই কনফিডেন্টলি আমার নাম রাখা হয়েছে প্লাবন৷
দুজনেই হেসে উঠলো একসাথে৷ নয়নিকা একবারও জিজ্ঞেস করেনি প্লাবনের বাড়ির অ্যাড্রেস৷ অথচ প্লাবন নয়নিকার বায়োগ্রাফি লিখবে বলে পণ করে ওর বায়োডাটা জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে৷
খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করেই চলছে৷ তবে প্রশ্নের ভঙ্গিটা এমন, যেন গল্প করছে৷ গল্পের স্রোতেই ভাসতে ভাসতে নয়নিকার মতো চাপা স্বভাবের মেয়েও দুঃখ কষ্ট, পছন্দ অপছন্দগুলো বলে ফেলছে টুক করে৷ বলে ফেলার পরে মনে হচ্ছে না বলাই ভালো ছিলো৷ কিন্তু র্যাপিড ফায়ারের মতোই হুড়মুড় করে জিভের ডগায় চলে আসছে নয়নের ব্যক্তিগত জীবন৷
ফেরার পথে সরু পাহাড়ি রাস্তায় বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছে দুজনের কড়ি আঙুল৷ কড়ি আঙুলের নামে বদনাম আছে৷ সে নাকি শুধুই আড়ি ঘটায়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে দুটো কড়ি আঙুলের ছোঁয়ায় হালকা উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে দুজনের মনে৷
প্লাবন বললো, আপনি বিকেলের দিকে কি একাই বেরোবেন? নাকি বান্ধবীরা সঙ্গে থাকবে?
খুব ইচ্ছে করছে নয়নের প্লাবনের সাথেই রাবাংলার বাকি দিনগুলো কাটাতে৷ কিন্তু এই মূহূর্তে যদি নতুন সম্পর্কের টানে ভেসে যায় তাহলে বিপদটা ওর৷ বাড়ি থেকে মোটামুটি বিয়ের সব প্রায় ফাইনাল করে ফেলেছে৷ না, নয়নিকার বিশেষ মতামতের প্রয়োজন নেই৷ বাবার কথাই এক্ষেত্রে শেষ৷ এমনকী ঠাকুমাও বাবাকে একটু সমঝে চলে৷ তাছাড়া লাভ ম্যারেজে ওদের পরিবারের কারোর মিলন হয়নি৷ গুরুজনদের হস্তক্ষেপে সেটা মাঝপথেই থেমে গেছে৷
ওর বড়ো পিসির মেয়ের তিনবছরের প্রেমের পরিণতি স্বরূপ একটা প্রায় বছর দশেকের বড়ো ছেলের সাথে হঠাৎ করেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্র্যাজুয়েশনের মাঝ পথে৷ নয়নিকা প্রেম করেনি বলেই এম. এস. সি.-র ফাইনাল পর্যন্ত গেছে৷
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতেই হোটেলের মাথাটা দেখতে পেলো নয়নিকা৷ পাশে তাকিয়ে দেখল প্লাবন তখনও একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে৷
ওর উত্তরের আশায়৷
একটু কঠিন স্বরেই নয়ন বললো, আমি রাস্তার পরিচয় রাস্তাতেই শেষ করতে পছন্দ করি৷
প্লাবনের আহত চোখের দৃষ্টি ক্রমাগত আঘাত করে চলেছে নয়নকে৷ কৃতজ্ঞতা বোধ থাকলেও বোধহয় এমন বলা যায় না৷ নয়নিকা বললো, আমি বান্ধবীদের সাথে বেরোব বিকালে৷
একবারও পিছনের দিকে না তাকিয়েই ঢুকে পড়ল হোটেলের রুমে৷ তবুও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে কেউ একজন ওর তাকানোর অপেক্ষায় এখনো যেন দাঁড়িয়ে আছে৷ কিছুতেই দুর্বল হলে চলবে না নয়নিকার৷ ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই যেন সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে ওর৷ এই মানসিক দ্বন্দ্বকে নিয়েই বোধহয় কবিরা তাদের কাব্যে প্রথম দর্শনে প্রেম বলে অনেক লাইন লিখে ফেলেছেন৷
ফোনে বাবার নাম উঠছে৷ বেড়াতে এসেও একটুও শান্তি নেই৷ দিনে চারবার বাবা, তিনবার মা ফোন করেই চলেছে৷ দমদমের ছেলের বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল৷ ওরা সোমবার দেখতে আসছে রে৷ বেশি রোদে রোদে ঘুরিস না৷
উফ, দমটা বন্ধ হয়ে আসতে চায় নয়নের৷ এত পরাধীনতার বেড়া জালে আবদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার নাম কি বাঁচা? প্রশ্নগুলো গুমরে মরছে৷
পাঁচ জন বান্ধবীর এখনও ফেরার নাম নেই৷ রিক্তা বেড়াতে এসেও গল্পের বইয়ে মনোনিবেশ করে৷ ও হোটেলের বাইরেই বেরোয় নি৷
ধুর বাবা! তখন প্লাবনকে বললেই হত, যে বিকেল চারটের দিকে একবার আসতে৷ একসাথে একদিন ঘুরলে কি প্রেম হয়ে যায়?
কি সব আদি জামানার ভাবনার মধ্যেই রয়ে গেছে নয়নিকা! এখন গোটা বিকেল ভুলপথে গোলকধাঁধার মতো ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর কি বা করার আছে নয়নের!
নামচি বাজারের দিকেই ঘুরবে বিকেলটা৷ শেয়ারের গাড়ি পেলে মন্দ হয় না৷ ওর সমস্ত স্বাধীনতার উড়ন্ত পতাকার দড়িটা সব সময় থাকে বাবার হাতে৷ বাবা টান দিলেই স্বাধীনতা পরিবর্তিত হয়ে যায় বিপরীত শব্দে৷
তাই উড়তে গেলেও ডানা ঝাপটানোর মতোই লাগে নয়নের৷
এখানে সূর্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পছন্দ করে৷ তাই চারটে বাজতে না বাজতেই বিরহী প্রিয়ার কাছে যাবে বলেই প্রখরতা কমাতে শুরু করেছে৷ রচনা হাতে গুচ্ছের শপিং ব্যাগ নিয়ে হোটেলে ঢুকলো৷ নয়নিকা আলতো করে জিজ্ঞেস করলো, তোরা কি আর বেরোবি?
উত্তরটা যে না আসবে সে ব্যাপারে ও নিশ্চিত ছিলই৷
হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে উঁচু নিচু রাস্তায় পা দিতেই পাশ থেকে স্বল্প পরিচিত স্বরে কেউ বলে উঠলো, জানতাম একাই বেরোবেন৷ সকলের সঙ্গ সকলের জন্য নয়৷
নয়নিকার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ও মুখে না বললেও প্লাবনকে দেখতে পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছে৷
কথাটাতে গুরুত্ব না দিয়ে নয়ন বললো, ফ্যামেলি নিয়ে বেড়াতে আসেননি? একাই এসেছেন বুঝি?
একদম একা৷ তবে এবারেরটা ঠিক বেড়ানো নয়, একটা কাজও ছিল৷ ওই রথ দেখা কলা বেচা দুই আরকি!
বাড়িতে স্ত্রীকে রেখে এলেন যে, তো তিনি রাগ করেন নি?
না না রাগ করবেন কেন?
স্ত্রী মানেই কি মুখরা, ঝগরুটে?
কখনো কখনো তো মেয়েরা অনেক চেষ্টা করেও নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতেও নারাজ থাকে৷ সকলে কি আর মুখরা হয়?
তবে মাঝে মাঝে মুখরা বউকে বেশ ভালোই লাগে৷
বুকের মধ্যে অজানা ব্যথার চিনচিনটা হওয়ার সঠিক কারণটা হয়তো বুঝতেই পারছে না নয়ন৷ প্লাবন বিবাহিত জেনে ওর রিয়াক্ট করার কি আছে?
পরক্ষণেই দুম করে বলে বসলো, আপনার বউ যদি জানতে পারে আপনি আমার সাথে ঘুরছেন, তখন?
প্লাবন হেসে উত্তর দিলো, কি আর হবে? আমি না হয় বলবো, পেলিং-এ এসে একটা আকাশপরির সাথে দেখা হয় গিয়েছিলো! পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্লাবন৷ কিন্তু এর সেই ভালোলাগাটা ছুঁয়ে যাচ্ছে না নয়নের মনকে৷ বরং খারাপ লাগা এসে জড়ো হচ্ছে ওর মনে৷
অন্যের স্বামীর সাথে এভাবে …
আচ্ছা প্লাবন বাবু, আপনি পেশায় কি?
প্লাবন বললো, ধুরধুর বাবু বসালেই বয়সটা নিমেষে সেই বঙ্কিমচন্দ্রের আমলে চলে যায়৷
ওটা বাদ দিয়ে শুধু প্লাবন করা যায় কিনা ভাবলে ভালো হত৷
তবে বন্ধু হিসাবে বেশ প্রাণবন্ত মানুষ প্লাবন৷ তাছাড়া ও কোনো খারাপ কথাও তো বলেনি এখনো পর্যন্ত৷ ওকে নিয়ে যত ভাবনা সেগুলো তো একান্তভাবেই নয়নের৷
ওরই বারবার মনে হচ্ছে প্লাবন যেন কিছু বলতে চায় ওকে৷
পাহাড়ের কোলে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে উঠলো৷ দুজনেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দেখলো সন্ধ্যে নামাটা৷
প্লাবন বললো, আমি কালই কলকাতা ফিরে যাচ্ছি৷ আপনি তো আর কয়েকঘন্টা বেশি পাচ্ছেন পাহাড়কে৷ এই বাড়তি সময়টা আরেকটু আদর করে কাছে ডেকে নেবেন এদের৷ একরাশ বিষণ্ণতা জড়িয়ে ধরছে নয়নকে৷ কেন যে এই মনখারাপ? কে জানে?
ফেরার পথে চিকেন মোমো খাওয়ার সময় প্লাবন বলে উঠলো, আস্তে… স্যুপটা ভীষণ গরম৷ জিভ পুড়ে যাবে কিন্তু৷
এই আলতো যত্নটা পেয়েই ভালো লাগায় ভরে উঠলো নয়নের মন৷ স্বল্প পরিচিতকে যে এতটা কেয়ার করতে পারে, সে নিজের পরিবারকে তো… ভাবনার জাল ছিন্ন হলো প্লাবনের কথায়৷
ছোটোবেলায় মা মরা ছেলেরা ভালোবাসার কাঙাল হয়৷ তাই না নয়নিকা? কেউ একটু মিষ্টি মুখে কথা বললেই আপন করে নেয় তাকে৷
নয়ন শুনেছে মাত্র ছয় বছরে মা মারা গিয়েছিল প্লাবনের৷ বাবার কাছেই মানুষ৷
যার যার গন্তব্যে ফেরার সময় হয়ে গেছে৷
ভালোই হলো, প্লাবন বিবাহিত জেনে ওর মনের সুপ্ত আশাটা ভ্রূণেই মারা গেল৷ নাহলে হয়তো বাড়ি গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলতেই পারতো না, বাবা আমি তোমার পছন্দের নয় আমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে চাই৷
প্লাবন বললো, তবে ম্যাডাম একটা কথা… আপনার সামনেই বিয়ে৷ আমার কিন্তু নিমন্ত্রণ চাই..ই৷
ধীরে ধীরে কুয়াশা ঘেরা রাস্তায় মিলিয়ে গেল প্লাবন৷ হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলো নয়নিকা৷
ফোনে লোড করে নিয়েছে প্লাবনের নাম্বার৷ বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে হবে বলে নিজেই যেচে নাম্বার দিয়েছে প্লাবন৷
পরের দিন আর হোটেল থেকেই বেরোতে ইচ্ছে করলো না নয়নের৷ ধুর গোটা রাবাংলাটা বড্ড নিশ্চুপ হয়ে গেছে একজনের অনুপস্থিতিতে৷
বাড়ি ফিরে এসেছে৷
হোস্টেল থেকে গোছগাছ করে পার্মানেন্টলি বাড়ি৷ পরীক্ষার পরেও হোস্টেলে থাকার কারণটাই ছিল,সবাই মিলে একটা টুর৷
এখন মনে হচ্ছে না গেলেই হতো৷ ধুর…ফেরার পর থেকেই মনের মধ্যে নানারকম অনুভূতির আনাগোনা শুরু হয়েছে নয়নের৷
এদিকে বাড়িতে বেশ হইচই চলছে৷ পাত্রপক্ষের নাকি ওই এডিট করা ছবি দেখে খুব পছন্দ হয়েছে নয়নিকাকে৷ যদিও নয়ন ধরেই রেখেছে, সামনে ওকে দেখে একই ভাবে ওরা বলবে, আপনাদের মেয়ের গায়ের রংটা কিন্তু চাপা৷ ছবিতে বোঝা যাচ্ছিল না৷ মা বিনয়ী হয়ে বলবে, পড়াশোনার চাপ, রোদে ঘোরে.. বিয়ের পর যত্নে থাকলে ও রং খুলতে সময় নেবে না৷
তারা থালা থালা মিষ্টি খেয়ে, বাড়ি গিয়ে জানাবো বলে, আর ফোন করবে না৷
তবে এবার নয়ন ঠিক করেই নিয়েছে, নয়ন পরিষ্কার বলবে… যে ছবিটা কম্পিউটারের ক্যারামতি৷
যদিও তারপরে বাবা মায়ের কাছে চূড়ান্ত অপমান করবে ,তবুও৷
মায়ের আনা হলুদটা না মেখেই স্নান সেরে নিল নয়ন৷
বিকেলে মায়ের পছন্দের লাল শাড়িটা সরিয়ে রেখে হালকা সবুজে জড়িয়ে নিলো নিজেকে৷
পাত্রের সামনে সঙের মতো বসে থাকাটা বড্ড অপমানের৷
চায়ের ট্রে হাতে ঘরে ঢুকতেই ছলকে উঠলো চা-টা৷
ও কি ঠিক দেখছে?
সত্যিই সাদা টি-শার্ট পরে ওটা কি প্লাবন?
কিন্তু ও আজ এখানে?
মা পরিচয় করিয়ে দিল, এই হচ্ছে আমার মেয়ে নয়নিকা৷ জিওগ্রাফি নিয়ে পড়ছিল৷
এ হলো প্লাবন৷ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার৷
চোখের সামনে সব ধোঁয়াশা হয়ে যাচ্ছে৷
প্লাবন বললো, ম্যাডাম … সাবধানে৷ গরম চা-টা গায়ে পরে যাবে যে৷ একটু আস্তে করে বললো, অসাবধানে চলার অভ্যাসটা কি ছোটো থেকেই৷
নয়নিকা কটমট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে৷
প্লাবনের বাবা আর বড়ো পিসি বিভিন্ন আলোচনায় ব্যস্ত৷
মিথ্যে পরিচয় দেওয়াটা কি জরুরি ছিল?
কোনটা মিথ্যে ম্যাডাম?
আপনি বিবাহিত বলেছিলেন যে৷
না ম্যাডাম আপনার বোঝার ভুল, আমি শুধু বলেছিলাম… মুখরা স্ত্রীও মন্দ লাগে না৷ আপনি ধরেই নিলেন, আমি বিবাহিত!
নয়নিকা বললো, ভুলটা ভাঙাতে পারতেন!
প্লাবন হাসি মুখে বললো, কিছু ভুল থাক না, তবেই তো পাগলামি জমে বেশি৷
আপনি কি করে জানলেন আমরা রাবাংলা যাচ্ছি? পিছু নিয়েছিলেন?
আমতা আমতা করে প্লাবন বললো, এতে আমার কোনো দোষ নেই৷ আপনার নিজের বাবা আপনাকে বিশ্বাস করে না৷ তাই আমাকে আপনার হোটেলের অ্যাড্রেস, আপনার ছবি দিয়ে বলেছিলেন, পারলে তুমিও ঘুরে আসতে পারো প্লাবন৷ মেয়েটা খুব আনমনা…
আমিও দুটো ব্যতিক্রমী চোখের টানে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তৎকালে টিকিট কেটে চললাম রাবাংলা৷
নয়নিকা বললো, গিয়ে কি দেখলেন?
কি আর দেখবো, আপনি একজন বিবাহিত মানুষের প্রেমে পড়েছেন!
লজ্জায় মাথা নিচু করলো নয়নিকা৷ বাবা বোধহয় ঠিকই করেছিল,প্লাবনকে ওখানে পাঠিয়ে৷
আস্তে আস্তে ফিসফিস করে প্লাবন বললো, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷
হঠাৎ ‘তুমিতে’ নয়নের গালে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া এসে ভিড় জমালো৷
বিয়ের ডেটটা ফাইনাল হয়ে গেছে ওদের৷
ফেরার সময় প্লাবন একটা সুন্দর অ্যালবাম গিফট করে গেছে ওকে৷ এখনো দেখার সময় পায়নি নয়ন৷ সন্ধ্যেবেলা অ্যালবাম খুলতেই চোখে পড়লো, ওর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি৷ পিছনে বিশাল বুদ্ধমূর্তিটাও রয়েছে৷
নিজের ছবি এমন ভাবে যায় প্রথম দেখলো নয়ন৷
অনেক যত্ন করে কেউ তুলেছে এগুলো৷
অনেক খুঁজে সেই চিরকুটটা বের করলো নয়ন৷ নাম্বারটা ডায়াল করলো… শেষেরটা নয় দিয়েই করলো৷ সেভ করা আছে ফোনে… প্লাবন রায়৷
ইস… একবারও আগে দেখেনি নয়নিকা৷ ফোনটা ধরেই প্লাবন বললো, বলুন ম্যাডাম … হঠাৎ ফটোগ্রাফারের খোঁজ কেন? বিয়েতে ছবি তুলতে হবে বুঝি?
নয়নিকা বললো, না স্যার বিয়েতে নয়, হানিমুনের ছবি তুলতে হবে৷ পারবেন কি?
রেটটা একটু বেশি নেবো…মানে …
ইস, এই ছেলের মুখে কিছুই আটকাবে না জানে নয়নিকা৷
প্লাবন বললো, বলেছিলাম না মৈত্র বাড়ির প্রথম মেম্বার হবে তুমি, যে প্রেম করেই বিয়ে করবে৷
আশ্চর্য! এটা আবার তুমি কখন বললে? নয়নের গলায় কপট রাগ৷
প্লাবন বললো, আরে আগে বলিনি তো কি হয়েছে, এখন বললাম৷
এবার শোনো হানিমুনের ছবিতে তোমার …
তুমি থামো বদমাশ…
বলেই ফোনটা কেটে দিয়েছে নয়নিকা৷
হঠাৎ মনে হলো, ভাগ্যিস ও শ্যামলা হয়েছিল৷ ভাগ্যিস ওকে আগে এই রঙের জন্য আরো কয়েকজন পাত্র ক্যানসেল করেছিল৷
হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ ঢুকলো…
ভাগ্যিস…তোমাকে আমি ওই পাহাড়ের কোলে দেখেছিলাম নয়নিকা৷