Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প391 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯.৩ ডায়রির পাতা (ফেব্রুয়ারি)

    ৫ ফেব্রুয়ারি

    আমি কি শুধু আমার জন্য বাঁচি! আমি কি শুধু আমার কথাই ভাবি! তা হলে সেই কবেই আপোস করে ক্ষমা চেয়ে নিরাপদ জীবনের দিকেই যেতে পারতাম! যাইনি তো! আমার বাক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করি, এভাবেই আর সবার বাক স্বাধীনতা আর মত প্রকাশের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করি। যে দেশ বা যে রাজ্য থেকে আমাকে তাড়ানো হয়েছে, সেই দেশে বা রাজ্যে আমি ফিরতে চাই, যেন সেই দেশে বা রাজ্যে মত প্রকাশের অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়। যেন সারা পৃথিবীতেই দেওয়া হয় মর্যাদা। যে কোনও বিষয়ে নিজের মত প্রকাশের অবাধ অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত না হয় কেউ। যেন অন্ধত্ব আঁকড়ে ধরে সমাজকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। যেন সামনে এগোয়। সামনে আলোর দিকে। নারী বিদ্বেষ, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কুশিক্ষা, মূর্খতা, কূপমন্ডুকতা থেকে দেশ বাঁচে, সমাজ বাঁচে, মানুষ বাঁচে। বেঁচে থাকতে বড় কোনও পরিবর্তনের সামান্য স্পর্শও আমি পাবোনা জানি, না পাই, মানুষ তো টিকে থাকবে আরও লক্ষ বছর। ভবিষ্যতের মানুষ বাঁচুক স্বস্তিতে, শান্তিতে, নিরাপত্তায়, নিশ্চিন্তে, বৈষম্যহীনতায়। মানুষ বাঁচুক ধর্ম, কুসংস্কার, ইত্যাদির নাগপাশ থেকে, মানুষ বাঁচুক ঘৃণার বীভৎস কামড় থেকে। দুধে ভাতে বাঁচুক, ফুলের সুবাস নিয়ে বাঁচুক, ভালোবেসে বাঁচুক।

    .

    ৭ ফেব্রুয়ারি

    দেশি টিভি পারেনি আমাকে দেখাতে, নিরাপদ বাড়িতে আমি কেমন আছি। ঠিকঠিক ফ্রান্সের টিভি দেখিয়ে ফেললো সব। ফ্রান্সের সাংবাদিকরা এসেছিলো ভারতে। কলকাতায় গেছে, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছে। মিছিল মিটিংএর ছবি নিয়েছে, আর স্কাইগে আমার ইন্টারভিউ নিয়েছে।

    .

    ৯ ফেব্রুয়ারি

    দিনগুলো ঠায় বসে আছে বলে মনে হয়। ঠেলেও এক সুতো এগোতে পারি না। দিনগুলো অহেতুক মন খারাপ করে বসে থাকে। দিনগুলো সামনে থেকে সরে না। অজ্ঞাতবাসে এখন শুধু অপেক্ষা সতেরো ফেব্রুয়ারিতে আমার ভারতে বসবাসের অনুমতি আদৌ হবে কী না। যদি না হয়, কোথায় যাবো, কী করবো, কিছু জানি না। অনুমতি পাবো, এরকমই তো জানতাম। অনুমতি নাও দিতে পারে, এই সংশয়টা হচ্ছে। সংসদে আমার ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য শোনার পরও আমার সংশয় যায় না।

    .

    ২১ ফেব্রুয়ারি

    অনেকদিন হল আমি কিছু লিখিনি। লিখতে ইচ্ছে করেনি। কত কিছু ঘটে গেল এই দীর্ঘ এক মাসে। লেখালেখির মধ্যে করেছি একটিই, কিছু কবিতা লিখেছি। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি।

    এই দিন কী চমৎকার উদযাপিত হত বাংলাদেশে। বাংলাদেশ কি আমার দেশ! আমার বিশ্বাস হয় না ওই দেশ আমার দেশ। ভারতকেও, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গকে নিজের দেশ বলে ভেবেছিলাম। এও মুহূর্তে মিথ্যে হয়ে গেল। আমার স্বপ্ন সম্পূর্ণই নির্ভর করছিল দু’একজনের মর্জির ওপর।

    আজ কলকাতায় আমাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে অনশন শুরু হয়েছে কিছু মানুষের। বয়স্ক কিছু মানুষ, পঁয়ষট্টি থেকে আশি পঁচাশি বছর বয়স, বেহালার রাস্তায় মঞ্চ বানিয়ে অনশনে বসেছেন। সারাদিন ধরে চলছে বক্তৃতা। একুশ বাইশ তেইশ এই তিনদিন চলবে অনশন অনুষ্ঠান। সুনন্দ সান্যাল, অম্লান দত্ত, এবং আরও অনেকে ছিলেন। মন ভালো হয়ে যায় খবর শুনলে।

    আজ সকালে এনামুল কবীরের সঙ্গে ফোনে কথা বলে খুব অবাক হই। তিনি আমাকে ভারত ছাড়ার উপদেশ দিচ্ছেন। যে মানুষ এত কাছের মানুষ, সবসময় সমর্থন করে এসেছেন আমার ভাবনা চিন্তা, ধর্মমুক্ত মানববাদী মঞ্চে’র যিনি সাধারণ সম্পাদক, তিনি এমন হঠাৎ পাল্টে গেলেন! উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি যা জানালেন, বুদ্ধদের ভট্টাচার্যকে তিনি চিঠি লিখেছিলেন, তাঁর সাহিত্য পত্রিকা ‘নবমানব’ও পাঠিয়েছিলেন। চিঠি পেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজে এনামুলকে দুটো চিঠি লিখেছেন। ফোন নম্বর পাঠিয়েছেন দ্বিতীয় চিঠিতে। ফোনে কথা হয়েছে দুজনের।

    ‘ভাই এনামুল পরিস্থিতি খুব জটিল ..’ এই বলে ফোনে কথা শুরু করেছেন বুদ্ধবাবু। এরপর কী বলেছেন তা আর এনামুল কবীর না বললেও অনুমান করা যায়। কারণ এনামুলের আচরণেই তা স্পষ্ট হয়। তিনি বলতে থাকেন, এই দেশ আমাকে এত হেনস্থা করছে, কেন এই দেশের মুখে লাথি মেরে আমি চলে যাচ্ছি না! এনামুলের মুখে আমার দেশ ছাড়ার কথা? হ্যাঁ তাঁর যুক্তি, আমাকে বুদ্ধবাবু কখনই চাননা কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে। তিনি চান আমি চলে যাই! আমার চলে যাওয়াই উচিত। এনামুলকে বললাম, খুঁটিয়ে দেখলে সব দেশেরই ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়বে, এর সমাধান লাথি মেরে চলে যাওয়া নয়। তাহলে সব দেশ থেকেই অমন চলে যেতে হয়।

    তপন রায় চৌধুরীও ক্ষমতার সামনে নীতি আদর্শ বিলিয়ে দিয়েছিলেন। এনামুলও। একজনকে ভ’বাবু কাজে লাগিয়েছেন। আরেকজনকে বুদ্ধবাবু।

    চরম হতাশার মধ্যেও এই অনশনের সংবাদ আমাকে একটুখানি প্রাণ দেয়। রাজনীতিবিদ, সরকার, মৌলবাদী, অজ্ঞ, অশিক্ষিত, চোর, বদমাশ, বলেই, বলবেই মত প্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে। ওরা বলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে সত্যের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে বলে আসছেন শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী। যেদিন এই শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী গলা মেলাতে শুরু করবে সরকারের সঙ্গে, মৌলবাদীদের সঙ্গে সেদিন বুঝতে হবে, সমাজে পচন ধরেছে। আমি বাংলার সমাজের এই পচন দেখে উদ্বিগ্ন। এই চরম উদ্বিগ্নতার মধ্যেও অনশনের সংবাদ আমাকে একটুখানি শান্তি দেয়।

    .

    ২২ ফেব্রুয়ারি

    ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হল না। কিন্তু যেই না বলেছি সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করবো, অমনি আয়োজন। রাষ্ট্রদূত আমাকে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দূতাবাসে যেতে আমি রাজি হইনি। রাজি হইনি কারণ সুইডিশ দূতাবাসে ঢুকে গেলে আমি আইনত সুইডেনের সীমানায়, ভারতের বাইরে। প্রভু আমাকে দূতাবাসে পৌঁছে দিয়ে আমাকে সেখান ফেরত আনতে নাও পারেন। রাষ্ট্রদূত লার্স ওলোফ লিন্ডগ্রেনই ঠিক করলেন তাজ হোটেলের চেম্বার্স রুমে দেখা হবে,দুপুরের খাবার ওখানেই। প্রভু খুশিতে আটখানা। চেম্বার্স রুমে একেবারে একটা সুইট সাজিয়ে ওখানে খাবার টেবিল বসিয়ে দিলেন। রাজকীয় আয়োজন। কেন! এর একটিই কারণ, যেন চলে যাই। যেন ভারত ছাড়ি। যেন চলে যাই –অণুক্ষণই চেষ্টা চলছে এর। রাষ্ট্রদূতকে কি উৎকোচ দেওয়া হচ্ছে, আমাকে যেন বুঝিয়ে সুঝিয়ে সুইডেন পাঠিয়ে দেন! তা নয়তো প্রভুর বা প্রভুর প্রভুর কী দায় পড়েছে সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের নেমন্তন্নকে নিজের ঘাড়ে নিয়ে এটিকে এমন উৎসবে রূপ দেওয়ার। দূতাবাসের অফিসারদেরও নেমন্তন্ন করা হয়েছিল। খাওয়া হল, গল্প হল। কিন্তু অ্যামবাসাডার আমাকে ভারত ছেড়ে সুইডেন যাওয়ার ব্যাপারে কোনও উপদেশ দেননি। সেইফ হাউজে বা নিরাপদ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি বুঝি যে প্রভু উন্মুখ হয়ে আছেন আমি সুইডেনে চলে যাবো এরকম কিছু শোনার জন্য। অনেকক্ষণ যখন কোনো কিছু বলিনি এ নিয়ে, কী কথা হয়েছে, যেচে জানতে চেয়েছেন।

    প্র–কী কথা হল?

    ত–কেমন আছি। কী করছি।

    প্র–কী বললেন?

    ত–বললাম, যেমন আছি, যেমন অনুভব করছি, সব।

    প্র–সব বললেন?

    ত–হ্যাঁ। আমি তো কিছু লুকিয়ে রাখি না।

    প্র–ভালো নেই আপনি, বললেন?

    ত–বললাম সব আছে, শুধু যেখানে খুশি সেখানে যাওয়ার স্বাধীনতা নেই।

    প্র–কী বললেন উনি?

    ত–শুনলেন। কিছু বললেন না।

    প্র–উনাকে তো বেশ চমৎকার ভদ্রলোক বলে মনে হল।

    ত–হ্যাঁ। আপাদমস্তক আধুনিক মানুষ। আচ্ছা, আপনারা খেয়েছেন তো?

    প্র–যা খেয়েছি। উনি আর কী বললেন?

    ত–কী ব্যাপারে?

    প্র–আপনার ব্যাপারে।

    ত–আমার ব্যাপারে মনে তো হয় উনি ভালো জানেন। কী ঘটেছে কলকাতায়, কেন ঘটেছে, কী ঘটেছিলো বাংলাদেশে, কেন ঘটেছিলো, সব উনি বেশ ভালো বোঝেন।

    প্র–আর দিল্লিতে যা ঘটছে?

    ত–এ নিয়ে তো কথাই হল। উনার আর বলার কী আছে। উনি তো এ দেশের লোক নন।

    প্র–তা জানি। কিন্তু আপনি তত উনার দেশের লোক।

    ত–হা কাগজে কলমে। আমাকে কি দেখতে শুনতে সুইডিশ মনে হয়, না কি ভারতীয় মনে হয়, বলুন তো!

    প্র–এই যে আপনি এখন সেইফ হাউজে আছেন, কোনও ফ্রিডম নেই। কলকাতাতেও আপনার যাওয়া হবে না। ভারতের রাজনীতির আপনি শিকার, এ নিয়ে কোনও কথা হয়নি?

    ত–জানেন উনি এসব।

    প্র–কিছু উপদেশ দেননি?

    ত–উপদেশ দেবেন কেন? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? আমি কি নিজে বুঝি না কী করতে হবে?

    প্র–তারপরও অভিজ্ঞ মানুষের উপদেশ খুব মূল্যবান।

    ত–উনি মনে করেননি আমার কোনও উপদেশের প্রয়োজন আছে।

    অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলেন প্রভু। নিরাপদ বাড়ির কাছাকাছি এসে প্রশ্ন করলেন, অ্যামবাসাডার আপনাকে সুইডেন যাওয়ার কথা কিছু বলেননি?

    ত–কোথায় যাওয়ার কথা?

    প্র–সুইডেনে।

    ত–না তো!

    প্র–কিছুই বলেননি? বলেননি যে এখানে কোনও স্বাধীনতা ছাড়া কী করে বাঁচবেন আপনি, লেখালেখির ক্ষতি হচ্ছে। আপনার টেনশন হচ্ছে। শরীর খারাপ হচ্ছে। মনের ওপর চাপ পড়ছে ভীষণ। তারচেয়ে সুইডেনে চলে যান?

    ত–নাহ, এরকম কিছু বলেননি।

    প্র–কিছুই না?

    ত–না।

    প্র–কেন বলেননি?

    ত-বলেননি কারণ উনি জানেন, আমি ইচ্ছে করলেই সুইডেনে যেতে পারি, কিন্তু ও দেশে আমি যেতে চাই না। আমি ভারতে থাকতে চাই।

    .

    ২৩ ফেব্রুয়ারি

    আমি, যেখানে ইচ্ছে, আজ প্রভু আমাকে জানিয়ে দিলেন, যেতে পারি, তবে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেকেই করে নিতে হবে। তুমুল রক্তচাপ বেড়ে গেল। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমি মরে যাচ্ছি একটু একটু করে। বাঁচার জন্য চেষ্টা করবো, নাকি এভাবেই মরে পড়ে থাকবো।

    ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি

    আমার মনে হচ্ছে না, এ দেশে আর আমার পক্ষে থাকা সম্ভব হবে।

    ২৬ ফেব্রুয়ারি

    সকালে খবর পেলাম শিবনারায়ণ রায় মারা গেছেন। আনন্দবাজারে আমার সম্পর্কে লিখতে চেয়েছিলেন ‘নারীর কোনও দেশ নেই’ বইটি সম্পর্কে, আনন্দবাজার কোনও আগ্রহ দেখায়নি। লেখাটা শেষ হয়েছিল কি, না কি অসমাপ্ত রেখেই চলে গেলেন।

    অন্নদাশংকর রায় নেই। নিখিল সরকার নেই। শিবনারায়ণ রায় নেই। যারা সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিলেন আমার, নেই। আছে কে আমার জন্য, কলকাতায়? অনিল দত্ত একদিন চলে যাবেন। সত্যিকার বন্ধু বলে কেউ থাকবে না আমার। একা।

    খুব উঁচু মানুষ শিবনারায়ণ রায়। একটা মানুষ ছিলেন আমার পাশে। আমার যে কোনো দুঃসময়ে তিনি পাশে ছিলেন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ছিলাম, ছিলেন। নির্ভীক লড়াকু মানুষটি। প্রশাসন আমার পাশে নেই, প্রতিষ্ঠান পাশে নেই, পরোয়া করেননি, তিনি ছিলেন। এত উঁচু মানুষ ছিলেন তিনি, তাঁর নাগাল পাওয়া, তাঁর বিদগ্ধ চোখদুটোয় তাকানো সহজ ছিল না কারও। এই সেদিনও আমার এই ঘোর দুঃসহবাসে টুকরো টুকরো হয়ে আমার আর আমার স্বপ্নগুলোর ভেঙে পড়ায় এতটুকু কাতর না হয়ে বলেছিলেন, লেখো, যেখানে যেভাবেই থাকো, যে ভাবে যে পরিস্থিতিতেই লিখে যাও। তোমার জীবন হলো তোমার কলম। শিথিল হয়ে আসা কলম আমি আবার শক্ত মুঠোয় ধরেছি, মানুষটি ছিলেন পাশে, আগুনের মতো ছিলেন। গোটা পৃথিবীও যখন ত্যাগ করে সরে যায়, তখনও জানি, একজনও যদি কেউ সঙ্গে থাকেন, তিনি তিনি। উঁচু মানুষেরা হারিয়ে যাচ্ছেন একা একা। নির্ভীক নিঃস্বার্থের সংখ্যা ক্রমে ক্রমে কমে কমে শূন্য হচ্ছে। এই ভীতু আর স্বার্থান্ধ আর ক্ষুদ্রদের পৃথিবীতে বড় একা হয়ে যাচ্ছি। তাদের চিৎকারে দাপটে বধির হচ্ছি। তাদের রক্তচক্ষু দেখে দেখে বোবা।

    উঁচু মানুষটি নেই। শীতার্ত অন্ধকার গ্রাস করে নিচ্ছে আমার নিঃসঙ্গ জগৎ।

    ২৮ ফেব্রুয়ারি

    দৈনিক স্টেটসম্যানে কবিতা ছাপা হচ্ছে আমার। প্রতিদিন। প্রতিদিন ফোন আসে, কবিতা পড়ে সকলেই উচ্ছ্বসিত। বসে থাকে পরদিনের কবিতার জন্য। শমীক বন্দোপাধ্যায়, ইংরেজি সাহিত্যের পণ্ডিত, একদিন নিজেই অনুবাদ করে ফেললেন কবিতা। ভীষণ উত্তেজিত। বললেন, ইংরেজি অনুবাদের সংকলনই প্রকাশ করে ফেলবেন তিনি। কবিতায় নিরাপদ বাড়িতে আমার দৈনন্দিন জীবনের কথা বলি। বন্দি অথচ ঠিক বন্দিও নই।

    লোকে বলতে পারে, কারাগারের চেয়ে অনেক ভালো আছি। বা মানুষ আরও দুর্ভোগ পোহায় জীবনে। ঠিক। কিন্তু এই দুর্ভোগ অন্য দুর্ভোগের চেয়ে কম বলে এই কম-দুর্ভোগকে মেনে নিতে হবে কেন! আমার একটি পদক্ষেপেও বাধা দিতে চাইলে আমি রুখে উঠবো। যাদের একশটি পদক্ষেপ রোধ করা হয়, তাদের চেয়ে ভালো আছি, কারণ আমার মাত্র কুড়িটি পদক্ষেপ রোধ করা হচ্ছে, এই ভেবে সুখ পাওয়ার মানুষ আমি নই। আমার একটি পদক্ষেপও রোধ তোমরা করো না। কারণ যে কারণে রোধ করছো তা ভয়ংকর ভুল একটি কারণ। আমি কথা বলেছি, আমি লিখেছি, তা কারও পছন্দ নয় বলে আমার সামনে কেন বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যাদের পছন্দ হচ্ছে না বলে আমাকে মার দিতে চাইছে, তাদের গিয়ে একটু স্বাধীনতার সংজ্ঞাটা শিখিয়ে এসো। কোনও কোনও মাথা খারাপ লোক স্বাধীনতার সংজ্ঞা জানবে না বলে, অথবা জানলেও মানবে না বলে তার দায় আমাকে নিতে হবে কেন! সরকারে যারা আছো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা আছো, প্রচার মাধ্যমে আরা আছো, তারা দায়িত্ব নাও মানুষকে শিক্ষিত করার, দিনভর শেখাতে থাকো, ইহাকে স্বাধীনতা বলে, উহাকে গণতন্ত্র বলে, ইহাকে অধিকার বলে, উহাকে মত প্রকাশ বলে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন
    Next Article বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ফেরা – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }