Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিশীথিনী – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প140 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. বাড়ি না বলে রাজপ্রাসাদ

    ৭

    ফিরোজরা ধানমণ্ডির যে বাড়িটিতে থাকে, তাকে বাড়ি না বলে রাজপ্রাসাদ বলা যেতে পারে। বিশাল একটি দোতলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে জেলের মত উঁচু পাঁচিল। গেটে বড় বড় করে লেখা ‘কুকুর হইতে সাবধান’। গেটটি চব্বিশ ঘন্টাই বন্ধ থাকে। বন্ধ গেট ডিঙিয়ে ভেতরে ঢোকা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ, দারোয়ান এক জন আছে, যে প্রায় কখনোই গেটের কাছে থাকে না। আর থাকলেও ভান করে যে, কলিং বেলের শব্দ শুনতে পায় নি।

    পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই বিশাল বাড়িগুলো জনশূন্য হয়ে থাকে। এ বাড়িতেও তাই। তিনটি প্রাণী এ-বাড়িতে বাস করে। ফিরোজ এবং তার বাবা ও মা। বাড়ির কাজকর্ম দেখাশোনার জন্যে দশজনের একটা বাহিনী আছে। তবে রাতে তারা এ বাড়িতে ঘুমায় না। বাড়ির পেছনেই হোস্টেল ঘরের মতো চার-পাঁচটা রুমের একটা টিনের হাফ-বিল্ডিং আছে। এরা রাতে সেখানে থাকে। মূল বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা হচ্ছে কলিং বেল। রাতের বেলায় প্রয়োজন হলে কলিং বেল টিপে এদের ডাকা হয়। সে-প্রয়োজন সাধারণত হয় না।

    ফিরোজের অসুখের পর অবস্থা খানিকটা বদলেছে। তার ঘরের সামনের বারান্দায় রহমতের শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কাদেরের মাকেও মূল বাড়ির একতলায় থাকতে দেয়া হয়েছে। তবে এ-ব্যবস্থা সাময়িক।

    ফিরোজের বাবা ওসমান সাহেবের বয়স প্রায় ষাট। ফিরোজ তাঁর তিন নম্বর ছেলে। ফিরোজের আগে দু’টি ছেলে যথাক্রমে ন’বছর এবং এগার বছর বয়সে মারা যায়। দু’টি মৃত্যুই অস্বাভাবিক। বড় ছেলে মারা যায় পিকনিক করতে গিয়ে। ইস্কুলের সব ছেলেরা দল বেঁধে গিয়েছিল সালনায়। পিকনিক শেষ করে সবাই ফিরে এল, কেউ লক্ষই করল না, একটি ছেলে কম। সালনার পুকুরে সে ভেসে উঠেছিল।

    ওসমান সাহেবের মধ্যম ছেলেটি মারা গেছে রোড অ্যাক্সিডেন্টে। সে রাস্তা পার হবার সময় আচমকা দৌড় দেয় নি বা হঠাৎ কোনো ট্রাকের সামনে গিয়ে পড়ে নি। সে হাঁটছিল ফুটপাত ধরেই। কিন্তু সিমেন্টের বস্তা বোঝাই একটি ট্রাক সেই ছুটির দিনের সকালে ফুটপাতে উঠে গিয়েছিল।

    যে-পরিবারের দু’টি ছেলে অপঘাতে মারা যায়, সেই পরিবারের বাবা-মা সাধারণত ভেঙে পড়েন। এই পরিবারটির ক্ষেত্রে সে-রকম কিছু ঘটে নি। ওসমান সাহেব অত্যন্ত শক্ত ধরনের মানুষ। কোনো কারণে বিচলিত হওয়া তাঁর স্বভাবের মধ্যেই নেই। তাঁর স্ত্রী ফরিদা স্বামীর এই গুণ কিছু পরিমাণে পেয়েছেন। বড় বড় ঝড়-ঝাপটাতে মোটামুটি স্থির থাকতে পারেন।

    ফিরোজের ভয়াবহ বিপর্যয়েও তাঁরা স্বামী-স্ত্রী স্থির ছিলেন। ধৈর্য হারান নি। ফরিদা এক বার শুধু বলেছিলেন, ‘আমাদের ওপর কারোর অভিশাপ আছে।’ আর তাতেই ওসমান সাহেব এমন ভঙ্গিতে তাকিয়েছিলেন যে, তিনি দ্বিতীয় বার এ-জাতীয় কথা বলেন নি। স্বামীকে তিনি বেশ ভয় পান। তাঁর ইচ্ছা ছিল ফিরোজকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশে নিয়ে যান। তাও সম্ভব হয় নি। ওসমান সাহেবের জন্যে। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমি আমার বদ্ধ উন্মাদ ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যাব না। কিছুটা সুস্থ হোক, তারপর নিয়ে যাব।’

    ফরিদা বলেছিলেন, ‘চিকিৎসা যে করছে, সে তো ডাক্তার না। এক জন ডাক্তারকে দিয়ে চিকিৎসা করাও। ভদ্রলোক মাস্টার মানুষ, উনি কী চিকিৎসা করবেন?

    ‘যদি কেউ কিছু করতে পারে, উনিই পারবেন। ধৈর্য ধর।’

    তিনি ধৈর্য ধরলেন। ধৈর্য ধরা বিফলে যায় নি। ফিরোজ এখন সুস্থ। ভয়াবহ একটা স্তর সে পার হয়েছে। ওসমান সাহেবের ধারণা, ফিরোজ এখন পুরোপুরি ভালো। সহজ-স্বাভাবিক মানুষ। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো পড়াশোনা শুরু করবে। এখন তাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া যায়। পাহাড়ের ওপরে কোনো ঠাণ্ডা জায়গায়। হাতের কাছেই আছে নেপাল। প্লেনে যেতে তেতাল্লিশ মিনিট লাগে। ওসমান সাহেব ঠিক মনস্থির করতে পারছেন না। এখনো হয়তো ফিরোজকে নিয়ে বাইরে বেরুবার মতো অবস্থা হয় নি। মিসির আলি সে রকমই বলেছেন। মিসির আলির মতের সঙ্গে তিনি একমত নন। তবু তাঁকে অগ্রাহ্য করার সাহস হয় না। হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ততক্ষণে বর্ষা শুরু হবে। তিনি শুনেছেন, বর্ষায় নেপাল দর্শনীয় নয়। দিনরাত টিপটিপ করে বৃষ্টি। হোটেলের ঘরেই বন্দি জীবন-যাপন করতে হবে।

    ওসমান সাহেব একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। এটা একটা নতুন ব্যাপার। তাঁর জীবনে ধৈর্যের অভাব কোনোদিন ছিল না। তিনি সমস্ত জটিলতাকে সহজভাবে গ্রহণ করেন। এখন কি তা পারছেন না? ওসমান সাহেব চুরুট ধরিয়ে ক্লান্ত গলায় ডাকলেন, ‘ফরিদা, ফরিদা।’

    ফরিদা পাশের ঘরেই ছিলেন। তিনি ঘরে ঢুকলেন।

    ‘ফিরোজ কেমন আছে আজ?’

    ‘ভালো।’

    ‘কি করছে?’

    ‘ভেতরের বারান্দার ইজিচেয়ারে বসে আছে।’

    ‘শুধু শুধু বসে আছে?’

    ‘না, কি যেন করছে। ডাকব?’

    ‘ডাক।’

    ফরিদা ডাকতে গেলেন। এবং ফিরে এলেন কাউকে না-নিয়ে।

    ’ফিরোজ ঘুমাচ্ছে।’

    ‘দুপুর এগারটায় কিসের ঘুম?’

    ওসমান সাহেব অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। যদিও বিরক্ত হবার কোনোই কারণ নেই। জুন মাসের দুপুরবেলায় কারো চোখে ঘুম জড়িয়ে আসাটা অন্যায় নয়। তাঁর নিজেরই ঘুমঘুম পাচ্ছে।

    ফরিদা বললেন, ‘তোমার কী হয়েছে? এমন রেগে-রেগে কথা বলছ কেন?’

    ‘রেগে রেগে কথা বলছি নাকি?’

    ‘হুঁ। বেশ কয়েকদিন থেকেই লক্ষ করছি অল্পতেই ইউ আর লুজিং ইওর টেম্‌পার। তোমার ব্লাড প্রেসার কি বেড়েছে?’

    ‘না।’

    চেক করিয়েছ?’

    ‘না।’

    চেক না-করিয়ে কীভাবে বলছ, বাড়ে নি? আমার তো মনে হয় বেড়েছে। শম্ভুবাবুকে ডাকি?’

    ‘কাউকে ডাকতে হবে না। তুমি তোমার নিজের কাজ কর।’

    ‘আমার আবার কী কাজ যে করব?’

    ওসমান সাহেব বুঝতে পারছেন, তাঁর মেজাজ খারাপ হতে শুরু করেছে। অসম্ভব খারাপ। এই মুহূর্তে তা চেক করা উচিত। রাগ সামলাবার কী-একটা পদ্ধতি যেন পড়েছিলেন বইয়ে। পায়ের নখের দিকে তাকিয়ে এক থেকে কুড়ি পর্যন্ত গোনা। কিন্তু তাঁর পায়ে জুতো। তিনি পায়ের নখের দিকে তাকাতে পারছেন না।

    ফরিদা বললেন, ‘তুমি এ-রকম করছ কেন?’

    ‘কী রকম করছি?’

    ‘অস্বাভাবিক আচরণ করছ।’

    ‘তাই নাকি?’

    ‘হ্যাঁ, তাই। আজ দশটায় তোমার বোর্ড মীটিং ছিল। কোনো কারণ ছাড়াই তা ক্যানসেল করেছ। এবং–।’

    ‘বল, কী বলতে চাও–থেমে গেলে কেন?

    ‘বেশ কিছুদিন থেকেই তুমি কোনো কাজকর্ম দেখছ না।’

    ‘তাতে কিছুই আটকে নেই ফরিদা। আমি বিশ্রাম করছি। আমি ক্লান্ত। আমার মতো বয়সের একটি মানুষের ক্লান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’

    ফরিদা ওসমান সাহেবের পাশের চেয়ারে বসলেন। চেয়ারের দু’ হাতলে নিজের হাত তুলে দিলেন। বসার ভঙ্গি অনেকটা সিংহাসনে বসার মতো। ওসমান সাহেব তাঁর স্ত্রীর বসার এই ভঙ্গিটির সঙ্গে পরিচিত। এভাবে বসা মানেই, ফরিদা যুক্তি দিয়ে কিছু বলবে। সে-যুক্তিগুলো কিছুতেই ফেলে দেয়া যাবে না। ওসমান সাহেব বললেন, ‘বল, তুমি কী বলবে।’

    ফরিদা সহজ কিন্তু দৃঢ় স্বরে বললেন, ‘গত তিন-চার দিন ধরে তুমি এ-রকম আচরণ করছ এবং আমার মনে হয় ফিরোজের কোনো-একটা ব্যাপার তোমাকে এফেক্ট করেছে। সেটা কী?’

    ‘কিছুই না। ফিরোজের কোনো ব্যাপার নয়। ফিরোজ এখন সুস্থ।’

    ‘না, সে পুরোপুরি সুস্থ হয় নি।’

    ফরিদার কণ্ঠ তীব্র ও তীক্ষ্ণ। ওসমান সাহেব কিছু বললেন না। তিনি ভালো করেই জানেন, গত তিন দিন ধরে ফিরোজ খুবই অসুস্থ। তাঁর ধারণা, এই তথ্যটি তিনি একাই জানেন। এখন বুঝতে পারছেন, এ ধারণা সত্য নয়। ফরিদাও সেটি জানে।

    ওসমান সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, ‘আমার জন্যে এক কাপ চা দিতে বল।’

    ফরিদা উঠলেন না। তিনি জানেন, ওসমান সাহেবের চায়ের পিপাসা হয় নি। আলোচনার মোড় ফেরাবার জন্যেই চায়ের প্রসঙ্গটা টেনে আনা। ওসমান সাহেব বললেন, ‘আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি খুব দরকার।’

    এই কথাটিও শুধু-শুধু বলা। মেঘ-বৃষ্টি-রোদ নিয়ে ওসমান সাহেব কখনো মাথা ঘামান না, তাঁর এত সময় নেই।

    ‘ফরিদা।’

    ‘বল।’

    ‘ফিরোজের বর্তমান অবস্থাটা তুমি জান?’

    ‘জানি।‘

    ‘কখন জানলে?’

    ‘চার দিন আগে।’

    ‘আমাকে বল নি কেন?’

    ‘তুমিও তো জানতে। তুমিও তো আমাকে কিছু বল নি।’

    ‘বাড়ির অন্যরা জানে?’

    ‘জানি না। অন্যরা জানে কি না জিজ্ঞেস করি নি। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে নি।’

    ‘মিসির আলি সাহেব জানেন? তাঁকে কিছু বলেছ?’

    ‘না, আমি কিছু বলি নি।’

    ‘আমার মনে হয়, তাঁকে ব্যাপারটা জানানো উচিত।’

    ‘উচিত হলে জানাও।‘

    ‘আরো আগেই জানানো উচিত ছিল, তাই না ফরিদা?’

    ফরিদা কোনো জবাব না দিয়ে উঠে গেলেন। তাঁর মাথা ধরেছে। তিনি খানিকক্ষণ শুয়ে থাকবেন। রোজ দুপুরবেলায় তাঁর মাথা ধরে। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকতে হয়।

    ওসমান সাহেব বারান্দায় উকি দিলেন। ফিরোজ ইজিচেয়ারে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঘুমাচ্ছে। নিশ্চিন্ত আরামের ঘুম। কে বলবে তার এত বড় সমস্যা আছে!

    সমস্যাটি ওসমান সাহেব তিন দিন আগে প্রথম লক্ষ করেন। রাত ন’টার দিকে রোজকার রুটিনমতো তিনি ফিরোজের ঘরে ঢুকলেন। ফিরোজ হাসিমুখে বলল, ‘কি খবর বাবা?’

    ‘কোনো খবর নেই। এলাম খানিকক্ষণ গল্পগুজব করতে। বেড-টাইম গসিপিং।’বস।’

    ‘কী করছিস?’

    ‘কিছু করছি না। পড়ছি।’

    ‘কী পড়ছিস?’

    ‘গল্প উপন্যাস এইসব, সিরিয়াস কিছু নয়।’

    ‘মাঝে মাঝে অবশ্যি গল্প-উপন্যাসও বেশ সিরিয়াস হয়।‘

    ‘তা হয়। তবে আমি পড়ি হালকা জিনিস। এখন পড়ছি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নৌকাডুবি।’

    ‘রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস হালকা জিনিস। বলিস কি তুই?’

    ‘বেচারা নোবেল প্রাইজ পেয়েছে বলেই যে তাঁকে ভারি ভারি উপন্যাস লিখতে হবে, তেমন তো কোনো কথা নেই।’

    ফিরোজ হাসতে শুরু করল। সহজ স্বাভাবিক হাসি। এক জন অসুস্থ মানুষ এ-রকম ভঙ্গিতে হাসতে পারে না। ওসমান সাহেব নিজেও হাসলেন এবং ঠিক তখনি একটা জিনিস লক্ষ করলেন।

    ফিরোজের বিছানার ওপর প্রায় আড়াই হাত লম্বা একটা লোহার রড পড়ে আছে। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘লোহার রডটা এখানে কেন?’

    ফিরোজ তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না।

    ‘কে রেখেছে এটা এখানে?’

    ‘আমি।’

    ‘কেন?’

    ‘এমনি।’

    ‘এমনি মানে? বিছানার ওপর কেউ লোহার রড রাখবে কেন? ব্যাপারটা কি?’ ওসমান সাহেব লক্ষ করলেন, ফিরোজের মুখ কেমন যেন কঠিন হয়ে আসছে। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। জ্বলজ্বল করছে।

    ‘দে আমার কাছে, বাইরে রেখে আসি।’

    ‘না।’

    ‘না মানে? এটা দিয়ে তুই কি করবি?’

    ফিরোজ গম্ভীর গলায় বলল, ‘বাবা তুমি এখন যাও, আমি ঘুমাব।’

    ‘তুই ঘুমাবি, ভালো কথা, কিন্তু লোহার রড পাশে নিয়ে ঘুমাতে হবে কেন?’

    ‘ঘুমালে অসুবিধা কি?

    ‘অসুবিধা কিছুই নেই। কিন্তু সবকিছুর একটা কারণ আছে। তুই কারণটা আমাকে বল।’

    ‘না, বলব না।’

    ওসমান সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। ফিরোজের চোখ লাল হয়ে উঠছে। কপালে বিন্দু-বিন্দু ঘাম। ভারি ভারি নিঃশ্বাস ফেলছে। ওসমান সাহেবের মনে হল–’সামথিং ইজ রং। সামথিং ইজ ভেরি রং।

    ‘ফিরোজ।’

    ‘জ্বি?’

    ‘রড পাশে নিয়ে ঘুমানোর কারণটা আমাকে বল। প্লীজ! তুই একটি বুদ্ধিমান ছেলে। কারণ নেই, এমন কিছু তোর পক্ষে করা সম্ভব নয়।’

    ফিরোজ টেনে-টেনে বলল, ‘ও আমাকে রাখতে বলেছে।’

    ‘কে রাখতে বলেছে?’

    ঐ লোক।’

    ‘কোন লোক? তার নাম কি?’

    ‘নাম জানি না।’

    ‘লোকটা কে?’

    ‘খালিগায়ের একটা লোক। কালো প্যান্ট পরা, চোখে চশমা। সোনালি ফ্রেমের চশমা।’

    ওসমান সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না। কার কথা বলছে সে?

    ফিরোজ বলল, ‘মিসির আলি স্যারকে ঐ লোকের কথা আমি বলেছি। উনি চেনেন।‘

    ’আই সি।’

    ‘সে আমাকে বলেছে, লোহার রড সবসময় সঙ্গে রাখতে। যদি না রাখি, সে রাগ করবে।’

    ‘এই ব্যাপারগুলো কি তুমি মিসির আলি সাহেবকে বলেছ?’

    ‘জ্বি না।’

    ‘বল নি কেন?’

    ‘ঐ লোক আমাকে বলেছে এটা না বলতে।’

    ‘আই সি।’

    ‘বাবা, তুমি চলে যাও। আমার ঘুম পাচ্ছে।’

    ‘মাত্র সাড়ে ন’টা বাজে। এখনিই ঘুম পাচ্ছে কি? আরেকটু বসি। গল্প করি তোর সঙ্গে।’

    ‘গল্প করতে ইচ্ছা করছে না। তুমি এখন যাও।’

    তিনি চলে এলেন, কিন্তু সারারাত তাঁর ঘুম হল না। তাঁর মনে হতে লাগল–দরজায় একটা তালা লাগিয়ে রাখা উচিত, যাতে ফিরোজ কিছু বুঝতে না পারে। কিন্তু তালা লাগানোর সাহস তাঁর হল না। তালা লাগানোর ব্যাপারটা ফিরোজকে আরো এফেক্ট করবে। ভালোর চেয়ে মন্দ হবে বেশি।

    ওসমান সাহেব ইজিচেয়ারে শুয়ে থাকা ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছেন। কী নিশ্চিন্তেই না ঘুমাচ্ছে সে! কে বলবে সে অসুস্থ! কত সহজ, কত স্বাভাবিক ঘুমাবার ভঙ্গি। কোলের ওপর একটা বই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের–স্বপ্ন লজ্জাহীন। উপন্যাসটি কেমন কে জানে? সুনীলের কোনো বই পড়েন নি। গল্প-উপন্যাস তাঁর পড়া হয়ে ওঠে না।

    ফিরোজ ঘুমের মধ্যেই নড়ে উঠল। ওসমান সাহেব মৃদু স্বরে ডাকলেন, ‘ফিরোজ।’ ফিরোজ জবাব দিল না। তার পায়ের কাছে ভারি লোহার রডটি আছে। রডটি মাথা বেশ ধারাল। বারবার সেখানে চোখ আটকে যায়।

    ওসমান সাহেব অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। তাঁর বারবার মনে হচ্ছে, এই লোহার রডটি ভয়ঙ্কর কোনোকিছুর জন্যে অপেক্ষা করছে।

    মিসির আলির সঙ্গে দেখা হওয়া দরকার। তিনি নাকি ঢাকায় নেই। কোথায় গিয়েছেন কেউ বলতে পারে না। কবে ফিরবেন, তাও কারো জানা নেই।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিষাদ – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article ময়ূরাক্ষী – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }