অসমাপ্ত ফোন নম্বর
দিনের পর দিন এই প্রেমপত্র পাওয়াটা আর জাস্ট নিতে পারছে না রোহিত৷ যেদিন থেকে এই অফিসে জয়েন করেছে তার ঠিক দিন দশেক পর থেকে রঙিন খামে ভরে কেউ তার ডেস্কে চিঠি রেখে যায়৷ কিন্তু কে রেখে যায় সেটাই তো গবেষণার বিষয়! এই অফিসে ওদের ডিপার্টমেন্টে এমন কোনো ইয়ং মেয়ে নেই যে এনগেজড নয়৷ তাহলে রোহিতের ডেস্কের এই বোম্ব ব্লাস্ট করা হুমকিগুলোকে কে রেখে যায়, কেন রেখে যায় কে জানে?
এমনিতেই রোহিত খুব সাদামাটা ছেলে৷ পাড়ার বিথীকে ক্লাস ইলেভেনে প্রোপোজ করতে গিয়ে এমন ঝাড় খেয়েছিল যে প্রেম নামক বস্তুর থেকে ও শতহস্ত দূরে থাকে৷ বিথীকে খুব ছোটো করে বলেছিল, তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে বীথি!
বীথি চোখের সামনে অ্যানাকোন্ডা দেখে চমকে ওঠা গলায় বলেছিল, হঠাৎ আমার বাবা-মা আমার ভাইকে বাদ দিয়ে আমাকেই কেন ভালো লাগে! রোহিত আমতা আমতা করে বলেছিলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি বীথি!
বীথি প্রায় কঁকিয়ে উঠে বলেছিল, তুমি আমার সাথে প্রেম করতে চাইছো?
তুমি আমাকে এতটা খারাপ ভাবো রোহিত!
বীথির কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে রোহিত বুঝেছিলো, প্রেম করার মতো গর্হিত অন্যায় আর হয় না৷
তাই চোখের সামনে দিয়ে সকলের প্রেম হতে দেখেও ও চুপ করেছিলো৷ বীথি তখন ক্লাস টেন৷ রোহিত ভেবেছিলো, বীথি যেদিন প্রেমের মানে বুঝবে সেদিন হয়তো ফার্স্ট প্রেফারেন্স হিসাবে রোহিতের কথাই মনে পড়বে৷ এই আশায় কমলাবালা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দিয়েই টিউশন থেকে ফেরত রোহিত৷
বছর দুয়েক পরে হঠাৎই দেখলো ক্লাস টুইলভের বীথি অয়নের বাইকের পিছনে বসে গোলাপি ওড়না উড়িয়ে ওর পাশ দিয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে গেলো৷
তার মানে বীথি প্রেমের মানে বোঝার সাথে সাথেই অয়ন এন্ট্রি নিয়েছে৷ বীথি রোহিতের হাত ছাড়া হয়ে গেছে বোঝার পর থেকেই শরৎচন্দ্রের দেবদাস ওর প্রিয় ক্যারেক্টার হয়ে গিয়েছিলো৷
তারপর থেকেই রোহিত বুঝেছিলো নারী চরিত্র বড়ো গোলমেলে৷ এরা কখন কাকে আঘাত করে আর কখন কাকে ভালোবাসে সেটাই কেউ জানে না৷ তবে বীথির লোকের কাছে বলে বেড়ানোর ফলে রোহিতকে দেখে অনেকেই বলতো,আহা রে বীথিকে অয়ন নিয়ে নিলো… রোহিতের ঘুড়ি ভোকাট্টা৷ একটু যে অপমান বোধ হত না তা নয়৷
পাড়ায় এমন আওয়াজ খেয়ে একদিন বিথীকে ধরেছিলো রাস্তায়৷ তো বীথি এমন ড্রামা করছিলো, যেন রোহিত সেই গল্পে পড়া রাক্ষস-খোক্কস৷ এমন চিৎকার জুড়লো যে মহিলাদের উদ্ধারকর্তারা অবতীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো৷ ক্লাবের ছেলেরা এসে বললো, কি রে রোহিত! তুই পাড়ার মেয়ের পিছনে পড়েছিস! দিনরাত মেয়েদের দেখে কমেন্ট ছোঁড়া কার্তিকদাও সাধু পুরুষ হয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলো বীথির সামনে৷ সে যাত্রা যাহোক বেঁচে গিয়েছিলো রোহিত৷ তারপর থেকেই এই ন্যাকা ন্যাকা মেয়েগুলোর কাছ থেকে ও শত হস্ত দূরে থাকে৷
প্রেম তো দূরে থাক৷ ট্রেনে বাসেও এদের পাশে বসার সময় নিজেকে বাংলা সিনেমার কাঞ্চন মল্লিকের চেহারায় রূপান্তরিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে৷ বলা তো যায় না, কারোর গায়ে অসাবধানে হাত লেগে গেলো আবার কলি যুগে সতীত্ব হরণের দায়ে পড়তে হবে ওকে৷ এভাবেই কেটে গেলো ওর আগে এসে চলে যাওয়া ছাবিবশটা বসন্ত৷ এমনকি সাতাশটাও যাচ্ছিলো … সেই সময় শুরু হয়েছে কোনো এক প্রেতাত্মার প্রেমপত্র পাওয়া৷
যদিও এগুলোকে রোহিতের বন্ধু বিজয় প্রেমপত্র বলে আখ্যা দিলেও রোহিতের কাছে সেগুলো শুধুই হুমকি৷
ছোট্ট চিরকুটে লেখা… ‘পিঙ্ক শার্ট পরবেন না,ওটা লেডিস কালার৷ স্কাই পরুন৷ ভবিষ্যতে যেন পিঙ্ক পরতে না দেখি৷’
কোনটায় লেখা, ‘সায়রীর দিকে তাকিয়ে অত হাসার কিছু হয়নি৷ ও এমন কিছু সুন্দরী নয়৷’
যা বাবা! এগুলো প্রেমপত্র কি করে হয়! এ তো ফুলনদেবী টাইপ হুমকি পত্র৷ প্রেমের বহু অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত বিজয় বলেছে, ওরে মেয়েরা ডিরেক্ট বলে না যে সে তোকে পছন্দ করে ৷ এগুলো হলো মেয়েটার পজেসিভনেস৷ আর মানুষের পজেসিভনেস কখন আসে? যখন সে তোকে নিয়ে কনসাস ! ইদানিং অফিসে ঢুকেই ড্রয়ারে চিঠিটা পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে রোহিত৷ আর গোয়েন্দার চোখে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখে কার চোখে ওর জন্য পজেসিভনেস আছে৷ না, এখনো অব্দি কাউকে দেখেনি৷ সায়রীকে দারুন দেখতে, রাধিকা পুরো ন্যাকা হলেও আকর্ষণীয়, সুজাতা দিনরাত ছেলে মানেই রেপিস্ট, এমন চোখেই তাকিয়ে থাকে পুরুষদের দিকে৷ এ ছাড়া আছে সুমিতাদি,সন্ধ্যাদি এরা বয়েসে যথেষ্ট বড়ো৷ রোহিতকে ভাইয়ের চোখেই দেখে থাকেন৷ মাঝে মাঝেই সায়রীকে সন্দেহ হয় রোহিতের৷ ঠিক যেদিন থেকে চিরকুটে লেখা ছিল সায়রীর দিকে বেশি তাকানোর কিছু হয়নি৷ তাহলে কি ওর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই একথা লেখা হলো!
রোহিত বললো বুঝলি বিজয়, ভাবছি প্রাইভেট ডিডেকটিভ লাগাবো একটা৷ এই রহস্যময়ীকে খুঁজে বের করার জন্য৷
কারণ যত আগেই অফিসে আসি ওই চিঠি তার আগেই এসে যাচ্ছে আমার ড্রয়ারে৷ নিজেকে কেমন নজরবন্দি লাগে রে৷ মনে হয় দুটো চোখ সর্বদা আমাকে দৃষ্টিবন্দি করে রেখেছে অথচ আমি চিনতে পারছি না তাকে৷ কি যে অসহ্য লাগছে ব্যাপারটা কি বলবো!
বিজয় বললো, তারপর আমাদের ওই গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া বস যদি একবার জানতে পারে অফিসে এসব চলছে তো তাকে খুঁজে না পেয়ে তোকেই ধরবে! রোহিতের কপালে চিন্তার ভাঁজ৷ তাহলে কি এই চিঠিগুলো আমি বসকে গিয়ে জমা দিয়ে আসবো?
বিজয় হাঁ হাঁ করে বলেছিলো, তোর কি মাথাটা খারাপ হলো? যেচে কুমিরের গর্তে হাত ঢোকাবি?
তারপর থেকে ওই হুমকিপত্রগুলো কষ্ট করেই হজম করে চলেছে রোহিত৷
আজকের হুমকি পত্রে ছিল, টিফিনে রেগুলার লুচি খাবেন না৷ ময়দা তেল দুটোতেই ফ্যাট! সাথে আলুর দম! ফুল কার্বহাইড্রেড৷ দু-দিনে মোটা হয়ে যাবেন৷ লাঞ্চে ওটস বা ফ্রুটস খান৷
আর নেওয়া যাচ্ছে না৷ শালা! এই মাত্র ছয়মাস হলো চাকরি পেয়েছে৷ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কড়কড়ে নোট দিচ্ছে বলে মা-বউদি এরা একটু নেক নজরে দেখছে রোহিতকে৷ তাই তার লাঞ্চ বক্সে ফুলকো লুচি ভরে দিচ্ছে আর ওই রহস্যময়ীর সেটাও সহ্য হচ্ছে না৷
ও কি খাবে সেটাও অলক্ষ্যে বসে উনিই যেন ঠিক করবেন৷ এতো মহামুশকিল৷
এবার এই চিরকুটগুলোকে ইগনোর করতে হবে রোহিতকে৷
ইচ্ছে করে পিঙ্ক শার্ট পরবে, লুচি খাবে! দেখি শালা কার বাপের কি! মনে মনে গালাগাল দিচ্ছিলো রোহিত৷
ঠিক তিনদিন পরে একটা ফোন নাম্বার৷ নীচে লেখা কল মি…
যাক এতদিনে রহস্যময়ী আসলে ছেলে না মেয়ে সেটা অন্তত বোঝা যাবে৷
কয়েকদিন ধরে অরিনকে একটু সন্দেহের চোখে দেখছে রোহিত৷ অরিন সেদিন এসে বললো, রোহিতদা তোমাকে ভীষণ হ্যান্ডু লাগছে৷
রোহিত রেগে বলেছিলো, তুই আমার কাছ থেকে দূরে থাক৷ আমি গে নই৷
অরিন চোখ ছোটো করে বলেছে, তবুও আমি ছেলে হয়েই বলছি, তোমার কপালের ওই কাটা দাগটার জন্যই তোমাকে বড্ড হ্যান্ডু লাগে৷
যা বাবা! শেষ পর্যন্ত কি অরিন! রোহিতের যা কপাল তাতে শেষ পর্যন্ত ছেলেই ওর প্রেমে পড়বে! মেয়েও জুটবে না ওর৷ বীথির প্রেমের জোয়ারে ভাসতে গিয়ে এমন ডোবা ডুবলো যে এতবছর পরেও ডুবন্ত টাইটানিক হয়ে রয়ে গেলো৷ এদিকে চোখের সামনে দিয়ে অয়নের কোমর জড়িয়ে ধরে ওর দিকে খিল্লিবাজ মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে ওরা বেরিয়ে যায়৷ অর্বাচীনের মতোই সেই মন্তব্যগুলো শোনে রোহিত৷
মা বলছে একটা বিয়ে দিতে হবে রোহিতের৷ যতদিন পর্যন্ত বউ নিয়ে অয়নের সামনে দিয়ে না ঘুরছে ততদিন শান্তি নেই রোহিতের৷ এদিকে অয়ন আবার রোহিতের কোম্পানিতেই চাকরি করে, রোহিতের ওপরের পোস্টে৷ উফ! এত জ্বালা সহ্য করার কপাল নিয়ে জন্মেছে রোহিত৷ সিঙ্গেলদের জীবনের দুঃখ কেউ যদি বুঝতো৷ সিঙ্গেলরা সরস্বতী পুজোর দিনে হঠাৎ করেই গল্পের বই-এ মন দেয়, হাসির মুভি দেখে৷ ভ্যালেনটাইনডের দিনে মায়ের ঠাকুরের জন্য ফুলের দোকান থেকে গাঁদার মালা কেনে৷ আর আড়চোখে দেখে রক্তগোলাপগুলো৷
সিঙ্গেলরা গলাবাজি করে বলে, প্রেম মানেই ঝামেলা! আরেকজনের মন রাখার তাগিদ৷ তার থেকে বিন্দাস আছি৷ অথচ এদের বুকেতে কান পাতলে শোনা যায় জমিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাসগুলো৷
রোহিতও সকলের সামনে বলে, বিয়ে করে বোকারা৷
এদিকে মনে মনে ভাবে, একবার বিয়েটা করি তারপর অয়ন আর বীথির সামনে দিয়ে বউ-এর হাত ধরে ঘুরবো৷ তবে বীথির অপমানের শোধ তোলা যাবে৷
এই হুমকিপত্র পেয়ে মনে একটু আশারবানীর উদয় হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু গত ছয়মাসে চিরকুটের ভাষার পরিবর্তন না দেখে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলো৷
আজ এই ফোন নাম্বারটা পেয়ে আবার মনের মধ্যে প্রজাপতিরা পাখা মেললো৷
কিন্তু ফোন করে রোহিত কি বলবে? কার নাম্বার তাই তো জানে না!
যে রোহিতের সব খবর রাখে সে নিশ্চয় ওর নাম্বারও জানবে৷ মায়ের সন্ধ্যের শঙ্খ তিনবার বেজে শেষ হবার পরেই দুরুদুরু বুকে রোহিত নম্বরটা ডায়াল করলো৷ লে চাপ! বলেছে নাকি এই নাম্বার বাস্তবে নেই৷ তার মানে মানুষটাও বাস্তবে নেই, আর নাম্বারটাও৷ তবে কি গত জন্মের কোনো অতৃপ্ত আত্মা! যে রোহিতের কাঁধে ভর করেছে! তাই চিঠি প্রেরককে আজ অবধি ধরতে পারলো না রোহিত৷ /৪৩৪২২’’// … বার তিনেক গোনার পরে কনফার্ম হলো এটা দশ ডিজিট নয়৷ ভুল নাম্বার দিয়ে মজা করছে কেউ৷ রোহিতের কান্না চলে এলো৷ ওর অনুভূতি নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলার অর্থ কি?
পুরুষ মানুষ বলে কি মন নেই তার! যেদিন থেকে অফিসে ঢুকেছে কেউ একজন মজা করেই চলেছে৷ ফোন নাম্বার লেখা কাগজটা কুচিয়ে ফেলতে গিয়েও থমকে গেলো রোহিত৷ এক কোণে লেখা এই নাম্বারের শেষে ০-/ একটা বসালেই আমায় খুঁজে পাবে৷ আজ মাথায় আগুন ধরে গেছে রোহিতের৷
ক্রমাগত চেষ্টা করেই চলেছে৷
কোনোটা মুদির দোকানের মালিক তো কোনোটা কলের মিস্ত্রি৷ একজনকে তো রোহিত বললো, আমি রোহিত বলছি৷ শুনেই সে কাঁচা দুটো দিয়ে বললো, রোহিত! তুই আমার কোন শ্বশুর রে!
একজন মহিলা বললেন, পাগলা গারদের কর্মীগুলো মারাত্মক ফাঁকিবাজ বলেই নাকি রোহিতের মতো পাগলরা এখনো রাস্তায় ছাড়া রয়েছে৷ ফাইভ পর্যন্ত বসিয়ে রাজ্যের গালাগাল খেয়ে ক্ষান্ত দিলো রোহিত৷ না এভাবে হবে না৷
পরেরদিন অফিসে গিয়েই রোহিত সায়রীকে বললো, সায়রী তুমি কি আমায় চিঠি দাও?
আকাশ থেকে ধপ করে পড়েই মানুষ যেমন খুব লেগেছে বলে কাঁদতে শুরু করে তেমনি গলায় সায়রী বললো, ছি রোহিতদা আমার বিয়ের যোগাযোগ হচ্ছে, এসময় তুমি আমার বদনাম করো না প্লিজ৷ এমনিতেই মাল্টিন্যাশনাল অফিসে চাকরি করা মেয়েদের নিয়ে কানাঘুষো চলতেই থাকে৷ তারপর আর বদনাম করো না৷
পরেরদিন চিঠি, আপনি সায়রীকে প্রোপজ করলেন? ও রাজি হলো? লজ্জা করলো না আপনার!
সব পুরুষ সমান৷ মেয়ে দেখলেই হ্যাংলামি!
যা বাবা! রোহিত কিছু করলোই না৷ উল্টে চাপ খেয়ে গেলো৷
বাবার অফিসের কলিগ নিয়োগী কাকুর মেয়ের বিয়ে৷ নীহারিকা ওয়েডস রোহিত৷ লেখা কার্ডটা দেখেই মাথায় বুদ্ধিটা খেলে গেলো৷ পাত্রের নামও রোহিত বিশ্বাস৷
সারনেম সমেত মিলে গেছে৷
কার্ডটা অফিসের ড্রয়ারে রেখে দিলো রোহিত৷
দিন তিনেক পড়ে আছে কার্ডটা ওর টেবিলে৷
কোনো হুমকি চিঠি নেই৷
সেদিন সকাল নয়টায় সুইপার ঢোকার সাথেই রোহিত অফিসে ঢুকলো৷ লুকিয়ে বসেছিলো রহস্যময়ীকে ধরবে বলে৷
শুধু দুটো পা দেখতে পাচ্ছে রোহিত৷ খুব সাবধানে ওর টেবিলের দিকে এগোচ্ছে পা দুটো৷ অন্য ডেস্কের নীচে থেকে চুপটি করে দেখছে রোহিত৷
আজকাল মেয়েরাও ছেলেদের জুতো পরে বটে৷ তবে পায়ের আকৃতি দেখে কোনো মহিলা বলে মনে হচ্ছে না৷ অবশেষে দেখলো গেট কিপার রতনের হাতে গোলাপি চিঠি৷ খুব সাবধানে রতন নিখুঁত হাতে রোহিতের ড্রয়ার খুললো… রেখে দিলো গোলাপি কাগজ৷ আর তুলে নিলো নিয়োগী কাকুর মেয়ের বিয়ের কার্ডটা৷
রোহিত ড্রয়ার খুলে দেখলো, লেখা আছে ফোন নম্বরটা কমপ্লিট করার ধৈর্য যার নেই সে কি করে সেলস ম্যানেজার হবে! প্রমোশন পাবে কি করে?
আবার কেমন একটা প্রেস্টিজে গ্যামেক্সিন টাইপের কথা শুনেই মারাত্মক রাগ হলো রোহিতের৷ ৫ এর পর থেকে সংখ্যা বসাতে শুরু করলো অসমাপ্ত ফোন নম্বরে৷
সকালে কাজের সময়ে রং নাম্বারকে গালাগালি দিয়ে ভূত ভাগাবে সেটাই স্বাভাবিক৷
তবুও হাল ছাড়বে না রোহিত৷ এ এক পুরোহিত মনসা পুজোর মন্ত্র বলতে বলতেই ফোন ধরলো৷ দিয়ে গালাগালি দিয়ে বললো, তোকে সাপে কাটবে হারামজাদা৷ মায়ের পুজোয় ব্যাঘাত ঘটালি?
’’ বসিয়ে ডায়াল করেছে রোহিত৷ ফোনটা ওর ফ্লোরেই বেজে উঠলো৷
হ্যাঁ মিস্টার রোহিত বলুন৷
সর্বনাশ! এ তো ওদের বস মিস সোনালী!
ওর সামনেই একটা কম্পিউটারে কিছু দেখাচ্ছিলেন সন্ধ্যাদিকে৷
তার মানে কি কেউ শয়তানি করে রোহিতকে ফাঁসাতে চাইছে৷ অফিস শুদ্ধু সবাই জানে, মিস্টার চাটার্জির একমাত্র মেয়ে সোনালী চ্যাটার্জি যবে থেকে বাবার কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন তবে থেকে অফিসে হাসি-কান্না-প্রেম সব উঠে গেছে৷ সোনালীর একটাই কথা, কোম্পানি তোমাকে টাকা দেবে তুমি পরিশ্রম দাও৷ অফিসে ফাঁকিবাজি চলবে না৷ রোহিত সামলে নিয়ে বললো,ম্যাম রং নাম্বার হয়ে গেছে৷
ম্যাম বললেন, আপনি একবার আমার চেম্বারে আসুন৷
আজ হয়ে গেল! প্রেমে মারাত্মক রকমের অবিশ্বাসী সোনালী ম্যাম যদি জানতে পারেন যে রোহিত অজানা প্রেমিকার খোঁজে ফোন করে চলছিলো তাহলে ওকে স্যাক করতে বেশি সময় বোধহয় নেবেন না৷ নিন্দুকে বলে প্রেমে ধাক্কা খেয়েই মাত্র ছাবিবশ-এ সোনালী ম্যাম ছেচল্লিশ হয়ে গেছেন৷ মুখে হাসি নেই, চোখে জল নেই একটা যন্ত্র মানবী৷
ভয়ে ভয়ে ওনার রুমে ঢুকতেই রাগে ফেটে পড়লেন সোনালী ম্যাম৷
এত কম বয়সে বিয়ে করে কি নিজের ক্যারিয়ারের বারোটা বাজাতে চাইছেন নাকি! বিয়ে তো করবেন ঘোমটা পরা লজ্জাবতীকে৷ যে স্বামীর কাশি হলেই বলবে, আজ আর অফিস যেও না৷
আপনাদের মতো বাঙালিদের জন্যই দেশটা রসাতলে গেলো৷ কোনোমতে একটা চাকরি জোগাড় করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা৷
ঘাবড়ে গেছে রোহিত৷ হঠাৎ ওই নকল রোহিতের বিয়ের কার্ড দেখে ম্যাম কেন এত রিয়াক্ট করছে?
তারপর একটু সামলে নিয়ে বুকে বল নিয়ে রোহিত বললো, ম্যাম… আমি পিঙ্ক শার্ট পরি না৷ লাঞ্চে ওটস খাই, ফোন করে করে শেষ নাম্বারটাও মিলিয়ে ফেলার ধৈর্য রেখেছি… তাহলে কি আমার প্রমোশন হতে পারে?
আমার নিজস্ব ডায়রিটা বেশ কিছুদিন ধরে অফিসের ড্রয়ার থেকে মিসিং৷ ওটা কি ফেরত পেতে পারি?
রাশভারী সোনালী ম্যামের গালেও আবিরের ছোপ৷ পেতে পারেন, তবে ওই ডায়রিতে বিথীকে নিয়ে আর কিছু লেখা চলবে না৷
বরং যে লুকিয়ে আপনাকে ভালবাসে তাকে নিয়ে লিখতে হবে৷ আর তাকে নিয়ে বাইকের পিছনে করে অয়ন আর বীথির সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে আনতে হবে৷
গোটা ডায়রিটা পড়েছেন?
আলতো করে ঘাড় নাড়লো সোনালী৷ শুধু আগ্রহের বশেই এমপ্লয়ির পার্সোনাল ডায়রি চুরি করিয়েছিলাম রতনকে দিয়ে৷ তারপর পড়তে পড়তে বুঝেছিলাম একজন সত্যিকারের প্রেমিক বাস করে ওই মনে৷ যে প্রেমে ধাক্কা খেয়ে ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করে আমার মতোই৷ আমিও ভালোবাসায় ধাক্কা খাওয়া মানুষ৷
রোহিত বললো, তাহলে আজ বিকেলে বাইকটা রেডি রাখি?
তবে শর্ত একটাই, ওই হুমকি চিঠিগুলো কিন্তু বন্ধ করা যাবে না৷ ওগুলো পাঠাতেই হবে৷ রোহিতের সামনে এখন চ্যাটার্জি এন্টারপ্রাইজের মালিক নয়, রহস্যময়ী নারী বসে আছে৷ যার মনে আজও ভালোবাসা বেঁচে আছে৷ রোহিত মনে মনে ভাবল, ভগবানের সৃষ্টি বটে এই নারী চরিত্র৷