ঘরজামাই
কীরে ঘরজামাই তোর শাশুড়ি আজ কি খাইয়ে অফিস পাঠাল? বিয়ের আট মাস পরেও অফিসে একই কথা শুনতে হচ্ছে দর্পনকে, আর একই ভাবে ওকে দেখে সকলে বলেই চলেছে, তোর আর চিন্তা কি রে তুই তো শালা শ্বশুরের হোটেলে খাচ্ছিস! মাইনে নিয়ে কি করবি রে! আমাদের মতো গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দে বস৷ এর মধ্যেই কার্তিকদা অফিসের সকলের সাথেই মজা করতে পছন্দ করেন৷ তিনি অফিস ঢুকেই বললেন, কোথায় আমার ঘরজামাই কোথায়? ওকে দেখেই দিনটা শুরু করি৷ পরজন্মে যেন দপর্নের মতো কপাল করি রে৷ তারপরেই অফিস জুড়ে একটা হাসির হুল্লোড়৷ যেন সামনে ৫./ক্ষ্মর জোকার দাঁড়িয়ে আছে৷
দর্পন মিনমিন করে বলেছিলো, কেন মেয়েরা যদি আমাদের বাড়িতে এসে থাকতে পারে তাহলে আমরা কেন নয়?
ওরে আমার সমাজ পরিবর্তক রাজা রামমোহন এলেন রে৷
এক কাজ কর, তুই এবার তোর যে বাচচা হবে ওটাকে বরং তোর পেটেই নিয়ে নে৷ আহা! তোর আদুরে বউ-এর কষ্টটা একটু কমবে রে৷ কার্তিকদা নিজের ভুঁড়িটাকে নাড়িয়ে প্রেগন্যান্ট দর্পনের হাঁটাটা কেমন হবে সেটাই নকল করে দেখালো৷
ভাগ্যিস সেই সময় ওদের বস এন্ট্রি নিলেন অফিসে তাই, সবাই চুপ করে গেলো৷ কিন্তু দর্পন জানে এটা শেষ নয়৷ লাঞ্চ টাইমেও চলবে৷ একঘেয়ে অফিসের কাজের মধ্যে দর্পনই যেন ওদের মজার খোরাক৷ মাঝে মাঝে মনে হয় বলছে বলুক, ওতো অদিতিকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছে৷ তখন অবশ্য জানতো না বিয়ের পরে অদিতি এমন একটা শর্ত দেবে! দর্পনের কোনো অসুবিধাই নেই অদিতির বাড়িতে থাকতে৷ কিন্তু পাড়া প্রতিবেশী থেকে অফিস, পরিচিতরা এমন চোখে ওর দিকে তাকায় যে মনে হয় ও কোনো গর্হিত কাজ করে ফেলেছে৷ ঘরজামাই থাকার সিদ্ধান্তে দর্পনের পরিবারের লোকেরা একটু চমকে উঠে বলেছিলো, তুই তো একাই ফ্ল্যাটে বা মেসে থাকতিস, এখন না হয় ফ্ল্যাট ভাড়াটা বেঁচে গেলো৷ ছোটদা হাসতে হাসতে বলেছিলো, যাক আমাদের বাড়ির একটা ঘর অন্তত পার্মানেন্টলি ফাঁকা হলো৷ আমরাও ছেলের বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম দর্পনকে৷
বিয়ের পরে মাত্র চারবার অদিতিকে নিয়ে নিজের বাড়ি এসেছিলো দর্পন৷ আর কলকাতায় ওর কেনা সাতশো স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটটা এখন তালা বন্ধ৷ অদিতি ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান কিন্তু নয়৷ অদিতির একটা দাদাও আছে৷ সুভাষদা যে সকালে ব্রাশ করতে করতে রোজ বলে, ঘরজামাই জামাইয়ের মতো থকো, বাড়ির ছেলে হবার চেষ্টা করো না৷
পুরুষ মানুষের চোখে জল বড়ো বেমানান! কিন্তু বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণটা আটকাবে কি করে?
ভোরের ঘুম ঘুম চোখে দর্পন তাকিয়ে আছে ঘুমন্ত অদিতির দিকে৷ স্নিগ্ধতা ছড়ানো বন্ধ চোখ দুটোয়৷ মনে পড়ে গেলো চাকরির ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার দিনটার কথা৷
এমনিতেই মারাত্মক টেনশনে ছিলো দর্পন৷ তারমধ্যে ট্যাক্সি নিয়ে লেগে গেলো ঝগড়া৷
কলকাতার জ্যামে পড়লে হেলিকপ্টার ছাড়া আর কেউই নির্দিষ্ট সময়ে অফিস পৌঁছাতে পারবে না জেনেও এতটা দেরি করে মেস থেকে বেরোনোটা ওর ঠিক হয়নি৷ এখন সল্টলেক পৌঁছাতে পাক্কা চল্লিশ মিনিট লাগবেই৷ যদি জ্যাম না থাকে৷ ওর হাতে আছে মাত্র একঘন্টা দশ মিনিট৷ ট্যাক্সিটাকে ডেকেছিলো দর্পন কিন্তু ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরী ওকে ওভারটেক করে উঠে পড়েছিলো ওর ডাকা ট্যাক্সিতে৷ নিরুপায় হয়ে দর্পন রিকোয়েস্ট করেছিলো ওকে সল্টলেকে নামিয়ে যদি ওনাকে গন্তব্যে পৌঁছানো হয় তাহলে বড়ো উপকার হয়৷ মেয়েটি ভস্ম করে দেবার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলো, আমার ফ্রেন্ডসরা অপেক্ষা করছে, তাই আমি আগে যাবো৷ দর্পন চলন্ত গাড়ির মধ্যেই অনুনয় বিনয় করে যাচ্ছিলো, ওর ইন্টারভিউয়ে দেরি হয়ে গেলে ওর ভবিষ্যতের ব্যাপার!
মেয়েটি একটা কথাও না বলে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে ছিলো৷ দর্পন বুঝেছিল, ওর সকাতর অনুনয় ওর কানেই পৌঁছাচ্ছে না৷ ঘনঘন ঘড়ি দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এখন৷ মাঝরাস্তায় নেমে যদি ট্যাক্সি না পায়! ড্রাইভার বললো, এবার বলুন কোথায় যেতে হবে৷ আমি এখান থেকেই টার্ন নেব৷
মেয়েটি গম্ভীর গলায় বললো, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ৷
দর্পনের মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিলো৷ যাক তাহলে অবশেষে ও ইন্টারভিউতে সময়ে পৌঁছাতে পারবে!
দর্পন আপ্লুত হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, ম্যাম … আপনি কি যে উপকার করলেন আমার!
অদিতি বাসু, আমার নাম৷
ইউনিভার্সিটির ফাইনাল ইয়ার৷
জীবনে এই প্রথম আমি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়ে পরোপকার করে ফেললাম৷
দর্পন কান পর্যন্ত হেসে বলেছিলো, দেখবেন সারাটা দিন আপনার দারুন কাটবে৷ মানুষের উপকার করলে মনে তৃপ্তি হয়৷
চাকরির জন্যই নিজের ফোন নম্বর সহ একটা ভিজিটিং কার্ড বানিয়েছিলো দর্পন৷ সেটাই অদিতির হাতে দিয়ে বলেছিলো, এতে আমার পরিচয় দেওয়া আছে৷
অদিতি হাতে নিয়ে বলেছিলো, জীবনে প্রথমবার মেয়েদের সাথে এত কথা বললেন বোধহয়, তাই না?
উত্তরটা দেবার আগেই ওর স্টপেজ এসে গিয়েছিলো৷ দর্পন নেমে আবার গদগদ হয়ে অদিতিকে ধন্যবাদ জানানোর আগেই অদিতি ড্রাইভারকে বললো, ওনার পেমেন্ট তো কমপ্লিট, এবার চলুন,দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
দর্পন লিফট-এর বন্ধ দরজার ভিতরে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো মেয়েটা কি ভালো,নাকি মারাত্মক মুডি! অদিতির মনে ঘনঘন আবহাওয়া পরিবর্তন হয় বোধহয়! চাকরিটা হয়ে গিয়েছিলো দর্পনের৷
মাস খানেক ট্রেনিং পিরিয়ডের পরেই পোস্টিং হবে৷ ট্রেনিং-এ হায়দ্রাবাদ যেতে হবে দর্পনকে৷
যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই ব্যস্ত হয়েছিলো দর্পন৷ সেদিনের ট্যাক্সির মধ্যের উপকারিণীকে ভুলে গিয়েছিলো ও৷ উপকারীকে কেই বা কবে মনে রেখেছে?
ওদের ৫৫ জনের বড়ো দলটা যখন হায়দ্রাবাদ পৌঁছালো তখন ওখানের বাতাসে বেশ উষ্ণতার ছোঁয়া৷ পশ্চিমবঙ্গ-এ তখনও শীত বিদায় নেব কি নেব না ভেবে চলেছে৷
ট্রেনিং পরে হবে, তার আগে নতুন শহর ঘুরে ফেলার প্ল্যান করেই সদ্য পরিচিত দলটার মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো৷ দীপক ম্যাপ বের করে শহরের আনাচ কানাচ চোখ বোলাচ্ছিলো৷ অবশেষে ঠিক হলো আজ সন্ধ্যাটা হোসেন সায়র লেক আর লুম্বিনী পার্কের লাইট এন্ড সাউন্ড দেখতে যাবে সকলে৷ অভিভাবক ছাড়া এই প্রথম দর্পনের বাড়ির বাইরে বেরোনো ৷ তাই নার্ভাসনেস আর ভালোলাগাটা একই সঙ্গে চলছিলো দর্পনের৷
হোসেন সায়রের বোটে কেউ যে দর্পনের নাম ধরে ডাকতে পারে এটা বোধহয় একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল ওর কাছে৷
সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠস্বরে কেউ একজন ডাকছে দর্পন! মিস্টার দর্পন রায়!
মাথা ঘোরাতেই একই বোটে বসে আছে সেই পরোপকারিনী… কি যেন নাম?
অদিতি বাসু!
দর্পন টলমল বোটে ব্যালেন্স করে অদিতির সামনে গিয়ে বললো, আরে মিস বাসু… কেমন আছেন? এখানে কি বেড়াতে?
অদিতি বললো, নামটা কি ভুলে গেছেন? নাকি আমি আপনার অফিসের বস? যে সারনেম ধরে ডাকছেন?
মুহূর্তে শুধরে নিয়ে ও বলেছিলো, ভুলবো কেন? উপকারীকে ভুলে গেলে তো অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় মানুষ!
ইউনিভার্সিটি ট্যুর… আপনার?
ট্রেনিং পিরিয়ড অদিতি৷
অদিতির ঠোঁটে হালকা হাসি, আবার আমাদের দেখা হলো কি বলুন?
বুদ্ধ মূর্তির সামনে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে দলটা৷
দর্পন আর অদিতি সামনের জলের ওপরে পড়া আলোর রেখার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো৷ হঠাৎই দর্পন বললো, আমাদের দ্বিতীয় সাক্ষাতকে স্মরণীয় করা যায় কি? অদিতি আলতো হেসে বললো, ’৪/০২২…
কথা হবে …
একটা অদ্ভুত তোলপাড় করা টানাপোড়েনে ভালো লাগার আবেশ ছড়াচ্ছিলো দর্পনের মনে৷ দর্পনের মনের টানাপোড়েন কি আদৌ ছুঁতে পারছিলো অদিতিকে?
দুজনেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলো৷ অদিতি বললো, কিছু বলছিলেন?
দর্পন জিজ্ঞেস করেছিলো, আপনি কি কিছু শুনলেন?
দুজনেই লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করেছিলো৷
সেই রাতেই ফোনটা করেছিলো অদিতির ফোনে৷
দর্পন খুব সাবধানে বলেছিলো, আপনি কি দ্বিতীয় দর্শনে প্রেমে পড়াটা বিশ্বাস করেন?
অদিতি কিছুক্ষণের বিরতি নিয়ে বলেছিলো, আমি লাভ এট ফার্স্টসাইটেই বিশ্বাসী৷ কিন্তু কিছু মানুষ তো প্রথম দর্শনটা মনেই রাখতে চায় না!
একটু কি অভিমানী সুর ছিলো অদিতির গলায়?
দর্পন বলেছিলো, যদি তৃতীয় সাক্ষাতটা সকলের ভিড়ে না হয়, তাহলে কি আপত্তি আছে?
অদিতি বলেছিলো, তাহলে ব্যাচের সাথে কাল রামজি যাচ্ছি ওখান থেকেই না হয় হারিয়ে যাবো আমরা৷
অনেক কষ্টে টিম লিডারকে রাজি করিয়েছিলো দর্পন যে আগামীকাল যেন তাদের গ্রুপও রামজি ফিল্ম সিটি দেখতে যায়৷
অদিতি আর দর্পন হারিয়ে গিয়েছিলো নিজেদের মধ্যে৷
দর্পনের অপলক চাহনির সামনে অদিতি স্বীকার করেছিলো, যে প্রথম দিনেই দর্পনের ব্যবহারে ওর ভালো লেগেছিলো৷ তারপর ওদের প্রেমের নৌকা স্রোতবিহীন নদীতে তরতর করে এগিয়ে গিয়েছিলো৷
লোন নিয়ে ফ্ল্যাট বুক করেছিলো, বিয়ের কার্ড ছাপানোর পরেই অদিতি বলেছিলো ফ্ল্যাট বুক করলে কেন? আমাদের এতো বড়ো বাড়ি থাকতে আমরা ওই ছোট্ট ফ্ল্যাটে কেন থাকবো দর্পন?
অবাক হয়ে দর্পন বলেছিলো, কিন্তু অদিতি তুমি কলকাতা ছেড়ে আমাদের দেশের বাড়িতে মফস্বলে থাকতে পারবে?
অদিতি অষ্টম আশ্চর্য দর্শনের চোখে তাকিয়ে দর্পনকে বলেছিলো, আমি তোমাদের বাড়ির কথা বলিনি, বলছিলাম আমাদের বাড়ির কথা৷ আমার বাবার ওই তিনতলা বাড়িটার কথা৷
কিন্তু অদিতি বিয়ের পর তো মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে থাকে৷ সেখানে যদি আমি আর তুমি আমাদের নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকি তাহলে আমরা অনেক স্বাধীন ভাবে থাকবো৷
অদিতি দর্পনের চোখে চোখ রেখে বলেছিলো, আমাকে ভালোবেসে তুমি পারবে না সমাজের সব নিয়ম ভাঙতে?
সেদিনের অদিতির চোখের তারায় ভালোবাসা ছিলো, ছিলো অনেকখানি আবেগ৷
দর্পন বলেছিলো, পারবো অদিতি… তোমার জন্য আমি সব পারবো৷
তারপর বিয়ের পর থেকেই দর্পন নিজের জিনিস গুছিয়ে চলে এসেছিলো, শ্বশুরবাড়ি৷ লোকের মুখের ব্যাঙ্গাত্মক সব হাসিকে উপেক্ষা করে শুধু অদিতির মিষ্টি হাসিটার লোভে৷ ওকে ভালো রাখার তাগিদে নিজের ফ্ল্যাটটাকে তালাবন্দি করে চলে এসেছিল অদিতিদের বাড়িতে৷
প্রথম একমাস সকলেই মেয়েকে সুখী করার জন্য দর্পনকে জামাই আদর করলো৷ তারপর শুরু হলো আড়ালে আবডালে কথা৷ যেগুলো অদিতির কানে না পৌঁছালেও দর্পন বুঝতে পারছিলো খুব ভালো ভাবেই৷
ধীরে ধীরে অদিতিও ভুলতে বসেছিলো ঠিক কি কারণে নিজের বাড়ি ছেড়ে,সমাজ সংসারকে অস্বীকার করে এসেছিলো দর্পন৷ ইদানিং অদিতির চোখেও কেমন একটা অশ্রদ্ধা৷ সেদিন তো বলেই ফেললো, সংসারের দায়িত্ব তো আর নিতে হলো না৷ আমার বাবার কাছে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাচ্ছ৷
দর্পন বলেছিলো, অদিতি আমি কিন্তু বাবাকে টাকা দিতে গিয়েছিলাম… আমাদের সংসার খরচ করার জন্যে৷
অদিতি রাগী মুখে বলেছিলো, তুমি এটা পারলে? ওই কটা সামান্য টাকা আমার বাবা তোমার কাছ থেকে নেবে ভেবেছো? এটা তো তুমি আমার বাবাকে অপমান করলে দর্পন৷
দর্পন বুঝতে পারেনি কোনটা অপমান আর কোনটা ভদ্রতা, আজও বোঝে নি ওর আর অদিতির সম্পর্কটা কেন ভালোবাসা থেকে আস্তে আস্তে তিক্ততার দিকে চলে যাচ্ছে!
মাত্র আট মাস ! এর মধ্যেই অদিতির মনে হতে শুরু করেছে যে ভুল করেছে দর্পনকে বিয়ে করে৷ এমনকী অদিতির মা-ও নাকি বলেছে, কত শখ ছিলো একটা সম্ভ্রান্ত ছেলের সাথে অদিতির বিয়ে দেবে! তা নয় ওই লোনে কেনা সাতশো স্কোয়ার ফিট-এর ফ্ল্যাট আর ওই প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি?
এটা কি আদিত্য নারায়ণ বাসুর একমাত্র মেয়ের যোগ্য স্বামী?
কিছুদিন আগে পর্যন্ত অদিতি বলতো, যে যা বলছে বলুক, আমি তোমাকে ভালোবাসি দর্পন৷ তবে ছোটো থেকে ঐশ্বর্যের মধ্যে মানুষ হয়েছি তো তাই কষ্ট সহ্য করতে পারবো না৷ আর বাবা মা-ও আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না৷
তাই অদিতির ইচ্ছেতেই অদিতির দাদার, বাবার বলা ঘরজামাই-এর আবার সম্মান! এগুলো শুনেও মুখে কুলুপ এঁটে ছিলো দর্পন… কিন্তু রক্তক্ষরণটা শুরু হলো, যেদিন অদিতি বললো… সত্যি দর্পন বড্ড ভুল হয়ে গেছে৷ জীবনে বড়ো হয়ে ওঠার অ্যাম্বিশনটাই নেই তোমার! বাবা ঠিকই বলে, দিতি দর্পন তোমার যোগ্য নয়৷
অফিসের কাজে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে গেছে, ভুল করেছে… ল্যাপটপ জানিয়ে দিয়েছে ওর ভুলগুলো৷
দর্পন ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে৷ লোকের হাসির খোরাক হতেও আপত্তি ছিল না ওর৷ কিন্তু অদিতির চোখে ছোট হয়ে গেলো বলেই হয়তো মনের ভাঙ্গনটা শুরু হলো৷
আজও অফিসে বিনোদ বললো, আর কি চাই গুরু… রাজত্ব রাজকন্যা নিয়ে বসে আছো! এসব চাকরি কি তোমাকে মানায়?
কোথায় শ্বশুরের ব্যবসায় বসবে তা নয় দশটা পাঁচটা করছো?
মনটা আজ একটু বেশিই খারাপ দর্পনের৷ অদিতির বার্থ ডে আজ ৷ ভোরে উঠে অদিতির জন্য কেনা শাড়িটা উপহার দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে গেলেই অদিতি বলে উঠলো, রুচিটা তোমার এখনো মধ্যবিত্তই থেকে গেল দর্পন! কথাটা বললো, ওর পছন্দ করা শাড়িটার দিকে তাকিয়েই৷ অদিতি ভুলে গেছে মাসে মাসে ফ্ল্যাটের লোন তাও শোধ করছে ও৷
খাওয়া খরচ তো লাগে না, তো আরেকটু দামি গিফট আনতেও কি বুকে বেজেছিলো?
কোনো উত্তর দেয়নি দর্পন৷ শুধু শক্ত মনের পুরুষ মানুষের চোখে এই প্রথম নোনতা জলেরা ভিড় করে এসেছিলো৷
ভালোবাসার বিয়ের পরিণতিও কখনো কখনো এমন হয়? অদিতি আর দর্পনের মধ্যে ভালোবাসার খামতি ছিলো না কোনখানে৷ শুধু পার্শ্ব চরিত্রের আগমনেই শেষ হতে বসেছে ওদের সম্পর্কটা৷ কিন্তু কিছুতেই অদিতিকে বোঝাতে পারেনি দর্পন যে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে ওদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো৷
জন্মদিনের পার্টিতেও দর্পন চুপ করেই ছিলো৷
রাতেই অদিতি বোম্বটা ফাটাল ঘরের মধ্যে৷
দর্পন আমি ডিভোর্স চাই৷ এভাবে চলে না গো৷ আমার পছন্দের সাথে তোমার পছন্দের বড্ড অমিল৷ গোটা জীবনটাকে টেনে বেড়ানোর ইচ্ছে আমার আর নেই দর্পন৷
কিন্তু অদিতি আমি তোমাকে ছেড়ে কীভাবে থাকবো বলতো?
ভুল দেখলো কি! না দর্পন ভুল দেখেনি… অদিতির চোখের কোনে একটু জলের রেখা যেন আটকে রয়েছে৷
তুমি কি মিউচুয়াল ডিভোর্স দেবে! নাকি কেস করতে হবে? এখন যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে এই মেয়েটাই কি সেই লুম্বিনী পার্কের জলের ধারে দাঁড়িয়ে সারাজীবন একসাথে চলার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলো?
নাকি এই মেয়েটাই বলেছিলো, দর্পন! ছোটো চাকরি আর ছোটো ফ্ল্যাটে কি ভালবাসা কখনো আটকে থাকে?
এতদিন পর্যন্ত যেমন অদিতির মুখের হাসির জন্য ওর সব আব্দার মেনে নিয়েছিল, তেমন এটাও মেনে নিল নীরবে৷
দিন তিনেক হলো ওরা সেপারেসনে আছে৷
ফ্ল্যাটটাকে ভালো করে পরিষ্কার করিয়ে ফিরে এসেছে দর্পন৷ ও বাড়ির কেউ বলেনি, আরেকটু ভেবে দেখা যায় কিনা৷
অদিতিকে ছেড়ে, ওদের বিবাহিত জীবনের আট মাসকে পিছনে ফেলে বেরিয়ে এলো দর্পন৷ অদিতি ঘর থেকে বেরোয়নি৷ শুধু বলেছিলো, উকিলের কাছে একদিন যেতে হবে, সেদিন এসো৷
সত্যিই এতদিন ধরে ঘর জামাই থাকার কুফলটা প্রথম অনুভব করলো দর্পন৷ রাতে ফ্ল্যাটের নিচের দোকানের রুটি ঘুগনি ওর মুখে রুচলো না৷ লোকে ঠিকই ব্যাঙ্গ করে ওকে নিয়ে, শ্বশুরের বিনামূল্যের জামাই!!
পুরোনো স্মৃতিগুলো বারবার ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অদিতির কাছে৷ দিনসাতেক পরে… সন্ধ্যের দিকে দর্পনের ফ্ল্যাটের নীচে বড়ো গাড়িটা এসে দাঁড়ালো৷ গাড়ির ভিতরে হয়তো অন্য কেউ আছে, আবছা দেখা যাচ্ছে তাকে… কিন্তু গাড়ি থেকে নামলো শুধু অদিতি৷ হাতে একটা শপিং ব্যাগ৷
দর্পনের বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে বললো… তোমার কিছু জিনিস রয়ে গিয়েছিলো ও বাড়িতে৷ কিপটে মানুষের জিনিসের যা মায়া! তাই ফেরত দিয়ে গেলাম৷
বারবার চেষ্টা করে চলেছে ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে অদিতির গাড়ির ভিতরের আবছা অবয়বটাকে দেখতে৷ এটাই বোধহয় অদিতির জীবনের দ্বিতীয় পুরুষ৷ আদিত্য নারায়ণ বাসুর সঠিক জামাই৷ তাই ঘর জামাইকে তাড়াহুড়ো করে তাড়িয়ে দিলো সকলে মিলে৷
এই রে ডালটা পুড়ে গেলো৷ গ্যাসে ডাল সিদ্ধ বসিয়েছিলো দর্পন৷ ছোট্ট ফ্ল্যাটের বন্ধ কাঁচের জানালার মধ্যেই পোড়া গন্ধটা ঘুরপাক খাচ্ছে৷
সিলিঙের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে দর্পন৷ কীভাবে ঝগড়া ছাড়া, কোনো বড়ো কারণ ছাড়া একটা সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় শুধু পাশের মানুষগুলোর হস্তক্ষেপে৷ আজ যদি অদিতির বাবা মা এভাবে সব কিছু ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা না করতো তাহলে ও আর অদিতি একইভাবে কাটিয়ে দিতে পারতো সাতটা জন্ম৷
কথা ছিলো একসাথে হাঁটবো নীল নদীর পাড়ে৷ কথা ছিলো শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেব গোটা আহ্নিক গতি৷ কথা ছিল দর্পন আর অদিতির সন্তানের নাম হবে, দয়িতা৷ দর্পন বলেছিলো, একটা ছোট্ট অদিতিই চাই ওর৷
সব কিছু কেমন পাখির বাসার মতো ভেঙে গেলো৷ অবাধ্য চোখ দুটো কোনো বারণ না মেনেই অনবরত নোনতা জল ঝরিয়েই চলেছে৷ হয়তো দিন সাতেকের মধ্যেই উকিল ডাকবে… কি বলবে দর্পন! ও তো অদিতিকে ছাড়া কিছুই বোঝে না৷ সেটা শুনে কি অদিতি আরেকবার ভাববে? নাকি ওর সমতুল্য পুরুষটিও সঙ্গে থাকবে, কখন অদিতিকে মুক্তি দেবে দর্পন৷ তারপরেই ওরা শুরু ওদের নতুন জীবন৷
বুকের ভিতর সবসময় ধুকপুকুনি… এই বোধহয় উকিল ডাকলো ওকে৷ সম্পর্কের শেষ সুতোটা কেটে ঘুড়িটাকে ভোকাট্টা বলার দিন উপস্থিত৷
ঠিক তিনদিন পরে, একই সময়ে অদিতির গাড়ি আবার থামলো দর্পনের ফ্ল্যাটের গেটে৷
আবারও দর্পন দেখলো, ভিতরে একটা আবছা মূর্তি৷ বুকটা কেমন মুচরিয়ে উঠলো যেন৷ অদিতি ঝড়ের বেগে ঢুকে বললো, এই নাও তোমার অফিসের কিছু ডকুমেন্ট পড়েছিলো আমার আলমারিতে৷ যতসব জঞ্জাল! বলেই ঘুরে দাঁড়ালো অদিতি৷ একটু ধীর স্বরে বললো, অফিসে টিফিন নিয়ে যাও না? রাস্তার খাবার খাচ্ছ?
না নিয়ে যাই তো… দর্পনকে কথাটা শেষ করতে দিলো না অদিতি৷ ধমকে উঠে বললো, তোমার তো মিথ্যে বলার রোগটা ছিল না বলেই জানতাম৷ আমি তোমার কলিগ বিনোদকে ফোন করেছিলাম… ওই বললো, তুমি নাকি রোজই ক্যান্টিনে খাচ্ছো?
অদিতির এই ধমকটা বড্ড মিষ্টি লাগলো দর্পনের৷ ঠিক যেন সেই বিয়ের আগেকার অদিতি, যে ভালোবেসে বকতো দর্পনকে, আবার নিজের হাতে খাইয়েও দিয়েছে৷ দর্পন নীরবে একটু হাসলো৷ অদিতি আর দাঁড়ায় নি, চলে গেছে৷
গাড়ির ভিতরের আবছা মূর্তিকে মনে মনে কল্পনা করে চলেছে দর্পন৷
অফিসে ঢুকতেই কার্তিকদা বললো, কিরে ঘরজামাই! তোর বউ আজকাল অন্যের ফোনে ফোন করে তোর খোঁজ নিচ্ছে কেন?
দর্পন একটু চুপ করে থেকে বললো, কার্তিকদা আমি আর শ্বশুর বাড়িতে থাকি না৷ তাই চেষ্টা করে দেখো না যদি ঘরজামাই বিশেষণ থেকে আমাকে বাদ দেওয়া যায়! দর্পনের গলায় হয়তো অনেকটা কষ্ট দলা পাকানো ছিল… কিছুক্ষনের জন্য নির্বাক হয়ে গেলো কলিগরা৷
তারপর হেসে বললো, স্ট্যাম্প বস, একবার নামের আগে স্ট্যাম্প পড়ে গেলে আসলি নামটাই হাওয়া হয়ে যায়৷
অদিতি ফোন করেছিলো, কাল অফিস আওয়ার্স-এ উকিলের কাছে যেতে হবে৷
শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সটা হয়েই যাবে ওদের৷
আচ্ছা ওর এতদিনের সব আদর, সব স্পর্শ… সব মান অভিমানের মুহূর্তগুলোকে কি অদিতি নিমেষে ভুলে যেতে পারবে? পারবে নিশ্চই… ওর জীবনে তো আরেকটা মানুষের আগমন ঘটেছে৷ তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে ওর স্বপ্নের সংসার৷ দর্পন তো হঠাৎ আবেগের বশে হয়ে যাওয়া ভুল ছিলো মাত্র৷
দর্পন আগামী কাল অফিস ছুটির এপ্লিকেশনটা দিয়ে দিলো৷ কলিগরা বললো,কি ব্যাপার বউকে নিয়ে বেড়াতে নাকি?
আর কি অফিসে বিষয়টা লুকিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে? চেষ্টা করেও বলতে পারছে না দর্পন৷
অদিতির বলে দেওয়া নির্দিষ্ট উকিলের চেম্বারে গিয়ে প্রায় ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করলো দর্পন৷ অদিতির ফোন সুইচ অফ৷ প্রায় ঘন্টা দুয়েক বসে থেকে ফিরে এলো দর্পন৷ নিজের ঘরে বসে টিভি দেখছিলো৷ বাংলা সিনেমা চ্যানেলে তখন চলছিল জতুগৃহ৷ বাইরে সন্ধ্যে নেমেছে৷ পর্দায় উত্তমকুমারকে স্টেশনের ওয়েটিং রুমে দেখে প্রাক্তন স্ত্রীর উদ্বেগ৷ চমকে উঠলো দর্পন… তবে কি অদিতিও ওকে ভালোবাসে… ওই জন্যই জিনিস ফেরত দেবার নাম করে বারবার আসছিলো ওর ছোটো ফ্ল্যাটে৷ হয়তো চাইছিলো দর্পন একবার হাতটা টেনে ধরে বলুক,পারবো না থাকতে তোমাকে ছাড়া! ছোটো হোক, এটা তোমার সংসার৷
কলিংবেলের আওয়াজে ধড়ফড় করে উঠলো দর্পন৷ দরজা খুলতেই দেখলো একটা বড়ো ট্রলি ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে অদিতি৷
আরো কিছু ফেলে এসেছিলো হয়তো ওই বাড়িতে সেগুলোই ফেরত দিতে এসেছে৷
এই নাও… এটা আমার রেগুলারের কাজ হয়ে গেছে, তোমার জিনিস পৌঁছে দেওয়াটা!
আজ তুমি উকিলের চেম্বারে যাওনি কেন দর্পন?
আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম৷ অদিতির গলায় রাগ মেশানো অভিমান৷ দর্পন বুঝলো, অদিতি নিজে না গিয়ে মিথ্যে বলছে… হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে দর্পনের মানসিকতা৷
দর্পন বললো, যাইনি… কারণ আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না৷ আমি ডিভোর্স চাই না! প্লিজ অদিতি আমাকে ছেড়ে যেও না আর৷
তোমার ওপর কি একটুও অধিকার নেই আমার?
স্বামীর অধিকার না হয় নাই মানলে, ভালোবাসার অধিকারও কি অস্বীকার করবে?
স্থবিরের মতো দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অদিতি৷ দুচোখে জল…
খুব আস্তে আস্তে বললো, তুমি কেন এতদিন ধরে ও বাড়িতে মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করছিলে? আমি যখন ভুল করছিলাম তখন আটকাতে পরোনি কেন?
নিচে তখনও গাড়িটা দাঁড়িয়ে৷ গাড়ির ভিতরের মানুষটা আজও অস্পষ্ট৷
অদিতি ওপরের ব্যালকনি থেকেই চেঁচিয়ে বললো, তুমি ফিরে যাও মা… তুমি ফিরে যাও তোমার নিজের সংসারে৷ আজ থেকে আমি আমার ফ্ল্যাটে থাকবো৷
আস্তে আস্তে পরিষ্কার হলো, অদিতির মায়ের মুখাবয়ব৷ রাগে প্রায় চিৎকার করলেন আদিত্য নারায়ণ বাসুর সহধর্মিনী৷ তুই তো বলেছিলি, দর্পনের জিনিসগুলো ফেরত দিয়েই ফিরে যাবি৷ আমরা তোর অন্যত্র ভালো বিয়ে দেব৷ চলে আয় বলছি…
অদিতির চোখে একরাশ ঘৃণা… প্লিজ মা, নিজের গর্ভের সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালনা না করতে পারো বিপথে নিয়ে যেও না৷ আজ অবধি তোমাদের কথা শুনে আমি দর্পনের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি, ও শুধু ভালোবাসে বলে সবটা সহ্য করেছে… তুমি চলে যাও মা, আমি তোমাদের পাহারা থেকে মুক্ত৷
নিচেতে দাঁড়িয়েই গজড়াচ্ছেন মিসেস বাসু৷ তার পাহারাদারীর পাঁচিল ভেদ করে অদিতি আজ পৌঁছে গেছে দর্পনের কাছে৷
দর্পন বললো, অদিতি আমি তো শুধু একটাই ডিম দিয়ে ঝোল বানিয়েছি৷ তোমার জন্য কিছু খাবার কিনে আনি? অদিতি সেই বিয়ের আগের মতো বাঁধন ভাঙা হেসে বললো, আমি কুসুম তুমি সাদাটা খেলে চলবে?
এই অদিতিকেই দর্পন ভালোবেসেছিল! এর সাথেই কথা হয়েছিলো, একসাথে হাত ধরে এক পৃথিবী হাঁটবে তারা…
ট্রলি ব্যাগটা খুলতেই বেরিয়ে গেলো অদিতির পোশাক৷ এতে তো দর্পনের কিছুই নেই৷ অদিতি হেসে বললো, আজ আমার জিনিস গুছিয়ে নিয়ে চলেই এসেছিলাম৷ তোমাকে ছাড়া প্রতিটা মুহূর্ত ওই বাড়িতে অসহ্য হয়ে উঠেছিলো দর্পন৷
না, দর্পন একদম দুস্টুমি নয়… নিরিবিলি ফ্ল্যাট মানেই সব সুযোগ তোমার হাতে নয় কিন্তু৷ পিছচ্ছে অদিতি… কিছুতেই ধরা দেবে না দর্পনের হাতে৷ অদিতির মুখে এই মুহূর্তে ঐশ্বর্য্য হারানোর দুঃখ নেই, শুধুই প্রাপ্তির অনাবিল হাসি৷
হাসতে হাসতেই বললো, কাল তোমার অফিসে গিয়ে বলে আসবো, আর কেউ যদি তোমাকে ঘরজামাই বলে ব্যঙ্গ করে তো তাকে আমি… অদিতির হাতের পাঞ্চের কায়দায় ওঠানো ঘুষিতে গভীর আবেগে একটা চুমু খেলো দর্পন৷ ওসব কথায় আমার কষ্ট হয় না অদিতি… শুধু তুমি সাথে থাকলে আমি সব বাধা জয় করতে পারবো৷
এখন ভালোবাসায় আর আদরে ভাসছে ওদের নিজেদের সংসার৷