Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিষিদ্ধ – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প347 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মেয়েরা নাকি তেঁতুলের মতো!

    মেয়েরা নাকি তেঁতুলের মতো!

    বাংলাদেশ থেকে খুব কমই ফোন আসে। বছরে একটি কিংবা দুটি। মাঝে মাঝে নিজেই আঁতকে উঠি। জন্মেছি, ও দেশেই কাটিয়েছি শৈশব কৈশোর যৌবন। ও দেশেই আছে আত্মীয় স্বজন, খেলার সাথী, ও দেশেই আছে একসময়ের সহপাঠীরা, সহকর্মীরা, লেখক-বন্ধুরা, অনুরাগী পাঠকেরা। দিব্যি ভুলে গেছে সবাই। তা যাক, আমিও ও নিয়ে দুঃখ করতেও অনেকদিন ভুলে গেছি। আজ কিন্তু ফোন আসা বা না আসা নিয়ে লিখতে বসিনি। লিখছি, কারণ বিকেলে একজন ফোন করেছিল দেশ থেকে। মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত | শাহবাগেও ছিল। আমার নিষ্ঠ পাঠক। বন্ধু। বললো, আপনি কিছু লিখছেন না কেন, এই যে মেয়েদের তেলের সঙ্গে তুলনা করলো আল্লামা শফী। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লামা শফীটা কে, শুনি? কথোপকথনটা তারপর এভাবে এগোলো।

    — হিফাজতে ইসলামের আমীর।

    — হিফাজতে ইসলামটা কী?

    –একটা মৌলবাদী দল। কয়েক লক্ষ লোকের মিছিল নামিয়েছিল ঢাকায়। এখন প্রচুর প্রতিবাদ হচ্ছে তার বক্তব্য নিয়ে। আপনার লেখা মিস করছি। লিখুন।

    – কেন প্রতিবাদ হচ্ছে? কী বলেছে সে?

    – জনসভায় বলেছে, আপনারা মেয়েদের স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে লেখাপড়া করাইতেছেন। কেন করাইতেছেন? তাদের ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়াইবেন যাতে বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে পারে। আপনার মেয়েকে স্কুল কলেজ, ভার্সিটিতে পড়াইতেছেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করতেছেন। কিছুদিন পর আপনার মেয়ে, নিজে নিজে একটা স্বামী জোগাড় কইরা লাভ ম্যারেজ, কোর্ট ম্যারেজ কইরা চইলা যাবে। আপনার কথা স্মরণ করবে না। মহিলাদের ক্লাসে সামনের দিকে বসানো হয়, পুরুষরা কী লেখাপড়া করবে? আরও জঘন্য কথা বলেছে।

    — যেমন?

    — বলেছে, আপনার মেয়েকে কেন দিচ্ছেন গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য? চাকরি তো অনেকে করতেছেন। আপনি নিজে করতেছেন, আপনার বউ করতেছে, মেয়েরা করতেছে। কিন্তু তারপরওতো পারতেছেন না। খালি অভাব আর অভাব। আগের যুগে শুধু স্বামী রোজগার করত আর সবাই মিইলা খাইত। এখন বরক্ত নেই। সবাই মিল্লা এত টাকা কামাইয়াও তো কুলাইতে পারতেছেন না।

    গার্মেন্টসে কেন দিচ্ছেন আপনার মেয়েকে? সকাল ৭-৮টায় যায়, রাত ১০ ১২টায়ও আসে না। কোন পুরুষের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে, তুমি তো জান না। কতজনের সঙ্গে আপনার মেয়ে চলছে তা তো জানেন না। জেনা কইরা টাকা কামাই করতেছে, বরকত থাকবে কেমনে। মেয়েদের কাজ ঘরের ভেতর। নারীদের ঘরে থাকতে বলেছে ইসলাম। তোমরা জাহিলিয়াতের সময়ের মতো বেপর্দায় ঘর থেকে বাইর হইও না, উলঙ্গ অবস্থায় মাঠে-ঘাটে-হাটে আপনারা মহিলারা মার্কেট করতে যাবে না। স্বামী আছে সন্তান আছে তাদের যাইতে বলবেন। আপনি কেন যাবেন? আপনি স্বামীর ঘরের মধ্যে থাইকা উনার আসবাবপত্র এগুলার হেফাজত করবেন। ছেলে-সন্তান লালন পালন করবেন। এগুলা আপনার কাজ। আপনি বাইরে কেন যাবেন?

    — তাই নাকি?

    — বলেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল হলো পুরুষদের মরদা থাইকা খাসি কইরা ফেলা। মহিলাদের জন্মদানী সেলাই কইরা দেয়া। এরই নাম বার্থ কন্ট্রোল। বার্থ কন্ট্রোল করলেও ডেথ তো কন্ট্রোল করতে পারবা না। রিজিকের মালিক হচ্ছে আল্লাহ। খাওয়াইব তো উনি। তুমি কেন বাহা কন্ট্রোল করবা? বড় গুনাহের কাজ এইটা। পারলে চাইরটা পর্যন্ত বিবাহ করবা। খাওয়াইব তো আল্লাহ। বার্থ কন্ট্রোল করবা না। এইটা বড় গুনাহের কাজ।

    — আল্লাহ তো খাওয়ায় না সবাইকে। আল্লাহ শুধু ধনীদের খাওয়ায়। পুষ্টিকর খাবার, সুস্বাদু খাবার সব তো আল্লাহ একটা শ্রেণীকেই খাওয়াচ্ছে। আল্লাহ আবার কবে গরিবদের খাওয়ালো? গরিবরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তবেই সামান্য খাবার যোগাড় করে, তাও আবার আধপেট খেয়ে বেশির ভাগ বেঁচে থাকে। আর কাজ যদি না জোটে, বা পরিশ্রম করার শরীর যদি না থাকে, তবে না খেয়ে মরে। আল্লাহর কথা বাদ দাও, আল্লামা কী বলেছে বলো? তেঁতুল টেতুল কী যেন তখন বলছিলে!

    –বলেছে, মেয়েরা হচ্ছে তেঁতুলের মতো। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেছে, তা দেখলে আপনার মুখ দিয়া লালা ঝরবে। তেঁতুল গাছের নিচ দিয়া আপনি হাঁটা যান তাইলেও আপনার লালা ঝরবে। দোকানে তেঁতুল বিক্রি হইতে দেখলেও আপনার লালা ঝরবে। ঠিক তেমনি মহিলাদের দেখলে দিলের মাঝে লালা ঝরে। বিবাহ করতে মন চায়। লাভ ম্যারেজ কোর্ট ম্যারেজ করতে মন চায়। দিনরাত মেয়েদের সঙ্গে পড়ালেখা করতেছেন, আপনারা দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। রাস্তাঘাটে মেয়েদের সঙ্গে চলাফেরা করতেছেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। যতই বুজুর্গ হন আপনার মনের মাঝে কু খেয়াল আইসা যাবে। এইটা মনের জেনা, দিলের জেনা। এইটা এক সময় আসল জেনায় পরিণত হবে। আপনার রিয়েকশান?

    — তেঁতুল আমি খুব পছন্দ করতাম ছোটবেলায়। এখনও জিভে জল চলে আসে তেঁতুল দেখলেই। এত ফুল থাকতে আল্লামা লোকটা তেঁতুল বেছে নিয়েছে কেন? ছেলেরা তো অত তেঁতুল পছন্দ করে না। মেয়েরা পছন্দ করে। সে ক্ষেত্রে বরং কোনও ছেলেকে দেখলে মেয়েদের মনে হতে পারে ছেলেটা তেঁতুলের মতো। স্মার্ট হ্যাঁণ্ডসাম ছেলে দেখলে বরং মেয়েদের লালা আসাটা স্বাভাবিক। ছেলেদের, ধরা যাক, কোনও কারণে লালা ঝরলো। তা ঝরলে ক্ষতিটা কী, শুনি! বিয়ে করতে মন চাইলে করবে। এতে অসুবিধেটা কোথায়? সেক্স, বিয়ে, এসব তো অন্যায় কোনও কাজ নয়। অন্যায় কাজ হল, অন্যের আপত্তি সত্ত্বেও গায়ের জোরে সেক্স করা বা গায়ের জোরে বিয়ে করা।

    –উফ। আল্লামা শফীর কথার প্রতিবাদ করুন, সিরিয়াসলি করুন।

    –একটা অশিক্ষিত মিসোজিনিস্ট কী বললো না বললো, তা নিয়ে অত ভাবছো। কেন? ওই ব্যাটাকে এত মূল্য দেওয়ার কী আছে?

    – কী বলছেন, এত সব বাজে কথা বলে পার পেয়ে যাবে? আপনি প্লিজ প্রতিবাদ করুন।

    – পার তো পেয়েই যাবে। প্রতিবাদ করলেও পাবে, না করলেও পাবে। লোকটা শুধু কিছু কথা বলেছে। যা বলেছে, সেই মতো কাজ করে লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিদিন পার পেয়ে যাচ্ছে। কাউকে তো দোষ দিচ্ছ না। বেচারা আল্লামাকে দোষ দিচ্ছ কেন খামোকা? প্রতিদিন মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদের ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, যদি যেতেই হয় বোরখা পরে যেতে হচ্ছে, মেয়েদের চাকরি করতে দেওয়া হচ্ছে না, বার্থ কন্ট্রোল করতে দেওয়া হচ্ছে না, মেয়েদের দিয়ে পুরুষের ঘর সংসার সন্তান সামলোনার কাজ করানো হচ্ছে। প্রতিদিন ঘরে বাইরে মেয়েরা যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আল্লামা এসব কথা না বললেও এভাবেই চলছিল সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই তো চলছিল। একেই তো তোমরা ট্রাডিশান বা কালচার বলো। আল্লামা লোকটা, আমার মনে হচ্ছে, খুব। সৎ লোক। পলিটিক্যালি কারেক্ট হওয়ার কায়দাটা এখনও শেখেনি। ধুরন্ধররা ওসব শিখে নেয় আগেভাগে। তারপর তলে তলে সমাজটাকে নষ্ট করে। আল্লামা কিন্তু নতুন কোনও কথা বলেনি। সবার জানা কথাগুলোই বলেছে।

    –একটা মৌলবাদীকে সৎ লোক বলছেন?

    –বলছি কারণ লোকটা যা বিশ্বাস করে, তা অকপটে বলে দিয়েছে। সমাজের ভদ্রলোকেরা মনের কথাটা বলে না। লুকিয়ে রাখে। লুকিয়ে রেখে ওপরে আধুনিক হওয়ার ভাব দেখায়। ভাব দেখায় তারা মেয়েদের স্বাধীনতায় আর অধিকারে বিশ্বাস করে। টোকা মেরে দেখ কিছুই আসলে বিশ্বাস করে না। আসলে সবাই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ওই আল্লামা শফীর আদর্শে বিশ্বাস করে। আল্লামার আদর্শ তো আসলে আল্লাহ পাকের আদর্শ, হযরতের আদর্শ। কোরানে আছে, শত শত হাদিসেও লেখা আছে এসব কথা চারটে বিয়ের কথা কি আল্লামা প্রথম বললো? ও তো স্বয়ং আল্লাহ পাকই বলে দিয়েছেন। তার পর ধরো, মেয়েদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার কথা, পর পুরুষের সামনে না যাওয়ার কথা। এসব তো হাদিসের কথা। ঘরের বার না হলে, পর পুরুষের সামনে না গেলে তুমি ইস্কুল কলেজে যাবে কী করে শুনি, চাকরি বাকরি করবে কী করে। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করবে, আবার নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে, তা তো হয় না! দুটো পরস্পরবিরোধী জিনিস।

    –দেশের মানুষ তো আল্লামার মতো এত ছোটলোক নয়।

    — মানুষ আবার দল বেঁধে বড় লোক কখন হলো? হয়তো কেউ কেউ ছোটলোক নয়। তবে আল্লামা যা বলেছে, তা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের মনের কথা। হয়তো মেয়েদের ঠিক ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ানোর বদলে কেউ কেউ ক্লাস এলেন। টুয়েলভ অবধি পড়াতে চায়, কেউ এম এ, বি এ বা তারও বেশি পড়াতে চায়, কেউ কেউ মেয়েরা চাকরি করুক তাও চায়, তারাও দেখ গিয়ে মেয়েদের তেঁতুলের মতোই মনে করছে।

    — আপনি বলছেন অন্য লোকও মেয়েদের তেঁতুলের মতো মনে করছে। শুধু আল্লামা নয়?

    –তা তো নয়ই। অধিকাংশ লোকই মেয়েদের তেঁতুলই ভাবে। কেন, কত পু রুষ-কবি মেয়েদের কত ফুল-ফলের সঙ্গে তুলনা করেছে, পড়োনি? কমলা, ডালিম, নাসপাতি, আপেল, পেয়ারা, আনারস, গোলাপ, বেলি এরকম আরও কত নামে ডেকেছে মেয়েদের। কেবল তেঁতুল বললেই রাগ হয়? তেঁতুল খুব সস্তা ফল বলে? দামী ফলের সঙ্গে তুলনা করলে হয়তো এত রাগ হতো না। শুধু ফুল ফল! সবজিও তো আনা হয়েছে তুলনায়। পটলচেরা চোখ! শোনো, নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি যৌন আকর্ষণ থাকাটা অতি স্বাভাবিক। কিন্তু নারীকে নিতান্তই বস্তু ভাবাটা, যৌন-বস্তু ভাবাটা ঠিক নয়। যেন গোটা মানুষটা একটা ভ্যাজাইনা, গোটা মানুষটা একজোড়া স্তন, গোটা মানুষটা ত্বক, নাক চোখ, চুল; আর কিছু নয়। যেন মেয়েদের জ্ঞান বুদ্ধি, চিন্তা ভাবনা, ইচ্ছে অনিচ্ছে, নিজস্বতা, স্বকীয়তা, সম্মান, ব্যক্তিত্ব এসব নেই, বা থাকলেও এসবের কোনও মূল্য নেই। মেয়েরা যেন নিজের জন্য জন্মায়নি, জন্মেছে পুরুষের জন্য, পুরুষের যৌন তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। তেঁতুলের প্রসঙ্গ তো এলো সে কারণে। ওই লোক কিন্তু পুরুষকে তেঁতুল বলেনি। মেয়েদেরও তো যৌন তৃষ্ণা আছে বাবা! যদি পুরুষের চোখে মেয়েরা তেঁতুলের মতো, মেয়েদের চোখে পুরুষও তো তেঁতুলের মতো। কিন্তু এরা মেয়েদের যৌনতাকে কোনওদিন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে তো করেই না, বরং অস্বীকার করে, ওটি থাকলে মেয়েদের বেশ্যা বলে গালাগাল করে। এদের চোখে, পুরুষ হচ্ছে ফুলফ্লেজেড হিউম্যান, আর মেয়েরা হচ্ছে সেক্স-অবজেক্টস কাম স্লেভস। পুরুষকে যৌনতৃপ্তি দেওয়ার, পুরুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার, সেই সন্তানকে লালন পালন করার, ঘর সংসারের সব কাজকর্ম করার, রান্নাবান্না করার, পরিবেশন করার কাজ ছাড়া তাদের আর কোনও কাজ নেই। পুরুষের মা, স্ত্রী, বোন, কন্যা– এসবই হচ্ছে মেয়েদের পরিচয়। আর কোনও পরিচয় সমাজের কটা লোক মানে, বলো। পুরুষতন্ত্র হচ্ছে মেয়েদের বন্দি করে রাখার জন্য বোরখার মতো একটা বন্ধ কারাগার।

    — কেউ তো আল্লামা শফীর মতো এমন আজগুবি কথা আগে বলেনি।

    — সবাই বলছে। আল্লামা রাখঢাক না করে, একটু অসভ্য ভাষায় বলেছে, এই যা। সভ্য ভাষায় সভ্য লোকেরা যখন বলে, ওটা তোমাদের শুনতে অত মন্দ লাগেনা। কোরান হাদিসও ভালো করে পড়ে দেখ, এসব কথাই লেখা আছে। কোরান হাদিস হচ্ছে কট্টর পুরুষতন্ত্র। ঠিক আল্লামার মতো কথা বলে, চোদ্দশ বছর আগে একজন লোক আল্লাহর পেয়ারা বান্দা, বন্ধু, মেসেঞ্জার, রসুল ইত্যাদি বনে গিয়েছিল। সেই রসুলকে তোমরা মন প্রাণ ঢেলে শ্রদ্ধা করছো, তাকে বিশ্বাস করছো, আর ঠিক একই ধরনের কথা বললেও আজ আল্লামা শফীকে বিশ্বাস করছে না, তাকে বরং তোমরা ঘৃণা করছো। রীতিমত কন্ট্রাডিকটরি। কেন আল্লামাকে নিন্দা মন্দ করছো, সে তো তোমাদের রসুলে করিমের বিশ্বাসের উল্টো কোনও কথা বলেনি! রসুলের কথাগুলোই ইনোসেন্টলি ফুঁ গোপযুগী করে রিপিট করেছে আল্লামা।

    –কী বলছেন?

    — হ্যাঁ। যা বলছি ঠিকই বলছি। কী চাও? বৈষম্য নাকি সমতা, বর্বরতা নাকি মানবতা– একটাকে তোমাদের বেছে নিতে হবে। ধর্মে, সোজা কথা সাফ কথা– সমানাধিকার নেই, সত্যিকার মানবতাও নেই। আগেই বলেছি, ধর্ম আগাগোড়াই, মানে টপ টু বটম পুরুষতন্ত্র। যদি ইসলামে কারও অবিশ্বাস থাকে তাকে কুপিয়ে মেরে ফেলার কথা লেখা আছে। এর চেয়ে মানবতা বিরোধী কাজ আর কী হতে পারে। অ্যাডাল্টারি করলে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে মেয়েদের। মেয়েদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে। কারণ তাদের দেখলে পুরুষের যৌন-ইচ্ছে জাগতে পারে। পুরুষের যৌন ইচ্ছে জাগতেই পারে, জাগুক। মেয়েদের যদি একই সঙ্গে সেই ইচ্ছেটা না জাগে, তবে পুরুষকে কন্ট্রোল করতে হবে। একই রকম মেয়েদের বেলাতেও। মেয়েরা তো কন্ট্রোল করছে, পুরুষরা কেন করবে না?

    — পুরুষরা তো কন্ট্রোল করতে জানে না।

    –কে বলেছে জানেনা? যারা জানে না তারা চরিত্রহীন, তারা বদমাশ, লোচ্চা। মেয়েদের বোরখা পরাটা প্রমাণ করে সমাজের সব পুরুষ চরিত্রহীন। মেয়েদের বোরখা পরিয়ে শুধু মেয়েদের ছোট করা হয় কে বলেছে, সত্যিকার ছোট করা হয় পুরুষদের। ওই সমাজের পুরুষেরা কোনও জাতের না, সব পুরুষই লিটারেলি এক একটা ডিকহেড, এটাই প্রমাণ করে। কে বলেছে পুরুষরা সেক্সের আর্জ কন্ট্রোল করতে জানে না? সভ্য সমাজে সভ্য পুরুষরা তো কন্ট্রোল করছে। তাদের মেয়েরা হাফ উলঙ্গ হয়ে চললেও পুরুষরাতো মনে করছেনা তাদের অধিকার আছে ওই মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার? তুমি বলছো তোমাদের সমাজে পুরুষরা কন্ট্রোল করতে জানে না! ঠেকায় পড়লে কিন্তু ঠিকই জানে। কিন্তু ঠেকা নেই তো এখন। পুরুষরা তোমাদের ব্যাকওয়ার্ড সমাজের মাতব্বর। মাতব্বরেরা মনে করে, তাদের যৌনআকাঙ্ক্ষা সংযত করার কোনও দরকার নেই। তারা যা খুশি করতে পারে। যার ওপর ইচ্ছে তার ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়ার, ধর্ষণ করার অধিকার তাদের আছে। তাদের পেশিতে শক্তি আছে, মেয়েদের ওপর পেশির শক্তি তারা খাটাবে। এই শক্তি আল্লাহর দেওয়া। জগতটা তাদের স্মৃর্তির জন্য। কিন্তু তা তো আসলে নয়। জগতটা নারী পুরুষ উভয়ের। পরস্পরের প্রতি সম্মান না থাকলে জগতটাতো চলবে না। মেয়েদের ঘরবন্দি না করে, বোরখা না পরিয়ে বরং পুরুষগু লোকে মানুষ করার চেষ্টা করো। পুরুষ লোচ্চামি করবে বলে প্রাপ্য অধিকার থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করার মতো অন্যায় কাজ আর কিছু নেই। আমরা যত সভ্য হচ্ছি, তত সমাজ পাল্টাচ্ছি। আমরা বলে কয়ে নিয়েছি যে আমরা পেশি দিয়ে বা পুরুষাঙ্গ দিয়ে জগত, রাষ্ট্র বা সমাজ চালাবো না। বুদ্ধি দিয়ে চালাবো। সুবুদ্ধি দিয়ে। সুবিবেচনা দিয়ে।

    –অবশ্য সব পুরুষ এক নয়। সব পুরুষই ধর্ষণ করে না।

    –অবশ্যই সব পুরুষ এক নয়। অনেক পুরুষই নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করে। কিন্তু তাদের সংখ্যাটা নিতান্তই কম। এই সংখ্যাটা দ্রুত বাড়া উচিত। শুধু পুরুষ নয়, নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করা নারীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। ওই সংখ্যাটাও বাড়াতে হবে।

    — আর আল্লামার কী হবে? ওর অনুসারীর সংখ্যা তো অনেক বেশি।

    — সে ওর কৃতিত্ব। তোমরা পিতৃতন্ত্রকে আঘাত করতে পারোনি বলেই এমন হচ্ছে। মানুষকে বিজ্ঞান শিক্ষায় যথেষ্ট শিক্ষিত করতে পারেনি বলে মানুষ আজ অন্ধত্ব, কুসংস্কার, গোঁড়ামির মধ্যে বড় হচ্ছে। সমতা, সমানাধিকার, নারী-স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত করোনি বলে মানুষ আজ নারীবিরোধিতা, নারী-ঘৃণা, পুরু ষপ্রাইড ইত্যাদি নিয়ে বেড়ে উঠেছে। বেড়ে উঠেছে বলেই সহজেই আল্লামা শফীর কথাগুলো তাদের মনঃপুত হয়। শফীর প্রতিবাদ করে যত না কাজ হবে, তার চেয়ে বেশি কাজ হবে যদি প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করো মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে, মানবা ধিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জ্ঞান দিতে। ইস্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষা কম্পালসারি করো। ধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে দাও ইস্কুলের সিলেবাস থেকে। মাদ্রাসা উঠিয়ে দাও। ধর্ম শেখার জিনিস নয়। ধর্ম বিশ্বাস করার জিনিস। হাবিজাবি আজগুবি অবাস্তব গল্প চোখ কান বুজে বিশ্বাস করার জিনিস। ও ঘরে বসে যত পারো বিশ্বাস করো। বাইরেটা ধর্মমুক্ত রাখো। বিজ্ঞানটা অবশ্য ভালো ভাবে অন্তঃস্থ করলে ধর্ম থেকে বিশ্বাস উঠবেই। এবং এতেই হবে পুরুষতন্ত্রের, ধর্মের, আল্লামা শফীর আর আল্লাহর নবীর ফতোয়াকে চ্যা লেঞ্জ করা। দুদিন মিছিল করে, তিনটে কলাম লিখে, চারদিন চিল্লিয়ে সমাজটাকে খুব বেশি বদলানো যায় না। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোতে হবে তোমাদের। মুশকিল হল, বছরগুলোকে গড়িয়ে যেতে দিয়েছো, আর এই ফাঁকে শহর বন্দর গ্রাম গঞ্জের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে আল্লামারা। তাই ডাক দিলে পিঁপড়ের মতো লোক বেরিয়ে আসে রাস্তায়। চোখের সামনে কী দ্রুত তৈরি হয়ে গেল একটা গণ্ডমূখের সমাজ। বড় দুঃখ হয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফরাসি প্রেমিক – তসলিমা নাসরিন
    Next Article নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    লজ্জা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার মেয়েবেলা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    উতল হাওয়া – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    দ্বিখণ্ডিত – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    কিছুক্ষণ থাকো – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ভালোবাসো? ছাই বাসো! – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }