কিছু অজানা কথা
মা, বাবার কোনো ভালো ছবি আছে?
শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে লাগবে যে! ওই পাসপোর্ট সাইজের ছবি থেকে ছবি করতে গেলে ছবিটা ভালো হচ্ছে না তো৷
কি করবো বল সমু, তোর বাবা তো কখনো ছবি তুলতেই চাইতো না৷ সেই জোর করে ধরে বেঁধে কয়েকবার যে দুটো তুলিয়েছিলাম আমি৷ তাও তো নিজের স্ত্রীর পাশেও তোর বাবার দাঁড়াতে বড়ো আপত্তি ছিলো৷
গজগজ করছে সৌমেন, কীসে যে ভদ্রলোকের আপত্তি ছিলো না সেটাই তো বুঝতে পারলাম না এই ছাবিবশের গোটা জীবনটায়৷ লোকজনের কাছে তো উত্তর দিতে দিতে জেরবার হয়ে গেলাম মা৷ কি করে হলো অ্যাকসিডেন্ট?
আদৌ কি অ্যাকসিডেন্ট নাকি সুইসাইড৷ একটি আটান্ন বছরের বয়স্ক মানুষ কেন সুইসাইড করতে যাবে?
বাড়িতে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বয়স্ক স্ত্রী থাকতেও৷
লজ্জা করছে মা, ক্লাবে গিয়ে বসতেও খারাপ লাগছে৷ এমনকী টিউশনি পড়াতে গেছি, তো কোচিংয়ের ছেলেগুলো বলছে, স্যার আপনার বাবা এতদিন রেলে চাকরি করতেন, ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করতেন… হঠাৎ কি করে ওই ঝরঝরে লোকাল বাসে চাপা পড়লেন?
উনি কি কোনো অশান্তি করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন?
বোঝো মা! ওই লোকটা মরে গিয়েও আমাদের একটু শান্তি দিয়ে গেলেন না৷
বিদিশাদেবী অঝোরে কেঁদে ফেললেন৷ কি করে বুঝবো সমু?
মঙ্গলবারদিন সকাল বেলায় তোর বাবা বলল, বিদিশা, আজ একটু ভাত ডালের পাতে ছোটো বড়ি ভেজে দিও তো৷ আর একখানা গরম বেগুন ভাজা৷ কখনো অফিস যাবার আগে এত বায়না কখনো করে না মানুষটা৷ সকালে আমার যাতে ঝামেলা না হয় তাই, গরম ভাতে একটু ঘি ফেলে আলুভাতে দিয়ে ভাত খেয়েই চলে যায়৷ আমি বড়ি ভাজলাম, বেগুন ভাজলাম৷
ভাত খেতে বসে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি আমার সব আবদার রেখেছো বিদিশা?
অথচ দেখো জীবনে কোনো সুখই তোমাকে দিতে পারলাম না৷ কেরানির চাকরিতে কটা টাকাই বা মাইনে পেতাম প্রথম জীবনে, তুমিই তো কষ্ট করে সংসার সাজিয়েছো৷ মাইনে তো বাড়লো এই বছর পাঁচেক৷ তখন তো সমুর লেখা পড়া, মাথার ওপর একটি নিজেদের ছাদের চিন্তা করতে করতে তোমার শখ আহ্লাদ পূরণ করা আর হয়ে উঠলো না বিদিশা৷
কেন যে ওই দিন খেতে বসে তোর বাবা এই কথাগুলো আমাকে বলে গেল…
মা আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে চলেছে৷
মনে মনে একটু বিরক্তই লাগছে সৌমেনের৷ একে তো ও চাকরি বাকরি করে না৷ একটা কোচিং সেন্টারে পড়াতে শুরু করেছে সবে৷ না, ব্রিলিয়েন্ট রেজাল্ট ওর নয়৷ একেবারেই মিডিওকার৷ বাবার টাকায় অনেক টিউশনি নিয়েছিলো, এ লাইন-ও লাইনে পড়েও কিছু করতে পারেনি সৌমেন৷ বাবা বলতো, আসলে মন স্থির নেই সমুর৷ সব দিক খাবলাতে গিয়ে সবকিছু হারালো৷ কোনো কোর্সটাই ঠিক মতো করলো না৷
দিনদিন বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিলো বাবা৷ একটা হাড়কিপটে লোক৷ লোকে রেলে চাকরি করে কত প্রমোশন পায়, কত ঘুষ পায় আর এই নরেন অধিকারী সারাজীবন একই পোস্টে একই মাইনেতেই কাটিয়ে দিলো৷ সৌমেন একদিন রাগের মাথায় বলেছিলো, দেখো বাবা, তুমি সিম্পলি ধরে কয়ে পুলিস কেস করে চাকরিতে ঢুকেছিলে৷ আজকালকার দিন হলে আর ওই ডিগ্রি নিয়ে রেলে জয়েন করতে হতো না৷
একশো দিনের কাজ করতে হতো৷
বাবা হাসি মুখেই বলেছিলো, তা তুমিও একটা ধরে কয়ে চাকরি জোগাড় করো না৷ যদি কিছু টাকা লাগে সে না হয় আমি লোন করেও দেবো৷
বাবার ওই হাসিটার মধ্যেই ছিলো একটা প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ৷ আসলে বাবার কাছে সৌমেন জাস্ট গুড ফর নাথিং৷
যদিও এই বয়েসে এসে সৌমেনেরও নিজের সম্পর্কে তাই ধারণা৷
বিশেষ করে দয়িতা ওদের বছর চারেকের সম্পর্ক থেকে যেদিন নিষ্কৃতি চাইল সেদিনই ওর ধারণাটা দৃঢ় হলো নিজের সম্পর্কে৷
ইচ্ছে করছিলো, বাস, ট্রেন অথবা ঘুমের ওষুধে প্রাণটা ত্যাগ করে৷ কিন্তু অকারণে বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিলো, কি রে সমু, চা খাবি? মাথা ধরেছে? এত ভাবিস না৷ কিছু একটা হবেই৷
অজ্ঞ মায়ের আশাবাণী৷ অনেকসময় এমন হয় যে, বর্তমান সমাজে, অর্থনীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও কেউ অনর্থক আশার কথা শোনালেও মৃতপ্রায় মনটা একটু সতেজ হয়৷ তাই মায়ের শুধুমাত্র কথার কথাগুলোও সৌমেনকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়৷ সেদিন মৃত্যুচিন্তা থেকে ফিরিয়ে এনেছিলো ওকে৷
আর সেখানে কিনা,পরিবারের মান সম্মানের চিন্তা না করেই স্বার্থপর লোকটা এমন একটা কান্ড করে বসলো৷ সৌমেনের দৃঢ় বিশ্বাস বাবা অ্যাক্সিডেন্টে মরেনি৷ মৃত্যুটা ইচ্ছাকৃত৷
কি গো মা, বললে না তো কোনো ভালো ছবি আছে কি?
আরে হাতে তো মাত্র দিন দশেক৷ এত কাজ… ছবিটা করতে না দিলে ডেলিভারি দেবে না তো৷ পাসপোর্ট থেকে বড়ো করতে গেলেই গ্রেন আসছে৷
মা ধরা গলায় বলল, ওই তোর বাবার বইয়ের আলমারিতে দেখ, আমাদের বিয়ের কিছু ছবি আছে বোধহয়৷
মা, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে বাবার অল্পবয়সে টোপর মাথায় ছবি থাকবে? লোক হাসাবো নাকি?
বিরক্তি ঝরে পড়ছে সৌমেনের গলায়৷ কিন্তু মায়ের এই মানসিক অবস্থায় সেভাবে কিছু বলতেও পারছে না সৌমেন৷ মা সবেতেই কাঁদছে৷
সৌমেনের অন্য চিন্তা হচ্ছে৷ বাবার ওই পেনশনের টাকাটাই ভরসা ওদের সংসারের৷ বাড়ি তৈরির জন্য লোনটা বোধহয় বাবা শোধ করে গেছে৷
মায়ের কিডনির প্রবলেমের জন্য বেশ কিছু টাকা তো মাসের প্রথমেই খরচ হয়৷
ওর টিউশনির টাকাটুকুতে তো নিজের নিকোটিনের ধোঁয়া, প্রতিমাসের নেট রিচার্জ, আর রাস্তায় টিফিনের খরচাতেই চলে যায়৷
সব থেকে বড়ো সমস্যা হলো, কম টাকায় সংসার চালিয়ে চালিয়ে নরেন অধিকারী জেনে গিয়েছিলো, বাজারের কোন দোকানে একটু দাগি আলু কম দামে পাওয়া যায়, বা অন্ধপ্রদেশের মাছকে চালানি না বললেও টাটকা দেশি বলা হয় না বলেই একটু কম দামে পাওয়া যায়৷
সৌমেনকে কোনোদিনই বাবা বাজারে পাঠাতো না, ভদ্রলোকের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, বোকা খদ্দের পেয়ে সকলে ঠকিয়ে দেবে৷
হঠাৎই মাথার ওপরটা কেমন ছাদ শূন্য মনে হলো ওর৷ ছাতাটা সরে গেছে, মাথার ওপরে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে চামড়াটা জ্বলে উঠলো যেন৷ বাবার হাজার কথার ভিড়ের আর্দ্রতাটা এই প্রথম অনুভব করলো সৌমেন৷ বাবা মারা যাবার পর এই প্রথম৷ মুখাগ্নি করার সময়েও এতটা শূন্যতা ঘিরে ধরেনি ওকে৷ আজ কাছা পরে নিমন্ত্রণ করতে যাবার আগে যেন একটা অনিশ্চয়তার হিমেল স্রোত তিরতির করে বয়ে চলেছে ওর অপোক্ত শিকদাঁড়া দিয়ে৷ পারবে, ও কি আদৌ পারবে সংসারের দায়িত্ব নিতে৷ ওই মানুষটা তো সব দিক দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছিল সৌমেনকে৷
মায়ের কথা মতো, বাবার পুরোনো ডায়রি, অ্যালবাম ঘাঁটতে গিয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল সৌমেনের৷ এটা কি?
কে এই কণিকা? বাবার ডায়রির পাতায় এই সাদা কালো ছবিটা কার?
চুলের লম্বা বিনুনিটা বাঁদিকের কাঁধ দিয়ে নেমে এসেছে সামনে৷ ছবিটা বহুদিন আগের হলেও বেশ যত্নে রাখা ছিলো বোঝাই যাচ্ছে৷
মা কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি সৌমেন৷
খুব ধীর গলায় মা বললো, ওটা যেমন ছিল রেখে দাও সমু৷ ওটা কণিকার ছবি৷ তোমার বাবার সাথে কলেজে পড়ত৷ তোমার বাবা সারাজীবন ওকে লুকিয়ে রেখেছিলো, আমি চাই ওর মৃত্যুর পরেও ওটা লুকানোই থাকুক৷
চমকে গিয়ে সৌমেন জিজ্ঞেস করেছিলো, তুমি জানতে এই মহিলার কথা?
মা বললো, জানতাম৷ তোমার বাবা ভালোবেসেছিলো কণিকাকে৷ ওরা ব্রাহ্মণ ছিলো বলেই তোমার বাবাকে মেনে নেয়নি ওদের পরিবার৷ কণিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়৷ তোমার বাবার মনের কোনো গোপন কোণেই শুধু কণিকার অস্তিত্ব ছিলো৷ আমার সংসার জীবনে নয়৷ তোমার বাবা আমাকেও বড়ো ভালোবাসতো৷
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সৌমেন৷ ধন্য বঙ্গনারী৷
এত কিছু জানত মা, তবুও বাবাকে এত সম্মান করতো?
সৌমেন বললো, তাহলে কি বাবা এখন এই মহিলার জন্যই ডিপ্রেশনে গিয়ে সুইসাইড করলো?
মা দৃঢ় গলায় বললো, না, ওটা অ্যাকসিডেন্ট, সুইসাইড নয়৷
কণিকা কখনো আমাদের বিবাহিত জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ৷ এমনকী তোমার বাবা এই বাড়িটাও করেছে আমার নামে৷ আমার হাতে দলিল তুলে দিয়ে বলেছিলো, বিদিশা…এটা তোমার বাপের নয়, স্বামীর নয়, ছেলেরও নয়.. এটা শুধু তোমার বাড়ি৷
মায়ের চোখে আবার জল ঝরছে৷
বাবার মৃত্যুটা মা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না৷ মেনে কি সৌমেনই নিতে পারছে?
সকালে বাবা বেরোনোর আগেই বাবার চকলেট কালারের চটি দুটোর পাশ থেকে নিজের চপ্পল দুটো পায়ে দিয়ে টিউশনে বেরিয়েছিলো৷ খবর পেয়ে যখন ফিরলো তখন বাবার বডি নিয়ে যাওয়া হয়েছে পোস্টমর্টেম-এর জন্য৷
হঠাৎ ধাক্কাটা সামলে উঠেই সৌমেন বুঝেছিলো, বট গাছের গুঁড়িটা সপাটে কেউ উপরে দিলো যেন সংসারের মাথা থেকে৷
মা শুধু একটাই দাবি করেছিলো, সমু তিনদিনে নয় দশ দিনে কাজ করো৷
কিন্তু মা অপঘাতে মৃত্যু হলে তো…
যেটা বলছি সেটাই করো৷ মায়ের গলায় কাঠিন্য৷ হয়তো আর কয়েকদিন কষ্ট করতে চাইছিলো বাবার জন্য৷
বাবার একটা আগেকার ছবি থেকেই একটু বড়ো করে ছবি করতে দিলো সৌমেন৷ আশ্চর্য মানুষ ছিলো বাবা৷ কখনো ইচ্ছে করেনি একটা ভালো ছবি তুলতে৷ অবশ্য সৌমেনের অ্যান্ড্রোয়েডে বারবার নিজের বা দয়িতার ছবি তুলেছে আগ্রহে, কখনো নরেন অধিকারীর ছবি তোলা হয়ে ওঠেনি৷
বাবার অফিসেও যেতে হবে নিমন্ত্রন করতে৷
বাবার শ্রাদ্ধের কাজটা মিটে গেলেই সৌমেনকে একটা চাকরির জন্য উঠে পড়ে লাগতে হবে৷ এতদিন তো অনেক চেষ্টা করেছে৷ আসলে না আছে পরিচিতি, না আছে রেজাল্ট..এই বাজারে চাকরি পাওয়া অসম্ভব৷
দয়িতা অসহায় গলায় সেদিন বলেছে, সৌমেন… বাড়িতে পাত্র দেখা শুরু করেছে৷ প্লিজ কিছু একটা করো৷
আমি তোমার চোখের সামনে অন্যের হয়ে যাবো এটা মানতে পারবে তুমি?
ভিতরটা কঁকিয়ে উঠেছিলো সৌমেনের৷ সত্যিই তো না আছে চাকরি, না ব্যবসা… দুটো কোচিংয়ের প্রাইভেট টিউটরের সাথে কেউ নিজের মেয়ের বিয়ে কেন দেবে৷ দয়িতা ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান৷ বাবা মাকেই বা কষ্ট দেয় কি করে?
বাবার অফিসে ঢুকতেই বাবার সিনিয়র বলেন, আরে তুমি নরেন বাবুর ছেলে তো?
আমরা সব কাগজপত্র ক্লিয়ার করছি, তুমি বাবার চাকরিটা পেয়ে যাবে৷ রিটায়ারের আগেই নরেন বাবু মারা গেছেন৷ তাছাড়া উনি ভীষণ এফিসিয়েন্ট ছিলেন৷ ছেলে হিসাবে তুমিও নিশ্চয় ওনার মতোই৷
ষাট-এ রিটায়ারের পরে যদি উনি মারা যেতেন তাহলে আর তুমি চাকরি পেতে না৷ কিন্তু হিসেব মতো ওনার এখনও প্রায় দেড় বছর চাকরি ছিলো৷
নিমন্ত্রণ কার্ডটা কোনোমতে বাবার সিনিয়রের হাতে দিয়েই কোনোমতে টলতে টলতে বাড়ি ফিরে এলো৷
বাবার ডায়রি খুঁজতে লাগলো৷ বাবা রোজ ডায়রি লিখতো এটা সৌমেন দেখেছে৷ কোন মাসে কতো খরচ হলো তার নিখুঁত হিসেব লেখা থাকতো নরেন অধিকারীর ডায়রির পাতায়৷
সৌমেনের চিন্তাগুলো জট পাকাচ্ছে৷ এতক্ষণ ভাবছিলো, ওই কণিকা বলে মহিলার সাথে আবার যোগাযোগের রেশেই হয়তো…
বাবা সুইসাইড করে বসলো, কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে… আর ভাবতে পারছে না সৌমেন৷
ডায়রির পাতা উল্টে যাচ্ছে একটার পর একটা৷
প্রথমে কিছু লেখা, কিছু হিসেব…
তারপর বেশ কিছু পাতা ফাঁকা ৷
না, কিছুই নেই… তাহলে কি অ্যাকসিডেন্ট?
হয়তো ৷ ভুল ভাবছে সৌমেন৷ হয়তো রাস্তা না দেখে বাসে উঠতে যাবার জন্যই অঘটন ঘটেছে৷
মা ডাকছে, হবিষ্যি করতে হবে৷ বেলা অনেক হল৷
ডায়রিটা যথাস্থানে রাখতে গিয়েই চোখ পড়লো একেবারে শেষ পাতায়৷
আমি তো অনেকদিন বাঁচলাম৷ জীবনের রং রূপ সবই পেলাম৷ ব্যাংকে কিছু টাকা জমালাম, বিদিশাকে একটা বাড়িও করে দিলাম মাথার ওপরে৷
কিন্তু সমু? কাল রাতে সমুর কান্নার আওয়াজ পেলাম৷ হয়তো দয়িতা বেকার ছেলের স্ত্রী হতে পারবে না বলেই৷ দোষ তো দয়িতার নেই৷ দোষ তো কণিকারও সেদিন ছিল না৷ লোকে জানে আমরা ব্রাহ্মণ ছিলাম না বলে কণিকার সাথে আমার বিয়ে হয়নি৷ আসল কারণ ছিলো, তখনও আমি ছিলাম বেকার৷ কণিকা আমার হাত ধরে পালাতে চেয়েছিলো, কিন্তু খাওয়াব কি, রাখবো কোথায়! ভেবেই আমি নিরুদ্দেশ হয়েছিলাম৷ কণিকার বিয়ের পরে বাড়ি ফিরেছিলাম৷
আমার জীবনের পুনরাবৃত্তি আবার ঘটবে সমুর জীবনে৷
এখনো বছর খানেক চাকরি আছে আমার৷ এইসময় যদি আমি মরে যাই তাহলে সমু পাবে চাকরিটা৷ বাবা হিসাবে সমুর জীবনটা ধূসর হতে দেওয়া কি আমার উচিত?
আমি চলে যাওয়ার পরে বছর খানেকের মধ্যেই সমু চাকরি পাবে৷ বিদিশার ঘরে বউমা আসবে৷ বিদিশাও আস্তে আস্তে ভুলবে ওর দুঃখ৷
নরেন অধিকারী এবার তুমি বিদেয় নাও পৃথিবী থেকে৷
ডায়রি পড়া শেষ৷ সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে সৌমেন৷
অস্ফুটে একটাই শব্দ বেরিয়ে এলো ওর গলা দিয়ে ‘বাবা’৷